Class 11 Political Science Chapter 2 ভারতীয় সংবিধানে অধিকার

Class 11 Political Science Chapter 2 ভারতীয় সংবিধানে অধিকার answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 2 ভারতীয় সংবিধানে অধিকার and select needs one.

Class 11 Political Science Chapter 2 ভারতীয় সংবিধানে অধিকার

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 2 ভারতীয় সংবিধানে অধিকার Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

ভারতীয় সংবিধানে অধিকার

পাঠ:

প্ৰথম খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারগুলি উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ১২-৩৫নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকারগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ২। কে ভারতে মৌলিক অধিকারগুলিকে সাময়িকভাবে বাতিল করতে পারে?

উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সাময়িকভাবে মৌলিক অধিকারগুলো বাতিল করতে পারেন।

প্রশ্ন ৩। মৌলিক অধিকারগুলো কি চরম?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ না। মৌলিক অধিকারগুলো চরম নয়। এগুলোর উপর সীমাবদ্ধতা আছে। 

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় সংবিধান কয় প্রকার স্বাধীনতা প্রদান করেছে?

উত্তরঃ ছয় প্রকার।

প্রশ্ন ৫। ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ (ক) অধ্যায়ে কয়টি মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ বর্তমানে ১১টি মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ আছে।

প্রশ্ন ৬। ভারতের সংবিধানের কোন্ অধ্যায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে।

প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি কি বিচারযোগ্য? 

উত্তরঃ নির্দেশাত্মক নীতিগুলি বিচারযোগ্য নয়। তবে সুপ্রিমকোর্টের অভিমত যে বিচারালয়ের এগুলোকে এড়িয়ে চলা উচিত নয়। 

প্রশ্ন ৮। কে মৌলিক অধিকারগুলো সংশোধন করতে পারে?

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় সংসদ মৌলিক অধিকারগুলো সংশোধন করতে পারে।

প্রশ্ন ৯। কোন সালে জাতীয় মানবাধিকার আয়োগ স্থাপিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৪ সালে।

প্রশ্ন ১০। কোন্ দেশের সংবিধানের অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো বিধিবদ্ধ করা হয়েছে?

উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুকরণে।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় সংবিধানের ‘আইনের দৃষ্টিতে সাম্য অংশটির উৎস কী?

উত্তরঃ ‘আইনের দৃষ্টিতে সাম্য অংশটি ব্রিটেনের সাধারণ আইনের (Common Law)অনুকরণে আমাদের সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় সংবিধানের “আইনের সমান সংরক্ষণ’ অংশটির উৎস কী? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ‘আইনের সমান সংরক্ষণ’ অংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুকরণে লিপিবন্ধ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় সংবিধানের কত নং অনুচ্ছেদে ‘শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার উল্লিখিত আছে?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩২-৩৫ নং অনুচ্ছেদগুলোতে। 

প্রশ্ন ১৪। কোন সংশোধনীতে শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ ২০০২ সালের (১২ই ডিসেম্বর) ৮৬তম সংবিধান সংশোধনীতে শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ১৫। কে গণপরিষদে নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে ‘নৈতিক উপদেশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন?

উত্তরঃ অধ্যাপক কে. সি. হোয়ার নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে ‘নৈতিক উপদেশ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

প্রশ্ন ১৬। কোন্ অধিকারটি মৌলিক অধিকারের মর্যাদা হারিয়ে সাধারণ আইনে পরিণত হয়েছে?

উত্তরঃ ‘সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকারের মর্যাদা হারিয়ে সাধারণ আইনে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন ১৭। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত একাদশ বা সর্বশেষ মৌলিক কৰ্তব্যটি কী? 

উত্তরঃ সংবিধানে বর্ণিত একাদশ বা সর্বশেষ মৌলিক কৰ্তব্যটি হল – ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স্ক প্রতিটি শিশুকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা তার পিতা-মাতা বা অভিভাবকের কর্তব্য।

প্রশ্ন ১৮। ব্রিটিশ ভারতে প্রথম কবে কারা আনুষ্ঠানিকভাবে মৌলিক অধিকারের দাবি জানিয়েছিলেন? 

উত্তরঃ ব্রিটিশ ভারতে ১৯২৮ সালে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ বোম্বাই অধিবেশনে প্রথম ভারতীয়দের জন্য অনুষ্ঠানিকভাবে মৌলিক অধিকারের দাবি জানিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৯। ‘বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ কী?

উত্তরঃ বন্দীকে আদালতে সশরীরে হাজির করার নামই ‘বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ’। 

প্রশ্ন ২০। মূল সংবিধানে কয়টি নির্দেশমূলক নীতি ছিল? 

উত্তরঃ মূল সংবিধানে ১৩টি নির্দেশমূলক নীতি ছিল।

প্রশ্ন ২১। কত সালের কত তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে সাধারণ আইনে পরিণত করা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৯৭৮ সালের ৪৪-তম সংশোধনীর মাধ্যমে।

প্রশ্ন ২২। এমন একটি মৌলিক অধিকারের উল্লেখ কর যে অধিকারটি বিদেশিরাও ভোগ করতে পারে? 

উত্তরঃ শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার।

প্রশ্ন ২৩। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ ধারায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষাদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে?

উত্তরঃ ২৮নং ধারায়।

প্রশ্ন ২৪। কততম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক কর্তব্য সংযোজন করা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংশোধনীর মাধ্যমে।

প্রশ্ন ২৫। সংবিধানের কোন্ ধারায় সাম্যের অধিকার বর্ণিত আছে? 

উত্তরঃ ১৪-১৮ নং ধারায়।

প্রশ্ন ২৬। সংবিধানের কোন্ ধারায় ‘আইনের দৃষ্টিতে সাম্য’ কথাটি আছে? 

উত্তরঃ ১৪নং ধারায়।

প্রশ্ন ২৭। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ ধারায় ‘স্বাধীনতার অধিকার’ লিপিবদ্ধ আছে? 

উত্তরঃ ১৯-২২ নং ধারায়।

প্রশ্ন ২৮। সংবিধানের কোন্ ধারায় ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি’ অধিকারটি লিপিবদ্ধ করা আছে? 

উত্তরঃ ২১-৩০ নং ধারায়।

প্রশ্ন ২৯। মূল সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের কয়টি মৌলিক অধিকার ছিল?

উত্তরঃ সাতটি।

প্রশ্ন ৩০। বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকের কয়টি মৌলিক অধিকার আছে? 

উত্তরঃ ছয়টি।

প্রশ্ন ৩১। সংবিধানের কোন্ ধারায় শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ ২১ (ক) ধারায়।

প্রশ্ন ৩২। স্বপদে বহাল থাকাকালে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কী ধরনের মামলা দায়ের করা যায় না? 

উত্তরঃ ফৌজদারী মামলা।

প্রশ্ন ৩৩। কর্মের অধিকার কী ধরনের অধিকার?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক অধিকার।

প্রশ্ন ৩৪। সরকার কেন নির্দেশাত্মক নীতিগুলোকে উপেক্ষা করতে পারে না?

উত্তরঃ জনসমর্থন হারানোর ভয়ে।

প্রশ্ন ৩৫। মৌলিক একটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ জরুরিকালীন অবস্থায় মৌলিক অধিকার সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকে।

প্রশ্ন ৩৬। এক প্রকার গান্ধীবাদী নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ করো?

উত্তরঃ কুটির শিল্পের উন্নয়ন।

প্রশ্ন ৩৭। মৌলিক অধিকারের যেকোনো একটি বৈশিষ্ট্য লেখো? 

উত্তরঃ মৌলিক অধিকারগুলো ন্যায়িক বিচারযোগ্য।

প্রশ্ন ৩৮। সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলোর একটি ত্রুটি উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে কোনো অর্থনৈতিক অধিকার নেই।

প্রশ্ন ৩৯। কোন্ দেশের সংবিধানের অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে নির্দেশাত্মক নীতিগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?

উত্তরঃ আয়ারল্যান্ডের সংবিধানের অনুকরণে।

প্রশ্ন ৪০। ভারতে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার দায়িত্ব কাদের হাতে দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টদের।

প্রশ্ন ৪১। রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতির অন্তর্গত আন্তঃরাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্নিবিষ্ট একটি নীতির উল্লেখ করো।

উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।

প্রশ্ন ৪২। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার’ লিপিবন্ধ আছে? 

উত্তরঃ ২৫-২৮ নং অনুচ্ছেদে।

প্রশ্ন ৪৩। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ ধারায় ‘শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?

