Class 12 Political Science Chapter 4 বিকল্প শক্তির উৎস

Class 12 Political Science Chapter 4 বিকল্প শক্তির উৎস Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 4 বিকল্প শক্তির উৎস Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 4 বিকল্প শক্তির উৎস

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 4 বিকল্প শক্তির উৎস Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 4 বিকল্প শক্তির উৎস Solutions for All Subjects, You can practice these here.

বিকল্প শক্তির উৎস

Chapter: 4

প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। মার্শাল পরিকল্পনা বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুদ্ধবিধ্বস্থ ইউরোপীয় অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে ‘মার্শাল পরিকল্পনা’-র অধীনে আমেরিকা বিপুল অর্থ সাহায্য করে।

প্রশ্ন ২। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

______ ইউরোপীয় সংঘের সাধারণ মুদ্রা।

উত্তরঃ ইউরো (Euro)।

প্রশ্ন ৩। ASEAN-এর সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ Association of South East Asian Nation।

প্রশ্ন ৪। ব্যাংকক ঘোষণাপত্র কি?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে আসিয়ান (ASEAN) প্রতিষ্ঠা করে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ‘ব্যাংকক ঘোষণাপত্রে’ স্বাক্ষর করে।

প্রশ্ন ৫। কোন্ সালে ARF স্থাপন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৪ সালে।

প্রশ্ন ৬। হ্যাঁ বা না লেখ:

ভারত ASEAN-এর সদস্য।

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ৭। চীনের সাম্যবাদী বিপ্লবের নেতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ মাও জে দং।

প্রশ্ন ৮। মুক্তদ্বার নীতি কি?

উত্তরঃ কৃষি ও শিল্পের বেসরকারিকরণ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণই চীনের মুক্তদ্বার নীতি।

প্রশ্ন ৯। ‘চার আধুনিকীকরণ’ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ১৯৭৩ সালে কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সামরিক এই চার ক্ষেত্রে আধুনিকরণের উল্লেখ করেন।

প্রশ্ন ১০। কোন্ বছর প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী চীন ভ্রমণ করেছিলেন?

উত্তরঃ ১৯৮৮ সালে।

প্রশ্ন ১১। কোন্ বছর একক বাজার সৃষ্টি করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৩ সালে।

প্রশ্ন ১২। কোন্ বছর কাউন্সিল অফ ইউরোপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৯ সালে।

প্রশ্ন ১৩। কোন্ বছর ASEAN আঞ্চলিক মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৪ সালে।

প্রশ্ন ১৪। চীন কখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য হয়েছিল?

উত্তরঃ ২০০১ সালে।

প্রশ্ন ১৫। ম্যাসট্রিস্টের সন্ধি কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের ৭ই ফ্রেব্রুয়ারি।

প্রশ্ন ১৬। কোন্ বছর ASEAN-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সালে।

প্রশ্ন ১৭। চীনের বেকার সমস্যার বিষয়ে একটি বাক্য লেখ।

উত্তরঃ চীনে প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোক চাকরি প্রত্যাশী অর্থাৎ বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন ১৮। ১৯৫০ সালে তিব্বতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ দলাই লামা।

প্রশ্ন ১৯। ১৯৭২ সালে চীন কোন্ বৃহৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল?

উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।

প্রশ্ন ২০। নিম্নোক্তগুলির মধ্যে কে ‘মুক্তদ্বার নীতি’ আরম্ভ করেছিল?

(ক) চীন।

(খ) ইউরোপীয় সংঘ। 

(গ) জাপান।

(ঘ) আমেরিকা।

উত্তরঃ (ক) চীন।

প্রশ্ন ২১। বিশ্বশক্তির তৃতীয় বিকল্প কেন্দ্র হিসাবে কোন্ দেশকে গণ্য করা হয়?

উত্তরঃ চীনকে।

প্রশ্ন ২২। ভারত-চীন যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬২ সালে।

প্রশ্ন ২৩। ইউরোপীয় সংঘ কখন গঠিত হয়?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালে।

প্রশ্ন ২৪। ইউরোপীয় সংঘের ব্যবহৃত সাধারণ মুদ্রাকে কি বলা হয়?

উত্তরঃ ইউরো (Euro)।

প্রশ্ন ২৫। আসিয়ানের একটি উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আসিয়ানভুক্ত দেশ সমূহের মধ্যে সহযোগিতা ও সার্বিক বিকাশ।

প্রশ্ন ২৬। ভারত আসিয়ানের সদস্য কি?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ২৭। ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সদস্য সংখ্যা কত?

উত্তরঃ ২৭টি রাষ্ট্র।

প্রশ্ন ২৮। WTO-এর সম্পূর্ণ রূপ কি?

উত্তরঃ World Trade Organization (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা)।

প্রশ্ন ২৯। “ক্ষমতা বন্দুকের নল থেকে আসে।” এই কথাটি কে বলেছিলেন?

উত্তরঃ মাও-জে-দং।

প্রশ্ন ৩০। ভারতের লৌহমানব বলে কাকে গণ্য করা হয়?

উত্তরঃ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ৩১। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৭ সালে।

প্রশ্ন ৩২। আসিয়ানের মুখ্য উদ্দেশ্য কি ছিল?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

প্রশ্ন ৩৩। চীন কখন ভারত আক্রমণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৬২ সালে।

প্রশ্ন ৩৪। চীনে কৃষি বেসরকারিকরণ কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৮২ সালে।

প্রশ্ন ৩৫। চীন কখন মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৮ সালে।

প্রশ্ন ৩৬। জার্মানির একীকরণ কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯০ সালে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপীয় সংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নাম লেখ।

উত্তরঃ ব্রিটেন ও ফ্রান্স।

প্রশ্ন ২। শীতল যুদ্ধ ইউরোপীয় সংহতি স্থাপনে সাহায্য করেছিল বলে তুমি মনে কর কি? কিভাবে করেছিল?

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংহতি ১৯৪৫ সালের পর শীতল যুদ্ধের দ্বারা ত্বরান্বিত হয়েছিল। মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে আমেরিকা ইউরোপীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনের জন্য যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছিল।

প্রশ্ন ৩। ইউরোপীয় সংঘ একটি জাতীয় রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করছে কি? যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় সংঘ অর্থনৈতিক সংস্থার পরিবর্তে নিজেকে অধিক পরিমাণে একটি রাজনৈতিক সংস্থা হিসাবে প্রকাশ করেছে। সংঘ জাতীয় রাষ্ট্র হিসাবে অধিক কার্য করতে আরম্ভ করে। এর নিজস্ব সংবিধান না থাকলেও নিজস্ব পতাকা, সংগীত, প্রতিষ্ঠা দিবস ও মুদ্রা আছে। সংঘের কতিপয় সাধারণ বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা নীতিও আছে।

প্রশ্ন ৪। ASEAN-এর উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ ASEAN-এর উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আসিয়ানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক বিকাশ এবং তার মাধ্যমে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি।

(খ) আইনের শাসন ও রাষ্ট্রসংঘ সনদের নীতির উপর ভিত্তি করে আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি রক্ষা করা।

প্রশ্ন ৫। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে সংগঠিত সীমাবিবাদ প্রধানত _____ ও ______ অঞ্চল নিয়ে হয়েছিল।

উত্তরঃ অরুণাচল/লাডাকের আকসাই চীন।

প্রশ্ন ৬। দুটি ASEAN রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ কর যার সঙ্গে ভারত FTA স্বাক্ষর করে।

উত্তরঃ ভারতের সঙ্গে FTA স্বাক্ষরকারী দুটি ASEAN রাষ্ট্রের নাম হল—সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড।

প্রশ্ন ৭। আঞ্চলিক সংগঠন গঠনের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ আঞ্চলিক সংগঠন গঠনের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) দ্রুত ক্রমবর্ধমান বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আঞ্চলিক উন্নয়ন সাধন।

(খ) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা।

(গ) আইনের শাসন এবং জাতিসংঘের নির্ধারিত নীতি অনুযায়ী আঞ্চলিক শান্তি এবং সুস্থিতি স্থাপন করা।

প্রশ্ন ৮। ইউরোপীয় সংঘ গঠন করার যে-কোন দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘ গঠনের কারণ দুটি নিম্নরূপ:

(ক) মার্শাল পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৪৮ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার কাজ ছিল পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের মধ্যে আর্থিক সাহায্য সমন্বয় করা।

(খ) ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিকে একটি পৃথক আঞ্চলিক সংঘ গঠনে উৎসাহিত করে।

প্রশ্ন ৯। EU-র দুটি সদস্য রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ গ্রেট বৃটেন ও ফ্রান্স ইউরোপীয় সংঘের দুটি সদস্য রাষ্ট্র।

প্রশ্ন ১০। এশিয়ার দুই মহাশক্তির নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও চীন এশিয়ার দুই মহাশক্তি।

প্রশ্ন ১১। চীনের নতুন অর্থনৈতিক নীতির দুটি অপূর্ণতা উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চীনের নতুন অর্থনৈতিক নীতির দুটি অপূর্ণতা নিম্নরূপ:

(ক) চীন আর্থিক ক্ষেত্রে বিকাশলাভ করলেও এর ফল সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছায়নি।

(খ) প্রশাসন ব্যবস্থায় দুর্নীতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন ১২। কোন্ কোন্ রাষ্ট্র ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে EU-তে যোগদান করেছিল?

উত্তরঃ অষ্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড ও সুইডেন EU-তে যোগদান করেছিল।

প্রশ্ন ১৩। ১৯৯২ সালে কোন্ আঞ্চলিক সংগঠন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘ গঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৪। ইউরোপীয় সংঘের দুটি উদ্দেশ্য লক্ষ্য লেখ।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘের দুটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:

(ক) ইউরোপীয় সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য হল ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

(খ) সকল সদস্য-রাষ্ট্রের একটি সাধারণ মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলন করা।

প্রশ্ন ১৫। কীভাবে বর্তমান চীনা অর্থনীতি ব্যবহারিক অর্থনীতি থেকে পৃথক?

