Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 4 সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
সংসদীয় সরকারের কার্যপালিকা
পাঠ: ৪
প্ৰথম খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। কার্যপালিকা বা শাসন বিভাগ কী?
উত্তরঃ সরকারের যে বিভাগ আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহকে কার্যকরী করে এবং প্রশাসনের দায়িত্বে থাকে তাকে কার্যবাহী বিভাগ বা কার্যপালিকা বা শাসনবিভাগ (Executive) বলে।
প্রশ্ন ২। কোন্ দেশে একক কার্যপালিকা ব্যবস্থা যায়?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (US)।
প্রশ্ন ৩।কোন্ দেশে বহু কার্য পালিকার ব্যবস্থা প্রচলিত?
উত্তরঃ সুইজারল্যাণ্ডে।
প্রশ্ন ৪। একটি দেশের নাম করো যেখানে রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকা আছে।
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (US)।
প্রশ্ন ৫। একটি দেশের নাম কর যেখানে সংসদীয় কার্যপালিকা বিদ্যমান।
উত্তরঃ ভারতবর্ষ।
প্রশ্ন ৬। এমন একটি দেশের নাম কর যেখানে আংশিক রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকা (Semi-Presidential) আছে।
উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা।
প্রশ্ন ৭। কে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন ৮। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধামমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তরঃ পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু।
প্রশ্ন ৯। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে কে সভাপতিত্ব করেন?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন ১০। কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে দত্তর বণ্টন করেন?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন ১১। কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন ১২। ভারতের রাষ্ট্রপতির কার্যকাল কত?
উত্তরঃ ৫ বছর।
প্রশ্ন ১৩। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতির কার্যকাল কত?
উত্তরঃ ৫ বছর।
প্রশ্ন ১৪। নিম্নলিখিত কোন্ দেশের শাসন বিভাগীয় প্রধান নিয়মতান্ত্রিক?
(ক) ভারতবর্ষের।
(খ) ইরানের।
(গ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
(ঘ) ফ্রান্সের।
উত্তরঃ (ক) ভারতবর্ষের।
প্রশ্ন ১৫। কোন্ প্রকার সরকার ব্যবস্থায় কার্যপালিকার সঙ্গে আইন বিভাগের কোন সম্পর্ক থাকে না?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতীয় সরকার ব্যবস্থায়।
প্রশ্ন ১৬। রাজ্যের রাজ্যপালকে কে নিযুক্ত করেন?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ১৭। আধুনিক সরকারের প্রধান বিভাগ কয়টি?
উত্তরঃ তিনটি।
প্রশ্ন ১৮। সরকারের কোন্ বিভাগ দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে?
উত্তরঃ কার্যপালিকা বা শাসন বিভাগ।
প্রশ্ন ১৯। সরকারের কোন্ বিভাগ আইন প্রয়োগ করে?
উত্তরঃ কার্য পালিকা।
প্রশ্ন ২০। সরকারের কোন্ বিভাগ দেশের নীতি নির্ধারণ করে?
উত্তরঃ কার্যপালিকা।
প্রশ্ন ২১। কার্যপালিকার প্রধান কাজ কি?
উত্তরঃ দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা।
প্রশ্ন ২২। সরকারের কোন্ বিভাগ অধ্যাদেশ জারি করতে পারে?
উত্তরঃ কার্যপালিকা।
প্রশ্ন ২৩। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান কে?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ২৪। ভারতের সরকার প্রধান কে?
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী।
প্রশ্ন ২৫। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স কত হতে হবে?
উত্তরঃ ৩৫ বছর।
প্রশ্ন ২৬। ভারতের রাষ্ট্রপতির কার্যকাল কত?
উত্তরঃ ৫ বছর।
প্রশ্ন ২৮। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কে শপথ বাক্য পাঠ করান?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ২৯। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি শাসনের ব্যবস্থা আছে?
উত্তরঃ ৩৫৬ নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ৩০। ভারতের সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ব্যবস্থা আছে?
উত্তরঃ ৩৫২নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ৩১। ভারতের সংবিধানের কোন্ ধারায় বিতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ব্যবস্থা আছে?
উত্তরঃ ৩৬০ ধারায়।
প্রশ্ন ৩২। রাজ্যের রাজ্যপাল কে নিযুক্ত করেন?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ৩৩। ভারতের সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে কে শপথ বাক্য পাঠ করান?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ৩৪। রাজ্যপালের কার্যকাল কত?
উত্তরঃ ৫ বছর।
প্রশ্ন ৩৫। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কে নিযুক্ত করেন?
উত্তরঃ রাজ্যের রাজ্যপাল।
প্রশ্ন ৩৬। মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত কে রূপায়িত করে?
উত্তরঃ আমলাগণ।
প্রশ্ন ৩৭। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক কর্মচারীগণকে কে মনোনীত করে?
উত্তরঃ কেন্দ্রীয় লোকসেবা আয়োগ।
প্রশ্ন ৩৮। ভারতের এটর্নী জেনারেলকে কে নিয়োগ করেন?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ৩৯। কেন্দ্রীয় লোকসেবা আয়োগের সভাপতি ও সদস্যগণকে কে মনোনীত করেন?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ৪০। রাজ্যিক লোকসেবা আয়োগের সভাপতি ও সদস্যদের কে মনোনীত করেন?
উত্তরঃ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল।
প্রশ্ন ৪১। ভারতের উপ রাষ্ট্রপতির কার্যকাল কত বৎসর?
উত্তরঃ ৫ বছর।
প্রশ্ন ৪২। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম কী?
উত্তরঃ ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ।
প্রশ্ন ৪৩। ভারতের প্রথম উপ রাষ্ট্রপতির নাম কী?
উত্তরঃ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ।
প্রশ্ন ৪৪। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?
উত্তরঃ পণ্ডিত জওহর লাল নেহরু।
প্রশ্ন ৪৫। স্বাধীন ভারতের প্রথম গৃহমন্ত্রীর নাম কী?
উত্তরঃ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল।
প্রশ্ন ৪৬। ভারতের প্রথম কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর নাম কী?
উত্তরঃ মৌলানা আবুল কালাম আজাদ।
প্রশ্ন ৪৭। ভারতীয় সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি সংক্রান্ত বিষয়ের নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করা আছে?
উত্তরঃ ৬১নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ৪৮। ভারতের উপরাষ্ট্রপতির অপসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব সংসদের কোন্ কক্ষ উত্থাপন করতে পারে?
উত্তরঃ উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা (Council of states)।
প্রশ্ন ৪৯। কোন্ প্রকার সরকার ব্যবস্থায় কার্যপালিকা আইন বিভাগে নিকট দায়বদ্ধ থাকে?
উত্তরঃ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায়।
প্রশ্ন ৫০। ভারতের সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি শাসনের ব্যবস্থা আছে ?
উত্তরঃ ৩৫৬নং অনুচ্ছেদে।
প্রশ্ন ৫১। ভারতবর্ষের প্রকৃত কার্যপালিকা কে?
উত্তরঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত কার্যপালিকা।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। তিনটি দেশের নাম লেখো যেখানে সংসদীয় সরকার আছে।
উত্তরঃ (ক) ভারতবর্ষ।
(খ) যুক্তরাজ্য (UK)। ও
(গ) জাপান।
প্রশ্ন ২। দুটি দেশের নাম লেখা যেখানে রাষ্ট্রপতি পরিচালিত সরকার আছে?
উত্তরঃ (ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (US)। ও
(খ) ব্রাজিল।
প্রশ্ন ৩। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ যে পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় (ক) নামমাত্র এবং (খ) প্রকৃত এই দু ধরনের কার্যপালিকা বিদ্যমান, তাকে আমরা সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বলি। এই শাসনপদ্ধতিতে প্রকৃত কার্যপালিকা আইনসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। ভারত এবং যুক্তরাজ্যে (UK) এই ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ইংল্যাণ্ডে (UK)-র রাজা বা রাণী এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি নামমাত্র কার্য পালিকা। ইংল্যাণ্ডে ও ভারতে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রীপরিষদ প্রকৃত কার্যপালিকা। তাদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে।
প্রশ্ন ৪। রাষ্ট্রপতি পরিচালিত সরকার বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ যে শাসনব্যবস্থায় একটি মাত্র কার্যপালিকা থাকে এবং সেই কার্যপালিকাই রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান দুই-ই, তাকে রাষ্ট্রপতি পরিচালিত সরকার বলা হয়। এই ধরনের সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান উভয়ই। তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন এবং তিনি তাঁর কাজের জন্য আইন সভার নিকট দায়বদ্ধ থাকেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (US)-এ রাষ্ট্রপতি পরিচালিত সরকার প্রচলিত আছে।
প্রশ্ন ৫। ভারতের রাষ্ট্রপতির শাসন-সংক্রান্ত দুটি ক্ষমতা লেখো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতির শাসন-সংক্রান্ত দুটি ক্ষমতা নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ, রাজ্যের রাজ্যপাল এবং ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীবৃন্দকে নিয়োগ করেন।
(খ) রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি জল, স্থল, ও নৌবাহিনীর প্রধানকে নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন ৬। রাষ্ট্রপতির অপসারণ কীভাবে হয়?
উত্তরঃ সংবিধানের ৬১নং ধারা অনুযায়ী সংবিধান অবমাননার জন্য কেন্দ্রীয় সংসদ রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মহাভিযোগ (Impeachment) প্রস্তাব আনয়ন করে তাঁকে অপসারণ করতে পারে।
রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মহাভিযোগ আনতে হলে আনুষ্টানিকভাবে অভিযোগ প্রস্তাব নেওয়ার ১৪ দিন পূর্বে সংসদের যে কোন একটি কক্ষের ১/৪ অংশ সদস্যের একটি লিখিত নোটিশ দিতে হয়। এরপর একটি প্রস্তাবাকারে উক্ত অভিযোগ সংসদে উপস্থাপন করতে হয়। এই প্রস্তাবটি যদি অভিযোগ কক্ষের ২/৩ অংশ সদস্য সমর্থন করে, তাহলে তা অপর কক্ষে প্রেরণ করা হয় এবং অপর কক্ষ কর্তৃক রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে অভিযোগটি তদন্ত করা হয়। অপর কক্ষ যদি ২/৩ অংশ সদস্য দ্বারা অভিযোগটি সমর্থন করে তাহলে রাষ্ট্রপতি অপসারিত হন।
প্রশ্ন ৭। ভারতের রাষ্ট্রপতির দুটি স্ব-বিচারাধীন বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা লেখো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতির দুটি স্ব-বিচারাধীন বা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নিম্নরূপঃ
(ক) কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সিদ্ধান্ত যদি তার নিকট দেশের স্বার্থবিরোধী মনে হয় তাহলে তিনি তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।
(ঘ) কোন দল বা জোট লোকসভার নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম না হলে রাষ্ট্রপতি তাঁর পছন্দমতো কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন।
প্রশ্ন ৮। ভারতের উপরাষ্ট্রপতির যে কোন দুটি কার্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ভারতের উপরাষ্ট্রপতির দুটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যসমূহ সম্পাদন করা।
(খ) উপরাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে (ex-officio) রাজ্যসভার সভাপতি। পদাধিকারী সভাপতি হিসাবে তিনি রাজ্যসভার কার্য পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন ৯। কেবিনেট ও মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে থাকা দুটি পার্থক্যের উল্লেখ করো?
