Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম

Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম and select needs one.

SEBA Class 10 Boichitromoi Assam | বৈচিত্রময় অসম

Join Telegram channel

Table of Contents

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Boichitromoi Assam in Bengali | বৈচিত্রময় অসম These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Boichitromoi Assam বৈচিত্রময় অসম for All Subject, You can practice these here…

তিওয়াগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। ভাষিক দিক থেকে তিওয়ারা কোন শাখার লোক?

উত্তরঃ ভাষিক দিক থেকে তিওয়ারা ইন্দো-চীনের অন্তর্গত তিব্বত-বর্মীয় ভাষাগোষ্ঠী পরিবারের বৃহত্তর শাখা “বোড়ো” শাখার লোক।

২। তিওয়াদের উৎসব পার্বণে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্য-যন্ত্রের নাম লেখো।

উত্তরঃ তিওয়াদের উৎসব পার্বণে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্য-যন্ত্রের নাম হল – খ্রাম্ বার, থ্রাম খুজুরা, থ্রাম পাঙ্গাই, দুম্‌দিং, দগর্, পাতিঢোল চামড়ার বাদ্য, বাঁশের চিয়ারি দিয়ে তৈরি বাফাং খ্রাম, মুখে ফু দিয়ে আঙুল ব্যবহার করে বাজানো বাঁশি, মোষের শিং এর পেঁপা, মুহুরি এবং খায়াং।

৩। তিওয়া সমাজে “জেলা” বলতে কাকে বোঝায়?

উত্তরঃ তিওয়া সমাজে খেলার প্রশাসনিক ও সামাজিক মুরব্বিকে সমতলে ‘‘জেলা” বলা হয়।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

৪। তিওয়াদের কয়েকটি উৎসবের নাম লেখো।

উত্তরঃ তিওয়াদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রটি খুবই সমৃদ্ধ। স্নেহ, ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধের বিরল দৃষ্টান্ত “জোনবিল” মেলা। পার্বত্য অঞ্চলের বানছুয়া, ছত্রা, রালিং, মুইনারি, লাংখন, খালা ইত্যাদি বিভিন্ন উৎসব পালিত হয় এবং সমতল অঞ্চলে জোনবিল মেলা, বরত, বহাগ বিহু, মাঘ বিহু এবং কাতি বিহু পালিত হয়।

৫। “ফুলগুরির ধেঁওয়া” কী?

উত্তরঃ “ফুলগুরির ধেঁওয়া” হল মহিলাদের নেতৃত্বে সংঘটিত হওয়া অসমের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ।

৬। সংক্ষেপে টীকা লেখো।

(ক) ইন্দ্রসিং দেউরি। 

(খ) বলাইরাম সেনাপতি।

উত্তরঃ (ক) ইন্দ্রসিং দেউরি – তিওয়া জনজাতির মধ্যে জাতীয় চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে আজীবন সংগ্রাম করা অন্যতম ব্যক্তি হল ইন্দ্রসিং দেউরি। ১৯৩২ সালে কাৰ্বি আংলং জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের রংখৈপার-এ তাঁর জন্ম হয়েছিল। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে অর্থাভাবে তাঁর বিদ্যাশিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ির আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য তিনি পশুপালন বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন। কার্বি আংলং জেলার তিওয়াদের অন্ধবিশ্বাস দূর করার জন্য থারাখুঞ্জি গ্রামে “তিওয়াসা মিশন” নামে এক সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্ম দেন এবং গ্রামগুলোতে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছিলেন।

ইন্দ্রসিং দেউরি তিওয়া সাহিত্য-সংস্কৃতির ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তাঁর রচিত “তিওয়া তসিমা” গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে তিওয়ারা গ্রহণ করেছেন।

ইন্দ্রসিং দেউরি মহাশয় তিওয়া জাতীয় জীবনের একজন কাণ্ডারি স্বরূপ। তিনি একাধারে সংগঠক, সমাজ সচেতক, সমাজ সংস্কারক, লেখক, গীতিকার, সুরকার এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। পাহাড়ের তিওয়ারা ইন্দ্রসিং দেউরিকে ‘ফ পরৈ’ (জাতির পিতা) বলে সম্বোধন করতেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ২০ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়।

(খ) বলাইরাম সেনাপতি – বলাইরাম সেনাপতি অসমিয়া সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক ও সংস্কৃতি সাধক ছিলেন। নগাঁও জেলার ইতিহাসপ্রসিদ্ধ বারপূজিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বগারাম সেনাপতি ও মাতা পদ্মেশ্বরী বরদলৈ। তিনি মধ্য ইংরাজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করতেন। “মিকির পাহাড়ত কি ঘটিছে (মিকির পাহাড়ে কী ঘটেছে) নামক “রামধেনু” তে প্রকাশিত প্রবন্ধটি রচনা করার জন্য সরকারী রোষাগ্নিতে পড়েন এবং বরথল থেকে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসেন। তারপর তিনি কৃষিকার্যে মনোনিবেশ করেন। তিওয়াদের সঙ্গীতচর্চার জন্য তিনি এক পদ্ধতিতে অনুশীলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । তিওয়া লোকগীতির স্বরলিপি এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিওয়া জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য “তিওয়া কৃষ্টি সন্থা” গঠনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অসমিয়া ভাষায় বহুসংখ্যক সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছিলেন। তিনি “রামধেনু” পত্রিকায় লেখার পর অসমিয়া সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে পরিচিতি লাভ করেন। “রামধেনু”-তে লেখা তাঁর তিওয়াদের “রাতিসেক” বিষয়ক প্রবন্ধ অসমিয়া সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। বলাইরাম সেনাপতি রচিত গীতি আলেখ্য গুয়াহাটি বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল। আকাশবাণীতে তাঁর রচিত গীতি আলেখ্যগুলো হল-নগরে নরোত্তম গোঁসাই শ্রীরাম, ফুলগুরির ধেওয়া, তিওয়া সমাজ সংস্কৃতি হারানো দিনের সুর এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী গীত।