উত্তরঃ চীন ১৯৪৯ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে তার সম্পদ ও শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ৫–৬ শতাংশ হারে পৌঁছে দিয়েছিল, কিন্তু বাৎসরিক ২–৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এই আর্থিক বৃদ্ধি কাজে আসছিল না। ১৯৭৮ সালে ‘মুক্ত দ্বার’ নীতি এবং আর্থিক সংস্কার গ্রহণের পর চীনের অর্থনীতি ঈর্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় জায়গা করে নেয়।

প্রশ্ন ১৬। ম্যাসস্ট্রিক সন্ধি বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ ম্যাসস্ট্রিক চুক্তি ১৯৯২ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে এই চুক্তি কার্যকরী হয়। এই চুক্তির ফলে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী ইউরোপীয় সংঘে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ১৭। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কোন্ কোন্ প্রধান প্রত্যাহ্বানের সৃষ্টি হয়েছিল?

উত্তরঃ ইউরোপ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ধ্বংসে পরিণত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই ইউরোপীয় দেশসমূহকে সম্পূর্ণরূপে দেউলিয়া করেছিল। দেশসমূহের অর্থনীতি ও মানবসম্পদকে তীব্র আঘাত দিয়েছিল।

প্রশ্ন ১৮। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

_____ পরিকল্পনাই ______ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংগঠন স্থাপনে প্রভাব বিস্তার করেছিল।

উত্তরঃ মার্শাল/১৯৪৮।

প্রশ্ন ১৯। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের নাম লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি হল – 

(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

(খ) ইংল্যান্ড।

(গ) ফ্রান্স।

(ঘ) রাশিয়া। এবং 

(ঙ) চীন।

প্রশ্ন ২০। ইউরোপীয় সংঘের অধীনে থাকা সংস্থাটির নাম লেখ।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘের অধীনে থাকা সংস্থাটির নাম ইউরোপীয়ন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২১। ১৯৭৮ সালের পূর্বে এবং পরে চীনের অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতিসমূহের যে-কোন দুটি পার্থক্য লেখ।

উত্তরঃ চীনের অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতিসমূহের পার্থক্য দুটি নিম্নরূপঃ

(ক) চীন ১৯৭৮ সালের পূর্বে নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি (Command Economy) অনুসরণ করত। কিন্তু ১৯৭৮ সালের পর চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দ্বার’ (Open Door) নীতি গ্রহণ করে।

(খ) চীনে ১৯৭৮ সালের পূর্বে কৃষিক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ ছিল না। কিন্তু ১৯৭৮ সালের পর বেসরকারিকরণ গ্রহণ করা হয়।

প্রশ্ন ২২। আসিয়ান (ASEAN)-এর যে-কোন দুটি অবদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আসিয়ান (ASEAN)-এর দুটি অবদান নিম্নরূপ:

(ক) আসিয়ান অর্থনীতি বিশ্বে দ্রুতগতিতে বিকাশ লাভ করছে।

(খ) আসিয়ানের কার্যক্ষেত্র অত্যন্ত বিস্তৃত। ইহা সদস্যরাষ্ট্রসমূহের সর্বক্ষেত্রে উন্নতির পক্ষপাতি।

প্রশ্ন ২৩। চীনের অর্থনীতির যে-কোন দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চীনের অর্থনীতির দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) ১৯৭৮ সালে চীন অর্থনীতিতে ‘মুক্ত দ্বার’ নীতি গ্রহণ করেছে।

(খ) ২০০১ সালে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হয়েছে এবং বিশ্বের সকল দেশের কাছে তার অর্থনীতি মুক্ত রেখেছে।

প্রশ্ন ২৪। চীনের নূতন অর্থনীতির যে-কোন দুটি ত্রুটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চীনের নূতন অর্থনীতির দুটি ত্রুটি নিম্নরূপ:

(ক) চীন আর্থিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে, কিন্তু উন্নয়নের ফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় নি।

(খ) শাসনব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন ২৫। ইউরোপীয় সংঘের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) ইউরোপীয় সংঘ সমসাময়িক বিশ্বে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক সংঘ।

(খ) ইউরোপীয় সংঘ গণতন্ত্র, বিশ্বশান্তি, মানবাধিকার, রাষ্ট্রসমূহের সৌভ্রাতৃত্বের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।

প্রশ্ন ২৬। ইউরোপীয় সংঘের দুটি ত্রুটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘের দুটি ত্রুটি নিম্নরূপ:

(ক) ইউরোপীয় সংঘ একটি সাধারণ সংবিধান গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

(খ) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ মুদ্রাব্যবস্থা সকল সদস্য-রাষ্ট্র গ্রহণ করেনি।

প্রশ্ন ২৭। ইউরোপীয় সংঘের প্রভাবের দুটি প্রধান দিকের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ইউরো’ আমেরিকার মুদ্রা ‘ডলার’-এর চ্যালেঞ্জস্বরূপ। 

তাই ইউরোপীয় সংঘের প্রভাব যে দুটি ক্ষেত্রে আছে, তা হল—

(ক) আর্থিক ক্ষেত্র। এবং 

(খ) রাজনৈতিক ক্ষেত্র।

প্রশ্ন ২৮। আসিয়ান (ASEAN)-এর যে-কোন দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আসিয়ান (ASEAN)-এর দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) আসিয়ান (ASEAN) হল একটি অর্থনৈতিক সংঘ যার উদ্দেশ্য হল সদস্য রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা ও তাদের সার্বিক বিকাশ।

(খ) আসিয়ান (ASEAN) কোন সামরিক জোট নয় এবং ভবিষ্যতে এইরূপ হওয়ারও কোন ইচ্ছা নেই।

প্রশ্ন ২৯। ভারত ও আসিয়ান (ASEAN)-এর মধ্যে সম্পর্ক কিরূপ?

উত্তরঃ শীতল যুদ্ধের সময় ভারত আসিয়ানের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিপাত করে নি। কিন্তু শীতল যুদ্ধের পর ভারত আসিয়ানের দিকে নীতি পরিবর্তন করে। ভারত আসিয়ানের দুই সদস্য-রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভারত আসিয়ানের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরে সচেষ্ট।

প্রশ্ন ৩০। ASEAN এবং FTA-এর সম্পূর্ণ রূপ লেখ।

উত্তরঃ (a) ASEAN = Association of South East Asian Nations

(b) FTA = Free Trade Agreement

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “ইউরোপীয় সংঘ সময়ের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সংস্থার পরিবর্তে সম্প্রসারণশীল একটি রাজনৈতিক সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ সময়ের সাথে সাথে ইউরোপীয় সংঘ একটি অর্থনৈতিক সংঘ হতে অধিকমাত্রায় একটি রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত হয়। ইউরোপীয় সংঘ এখন একটি জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় সংঘের স্বতন্ত্র সংবিধান রচনার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও এর নিজস্ব স্বতন্ত্র পতাকা, জাতীয় সংগীত, প্রতিষ্ঠা দিবস এবং মুদ্রা আছে। অন্যান্য জাতিরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আদান-প্রদানের ব্যাপারে এর একটি নিজস্ব বিদেশ ও সুরক্ষা নীতি রয়েছে। ইউরোপীয় সংঘের কূটনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। এর দুটি সদস্যের রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন আছে। ইউরোপীয় সংঘ, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কিছু অস্থায়ী সদস্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর ফলে সংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু নীতিকে প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়েছে। সামরিকভাবে ইউরোপীয় সংঘের মিলিত বাহিনী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাহিনী।

প্রশ্ন ২। চৌ এন-লাই চীনে যে চার প্রকার আধুনিকীকরণ করতে চেয়েছিলেন তার উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৪৯ সালে চীন গঠনের পর থেকে চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। নিজস্ব সম্পদ ও শ্রমশক্তি ব্যবহার করে চীন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছিল যার বার্ষিক হার ছিল ৫-৬ শতাংশ। কিন্তু তা ২–৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় যথেষ্ট ছিল না। তাছাড়া বহির্বিশ্ব থেকেও চীন নিজেকে আলাদা করে রেখেছিল। ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এক নতুন যুগের সূচনা হয়।

চীনের রাষ্ট্রপ্রধান চৌ এন-লাই ১৯৭৩ সালে চার প্রকার আধুনিকীকরণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

এগুলি হল—

(ক) কৃষি। 

(খ) উদ্যোগ।

(গ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা। ও 

(ঘ) সামরিক ব্যবস্থা।

প্রশ্ন ৩। নিশ্চলতা অবসানের জন্য চীন কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা,

অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চীন দেশের উত্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ চীন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকত। ১৯৭৮ সালে চীনের তৎকালীন নেতা ডেঙ চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ‘মুক্ত দ্বার’ নীতি গ্রহণ করেন। এই নীতি অনুসারে বিদেশি ধন বিনিয়োগ ও প্রাদ্যোগিক ক্ষেত্রে চীনকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। চীন অবাধ বাণিজ্যে প্রবেশ করে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই দেশ সমগ্র বিশ্বের এক কেন্দ্রস্থল হয়ে পড়ে। চীনের এই মুক্ত অর্থব্যবস্থা তাদের নেতা ডেঙ-এর দেশের প্রতি এক উপহার। নূতন অর্থনৈতিক নীতির জন্য চীন নিজ অর্থব্যবস্থাকে জড়তা থেকে মুক্ত হওয়ার সুবিধা দেয়। কৃষিক্ষেত্রের ব্যক্তিকরণের জন্য কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় তথা গ্রামীণ অর্থব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। কৃষি এবং উদ্যোগ উভয় ক্ষেত্রেই চীনের অর্থব্যবস্থার উন্নতির হার লক্ষণীয় এবং সব উন্নতিশীল দেশের কাছে ঈর্ষণীয়।

প্রশ্ন ৪। চীনের অর্থনৈতিক সংস্কার সকল শ্রেণীর মানুষকে স্পর্শ করতে পেরেছিল বলে তুমি মনে কর কি? যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ নূতন অর্থনৈতিক নীতি প্রয়োগ করার ফলে চীনের অর্থব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন হলেও দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকের কাছে এই সুবিধা সমানভাবে পৌঁছায় নি। 

দেশের মানুষ এখনও নিম্নোক্ত বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে:

(ক) চীনে বেকার সমস্যা যথেষ্ট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। চীনে এখনও বেকারদের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।

