Class 12 Economics Chapter 12 কর্মসংস্থান

Class 12 Economics Chapter 12 কর্মসংস্থান | Class 12 Economics Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter AHSEC Board HS 2nd Year Economics Chapter 12 কর্মসংস্থান Notes and select needs one.

Class 12 Economics Chapter 12 কর্মসংস্থান

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given AHSEC Board Bengali Medium Class 12 Economics Chapter 12 কর্মসংস্থান Solutions for All Subject, You can practice these here.

কর্মসংস্থান

Chapter: 12

খ – অংশ (ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন)

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। শ্রম কাকে বলে ? 

উত্তরঃ যদি উৎপাদনের কাজে দৈহিক বা মানসিক শ্রম নিযুক্ত হয় এবং তার বিনিময়ে যদি অর্থ উপার্জন করা হয় তাহলে তাকে অর্থনীতিতে শ্রম বলে।  

প্রশ্ন ২। উৎপাদনের উপাদান হিসাবে শ্রমের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শ্রমিক তার শ্রম বিক্রি করে তাই শ্রমের যোগানের জন্য শ্রমিকের উপস্থিতি প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৩। কর্মী-জনসংখ্যা অনুপাতের সংজ্ঞা দাও।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ মোট কর্মীর সংখ্যাকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে, 100 দিয়ে পূরণ করলে কর্মী- জনসংখ্যার অনুপাত পাওয়া যায়। ভারতের মোট জনসংখ্যার 40% লোক বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যে নিযুক্ত আছে।

প্রশ্ন ৪। অসংগঠিত বা অবিধিগত ক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা কত ?

উত্তরঃ 10 জনের কম।

প্রশ্ন ৫। সাময়িক মজুরি শ্রমিক কাকে বলে ?

উত্তরঃ সাধারণত দিন মজুরের কাজে সারা বছরে 183 দিনের কম দিন কাজ করেন যারা তাঁরাই সাময়িক মজুরি শ্রমিক (Casual Wage Labourer) বলে গণ্য করা হয়।

প্রশ্ন ৬। বেকারত্বের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ দেশের প্রচলিত মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক ও কর্মক্ষম লোক যদি কর্মসংস্থান না পায় তখন তাকে বেকারত্ব বলে।

প্রশ্ন ৭। বিধিগত বা সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা কত ?

উত্তরঃ 10 জন এবং তার চেয়ে অধিক।

প্রশ্ন ৯। আপেক্ষিক দরিদ্রতা কী ?

উত্তরঃ সম্পদ এবং আয়ের অসম বিতরণে একটি দেশের অর্থনীতিতে আর্থিক অসমতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে সৃষ্টি হওয়া দরিদ্র অবস্থাকে আপেক্ষিক দরিদ্রতা বলে।

প্রশ্ন ১০। ঋতুগত বেকারত্ব কাকে বলে ?

উত্তরঃ কৃষিক্ষেত্রে যারা বছর কাজ না পেয়ে যে বেকারত্বের সৃষ্টি হয় তাকে ঋতুগত বা মরশুমি বেকারত্ব বলে।

প্রশ্ন ১১। যে কোনো এক প্রকার গ্রামীণ বেকারত্ব উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রচ্ছন্ন বা ছদ্মবেশী বেকারত্ব।

প্রশ্ন ১২। BPO শব্দের পুরো অর্থ কী ?

উত্তরঃ Business Process Outsourcing (BPO).

প্রশ্ন ১৩। যে কোনো এক প্রকার শহর বেকারের নাম লেখো।

উত্তরঃ শিক্ষিত বেকার।

প্রশ্ন ১৪। স্ব-নিয়োজন মানে কী ?

উত্তরঃ যে সকল কর্মী নিজে স্থাপন করা উদ্যোগে বা কর্মস্থলীতে কাজ করে জীবন নির্বাহ করে সেই সকল কর্মী হল স্ব-নিয়োজিত কর্মী।

প্রশ্ন ১৫। বহিঃউৎস গ্রহণ (Outsourcing) জাতীয় কয়েকটি সেবার নাম লেখো।

উত্তরঃ কল সেন্টারের চাকুরি, নথিপত্র সংরক্ষণ, পুস্তক অনুবাদ, নিউজিক রেকর্ডিং, চিকিৎসা সম্পর্কীয় পরামর্শ, হিসাব নিকাশ (Accountancy) ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৬। ছদ্মবেশী বেকারত্ব বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদন একই রেখে যতজন শ্রমিককে কৃষিক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় ততজনকে ছদ্মবেশী বা অদৃশ্য বেকার বলা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় যাদের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা শূন্য, তাদের ছদ্মবেশী বেকার বলা হয়।

প্রশ্ন ১৭। শ্রম শক্তির অসংঘটিতকরণ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ শ্রম শক্তির অসংঘটিতকরণ বলতে শ্রমশক্তির স্থায়ী বেতনভোগী কাজ হতে অস্থায়ী মজুরি শ্রমিকে রূপান্তরিত করাকে বোঝায়।

প্রশ্ন ১৮। স্থায়ী বেতনভোগী কর্মী কাকে বলে ?

উত্তরঃ সংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত স্থায়ী কর্মীগণ যারা নিয়মিত বেতন পায় এবং কাজের নিরাপত্তা থাকে তাদের স্থায়ী বেতনভোগী কর্মী বলে।

প্রশ্ন ১৯। অস্থায়ী মজুরি শ্রমিক কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে সকল শ্রমিক অন্যের প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিতভাবে মজুরির বিনিময়ে কাজ করে থাকে তাদেরকে অস্থায়ী মজুরি শ্রমিক বলে। এই সকল শ্রমিকের কাজের স্থায়িত্বের নিরাপত্তা নেই।

প্রশ্ন ২০। শ্রমশক্তির অনানুষ্ঠানিকরণ বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ স্থায়ী বেতনভোগী কর্মচারীকে দৈনিক মজুরি শ্রমিকে পরিবর্তন করাকে শ্রমশক্তির অনানুষ্ঠানিকরণ বলা হয়।

প্রশ্ন ২১। অর্থনৈতিক, কাজকর্ম কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে, কাজকর্মের উদ্দেশ্য হল অর্থ উপার্জন করা তাকে অর্থনৈতিক কাজকর্ম বলে।

প্রশ্ন ২২। সামাজিক কাজ কাকে বলে ?

