Class 11 Political Science Chapter 17 জাতীয়তাবাদ answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 17 জাতীয়তাবাদ and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 17 জাতীয়তাবাদ
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 17 জাতীয়তাবাদ Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
জাতীয়তাবাদ
পাঠ: ১৭
দ্বিতীয় খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। জাতির সংজ্ঞা দাও?
উত্তরঃ লর্ড ব্রাইসের মতে – “জাতি হল রাষ্ট্রনৈতিকভাবে সংগঠিত বহিঃশাসন হবে মুক্ত অথবা মুক্তিকামী একটি জনসমাজ।”
প্রশ্ন ২। জাতীয়তাবাদ কী?
উত্তরঃ একটি জাতির আদর্শ বা জাতি চেতনাই হল জাতীয়তাবাদ।
প্রশ্ন ৩। “জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র’ বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ যখন কোনো জাতি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সত্তা বিকশিত করার জন্য রাষ্ট্র গঠন করে, তখন তাকে জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র বলে।
প্রশ্ন ৪। ভারত কি একটি জাতি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। ভারত একটি জাতি।
প্রশ্ন ৫। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের একটি প্রতিক উল্লেখ কর?
উত্তরঃ ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ।
প্রশ্ন ৬। জাতীয়তাবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রবোধের সম্পর্ক আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, জাতীয়তা বোধ রাষ্ট্রবোধের সঙ্গে জড়িত।
প্রশ্ন ৭। দেশভক্তির অর্থ কী?
উত্তরঃ জাতি বা রাষ্ট্রের জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও সত্তার প্রতি আনুগত্য ও ভক্তি।
প্রশ্ন ৮। সাধারণ রাজনৈতিক সত্তা জাতীয়তাবাদ গঠনের জন্য কি অপরিহার্য?
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ৯। জাতীয়তাবাদের উপাদান কী?
(ক) সাধারণ বাসস্থান।
(খ) সাধারণ ইতিহাস।
(গ) সাধারণ সংস্কৃতি।
(ঘ) উপরের সবকয়টি।
উত্তরঃ (ঘ) উপরের সবকয়টি।
প্রশ্ন ১০। ‘নেশন’ (Nation) শব্দটি কোন্ শব্দ হতে উদ্ভূত হয়েছে?
(ক) নেশিও।
(খ) নেটাস।
(গ) নেশোন্যালিটি।
উত্তরঃ (ক) নেশিও।
প্রশ্ন ১১। জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন কী?
অথবা,
জাতীয় মুক্তি আন্দোলন কী?
উত্তরঃ প্রত্যেক জাতীয় জনসমাজের কিছু নিজস্ব ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য আছে। এই গুণাবলী বিকশিত করার জন্য যদি কোনো জনসমাজ কোনো বহির্জাতির রাষ্ট্রনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে তখন সে আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলন বলে।
প্রশ্ন ১২। “এক বৃষ্টি এক রাষ্ট্র” – নীতিটি বিশ্বে কখন বিশেষভাবে কার্যকরী হয়েছিল?
উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই নীতিটি বিশেষভাবে কার্যকরী হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৩। জাতীয় জনসমাজের একটি বাহ্যিক উপাদান উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভৌগোলিক ঐক্য।
প্রশ্ন ১৪। ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’– এর বিরোধী একজন তাত্বিকের নাম লেখো।
উত্তরঃ অধ্যাপক লাস্কি।
প্রশ্ন ১৫। জাতি বহু পরিমাণে একটি কাল্পনিক সমাজ। (সত্য বা মিথ্যা লেখো)।
উত্তরঃ সত্য।
প্রশ্ন ১৬। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে।
প্রশ্ন ১৭। জাতীয়তাবাদের একটি উপাদান উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সাধারণ ইতিহাস।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। জাতীয়বাদ গঠনের সহায়ক যে কোনো দুটি উপাদানের নাম করো?
উত্তরঃ জাতীয়বাদ গঠনের দুটি উপাদান হল নিম্নরূপঃ
(ক) সাধারণ বাসস্থান।
(খ) সাধারণ ঐতিহাসিক পটভূমি।
প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রের উপাদানসমূহ কী কী?
উত্তরঃ (ক) জনসংখ্যা।
(খ) নির্দিষ্ট ভূখণ্ড।
(গ) সরকার। এবং
(ঘ) সার্বভৌম ক্ষমতা।
প্রশ্ন ৩। গণতন্ত্রে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের সুরক্ষার একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ গণতন্ত্রে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সম্প্রদায় সমূহ যাতে জাতীয় জীবনের মূলস্রোতে মিশ্রিত হয়ে সমাজের সার্বিক বিকাশ সাধন করতে পারে সেজন্য তাদের নানাপ্রকার সুরক্ষা প্রদান করা হয়। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে সরকার বিভিন্ন প্রকার আইন প্রণয়ন করে। ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই অধিকার ভঙ্গ হলে নাগরিকগণ আদালতের দারস্থ হতে পারেন।
প্রশ্ন ৪। আন্তর্জাতিকতাবাদ কী?