সাহিত্য জগতে অবদানের জন্য অসম সরকার তাঁকে সাহিত্যিক পেনশন প্রদান করেন।

২০১৪ সালের ১১মে এই মহান ব্যক্তি ইহলীলা সম্বরণ করেন।

দেউরিগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। দেউরিদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?

উত্তরঃ দেউরিদের আদি বাসস্থান অসম, তথা পূর্বাঞ্চলের উত্তর-পূর্ব দিকে ছিল। ব্রহ্মপুত্রের উজান অংশে বর্তমান অরুণাচল প্রদেশের লোহিত জেলার অন্তর্গত জৈদাম পাহাড়ে দেউরিদের বসবাস ছিল।

২। দেউরিগণ সামাজিক ভাবে কয়টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত এবং কী কী উল্লেখ করো।

উত্তরঃ দেউরিগণ সামাজিকভাবে চারটি গোত্রে বিভক্ত। 

(১) ডিবঙিয়া।

(২) টেঙাপনিয়া।

(৩) বরগঞা।

(৪) পাটরগঞা।

৩। শদিয়া থেকে প্রব্রজিত হয়ে দেউরিরা প্রথমে অসমের কোন কোন জেলায় বসবাস করতে শুরু করেন? বর্তমান অসমের কয়টি জেলায় তাঁরা বসবাস করেছেন?

উত্তরঃ শদিয়া অঞ্চলেই দেউরিগণ বহু বছর ধরে বসবাস করছিল। সম্ভবত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ-বিগ্রহ অথবা উর্বরা কৃষিভূমির সন্ধানে শদিয়া ছেড়ে মাজুলি এবং ডিক্রং নদীর তীরে বাস করতে আরম্ভ করে। দেউরিরা উজান অসমের ৮টি জেলা—তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, জোরহাট, ধেমাজি, মাজুলি, লখিমপুর ও বিশ্বনাথ জেলায় রয়েছে।

৪। দেউরিগণ নিজেদের কী বলে পরিচয় দেন?

উত্তরঃ দেউরিগণ নিজেদের “জিমচণায়া” বলে পরিচয় দেন।

৫। দেউরি ভাষা তিব্বত-বর্মী ভাষা গোষ্ঠীর কোন ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত? কোন সালে দেউরি ভাষাকে অসম সরকার সরকারি ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেন?

উত্তরঃ দেউরি ভাষা মূলত চীন-তিব্বতীয়া ভাষাগোষ্ঠীর তিব্বত বর্মীয় ভাষা পরিবারের বোড়ো শাখার অন্তর্গত। ২০০৫ সালের ২৮ জানুয়ারিতে অসম সরকার দেউরি ভাষাকে সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেয়।

৬। দেউরিদের দ্বারা পালিত চারটি জাতীয় উৎসবের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ দেউরিগণ অসমের প্রধান তিনটি জাতীয় উৎসব রঙালি বিহু, মাঘ বিহু, কাতি বিহু পালন করে থাকে। তদুপরি তাঁদের স্বতন্ত্র জাতীয় উৎসব যেমন কৃষি ভিত্তিক উৎসব বিবা, বচু, গিবা, মেচ্চু পালন করে থাকে।

৭। দেউরিরা কোন ধর্মে বিশ্বাসী?

উত্তরঃ দেউরিরা পরম ধর্মবিশ্বাসী। তাঁরা কুন্দি ধর্মে বিশ্বাসী। “কুন্দিমামা” হল তাদের উপাস্য দেবতা। “কুন্দি” অর্থ পরমপুরুষ এবং মামা অর্থ প্রকৃতি। দেউরিগণ কুন্দিমামাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ও পালন কর্তা বলে বিশ্বাস করে।

৮। সংক্ষেপে টীকা লেখো।

(ক) ভীমবর দেউরি। 

(খ) রাধাকান্ত দেউরি। 

(গ) বর্গরাম দেউরি।

(ঘ) শ্রীচন্দ্রসিং দেউরি।

(ক) ভীমবর দেউরি – ১৯০৩ সালে মে মাসের ১৬ তারিখ ভীমবর দেউরি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গদরাম দেউরি, মায়ের নাম বাজতি দেউরি। তিনি শিবসাগর সরকারী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাঁচটি বিষয়ে লেটার নম্বরসহ উত্তীর্ণ হন। গুয়াহাটী কটন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৩২ সালে ডিব্ৰুগড় আদালতে ওকালতি আরম্ভ করেন। তিনি Assam backward plains tribal league-এর জন্ম দেন। অসম বিধানসভার মোট ১০৮টি আসন থেকে ৪টি আসন অনগ্রসর সমতলের জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত হয়।