উত্তরঃ ২৩নং এবং ২৪নং।

প্রশ্ন ৪৪। ‘বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ’ কথাটির অর্থ কী? 

উত্তরঃ সশরীরে হাজির করা।

প্রশ্ন ৪৫। কোন্ দেশের সংবিধান অনুকরণ করে ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছে?

উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

প্রশ্ন ৪৬। সংবিধানের কোন্ ধারায় সুপ্রীম কোর্টকে মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হৈছে? 

উত্তরঃ ৩২নং ধারায়।

প্রশ্ন ৪৭। সংবিধানের কোন্ ধারায় হাইকোর্টগুলোকে অধিকার রক্ষার জন্য লেখ জারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ ২২৬ নং ধারায়।

প্রশ্ন ৪৮। নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য সংবিধানের কোন্ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?

উত্তরঃ ৫১ (ক)

প্রশ্ন ৪৯। সংবিধানের কোন্ অধ্যায়ে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যগুলো লিপিবদ্ধ করা।

উত্তরঃ ৪র্থ (ক)

প্রশ্ন ৫০। সংবিধানের ২১(খ)-তে কী বলা হয়েছে?

উত্তরঃ রাষ্ট্র ৬-১৪ বছর বয়স্ক শিশুর জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। 

প্রশ্ন ৫১। সংবিধানের কোন্ অংশে মৌলিক অধিকার সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে?

উত্তরঃ তৃতীয় অংশে (Part III-এ)।

প্রশ্ন ৫২। মৌলিক অধিকারগুলো ভারতীয় সংবিধানের অভিন্ন অংশ। হ্যাঁ বা না লেখো?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৫৩। ভারতীয় সংবিধানে সন্নিবিষ্ট কোন্ মৌলিক অধিকারকে সংবিধানের ‘হৃৎপিও এবং আত্মা’ বলে বিবেচনা করা হয়?

উত্তরঃ সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার (৩২নং অনুচ্ছেদ)। 

প্রশ্ন ৫৪। সংবিধানের কোন্ সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?

উত্তরঃ ৪২তম সংশোধনীর (১৯৭৬ সালে) মাধ্যমে। 

প্রশ্ন ৫৫। মৌলিক অধিকারগুলো অসীম। (সত্য না মিথ্যা লেখো)

উত্তরঃ মিথ্যা।

প্রশ্ন ৫৬। মৌলিক অধিকারগুলি যুক্তিযোগ্য বা বিচারযোগ্য। (সত্য না অসত্য লেখো)।

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ৫৭। সম্পত্তির অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। সত্য না মিথ্যা লেখো?

উত্তরঃ মিথ্যা।

২। সঠিক উত্তর বেছে লেখো:

প্রশ্ন ১। কত তম সংশোধনে ‘সম্পত্তির অধিকার’কে মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করা হয়েছে? 

(ক) ৪২-তম।

(খ) ৪৫-তম। 

(গ) ৪৪-তম। 

(ঘ) ৪৩-তম। 

উত্তরঃ (গ) ৪৪-তম ।

প্রশ্ন ২। কত তম সংশোধনে সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যগুলো সংযোজন করা হয়েছে?

(ক) ৪২-তম। 

(খ) ৪৪-তম। 

(গ) ৪৫-তম। 

(ঘ) ৭৩-তম।

উত্তরঃ (ক) ৪২-তম।

প্রশ্ন ৩। মূল সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কয়টি মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ ছিল?

(ক) ৫টি।

(খ) ৬টি।

(গ) ৭টি।

(ঘ) ৮টি।

উত্তরঃ (গ) ৭টি।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে কয়টি স্বাধীনতার অধিকার বিধিবদ্ধ আছে? 

(ক) ৫টি।

(খ) ৬টি।

(গ) ৪টি।

(ঘ) ৭টি।

উত্তরঃ (খ) ৬টি।

প্রশ্ন ৫। অস্পৃশ্যতা বর্জন করা একটি সমতার অধিকার/ধর্মের অধিকার/শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার। (শুদ্ধ উত্তরটি বেছে নাও)

উত্তরঃ সমতার অধিকার।

প্রশ্ন ৬। স্বতন্ত্রতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার একটি অধিকার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ মতামত ও বাক-স্বাধীনতার অধিকার।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। মৌলিক অধিকার বলতে তুমি কী বোঝো? 

উত্তরঃ ব্যক্তির সার্বিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। এই অধিকার ব্যতীত ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ করতে সক্ষম হয় না। ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে (১২-৩৫নং অনুচ্ছেদে) নাগরিকদের জন্য কতকগুলো অধিকার বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। এই অধিকারগুলো মৌলিক অধিকার; কারণ সংবিধান এইগুলোকে বিশেষ মৰ্যাদা প্ৰদান কৰিছে। মৌলিক অধিকারগুলোকে কেউই অমান্য করতে পালে না। কেউ যদি এই অধিকার অমান্য করে তবে তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ব্যবস্থাও সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা আছে। 

প্রশ্ন ২। মৌলিক অধিকারের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখো?

উত্তরঃ মৌলিক অধিকারের দুটি সীমাবদ্ধতা নিম্নরূপঃ 

(ক) মৌলিক অধিকারগুলো সংশোধনযোগ্য।

(খ) জরুরিকালীন অবস্থায় মৌলিক অধিকার সাময়িকভাবে বাতিল হয়। 

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত দুই প্রকার মৌলিক অধিকারের উল্লেখ করা যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উপভোগ করে? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধান সংখ্যালঘুদের নিম্নোক্ত দুইপ্রকার মৌলিক অধিকার প্রদান করেছেঃ 

(ক) ২৯নং ধারা মতে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের ভাষা, হরফ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে পারবে। সরকার পরিচালিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মতো তাদেরও সমান প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে।

(খ) ৩০নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রত্যেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের পছন্দমতো বা প্রয়োজন মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবে। 

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় নাগরিকের যে-কোন দুটি মৌলিক কর্তব্য লেখো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৫১ (ক) অনুচ্ছেদে নাগরিকের মোট ১১টি মৌলিক কর্তব্য আছে। একাদশতম মৌলিক কর্তব্য ২০০২ সালে ৮৬-তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংযোজন করা হয়েছে। 

দুইটি মৌলিক কৰ্ত্তব্য নিম্নরূপঃ

(ক) সংবিধান মান্য করা; জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীককে শ্রদ্ধা করা। 

(খ) স্বাধীনতা আন্দোলনকে যে সকল মহান আদর্শ অনুপ্রাণিত করেছিল তা অনুসরণ করা ও পালন করা।

প্রশ্ন ৫। ভারতীয় সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক অধিকারগুলোর দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলোর প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ

(ক) মৌলিক অধিকারগুলো আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য।

(খ) মৌলিক অধিকারগুলো স্বাধীন বা চরম নয়। এগুলোর উপর সমর্থনীয়য়সীমাবদ্ধতা আছে। 

প্রশ্ন ৬। “বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ” সম্পর্কে যা জানো লেখো?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে তার প্রতিকারের কয়েকটি ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ব্যবস্থা হল বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ লেখ জারির ব্যবস্থা। সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট এই লেখ জারি করতে পারে। 

এই ব্যবস্থা হল নিম্নরূপঃ

যে কোনো ব্যক্তিকে বন্দী করা হলে কী কারণে তাকে বন্দী করা হয়েছে তা জানবার জন্য আদালত এই নির্দেশ দিতে পারে। বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ বা Habeas Corpus কথাটির ইংরাজি অর্থ হচ্ছে ‘have the body’ অর্থাৎ সশরীরে হাজির করা। ব্যক্তিকে আটক করা আইন অনুমোদিত না হলে আদালত তাকে মুক্তি দেবার নির্দেশ প্রদান করে। 

প্রশ্ন ৭। অধিকার পুচ্ছ কী?

উত্তরঃ অধিকার পৃচ্ছা হল মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে বিচারালয় কর্তৃক জারি করা একটি অন্যতম লেখ।

অধিকার পুচ্ছা বা Quo-warranto কথাটির অর্থ হল ‘কোন্ অধিকারে’। যখন কোন ব্যক্তি এমন কোন পদ বা অধিকার দাবি করেন, যে পদ বা অধিকারের জন্য তিনি যোগ্যতা সম্পন্ন নন, তাহলে আদালত ‘অধিকার পুচ্ছা’র দ্বারা উক্ত দাবির বৈধতা অনুসন্ধান করে এবং দাবি বৈধ না হলে তাকে পদচ্যুত করার নির্দেশ দেয়।

প্রশ্ন ৮। উৎপ্রেষণ কী?

