Class 12 Political Science Chapter 6 আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 6 আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ Notes and select needs one.
Class 12 Political Science Chapter 6 আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 6 আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 6 আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ Solutions for All Subjects, You can practice these here.
আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ
Chapter: 6
প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)
প্রশ্ন ১। “যুদ্ধ অপেক্ষা বিজ্ঞ বক্তৃতা অনেক ভালো।” এই মন্তব্যটি কে করেছিলেন?
উত্তরঃ চার্চিল।
প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রসংঘের সনদ স্বাক্ষরকালে কয়টি রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছিল?
উত্তরঃ ৫১টি রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৩। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ বিশ্বশান্তি রক্ষা করা।
প্রশ্ন ৪। বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ১৯৩টি রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৫। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য সংখ্যা _____।
উত্তরঃ ৫টি।
প্রশ্ন ৬। রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান সচিব-প্রধান কে?
উত্তরঃ অ্যান্টোনিও গুতেরেস (পর্তুগালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী)।
প্রশ্ন ৭। IAEA-র সম্পূর্ণ নাম লেখ।
উত্তরঃ International Atomic Energy Agency.
প্রশ্ন ৮। ‘ভেটো’ প্রয়োগ বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ কোন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাধাদান প্রক্রিয়াকে ‘ভেটো’ প্রয়োগ বলে।
প্রশ্ন ৯। রাষ্ট্রসংঘের প্রথম সচিব-প্রধান কে ছিল?
উত্তরঃ ট্রাইগভী লাই।
প্রশ্ন ১০। কোন্ দেশ রাষ্ট্রসংঘের সর্বাধিক খরচের যোগান দেয়?
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২২%)।
প্রশ্ন ১১। কোন্ তারিখটিকে রাষ্ট্রসংঘ দিবস হিসাবে পালন করা হয়?
উত্তরঃ ২৪শে অক্টোবর।
প্রশ্ন ১২। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার প্রথম মহিলা অধ্যক্ষা কে ছিলেন?
উত্তরঃ শ্রীমতি বিজয় লক্ষ্মী পণ্ডিত।
প্রশ্ন ১৩। কোন্ বছর রাষ্ট্রসংঘ শান্তি সৃষ্টির পুঁজি গঠন করেছিল?
উত্তরঃ ২০০৫ সালে।
প্রশ্ন ১৪। ‘বিগ থ্রি’ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্ট্যালিন এই তিনজনকে ‘বিগ থ্রি’ বলে।
প্রশ্ন ১৫। পারিপার্শ্বিকতা কাৰ্যসূচী সম্পৰ্কীয় আন্তঃরাষ্ট্রীয় অভিকরণটির নাম লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ ও বিকাশ কার্যক্রম।
প্রশ্ন ১৬। রাষ্ট্রসংঘের সর্বোচ্চ কার্যবাহীর নাম কি?
উত্তরঃ মহাসচিব।
প্রশ্ন ১৭। শান্তি রক্ষা আয়োগ কখন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তরঃ ২০০৫ সালে।
প্রশ্ন ১৮। ১৯৯৭ সালের খনি নিষিদ্ধকরণ চুক্তির মূল হোতাকারি কে ছিলেন?
উত্তরঃ International Campaign to Bouland Misson নামক একটি বেসরকারি সংস্থা।
প্রশ্ন ১৯। রাষ্ট্রসংঘের সহস্রাব্দ ঘোষণাপত্র কখন অনুমোদিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
প্রশ্ন ২০। একটি এককেন্দ্রিক বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘের প্রাসঙ্গিকতা কি?
উত্তরঃ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এককেন্দ্রিক বিশ্বেও রাষ্ট্রসংঘ প্রাসঙ্গিক।
প্রশ্ন ২১। NGO-সমূহের একটি দুর্বলতা লেখ।
উত্তরঃ NGO-সমূহের দায়বদ্ধতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থাকে না।
প্রশ্ন ২২। ভারত কখন রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালের ৩০ অক্টোবর।
প্রশ্ন ২৩। নিম্নোক্ত উক্তিগুলির পাশে ‘শুদ্ধ’ অথবা ‘অশুদ্ধ’ কথাটি লেখ:
(ক) নিরাপত্তা পরিষদের একমাত্র স্থায়ী সদস্যগণই ভেটো প্রয়োগ করে।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(খ) সাধারণ সভার সদস্যগণ স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য প্রধান অঙ্গসমূহের সদস্য।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(গ) বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বাণিজ্য ও শুল্ক-সংক্রান্ত সাধারণ সমঝোতার উত্তরাধিকার হিসাবে কাজ করছে।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
প্রশ্ন ২৪। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
(ক) রাষ্ট্রসংঘের প্রধান উদ্দেশ্য হল ______।
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(খ) রাষ্ট্রসংঘের সর্ব্বোচ্চ আধিকারিক কে _____ বলা হয়।
উত্তরঃ মহাসচিব।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ______ টি স্থায়ী সদস্য এবং _____ টি অস্থায়ী সদস্য আছে।
উত্তরঃ ৫/১০
(ঘ) ______ হলেন রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান মহাসচিব।
উত্তরঃ অ্যান্টোনিও গুতেরেস।
প্রশ্ন ২৫। UNDP-এর সম্পূর্ণ রূপটি কি?
উত্তরঃ United Nations Development Programme (রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কার্যক্রম)।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২৬। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কোন্ আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠিত হয়েছিল।
উত্তরঃ জাতিসংঘ।
প্রশ্ন ২৭। রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদ কার জন্য উন্মুক্ত থাকে?
উত্তরঃ শান্তিকামী রাষ্ট্রের জন্য।
প্রশ্ন ২৮। আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ের ন্যায়াধীশগণকে কে নিয়োগ করেন?
উত্তরঃ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদ।
প্রশ্ন ২৯। রাষ্ট্রসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের মেনে চলার একটি নীতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সদস্যরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক কর্তব্য সম্পাদন করবে।
প্রশ্ন ৩০। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের একটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধান করা।
প্রশ্ন ৩১। সচিব প্রধানের একটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
প্রশ্ন ৩২। কে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হতে পারে?
উত্তরঃ স্বাধীন ও শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ৩৩। রাষ্ট্রসংঘ কখন জন্মলাভ করে?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালে।
প্রশ্ন ৩৪। মহাসচিবের কার্যকাল কয় বৎসর?
উত্তরঃ পাঁচ বছর।
প্রশ্ন ৩৫। আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ের বিচারপতিদের কার্যকাল কত?
উত্তরঃ নয় বছর।
প্রশ্ন ৩৬। আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ের সদর কার্যালয় কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে।
প্রশ্ন ৩৭। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর কার্যালয় কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ রোম নগরে।
প্রশ্ন ৩৮। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর কার্যালয় কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ জেনেভা শহরে।
প্রশ্ন ৩৯। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার সদর কার্যালয় কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ জেনেভা শহরে।
প্রশ্ন ৪০। বিশ্ব ব্যাঙ্ক কখন স্থাপিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালে।
প্রশ্ন ৪১। রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার পরিষদ কখন গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ২০০৬ সালে।
প্রশ্ন ৪২। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তিসংস্থা কখন স্থাপিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫৭ সালে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। আন্তর্জাতিক সংগঠনের কি প্রয়োজন?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ যুদ্ধ নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সাহায্য করে। এরা বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারেও আমাদের সহায়তা করে, যার ফলে আমরা অধিকতর উন্নত জীবনযাপন করতে পারি।
প্রশ্ন ২। তুমি কি মনে কর রাষ্ট্রসংঘ এক মহা-রাষ্ট্র? যুক্তি দাও।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ একটি রাষ্ট্রও নয়, মহা-রাষ্ট্রও নয়। এর সার্বভৌম ক্ষমতা নেই এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহের উপর কর্তৃত্ব করতে পারে না। সুতরাং রাষ্ট্রসংঘ মহা-রাষ্ট্র বা Superstate নয়।
প্রশ্ন ৩। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও চীন।
প্রশ্ন ৪। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যগণের ভোগ করা বিশেষ দুটি সুবিধার উল্লেখ কর।
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যগণের ভোগ করা বিশেষ দুটি সুবিধা নিম্নরূপ:
(ক) স্থায়ী সদস্যদের ভেটোর ক্ষমতা আছে।
(খ) ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তারা কোনো জরুরি সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে বাধা আরোপ করতে পারে।
প্রশ্ন ৫। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কী?
উত্তরঃ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল হল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যা সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষার্থে প্রচার চালিয়ে যায় এবং রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকারের সার্বিক ঘোষণায় বর্ণিত মানবাধিকারসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। এটি মানবাধিকারের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে এবং প্রকাশ করে।
প্রশ্ন ৬। বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক সংস্থা রাষ্ট্রসংঘের প্রাসঙ্গিকতা কি?
উত্তরঃ বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘের যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা নিম্নরূপ:
(ক) রাষ্ট্রসংঘই একমাত্র আন্তর্জাতিক সংস্থা যে আমেরিকার একাধিপত্য কিছু পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
(খ) রাষ্ট্রসংঘই একমাত্র সংস্থা যা যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রসমূহকে আলোচনা মঞ্চে আনতে পারে।
প্রশ্ন ৭। সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে থাকা দুটি বেসরকারি সংস্থার (NGO) নাম লেখ।
অথবা,
সমগ্র বিশ্বে মানব অধিকারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কার্য করে থাকা দুটি, বেসরকারি সংগঠনের নাম লেখ।
উত্তরঃ দুটি বেসরকারি সংস্থা (NGO)-র নাম নিম্নরূপ:
(ক) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
(খ) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
প্রশ্ন ৮। রাষ্ট্রসংঘের দুটি সংগঠনের নাম লেখ যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত।
উত্তরঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রসংঘের দুটি সংগঠনের নাম নিম্নরূপ:
(ক) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ।
(খ) আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা।
প্রশ্ন ৯। নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে ভারতের স্থিতি কি?
উত্তরঃ ভারত শক্তিকামী রাষ্ট্র। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ভারতের বৈদেশিক নীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে ভারত সর্বদাই সচেষ্ট। যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রতিরোধার্থে ভারত সদাই নিরস্ত্রীকরণ সমর্থন করে। ভারত রাষ্ট্রসংঘের পরিকাঠামোর মধ্যে পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের পক্ষপাতী।
প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রসংঘের সচিবালয় কোথায় অবস্থিত? রাষ্ট্রসংঘের প্রথম সচিব-প্রধান কে ছিলেন?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সচিবালয় নিউইয়র্কে অবস্থিত।
ট্রাইগভ লি রাষ্ট্রসংঘের প্রথম সচিব-প্রধান।
প্রশ্ন ১১। নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম ও প্রধান কার্য কী?
