Class 11 Political Science Chapter 3 নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 3 নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 3 নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 3 নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্ব
পাঠ: ৩
প্ৰথম খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। নির্বাচন কী ?
উত্তরঃ যে পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি স্থির বা নির্ধারণ করে তাকে নির্বাচন বলা হয়।
প্রশ্ন ২। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ভোটাধিকার দানের নীতিকে সার্বজনীন প্রাপ্ত-বয়স্কের ভোটাধিকার বলা হয়।
প্রশ্ন ৩। সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সংখ্যালঘু শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকল্পে যে প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা আছে তাকে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব বলে।
প্রশ্ন ৪। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নীতি হল প্রকৃত গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের সর্বশ্রণীর বিভিন্ন মতামত ও স্বার্থ জনগণের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রভাব অনুযায়ী আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ লাভ করা। জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) ও লেকী (Lecky) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রধান সমর্থক ছিলেন। এই পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রাপ্ত ভোটের সমানুপাতে আইনসভায় প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রশ্ন ৫। প্রথম প্রাক্তন পদ (সাধারণ প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ যে নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সর্বাধিক ভোট পেতে হয় অর্থাৎ অন্যান্য প্রতিনিধি হতে অধিক ভোট পেতে হয়, সেই পদ্ধতিতে প্রথম প্রাক্তন পদ বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে বিজয়ী প্রার্থীর জালান্ডের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রয়োজন হয় না।
৬। প্রত্যক্ষ নির্বাচন বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ যে নির্বাচন পদ্ধতিতে নাগরিকগণ তাদের প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচন করেন তাকে প্রত্যক্ষ নির্বাচন বলে।
প্রশ্ন ৭। পরোক্ষ নির্বাচন বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় নাগরিকগণ সরাসরি তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন না। নাগরিকগণ দেশের শাসনকার্যে অংশ গ্রহণের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমে নির্বাচকমণ্ডলী গঠন করেন এবং এই নির্বাচক মণ্ডলী শাসনকার্যে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। ভারতে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যসভার সদস্যদের পরোক্ষ পদ্ধতিতে নির্বাচিত করা হয়।
প্রশ্ন ৮। কোন্ দেশে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র প্রচলিত আছে?
উত্তরঃ সুইজারল্যাণ্ডে (ছোটো ছোটো ক্যান্টনগুলোতে)
প্রশ্ন ৯। কোন দেশে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল?
উত্তরঃ গ্রীসে (নগর রাজ্যগুলোতে)।
প্রশ্ন ১০। বৃত্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার সমর্থক কারা?
উত্তরঃ সমিতি প্রধান সমাজতন্ত্রবাদে সমর্থনকারীরা।
প্রশ্ন ১১। ভারতের সংবিধানের কোন্ ধারায় নির্বাচন কমিশনের উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ ধারায় নির্বাচন কমিশনের উল্লেখ আছে।
প্রশ্ন ১২। ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্য কী?
উত্তরঃ ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্য হল অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কার্য পরিচালনা করা।
প্রশ্ন ১৩। ভারতের নির্বাচন কমিশনের মুখ্য কমিশনারকে কে নিযুক্ত করেন?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ১৪। ভারতের নির্বাচন কমিশন কি বহু-সদস্য বিশিষ্ট?
উত্তরঃ হ্যাঁ। ভারতের নির্বাচন কমিশন বহু- সদস্য বিশিষ্ট।
প্রশ্ন ১৫। নির্বাচক মণ্ডলী কী?
উত্তরঃ কোন প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সম্মিলিত ভোটার সমষ্টিকে নির্বাচক মণ্ডলী বলা হয়।
প্রশ্ন ১৬। নির্বাচনী ক্ষেত্র বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ একজন প্রতিনিধি দেশের যে অঞ্চল বা এলাকা হতে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আইন সভায় যোগদান করেন, সেই অঞ্চল বা এলাকাকে একটি নির্বাচনী ক্ষেত্র বলা হয়।
প্রশ্ন ১৭। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ একটি নির্বাচক মণ্ডলী নির্বাচিত করে ভার মাধ্যমে শাসন কার্য পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে, তাকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বলে।
প্রশ্ন ১৮। ভারতের কোথায় পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ছিল?
উত্তরঃ ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী ছিল।
প্রশ্ন ১৯। সঠিক উত্তর বেছে বের করোঃ
(ক) নীচের কোনটির ভিত্তিতে ভারতে নাগরিকদের ভোটাধিকার নির্ধারিত হয়?
(অ) সম্পত্তির পরিমাণ।
(আ) শিক্ষার।
(ই) বাসস্থানের মর্যাদার।
(ঈ) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের।
উত্তরঃ (ঈ) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের।
প্রশ্ন ২০। নীচের কোনটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়?
(ক) পারিবারিক সভায় আলোচনা।
(খ) শ্রেণীর মনিটর নির্বাচন।
(গ) একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বাছাই।
(ঘ) গ্রাম সভা কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত।
উত্তরঃ (ঘ) গ্রাম সভা কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন ২১। ভোটাধিকার কি ধরনের অধিকার?
উত্তরঃ রাজনৈতিক অধিকার।
প্রশ্ন ২২। বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ন্যূনতম বয়স কত?
উত্তরঃ ১৮ বছর।
প্রশ্ন ২৩। পূর্বে ভারতীয় ভোটারদের নূন্যতম বয়স কত ছিল?
উত্তরঃ ২১ বছর।
প্রশ্ন ২৪। কত তম সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতে ভোটাধিকারের বয়সসীমা ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়?
উত্তরঃ ৬১-তম সংশোধনীর মাধ্যমে।
প্রশ্ন ২৫। কত সালে ভারতে ভোটাধিকারের বয়স সীমা ২১ বছর হতে ১৮ বছর করা হয়?
উত্তরঃ ১৯৮৯ সালে।
প্রশ্ন ২৬। ভারতে কত সদস্য-বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন আছে?
উত্তরঃ তিন সদস্য-বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন।
প্রশ্ন ২৭। কতসালে কোন্ দেশে নারীরা প্রথম ভোটাধিকার লাভ করে?
উত্তরঃ ১৯১৮ সালে, ব্রিটেনে নারীরা প্রথম ভোটাধিকার লাভ করে।
প্রশ্ন ২৮। ‘ভুয়ো ও জাল ভোটার’ চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সংযোজন কী?
উত্তরঃ ডিজিটাল ক্যামেরা।
প্রশ্ন ২১। ভারতের প্রথম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কে ছিলেন?
উত্তরঃ সুকুমার সেন।
প্রশ্ন ৩০। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তি হচ্ছে বয়স/শিক্ষা/সম্পত্তি। (শুদ্ধ উত্তরটি বেছে নাও)
উত্তরঃ বয়স।
প্রশ্ন ৩১। কোন্ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতবর্ষে ভোটাধিকারের বয়সসীমা ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়?
উত্তরঃ ৬১তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে।
প্রশ্ন ৩২। সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে ভারতীয় নাগরিকদের ভোটাধিকার স্বীকৃত?
উত্তরঃ ৩২৬নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ৩৩। প্রথমজনই জয়ী ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ নির্বাচনে যে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সর্বাধিক ভোট লাভ করে সেই প্রার্থীই নির্বাচিত/ বিজয়ী ঘোষিত হয়। এই পদ্ধতিতে বিজয়ী হওয়ার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের প্রয়োজন হয় না।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গণতন্ত্রে নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ গণতন্ত্র ও নির্বাচন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এই প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে জনগণের মঙ্গলার্থে দেশ শাসন করেন। জন প্রতিনিধিগণ যদি জনগণের স্বার্থে কার্য সম্পাদন না করেন, তাহলে জনগণ পরবর্তী নির্বাচনে সেই জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যাখ্যান করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ রাজনৈতিক শিক্ষা লাভ করেন। গণতন্ত্রে জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে সক্ষম হন।
প্রশ্ন ২। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি দাও?
উত্তরঃ সার্বজনীন প্রাপ্তবয়নের ভোটাধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি নিম্নরূপঃ
(ক) জন শক্তির প্ৰকাশঃ গণতন্ত্রের অর্থ হল জনগণ কর্তৃক জনগণের পক্ষে শাসন। তাই গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার। সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনগণ তাদের অধিকারগুলো সুরক্ষা করেন।
(খ) সাম্য শক্তির প্ৰকাশঃ গণতন্ত্র সাম্যের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্রে সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারে এবং সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার তা সুনিশ্চিত করে।
প্রশ্ন ৩। প্রতিনিধিত্বের যে কোনো দুটি পদ্ধতির উল্লেখ করো?