উত্তরঃ কেবিনেট ও মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ
(ক) মন্ত্রীপরিষদ সকল মন্ত্রীকে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু কেবিনেটে কেবল গুরুত্বপূর্ণ ও সিনিয়র মন্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মন্ত্রীপরিষদ সকল মন্ত্রীর সমষ্টি। কেবিনেট এর একটি অংশ মাত্রা।
(খ) মন্ত্রী পরিষদ দেশের জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করে না। কেবিনেট জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করে।
প্রশ্ন ১০। কার্যপালিকার প্রধান দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ কার্যপালিকার (Executive) প্রধান দুটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) আইনসভা প্রণীত আইনকে কার্যকরী করা ও আইন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করা।
(খ) বহির্শত্রুর আক্রমণ হতে দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এইজন্য যথাযথ প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরি করে রাখা।
প্রশ্ন ১১। আমলাতন্ত্রের যেকোনো দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ আমলাতন্ত্রে (Bureaucracy)-র প্রধান দুটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) আমলাতন্ত্র শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা (Consistency) রক্ষা করে স্থায়িত্ব প্রদান করে।
(খ) আমলাতন্ত্র সরকারের নীতি ও কার্যসূচী বাস্তবায়ন করে।
প্রশ্ন ১২। আমলাতন্ত্রের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতীয় আমলাতন্ত্রের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতে আমলাগণ পেশাদারী (Professional) মনোভাবে কাজ করে এবং প্রশাসনের ধারাবাহিকতা বজার রাখে। তাদের নিয়োগের মাপকাঠি হলো মেধা এবং যোগ্যতা।
(খ) ভারতের আমলাতন্ত্র অরাজনৈতিক। তাই আমলাগণ তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্ডের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন।
(গ) মন্ত্রীগণ সর্বদাই আমলাতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন ১৩। সংসদীয় কার্যপালিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ সংসদীয় কার্যপালিকার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) সংসদীয় কার্যপালিকা দু ধরনের; নাম মাত্র কার্যপালিকা ও প্রকৃত
(খ) সংসদীয় কার্যপালিকায় রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান হিসাবে দুজন পৃথক পৃথক ব্যক্তি থাকেন।
(গ) সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রকৃত কার্যপালিকা তার কার্যের জন্য আইনসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে।
প্রশ্ন ১৪। রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকায় রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান থাকেন একই ব্যক্তি। তিনি হলেন রাষ্ট্রপতি।
(খ) রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকা আইনসভার নিয়ন্ত্রণাধীন নন।
প্রশ্ন ১৫। আংশিক কার্যপালিকার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ আংশিক কার্যপালিকার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) এ ধরনের কার্যপালিকায় নিয়মতান্ত্রিক ও প্রকৃত কার্যপালিকা থাকে।
(খ) এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান।
প্রশ্ন ১৬। যে কোনো দুপ্রকার সর্বভারতীয় সেবার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ (ক) ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা (IAS)। এবং
(খ) ভারতীয় আরক্ষী সেবা (IPS)।
প্রশ্ন ১৭। যে-কোন দুপ্রকার কেন্দ্রীয় সেবার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ (ক) ভারতীয় বৈদেশিক সেবা (IFS)। এবং
(খ) ভারতীয় রাজস্ব সেবা।
প্রশ্ন ১৮। ভারতের কোনো রাজ্যের মন্ত্রীপরিষদ কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তরঃ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে রাজ্যপাল অন্যান্য মন্ত্রীগণকে নিযুক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। এভাবে রাজ্যিক মন্ত্রীপরিষদ গঠিত হয়।
প্রশ্ন ১৯। অবশিষ্ট ক্ষমতা কী? কার উপর এই ক্ষমতা ন্যস্ত?
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের সপ্তম তপশীলের তিনটি বিষয়সূচীর বহির্ভূত (অলিখিত) বিষয়গুলোকে অবশিষ্ট ক্ষমতা (Residuary powers) বলে। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
প্রশ্ন ২০। রাজ্য বিধানসভার সদস্য হতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন?
উত্তরঃ রাজ্য বিধানসভার সদস্য হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজনঃ
(ক) প্রার্থীকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁর বয়স অন্ততপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
(গ) কোন লাভজনক পদে সে নিযুক্ত থাকতে পারবে না।
প্রশ্ন ২১। বিধান পরিষদ-বিশিষ্ট তিনটি রাজ্যের নাম লেখো?
অথবা,
দ্বি-স্বপ্ননযুক্ত বিধানমণ্ডল থাকা তিনটি রাজ্যের নাম লেখো?
উত্তরঃ (ক) উত্তরপ্রদেশ।
(খ) বিহার। ও
(গ) অন্ধপ্রদেশ।
প্রশ্ন ২২। আসামে বিধান পরিষদ গঠনের স্বপক্ষে তিনটি যুক্তি তুলে ধরো?
উত্তরঃ আসামে বিধানপরিষদ গঠনের স্বপক্ষে যুক্তিসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) আসাম বিভিন্ন ধরনের মানুষের মিলনভূমি। এখানে বিভিন্ন জাতি, উপজাতি ও ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষ বাস করে। তাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিধান পরিষদ গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
(খ) আসাম বিধানসভার ১২৬জন বিধায়কের পক্ষে আসামের সকল শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব নয়। বিধান পরিষদ গঠিত হলে সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব স্বীকৃত হবে।
(গ) বিধান পরিষদ শ্রেণীগত ভিত্তিতে গঠিত হয়। তাই উপযুক্ত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে বিধান পরিষদে বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিষিত্ব সুনিশ্চিত করবে।
প্রশ্ন ২৩। আসামে বিধান পরিষদ গঠনের বিপক্ষে তিনটি যুক্তি তুলে ধরো?
উত্তরঃ আসাম বিধান পরিষদ গঠনের বিপক্ষে যুক্তিসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) বিধানপরিষদ গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল। তাই আর্থিক দিক দিয়ে অনগ্রসর আসাম রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠন করা উচিত নয়।
(খ) রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্থ আসাম রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠন হলে রাজনৈতিক দুর্নীতি আরও বৃদ্ধি পাবে।
(গ) বিধান পরিষদের ক্ষমতা বিধানসভা হতে কম হওয়ার দরুন বিধান পরিষদ কোন গঠনমূলক কার্য সম্পাদন করতে সক্ষম হবে না। আসামের ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
প্রশ্ন ২৪। ভারতের কার্যপালিকার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় দু প্রকার কার্যপালিকা আছে। এই দু প্রকার কার্য পালিকা হল – নামমাত্র কার্যপালিকা ও প্রকৃত কার্যপালিকা। ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন নামমাত্র কার্যপালিকা এবং প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভা হল প্রকৃত কার্যপালিকা।
প্রশ্ন ২৫। ভারতের রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে নির্বাচিত করা হয়?
অথবা,
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচক দলটি’ কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি পরোক্ষভাবে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট দ্বারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৫৪নং ধারানুসারে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যগণকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি ‘নির্বাচক দল’ (electorate college) গঠিত হয়। এই ‘নির্বাচক দলটি’ রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে।
প্রশ্ন ২৬। ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে কীভাবে নির্বাচিত করা হয়?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৬৬নং ধারা মতে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে একটি ‘নির্বাচন সংস্থা’ (electorate college) গঠিত হয়। এই নির্বাচন সংস্থা একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট দ্বারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করে।
প্রশ্ন ২৭। ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে কীভাবে অপসারণ করা যায়?
উত্তরঃ ভারতের কেন্দ্রীয় সংসদ উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে। উপরাষ্ট্রপতির অপসারণের জন্য রাজ্যসভাকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে প্রস্তাব পাস করতে হয়। উক্ত প্রস্তাব লোকসভার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অনুমোদন করলে উপরাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে হয়। অপসারণের প্রস্তাব উযাপন করবার চৌদ্দদিন পূর্বে উপরাষ্ট্রপতিকে নোটিশ দিতে হয়।
প্রশ্ন ২৮। রাজ্যপালকে কে নিযুক্ত করেন? তাঁর কার্যকাল কত বছর?
উত্তরঃ রাজ্যের রাজ্যপালকে ভারতের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করেন। তাঁর কার্যকাল ৫ বছর।
প্রশ্ন ২৯। কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল যে কোনো ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রীরূপে নিয়োগ করতে পারেন কি?
উত্তরঃ না; রাজ্যপাল তার পছন্দ মতো যে কোনো ব্যক্তিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরূপে নিয়োগ করতে পারেন না। রাজ্যপাল রাজ্যিক বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন।
প্রশ্ন ৩০। ভারতে বর্তমানে কয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে? কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক কার নিকট দায়বচ থাকে?
উত্তরঃ ভারতে মোট ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে। কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের প্রশাসক রাষ্ট্রপতির নিকট দায়বদ্ধ থাকে।
প্রশ্ন ৩১। যে কোনো দু-প্রকার কেন্দ্রীয় সেবার নাম লেখো?