উত্তরঃ উৎপ্রেষণ হল মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে বিচারালয় কর্তৃক জারি করা নির্দেশ। উৎশ্লেষণ বা Certiorari শব্দটির অর্থ হল ‘আরও বিশদভাবে জ্ঞাত হওয়া’ (To be more fully informed of। নিম্নতর বিচারালয়ের বিচার চলাকালীন ওই বিচারালয়ের হাত হতে বিচার উচ্চতর বিচারালয়ের হাতে অর্পণ করবার জন্য এবং ক্ষমতা বহির্ভূত সিন্ধান্তকে বাতিল করবার জন্য উৎপ্রেষণ লেখের সাহায্য নেওয়া হয়। 

প্রশ্ন ৯। পরমাদেশ কী?

উত্তরঃ মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে বিচারালয় কর্তৃক জারি করা নির্দেশ। পরমাদেশ (Mandamus) শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘আমরা আদেশ করি। এর দ্বারা আদালত কর্তৃক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা অধস্তন আদালতকে আপন পদে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই দায়িত্ব সার্বজনীন উদ্দেশ্যে সার্বজনীন বিষয়ক দায়িত্ব হওয়া প্রয়োজন। 

প্রশ্ন ১০। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার?

উত্তরঃ ভারত একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ভারতীয় সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান করেছে। সংবিধানের ২৫ হতে ২৮নং অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার বর্ণিত করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকগণ যেকোনো ধর্ম গ্রহণ, ধর্মবর্তন ও ধর্মাচরণ বা পূজার্চনা বা উপাসনা করতে পারবে। সরকার পরিচালিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোন বিদ্যালয়ে বিশেষ ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে না। ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে ধর্মীয় অধিকার ও বিশ্বাসের মর্যাদা প্রদান করেছে। তাছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার সর্ব ধর্মের সমন্বয় সাধনেও সহায়তা করেছে। তাই ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। কিন্তু এই অধিকারের সীমাবদ্ধতা আছে। 

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ যেকোনো দুই প্রকার স্বাধীনতার অধিকার লেখো?

অথবা, 

ভারতীয় সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে সন্নিবিষ্ট থাকা যে কোনো দুটি স্বাধীনতা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ নাগরিকের দুই প্রকার স্বাধীনতা হল নিম্নরূপঃ 

(ক) বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।

(খ) সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার। 

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় সংবিধানে উল্লেখিত যেকোনো দুই প্রকার সমতার অধিকার লেখো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে উল্লেখিত দুই প্রকার সমতার অধিকার নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। 

(খ) সকল নাগরিকের জন্য আইনের সমান সংরক্ষণ।

প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় সংবিধানে সন্নিবেশিত যেকোনো দুই প্রকার ধর্মের অধিকার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত দুই প্রকার ধর্মের অধিকার নিম্নরূপঃ

(ক) ধর্মীয় চেতনার স্বাধীনতা।

(খ) পূজার্চনা, উপাসনা ও ধর্ম প্রচারের অধিকার। 

প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত দুপ্রকার সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকারের উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত দুপ্রকার সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার নিম্নরূপঃ 

(ক) সংখ্যালঘুদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করা।

(খ) সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার অধিকার। 

প্রশ্ন ১৫। অভিযুক্ত ও অপরাধীর যেকোনো দুটি অধিকার উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (ক) কোনো ব্যক্তিকে একই অপরাধে দুবার শাস্তি দেওয়া যাবে না।

(খ) কোনো ব্যক্তিকে তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। 

প্রশ্ন ১৬। নির্দেশাত্মক নীতির যে কোনো দুটি লক্ষ্য উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ নির্দেশাত্মক নীতির দুটি লক্ষ্য নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

(ক) জনকল্যাণ সাধন করা। 

(খ) জীবনযাত্রার মানদণ্ড উন্নত করা।

প্রশ্ন ১৭। যে কোনো দুপ্রকার অবিচারযোগ্য অধিকারের উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ (ক) জীবনধারণের আবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রী পাওয়ার অধিকার। 

(খ) কাজের অধিকার।

প্রশ্ন ১৮। যেকোনো দুপ্রকার গান্ধীবাদী নির্দেশাত্মক নীতি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ দুই প্রকার গান্ধীবাদী নির্দেশাত্মক নীতি নিম্নরূপঃ

(ক) গো-হত্যা নিবারণ।

(খ) আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃষিকার্যের ব্যবস্থা করা। 

প্রশ্ন ১৯। রাষ্ট্রপরিচালনার যে কোনো দুপ্রকার অর্থনৈতিক নির্দেশাত্মক নীতি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ রাষ্ট্র পরিচালনার দুপ্রকার অর্থনৈতিক নির্দেশাত্মক নীতি নিম্নরূপঃ

(ক) নারী ও পুরুষ যাতে সমানভাবে জীবিকা অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

(গ) স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই যাতে সমান কাজের জন্য সমান মজুরি পায় তার ব্যবস্থা করা। 

প্রশ্ন ২০। রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতির অন্তর্গত আন্তঃরাষ্ট্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত যে কোনো দুটি নীতির উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা।

(খ) মধ্যস্থতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরোধগুলির মীমাংসা করা।

প্রশ্ন ২১। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে দুটি পার্থক্য নিরূপণ করো?

উত্তরঃ মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ

(ক) মৌলিক অধিকারগুলো আদালত দ্বারা বিচারযোগ্য; কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতিগুলো বিচারযোগ্য নয়।

(খ) উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মৌলিক অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে, কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতিগুলো বাতিল হয়। 

প্রশ্ন ২২। ভারতীয় নাগরিকের যে কোনো দুটি মৌলিক কর্তব্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় নাগরিকের দুটি মৌলিক কর্তব্য হল নিম্নরূপঃ 

(ক) সংবিধানকে মান্য করা; জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীককে শ্রদ্ধা করা।

(খ) ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতিকে রক্ষা করা।

প্রশ্ন ২৩। মৌলিক কর্তব্যসমূহের যে কোনো দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ (ক) কতিপয় কর্তব্য অস্পষ্ট। এর ফলে সাধারণ মানুষ মৌলিক কর্তব্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না।

(খ) ভারতের সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিকের কর্তব্যগুলো অসংগতিপূর্ণ। 

প্রশ্ন ২৪। ভারতীয় সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত যে কোনো দু-প্রকার স্বাধীনতার উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ ১৯নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত স্বাধীনতার অধিকারসমূহের দুটি নিম্নে উল্লেখ করা-

(ক) বাক্‌ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।

(খ) শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র হয়ে সমবেত হওয়ার অধিকার। 

প্রশ্ন ২৫। কোন্ আইনের অধীনে কখন ‘রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আয়োগ গঠন করা হৈয়েছে? 

উত্তরঃ ১৯৯৩ সালের মানব অধিকার সুরক্ষা আইন-এর অধীনে ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আয়োগ গঠন করা হয়েছে।

প্রশ্ন ২৬। সাধারণ অধিকার এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ সাধারণ অধিকারগুলো আইনসভা সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতির মাধ্যমে পরিবর্তিত করতে পারে। অন্যদিকে মৌলিক অধিকারগুলো কেবল সংবিধান সংশোধনের দ্বারা পরিবর্তিত হয়। 

প্রশ্ন ২৭। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত যে কোনো দুটি নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশাত্মক নীতিসমূহের দুটি নিম্নরূপঃ

(ক) গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন। 

(খ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।

প্রশ্ন ২৮। দক্ষিণ আফ্ৰিকার সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিকদের যে কোনো দুটি অধিকার উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ দুটি অধিকার হল- 

(ক) মর্যাদার অধিকার। 

(খ) গোপনীয়তার অধিকার।

প্রশ্ন ২৯। সাধারণ অধিকার এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো?

উত্তরঃ সাধারণ অধিকার এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ

(ক) সাধারণ অধিকারগুলো রাজ্যিক আইনসভা বা কেন্দ্রীয় আইনসভা প্রণয়ন করে। তাই আইনসভা সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণ অধিকারগুলো পরিবর্তিত করতে পারে। অন্যদিকে মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা আছে। তাই মৌলিক অধিকারগুলো কেবলমাত্র সংবিধান সংশোধনের দ্বারা পরিবর্তিত হয়। 

(খ) সাধারণ অধিকারগুলো বিভিন্ন কারণে খর্ব হতে পারে কিন্তু নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো খর্ব হয় না।

প্রশ্ন ৩০। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ সংশোধনীর মাধ্যমে এবং কোন্ অনুচ্ছেদে মৌলিক কর্তব্যগুলি সংযোজন করা হয়েছে? 