উত্তরঃ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র পারস্পরিক কল্যাণার্থে ঐক্যবদ্ধ ভাবে একে অন্যকে সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও বিশ্বের সকল মানুষের কল্যাণ সাধনে সংঘবন্ধ পরিচিতির মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্র সম বিশ্বাস, ও আশা আকাঙ্খার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রের এই সংঘবদ্ধ একতাকে ভিত্তি করে যে সাধারণ আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি হয় তাকেই আন্তর্জাতিকতাবাদ বলা হয়।
প্রশ্ন ৫। জাতীয় পরিচিতি সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ প্রত্যেক জাতির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য ও সত্তা থাকে। এই বৈশিষ্ট্য ও সত্তাগুলো সাধারণ বাসস্থান, ধর্মগত ঐক্য, ভাষাগত ঐক্য, ভৌগোলিক ঐক্য, সম–ঐতিহাসিক পটভূমি প্রভৃতি উপাদান দ্বারা তৈরি হয়। প্রতিটি জাতি নিজস্ব পদ্ধতিতে এই গুণাবলী বিকশিত করতে চায়। এ জাতীয় গুণাবলীকেই জাতীয় পরিচিতি হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ৬। জাতীয়তাবাদ গঠনের পথে যে কোনো দুটি বাধা বা অন্তরায় উল্লেখ করো?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদ গঠনের পথে দুটি অন্তরায় হলঃ
(ক) আবেগিক সংহতির অভাব। এবং
(খ) সাম্প্রদায়িকতা।
প্রশ্ন ৭। আন্তর্জাতিকতাবাদের একটি সংজ্ঞা লেখো?
উত্তরঃ গোল্ডস্মিথের মতে – “আন্তর্জাতিকতাবাদ হল এমন একটি অনুভূতি, যা মানুষকে কেবলমাত্র তার নিজের রাষ্ট্রের সদস্য হিসাবেই নয়, বিশ্বের একজন নাগরিক হিসাবেও ভাবতে শেখায়। মানব জাতির প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা থেকেই এই চেতনার সৃষ্টি হয়।”
প্রশ্ন ৮। ভূখণ্ড কি জাতি গঠনের একটি উপাদান? ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভূখণ্ড জাতীয় জনসমাজ ও জাতি গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি জনসমষ্টি দীর্ঘকাল স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাদের মধ্যে একাত্মবোধ জাগ্রত হয়। এই একাত্মবোধ জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এটি জাতি গঠনের একমাত্র উপাদান নয়। ইহুদিগণ সারা বিশ্বে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছে, কিন্তু তাদের মধ্যে জাতি সত্তা প্রবল। ইজরায়েল গঠন হওয়ার পূর্বে তারা নিজেদের একটি জাতি বলে স্বীকার করত।
প্রশ্ন ৯। পৃথক রাষ্ট্রের দাবি কি জাতীয়তাবাদের পক্ষে বিপজ্জনক?
উত্তরঃ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহকে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা প্রদান করবার পরও দেখা যায় যে কতিপয় গোষ্ঠী পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু এ দাবি জাতীয়তাবাদের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। জাতীয়তাবাদের সঙ্গে নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রবাদের সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু সবসময় ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রের সৃষ্টি কাঙ্খিত নয়। বর্তমানে সমস্ত পৃথিবী বিশ্বায়নের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। তাই এই সময় কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর পৃথক রাষ্ট্র দাবি করা আত্মহত্যার সমান। তাই জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের নীতিতে যে কোনো সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ এর ফলে কেবলমাত্র ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রসমূহের সৃষ্টি হবে না, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রসমূহেরও এটি হবে। সুতরাং পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন জাতীয়তাবাদের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
প্রশ্ন ১০। জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ প্রত্যেক জনসমাজের নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য আছে। যখন কোনো জনসমাজ সেই গুণাবলী বিকশিত করবার জন্য কোনো রাষ্ট্রনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত হয়ে নতুন কোনো স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করে, তখন আমরা সেই আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলন বলি। জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জেলা এশিয়া ও আফ্রিকার বহু জনসমষ্টি উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল। এ আন্দোলনগুলো জাতীয় সংগ্রাম।
প্রশ্ন ১১। মার্কসবাদ অনুসারে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কী?
উত্তরঃ মার্কসবাদ অনুসারে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হল জাতীয় শোষণ ও পীড়নের বিরুদ্ধে এবং আন্তর্জাতিক বন্ধন তৈরির পক্ষে বিভিন্ন দেশের সর্বহারাদের আন্দোলন।
প্রশ্ন ১২। জাতির দুটি উপাদান উল্লেখ করো?
