Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম

Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম and select needs one.

SEBA Class 10 Boichitromoi Assam | বৈচিত্রময় অসম

Join Telegram channel

Table of Contents

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Boichitromoi Assam বৈচিত্রময় অসম for All Subject, You can practice these here…

(গ) বীর সেনাপতি ঝপরা জগধা – ঝপরা জগধা মরাণ জনজাতির একজন বীর ছিলেন। তাঁর বাবার নাম ছিল দারবি। দারবীরের ছয়জন পুত্র ছিল। তার মধ্যে জগধা সবার থেকে সাহসী এবং বাহুবলী ছিলেন। বর্ষার সময় ডিব্রু নদী পার হয়ে অরণ্যের জংলি হাতিকে ধরে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি যথেষ্ট দূরদর্শী ছিলেন। শৈশবে খেলাধূলা, পাখি শিকার ইত্যাদিতে তাঁর দাদাদের থেকে তিনি এগিয়ে থাকতেন। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিহু দলপতি হন। জগধার শারীরিক গঠন এত বলিষ্ঠ যে তিনি এক ঘায়ে একটি চোবাগাছ কেটে ফেলতে পারতেন। জগধার মাথায় বেশি চুলের ঝোপ থাকায় সাধারণ লোক তাঁকে ঝপরা বলে সম্বোধন করত। পরে তাঁকে ঝপরা জগধা বলে সবাই সম্বোধন করত।

(ঘ) মোহন শ‍ইকিয়া – ১৯৩০ সালের ২২ নভেম্বর তিনসুকিয়া জেলার তালাপের এক প্রত্যন্ত গ্রাম তামুলিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল জ্ঞানেন্দ্র শ‍ইকিয়া এবং মাতার নাম ছিল স্বর্গীয়া শুকানি শ‍ইকিয়া। বিদ্যাশিক্ষা শেষ করে তিনি চা-বাগানের ম্যানেজারের পদ গ্রহণ করেন। লোভনীয় চাকুরির মোহ ত্যাগ করে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালাবার উদ্দেশ্যে কাকপথার উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক রূপে যোগদান করেন এবং প্রধান শিক্ষক রূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কয়েকজন শিক্ষিত ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি সর্বপ্রথম ‘অসম মরাণ সভা’ গঠন করেন। তিনি মরাণ সভার প্রতিষ্ঠাপক সম্পাদক রূপে কার্যনির্বাহ করেছিলেন।

স্বকীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ‘মরাণ বিহুকে’ গোঁড়া সমাজ থেকে বের করে তিনিই বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর রচিত মরাণ বিহুগীতের ক্যাসেট ‘হাতো পাতো’ মরাণ সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন স্বরূপ।

অসমের বিদেশী বহিষ্কার আন্দোলনে তিনিই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন এবং যথেষ্ট অত্যাচার সহ্য করেছিলেন। তিনি অসম গণপরিষদের এক বিশিষ্ট নেতারূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। মরাণ সমাজে তাঁর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

(ঙ) রাঘব মরাণ – বীর রাঘব মরাণ অসমে সংঘটিত মোয়ামরিয়া গণবিপ্লবের প্রধান নেতা ছিলেন। রাঘব মরাণকে অত্যাচারী, নারী অপহরণকারী রূপে তাঁর চরিত্রের অপব্যাখ্যা করা হয়েছিল। তিনি যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী না থাকার জন্য বাঁশের লাঠি, ধনুক-তীর, শেল ইত্যাদি সাধারণ অস্ত্র দিয়ে রাজকীয় বাহিনিকে পরাস্ত করেছিলেন। এইরকম নজিরবিহীন ও বিস্ময়কর ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

রাঘব মরাণের আহ্বানে জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রজা জাগ্রত হয়ে সদলবলে এগিয়ে আসায় প্রমাণিত হয় যে তিনি সকলের প্রিয় নেতা ছিলেন। প্রকৃত গণশত্রুদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া, লঘু দোষে দোষীদের সামান্য শাস্তি দিয়ে রেহাই দেওয়া, পলাতক রাজসৈন্যদের মুক্ত করে দেওয়া ইত্যাদি কার্যের জন্য মহান পুরুষের মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। সর্বলোকের বাঞ্ছিত শ্রেণিবৈষম্যহীন সমাজ গড়ার পথ প্রদর্শক হিসাবে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মিসিংগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

১। মিসিং জাতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তরঃ অসমের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী হচ্ছে মিসিং জনজাতি। মিসিংরা “মিরি” নামে পরিচিত। মিসিংরা নিজেদের “তানি” বলে পরিচয় দেন। “তানি” শব্দের অর্থ মানব। মিসিংদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। একজন গাওবুঢ়া মিসিং গ্রামগুলোতে শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষা করে থাকেন। “কৌবা” বা সভার আয়োজন করে গাওবুঢ়ার তত্ত্বাবধানে দোষীর বিচার করা হয়। মিসিংদের উপাস্য দেবতা চন্দ্র-সূর্য। তাদের জাতীয় উৎসব হল আলি-আঃয়ে লৃগা। এই উৎসবের দিনে গাছরোপণ করা হয়। আপং মিসিংদের পানীয় দ্রব্য।

২। মিসিং জাতীর তিন রকমের পোশাক আষাকের নাম লেখো।

উত্তরঃ মিসিংদের তিন রকমের সাজ পোশাকের নাম হল- মিবু, গালুগ, রিহা, মেখেলা এবং রিবি গাচেং।

৩। মিসিংদের ধর্ম সম্পর্কে কী জানো লেখো।

উত্তরঃ মিসিংদের মহাপুরুষীয়া, শৈব, শাক্ত বা তন্ত্র বিশ্বাসের উপরে ও “রাতি” সেবাধর্মে বিশ্বাস দেখা যায়। মিসিংদের উপাস্যদেবতা হল “দঞ্চি-পল” বা সূর্য চন্দ্ৰ। আজন্ম কাল সূর্য চন্দ্র দেবতারা তাদের পরিচালনা করেন বলে মিসিংদের বিশ্বাস। মিসিংদের মধ্যে ধর্মীয় “দবুর” পূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

৪। আলি আয়ে লৃগাং কী এবং কখন অনুষ্ঠিত হয়?