উত্তরঃ ছাত্র-ছাত্রীরা নিজে করো।

প্রশ্ন ৩১। ভারতীয় সংবিধানে সন্নিবিষ্ট দুটি মৌলিক অধিকার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ সাম্যের অধিকার (Articles 14-18) এবং স্বাধীনতার অধিকার (Articles 19-22)।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত যে কোনো চারটি নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপরিচালনার চারটি নির্দেশাত্মক নীতি নিম্নরূপঃ

(ক) জীবিকা অর্জনের যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করা। 

(খ) গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।

(গ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।

(ঘ) গো-হত্যা নিবারণ।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলোর প্রকৃতি আলোচনা করো। 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে (অনুচ্ছেদে ১২-৩৫) মৌলিক অধিকারগুলোর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) মৌলিক অধিকারগুলো আদালতে বিচারযোগ্য। 

(খ) মৌলিক অধিকারগুলো চরম নয়। এগুলোর উপর সমর্থনযোগ্য কতকগুলো সীমাবদ্ধতা আছে।

(গ) মৌলিক অধিকারগুলো কতকগুলো ইতিবাচক ও কতকগুলো নেতিবাচক।

(ঘ) সংবিধানে লিপিবন্ধ মৌলিক অধিকারগুলো কেবলমাত্র ভারতীয় নাগরিকগণ ভোগ করতে পারে।

(ঙ) ২০ এবং ২১ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো ব্যতীত অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো জরুরিকালীন অবস্থার সময় সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়।

(চ) মৌলিক অধিকারগুলো নারী ও শিশুদের সুরক্ষা প্রদান করেছে। 

প্রশ্ন ৩। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ করো?

উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত চারটি নির্দেশাত্মক নীতি নিম্নরূপঃ 

(ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।

(খ) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা।

(গ) আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করা। 

(ঘ) মধ্যস্থতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরোধগুলোর মীমাংসা করা।

প্রশ্ন ৪। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে চারটি পার্থক্য লেখ?

উত্তরঃ মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে চারটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ 

(ক) মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়িত করতে সরকার বাধ্য; কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতি বাস্তবায়ন করতে সরকার বাধ্য নন। 

(খ) মৌলিক অধিকারগুলো আদালতে বিচারযোগ্য। কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতি আদালতে বিচারযোগ্য নয়। 

(গ) উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মৌলিক অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকে। কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতিগুলো বাতিল হয়। অবশ্য জরুরিকালীন অবস্থার সময় নির্দেশাত্মক নীতি বাতিল হয় না।

(ঘ) মৌলিক অধিকারের মূল লক্ষ্য হল রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা। অপরদিকে নির্দেশাত্মক নীতিগুলোর মূল লক্ষ্য হল রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।

প্রশ্ন ৫। পৌর অধিকার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো? 

উত্তরঃ যে সকল অধিকার ব্যতীত মানুষের জীবনের প্রাথমিক শর্ত পরিপূর্ণ হয় না। তাদের পৌর অধিকার বা ব্যক্তিগত অধিকার বলে। এই অধিকারগুলো সভ্য জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। জীবনের অধিকার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সমানাধিকার, শিক্ষার অধিকার প্রভৃতি পৌর অধিকারের উদাহরণ। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো পৌর অধিকারের মুল ভিত্তি।

প্রশ্ন ৬।গান্ধীবাদী নির্দেশাত্মক নীতিসমূহ ব্যাখ্যা করো? 

উত্তরঃ গান্ধীজির আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত কতকগুলো নীতি ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

এই নীতিগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) রাষ্ট্র পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে।

(খ) কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও গ্রামাঞ্চলে সমবায় ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য রাষ্ট্র বিশেষভাগে সচেষ্ট থাকবে।

(গ) গো-হত্যা নিবারণ করা।

(ঘ) একমাত্র ঔষধ হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্র ব্যতীত কোন প্রকার মাদক দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকবে।

প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক জারি করা লেখ সমূহ কী কী?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে তার প্রতিকারের কয়েকটি ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যে কোনো ব্যক্তি মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টের নিকট আবেদন করতে পারে। সুপ্রীম কোর্ট অভিযোগ বিচার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবার নির্দেশ দিতে পারে। নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ করবার জন্য সুপ্রীম কোর্ট নিম্নলিখিত লেখ (নির্দেশ) সমূহ জারি করতে পারেনঃ

(ক) বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ (Habeas Corpus)

(থ) পরমাদেশ (Mandamus)

(গ) প্রতিষেধ (Prohibition)

(ঘ) অধিকার পৃচ্ছা (Quo-warranto)

(৫) উৎপ্রেষণ (Certiorari)

প্রশ্ন ৮। ভারতের সংবিধানের কত তম অনুচ্ছেদে হাইকোর্টগুলোকে অধিকার রক্ষার জন্য লেখ জারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? কখন হাইকোর্টগুলোর লেখ জারির ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হয়েছিল? কোন্ সংশোধনী আইনে হাইকোর্টকে লেখ জারির ক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের ২২৬নং অনুচ্ছেদে হাইকোর্টগুলোকে অধিকার রক্ষার জন্য লেখ জারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংশোধনের মাধ্যমে হাইকোর্টগুলোর লেখ জারির ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালে ৪৪-তম সংশোধনে হাইকোর্টকে লেখ জারির ক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 

প্রশ্ন ৯। কীভাবে অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পরস্পর গভীর সম্পর্ক যুক্ত?

অথবা, 

“অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিচার করো। 

অথবা, 

“অধিকার কর্তব্যের সূচনা করে।” ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 

“অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য নিহিত।” সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ ইংরাজিতে একটি প্রবাদ আছে, Rights imply duties অর্থাৎ অধিকারের মধ্যেই কর্তব্য নিহিত। 

সমাজবোধ হতে অধিকার ও কর্তব্যের উদয় হয়। অধিকার স্বীকার করার অর্থ দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করা, আর এই দায়িত্বকে আমরা বলি কর্তব্য। অধিকার ও কর্তব্যের এই গভীর পারস্পরিক সম্পর্ক সামাজিক, রাষ্ট্রনৈতিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও নৈতিক জীবনে বিদ্যমান। রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলার অর্থ কর্তব্য পালন করা। যেমন – মাতাপিতার সন্তান-সন্ততিদের লালন পালন করা সন্তানদের প্রাপ্য অধিকার, বৃদ্ধাবস্থায় সন্তানদের মাতা-পিতাকে ভরণ-পোষণ ও যত্ন করা সন্তাননের কর্তব্য। সুতরাং দেখা যায় যে প্রতিটি অধিকারের সঙ্গে কর্তব্য গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। এরা যেন একই মুদ্রার দুই দিক। একের অভাবে অন্য অর্থহীন। যার লক্ষ্য হল ব্যক্তি তথা সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা।

প্রশ্ন ১০। “রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আয়োগ” সম্পর্কে টীকা লেখো। 

উত্তরঃ ১৯৯৩ সালের মানব অধিকার সুরক্ষা আইন – এর অধীনে ১৯৯৪ সালে ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আয়োগ গঠন করেন। উক্ত আয়োগ সুপ্রীম কোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারপতি, যিনি সভাপতির পদ অলংকৃত করেন, হাইকোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারপতি এবং অপর দুজন সদস্য যাদের মানবাধিকার সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞতা আছে এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিয়ে গঠিত। তাদের সকলকে নিয়োগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। 

এই আয়োগের প্রধান প্রধান কার্য নিম্নরূপঃ 

(ক) মানবাধিকার হতে বঞ্চিত ব্যক্তির আবেদন পত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অভিযোগ তদন্ত করে দেখা।

(খ) জেল কয়েদিদের অবস্থা যাচাইয়ের জন্য জেল পরিদর্শন করা।

(গ) মানবাধিকার বিষয়ে সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দান করা।

নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার আযোগ অত্যন্ত অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। 

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিকের স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে একটি টীকা লেখো। 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ১৯নং হতে ২২নং অনুচ্ছেদে স্বাধীনতার অধিকারগুলোর উল্লেখ আছে। 

বর্তমানে ১৯নং অনুচ্ছেদে নিম্নোক্ত ছয়টি স্বাধীনতা বর্ণিত আছেঃ

(ক) বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।

(খ) শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র হয়ে সমবেত হওয়ার অধিকার। 