তিনি রঘুনাথ ব্রহ্মের কন্যা কমলাবতীকে ব্রাহ্ম মতে বিবাহ করেন। কোকরাঝাড়ের বাঁশবাড়ি গ্রামে তাঁর বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। ভীমবর দেউরিকে গোপীনাথ বরদলৈর কংগ্রেস মন্ত্রীসভার সদস্য করা হয়েছিল। দেশে বহিরাগত প্রব্রজন রোধ, প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষণ, স্বায়ত্ব শাসন, বিধান পরিষদ গঠন আদি নিজের বিচক্ষণতার দ্বারা সামাজিক জীবন পরিচালিত করেছিলেন।

১৯৪৭ সালের ৩০ নভেম্বরে ৪৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

(খ) রাধাকান্ত দেউরি – ১৯৩১ সালের জুন মাসের ১ তারিখ রাধাকান্ত দেউরি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আদিসন দেউরি মাতার নাম ছিল তাইবা দেউরি। সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে অভাবের সংসারে তিনি বড় হয়েছিলেন। বহু কষ্টের মধ্যেও পড়াশুনায় মনোযোগ অক্ষুণ্ণ রেখে সুখ্যাতি সহকারে মাধ্যমিক পাস করেছিলেন। বি.এ. ডিগ্রী লাভ করার পর শিবসাগর উচ্চতর বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষকতার কাজ করেন।

জনগোষ্ঠী অসমীয়া ভাষা সাহিত্য ক্ষেত্রে রাধাকান্ত দেউরির অবদান অসীম। তিনি ছিলেন মিতভাষী দেউরি ভাষা সংস্কৃতির গবেষক পণ্ডিত। অসমীয়া ভাষা সাহিত্যে দেউরিদেবের গ্রন্থসমূহ “দেউরি চুবিব, চ্চিবাঁ জিম্‌চায়া চুবির” দুটি প্রধান। তাঁর অন্যতম সংযোজিত গ্রন্থ হল “দেউরি শব্দভাণ্ডার”।

(গ) বর্গরাম দেউরি – সমাজ সেবক ও রাজনীতিক বর্গরাম দেউরি ১৯৩৮ সালের ১ আগস্ট তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাধ্যমিক পাস করে বি. এস. সি. পাস করেন। এম. এস. সি এবং এল. এল. বি. একই সময়ে পড়াশুনা করে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। গুয়াহাটী কামরূপ একাডেমী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। তিনি বঙ্গালমারা পঞ্চায়েত থেকে কাউন্সিলার হিসাবে এবং বিহপুরিয়া সমষ্টি থেকে অসম বিধানসভায় নির্বাচিত হন। বাহগুঁড়া দেউরি গ্রামে পশুচিকিৎসালয় নির্মাণ করেছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

(ঘ) শ্রীচন্দ্রসিং দেউরি – চন্দ্রসিং দেউরি লোকশিল্পী এবং দেউরি লেখক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ১৯২৭ সালের ২৮ এপ্রিল জোরহাটে শ্রীচন্দ্রসিং দেউরির জন্ম হয়। পিতার নাম গোপাল দেউরি মাতার নাম আতবা দেউরি। জোরহাট পলিটেকনিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে সুনামের সঙ্গে হাইস্কুল শিক্ষান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ভারত সরকারের অধীনে অনুসূচিত জাতি এবং জনজাতি বিভাগে তৃতীয় বর্গর কর্মচারী হিসাবে যোগদান করেন এবং অধীক্ষক হিসাবে চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। লেখক হিসাবেও তিনি কিছু গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন।

নেপালিভাষী গোর্খাগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। নেপালি বা গোর্খা জনগোষ্ঠীর মানুষ কোন কোন নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের সংমিশ্রণ?

উত্তরঃ নেপালিভাষী গোর্খা জনগোষ্ঠীর মানুষ আর্য-মঙ্গোল-কিরাত এই তিনটি নৃ-গোষ্ঠীর সংমিশ্রণ।

২। লাল মোহরীয়া পাণ্ডা বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের মতে কামাখ্যা মন্দিরের নির্মাতা ও প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা নরক বর্তমান নেপালের চুনচারি জেলার বরাহ ক্ষেত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি কামাখ্যা মন্দিরে পূজো করানোর জন্য নেপাল থেকে পূজারি এনেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁরাই কামাখ্যা মন্দিরে “লাল মোহরীয়া” পাণ্ডা নামে খ্যাত হন।

৩। অসম প্রদেশ কংগ্রেশ কমিটির প্রথম সভাপতির নাম লেখো।

উত্তরঃ ছবিলাল উপাধ্যায় অসম প্রদেশ কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি।

৪। “ট্রাইবেল বেল্ট অ্যান্ড ব্লকে” নেপালীভাষীগণ কত সালে “সংরক্ষিত শ্রেণি” র মর্যাদা লাভ করেছিল?

উত্তরঃ গোপীনাথ বরদলৈ-এর মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময়ে ১৯৪৭ সালে গঠন করা “ট্রাইবেল বেল্ট এবং ব্লকে” নেপালীভাষী মানুষরা অন্যান্য জাতির মতো “সংরক্ষিত” শ্রেণির মর্যাদা পেয়েছিল।

৫। রতিকান্ত উপাধ্যায় কে ছিলেন? এবং তিনি কোথায় সত্ৰ স্থাপন করেছিলেন?

