Class 12 Economics Chapter 11 গ্রামোন্নয়ন

Class 12 Economics Chapter 11 গ্রামোন্নয়ন | Class 12 Economics Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter AHSEC Board HS 2nd Year Economics Chapter 11 গ্রামোন্নয়ন Notes and select needs one.

Class 12 Economics Chapter 11 গ্রামোন্নয়ন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given AHSEC Board Bengali Medium Class 12 Economics Chapter 11 গ্রামোন্নয়ন Solutions for All Subject, You can practice these here.

গ্রামোন্নয়ন

Chapter: 11

খ – অংশ (ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন)

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। গ্রাম্যখণ্ডে মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস কী ?

উত্তরঃ কৃষি।

প্রশ্ন ৩। এশিয়ার বৃহত্তম অসংগঠিত ব্যাংক এর নাম কী ?

উত্তরঃ কুদুম্বশ্রী।  

প্রশ্ন ২। গান্ধীজির মতে, ভারতের প্রকৃত প্রগতি নির্ভর করে কীসের উন্নয়নের ওপর ?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ গ্রাম উন্নয়নের ওপর।

প্রশ্ন ৪। NABARD এর সম্পূর্ণ নাম কী ?

উত্তরঃ Natioan Bank for Agriculture and Rural Development (রাষ্ট্রীয় কৃষি এবং গ্রাম উন্নয়ন ব্যাংক)।

প্রশ্ন ৫। NABARD কত সালে স্থাপিত হয় ?

উত্তরঃ 1982 সালে।

প্রশ্ন ৬। SHG মানে কী ?

উত্তরঃ Self Help Group (আত্ম সহায়ক দল)।

প্রশ্ন ৭। স্বর্ণ বিপ্লব মানে কী ?

উত্তরঃ 1991 থেকে 2003 সালে উদ্যান শস্যের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং এই খণ্ড সুস্থায়ী জীবিকার উপায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। উদ্যান খণ্ডের এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে স্বর্ণ বিপ্লব বলে।

প্রশ্ন ৮। Operation flood (প্লাবন অভিযান) কোন উৎপাদনের সহিত জড়িত ?

উত্তরঃ দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে।

প্রশ্ন ৯। AMUL কোন্ রাজ্যের কোম্পানী ?

উত্তরঃ গুজরাটের ANAND MILK UNION LTD. (AMUL)।

প্রশ্ন ১০। দুগ্ধ উৎপাদনে কোন্ রাজ্য শীর্ষে ?

উত্তরঃ গুজরাটে।

প্রশ্ন ১১। কৃষিদ্রব্য বিপণনের জন্য থাকা বিকল্প সংবাহক একটির নাম লিখো।

উত্তরঃ অপনী মণ্ডি (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান)।

প্রশ্ন ১২। ভারতের গ্রাম্য ঋণের একটি অনানুষ্ঠানিক উৎসবের নাম লেখো।

উত্তরঃ গ্রামীণ মহাজন।

প্রশ্ন ১৩। ভারতে গ্রাম্য ঋণের একটি আনুষ্ঠানিক উৎসের নাম লেখো। 

উত্তরঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক।

প্রশ্ন ১৪। “Jamshedji Tata National Virtual Academy for Rural Prosperity” এই একাডেমী কোন্ সংস্থা স্থাপন করেছিল ?

উত্তরঃ M.S. Swaminathan Research Foundation, Chennai.

প্রশ্ন ১৫। “ভারতীয় কৃষক ঋণের মধ্যে জন্ম হয়, ঋণের মধ্যে বড়ো হয় এবং ঋণের মধ্যেই মৃত্যু হয়” এই উক্তিটি কে করেছিলেন ?

উত্তরঃ এম. এল. ডারলিং।

প্রশ্ন ১৬। জৈবিক সার কী ?

উত্তরঃ জৈবিক সার একটি জৈব বস্তু বা উদ্ভিদ বা প্রাণীর বর্জ্য বিয়োজন থেকে পাওয়া যায়। জৈবিক সার গাছের বৃদ্ধির জন্য মাটির পুষ্টি সাধন করতে ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন ১৭। মৎস্যচাষিরা কাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে ?

উত্তরঃ জলাশয়কে।

প্রশ্ন ১৮। FCI বা Food Corporation of India কত সালে গঠিত হয় ?

উত্তরঃ 1965 সালে।

প্রশ্ন ১৯। উত্তর পূর্ব উন্নয়ন বিত্তীয় নিগম (North Eastern Development Finance Corporation Ltd.) কত সালে স্থাপিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ 1995 সালে।

প্রশ্ন ২০। স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা (SGSY) কত সালে চালু হয় ?

উত্তরঃ 1999 সালে।

প্রশ্ন ২১। ক্ষুদ্র ঋণ (Micro Finance) এর জনক হিসাবে কাকে গণ্য করা হয় ?

উত্তরঃ বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসকে আধুনিককালে ক্ষুদ্র ঋণ এর উদগাত্য হিসাবে গণ্য করা হয়।

প্রশ্ন ২২। Micro Finance মানে কী?

উত্তরঃ ঋণ প্রদানসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাটিই হল Micro Finance। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র ঋণ দিয়ে নিজেদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখে না। এই ঋণকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের জন্য অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২৩। গ্রামীণ উন্নয়ন কাকে বলে ?

উত্তরঃ গ্রাম উন্নয়ন একটি প্রক্রিয়া যা গ্রামীণ এলাকার বসবাসরত মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে।

প্রশ্ন ২৪। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ জ্যাম, জেলি, আচার, সরবত ইত্যাদি।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর 

প্রশ্ন ১। রাসায়নিক সারের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ ইউরিয়া, সুপার ফসফেট, পটাশ, এমোনিয়াম সালফেট।

প্রশ্ন ২। জৈবিক সারের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ গোবর, মানবদেহের বর্জ্য পদার্থ, উদ্ভিদের দেহাবশেষ।

প্রশ্ন ৩। কৃষির আনুসাঙ্গিক/সন্ধিবদ্ধ ক্ষেত্রগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ (১) পশুপালন। 

(২) পোলট্রি চাষ। 

(৩) মাছ উৎপাদন। 

(৪) মৌমাছি প্রতিপালন। 

(৫) উদ্যান চাষ।

প্রশ্ন ৪। সরকারি সংগ্রহমূল্য (Procurement Price) কী ?