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম ও প্রধান কার্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
প্রশ্ন ১২। রাষ্ট্রসংঘের সনদ কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল? ২০০৬ সাল পর্যন্ত এতে কত সদস্য ছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালের ২৫ জুন রাষ্ট্রসংঘের সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এর সদস্য ছিল ১৯২
প্রশ্ন ১৩। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে _____ টি স্থায়ী এবং ______ টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র আছে।
উত্তরঃ পাঁচ/দশ।
প্রশ্ন ১৪। নিরাপত্তা পরিষদের গঠন সম্পর্কে লেখ।
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদ ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র সহ মোট ১৫ সদস্য দ্বারা গঠিত।
প্রশ্ন ১৫। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়সমূহের সঙ্গে জড়িত সংস্থাসমূহের নাম লেখ।
উত্তরঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়সমূহের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলি হল—
(ক) সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদ।
(খ) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এবং
(গ) রাষ্ট্রসংঘ মানবাধিকার আয়োগ।
প্রশ্ন ১৬। রাষ্ট্রসংঘে সংস্কার কেন প্রয়োজন?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ ১৯৪৫ সালের প্রতিষ্ঠার সময় সদস্য ছিল ৫১টি রাষ্ট্র। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩। প্রতিষ্ঠা লগ্নে বিশ্বের জনসংখ্যা বর্তমানের চেয়ে অনেক কম ছিল। শীতল যুদ্ধোত্তর বর্তমান বিশ্ব নানা প্রকার সমস্যায় জর্জরিত। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রসংঘের সংস্কার অত্যন্ত আবশ্যিক।
প্রশ্ন ১৭। রাষ্ট্রসংঘ একটি অপরিহার্য সংস্থা কেন?
উত্তরঃ বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা ও অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য রাষ্ট্রসংঘ অপরিহার্য।
প্রশ্ন ১৮। যে-কোন দুটি সামরিক মিত্র জোটের নাম লেখ।
উত্তরঃ দুটি সামরিক মিত্র জোট হল—
(ক) ন্যাটো। এবং
(খ) ওয়ারশ জোট।
প্রশ্ন ১৯। ভেটো ক্ষমতা কি?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে স্থায়ী ৫ জন সদস্যসহ অস্থায়ী ৯ জন সদস্যের সম্মতি একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে ৫ জন স্থায়ী সদস্য একমত না হলে সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয় না। একজন স্থায়ী সদস্য অসম্মতি প্রকাশ করলে অপর ৪ জন স্থায়ী সদস্য ও ১০ জন অস্থায়ী সদস্যের সম্মতি বিফল হয়। স্থায়ী সদস্যের এই অসম্মতি-সংক্রান্ত ক্ষমতাকে ‘ভেটো’ ক্ষমতা বলে।
প্রশ্ন ২০। একমেরু বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘের প্রাসঙ্গিকতা কি?
উত্তরঃ একমেরু বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্য প্রশ্নাতীত। পৃথিবীতে এমন কোন শক্তিধর রাষ্ট্র নেই যে আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রসংঘ হল একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতার উপরে কিছু পরিমাণে হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
প্রশ্ন ২১। ‘আইনের চোখে সমান’ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ আইনের দৃষ্টিতে বা চোখে সকলেই সমান এই কথার অর্থ হল, দেশের সকল নাগরিক একই আইনের অধীন। প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ দিনমজুর সকলেই একই আইনের অধীন। জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একই আইন ও আদালতের অধীন।
প্রশ্ন ২২। শান্তিরক্ষা অভিযান কি?
উত্তরঃ বিশ্বের কোন দেশ বা কোন অঞ্চলে শান্তি ভঙ্গ হলে রাষ্ট্রসংঘ সেখানে শান্তি রক্ষার্থে যে অভিযান চালায় তাকে শান্তিরক্ষা অভিযান বলে।
প্রশ্ন ২৩। রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য উদ্দেশ্য কি?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২৪। বিশ্বশান্তির প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য গড়ে ওঠা দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ।
উত্তরঃ বিশ্বশান্তির প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য গড়ে ওঠা দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম হল—
(ক) জাতিসংঘ। ও
(খ) রাষ্ট্রসংঘ।
প্রশ্ন ২৫। রাষ্ট্রসংঘের দুটি লক্ষ্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের দুটি লক্ষ্য নিম্নরূপ:
(ক) আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনের জন্য শান্তিপূর্ণ বিষয় অবলম্বন করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করার প্রয়াস।
(খ) বিশ্বের সকল জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।
প্রশ্ন ২৬। রাষ্ট্রসংঘের দুটি নীতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের দুটি নীতি নিম্নরূপ:
(ক) সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সকল রাষ্ট্রই সমান।
(খ) সকল রাষ্ট্রই তাদের আন্তর্জাতিক কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পাদন করবে।
প্রশ্ন ২৭। সচিব-প্রধানের দুটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সচিব-প্রধানের দুটি কার্য নিম্নরূপ:
(ক) রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
(খ) রাষ্ট্রসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করা।
প্রশ্ন ২৮। আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ের দুই প্রকার ক্ষমতা ও কার্য কি কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ের দুই প্রকার ক্ষমতা ও কার্য নিম্নরূপ:
(ক) কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি ব্যাখ্যা করা।
(খ) আন্তর্জাতিক বিবাদের মীমাংসা করা।
প্রশ্ন ২৯। রাষ্ট্রসংঘের যে-কোন দুটি প্রধান অঙ্গের নাম লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের দুটি প্রধান অঙ্গ হল—
(ক) সাধারণ সভা। ও
(খ) নিরাপত্তা পরিষদ।
প্রশ্ন ৩০। রাষ্ট্রসংঘের যে-কোন দুটি বিশেষীকৃত অঙ্গের নাম লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের দুটি বিশেষীকৃত অঙ্গের নাম হল—
(ক) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ও
(খ) আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল।
প্রশ্ন ৩১। সাধারণ সভার যে-কোন দুটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সাধারণ সভার দুটি কার্য নিম্নরূপ:
(ক) রাষ্ট্রসংঘের সনদে অন্তর্ভুক্ত যে-কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা।
(খ) সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য অঙ্গসমূহের কার্যাবলি পরিদর্শন করা।
প্রশ্ন ৩২। জাতিসংঘের কয়টি অঙ্গ ছিল এবং কি কি?
উত্তরঃ জাতিসংঘের চারটি অঙ্গ ছিল।
সেই অঙ্গ চারটি হল—
(ক) সাধারণ সভা।
(খ) পরিষদ।
(গ) আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়। এবং
(ঘ) সচিবালয়।
প্রশ্ন ৩৩। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রসমূহের নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হল—
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
(খ) ইংল্যান্ড।
(গ) রাশিয়া।
(ঘ) ফ্রান্স। ও
(ঙ) চীন।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলি কি কি?
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদ হল রাষ্ট্রসংঘের কার্যকরী পরিষদ এবং প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। নিরাপত্তা পরিষদের নামকরণে এর কার্যকর ইঙ্গিত দেখতে পাওয়া যায়।
এর প্রধান ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিম্নরূপ:
(ক) নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক কর্তব্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(খ) নিরাপত্তা পরিষদের দ্বিতীয় কাজ হল কোন যুদ্ধরত দেশের বিরুদ্ধে যদি শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা।
(গ) অছি শাসনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলির প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এই রাষ্ট্রগুলির স্বার্থরক্ষার্থে নিরাপত্তা পরিষদ নানা প্রকার সেবামূলক কার্য সম্পাদন করে।
(ঘ) এছাড়া, সাধারণ সভার সঙ্গে যুক্তভাবে স্বতন্ত্র ভোটদান পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ১৫ জন বিচারপতি নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন।
প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রসংঘকে তুমি একটি সার্থক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলে মনে কর কি? যুক্তি দাও।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ একটি সার্থক আন্তর্জাতিক সংগঠন। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশ্বের নেতৃবর্গ এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত বিবাদসমূহের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তদুপরি পৃথিবী এমন কিছু সমস্যার বা প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয় যে সমস্যাসমূহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাধান করা যায় না। সেক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সকল রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, কতিপয় রোগ সার্বিক প্রচেষ্টায় নির্মূল করা যায়। রাষ্ট্রই এর জন্য টীকাকরণের ক্ষেত্রে অগ্রসর হয়ে আসে।
প্রশ্ন ৩। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য বিধি-নিয়ম প্রদান করে। এই সংস্থা ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত সাধারণ বোঝাপড়া [General Agreement on Trade and Tariff (GATT)]-র উত্তরসূরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মোট ১৫০টি সদস্যরাষ্ট্র আছে। সহমতের ভিত্তিতেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমেরিকা, ইউরোপীয় সংঘ ও জাপান প্রভৃতি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সুবিধামতো নীতি-নিয়ম প্রস্তুত করতে এই সংস্থাকে প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন ৪। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুমি ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ সমর্থন কর কি? যুক্তিসহ উত্তর লেখ।
অথবা,
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে ভারতের অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিকতা প্রদর্শন কর।
উত্তরঃ ভারত ১৯৯৮ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতে স্থায়ী সদস্যপদের দাবি উত্থাপন করেছে। ভারতের একজন নাগরিক হিসাবে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবি আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।
এর কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা ভারতবাসী।
(খ) ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের প্রতি ভারতের পূর্ণ আস্থা আছে এবং রাষ্ট্রসংঘের সকল প্রকার উদ্যোগে ভারত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
(ঘ) ভারত রাষ্ট্রসংঘের সকল প্রকার শান্তি প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
(ঙ) রাষ্ট্রসংঘে ভারত নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান করে।
(চ) ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ভারত একটি বিকাশশীল দেশ। ভারতের অর্থনীতি শক্তিভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
(ছ) ভারত শান্তি, নিরাপত্তা ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
(জ) ভারত পরাধীন রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে।
(ঞ) ভারত নিরাপত্তার তাগিদে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরমাণু পরীক্ষা করেছে।
প্রশ্ন ৫। বিশ্ব ব্যাঙ্ক কোন্ সালে সৃষ্টি হয়েছিল? এর কার্যকলাপ আলোচনা কর।
উত্তরঃ বিশ্ব ব্যাঙ্ক ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই গঠিত হয়। একে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের ব্যাঙ্ক বলা হয়। এই ব্যাঙ্কের কার্যকারিতা মূলত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহে প্রতিফলিত হয়।
বিশ্বব্যাঙ্কের প্রধান কার্যাবলি নিম্নরূপ:
(ক) মানব উন্নয়ন বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য।
(খ) কৃষি, জলসেচ ও গ্রামীণ বিকাশ।
(গ) পরিকাঠামো; যেমন—রাস্তা, শহর পুনর্নবীকরণ, বৈদ্যুতিকিকরণ ও সুশাসন।
(ঘ) সদস্যরাষ্ট্রসমূহকে আর্থিক সাহায্য প্রদান।
এইভাবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক উন্নয়নশীল দেশসমূহকে অর্থনৈতিক নীতির উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। এই সংস্থা দরিদ্র দেশসমূহকে কঠোর শর্তসাপেক্ষ অর্থনৈতিক কার্যকলাপে আর্থিক অনুদান প্রদান করে বলে সমালোচনা করা হয়।
প্রশ্ন ৬। সাধারণ পরিষদের গঠনের বিষয়টি আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্রই সাধারণ সভার সদস্য। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্র সাধারণ সভায় পাঁচজন প্রতিনিধি পাঠাে পারে। কিন্তু কোন রাষ্ট্রেরই একটির বেশি ভোট দেবার ক্ষমতা নেই। প্রতি বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ সভার অধিবেশন বসে। আন্তর্জাতিক সমস্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা ছাড়াও সাধারণ সভা অর্থনৈতিক, সামাজিক বিষয়ে আলোচনা করে। এই সভা রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য অঙ্গগুলির সদস্য নির্বাচন করে এবং রাষ্ট্রসংঘের বাজেট অনুমোদন করে।
প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রসংঘের কয়েকটি বিশেষীকৃত শাখার নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ অভিকরণ বা বিশেষীকৃত শাখাগুলি হল:
(ক) রাষ্ট্রসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পৰ্কীয় সংস্থা।
(খ) রাষ্ট্রসংঘ শিশুকল্যাণ সংস্থা।
(গ) আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা।
(ঘ) খাদ্য ও কৃষি সংস্থা।
(ঙ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
(চ) আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল।
প্রশ্ন ৮। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের চারজন রূপকারের নাম লেখ।
উত্তরঃ ১৯৬১ সালে ২৫টি রাষ্ট্রের উপস্থিতিতে ‘বেলগ্রেড শীর্ষ সম্মেলন’-এর মধ্য দিয়ে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়। জোট নিরপেক্ষতা হল জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী স্বাধীন নীতির অনুসরণ। ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরোধিতা হল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের রূপকারগণ হলেন—
(ক) জওহরলাল নেহেরু।
(খ) জোসেফ টিটো।
(গ) গামাল আবদেল নাসের।
(ঘ) সুকর্ণ। এবং
(ঙ) কাওয়ামে নক্রমা।
প্রশ্ন ৯। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাই কেবল ভেটো ক্ষমতার অধিকার লাভ করে কেন?