(গ) সমিতি ও সংঘ গঠনের অধিকার।

(ঘ) ভারতের সর্বত্র চলাফেরার অধিকার। 

(ঙ) ভারতের সর্বত্র বসবাস করবার অধিকার।

(চ) যে কোনো পেশা বা ব্যবসা-বাণিজ্য করবার অধিকার।

প্রশ্ন ১২। ভারতের সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশাত্মক নীতি এবং মৌলিক অধিকারসমূহের মধ্যে তুলনামূলক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করোঃ

উত্তরঃ রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ও মৌলিক অধিকার একে অপরের পরিপূরক। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবন্ধ করা হয়েছে এবং নির্দেশাত্মক নীতিগুলো সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে লিপিবন্ধ করা হয়েছে। 

ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতাগণ সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় এবং চতুর্থ অধ্যায়কে একটি অপরটির পরিপূরক হিসাবে বিধিবদ্ধ করেছেন। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে সংসদ এবং সুপ্রীম কোর্টের মধ্যে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধানের ১ম সংশোধনীর সময় মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির সম্পর্ক নিয়ে প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধানের ১ম সংশোধনীতে জমিদারী প্রথা বিলোপ করা হয়। নির্দেশাত্মক নীতির রূপায়ণের জন্য জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠেছিল যে এটা সম্পত্তির অধিকারকে খর্ব করছে এবং ১৯৬৭ সালে গোলকনাথ মামলায় সুপ্রীম কোর্ট ঘোষণা করে যে মৌলিক অধিকার সংশোধন করা যায় না। কিন্তু ১৯৭৮ সালের ৪৪-তম সংশোধনীতে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করা হয়।

সংসদ ২৪-তম সংশোধনী ও ২৫-তম সংশোধনীর মাধ্যমে গোলকনাথ মামলার সিদ্ধান্তকে অতিক্রম করে। সংবিধানের ২৫-তম সংশোধন অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের সঙ্গে নির্দেশাত্মক নীতির বিরোধ হলেও সংসদ নির্দেশাত্মক নীতি রূপায়ণ করে আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা লাভ করে।

সংবিধানের ৪২-তম সংশোধন অনুযায়ী মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সম্পর্কের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মিনার্ভা-মামলায় প্রদান করে মহামান্য সুপ্রীমকোর্ট। ১৯৮০ সালে মিনার্ভা মামলায় সুপ্রীম কোর্ট ঘোষণা করে যে মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে মৌলিক অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়কে তৃতীয় অধ্যায়ের ‘ভগিনী অধ্যায়’ (Sister part) হিসাবে ধরা হয়। সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবন্ধ করা হয়েছে যা নাগরিকের পৌর ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে মৌলিক অধিকারে সুস্পষ্টভাবে আলোকপাত করা হয়নি। তাই সংবিধান প্রণেতাগণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারকে সন্নিবেশিত করার জন্য চতুর্থ অধ্যায়ে কতিপয় নির্দেশাত্মক নীতি লিপিবদ্ধ করেন। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতি একে অপরের পরিপূরক। সুতরাং এটা বলা যায় যে নির্দেশাত্মক নীতিগুলো মৌলিক অধিকারের ত্রুটিগুলো দূর করেছে। 

প্রশ্ন ১৩। রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতিগুলোর সাংবিধানিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।  

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলো আদালত দ্বারা বলবৎ যোগ্য নয়। কিন্তু এইগুলো শাসনকার্য পরিচালনার মৌলিক নীতি হিসাবে স্বীকৃত ও গৃহীত। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এই নীতির সাহায্য গ্রহণ করা উচিত। নির্দেশাত্মক নীতিগুলোর বিশেষত্ব হল এই যে এগুলো ভারতের মতো রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। নির্দেশাত্মক নীতিগুলোতে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শ নিহীত আছে। 

নির্দেশাত্মক নীতিগুলো আইন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বিচারবিভাগের পথও প্রদর্শন করে। এই নীতিগুলোর নৈতিক মূল্য ভারতীয় সংবিধানকে বিশেষ মর্যাদা। প্রদান করেছে।

নির্দেশাত্মক নীতিগুলো আদালত দ্বারা বলবৎ যোগ্য নয়। তবুও আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এদের উপযোগিতা রয়েছে। এই নীতিগুলোকে সংবিধানিক উপায়ে সরকার কার্যকর করতে পারে। নাগরিকগণের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য রয়েছে এবং তা নির্দেশাত্মক নীতিগুলো পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্দেশক নীতিগুলো বর্তমানে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।

প্রশ্ন ১৪। ভারতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের ভিত্তি স্বরূপ যে কোনো চারটি নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কতকগুলো নির্দেশাত্মক নীতি সমাজতান্ত্রিক আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। 

এগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) রাষ্ট্র সকল কাজের জন্য ন্যায় ও সহানুভূতিশীল বাতাবরণের সৃষ্টি এবং মাতৃমঙ্গল প্রতিষ্ঠা করবে।

(খ) ভারতের সকল নাগরিকদের জন্য অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রবর্তনের জন্য রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকবে।

(গ) সরকার দুর্বলতর ও অনগ্রসর সম্প্রদায়সমূহের পূর্ণ বিকাশের জন্য সচেষ্ট থাকবে। 

(ঘ) রাষ্ট্র শাসন বিভাগ হতে বিচার বিভাগকে পৃথক রাখবার চেষ্টা করবে। 

প্রশ্ন ১৫। ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কেন? চারটি কারণ দর্শাও।

উত্তরঃ মৌলিক অধিকার গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। 

এই অধিকারগুলো ভারতীয় সংবিধানে সন্নিবেশিত করার কারণগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) এগুলো জনগণের মূল অধিকার। 

(খ) এগুলো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য একান্ত আবশ্যক।

(গ) এই অধিকারগুলো ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষা করে এবং রাষ্ট্রকে স্বৈরাচারী হতে প্রতিহত করে।

(ঘ) এগুলো সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষা প্রদানে সহায়তা করে। 

(ঙ) এই অধিকারগুলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।

প্রশ্ন ১৬। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত চারটি ব্যবস্থার উল্লেখ করো?

অথবা, 

মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের চারটি ব্যবস্থা লেখো?

উত্তরঃ সংবিধানের ৩২নং ধারায় মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সাংবিধানিক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার খর্ব হলে সেই ব্যক্তি তার প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। কোর্ট বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, অধিকার পৃচ্ছা, উৎশ্লেষণ, প্রতিষেধ প্রভৃতি লেখ জারি করে মৌলিক অধিকারগুলো সংরক্ষণ করতে পারে। 

প্রশ্ন ১৭। মৌলিক অধিকারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ মৌলিক অধিকার ভারতীয় গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অধিকার ব্যতীত জনগণ তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করতে পারে না। ভারতীয় জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছে। জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এই অধিকারগুলো একান্ত জরুরি। মৌলিক অধিকারগুলো ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি স্বরূপ বিবেচিত হয়। জনগণের সার্বিক বিকাশের জন্য এই অধিকারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অধিকার ব্যতীত গণতন্ত্রের কল্পনাই করা যায় না।

প্রশ্ন ১৮। মৌলিক অধিকারগুলোর সীমাবদ্ধতা আলোচনা করো?

অথবা, 

মৌলিক অধিকারগুলোর ত্রুটিগুলো কী কী? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো চরম নয়। 

এইগুলোর উপর কতিপয় সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে কোন অর্থনৈতিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

(খ) স্বাধীনতা অধিকারের ক্ষেত্রে সরকার সমর্থনযোগ্য বাধা-নিষেধ আরোপ করতে পারেন।

(গ) কেন্দ্রীয় সংসদ মৌলিক অধিকার সংশোধন করতে পারে।

(ঘ) দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে নাগরিকের কতিপয় মৌলিক অধিকার বাতিল হয়ে যায়। 

প্রশ্ন ১৯। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ২৫-২৮ নং অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের বিষয় লিপিবন্ধ করা আছে। ভারতীয় নাগরিকগণ যে-কোন ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস গ্রহণ, ধর্মবর্জন, ধর্মাচরণ বা পুজার্চনা বা উপাসনা করতে পারবে। ধর্ম প্রচারের অধিকারও সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। সরকারি বা সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রের কোন নিজস্ব ধর্ম নেই বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্মমতের কোন স্থান নেই। নৈতিকতা, জনস্বাস্থ্য, ও আইন-শৃঙ্খলার জন্য এই অধিকারের উপর কতিপয় বাধা-নিষেধ আরোপ করা যায়। 