উত্তরঃ মিসিংদের জাতীয় উৎসব হচ্ছে আলি আয়ে লৃগাং। আলি-আয়ে-লৃগাং শব্দটি তিনটি পদের সমষ্টি। আলি অর্থাৎ মাটির নীচে হওয়া বীজ, আয়ে হল গাছের উপর হওয়া ফল, লৃগাং শব্দের অর্থ হল বীজরোপণ কার্যের শুভারম্ভ।

ফাল্গুন মাসের বুধবার দিন এই উৎসবের শুভারম্ভ।

৫। আলি আঃয়ে লৃগাং শব্দের বুৎপত্তি লেখো।

উত্তরঃ আলি আঃয়ে লৃগাং তিনটি পদের সমষ্টি। আলি মাটির নীচে হওয়া বীজ, আঃয়ে হল গাছের হওয়া ফল, লৃগাং শব্দের অর্থ বীজ রোপণ কার্যের শুভারম্ভ।

৬। সংক্ষেপে টীকা লেখো।

(ক) ভৃগুমণি কাগয়ুং। 

(খ) শহিদ কমলা মিরি। 

(গ) ঐরাম বরি।

(ঘ) যাদব পায়েং।

উত্তরঃ (ক) ভৃগুমণি কাগয়ুং – সুসাহিত্যিক কাগয়ুং-এর পূর্বপুরুষের নাম ছিল কার্তং। ১৯৩২সালে অক্টোবর মাসে ভৃগুমণি কাগয়ুং-এর জন্ম হয়। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গুয়াহাটির বি. বরুয়া কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। অসমিয়া কাব্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভৃগুমণি কাগয়ুং-এর দান অপরিসীম। “কবিতা কলি” অনাহুত ইত্যাদি তার বিশেষ কাব্যগ্রন্থ। তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে “কুসুম কলি”। ১৯৭১ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছিলেন। তিনি মিসিং জনগোষ্ঠীর প্রথম রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক। তিনি অসমিয়া ভাষার সঙ্গে সঙ্গে মিসিং ভাষাতেও কবিতা রচনা করেছিলেন। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা সর্বমোট সাতাশটি।

ভৃগুমণি কাগয়ুং একজন সার্থক প্রবন্ধকার এবং প্রসিদ্ধ লোকসংস্কৃতির গবেষক ছিলেন। অসমিয়া ও মিসিং ভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতি গভীর অধ্যয়ন ও চর্চা তাঁর জীবনের ব্রত ছিল।

(খ) শহিদ কমলা মিরি – নিজের দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে কমলা মিরি অন্যতম। শিবসাগর জেলার টেমেরা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল চিকৌ লই। এবং মাতার নাম ছিল মঙ্গলি লইং।

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সংগঠিত স্বাধীনতা আন্দোলন ভারতবর্ষের সর্বত্র দেশপ্রেমের জোয়ার এনেছিল। গোলাঘাট জেলার (তখনকার শিবসাগর জেলা) কমলা মিরি এবং তাঁর সতীর্থ মিসিং যুবকদেরও দেশপ্রেমের অমরবাণী উদ্বেলিত করেছিল। কমলা মিরির নেতৃত্বে মহুয়া মৌজার বংকুয়াল অঞ্চলে বিকারাম মিরি, বেজিয়া লইং, ভুটাই লইং, শম্ভুরাম মিরি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

১৯৪২ সালে “ভারত ত্যাগ আন্দোলন” আরম্ভ করার জন্য মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু নেতাগণকে ব্রিটিশ সরকার যখন কারাগারে প্রেরণ করেছিল তখন কমলা মিরি রাঙামাটী মৌজার ওপর টেমেরা গ্রামে শান্তিসেনার দল গঠন করেছিলেন।

১৯৪২ সালে গোলাঘাটে কংগ্রেসের কার্যালয়ে বিপ্লবের খবরাখবর সংগ্রহ করতে গেলে কমলা মিরি ও তাঁর সঙ্গীদলকে ব্রিটিশ সরকারের সিপাহীরা বন্দী করে। কারাগারে বন্দী অবস্থায় কমলা মিরি, গোপীনাথ বরদলৈ, ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ, হেম বরুয়া নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎলাভ করেন। কারাগারে বন্দী জীবন কাটাবার সময় তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং ১৯৪৩ সালে ২৩ এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

(গ) ঐরাম বরি – ১৮৭৭ সালে মিসিং সংস্কৃতির পিতৃপুরুষ ঐরাম বরি“নেফা”র অন্তর্গত অয়াণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল তাকির বরি মাতার নাম ছিল মঙলি বরি।

সেকালে বরিদের গ্রামে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় স্বগ্রাম থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ কিঃমিঃ নিম্নভূমির পুরানো মুকুংসেলেকের অন্তর্গত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ঐরাম বরি মিসিং সংস্কৃতির সংরক্ষণ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কৃষ্টি-প্রাণ একদল যুবক যুবতিকে সঙ্গে নিয়ে মিসিংদের মূল্যবান ঐনিঃতম, চৌল্লয়া, কাবান, তৌবঃ ইত্যাদির প্রণালীবদ্ধভাবে চর্চা, সংরক্ষণ এবং সংবর্ধনের কাজে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। বরিদের সাংস্কৃতিক দলটি জোনবই, পাচিঘাট থেকে আরম্ভ করে গুয়াহাটি, যোরহাট, ডিব্ৰুগড়, মাজুলি পর্যন্ত বর্ণাঢ্য কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়েছিল, তিনি “অয়ান অঞ্চলের সংস্কার এবং উন্নয়ন সভা” থেকে আরম্ভ করে “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম” পর্যন্ত নানা মূল্যবান কাজ করেছিলেন।