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদ ক্ষুদ্রতম সংস্থা হলেও তা রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলির উপর নির্ভর করে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য ১৫। পাঁচজন স্থায়ী সদস্য ও দশজন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত।
পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হল—
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
(খ) রাশিয়া।
(গ) ইংল্যান্ড।
(ঘ) ফ্রান্স। ও
(ঙ) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন।
‘ভেটো’ শব্দের অর্থ কর্তৃত্ব বলে ‘নিষেধাজ্ঞা’ বা ‘অসম্মতি’। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরাই ভেটো প্রয়োগ করতে পারে, কারণ—
(ক) এই সকল রাষ্ট্রেই রাষ্ট্রসংঘে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করে; যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেয় ২২%, ব্রিটেন দেয় ৬.১%, ফ্রান্স দেয় ৬.০১%। ফলে তারা এই বিশেষ অধিকার বজায় রাখতে চায়।
(খ) ভেটো বাতিল করলে ঐ ক্ষমতাশালী শক্তিসমূহ রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে এবং ইচ্ছানুসারে কার্যকলাপ চালাতে পারে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে।
প্রশ্ন ১০। বিশ্বে আন্তর্জাতিক সংগঠন কেন প্রয়োজন? এর ভূমিকা কি?
উত্তরঃ সমগ্র বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে আন্তর্জাতিক সংগঠনের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সংগঠন সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ করেছে। তদুপরি বিভিন্ন সামাাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, সীমান্ত বিবাদ, স্বাস্থ্য, সন্ত্রাসবাদ সমস্যা সমাধানে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিবদমান রাষ্ট্রসমূহ তাদের বিবাদের সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানে কোন একটি সংগঠনের মধ্যস্থতার প্রয়োজন অনুভব করে। এই জন্যই বিশ্বে আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রয়োজন এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ১১। শীতল যুদ্ধের অবসানের পরে রাষ্ট্রসংঘের কাজকর্মে হওয়া পরিবর্তনের বিষয়ে লেখ।
উত্তরঃ শীতল যুদ্ধের অবসান ঘটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সাথে সাথে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী শক্তি হয়েছে। এখন সোভিয়েত রাশিয়ার উত্তরাধিকারী রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক সহযোগিতাপূর্ণ। চীনও বৃহৎ শক্তি হিসাবে আত্মবিকাশ করতে যাচ্ছে। ভারতও দ্রুত বিকাশ ঘটাচ্ছে। বহু নতুন দেশ রাষ্ট্রসংঘে যোগদান করেছে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রসংঘের কাজকর্মে কিছু পরিবর্তন হয়েছে তার দায়িত্ব আরও সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালনের জন্য। উপরন্তু বিশ্বে নয়া বিপদ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘ নানা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করছে।
প্রশ্ন ১২। রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক এজেন্সিসমূহের নাম লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক এজেন্সিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার।
(খ) বিশ্ব ব্যাংক।
(গ) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।
(ঘ) আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা।
(ঙ) অ্যামনেষ্টি ইনটারন্যাশনাল।
প্রশ্ন ১৩। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল কি?
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ব্রেটন উড্স চুক্তি অনুসারে এই সংস্থাটি ২৯টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে ১৮৯টি রাষ্ট্র এই সংস্থার সদস্যভুক্ত। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্রের একজন প্রতিনিধি নিয়ে এই সংস্থার সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পরিচালক সভা (Board of Governors) গঠিত। ২০ জন সদস্য নিয়ে এর একটি কার্যকরী অধিকর্তামণ্ডলী (Executive Directors) আছে। অধিকর্তামণ্ডলী কর্তৃক নির্বাচিত একজন কর্মকর্তা পদাধিকার বলে (Managing Director) এই সংস্থার দৈনন্দিন কার্য পরিচালনা করেন। এই সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক সদস্য সম্পর্কে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন দেশের মধ্যে দেনা-পাওনার অসাম্য দূর করবার জন্য এই সংস্থা সদস্যগণকে ঋণ দান করে। এই সংস্থার প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে অবস্থিত।
প্রশ্ন ১৪। অ্যামনেস্টি ইনটারন্যাশনাল-এর উপর টীকা লেখ।
উত্তরঃ অ্যামনেস্টি ইনটারন্যাশনাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেটি মানবাধিকার রক্ষার সপক্ষে পৃথিবী জুড়ে প্রচার অভিযান চালায়। এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা পিটার বেনেনসন এবং এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালের জুলাই মাসে। মানবাধিকারের বিশ্বজনীন ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকল মানবাধিকারের প্রতি এটি সম্ভ্রম উদ্রেকের প্রয়াস নেয়। সংস্থাটি বিশ্বাস করে মনুষ্যত্বের অধিকার পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল এবং অবিভাজ্য। এটি মানবাধিকারের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে এবং প্রকাশ করে। বিশ্বের সরকারসমূহ সকল সময় খুশি হয় না কেননা এই সকল প্রতিবেদনে সংস্থাটির লক্ষ্য প্রধানত সরকারি কর্তৃপক্ষের অসদাচরণের বিষয়ে থাকে। তথাপিও এই প্রতিবেদনসমূহ মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা ও এর সপক্ষে যুক্তিতর্কের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নির্বাহ করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১৫। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান উদ্দেশ্য কি কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সনদে বর্ণিত রাষ্ট্রসংঘের চারটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
(ক) আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনের জন্য শান্তিপূর্ণ বিষয় অবলম্বন করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করবার প্রয়াস।
(খ) বিশ্বের সকল জাতির লোকের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে যাতে সকলেই শান্তিপ্রিয় প্রতিবেশীরূপে বাস করতে পারে সেজন্য সচেষ্ট থাকা।
(গ) জাতিগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা দূর করে জাতিগুলির সামাজিক, কৃষ্টিমূলক ও অর্থনৈতিক জীবনে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
(ঘ) বিভিন্ন জাতির কার্যকলাপের সমন্বয়সাধনপূর্বক জাতিগুলির মধ্যে মতভেদ ও বিরোধের ঐক্য ও মতের সামঞ্জস্য স্থাপন করা।
প্রশ্ন ১৬। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান ছয়টি অঙ্গের নাম লেখ।
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাষ্ট্রসংঘের প্রধান ছয়টি অঙ্গের নাম নিম্নরূপ:
(ক) সাধারণ সভা।
(খ) নিরাপত্তা পরিষদ।
(গ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ।
(ঘ) ন্যাসরক্ষী বা অছি পরিষদ।
(ঙ) আন্তর্জাতিক বিচারালয়।
(চ) সচিবালয়।
প্রশ্ন ১৭। রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সনদের ১নং ধারায় বলা হয়েছে—“রাষ্ট্রসংঘ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আন্তর্জাতিক সমস্যসমূহ সমাধানে তৎপর হবে এবং জাতি ভাষা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট হবে।” এই লক্ষ্যে পৌঁছানর জন্য রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের অর্থ অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের পুনর্গঠন। নিরাপত্তা পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার প্রধান কার্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই সংস্থা মোট ১৫টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত—৫টি স্থায়ী সদস্য ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য। পাঁচটি সদস্যরাষ্ট্র ‘ভেটো’ ক্ষমতাধিকারী। ‘ভেটো’ ক্ষমতা হল নিরাপত্তা পরিষদের কোন প্রস্তাবে যদি কোন স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র সম্মতি প্রদান না করে তখন তা নাকচ হয়ে যায়। কোন দুই দেশ বা দুই-এর অধিক দেশ যদি যুদ্ধে রত হয় তখন নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি পুনরুত্থানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদ সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অঙ্গ সুতরাং তার সংস্কারই হল বহুলাংশে রাষ্ট্রসংঘর সংস্কার। এর সংস্কার অত্যাবশ্যক, কারণ সংস্কারের মাধ্যমে অধিক রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবে।
রাষ্ট্রসংঘের ভবিষ্যৎ কখনোই একক শক্তিধর রাষ্ট্রর কুক্ষিগত হতে পারে না। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলি রাষ্ট্রসংঘের সর্ববৃহৎ গোষ্ঠী। উন্নয়নশীল বিশ্বের একতার নেতৃত্বের উপরই রাষ্ট্রসংঘের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। বিশ্বমানব সভ্যতার প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্রসংঘ অবশ্যই একদিন বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতিষ্ঠায় সর্বতোভাবে সফল হবে। তখনই সার্থক হবে রাষ্ট্রসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব ড্যাগ হ্যামারশিল্ড-এর বিখ্যাত মন্তব্য, “রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানবজাতিকে কোন স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়, তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষকে নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।”
প্রশ্ন ১৮। সাধারণ পরিষদের কার্য ও ক্ষমতা উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের সনদে বর্ণিত কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে। সনদে অন্তর্ভুক্ত যে-কোন বিষয়ে সাধারণ সভা আলোচনা করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সাধারণ সভা কর্তৃক বিবেচিত ও অনুমোদিত হয়।
সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য অঙ্গসমূহের কার্যাবলি পরিদর্শন করে। অন্যান্য অঙ্গসমূহ তাদের কার্যাবলির অগ্রগতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন সাধারণ সভার নিকট পেশ করে। সাধারণ সভা সচিবালয় ও মহাসচিবের কার্যাবলিও পরিদর্শন করে। মহাসচিব সচিবালয়ের কার্যের প্রতিবেদন সাধারণ সভার নিকট পেশ করেন।
সাধারণ সভা নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদের সদস্য ও অছি পরিষদের সদস্যগণকে নির্বাচিত করে এবং আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতিগণের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবকে মনোনীত করে। সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের সনদ সংশোধন করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার জন্য তদন্ত চালাতে পারে। সাধারণ সভার রাষ্ট্রসংঘে কোন নূতন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করবার ক্ষমতা আছে। সনদ ভঙ্গকারী কোন সদস্যরাষ্ট্রকে সাধারণ সভা বহিষ্কার করতে পারে। সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে সাধারণ সভা নানা প্রকার আন্তর্জাতিক কার্য সম্পাদন করে।