প্রশ্ন ২০। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ২৩ এবং ২৪নং অনুচ্ছেদ দুটিতে শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার ঘোষিত হয়েছে। কোনরূপ মজুরি না দিয়ে বা উপযুক্ত মজুরি না দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন ব্যক্তির নিকট হতে কার্য আদায় করা যাবে না। দাস ব্যবসা, বিনা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করা, বা অনুরূপভাবে বলপূর্বক যে কোন শ্রম আদায় করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৪নং অনুচ্ছেদ মতে, ১৪ বৎসরের কম বয়স্ক শিশুদের কারখানা, খনি বা অন্য কোন বিপদজনক কার্যে নিযুক্ত করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানুষ কেনা-বেচা, স্ত্রীলোকদের ব্যভিচার করতে বাধ্য করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ২১। দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানে উল্লেখিত নাগরিকদের যে-কোন চারটি অধিকার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানে উল্লেখিত অধিকারগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) মর্যাদার অধিকার। 

(খ) উপযুক্ত বাসস্থানের অধিকার।

(গ) গোপনীয়তার অধিকার।

(ঘ) শিশুদের অধিকার।

প্রশ্ন ২২। ভারতীয় নাগরিকের চারটি মৌলিক কর্তব্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ৪র্থ (ক) অংশে ৫১ (ক) অনুচ্ছেদে নাগরিকের মৌলিক কর্তব্যসমূহ লিপিবন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা মোট এগারোটি। 

এই কর্তব্যসমূহ হতে চারটি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

(ক) সংবিধান মান্য করা; জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীককে শ্রদ্ধা করা। 

(খ) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে যে সকল মহান আদর্শ অনুপ্রাণিত করেছিল তা অনুসরণ ও পালন করা।

(গ) ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতিকে রক্ষা করা। 

(ঘ) দেশ রক্ষা করা এবং প্রয়োজন বোধে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করা।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

১। ভারতের সংবিধানে সন্নিবিষ্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২ হতে ৩৫নং অনুচ্ছেদগুলোতে মৌলিক অধিকারগুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছে। প্রথমে সংবিধানে সাতটি মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালের ৪৪-তম সংশোধনী আইন অনুসারে সম্পত্তির অধিকারটি (Right to Property ) মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করা হয়। বর্তমানে মৌলিক অধিকারের সংখ্যা ছয়টি। এই ছয়টি মৌলিক অধিকার নিম্নরূপঃ

(ক) সাম্যের অধিকার (Articles 14-18)।

(খ) স্বাধীনতার অধিকার (Articles 19-22)। 

(গ) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (Articles 23 and 24 )।

(ঘ) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (Articles 25-28)।

(ঙ) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার (Articles 29 and 30 )।

(চ) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার (Articles 32-35)। 

প্রশ্ন ২। ভারতের সংবিধানে লিপিবদ্ধ যে কোন দুইটি মৌলিক অধিকারের আলোচনা করো। মৌলিক অধিকারগুলো কি সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২ হতে ৩৫নং অনুচ্ছেদগুলোতে মৌলিক অধিকারগুলি বর্ণিত করা হয়েছে। সংবিধানের ৪৪-তম সংশোধনী আইন দ্বারা সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকার হতে বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে মৌলিক অধিকারের সংখ্যা ছয়টি। 

এই ছয়টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে দুইটি নিম্নরূপঃ

(ক) সমতার অধিকারঃ ভারতীয় সংবিধানের ১৪ হতে ১৮নং অনুচ্ছেদে সাম্যের অধিকারগুলো বর্ণিত হয়েছে। সামোর অধিকার অনুসারে বংশ পদমর্যাদা, জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমাজের সকল ব্যক্তিকে সমান সুযোগ দিতে হবে। ভারতীয় সকল নাগরিক আইনের চক্ষে সমান এবং আইন সমানভাবে তাদের রক্ষ করবে। অস্পৃশ্যতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যাতে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি সমানভাবে সামাজিক মর্যাদা পেতে পারে। সামোর অধিকার বলতে চূড়ান্ত সাম্যের কথা বোঝায় না। অনুন্নত শ্রেণীর জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

(খ) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকারঃ সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে তা অর্থহীন হয়ে পড়ত। সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তার প্রতিকারের কয়েকটি ব্যবস্থাও রয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার অনুযায়ী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে তারা হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। আদালত বিভিন্ন লেখ জারি করে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করে। 

হ্যাঁ। মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ এই অধিকার গুলোকে ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়। আর এই অধিকারগুলো ব্যতীত সংবিধানের গণতান্ত্রিক আদর্শ রক্ষা করা সম্ভব নয়। 

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিকগণের মৌলিক অধিকারগুলোর কতকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। 

প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ 

(ক) মৌলিক অধিকারগুলো আদালতে বিচারযোগ্যা। নাগরিকদের এই অধিকার খর্ব হলে তারা হাইকোর্ট বা সুপ্রীমকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। আদালত বিভিন্ন লেখ জারির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বিহিত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারে।

(খ) মৌলিক অধিকারগুলো স্বাধীন বা চরম নয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এগুলোর উপর কতকগুলো সীমাবদ্ধতা আছে। 

(গ) মৌলিক অধিকারগুলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক। অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধকরণ, ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, বংশ প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে বৈষম্য না করা প্রভৃতি নেতিবাচক মৌলিক অধিকারের এবং স্বাধীনভাবে কথা বলা ও মত প্রকাশের অধিকার, ধর্মাচরণের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার প্রভৃতি ইতিবাচক মৌলিক অধিকারের উদাহরণ।

(ঘ) জরুরিকালীন অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারগুলোর উপর সাময়িকভাবে বাধা নিষেধ আরোপিত হয়।

(ঙ) মৌলিক অধিকারগুলো বিশেষ করে শিশু ও নারীদের সুরক্ষা প্রদান করেছে এবং সংখ্যালঘুদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ প্রদান করেছে। 

প্রশ্ন ৪। সম্পত্তির অধিকারকে কেন সংশোধনের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার হতে বাতিল করা হয়েছে?

উত্তরঃ সম্পত্তির অধিকার বর্তমানে আর মৌলিক অধিকার নয়। এটি একটি বিধিবদ্ধ অধিকার (Legal Right)। 

১৯৭৮ সালের ৪৪-তম সংশোধনী আইনে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করার প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) সংবিধান রচনাকালেই গণপরিষদের কয়েকজন সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে সম্পত্তির অধিকার একদিন পুঁজিপতিদের অধিকারে পর্যবসিত হবে।

(খ) ১৯৭৬ সালের ৪২-তম সংবিধান সংশোধনীতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংযোজন করা হয়েছে এবং সম্পত্তির অধিকার সমাজতান্ত্রি ক আদর্শের পরিপন্থি। তাই সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে বিধিবদ্ধ রাখা সম্ভব ছিল না।

সংবিধানে ৪৪-তম সংশোধনের পর সংবিধানে ৩০০ (ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের অনুশাসন ছাড়া কাউকে তার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা যাবে না। বর্তমানে সম্পত্তির অধিকার একটি আইনগত অধিকার (Legal Rights) |

প্রশ্ন ৫। মৌলিক অধিকারগুলোকে কি সংশোধন করা যায়? যুক্তি দেখাও। 

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের ৩৬৮নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত সংশোধন পদ্ধতি অনুসারে সংসদ মৌলিক অধিকারগুলোকে সংশোধন করতে পারে। ভারতের সংসদ উপরোক্ত অনুচ্ছেদে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসারে বহুবার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। ১৯৬৭ সালের বিখ্যাত গোলক নাথ মামলায় সুপ্রীমকোর্ট ঘোষণা করেছিল যে সংসদের মৌলিক অধিকার সংশোধনের ক্ষমতা নেই। কিন্তু সংসদ এই নির্দেশকে অতিক্রম করে ১৯৭১ সালে ২৪-তম সংশোধন করে। এই সংশোধনী অনুসারে সংসদের সংবিধানের যে কোন অংশ সংশোধন করার ক্ষমতা আছে; তাই মৌলিক অধিকারও সংশোধন যোগ্য।

১৯৭৩ সালের বিখ্যাত কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রীমকোর্ট অভিমত ব্যক্ত করেছে যে সংসদের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় সহ সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আছে। কিন্তু সংসদ মৌলিক কাঠামো সংশোধন করতে পারবে না। ১৯৭৮ সালে জনতা দল সরকার ৪৪-তম সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করে।

বর্তমান অবস্থায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় স্থাপনের প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করার জন্য সংসদ মৌলিক অধিকারগুলোকে পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু মৌলিক অধিকার সংশোধনকালে সংসদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না। 

প্রশ্ন ৬। সংবিধানে অধিকার পত্র সংযোজনের প্রয়োজন হয় কেন?