উত্তরঃ জাতির মূল উপাদান দুটি হলো–
(ক) বাহ্যিক উপাদান – বংশগত, ভাষাগত, ধর্মীয় বা ভৌগোলিক ঐক্য।
(খ) আবেগিক উপাদান – সাধারণ রাজনৈতিক পরিচিতি।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। জাতীয় বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
উত্তরঃ জাতির বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) সাধারণ জাতিগত ভিত্তি।
(খ) সাধারণ ধর্মগত ভিত্তি।
(গ) সাধারণ বাসস্থান।
(ঘ) সাধারণ ভাষা ও সংস্কৃতি।
(ঙ) সাধারণ ইতিহাস।
(5) সাধারণ রাজনৈতিক চেতনা।
(ছ) জাতি হওয়ার আকাঙ্খা।
প্রশ্ন ২। গণতন্ত্র ও জাতি সম্পর্কে মন্তব্য করো?
উত্তরঃ বহুত্ববাদী–গণতান্ত্রিক সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায়েও তাদের সভ্যতা–সংস্কৃতি সুরক্ষিত ও বিকশিত হতে পারে। বর্তমানে অনেক গণতান্ত্রিক সমাজে সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের সাংস্কৃতিক পরিচিতিকে স্বীকৃত প্রদান করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে ধর্মীয়, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি রক্ষার্থে নানা অধিকার ও সুরক্ষার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩। কীভাবে জাতীয়তাবাদ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদ যেমন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে ঠিক সেরকম মানুষের মধ্যে বিভেদ ও তিক্ততারও সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয়তাবাদ অন্য দেশ বা জাতিকে ঘৃণা করতে উৎসাহিত করে। জাতীয়তাবাদ একটি অশান্তময় পরিবেশ গড়ে তোলে যার ফলে যুদ্ধ বিগ্রহ দেখা দেয়। এই ঘৃণা, বিদ্বেষ ও ভুল বোঝাবুঝির জন্যই দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৪। জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো?
উত্তরঃ জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের ক্ষমতা আছে। রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গকারীর উপর রাষ্ট্র বলপ্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু জাতির তার সদস্যদের উপর এরূপ বলপ্রয়োগের ক্ষমতা নেই।
(খ) রাষ্ট্র গঠনে সার্বভৌম ক্ষমতা অপরিহার্য। কিন্তু জাতি গঠনে সার্বভৌমত্বের প্রয়োজন নেই।
(গ) রাষ্ট্রের চারটি উপাদান আছে; যথা– জনসংখ্যা, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। কিন্তু জাতি গঠনের ভিত্তি হল আবেগিক ঐক্যবোধ।
(ঘ) একটি রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড আছে। কিন্তু জাতি কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ব্যতীতও সৃষ্টি হতে পারে। ইজরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হওয়ার পূর্বেও ইহুদিরা জাতি হিসাবে স্বীকৃত ছিল।
প্রশ্ন ৫। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ যখন কোনো জাতীয় জনসমাজ নিজস্ব ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য রক্ষাকল্পে একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানায়, তখন তা জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হিসাবে গণ্য হয়। লেনিন এর মতে, জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে বোঝায় কোনো বিদেশি জাতির রাষ্ট্রনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়া এবং স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা।
প্রশ্ন ৬। কীভাবে জাতীয়তাবাদ বিশ্বশান্তির পক্ষে বিপজ্জনক?
অথবা,
জাতীয়তাবাদ কীভাবে বিশ্বশান্তির জন্য বিপজ্জনক?
উত্তরঃ “একজাতি একরাষ্ট্র” নীতিটি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা বা রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। যদি এইনীতি গ্রহণ করা হয়, তবে বিশ্বশান্তি বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। এ নীতি আন্তর্জাতিকতাবাদের পথে বিরাট অন্তরায়। জাতীয়তাবাদ অন্যদেশ বা জাতিকে ঘৃণা করতে শিক্ষা দেয়। জাতীয়তাবাদ ঈর্ষা, বিদ্বেষ ও পারস্পরিক সংগ্রামে আধিপত্য বিস্তারে প্রলুব্ধ করে। এই ঘৃণা, বিদ্বেষ ও ঈর্ষার কারণে দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তাই জাতীয়তাবাদ বিশ্বশান্তির বাতাবারণ কলুষিত করতেও সহায়তা করে।
প্রশ্ন ৭। কীভাবে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বিশ্বশান্তির প্রত্যাহানে সহায়তা করে?
উত্তরঃ যখন কোনো জাতীয় জনসমাজ নিজ ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করবার দাবি জানায়, তখন তাকে আমরা জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে গণ্য করি। “এক কৃষ্টি এক রাষ্ট্র” নীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে সীমা নির্ধারণ করার ফলে বহুলোক এক রাষ্ট্র হতে অন্য রাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়। ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের আদি বাসস্থান হতে বহিষ্কৃত বা স্থানান্তরিত হয়। তার মধ্যে অনেক লোক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গারও শিকারগ্রস্ত হয়। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার গুরুত্ব লাভ করায় দেশত্যাগ, সীমা–সংক্রান্ত যুদ্ধ ও হিংসা বিশ্বের বহু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে। এভাবে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বিশ্বশান্তির জন্য বিপজ্জনক রূপে দেখা দেয়।
প্ৰশ্ন ৮। জাতীয় জনসমাজ ও জাতির মধ্যে পার্থক্য দেখাও?