সেইসময় “নেফা” প্রশাসনের অধিকারী আর্নল্ড সাহেব এবং মাথুর সাহেবের পরিকল্পনায় ঐরাম বরির নেতৃত্বে অয়ান চারি আলি থেকে চিয়াং ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত একটি পথ নির্মাণ করেন। চিয়াং ব্রহ্মপুত্র ঘাটটিকে “ঐরাম ঘাট” নামে নামাঙ্কিত করা হয়।

(ঘ) যাদব পায়েং – ১৯৫৯ সালে ৩০ অক্টোবর তারিখে যোরহাট জেলার ককিলামুখের বরখোপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম লক্ষ্মীনাথ পায়েং এবং মাতার নাম আফুলি পায়েং। ব্রহ্মপুত্রের ভয়ে বাসস্থান পরিবর্তন করে তিনি মিরি গ্রামে বাস করেন। বালিগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা শুরু হয়। সেখান থেকেই তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীবজন্তুর প্রতি ভালবাসার পাঠ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমি এবং পরিবেশকর্মী। ব্রহ্মপুত্রের বানে প্রচুর জীবজন্তুর মৃত্যু হয়। তিনি সাপদের আশ্রয়দানের জন্য বাঁশের ঝোপ রোপণ করেছিলেন। “মোলাই কাঠনি” অরণ্য তাঁর সৃষ্টি। যাদব পায়েং-এর মোলই অরণ্যের বিশাল পরিবারের মধ্যে মূল্যবান লাল চন্দন, সাদা চন্দন, শিশুগাছ, গামরী, তিতাচপ উল্লেখযোগ্য। চারটি বাস মোলাই অঞ্চলের বিশেষ আকর্ষণ।

পরিবেশ রক্ষা করার জন্য তিনি ভারতের অরণ্যমানব উপাধি পেয়েছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম ২৫০লক্ষ টাকাসহ হীরাখচিত পুরস্কার প্রদান করেন। প্রকৃতির নীরব সাধক পায়েংকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী উপাধি প্রধান করে।

মণিপুরিগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কখন থেকে মণিপুরিগণ অসমে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন?

উত্তরঃ ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে মান সেনা মণিপুর রাজ্য আক্রমণ করে। মণিপুরি প্রজাদের ওপর মান সেনার অত্যাচারে থাকতে না পেরে তারা কাছাড়, সিলেটে বসবাস করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে স্বস্থানে ঘুরে না গিয়ে তারা কাছাড় জেলাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদে মণিপুরি ভাষা কত সালে অন্তর্ভূক্ত হয়?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালে মণিপুরি ভাষা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত হয়।

প্রশ্ন ৩। মণিপুরি মৈতে বা মীতৈ সমাজে সাতটা য়েক-সালাইয়ের নাম কী কী?

উত্তরঃ মণিপুরি মৈতে বা মীতৈ সমাজ সাতটি য়েক-সালাই অর্থাৎ গোত্র বা উপসম্প্রদায়ে বিভক্ত। সেগুলি হচ্ছে মঙাং, লুয়া, খুমন, মেহিরাং, অঙ্গেম, খাবা-ঙানবা এবং চংলৈ।

প্রশ্ন ৪। মণিপুরি মৈতে বা মীতৈদের ঘরে পূজা-অর্চনা করা দেবদেবীর নাম লেখো।

উত্তরঃ মণিপুরিরা বৈষ্ণবধর্মী হলেও তাঁরা তাঁদের আরাধ্য দেবতা “লাই নিংখৌ ছনাময়ী”, “ইমালৈমরেন শিদবী”র পূজা করে থাকে।

প্রশ্ন ৫। লাইহারোবা কী? বছরের কোন মাসে লাইহারোবা উৎসব পালন করা হয়? এই উৎসবের একটি বাদ্যযন্ত্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ লাইহারোবা মণিপুরিদের কৃষিভিত্তিক উৎসব। বৈশাখ মাসে পাঁচদিনব্যাপী লাইহারোবা উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবে ব্যবহার করা বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে‘পেমা’। এটি একপ্রকার বীণা জাতীয় বাদ্য।

প্রশ্ন ৬। মণিপুরিদের কয়েকটি নাচের নাম লেখো।

উত্তরঃ মণিপুরিদের নৃত্যের নাম হল—“থাবল-চোংবি মাইবি জগোই”। লাই-হারাওবা নৃত্য মণিপুরি সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ।

প্রশ্ন ৭। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

(ক) নাওরিয়া ফুলে।

(খ) নৃত্যগুরু কে. যতীন্দ্র সিংহ। 

(গ) সমাজসেবিকা সরস্বতী সিংহ। 

(ঘ) নোংথম্বম বিদ্যাপতি সিংহ।

উত্তরঃ (ক) নাওরিয়া ফুলে – নাওরিয়া ফুলে আধুনিক মণিপুরি সাহিত্যের অন্যতম অগ্রগণ্য সাহিত্যিক। অসমের হাইলাকান্দি জেলার ‘লাইশ্রম খুন’ নামক গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফুলের মতো কোমল দেখতে ছিলেন, তাই পাঠশালার শিক্ষক তাঁর নাম দিয়েছিলেন ফুলো। তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন মণিপুর রাজ্যের প্রজা। 