প্রশ্ন ১৯। আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়ের চার প্রকার কার্যের নাম লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের বিচার বিভাগটির নাম আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয়। এটি হেগ শহরে অবস্থিত। এর সংবিধানের নাম ‘সংবিধ’। আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয় ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত। বিচারপতিদের কার্যকাল ৯ বছর।
আন্তর্জাতিক ন্যায়ালয় নিম্নলিখিত বিষয়গুলির বিচার করতে পারে:
(ক) কোন চুক্তির ব্যাখ্যা।
(খ) আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কিত বিষয়।
(গ) যে তথ্য প্রমাণিত হলে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের কর্তব্য ভঙ্গ হয়।
(ঘ) দায়িত্ব পালনে কর্তব্যভঙ্গের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ।
প্রশ্ন ২০। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের তিনটি কার্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবতাবাদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি যাতে সব রাষ্ট্র অনুসরণ করে, তা লক্ষ্য রাখার জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সাধারণ সভা কর্তৃক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারপত্র গৃহীত হয়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
রাষ্ট্রসংঘের সনদ অনুসারে পরিষদের উপর নিম্নলিখিত কার্য সম্পাদন করার ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে:
(ক) জীবিকার মান উন্নয়ন, পূর্ণ কর্মসংস্থান ব্যবস্থা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন।
(খ) আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ও সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলির সমাধান এবং কৃষ্টি ও শিক্ষামূলক বিষয়ে সহযোগিতার ব্যবস্থা।
(গ) জাতি, ধর্ম, ভাষা, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবিক অধিকারগুলি ও মূল স্বাধীনতাগুলির প্রতি সর্বব্যাপী শ্রদ্ধা ও এদের সংরক্ষণ ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ২১। ন্যাসরক্ষী পরিষদের (অছি পরিষদের) চারটি কার্যের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৭৫ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যাসরক্ষী পরিষদ গঠিত হয়। এর সদস্যসংখ্যা ৬। এটি ১৯৪৪ সালের ১লা নভেম্বর পালাউ-এর স্বাধীনতার পর স্থাপিত হয়।
ন্যাসরক্ষী পরিষদের প্রধান কার্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) অছি-শাসনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্র কর্তৃক উপস্থাপিত বিবরণী বিবেচনা করা।
(খ) আবেদনপত্র গ্রহণ করা ও অছি-শাসনের ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে আবেদনপত্র বিবেচনা করা।
(গ) অছি শাসন কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অছি শাসনভুক্ত স্থানগুলি পরিদর্শন করা।
(ঘ) অছি ব্যবস্থার নিয়মানুযায়ী আরও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
প্রশ্ন ২২। সচিব-প্রধানের (মহাসচিবের) পাঁচটি প্রধান কার্যের উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের প্রশাসনিক অধিকর্তা হিসেবে মহাসচিব হলেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা কর্তৃক গোপন ভোটে পাঁচ বছরের জন্য মহাসচিব নির্বাচিত হন।
সচিব-প্রধান বা মহাসচিবের প্রধান কার্যাবলি নিম্নরূপ:
(ক) রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
(খ) রাষ্ট্রসংঘের কার্য সম্পর্কে তিনি সাধারণ সভায় বাৎসরিক বিবরণী প্রদান করা।
(গ) সচিব-প্রধান যদি মনে করেন যে কোন কারণে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাহলে এই বিষয়ে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
(ঘ) নিরাপত্তা পরিষদের সংখ্যাধিক্য সদস্যের অনুরোধে তিনি সাধারণ সভার বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন।
(ঙ) সচিব-প্রধানের দায়িত্ব হল রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তগুলিকে কার্যকর করা।
প্রশ্ন ২৩। রাষ্ট্রসংঘের আদর্শ ও লক্ষ্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাষ্ট্রসংঘের নিম্নলিখিত আদর্শ ও লক্ষ্য রাষ্ট্রসংঘের সনদের প্রস্তাবনায় বর্ণিত আছে:
(ক) পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বংশধরদের অবর্ণনীয় যন্ত্রণা হতে রক্ষা করা।
(খ) মৌলিক মানবাধিকারগুলির উপর আস্থা সুনিশ্চিত করা।
(গ) আন্তর্জাতিক কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। এবং
(ঘ) সামাজিক অগ্রগতি ও উচ্চতর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা।
প্রশ্ন ২৪। রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ ১৯৪৫ সালে মোট ৫১টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য সংখ্যা ১৯৩। রাষ্ট্রসংঘের সনদে বর্ণিত সদস্যপদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম শান্তিকামী রাষ্ট্রকেই সদস্যভুক্ত করা হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা কর্তৃক নূতন সদস্য গ্রহণ করা হয় সদস্য ক্রমাগত সনদে উল্লিখিত রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও আদর্শ ভঙ্গ করে, নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা এইরূপ সদস্যকে বহিষ্কার করতে পারে।
প্রশ্ন ২৫। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের শ্রেণীবিন্যাস কর। কোন্ শ্রেণীর সদস্য ‘ভেটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে?
উত্তরঃ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৫ম অধ্যায়ের ২৩(১) নং ধারা অনুসারে নিরাপত্তা পরিষদ ৫ জন স্থায়ী সদস্য ও ১০ জন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত। পাঁচ স্থায়ী সদস্য হল—ফ্রান্স, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। এই পাঁচ শক্তি ‘বৃহৎ পঞ্চশক্তি’ বা ‘Big Five’ নামে পরিচিত।
শুরুতে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যসংখ্যা ছিল ৬। ১৯৬৫ সালে সনদ সংশোধন করে এই সংখ্যা ১০ করা হয়। এশিয়া থেকে ২, আফ্রিকা থেকে ৩, লাতিন আমেরিকা থেকে ২, পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে ২ এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ১ অস্থায়ী সদস্য ২ বছরের জন্য সাধারণ সভার দ্বারা নির্বাচিত হয়।
কেবলমাত্র স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ‘ভেটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
প্রশ্ন ২৬। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবতাবাদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি যাতে সব রাষ্ট্র অনুসরণ করে, তা লক্ষ্য রাখার জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাধারণ সভা কর্তৃক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারপত্র গৃহীত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই পরিষদের অধীন একটি সংস্থা।
বিশ্বের জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা প্রভৃতি নির্মূল করার অভিযান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্থাপিত হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সদস্য না হয়েও যে-কোন রাষ্ট্র উক্ত সংস্থার সদস্য হতে পারে। এর সদর কার্যালয় জেনেভা শহরে।
প্রশ্ন ২৭। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমেরিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি আইসেন হাওয়ারের ‘শান্তির জন্য পরমাণু’ (Atom for Peace) প্রস্তাব কার্যকরী করবার জন্য এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-
(ক) শান্তিপূর্ণ কার্যে পরমাণু শক্তির ব্যবহার বাস্তবায়িত করা এবং সামরিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার রোধ করা। এবং
(খ) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বিশ্বে পরমাণুকেন্দ্রগুলির উপর নজরদারি রাখে যাতে কোন রাষ্ট্র পরমাণু শক্তিকে সামরিক কার্যে ব্যবহার করতে না পারে।
প্রশ্ন ২৮। ‘মানবাধিকার ওয়াচ্’ বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ ‘মানবাধিকার ওয়াচ’ হল এক বেসরকারি সংস্থা যা মানবাধিকার সংক্রান্ত গবেষণা ও আলোচনায় জড়িত। এটি আমেরিকায় সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এই সংস্থা মানবাধিকার ভঙ্গ সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি বিশ্ব-জনমত প্রকাশকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই সংস্থা স্থল মাইন নিষিদ্ধ করতে, শিশু যোদ্ধাদের কাজে লাগানো বন্ধ করতে এবং আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত স্থাপনে আন্তর্জাতিক জোট তৈরিতে সহায়তা করেছে।
প্রশ্ন ২৯। বিশ্বশান্তি রক্ষায় রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রসংঘের কৃতিত্ব খুব আকর্ষণীয় না হলেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিগত দশকগুলিতে এমন ঘটনা ঘটেছে যেগুলির মধ্যে আছে পারমাণবিক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা। শুধু রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকার জন্যই পৃথিবী আজ পর্যন্ত ধ্বংস হতে বেঁচে আছে। সিরিয়া ও লেবাননের বিরোধ, করফু চ্যানেল বিরোধ, ইন্দোনেশিয়ার সমস্যা, গ্রিসের সমস্যা, বার্লিন অবরোধ, প্যালেস্টাইন সমস্যা, কোরিয়ার যুদ্ধ, সুয়েজ খাল বিরোধ, কঙ্গো সমস্যা, উপসাগরীয় যুদ্ধ প্রভৃতি বৃহৎ সমস্যাগুলি রাষ্ট্রসংঘ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলেও উত্তেজনা প্রশমনে রাষ্ট্রসংঘ সফল হয়েছে। সম্প্রতিকালে আফগান সমস্যা, ইরাক সমস্যা প্রভৃতিতে রাষ্ট্রসংঘ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়নি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায়ও রাষ্ট্রসংঘ উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না।
প্রশ্ন ৩০। জাতিসংঘ কেন এবং কিভাবে গঠিত হয়েছিল ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ বিংশ শতকের প্রথম দিকে অর্থাৎ ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই প্রলয়কারী যুদ্ধে প্রভূত জীবন ও সম্পত্তির হানি ঘটে। সেইজন্য ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে ১৯১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত ‘প্যারিস শান্তি সম্মেলনে যোগদানকারী বিশ্বের নেতৃবৃন্দ বিশ্বে যাতে পুনরায় ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত না হয় এইজন্য চিন্তা ও চেষ্টা করে ‘জাতিসংঘ’ নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন। এই শান্তি আলোচনার ফলস্বরূপ কয়েকটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ভার্সাই সন্ধি’। এই সন্ধিপত্রে জাতিসংঘের চুক্তিপত্র সন্নিবিষ্ট করা হয়। তদনুসারে ১৯২০ সালের ১৯শে জানুয়ারি জাতিসংঘ স্থাপন করা হয়।
জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শান্তি-সম্প্রতির জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু চুক্তিপত্রে নানাপ্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকার জন্য তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘের পতন ঘটে।
প্রশ্ন ৩১। জাতিসংঘের উদ্দেশ্যসমূহ কি ছিল?