উত্তরঃ সরকারি লেডির মাধ্যমে ব্যবসায়ী, উৎপাদক ও মিল মালিকদের নিকট থেকে খাদ্যশস্য ক্রয় করে। যে দামে সরকার এই খাদ্যশস্য ক্রয় করে তাকে সরকারি সংগ্রহমূল্য বলে।

প্রশ্ন ৫। SHG অর্থাৎ আত্মসহায় গোষ্ঠী গঠনের উদ্দেশ্য দুটি লেখো।

উত্তরঃ  (১) আত্মসহায়ক গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে সামূহিকভাবে কাজ করার শক্তি এবং উদ্যম সৃষ্টি করা।

(২) গ্রামীণ জনসাধারণের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল মানসিকতা গড়ে তোলা।

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় গ্রামীণ ঋণের সনাতনী উৎসগুলি কী কী ?

উত্তরঃ আঞ্চলিক মহাজন, বেনিয়া, ভূ-স্বামী ও আত্মীয়স্বজন।

প্রশ্ন ৭। ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থার বন্দোবস্ত বা Micro Finance এর উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ গ্রাম ও শহরাঞ্চলের গরিব লোকদের জন্য স্বল্প পরিমাণে ঋণ প্রদান ও সেইসঙ্গে তাদের সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়ানো ও সার্বিকভাবে জীবনধারণের মানোন্নয়ন করাই হল মাইক্রোফিন্যান্সের উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন ৮। ক্ষুদ্র ঋণের (Micro Credit) সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ ক্ষুদ্র ঋণ হল সমাজের আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বনির্ভর প্রকল্পের জন্য ঋণ, যে প্রকল্পের আয় থেকে ওই সব মানুষ নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। শুধু ঋণ যোগান নয়, পাশাপাশি সঞ্চয়ের সুযোগ, প্রশিক্ষণ ও পারস্পরিক সহযোগিতার মতো একাধিক পরিষেবা বন্দোবস্ত করা হয়।

প্রশ্ন ৯। পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গৃহীত দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের নাম লেখো।

উত্তরঃ (১) ন্যূনতম প্রয়োজন কর্মসূচি (Minimum Needs Programme)।

(২) কাজের জন্য খাদ্য প্রকল্প (Food for Work Programme) ।

প্রশ্ন ১০। কত সালে ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ (PMGSY) চালু হয় ?

উত্তরঃ 2000 সালের 25 ডিসেম্বর মাসে শুরু হয় ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হল সব ঋতুতে গ্রামগুলিতে সড়ক যোগাযোগ অটুট রাখা।

প্রশ্ন ১১। ‘ভারত নির্মাণ প্রকল্প’ কত সালে চালু হয় ? এর একটি উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ 2005 সালে ‘ভারত নির্মাণ প্রকল্প’ চালু হয়। এর উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়ন।

প্রশ্ন ১২। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ নিয়োগ নিশ্চয়তা কর্মসূচি কত সালে চালু হয় ? এর উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ 2006 সালের 2 ফেব্রুয়ারি মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ নিয়োগ নিশ্চয়তা কর্মসূচি চালু হয়। NRHM এর মূল উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলে বেকার যুবকদের বছরে ন্যূনতম 100 দিন কাজ দেওয়া।

প্রশ্ন ১৩। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (NRHM) কত সালে চালু হয় ?

উত্তরঃ 2005 সালে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন চালু হয়। NRHM এর উদ্দেশ্য হল উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রেরণ ও চিকিৎসা বিদ্যার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা।

প্রশ্ন ১৪। অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা কত সালে চালু হয় ? এর উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ 2005 সালের 25 ডিসেম্বর অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা চালু হয়। এর উদ্দেশ্য হল দারিদ্র্যসীমার নীচে অবস্থানকারীদের গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো।

প্রশ্ন ১৫। দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামজ্যোতি যোজনা কত সালে চালু হয় ? এর উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ 2014 সালে এই কর্মসূচি চালু হয়। এর উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সুবন্দোবস্তকরণ।

প্রশ্ন ১৬। স্বচ্ছ ভারত অভিযান কত সালে চালু হয় ? এর উদ্দেশ্য কী?

উত্তরঃ 2014 সালে স্বচ্ছ ভারত অভিযান চালু হয়। এর উদ্দেশ্য হল 2019 সালের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের অনাময় ব্যবস্থার সুবন্দোবস্তকরণ করা।

প্রশ্ন ১৭। অনবীকরণযোগ্য সম্পদের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস।

প্রশ্ন ১৮। উপভোক্তা কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী এবং সেবা বাজার থেকে ক্রয় করে উপভোগ করে তাকেই আমরা ক্রেতা বা গ্রাহক বলি। অর্থনীতির ভাষায় গ্রাহককে উপভোক্তা বলা হয়।

প্রশ্ন ১৯। খাদ্য সুরক্ষা কাকে বলে ?