উত্তরঃ মানুষ ও প্রকৃতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাজটি যদি ঐতিহাসিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নের্ব্যক্তিক নিয়ম অনুসরণ করে হয় তবে তাকে বলা হবে সামাজিক কাজ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। ‘ঋতুজনিত বেকার’ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ কৃষিকার্য হল ঋতু বা মরশুমভিত্তিক। সারা বছরই কৃষিকার্য হয় না। তাই নির্দিষ্ট মরশুম ছাড়া বাকি সময়ে শ্রমশক্তি বেকার হয়ে পড়ে। এরা ঋতুজনিত বেকার বা মরশুমি বেকার নামে পরিচিত। 

শিল্পক্ষেত্রেও ঋতুজনিত বেকার লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ: চিনি শিল্পে সারা বছর কাজ হয় না। যখন আখের ফসল পাওয়া যায় তখন চিনি কলগুলি চালু থাকে। অন্য সময়ে চিনি কলগুলির অনেক শ্রমিক ছাটাই হয়ে যায়।

প্রশ্ন ২। ‘ছদ্মবেশী বেকার’ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই ধরনের বেকার গ্রামীণ অর্থব্যবস্থায় দেখা যায়। গ্রামীণ অর্থব্যবস্থায় কৃষিকার্যে যে পরিমাণ শ্রমশক্তির প্রয়োজন তার থেকে বেশি শ্রমশক্তি কাজে নিযুক্ত থাকে। এই অতিরিক্ত শ্রমশক্তি যাদের উৎপাদনে কোনো প্রয়োজন নেই তারা ছদ্মবেশী বা প্রচ্ছন্ন বেকার নামে পরিচিত। এই ছদ্ম বা অদৃশ্য বেকারদের উৎপাদনশীলতা শূন্য। অর্থাৎ এই উদ্বৃত্ত শ্রমকে উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিলে মোট উৎপাদন অপরিবর্তিত থাকবে।

প্রশ্ন ৩। ভারত সরকার দ্বারা গৃহীত দুটি নিয়োগ সৃষ্টি পরিকল্পনার নাম লেখো।

উত্তরঃ () স্বর্ণ জয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা।

(২) মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ নিয়োগ নিশ্চয়তা কর্মসূচি।

প্রশ্ন ৪। ‘নিয়োগবিহীন উন্নয়ন’ (Jobless growth) কাকে বলে ?

উত্তরঃ দেশে রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধির হার এবং নিয়োগ বৃদ্ধির হার এই দু’য়ের তারতম্য যথেষ্ট। এই অবস্থাকে নিয়োগবিহীন উন্নয়ন বলে।

প্রশ্ন ৫। ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ () Indian agriculture is a gamble in monsoons অর্থাৎ ভারতীয় কৃষি উৎপাদন অতিমাত্রায় প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। এজন্য কৃষি উৎপাদনে যথেষ্ট ওঠানামা লক্ষ্য করা যায়।

(২) ভারতে কৃষির উৎপাদন কৌশল চিরাচরিত ও সাবেকি ধরনের। বৈজ্ঞানিক এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি বেশি ব্যবহৃত হয় না।

(৩) ভারতীয় কৃষির কার্যকলাপ মরশুমি। জলসেচের অভাবের জন্য কৃষিকার্যে‌ বৈচিত্র্য আসেনি। ফলে সারা বছর কৃষিকার্য চলে না। কৃষিতে তাই মরশুমি বেকারত্ব দেখা দেয়।

(৪) ভারতে জনসংখ্যা বাড়ছে অথচ কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না। ফলে কৃষিতে উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা ভিড় করছে। এদের কৃষিকার্য থেকে সরিয়ে নিলেও কৃষি উৎপাদন কমবে না। তাই এদের প্রচ্ছন্ন বেকার বলা হয়।

প্রশ্ন ৬। “If you educate a man, you educate a person; but if you educate a woman, you educate a family” – বাক্যটির তাৎপর্য কী ?

উত্তরঃ এটা আফ্রিকার প্রবাদবাক্য, যার নিহিতার্থ অর্থ হল – 

উন্নয়নশীল দেশে মেয়েদের শিক্ষার জন্য ব্যয় যে কোনো বিনিয়োগের থেকে ভালো ফল দেয়। মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করা হলে তারা বেশি আয় করতে পারে, পরিবারের সকলের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, শিশু মৃত্যুর হার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এবং সমাজের সকলের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। শিক্ষিত নারী যে তার পরিবার ও দেশের পক্ষে সম্পদ এ ধারণাটা ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন ৭। কাজ ও মজুরির ক্ষেত্রে লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্য কি সর্বদাই বৈষম্যমূলক ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, কাজ ও মজুরির ক্ষেত্রে লিঙ্গ ভিত্তিক পার্থক্য সর্বদাই বৈষম্যমূলক। মহিলাদের কাজের একটি বড়ো অংশ হল গৃহশ্রম। আবার বাইরের কর্মক্ষেত্রে ও মেয়েরা কম মজুরি পায়। ভারতের সর্বত্রই নারী ও পুরুষের মজুরির হারে পার্থক্য দেখা যায়। যতই ন্যূনতম মজুরির আইন থাকুক না কেন এদেশে মহিলারা পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পায়। কৃষিকাজ বা ঘরে থেকে যে অর্থনৈতিক কাজকর্ম নারীরা করে, সেখানে ন্যূনতম মজুরি আইন সাধারণত বলবৎ হয় না। এছাড়া ভারতের কোনো রাজ্যেই অসংগঠিত ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে একই কাজের জন্য একই মজুরি দেওয়া হয় ন। যে কাজগুলি মহিলারাই সাধারণত করে থাকে, সে কাজগুলি হালকা বা সেসব কাজে দক্ষতা লাগে না এরকম তকমা লাগিয়ে কম মজুরি দেওয়া হয়। সুতরাং বলা যায়, লিঙ্গবৈষম্যের কবলে আমাদের দেশ এখনও নিমজ্জিত। লিঙ্গ বৈষম্যের ঘেরাটোপ থেকে আমাদের দেশ এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি।