উত্তরঃ অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি তীর্থনাথ শর্মার মতে রতিকান্ত উপাধ্যায় শ্রীমন্ত শংকরদেবের শিষ্য ছিলেন। তিনি পোন্ধর শতিকার লোক ছিলেন।

রতিকান্ত উপাধ্যায় বর্তমান টিয়ক এবং নগাঁও-এ নেপালি সত্ৰ স্থাপন করেছিলেন।

৬। গোর্খা সম্প্রদায়ের মুখ্য উৎসবগুলি কী কী?

উত্তর। গোর্খা সম্প্রদায়ের মুখ্য উৎসবগুলি হল—“তীজ”। তীজ উৎসব মহিলাগণ পালন করে থাকে। পারিবারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা উৎসব হল “বড়া দলৈ” এবং ভাতৃ-ভগ্নীর প্রেমের উৎসব হল “তিহার”।

৭। “জম্বুদ্বীপে, আর্যাবর্তে, ভারতবর্ষে, অসমপ্রান্তে”—এই উক্তিটির তাৎপর্য কী?

উত্তরঃ মহাভারতের সময় থেকেই অসম এবং নেপালের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল। তখন অঞ্চলটি “জম্বুদ্বীপ” বা “আর্যাবর্ত” নামে পরিচিত ছিল। “জম্বুদ্বীপে” আর্যাবর্তে, ভারতবর্ষে, অসমপ্রান্তে অসমের নেপালীভাষী লোকেরা বাৎসরিক পিতৃশ্রাদ্ধে পিণ্ডদান করার সময় মন্ত্রের সঙ্গে নিজ ঠিকানা উল্লেখ করে দিত।

৮। সুগৌলি সন্ধি কখন হয়েছিল? এই সন্ধি অনুযায়ী কোন দেশের ভূ-ভাগ ও জনসমষ্টি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল?

উত্তরঃ সুগৌলি সন্ধি ১৮১৫-১৬ সালে হয়েছিল। এই সন্ধিতে নেপালের নাগরিক সহ ভারতের উত্তরাংশে নেপালের বহু ভূ-ভাগ ভারতে বিলীন হয়েছিল, সুগৌলি সন্ধির পর ব্রিটিশ সরকার গোর্খা রেজিমেন্ট গঠন করেছিল।

৯। সংক্ষেপে টীকা লেখো।

(ক) ছবিলাল উপাধ্যায়। 

(খ) হরিপ্রসাদ গোর্খা রাই। 

(গ) দলবীর সিং লোহার।

(ক) ছবিলাল উপাধ্যায় – বিশ্বনাথ জেলার বুড়িগাঙে ১৮৮২ সালের ১২ মে ছবিলাল উপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। ছবিলাল উপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে যোরহাটে অনুষ্ঠিত সভায় ‘অসম এসোশিয়েশন”-কে অসম কংগ্রেস কমিটিতে রূপান্তরিত করা হয়। তিনি অসম কংগ্রেস কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী অসমে এসেছিলেন। ছবিলাল উপাধ্যায় মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চলা অসহযোগ আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবীরূপে যোগদান করে কারাবাস করেছিলেন। জেল থেকে বের হয়েই তিনি বিদেশী দ্রব্য বর্জন সূচীতে অংশ নেন এবং সর্বপ্রথম নিজের ঘরের বিদেশী দ্রব্য আগুনে পুড়িয়ে দেন। বর্তমানে অসম সরকার গুয়াহাটীতে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছবিলাল উপাধ্যায়ের প্রতিমূর্তি স্থাপনের প্রস্তুতি চালাচ্ছে।

(খ) হরিপ্রসাদ গোর্খা রাই – নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমাতে ধনরাজ রাই ও যশোদা রাইয়ের সন্তানরূপে ১৯১৫ সালের ১৫ মার্চ হরিপ্রসাদ রাই জন্মগ্রহণ করেন। অসম সাহিত্য সভার প্রথম সভাপতি পদ্মনাথ গোহরি বরুয়ার সান্নিধ্যে সাহিত্য জগতে পা রাখেন। তিনি ধনবাহাদুর সোনার এবং গোবিন্দ চন্দ্র পৈরার সহযোগে অসম সাহিত্য সভার কোহিমা শাখা গঠন করেন। তিনি অসমীয়া ভাষায় রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। অসমীয়া এবং নেপালি উভয় ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করে সমন্বয় ও সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। হরিপ্রসাদ রাইয়ের সঙ্গে “গোর্খা” শব্দ সংযোজনের প্রধান মানুষটি ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক মিত্রদেব মহন্ত।

(গ) দলবীর সিং লোহার – ১৯১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি ডিব্রুগড়ের খলিয়ামরিতে দলবীর সিং জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সেই দলবীর সিং লোহার জাতীয় আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগদান করেন। কুখ্যাত কার্নিহাম সার্কুলারের বিরোধিতা করে তিন মাস কারাবাসে ছিলেন। ১৯৪৬ সালে দলবীর সিং লোহার শ্রমিক ও অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে তিনসুকিয়া থেকে বিধান সভায় নির্বাচিত হন। তিনি অসমের নেপালীভাষীর প্রথম বিধায়ক ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বোড়োগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। বোড়ো ভাষা কোন জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত?

উত্তরঃ বোড়ো ভাষা চীনা-তিব্বত-বর্মীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

২। বোড়ো ভাষা কবে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল?