(খ) মহিলা কর্মচারীগণের কাজের পরিবেশ ইউরোপের ১৮–১৯ শতকের পরিবেশের মতোই খারাপ।

(গ) পরিবেশের ক্ষতিগ্রস্থতা ও দুর্নীতিতে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।

(ঘ) চীনে আর্থিক বৈষম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(ঙ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

প্রশ্ন ৫। আসিয়ান ভিশন ২০২০-এর উপাদানসমূহ লেখ।

উত্তরঃ আসিয়ান ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের পাঁচটি দেশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আসিয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা। আসিয়ান অতি দ্রুতগতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হচ্ছে। ‘ভিশন ২০২০’ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালনের কথা ব্যক্ত করেছে। ‘ভিশন ২০২০’-তে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে যে এটি একটি শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। আসিয়ান এই অঞ্চলের বিবাদ ও বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করতে উৎসাহিত করে যা পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করবে।

প্রশ্ন ৬। ASEAN-এ ভারতের অবস্থান ও মর্যাদার বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে আসিয়ান-এর অন্তর্গত দেশসমূহের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো ছিল। ১৯৫০ সালে ইন্দোনেশিয়ার সংগ্রামকে সমর্থনের মাধ্যমে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করেছিল। মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে ভারত ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার ও ফিলিপিনসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। যাই হোক, সোভিয়েত সংঘের সঙ্গে শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারত এবং আসিয়ানের সম্পর্ক নিম্নগামী হয়। ১৯৮০-র দশকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিরোধের ফলে ভারত ও আসিয়ানের সম্পর্ক অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু সোভিয়েত সংঘের পতনের পর ভারত তার বিদেশ নীতিতে পরিবর্তন আনে এবং Look East নীতির সূচনা করে, যার ফলে পুনরায় আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে এবং আসিয়ানও এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের গুরুত্ব বুঝতে পারে আর তাতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। ভারত ইতিমধ্যে আসিয়ানের দুই সদস্য রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং বাকি তিন রাষ্ট্রের সঙ্গেও এই চুক্তি রূপায়ণে সচেষ্ট রয়েছে।

প্রশ্ন ৭। আসিয়ান আঞ্চলিক মঞ্চের সদস্য কারা?

উত্তরঃ প্রথমে ১৯৬১ সালে ফিলিপিনস্, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্যোগে অ্যাসোসিয়েশান অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়া (ASA) গঠিত হয়। পরে ১৯৬৭ সালে ব্যাংকক ঘোষণা মোতাবেক অ্যাসোসিয়েশান অফ সাউথ-ইস্ট নেশনস্ (ASEAN) বা আসিয়ান গঠিত হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস্, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর আসিয়ান আঞ্চলিক মঞ্চের সদস্য।

প্রশ্ন ৮। ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাকল্পে রোম চুক্তি স্বাক্ষরকারী ছয়টি দেশের নাম লেখ।

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্থ পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘মার্শাল প্ল্যান’-এর অধীনে ১৯৪৮ সালে ইউরোপীয় অর্থনীতির সাহায্যকারী সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইউরোপীয়ান ইকনমিক কোঅপারেশান (OEEC) গঠিত হয়।

রোম চুক্তি স্বাক্ষরকারী ছয়টি দেশ হল—ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানী, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস্ এবং লুক্সেমবার্গ।

প্রশ্ন ৯। চীনের রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও ২০০৬ সালের নভেম্বরে ভারত এসেছিলেন। তার ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত চুক্তি সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ ছিল। ১৯৮১ সাল থেকে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের উদ্যোগ শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর চীন সফর ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে।

জিনতাও এর সফরের সময়ে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে একে অন্যের সাথে যে সকল ক্ষেত্রে সাধারণ বিরোধিতার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন শক্তি বিষয়ক বৈদেশিক দরদাম ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। বিশ্বপর্যায়ে ভারত ও চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপারে একই নীতি গ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন ১০। পাঁচটি রাষ্ট্রের নাম লেখ যারা ১৯৬৭ সালে আসিয়ান প্রতিষ্ঠা করেছিল?

উত্তরঃ প্রথমে ১৯৬১ সালে ফিলিপিনস্, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্যোগে এসোসিয়েশান অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়া (ASA) গঠিত হয়। পরে ১৯৬৭ সালে ব্যাংকক ঘোষণা মোতাবেক অ্যাসোসিয়েশান অফ সাউথ-ইস্ট নেশনস্ (ASEAN) বা আসিয়ান গঠিত হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিনস্, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড আসিয়ান প্রতিষ্ঠা করেছিল।

প্রশ্ন ১১। ASEAN সম্প্রদায়ের স্তম্ভ ও উদ্দেশ্যসমূহ লেখ।

উত্তরঃ আসিয়ানের ২০০৩ সালের মহাসম্মেলনে ইউরোপীয় সংঘের অনুসরণে আসিয়ান গোষ্ঠী (ASEAN Community) গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

আসিয়ান গোষ্ঠী নিম্নোক্ত তিনটি স্তম্ভ নিয়ে গঠিত:

(ক) আসিয়ান নিরাপত্তা গোষ্ঠী (ASEAN Security Community)।

(খ) আসিয়ান অর্থনৈতিক গোষ্ঠী (ASEAN Economic Community)।

(গ) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ( ASEAN Socio Cultural Community)।

আসিয়ান গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য: আসিয়ান গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আসিয়ান গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা।

(খ) সামাজিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বিকাশ।

(গ) আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশসমূহের জন্য উৎপাদন ভিত্তি ও সাধারণ বাজার তৈরি করা।

(ঘ) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষা করা।

(ঙ) আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি উন্নত করা।

প্রশ্ন ১২। চিনের অর্থনীতিকে বিশ্ব অর্থনীতি পর্যায়ে উন্নীতকারী উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চীন অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে রুদ্ধ সমাজ হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৯৭৮ সালে চীন মুক্তদ্বার নীতি ঘোষণা করে অর্থনৈতিক সংস্কারে মনঃসংযোগ করে। এই নীতির উদ্দেশ্য বিদেশ থেকে মূলধন ও প্রযুক্তি আমদানি করে অধিক উৎপাদন করা। ১৯৭৮ সালে কৃষিক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিবর্তিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে শিল্প ক্ষেত্রকেও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিল্প গঠনের অনুমতি প্রদান করা হয়। এই সমস্ত পদক্ষেপের ফলে চীনা অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয় এবং দ্রুতগতিতে উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বশক্তিতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে তৃতীয় বিকল্প বলে গণ্য হয়। এই হারে উন্নতি ঘটলে চীন অনতিবিলম্বে বিশ্বের প্রথম বিকল্প হবার সম্ভাবনা জোরদার করবে।

প্রশ্ন ১৩। ইউরোপীয় সংঘ একটি অর্থনৈতিক সংঘ থেকেও অধিকভাবে এক জাতি ও এক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। যুক্তি দাও।

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত সংঘের পতন ইউরোপকে দ্রুতগামী গতিপথে চালিত করে যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় সংঘের (EU) প্রতিষ্ঠা হয়।

ইউরোপীয় সংঘ আঞ্চলিক সংগঠন হিসাবে এক বিরাট ভূমিকা পালন করছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে ইউরোপীয় সংঘ প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়ে এক জাতি ও এক রাষ্ট্র হিসাবে কাজ করে চলেছে। ইউরোপীয় সংঘের স্বতন্ত্র সংবিধান রচনায় ব্যর্থ হলেও এর নিজস্ব স্বতন্ত্র পতাকা, সংগীত, প্রতিষ্ঠা দিবস ও অভিন্ন মুদ্রা বর্তমান। অন্যান্য জাতিরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের আদান-প্রদানে এর একটি নির্দিষ্ট বিদেশ ও সুরক্ষা নীতি আছে। ইউরোপীয় সংঘের কূটনৈতিক প্রভাবও যথেষ্ট, কারণ এর দুটি সদস্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন রয়েছে। বিশেষত ২০০৫ সালের ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মোট ঘরোয়া উৎপাদনের মাধ্যমে ইউরোপীয় সংঘই পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল। তাই বলা হয় যে ইউরোপীয় সংঘ কেবলমাত্র একটি অর্থনৈতিক সংগঠন নয়, তার থেকেই বেশি — এক জাতি ও এক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রশ্ন ১৪। ইউরোপীয় সংঘের ক্ষমতা সীমিতকারী অসঙ্গতিগুলি কি কি?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত সংঘের পতন ইউরোপকে দ্রুতগামী গতিপথে চালিত করে যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় সংঘের (EU) প্রতিষ্ঠা হয়।

ইউরোপীয় সংঘের ক্ষমতা সীমিতকারী অসঙ্গতিসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ইউরোপীয় সংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়।

(খ) ইউরোপীয় সংঘ একটি সাধারণ সংবিধান গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

(গ) ইউরোপীয় সংঘের সাধারণ মুদ্রাব্যবস্থা সকল সদস্য রাষ্ট্র গ্রহণ করেনি।

(ঘ) গ্রেট বৃটেন নিজেকে ইউরোপীয় সংঘের সদস্য হিসাবে গণ্য করে না।

প্রশ্ন ১৫। চীনা অর্থনীতির উত্থান বিশ্বশক্তিতে কিভাবে তৃতীয় বিকল্প বলে গণ্য হল?

উত্তরঃ ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চীন অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে রুদ্ধ সমাজ হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৯৭৮ সালে চীন মুক্তদ্বার নীতি ঘোষণা করে অর্থনৈতিক সংস্কারে মনঃসংযোগ করে। এই নীতির উদ্দেশ্য বিদেশ থেকে মূলধন ও প্রযুক্তি আমদানি করে অধিক উৎপাদন করা। ১৯৭৮ সালে কৃষিক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিবর্তিত করা হয়। ১৯৯৮ সালে শিল্প ক্ষেত্রকেও বেসরকারিকরণের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিল্প গঠনের অনুমতি প্রদান করা হয়। এই সমস্ত পদক্ষেপের ফলে চীনা অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয় এবং দ্রুতগতিতে উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বশক্তিতে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে তৃতীয় বিকল্প বলে গণ্য হয়। এই হারে উন্নতি ঘটলে চীন অনতিবিলম্বে বিশ্বের প্রথম বিকল্প হবার সম্ভাবনা জোরদার করবে।

প্রশ্ন ১৬। ভৌগোলিক অবস্থান কিভাবে আঞ্চলিক সংস্থা গঠন প্রভাবিত করতে পারে?