উত্তরঃ প্রতিনিধিত্বের দুটি পদ্ধতি নিম্নরূপঃ
(ক) প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি (First Past the Post system) বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি।
(খ) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (Proportional Representation)
প্রশ্ন ৪। পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতে পৃথক নির্বাচক মণ্ডলীর সূচনা করেছিল। এই ব্যবস্থার অর্থ হল, কোন একটি বিশেষ গোষ্ঠী হতে প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হলে, কোবলমাত্র সেই গোষ্ঠীর লোকেরাই যোগ্য ভোটদাতা রূপে বিবেচিত হবে। এইরূপ ব্যবস্থায় সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের লোক ভোটদাতা হিসাবে গণ্য হবেন না।
প্রশ্ন ৫। সংরক্ষিত নির্বাচনী ক্ষেত্র এবং পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তরঃ সংরক্ষিত নির্বাচনী ক্ষেত্র এবং পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
(ক) সংরক্ষিত নির্বাচনী কেন্দ্রের সকল ভোটারগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারী। কেবল প্রার্থীকে বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের লোক হতে হবে যে বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর জন্য কেন্দ্রটি সংরক্ষিত। কিন্তু পৃথক নির্বাচক মণ্ডলীর ক্ষেত্রে প্রার্থী ও ভোটদাতারা একই গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের হতে হবে।
(খ) ভারতীয় সংবিধানে তপশীলভুক্ত জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচনী কেন্দ্রের ব্যবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পৃথক নির্বাচক মণ্ডলীর ব্যবস্থা ভারতে ব্রিটিশ সরকার সূচনা করেছিলেন। স্বাধীনতার পর এই ব্যবস্থার বিলোপ সাধন হয়।
প্রশ্ন ৬। ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ কেন পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
অথবা,
ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ কেন পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতে পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠী হতে প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হলে, কেবলমাত্র সেই গোষ্ঠীর লোকেরাই যোগ্য ভোটদাতা হিসাবে বিবেচিত হতেন। ভারতের সংবিধান সভার অনেক সদস্যের এই ব্যাপারে সংশয় ছিল যে এই ব্যবস্থায় কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না। অধিকন্ত ভারতের ঐক্য ও সংহতির মুল স্রোত হতে সেই বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই ভারতীয় সংবিধান প্রণেতাগণ এই ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন নি।
প্রশ্ন ৭। প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি (First Past the post system) ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতিকে সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বলা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের মোট নির্বাচক মণ্ডলীকে ভৌগলিক ভাবে এলাকা হিসাবে বিভাজিত করা হয়। এই এলাকাগুলিকে নির্বাচনী চক্র বলা হয়। প্রতিটি নির্বাচনী চক্র বা এলাকা হতে একজন প্রতিনিধি আইন সভায় নির্বাচিত হন। বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট লাভ করে সেই প্রার্থী নির্বাচিত ঘোষিত হয়। এই পদ্ধতিতে বিজয়ী প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের প্রয়োজন হয় না। তাই এই পদ্ধতিকে প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি বলা হয়, কারণ এই ব্যবস্থায় যে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা অধিক ভোট পায় সে-ই নির্বাচিত হয়।
প্রশ্ন ৮। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় সমাজের সকল শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করা হয়। এই প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন মতামত বা স্বার্থ তাদের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রভাব অনুযায়ী আইন সভায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ লাভ করে। জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) এই প্রতিনিধিত্বের প্রধান সমর্থক ছিলেন।
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দুটি প্রধান পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি দুটি নিম্নরূপঃ
(ক) হেয়ার পদ্ধতি বা একক হস্তান্তর যোগ্য ভোট পদ্ধতি।
(খ) তালিকা পদ্ধতি।
প্রশ্ন ৯। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দুটি পদ্ধতির উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সমানুপাতিক পদ্ধতির প্রধান দুটি পদ্ধতি নিম্নরূপঃ
(ক) হেয়ার পদ্ধতি বা একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট পদ্ধতি (Hare system or Method of Single Transferable vote)।
(খ) তালিকা পদ্ধতি (List system)।
প্রশ্ন ১০। ডিলিমিটেশন কমিশন (Delimitation Commission) এর দুটি কার্যের উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি ডিলিমিটেশন কমিটি নিয়োগ করেন। এই কমিশনের প্রধান দুটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) সমগ্র দেশের নির্বাচনী কেন্দ্রগুলির সীমানা নির্ধারণ করা।
(খ) প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রের জনসংখ্যার বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করে অনুসূচিত জাতি (Schedule Caste) এবং জনজাতি (Schedule Tribes) দের সংখ্যাধিক্য অনুসারে তাদের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচিত কেন্দ্র চিহ্নিত করা।
প্রশ্ন ১১। ভারতের নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের কার্যকালের নিরাপত্তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ একজন মুখ্য কমিশনার এবং অন্য দুইজন সহাকারী নির্বাচন কমিশনার নিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন গঠিত। তাঁদের ভারতের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। তাঁদের কার্যকাল ৬ বৎসর। এই ৬ বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর অথবা অবসর গ্রহণের পর অর্থাৎ যেটি পূর্বে সম্পূর্ণ হবে সেটির পর তাদের কার্যকালের সমাপ্তি ঘটে। অবশ্য কার্যকল সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সুপারিশে অন্যান্য কমিশনারদের অপসারিত করতে পারেন। কিন্তু মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে রাষ্ট্রপতি সংসদের উভর কক্ষের বিশেষ সংখ্যা গরিষ্ঠতায় অনুমোদিত সুপারিশক্রমে অপসারিত করেন।
প্রশ্ন ১২। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের স্বপক্ষে দুটি যুক্তি দাও?
উত্তরঃ সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের স্বপক্ষে যুক্তি দুটি হল নিম্নরূপঃ
(ক) সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়নের ভোটাধিকারে গণশক্তির প্রকাশ ঘটে। গণতন্ত্র যেহেতু জনগণের শাসন সেহেতু রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত।
(খ) সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের মাধ্যমে সাম্যনীতির প্রতিষ্ঠা হয়। গণতন্ত্রে সকলের সমান সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত। সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের মাধ্যমে সামানীতির প্রকাশ ঘটে।
প্রশ্ন ১৩। সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের চারজন সমর্থকের নাম লেখো?
উত্তরঃ হেনরি মেইন, মেকলে, জে. এস. মিল এবং লেকি।
প্রশ্ন ১৪। নারীদের ভোটাধিকারের স্বপক্ষে দুটি যুক্তি প্রদর্শন করো?
উত্তরঃ নারীদের ভোটাধিকারের স্বপক্ষে দুটি যুক্তি নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রীয় আইন নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। এইজন্য রাষ্ট্রের শাসকবর্গের নির্বাচনের ক্ষেত্রে পুরুষের মতো নারীরও ভোটাধিকার থাকা উচিত।
(খ) সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা করে অগ্রসর হচ্ছে। সুতরাং নারীদের ভোটাধিকার থাকা উচিত।
প্রশ্ন ১৫। নারীদের ভোটাধিকারের বিপক্ষে দুটি মুক্তি দাও?
উত্তরঃ নারীদের ভোটাধিকারের বিপক্ষে নিম্নোক্ত দুটি যুক্তি দেওয়া যেতে পারেঃ
(ক) নারীরা স্বামীদের মতানুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ না করলে স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তাই অনেকে নারীদের ভোটাধিকারের বিপক্ষে মত পোষণ করেন।
(খ) নারীদের সহজাত গুণ হল তারা সন্তানকে লালন-পালন করে ও স্নেহ ভালবাসা দিয়ে সংসারকে ঐক্যসূত্রে বেঁধে রাখে। ভোটাধিকার পেলে তারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে এবং এর ফলে তাদের সহজাত গুণ নষ্ট হবে। এই জন্য অনেকেই নারীদের ভোটাধিকার প্রদানের বিরোধী।
প্রশ্ন ১৬। রাষ্ট্রে বসবাসকারীদের মধ্যে কাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয় না?