উত্তরঃ বোড়ো ভাষা ১৯৬৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল।

৩। বোড়োদের সম্পর্কে লিখিত দুখানি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ বোড়োদের সম্পর্কে দুখানি গ্রন্থের নাম হল – 

(ক) গংগাচরণ কছারীর “বোড়ো ফিছা ও আইন” 

(খ) চিত্তরঞ্জন মুসাহারীর ‘‘ফৈমাল মিজিংক”।

৪। বোড়ো ভাষার প্রথম গ্রন্থটির নাম কি?

উত্তরঃ বোড়ো ভাষার প্রথম গ্রন্থটির নাম গংগাচরণ কছারীর “বোড়ো ফিছা ও আইন”।

৫। বোড়োদের সাজপোশাকে ব্যবহৃত কয়েকটি উপকরণের নাম লেখো?

উত্তরঃ বোড়োদের সাজপোশাকে ব্যবহৃত উপকরণগুলো হল—দাওথু, আগান, ফারেও, মেগন, মুফুর, আফা, দাওরাই, মৌবে ইত্যাদি।

৬। সংক্ষেপে টীকা লেখো ।

(ক) ওস্তাদ কামিনি কুমার নার্জারি। 

(খ) শোভা ব্রহ্ম। 

(গ) বিনেশ্বর ব্রহ্ম।

(ক) ওস্তাদ কামিনি কুমার নার্জারি – রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কামিনি কুমার নার্জারি ১৯২৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বজারাম নার্জারি মাতার নাম থাংগালি নার্জারি। তিনি দিল্লীতে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া রেডিওর মুক্ত প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিয়ের গান পরিবেশন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বোড়ো নৃত্য রাজ্যিক পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। তিনি “সংগীত নাটক একাডেমী” পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর সাংস্কৃতিক দল গুয়াহাটী রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত জনজাতি লোক-নৃত্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। তাঁর প্রচেষ্টায় বোড়ো সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই মহান শিল্পী ১৯৯৮ সালের ১৬ তারিখে ইহলীলা সম্বরণ করেন।

(খ) শোভা ব্রহ্ম – কলা জগতের প্রখ্যাত শিল্পী শোভা ব্রহ্ম ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভাস্কর্যবিদ। তিনি অসমের কলা জগতের পথ প্রদর্শক। কোকরাঝাড়ের গোসাইগাঁও-এর ভূমক নামক গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরিচরণ ব্রহ্ম, মাতার নাম দেবশ্রী ব্রহ্ম। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যাশিক্ষা শেষ করে তিনি গুয়াহাটী মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর্য শিল্পী হবার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি বোলপুরের শান্তিনিকেতন থেকে সুখ্যাতির সঙ্গে শিল্পকলায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। চরম অর্থাভাব সত্ত্বেও তাঁর শিল্পধারার সৃষ্টি নিরলসভাবে চালিত করেন। তিনি নিজের জীবনের আনন্দকে জলাঞ্জলি দিয়ে নব-প্রজন্মের জন্য অক্লান্ত কাজ করেছিলেন।

চিত্রভাস্কর্য ছাড়াও তিনি সাহিত্য সৃষ্টিতেও পারঙ্গম ছিলেন। চারুকলা এবং কলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি সাহিত্য রচনায় নিমগ্ন হন। তিনি নিজ কর্মরাজির জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। তিনি অসম সরকারের সাংস্কৃতিক পেনসন পুরস্কার, কমল কুমারী বরুয়া ফাউণ্ডেশন পুরস্কার, অসম রাজ্য বিষ্ণুরাভা পুরস্কার পেয়েছিলেন। কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি পেয়েছিলেন। তিনি ২০১২ সালের ৫ মার্চ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

(গ) বিনেশ্বর ব্রহ্ম – বিনেশ্বর ব্রহ্ম ১৯৪৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতমারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তারামনি ব্রহ্ম এবং মাতার নাম সোনটি ব্রহ্ম। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চতর বিদ্যালয় থেকে এম. ই. খণ্ডে বৃত্তি লাভ করে অসম কৃষি মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। হিন্দুস্থান সার নিগমের সার সম্প্রসারণ এবং কৃষি গবেষণা বিভাগে চাকরি জীবন আরম্ভ করেন।

শহিদ বিনেশ্বর ব্রহ্ম একজন তীব্র মেধাবী, সুচিন্তক, সমাজসেবক, সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি বোড়ো, ইংরাজি, অসমিয়া, বাংলা, হিন্দি, নেপালি, ভোজপুরি এবং রাজবংশী ভাষা বলতে পারতেন। তিনি বোড়ো সাহিত্য সভার সভাপতি ছিলেন। ২০০০ সালে ১৯ আগস্ট গুয়াহাটির ভেটাপাড়ায় নিজ বাসভবনে অচেনা আততায়ীর গুলিতে বিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করেন।

মটকগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। মটক শব্দের অর্থ লেখো।

উত্তরঃ মটক শব্দের অর্থ হল জ্ঞানী শক্তিশালী পণ্ডিত লোক।

২। মটক শব্দটির উৎপত্তি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তরঃ “ফুখাও” শব্দের থেকে মটক শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ফুখাও টাইদের একটি অন্যতম শাখা। “ফু”-এর অর্থ সম্মানিয় ব্যক্তি এবং “খাও”-এর অর্থ সাদা। ফুখাইরা চীন দেশের লাও রাজ্যে বসবাস করার জন্য লাও নামে পরিচিত। ফুখাইরা তিনটি ভাগে বিভক্ত। অহোম ইতিহাস অনুযায়ী ফুখাওরা বীজ রোপণ বা শস্য রোপণ মূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। শস্য বপনকারী মূলের ফুখাওদের থেকেই মটকের উৎপত্তি হয়েছে।

৩। মটকরা সাধারণত কোন ধর্মের লোক?

