Class 9 Bengali Chapter 11 লড়াই Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Bengali Chapter 11 লড়াই and select needs one.
Class 9 Bengali Chapter 11 লড়াই
Also, you can read SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Bengali Chapter 11 লড়াই for All Subject, You can practice these here…
লড়াই
Chapter – 11
ক-বিভাগ পদ্যাংশ
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর :-
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(ক) কার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি হয়েছিল ?
উত্তরঃ প্রশান্তর ব্যাগ থেকে টাকা চুরি হয়েছিল।
(খ) সিদ্ধার্থের ক্লাসের শিক্ষক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ মহেন্দ্রবাবু সিদ্ধার্থের ক্লাসের শিক্ষক ছিলেন।
(গ) নির্মল কার খােজে দোকানে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ সিদ্ধার্থের খোঁজে দোকানে গিয়েছিল।
(ঘ) সিদ্ধার্থ তার পেন্সিল বাক্সে কী সঞ্চয় করে রেখেছিল ?
উত্তরঃ সিদ্ধার্থ তার পেন্সিল বাক্সে বাবার দেওয়া চকোলেটের কাগজ জমিয়ে রেখেছিল।
(ঙ) নির্মলকে কেন বহুদিনের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিল ?
উত্তরঃ জটিল রােগের জন্য নির্মলকে বাইরে যেতে হয়েছিল।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।
(ক) সিদ্ধার্থ কেন প্রশান্তের ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করেছিল ?
উত্তরঃ সিদ্ধার্থপ্রশান্তের ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করেছিল নেশার জিনিস কেনার জন্য।
(খ) কী কী কারণে সিদ্ধার্থ নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিল ?
উত্তরঃ সিদ্ধার্থের বাবা মার মধ্যে চুড়ান্ত গণ্ডগােল এবং ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সেই দুঃখ ও হতাশা থেকে সিদ্ধার্থ নেশাসক্ত হয়ে পড়েছিল।
(গ) নির্মল সিদ্ধার্থকে খুঁজতে কেন পানের দোকানে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ সিদ্ধার্থ অনেকদিন স্কুলে আসছিল না। নির্মল জানত সিদ্ধার্থ নেশার দ্রব্য কেনার জন্য পানের দোকানে আসবে। তাই নির্মল সিদ্ধার্থকে খুঁজতে পানের দোকানে গিয়েছিল।
(ঘ) সিদ্ধার্থ কেন প্রথমত নির্মলের মুখােমুখি হতে চায়নি ?
উত্তরঃ সিদ্ধার্থের যন্ত্রণাদায়ক বুকের মধ্যে নির্মলের আন্তরিকতাপূর্ণ কথাগুলি আলােড়ন তুলেছিল। এজন্য সে নির্মলের মুখােমুখি হতে রাজি হয়নি।
(ঙ) নির্মলের জটিল রােগের কথা জানতে পেরে সিদ্ধার্থ কী বলেছিন্ত্র ?
উত্তরঃ নির্মলের জটিল রােগের কথা জানতে পেরে সিদ্ধার্থপ্রচণ্ড মানসিক আঘাতে নির্বাক নিঃস্পন্দ হয়ে গিয়েছিল! বুকটা তার মুচড়ে উঠেছিল। তারপর নির্মলের হাতটা আঁকড়ে ধরে বলেছিল- সে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে। চোখের সামনে না থাকলেও নির্মল তার বুকের মধ্যে থেকে সিদ্ধার্থকে অসৎকাজে যােগ না দিতে বাধা দেবে।
৩। দীর্ঘ উত্তর লেখাে।
(ক) তাের কি হয়েছে আমাকে বলতেই হবে সিদ্ধার্থ নির্মলের এই কথাগুলি সিদ্ধার্থকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল ?