উত্তরঃ প্রতিটি রাষ্ট্রেই উন্মাদ, গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি এবং বিদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয় না।
প্রশ্ন ১৭। নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তরঃ সংবিধান অনুসারে একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং প্রয়োজনবোধে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। বর্তমানে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা আছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এই নির্বাচন কমিশনের সভাপতি হিসাবে কার্য পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রপতি কমিশনারদের নিয়োগ করেন। তাঁদের কার্যকাল ৬ বৎসর।
প্রশ্ন ১৮। নির্বাচন কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ নির্বাচন সাধারণত তিন প্রকার; যথা-
(ক) সাধারণ নির্বাচন।
(খ) অন্তবর্তী নির্বাচন।
(গ) উপ-নির্বাচন।
প্রশ্ন ১৯। অন্তর্বর্তী নির্বাচন বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট কার্যকাল পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করলে বা লোকসভা বা বিধানসভা ভঙ্গ করে দেওয়া হলে যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় তাকে অন্তর্বর্তী নির্বাচন বলে।
প্রশ্ন ২০। উপনির্বাচন বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট কার্যকাল পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কোন নির্বাচিত সদস্য পদত্যাগ করলে বা পদচ্যুত হলে বা মৃত্যু হলে তার আসন শূন্য হয়। ওই শূন্য আসন পূর্ণ করার জন্য যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হয়, তাকে উপনির্বাচন বলে।
প্রশ্ন ২১। নির্বাচন কমিশনের দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ নির্বাচন কমিশনের দুটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) প্রতিষ্ঠান সমূহের নির্বাচনের জন্য আইনানুসারে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন করা।
(খ) সচিত্রা ভোটার পরিচয় পত্র প্রদান করা।
প্রশ্ন ২২। নির্বাচন কমিশনের কার্যের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ নির্বাচন কমিশনের কার্যের সীমাবদ্ধতা নিম্নরূপঃ
(ক) কমিশনের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব।
(খ) কমিশনের নিজস্ব কোন কর্মচারী নেই। কমিশন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মচারীর উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন ২৩। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের অন্যান্য দুই সহকারী নির্বাচন কমিশনারদের কিভাবে পদচ্যুত করা হয়ঃ
উত্তরঃ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছাড়া অন্যান্য সহকারী নির্বাচন কমিশনারদের কেবল রাষ্ট্রপতিই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সুপারিশে অপসারণ করতে পারেন।
প্রশ্ন ২৪। সীমানা নির্ধারণ আয়োগ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ যে সংস্থা নির্বাচন ক্ষেত্র ও আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পন্ন করে তাকে সীমানা নির্ধারণ আয়োগ বলে। এই আয়োগ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন ২৫। সীমানা নির্ধারণ আয়োগের প্রধান কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সীমানা নির্ধারণ আয়োগের প্রধান কার্য হল নির্বাচন চক্র বা ক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণ করা এবং জনবিন্যাসের বৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণ করে অনুসূচিত জাতি ও জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন চিহ্নিত করা।
প্রশ্ন ২৬। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার কী?
উত্তরঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারকে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার বলে। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তি হচ্ছে বয়স।
প্রশ্ন ২৭। কার তত্ত্বাবধানে ভারতবর্ষে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়? ভারতবর্ষে কোন্ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ভারতের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভারতবর্ষে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতবর্ষে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ১৯৫২ সালের ১৭ এপ্রিল প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ২৮। বর্তমানে ভারতবর্ষে কত সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন রয়েছে? এই কমিশনে কে সভাপতিত্ব করেন?
উত্তরঃ বর্তমানে ভারতবর্ষে তিন-সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন রয়েছে। এই কমিশনে মুখ্য নির্বাচন আয়ুক্ত সভাপতিত্ব করেন।
প্রশ্ন ২৯। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের বিপক্ষে দুটি যুক্তি প্রদর্শন করো?
উত্তরঃ সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের বিপক্ষে দুটি যুক্তি হলঃ
(ক) সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তি হল বয়স। এই নীতিতে ভোটারের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। তাই অজ্ঞ, অশিক্ষিত রাজনৈতিক সচেতনহীন ব্যক্তিকে ভোটাধিকার দেওয়া উচিত নয়।
(খ) রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে অজ্ঞ, অশিক্ষিত ভোটারদের সম্যক জ্ঞান না থাকার দরুন তারা অযোগ্য প্রার্থীকে পছন্দ করতে পারে যা সুস্থ রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।
প্রশ্ন ৩০। “সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হওয়া” (FPTP) এবং সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ “সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হওয়া” এবং সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে দুটি পার্থক্য হল—
(১) “সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হওয়া” (FPTP) প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন ব্যবস্থায় সমগ্র দেশকে ভৌগোলিক ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নির্বাচনী চক্র বা অঞ্চলে বিভাজিত করা হয়। কিন্তু সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় বিশাল ভৌগোলিক এলাকাকে নির্বাচনী চক্র রূপে নির্ধারণ করা হয়। সমগ্র দেশকে একটি নির্বাচনী চক্র বা এলাকা হিসাবেও গণ্য করা হতে পারে।
(২) “সর্বাধিক ভোটে বিজয়ী হওয়া” অর্থাৎ সাধারণ প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে সংখ্যাধিক্য ভোট (৫০%+১) পাওয়ার প্রজোয়ান হয় না। কেবল অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অধিক ভোট পেতে হয়। কিন্তু সমানুপাতিক ব্যবস্থায় একজন প্রার্থীকে সংখ্যাধিক্য ভোট পেয়ে বিজয়ী হতে হয়।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতে কেন প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভারতে সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বা প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতিকে ইংরাজিতে First past the Post পদ্ধতি বলা হয়।
ভারতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) এই পদ্ধতি অতি সহজ। সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি বোঝতে পারে।
(খ) এই পদ্ধতি দেশের ঐক্য ও সংহতির সহায়ক।
(গ) সংসদীয় গণতন্ত্র সাফল্যের চাবিকাঠি। কারণ এই পদ্ধতি আইন সভায় একটি স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন ২। ভারতের সংবিধানে উল্লিখিত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী (Separate Electorate) ব্যবস্থার সূচনা করেছিল। এই ব্যবস্থায় কোন একটি বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় হতে প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হলে, কেবলমাত্র সেই গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের লোকেরাই ভোটদাতা হিসাবে বিবেচিত হত। ভারতের সংবিধান সভার সদস্যরা এই ব্যবস্থাকে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করতে রাজি হন নি। তাঁরা এর পরিবর্তে অনুন্নত অনুসূচীত জাতি ও জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচনী কেন্দ্র (Reserved Constituency) এর সূচনা করেন যেখানে নির্দিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্রের সকল ভোটদাতারাই ভোটদান করবে। তবে প্রার্থীকে কেবল সেই গোষ্ঠী বা জাতির হতে হবে যে জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য আসনটি সংরক্ষিত করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে অনুসূচীত জাতি ও জনজাতিদের জন্য লোকসভা, রাজ্যিক বিধানসভা ও স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠানগুলিতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩। ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকার একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ ভারতের নির্বাচন কমিশন একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য দুইজন সহাকারি নির্বাচন কমিশনার নিয়ে গঠিত। তাঁদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন কমিশনের সভাপতি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্য দুইজন সহকারি কমিশনারের কার্যকাল ৬ বৎসর।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন কমিশনের সভাপতি হলেও তাঁর ক্ষমতা অন্য দুই সহকারি কমিশনারদের চেয়ে অধিক নয়। তবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি অন্য দুই সহকারি কমিশনারকে অপসারণ করতে পারেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারিত করতে হলে অপসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব সংসদের উভয় কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যার অধিকাংশ ও উপস্থিত ভোটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের দ্বারা সমর্থিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাঁকে অপসারণ করতে পারেন। এই অপসারণ পদ্ধতির জন্য আমরা বলতে পারি যে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কার্যকালের সুনিশ্চয়তা আছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশন ভারতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কার্য পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন ৪। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয় চারটি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয় চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনঃ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। এই কমিশনের উপর কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয়।
(খ) শাসন যন্ত্রের অপব্যবহার রোধ করাঃ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শাসকদল কর্তৃক শাসন যন্ত্রের অপব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
(গ) সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারঃ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সার্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার প্রবর্তন করা প্রয়োজন। ভারতে এই ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
প্রশ্ন ৫। ভারতের নির্বাচন কমিশনের তিনটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন বিষয়ক কিছু দায়িত্ব ৩২৪ (১) ও ৩২৪(৬) ধারায় দেওয়া হয়েছে।
সেই অনুযায়ী কমিশনের তিনটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) ভোটার তালিকা প্রণয়নঃ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির নির্বাচন সংক্রান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন।
(খ) পরিচয় পত্রপ্রদাননঃ কমিশন ভুয়ো ও জাল ভোট প্রদান বন্ধ করার জন্য ‘সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র’ প্রদানের দায়িত্ব হাতে নিয়েছে।
(গ) নির্বাচনী প্রতীক দানঃ কমিশন জাতীয় ও আঞ্চলিক দল নির্ধারণ করে স্বীকৃতি পূর্বক তাদেরকে নির্বাচনী ‘প্রতীক’ দান করে।
প্রশ্ন ৬। ভারতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য গৃহীত যে কোনো তিনটি পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভারতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে তিনটি নিম্নরূপঃ
(ক) বিজ্ঞপ্তি জারিঃ নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন পেশ, মনোনয়ন পত্র পরীক্ষা, মনোনয়ন প্রত্যাহার, নির্বাচনের সময় সূচী ইত্যাদির উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
(খ) মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারঃ মনোনয়ন পত্র পরীক্ষার পর প্রার্থীদের তা প্রত্যাহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়। যদি কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক না হন, তাহলে সেই প্রার্থী তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেন।
(গ) ভোট প্রদানঃ নির্দিষ্ট দিনে ভোটারগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই উদ্দেশ্যে কমিশন ই. ভি. এম ব্যবহার করে।
প্রশ্ন ৭। ভারতে নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলির সীমানা কীভাবে নির্ধারিত করা হয়?