উত্তরঃ মটকদের পরম্পরাগত ধর্ম হচ্ছে তাও। তাঁরা প্রকৃতিজগতের শক্তিমান দেবতার পূজা করেন। সপ্তদশ শতকে গোপালদেবের শিষ্য অনিরুদ্ধ দেবের প্রচারিত মায়ামরা বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

৪। মটকদের সঙ্গে মোয়ামরিয়া বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তরঃ মোয়ামরিয়া বিদ্রোহের প্রধান নেতা মটকদের উপর অত্যাচার চালিয়েছিল। বিদ্রোহী নেতাদের খুঁজে না পাওয়ায় সাধারণ নিরপরাধী মানুষকে বন্দী করে কারাগারে রেখেছিল। সেই সময়ের মটকদের নেতা মোয়ামরিয়া বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সর্বানন্দই সাংগঠনিক দক্ষতার সঙ্গে কারাগারের ভিতরে এবং বাইরে সকল মটকদের মনোবল বৃদ্ধি করেছিল।

৫। মটক রাজ্যের উন্নতিকল্পে সর্বানন্দ সিংহের করা জনকল্যাণমূলক কাজ সমূহের একটি বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ মটকরাজ্যের উন্নতির জন্য সর্বানন্দ সিংহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে রাস্তাঘাট নির্মাণ করিয়েছিলেন। প্রজাদের সুবিধার্থে রাজধানীর বাইরে চব্বিশটি পুকুর তৈরি করিয়েছিলেন। পুকুরের মধ্যে তিনকোণীয়া পুকুর, দেবী পুকুর, বড় পুকুর, গোধা পুকুর প্রধান। সর্বানন্দের তৈরি তিনকোণীয়া পুকুরের নাম অনুযায়ী পরবর্তীকালে বেংমরা নগরটির নাম হয় তিনসুকিয়া।

৬। সংক্ষেপে টীকা লেখো ।

(ক) শিক্ষাবিদ পবন নেওগ। 

(খ) রাজকুমার লঙ্কেশ্বর গোঁহাই। 

(গ) সর্বানন্দ সিংহ।

(ক) শিক্ষাবিদ পবন নেওগ – ১৯৩৩ সালের ১৮ অক্টোবর তিনসুকিয়ার বগুরিতে পবন নেওগ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আসাম্বর নেওগ এবং মাতার নাম গোলাপী নেওগ। মাতৃ বিয়োগের পর মাসি মুহীলা নেওগের কাছে তিনি প্রতিপালিত হন। তিনি ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি যোরহাট জে. বি. কলেজে ভর্তি হন এবং গুয়াহাটী কটন কলেজে স্নাতক শিক্ষা অধ্যয়ন আরম্ভ করেন। আন্তঃমহাবিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় শরীরচর্চা বিভাগ প্রতিযোগিতায় তিনি Mr. Cottonian উপাধি পেয়েছিলেন।

তাঁর মনোবল ও সাহস ছিল অপরিসীম। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খুব স্নেহ করতেন। বরগুড়িতে স্থাপিত আর্ট স্কুলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০০২ সালের আগস্ট মাসের ১১ তারিখ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

(খ) রাজকুমার লঙ্কেশ্বর গোঁহাই – বেংমরা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাপক রাজা স্বৰ্গদেউ সর্বানন্দ সিংহের প্রপৌত্র ছিলেন। রাজকুমার লঙ্কেশ্বর গোঁহাই আনুষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও তিনি ছিলেন সাহসী উচ্চকাঙ্ক্ষী ও চিন্তাশীল ব্যক্তি। তিনি স্থানীয় জাতি-জনগোষ্ঠীর ভূমি-সম্পত্তি ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য বেংমরা রাজ্যের পৃথক স্বীকৃতি দাবি করেছিলেন। তিনি অরুণাচল প্রদেশে কাঠের মিল খুলেছিলেন। তাছাড়া তিনি হাতি ও সোনার ব্যবসা করেছিলেন। তিনি ব্রহ্মদেশের রাজার সঙ্গে মিত্রতা করে হাতি ধরতেন। একসঙ্গে পঞ্চাশটা হাতি ধরে আনার নিদর্শনে তাঁর সাহসিকতা বিরল। মণিপুরের রাজাকে বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসাবে দুটো হাতি উপহার দিয়েছিলেন। সিকিমের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি বার্মিজ, মণিপুরি, সিংফৌ, খামতি, মিসিং ইত্যাদি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি নিজের রাজ্য ছাড়াও মণিপুর, অরুণাচল, সিকিম, নাগাল্যাণ্ড, মেঘালয় অঞ্চলের সমাজকর্মীদের সঙ্গে জনহিতকর উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