উত্তরঃ দু-প্রকার কেন্দ্রীয় সেবা নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতীয় বৈদেশিক সেবা (Indian Foreign Service)।
(খ) ভারতীয় রাজস্ব সেবা (Indian Reserve Service)|
প্রশ্ন ৩২। ভারতে কয় প্রকারের অসামরিক সেবা (Civil Service) আছে এবং কী কী?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে মোট তিন ধরনের অসামরিক সেবা আছে। এগুলো হলো-
(ক) সর্বভারতীয় পরিষেবা।
(খ) কেন্দ্রীয় সেবা। এবং
(গ) রাজ্যিক অসামরিক পরিষেবা।
প্রশ্ন ৩৩। কার্যপালিকা কত প্রকারের ও কী কী?
উত্তরঃ কার্যপালিকা তিন প্রকারের। এগুলো হলো-
(ক) সংসদীয় কার্যপালিকা।
(খ) রাষ্ট্রপতীয় কার্যপালিকা। এবং
(গ) আংশিক কার্যপালিকা।
প্রশ্ন ৩৪। ভারতীয় সংবিধানে উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্ধারণ করা যে কোনো দুটি যোগ্যতা উল্লেখ করো।
উত্তরঃ সংবিধানের ৬৩নং ধারা অনুসারে একজন উপরাষ্ট্রপতি থাকবেন।
উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য নির্ধারণ করা যোগ্যতাসমূহের মধ্যে দুটি যোগ্যতা নিম্নরূপঃ
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁকে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়ছ হতে হবে।
(গ) তাঁর রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।
প্রশ্ন ৩৫। ভারতীয় সংবিধানে কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল পদের জন্য নির্ধারণ করা যে কোনো দুটি যোগ্যতা উল্লেখ করো।
উত্তরঃ কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল হওয়ার জন্য ভারতীয় সংবিধানে নিম্নলিখিত যোগ্যতাসমূহের উল্লেখ করা হয়েছেঃ
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁকে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে। এবং
(গ) তিনি কোনো লাভজনক পদে বহাল থাকবেন না।
প্রশ্ন ৩৬। ভারতের অসামরিক সেবার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের অসামরিক সেবার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) যোগ্যতা এবং মেধা নিয়োগের মাপকাঠি।
(খ) এটি অরাজনৈতিক এবং স্থায়ী কর্ম পরিষেবা।
প্রশ্ন ৩৭। সংশোধনী আইন (২০০৩) কীভাবে মন্ত্রী পরিষদের আকার সীমাবদ্ধ করেছিল?
উত্তরঃ ৯১তম সংশোধনী আইন (২০০৩) এর আগে, মন্ত্রীসভার আকার ঠিক করা হত জরুরী অবস্থা বা পরিস্থিতির প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এতে মন্ত্রীসভার আকার অনেক বড় হয়ে যেত। তাছাড়া, কোন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে, সংসদ সদস্যদের সমর্থন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দলের সদস্যদেরকে মন্ত্রীপদ দেওয়া হত যার ফলে মন্ত্রীসভার আকার বড় হয়ে যেত। মন্ত্রীসভার সদস্য সংখ্যার ব্যাপারে কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। তাই ৯১তম সংশোধনীর মাধ্যমে রাজ্যিক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার আকার নির্ধারিত হয়। এই সংশোধনী আইনে লোকসভার সর্বমোট আসন সংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি মন্ত্রীসভার সদস্য হতে পারেন না। রাজ্যের ক্ষেত্রে বিধানসভার সর্বমোট আসনের ১৫ শতাংশের বেশি রাজ্যিক মন্ত্রীসভার সদস্য হতে পারেন না।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৫৪নং দ্বারা (Article 54) অনুযায়ী ভারতীয় সংসদের উভয়কক্ষের নির্বাচিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচন সংস্থা গঠিত হয়। এই নির্বাচন সংস্থা নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। মনোনীত সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না।
একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একজ রাজ্যিক বিধানসভার সদস্যের (MLA) এবং একজন সাংসদ (M.P) এর ভোটসংখ্যা নিম্নরূপঃ
একজন বিধায়কের ভোট = সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জনসংখ্যা / সেই রাজ্যের মোট বিধায়ক সংখ্যা % ১০০০
(অবশিষ্ট ৫০০ বা এর অধিক হলে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ হবে।) একজন সাংসদের ভোট = সকল বিধায়কের মোট ভোট / মোট সাংসদ সংখ্যা
(অবশিষ্ট ভাজকের অর্ধেক বা অর্ধেক হতে অধিক হলে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ হবে)।
প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রপতিকে কে নির্বাচন করেন?
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের ৫৪নং অনুচ্ছেদ (Article 54) মতে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যগণকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের-জন্য একটি ‘নির্বাচন সংস্থা” গঠিত হয়। এই নির্বাচন সংস্থা রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে।
প্রশ্ন ৩। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?
উত্তরঃ সংবিধানের ৬৬নং অনুচ্ছেদ (Article 66 ) মতে ভারতীয় সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য একটি ‘নির্বাচন সংস্থা” গঠিত হয়। এই নির্বাচন সংস্থা উপরাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে। উপরাষ্ট্রপতি পরোক্ষ পদ্ধতিতে একক হস্তান্তর যোগ্য ভোট দ্বারা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার সদস্যগণ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না।
প্রশ্ন ৪। বংশানুক্রমিক (Hereditary) এবং নির্বাচিত কার্যপালিকার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।
উত্তরঃ বংশানুক্রমিক কার্যপালিকা ক্ষমতা প্রয়োগ করে বংশগতি নীতির উপর ভিত্তি করে। বংশানুক্রমিক কার্যপালিকার উদাহরণ হিসাবে ব্রিটেনের রাণীকে উল্লেখ করা যায়। নির্বাচিত কার্যপালিকার উদাহরণ হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। তিনি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হন। বংশানুক্রমিক কার্যপালিকা উত্তরাধিকারসূত্রে স্থির হয়। এই ক্ষেত্রে বংশ বা জন্মগত পরিচয়ই প্রধান। নির্বাচিত কার্যপালিকার ক্ষেত্রে নির্বাচন মূল ভিত্তি। এই কার্যপালিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সাধারণ বংশানুক্রমিক কার্যপালিকাকে আনুষ্ঠানিক (formal) বা নিয়মতান্ত্রি ক প্রধান হিসাবে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা যায় কিন্তু নির্বাচিত কার্যপালিকা শাসন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রকৃত (Real) রাষ্ট্রপ্রধান। নির্বাচিত কার্যপালিকার কার্যকাল একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আবদ্ধ। কিন্তু বংশানুক্রমিক কার্যপালিকার কার্যকাল সেই কার্যপালিকার জীবনকাল ব্যাপীয়া।
প্রশ্ন ৫। রাজনৈতিক কার্যপালিকা ও স্থায়ী কার্যপালিকার মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
উত্তরঃ রাজনৈতিক কার্যপালিকা অস্থায়ী। এই প্রকার কার্যপালিকা নির্বাচনের মাধ্যমে সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্থায়ী কার্যপালিকা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় না। তাই এর কার্যকালও নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভরশীল নয়। সরকারী আমলাগণ ও সরকারী আধিকারিকগণ স্থায়ী কার্যপালিকার উদাহরণ।
প্রশ্ন ৬। রাষ্ট্রপতির বিচার-বিষয়ক ক্ষমতা সম্পর্কে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতির কতকগুলি বিচার-বিষয়ক ক্ষমতা আছে। সুপ্রীমকোট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিগণকে তিনি নিয়োগ করেন। তিনি ভারতের এটর্নি জেনারেল (Attorney-General of India) সহ কেন্দ্রীয় সরকারের আইন দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকগণকে নিয়োগ করেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি আদালত কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীকে ক্ষমা প্রদান করতে পারেন। গুরুতর শাস্তিকে লঘুতর করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির আছে। তিনি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন।
প্রশ্ন ৭। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থার সাংবিধানিক প্রধান। তাঁর অধিকাংশ ক্ষমতাই আনুষ্ঠানিক এবং নিয়মতান্ত্রিক। অপরপক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বস্তুত ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থার সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিত্ব।
ভারতীয় গণতন্ত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। শাসন সংক্রান্ত সকল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সর্বদা রাষ্ট্রপতিকে খবরাখবর প্রদান করেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে বহুবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই তাঁদের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করতে বাধ্য। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের সঙ্গে দেশের শাসন সংক্রান্ত সকল বিষয় আলোচনা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদকে উৎসাহ প্রদান করেন এবং প্রয়োজনে রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার্থে সতর্কও করেন।
প্রশ্ন ৮। কাকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন?
উত্তরঃ সংবিধান অনুযায়ী ভারতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সংসদীয় পদ্ধতির ব্যবস্থায় ভারতের রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক কার্যপালিকা এবং প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত কার্যপালিকা।
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেন। তিনি নিজ পছন্দ অনুসারে যে কোনো ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করতে পারেন না। তিনি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন।
এই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা সংসদের যে কোনো কক্ষের সদস্য হতে পারেন। আবার সংসদের সদস্য নাও হতে পারেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ওই নেতাকে ছয়মাসের ভেতর সংসদের যে কোনো কক্ষের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হতে হবে। ভারতের পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন এবং এইচ, ডি. দেবগৌড়া যখন প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন তখন তিনি সংসদের সদস্য ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন। সুতরাং রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন ৯। ভারতের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর যোগ্যতাগুলো কী কী?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর যোগ্যতাসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁর বয়স অন্তত পক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।
(গ) তাঁর সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।
(ঘ) তিনি কোন লাভজনক কার্যে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না।
(ঙ) রাজ্যসভার সদস্যপদ প্রার্থীর যোগ্যতা থাকতে হবে। অবশ্য তিনি সংসরে সদস্য হতে পারবেন না।
প্রশ্ন ১০। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের যে-কোন চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী।
(খ) ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদে সাধারণতঃ তিন ধরনের মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলি হল- পূর্ণ মন্ত্রী, রাজ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী।
(গ) ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ তাঁদের নীতি ও কার্যের জন্য যৌথভাবে আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় সংখ্যাগৰিষ্ঠতা হারালে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদেরও পতন ঘটে।
(ঘ) সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য মন্ত্রীপরিষদের সদস্য হতে পারেন।
প্রশ্ন ১১। “রাষ্ট্রপতি সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” তুমি কি মন্তব্যটির সঙ্গে একমত? কেন?