উত্তরঃ ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক সংস্থা গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতা বিকাশ লাভ করে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ সাধারণভাবে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সহযোগিতাবোধ বৃদ্ধি করে যা আঞ্চলিক সংস্থাসমূহকে শক্তিশালী করে। ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সাধারণ রীতিনীতি, পরম্পরা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বার্থ, সমস্যা প্রভৃতি গড়ে ওঠে। এই সাধারণ চেতনা তাদের মধ্যে সাধারণ ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। ভৌগোলিক অখণ্ডতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আন্তঃরাষ্ট্র বাণিজ্যে উৎসাহিত করে।

প্রশ্ন ১৭। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপে উদ্ভূত প্রধান প্রত্যাহ্বানসমূহ কি কি?

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কাঠামোটা ভেঙে পড়েছিল। অর্থনীতিকে পুনরায় সক্রিয় করে গড়ে তোলার জন্য ইউরোপের বহু দেশের কিছু নেতা কিছু নিয়ম-নীতির প্রবর্তন করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিশ্চিত ধারণা সৃষ্টি প্রয়াস করেন। এই বিষয়ে শীতল যুদ্ধ যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। আরও একটি প্রত্যাহ্বান ছিল নানা দেশের মধ্যে সহযোহিতার অভাব। ১৯৫১ সালে ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, লাক্সেমবার্গ প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে। তাছাড়া একই সময়ে রোম চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্র অ্যাটমিক এনার্জি কমিউনিটি স্থাপন করে। পরে ১৯৮১ সালে পর্তুগাল ও ১৯৮৬ সালে স্পেনও কমিউনিটিতে যোগদান করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরে ১৯৯২ সালে ইউরোপীয়ান সংঘ স্থাপন করা হয় এবং একই বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারি ম্যাসট্রিস্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

প্রশ্ন ১৮। আসিয়ান অর্থনৈতিক মঞ্চের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় সংঘের প্রদর্শিত পথে আসিয়ানও আসিয়ান গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয় যার তিনটি স্তম্ভ থাকবে:

(ক) আসিয়ান নিরাপত্তা গোষ্ঠী (ASEAN Security Community)

(খ) আসিয়ান অর্থনৈতিক গোষ্ঠী (ASEAN Economic Community)

(গ) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী (ASEAN Socio Cultural Community)

আসিয়ান অর্থনৈতিক মঞ্চের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

(খ) উক্ত এলাকার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা।

(গ) আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৯। আঞ্চলিক সংগঠন গঠন করার উদ্দেশ্য কি?

উত্তরঃ আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নত করা।

(খ) এর অপর একটি লক্ষ্য হল সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব বোধ তৈরি করা।

(গ) আঞ্চলিক সংস্থা তাদের সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বিকাশ তরান্বিত করে।

(ঘ) আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির সমতা তৈরি করে যাতে মহাশক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ তাদের ‘দাদাগিরি’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

(ঙ) আঞ্চলিক সংস্থাগুলি তাদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসার করে। বৈদেশিক বাণিজ্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী করে তোলে।

(চ) আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে। যৌথ নিরাপত্তা অধিক কার্যকরী এবং অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল।

প্রশ্ন ২০। ইউরোপীয় সংঘের প্রভাবের দুটি প্রধান ক্ষেত্রের বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘ প্রধানত আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিম্নরূপ প্রভাব বিস্তার করে:

আর্থিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ এবং এশিয়া ও চীনকে প্রভাবিত করে। বিশ্ববাণিজ্যে ইউরোপীয় সংঘের অংশের পরিমাণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিনগুণ অধিক। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ‘ইউরো’ আমেরিকার ডলারের চ্যালেঞ্জস্বরূপ। ইউরোপীয় সংঘ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপরও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।

রাজনৈতিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের কতিপয় নীতি ও কার্যসূচীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স—দুই সদস্য রাষ্ট্র রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী সদস্য। ইউরোপীয় সংঘের কোন না কোন সদস্য রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যরূপে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ২১। মার্শাল পরিকল্পনা বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরবর্তীকালে পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলির আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়েছিল। অধিকাংশ দেশের উৎপাদন দারুণ হ্রাস পায়। আর্থিক দুরবস্থা সাম্যবাদের প্রসার লাভের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ফ্রান্স ও ইতালিতে কমিউনিস্টদের প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করে যে পশ্চিম ইউরোপের আর্থিক সংকট নিরসন করতে না পারলে সাম্যবাদী রাজনীতির প্রসার রোধ করা অসম্ভব হবে। এইজন্য জন মার্শাল ১৯৪৭ সালের জুন মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত এক ভাষণে যুদ্ধক্লান্ত বিভিন্ন দেশকে আর্থিক সাহায্য দানের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। সাহায্যগ্রহণকারী দেশগুলির সামনে কিছু শর্তও রাখা হয়; যেমন—দেশগুলি সাহায্যপ্রাপ্ত অর্থ খরচ করার ব্যাপারে মূল বার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতি রাখবে, দ্রুত অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা লাভে অগ্রসর হবে প্রভৃতি। মোট ১৮টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ২২। চীনের মুক্ত দ্বার নীতি কি ছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চীন অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে রুদ্ধ সমাজ হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালে চীন ‘মুক্ত দ্বার নীতি’ ও দেশের আর্থিক সংস্কারের কথা ঘোষণা করে। এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল বৈদেশিক আমদানীকৃত মূলধন ও প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন করা। পূর্বে কৃষি ছিল যৌথ ব্যবস্থা, কিন্তু ১৯৮২ সালে তা বেসরকারি করা হয়। ১৯৯৮ সালে উদ্যোগ বেসরকারি করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চীনে শিল্পোদ্যোগ প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়। এই সমস্ত পদক্ষেপের ফলে চীনের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে উন্নতি লাভ করে।

প্রশ্ন ২৩। ইউরোপীয় সংঘ গঠনের কারণসমূহ লেখ।

উত্তরঃ পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ প্রথমে ১৯৪৮ সালে অর্গানাইজেশন ফর ইউরোপীয়ান ইকনমিক কোঅপারেশন গঠন করে, পরে ১৯৪৯ সালে কাউন্সিল অফ ইউরোপ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৫৭ সালে গঠিত হয় ইউরোপীয়ান ইকনমিক কম্যুনিটি এবং পরিশেষে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ইউরোপীয় সংঘের। 

ইউরোপীয় সংঘ গঠনের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ তাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে জর্জরিত হয়। এই অর্থনৈতিক সমস্যার উপরই ভিত্তি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার জন্যই ইউরোপীয় সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

(খ) পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা।

(গ) দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা অর্জন করা।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আসিয়ান সম্প্রদায় কি? আসিয়ান সম্প্রদায়ের তিনটি স্তম্ভ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের কয়েকটি রাষ্ট্র অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস্, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড সম্মিলিতভাবে ১৯৬৭ সালে আসিয়ান অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রগোষ্ঠীর সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিল। আসিয়ানের ২০০৩ সালের মহাসম্মেলনে ইউরোপীয় সংঘের অনুসরণে আসিয়ান সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে।

আসিয়ানের প্রধান তিনটি সংস্থা হল—

(অ) আসিয়ান নিরাপত্তা সংস্থা।

(আ) আসিয়ান আর্থিক সংস্থা। এবং 

(ই) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা।

(অ) আসিয়ান নিরাপত্তা সংস্থা: এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। নিরাপত্তা-বিষয়ক এই রাষ্ট্রসমূহ প্রায়ই মিলিত হয়ে নিজ নিরাপত্তাজনিত সমস্যাসমূহ সমাধান করে।

(খ) এই রাষ্ট্রসমূহ তাহাদের এই অঞ্চলকে শান্তির অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। সেজন্য সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থী সমস্যাসমূহ দমন করার জন্য তারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে।

(আ) আসিয়ান আর্থিক সংস্থা: এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের জন্য একটি সাধারণ বাজার ও উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং এই অঞ্চলের সামাজিক ও আর্থিক উন্নতির জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা।

(খ) এর অন্য একটি লক্ষ্য হল মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপন করা যাতে মূলধন, শ্রমিক ও বিভিন্ন প্রকার সেবার বিনিয়োগ সম্ভব হয়।

(ই) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা: এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) আসিয়ান দেশসমূহ পৃথিবীর সকল অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। আসিয়ান এবং আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে খেলার দল, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আদান-প্রদান করা হয়।

(খ) আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মতে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্বন্ধই আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন অধিক শক্তিশালী করবে।

প্রশ্ন ২। তিনটি বিকল্প শক্তির কেন্দ্রের ভূমিকার বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভাজনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ইউরোপীয় সংঘ, আসিয়ান রাষ্ট্রগোষ্ঠী ও চীনের অর্থনৈতিক উন্নতি আমেরিকার আধিপত্যের ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।

ইউরোপীয় সংঘ: ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ধনী অর্থব্যবস্থার অধিকারী। ২০০৫ সালে এর আয় ছিল ১২ অযুত কোটি ইউরো। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ইউরো (Euro) আমেরিকার ডলারের প্রভুত্বের ক্ষেত্রে বিপদাশংকার সৃষ্টি করতে পারে। এর অর্থব্যবস্থার প্রভাব ইউরোপের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহের উপর বিস্তার করেছে। ইউরোপীয় সংঘের সম্মিলিত সামরিক শক্তি বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি। এর প্রধান দুটি সদস্য রাষ্ট্র বৃটেন ও ফ্রান্স রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

আসিয়ান রাষ্ট্রগোষ্ঠী: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচটি রাষ্ট্র— ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ‘ব্যাঙ্কক ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর করে ১৯৬৭ সালে আসিয়ান প্রতিষ্ঠা করে। আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য অনানুষ্ঠানিক সংঘাতবিহীন ও সহযোগিতাপূর্ণ একটি বিশেষ ধরনের পন্থা অবলম্বন করে। তা ‘আসিয়ান পন্থা’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৩ সালে তিনটি আসিয়ান সংস্থা নিয়ে আসিয়ান ইউরোপীয় সংঘের পথে অগ্রসর হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইতিমধ্যে আসিয়ানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল চুক্তি সম্পাদন করেছে।