উত্তরঃ জাতীয় জনসমাজ ও জাতির মধ্যে প্রধান পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) জাতীয় জনসমাজের রাজনৈতিক চেতনার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অন্যদিকে জাতীয় জনসমাজ যখন রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সংগঠিত হয় তখন তা জাতিতে পরিণত হয়।
(খ) জাতি জাতীয় জনসমাজের পরবর্তী স্তর। জাতীয় জনসমাজ জাতি গঠনের পূর্বে সৃষ্টি হয়।
(গ) জাতি জাতীয় জনসমাজ হতে ব্যাপক।
প্রশ্ন ৯। জাতীয়তাবাদ গঠনে ইতিহাসের ভূমিকা সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী জনগোষ্ঠীর চলমান ঐতিহাসিক পরিচিতি থাকে। জাতির সদস্যগণ ঐতিহ্যপূর্ণ অতীত ইতিহাসকে ভিত্তি করে চলমান ঐতিহাসিক পরিচিতি সৃষ্টি করে। এভাবেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদীগণ প্রাচীন সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে ভিত্তি করে দাবি করেন যে, ভারতের সুপ্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস আছে এবং এই সনাতন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও একতাই হল ভারতীয় জাতির মেরুদণ্ড। ঐতিহাসিক পটভূমি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যবোধের সৃষ্টি করে জাতিতে পরিণত করে।
প্রশ্ন ১০। ভারতে জাতীয়তাবাদ গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা। এই জাতীয়তাবাদ বৃটিশ শাসনের বিরোধিতার ফল। ১৮৫৭ সালে বৃটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহ সংগ্রামের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ গঠনের প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। বৃটিশ সরকারের প্রবর্তিত ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি কারণে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রেরণা জন্মায়। বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলস্বরূপ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট স্বাধীন ভারতীয় জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রশ্ন ১১। একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রক্ষা করতে পারে মন্তব্য করো?
উত্তরঃ একই রাষ্ট্রে বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। তাদের সংস্কৃতির স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের বিভিন্ন উপায় শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রগুলো উদ্ভাবন করে। বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ভাষিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকারের সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করেছে। কোনো কোনো রাষ্ট্রে আইন সভা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এইসব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। একটি
শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদেরকে সমান মর্যাদা দিয়ে জাতীয় জীবনের মূলস্রোতে মিশিয়ে জাতির সার্বিক বিকাশে অংশ গ্রহণের ব্যবস্থা করে।
প্রশ্ন ১২। জাতীয়তাবাদ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদ দু’প্রকারের হতে পারে–
(ক) আদর্শ বা প্রকৃত। এবং
(খ) উগ্রজাতীয়তাবাদ।
প্রশ্ন ১৩। জাতীয়তাবাদের যে কোনো চারটি গুণ লেখো?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদের চারটি গুণ হল নিম্নরূপঃ
(ক) জাতীয়তাবাদ দেশভক্তি জাগ্রত করেঃ জাতীয়তাবাদ জাতির মধ্যে দেশভক্তি জাগ্রত করে। জাতির প্রতিটি মানুষ নিজ মাতৃভূমির গৌরব ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে।
(খ) জাতীয়তাবাদ একত্রীকরণের উপাদানঃ জাতীয়তাবাদ ঐকাতার সৃষ্টি করে এবং জাতির সকল মানুষকে একতার বন্ধনে আবদ্ধ রাখে।
(গ) জাতীয়তাবাদ সরকারের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি করেঃ জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত থাকার কারণে সরকারের প্রতি জনগণের আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।
(ঘ) জাতীয়তাবাদ সফলভাবে সাম্রাজ্যবাদকে প্রত্যাহ্বান জানায় ও জাতীয় স্বাধীনতা লাভ করতে সহায়তা করে।
(ঙ) জাতীয়তাবাদ গণতান্ত্রিক আদর্শগুলির জন্ম দেয়ঃ এর প্রধান নীতি হল সকল জাতির জন্য স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করা।
(চ) জাতীয়তাবাদ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিকাশের মাধ্যমঃ জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ বিশেষ করে অনুন্নত দেশসমূহে তাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের চেষ্টা করে।