উত্তরঃ “রাষ্ট্রপতি সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” – এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। রাষ্ট্রপতি সংসদের সদস্য নন। তথাপি তিনি সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এর কারণসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রপতি এবং লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে সংসদ গঠিত।
(খ) রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন ও স্থগিত রাখার পারেন। তিনি লোকসভা ভেঙ্গেও দিতে পারেন।
(গ) রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার ১২জন সদস্যকে সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা, সমাজসেবা প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিগণের মধ্য হতে মনোনীত করেন।
(ঘ) লোকসভায় নির্বাচিত হয়ে আসা সদস্যদের মধ্য ঈঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি না থাকলে ভারতের রাষ্ট্রপতি লোকসভায় ২ জন ঈঙ্গ-ভারতীয় সদস্য মনোনীত করতে পারেন।
(ঙ) রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় সভায় ভাষণ দিতে পারেন এবং বাণী (message) প্রেরণ করতে পারেন।
(চ) সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতির একান্ত প্রয়োজন। তিনি সম্মতি প্রদান করলে বিল আইনে পরিণত হয়। তিনি সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বিলে সম্মতি প্রদান করতে পারেন, অথবা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরৎ পাঠাতে পারেন অথবা ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মতি না দিয়ে বিলটিকে আটকে রাখতে পারেন। কিন্তু পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরৎ পাঠানো বিল পুনরায় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হলে তিনি সম্মতি দিতে বাধা থাকেন।
(ছ) সংসদের অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি ১২৩নং ধারা মতে ‘অধ্যাদেশ’ (ordinance) জারি করতে পারেন। এই আইন সংসদ প্রণীত আইনের মতোই বলবৎ হয়। এই অধ্যাদেশ জরুরি প্রয়োজন ভিত্তিতে জারি করা হয়। সংসদের অধিবেশন বসবার ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এই আইনের কার্যকাল থাকে যদি না তার আগেই তা বাতিল করে দেওয়া হয়। আবার রাষ্ট্রপতি এই জরুরি আইন প্রত্যাহার করেও নিতে পারেন।
প্রশ্ন ১২। ভারতের রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক পদ মর্যাদা সম্পর্কে একটি টীকা লেখো?
অথবা,
ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান কে? তাঁর সাংবিধানিক পদমর্যাদা সংক্ষেপে আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি নিয়মতান্ত্রিক শাসক তথাপি ভারতীয় সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় তাঁর গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার প্রতীক স্বরূপ।
সংসদে যখন কোনো দল বা জোট সুস্পষ্ট সংখ্যাধিক্য অর্জন করতে পারে না তখন দেশকে প্রধানমন্ত্রী দেওয়ার জন্য তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। রাষ্ট্রপতির নামেই ভারতের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের রাষ্ট্রপতি ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার নীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপতি প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী নন। মন্ত্রীসভার উপদেশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর কার্য সম্পাদন করেন।
প্রশ্ন ১৩। ভারতের রাষ্ট্রপতির ভেটো ক্ষমতা সম্পর্কে লেখো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতির সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বিলগুলির উপর ভোটো প্রয়োগের ক্ষমতা আছে। তিনি তিন ধরনের ভোট প্রয়োগ করতে পারেন।
এগুলো হল-
(ক) চরম ভেটোঃ রাষ্ট্রপতি সংসদ অনুমোদিত বিলের সম্মতি প্রদান স্থগিত রাখতে পারেন। সাধারণত তিনি সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বেসরকারি বিলের ক্ষেত্রে এই ভোটো প্রয়োগ করতে পারেন। বাস্তবে তিনি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ ক্রমেই এই ভেটো প্রয়োগ করে থাকেন।
(খ) সাময়িক ভেটোঃ এই ভেটো প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত বিলটিকে সম্মতি না দিয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে পাঠাতে পারেন। যদি সংসদ পুনরায় অনুমোদন করে পাঠায়, তখন রাষ্ট্রপতি সেই বিলে সম্মতি প্রদান করেন।
(গ) পকেট ভেটোঃ ভারতের সংবিধানে সংসদ অনুমোদিত বিলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতি প্রদানের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমার উল্লেখ করা হয়নি। তাই তিনি সংসদ অনুমোদিত বিল ভেটো প্রযোগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মতি না দিতে পারেন। ১৯৮৬ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিংহ পোষ্টাল বিলের ক্ষেত্রে এই ভেটো প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু যদি মন্ত্রী পরিষদের সংসদে শক্তিশালী অবস্থান থাকে, তবে রাষ্ট্রপতি এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে কোন অসুবিধার সম্মুখীন হন না।
প্রশ্ন ১৪। লোকসভার নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করোঃ
উত্তরঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ ও সংসদের মধ্যে যোগাযোগ সংস্থাপন করেন। তিনি শাসক দলের নেতা হিসেবে সংসদে তাঁর দল বা জোটের নীতিকে সমর্থন করেন। তিনি লোকসভায় বিরোধী পক্ষের সকল প্রশ্নের জবাব দেন। লোকসভার তাঁর দল বা জোটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন তাঁকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলে। কারণ প্রধানমন্ত্র নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ যৌথভাবে সংসদের প্রতিনিধি রূপে দেশ শাসন করেন। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ যৌথভাবে লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত মন্ত্রী পরিষদের অস্তিত্ব নেই। তাই প্রধানমন্ত্রীকেই লোকসভায় প্রধানত বিরোধীপক্ষের জবাব দিতে হয়। সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্যাগণ দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। তাই লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে জাতি তথা দেশের নেতা হিসেবে তোলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় আস্থা হারালে প্রধানমন্ত্রীর পদও হারান। তাই প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় বিরোধী পক্ষের সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। লোকসভায় তাঁর নেতৃত্ব নির্ভর করে তাঁর ব্যক্তিত্বের উপর।
প্রশ্ন ১৫। জাতির নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা,
জাতির মুখপাত্র হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রধানমন্ত্রী জাতি তথা সমগ্র দেশের নেতা। তিনি জাতির মুখপাত্র স্বরূপ কার্য করেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি জাতির প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে জাতির পক্ষে বক্তব্য রাখেন। সরকারের প্রধান হিসাবে তিনি জাতির কল্যাণে দেশের বৈদেশিক নীতি গ্রহণ ও পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ও আন্তরাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। দেশের জনগণের বিপদকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী জনগণের পাশে দাঁড়ান। জাতির পথ প্রদর্শক হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতির নেতা হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি ভারতের মর্যাদা রক্ষা করেন। প্রধানমন্ত্রী ভারত সরকার তথা জাতির প্রধান প্রবক্তা।
প্রশ্ন ১৬। ইউনিয়ন পাব্লিক সার্ভিস (Union Public Service Commission) এর গঠন প্রণালী ব্যাখ্যা করো?
অথবা,
কেন্দ্রীয় লোকসেবা আয়োগ (Union Public Service Commission) এর গঠন প্রণালী ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ কেন্দ্রীয় লোকসভা আয়োগ (UPSC) ভারত সরকারের একটি অরাজনৈতিক সংস্থা যার প্রধান কাজ হচ্ছে ভারত সরকারের পক্ষে আমলাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। এই সংস্থা ভারতের সংবিধানের ৩১৫নং ধারা (Article 315) অনুযায়ী গঠন করা হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি এই আয়োগের সভাপতি ও সদস্যদের নিযুক্ত করেন। তাদের কার্যকাল সাধারণত হয় বছর। ৬৫ বছর বয়সে তারা কার্য হতে অবসর গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ১৭। কেন্দ্রীয় লোকসেবা আয়োগের যে কোনো চারটি কার্য লেখো?
উত্তরঃ কেন্দ্রীয় লোকসেবা আয়োগ (UPSC)-র চারটি কার্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) কেন্দ্রীয় সরকারকে আমলা বা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া। আমলানের নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মনীতি সম্পর্কে উপদেশ দান।
(খ) সরকারি আমলাদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি সংক্রান্ত উপদেশ দান।
(গা) সরকারি আমলাদের শৃঙ্খলাভঙ্গ সংক্রান্ত বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থানি সম্পর্কে উপদেশ দান।
(ঘ) সরকারি আমলা সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি পরামর্শ চাইলে তাকে সেই ব্যাপারে পরামর্শ দান।
প্রশ্ন ১৮। কার্য নির্বাহকের পাঁচটি কার্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ আধুনিক রাষ্ট্র জনকল্যাণমূলক বিবিধ কার্য সম্পাদন করে। কার্য নির্বাহকের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) কার্য নির্বাহকের প্রধান কার্য হল দেশের আভ্যান্তরীণ শাসন কার্য পরিচালনা করা। আইন সভা কর্তৃক প্রণীত আইনানুসারে দেশকে পরিচালনা করা। আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, বিভিন্ন কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিয়ম-নীতি চালু প্রভৃতি সম্পাদন করা কার্যনির্বাহকের প্রধান কার্য।
(খ) বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা কার্য নির্বাহক অর্থাৎ শাসন বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সত্ত্বাব ও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কার্য নির্বাহক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(গ) অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা বা যুদ্ধ পরিচালনা করা কার্যনির্বাহকের কার্য। দেশের স্থল, জল ও বায়ু সেনা কার্য নির্বাহকের অধীনে থাকে।
(ঘ) কার্য নির্বাহক দেশের আইন সভার অধিবেশন আহ্বান বা স্থগিত রাখতে পারেন। আইনসভার অধিবেশন স্থগিত থাকাকালীন জরুরি প্রয়োজনে কার্য নির্বাহক অধ্যাদেশও জারি করতে পারে।
(ঙ) সরকারের কার্য পরিচালনা করার জন্য প্রতি বছর অর্থ ব্যরের আবশ্যক হয়। এই ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকার কর ধার্য করে এবং অন্যান্য উৎস হতে সংগ্রহ করে। এই কর ধার্য ও ব্যয়ের ব্যাপারে আইনসভার অনুমোদন নেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে শাসন বিভাগই এই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ করে।
প্রশ্ন ১৯। ভারতের রাষ্ট্রপতির চারটি প্রশাসনিক ক্ষমতা লেখো?