উত্তরঃ সমগ্র দেশের নির্বাচনী কেন্দ্রের সীমানা নির্ধারণের জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন কমিশন নিয়োগ করেন, যার নাম ডিলিমিটেশন কমিশন। এই কমিশন ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় তার কার্য সম্পাদন করে। ডিলিমিটেশন কমিশন নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলির সীমানা নির্ধারণের পর এই কমিশন প্রতিটি কেন্দ্রে জনসংখ্যার বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করে। যে নির্বাচনী কেন্দ্রে অনুসূচীত জনজাতির সংখ্যা সমানুপাতিক হারে বেশি, সেই কেন্দ্রটি অনুসূচীত জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। অনুসূচীত জাতির ক্ষেত্রে কমিশন দুইটি বিষয় লক্ষ্য করে। প্রথমে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিকে চিহ্নিত করে, যেখানে অনুসূচীত জাতির সংখ্যা বেশি। এরপর সেই কেন্দ্রগুলিকে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়। এটি করা হয় কারণ অনুসূচীত জাতি সাধারণত সমগ্র দেশেই ছড়িয়ে আছে। প্রত্যেক কমিশনের কার্যকালের সময়ে এই নির্বাচনী কেন্দ্রগুলি পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন ৮। ভারতে কেন সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়?
অথবা,
ভারতে ‘প্রথম জনেই বিজেতা পদ্ধতি গ্রহণ করার দুটি কারণ উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতে সাধারণ প্রতিনিধিত্ব বা প্রথম প্রাক্তন পদ (First past the post) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। ভারতের সংবিধানে এই পদ্ধতির উল্লেখ আছে।
এর প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) এই পদ্ধতি অতি সহজ সরল। সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি বোঝতে পারে।
(খ) এই পদ্ধতিতে সাধারণভাবে সমগ্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব স্থাপন করা সম্ভব হয়।তাই এই পদ্ধতি দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার সহায়ক।
(গ) এই ব্যবস্থায় প্রতিনিধি ও নির্বাচক মণ্ডলীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
(ঘ) এই ব্যবস্থার সংসদীয় গণতন্ত্র সাফল্য লাভ করে। কারণ তা আইন সভায় একটি স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান করে।
প্রশ্ন ৯। সাধারণ প্রতিনিধিত্ব (First- past-the-post) এবং সমানুপাতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য দেখাও।
অথবা,
সাধারণ প্রতিনিধিত্ব (First-Past-the-post) এবং সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ত্বের মধ্যে প্রভেদ দেখাও।
উত্তরঃ উভয় ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সাধারণ প্রতিনিধিত্ব (FPTP) ব্যবস্থায় সমগ্র দেশকে ভৌগোলিক ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নির্বাচনী চক্র বা অঞ্চলে বিভাজিত করা হয়। কিন্তু সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় বিশাল ভৌগোলিক এলাকাকে নির্বাচনী চক্ররূপে নির্ধারণ করা হয়। সমগ্র দেশকে একটি নির্বাচনী চক্র বা এলাকা হিসাবেও গণ্য করা হতে পারে।
(খ) সাধারণ প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় প্রতি নির্বাচন চক্র বা এলাকা হতে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সমানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি নির্বাচনী চক্র বা এলাকা হতে একাধিক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।
(গ) সাধারণ প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে সংখ্যাধিক্য ভোট (৫০%+১) পাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কেবল অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অধিক ভোট পেতে হয়। কিন্তু সমানুপাতিক ব্যবস্থায় একজন প্রার্থীকে সংখ্যাধিক ভোট লাভ করতে হয়।
(ঘ) সাধারণ প্রতিনিধি ব্যবস্থায় একটি দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের তুলনার অধিক আসন লাভ করতে পারে। যেমন ১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভারতী জাতীয় কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৪৮.০ শতাংশ, কিন্তু আসন লাভ করেছিল ৪১৫টি। কিন্তু সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে একটি দল ভোটপ্রাপ্তির ভিত্তিতে আসন লাভ করে।
প্রশ্ন ১০। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার পরীক্ষামূলক আলোচনা করো?
উত্তরঃ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অপরিহার্য শর্ত হল নির্বাচন ব্যবস্থা। এই নির্বাচন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ সংস্থা থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪নং ধারায় নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এরই নাম নির্বাচন কমিশন।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপর গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভরশীল। তাই ভারতীয় সংবিধান প্রণেতাগণ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আইন বা শাসন বিভাগের হাতে না দিয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের হাতে দিয়েছেন। সংবিধানের ৩২৪(২) ধারানুসারে একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে পারে। তবে সদস্য-বিশিষ্ট কমিশন গঠিত হলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সভাপতি হিসাবে কাজ করবেন। বর্তমানে তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন রয়েছে। রাষ্ট্রপতি কমিশনারদের ৬ বৎসরের জন্য নিয়োগ করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের সংবিধানের ৩২৪(১) ও ৩২৪ (৬) ধারানুসারে বেশ কিছু দায়িত্ব আছে। সেগুলি হল-ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন, পরিচয় পত্র প্রদান, নির্বাচন পরিচালনা, রাজনৈতিক দলগুলিকে স্বীকৃতি ও প্রতীক দান, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, সরকার, নির্বাচনে কর্তব্যরত কর্মচারী ও ভোটারদের আচরণ বিধি নির্ধারণ করা প্রভৃতি।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাজের সীমাবদ্ধতাও আছে। নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা ও কার্যকাল রাষ্ট্রপতি স্থির করেন। কিন্তু তা কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শেই করেন।অধিকও কমিশন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেন। এর ফলে সরকারের শাসন যন্ত্রের প্রভাব থেকে যায়। বর্তমানে নির্বাচনে বিভিন্ন ব্যবস্থার যেমন- মাইক্রো-অবজারভার, ডিজিটেল ক্যামেরার ব্যবহার প্রভৃতি কমিশনের মর্যাদা অনেকখানি বৃদ্ধি করেছে।
প্রশ্ন ১১। ভারতে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব আলোচনা করো?
অথবা,
ভারতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আলোচনা করো?