প্রশ্ন ৮। ভারতের বেকার সমস্যার চারটি কারণ উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ (১) উচ্চহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

(২) ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা।

(৩) উন্নয়নের মন্থর গতি।

(৪) অনুপযুক্ত উৎপাদন কৌশল।

প্রশ্ন ৯। ভারতে গ্রামীণ বেকার সমস্যার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং জমির উপর অত্যধিক চাপ।

(২) কৃষির পরিপূরক পার্শ্ব জীবিকার অভাব।

(৩) মরশুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল কৃষি ব্যবস্থা।

প্রশ্ন ১০। ভারতে শিক্ষিত বেকার সমস্যার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) ভারতে কর্মমুখী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার তেমন প্রসার ঘটেনি, যেমন প্রসার ঘটেছে সাধারণ শিক্ষার। এর ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

(২) স্বাধীনতার পর দেশে সাধারণ শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে শিক্ষিত কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের যোগ্যতা সাহিত্য- ভিত্তিক, বাস্তবভিত্তিক নয়।

প্রশ্ন ১১। গ্রাম্য বেকারত্ব কয় প্রকার ও কী কী ?

উত্তরঃ গ্রাম্য বেকারত্ব দুই প্রকার-

(১) ঋতুজনিত বেকার/মরশুমি বেকার/ঋতুজ বেকার।

(২) প্রচ্ছন্ন বেকার/ছদ্মবেশী বেকার/অদৃশ্য বেকার।

প্রশ্ন ১২। শহরীয় বেকার কয় প্রকার ও কী কী ?

উত্তরঃ শহরীয় বেকার দুই প্রকার –

(১) ঔদ্যোগিক বেকার।

(২) শিক্ষিত বেকার।

প্রশ্ন ১৩। আধা বেকারত্ব (Under Employment) মানে কী ?

উত্তরঃ যারা কাজে নিযুক্ত আছে পুরোদমে কিন্তু তাদের পূর্ণ দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না, তারা এই শ্রেণিভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, MA একজন ডিগ্রীধারী কেরানির কাজ করছে বা একজন Ph. D. ডিগ্রীধারী প্রাথমিক স্তরে স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করছে। এরা সবাই আধা বেকারত্বের শ্রেণিভুক্ত। ভারতীয় অর্থনীতিতে এই ধরনের বেকারত্বের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

প্রশ্ন ১৪। ‘ইচ্ছাকৃত বেকারত্ব’ কাকে বলে ?

উত্তরঃ যখন কোনো শ্রমিক প্রচলিত মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে না, তখন সেই ধরনের বেকার ইচ্ছাকৃত বেকারত্বের শামিল।

প্রশ্ন ১৫। ‘অনিচ্ছাকৃত বেকার’ কাকে বলে ?

উত্তরঃ যখন কোনো শ্রমিক কাজ করতে ইচ্ছুক এবং কাজ করতে সক্ষম তবে কাজের অভাবে বেকার অবস্থায় আছে, তখন সেই বেকার অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বের সামিল।

প্রশ্ন ১৬। শহরাঞ্চলে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শিল্প ও শহরাঞ্চলে বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার দুটি কারণ হল –

(১) শিল্পায়নের শ্লথগতি: জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে শিল্পায়ন হচ্ছে না।

(২) শিল্পক্ষেত্রে মূলধন প্রগাঢ় উৎপাদন কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে; তার ফলে শিল্পায়ন ঘটলেও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না।

প্রশ্ন ১৭। গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের সমস্যা দূর করার জন্য দুটি ব্যবস্থা সুপারিশ করো।

উত্তরঃ ‌(১) গ্রামাঞ্চলে সেচের প্রসার ঘটিয়ে বছরের মধ্যে একাধিক ফসল ফলিয়ে অধিক কর্ম সংস্থান সৃষ্টি সম্ভব এবং মরশুমি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

(২) কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে এবং গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব।

প্রশ্ন ১৮। শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকার সমস্যা দূর করার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে ?

উত্তরঃ শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন। পুঁথিগত শিক্ষার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। সেই সঙ্গে দ্রুতহারে শিল্পায়ন ঘটানো দরকার।

প্রশ্ন ১৯। প্রযুক্তিগত বেকারত্ব বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ দেশে যখন অর্থনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন ঘটে তখন যে বেকার সমস্যা দেখা দেয় তাকে কাঠামোগত বেকারত্ব বা প্রযুক্তিগত বেকারত্ব বলা হয়। নতুন উৎপাদন কৌশলের প্রবর্তন, নতুন দ্রব্য আবিষ্কার, নতুন কলাকৌশলের ব্যবহার, শিল্পক্ষেত্রে rationalisation প্রভৃতির ফলে এই ধরনের বেকারত্ব দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। নিয়মিত/সংগঠিত/আনুনাষ্ঠিক খণ্ড (Formal Sector) কাকে বলে ? নিয়মিত খণ্ডের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের সংখ্যা দশ জন বা ততোধিক হয়, এদেরকে সমষ্টিগতভাবে নিয়মিত বা সংগঠিত বা আনুষ্ঠানিক বা বিধিবদ্ধ ক্ষেত্র বলা হয়। 