অথবা,
ভারতের রাষ্ট্রপতির চারটি কার্যপালিকার ক্ষমতা লেখো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি কার্যপালিকা সংক্রান্ত ক্ষমতার চূড়ান্ত অধিকারী। ভারতে রাষ্ট্রপতির নামেই শাসন কার্য পরিচালিত হয়। কার্যপালিকার সকল ক্ষমতা তাঁর হাতেই ন্যস্ত করা হয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতির চারটি কার্যপালিকা ক্ষমতা নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদেরও নিয়োগ করেন।
(খ) তিনি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
(গ) তিনি রাজ্যের রাজ্যপাল, অ্যাটর্নি জেনারেল, কনট্রোলার ও অডিটর- জেনারেল, নির্বাচন কমিশনার, কেন্দ্রীয় লোকসেবা আয়োগের সভাপতি ও সদস্য প্রভৃতি নিয়োগ করেন।
(ঘ) তিনি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের প্রশাসক নিয়োগ করেন।
(ঙ) রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন ২০। ভারতের রাষ্ট্রপতির জাতীয় জরুরীকালীন ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখো?
উত্তরঃ যদি যুদ্ধ, বহিঃশত্রুর আক্রমণ, আভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিপ্লব বা তাদের সম্ভাবনার জন্য ভারতের অথবা ভারতের কোন অংশের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাহলে রাষ্ট্রপতি এই মর্মে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদের লিখিত পরামর্শক্রমেই কেবলমাত্র এই ক্ষমতা প্রয়োগ করার পারেন। রাষ্ট্রপতির এই ঘোষণা সংসদের উভয়কক্ষেই উত্থাপন করতে হয়। সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দ্বারা তা অনুমোদিত হতে হবে। সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর ছয়মাস পর্যন্ত জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকে। ছয়মাস করে ঘোষণাটির মেয়াদ বাড়ানো যায়। লোকসভা জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণা প্রত্যাহার করার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব পাশ করলে রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নিতে হয় [ধারা ৩৫২(৭)]।
প্রশ্ন ২১। রাষ্ট্রপতি শাসন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৩৫২নং ধারা অনুসারে কোন রাজ্যের রাজ্যপালের নিকট হতে অথবা অন্য কোন উপায়ে রাষ্ট্রপতি যদি অবগত হন যে সেই রাজ্যের সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেই রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করতে পারেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের লিখিত সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এইরূপ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এইরূপ জরুরি অবস্থা ঘোষণাকালেও সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত না হলে তা দুই মাসের বেশি কার্যকরী হতে পারে না। সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে এই ধরনের জরুরি অবস্থা একসঙ্গে ছয়মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। রাজ্যের জরুরি অবস্থা দুই ধরনের হতে পারে- (ক) পূর্ণ জরুরি অবস্থা, এবং (খ) অর্থ- জরুরি অবস্থা। জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর যদি রাজ্যের মন্ত্রীপরিষদ ও বিধানসবা উভয় ভেঙ্গে দিয়ে রাজ্যের শাসনকার্য কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তাকে পর্ণ জরুরি অবস্থা বলা হয়। অন্যদিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার দ্বারা কেবল যদি রাজ্যের মন্ত্রীপরিষদকে বরখাস্ত করা হয় কিন্তু রাজ্যের বিধানসভাকে ভঙ্গ না করে নিস্কিয় করে রাখা হয়, তখন তাকে অর্থ জরুরি অবস্থা বলা হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হয় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয় অথবা বিধানসভা ভঙ্গ করে পূর্ণ রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ করা হয়।
প্রশ্ন ২২। ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরিকালীন ক্ষমতা সংক্ষেপে উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধান বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে জরুরিকালীন ক্ষমতা প্রদান করেছে। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির তিন ধরনের জরুরিকালীন ক্ষমতার উল্লেখ আছে।
এইগুলি হল-
(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা (National Emergency)।
(খ) রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা (State Emergency)
(গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা (Financial Emergency)
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
প্রশ্ন ২০। রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধান রাষ্ট্রপতির প্রকৃত ভূমিকা ও পদমর্যাদা নিয়ে বিস্তারিত চর্চা করেনি। তাই তাঁর প্রকৃত ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পণ্ডিত নেহেরু এবং ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের আমল থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। সংবিধান নির্মাতাগণ সংবিধান রচনাকালে বলেছিলেন যে ভারতের রাষ্ট্রপতি ইংল্যাণ্ডের রাজা বা রানির মতো নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের ভূমিকা গ্রহণ করবেন। আর যেহেতু ভারতে সংসদীয় কার্যপালিকার শাসন-ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেহেতু মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি শাসক প্রধান হিসেবে কার্য নির্বাহ করবেন। ভারতে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থা প্রচলিত থাকার দরুন প্রকৃত শাসন ক্ষমতা মন্ত্রিসভা এবং আইনসভার হাতে নাস্ত। রাষ্ট্রপতি প্রকৃত শাসক নন। তিনি সাংবিধানিক প্রধান। পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এই মত পোষণ করতেন। অন্যদিকে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ রাষ্ট্রপতিকে কেবলমাত্র নিয়মতান্ত্রিক (formal) শাসক হিসেবে মেনে নেননি।
গণ পরিষদের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে রাষ্ট্রপতিকে আনুষ্ঠানিক প্রধান (Ceremonial Head) হিসেবে গণ্য করা উচিত। ডঃ আম্বেদকারের মতে, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান, শাসন বিভাগের প্রধান নন। তিনি জাতির প্রতিনিধিত্ব করেন না।’ রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা বিশ্লেষণ করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাষ্ট্রপতিকে কেবলমাত্র নামসর্বস্ব সাক্ষীগোপাল হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়, তিনি মন্ত্র পরিষদকে পরামর্শ, উৎসাহ দান ও সতর্ক করে দিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা অনেকটাই নির্ভর করে তাঁর ব্যক্তিত্বের উপর। সাংবিধানিক সংকটকালে তাঁর পদমর্যাদার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। সাংবিধানিক কাঠামো বজায় রাখার জন্য এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের নিজস্ব বিচারবুদ্ধি প্রয়োগের সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়। মন্ত্রীপরিষদের গৃহীত সিদ্ধান্ত যদি দেশ বা জাতীয় স্বার্থের বিরোধী হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ নাও মানতে পারেন। তিনি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রশ্ন ২৪। জননায়ক হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতে প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রকৃত শাসক প্রধান। জননায়ক হিসেবে তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিককালে প্রচার মাধ্যম প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা ও ব্যক্তিত্ব ও তার চারিত্রিক বিভিন্ন গুণাবলী ও ভাবমূর্তি তোলে ধরে। তাঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপ, বক্তৃতা, বিবৃতি আদি জনমনে কার্যকর প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব সৃষ্টি করে। সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা অনেকাংশে জাতির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ও নেতৃত্বদানকারী গুণাবলীর উপর নির্ভরশীল। দেশের সংকটের সময় প্রধানমন্ত্রীর সদর্থক ভূমিকা ও সক্রিয় নেতৃত্ব প্রদান তাঁর পদমর্যাদা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জননায়ক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আচরণগত কলাকৌশল, বাগ্মীতা জনমানসে তাঁর সম্মোহনী শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
প্রশ্ন ২৫। রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় রাজ্যপালের ভূমিকা আলোচনা করো?
উত্তরঃ রাজ্যের শাসনবিভাগের শীর্ষে আছেন রাজ্যপাল। তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পাঁচ বছরের জন্য নিযুক্ত হন। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার পদ্ধতি অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালও মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের নির্দেশ ও পরামর্শ অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালও নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে রাজ্যপালকে রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান মনে হলেও তাঁরে সম্পূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান বলা যায় না।
সংবিধানে রাজ্যপালকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কোন্ বিষয়ে ও ক্ষেত্রে তিনি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হয় এবং ওই ক্ষমতা যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন তোলে তাঁর কার্যের বৈধতাকে প্রত্যাহ্বান জানানো যায় না। অবশ্য সংবিধানে মাত্র কয়েকটি বিষয়ে তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের কথা উল্লেখ আছে। এই স্বেচ্ছাধীন। ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমেই চলতে হয়।
রাজ্যপাল কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। রাজ্যপালের মাধ্যমে কেন্দ্র সবসময় অবহিত হতে পারে যে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্র দ্বারা প্রেরিত নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যগুলো কাজ করছে কিনা। সুতরাং একদিকে রাজ্যপাল নিয়মতান্ত্রিক শাসক এবং অন্যদিকে কেন্দ্রের প্রতিনিধি, এই দ্বৈত ভূমিকা রাজ্যপালকে নির্বাহ করতে হয়।
প্রশ্ন ২৬। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের চারটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ নিম্নোক্ত চারটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করেঃ
(ক) নীতি নির্ধারণ ও তার বস্তবায়নঃ কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটই সরকারের নীতি নির্ধারণ করে। রাজনীতিভাবে গৃহীত নীতি মন্ত্রীপরিষদের দ্বারা বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন নীতি যেমন- স্বরাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক নীতি, প্রতিরক্ষা সংক্রন্ত নীতি, আর্থিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে ক্যাবিনেটে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এই নীতিগুলোর বাস্তবায়নে মন্ত্রীপরিষদ সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।
(খ) আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ভূমিকাঃ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রীপরিষদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। ক্যাবিনেটের সক্রিয় ভূমিকা ও নির্দেশ অনুসারে অধিকাংশ আইনের খসড়া প্রস্তত করা হয়। অধিকাংশ আইনের খসড়া ক্যাবিনেটের সদস্যরা সংসদে পেশ করেন।
(গ) প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনঃ দেশের প্রশাসনিক কার্য পরিচালনার প্রকৃত ও কার্যকরী ক্ষমতা মন্ত্রীসভার হাতে ন্যস্ত। মন্ত্রীসভার নির্দেশক্রমে স্বায়ী আমলারাই নীতি রূপায়ণের লক্ষ্যে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ভারতের মতো জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রীপরিষদের দায়দায়িত্বও বেড়ে গিয়েছে।
(ঘ) সরকারের আয়-বায় নির্ধারণঃ কেন্দ্রীয় সরকারের আয়-ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্যাবিনেটের ভূমিকা অপরিসীম। অর্থমন্ত্রকের প্রধান অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদের নিম্ন সদন লোকসভায় সরকারের সম্ভাব্য আয়-বায়ের হিসাব বা বাজেট পেশ করেন।
প্রশ্ন ২৭। ভারতীয় প্রশাসনীয় ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
আমলাতন্ত্রকে স্থায়ী কার্যপালিকা বলে কেন গণ্য করা হয়?
উত্তরঃ ভারতীয় প্রশাসনীয় ব্যবস্থার আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি গণতান্ত্রিক সরকার দক্ষ এবং পেশাদার আমলাতন্ত্র ছাড়া সুচারুরূপে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে না। ভারতের সংবিধান নির্মাতাগণ অরাজনৈতিক এবং পেশাদার আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাই ভারতীয় প্রশাসন ব্যবস্থায় অরাজনৈতিক এবং পেশাদার (Professional) আমলাতন্ত্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষে নিয়োগীকৃত আমলাতন্ত্রের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমলাতন্ত্র শাসনকার্যের ধারাবাহিকতা (Consistency) রক্ষা করে। এজন্য আমলাতন্ত্র স্থায়ী কার্যপালিকারূণে দায়িত্ব ও কর্তবা নির্বাহ করে। ভারতবর্ষে আমলাগণ পেশাদারী মনোভাব নিয়ে প্রশাসনীয় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের নিয়োগের মাপকাঠি হল- যোগ্যতা ও মেধা। মন্ত্রিগণ নির্বাচিত প্রতিনিধি। প্রশাসনিক কার্যে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। মন্ত্রিগণ। সরকারের দায়িত্বে থাকেন এবং প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে ও তত্ত্বাবধানে থাকে।
আমলাগণ কখনও আইন বিভাগের প্রণয়ন করা নীতির বিরোধিতা করতে পারেন না। মস্তিদের দায়িত্ব হল, প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ রাখা। আমলাগণ কোন সময়েই রাজনৈতিক ব্যাপারে কোন রাজনৈতিক অবস্থান নিতে পারে না। আমলাতন্ত্রের দায়িত্ব হলো বিশ্বাসী ও দক্ষভাবে সরকারের গ্রহণ করা নীতির খসড়া তৈরি করা ও নীতি কার্যকর করায় ভাগ নেওয়া। আমলাতন্ত্র হল এমনই এক প্রশাসন যন্ত্র যার সাহায্যে সরকারের কল্যাণকামী নীতিগুলো মানুষের কাছে দেওয়া। আমলাতন্ত্র স্থায়ী প্রশাসন যন্ত্রে। মন্ত্রিগণ সবসময়ই আমলাদের উপর নির্ভরশীল থাকেন। আর এজন্য আমলাতন্ত্রকে স্থায়ী কাপালিকা বলে গণ্য করাটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন ২৮। সংসনীয় সরকারের বিষয়ে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রপতি বা রাজা হলেন নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। এধরনের সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি বা রাজার ভূমিকা প্রাথমিকভাবে শুধুই আনুষ্ঠানিক, প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কেবিনেট আসল ক্ষমতা ভোগ করেন। জার্মানি, ইটালী, জাপান, ইংল্যাণ্ড এবং পর্তুগাল এই ব্যবস্থার অন্তর্গত।
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় শাসনবিভাগ এবং আইনবিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। মন্ত্রীসভার সদস্যগণ আইনসভার সদস্য। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রী পরিষদ আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থার উপর স্বপদে বহাল থাকেন। আইনসভা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক নীতি নির্দ্ধারণ করেন এবং বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা করেন। তিনি জাতির মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই ধরনের সরকার ব্যবস্থার প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভা শাসন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি এবং রাষ্ট্রপতি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কী ভাবে নিয়োগ করা হয়? তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবল আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে প্রধানমন হিসাবে নিয়োগ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। তাঁর উপর ভারতের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তাঁর ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(ক) মন্ত্রী পরিষদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে অন্যান্য মন্ত্রীগণকে নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পছন্দ অনুসারে মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। আবার প্রয়োজনবোধে মন্ত্রীদের দপ্তর রদবদলও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে কোন মন্ত্রীকে মন্ত্রীপরিষদ হতে বাদ দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোন মন্ত্রীর মতানৈক্য হলে সেই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে মন্ত্রী পরিষদের পতন ঘটে। প্রধান মন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী ও তাঁদের মন্ত্রালয়ের কার্যাবলীর সমন্বয় রক্ষা করেন।
(খ) প্রধান পরামর্শ দাতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শ দাতা। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করেন। তিনি শাসন সংক্রান্ত সকল বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করান এবং সেই সকল বিষয়ের তথ্যাদি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করেন।
(গ) সংসদের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা। তিনি তাঁর মন্ত্রীপরিষদ ও সংসদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। সংসদে তিনি তাঁর দল বা জোটের নীতিকে সমর্থন করেন এবং বিরোধী পক্ষের সকল সমালোচনার জবাব দেন। দেশের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তিনি লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ।
(ঘ) বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাঃ প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক নীতি গ্রহণ ও পরিচালনা করেন। অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(ঙ) জাতির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীঃ প্রধানমন্ত্রী জাতি তথা সমগ্র দেশের নেতা। তিনি দেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। তিনি হলেন ভারত, সরকারের মুখপাত্র স্বরূপ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি ভারতের বক্তব্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অপরিসীম। ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে যত ক্ষমতা প্রদান করেছে তা বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদ প্রয়োগ করেন। শাসনতান্ত্রিক সকল বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতাই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদার সম্মান রক্ষা করতে পারেন।
প্রশ্ন ২। ভারতের রাষ্ট্রপতির নিজস্ব বিবেচনাধীন ক্ষমতার আলোচনা করো?
উত্তরঃ সাংবিধানিক মতানুযায়ী রাষ্ট্রপতির সংসদের সকল কার্যবিবরণীর তথ্য জানার অধিকার আছে। রাষ্ট্রপতি জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শাসনতান্ত্রিক সকল বিষয় রাষ্ট্রপতিকে জানাতে বাধ্য থাকেন। রাষ্ট্রপতি প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে দেশের বিতর্কিত বিষয়ে তাঁর মতামত জানান।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত তিনটি পরিস্থিতিতে তাঁর নিজস্ব বিবেচনাধীন (স্বেচ্ছাধীন) ক্ষমতা প্রযোগ করেনঃ
(ক) কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হলে বা তা তার নিকট দেশের স্বার্থবিরোধী মনে হলে তিনি তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।
(খ) সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত কোন বিল (অর্থবিল বা Money Bill বাতীত) রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন বা ভেটো (Veto) প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বিলে সম্মতি নাও দিতে পারেন।
প্রশ্ন ৩। মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্ব বলতে তুমি কী বোঝ?
অথবা,
মন্ত্রীসভার যৌথ দায়িত্বের ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার অনুরূপ ভারতেও মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কার্যের জন্য যৌথভাবে আইনসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। এর অর্থ হল মন্ত্রীপরিষদের সকল সদস্যগণকে সমগ্র পরিবন কর্তৃত গৃহীত নীতি ও কার্যসূচী সমর্থন করতে হবে। আইনসভার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মন্ত্রীপরিষদ যৌথভাবে কার্য পরিচালনা করবে। তাঁরা তাদের কার্যের জন্য লোকসভার নিকট যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকবে। কোন মন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত বিল যদি লোকসভায় অনুমোদিত না হয় তাহলে যৌথভাবে মন্ত্রীপরিষদের পরাজয় হয়েছে বলে ধরা হয়। তাঁরা সকলেই একই নৌকার যাত্রী। প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাঁদের কর্ণধার। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে সম্পূর্ণ মন্ত্রীপরিষদই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সুতরাং ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ যৌথভাবে লোকসভার নিকট দায়বদ্ধ।
প্রশ্ন ৪। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যকরী আলোচনা করে?
উত্তরঃ ভারতে ব্রিটিশ কার্যপালিকার মতো প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদ আছে।
গঠনঃ ভারতীয় সংবিধানের ৭৫নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। পধানমন্ত্রী নারীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। সংসদের সদস্য নন এইরূপ ব্যক্তিও মন্ত্রী হতে পারেন। তবে তাকে ছয়মাসের সময়সীমার মধ্যে সংসদের যে কোন কক্ষের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হতে হবে।
মন্ত্রীসভার নির্দিষ্ট কোন কার্যকাল নেই। লোকসভার আস্থার উপর মন্ত্রীপরিষদের কার্যকাল নির্ভর করে।
সংবিধানে মন্ত্রীপরিষদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় নি। সাধারণত মন্ত্রীপরিবে তিন ধরনের মন্ত্রী আমরা দেখতে পাই। এগুলো হল- পূর্ণ মন্ত্রী, রাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ ভারতের শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকৃত ক্ষমতা প্রয়োগ করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নে পর্যালোচনা করা হলঃ
(ক) শাসন বিষয়ক ক্ষমতাঃ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ প্রকৃত অর্থে ভারতের শাসন কার্য পরিচালনা করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে। দেশের শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি গুলো মন্ত্রীপরিষদ নির্ণয় করে জাতীয় কর্মসূচিগুলো তৈরি করে। বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরের মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ যোগসূত্ৰ স্থাপন করে এবং বিভাগগুলোর কাজের তদারকী করে।
(খ) আইন বিষয়ক ক্ষমতাঃ দেশের আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে মন্ত্রীপরিষদ প্রয়োজনীয় আইন প্রণযনের ব্যবস্থা করে। সকল সরকারি বিল মন্ত্রীগণ সংসদে উত্থাপন করেন।
(গ) অর্থ বিষয়ক ক্ষমতাঃ আর্থিক বৎসরের প্রারম্ভে মন্ত্রীপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট কেন্দ্রীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। সাধারণত অর্থমন্ত্রী সংসদে এই বাজেট উত্থাপন করেন। মন্ত্রীপরিষদ কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রকার আয় ব্যয় নির্ধারণ, করধার্য ও বিলোপ প্রভৃতি বিষয় স্থির করে থাকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের অনুমোদন ক্রমে অধ্যাদেশ জারি করেন।
(ঘ) অন্যান্য ক্ষমতাঃ উপরে বর্ণিত ক্ষমতা ও কার্যাবলী ছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য আরও ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ দেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করে এবং সেই গৃহীত নীতির প্রকৃত বাস্তবায়নে মন্ত্রী পরিষদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি মন্ত্রী পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তাছাড়া সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণকে মন্ত্রী পরিষদের সুপারিশ ক্রমেই রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করে থাকেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদই ভারতের শাসন ব্যবস্থার প্রকৃত নির্ণায়ক।
প্রশ্ন ৫। ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় নিয়মতান্ত্রিক কার্যপালিকা হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি ভারতের রাষ্ট্র প্রধান। তিনি মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করেন।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ নিম্নে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হল-
(ক) শাসন বিষয়ক ক্ষমতাঃ ভারতের শাসন কার্য রাষ্ট্রপতির নামেই পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাজ্যের রাজ্যপাল এবং ভারতের সকল উচ্চ পদস্থ কর্মচারীবৃন্দকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতকে নিয়োগ করেন এবং বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-chief)।
(খ) আইন বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সংসদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতীয় সংসদ রাষ্ট্রপতি, লোকসভা ও রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রপতি সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন। প্রয়োজনবোধে তিনি সংসদের অধিবেশন স্থগিত রাখতে পারেন এবং লোকসভা ভেঙ্গে দিতে পারেন। নতুন বৎসরের শুরুতে তিনি সংসদের উভয় কক্ষে ভাষণ দান করেন এবং সংসদে বাণী প্রেরণ করেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত প্রস্তাব আইনে পরিণত হয়। তিনি সংসদের অধিবেশন স্থগিত কালে জরুরি প্রয়োজনে ‘অধ্যাদেশ’ (Ordinance) জারী করতে পারেন। এতদ্ব্যতীত তিনি রাজ্যসভায় ১২ জন সদস্য ও লোকসভায় যদি ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্য নির্বাচিত না হয় তবে সেই সম্প্রদায় হতে দুজন সদস্য মনোনীত করেন।
(গ) অর্থ বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতির অর্থসংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। লোকসভায় অর্থবিল (Money Bill উত্থাপন করার সময় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সংসদে কোন বায় মঞ্জুরীর প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া উত্থাপন করা যায় না। তিনি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর একটি অর্থ কমিশন গঠন করেন। ভারতের সম্মিলিত তহবিল এবং আকস্মিক বায় তহবিল রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকে।
(ঘ) বিচার বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রপতি ভারতের সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণকে নিয়োগ করেন। তিনি আদালত কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারেন এবং গুরুতর শাস্তিকে লঘুতরও করতে পারেন।
(ঙ) জরুরি বিষয়ক ক্ষমতাঃ ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে জরুরিকালীন ক্ষমতা প্রদান করেছে। রাষ্ট্রপতি তিনটি বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরিকালীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশঙ্কা হলে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এই ধরনের জরুরি অবস্থাকে জাতীয় জরুরি অবস্থা আখ্যা দেওয়া হয়। তিনি রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তাছাড়া দেশে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলেও তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি সংসদীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী সাংবিধানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর উপরোক্ত ক্ষমতাসমূহ প্রকৃত অর্থে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ উপভোগ করে।
প্রশ্ন ৬। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা আঁতাতের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রী পরিষদ গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কোন ভূমিকা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করতে পারেন। লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর আস্থা থাকার দরুন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারেন না।
রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হন। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজ বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। প্রথমতঃ রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য আইন সভা কর্তৃক প্রেরিত বিল রাষ্ট্রপতি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যদি কোন কারণে মন্ত্রীসভা ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে মন্ত্রীসভ গঠন হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধানকারী সরকারকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি মেয়াদের পূর্বে লোকসভা ভঙ্গ করতে বাধ্য নন, বরং তিনি লোকসভা ভঙ্গ না করে নূতন মন্ত্রীসভা গঠন করার চেষ্টা করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সংযোগ, রক্ষা করেন। বিশেষ কয়েকটি সুযোগের উদ্ভব ব্যতীত প্রায় সকল ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শক্রমেই শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়।
প্রশ্ন ৭। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদের মধ্যে সম্পর্কের আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ ও সংসদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এই সম্পর্ক ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যবস্থার অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার মতো ভারতেও মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের সংসদের যে কোনো এক কক্ষের সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীপরিষদ সংসদের একটি কমিটি বিশেষ। সংসদের সদস্য হিসাবে মন্ত্রীগণ সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন এবং সংসদে দলীয় সমর্থনের সহায়তায় প্রস্তাবকে আইনে পরিণত করতে পারেন। মন্ত্রীগণ যে কক্ষের সদস্য কেবল সেই কক্ষেই ভোট দিতে পারেন।
ব্রিটিশ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার মতো ভারতেও মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কার্যের জন্য যৌথভাবে সংসদের নিম্নকক্ষের (লোকসভার) নিকট দায়বন্ধ। মন্ত্রী পরিষদের কার্যকাল সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার আস্থার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং মন্ত্রী পরিষনে লোকসভায় ভাল অবস্থান থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৮। রাজ্যপালের ক্ষমতা, কার্যাবলী ও সাংবিধানিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ১৫৩নং অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের উল্লেখ আছে। তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সংবিধানের ১৫৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন।
সংবিধানের ১৫৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যপাল পদপ্রার্থীর জন্য কতকগুলি যোগ্যতা নির্ধারিত করা হয়েছে।
এগুলো হল-
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) তাঁর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে।
(গ) তিনি কেন্দ্রীয় সংসদ বা রাজ্য বিধানসভার সদস্য হতে পারবেন না।
রাজ্যপালকে সাধারণত ৫ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর স্বপদে বহাল থাকেন।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ সংবিধানে রাজ্যপালের প্রচুর ক্ষমতা উল্লেখ আছে। অবশ্য তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(ক) শাসন-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যের শাসন ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে নাস্ত করা হয়েছে। তাঁর নামেই রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালিত হয়। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন পদস্থের সরকারি কর্মচারীদের নিযুক্ত করেন। তিনি রাজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও উপাচার্যদের নিযুক্ত করেন।
(খ) আইন-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যপাল রাজ্যের আইনসভার অঙ্গ। তিনি আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে ও স্থগিত রাখতে পারেন। রাজ্য আইন সভা কর্তৃক গৃহীত বিল তাঁর সম্মতি লাভে আইনে পরিণত হয়। তিনি আইনসভায় গৃহীত বিলে সম্মতি দিতে পারেন বা বিলটি পুনর্বিবেচনার জন্য আইনসভায় ফেরত পাঠাতে পারেন। অনেক সময় রাজ্যপাল আইনসভায় গৃহীত বিলে সম্মতি প্রকাশ না করে বিলটিতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য তাঁর নিকট প্রেরণ করতে পারেন। আইনসভার অধিবেশন না – চলাকালীন সময়ে রাজ্যপাল অধ্যাদেশ (Ordinance) প্রণয়ন করতে পারেন। উক্ত আইন রাজ্য আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত না হলে আইনসভার অধিবেশন আরম্ভ হওয়ার ছয় সপ্তাহের পর বলবৎ থাকতে পারে না।
(গ) অর্থ-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যপালের অনুমোদন ব্যতীত কোন তহবিল সংক্রান্ত বিল বিধানসভায় উত্থাপিত হয় না। প্রত্যেক অর্থ বর্ষের প্রারম্ভে রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভায় বাজেট উত্থাপন করেন। রাজ্যের আকস্মিক ব্যয় তহবিল রাজ্যপালের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকে।
(ঘ) বিচার-বিষয়ক ক্ষমতাঃ রাজ্যপালের কিছু বিচার-বিষয়ক ক্ষমতা আছে। তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে দণ্ডিত ব্যক্তিকে মার্জনা করতে পারেন। তিনি গুরুতর শাস্তিকে লঘুতর করতে পারেন।
(ঙ) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান রাজাপালকে কিন্তু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রদান করেছে। তিনি মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ ছাড়াই এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান। সাধারণ অবস্থার মন্ত্রী পরিষদই সর্বেসর্বা। রাজ্যপালের সকল ক্ষমতা রাজ্যিক মন্ত্রীপরিষদই বাস্তবে প্রয়োগ করেন।
(চ) রাজ্য শাসনে রাজ্যপালের ভূমিকাঃ রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক-প্রধান। বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদই রাজ্যপালের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদের বিধান সভায় শক্তিশালী অবস্থান থাকলে রাজ্যপাল নিজে কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সময় তিনি আর নিয়মতান্ত্রিক শাসক- প্রধান থাকেন না। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বহাল থাকাকালীন রাজ্যপাল প্রকৃত শাসকের ভূমিকা পালন করেন। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল মন্ত্রীপরিষদকে পরামর্শ দিতে পারেন। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রির শাসক-প্রধান। কিন্তু রাজ্যের বিশেষ পরিস্থিতিতে অর্থাৎ সাংবিধানিক সংকটকালে বা রাষ্ট্রপতি শাসনকালে রাজ্যপাল প্রকৃত শাসকের ভূমিকা পালন করেন।
প্রশ্ন ৯। রাজ্যের শাসন-ব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো?