নাওরিয়া ফুলে শিক্ষকতা করার সময় থেকেই অনুবাদের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন। হিন্দু পুরাণ কাহিনি অবলম্বনে পাঁচটি নাটক রচনা করেছিলেন। তাঁর রচিত ১৯টি গ্রন্থ আছে। মীতৈ হৌভম বারী, গৌড়ধর্ম, অহন য়াথং ইত্যাদি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।

১৯৩০ সালে তিনি মাত্র বারজন অনুরাগীকে নিয়ে অকোকপা মরূপ (অপোকপা) সমাজ গঠন করেন। তাঁর কবিতাসমূহ আধ্যাত্মিক ভাবধারা ও প্রাচীন ঐতিহ্যের গুণগান, দেব-দেবীর স্তোত্র, স্তুতি, মন্ত্র, গীত ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ।

বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটি মাত্র ৫৩ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

(খ) নৃত্যগুরু কে. যতীন্দ্র সিংহ – বিশ্বভারতী সংগীত ভবনের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যতীন্দ্ৰ সিংহ ১৯৪৩ সালে লখিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মণিপুরি নট সংকীর্তন গুরু কে. কামিনী সিংহ এবং শ্রীমতী পশৎলেমা দেবীর পুত্র ছিলেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি সংগীত ও নৃত্যপ্রেমী ছিলেন। বিভিন্ন নৃত্যের সংযোজন ও সংমিশ্রণের মাধ্যমে নতুন নৃত্যশৈলী উদ্ভাবন করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় এবং আন্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নৃত্যের কর্মশালা করেছিলেন। নিজের উদ্যোগে শান্তিনিকেতনে বহু কর্মশালা ও আলোচনাচক্র আয়োজন করে মণিপুরি ও রবীন্দ্রনৃত্যের শ্রীবৃদ্ধির চেষ্টা করেন। তার তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে নৃত্য পরিবেশন করে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছিলেন। তিনি ‘ত্রিধার’ এবং ‘মীর জিজ্ঞাসা’ নামে দুটো টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিলেন। যতীন্দ্র সিংহকে ২০০৬ সালে মণিপুরি সাহিত্য পরিষদ, অসমে “নৃত্যগুরু” রাজকুমার বুদ্ধিমন্ত মেমোরিয়াল ডান্স একাডমি ত্রিপুরা রাজকুমার মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১২ সালে মণিপুরী সাহিত্য পরিষদ ইম্ফল ‘নৃত্যরত্ন’ উপাধিতে সম্মানিত করেন।

মণিপুরি নৃত্যের বিরল প্রতিভার অধিকারী যতীন্দ্র সিং শান্তিনিকেতনে নিজ বাসগৃহে পরলোকগমন করেন।

(গ) সমাজসেবিকা সরস্বতী সিংহ – সরস্বতী সিংহ লঙ্কা অঞ্চলের আমপুখুরি গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বাহেংবম জয়চন্দ্র সিংহ, মায়ের নাম বাহেংকম ফজবি দেবী। তিনি কাশিপুর এম. ভি. স্কুল থেকে বৃত্তিসহ এম. ভি. পাশ করার পর রাষ্ট্রভাষা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। নগাঁও গার্লস কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করে আইনের স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

অসম সরকারের সমাজ কল্যাণ বিভাগে অঙ্গনবাড়ি কর্মী হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। মণিপুরি ভাষা সাহিত্যের উন্নতির জন্য হোজাইতে “মণিপুরি লিটারেরি ফোরাম” প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাকপটুতা প্রত্যুৎপন্নমতি এবং অধ্যবসায়ী গুণের জন্য অতি কম দিনে নিজেকে আইনজীবীরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার প্রথম মহিলা অধিবক্তা ছিলেন। নারীচেতনা জাগ্রত করার জন্য তিনি বিভিন্ন মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নিজে হাল ধরেছিলেন। মণিপুরি সাহিত্য পরিষদ, তাঁকে সমাজসেবিকা উপাধি দিয়েছিল।

(ঘ) নোংথম্বম বিদ্যাপতি সিংহ – নোংথম্বম বিদ্যাপতি সিংহ একজন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। হাইলাকান্দি জেলার লালা শহরে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম ললিতি সিংহ যিনি একজন কবিরাজ ও জ্যোতিষী ছিলেন। মাতার নাম ছিল মাইসন দেবী। তিনি বিদ্যাশিক্ষা শেষ করে সোনাই এম. ই. বিদ্যালয়ের ইংরাজি শিক্ষক পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টাতে এম. ই. স্কুল উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

নোংথস্বম বিদ্যাপতি সিংহ একজন সহজ সরল প্রকৃতির আদর্শবান পুরুষ ছিলেন। স্বজাতির যুব প্রজন্মকে জাগ্রত করার জন্য মণিপুরি যুবসংঘ গড়ে তুলেছিলেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্থানে বাস করা মণিপুরিদের উৎপীড়ন করার খবর শুনে তিনি কাছাড়ের তিনজন নেতা এবং একশত ছাত্র-ছাত্রী সেখানে প্রেরণ করে মণিপুরি প্রজার মধ্যে সদ্ভাব বজায় রেখে বসবাস করার সু-পরামর্শ দিয়েছিলেন।

মাত্র ৪২ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সোনাই শহরে তাঁর মৃত্যু হয়।

রাভাগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। রাভাদের আদি বাসভূমি কোথায় ছিল?