নিয়মিত খণ্ডের বৈশিষ্ট্য –

(১) নিয়মিত খণ্ডে কাজ করা শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা লাভ করে।

(২) তারা অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে অধিক আয় উপার্জন করতে পারে।

(৩) নিয়মিত খণ্ডের শ্রমিকরা ভবিষ্যনিধি, বীমাকরণ, গ্রেচুইটি, পেন্সন, মাতৃত্বকালীন সুবিধা ইত্যাদি বিধিগত নিয়মানুযায়ী লাভ করে।

(৪) সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োগের মান উন্নত হয় এবং তারা বিভিন্ন দাবী দাওয়া পূরণের জন্য শ্রমিক সংঘ গঠন করতে পারে।

প্রশ্ন ২। কৃষিতে মজুরি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণগুলি লেখো।

উত্তরঃ কৃষিক্ষেত্রে মজুরি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণগুলি নিচে তুলে ধরা হলঃ

(১) ভারতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা রোজগারের স্বল্পতার দরুণ এবং ভূস্বামী ও বেনিয়াদের কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় জমি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(২) গ্রামীণ সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চ হার কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করছে।

(৩) কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পগুলো গ্রামীণ সমাজে পরিপূরক নিয়োগের ব্যবস্থা করত। কিন্তু এই শিল্পগুলোর অবক্ষয় বিকল্প নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের কৃষিজমিতে মজুরির বিনিময়ে কাজ করতে হচ্ছে।

(৪) কাগজে কলমে ভূমি সংস্কার কর্মসূচির কথা বলা হলেও জমির মালিকরা ভাগচাষিকে জমি থেকে উৎখাত করছে। ফলে ক্ষেতমজুরের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রশ্ন ৩। ভারতে বেকারত্বের পরিমাণ কোন সংস্থা গণনা করে ? সংস্থাটি কর্ম দিন কীরূপে বের করে ?

উত্তরঃ National Sample Survey Organisation সংক্ষেপে NSSO ভারতবর্ষে বেকারত্বের পরিমাণ গণনা করে। বেকারের সংখ্যা গণনা করার জন্য NSSO তিনটি ধারণার উদ্ভাবন করেছে

(১) সচরাচর ভিত্তি (Usual Status) বা চলিত বছরের ভিত্তি।

(২) চলিত দৈনিক ভিত্তি (Current daily status)।

(৩) চলিত সাপ্তাহিক ভিত্তি (Current weekly status)।

কোনো ব্যক্তি এক বছরে অর্থাৎ দিনে অন্ততপক্ষে দিন অর্থনৈতিক কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকলে তাকে কর্মরত হিসাবে সাব্যস্ত করা যায়। (সচরাচর ভিত্তি অনুসারে)।

যদি কোনো ব্যক্তি এক সপ্তাহে যে কোনো একদিন অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা কাজ করলে সে কাজে নিযুক্ত আছে বলা যাবে। (চলিত সাপ্তাহিক ভিত্তি অনুসারে)।

প্রশ্ন ৪। কৃষি ও গ্রামীণ বেকারত্বের সমস্যা দূর করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ দাও।

উত্তরঃ গ্রামীণ বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ আমরা করতে পারি।

(১) গ্রামাঞ্চলের বেকারদের কাজের জন্য সেচ, গ্রামীণ বৈদ্যুতিকীকরণ, রাস্তা নির্মাণ এবং গ্রামীণ গৃহ নির্মাণের জন্য বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

(২) বড়ো বড়ো শহর থেকে শিল্পগুলিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে হবে।

(৩) মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

(৪) শিল্পে যন্ত্রের ব্যবহার যতদূর সম্ভব কম করতে হবে।

(৫) কৃষিভিত্তিক শিল্প গ্রামাঞ্চলে গড়ে তুলতে হবে।

(৬) ভূমি সংস্কার কর্মসূচি যথাযথ রূপায়ণ করতে হবে।

প্রশ্ন ৫। তিনটি অর্থনৈতিক খণ্ডের নাম লেখো।

উত্তরঃ

খণ্ডবিভিন্ন বৃত্তির সঙ্গে জড়িত ক্ষেত্রগুলো
প্রাথমিক খণ্ড (কৃষি)কৃষি, পশুপালন, মৎস্যপালন, বনজ ও খনিজ সম্পদ আহরণ।
মাধ্যমিক খণ্ড (উদ্যোগ)কলকারখানা, বিভিন্ন প্রকারের বৃহৎ শিল্প, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প।
তৃতীয় খণ্ড (সেবা)শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসা, ব্যাংক, পরিবহন, বিমা, কলসেন্টার, পর্যটন।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। ভারতে বেকার সমস্যার মূল কারণগুলো বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ বেকার সমস্যার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে নিম্নোক্ত কারণগুলো অন্যতম –

(১) দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বেকার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বর্ধিত জনসংখ্যার অনুপাতে নিয়োগ লাভের সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত নয় বলে বেকার সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

(২) নিয়োগবিহীন উন্নয়ন: দেশে রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধির হার এবং নিয়োগ বৃদ্ধির হার এই দুয়ের তারতম্য যথেষ্ট। এই অবস্থাকে Jobless growth বা নিয়োগবিহীন উন্নয়ন বলে। ফলে বেকার সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে।

(৩) স্থবির কৃষি উন্নয়ন: ভারতবর্ষের মতো একটি কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিব্যবস্থার যেমন উন্নতি হওয়া প্রয়োজন ছিল, সে রকম হয়ে ওঠেনি। ফলে কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে নিয়োগের অভাব পরিকল্পিত হচ্ছে।