উত্তরঃ ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই প্রলয়কারী যুদ্ধে প্রভৃত জীবন ও সম্পত্তির হানি হয়। বিশ্বকে যুদ্ধের গ্রাস থেকে চিরতরে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯২০ সালের ১০ই জানুয়ারি ‘জাতিসংঘ’ নামক বিশ্বসংস্থা গঠিত হয়েছিল।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্যসমূহ ছিল:
(ক) আইন ও ন্যায়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(খ) যুদ্ধের অবসানের জন্য চেষ্টা করা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদের নিষ্পত্তি করা।
(গ) রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত সম্পর্ক রক্ষা করা।
অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। এক-মেরু বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘকে তুমি আমেরিকার ক্ষেত্রে ভারসাম্য স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বলে ভাবো কি? যুক্তিসহ উত্তর লেখ।
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
শীতল যুদ্ধ পরিসমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর দেশ হিসাবে পরিগণিত হয়। পৃথিবীতে এমন কোন শক্তিধর রাষ্ট্র নেই যে আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। এমতাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসংঘ হল একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা আমেরিকার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার উপর কিছু পরিমাণে হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
অবশ্য রাষ্ট্রসংঘের পক্ষে সহজে আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কেননা রাষ্ট্রসংঘ আমেরিকার নিউইয়র্ক মহানগরীতে অবস্থিত। এর অধিকাংশ আধিকারিক আমেরিকার নাগরিক। রাষ্ট্রসংঘের একক বৃহত্তম অর্থ প্রদানকারী হিসাবে আর্থিক শক্তির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিপক্ষ (২২%)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসীম ক্ষমতা এবং সংস্থার অভ্যন্তরে এর ‘ভেটো’ ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার এটি নিশ্চিত করে যে ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব নির্বাচনে তার মতামত প্রকাশ করার যথেষ্ট অধিকার আছে। সুতরাং রাষ্ট্রসংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যকারী মোটেই নয়।
প্রশ্ন ২। “রাষ্ট্রসংঘের সংস্কার করা মানে নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্কার করা।” মন্তব্য কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের অর্থ অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের পুনর্গঠন। নিরাপত্তা পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার প্রধান কার্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই সংস্থা মোট ১৫টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত—৫টি স্থায়ী সদস্য ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য। পাঁচটি সদস্যরাষ্ট্র ‘ভেটো’ ক্ষমতাধিকারী।‘ভেটো’ ক্ষমতা হল নিরাপত্তা পরিষদের কোন প্রস্তাবে যদি কোন স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র সম্মতি প্রদান না করে তখন তা নাকচ হয়ে যায়। কোন দুই দেশ বা দুই-এর অধিক দেশ যদি যুদ্ধে রত হয় তখন নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি পুনরুত্থানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদ সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অঙ্গ সুতরাং তার সংস্কারই হল বহুলাংশে রাষ্ট্রসংঘর সংস্কার। এর সংস্কার অত্যাবশ্যক কারণ সংস্কারের মাধ্যমে অধিক রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবে।
প্রশ্ন ৩। বর্তমান যুগে রাষ্ট্রসংঘকে একটি অতিপ্রয়োজনীয় সংগঠন বলে তুমি মনে কর কি? যুক্তি দাও।
অথবা,
বর্তমান বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসংঘকে একটি অত্যাবশ্যকীয় সংগঠন বলে তুমি ভাবো কি? তোমার উত্তরের যৌক্তিকতা প্রদর্শন কর।
উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি ও শীতল যুদ্ধের অবসানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। বর্তমানে বিশ্বে এমন কোন রাষ্ট্র নেই যে মার্কিন একাধিপত্য প্রতিরোধ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসংঘই একমাত্র সংস্থা যা আমেরিকার স্বৈরাচারী ক্রিয়াকলাপ প্রতিরোধ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এমনকি রাষ্ট্রসংঘের মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুল পরিমাণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘে একক গরিষ্ঠ অর্থদাতা (২২%) হিসাবে আমেরিকার অতুলনীয় আর্থিক ক্ষমতা আছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য কার্যালয় থাকায় স্বভাবতই আমেরিকা তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিক ও কর্মচারীবৃন্দের এক বিশাল অংশ আমেরিকার বিভিন্ন জাতিভুক্ত। আমেরিকার ‘ভেটো’ ক্ষমতা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের নিযুক্তি আমেরিকার পছন্দ সুনিশ্চিত করে দেয়।
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রসংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমতা রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু তাছাড়া বিশ্ব ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। অবশ্য একমেরু বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘ আমেরিকাসহ অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রবর্গকে অনেক বিষয়ে আলোচনায় বসাতে সফল হয়েছে।
পরিশেষে এটা বলা যায় যে, রাষ্ট্রসংঘ একটি অপূর্ণাঙ্গ সংস্থা হলেও এছাড়া বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হবে। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা রাষ্ট্রসংঘহীন বিশ্ব কিভাবে কল্পনা করতে পারি! সুতরাং রাষ্ট্রসংঘ বর্তমান বিশ্বে একটি অপরিহার্য সংস্থা।
প্রশ্ন ৪। শীতল যুদ্ধের পর থেকে রাষ্ট্রসংঘের কি কি পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তরঃ নিয়ত পরিবর্তনশীল বাতাবরণের প্রয়োজনে কাজ করতে গেলে যে-কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সংস্কার এবং বিকাশ—এই দুটি অপরিহার্য। রাষ্ট্রসংঘও তার ব্যতিক্রম নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় সাথে সাথেই ১৯৪৫ সালে রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠা ও ক্রিয়াকলাপের পদ্ধতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। শীতল যুদ্ধের পরের বাস্তবতা পৃথক ছিল।
এখানে কিছু কিছু পরিবর্তন যা ঘটেছে তা নিম্নরূপ:
(ক) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে।
(খ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী শক্তি।
(গ) সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরাধিকারী রাশিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক সহযোগিতাপূর্ণ।
(ঘ) চীন দ্রুত আত্মবিকাশ করতে যাচ্ছে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে। ভারতও দ্রুত বিকাশশীল।
(ঙ) এশিয়ার অর্থনীতি অভূতপূর্ব হারে বর্ধিত হচ্ছে।
(চ) বহু নূতন দেশ রাষ্ট্রসংঘে যোগদান করেছে। এদের অনেকেই স্বাধীন হয়েছে সোভিয়েত সংঘ অথবা পূর্ব ইউরোপের সাম্যবাদী রাষ্ট্র হতে।
(ছ) এক পরিপূর্ণ নূতন ধরনের প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন পৃথিবী গণহত্যা, গৃহযুদ্ধ, জাতিদাঙ্গা, সন্ত্রাসবাদ, পারমাণবিক অস্ত্রের উচ্চবিকাশ, পরিবেশের অবনয়ন, মহামারী ইত্যাদি।
এই পরিস্থিতিতে ১৯৮৯ সালে যখন শীতল যুদ্ধের অবসানের পর্ব চলছে তখন সমগ্র বিশ্বের কাছে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, তা নিম্নরূপ:
(ক) রাষ্ট্রসংঘ কি যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করছে?
(খ) এর কার্যবিধি কি হবে এবং কেমনভাবেই বা তা সম্পন্ন হবে?
(গ) আরো সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য কি কি ধরনের সংস্কার প্রয়োজনীয়?
গত দেড় দশক ধরে সকল সদস্যরাষ্ট্র এই প্রশ্নসমূহের সন্তোষজনক ও বাস্তব উত্তর খুঁজে চলেছে।
প্রশ্ন ৫। নিরাপত্তা পরিষদে নতুন স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যের অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব করা নিয়মাবলী উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৫ম অধ্যায়ের ২৩(১) নং ধারা অনুসারে নিরাপত্তা পরিষদ ৫ জন স্থায়ী সদস্য এবং ১০ জন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত। পাঁচ স্থায়ী সদস্য হল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও চীন। শুরুতে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ছিল ৬।
রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের ক্রমবর্ধমান দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রসংঘের ৭ম মহাসচিব কোফি আন্নান ১লা জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে সংঘের সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মনোনীত করার কিছু নিয়মাবলীর প্রস্তাব করেন।
নিরাপত্তা পরিষদের নতুন সদস্যের ক্ষেত্রে নিয়মাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) একটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হতে হবে।
(খ) একটি প্রধান সামরিক শক্তি হতে হবে।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের বাজেটে ভালো রকম আর্থিক দান থাকতে হবে।
(ঘ) জনসংখ্যার ভিত্তিতে একটি বিশাল জাতি হতে হবে।
(ঙ) এমন একটি জাতি হতে হবে যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে মর্যাদা দেয়।
(চ) একটি দেশ হতে হবে যার অন্তর্ভুক্তি পরিষদকে বিশ্বের ভৌগোলিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ব্যাপারে আরো অধিক মাত্রায় প্রতিনিধিত্বমূলক করে তুলবে।
প্রশ্ন ৬৷ রাষ্ট্রসংঘ নিজ লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য অবলম্বন করা পদ্ধতিসমূহ কি কি?
উত্তরঃ সনদের ১(১) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। ২(৩) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক বিবাদের মীমাংসার চেষ্টা করবে যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার বিঘ্নিত না হয়।
রাষ্ট্রসংঘের এই উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা পদ্ধতিসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সকল প্রকার বিবাদের নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব প্রদান করা।
(খ) আন্তরাষ্ট্রীয় বোঝাপড়া এবং মত বিনিময়ে গুরুত্ব প্রদান করা।
(গ) ন্যায়িক এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করা।
(ঘ) সদস্য রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদানে গুরুত্ব দান করা।
প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রসংঘের নীতিসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের সনদে সদস্য রাষ্ট্রগুলি কর্তৃক একক ও যুক্তভাবে স্বীকৃত নিম্নলিখিত সাতটি নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রসংঘ গঠিত হয়েছে:
(ক) সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে সকল রাষ্ট্রই সমান।
(খ) সকল রাষ্ট্রই তাদের আন্তর্জাতিক কর্তব্য নিষ্ঠার সহিত সম্পাদন করবে।
(গ) সকল সদস্যরাষ্ট্রই এরূপ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের পারস্পরিক মতভেদে সমাধান করবে যাতে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার বিপন্ন না হয়।
(ঘ) কোন সদস্য রাষ্ট্রই অপর রাষ্ট্রের স্বাধীনতা বা ভূখণ্ডের উপর রাষ্ট্রসংঘে উদ্দেশ্যের পরিপন্থী বলপ্রয়োগ করবে না।
(ঙ) যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এইরূপ রাষ্ট্রকে অন্য রাষ্ট্র সাহায্য করতে পারবে না।
(চ) শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষাকল্পে রাষ্ট্রসংঘ সদস্য-বহির্ভূত রাষ্ট্রগুলি যাতে এই নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে তাদের কার্যকলাপ পরিচালনা করে, রাষ্ট্রসংঘ এই বিষয়ও সুনিশ্চিত করবে।
(ছ) রাষ্ট্রসংঘ কোন রাষ্ট্রের নিছক আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রশ্ন ৮। একটি বিশ্বসংস্থা হিসাবে UNO-র সফলতা ও বিফলতার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা লেখ।
উত্তরঃ সমগ্র বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে মধ্যস্থতা করে মানবজাতির শান্তি আর প্রগতির পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সার্বিক মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রথমেই তার সাফল্যের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রসংঘের সাফল্য:
(ক) বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা: রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপে সিরিয়া, ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান, আরব ও ইহুদিদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ব্যাপকতা রোধে সাময়িক সাফল্য লাভ, দীর্ঘস্থায়ী ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধান ও কোরিয়া সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়।
(খ) শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ: রাষ্ট্রসংঘ ১৯১৯ সালে কোসোভোতে এবং ২০০৭ সালে সুদানে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করেছে।
(গ) নিরস্ত্রীকরণ ও আণবিক অস্ত্রের প্রসার রোধ: ১৯৯৩ সালে ক্ষেপণাস্ত্র ও মারণাস্ত্র ব্যাপকভাবে হ্রাস করার জন্য রাশিয়া ও আমেরিকার সম্মতি আদায় করা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
(ঘ) রাজনৈতিক জটিলতার সমাধান: ১৯৬১ সালে কিউবা সংকটের সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(ঙ) ঔপনিবেশিকতার অবসানে প্রয়াস: ঔপনিবেশিকতা অবসানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে।
(চ) অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রয়াস: অনগ্রসর রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তার, শিক্ষার বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন, উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
(ছ) মানবাধিকার নীতির সংরক্ষণ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার-বিরোধী যাবতীয় অভিযোগ গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে।
রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা:
(ক) রাজনৈতিক ব্যর্থতা: কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারতের প্রতি পাকিস্তানের অন্যায় আক্রমণ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষ নীতি প্রভৃতি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে না পারা।
(খ) বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা-সংক্রান্ত ব্যর্থতা: বিগত ৭১ বছরে পৃথিবীকে যুদ্ধ মুক্ত না করতে পারা।
(গ) মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা: যুদ্ধ মুক্ত পৃথিবী গড়তে না পারার দরুণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ সফল হয়নি।
(ঘ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্র: আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক শ্রমদপ্তর মার্কিন আধিপত্যের শিকার এবং এই সংস্থাগুলির নিরপেক্ষতা সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
(ঙ) নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতি: বৃহৎ শক্তিগুলি ছোটো ছোটো রাষ্ট্রগুলিকে নিরস্ত্র করার জন্য ক্রমাগত চাপে রেখেছে, কিন্তু নিজেরা অস্ত্রসজ্জিত থেকে বিশ্বে সাম্রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি সত্ত্বেও রাষ্ট্রসংঘ অনেক ক্ষেত্রে মানবজাতির সাফল্যের সর্বোত্তম নজির হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে।
প্রশ্ন ৯। ভারত কি কি যুক্তিতে রাষ্ট্রসংঘ পুনর্গঠন সমর্থন করে?