(গ) সর্বানন্দ সিংহ – সর্বানন্দ সিংহের পিতা ছিলেন মরুনন্দন এবং মাতা ছিলেন পাতয়। পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান সর্বানন্দ শৈশবেই মাতাকে হারান। মাতা হারা সর্বানন্দকে তার পিতা সযত্নে বড় করে তুলেছিলেন। সর্বানন্দের পিতৃ-প্রদত্ত নাম ছিল “মেজেরা”।

মেজেরা ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি। তিনি মায়ামরা ধর্মগুরু অষ্টভুজ গোঁসাই-এর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। সর্বানন্দ রেংমরায় রাজ্য স্থাপন করে নিজেকে স্বাধীন রাজা বলে ঘোষণা করেছিলেন। সর্বানন্দ সিংহ টাই পরম্পরা অনুযায়ী স্বৰ্গদেউ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজ নামে সোনারূপার মুদ্রা নির্মাণ করেছিলেন। মটক রাজ্যের উন্নতির জন্য তিনি যাতায়াত ব্যবস্থার সুব্যবস্থা করেছিলেন। প্রজাদের সুবিধার জন্য রাজধানীর বাইরে চব্বিশটি পুকুর তৈরি করেছিলেন। সর্বানন্দ একজন দূরদর্শী ও বিচক্ষণ রাজা ছিলেন। তিনি রাজ্যের চারসীমায় পাথরের খুঁটি পুঁতেছিলেন। ১৮০৫ সালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

মরাণগণ

পাঠ্যভিত্তিক প্রশ্ন এবং উত্তরঃ

১। মরাণদের নৃগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্রান্ত তিনটি বাক্য লেখো।

উত্তরঃ মরাণগণ অসমের সু-প্রাচীন কিরাত-মঙ্গোলীয় মূলের একটি জনসমষ্টি। তারা অসম তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের আদিম অধিবাসী। মরাণগণকে অসমের প্রাক-ঐতিহাসিক মানব প্রজাতির এক নির্দিষ্ট জনসমষ্টি রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২। অসম এবং অরুণাচলের কোন কোন জেলায় মরাণদের বসতি অত্যধিক?

উত্তরঃ অসমের তিনসুকিয়া জেলা, ডিব্ৰুগড় জেলা এবং অরুণাচলের নামচাই এবং চালাং জেলায় মরাণদের বসতি বেশি। তদুপরি শিবসাগর, চরাইদেউ, যোরহাট, লখিমপুর জেলাতেও মরাণদের বসতি ছিল।

৩। বুরিঞ্জিতে উল্লেখিত বারোঘর কছারির নাম লেখো।

উত্তরঃ বুরিঞ্জিতে উল্লেখ করা বারোঘর কছারির নাম হল – দময়ে (ডিমাসা), ইনটুহজয় (হোজাই), বিহদয় (বোড়ো), জুহল-লুইরা (বর্ত্তমান তিওয়া), বাদু সোনলয় (সোনোয়াল), ইনটু মিনখয়ঁ (মরাণ), দিউনয় (দেউরি), ইনটু মেচক (মেচ), কুচুবয় (কোচ), ইনটু গোরোয় (গাড়ো), রাভা কিটকয় (রাভা), বাজু হজয় (হাজং) ইত্যাদি।

৪। মরাণভাষার দশটি শব্দ লেখো।

উত্তরঃ অতীতকালের মরাণভাষার শব্দ হল- দি (জল), সিম (লবণ), মাই (ধান), মাইরুম (চাল), মিয়াম (ভাত), মহণ (মাংস); চান (সূর্য), দান (চন্দ্র), হাটারাই (তারা), মকুহাং (বৃষ্টি)।

৫। মরাণদের ঐতিহাসিক যুগের রাজ্যটির চার সীমার উল্লেখ করো।

উত্তরঃ চাউলুং চুকাফা আসার সময় মরাণদের একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এই রাজ্যের উত্তরে বুড়িদিহিং, দক্ষিণে দিসাং, পূর্বে সফ্রাই এবং পশ্চিমে ছিল ব্রহ্মপুত্র।

৬। মরাণদের ঐতিহাসিক যুগের শেষ রাজার নাম কী ছিল?

উত্তরঃ মরাণদের ঐতিহাসিক যুগের শেষ রাজার নাম ছিল বদৌসা।

৭। মরাণগণ বহাগ বিহু কখন কীভাবে পালন করে থাকেন?

উত্তরঃ মরাণদের প্রধান উৎসব বিহু। প্রাচীনকালে মরাণগণ শদিয়ার কেঁচাইখাতি দেবস্থান-এর সঙ্গে তিনসুকিয়া জেলার মাকুমের যজ্ঞখোবা, দেওশাল চরাইদেউ ইত্যাদিতে শাল পেতে দেবদেবীর পূজা করত। বৈশাখ মাসের প্রথম মঙ্গলবার দেব-দেবীর পূজা অর্চনা করে বিহু শুরু করত এবং মঙ্গলবারে উরুকা, বুধবারে গরু বিহু ও বৃহৎস্পতিবারে মানুষ বিহু সাতদিন, সাত রাত বিহু উদযাপন করত এবং মরাণগণ অন্যান্য অসমিয়া থেকে ভিন্ন ভিন্ন দিন-বারে বিহু উৎসব পালন করত।

৮। মরাণদের দুটি বৃত্তিমূলক, দুটি গুণবাচক এবং দুটি স্থানবাচক খেলার নাম লেখো।

উত্তরঃ মরাণদের মধ্যে বিভিন্ন ক্রীড়ার প্রচলন ছিল । খেলাগুলো বৃত্তিসূচক, স্থানবাচক, গুণবাচক, জাতিবাচক। যেমন—তেলপরা তেলেপিয়া, নাও (নৌকা) নির্মাণকারীদের নাওশালিয়া, চকরি গণতা, কাঁড়িগঞা, দোহোটিয়া। 

(ক) বৃত্তিসূচক হল তেলেপিয়া।

(খ) স্থানবাচক হল হালধিবরীয়া।

(গ) গুণবাচক হল গণতা।

(ঘ) জাতিবাচক হল সৌকাধরা।

৯। মরাণদের জাতীয় চাষ কোনটি?