উত্তরঃ ড. মৃণাল কলিতা রচিত লড়াই গল্পের দুটি চরিত্র নির্মল ও সিদ্ধার্থ। দুজনে একই স্কুলে পড়াশােনা করে। সিদ্ধার্থের সহপাঠী প্রশান্তর ব্যাগ থেকে দুটো পঞ্চাশ টাকার নােট চুরি যাওয়ায় শিক্ষক মহেন্দ্রবাবু খুব রেগে গেলেন। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতে করতে সিদ্ধার্থের ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকার নােটসহ আরাে কিছু টাকা পাওয়া গেল। কিন্তু সিদ্ধার্থ দোষ অস্বীকার করে মহেন্দ্রবাবুর সাথে অত্যন্ত অভদ্র আচরণও করল।
সহপাঠী নির্মল বেশ কিছুদিন ধরেই একটি বিষয়ে সন্দেহ করছে। স্কুলের কাছাকাছিএকটি পানের দোকান থেকে সিগারেট কিনে দোকানের আড়ালে লুকিয়ে সিদ্ধার্থকে সিগারেট খেতে দেখেছে। এই দৃশ্য দেখে প্রথমে নির্মল অবাক হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া পানের দোকানদারকেও নির্মল বিশেষ পছন্দ করে না। দোকানদার খুঁটিয়ে অনেক কথা জানবার চেষ্টা করলেও তার ব্যবহারে কোনাে আন্তরিকতা থাকে না। খবর জানার অতিরিক্ত আগ্রহও নির্মলের মনে সন্দেহ জাগিয়েছিল। নির্মল পানের দোকানে গিয়ে সিদ্ধার্থের সঙ্গে দেখা করে। দোকানদার বিরক্ত হলেও নির্মল কর্তত্বের সঙ্গে সিদ্ধার্থকে জানায় তার সঙ্গে কথা আছে। বন্ধুর প্রতি ভালােবাসা এবং দায়িত্ববােধ থেকেই নির্মলের মধ্যে কর্তৃত্ববােধ এসেছিল। সেই কর্তত্বজাত নির্দেশের কাছে সিদ্ধার্থও মাথা নত করেছিল। নির্মলের পেছনে পেছনে সিদ্ধার্থ দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। দোকানের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সিদ্ধার্থের কাছে জানতে চায় কেন সে প্রশান্তের টাকা চুরি করেছে। সিদ্ধার্থ টাকা চুরির কথা অস্বীকার করলেও তার গলায় জোর এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তবুও জোর করে চুরি করার কথা সে অস্বীকার করে। সিদ্ধার্থের প্রতি নির্মলের খুবই ভালােবাসা ছিল। সে নরম গলায় সিদ্ধার্থকে বলল- “আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল”। অপরাধী সিদ্ধার্থ নিজের কাছে নিজে হেরে গেল। নির্মলের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার মতাে মনের জোর সিদ্ধার্থের ছিল না। কয়েকটি মুহূর্ত অস্বস্তিকর নীরবতার মধ্যে কাটিয়ে নির্মল লক্ষ করল মহেন্দ্র মাস্টারের চোখে চোখ রেখে ভেংচে ওঠা বেপরােয়া ছেলেটি তার সামনে ঝিমিয়ে পড়েছে। আবার নির্মল জানতে চায় সিদ্ধার্থের মানসিক পরিবর্তনের কারণ কী। সে মুক্তমনে বন্ধুকে বলতে পারে। কিন্তু সিদ্ধার্থ কিছু বলেনি কিংবা কোনাে কিছুই বলতে চায়নি। নিজের দুঃখ কষ্ট অনুভূতি নিজের মনের মধ্যেই বদ্ধ রাখে। নির্মলের বারবার প্রশ্নের জবাব দিয়েই সিদ্ধার্থসামনের চলন্ত সিটিবাসের পেছনে.চলতে শুরু করে, একটা সময় ঝাঁপ দিয়ে বারে পাদানিতে ঝুলে পড়লেও বারবার যেন নির্মলের কথাগুলাে তার বুকের ভিতর বাজতে থাকে ।
(খ) সিদ্ধার্থ কেন নিঃসঙ্গতায় ভুগছিল বুঝিয়ে বলাে।
উত্তরঃ সিদ্ধার্থ একজন বেপরােয়া, অভদ্র, নেশাড়, পড়াশােনা ছেড়ে দেওয়া একটি ছেলে। কিন্তু সিদ্ধার্থের ছেলেবেলাটা ছিল আর পাঁচজন শিশুদের মতােই স্বাভাবিক। অন্যদের মতােই হাসি খেলায় মজে থাকত। কিন্তু কিছুটা বড়াে হওয়ার পর তার জীবনে আসে পরিবর্তন। গত কয়েকমাস ধরেই গম্ভীর, খিটখিটে বেপরােয়া হয়ে উঠেছে। বন্ধুদের কাছ থেকে পালিয়ে ক্লাসে পিছনের বেঞ্চিতে বসতে শুরু করেছে। শিক্ষকদের দেওয়া বাড়ির কাজ প্রায় করতইনা। এমনকী মাঝে মাঝে স্কুল যাওয়াও বন্ধ করে দিচ্ছিল।
একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতায় ভােগা একজন উঠতি বয়সের ছেলে সিদ্ধার্থ। তারমনের আনন্দ বেদনা দুঃখ কষ্ট বােঝবার মতাে মানুষগুলি জীবন থেকে দূরে সরে গেছে। না পাওয়া ভালােবাসার আশা যেন সিদ্ধার্থকে আরাে দুর্বল ও অভিমানী করে তােলে। কিসের অভিমানে তার হৃদয় ভারাক্রান্ত, সে কথা নিজেও বােঝে না।
সিদ্ধার্থতার মায়ের সাথে থাকে! বাবা তাদের বছর দুয়েক আগে ছেড়ে গেছে। বােঝারমতাে বয়স হওয়ার পর থেকেই সিদ্ধার্থ দেখেছে—মা ও বাবার মধ্যে দিনরাত্রি ঝগড়া, প্রচণ্ড চেঁচামেচি, উপচে পড়া তীক্ষ্ণ গালিগালাজের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে সে নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকত মা ও বাবার পাথরের মতাে কঠিন মুখ দুটোর দিকে।
মা না বাবা কার পক্ষ নিয়ে কথা বলবে- এই নিদারুণ প্রশ্নের আঘাতে তার কোমল হৃদয়ে অবিরত রক্তক্ষরণ হত নিদ্রাহীন রাতগুলােতে কাদতে কাদতে চোখের জল শুকিয়ে যেত। সেইসময় চোখের জল মুছিয়ে দেবার মতাে বাবা কিংবা মা কারােরই কোমল হাতের স্পর্শ পায়নি। একদিন সিদ্ধার্থের বাবা ছেলে ও স্ত্রীকে একলা ঘরে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হলেন। সিদ্ধার্থের মনে বারবার একটি প্রশ্ন জাগ্রত হত—মা বাবার মধ্যে এমন কি প্রচণ্ড অমােঘ অমীমাংসিত সমস্যা তৈরি হয়েছিল যা তাদের নিজের সন্তানকেও দুঃখ যন্ত্রণার অতল এবং পারাপারহীন সাগরে নিক্ষেপ করার হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি।
তবে একসপ্তাহ বা পনের দিনের মাথায় বাবা সিদ্ধার্থের সঙ্গে স্কুল ছুটির পর দেখা করতে আসতেন। তিনি নানাধরনের চকোলেট নিয়ে আসতেন। ঘরে ফিরে এসে যখন সে চকোলেট খেত, তখন চকোলেটের স্বাদ জিভে লাগবার আগেই চোখদুটো জলে ভরে যেত। দুচোখের কোল ছাপিয়ে অশ্রুর বান ডাকত।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বাবার দেওয়া চকোলেটের জমানাে কাগজে সিদ্ধার্থের পেন্সিল বাক্স ভরে গিয়েছিল। তার চেয়ে দ্রুত তার বুক ভরে গিয়েছিল অসহনীয় শূন্যতায়। হাসতে না পেরে, খেলতে না পেরে, ঘুমােতে না পেরে- শূন্যতার ভারে, দুঃখের দহনে জ্বলে যাচ্ছিল সারা শরীর ও মন। একদিন সিদ্ধার্থ বাধ্য হয়ে বাবাকে দেখা করতে নিষেধ করেছিল। বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিল- যদি বাবার চোখের কোণের জমাট বাধা জল তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। বাবার ‘কেন’র জবাব দেওয়ার মতাে উত্তর সিদ্ধার্থের কাছে ছিল না।
বাড়িতে সিদ্ধার্থের কিছুই ভালাে লাগত না। স্কুল ছুটির পর এদিকে সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে ঘরে ঢুকত। তার প্রতি মায়ের মনােযােগ কমে গিয়েছিল। কখনাে মা কোনাে কথা জিজ্ঞাসা করলে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠত। হয়তাে মায়ের প্রতি প্রচুর আক্রোশবশত সিদ্ধার্থ একাজ করত। প্রাপ্য স্নেহমমতা থেকে বঞ্চিত হয়ে একটা ভাঙা সংসারে সে বিদ্রোহী রূপে পরিগণিত, অথচ একটি করুণ চরিত্র হল সিদ্ধার্থ।
দীর্ঘদিন স্কুলে না গেলে,পড়াশােনা না করলেও সিদ্ধার্থের মায়ের কোনাে মাথাব্যথা ছিল না। খোঁজখবরও বিশেষ রাখতেন না। ক্রমশ হতাশা, অবসাদের নিঃসঙ্গতার অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে সিদ্ধার্থ ক্রমশ নেশার কবলে নিজেকে সঁপে দেয়।
(গ) নির্মল কীভাবে সিদ্ধার্থকে ভুল পথ থেকে টেনে এনেছিল। বিস্তারিত বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ লড়াই গল্পে নির্মল ও সিদ্ধার্থ দুই বন্ধু। একই স্কুলে পড়াশােনা করে। একদিন ক্লাসে প্রশান্তর ব্যাগ থেকে চুরি যাওয়া টাকা সিদ্ধার্থের ব্যাগ থেকে পাওয়া গেল। শ্রেণি-শিক্ষক প্রচণ্ড রাগারাগি করলেও কিছুতেই সিদ্ধার্থ নিজের দোষ স্বীকার করল না। বরং শিক্ষকের সাথে রূঢ় আচরণ করল।
নির্মল বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করল। একদিন ইচ্ছে করেই দেরি করে স্কুলের গেটের বাইরে বেরিয়ে এল। কিছুটা কৌতুহল আর সন্দেহ নিয়েই পানের দোকানের দিকে এগিয়ে এল। অনুমান অনুযায়ী পানের দোকানে সিদ্ধার্থকে পেয়ে গেল। নির্মল প্রায় দিন পানের দোকানের আড়ালে সিদ্ধার্থকে লুকিয়ে সিগারেট খেতে দেখেছে। প্রথম দেখে নির্মল কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিল কারণ তার বয়সী ছেলেদের সে এর আগে সিগারেট খেতে দেখেনি। নির্মল লক্ষ করল পানের দোকানে যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা যায় দোকানদার তাদের খুব মন দিয়ে নিরীক্ষণ করে। নির্মলকেও করেছিল। নির্মলের বাবা মা পরিবার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু সে জানতে চাওয়ার মধ্যে কোনাে আন্তরিকতা ছিল না। বরং অন্যের ভেতরের খবর জানবার আগ্রহ নির্মলের সন্দেহকে দ্বিগুণ করে তুলেছিল। পারতপক্ষে নির্মল ওই দোকানে যায় না। কিন্তু সিদ্ধার্থের সন্ধানে নির্মলকে যেতেই হল।
নির্মলকে দোকানদার পছন্দ করে না। দোকানদারের বিরক্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে নির্মল সিদ্ধার্থকে জানায় তার সঙ্গে কথা আছে। নির্মলের গলায় কর্তত্বের সুর ছিল। সেই কর্তত্বজাত নির্দেশের সুরে সিদ্ধার্থের মতাে বেপরােয়া ছেলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। নির্মলের সাথে দোকান থেকে রেরিয়ে আসে। নির্মল সিদ্ধার্থকেপ্রশান্তের টাকা চুরির বিষয় জিজ্ঞাসা করে। সিদ্ধার্থ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।
এই ঘটনার পর সিদ্ধার্থ এক সপ্তাহ স্কুলে যায়নি।সিদ্ধার্থের ভালাে চাওয়ার মানুষগুলি তার জীবন থেকে দূরে সরে গেছে। না পাওয়া ভালবাসার আশা যেন তাকে দুর্বল ও অভিমানী করে। কার ওপর অভিমান সিদ্ধার্থ নিজেও বুঝতে পারে না। নির্মলের মুখােমুখি হওয়ার জন্য সিদ্ধার্থ কিছুটা মানসিক প্রস্তুতি নেয়। সে এক সপ্তাহ পানের দোকানে যেতে পারেনি।
স্কুলে অনেকদিন না দেখতে পেয়ে একদিন সিদ্ধার্থের খোঁজে নির্মল পানের দোকানে গেল। নির্মলকে দেখেই দোকানদারের মুখের ভঙ্গি বদলে গেল। নির্মল কিছুটা এগােতেই বাইকে বসা একজন এসে নির্মলের মুখে আঘাত করল। নির্মলের নাক ভেঙে গিয়ে রক্ত ঝরতে লাগল। রাস্তার বিপরীত দিকে বাস থেকে নেমেই দৃশ্যটি দেখতে পেল। পানের দোকানে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধার্থ রাগারাগি করলে নির্মল জানাল সে সিদ্ধার্থের জন্যই ওই দোকানে গিয়েছিল। নির্মলের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। সিদ্ধার্থ লক্ষ করল, নির্মলের দুহাত রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রণায় থরথর করে কাঁপছে।