উত্তরঃ দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করে আসছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ভারতে নির্বাচন কার্য পরিচালনা করছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় গণতন্ত্রের অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এবং কার্যকরী প্রতিষ্ঠান।
ভারতের নির্বাচন কমিশন আজ পর্যন্ত ১৬টি লোকসভা, অনেক বিধানসভার সাধারণ নির্বাচন এবং লোকসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচন পরিচালনা করেছে। এই নির্বাচন পরিচালনার সময়কাল পর্যালোচনা করে আমরা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিম্নরূপ পাইঃ
(ক) নির্বাচন কমিশন উগ্রপন্থি অধ্যুষিত আসাম, পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর রাজাগুলিতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েও নির্বাচন কার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছে।
(খ) ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারকালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী যখন আততায়ীর হাতে নিহত হন তখন সাধারণ নির্বাচন স্থগিত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল।
(গ) ২০০২ সালে গুজরাট বিধানসভা ভঙ্গ হওয়ার পর সরকার নির্বাচন করতে আগ্রহী হলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর ছিল না। বলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করাতে রাজি হয় নি।
উপরের আলোচনা হতে এটাই বুঝা যায় যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ভারতীয় গণতন্ত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ১২। আইনসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনীর মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠানগুলিতে এবং ৭৪-তম সংশোধনীর মাধ্যমে শহরাঞ্চলের স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠানগুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানে লোকসভা ও রাজ্যিক বিধান সভাগুলিতে এখনও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি। এই ধরনের আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন। তাই মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। কিন্তু সেই বিলটি সংসদে খারিজ হয়ে যায়। ২০১০ সালের মার্চ মাসে পুনরায় সংসদে লোকসভা ও রাজ্যিক বিধানসভা গুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিল আনা হয়। এই বিলে লোকসভা ও রাজ্যিক বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভা এই বিলটি অনুমোদন করেছে। এই বিল অনুযায়ী লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ১৮১টি আসন এবং রাজ্যিক আইন সভাগুলির ৪,১০৯টি আসনের মধ্যে ১৩৭০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। কিন্তু বর্তমানে এই বিলটি লোকসভায় বিবেচনাধীন অবস্থায় আছে।
মহিলা সংরক্ষণ বিলের পক্ষে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বামদলগুলি তাদের সমর্থন প্রদান করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি এবং জনতাদল (সংযুক্ত) এই বিলের বিরোধিতা করছে।
প্রশ্ন ১৩। আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভার সদস্যগণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থায় নির্বাচনের জন্য সমগ্র দেশকে কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক এলাকা হতে সম-জনসংখ্যার। ভিত্তিতে এক বা একাধিক প্রতিনিধি সংখ্যাধিক্য ভোটে আইনসভায় নির্বাচিত হন। এই প্রকার প্রতিনিধিত্বের পক্ষে যুক্তি হল যে নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সকল ভোটারের স্বার্থই সমান। সুতরাং সামগ্রিক দৃষ্টিতে নির্দিষ্ট এলাকা হতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া গণতন্ত্রের পক্ষে মঙ্গলজনক। অধিকন্তু এই প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা অত্যন্ত সহজ ও সরল।
প্রশ্ন ১৪। আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক পদ্ধতির পক্ষে এবং বিপক্ষে দুটি করে যুক্তি দাও?
উত্তরঃ আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের স্বপক্ষে দুটি যুক্তি হল নিম্নরূপঃ
(ক) নির্দিষ্ট এলাকার সকল মানুষের স্বার্থ সমান। সুতরাং নির্দিষ্ট এলাকা হতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া উচিত।
(খ) এই প্রকার প্রতিনিধিদের অত্যন্ত সহজ ও সরল বলে গণ্য করা হয়।
আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের বিরুদ্ধেও কতিপয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মত পোষণ করেছেন।
আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের বিপক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তিগুলো প্রদর্শন করা হয়ে থাকেঃ
(ক) আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি নয়।
(খ) আঞ্চলিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়।
প্রশ্ন ১৫। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্য কী? সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দুজন বলিষ্ঠ সমর্থকের নাম লেখো।
উত্তরঃ সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মূল লক্ষ্য হল দেশের বিভিন্ন মতামত বা স্বার্থ তাদের শক্তি বা প্রভাব অনুযায়ী আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর ফলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বলিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন – জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill) এবং লেকি (Lecky)।
প্রশ্ন ১৬। সংখ্যা লঘিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিসমূহ উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সংখ্যা লঘিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের পদ্ধতিসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব।
(খ) সীমাবদ্ধ ভোটপদ্ধতি।
(গ) স্তূপীকৃত ভোট পদ্ধতি।
(ঘ) দ্বিতীয় ব্যালট পদ্ধতি।
প্রশ্ন ১৭। ইস্রায়েলে কীভাবে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অনুসরণ করা হয়?
উত্তরঃ ইস্রায়েলের নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের অনুসরণ করা হয়। প্রতি চার বৎসর পর পর ইস্রায়েলের পার্লামেন্ট ‘নাসেট’ – এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করে। কিন্তু নির্বাচকরা (ভোটাররা) প্রার্থীর ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচিত করেন না। তারা দলীয় ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচিত করেন। একটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আইন সভার আসন লাভ করে। এর ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল আইন সভায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়। কেবল কোনও দলকে আইনসভায় আসন পেতে হলে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ভোট পেতে হয়। এই জন্যই ইস্রায়েলে প্রায়ই বহুদলীয় কোয়ালিশন ব্যবস্থা দেখা যায়।
প্রশ্ন ১৮। প্রথম প্রাক্তন পদ প্রথা বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতিকে একাধিকত্ব বা বহুত্ব (Plurality) পদ্ধতিও বলা হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে দেশের মোট নির্বাচক মণ্ডলীকে ভৌগোলিক ভাবে এলাকায় বিভক্ত করা হয়। এই এলাকাগুলোকে নির্বাচনী চক্র বলা হয়। প্রত্যেক নির্বাচনী চক্র হতে একজন প্রতিনিধি আইনসভায় নির্বাচিত করা হয়। একটি নির্বাচনী চক্রে বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট লাভ করে সেই প্রার্থী নির্বাচিত হয়। বিজয়ী প্রার্থীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের প্রয়োজন হয় না। এই পদ্ধতিকে প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি বলা হয়।
প্রশ্ন ১৯। ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার যে কোনো চারটি দুর্বলতা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থার চারটি দুর্বলতা হলোঃ
(ক) ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মী সংখ্যা খুবই সীমিত। কমিশন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কর্মচারিদের সাহায্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তাই অনেক সময় নির্বাচনে শাসক দল কর্তৃক শাসনযন্ত্রের অপব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
(খ) অর্থবলের অপব্যবহারঃ নির্বাচনে হিসাব বহির্ভূত অর্থের ব্যবহার মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। ভারতে নির্বাচনের সময় অসাধু প্রার্থীরা অর্থের বিনিময়ে গরীব ভোটারদের ভোট ক্রয় করে নির্বাচনে জয়লাভ করে। ধনবান প্রার্থীরা দরিদ্র এলাকায় মদ, কম্বল, কাপড় ইত্যাদি বিতরণ করে গরীব ভোটারদের ভোট নিজেদের অনুকূলে আনতে সক্ষম হয়।
(গ) বাহুবলের ব্যবহারঃ ভারতে নির্বাচনের সময় অধিক মাত্রায় বাহুবলের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বাহুবলীদের সাহায্যে অসাধু প্রার্থীরা বুথ দখল, ভুয়ো ভোটদান প্রভৃতি দুষ্কর্ম সংঘটিত করে। যার ফলস্বরূপ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হয়। তাছাড়া আজকাল বাহুবলী অপরাধীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
(ঘ) সাধারণতঃ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলই জাতি, ধর্ম ইত্যাদির ভিত্তিতে প্রার্থীদের দলীয় টিকিট প্রদান করে। নির্বাচনের সময় জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে জোরদার প্রচার হয়। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ নির্বাচনী প্রচারে উন্নয়নমূলক বিষয়গুলোর গুরুত্ব হ্রাস পায়।
উপরোক্ত ত্রুটিগুলো দূর করার জন্য নির্বাচনী সংস্কারের আরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসকল ত্রুটি বা দুর্বলতা দূর করা একান্ত আবশ্যক।
প্রশ্ন ২০। ভারতে নির্বাচন সংস্কারের জন্য চারটি পরামর্শ দাও?