উত্তরঃ ভারত নিম্নলিখিত যুক্তির ভিত্তিতে রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠন সমর্থন করে:
(ক) ভারত এখন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ, যার জনসংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে ভারতের অর্থনৈতিক দিশা অতি শক্তিশালী ও স্থির।
(খ) রাষ্ট্রসংঘের সদস্যপদ ৫১ থেকে বেড়ে ১৯৩ হয়েছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিই এই পরিবর্তন এনেছে। শীতল যুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে রাশিয়ার পতন ঘটে এবং জার্মানির প্রতিষ্ঠা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ভারত নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসনের দাবী করে।
(গ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ৫টি শক্তিশালী রাষ্ট্রকে ভেটো অধিকারসহ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়া হয়। যদিও বর্তমানে আমেরিকাই হল চূড়ান্ত শক্তি, ভারতও নিজেকে একটি বলিষ্ঠ শক্তি হিসাবে প্রতিপন্ন করেছে। তাই নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ একান্ত জরুরি।
(ঘ) নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভারতকে সমর্থন করেছে। ইতিমধ্যে রাশিয়া, ভুটান, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং লাওস ভারতের দাবীকে সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়াও ব্রিটেন এবং ফ্রান্সও সমর্থন জানিয়েছে। আমেরিকাও এক্ষেত্রে একমত ছিল, কিন্তু চীন ও পাকিস্তানের বিরোধিতাই এর অন্তরায় হয়।
তাই ভারত মনে করে রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠন আবশ্যক যাতে নতুন শক্তিবিন্যাসের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলির পুনর্বিন্যাস সম্ভব হয়।
প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রসংঘের তিনটি অঙ্গের নাম উল্লেখ কর যেগুলি আইন সভা, কার্যনির্বাহী এবং বিচার বিভাগ বলে বিবেচিত হয়।
উত্তরঃ আইন সভা: সাধারণ সভা হল বিশ্বমানবের আইন সভা। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের মানবজাতির নানা সমস্যা, নানা ভাবনার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয় এবং প্রতিফলিত হয় এই সাধারণ সভার মধ্যে দিয়ে। সাধারণ সভার সদস্যসংখ্যা ১৯২ এবং সবার একটি করে ভোটাধিকার আছে, প্রতি বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ সভার অধিবেশন বসে। আন্তর্জাতিক সমস্যাদি-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা ছাড়াও সাধারণ সভা অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে আলোচনা করে।
কার্যনির্বাহী বিভাগ: রাষ্ট্রসংঘের এই বিভাগ হল নিরাপত্তা পরিষদ। রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৫ম অধ্যায়ের ২৩(১) নং ধারা অনুসারে নিরাপত্তা পরিষদ ৫ জন স্থায়ী সদস্য এবং ১০ জন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত। অস্থায়ী সদস্যগণ দুই বৎসরের জন্য মনোনীত হন। তাদের ভেটো ক্ষমতা নেই। নিরাপত্তা পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের সনদ সংশোধনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কর্তব্য।
বিচার বিভাগ: রাষ্ট্রসংঘের প্রধান বিচার বিভাগীয় অঙ্গ হল আন্তর্জাতিক বিচারালয়। এটি হেগ শহরে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গঠন সম্পর্কে সংবিধানের ৩ নং ধারা অনুসারে ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয় গঠিত হয়। কোন রাষ্ট্র থেকে একাধিক বিচারপতি নির্বাচিত হতে পারেন না। বিচারকগণ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হন। বিচারপতিদের কার্যকালের মেয়াদ হল নয় বৎসর। আন্তর্জাতিক আইন-সংক্রান্ত বিষয়গুলি মীমাংসা করা এই আদালতের প্রধান কার্য।
প্রশ্ন ১১। রাষ্ট্রসংঘ পুনর্গঠনে প্রস্তারিত সংস্কার বাস্তবায়নে জড়িত সমস্যাসমূহের একটি সমালোচনামূলক মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ও চাহিদার ও পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য যে-কোন সংস্থা ও সংগঠনের সংস্কার ও উন্নয়ন অপরিহার্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাষ্ট্রসংঘ সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে।
১৯৯২ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে যাতে নিম্মলিখিত প্রধান তিনটি অভিযোগ প্রতিফলিত হয়:
(ক) নিরাপত্তা পরিষদ সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত করে না।
(খ) এর সিদ্ধান্তসমূহ কেবলমাত্র পশ্চিমী মূল্য ও স্বার্থ প্রতিফলিত করে এবং তাতে কতিপয় বৃহৎ শক্তির একাধিপত্য দেখা যায়।
(গ) নিরাপত্তা পরিষদ সমপ্রতিনিধিত্বের অভাব বোধ করে।
রাষ্ট্রসংঘ সংস্কারের ক্রমবর্ধমান দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহাসচিব কফি আন্নান রাষ্ট্রসংঘের সংস্কার কিভাবে করা যায় তার জন্য একটি অনুসন্ধান উত্থাপন করেন। নিরাপত্তা পরিষদের নূতন স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবিত রূপরেখাসমূহের কয়েকটি নিম্নে প্রদান করা হল:
প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী একটি সদস্য রাষ্ট্রকে—
(ক) একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হতে হবে।
(খ) একটি বৃহৎ সামরিক শক্তি হতে হবে।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের বাজেটে একটি বৃহৎ অঙ্কের যোগানকারী হতে হবে।
(ঘ) জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র হতে হবে।
(ঙ) একটি রাষ্ট্র যা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে।
এই সকল রূপরেখার প্রত্যেকটি কিছু না কিছু যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু কতিপয় ধারা পরিষ্কার না হওয়ায় ঐগুলিকে সমস্যাজর্জরিত মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ কি পরিমাণ একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী সদস্য হতে পারে তা পরিষ্কার বলা হয়নি। ঠিক সেইভাবে রাষ্ট্রসংঘের বাজেটে একটি রাষ্ট্র কি পরিমাণ আর্থিক সাহায্যের যোগান দিলে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন লাভ করতে পারবে তার উল্লেখ নেই। আবার বিশ্বে বিশেষ ভূমিকা পালনে একটি জনবহুল রাষ্ট্র যদি সম্পদ না দেয় তা উপলব্ধি করা দুষ্কর। তাই এই বিষয়ে রূপরেখা আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
ইতিপূর্বে নিরাপত্তা পরিষদে সদস্যদের প্রকৃতি-সম্পর্কিত বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে কোন কোন মহল থেকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ‘ভেটো’ ক্ষমতা লোপ করার দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু সদস্যগণ স্বভাবতই এইরূপ দাবির ঘোর বিরোধী। ‘ভেটো’ ক্ষমতা না থাকলে বৃহৎ শক্তিবর্গ এই বিশ্বসংস্থায় আগ্রহ হারাবে। রাষ্ট্রসংঘে তাদের সমর্থন ও মগ্ন থাকা অফলপ্রসূ হবে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১২। রাষ্ট্রসংঘ কিভাবে গঠিত হয়েছিল আলোচনা কর।
উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবর্ণনীয় ধ্বংসলীলা দেখে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ যাতে ভবিষ্যতে আর বিশ্বযুদ্ধ না ঘটে সেইজন্য ১৯২০ সালে জাতিসংঘ নামে একটি বিশ্বসংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু নানা কারণে জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার বিশ বৎসরের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। এই বিশ্বযুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হতে অনেক বেশি ভয়াবহ ধ্বংসলীলা সৃষ্টি করেছিল। এইরূপ অবর্ণনীয় ক্ষতি ও ধ্বংসলীলা ভবিষ্যতে আর যাতে না ঘটে সেই উদ্দেশ্যে ও একই সঙ্গে পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আবার নূতন করে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপনের চেষ্টা আরম্ভ হয়। এই চেষ্টার ফলেই রাষ্ট্রসংঘের জন্ম হয়।
লন্ডন ঘোষণা: রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠা ধারণার উৎপত্তি হয় ১৯৪১ সালের ১২ই জুন যখন ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকীয় সংঘ লন্ডন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে, যা রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।
রুজভেল্টের চারটি স্বাধীনতা: মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ১৯৪১ সালে প্রত্যেক জাতির রাষ্ট্রগঠনের অধিকারের কথা ঘোষণা করেন।
আটলান্টিক সনদ: ১৯৪১ সালের ১৪ই আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল বিখ্যাত আটলান্টিক চুক্তির মাধ্যমে মিত্রশক্তির যুদ্ধের উদ্দেশ্য ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণাপত্র গ্রহণ: রুজভেল্ট ও চার্চিলের ঘোষণাপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আট দফা আটলান্টিক সনদের উপর ভিত্তি করে ১৯৪২ সালের ১লা জানুয়ারি ২৬টি দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণাপত্র গ্রহণ করেন।
মস্কো ঘোষণা: ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন মস্কো শহরে মিলিত হয়ে আন্তর্জাতিক সংঘ প্রতিষ্ঠাকল্পে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন।
ডাম্বার্টন ওক্স সম্মেলন: ১৯৪৪ সালের ৭ই অক্টোবর মার্কিন সরকার বিশ্ব সংগঠনের একটি বাস্তব কাঠামো ব্রিটিশ, সোভিয়েত ও চীন সরকারের প্রতিনিধিগণের সম্মুখে উপস্থাপিত করে। এই প্রস্তাবকে ‘ডাম্বার্টন ওক্স প্রস্তাব’ নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু প্রতিনিধিগণের মধ্যে মতভেদের ফলে কোন স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
ইয়াল্টা সম্মেলন: ১৯৪৫ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইয়াল্টা শহরে রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্টালিন এক সম্মেলনে মিলিত হয়ে বিশ্বসংঘের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে স্থির হয় যে ১৯৪৫ সালের ২৫শে এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাফ্রান্সিসকো শহরে জাতিসমূহের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সাফ্রান্সিসকো সম্মেলন: ইয়াল্টা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাফ্রান্সিসকো শহরে ১৯৪৫ সালের ২৫শে এপ্রিল একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ৫১টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রসংঘ সনদ গৃহীত: ১৯৪৫ সালের ২৫শে জুন পূর্ণ অধিবেশনে ৫১টি দেশ কর্তৃক রাষ্ট্রসংঘ সনদ গৃহীত হয়। সনদে একটি প্রস্তাবনাসহ ১১১টি ধারা আছে। সদস্য রাষ্ট্রসমূহের আইনসভা কর্তৃক সনদটি অনুমোদিত হলে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘ জন্মলাভ করে এবং ২৪শে অক্টোবর তারিখটি রাষ্ট্রসংঘ দিবস হিসাবে পালিত হয়।
প্রশ্ন ১৩। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান অঙ্গগুলির বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ নিম্নলিখিত প্রধান ছয়টি অঙ্গ নিয়ে গঠিত:
(ক) সাধারণ সভা: রাষ্ট্রসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্রই সাধারণ সভার সদস্য। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্র সাধারণ সভায় পাঁচজন প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। কিন্তু কোন রাষ্ট্রেরই একটির বেশি ভোট দেবার ক্ষমতা নেই। প্রতি বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ সভার অধিবেশন বসে। আন্তর্জাতিক সমস্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা ছাড়াও সাধারণ সভা অর্থনৈতিক, সামাজিক বিষয়ে আলোচনা করে। এই সভা রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য অঙ্গগুলির সদস্য নির্বাচন করে এবং রাষ্ট্রসংঘের বাজেট অনুমোদন করে।