(৪) শিল্পায়নের মন্থর গতি: দেশে শিল্পগত উন্নয়ন যে হারে হওয়া প্রয়োজন ছিল, তা না-হওয়াই শিল্পগত বেকার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

(৫) ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা: প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা জনসাধারণকে নিয়োগের উপযোগী করে তুলতে পারছে না। ফলে শিক্ষিত বেকার সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। বৃত্তিমুখী তথা কারিগরী শিক্ষার অভাবে জনসাধারণ স্বাবলম্বী হতে পারেনি।

(৬) সংস্কারের কুফল: ভারতের নয়া অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের পর থেকে যেভাবে বেসরকারিকরণের প্রয়াস শুরু হয় তাতে সরকার সরকারি খণ্ডের কর্মীদের বিদায়নীতি জানাতে বাধ্য হচ্ছে।

প্রশ্ন ২। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ গ্রামীণ বেকার সমস্যা সমাধান করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার 2005 সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত আইন/ NREGA নামে পরিচিত। 2006 সালের 2 ফেব্রুয়ারি সারা ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হল জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটি শুধু একটি প্রকল্পই নয় একটি পুরোদস্তর আইন। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ এলাকায় পরিকাঠামোর ভিত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়ণের নিরিখে মজুরি ভিত্তিক কর্ম নিযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের লোকেদের জীবনধারণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণ করা। পরবর্তীকালে এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয় মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সংস্থান প্রকল্প।

এই প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –

(১) গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারের একজন প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যকে বছরে 100 দিন কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

(২) কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করার 15 দিনের মধ্যে কাজ দেওয়া হবে। 15 দিনের মধ্যে কাজ না পেলে সরকার আবেদনকারীদের দৈনিক বেকারভাতা দেওয়া হবে। বেকার ভাতার পরিমাণ হবে ন্যূনতম মজুরির এক তৃতীয়াংশ।

(৩) প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণকারীদের এক তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।

(৪) সামাজিক সম্পদ যেমন রাস্তা নির্মাণ, পুকুর কাটা, বনসৃজন তথা বৃক্ষরোপণ, খাল খনন, নালা নির্মাণ, কৃষি জমির গুণগত পরিবর্তন করা প্রভৃতি উৎপাদনমূলক কাজে এই শ্রমিকদের নিয়োগ করা হবে।

(৫) গ্রামসভাগুলির উপর প্রকল্পগুলি তৈরির অধিকার দেওয়া হয়েছে।

(৬) পঞ্চায়েতিরাজ সংস্থাগুলি প্রধান ভূমিকায় থাকবে। আবেদনকারীর আবেদন পত্র যাচাই করে গ্রাম পঞ্চায়েত জব কার্ড (Job Card) ইস্যু করবে।

এই প্রকল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী 2008-09 এর মধ্যে দেশের 619 টি জেলাতে এই প্রকল্প চালু হয় এবং 84.51 কোটি পরিবারকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়। মরশুমি বেকারত্ব, প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব তথা অশিক্ষিত বেকারত্বের সমস্যার তীব্রতা বহুলাংশেই হ্রাস পেয়েছে।

প্রশ্ন ৩। পুরুষের তুলনায় মহিলা শ্রমিকের নিয়োগের হার কম কেন ?

উত্তরঃ 2001 সালে ভারতে মহিলা শ্রমিকের অনুপাত 31.6%। এদের একটা বড়ো অংশই অসংগঠিত ক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে এবং বাগিচা শিল্পে নিয়োজিত। মহিলারা সাধারণত কম মজুরির শ্রমে নিযুক্ত। এর পিছনে 

প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ –

(১) মেয়েদের কাজে আগ্রহ বা আসক্তি কম। তাই তাদের কম দক্ষতার কাজ দেওয়া হয়।

(২) মেয়েরা ও নিজেদের পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী হিসাবে গণ্য করে না। পরিবারের আয় পর্যাপ্ত স্তরে পৌঁছে গেলেই তারা অনেক সময় বাইরের কাজ বন্ধ করে দেয়।

(৩) ভালো ও দক্ষ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অনেক সময়ই মেয়েদের থাকে না।

(৪) বাড়ির নানা কাজকর্মেই মেয়েদের সময় ও শক্তি অনেকটা চলে যায়।

(৫) নিয়োগের ক্ষেত্রেও মহিলা অপেক্ষা পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় কারণ মহিলাদের প্রসূতি ছুটি ও অন্যান্য বাড়তি সুবিধা দিতে হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে তা দিতে হয় না।

(৬) বিশেষ শারীরিক সক্ষমতা লাগে অথবা অন্যান্য নানা ঝুঁকি আছে কিংবা রাতের বেলায় কাজ মহিলাদের দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধা অথচ তাদের একই মজুরি দিতে হয়। এজন্য নিয়োগকর্তারা মহিলা অপেক্ষা পুরুষ শ্রমিক বেশি পছন্দ করে।

এ সমস্ত কারণে ভারতে মহিলা অপেক্ষা পুরুষ শ্রমিকের নিয়োগের হার অনেক বেশি।

প্রশ্ন ৪। ভারতে বিভিন্ন ধরনের বেকারত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ ভারতে যে বিভিন্ন ধরনের বেকারত্ব লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(১) মরশুমি বেকারত্ব: ভারতের কৃষি প্রধানত বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। সেচ ব্যবস্থার যথেষ্ট সম্প্রসারণ ঘটে নি। সেজন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই চাষের কাজ হয়ে থাকে। এর ফলে কৃষকদের বা কৃষি শ্রমিকদের বছরের কয়েকমাস বেকার থাকতে হয়। এই ধরনের বেকারত্বকে মরশুমি বেকারত্ব বলা হয়।