উত্তরঃ ১৯০৩ সালে প্রকাশিত লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মতানুসারে গারো পাহাড় জেলার ফুলবাড়ি থেকে দক্ষিণ কামরূপের রানা পর্যন্ত, গারো পাহাড়, খাসিয়া পাহাড় জেলার উত্তর সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চলে রাভা জাতির বাসস্থান ছিল। তাছাড়াও নেপাল, ভুটান, মেঘালয়, বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান সহ অসমের কোকরাঝাড়, বঙ্গাইগাঁও, চিরাং, বাক্সা, ওদালগুড়ি, কামরূপ, শোণিতপুর, গোলঘাট, নগাঁও, ধেমাজি, ডিব্ৰুগড়, শিবসাগর ইত্যাদি জেলার বিভিন্ন স্থানে রাভাদের বাসভূমি আছে।

২। সামাজিক দিক থেকে রাভারা কী কী শাখায় বিভক্ত?

উত্তরঃ মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীভুক্ত রাভা জাতি সামাজিক দিক থেকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত, যেমন—রংদানি, পাতি, দাহরি, মায়তরি, কোচ, বিতলিয়া হানা, মদাহি ইত্যাদি।

৩। রাভা সংস্কৃতির প্রতীক কী?

উত্তরঃ “মানচালেংকা” বা “মাছরোকা” পাখি (মাছরাঙা) রাভা সংস্কৃতির প্রতীক। মানচালেংকার মতো কাঠের প্রতিকৃতির করুরা ও বাতিকটিকা নামের পাখি একটি লগিতে গেঁথে দেওয়া হয় আর নাচের তালে তালে পুরুষ ও মহিলারা ঢাল ও তলোয়ার নিয়ে নৃত্য করে।

৪। রাভাদের প্রধান দেবতা কে?

উত্তরঃ রাভাদের প্রধান দেবতা রিসি বা মহাদেব।

৫। রাভাদের প্রধান পুজোর নাম কী ?

উত্তরঃ বুরঞ্জি অনুসারে রাভাদের বীর রাজা দদানই “বায়খো” পূজা করেছিল। পরবর্তীকালে সেই বায়োখা পূজাই রাভাদের প্রধান পূজা। রাভারা জড় উপাসক, পাথর, গাছপালা ইত্যাদির পূজা করে মোরগ, শূকর, কবুতর ইত্যাদি উৎসর্গ করত।

৬। সংক্ষেপে টীকা লেখো।

(ক) বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা। 

(খ) রাজেন রাভা।

(গ) প্রসন্ন পাম।

(ঘ) বীরুবালা রাভা।

(ক) বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা – ১৯০৯ সালের ৩১ জানুয়ারিতে কলাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, নৃত্যবিদ, অভিনেতা ছিলেন। প্রথমে তিনি ইংরাজি, বাংলা অসমিয়া মাধ্যমে বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।

তেজপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে “কুইন এক্সপ্রেস” পদক লাভ করেছিলেন। তিনি প্রথম শ্রেণির খেলোয়াড় ছিলেন। ফুটবল, হকি, ক্রিকেট খেলা ছাড়াও তিনি গান, নৃত্য, অভিনয়, ছবি আঁকাতে পারদর্শী ছিলেন।

তিনি মহাপুরুষ শংকরদেবের ভক্ত ছিলেন। বিদ্যাশিক্ষা সমাপ্ত করে কোলকাতায় গিয়ে হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন। “আবাহ”, “বাঁশি” কাগজে তাঁর রচনা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অসমিয়া সাহিত্যের প্রেমিকদের কাছে তিনি বিষ্ণু রাভা নামে পরিচিত হন। অসমের সাংস্কৃতিক জগতের বরেণ্য শিল্পী জ্যোতিপ্ৰসাদ আগরওয়ালার সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। গায়িকা প্রিয়লতা দত্তের সঙ্গে ১৯৩৭ সালে তাঁর বিবাহ হয় এবং মাত্র ২৮দিনের মধ্যেই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

কাশীর হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ক্রমে তিনি মহাদেব তাণ্ডব নৃত্য প্রদর্শন করে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের থেকে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছিলেন। ১৯৬২ সালে দেশদ্রোহী সাজিয়ে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি দ্বিতীয় পত্নীর মৃত্যুর পর যাযাবর জীবন যাপন শুরু করেন। তাঁর রচিত ‘সোনপাহি’ ও ‘মিচিং কনেং’ দুইটি বিখ্যাত গ্রন্থ। সংগ্রামী জীবনযোদ্ধা বিষ্ণু রাভার জীবন অতি দুঃখ যন্ত্রণায় ভরা ছিল। ১৯৬৯ সালের ২০ জুন তাঁর জীবনাবসান ঘটে।

(খ) রাজেন রাভা – ১৯২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজেন রাভা জন্মগ্রহণ করেন। কৃতী শিক্ষক, যশস্বী সাহিত্যিক, গবেষক রাজেন রাভার জীবন কৃতিত্বে পরিপূর্ণ ছিল। রাজেন রাভা বলতেন “অভিধানেই মোর গুরু”। তাঁর রচিত ‘রাভা লোককথা’, ‘রাভা জনজাতি’ ইত্যাদি গ্রন্থ ছাড়াও চল্লিশটির অধিক প্রবন্ধ ছিল। এম. ই. স্কুলের অধ্যয়ন শেষ করে মাত্র পাঁচ টাকা বেতনে এক মাড়োয়ারি দোকানে জীবিকার বৃত্তি গ্রহণ করেছিলেন। নিজ প্রচেষ্টায় মাধ্যমিক, আই. এ. পাশ করে অসমিয়া সাহিত্য নিয়ে এম. এ. পাশ করেছিলেন। আজীবন সাহিত্য সেবক, সমাজ ও মানবপ্রেমিক রাজেন রাভার প্রথম জীবন দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করে তিনি ‘করব কিংমা মরব’ বাহিনিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ‘অসম বঙ্গীয় সারস্বত আশ্রম’-এর ঋষি বিদ্যালয়ে এক বছর সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা অধ্যয়ন করে দুই ভাষাই আয়ত্ত করেছিলেন।