সিদ্ধার্থ একদিন উজাড় করে অন্তরের সব দুঃখ যন্ত্রণার কথা নির্মলকে জানাল। নির্মল বুঝতে পারে বাইরে আপাত কঠিন বেপরােয়া সিদ্ধার্থের একটা স্পর্শকাতর সুন্দর কোমল মন ছিল, হয়তাে এখনাে সুন্দর মনের কিছুটা অংশ বেঁচেও আছে। এতদিন জোর করে বেঁধে রাখা কথার প্রবল স্রোত উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। নিজেকে মুক্ত করে দেবার মতাে নির্মলের ছদ্মবেশে সে যেন তা মা বাবার বিচ্ছেদ থেকে আরম্ভ করে ড্রাগস আসক্ত হবার সকল করুণ কাহিনি। স্পর্শকাতর আবেগে তাড়িত এক সতেজ বালকের নিষিদ্ধ, অন্ধকারাচ্ছন্ন অপরাধ জগতের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাওয়ার, বেদনাভরা সুদীর্ঘ আখ্যান। বুদ্ধিমান নির্মল সান্ত্বনা দিয়ে বলল,একটা সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে সিদ্ধার্থ ভালাে করেনি। বরং আরাে একটা সমস্যায় জড়িয়ে গেল। ভালােবাসা আরশাসন মেশানাে গলায় নির্মল আদেশ দিল যে সিদ্ধার্থকে নেশার মতাে খারাপ জিনিস ছাড়তে হবে। জীবনের সুন্দর দিকগুলি সম্পর্কে সিদ্ধার্থকে বােঝাল। তারপর ধীরে নিজের জটিল অসুখ এবং বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা জানাল। নির্মলের জটিল রােগের আকস্মিক খবরের প্রচণ্ড আঘাতে নির্বাক নিস্পন্দ হয়ে গেল সিদ্ধার্থ।নির্মল বারবার বােঝাতে লাগল তার অনুপস্থিতিতে সিদ্ধার্থ যেন কোনাে ভুল কাজ না করে। নির্মলের হাত ধরে সিদ্ধার্থ কথা দেয়।
(ঘ) তার মতাে ছেলের কথার উত্তর দিতে না পেরে অস্বস্তিকর মৌনতায় কেবল ছটফটানােয় সার- কথাগুলির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তরঃ নির্মল বন্ধু কথার প্রকৃত অর্থ জানে। স্বার্থপরতা বিসর্জন দিয়ে সিদ্ধার্থকে বিপথ থেকে ফেরানাের চেষ্টা করে। সিদ্ধার্থের ক্লাসে টাকা চুরি করা, নেশার প্রতি আশক্ত হওয়া, শিক্ষকের সাথে রূঢ় আচরণ- সব কিছুর পেছনেই রয়েছে সিদ্ধার্থের মানসিক দ্বন্দ্ব, হতাশা, অবসাদ।
নির্মল সিদ্ধার্থের কাছে বারংবার জানতে চায় কি হয়েছে? সিদ্ধার্থ এক সপ্তাই স্কুলে যায়নি। নির্মলের মুখােমুখি হওয়ার মতাে সাহস তার ছিল না। সহানুভূতি ভরা স্নেহমিশ্রিত কথা বলার মতাে মানুষ তার জীবনে নেই। ভালােবাসাহীন জীবনের প্রতি রয়েছে সিদ্ধার্থের প্রচণ্ড ঘৃণা। তবে কার উপর অভিমান, ঘৃণা সিদ্ধার্থ যেন নিজেও বুঝতে পারে না।
স্কুলে মহেন্দ্রবাবুর কর্কশ কঠোর কথাগুলি সহ্য করা কিংবা শিক্ষকের চোখে চোখ রেখে আক্রমণের প্রত্যুত্তর দেওয়া সহজ হলেও নির্মূলের মুখােমুখি হওয়ার মতাে মানসিক জোর সিদ্ধার্থের ছিল না। নির্মলের মতো ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তর দেওয়া যায় না। শুধু মনের ভিতরের ছটফটানি বেড়ে যায়।
নির্মলের সঙ্গে মুখােমুখি হওয়ার ভয় না কি নির্মলের কথাগুলি তার মনের ভিতর প্রবল প্রতিরােধের সঞ্চার করেছে তা বুঝতে পারছিল না সিদ্ধার্থ। সে এক সপ্তাহ পানের দোকানে ড্রাগস মেশানাে সিগারেট আনতে যেতে পারেনি। নেশা না করতে পারার জন্যই হয়তাে তার মনের ভেতরের জ্বালা এবং অস্থিরতা বেড়েছে।
অসততা সবসময় সততাকে ভয় পায়। উদ্যত ফণা আপনা থেকেই নিচে নেমে যায়। সৎ ব্যক্তির দিকে দৃষ্টি রেখে কথা বলার মতাে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। নির্মল ও সিদ্ধার্থ সমবয়সী হলেও নির্মলের চরিত্রে রয়েছে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যাকে সিদ্ধার্থ ভয় পায়।
Mcq please