অথবা,
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা, কার্যাবলী ও ভূমিকা আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী হলেন প্রকৃত শাসক-প্রধান। সংবিধানের ২৬৩নং ধারায় মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখ আছে।
সংবিধানের ১৬৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজাপাল নিযুক্ত করেন। তিনি রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেন। সাধারণত বিধানসভার কার্যকালই মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকাল। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যকাল বিধানসভার আস্থার উপর নির্ভরশীল।
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মন্ত্রীপরিষদঃ মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্যপাল অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। প্রয়োজনবে মন্ত্রীদের দপ্তরেরও রদবদল করেন। তিনি বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করেন এবং বিভাগীয় দপ্তরগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। তাঁর পরামর্শ অনুসারে রাজ্যপাল যে কোনো মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
(খ) মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালঃ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শ দাতা। তিনি রাজাপাল ও মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রী পরিষদেরে সভায় গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত রাজ্যপালকে অবহিত করেন।
(গ) মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য আইনসভাঃ আইনসভার সঙ্গে মুধ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আইনসভার সংখ্যা গরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্ৰী আইনসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজ্য আইনসভায় তিনি সরকারের নীতি সমর্থন করেন এবং বিরোধী দলগুলোর সকল প্রশ্নের উত্তর দেন।
(ঘ) দলীয় নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীঃ মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দলীয় নীতিকে অনুসরণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁর উৎকর্ষ শাসনকার্যের জন্য দলের সুনাম বৃদ্ধি পায়।
ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যপালের উল্লেখিত সকল ক্ষমতাই বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োগ করে থাকেন। তিনি রাজ্যের প্রকৃত শাসক প্রধান।
প্রশ্ন ১০। ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরিকালীন ক্ষমতাসমূহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে আপৎকালীন ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রপতির হাতে তিন প্রকার জরুরিকালীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এগুলো হলো –
(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা (National Emergency): সংবিধানের ৩৫২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে যুদ্ধ, বহির্শত্রুর আক্রমণ বা আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বিদ্ৰোহ ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতির যদি মনে হয় যে এমন গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে ভারত বা ভারতের অংশ বিশেষের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তাহলে তিনি সমগ্র ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে যে যুদ্ধ, বহির্শত্রুর আক্রমণ বা আভ্যন্তরীণ গোলযোগ ঘটার আগেই রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন যদি তাঁর মনে হয় যে এরূপ বিপন আসন্ন।
১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংশোধনী আইন অনুসারে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের লিখিত প্রস্তাবের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রপতি এই প্রকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন না। ভারতে আজ পর্যন্ত তিনবার জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করার সময় এবং ১৯৭৫ সালে আভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্য এধরনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়। এই ঘোষণার ফলে ১৯নং অনুচ্ছেদের স্বাধীনতার অধিকারসমূহ স্থগিত বা ক্ষুণ্ণ হতে পারে [৩৫৮ নং অনুচ্ছেদ ] এবং সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকারটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হতে পারে [৩৫৯ (১) অনুচ্ছেদ]
(খ) রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা (Emergency due to Failure of constitutional Machinery in a state): সংবিধানের ৩৫৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে যে কোনো কারণে রাজ্যের রাজ্যপালের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে বা অন্য কোনোভাবে রাষ্ট্রপতির যদি এরূপ ধারণা হয় যে সেই রাজ্যে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য শাসনতন্ত্র অনুযায়ী সে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় তাহলে তিনি সেই মর্মে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হয়। রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।১৯৫১ সালে পাঞ্জাবে প্রথম এধরনের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থ জারি করা হয়েছিল।
৩৫৬নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা নিজের হাতে তুলে নেন অথবা রাজ্যপাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হস্তে ন্যস্ত করেন। রাষ্ট্রপতি বিধানসভা ভঙ্গ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। সাময়িককালের জন্য বিধানসভার কাজ ও ক্ষমতা স্বগিত রেখে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অস্থিরতা কাটার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন যাতে বিকল্প একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।
(গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা (Financial Emergency ): সংবিধানের ৩৬০নং অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির যদি এরূপ ধারণা হয় যে ভারত বা ভারতের কোন অংশে আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম বিপন্ন হয়েছে সেক্ষেত্রে তিনি এই মর্মে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। দু’মাসের মধ্যে এই ঘোষণা সংসদের উভয় কক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। নচেৎ দু’মাস পর এই ঘোষণা অকার্যকর হয়ে পড়বে। আজ পর্যন্ত আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি।
আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলোর অর্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সমস্ত কর্মচারির বা তার কোনো বিশেষ অংশের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন। এই প্রকার জরুরিকালীন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা সাময়িকভাবে হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। একটি সংসদীয় শাসন বিভাগের অর্থ হলঃ
(ক) যেখানে সংসদ আছে, সেখানের শাসন বিভাগ।
(খ) সংসদ দ্বারা নির্বাচিত শাসন বিভাগ।
(গ) যেখানে সংসদ শাসন বিভাগ হিসাবে কাজ করে।
(ঘ) শাসন বিভাগ যা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের উপর নির্ভর করে।
উত্তরঃ (ঘ) শাসন বিভাগ যা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনের উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন ২। কথোপকথনটি পড়। কোনটির সাথে তুমি একমত এবং কেন?
অমিত – সাংবিধানিক নীতির দিকে দেখ, মনে হবে রাষ্ট্রপতি শুধুমাত্র রাধার ষ্ট্যাম্প (rubber stamp)।
শ্যামা – রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। সুতরাং তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ ও করতে পারেন।
রাজেশ – আমাদের একজন রাষ্ট্রপতির প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের পর সংসদ একজন নেতাকে প্রধানমন্ত্রী রূপে নির্বাচিত করে নিতে পারে।
উত্তরঃ আমরা অমিতের মতের সঙ্গে একমত। ভারতের রাষ্ট্রপতি নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। সংসদীয় সরকারের প্রধান বিশেষত্ব হল রাষ্ট্রপ্রধান সাংবিধানিক প্রধান। প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের হাতে ন্যস্ত থাকে। সুতরাং অমিতের মত সঠিক।
প্রশ্ন ৩। নীচের খবরগুলো যে প্রকাশ করে, সেই মন্ত্রকটি চিহ্নিত কর। এটি কি একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক হবে না রাজ্য মন্ত্রক হবে? কেন?
(ক) একটি সরকারি (Official) বিজ্ঞপ্তি বলেছে যে ২০০৪-০৫ সালে তামিলনাডু পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনী অষ্টম, নবম, দশম শ্রেণীর জন্য নতুন অনুবাদ প্রকাশ করবে।
(খ) আকরিক লোহা বিশেষজ্ঞদের সাহায্য করার জন্য নতূন রেল লাইন চালু করা হবে জনাকীর্ন তিরুভাল্লুর চেন্নাই পথকে পাশ কাটিয়ে। নতুন লাইনটি আনুমিনিক ৮০ কিলোমিটার লম্বা হবে, পুত্তুরে শাখা থাকবে, এরপর পোর্ট এর কাছে আমি পাণ্ডুতে পৌঁছব।
(গ) তিন সদস্য বিশিষ্ট উপবিভাগীয় সমিতি গঠন করা হয়েছে। রামায়াপেট এ চাষীদের আত্মহত্যার তদন্ত করার জন্য। সেখানে দুজন চাষী আত্মহত্যা করেছে এমাসে, যাদের শস্যের অভাবের জন্য অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল।
উত্তরঃ (ক) তামিলনাডু রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রক।
(খ) কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রক। রেল কেন্দ্রীয় তালিকাভূক্ত বিষয়।
(গ) রাজ্যসরকারের কৃষিমন্ত্রক।
প্রশ্ন ৫। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার সময় রাষ্ট্রপতি পছন্দ করেন –
(ক) লোকসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতাকে।
(খ) জোট এর বড় দলের নেতাকে যার লোকসভায় গরিষ্ঠতা আছে।
(গ) রাজ্যসভার সবচেয়ে বড় দলের নেতাকে।
(ঘ) জোট বা দলের নেতা যার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন আছে।
উত্তরঃ (ঘ) জোট বা দলের নেতা যার লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন আছে।
প্রশ্ন ৬। আলোচনাটি পড় এবং বলো এরমধ্যে কোনটি প্রায় সমস্ত ভারতে প্রয়োগ করা হয়?
অলোকঃ প্রধানমন্ত্রী একজন রাজার মত। তিনি আমাদের দেশের সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেন।
শেখরঃ প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র সমপর্যায়ভূক্ত ব্যক্তিদের মধ্য অগ্রগণ্য (first among equals)। তাঁর কোনো বিশেষ ক্ষমতা নেই। সকল মন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রীর একই ক্ষমতা।
ববিঃ প্রধানমন্ত্রীকে দলের সদস্যদের আশা আকাঙ্খা এবং সরকারের সমর্থকদের ইচ্ছার দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। কিন্তু মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের প্রাধান্য থাকে?
উত্তরঃ ববির বিবৃতিটি ভারতের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রযোজ্য।
প্রশ্ন ৭। তুমি কেন মনে করো রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য? একশ শব্দের মধ্যে তোমার উত্তর দাও?
উত্তরঃ ভারতে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। এই ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাই প্রকৃত শাসক। রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি দেশের মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী শাসন কার্য পরিচালনা করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার পরামর্শ ব্যতীত তিনি কোনো কাজই করতে পারেন না। তাছাড়া সংবিধানের ৪২- তম সংশোধনী আইন
অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আইনগতভাবে মন্ত্রীসভার পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য।
প্রশ্ন ৮। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা আইন বিভাগকে অনেক ক্ষমতা অর্পণ করেছে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। তুমি কেন মনে করো, শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা এত জরুরি?
উত্তরঃ সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। মন্ত্রীসভার সদস্যগণ আইনসভার সদস্য। মন্ত্রীপরিষদ আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠের আস্থার উপর স্ব-পদে-বহাল থাকে।
সংসদ নিম্নোক্ত উপায়ে মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেঃ
(ক) মন্ত্রীপরিষদ তাদের নীতি ও কার্যের জন্য সংসদের নিকট দায়বদ্ধ।
(খ) সংসদ আলোচনা বিতর্ক, প্রশ্ন ইত্যাদির মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(গ) সংসদে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
(ঘ) লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
প্রশ্ন ৯। এটা বলা হয় যে আমলাতন্ত্রের উপর রাজনৈতিক প্রভাব খুব বেশি। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে অনেকটি স্বশাসিত সংস্থা থাকা উচিত, যারা মন্ত্রীদের কাছে উত্তর দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে না।
(ক) তুমি কি মনে করো এতে প্রশাসন অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে?
(খ) তুমি কি মনে করো এতে প্রশাসন অনেক বেশি দক্ষ হবে?
(গ) গণতন্ত্রের অর্থ হল প্রশাসনের উপর নির্বাচিত প্রতিনিধির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।
উত্তরঃ (খ) স্বশাসিত সংস্থা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন অনেক বেশি দক্ষ হবে।
প্রশ্ন ১০। নিয়োগীকৃত প্রশাসনের বদলে নির্বাচিত প্রশাসন এর প্রস্তাব সম্পর্কে একটি রচনা লেখো?
উত্তরঃ বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মনোনীত বা নিয়োগকৃত প্রশাসন ব্যবস্থা প্রচলিত। মনোনীত প্রশাসন ব্যবস্থা শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। মনোনীত প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে। নির্বাচিত প্রশাসন ব্যবস্থা পক্ষপাতমূলক হতে বাধ্য। কারণ তারা নির্বাচকদের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। তাছাড়া নির্বাচিত প্রশাসন ব্যবস্থা ব্যয়বহুল। নির্বাচিত প্রশাসনের বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব থাকে যা মনোনীত প্রশাসনের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই দক্ষতা ও প্রশাসনের স্থায়িত্বের জন্য মনোনীত প্রশাসন অধিক উপযোগী।