চীন: চীন দেশের অর্থনৈতিক গতিবৃদ্ধির মাধ্যমে আমেরিকার অর্থনৈতিক গতিবৃদ্ধির তুলনায় নিজেকে অধিক শক্তিশালী করে তুলতে পারে। নিজ ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হিসাবে পরিণত হয়েছে। এর অর্থনৈতিক প্রগতির সঙ্গে অন্যান্য উপাদান; যেমন—মানবসম্পদ, ভৌগোলিক পরিসর, সম্পদরাজি, রাজনৈতিক প্রভাব প্রভৃতি এর প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছে এবং চীন দেশকে বিশ্বের ক্ষমতার তৃতীয় বৈকল্পিক উৎস হিসাবে গড়ে তুলেছে।

প্রশ্ন ৩। ভারত-চীন সম্পর্কের উপর একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও চীনের মধ্যে প্রথমাবস্থায় সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে চীন হঠাৎ ভারত আক্রমণ করে এবং ভারতের প্রতি বৈরিভাবাপন্ন হয়। ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করিতে অধিক আগ্রহী।

ভারত প্রথম থেকেই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল। ভারত প্রথমে চীনকে স্বীকৃতি দেয় এবং পরে রাষ্ট্রসংঘে চীনকে সমর্থন জানায়। ১৯৫৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই সময় চীন পঞ্চশীল নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। কিন্তু ১৯৬২ সালের ২রা অক্টোবর চীন ভারত আক্রমণ করে। ২১শে নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে। চীন ভারতের কয়েক হাজার মাইল এলাকা দখল করে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর শাসনকালে চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নতি লাভ করে নি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে চীন পাকিস্থানকে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশের আন্দোলনে ভারতের সমর্থনকে চীন পছন্দ করে নি। চীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন জানায়। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চীন-ভারত সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।

১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে তিন দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি ১৯৮৮ সালে চীন সফর করেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হ্রাস পায়। যৌথ কার্যকরী গোষ্ঠী গঠিত হয়। এই গোষ্ঠী মোট ৬ দফা বৈঠক করে।

১৯৯৬ সালের ২৮শে নভেম্বর চীনের প্রধানমন্ত্রী জিয়াং জেমিন চারদিনের ভারত সফরে আসেন। দুই দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০২ সালের মে মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ণনের চীন সফরের মাধ্যমে চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি শুরু হয়। দুই দেশ যুক্তিসঙ্গতভাবে সীমানা বিরোধ সমাধানের একটি কমিটি গঠন করতে স্থির করে। ভারত এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯৯২ সালের ৩৩.৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০০৬ সালে ১৮০ কোটি ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চীন সফর করেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীগণ A Shared Vision for the 21st Century নামে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতিকল্পে একটি বিরাট পদক্ষেপ। এটা আশাব্যঞ্জক যে আগামী বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অধিকতর উন্নতি লাভ করবে।

প্রশ্ন ৪। আসিয়ান সম্প্রদায় গঠন-প্রক্রিয়া সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের কয়েকটি রাষ্ট্র অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস্, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড সম্মিলিতভাবে ১৯৬৭ সালে আসিয়ান অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রাষ্ট্রগোষ্ঠীর সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিল। আসিয়ানের ২০০৩ সালের মহাসম্মেলনে ইউরোপীয় সংঘের অনুসরণে আসিয়ান সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে।

আসিয়ানের প্রধান তিনটি সংস্থা হল—

(অ) আসিয়ান নিরাপত্তা সংস্থা। 

(আ) আসিয়ান আর্থিক সংস্থা। এবং 

(ই) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা।

(অ) আসিয়ান নিরাপত্তা সংস্থা: এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। নিরাপত্তা-বিষয়ক এই রাষ্ট্রসমূহ প্রায়ই মিলিত হয়ে নিজ নিরাপত্তাজনিত সমস্যাসমূহ সমাধান করে।

(খ) এই রাষ্ট্রসমূহ তাহাদের এই অঞ্চলকে শান্তির অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলতে চায়। সেজন্য সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থী সমস্যাসমূহ দমন করার জন্য তারা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে।

(আ) আসিয়ান আর্থিক সংস্থা: এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের জন্য একটি সাধারণ বাজার ও উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং এই অঞ্চলের সামাজিক ও আর্থিক উন্নতির জন্য সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা।

(খ) এর অন্য একটি লক্ষ্য হল মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপন করা যাতে মূলধন, শ্রমিক ও বিভিন্ন প্রকার সেবার বিনিয়োগ সম্ভব হয়।

(ই) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা: এই সংস্থার প্রধান লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) আসিয়ান দেশসমূহ পৃথিবীর সকল অঞ্চলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। আসিয়ান এবং আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে খেলার দল, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আদান-প্রদান করা হয়।

(খ) আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মতে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সম্বন্ধই আসিয়ান রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন অধিক শক্তিশালী করবে। 

প্রশ্ন ৫। ভারত ও চীনের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়গুলি নিরসনে তোমার পরামর্শ দাও।

উত্তরঃ চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। 

সেই লক্ষ্যে কয়েকটি পরামর্শ নিচে দেওয়া হল:

(ক) ভারত ও চীনের নেতা ও বিষয়াগণের বেইজিং ও নূতন দিল্লী ভ্রমণ, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বারবার একত্র হওয়া প্রয়োজন।

(খ) পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে থাকা বিরোধসমূহ মীমাংসা করা উচিত।

(গ) দুটি দেশেরই নূতন অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উত্থান হয়েছে। তাদের নূতন অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বে নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য উভয়েরই সাধারণ কার্যসূচী গ্রহণ করা কর্তব্য।

(ঘ) বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

(ঙ) যাতায়াত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, সাধারণ অর্থনৈতিক স্বার্থ, বিশ্বের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রভৃতি উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ভবিষ্যতে অধিক ঘনিষ্ঠ করবে বলে আশা করা যায়।

প্রশ্ন ৬। নিম্নোক্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করে ইউরোপীয় সংঘ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখঃ

(ক) প্রতিষ্ঠা। 

(খ) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

(গ) তাৎপর্য।

উত্তরঃ বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপীয় সংঘ একটি শক্তিশালী বিকাশ শক্তির উৎস হিসাবে পরিগণিত।

(ক) ইউরোপীয় সংঘের প্রতিষ্ঠা: ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহকে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে। এই দেশগুলি ১৯৯২ সালে নেদারল্যান্ডের ম্যাসট্রিস্টে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এর মাধ্যমে ইউরোপীয় সংঘ গঠিত হয়।

(খ) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ইউরোপীয় সংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(অ) একটি সাধারণ বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতি।

(আ) আভ্যন্তরীণ ও ন্যায় বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা।

(ই) একটি সাধারণ মুদ্রা ব্যবস্থা তৈরি করা।

(গ) তাৎপর্য: বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপীয় সংঘের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি। এর অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ এবং এশিয়া ও চীনকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব বাণিজ্যে ইউরোপীয় সংঘের অংশের পরিমাণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিনগুণ বেশি। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ‘ইউরো’ আমেরিকার ডলারের চ্যালেঞ্জস্বরূপ। ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও কার্যসূচীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। ইউরোপীয় সংঘের সম্মিলিত সামরিক বাহিনী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। ব্রিটেন ও ফ্রান্স পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র।

প্রশ্ন ৭। ইউরোপীয় সংঘের প্রধান ক্ষেত্রসমূহ কি কি? বিশদভাবে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় সংঘ উৎকৃষ্ট আঞ্চলিক সংগঠন হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই সংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিশেষত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(ক) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে: ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ অর্থনীতি’। এর অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ এবং এশিয়া ও চীনকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব বাণিজ্যে ইউরোপীয় সংঘের অংশের পরিমাণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিনগুণ অধিক। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ইউরো’ আমেরিকার ডলারের চ্যালেঞ্জস্বরূপ।

(খ) রাজনৈতিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও কার্যসূচীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

(গ) সামরিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘের সামরিক প্রভাব লক্ষণীয়। বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে ইউরোপীয় সংঘের সামরিক শক্তির পরিচয় অতুলনীয়। কারণ ইউরোপীয় সংঘের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলি সামরিক ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ধন বিনিয়োগ করেছিল। ফলে মহাকাশ ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসাবে পরিগণিত হয়।

প্রশ্ন ৮। ইউরোপীয় সংঘকে কোন্ বিষয় একটি উচ্চ প্রভাবশালী আঞ্চলিক সংগঠন করে তুলেছে?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় সংঘ উৎকৃষ্ট আঞ্চলিক সংগঠন হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই সংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিশেষত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(ক) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে: ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ অর্থনীতি’। এর অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ এবং এশিয়া ও চীনকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব বাণিজ্যে ইউরোপীয় সংঘের অংশের পরিমাণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিনগুণ অধিক। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ইউরো’ আমেরিকার ডলারের চ্যালেঞ্জস্বরূপ।

(খ) রাজনৈতিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও কার্যসূচীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

(গ) সামরিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘের সামরিক প্রভাব লক্ষণীয়। বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে ইউরোপীয় সংঘের সামরিক শক্তির পরিচয় অতুলনীয়। কারণ ইউরোপীয় সংঘের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলি সামরিক ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ধন বিনিয়োগ করেছিল। ফলে মহাকাশ ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসাবে পরিগণিত হয়।

প্রশ্ন ৯। ইউরোপীয় সংঘের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ রাজনৈতিক প্রভাব: ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও কার্যসূচীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

কূটনৈতিক প্রভাব: ইউরোপীয় সংঘের কূটনৈতিক প্রভাব অপরিসীম। ইহা রাষ্ট্রসংঘের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। তাছাড়া নিরাপত্তা পরিষদে ইউরোপীয় সংঘের কতিপয় অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র আছে। ইউরোপীয় সংঘ কূটনীতি, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও আলোচনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, কিন্তু সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারে না। মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ে ইউরোপীয় সংঘ চীনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখে।

প্রশ্ন ১০। চীনে দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে এখনও কতিপয় অর্থনৈতিক প্রত্যাহ্বান বহাল আছে। এই প্রত্যাহ্বানসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিকাশে চীন যে পরিমাণ উন্নতি লাভ করেছে সেই অনুপাতে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কারণ এই সকল ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ উপাদান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনও প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দিয়াছে। যার ফলে চীনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও প্রকল্প রূপায়নের পরও প্রত্যেক নাগরিক নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা লাভ করতে পারে নি। কারণ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, পারিপার্শ্বিক অবক্ষয় এবং দুর্নীতির মতো উপাদানসমূহ এর প্রধান কারণ বলা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেগুলি নিম্নরূপ:

(ক) চীনে বেকার সমস্যা যথেষ্ট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। চীনে এখনও বেকারদের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।

(খ) মহিলা কর্মচারীগণের কাজের পরিবেশ ইউরোপের ১৮-১৯ শতকের পরিবেশের মতোই খারাপ।

(গ) পরিবেশের ক্ষতিগ্রস্থতা ও দুর্নীতিতে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।

(ঘ) চীনে আর্থিক বৈষম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(ঙ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

প্রশ্ন ১১। রাষ্ট্রসমূহের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিহিত থাকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়িত করার মধ্যে। উক্তিটির যুক্তিযুক্ততা দাও।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসমূহের নিজ নিজ বিকাশের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। এই ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া অসুবিধা ও সমস্যাসমূহ দূর করতে নির্দিষ্ট প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা আছে। একই সময়ে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হালে এই দিকসমূহের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। সুতরাং দেশের আঞ্চলিক সংগঠনের সাহায্যে সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতায়িতকরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থাগুলি শান্তি ও উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলিও উক্তিটি সমর্থন করে:

(ক) আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলি বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অনুভূতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

(খ) এটা দেশের আর্থিক বিকাশ ও জীবনযাত্রার মানদণ্ড উন্নত করতে সাহায্য করে।

(গ) আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে।

(ঘ) এই সংস্থাগুলি আঞ্চলিক তথা সমগ্র বিশ্বে শান্তির পরিবেশ উন্নত করতে সাহায্য করে।

(ঙ) বিশ্বে শক্তির সমতা রক্ষা করে, যা বিশ্বশান্তির সহায়ক।

(চ) আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহ সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ও সাধারণ মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলনে উৎসাহিত করে।

(ছ) অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা শক্তিশালী করে।

প্রশ্ন ১২। ভারত ও চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারত ও চীনের মধ্যে বিবাদের কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ভারত তিব্বতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে ভারতে আশ্রয় দিচ্ছে।

(খ) ভারত ও চীনের মধ্যে সীমানা নির্ধারক ম্যাকমোহন লাইন নিয়ে মতানৈক্য।

(গ) ১৯৬২ সালে চীনের ভারত আক্রমণ এবং ভারতীয় ভূখণ্ড দখল, যা এখনও ফিরিয়ে দেয় নি।

(ঘ) ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় চীন পাকিস্তানকে নানাভাবে সাহায্য, এমনকী যুদ্ধাস্ত্র দিয়েও সাহায্য করে।

(ঙ) ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের পরমাণু পরীক্ষার সময় চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ১৩। চীন যদিও অর্থনীতিতে নাটকীয়ভাবে উন্নতি লাভ করেছিল তথাপি সেখানে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া না পড়া অনেক ক্ষেত্র আছে। সেই ক্ষেত্রসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিকাশে চীন যে পরিমাণ উন্নতি লাভ করেছে সেই অনুপাতে অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কারণ এই সকল ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণ উপাদান উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনও প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দিয়াছে। যার ফলে চীনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও প্রকল্প রূপায়নের পরও প্রত্যেক নাগরিক নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা লাভ করতে পারে নি। কারণ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, পারিপার্শ্বিক অবক্ষয় এবং দুর্নীতির মতো উপাদানসমূহ এর প্রধান কারণ বলা যায়। যেসব ক্ষেত্রে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেগুলি নিম্নরূপ:

(ক) চীনে বেকার সমস্যা যথেষ্ট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। চীনে এখনও বেকারদের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি।

(খ) মহিলা কর্মচারীগণের কাজের পরিবেশ ইউরোপের ১৮-১৯ শতকের পরিবেশের মতোই খারাপ।

(গ) পরিবেশের ক্ষতিগ্রস্থতা ও দুর্নীতিতে চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।

(ঘ) চীনে আর্থিক বৈষম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(ঙ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

প্রশ্ন ১৪। বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর এক-মেরুশক্তি বিশ্বের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৯০ সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। মার্কিন একাধিপত্য নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিশ্বে আমেরিকার প্রভুত্বের দরুন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আমেরিকার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে চিন্তা শুরু করেন।

চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এক-মেরু বিশ্বে প্রত্যাহ্বান জানানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। চীন বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্র। জনসংখ্যার ভিত্তিতে চীন প্রথম। চীনের অর্থনীতি দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। মাও-পরবর্তী চীনে, সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ মাথাপিছু বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়েছে।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক অধিক উন্নতি লাভ করেছে। চীন পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র। চীন বেসরকারিকরণ ও মুক্ত বাণিজ্য নীতি অবলম্বন করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে চীনের আর্থিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীনের বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল মজুত ভাণ্ডার আছে, ফলে চীন অন্যান্য দেশে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগে সক্ষম। চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেছে।

প্রশ্ন ১৫। অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চীনের উত্থান সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ চীন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকত। ১৯৭৮ সালে চীনের তৎকালীন নেতা ডেঙ চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ‘মুক্ত দ্বার’ নীতি গ্রহণ করেন। এই নীতি অনুসারে বিদেশি ধন বিনিয়োগ ও প্রাদ্যোগিক ক্ষেত্রে চীনকে মুক্ত করে দেওয়া হয়। চীন অবাধ বাণিজ্যে প্রবেশ করে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই দেশ সমগ্র বিশ্বের এক কেন্দ্রস্থল হয়ে পড়ে। চীনের এই মুক্ত অর্থব্যবস্থা তাদের নেতা ডেঙ-এর দেশের প্রতি এক উপহার। নূতন অর্থনৈতিক নীতির জন্য চীন নিজ অর্থব্যবস্থাকে জড়তা থেকে মুক্ত হওয়ার সুবিধা দেয়। কৃষিক্ষেত্রের ব্যক্তিকরণের জন্য কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় তথা গ্রামীণ অর্থব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। কৃষি এবং উদ্যোগ উভয় ক্ষেত্রেই চীনের অর্থব্যবস্থার উন্নতির হার লক্ষণীয় এবং সব উন্নতিশীল দেশের কাছে ঈর্ষণীয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৬। আসিয়ান (ASEAN)-এর লক্ষ্য এবং সাফল্য বর্ণনা কর।

উত্তরঃ আসিয়ানের লক্ষ্য: আসিয়ানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ নিম্নরূপ –

(ক) আসিয়ান ভুক্ত দেশ সমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

(খ) উক্ত এলাকার রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আদান-প্রদান বৃদ্ধি করা।

(গ) আসিয়ান ভুক্ত দেশ সমূহের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা।

আসিয়ানের সাফল্য: প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আসিয়ান নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। আসিয়ান একটি দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে গড়ে উঠেছে। এর “ভিশন ২০২০” আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে আসিয়ানের বহিঃ দৃষ্টি সম্পন্ন ভূমিকার সংজ্ঞা নিৰ্দ্ধারিত করেছে। ইহা আলোচনা ও আদান প্রদানের ব্যাপারে উৎসাহিত করে। আসিয়ান কম্বোডিয়ার সংঘর্ষ, পূর্ব টাইমোরের সংকট সমাপ্তিতে মধ্যস্থতা করেছে এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহের সহযোগিতার বিষয়সমূহ আলোচনা নির্মিত প্রতিবৎসর বৈঠকে মিলিত হয়। আসিয়ান সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ক্ষমতা, বিশেষকরে, ক্রমবিকাশশীল এশীয় অর্থ নীতিসমূহ যেমন ভারত ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং বিনিয়োগকারী অংশীদার হিসাবে এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা একে একটি আকর্ষক প্রস্তাবনা হিসাবে উপস্থাপিত করছে।

প্রশ্ন ১৭। জাপান কি একটি বিকল্প শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে ফলপ্রসুভাবে কার্য করতে পারে?

উত্তরঃ জাপান হল একমাত্র দেশ যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু বোমা দ্বারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তা সত্ত্বেও যুদ্ধের পর জাপান দ্রুতগতিতে উন্নতি লাভ করে। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত এবং অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে, কিন্তু উৎপাদনের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তিতে তৈরি উল্লেখযোগ্য উৎপাদন সামগ্রী হল- সোনি, প্যানাসোনিক, হোল্ডা, সুজুকি, টয়োটা ও মাজদা। বর্তমানে জাপানের অর্থনীতি আমেরিকার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। জাপান জি-৮-এ একমাত্র এশীয় দেশ।

জাপান হল রাষ্ট্রসংঘের বার্ষিক বাজেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থ যোগানকারী দেশ। রাষ্ট্রসংঘের বাজেটে মোট ২০% ব্যয় জাপান প্রদান করে।

এইগুলি সত্ত্বেও আমাদের মতে জাপানে একটি বিকল্প শক্তির কেন্দ্রবিন্দু রূপে কাজ করতে পারবে না। এর বাস্তব কারণ হল ১৯৫১ সাল থেকে আমেরিকার সঙ্গে জাপানের একটি নিরাপত্তা আঁতাত আছে।

জাপানী সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে—“জাপানী জনগণ যুদ্ধকে কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌম অধিকার হিসাবে এবং আন্তর্জাতিক বিবাদ নিষ্পত্তিকল্পে কোন দেশে বলপ্রয়োগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে।” এমতাবস্থায় জাপান কখনই আমেরিকার একাধিপত্যের প্রত্যাহ্বানস্বরূপ হতে পারে না।