(খ) নিরাপত্তা পরিষদ: নিরাপত্তা পরিষদ ১৫টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রগুলি হল (অ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, (আ) রাশিয়া, (ই) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, (ঈ) ইংল্যান্ড, এবং (উ) ফ্রান্স। দশটি অস্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র দুই বৎসরের জন্য সাধারণ সভা কর্তৃক নির্বাচিত হয়। স্থায়ী সদস্যগণের ভেটো ক্ষমতা আছে। নিরাপত্তা পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ। বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কর্তব্য।
(গ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ: বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছে। সাধারণ সভা কর্তৃক নির্বাচিত ২৭ জন সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে এই পরিষদ গঠিত। এই পরিষদের অধিবেশন বৎসরে অন্তত তিনবার অনুষ্ঠিত হয় এবং এর সভাপতি পরিষদ কর্তৃক এক বৎসরের জন্য নির্বাচিত হয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিবিষয়ক সমস্যার অনুসন্ধান ও গবেষণা করে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে সাধারণ সভায় সুপারিশ করা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদের কাজ।
(ঘ) অছি পরিষদ: অছি পরিষদ অনগ্রসর জাতিসমূহের তদারকির জন্য গঠিত হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যগণ, অছি শাসনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলি ও সাধারণ সভা কর্তৃক বৎসরের জন্য নির্বাচিত অছি শাসনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলির সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত।
(ঙ) আন্তর্জাতিক বিচারালয়: আন্তর্জাতিক বিচারালয় রাষ্ট্রসংঘের প্রধান বিচার বিভাগীয় অঙ্গ এবং হল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত। সাধারণ সভা কর্তৃক পনেরো জন বিচারপতিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয় গঠিত। বিচারপতিদের কার্যকলাপের মেয়াদ হল নয় বৎসর। আন্তর্জাতিক আইন-সংক্রান্ত বিষয়গুলির মীমাংসা করা এই আদালতের প্রধান কার্য।
(চ) সচিবালয়: সচিবালয় হল রাষ্ট্রসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব এবং তাঁর কর্মচারীদের নিয়ে সচিবালয় গঠিত। নিরাপত্তা পরিষদের পরামর্শক্রমে সাধারণ সভা মহাসচিব নির্বাচিত করেন। মহাসচিবের অধীনে একটি বিভাগ রয়েছে। মহাসচিবের নেতৃত্বে সচিবালয় রাষ্ট্রসংঘের দৈনন্দিন কার্য সম্পাদন করে।
প্রশ্ন ১৪। সাধারণ পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি লেখ।
উত্তরঃ সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের সর্ববৃহৎ অঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্রই সাধারণ সভার সদস্য। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্র মনে করলে পাঁচজন প্রতিনিধি সাধারণ সভায় প্রেরণ করতে পারে। কিন্তু প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্রের একটি করে ভোট থাকে। প্রতি বৎসর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ সভার অধিবেশন বসে। নিরাপত্তা পরিষদের অনুরোধে জরুরি অধিবেশনও বসতে পারে। প্রতি বাৎসরিক অধিবেশনের জন্য সাধারণ সভা একজন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন করে।
সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের সনদে বর্ণিত কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে। সনদে অন্তর্ভুক্ত যে-কোন বিষয়ে সাধারণ সভা আলোচনা করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সাধারণ সভা কর্তৃক বিবেচিত ও অনুমোদিত হয়।
সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য অঙ্গসমূহের কার্যাবলি পরিদর্শন করে। অন্যান্য অঙ্গসমূহ তাদের কার্যাবলির অগ্রগতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন সাধারণ সভার নিকট পেশ করে। সাধারণ সভা সচিবালয় ও মহাসচিবের কার্যাবলিও পরিদর্শন করে। মহাসচিব সচিবালয়ের কার্যের প্রতিবেদন সাধারণ সভার নিকট পেশ করেন।
সাধারণ সভা নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদের সদস্য ও অছি পরিষদের সদস্যগণকে নির্বাচিত করে এবং আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতিগণের নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবকে মনোনীত করে।
সাধারণ সভা রাষ্ট্রসংঘের সনদ সংশোধন করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার জন্য তদন্ত চালাতে পারে। সাধারণ সভার রাষ্ট্রসংঘে কোন নতুন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করবার ক্ষমতা আছে। সনদ ভঙ্গকারী কোন সদস্যরাষ্ট্রকে সাধারণ সভা বহিষ্কার করতে পারে। সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে সাধারণ সভা নানাপ্রকার আন্তর্জাতিক কার্য সম্পাদন করে।
প্রশ্ন ১৫। নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদ ক্ষুদ্রতম সংস্থা হলেও তা রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলির উপর নির্ভর করে।
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য ১৫ পাঁচজন স্থায়ী সদস্য ও দশজন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত।
পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হল—
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
(খ) রাশিয়া।
(গ) ইংল্যান্ড।
(ঘ) ফ্রান্স। ও
(ঙ) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন।
অবশিষ্ট দশজন অস্থায়ী সদস্য সাধারণ সভা কর্তৃক দুই বৎসরের জন্য নির্বাচিত হন। স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা আছে। সাধারণত এক পক্ষকালের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের একটি অধিবেশন বসে।
নিরাপত্তা পরিষদ হল রাষ্ট্রসংঘের কার্যকরী পরিষদ এবং প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। নিরাপত্তা পরিষদের নামকরণে তার কার্যকর ইঙ্গিত দেখতে পাওয়া যায়। এর প্রাথমিক কর্তব্য ও দায়িত্ব হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। রাষ্ট্রসংঘের সনদ অনুসারে প্রত্যেক রাষ্ট্রের কর্তব্য হল নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি মেনে নেওয়া ও কার্যকর করা। কোন রাষ্ট্রকে যদি অন্য রাষ্ট্র আক্রমণ করে তবে নিরাপত্তা পরিষদ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের অপর কাজ হল কোন যুদ্ধরত দেশের বিরুদ্ধে যদি শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা।
অছি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলির প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এই রাষ্ট্রগুলির স্বার্থরক্ষার্থে নিরাপত্তা পরিষদ নানা প্রকার সেবামূলক কার্য সম্পাদন করে। এতদ্ব্যতীত সাধারণ সভার সঙ্গে যুক্তভাবে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ১৫ জন বিচারপতি নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন।
এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক কার্য হল বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। নিরাপত্তা পরিষদকে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সদা সতর্ক থাকতে হয়।
প্রশ্ন ১৬। সচিব-প্রধানের ক্ষমতা এবং কার্যাবলি কি কি?
উত্তরঃ সচিব-প্রধান রাষ্ট্রসংঘের সচিবালয়ের প্রধান প্রশাসনীয় কর্তা। তাঁকে প্রভূত ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।
তাঁর প্রধান প্রধান কার্যাবলি নিম্নরূপ:
(ক) সচিব-প্রধান রাষ্ট্রসংঘের প্রধান অঙ্গসমূহের বৈঠকে উপস্থিত থেকে বৈঠকে তাঁর উপর ন্যস্তকরা কার্যসমূহ সম্পাদন করেন।
(খ) তিনি রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করেন। তাছাড়া রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ স্বীকৃত অঙ্গসমূহের কার্য নিরীক্ষণ করেন।
(গ) সচিব-প্রধানের তদারকিতে রাষ্ট্রসংঘের বাজেট প্রস্তুত করা হয়।
(ঘ) সচিব-প্রধান রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার স্থান, সময় প্রভৃতি নির্ণয় করেন।
(ঙ) তিনি রাষ্ট্রসংঘ তথা অন্যান্য অঙ্গসমূহের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা সাধারণ পরিষদের সাধারণ সভায় উত্থাপন করেন।
(চ) তিনি সহ-সচিব ও অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগ করেন।
(ছ) তিনি সাধারণ পরিষদের সকল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
(জ) সচিব-প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের একজন তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করেন।
উপরের আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে রাষ্ট্রসংঘের সচিব-প্রধান প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি নানা প্রকার কার্য সম্পাদন করেন।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভেটো ক্ষমতা সংক্রান্ত নিম্নোক্ত উক্তিগুলির প্রত্যেকটির পাশে শুদ্ধ বা অশুদ্ধ লেখ।
(ক) নিরাপত্তা পরিষদের একমাত্র স্থায়ী সদস্যবৃন্দ ‘ভেটো’ ক্ষমতার অধিকারী।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(খ) এটাই একমাত্র নেতিবাচক ক্ষমতা।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(গ) মহাসচিব যখন কোন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হন না তখন তিনি এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(ঘ) একটি ভেটোই নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
প্রশ্ন ২। নিম্নোক্ত উক্তিসমূহ যা রাষ্ট্রসংঘের কর্মপন্থা নির্ণয় করে। এইগুলির প্রত্যেকটির পাশে শুদ্ধ বা অশুদ্ধ লেখ।
(ক) নিরাপত্তা পরিষদে শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সকল বিষয়সমূহ আলোচিত হয়।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(খ) রাষ্ট্রসংঘের প্রধান অঙ্গসমূহ ও সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃত বিশেষীকৃত শাখাসমূহ দ্বারা মানবিক নীতিসমূহ বাস্তবায়িত হয়।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
(গ) নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে পাঁচটি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের সহমত আবশ্যকীয়।
উত্তরঃ শুদ্ধ।
(ঘ) সাধারণ সভার সকল সদস্যই আপনা-আপনিই রাষ্ট্রসংঘের অন্যান্য প্রধান অঙ্গসমূহ ও বিশেষীকৃত শাখাসমূহের সদস্য।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
প্রশ্ন ৩। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহের কোনটি অধিক গুরুত্ব পাবে?
(ক) পরমাণু দক্ষতা।
(খ) ভারত রাষ্ট্রসংঘের সূচনা হইতেই এর সদস্য।
(গ) ভারত এশিয়ায় অবস্থিত।
(ঘ) ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং সুস্থির রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
উত্তরঃ (ঘ) ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং সুস্থির রাজনৈতিক ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ৪। পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা কোনটি?
(ক) নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রসংঘের সমিতি।
(খ) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সমিতি।
(ঘ) উপরোক্ত কোনটিই নয়।
উত্তরঃ (খ) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা।
প্রশ্ন ৫। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা নিম্নোক্ত কোন্ সংস্থার উত্তরসূরী হিসাবে কাজ করছে?