(২) প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব: ভারতের কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি লোক নিযুক্ত রয়েছে। বেশ কিছু লোককে যদি কৃষিক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলেও কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদন একই থাকবে। কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদন একই রেখে যতজন লোককে কৃষিক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব তাদের প্রচ্ছন্ন বেকার বলা হয়।

(৩) কাঠামোগত বেকারত্ব: দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় যখন পরিবর্তন ঘটে তখন যে বেকার সমস্যা দেখা দেয় তাকে কাঠামোগত বেকারত্ব বলে। ভারতে বৃহদায়তন শিল্প গড়ে ওঠার ফলে অনেক কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে বেশ কিছু লোক বেকার হয়ে পড়ছে। এই ধরনের বেকারত্বকে কাঠামোগত বা প্রযুক্তিগত বেকারত্ব বলে।

(৪) বাণিজ্যচক্র জনিত বেকারত্ব: বাণিজ্যচক্রের যখন মন্দাবস্থা দেখা দেয় তখন কর্মসংস্থান কমে এবং বেকারি বৃদ্ধি পায়। একে বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্ব বলে। ভারতেও এই ধরনের বেকারত্ব লক্ষ্য করা যায়।

(৫) শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব: ভারতে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে যে বেকার সমস্যা দেখা দেয় তা মূলত শহরাঞ্চলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। দেশে সাধারণ শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তার ঘটে নি। ফলে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্ব দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন ৫। ভারতে কর্ম সংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকার যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য ভারত সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। 

এখানে প্রধান কয়েকটি কর্মসূচির উল্লেখ করা হল –

(১) জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সংস্থান কর্মসূচি (NREP): 1980 সালে এক প্রকল্প চালু হয়। আর্থ সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে অ-কৃষি বিভাগে নতুন নিয়োগের সৃষ্টি করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

(২) সুসংহত গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প (IRDP): 1980 সালে সারা ভারতে এই প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব চাষি পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বনিযুক্তি প্রকল্প হাতে নেবার জন্য গরুর গাড়ীর মত আয় সৃষ্টিকারী সম্পদ বন্টন করা হয়। এই প্রকল্প যেমন স্বনিযুক্তির সংস্থান করে তেমন গরিবির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গরিব মানুষকে সাহায্য করে।

(৩) জওহর রোজগার যোজনা (JRY): 1989 সালে এই যোজনা চালু করা হয়। গ্রামীণ জনগণের লাভজনক নিয়োগের ব্যবস্থা করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। গ্রামীণ পরিকাঠামো তৈরি করা এবং যৌথ সম্পদ সৃষ্টি করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

(৪) জাতীয় গ্রামীণ নিয়োগ নিশ্চিতকরণ আইন (NREGA): গ্রামীণ যে সমস্ত পরিবারের অদক্ষ শ্রমিকেরা কাজ করতে ইচ্ছুক, সরকার ঐ পরিবারগুলিকে প্রতিটি আর্থিক বছরে অন্ততপক্ষে 100 দিনের জন্য মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করবে। এটিই এই আইনের মূলকথা। 2005 সালে সংসদে এই আইন পাশ হয়।

(৫) জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন (NRLM): 2011 সালে এই প্রকল্প চালু হয়। এই যোজনার মূল উদ্দেশ্য হল – স্বরোজগারি কর্মসূচির মাধ্যমে নিয়োগ সাধন করে জীবিকা অর্জনের নবদিগন্ত উন্মোচন করা।

(৬) দীনদয়াল উপাধ্যায় অন্ত্যোদয় যোজনা: 2013 সালে এই যোজনা চালু হয়। এই যোজনার মাধ্যমে শহরাঞ্চলের বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদান করে SHG তৈরি করে বেকারত্বের সমস্যা সমাধান করা।

প্রশ্ন ৬। শহরের নারীদের চেয়ে গ্রামের নারীরা কর্মরত থাকে কেন ?

উত্তরঃ শহরাঞ্চলের মহিলারা আর্থিক দিক দিয়ে গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের চেয়ে অধিক স্বচ্ছল থাকে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারের জীবনযাত্রার মান নিম্নমানের। পরিবারের আকৃতি বড় এবং স্বল্প উপার্জন থাকায় গ্রামাঞ্চলের মহিলারা ও আর্থিক স্বচ্ছলতা আনয়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়। গ্রামাঞ্চলে জল, জ্বালানি, খাদ্য ও পশুখাদ্য সংগ্রহের জন্য মহিলাদের অংশগ্রহণ বেশি।

প্রশ্ন ৭। ভারতে নারী শ্রমিকের পরিসংখ্যান ও পেশাগত কাঠামো সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ ভারতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 2011 সালের জনগণনা মতে, ভারতে প্রতি হাজার পুরুষের বিপরীতে মহিলার সংখ্যা 940 জন। মহিলাদের শিক্ষার মান ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে ভারতে শিক্ষার দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে তফাৎ ক্রমশ কমে আসছে। নারীদের কর্মদক্ষতা ও কর্মে নিজেদের নিয়োজিত করার মানসিকতা‌ দিন দিন বেড়ে চলেছে। শিক্ষা-সংস্কৃতি, কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের কোনও শাখায় নারীরা আজ পিছিয়ে আছে তা বলা যায় না। তবুও বলা যেতে পারে, কর্মক্ষমতায় তথা কর্মনিপুণতায় কোথায় যেন নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি ব্যবধান থেকে গেছে। 2011 সালের আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী, কর্মে অংশগ্রহণে এদেশে লিঙ্গ ব্যবধান আজও 25% অর্থাৎ মোট পুরুষ শ্রমের 51.6% কর্মে নিযুক্ত আছে। এই দুই শতাংশের ব্যবধান হল 25%।