প্রশ্ন ১৮। ডোকালাম সংকটের উপর একটি আলোচনা প্রস্তুত কর।

উত্তরঃ তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে ভুটানের হা উপত্যকা এবং পশ্চিমে ভারতের সিকিম রাজ্যের মধ্যবর্তী একটি মালভূমি ও উপত্যকার নাম ডোকালাম। ১৯৬১ সাল থেকে এই স্থানটি ভুটানী মানচিত্রে ভুটানের অংশ হিসাবে দেখানো আছে, কিন্তু চীনও এই স্থানটি তাদের দেশের অংশ বলে দাবি করে আসছে। ভুটান এবং চীনের মধ্যে কয়েকদফা আলোচনার পরও এই সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০১৭ সালের জুন মাসের ৮ তারিখে চীনের সেনাবাহিনী ডোকালা পাসের কাছে পাথরের বাঙ্কারগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় এবং একদল নির্মাণকর্মীকে বুলডোজার ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী নিয়ে রাস্তা তৈরির কাজে লাগায়। এই ঘটনায় ভুটান সরকার স্বাভাবিকভাবেই বিচলিত হয়ে পড়ে। ১৯৪৯ সালের বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি অনুযায়ী ভুটানকে বিদেশনীতি ও প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের সাহায্য নিতে হবে। 

তাই ভারতীয় সেনা ২০১৭ সালের ১৬ই জুন বিশাল বাহিনী নিয়ে চীনা সৈন্যের মুখোমুখি হয় এবং তাদের রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়। দু-মাসের কিছু বেশি সময় ভারত ও চীনের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধং দেহি মনোভাব দেখিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান করে এবং প্রয়োজনীয় যুদ্ধ সরঞ্জামের যোগান অব্যাহত রাখে। এমতাবস্থায় কূটনৈতিক স্তরে দফায় দফায় আলোচনা চলতে থাকে। অবশেষে ২০১৭ সালের ২৮শে আগস্ট দুই দেশই যৌথ বিবৃতিতে আপোষ মীমাংসার ঘোষণা করে, যদিও চীন পরিষ্কারভাবে এখনও রাস্তা তৈরির ব্যাপারে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেনি। যাই হোক, ভারতীয় সেনাবাহিনী পরিস্থিতির উপর সজাগ দৃষ্টি রেখেছে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নোক্তগুলি ক্রম অনুসারে সাজাও:

(ক) বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তি।

(খ) ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা।

(গ) ইউরোপীয় সংঘ প্রতিষ্ঠা।

(ঘ) আসিয়ান ( ASEAN) আঞ্চলিক সংঘ প্রতিষ্ঠা।

উত্তরঃ (খ) ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা।

(গ) ইউরোপীয় সংঘ প্রতিষ্ঠা।

(ঘ) আসিয়ান ( ASEAN) আঞ্চলিক সংঘ প্রতিষ্ঠা।

(ক) বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তি।

প্রশ্ন ২। আসিয়ান প্রণালী নিম্নোক্ত কোনটির প্রতি সম্পর্কিত?

(ক) আসিয়ান সদস্যদের জীবনযাত্রা প্রণালী প্রতিফলিত করে।

(খ) আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা ও মত বিনিময়।

(গ) আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের রাস্তা।

(ঘ) আসিয়ান সদস্যরাষ্ট্র অনুসৃত প্রতিরক্ষা নীতি।

উত্তরঃ (ক) আসিয়ান সদস্যদের জীবনযাত্রা প্রণালী প্রতিফলিত করে।

প্রশ্ন ৩। নিম্নোক্তগুলির মধ্যে কোনটি ‘মুক্ত দ্বার নীতি গ্রহণ করেছিল?

(ক) চীন। 

(খ) ইউরোপীয় সংঘ।

(গ) জাপান। 

(ঘ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

উত্তরঃ চীন।

প্রশ্ন ৪। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) ১৯৬২ সালে চীন _____  ভারত সীমানা বিরোধ মূলত _____ এবং ______  এলাকায় ছিল।

উত্তরঃ অরুণাচল প্রদেশ, আকসাই চীন।

(খ) আসিয়ান আঞ্চলিক পর্ষদ ______ সালে গঠিত হয়েছিল।

উত্তরঃ ১৯৯৪।

(গ) ১৯৭২-এ চীন ______ সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল।

উত্তরঃ আমেরিকার।

(ঘ) ______ পরিকল্পনা ১৯৪৮ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রভাবিত করেছিল।

উত্তরঃ মার্শাল।

(ঙ) হল আসিয়ানের একটি সংস্থা যা নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।

উত্তরঃ আসিয়ান আঞ্চলিক পর্ষদ।

প্রশ্ন ৫। আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ গঠনের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নত করা।

(খ) এর অপর একটি লক্ষ্য হল সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব বোধ তৈরি করা।

(গ) আঞ্চলিক সংস্থা তাদের সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বিকাশ তরান্বিত করে।

(ঘ) আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির সমতা তৈরি করে যাতে মহাশক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ তাদের ‘দাদাগিরি’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

(ঙ) আঞ্চলিক সংস্থাগুলি তাদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসার করে। বৈদেশিক বাণিজ্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে এবং দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী করে তোলে।

(চ) আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে। যৌথ নিরাপত্তা অধিক কার্যকরী এবং অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল।

প্রশ্ন ৬। ভৌগোলিক অবস্থান কিভাবে আঞ্চলিক সংস্থা গঠন প্রভাবিত করতে পারে?

উত্তরঃ ভৌগোলিক অবস্থান আঞ্চলিক সংস্থা গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতা বিকাশ লাভ করে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ সাধারণভাবে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সহযোগিতাবোধ বৃদ্ধি করে যা আঞ্চলিক সংস্থাসমূহকে শক্তিশালী করে। ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সাধারণ রীতিনীতি, পরম্পরা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বার্থ, সমস্যা প্রভৃতি গড়ে ওঠে। এই সাধারণ চেতনা তাদের মধ্যে সাধারণ ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। ভৌগোলিক অখণ্ডতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আন্তঃরাষ্ট্র বাণিজ্যে উৎসাহিত করে।

প্রশ্ন ৭। আসিয়ান ভিশন ২০২০-এর উপাদানসমূহ কি কি?

উত্তরঃ আসিয়ান ১৯৬৭ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের পাঁচটি দেশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আসিয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা। আসিয়ান অতি দ্রুতগতিতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হচ্ছে। ‘ভিশন ২০২০’ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালনের কথা ব্যক্ত করেছে। ‘ভিশন ২০২০’-তে আশা ব্যক্ত করা হয়েছে যে এটি একটি শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। আসিয়ান এই অঞ্চলের বিবাদ ও বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধা করতে উৎসাহিত করে যা পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করবে।

প্রশ্ন ৮। আসিয়ান গোষ্ঠীর স্তম্ভ ও উদ্দেশ্যসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আসিয়ানের ২০০৩ সালের মহাসম্মেলনে ইউরোপীয় সংঘের অনুসরণে আসিয়ান গোষ্ঠী (ASEAN Community) গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

আসিয়ান গোষ্ঠী নিম্নোক্ত তিনটি স্তম্ভ নিয়ে গঠিত:

(ক) আসিয়ান নিরাপত্তা গোষ্ঠী (ASEAN Security Community)

(খ) আসিয়ান অর্থনৈতিক গোষ্ঠী (ASEAN Economic Community)

(গ) আসিয়ান সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ( ASEAN Socio Cultural Community)

আসিয়ান গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য: আসিয়ান গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) আসিয়ান গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা।

(খ) সামাজিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বিকাশ।

(গ) আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশসমূহের জন্য উৎপাদন ভিত্তি ও সাধারণ বাজার তৈরি করা।

(ঘ) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষা করা।

(ঙ) আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতি উন্নত করা।

প্রশ্ন ৯। চীনের বর্তমান অর্থনীতি কি কি ক্ষেত্রে এর নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি থেকে পৃথক?

উত্তরঃ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে চীনের বর্তমান অর্থনীতি ব্যবহারিক অর্থনীতি থেকে পৃথক:

(ক) ১৯৪৯ সালে চীন গণরাজ্য প্রতিষ্ঠার পর চীনে সোভিয়েত ধাঁচের পরিকল্পিত এবং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি অনুসরণ করা হত। কিন্তু বর্তমানে চীনের অর্থনীতি বেসরকারিকরণ ও মুক্ত বাণিজ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

(খ) নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে কৃষি ও শিল্প সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। কিন্তু বর্তমানে কৃষি ও শিল্প বেসরকারি খণ্ডে পরিচালিত।

(গ) রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থনীতিতে বেসরকারি শিল্প এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্থান ছিল না। কিন্তু বর্তমান অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি চীনের অর্থব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

(ঘ) নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের কোন স্থান ছিল না। কিন্তু বর্তমানে চীনকে বৈদেশিক লগ্নীর আকর্ষণীয় দেশ বলে গণ্য করা হয়।

(ঙ) চীনের নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিতে মুক্ত বাজার ও অবাধ প্রতিযোগিতা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে চীনের অর্থনীতি অবাধ প্রতিযোগিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য।

প্রশ্ন ১০। ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালীন সমস্যাসমূহ কিভাবে সমাধান করেছিল? ইউরোপীয় সংঘ গঠনের প্রচেষ্টাসমূহের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দাও।

উত্তরঃ ইউরোপীয় সংঘ ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সংস্থা, যা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউরোপীয় সংঘকে ইউরোপীয়ান কমন মার্কেট বা ইউরোপীয়ান কমন কমিউনিটি বলা হয়।

দুই বিশ্বযুদ্ধ অতি স্বল্পকালীন সময়সীমার মধ্যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ৬ বছরে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক, বাহ্যিক ও মানবসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই সময়কালে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের অনেকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও সম্পর্কের অবনতি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে অধিকাংশ ইউরোপীয় নেতাগণ উপলব্ধি করেন যে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক পুনর্গঠিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তারা ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে বাধ্য হন এবং কালক্রমে তারা একটি সংস্থা গঠন করেন যা ইউরোপীয় সংঘ বা European Union নামে পরিচিত।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের প্রচেষ্টাসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল যুদ্ধের দ্বারা ইউরোপীয় ঐক্য ও সংহতি নূতন মাত্রা পায়। ইউরোপীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের জন্য আমেরিকা ‘মার্শাল পরিকল্পনা’র আওতায় ইউরোপীয় দেশসমূহকে আর্থিক সহায়তা দেয়।

(খ) ‘মার্শাল পরিকল্পনা’ অনুযায়ী পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহে আর্থিক সহায়তা যোগানের জন্য ১৯৪৮ সালে ইউরোপীয় আর্থিক সহযোগিতা’ (European Economic Cooperation) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

(গ) সদস্যরাষ্ট্রগুলির নীতিসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য ১৯৪৯ সালে ‘ইউরোপীয় পরিষদ’ (Council of Europe) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

(ঘ) ১৯৫১ সালে পূর্ব ইউরোপের ৬টি দেশ (ইতালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি এবং লাক্সেমবার্গ) প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং এর মাধ্যমে ‘ইউরোপীয় কয়লা এবং ইস্পাত গোষ্ঠী’ (European Coal and Steel Community) গঠন করে।

(ঙ) ১৯৫৭ সালে এই ৬টি রাষ্ট্র রোম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী’ (European Economic Community) গঠন করে। তারা ‘ইউরোপীয় আণবিক শক্তিগোষ্ঠী’ (European Atomic Energy Community) নামে অপর একটি সংস্থা গঠন করে।

(চ) ১৯৭৯ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর’ একটি সংসদ গঠিত হয়েছিল। ইউরোপীয় সংসদের সদস্যগণ এই অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমূহকে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করে। তারা নেদারল্যান্ডের ম্যাসট্রিস্টে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এর মাধ্যমে ইউরোপীয় সংঘ (European Union) গঠিত হয়। ম্যাসট্রিস্ট চুক্তি (Treaty of Maastricht) স্বাক্ষরের পর ইউরোপীয় গোষ্ঠীসমূহ ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে’ সংঘবদ্ধ হয় এবং একটি সাধারণ উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ১১। কি কারণে ইউরোপীয় সংঘ আজ এক প্রভাবশালী আঞ্চলিক সংস্থা?

উত্তরঃ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় সংঘ উৎকৃষ্ট আঞ্চলিক সংগঠন হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই সংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিশেষত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(ক) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে: ইউরোপীয় সংঘ বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ অর্থনীতি’। এর অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ এবং এশিয়া ও চীনকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব বাণিজ্যে ইউরোপীয় সংঘের অংশের পরিমাণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তিনগুণ অধিক। ইউরোপীয় সংঘের মুদ্রা ইউরো’ আমেরিকার ডলারের চ্যালেঞ্জস্বরূপ।

(খ) রাজনৈতিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘ রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও কার্যসূচীর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গ্রেট ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

(গ) সামরিক ক্ষেত্র: ইউরোপীয় সংঘের সামরিক প্রভাব লক্ষণীয়। বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে ইউরোপীয় সংঘের সামরিক শক্তির পরিচয় অতুলনীয়। কারণ ইউরোপীয় সংঘের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলি সামরিক ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে ধন বিনিয়োগ করেছিল। ফলে মহাকাশ ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বিশ্বের দ্বিতীয় রাষ্ট্র হিসাবে পরিগণিত হয়।

প্রশ্ন ১২। চীন ও ভারতের অর্থনৈতিক উত্থান একমেরুশক্তি বিশ্বে প্রত্যাহ্বান করার বিরাট সম্ভাবনা আছে। তুমি কি এই উক্তিতে একমত? তোমার যুক্তি দাও।

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তির পর একমেরুশক্তি বিশ্বের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৯০ সালের পর বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আমেরিকা একাধিপত্য নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিশ্বে আমেরিকার প্রভুত্বের দরুন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আমেরিকার আধিপত্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে চিন্তা শুরু করেন।

বিশ্বের কতিপয় চিন্তাবিদ ও নেতৃবৃন্দ এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি একমেরু বিশ্বে প্রত্যাহ্বান জানানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। 

নিম্নলিখিত কারণে এই মতের সত্যতা প্রতিপন্ন করা যায়:

(ক) চীন ও ভারত উভয়ই বিশ্বের দুই বৃহৎ রাষ্ট্র। জনসংখ্যার ভিত্তিতে চীন প্রথম এবং ভারত দ্বিতীয়। চীন ও ভারত প্রত্যেকেরই জনসংখ্যা ১০০ কোটির অধিক। ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি।

(খ) উভয় দেশেরই অর্থনীতি দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। মাও-পরবর্তী চীনে (১৯৭৭–১৯৮৭) রেকর্ড পরিমাণ মাথাপিছু বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হয়েছে।

(গ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন ও ভারত উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করেছে। ভারত ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে আমেরিকা অধিক আগ্রহী।

(ঘ) চীন ও ভারত উভয়ই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। ভারতও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের দাবিদার।

(ঙ) চীন ও ভারত উভয়েই বেসরকারিকরণ ও মুক্ত বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করেছে।

(চ) ভারতের বৈদেশিক নীতি জোট নিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং ভারত সর্বদাই স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে। ভারত বহুবার আমেরিকার নীতি ও ক্রিয়াকলাপের সমালোচনা করেছে।

(ছ) চীন ও ভারত উভয় রাষ্ট্রেরই বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল মজুতভাণ্ডার আছে এবং উভয় দেশই অন্য দেশে অধিক পরিমাণে বিনিয়োগ করতে পারে।

সুতরাং আমরা নিশ্চিন্তে বলতে পারি যে অদূর ভবিষ্যতে একমেরুশক্তি বিশ্বব্যবস্থা বহুমেরুশক্তি বিশ্বব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে।

প্রশ্ন ১৩। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী করার মধ্যে রাষ্ট্রসমূহের শান্তি ও উন্নতির সম্ভাবনা নিহিত আছে। এই উক্তির যথার্থতা ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসমূহের নিজ নিজ বিকাশের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। এই ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া অসুবিধা ও সমস্যাসমূহ দূর করতে নির্দিষ্ট প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা আছে। একই সময়ে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হালে এই দিকসমূহের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। সুতরাং দেশের আঞ্চলিক সংগঠনের সাহায্যে সকল ক্ষেত্রে ক্ষমতায়িতকরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থাগুলি শান্তি ও উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলিও উক্তিটি সমর্থন করে:

(ক) আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলি বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অনুভূতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

(খ) এটা দেশের আর্থিক বিকাশ ও জীবনযাত্রার মানদণ্ড উন্নত করতে সাহায্য করে।

(গ) আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে।

(ঘ) এই সংস্থাগুলি আঞ্চলিক তথা সমগ্র বিশ্বে শান্তির পরিবেশ উন্নত করতে সাহায্য করে।

(ঙ) বিশ্বে শক্তির সমতা রক্ষা করে, যা বিশ্বশান্তির সহায়ক।

(চ) আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহ সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ও সাধারণ মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলনে উৎসাহিত করে।

(ছ) অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা শক্তিশালী করে।

প্রশ্ন ১৪। ভারত ও চীনের মধ্যে স্পর্শকাতর বিষয়গুলি চিহ্নিত কর। বৃহৎ সহযোগিতার জন্য এইগুলি কিভাবে সমাধান করা যায়? তোমার মতামত দাও।

উত্তরঃ ভারত ও চীনের মধ্যে প্রথমাবস্থায় সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে চীন হঠাৎ ভারত আক্রমণ করে এবং ভারতের প্রতি বৈরিভাবাপন্ন হয়। ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করিতে অধিক আগ্রহী।

ভারত প্রথম থেকেই চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী ছিল। ভারত প্রথমে চীনকে স্বীকৃতি দেয় এবং পরে রাষ্ট্রসংঘে চীনকে সমর্থন জানায়। ১৯৫৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই সময় চীন পঞ্চশীল নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। কিন্তু ১৯৬২ সালের ২রা অক্টোবর চীন ভারত আক্রমণ করে। ২১শে নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে। চীন ভারতের কয়েক হাজার মাইল এলাকা দখল করে। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর শাসনকালে চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নতি লাভ করে নি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে চীন পাকিস্থানকে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশের আন্দোলনে ভারতের সমর্থনকে চীন পছন্দ করে নি। চীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন জানায়। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চীন-ভারত সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।

১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে তিন দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি ১৯৮৮ সালে চীন সফর করেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হ্রাস পায়। যৌথ কার্যকরী গোষ্ঠী গঠিত হয়। এই গোষ্ঠী মোট ৬ দফা বৈঠক করে।

১৯৯৬ সালের ২৮শে নভেম্বর চীনের প্রধানমন্ত্রী জিয়াং জেমিন চারদিনের ভারত সফরে আসেন। দুই দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০২ সালের মে মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি কে. আর. নারায়ণনের চীন সফরের মাধ্যমে চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি শুরু হয়। দুই দেশ যুক্তিসঙ্গতভাবে সীমানা বিরোধ সমাধানের একটি কমিটি গঠন করতে স্থির করে। ভারত এবং চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯৯২ সালের ৩৩.৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০০৬ সালে ১৮০ কোটি ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চীন সফর করেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীগণ A Shared Vision for the 21st Century নামে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতিকল্পে একটি বিরাট পদক্ষেপ। এটা আশাব্যঞ্জক যে আগামী বছরগুলিতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অধিকতর উন্নতি লাভ করবে।

চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। 

সেই লক্ষ্যে কয়েকটি পরামর্শ নিচে দেওয়া হল:

(ক) ভারত ও চীনের নেতা ও বিষয়াগণের বেইজিং ও নূতন দিল্লী ভ্রমণ, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বারবার একত্র হওয়া প্রয়োজন।

(খ) পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে থাকা বিরোধসমূহ মীমাংসা করা উচিত।

(গ) দুটি দেশেরই নূতন অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উত্থান হয়েছে। তাদের নূতন অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং এশিয়া তথা সমগ্র বিশ্বে নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য উভয়েরই সাধারণ কার্যসূচী গ্রহণ করা কর্তব্য।

(ঘ) বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

(ঙ) যাতায়াত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, সাধারণ অর্থনৈতিক স্বার্থ, বিশ্বের রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতা প্রভৃতি উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ভবিষ্যতে অধিক ঘনিষ্ঠ করবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top