উত্তরঃ ভারতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় নিম্নোক্ত সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত।
(১) নির্বাচনে প্রার্থীদের অর্থবলের অপব্যবহার কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করা।
(২) অপরাধমূলক মামলায় জড়িত প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনুমতি না দেওয়া।
(৩) জাতি, ধর্ম বা অন্য কোনো উপায়ে প্রার্থীরা ভোটারকে যাতে প্রভাবিত করতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৪) ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মী সংখ্যা খুবই সীমিত। কমিশন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের সাহায্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তাই অনেক সময় নির্বাচনে শাসক দল কর্তৃক শাসনযন্ত্রের অপব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সংস্থা। নির্বাচনে শাসনযন্ত্রের অপব্যবহার যাতে না হয় নির্বাচন কমিশনের সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা।
প্রশ্ন ২১। আমাদের একটি স্বাধীন নির্বাচন আয়োগের প্রয়োজন কেন ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার একটি স্বাধীন নির্বাচন আয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪নং ধারা ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিচালনা করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং নীতি নির্ধারণ করার জন্য আমাদের একটি স্বাধীন নির্বাচন আযোগের নিযুক্তি দিয়েছে। ভারতীয় নির্বাচন আয়োগ এক সদস্য বিশিষ্ট বা বহুসদস্য বিশিষ্ট হতে পারে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এক সদস্য বিশিষ্ট ছিল। প্রধান নির্বাচনী আয়ুক্ত নির্বাচন আয়োগ পরিচালনা করলেও অন্যান্য আয়ুক্তদের চেয়ে বেশি ক্ষমতার অধিকারী নন। প্রধান আয়ুক্ত এবং অন্য দুই আয়ুক্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি যৌথমঞ্চ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুসারে এদেরকে নিয়োগ করেন। তাই শাসকদল তাদের পছন্দের লোক আযোগে নিয়োগ করার সুযোগ পায়। অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরোধী পক্ষের নেতা এবং মুখ্য ন্যায়াধীশের পরামর্শ থাকা আবশ্যক। সংবিধান নির্বাচন আয়োগের কার্যকালের নিরাপত্তার স্বীকৃতি দিয়েছে।
দীর্ঘকাল ধরে নির্বাচন আযোগ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে। নির্বাচন পদ্ধতির পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য আমাদের একটি স্বাধীন নির্বাচন আযোগের প্রয়োজন আছে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। নির্বাচনের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি কী কী?
উত্তরঃ ভোটারগণ প্রধানত তাদের প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ এই দুভাবে নির্বাচিত করেন। প্রত্যক্ষ নির্বাচনে ভোটারগণ প্রত্যক্ষভাবে তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করেন এবং পরোক্ষ নির্বাচনে ভোটারগণ তাদের প্রতিনিধিদের পরোক্ষভাবে নির্বাচন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচনের এই বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (First Past the post system): প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি বা First past the post পদ্ধতি বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই গ্রহণ করেছে। এই পদ্ধতিতে দেশের মোট নির্বাচক মণ্ডলীর ভৌগোলিকভাবে বিভাজিত করা হয়। এই এলাকাগুলোকে নির্বাচনী চক্র বলে। প্ৰত্যেক নির্বাচনী চক্র হতে একজন প্রতিনিধি আইন সভায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যে প্রার্থী সর্বাধিক ভোট পায় সেই প্রার্থী নির্বাচিত হয়। বিজয়ী প্রার্থীর সংখ্যাধিক্য ভোটের প্রয়োজন হয় না।
(খ) আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বঃ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন সভাই জনগণের প্রতিনিধি সভা। বর্তমানে পৃথিবীর বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের (Territorial Representation) ব্যবস্থ স্বীকৃতি লাভ করেছে। নির্বাচনের জন্য পুরো দেশকে কয়েকটি নির্বাচনী এলাকার বিভাজিত করা হয় এবং প্রত্যেক এলাকা হতে সম-জনসংখ্যার ভিত্তিতে এক বা একাধিক প্রতিনিধি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে আইন সভায় নির্বাচিত হন। আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি অতি সহজ ও সরল পদ্ধতি। অবশ্য সাম্প্রতিককালে কয়েকজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের সমালোচনা করেছেন।
(গ) বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিঃ বৃত্তিগত প্রতিনিধিত্ব (Functional Representation) পদ্ধতিতে প্রতিনিধিগণ সমাজের বিভিন্ন বৃত্তি বা পেশাভুক্ত গোষ্ঠীর দ্বারা আইন সভায় নির্বাচিত হন। বৃত্তিমূলক প্রতিনিধিত্বের ধারণা ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় মিরাব্যু (Mirabeau) নামক বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সর্বপ্রথম প্রদান করেছিলেন। সমিতি প্রধান সমাজতন্ত্রবাদ (Guild Socialism) এই পদ্ধতির প্রকৃত সমর্থক।
(ঘ) সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বঃ গণতন্ত্র জনগণের শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিই শাসন ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত হন। ফলে সংখ্যালঘু স্বাধ উপেক্ষিত হয়। জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে, “সংখ্যালঘিষ্ঠের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব গণতন্ত্রে র অপরিহার্য অঙ্গ।”
সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপঃ
(অ) সমানুপাতিক পদ্ধতি।
(আ) সীমাবদ্ধ ভোট পদ্ধতি।
(ই) স্তূপীকৃত ভোট পদ্ধতি।
(ঈ) দ্বিতীয় ব্যালট ভোট পদ্ধতি।
প্রশ্ন ২। ভারতে প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি কী প্রভাব বিস্তার করেছে?
উত্তরঃ ভারতে প্রথম প্রাক্তন পদ বা সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে এই পদ্ধতি বর্ণিত আছে। ভারতের জন্য পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী।
এই পদ্ধতি ভারতে নিম্নলিখিতভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেঃ
(ক) এই পদ্ধতি অতি সহজ ও সরল। সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি বোঝতে পারে সহজ ও সরল হওয়ার কারণে এই পদ্ধতি ভারতে জনপ্রিয়।
(খ) এই ব্যবস্থায় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলিকে কেন্দ্র এবং রাজ্য পর্যায়ে সরকার গঠনের সংখ্যাধিক্য পেতে সহায়তা করে।
(গ) এই পদ্ধতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলি জাতি বা সম্প্রদায় ভিত্তিক রাজনীতিতে নিরুৎসাহ বোধ করে।
(ঘ) এই ব্যবস্থায় সাধারণ ভাবে সকল জনগণের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত হয়। তাই দেশের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে এই পদ্ধতি খুবই উপযোগী।
(ঙ) এই পদ্ধতি সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য সহায়ক। কারণ এই পদ্ধতি আইন সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম।
সাধারণ প্রতিনিধিত্ব (FPTP) পদ্ধতি দ্বি-দলীয় শাসন ব্যবস্থায় সর্বোত্তম।
কিন্তু আমাদের দেশে এই পদ্ধতি অনেকাংশে সাফল্য লাভ করেছে।
প্রশ্ন ৩। ভারতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা কেন করা হয়েছে?
উত্তরঃ প্রথম প্রাক্তন পদ প্রথায় (FPTP) নির্দিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্রে যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পায়, তাকেই নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। অনেক সময় তা ছোট ছোট সমাজিক গোষ্ঠীর পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দেখা দেয়। ভারতের সামাজিক ব্যবস্থায় এটি আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি (সাধারণ প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি) তে অর্থবান ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী সকল নির্বাচনী কেন্দ্রেই বিজয়ী হবে এবং শোষিত সামাজিক গোষ্ঠী সর্বদাই প্রতিনিধিত্বহীন হয়ে থাকবে। আমাদের সংবিধান প্রণেতাগণ এই বিষয়ে অতি সতর্ক ছিলেন এবং তাঁরা সংখ্যালঘু অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্ত প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।
এই বিষয়টি স্বাধীনতার পূর্বেও আলোচিত হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য পৃথক নির্বাচক মণ্ডলীর (Separate electorate) ব্যবস্থা প্রদান করেছিলেন। এই ব্যবস্থায় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর লোকেরাই কেবলমাত্র ভোটদাতা হিসাবে গণ্য হয়েছিলেন।
গণপরিষন এই সমস্যা সমাধানের জন্য সংরক্ষিত নির্বাচনী কেন্দ্রের (Reserved Constituency) সূচনা করে। এই নির্দিষ্ট সংরক্ষিত নির্বাচনী কেন্দ্রের সকল ভোটদাতারাই ভোটদানের যোগ্য হবে। কেবল প্রার্থীকে সেই গোষ্ঠী বা জাতির সদস্য হতে হবে যে জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য আসনটি সংরক্ষিত।
সংখ্যালঘু অনুন্নত সামাজিক গোষ্ঠী বা জাতির সঠিক প্রতিনিধিত্বের জন্য একটি সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োজন। ভারতীয় সংবিধানে অনুসূচীত জাতি ও জনজাতিদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল দশ বৎসরের জন্য এবং সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাকে বছবার বর্ধিত করা হয়েছে।
মহিলাদের সঠিক প্রতিনিধিত্বের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানগুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারতের লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতেও আসন সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে লোকসভায় একটি বিল অনুমোদনের জন্য বিবেচনাধীন অবস্থায় আছে। ভারতে আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত কার্যটি সম্পাদন করে ডিলিমিটেশন কমিশন (Delimitation Commission)।
প্রশ্ন ৪। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলী আলোচনা করো।
অথবা,
ভারতীয় নির্বাচনী আয়োগের ক্ষমতা এবং কার্যাবলীর ওপর একটি টাকা লেখো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪(১) এবং ৩২৪(৬) ধারায় নির্বাচন কমিশনকে বেশ কিছু দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এই দায়িত্ব সংক্রান্ত কার্যগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) ভোটার তালিকা প্রণয়নঃ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন করে।
(খ) পরিচয় পত্র প্রদানঃ ভুয়ো ও জাল ভোট বন্ধ করার জন্য কমিশন ‘সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র’ প্রদান করে।
(গ) নির্বাচনী প্রতীকদানঃ কমিশন জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলি নির্ধারণ করে তাদের স্বীকৃতি ও প্রতীক প্রদান করে।
(ঘ) আচরণ বিধি স্থির করাঃ কমিশন রাজনৈতিক দল, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী, সরকার, কর্তব্যরত কর্মচারী ও ভোটারদের আচরণ বিধি তৈরি করে।
(ঙ) পরিদর্শক নিয়োগঃ নির্বাচনী আচরণ বিধি পালিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য কমিশন পরিদর্শক (Observer) নিয়োগ করতে পারে।
(চ) কর্মচারী নিয়োগঃ অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কার্য সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মচারীর জন্য কমিশন রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের নিকট অনুরোধ করতে পারে।
(ছ) নির্বাচন পরিচালনাঃ কোন নির্বাচনের পূর্বে কমিশন নির্বাচনের দিন-তারিখ, মনোনয়ন পত্র পেশ, পরীক্ষা ও প্রত্যাহারের সময়, তারিখ এবং ওই পত্রের বৈধতা বিচার করার তারিখ স্থির করে।
(জ) নির্বাচন স্থগিত বা বাতিলঃ নির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন কোন নির্বাচন কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিতে পারে।
(ঝ) পরামর্শ দানঃ রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনের নিকট কেন্দ্রীয় ও রাজ্যিক আইন সভার সদস্যদের অযোগ্যতা সম্পর্কে পরামর্শ চাইতে পারেন। এই ব্যাপারে কমিশন তাঁদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন ৫। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সুনিশ্চয়তার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
উত্তরঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের মূল ভিত্তি হল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন। সরকারের কমিশনের উপর কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয়।
(খ) নির্বাচনে শাসক দলের শাসনযন্ত্রের পক্ষপাতমূলক ব্যবহার প্রতিহত করা।
(গ) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকারের প্রবর্তন করা উচিত। ভারতীয় সংবিধানে ১৮ বৎসর বা তার উর্ধের সকল বয়ছ নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদান করা হয়েছে (Article 326)।
(ঘ) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রয়োজন হয়। এই সংস্থাগুলি সতর্কতার সঙ্গে নির্বাচন কার্য পরিচালনার ব্যাপারে কমিশনকে সহায়তা করে।
(ঙ) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ বাহিনী ও প্রয়োজন বোধে উপদ্রুত অঞ্চলে সামরিকবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা আছে। কারণ ভোটদান কালে নিরাপত্তা ও শান্তির বাতাবরণ অক্ষুণ্ণ থাকলে ভোটারগণ অবাধে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন। সুতরাং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ বাহিনী, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বল ও প্রয়োজন বোধে সমারিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হাতে নির্বাচনের সময় থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৬। ভারতের নির্বাচনী সংস্কারগুলোর প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর?
উত্তরঃ কোন নির্বাচনী ব্যবস্থাই ত্রুটিমুক্ত নয়। যে কোন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার দোষ বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন উপায় থাকে। ভারতেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রবর্তন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিগত ষাট বছরের নির্বাচনী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি দেখতে পাই। ভারতে নির্বাচনের সময় বাহুবল ও অর্থের ব্যবহার হয়। তাই কমিশনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই বাহুবল ও অর্থের প্রভাবকে প্রতিহত করতে হবে। তার জন্য নির্বাচনী সংস্কারের আরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বুথ দখল, অন্যের ভোটদান প্রভৃতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শাসক দলের প্রশাসন যন্ত্রের অপব্যবহার রোধ করতেও নির্বাচনী সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অধিকন্তু সাধারণ প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা উচিত। এই সকল ত্রুটিগুলি দূর করার জন্য নির্বাচনী সংস্কার একান্ত আবশ্যক।
প্রশ্ন ৭। ভারতের নির্বাচনী বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো?
উত্তরঃ নির্বাচন ব্যবস্থা আধুনিক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। এ কথা ভেবেই ভারতীয় গণপরিষদ গুরুত্ব সহকারে নির্বাচন ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছেন।
ভারতের নির্বাচনী বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় কতকাংশে প্রত্যক্ষ এবং কতকাংশে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। লোকসভা, বিধানসভা ও স্বশাসিত সংস্থাগুলোর সদস্যগণ প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। অপরদিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যসভার সদস্যগণ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।
(খ) ভারতে সম-ভোটাধিকার নীতি স্বীকৃত অর্থাৎ একজন ভোটারেরএকটি মাত্র ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। সকল ভোটারের ভোট মূল্য এক সমান।
(গ) ভারতের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা জনসংখ্যার অনুপাতে ও আঞ্চলি ভিত্তিতে গঠিত।
(ঘ) প্রতিটি নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার আছে।
(ঙ) একজন প্রার্থীর নির্বাচনী রায়ের ঊর্ধসীমা নির্দিষ্ট এবং সেই ব্যক্তি নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দিতে বাধ্য থাকেন।
(চ) স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের উপর নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
(ছ) তপশীলভুক্ত জাতি ও উপজাতিদের জন্য লোকসভা, বিধানসভা ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। কিন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য কোনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই।
(জ) ভারতে সাধারণ প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৮। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার বলতে কী বোঝায়? এর স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে দুটি যুক্তি দাও?
উত্তরঃ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল সুস্থ ও প্রাপ্তবরর নাগরিককে ভোটাধিকার দানের নীতিকে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার বলা হয়।
স্বপক্ষেঃ
(ক) জনশক্তির পূর্ণ প্রকাশঃ গণতন্ত্রের অর্থ হল জনগণ কর্তৃক জনগণের পক্ষে জনগণের শাসন ব্যবস্থা। তাই গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনগণ তাদের অধিকারগুলো সুরক্ষা করতে পারেন। এর ফলে গণশক্তির পূর্ণ প্রকাশ ঘটে।
(খ) সাম্যনীতির প্রকাশঃ গণতন্ত্র সাম্যের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্রে সকলেই সমান সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারী এবং সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের মাধ্যমে তা সুনিশ্চিত হয়।
বিপক্ষেঃ
(ক) সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার অজ্ঞ ও অশিক্ষিত শ্রেণির লোককেও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করে। অযোগ্য অশিক্ষিত লোকও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করতে পারে যা সুস্থ রাজনীতির জন্য মোটেই কাঙ্খিত নয়।
(খ) অজ্ঞ ও অশিক্ষিত ভোটারদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকার দরুন তারা প্রার্থীদের যাচাই করতে ভুল করে এবং অনেক সময় তারা অযোগ্য প্রার্থীর পক্ষে ভোটদান করে থাকে। আর অযোগ্য বা দুর্নীতি গ্রস্থ প্রার্থীনে জয়লাভের দরুন দেশে দুর্নীতিবাজ নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। নীচের কোনটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সাদৃশ্য আছে?
(ক) পারিবারিক সভায় আলোচনা।
(খ) ক্লাসের নেতা নির্বাচন।
(গ) রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রার্থী মনোনয়ন।
(ঘ) গ্রামসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত।
(ঙ) বৈদ্যুতিক মাধ্যমের দ্বারা মতামত সমীক্ষা।
উত্তরঃ (ঘ) গ্রাম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন ২। নীচের কোন্ কাজটি নির্বাচন কমিশন দ্বারা করা হয় না?