তিনি অসম সাহিত্য সভার বঙ্গাইগাঁও অধিবেশনের উপ-সভাপতি ও দুধনৈ অধিবেশনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন। অসম সরকারের থেকে তিনি সাহিত্যিক পেনসন এবং রাষ্ট্রীয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার পেয়েছিলেন।

(গ) প্রসন্ন পাম – গোয়ালপাড়া জেলার বালিজান চক্রের অন্তর্গত লতাপারা গ্রামে প্রসন্ন পাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল কমলকুমার রাভা এবং মাতার নাম ছিল দাখেলাবালা রাভা। শৈশবকাল থেকেই তিনি রাভা কৃষ্টির সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। বেতার শিল্পী হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করে তিনি অনেক গীত রচনা করে সুর দিয়েছিলেন। ‘দদান বীর’ নাটকের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তাঁর রচিত সৃষ্টি বিধান, ময়রা শক্তি, কামগিরি, পিদান সংসার গ্রন্থগুলি অপ্রকাশিত ছিল।

নির্বাচনের প্রচার কার্য চালানোর সময় মোটর দুর্ঘটনায় মহান শিল্পীর অকাল মৃত্যু হয়েছিল।

(ঘ) বীরুবালা রাভা – ডাইনি হত্যার মতো অন্ধবিশ্বাসকে সমাজ থেকে নিশ্চিহ্ন করে একটি সুস্থ সমাজ গড়ার চেষ্টায় নিজেকে উৎসর্গ করা, সংগ্রামী নেত্রী ছিলেন বীরুবালা রাভা। ১৯৪৯ সালে গোয়ালপাড়া জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কালিয়ারাম রাভা ও মাতার নাম সাগরবালা রাভা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং বোনাই কটাইয়ের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সামাজিক ডাইনী হত্যার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর কর্মের স্বীকৃতির জন্য ‘শান্তির নোবেল পুরস্কার’, উর্মিলা দাস মেমোরিয়াল পুরস্কার, জয়মতী পুরস্কার পেয়েছিলেন।

২০১৫ সালে গুয়াহাটী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

চুটিয়াগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। চুটিয়াদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?

উত্তরঃ হিমালয়ের উত্তরে মানস সরোবরের পূর্বে অবস্থিত স্বাত সরোবরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চুটিয়াদের আদি বাসস্থান ছিল। সেখান থেকে তারা সোঅনসিরি নদীর পাড়ে পাড়ে পশ্চিমদিকে বর্তমান লখিমপুর অঞ্চলে উপনীত হয়।

প্রশ্ন ২। চুটিয়া শব্দের উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে হয়েছিল?

উত্তরঃ স্বাতিয়া শব্দ থেকে চুটিয়া শব্দের উৎপত্তি হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩। চুটিয়াদের একজন বীরাঙ্গনার নাম লেখো।

উত্তরঃ চুটিয়াদের বীরাঙ্গনার নাম সতী সাধিনী।

প্রশ্ন ৪। নিম্নলিখিত যে কোনো একজন মানুষের সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

(ক) সোনারাম চুটিয়া। 

(খ) ড. স্বর্ণলতা বরুয়া। 

(গ) চিদানন্দ শ‍ইকিয়া।

(ঘ) কোষেশ্বর বরুয়া।

উত্তরঃ (ক) সোনারাম চুটিয়া – বর্তমান যোরহাট জেলার কাকজান অঞ্চলের বাম কুকুরাচোয়া গ্রামে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সোনারাম চুটিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৫ সালে পাঁচটি বিষয়ে লেটার নম্বরসহ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কটন কলেজ থেকে সুখ্যাতি সহ বিজ্ঞান শাখায় স্নাতক হয়েছিলেন। তিনি সংস্কারকামী মনোভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে শ্রীমন্ত শংকরদেব সংঘে যোগদান করেন এবং নয়টি কার্যকাল পদাধিকারী হিসাবে কার্য সম্পাদন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল—অসমের বৈষ্ণব দর্শনের রূপরেখা, নামধর্ম প্রকাশ, মহাপুরুষ শ্রীহরিদেব চরিত, ভাগবত মাহাত্ম্য, মহাপুরুষীয়া ধর্ম জিজ্ঞাসা, বেদ ও মহাপুরুষীয়া ধর্ম ইত্যাদি। শ্রীমন্ত শংকরদেব সংঘ ‘শ্রীমন্ত শংকরদেব মাধবদেব পুরস্কার’ এবং ‘বৈষ্ণব পণ্ডিত’ উপাধি প্রদান করে জীবনজোড়া অবদানের প্রতি যথাযোগ্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।

(খ) ড. স্বর্ণলতা বরুয়া – ড. স্বর্ণলতা বরুয়াউত্তর পূর্বাঞ্চলের একমাত্র মহিলা বুরঞ্জীবিদ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। চুটিয়া জাতীর বুরঞ্জী’র মুখ্য সম্পাদিকা A comprehensive History of Assam, Last Day of Ahom Monarchy : A History of Assam From 1769-1826 প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য যে, এঁর Status of Women in Non-Tribal Societies of Assam নামক গবেষণাপত্রটি বিশেষ সমাদর লাভ করেছিল।