প্রশ্ন ১৪। বহুজাতিক রাষ্ট্রের একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র হল যে রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতির সহাবস্থান বিদ্যমান। বিভিন্ন জাতি একটি সাধারণ সরকারের মাধ্যমে তাদের শাসন ব্যবস্থা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিতে পরিচালনা করে। বিভিন্ন জাতি সাধারণ বাসস্থান, সাধারণ ঐতিহাসিক পটভূমি, সাধারণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভৃতির একাত্মবোধের ভিত্তিতে তাদের সাধারণ সার্বিক কল্যাণের জন্য একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করে। এই ধরনের রাষ্ট্রকে বহুজাতিক রাষ্ট্র বলা হয়। বহুজাতিক রাষ্ট্রসমূহ একজাতিক রাষ্ট্র অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই বহুজাতিক রাষ্ট্র। আমাদের ভারতবর্ষ একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ১৫। সাধারণ রাজনৈতিক পরিচিতি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ সাধারণ রাজনৈতিক পরিচিতি হল জাতীয়তাবাদ গঠনের ও উৎকর্ষ সাধনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জাতীয়তাবাদ গঠনের অন্যান্য উপাদানসমূহ, যেমন – সাধারণ ধর্ম, সাধারণ ভাষা ইত্যাদি সাধারণ রাজনৈতিক পরিচিতির মত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য সাধারণ রাজনৈতিক পরিচিতি কৃষ্টিগত ঐক্য অপেক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ ধর্মেই বিচ্ছিন্নতাভাব খুবই সক্রিয়। অধিকাংশ সমাজই বৃষ্টিগতভাবে বিচ্ছিন্ন। এই কারণে জাতিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কল্পনা করাই শ্রেয়। গণতান্ত্রিক আদর্শকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাই জাতীয়তাবোধের প্রধান উপাদান হিসেবে সাধারণ রাজনৈতিক পরিচিতিকেই গণ্য করা হয়।
প্রশ্ন ১৬। জাতি গঠনের অপরিহার্য উপাদানটি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সাধারণত একই ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি–রীতিনীতির মাধ্যমে সংঘবদ্ধ জনসমাজকে জাতি বলা হয়। কিন্তু সব জাতির কোনো সাধারণ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই। বৃহৎ অর্থে জাতি হল একটি জনগোষ্ঠী যা একই বিশ্বাস, আশা আকাঙ্ক্ষার বন্ধনে আবদ্ধ। এটি একটি সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যা একটি সাধারণ লক্ষ্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। থাকে। জাতি গঠনের বিশ্বাস বা ইচ্ছাই জাতির প্রধান উপাদান। এই উপাদান ব্যতীত জাতি গঠন সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ১৭। জাতীয়তাবাদের চারটি সীমাবদ্ধতা লেখো?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদের চারটি সীমাবদ্ধতা হলঃ
(ক) জাতীয়তাবাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রবণতা আছে। এটি বিশ্বজনীনতার বাতাবরণ তৈরিতে বাধার সৃষ্টি করে।
(খ) জাতীয়তাবাদের মধ্যে একটি সংকীর্ণ ও উত্তেজনামূলক জাতীয়বোধের প্রবণতা অন্তর্নিহিত থাকে যা সমগ্র বিশ্বে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবোধের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
(গ) সংকীর্ণ জাতীয়তাবোধ আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার বাতাবরণ উন্নত করার পথ দুরূহ করে তোলে।
(ঘ) জাতীয়তাবাদ সমষ্টিগত স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করে।
প্রশ্ন ১৮। জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্যকারী চারটি উপাদান উল্লেখ করো?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্যকারী প্রধান চারটি উপাদান হলঃ
(ক) সাধারণ বাসস্থানঃ সাধারণ বাসস্থান জাতীয়তাবাদ ও জাতি গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যখন কোনো একটি জনসমষ্টি বহু বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে তখন তাদের মধ্যে একাত্মবোধ জেগে ওঠে এবং এই একাত্মবোধ জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্য করে।
(খ) সাধারণ ধর্মঃ সাধারণ ধর্ম বা ধর্মগত ঐক্য জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্যকারী উপাদান রূপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে অতীতে জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয় ঐক্যবোধ স্থাপনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নির্বাহ করেছে। ধর্ম এবং মহম্মদ আলী জিন্নার দ্বি–জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্থান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতীয়তাবাদের বিকাশে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
(গ) সাধারণ ভাষাঃ জনসমষ্টির সাধারণ ভাষাও জাতীয় একাত্মবোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। একই ভাষাভাষির মানুষের মধ্যে ভাবের আদান–প্রদানের মাধ্যমে তাদের একাত্মবোধ জেগে ওঠে। এই একাত্মবোধ জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্য করে। সুতরাং ভাষাগত ঐক্য জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্যকারী উপাদান হিসাবে অপরিহার্য।
(ঘ) ভৌগোলিক ঐক্যঃ একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী জনসমষ্টি ক্রমশঃ এক জাতিতে পরিণত হয়। একই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সহজেই জাতীয়তাবোধ জন্মায়। এভাবে ভৌগোলিক ঐক্য (Geographic Unity) জাতীয়তাবাদের বিকাশে সাহায্য করে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে নাগরিকের ভূমিকা আলোচনা করো?