উত্তরঃ একটি দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে খাদ্য সামগ্রীর উৎপাদন এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে সময় এবং প্রয়োজন অনুসারে জনসাধারণকে খাদ্য বস্তু যোগানের কার্যকে খাদ্য সুরক্ষা বলে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। কৃষি বাজার ব্যবস্থা কী ? ভারতে কৃষি বাজার ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উৎপাদনের পর শস্য গোদামজাত করা, বাজারে চাহিদা বুঝে যোগান দেওয়া এবং লাভজনক দামে সময়মত’ বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে কৃষি বিপণন ব্যবস্থা বা কৃষি বাজার ব্যবস্থা বলে।

ভারতে কৃষি বাজার ব্যবস্থার প্রধান ত্রুটি হল –

(১) মজুত করার সুযোগের অভাব: গ্রামাঞ্চলে শস্য মজুত করার উন্নত ব্যবস্থা থাকে না। শুধু ঠাণ্ডা ঘর নয়, ফসল যাতে ইঁদুরে না খায়, পোকা নষ্ট না করে তার জন্য মজুত মাল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক। কৃষকরা আর্থিক কারণে নিজেদের চেষ্টায় তা গড়ে তুলতে পারে না। সুতরাং মাঠে ফসল বিক্রি না করে তা মজুত করবে সে ব্যবস্থা থাকে না। ফলে কৃষক উৎপাদিত ফসল বেশিটা ভোগ করতে বা তা খুব কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

(২) বিক্রির বাধ্যবাধকতা: ভারতের কৃষকরা গরিব। তারা চাষের কাজে আড়তদার এবং মহাজনের ওপর নির্ভরশীল। অগ্রিম ঋণ গ্রহণ করে কৃষক আড়তদার এবং মহাজনের নিকট দায়বদ্ধ থাকে, তাই ফসল কর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিকট কম দামে ফসল বিক্রয় করতে বাধ্য হয়।

(৩) রাস্তাঘাটের অভাব: এখনও গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাটের অভাব। পণ্যবহন ব্যবস্থা ভীষণ ব্যয় সাপেক্ষ। শুধু ব্যয় সাপেক্ষ নয়, বাজারে ফসল এনে বিক্রি করা সময় সাপেক্ষ। গরিব কৃষকের পক্ষে বাজার সম্পর্কে খবর নেওয়া প্রায় অসম্ভব অর্থাৎ বাজারের সঙ্গে কৃষকের তেমন সংযোগ থাকে না। ফলে সে ফসল মাঠে থেকেই কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।

(৪) মধ্যবর্তী বেপারী ও ফাটকাকারবারীর প্রভাব: কৃষি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী ও ফাটকাকারবারীর দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যায়। শস্য কেনা বেচায় এদের কথাই শেষ কথা। শস্য বেচাকেনায় তারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে দামের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। বাজার ব্যবস্থার মূল কাজ হল প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলা। প্রতিযোগিতার অভাবে সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে না।

(৫) ওজনে কারচুপি: গ্রামে কৃষকরা নিরক্ষর। নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ওজনের কারচুপি প্রায় সময় করে থাকে। ওজনের কারচুপি সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে বড়ো বাধা।

(৬) পণের গুণমান: ভারতে কৃষিপণ্যের গুণমান যাচাই করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নেই বললেই চলে। এর ফলে মান অনুযায়ী পণ্যের শ্রেণীকরণ সম্ভব হয় না। অধিকন্তু, ব্যবসায়ীরা শস্য কিনে তাতে ভেজাল মেশায়। যেমন চালডালে কাঁকর, আটা- ময়দায় ধূলাবালি প্রভৃতি দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে বাজার ব্যবস্থা কখনই ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না। 

প্রশ্ন ২। জৈবিক কৃষি পদ্ধতি কী ? এর চারটি সুফল শনাক্ত করো। 

উত্তরঃ জৈবিক কৃষি পদ্ধতি হল এমন এক চাষ পদ্ধতি যেখানে সার, কীটনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি ব্যবহার না করে খুব বেশি পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন করা হয়। জৈব সার একটি প্রাকৃতিক বস্তু যা গোবর, মানবদেহের বর্জ্য পদার্থ ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ থেকে উৎপন্ন হয়। জৈবিক সার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে হিউমাস উৎপন্ন করে।

জৈবিক কৃষি পদ্ধতির সুবিধা:

(১) ওই পদ্ধতিতে জৈবিক সার প্রয়োগ মাটির গঠন এবং জনসাধারণের ক্ষমতার উন্নতি করে। এটি মাটির সব ধরনের পরিপুষ্টি পূরণ করে।

(২) জৈবিক সার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে হিউমাস উৎপন্ন করে।

(৩) জৈবিক সার কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

(৪) জৈব বর্জ্য পদার্থ ব্যবহারের ফলে খামারের বর্জ্য পদার্থ ও পুনরাবর্তিত (Recycling) হয়।

প্রশ্ন ৩। রাসায়নিক সার ও জৈবিক সারের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ  (১) রাসায়নিক সার এক ধরনের অজৈব লবন কিন্তু জৈবিক সার একটি প্রাকৃতিক বস্তু বা গোবর, মানবদেহের বর্জ্য পদার্থ ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ থেকে উৎপন্ন হয়।

(২) রাসায়নিক সার কারখানায় প্রস্তুত করা হয় কিন্তু জৈবিক সার ক্ষেতে প্রস্তুত করা হয়।

(৩) রাসায়নিক সার মাটিতে কোনো ধরনের হিউমাস উৎপন্ন করে না কিন্তু জৈবিক সার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে হিউমাস উৎপন্ন করে।

(৪) রাসায়নিক সারে গাছের পুষ্টিকর দ্রব্য যেমন – নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। কিন্তু জৈবিক সারে অপেক্ষাকৃতভাবে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পরিপোষক পদার্থ কম থাকে।

প্রশ্ন ৪। জৈবিক কৃষি পদ্ধতি পরম্পরাগত কৃষি পদ্ধতি থেকে তুলনামূলকভাবে ভাল – যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ (১) পরম্পরাগত কৃষি পদ্ধতিতে উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয়। ক্রমাগত সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। জৈবিক কৃষি পদ্ধতিতে উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য জৈবিক সার ব্যবহৃত হয়। জৈবিক সার প্রয়োগ মাটির গঠন এবং জলধারণ ক্ষমতার উন্নতি করে।

(২) বিশ্বের বাজারে জৈবিক কৃষিকার্যের দ্বারা উৎপাদিত কৃষিপণ্যের চাহিদা বেশি। রাসায়নিক কৃষি অপেক্ষা জৈবিক উপায়ে জন্মানো খাদ্যের অধিকতর পুষ্টিগুণ আছে। সুতরাং জৈবিক কৃষিকার্য বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করতে সাহায্য করে।

(৩) জৈবিক সার মাটিতে প্রচুর পরিমাণে হিউমাস উৎপন্ন করে কিন্তু রাসায়নিক সার মাটিতে কোনো হিউমাস উৎপন্ন করে না।

(৪) জৈবিক কৃষি পদ্ধতি কীটনাশকমুক্ত উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী পরিবেশবান্ধব ও পরিবেশ সহনশীল। কৃষির অবিরত উন্নয়নের জন্য আমরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবিক সার প্রয়োগ করা উচিত।

(৫) জৈবিক সার মাটির জল ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি মাটির সবধরনের পরিপুষ্টি পূরণ করে।

প্রশ্ন ৫। ‘কৃষির বৈচিত্র্যকরণ’ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ কৃষির বৈচিত্র্যকরণ হল পরম্পরাগত কৃষির পরিবর্তে বিকল্প কৃষি এবং জৈবিক কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করা বোঝায়।

বচিত্র্যের দুটি দিক আছে – একটি হল শস্য উৎপাদনের পদ্ধতির পরিবর্তন। অন্যটি হল কৃষির ওপর নির্ভরশীল শ্রমশক্তিকে অন্যত্র স্থানান্তরিতকরণ। কৃষিক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার ফলে কৃষির বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে। কৃষিখণ্ডে নিয়োজিত প্রচ্ছন্ন বেকাররা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চর্ম শিল্প, পর্যটন শিল্প প্রভৃতি অমামারজাত খণ্ডে নিয়োগের মাধ্যমে কৃষি তথা গ্রামীণ বৈচিত্র্যকরণে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষি সম্পর্কিত অধিকতর কার্যকলাপ খারিপ ঋতুতে সংগঠিত হয় কিন্তু রবি ঋতুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলসিঞ্চনের অসুবিধা থাকার দরুণ কৃষিকাজ সম্ভব হয় না। ফলে এরূপ সময়ে লাভদায়ক কর্মনিযুক্তি দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই অন্য ধরনের উৎপাদনশীল এবং লাভজনক কাজকর্মের প্রসারের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের অধিক আয় অর্জন দ্বারা গরিবী মোকাবিলা করতে পারি। কৃষির বৈচিত্র্যকরণ সুস্থায়ী জীবনযাত্রার জন্য অপরিহার্য।

প্রশ্ন ৬। ভারতবর্ষের গ্রামীণ ঋণ যোগানকারী অপ্রতিষ্ঠানিক উৎসগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতে কৃষি ঋণের উৎসগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ। অপ্রতিষ্ঠানগত উৎসের মধ্যে প্রধান হল গ্রামীণ মহাজন, ব্যবসায়ী, আত্মীয়স্বজন প্রভৃতি। সারা ভারত গ্রামীণ ঋণ সমীক্ষা কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, 1950-51 সালে মোট কৃষি ঋণের প্রায় 93% এসেছিল অপ্রতিষ্ঠানগত উৎস থেকে। 93% এর মধ্যে 70% সরবরাহ করত হাজনরা। আত্মীয়স্বজন সরবরাহ করত প্রায় 14% । 1971-72 সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ এসেছিল প্রায় 68%। এর মধ্যে মহাজনদের যোগান দেওয়া ঋণের অংশ প্রায় 49%। 1981 সালে কৃষি ঋণের প্রায় 37% হল অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগত উৎসের গুরুত্ব সম্প্রতি বাড়ছে। তথাপি অ-প্রতিষ্ঠানগত উৎস থেকে এখনও মোট ঋণের বেশ বড়ো অংশ আসে। মহাজনদের ঋণের সুদের হার বেশি। তারা কৃষকদের সঙ্গে নানা প্রতারণা করে তাদের ঋণের ফাঁদে আটকে রাখে। অনেক সময় তারা বন্ধক রাখা জমি আত্মসাৎ করে। এছাড়া, চাষির দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের ফসল কম দামে কিনে নেয়। আবার, দারিদ্র্যের জন্যই চাষিরা তাদের কাছ থেকে সার ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ কেনে। এসব সত্বেও এই মহাজনদের কাছ থেকে চাষিরা ঋণ নেয়। কারণ, এরা অনুৎপাদনশীল ভোগ্য ঋণও দিয়ে থাকে। তাছাড়া, মহাজনদের ঋণদান পদ্ধতি খুব সহজ ও সরল কিন্তু প্রতিষ্ঠানগত ঋণ পেতে নানা নিয়মকানুন মানতে হয়। এ সমস্ত কারণে এখনও গ্রামীণ ঋণ সরবরাহে মহাজনদের প্রাধান্যই বেশই দেখতে পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৭। আত্মসহায়ক গোষ্ঠী (Self Help Group) কাকে বলে ? আত্মসহায়ক গঠনের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ আত্মসহায়ক গোষ্ঠী হচ্ছে একটি অঞ্চলের স্বইচ্ছায় জোটবদ্ধ কিছু লোকের দল বা গোষ্ঠী যাদের আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল। সাধারণত 10 থেকে 20 জন সদস্য/সদস্যাকে নিয়ে এ ধরনের গোষ্ঠী গঠন করা যায়। এই গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য হচ্ছে গোষ্ঠীর সদস্য/সদস্যাকে দারিদ্র্যতা দূরীকরণের জন্য সামূহিক উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে একজোট হয়ে কাজ করার প্রয়াস। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা এবং কর্মসংস্থান না পাওয়া শ্রেণির লোকেরাই এই ধরনের গোষ্ঠী গঠন করে ব্যাংক, নেডফি ইত্যাদি বিত্তিয় অনুষ্ঠান থেকে ঋণ লাভ করে। আত্মসহায়ক গোষ্ঠী কর্মসংস্থানহীন যুবক-যুবতীদেরকে বিভিন্ন ধরনের উপার্জনের পথ বের করতে সাহায্য করে। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্য সীমারেখার নীচের লোকেরা হাঁস-মুরগি পালন, কাপড় বোনা, বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ ইত্যাদি প্রকল্প গ্রহণ করে স্ব- নিয়োজনের পথ বের করতে পারে। এই গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্য/সদস্যাই নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করে এক সামূহিক পুঁজি গঠন করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে তাদের একটি সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে। অনেক সময় গ্রামের মামুষ ব্যক্তিগতভাবে কোনো ব্যবসায়ের কার্যসূচি হাতে নিলেও বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে অবশেষে সেই একই ব্যবসা যদি একটি গোষ্ঠী সামূহিকভাবে পরিচালনা করে তাহলে সেই ব্যবসা স্থায়ী ও লাভজনক হবার সম্ভাবনা থাকে।

এইসব কারণেই আত্মসহায়ক গোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা গ্রামের লোকদের উপলব্ধ হয়েছে যাতে দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে স্বনিয়োজনের পথ উন্মুক্ত হয় এবং আত্মনির্ভরশীল মানসিকতা গড়ে উঠে।

প্রশ্ন ৮। উত্তর পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশে NEDFI অর্থাৎ উত্তর পূর্ব উন্নয়ন বিত্তীয় নিগমের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তরঃ উত্তর পূর্ব ভারতের অন্তর্গত রাজ্যসমূহের বিত্তীয় সাহায্য প্রদানের নিমিত্তে 1995 সালে North Eastern Development Finance Corporation Ltd. সংক্ষেপে নেফডি স্থাপন করা হয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় গুয়াহাটিতে অবস্থিত। ক্ষুদ্র উদ্যোগ, কুটির উদ্যোগ, হস্ততাঁত এবং বস্ত্র উদ্যোগ, আত্ম সহায়ক গোষ্ঠীর উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রির জন্য এই নিগম সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। নেডফির সাহায্যে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহ বিক্রির জন্য গুয়াহাটীর আমবাড়িতে নেডফিহাট নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। 

নেডফির মুখ্য কাজ হল অঞ্চলটির স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে উৎপাদনমুখী কাজে সহযোগিতা করা এবং গ্রামীণ জনসাধারণের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা। 

উত্তর পূর্ব ভারতের মাটি এবং জলবায়ুর ভিন্নতাই এই স্থানকে নানা ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বাসভূমি করে তুলেছে। নানা ধরনের ওষুধি এবং সুগন্ধি গাছপালায় এর বনাঞ্চল ভরে আছে। এর জলবায়ু এবং বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে অনেক মূল্যবান উদ্ভিদ ঔদ্যোগিক শস্য হিসেবে চাষ করে বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ গড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করার ওপর নেডফি গুরুত্ব দেয়।

উত্তর পূর্ব ভারতের অন্তর্গত রাজ্যসমূহের জনসাধারণকে নেডফি কৃষি, ওষধি বৃক্ষরোপণ, রেশম উদ্যোগ, কুটির উদ্যোগ, হস্ততাঁত এবং বস্ত্র উদ্যোগ, শূকর পালন, মীন পালন, মৌ পালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে আসছে। নেডফি Micro Finance Scheme এর সাহায্যে মহিলাদেরকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আত্মসহায়কগোষ্ঠী সমূহ এই প্রচেষ্টারই ফসল।

প্রশ্ন ৯। নাবার্ড সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ দেশের কৃষি এবং গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্য সামনে রেখে ভারত সরকার 1982 সালে রাষ্ট্রীয় কৃষি এবং গ্রাম উন্নয়ন ব্যাংক (NABARD) নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। NABARD এর পুরা নাম হল National Bank for Agriculture and Rural Development। এই ব্যাংক সব ধরনের কৃষি ঋণের সঙ্গে গ্রাম উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রকল্প ইত্যাদির জন্যও ঋণ প্রদান করে।

এই ঋণসমূহ হ্রস্বকালীন (18 মাসের জন্য) এবং দীর্ঘকালীন (25 বছরের জন্য) দেওয়া হয়। সমবায় ব্যাংক, ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে এই ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। গ্রামীণ ঋণ সরবরাহের জন্য নাবার্ড ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক তার কৃষি ঋণের কাজ নাবার্ডের হাতে সমর্পণ করে। নাবার্ড সরকারের ঋণ নীতি সঠিকভাবে গ্রামস্তরে কার্যকরী করার দায়িত্ব গ্রহণ করে। কৃষি ঋণ কাঠামোকে সাংগঠনিক স্তরে ওপর থেকে তলা পর্যন্ত সাজিয়ে ঋণের প্রবাহকে অব্যাহত রাখাই হল ঋণের জগতের এই নেতৃত্বকারী সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য।

উপরের আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, NABARD পুন অর্থ সরবরাহ, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও সহকারী ব্যাংকগুলিকে পরিদর্শনমূলক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি রূপায়ণে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হল নাবার্ড।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় গ্রামীণ ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎসগুলির নাম লেখো।

অথবা, 

কৃষিক্ষেত্রে ঋণ সরবরাহকারী সংগঠিত আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ গ্রামীণ ঋণের প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হল –

(১) প্রাথমিক কৃষি ঋণ দান সমিতি।

(২) আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক (RRB)।

(৩) সমবায় ব্যাংক।

(৪) বাণিজ্যিক ব্যাংক।

(৫) নাবার্ড (NABARD)।

(৬) নেডফি (NEDFI)

প্রশ্ন ১১। গ্রামীণ ঋণের উৎস হিসাবে সমবায় ঋণ দান সমিতি এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তরঃ সমবায় ঋণ দান সমিতি: সমবায় আন্দোলনের সূত্রপাত হয় প্রাক-স্বাধীন ভারতে। তবে তা গতি পায় বিংশ শতাব্দীর 60 এর দশকে। স্বাধীনোত্তর ভারতে গ্রামীণ সাধারণ মানুষকে অর্থনীতির ক্রিয়াকাণ্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার লক্ষ্যে, তাদের যৌথ জীবনের অংশীদার করার উদ্দেশ্যে সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। সরকারি সাহায্যে গড়ে ওঠে, সমবায় ঋণ দান সমিতি। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আঞ্চলিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রতিপত্তি ভেঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের দ্বারা আনুষ্ঠানিক ঋণদান সমিতি গড়ে তোলার সূচনা হয়। 1994-95 সালে ভারতে প্রাথমিক কৃষি ঋণ দান সমিতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 88,000। তারা কৃষকদের মোট 9460 কোটি টাকা ঋণ দেয়। 1951-52 সালে এই প্রতিষ্ঠান মোট গ্রামীণ 31% ঋণের মাত্র ঋণ দিত, 1981-82 সালে এই অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় 28.6%। 1997-98 সালে সমবায় মোট সংগঠিত ঋণের 44% যোগান দেয়। 2004-05 সালে তা কমে হয় প্রায় 30%। সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার ফলে মহাজনের গুরুত্ব হ্রাস পায়।

বাণিজ্যিক ব্যাংক: 1969 সালে ব্যাংক জাতীয়করণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের ঋণ কাঠামোকে উন্নয়নমুখী এবং শোষণমুক্ত করা। 1969 সালে 14 টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং 1980 সালে আরও 6 টি ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হয়। ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্বকরণ হওয়ার পর গ্রামীণ ঋণ কাঠামোয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা রেড়ে যায়। 1969 সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কৃষিতে ৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। 2004-05 সালে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় 72,886 কোটি টাকা। 1967-68 সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি মোট গ্রামীণ ঋণের মাত্র 2% যোগান দিত, 1981-82 সালে এই অনুপাত বেড়ে দাঁড়ায় 29%। 1978-79 সালে বাণিজ্যিক ব্যাংক মোট সংগঠিত ঋণের 50% যোগান দেয়।

প্রশ্ন ১২। পশুপালন, মীনচাষ এবং উদ্যান শস্যকে বৈচিত্র্যকরণের উৎস হিসেবে মূল্যায়ণ করো।

উত্তরঃ (ক) পশুপালন: ভারতে গরু ছাগল ভেড়া ইত্যাদি ব্যাপক হারে পালন করা হয়। পশুপালন কৃষকদের পরিবারের আয়, খাদ্য সুরক্ষা, যাতায়াত, ইন্ধন এবং পুষ্টির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে। পশুপালন খাদ্য উৎপাদনের কার্যকলাপে কোনো বাধা দান করে না। বর্তমানে এই খণ্ডে 70 মিলিয়নের অধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির জীবিকা প্রদান করে।

(খ) মীন চাষ: জলাশয়কে মৎস্যজীবিরা মা বলে আখ্যায়িত করেন কারণ ইহা তাদের জীবন ধারণের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ জলাশয় হতে মোট 49% মৎস্য উৎপাদন হয়। অবশিষ্ট 51% মৎস্য সমুদ্র হতে উৎপন্ন হয়। মোট মৎস্য উৎপাদন GDP তে 1.4% অবদান রাখে।

(গ) উদ্যান শস্য: ভারতে বিচিত্রধর্মী উদ্যান শস্য যেমন – ফলমূল, শাকসব্জী, রাবার গাছ, ফুল, নানান প্রকার ভেষজ বৃক্ষ প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এই উদ্যান শস্যসমূহ ব্যাপক হারে নিযুক্তির পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহের ক্ষেত্রে সঞ্জীবনী ভূমিকা গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ১৩। ভারতে গ্রামীণ বা কৃষি ঋণের কারণগুলি লেখো।

উত্তরঃ ঋণ গ্রামীণ কৃষি ভিত্তিক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নিজস্ব, মূলধন না থাকায় কৃষককে সময় সময় ঋণ নিতে হয়। বলা হয় যে, ‘Credit supports the farmer as the hangman’s rope supports the hanged’ অর্থাৎ ফাঁসির দড়ি যেমন ফাঁসির আসামিকে ধরে রাখে, কৃষি ঋণও কৃষককে সেইভাবে ধরে রাখে।

ভারতে কৃষি ঋণের কারণগুলি নিম্নরূপ-

প্রথমত, গরিব ও প্রান্তিক কৃষকরা পুরানো ঋণ শোধ করতে নতুন ঋণ নিতে বাধ্য হয়।

দ্বিতীয়ত, তাদের আয় থেকে ব্যয় বেশি। এই ঘাটতি মেটাতে তাদের ঋণ করতে হয়। সংসারের খরচ চালাতে যেমন ঋণ গ্রহণ করতে হয় তেমনি উৎপাদন কাজের জন্য ঋণ করতে হয়। অভাবের তাড়নায় তারা শেষে দানাশস্য পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়। বীজ, সার ও বিভিন্ন উপকরণের জন্য অর্থের সংস্থান করতে হয় ঋণ করে।

তৃতীয়ত, গ্রামীণ জীবনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আচার, প্রথা, লৌকিকতা মেনে চলার জন্য তারা খরচ করতে বাধ্য করে। আর ঋণের মাধ্যমেই এই খরচের অর্থ জোটে।

চতুর্থত, প্রায় বছর বন্যা নতুবা খরার কারণে কৃষিকার্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করবার জন্য ঋণ করতে বাধ্য হয় দুর্দসাগ্রস্ত কৃষক।

পঞ্চমত, শহরাঞ্চলের উন্নতমানের জীবনযাত্রা অথবা টিভি মোবাইলের চোখ ঝলসানো দৃশ্যাবলীর প্রভাবে গ্রামাঞ্চলের নতুন প্রজন্মের যুবক যুবতীরা অভিভাবককে বাধ্য করে দামী পোষাক ও সাজসজ্জাদির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে। এই দুঃসহ অধিকতর ঋণ গ্রস্ত হয়।

প্রশ্ন ১৪। ‘জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন’ (NRLM) কত সালে ভারত সরকার গ্রহণ করে। এই মিশনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ 2011 সালের 3 জুন জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা যোজনা (National Rural Livelihood Mission বা NRLM) চালু হয়। এই যোজনার আরও একটি নতুন নামকরণ হয় যা হল অজীবিকা। এই যোজনা গরিব লোকদের জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োগ করা হচ্ছে। 

জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি চিহ্নিত গরিব পরিবার থেকে অন্ততপক্ষে একজনকে স্বরোজগারি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(২) এই মিশনের মাধ্যমে গরিব লোকদের কাজকর্মের সুবিধার উদ্দেশ্যে সুদক্ষ করার সংকল্প গৃহীত হয়।

(৩) এই কর্মসূচির মাধ্যমে স্বরোজগারি গোষ্ঠীকে উপযুক্ত অর্থ সরবরাহ করা, ঋণের সুদে ভর্তুকি দেওয়া ও মূলধন ভর্তুকি দেওয়ার সংকল্প গৃহীত হয়েছে।

(৪) এই কর্মসূচির মাধ্যমে স্বরোজগারি গোষ্ঠীদের কাজকর্মের গতি ত্বরান্বিত করার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের উৎপাদনের বিপণন ব্যবস্থার উদ্ঘাটন করার সংকল্প গৃহীত হয়।

(৫) সরকারি ব্যাংকগুলিকে দেশের সমস্ত জেলায় গ্রামীণ স্বরোজগারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহিত করা এর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

প্রশ্ন ১৫। গ্রামীণ উন্নয়ন বলতে কী বোঝ ? গ্রামীণ উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করো।

উত্তরঃ গ্রাম উন্নয়ন বা গ্রামীণ বিকাশ হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের মান এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রক্রিয়া, প্রায়শই অপেক্ষাকৃত বিচ্ছিন্ন এবং সামান্য জনবহুল এলাকায়। গ্রামীণ উন্নয়ন একটি ব্যাপক শব্দ। এটি মূলত মূলধারার শহুরে এলাকার বাইরের এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের পদক্ষেপের উপর মনোযোগ দেয়।

গ্রাম উন্নয়নের সঙ্গে বিষয়গুলি হল –

(১) মানব সম্পদ উন্নয়ন।

(২) ভূমি সংস্কার।

(৩) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়ন ।

(৪) দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা এবং কর্মভিত্তিক নিয়োগের সুযোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।

(৫) প্রত্যেক স্থানীয় এলাকার উৎপাদনশীল সম্পদ উন্নয়ন।

প্রশ্ন ১৬। ভারতে গ্রামীণ/কৃষি ঋণের কুফল লেখো।

উত্তরঃ গ্রামীণ বা কৃষি ঋণের নিম্নলিখিত কুফলগুলি লক্ষ্য করা যায় –

প্রথমত, উত্তরোত্তর ঋণ গ্রহণের ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত, ঋণ গ্রহণের ফলে ক্ষুদ্র কৃষকের পরিশ্রম লব্ধ ফসলের মোটা অংশ গ্রামীণ মহাজন ও সুদখোর ব্যবসায়ীগণ আত্মসাৎ করে। এইজন্য কৃষকের উৎসাহ ও উদ্দীপনা নষ্ট হয়ে যায়।

তৃতীয়ত, ঋণ গ্রহণের ফলে কৃষক তার উৎপন্ন ফসল স্বল্প দামে ব্যবসায়ী বা মহাজনের নিকট বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

চতুর্থত, ঋণ পরিশোধ করার জন্য বহু কৃষক নিজে ভিটে মাটি মহাজনের নিকট বিক্রয় করতে বাধ্য হয় এবং অবশেষে গৃহহীন হয়ে সম্পূর্ণরূপে দাসত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ১৭। ভারতবর্ষে গ্রাম্য ঋণ যোগানকারী অনানুষ্ঠানিক উৎস আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতবর্ষে গ্রাম্য ঋণ যোগানকারী অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলি নিচে আলোচনা করা হল –

(১) মহাজন: পেশাদার মহাজনদের প্রধান ব্যবসা হল সুদের বিনিময়ে ঋণ দান করা। 1950-51 সালে এই মহাজনগণ মোট গ্রামীণ ঋণের 70% যোগান দিত। তারা কৃষকদের নিকট থেকে উচ্চ হারে সুদ আদায় করত এবং নানা দুষ্টবুদ্ধির আশ্রয় নিয়ে সহজ সরল নিরক্ষর গ্রামীণ সমাজকে শোষণ ও বঞ্চনা করত। বর্তমানে মহাজনদের প্রভুত্ব হ্রাস পেয়েছে। তারা মোট ঋণের 5% সরবরাহ করে।

(২) ব্যবসায়ী এবং কমিশন এজেণ্ট: তারা কৃষকদেরকে অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকে এবং ফসল কাটার সঙ্গে সঙ্গে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে লয়। কৃষিজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করাই তাদের ব্যবসা।

(৩) আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবর্গ: গ্রামীণ সমাজে আর্থিক অনটনের সময় আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে। এরূপ ঋণের সুদ কম হয় বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদ দিতে হয় না।

(৪) মাটির মালিক/ভূ-স্বামী: গ্রামীণ কৃষক, ভাগচাষী অর্থের প্রয়োজনে জমির মালিকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে। বিনিময়ে কৃষকের পরিশ্রমলব্ধ ফসলের সিংহভাগ জমির মালিক আত্মসাৎ করে। ফলে কৃষকের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ক্রমে বেগারে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ১৮। ভারতের কৃষি সামগ্রী বেচাকেনা ব্যবস্থার দোষ ত্রুটি দূরীকরণের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার উল্লেখ করো।

অথবা, 

বিপণন ব্যবস্থার উন্নতিতে সরকারি প্রচেষ্টা বা ব্যবস্থাগুলি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ কৃষি পণ্য সামগ্রীর বেচাকেনার ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া সমস্যাগুলির সমাধানকল্পে সরকার নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করেছে –

(১) সরকার কৃষি পণ্য আইন চালু করে নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা চালু করার নীতি গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ভারতে 7161 টি নিয়ন্ত্রিত বাজার গড়ে উঠেছে। উৎপাদক, ব্যবসায়ী এবং সরকারি প্রতিনিধিদের নিয়ে বাজার কমিটি তৈরির ব্যবস্থা হয়েছে। পণ্যের গুণমান বজায় রাখা, ওজন ঠিক রাখা, দামের ওপর তদারকি করা, ব্যবসায়ীদের সরকারি লাইসেন্স দেওয়া এসবই দেখভালের দায়িত্ব এই বাজার কমিটির।

(২) কৃষকদের শস্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম ঘর প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে 1962 সালে ভারতে কেন্দ্রীয় গুদাম নিগম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজ্য ও জেলা স্তরে রাজ্য ও জেলা গুদাম নিগম প্রতিষ্ঠা করা হয়। 2000 সালে নতুন শস্য মজুত নীতি চালু হয়। 21 লাখ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ঠাণ্ডা ঘর নির্মাণের কাজ হয়েছে।

(৩) রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য ও গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার কৃষি বিপণন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তোলে। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্যশস্য কেনার দায়িত্ব’ Food Corporation of India নামক সরকারি নিগমকে অর্পণ করেছে। সরকারি সংগ্রহ ও বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদকরা ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (Minimum Support Price) অর্জন করতে সক্ষম হয়।

(৪) মহাজনদের কবল থেকে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য সরকারি প্রচেষ্টায় সমবায় ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, NABARD ইত্যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে কৃষকদের উৎপাদনশীল কাজে ঋণ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ভোক্তা সমবায় সমিতি কৃষকদের উৎপাদিত দ্রব্য সংগ্রহ ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে মহাজনদের শোষণ থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে।

(৫) গ্রামীণ পরিকাঠামোতে প্রভূত উন্নতি সাধনের জন্য 2005 সালে ভারত নির্মাণ প্রকল্প চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে 1000 এর বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট সমস্ত জনবসতিকে সব সময়ে ব্যবহারের উপযোগী সড়কপথে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে কৃষকের পক্ষে বাজার সম্পর্কে খবর নেওয়া, নিয়মিত বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে অর্থাৎ বিপনিকরণ ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারবে।

প্রশ্ন ১৯। আত্ম সহায়ক গোষ্ঠী গঠনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ আত্ম সহায়ক গোষ্ঠী গঠনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলি হল –

(১) আত্ম সহায়ক গোষ্ঠী গঠনের মাধ্যমে সামূহিকভাবে কাজ করার শক্তি এবং উদ্যম সৃষ্টি করা।

(২) উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে বিত্তীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা নেওয়া।

(৩) গোষ্ঠীর সদস্য/সদস্যাদের সামূহিক অর্থনৈতিক কার্যসূচি গ্রহণ করা।

(৪) গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা।

(৫) গ্রামের জনসাধারণের মধ্যে সজাগতা সৃষ্টি করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মানসিকতা তৈরি করা।

(৬) ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং সামূহিক ঋণ পাওয়াতে সাহায্য করা।

প্রশ্ন ২০। খাদ্যশস্যের গণবন্টন ব্যবস্থা কাকে বলে ? এই ব্যবস্থার দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ যে ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে এবং সংগৃহীত খাদ্যশস্য র‍্যাশন দোকান মারফৎ জনসাধারণের মাধ্যমে বন্টন করে তাকে খাদ্যশস্যের গণবন্টন ব্যবস্থা বলে। 

খাদ্যশস্যের গণবন্টন ব্যবস্থার দুটি উদ্দেশ্য হল –

(১) খাদ্যশস্যের উৎপাদক এবং ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করা।

(২) বাজারে খাদ্যশস্যের দামে স্থায়িত্ব আনা যাতে দাম খুব বেশি ওঠা নামা না করে।

প্রশ্ন ২১। ভারতবর্ষের কৃষি বিপণন ব্যবস্থার যে কোনো চারটি ত্রুটি লেখো।

উত্তরঃ ভারতবর্ষের কৃষি বিপণন ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো নিম্নরূপ –

(১) কৃষিপণ্যের উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাব। গুদামঘরের অপ্রতুলতার জন্য প্রায় দশ শতাংশ শস্যের অপচয় ঘটে।

(২) ত্রুটিপূর্ণ ওজন পদ্ধতি, হিসাবে গরমিল এবং বাজারে প্রচলিত মূল্যের ভুল তথ্য পরিবেশন করে মহাজন এবং ব্যবসায়ীরা কৃষকদেরকে শোষণ করে।

(৩) যাতায়াত ও পরিবহনের অসুবিধার জন্য গ্রামের চাষিরা তাদের পণ্যদ্রব্য কোনো সংগঠিত বাজারে নিয়ে যেতে পারে না। বাধ্য হয়ে কম মূল্যে গ্রামের বাজারে বিক্রয় করতে হয়।

(৪) দারিদ্র্যের জন্য কৃষকগণ গ্রামের মহাজনের নিকট ঋণের দায়ে আবদ্ধ থাকে। সেজন্য চাষি স্বল্প দামে এদের কাছে কৃষি পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ২২। রেশন ব্যবস্থা কী ? রেশন ব্যবস্থার দুটি সুবিধা লেখো।

উত্তরঃ যে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী যোগানে ঘাটতি থাকে তাদের ভোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করে ধনী গরিব নির্বিশেষে প্রত্যেক পরিবারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ দেওয়ার ব্যবস্থাকে ভোগ বরাদ্দ প্রথা বা রেশন ব্যবস্থা বলে।

রেশন ব্যবস্থার দুটি সুবিধা হল –

(১) রেশন কার্ডের মাধ্যমে সকল ক্রেতাই নির্ধারিত পরিমাণ দ্রব্য নির্দিষ্ট দামে ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে ক্রয় করতে পারে।

(২) রেশন ব্যবস্থার দ্বারা কালো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top