নারী শ্রমিকরা সরকারি ও বেসরকারি, সংগঠিত ও অসংগঠিত সমস্ত ক্ষেত্রেই কমবেশি কর্মে নিযুক্ত আছে। 2003 সালের মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি সংগঠিত ক্ষেত্রগুলিতে মোট কর্মীর 18.4% ছিল নারী শ্রমিক যা সংখ্যায় ছিল 4.97 মিলিয়ন। 2003 সালের 31 মার্চ পর্যন্ত মোট নারী শ্রমিকের 56.6% নিযুক্ত আছে সামাজিক ও ব্যক্তিগত কাজকর্মে, 56.6% নিযুক্ত আছে নির্মাণকার্যে, 9.4% নিযুক্ত আছে কৃষিকার্যে এবং 5.5% নিযুক্ত আছে আর্থিক ক্ষেত্রে, বিমাক্ষেত্রে, বস্তুগত সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্যে। অবশ্য কিছু কিছু কাজে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি দক্ষ। এগুলি হল কৃষিকাজকর্ম, চাপাতা তোলা, ইটভাটার কাজ, চালকলে কাজ, বিড়ি বাঁধা প্রভৃতি। সেজন্য এই জাতীয় কাজে মহিলা শ্রমিকের অনুপাত পুরুষ শ্রমিক অপেক্ষা বেশি। মোট শ্রমিকে তাদের অনুপাত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষের ব্যবধান কমানোর জন্য সরকার প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নারীর প্রত্যক্ষ গতি ত্বরান্বিত করার জন্য নারী শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তভাবে কাম্য।

প্রশ্ন ৮। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে ভারতে জীবিকা কাঠামোর কীরূপ পরিবর্তন ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ উন্নত দেশগুলির অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক ও সেবামূলক কাজকর্মে নিয়োগের শতকরা অংশ ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিয়োগের শতকরা অংশ হ্রাস পায়। ভারতে 1951-2001 এই পাঁচ দশকের তথ্য থেকে‌ দেখা যাচ্ছে পরিকল্পনাকালের শুরুতে 1951 সালে প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত ছিল কর্মরত জনসংখ্যার 72.7%, মাধ্যমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত ছিল 10% এবং সেবাক্ষেত্রে নিযুক্ত ছিল 17.3%। 1971 সাল পর্যন্ত এই অনুপাত মোটামুটি একই ছিল। তারপর প্রাথমিক ক্ষেত্রে‌ নিযুক্ত জনসংখ্যার অংশ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। 2001 সালে প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার শতাংশ ছিল 56.7%। মাধ্যমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার শতাংশ 1951 সালের 10% থেকে বেড়ে 2001 সালে হয় 18.2%। সেবাক্ষেত্রে নিযুক্ত জনসংখ্যার অনুপাত 2011 সালে হয় 25.1%।

পরিকল্পনাকালে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটা সার্বিক পরিবর্তন ঘটেছে। জাতীয় আয়ের উৎস হিসাবে প্রাথমিক ক্ষেত্র তথা কৃষির গুরুত্ব কমেছে আর মাধ্যমিক ক্ষেত্রের গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু জীবিকার ধরনে মাধ্যমিক ক্ষেত্রের অনুকূল বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। জীবিকা কাঠামোর ধরন মোটামুটিভাবে স্থিতিশীলই আছে।

প্রশ্ন ৯। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটা সত্বেও ভারতের জীবিকা কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় নি কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বিগত ছয় দশকে ভারতে জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলেও জীবিকা কাঠামোর ধরনে বিশেষ পরিবর্তন ঘটে নি। 

তার কারণগুলি নীচে আলোচনা রকা হল –

(১) মাথাপিছু আয়ের স্বল্পতা: ভারতে মাথাপিছু আয় কম। স্বল্প মাথাপিছু আয়স্তরে মানুষ তাদের আয়ের বৃহৎ অংশ মৌলিক কতকগুলি প্রাথমিক দ্রব্যের জন্য ব্যয় করে। ফলে অনুন্নত দেশে কৃষি, পশুপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক লোক নিযুক্ত থাকে। মাথাপিছু আয় কম হওয়ায় শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা কম হয়। সীমাবদ্ধ চাহিদা শিল্পোন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করে। শিল্পক্ষেত্রের প্রসার না ঘটলে কৃষির উপর জনসংখ্যার নির্ভরতা কমে না।

(২) দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি: গ্রামাঞ্চলে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক ক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বিশেষ কমেনি। শিল্পের অপর্যাপ্ত বিকাশ, কুটির ও গ্রামীণ শিল্পের বিনাশ গ্রামীণ জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশকে কৃষিনির্ভর করে তুলেছে।

(৩) কৃষিক্ষেত্রে শ্রমের স্বল্প উৎপাদনশীলতা: জীবিকার ধরনে পরিবর্তনের অপরিহার্য পূর্বশর্ত হল, কৃষিক্ষেত্রে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। ভারতে শ্রমিকদের গড় উৎপাদনশীলতা কম। উৎপাদনশীলতা কম হওয়ায় জাতির প্রয়োজনীয় প্রাথমিক পণ্য উৎপাদনের জন্য বেশি সংখ্যক শ্রমিককে প্রাথমিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকতে হয়। কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়লে সংযুক্তি প্রভাবের দরুণ শিল্পজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে। শিল্পের প্রসার ঘটবে এবং উদ্বৃত্ত শ্রমকে কৃষি থেকে শিল্পক্ষেত্রে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

(8) শিল্পায়নের শ্লথগতি: পরিকল্পনার প্রথম থেকেই শিল্প বিকাশের হার যথেষ্ট ছিল না। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে আটের দশকের শুরু পর্যন্ত দেড় দশককাল শিল্প প্রগতির হার হ্রাস পায়। শিল্প বিকাশের শ্লথগতির ফলে কৃষির বাড়তি শ্রমকে শিল্পক্ষেত্রে টেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরিকল্পনাকালে যেসব আধুনিক শিল্প গড়ে উঠেছে সেগুলি মূলধন-নিবিড়। এসব শিল্প অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, এসব শিল্পে আমদানি করা যন্ত্র পাতি ও যন্ত্রাংশের ব্যবহার বেশি। ফলে দেশে ভারী ও আধুনিক শিল্পের বিকাশ হলেও নিয়োগের প্রসার ঘটে নি।

প্রশ্ন ১০। ভারতের গ্রামীণ বেকারত্বের কারণগুলি বর্ণনা করো।

অথবা, 

ভারতের কৃষিক্ষেত্রে বেকার/কর্মহীনতার কারণগুলি লেখো।

উত্তরূ ভারতে গ্রামীণ বেকারত্বের প্রধান কারণগুলি নীচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল –

(১) কৃষি ও গ্রামীণ বেকারত্বের প্রধান কারণ হল গ্রামে জনসংখ্যার চাপ। উন্নয়নের মন্থর গতি ও জনসংখ্যার চাপ একে অপরের ওপর ক্রিয়া করে বেকার সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। উন্নয়নের উচ্চহার বজায় রাখতে পারলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার তীব্রতা কমত, অন্যদিকে তেমনি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে দমিয়ে রাখতে সাহায্য করত।

(২) ভারতে কৃষি উৎপাদন বাড়লে ও কৃষি কাঠামো তেমন উন্নতি লাভ করেনি। সেচ ব্যবস্থার তেমন সুযোগ না বাড়ায় আজও সারা বছর ধরে চাষ হতে পারে না। ফলে মরশুমি বেকার রোধ সম্ভব হচ্ছে ন, প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব দূর করা যাচ্ছে না।

(৩) ব্রিটিশ আমল থেকে যে অবশিল্পায়ন শুরু হয়েছে গ্রামীণ ভারতে আজও তার ধারা অব্যাহত রয়ে গেছে। শহরের পণ্য সামগ্রী গ্রামে ঢুকেছে। আধুনিক শিল্পে তৈরি দ্রব্যের সঙ্গে গ্রামের কুটির শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। ফলে কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে গ্রামীণ ভারতের রক্ষাকবজের কাজ করতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই বেকার সমস্যা বেড়ে চলেছে।

(৪) ভারতে গ্রামীণ বেকারত্বের পেছনে আরো অনেক কারণ আছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শ্রমিকের মধ্যে চলনশীলতার অভাব, কৃষির বৈচিত্র্যহীনতা, কৃষির পরিপূরক পার্শ্ব জীবিকার অভাব, স্থবির কৃষি উন্নয়ন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১১। শহরের স্ত্রীলোকের চেয়ে গ্রামীণ স্ত্রীলোকেরা অধিক কর্মরত থাকে কেন ?

উত্তরঃ গ্রামাঞ্চলে কর্মরত জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ মহিলা, কিন্তু শহর অঞ্চলে কর্মরত জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ মহিলা। শহর অঞ্চলে বিভিন্ন কাজকর্মের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতার প্রয়োজন হওয়ার জন্য শহরাঞ্চলে কর্মরত মহিলার সংখ্যা কম হয়। গ্রামীণ মহিলা শ্রমিকের 80% কৃষি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। মহিলা শ্রমিকরা চারা লাগানো, ফসল কাটা, ফসল বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে। চাষের মরশুমে তিন-চার মাসের জন্য তারা এসকল কাজ করেন। পশুপালনের কাজে সিংহভাগ অংশগ্রহণ করেন মহিলারা। বাকী সময় জীবিকার তাগিদে শহরে অসংগঠিত করেন মহিলারা। বাকী সময় জীবিকার তাগিদে শহরে অসংগঠিত বিভাগে কাজ করতে হয়। নির্মাণ শিল্প, বিড়ি শিল্প, পোশাক তৈরি, সূচের কাজ, জরির কাজ, ধূপকাঠি, দিয়াশলাই শিল্প প্রভৃতি অসংগঠিত শিল্পে মহিলারাই প্রধানত কাজ করেন।

পরিবারে কৃষিকার্যে যুক্ত মহিলাদের কর্মরত বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। যেমন – ফসল ঝাড়া, শুকানো, গুদামজাত করা, খড় শুকানোর মতো কৃষিকাজ যা কৃষি পরিবারের মহিলারা নিজেদের ক্ষেতে সম্পন্ন করেন তা কাজের মর্যাদা পায় না। এই কাজ যখন মহিলারা করেন তখন তাঁরা অকর্মীর পর্যায়ে পড়েন। এছাড়া মজুরির বিনিময়ে মহিলারা যে কাজ করেন তাতে মজুরিও কম হয়। বিভিন্ন দিক দিয়ে মহিলা শ্রমিকদের এই বঞ্চনার চেহারাটা সারা ভারতে নারী শোষণের একটা নগ্ন রূপ।

প্রশ্ন ১২। প্লাবন অভিযানের (Operation flood) ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ 1970 এর দশকে শুরু করা প্লাবন অভিযান বা Operation flood নামক প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তাকে শ্বেতবিপ্লব বা দুগ্ধ বিপ্লব বলা হয়। গুজরাটের আনন্দ শহরকেন্দ্রিক আমূল একটি ডেয়ারি সমবায় আন্দোলন, যাতে প্রায় 25 লক্ষ গুজরাটের দুগ্ধ উৎপাদক আছেন। আমুল (AMUL) গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি অনুপম আদর্শ স্থাপন করেছিল। Operation Flood কেবল ডেয়ারি কার্যক্রম ছিল না, তা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ পরিবারগুলির আয় ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি পথ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top