উত্তরঃ মরাণদের জাতীয় চাষ সুমথিয়া বা কমলা।

১০। মরাণ যুবকদের দায়িত্ব কীরূপ আলোচনা করো।

উত্তরঃ মরাণদের প্রত্যেক গ্রামে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত একজন গাওবুঢ়া থাকে। সঙ্গে প্রয়োজন সাপেক্ষে দুজন বা ততোধিক বরবুঢ়া থাকে। তাদের অধীনে ধর্মীয়, সামাজিক কাজকর্ম, বিচারপ্রক্রিয়া পরিচালিত হয় ৷

১১। কোথায় কোথায় মরাণদের দেবদেবীর পূজাগৃহ রয়েছে?

উত্তরঃ শদিয়ার কেঁচাইখাতি থানের সঙ্গে তিনসুকিয়া জেলার মাকুমের যজ্ঞোখোবা, দেওলাল, চরাইদেউতে মরাণদের দেবদেবীর পূজাগৃহ রয়েছে।

১২। সংক্ষেপে টীকা লেখো।

(ক) সমন্বয়ের জনক কিরাত শৌর্য বদৌসা। 

(খ) বীরাঙ্গনা রাধা রুকুনি।

(গ) বীর সেনাপতি ঝপরা জগধা। 

(ঘ) মোহন শইকিয়া। 

(ঙ) রাঘব মরাণ।

উত্তরঃ (ক) সমন্বয়ের জনক কিরাত শৌর্য বদৌসা – ঐতিহাসিক যুগে মরাণদের রাজা ছিলেন বদৌসা। কলাগুরু বিষ্ণুরাভা রচিত ‘অসমিয়া কৃষ্টি’ শীর্ষক পুস্তিকায় মরাণদের প্রতাপশালী বলে অভিহিত করেছিলেন। এই বরেণ্য গবেষকের ভাষ্যতে বদৌসার শক্তিশালী প্রভাবের কথা উল্লেখ আছে। চাউল্যুঙ চ্যুকাফা অসমে রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবার মানসে মরাণদের সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করেন। রাজা বদৌসার অনুমতি এবং আতিথেয়তায় চ্যুকাফা এবং তার অনুগামীরা বহুকাল মরাণবরহি চুটিয়া সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেছিলেন।

অপুত্রক বদৌসা সুদর্শন যুবক চুকাফার সঙ্গে নিজকন্যার বিবাহ সূত্রে শ্বশুর-জামাই সম্পর্কে বাধা পড়েছিলেন। বদৌসা বৃদ্ধ বয়সে জামাতা চ্যুকাফার হাতে মরাণ রাজ্যের শাসনভার অর্পণ করেছিলেন। চ্যুকাফার মহান কার্যে বদৌসার অপরিসীম অবদান থাকলেও কোনকালেই বদৌসার অবদানের স্বীকৃতি দেয়নি।

(খ) বীরাঙ্গনা রাধা রুকুনি – বিশ্ব ইতিহাসে গণবিপ্লব সমূহের ভিতরে মধ্যযুগের অসমে সংগঠিত মোয়ামরিয়া গণবিপ্লব অন্যতম। গণবিপ্লবে নারীশক্তির সফল যোগদান একটি বিস্ময়কর অধ্যায়রূপে চিহ্নিত হয়েছিল। অহোম রাজত্বের শেষভাগে অহোম রাজতন্ত্র অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়েছিল। রাজতন্ত্রের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কৃষক প্রজা সবাই বিদ্রোহ আরম্ভ করেছিল। প্রজা সাধারণকে সংগঠিত করার জন্য ভাতুকী, ভাবুলী ওরফে রাধা রুকুনি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

মোয়ামরিয়া বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ভাতুকী এবং রাধা রুকুনির সময়েই। রাজলক্ষী সিংহ একবার একটি বড় ঢোল তৈরি করাবার জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে বনে পাঠিয়েছিলেন। রাধা রুকুনি গ্রামের মানুষকে জড়ো করে ‘এই বন স্থানীয় জনগণের আবহমান কালের যুগান্তকারী সম্পদ। এতে রাজার কোনো অধিকার নেই।’ রাজকর্মচারীদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দুই বীরাঙ্গনা নারী যোদ্ধাবাহিনী গঠন করেছিলেন। পদ্মনাথ গোহাঞি বরুয়ার গ্রন্থ থেকে জানা যায় রাধা রুকুনি পুরুষ বেশে তির ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। রাধা রুকুনি খুবই চতুর মহিলা ছিলেন। রণকৌশলের গোপনবিদ্যা জানা ছিল বলে কেউই তাঁকে তীরবিদ্ধ করতে পারেনি। রাজতন্ত্রের ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top