(গ) চিদানন্দ শ‍ইকিয়া – বর্তমান গোলাগাট জেলার দ গাঁও-এ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে চিদানন্দ শ‍ইকিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজীবন শিক্ষাব্রতী, স্বাধীনতা সংগ্রামী সাম্যবাদী দর্শনের সমর্থক ছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল – ‘সোভিয়েত নারী, ‘সীমান্ত গান্ধী’, ‘মহর্ষি কার্লমার্ক্স’, ‘আগুনে পোড়া সোনা’, ‘শংকর বরুয়া’, ‘খেরিয়া’ ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন। তিনি সোভিয়েত দেশ নেহরু পুরস্কার, সাহিত্যিক পেনশন এবং শিক্ষক পুরস্কার লাভ করেছিলেন। অসমের সাংবাদিকতার জগতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

(ঘ) কোষেশ্বর বরুয়া – লখিমপুর জেলার ঢলপুর মৌজার বরথেকেরাবাড়ি গ্রামে কোষেশ্বর বরুয়া জন্মগ্রহণ করেন। অসম সরকারের সাহিত্যিক পেনসন প্রাপক মানুষটি বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ প্রণয়ন করে অসমিয়া সাহিত্য জগৎকে আলোকিত করেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থরাজি হল— কলেজর দুবরি বন, অনুভব, লগন, আগন্তুক, প্রজন্মর উমানত ইত্যাদি কবিতা সংকলন। ধন্য জন্ম ভারতবরিষে, জননেতা ভীমবর দেউরি, ঐতিহাসিক বিবর্তনে অসমের চুটিয়া জনগোষ্ঠী, চুটিয়া রাজা রত্নধ্বজ পাল ইত্যাদি প্রধান। তাছাড়াও তিনি দু’খানা গানের সংকলন করেছিলেন। তিনি ড. আম্বেদকর ফেলোশিপ এবং অসম সরকারের প্রদান করা সতী সাধিনী পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

(খ) যোগেশ দাস – ১৯২৭ সালে ডুমডুমার হাঁসচরা চা-বাগানে প্রাতঃস্মরণীয় যোগেশ দাস জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক। ১৯৫৪ সালে সুখ্যাতির সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কটন কলেজ থেকে স্নাতক উপাধি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই গল্প রচনা করে গল্পকারের পরিচয় দিয়েছিলেন।

জ্ঞানের সাধনা তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল। শিক্ষকতা, সাহিত্য-সাধনা, জ্ঞানের প্রচার এবং প্রসারকে তিনি জীবনের ব্রতরূপে গ্রহণ করেছিলেন। সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হয়ে তিনি অতি নিষ্ঠার সঙ্গে দেশসেবা, জনসেবা এবং সমাজসেবায় ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি “অসম সাহিত্য সভা” পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। “নতুন অসমীয়া” পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং “দৈনিক অসম” পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। 

তিনি একজন সাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ হল- ‘পপিয়াতরা’, ‘ডাওরর আঁরে আঁরে’, ‘জোনাকির জুই’, ‘উৎকণ্ট’ ইত্যাদি।

প্রখ্যাত গদ্যশিল্পী যোগেশ দাস জীবনে অনেক পুরস্কার লাভ করেছিলেন। আকৌ বনে বনে’ গ্রন্থের জন্য ‘মোক্ষদানন্দ পাঠক শিশু সাহিত্য’ পুরস্কার, ‘এনাজরি’ গ্রন্থের জন্য সতীনাথ ব্রহ্মচৌধুরী পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ‘অসম উপত্যকা’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

(গ) পরশুরাম সোনোয়াল – পরশুরাম সোনোয়াল নগখুলি চা বাগানে ১৯০৪ সালে ২৫ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল পঞ্চানন সোনোয়াল এবং মায়ের নাম ছিল চিল গুটিমালা সোনোয়াল। প্রাথমিক শিক্ষা তিনি নিম্ন বুনিয়াদী পাঠশালা থেকে আরম্ভ করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর এল. এল. বি.-তে প্রথম শ্রেণির দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিলেন।

খেলাধূলা, সংগীত সাধনা, প্রবন্ধ ও গল্প ইত্যাদির পাশাপাশি সুকুমার কলাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। যে সময়তে টেনিস, ফুটবল, হকি খেলার সঙ্গে অসমের মানুষের বিশেষ পরিচয় ছিল না তখন পরশুরাম সোনোয়াল নিজ পারদর্শিতায় প্রেসিডেন্সি কলেজের ফুটবল, হকি, টেনিস খেলায় বিশেষ স্থান অধিকার করেছিলেন।

১৯৩৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। উকিল সন্থায় নাম পঞ্জিকরণ করা এম. এ., এল. এল.বি. প্রথম অসমিয়া ব্যক্তি ছিলেন পরশুরাম সোনোয়াল। তিনি সামাজিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ডিব্ৰুগড় শহরে নাগরিকগণ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন সোনোয়াল তার প্রতি উৎসাহ জানিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে সেখানে পাঠদানের প্রস্তাব জানান। এক বছর কলেজের ইতিহাস বিভাগের পরিচালনা করেছিলেন।

সোনোয়াল একাধারে ডিব্রুগড় লোকাল বোর্ডের সদস্য, অসম মেডিকেল স্কুল বোর্ডের সদস্য, জেলা ট্রাইবেল লীগের সভাপতিরূপে কার্যনির্বাহ করেছিলেন। স্বাধীনতার পর অসমের অনুন্নত জাতি জনগোষ্ঠীকে সামাজিক, শৈক্ষিক, অর্থনৈতিক দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর তৈরি করা “সারা অসম ট্রাইবেল লীগ”-এর জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।

১৯৬০ সালে ১ অক্টোবর তিনি ইহলীলা সম্বরণ করেন।

(ঘ) যোগেন্দ্রনাথ হাজারিকা – যোগেন্দ্রনাথ হাজারিকা অসমের পুরনিখণ্ডিয়া গ্রামে ১৯২৪ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন গোলাপচন্দ্র হাজারিকা এবং মাতার নাম ছিল মনজিৎ হাজারিকা। তিনি ছিলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আদর্শ সমাজবাদী, সু-সংগঠক, সু-লেখক, বুদ্ধিজীবি, আইনবিদ এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন।

বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আর্থিক অনটন থাকায় তিনি চানা-বাদাম বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতেন। দু’জন দয়ালু ব্যক্তির আর্থিক সাহায্যে তিনি মাধ্যমিক, স্নাতক এবং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৫২ সালে আইন ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। তিনি সোনোয়াল জনগোষ্ঠীর এম. এ. পাশ করা দ্বিতীয় এবং বি. এল. ডিগ্রীধারী তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচনে ডিব্রুগড় লোকসভা সমষ্টির থেকে জয়লাভ করে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আশির দশকে অসমে বিধানসভায় প্রবেশ করে বিধানসভার নির্বাচনে তিনি দুলিয়াজান সমষ্টি থেকে জনতা দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অসম বিধানসভায় নির্বাচিত হন। তিনি গুয়াহাটি হাইকোর্টে ওকালতি করেছিলেন, তিনি ছিলেন সোনোয়াল কছারি গোষ্ঠীর একমাত্র অ্যাডভোকেট।

প্রশ্ন ৫। ঠেঙাল কছারিরা পৌরাণিক কোন গোষ্ঠী থেকে এসেছে?

উত্তরঃ ঠেঙাল কছারিরা মঙ্গোলীয় প্রজাতির বোড়ো গোষ্ঠীর পূর্ব শাখা থেকে এসেছে।

প্রশ্ন ৬। ঠেঙাল কছারিদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে অনুমান করা যায় যে অসমের উজানি অঞ্চলের শদিয়ার থেকে দৈয়াং ধনশিরি উপত্যকা এবং নগাঁও পর্যন্ত ঠেঙাল কছারির বংশসমূহের অবস্থান ছিল। ঐতিহাসিক পাকচক্র এবং অর্থনৈতিক কারণগত তাঁরা অসমের বিভিন্ন প্রান্তের ব্রহ্মপুত্রের উত্তর এবং দক্ষিণ পারে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান যোরহাট জেলা থেকে নাগাপাহাড় পর্যন্ত তিতাবরকে কেন্দ্র করে ঠেঙাল কছারিগণ বসতি স্থাপন করেছে। গোলাঘাট জেলার ধনসিরি নদীর পারের ঠেঙাল গ্রাম পঙ্কা, মরঙি, বুঢ়াগোহাই ঘাট, সরপথার, বরপথার, সাউদাংপথার, গমারি, কার্বি আংলং জেলার কলিয়নী, নাজিরা, ডিব্রুগড়ের নাহরনি, সোনাপুর, কৃষ্ণপুর, ঢেকিয়াজুলি, ধেমাজি, গোগমুখ, নাহরবারি, পানিগাঁও, জোনাই ইত্যাদি স্থানে ঘনবসতিপূর্ণ ঠেঙ্গাল কছারির গ্রাম আছে।

প্রশ্ন ৭। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

(ক) লৌহপ্রাণ গিরিধর ঠেঙাল। 

(খ) কমল কছারি।

উত্তরঃ (ক) লৌহপ্রাণ গিরিধর ঠেঙাল – অসমের আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে যে সমস্ত খিলঞ্জিয়া ব্যক্তি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন গিরিধর ঠেঙাল তাদের অন্যতম। জোরহাট জেলার তিতাবর মহকুমার অন্তর্গত ঠেঙাল মৌজার উলুতলি গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে ১৯২১ সালে ১২৬ জানুয়ারি গিরিধর ঠেঙাল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ছিল জিলিরাম ঠেঙাল এবং মাতার নাম ছিল কান্দুরি ঠেঙাল। শৈশবে মাতৃহারা গিরিধর ঠেঙাল জ্যাঠাইমার কাছে মানুষ হন। যোরহাটের সরকারি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে জগন্নাথ বরুয়া কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন। ১৯৫২ সালে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি. এল. ডিগ্রী লাভ করেন।

শিক্ষক হিসাবে গিরিধর ঠেঙালের কমজীবন শুরু হয়। শিক্ষাজগৎ থেকে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন-এর সাথে জড়িয়ে পড়েন। জালুকনিবারী উচ্চবিদ্যালয়, তিতাবর নন্দনাথ শইকিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তাঁর নাম উল্লেখযোগ্য।

(খ) কমল কছারি – যোরহাটের তিতাবর মহকুমার ঠেঙাল মৌজার মরধলি কছারি গ্রামে এক কৃষক পরিবারে কমল কছারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল উনিরাম কছারি, মায়ের নাম সরু আইতি কছারি। জীবিকার কর্মসূত্রে তিনি শিবসাগর জেলার নাজিরায় বাস করতেন। একাধারে তিনি ছিলেন ভাস্কর্য শিল্পী, চিত্রশিল্পী, বেতার শিল্পী। তিনি অসমের নিয়মিত পত্রিকা ‘প্রতিধ্বনি’, ‘অসমবাণী’, ‘নীলাচল’, ‘অগ্রদূত’, ‘সাদিন’, ‘প্রতিদিন’-এর নিয়মিত লেখক ছিলেন। সংগীত, কবিতা, নাটক রচনা করা ছাড়াও তিনি ফেস্টুন, প্রচ্ছদ তৈরি করতেন। অসম সাহিত্য সভা তাকে “বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা বঁটা” প্রদান করে। শিবসাগর সাহিত্য সভা কমল কছারিকে “কবি কমল কছারি সাহিত্য বঁটা” প্রদান করে।

দরদি কবি কমল কছারি ৬৫ বছর বয়সে ২০১৩ সালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top