উত্তরঃ একটি জাতি এবং তার নাগরিকের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়। রাষ্ট্র নাগরিকের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। প্রতিদান স্বরূপ নাগরিককেও কিছু নিশ্চিত দায়িত্ব বা কর্তব্য পালন করতে হয়। রাষ্ট্র কর্তব্যরূপে নাগরিকের নিকট কিছু দাবি করে। যা মেটানো নাগরিকের কর্তব্য। ভারতীয় সংবিধানের 51A (Part IV) ধারায় নাগরিকের জন্য কতকগুলো মৌলিক কর্তব্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। নাগরিককে একটি রাষ্ট্রের স্বীকৃত আইনগুলো মেনে চলতে হয়। জাতির সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও স্বার্থরক্ষা করা নাগরিকের কর্তব্য। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহায়তা করা নাগরিকের মুখ্য কর্তব্য। জাতির ঐক্য, স্বাধীনতা, ও ভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষার্থে কাজ করা, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা প্রভৃতি নাগরিকের কর্তব্য। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ও রাষ্ট্রীয় প্রতীক সমূহকে সম্মান করা নাগরিকের প্রধান কর্তব্য।
প্রশ্ন ২। গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মধ্যের সম্পর্কের একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক সমাজে বিভিন্ন কৃষ্টিগত ও সম্প্রদায় ভিত্তিক জাতি সহাবস্থান করে। তারা তাদের সার্বিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধন করে। একাত্মবোধ সৃষ্টিতে জাতীয়তাবাদের অন্যান্য উপাদানসমূহ যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ঠিক তেমনি একটি স্বাধীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সমষ্টিগত প্রচেষ্টা জাতিকে অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে পৃথক করে। জাতির সদস্যগণ অন্যান্য উপাদানের চেয়ে রাজনৈতিক মতবাদের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে। যেমন – গণতন্ত্র বা ধর্মনিরপেক্ষতা বা উদারবাদ। এই আদর্শ বা মতবাদগুলোকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদ গঠন হয়। গণতন্ত্রে একটি জাতীয় রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক সংঘের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ভিত্তি হচ্ছে রাজনৈতিক মূল্য বা আদর্শ। সবজাতিরই কোন সাধারণ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই। অধিকাংশ ধর্মেই বিচ্ছিন্নতাবাদ খুবই সক্রিয় এবং প্রতিটি সমাজ কৃষ্টিগতভাবে বিচ্ছিন্ন। সমাজের সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের কোন সাধারণ নির্দিষ্ট কৃষ্টিগত ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য নেই। তাই রাজনৈতিক মতবাদকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গ্রহণ করলে সমাজের সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যভাব গড়ে উঠা সম্ভব। আর এইজন্য গণতন্ত্র উপযুক্ত পটভূমি। কারণ সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ গণতন্ত্রে ভালভাবে পরিস্ফুট হয়। তাই গণতন্ত্র জাতীয়তাবাদ উৎকর্ষের জন্য উপযুক্ত শাসন ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ৩। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রভাব কী?
উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগ হতে জাতীয় রাষ্ট্রসমূহ সৃষ্টির মূলভিত্তি হিসেবে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের তত্ত্বটিকে গ্রহণ করা হয়েছে। এই তত্ত্বটিকে প্রথমে জনপ্রিয় করেছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি উড় উইলসন। তাঁর মতে প্রত্যেক জাতির স্বাধীনতার অধিকার আছে এবং প্রতিটি জাতির পছন্দসই সরকার গড়ার অধিকার আছে।
উইলসনের তত্ত্ব অনুসরণেই চেকস্লোভাকিয়া, পোলাও, প্যালেস্টাইন ইত্যাদি জাতীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আত্মনিয়ন্ত্রণের এই অধিকারকে আইনগত অধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে। উইলসন প্রবর্তিত ‘একজাতি একরাষ্ট্র’ নীতিতে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক বিকাশের অনুকূল নয়। জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে নতুন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের অসম–বণ্টন হতে পারে। বহুজাতিক রাষ্ট্রে যে ঐক্য গড়ে ওঠে, এই নীতি প্রযুক্ত হলে সে ঐক্য বিনষ্ট হবে। তথাপি আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতির কিছু সুফলও আমরা দেখতে পাই। যেমন– একজাতিক রাষ্ট্রে সরকারের সাফল্য ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সত্তা জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে বিকশিত হওয়া প্রভৃতি।
প্রশ্ন ৪। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারটি কীভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে?
উত্তরঃ বর্তমান পৃথিবী বিশ্বায়নের দিকে এগোচ্ছে। এই বিশ্বায়নের যুগে আত্মনিয়ন্ত্র ণের নামে কোনো জনগোষ্ঠী বা জনসম্প্রদায়ের পৃথক রাষ্ট্রের দাবি ওই জনগোষ্ঠীর আত্মহত্যার সমান। আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতি কোনো জনগোষ্ঠীর কাছে এখন আর সমর্থন যোগ্য নয়। কারণ পৃথক রাষ্ট্রের দাবি সেই জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্বল করে দেয়। এইজন্য বর্তমানে এই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন। এই পুনর্মূল্যায়নের অর্থ হল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রের সকল জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে সমান সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা। গণতান্ত্রিক যত অধিকার আছে সবগুলি রাষ্ট্রের ভেতরে থাকা সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে সমানভাবে প্রদান করা। সংখ্যালঘুদের সংখ্যগুরু সম্প্রদায় সমূহের মতো সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। কীভাবে জাতি বিভিন্ন জনগোষ্ঠী হতে পৃথক? আলোচনা করো?
উত্তরঃ আকস্মিক বা অস্থায়ীভাবে দলবদ্ধ জনসাধারণ নিয়ে জাতি গঠিত হয় না। মানবসমাজের বিভিন্ন ধরনের দলবদ্ধ জনগোষ্ঠী হতে জাতির অবস্থান আলাদা। জাতি জনগোষ্ঠী, বৈবাহিক সূত্রে বা রক্ত সম্পর্কে দলবদ্ধ জনসমাজ হতেও ভিন্নধরনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
জাতি নিম্নলিখিতভাবে জনগোষ্ঠী হতে পৃথকঃ
(ক) জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনৈতিক চেতনার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু জাতির জন্য রাজনৈতিক চেতনা অপরিহার্য।
(খ) জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু জাতি গঠনে জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক সচেতনতার একান্ত প্রয়োজন।
(গ) জনগোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট এলাকা থাকে। কিন্তু জাতির জন্য নির্দিষ্ট কোন ভৌগলিক এলাকার প্রয়োজন হয় না।
(ঘ) জাতির মধ্যে জনগোষ্ঠী রয়েছে।
(ঙ) জাতি জনগোষ্ঠীর মতো রক্তের সম্পর্ক বা বন্ধনের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।
(ত) জাতির সদস্যগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। কিন্তু জনগোষ্ঠীতে সদস্যগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান।
প্রশ্ন ২। জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ? এই জাতীয় ধারণা রাষ্ট্র গঠনে কীভাবে সহায়তা বা বিরোধিতা করে?
উত্তরঃ যখন কোনো জাতীয় জনসমাজ তার নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বিশেষত্ব রক্ষার জন্য একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিচিতি বা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা স্থাপন করতে চায় বা দাবি জানায় তখন তাকে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ বলে।
লেনিন – এর মতানুযায়ী জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হল, কোন বিদেশি জাতির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা।
জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ফলে এক – জাতিক রাষ্ট্রে শাসিতের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই শাসকের প্রতি শাসিতের সম্পূর্ণ আনুগত্য পরিলক্ষিত হয়। ফলস্বরূপ সরকার স্থায়ী হয় এবং সাফল্যও লাভ করে।
জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারটি কেবল জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে সহায়তা করে না; প্রত্যাহবানেও সহায়তা করে। জনগণের মধ্যে একদিকে যেমন ঐক্যবোধ জাগ্রত হয় অন্যদিকে তেমনি বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয় দেয়।
প্রশ্ন ৩। “আমরা দেখেছি জাতীয়বাদ মানুষের মধ্যে একদিকে ঐক্য আবার অন্যদিকে বিভেদের সৃষ্টি করে; একদিকে স্বাধীনতার আনন্দ এনে দেয় আবার অন্যদিকে সংঘর্ষ ও তিক্ততা সৃষ্টি করে।”– উদাহরণসহ এর উত্তর লেখো?
উত্তরঃ জাতীয়তাবাদ বহুসংখ্যক মানুষকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ রাখে। জাতীয়বাদ একটি ঐক্যমূলক উপাদান। জাতীয়তাবাদ শব্দটির মাধ্যমে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতিফলন হয়। কিন্তু এই জাতীয়তাবাদ মানুষের মধ্যে একদিকে যেমন ঐক্যবোধের সৃষ্টি করে, অন্যদিকে আবার মানুষের মধ্যে বিভেদও সৃষ্টি করে। একদিকে জাতীয়তাবাদ জনগণের মধ্যে যেমন স্বাধীনতার আনন্দ দান করে, অন্যদিকে আবার তাদের মধ্যে ঈর্ষা ও বিদ্বেষের জন্ম দেয় এবং এই ঈর্ষা ও বিদ্বেষের জন্য জনগণ পরস্পর সংগ্রামে লিপ্ত হয়। জাতীয়তাবাদ অন্য দেশ বা জাতিকে ঘৃণা করতে শিক্ষা দেয়। এই ঘৃণা, বিদ্বেষ ও ঈর্ষার কারণেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৪। ভাষা নয়, বংশগত পরিচয় নয়, ধর্ম নয়, অথবা জাতিগত ভিত্তি জাতীয়তাবাদের সাধারণ উপাদান বলে সমস্ত বিশ্বে দাবি করতে পারে না – আলোচনা করো?
উত্তরঃ বংশ বা ভাষা বা ধর্ম বা জাতি কোনটিই একটি সাধারণ জাতীয়তাবাদ গঠনের একমাত্র উপাদান বলে সমগ্র বিশ্বে দাবি করতে পারে না।
সমগ্র বিশ্বে একটি সাধারণ জাতীয়তাবাদ কেবলমাত্র বংশগত ঐক্যের দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান পৃথিবীর কোনো জাতিই বংশগত ঐক্যের দাবি করতে পারে না। একভাষা, এক সাহিত্য, এক সংস্কৃতি জনসমাজের মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধের সৃষ্টি করে। কিন্তু তা জাতি গঠনের একমাত্র উপাদান নয়।
সাধারণ ধর্মও জাতীয়তাবাদের একমাত্র ভিত্তি নয়। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোক বসবাস করে। ভারত হিন্দু, মুসলমান, শিখ, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান প্রভৃতি বিভিন্ন ধর্মীবলম্বী লোকের বাসভূমি। কিন্তু ধর্মের এই বৈচিত্র্য জাতীয়তাবাদ গঠনের অন্তরায় হয় নি। সুতরাং ধর্মকেও জাতীয়বাদের একমাত্র উপাদান হিসাবে গণ্য করা যায় না।
প্রশ্ন ৫। জাতীয়তাবোধের অনুভব কীরূপে একজন ব্যক্তির মনে সৃষ্টি হয় তা উপযুক্ত দৃষ্টান্ত সহযোগে এর উপাদানগুলো আলোচনা করো?
উত্তরঃ নিম্নলিখিত উপাদানগুলো একজন ব্যক্তির মনে জাতীয়তাবোধের অনুভব সৃষ্টি করেঃ
(ক) সাধারণ বাসস্থানঃ জাতীয়তাবাদী চেতনা বৃদ্ধিতে সাধারণ বাসস্থান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন একটি জনসমষ্টি দীর্ঘকাল ধরে একটি নির্দিষ্ট ভূ–খণ্ডে বাস করে তখন তাদের মধ্যে একাত্মবোধ জাগ্রত হয়। এই একাত্মবোধ জাতি গঠনের সহায়ক উপাদান হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(খ) ধর্মগত ঐক্যঃ জাতীয় জনসমাজ ও জাতি গঠনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এটা জাতীয়তাবোধের একমাত্র উপাদান হয়। একই ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পূজার্চনা জাতির মধ্যে একাত্মবোধ জাগ্রত করে যা জাতি গঠনের সহায়ক উপাদান হিসাবে পরিগণিত হয়।
(গ) ভাষাগত ঐক্যঃ ভাষাগত ঐক্যের কারণে জাতির মধ্যে একাত্মবোধের সৃষ্টি হয়। ভাষা মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হওয়ার দরুন তাদের মধ্যে একাত্মবোধ জাগ্রত করে।
(ঘ) ভৌগোলিক ঐক্যঃ একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে মানুষ বসবাস করার জন্য তাদের মধ্যে ঐক্যবোধের সৃষ্টি হয়। এই ঐক্যবোধ হতে জাতীয়তাবোধের জন্ম হয়।
(ঙ) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থঃ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আশা–আকাঙ্খা ও স্বার্থ জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয় ঐক্যবোধের সঞ্চার করে। সম–অর্থনৈতিক স্বার্থ জাতিকে গভীর ঐক্যবন্ধনে বেঁধে রাখতে সহায়তা করে।
জাতীয় জনসমাজ বা জাতীয়তাবাদ গঠনে আরও অনেক উপাদান সহায়তা করে।
প্রশ্ন ৬। কীভাবে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে অধিক কার্যকরী জাতীয়তাবাদী প্রত্যাশী?
উত্তরঃ গণতান্ত্রিক সরকার বিবদমান জাতীয়তাবাদী চেতনা মোকাবিলায় একনায়কতান্ত্রি ক সরকার হতে অধিক কার্যকরী হয়। একনায়কতন্ত্র শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হল একজাতি, একদল এবং একনায়ক। তাই এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঘৃণা, ঈর্ষা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। কিন্তু গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হল সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতা। গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য হল সকল মানুষের পূর্ণ আত্মবিকাশের ব্যবস্থা করা। তাই গণতন্ত্রে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ হয় যা একনায়কতন্ত্র শাসন ব্যবস্থায় ভালভাবে বিকশিত হয় না।
প্রশ্ন ৭। জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? লেখ?
উত্তরঃ আমাদের মতে জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা নিম্নরূপঃ
(ক) আবেগিক সংহতির অভাবঃ যে জাতিগুলির সমান ধর্ম, সংস্কৃতি নেই তাদের মধ্যে আবেগিক সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয়।
(খ) সাম্প্রদায়িকতাঃ সাম্প্রদায়িকতা একটি জাতিকে গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে।
(গ) প্রাদেশিকতাঃ প্রাদেশিকতা একটি জাতিকে প্রদেশ বা আঞ্চলিকভাবে বিভক্ত করে ফেলে। এটিও জাতীয়তাবাদের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।
(ঘ) শিক্ষার অভাবঃ জাতীয়তাবাদের পরম শত্রু হল অশিক্ষা বা শিক্ষার অভাব। অশিক্ষিত মানুষ জাতীয়তাবাদ বিকাশের পরিপন্থি হিসাবে কাজ করে।
(ঙ) ধর্মীয় বিভেদঃ ধর্মীয় বিভেন একটি জাতিকে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও শ্রেণীতে বিভাজিত করে।