(ক) নির্বাচন নীতি নির্ধারণ।
(খ) প্রার্থী মনোনয়ন।
(গ) নির্বাচনী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
(ঘ) আদর্শ আচরণ বিধি প্রণয়ন করা।
(ঙ) পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করা।
উত্তরঃ (ঙ) পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করা।
প্রশ্ন ৩। নীচের উল্লেখ করা বিষয়গুলোর মধ্যে কোনটি লোকসভা এবং বিধানসভা দুটি নির্বাচনী পদ্ধতিতেই কার্যকর?
(ক) ১৮ বৎসরের উপরে সকল নাগরিকই বৈধ ভোটদাতা।
(খ) বিভিন্ন প্রার্থীর জন্য ভোটদাতারা পছন্দের তালিকা দিতে পারেন।
(গ) প্রত্যেক ভোটের সমান গুরুত্ব আছে।
(ঘ) বিজয়ী প্রার্থীকে অর্দ্ধেকের বেশি ভোট পেতে হবে।
উত্তরঃ (ঘ) বিজয়ী প্রার্থীকে অর্দ্ধেকের বেশি ভোট পেতে হবে।
প্রশ্ন ৪। প্রথম প্রাক্তন পদ প্রথায়, সেই প্রার্থীকেই জয়ী ঘোষণা করা হবে যে –
(ক) সবচেয়ে বেশি ডাক-ভোট পায়।
(খ) সে দলের সদস্য হওয়া, যার দেশে সবচেয়ে বেশি নম্বরের ভোট আছে।
(গ) সেই নির্বাচনী কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট আছে।
(ঘ) ৫০ শতাংশ এর বেশি ভোট পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
উত্তরঃ (গ) সেই নির্বাচনী কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট আছে।
প্রশ্ন ৫। নির্বাচনী কেন্দ্রের সংরক্ষণ এবং পৃথক নির্বাচক মণ্ডলীর মধ্যে পার্থক্য কী? কেন সংবিধান প্রণেতাগণ শেষেরটিকে বাতিল করেছেন?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতে পৃথক নির্বাচক মণ্ডলী ব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠী হতে প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হলে, কেবলমাত্র সেই গোষ্ঠীর লোকেরাই যোগ্য ভোটদাতা হিসাবে বিবেচিত হতেন। ভারতের সংবিধান সভার অনেক সদস্যের এই ব্যাপারে সংশয় ছিল যে এই ব্যবস্থায় কোন বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না। অধিকন্ত ভারতের ঐক্য ও সংহতির মুল স্রোত হতে সেই বিশেষ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই ভারতীয় সংবিধান প্রণেতাগণ এই ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন নি।
প্রশ্ন ৬। নীচের কোনটি অসত্য চিহ্নিত করো এবং শুদ্ধ করো, বদল করো, যোগ করো অথবা পুণর্গঠন করো শুধুমাত্র একটি বাক্যে।
(ক) প্রথম প্রাক্তন পদ প্রথা পালন করা হয় ভারতের সকল নির্বাচনে।
(খ) নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত এবং মিউনিসিপাল নির্বাচন পরিচালনা করে না।
(গ) নির্বাচন আয়ুক্তকে ভারতের রাষ্ট্রপতি অপসারণ করতে পারেন না। (ঘ) একজনের বেশি নির্বাচন আয়ুক্ত নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক।
উত্তরঃ (ক) প্রথম প্রাক্তন পদ প্রথা (FPTP) ভারতের সকল নির্বাচনে অনুসর করা হয় না।
(খ) এই উক্তিটি শুদ্ধ।
(গ) ভারতের রাষ্ট্রপতি কোন নির্বাচন আয়ুক্তকে অপসারণ করতে পারেন যদি সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এই বিষয়ে প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
(ঘ) একাধিক আয়ুক্ত নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ৭। ভারতীয় নির্বাচনী প্রথার উদ্দেশ্য হল সামাজিকভাবে অনগ্রসরদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া। আমরা এখনও ১০শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি আইন সভার নির্বাচিত করতে পারিনি। এই অবস্থার উন্নতিকল্পে পরামর্শ দাও?
উত্তরঃ মহিলাগণ দেশের জনগণের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু সংসদ ও রাজ্য আইন সভার তাদের প্রতিনিধিত্ব নগন্য। এই অবস্থার উন্নতির জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়িত করা উচিত।
(ক) সংসদ ও রাজ্য আইন সভাগুলোতে মহিলাদের জন্য ৩০% আসন সংরক্ষণ বিল অনুমোদনের জন্য রাজনৈতিক দলসমূহকে সহমতের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
(খ) মহিলাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত করা একান্ত প্রয়োজন যাতে তারা নির্বাচনে অধিক হারে অংশগ্রহণ করতে পারে।
(গ) রাজনৈতিক দলসমূহের এমন এক পরিবেশ তৈরি করা উচিত যা মহিলাকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও আইনসভায় প্রতিনিধিত্বে অংশ গ্রহণ করতে উৎসাহবোধ করবে।
প্রশ্ন ৮। এখানে কিছু ইচ্ছার কথা আছে যা প্রকাশ করা হয়েছিল সভায় একটি নূতন দেশের সংবিধান রচনার জন্য। প্রথম প্রাক্তনপদ প্রথা না সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব কোন পদ্ধতি এসব ইচ্ছার ক্ষেত্রে মানানসই হবে লেখ।
(ক) মানুষের উচিত তাদের প্রতিনিধিকে পরিষ্কারভাবে জানা, যাতে তারা সেই প্রতিনিধির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে।
(খ) আমাদের ছোটো ভাষিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী সমস্ত দেশে ছড়িয়ে আছে। আমাদের উচিত প্রত্যেকের সঠিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।
(গ) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভোট এবং আসনের মধ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকা উচিত নয়।
(ঘ) মানুষের ক্ষমতা থাকা উচিত ভাল প্রার্থী নির্বাচনের জন্য, এমনকি যদি সেই প্রার্থী রাজনৈতিক দলকে পছন্দ না করে তবুও।
উত্তরঃ (ক) প্রথম প্রাক্তন পদ প্রথা (FPTP) অধিকতর উপযুক্ত।
(খ) ভাষিক সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অধিকতর উপযোগী।
(গ) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা অধিকতর উপযোগী।
(ঘ) প্রথম প্রাক্তন পদ পদ্ধতি অতি উত্তম।
প্রশ্ন ৯। একজন প্রাক্তন নির্বাচনী অধ্যক্ষ একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন লড়েছিলেন। এই ব্যাপারটি নিয়ে নানারকম মতামতের সৃষ্টি হয়েছে। একটি মত হল একজন প্রাক্তন নির্বাচনী অধ্যক্ষ একজন স্বাধীন নাগরিক এবং তার যে কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করার বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার আছে। অন্যমতে, এধরনের সুযোগের ফলে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতায় প্রভাব পড়বে। সুতরাং প্রাক্তন নির্বাচনী অধ্যক্ষের কোন অবস্থায়ই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত নয়। তুমি কোন্ মতটিকে পছন্দ করো এবং কেন?
উত্তরঃ প্রাক্তন নির্বাচন আয়ুক্তকে কোনও প্রকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া উচিত নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হলে নিশ্চিতভাবেই তার পদের নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে না।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সুনিশ্চিত করতে আয়ুক্তকে কোনও প্রকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন ১০। ভারতীয় গণতন্ত্র এখন প্রথম প্রাত্তন পদ প্রথা থেকে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তত, তুমি কি এই উক্তির সাথে একমত? তোমার মতের পক্ষে বা বিপক্ষে কারণ দর্শাও।
উত্তরঃ আমাদের মতে ভারতীয় গণতন্ত্র এই মুহূর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তত নয়। এর প্রধান কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি খুবই জটিল। সাধারণ মানুষ এই পদ্ধতি সহজে বোঝতে পারবে না।
(খ) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। এই প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলি তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে কিছু না কিছু সদস্যপদ লাভ করবে যা বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত ভারতের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
(গ) ভারতের মতো জনবহুল বিশাল দেশে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা উপযোগী নয়। এই পদ্ধতি নির্বাচনে গ্রহণ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কারণ কোটি কোটি ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব স্থির করে প্রতিনিধি নির্বাচন করা এক জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।