উত্তরঃ অধিকার মানব জীবনের অত্যন্ত জরুরি বিষয়। প্রত্যেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকের জন্য কতকগুলো অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাই সংবিধানে নাগরিকের অধিকার সম্বলিত একটি তালিকা সংযোজন করা হয়। এগুলো রক্ষা করার ব্যবস্থাকে অধিকার পত্র বা Bill of Rights বলা হয়।

অধিকার পত্র অধিকারের উপর গুরুত্ব প্রদান করে এবং অধিকারসমূহ কার্যকরী করতে সহায়তা করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের অধিকারগুলো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে। আর রাষ্ট্র নাগরিকের এই অধিকারগুলোকে অধিকার পত্রের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে। অধিকার পত্রের বিধি ও নীতি রাষ্ট্র কার্যকরী করে। কোন ব্যক্তি এই বিধি ভঙ্গ করলে রাষ্ট্র তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করে।

মৌলিক অধিকার গণতন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বিশেষ। সুতরাং রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করতে বাধ্য। কোন রাষ্ট্রে যদি ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে অধিকারপত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্র সেই নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়।

১৯৯৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ (Civil war) আরম্ভ হয়, তখন আফ্রিকান সংবিধানে অধিকার পত্রের উদ্বোধন হয়। এই অধিকার পত্র নাগরিকের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বিশেষ সংবিধানিক আদালত কর্তৃক এই অধিকারগুলোকে কার্যকর করা হয়। 

দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানে অধিকারপত্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে এই অধিকারগুলোকে অন্তর্নিহিত করা হয়েছে। তাই নাগরিকের অধিকারগুলো সুরক্ষার জন্য সংবিধানে অধিকার পত্রের সংযোজন করা একান্ত আবশ্যক। 

প্রশ্ন ৭। বিচারালয় কর্তৃক বিভিন্ন ব্যাখ্যা সমূহ সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলোর উপর কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে? 

অথবা, 

সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহের উপর বিচারালয় কর্তৃক ব্যাখ্যা সমূহের। প্রভাব আলোচনা করো।

অথবা, 

ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিচারালয় কর্তৃক ব্যাখ্যা সমূহের ভূমিকা আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহের সুরক্ষায় বিচারবিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্ট বিভিন্ন লেখ জারি করে ভারতীয় নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো সংরক্ষণ করে।

বিচার বিভাগ কেবল নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলোকে সুরক্ষাই প্রদান করেনি, বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে মৌলিক অধিকারের পরিসরকে বিস্তৃতও করেছে।

নিম্নোক্ত ব্যাখ্যসমূহ মৌলিক অধিকারগুলোর পরিসীমা বিস্তৃত করেছেঃ

(ক) বিচারালয় কর্তৃক ব্যাখ্যার ফলে স্বাধীনভাবে কথা বলা ও মত প্রকাশের অধিকারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে (Romesh Thapar Vs State of Madras, 1950 )

(খ) “ব্যক্তিগত স্বাধীনতা” (Personal liberty, Article 21) কথাতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য অন্যান্য অধিকারের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার  অর্থপ্রকাশে সহায়তা করেছে (Maneka Gandhi Vs. Union of India, 1978)

(গ) “জীবনের অধিকার” কথায় শিক্ষার অধিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে (Mohini Jain Vs. State of Karnataka, 1952) 

(ঘ) জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারে (Right to life and liberty, Article 21) যথাযথ মজুরির কথা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে (Asiad worker vs. Union of India, 1984)

(ঙ) সুপ্রীম কোর্টের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংবিধানের ২১নং অনুচ্ছেদ নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করেছেঃ

(অ) উপযুক্ত পরিবেশের অধিকার। 

(আ) আশ্রয়ের অধিকার।

(ই) বিদেশ ভ্রমণের অধিকার।

(ঈ) বিনামূল্যে আইনগত সাহায্য লাভের অধিকার।

(উ) দ্রুত বিচারের অধিকার। 

(ঊ) গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার।

প্রশ্ন ৮। ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহ ভারতে পৌর স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছে কি? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারসমূহ ভারতে পৌর স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছিল। এই অধিকারসমূহ ভারতে নিম্নোক্ত পৌর স্বাধীনতা আন্দোলনগুলোকে প্রভাবিত করেছিলঃ

(ক) দলিত ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের পরিবেশগত অধিকার রক্ষার জন্য ১৯৭২-৭৩ সালে চিপকো আন্দোলন হয়েছিল। জঙ্গলের ঠিকাদারদের গাছ কাটার বিরুদ্ধে এই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। হিমালয়ের গাড়োয়ার অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এই আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল।

(খ) ১৯৭৪ সালে পৌর স্বাধীনতার জন্য রেলওয়ে কর্মীরা ধর্মঘট করেছিল। 

(গ) ১৯৮৯ সালে সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মেধা পাটেকরের নেতৃত্বে ‘নর্মদা বাচাও আন্দোলন’ আরম্ভ হয়েছিল। স্থানীয় জনগণের পরম্পরাগত পেশা রক্ষার জন্য এবং স্থানীয় জনগণের বস্তুচ্যুতি রুখতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষার জন্যও এই আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।  

(ঘ) দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য ভারতে বিভিন্ন আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। ১৯৭০ হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত অস্পৃশ্যতা নির্মূল ও আর্থিক বৈষম্য দূর করার জন্য বিভিন্ন পৌর আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশে বহুজন সমাজবাদী দলের নেতৃত্বে দলিত সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অধিকার সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন সংঘটিত 

(ঙ) ১৯৭০ সালের মধ্যভাগ হতে বিভিন্ন নারী আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল নারীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য।

প্রশ্ন ৯। ভারতীয় সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি বলতে কী বোঝ? মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো। 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের স্রষ্টারা প্রকৃত জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে বেশ কিছু নীতি সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। এই নীতিগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা খুবই প্রয়োজন। অবশ্য এই নীতিগুলো রূপায়ণে সরকার কোনও বিশেষ পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য নয়। সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে লিপিবন্ধ এই নীতিগুলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি বলা হয়।

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ও মৌলিক অধিকার একে অপরের পরিপূরক। ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবন্ধ করা হয়েছে এবং নির্দেশাত্মক নীতিগুলো সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে লিপিবন্ধ করা হয়েছে। 

ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতাগণ সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় এবং চতুর্থ অধ্যায়কে একটি অপরটির পরিপূরক হিসাবে বিধিবদ্ধ করেছেন। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে সংসদ এবং সুপ্রীম কোর্টের মধ্যে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধানের ১ম সংশোধনীর সময় মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির সম্পর্ক নিয়ে প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধানের ১ম সংশোধনীতে জমিদারী প্রথা বিলোপ করা হয়। নির্দেশাত্মক নীতির রূপায়ণের জন্য জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠেছিল যে এটা সম্পত্তির অধিকারকে খর্ব করছে এবং ১৯৬৭ সালে গোলকনাথ মামলায় সুপ্রীম কোর্ট ঘোষণা করে যে মৌলিক অধিকার সংশোধন করা যায় না। কিন্তু ১৯৭৮ সালের ৪৪-তম সংশোধনীতে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা হতে বাতিল করা হয়।

সংসদ ২৪-তম সংশোধনী ও ২৫-তম সংশোধনীর মাধ্যমে গোলকনাথ মামলার সিদ্ধান্তকে অতিক্রম করে। সংবিধানের ২৫-তম সংশোধন অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের সঙ্গে নির্দেশাত্মক নীতির বিরোধ হলেও সংসদ নির্দেশাত্মক নীতি রূপায়ণ করে আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা লাভ করে।

সংবিধানের ৪২-তম সংশোধন অনুযায়ী মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সম্পর্কের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মিনার্ভা-মামলায় প্রদান করে মহামান্য সুপ্রীমকোর্ট। ১৯৮০ সালে মিনার্ভা মামলায় সুপ্রীম কোর্ট ঘোষণা করে যে মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে মৌলিক অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়কে তৃতীয় অধ্যায়ের ‘ভগিনী অধ্যায়’ (Sister part) হিসাবে ধরা হয়। সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার সমূহ লিপিবন্ধ করা হয়েছে যা নাগরিকের পৌর ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে মৌলিক অধিকারে সুস্পষ্টভাবে আলোকপাত করা হয়নি। তাই সংবিধান প্রণেতাগণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারকে সন্নিবেশিত করার জন্য চতুর্থ অধ্যায়ে কতিপয় নির্দেশাত্মক নীতি লিপিবদ্ধ করেন। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতি একে অপরের পরিপূরক। সুতরাং এটা বলা যায় যে নির্দেশাত্মক নীতিগুলো মৌলিক অধিকারের ত্রুটিগুলো দূর করেছে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নলিখিত যুক্তিগুলির সত্যতা নিরূপণ করো?

(ক) বিল অব রাইটের দ্বারা দেশের লোক মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে।

উত্তরঃ সত্য।

(খ) বিল অব রাইটের দ্বারা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সংরক্ষণ হয়। 

উত্তরঃ সত্য।

(গ) পৃথিবীর সবদেশে বিল অব রাইট আছে।

উত্তরঃ মিথ্যা।

(ঘ) কেউ সংবিধান ভঙ্গ করলে, সংবিধানের প্রতিবিধানের মাধ্যমে মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষিত করা হয়।

উত্তরঃ মিথ্যা।

২। নিম্নলিখিত কোন্ মৌলিক অধিকারকে খুব ভালো বলে বিবেচিত হয় –

(ক) মৌলিক অধিকারের মধ্যে ব্যক্তিগত অধিকার। 

(খ) আইনের দ্বারা গঠিত নাগরিকদের দেওয়া অধিকার।

(গ) সংবিধান দ্বারা প্রয়োগ ও সংরক্ষণের অধিকার। 

(ঘ) সংবিধান দ্বারা তৈরি অধিকার যার মধ্যে কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করা হবে না। 

উত্তরঃ (গ) সংবিধান দ্বারা প্রয়োগ ও সংরক্ষণের অধিকার।

প্রশ্ন ৩। নিম্নলিখিত পরিস্থিতি আলোচনা করো এবং সেই সঙ্গে পড়ে দেখো কোন্ মৌলিক অধিকার ব্যবহার অথবা ভঙ্গ হয়েছে এবং কীভাবে?

(ক) সরকারের নীতিসমূহকে সমালোচনা করে, অধিকর্তা প্রমাণ সাপেক্ষ সিনেমা তৈরি করেছেন।

(খ) অন্ধ্রের অনেক সামাজিক সংস্থা, অন্ধ্রপ্রদেশের বাইরে তেলেগু ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করার জন্যে দৌড়াদৌড়ি করেছে। 

(গ) জমি তৈরি করার জন্যে জনসাধারণকে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের পুর্নবাসনের জন্য লোকেরা একসাথে সমবেত হয়েছিল। 

উত্তরঃ (ক) এইক্ষেত্রে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

(খ) এই ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক অধিকার জড়িত। এই অধিকার ভাষিক সংখ্যালঘুদের নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা বা রক্ষা করা এবং নিজেদের সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার প্রদান করেছে। সুতরাং অন্ধ্র সমিতির অন্ধ্রপ্রদেশের বাইরে তেলেগু ভাষার বিদ্যালয় পরিচালনার অধিকার রয়েছে।

(গ) এই ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অধিকার ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বাধীনতার অধিকার অনুযায়ী দেশের যে-কোন স্থানে বসবাস করার অধিকার আছে। সুতরাং বৃহৎ বাঁধ প্রকল্পের দ্বারা বস্তুচ্যুত জনগণের পুনর্বাসনের জন্য মিছিল বের করার অধিকার আছে।

প্রশ্ন ৫। নিম্নলিখিত কোন অধিকার মৌলিক অধিকারকে ভঙ্গ করেছে?

(ক) ন্যূনতম পারিশ্রমিক না দেওয়া। 

(খ) বই নিষিদ্ধ করা।

(গ) মাইকের শব্দ বা রাত ৯টার পর মাইক বাজানো নিষিদ্ধ। 

(ঘ) বক্তৃতা দেওয়া। 

উত্তরঃ ন্যূনতম মজুরি না দেওয়া মৌলিক অধিকার ভঙ্গের সামিল। এটি শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। 

প্রশ্ন ৬। সক্রিয় কর্মী যিনি, দরিদ্রের মধ্যে কাজ করেন বলে তাদের জন্য মৌলিক অধিকার দেওয়ার দরকার নেই। তারা কি চায় নির্দেশক নীতি বাধ্য করা। তোমরা কি সহমত পোষণ কর? কারণ দেখাতে হবে?

উত্তরঃ দরিদ্র জনসাধারণের মঙ্গলার্থে নিয়োজিত সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবীর অভিমত কতকাংশে সত্য হিসাবে ধরা যায়। মানুষের মৌলিক প্রয়োজন হল খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। এই প্রয়োজনসমূহ মেটানোর পর উক্ত দরিদ্র জনসাধারণের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য মৌলিক অধিকারসমূহের প্রয়োজন। তাদের নিকট মৌলিক অধিকারের কোন গুরুত্ব নেই। কাজের সুযোগ, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা, সমান কাজের জন্য সমান পারিশ্রমিক, কুটির শিল্পের উন্নয়ন, অসুস্থ, বৃদ্ধ, ও প্রতিবন্ধীদের সাহায্য প্রদান প্রভৃতি মৌলিক অধিকার অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং উক্ত বাস্তববাদী স্বেচ্ছাসেবীর অভিমত কতকাংশে সত্য।

প্রশ্ন ৪। নিম্নলিখিত কোনটি সত্য, যা সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকারের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছে।

(ক) সরকারি স্কুল নিশ্চিত করেছে যে অনুন্নত সম্প্রদায়ের শিশুদের সংস্কৃতি স্কুলেই প্রবর্তন করবে?

(খ) অনুন্নত সম্প্রদায়ের শিশুর জন্য ভাষা, ধর্মেরও জন্যে একটি মুক্ত স্কুল খোলা হবে এবং সেই ধর্ম ও ভাষা তাদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে।

(গ) অনুন্নত সম্প্রদায়ের লোকের দাবি হচ্ছে যে তাদের শিশুরা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নেবে না। তাদের নিজস্ব সমিতির তত্ত্বাবধানে তাদের শিশুদের শিক্ষা দান করে।

উত্তরঃ (গ) অনুন্নত সম্প্রদায়ের লোকের দাবি হচ্ছে যে তাদের শিশুরা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নেবে না। তাদের নিজস্ব সমিতির তত্ত্বাবধানে তাদের শিশুদের শিক্ষা দান করে।

প্রশ্ন ৭। বিভিন্ন রিপোর্ট দেখায় জাতগোষ্ঠী যারা ময়লা বা নোংরা কাজ করত, কারণ তাদের বাধ্য করা হয়েছিল। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা তাদের অন্য কাজ দিতেন না। তাদের শিশুদের শিক্ষা থেকে নিরুৎসাহ করা হয়েছিল। এই দৃষ্টান্তে তাদের কোন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে? 

উত্তরঃ এই ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অধিকারগুলো ভঙ্গ হয়েছেঃ

(ক) যে-কোন নাগরিক স্বাধীনভাবে বৈধ পেশা, ব্যবসা ও বাণিজ্য করতে পারবে। এই অধিকারটি সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অধিকার ভঙ্গ হচ্ছে।

(খ) সমতার অধিকারঃ এইক্ষেত্রে সমতার অধিকারও ভঙ্গ হচ্ছে। এই অধিকার অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের চক্ষে সমান। বর্তমানে অস্পৃশ্যতা বে-আইনি। ১৯৫৫ সালে সংসদ আইন প্রণয়ন করে অস্পৃশ্যতাকে বেআইনি ঘোষণা করে (Untouchability Offences, 1955)। ১৯৭৬ সালে এই আইনের নামকরণ করা হয় Protection of civil rights Act। যে-কোন প্রকার অস্পৃশ্যতা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। 

(গ) সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকারঃ এই ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকারও ভঙ্গ হয়েছে। উক্ত গোষ্ঠীর লোকদের সন্তান-সন্ততিদের শিক্ষা গ্রহণে অনুমতি দিতে অস্বীকার করা সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার ভঙ্গের সামিল। কারণ কোন ছেলেমেয়েকে সরকার পরিচালিত বা সরকারি সাহায্যে পরিচালিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বঞ্চিত করা যায় না (২৯ নং ধারা) 

প্রশ্ন ৮। তোমার মতে কোন্ মৌলিক অধিকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়? সংক্ষেপে তার সঠিক মূল্যায়ন করো এবং দেখাও কেন এগুলো প্রয়োজন? 

উত্তরঃ আমার মতে, “সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। ভারতের নাগরিকগণ সংবিধান প্রদত্ত ছয় প্রকার মৌলিক অধিকার ভোগ করেন। এর মধ্যে ‘সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার’ মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষা করার অন্যতম উপায়। সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার অনুযায়ী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তারা হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। আদালত বিভিন্ন লেখ জারি করে সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top