(ক) বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত সাধারণ বোঝাপড়া।
(খ) বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত সাধারণ ব্যবস্থা।
(গ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
(ঘ) রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কার্যসূচী।
উত্তরঃ (ক) বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত সাধারণ বোঝাপড়া।
প্রশ্ন ৬। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
(ক) রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য উদ্দেশ্য হল ______।
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা।
(খ) রাষ্ট্রসংঘের সর্বোচ্চ নিয়ামককে _____ বলা হয়।
উত্তরঃ মহাসচিব।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে _____ জন স্থায়ী এবং ______ জন অস্থায়ী সদস্য আছেন।
উত্তরঃ ৫/১০।
(ঘ) রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান মহাসচিব হলেন ______।
উত্তরঃ অ্যান্টোনিও গুতেরেস।
প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান অঙ্গ ও সংস্থাসমূহের সঙ্গে এইগুলির কার্যাবলি মিলিয়ে লেখ:
(a) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (i) বিশ্ব অর্থব্যবস্থার উপর নজরদারি রাখে।
(b) আন্তর্জাতিক বিচারালয় (ii) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(c) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (iii) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণের দিকে দৃষ্টিপাত করা।
(d) নিরাপত্তা পরিষদ (iv) পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ব্যবহার।
(e) রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী – সংক্রান্ত আয়োগ (v) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করা।
(f) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (vi) জরুরি অবস্থার আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।
(g) আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (vii) বিশ্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে বিতর্ক ও আলোচনা করা হয়।
(h) সাধারণ সভা (viii) রাষ্ট্রসংঘের ব্যাপারে শাসন ও সমন্বয় সাধন করা।
(i) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ix) সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য প্রদান।
(j) সচিবালয় (x) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাণিজ্যের সুযোগ।
উত্তরঃ (a) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (iii) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণের দিকে দৃষ্টিপাত করা।
(b) আন্তর্জাতিক বিচারালয় (v) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করা।
(c) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (iv) পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ব্যবহার।
(d) নিরাপত্তা পরিষদ (ii) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(e) রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী – সংক্রান্ত আয়োগ (vi) জরুরি অবস্থার আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।
(f) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (x) সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বাণিজ্যের সুযোগ।
(g) আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (i) বিশ্ব অর্থব্যবস্থার উপর নজরদারি রাখে।
(h) সাধারণ সভা (vii) বিশ্ব সংক্রান্ত ব্যাপারে বিতর্ক ও আলোচনা করা হয়।
(i) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ix) সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য প্রদান।
(j) সচিবালয় (viii) রাষ্ট্রসংঘের ব্যাপারে শাসন ও সমন্বয় সাধন করা।
প্রশ্ন ৮। নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলি কি কি?
উত্তরঃ নিরাপত্তা পরিষদ ক্ষুদ্রতম সংস্থা হলেও তা রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী অঙ্গ। রাষ্ট্রসংঘের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলির উপর নির্ভর করে।
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য ১৫ পাঁচজন স্থায়ী সদস্য ও দশজন অস্থায়ী সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত।
পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হল—
(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
(খ) রাশিয়া।
(গ) ইংল্যান্ড।
(ঘ) ফ্রান্স। ও
(ঙ) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন।
অবশিষ্ট দশজন অস্থায়ী সদস্য সাধারণ সভা কর্তৃক দুই বৎসরের জন্য নির্বাচিত হন। স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা আছে। সাধারণত এক পক্ষকালের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের একটি অধিবেশন বসে।
নিরাপত্তা পরিষদ হল রাষ্ট্রসংঘের কার্যকরী পরিষদ এবং প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। নিরাপত্তা পরিষদের নামকরণে তার কার্যকর ইঙ্গিত দেখতে পাওয়া যায়। এর প্রাথমিক কর্তব্য ও দায়িত্ব হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। রাষ্ট্রসংঘের সনদ অনুসারে প্রত্যেক রাষ্ট্রের কর্তব্য হল নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি মেনে নেওয়া ও কার্যকর করা। কোন রাষ্ট্রকে যদি অন্য রাষ্ট্র আক্রমণ করে তবে নিরাপত্তা পরিষদ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের অপর কাজ হল কোন যুদ্ধরত দেশের বিরুদ্ধে যদি শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা।
অছি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলির প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এই রাষ্ট্রগুলির স্বার্থরক্ষার্থে নিরাপত্তা পরিষদ নানা প্রকার সেবামূলক কার্য সম্পাদন করে। এতদ্ব্যতীত সাধারণ সভার সঙ্গে যুক্তভাবে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ১৫ জন বিচারপতি নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হন।
এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক কার্য হল বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। নিরাপত্তা পরিষদকে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সদা সতর্ক থাকতে হয়।
প্রশ্ন ৯। ভারতের একজন নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী প্রার্থিত্বকে তুমি কিভাবে সমর্থন করবে? তোমার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা দেখাও।
উত্তরঃ ভারত ১৯৯৮ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতে স্থায়ী সদস্যপদের দাবি উত্থাপন করেছে। ভারতের একজন নাগরিক হিসাবে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের দাবি আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।
এর কারণসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা ভারতবাসী।
(খ) ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের প্রতি ভারতের পূর্ণ আস্থা আছে এবং রাষ্ট্রসংঘের সকল প্রকার উদ্যোগে ভারত সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
(ঘ) ভারত রাষ্ট্রসংঘের সকল প্রকার শান্তি প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
(ঙ) রাষ্ট্রসংঘে ভারত নিয়মিত আর্থিক সাহায্য প্রদান করে।
(চ) ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ভারত একটি বিকাশশীল দেশ। ভারতের অর্থনীতি শক্তিভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
(ছ) ভারত শান্তি, নিরাপত্তা ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
(জ) ভারত পরাধীন রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে।
(ঞ) ভারত নিরাপত্তার তাগিদে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরমাণু পরীক্ষা করেছে।
প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রসংঘ পুনর্গঠনে প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে জড়িত সমস্যাসমূহের একটি সমালোচনামূলক মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ও চাহিদার ও পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য যে-কোন সংস্থা ও সংগঠনের সংস্কার ও উন্নয়ন অপরিহার্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাষ্ট্রসংঘ সংস্কারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে।
১৯৯২ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে যাতে নিম্মলিখিত প্রধান তিনটি অভিযোগ প্রতিফলিত হয়:
(ক) নিরাপত্তা পরিষদ সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত করে না।
(খ) এর সিদ্ধান্তসমূহ কেবলমাত্র পশ্চিমী মূল্য ও স্বার্থ প্রতিফলিত করে এবং তাতে কতিপয় বৃহৎ শক্তির একাধিপত্য দেখা যায়।
(গ) নিরাপত্তা পরিষদ সমপ্রতিনিধিত্বের অভাব বোধ করে।
রাষ্ট্রসংঘ সংস্কারের ক্রমবর্ধমান দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মহাসচিব কফি আন্নান রাষ্ট্রসংঘের সংস্কার কিভাবে করা যায় তার জন্য একটি অনুসন্ধান উত্থাপন করেন। নিরাপত্তা পরিষদের নূতন স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবিত রূপরেখাসমূহের কয়েকটি নিম্নে প্রদান করা হল:
প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী একটি সদস্য রাষ্ট্রকে—
(ক) একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হতে হবে।
(খ) একটি বৃহৎ সামরিক শক্তি হতে হবে।
(গ) রাষ্ট্রসংঘের বাজেটে একটি বৃহৎ অঙ্কের যোগানকারী হতে হবে।
(ঘ) জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র হতে হবে।
(ঙ) একটি রাষ্ট্র যা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে।
এই সকল রূপরেখার প্রত্যেকটি কিছু না কিছু যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু কতিপয় ধারা পরিষ্কার না হওয়ায় ঐগুলিকে সমস্যাজর্জরিত মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ কি পরিমাণ একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী সদস্য হতে পারে তা পরিষ্কার বলা হয়নি। ঠিক সেইভাবে রাষ্ট্রসংঘের বাজেটে একটি রাষ্ট্র কি পরিমাণ আর্থিক সাহায্যের যোগান দিলে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন লাভ করতে পারবে তার উল্লেখ নেই। আবার বিশ্বে বিশেষ ভূমিকা পালনে একটি জনবহুল রাষ্ট্র যদি সম্পদ না দেয় তা উপলব্ধি করা দুষ্কর। তাই এই বিষয়ে রূপরেখা আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
ইতিপূর্বে নিরাপত্তা পরিষদে সদস্যদের প্রকৃতি-সম্পর্কিত বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে কোন কোন মহল থেকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ‘ভেটো’ ক্ষমতা লোপ করার দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু সদস্যগণ স্বভাবতই এইরূপ দাবির ঘোর বিরোধী। ‘ভেটো’ ক্ষমতা না থাকলে বৃহৎ শক্তিবর্গ এই বিশ্বসংস্থায় আগ্রহ হারাবে। রাষ্ট্রসংঘে তাদের সমর্থন ও মগ্ন থাকা অফলপ্রসূ হবে।
প্রশ্ন ১১। রাষ্ট্রসংঘ যদিও যুদ্ধ ও যুদ্ধসংক্রান্ত সংকট প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে তথাপি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ একে বহাল রাখতে চায়। কি কারণে রাষ্ট্রসংঘ একটি অপরিহার্য সংস্থায় পরিণত হয়েছে?
উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি ও শীতল যুদ্ধের অবসানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্র। বর্তমানে বিশ্বে এমন কোন রাষ্ট্র নেই যে মার্কিন একাধিপত্য প্রতিরোধ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রসংঘই একমাত্র সংস্থা যা আমেরিকার স্বৈরাচারী ক্রিয়াকলাপ প্রতিরোধ করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এমনকি রাষ্ট্রসংঘের মধ্যেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুল পরিমাণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। রাষ্ট্রসংঘে একক গরিষ্ঠ অর্থদাতা (২২%) হিসাবে আমেরিকার অতুলনীয় আর্থিক ক্ষমতা আছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য কার্যালয় থাকায় স্বভাবতই আমেরিকা তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। রাষ্ট্রসংঘের আধিকারিক ও কর্মচারীবৃন্দের এক বিশাল অংশ আমেরিকার বিভিন্ন জাতিভুক্ত। আমেরিকার ‘ভেটো’ ক্ষমতা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের নিযুক্তি আমেরিকার পছন্দ সুনিশ্চিত করে দেয়।
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রসংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমতা রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু তাছাড়া বিশ্ব ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। অবশ্য একমেরু বিশ্বে রাষ্ট্রসংঘ আমেরিকাসহ অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রবর্গকে অনেক বিষয়ে আলোচনায় বসাতে সফল হয়েছে।
পরিশেষে এটা বলা যায় যে, রাষ্ট্রসংঘ একটি অপূর্ণাঙ্গ সংস্থা হলেও এছাড়া বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হবে। বিশ্বের ক্রমবর্ধমান সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা রাষ্ট্রসংঘহীন বিশ্ব কিভাবে কল্পনা করতে পারি! সুতরাং রাষ্ট্রসংঘ বর্তমান বিশ্বে একটি অপরিহার্য সংস্থা।
প্রশ্ন ১২। “রাষ্ট্রসংঘ সংস্কারের অর্থ হল নিরাপত্তা পরিষদের পুনর্গঠন।” এই যুক্তিতে তুমি একমত কী? এর পক্ষে অথবা বিপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের পুনর্গঠনের অর্থ অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের পুনর্গঠন। নিরাপত্তা পরিষদ রাষ্ট্রসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার প্রধান কার্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই সংস্থা মোট ১৫টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত—৫টি স্থায়ী সদস্য ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য। পাঁচটি সদস্যরাষ্ট্র ‘ভেটো’ ক্ষমতাধিকারী।‘ভেটো’ ক্ষমতা হল নিরাপত্তা পরিষদের কোন প্রস্তাবে যদি কোন স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র সম্মতি প্রদান না করে তখন তা নাকচ হয়ে যায়। কোন দুই দেশ বা দুই-এর অধিক দেশ যদি যুদ্ধে রত হয় তখন নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি পুনরুত্থানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদ সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অঙ্গ সুতরাং তার সংস্কারই হল বহুলাংশে রাষ্ট্রসংঘর সংস্কার। এর সংস্কার অত্যাবশ্যক কারণ সংস্কারের মাধ্যমে অধিক রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবে।