Class 11 Political Science Chapter 7 যুক্তরাষ্ট্রবাদ

Class 11 Political Science Chapter 7 যুক্তরাষ্ট্রবাদ answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 7 যুক্তরাষ্ট্রবাদ and select needs one.

Class 11 Political Science Chapter 7 যুক্তরাষ্ট্রবাদ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 7 যুক্তরাষ্ট্রবাদ Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

যুক্তরাষ্ট্রবাদ

পাঠ:

প্ৰথম খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সংবিধানের কোন্ ধারায় ভারতবর্ষকে ‘রাজাসমূহের একটি সংঘ’ বলা হয়েছে?

উত্তরঃ সংবিধানের ১ নং ধারায়। 

প্রশ্ন ২। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কোন্ অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব সংবিধান আছে?

অথবা, 

নিজস্ব সংবিধান থাকা ভারত যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র রাজ্যটির নাম লেখো?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর।

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ ধারায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জনজাতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?

উত্তরঃ ৩৭১ নং ধারায়।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র সাংবিধানিক কি নামে পরিচিত?

উত্তরঃ “রাজ্যসমূহের সংঘ” নামে। 

প্রশ্ন ৫। কেন্দ্রীয় সরকারের কোন বিভাগ অবশিষ্ট ক্ষমতা প্রয়োগ করে? 

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় আইনসভা বা সংসদ।

প্রশ্ন ৬। “যুক্তরাষ্ট্র হল এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাতে ঐক্য ও শক্তির সঙ্গে অঙ্গরাজ্যের সমন্বয় সাধন হয়।” এই উক্তিটি কার?

উত্তরঃ অধ্যাপক ডাইসি (Prof. Dicey)-র উক্তি।

প্রশ্ন ৭। “ভারত একটি আংশিক যুক্তরাষ্ট্র”– এটা কার অভিমত? 

উত্তরঃ অধ্যাপক কে. সি. হোয়ার (Prof. K. C. Wheare)–এর অভিমত। 

প্রশ্ন ৮। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ তপশীলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের বিষয় অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে?

উত্তরঃ সপ্তম তপশীলে ।

প্রশ্ন ৯। “শিক্ষা” বর্তমানে কোন্ বিষয় সূচীতে অন্তর্ভুক্ত? 

উত্তরঃ যুগ্ম তালিকায়।

প্রশ্ন ১০। সংবিধানের কোন্ ধারায় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে একটি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে? 

উত্তরঃ ৩৭০ নং ধারায়।

প্রশ্ন ১১। নিজস্ব সংবিধান থাকা ভারত যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র রাজ্যটির নাম লেখো?

উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর। 

প্রশ্ন ১২। ভারতে দ্বৈত নাগরিকের ব্যবস্থা আছে কি? (হ্যা বা না লেখো)

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১৩। “Federation” শব্দটি কোন্ শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে? 

উত্তরঃ ল্যাটিন শব্দ “Foedus” থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় সংবিধানের একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ লিখিত সংবিধান। 

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় সংবিধানের একটি এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ক্ষমতা বণ্টনে কেন্দ্রের প্রাধান্যতা। 

প্রশ্ন ১৬। সংবিধানের সপ্তম তপশীলে উল্লেখিত তিনটি বিষয়সূচির নাম লেখো? 

উত্তরঃ (ক) কেন্দ্র তালিকা।

(খ) রাজ্য তালিকা। এবং 

(গ) যুগ্ম তালিকা।

প্রশ্ন ১৭। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত সরকার ব্যবস্থা আছে কি? (হ্যাঁ বা না লেখো)।

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ১৮। সংবিধানের সপ্তম তপশীলে উল্লেখিত কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়ের উল্লেখ করো?

উত্তরঃ প্রতিরক্ষা।

সঠিক উত্তর বেছে লেখ

প্রশ্ন ১। শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে–

(ক) যুগ্ম তালিকায়।

(খ) রাজ্য তালিকায়।

(গ) কেন্দ্রীয় তালিকায়। 

(ঘ) উপরের কোনোটি নয়। 

উত্তরঃ (ক) যুগ্ম তালিকায়। 

প্রশ্ন ২। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অভিভাবক ও সংবিধান ব্যাখ্যা কর্তা –

(ক) রাষ্ট্রপতি।

(খ) সংসদ।

(গ) কেবিনেট।

(খ) সুপ্রীম কোর্ট।

উত্তরঃ (ঘ) সুপ্রীম কোর্ট।

প্রশ্ন ৩। ভারতে, কোন ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে এবং কোন ক্ষমতা রাজ্যের হাতে ন্যস্ত হবে – এই বিষয়ে যদি বিরোধ সৃষ্টি হয় তবে তার মীমাংসা করে –

(ক) কেন্দ্রীয় আইন সভা।

(খ) বিচার বিভাগ।

(গ) রাজ্য আইন সভা।

(ঘ) রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল।

উত্তরঃ (খ) বিচার বিভাগ (সপ্রীম কোর্ট)। 

প্রশ্ন ৪। কাবেরী জল বিবাদ নীচের কোন দুই রাজ্যের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে?

(ক) তামিলনাডু ও কর্ণাটকের মধ্যে। 

(খ) গুজরাট ও মধ্য প্রদেশের মধ্যে।

(গ) মধ্য প্রদেশ ও কর্ণাটকের মধ্যে। 

(ঘ) চণ্ডীগড় ও পাঞ্জাবের মধ্যে।

উত্তরঃ (ক) তামিলনাড় ও কর্ণাটকের মধ্যে। 

প্রশ্ন ৫। কেন্দ্র সংবিধানের কোন্ ধারা অনুযায়ী রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন ঘোষণা করতে পারে?

(ক) ৩৫২নং।

(খ) ৩৫৬ নং।

(গ) ৩৬০ নং।

(ঘ) ৩৬৫ নং।

উত্তরঃ (খ) ৩৫৬ নং।

প্রশ্ন ৬। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা নির্ধারণ করে?

(ক) সংবিধান।

(খ) রাজ্য সরকার।

(গ) বিচার বিভাগ। 

(ঘ) রাজ্যপাল।

উত্তরঃ (ক) সংবিধান।

প্রশ্ন ৭। ”Federation” শব্দটি “Foedus” শব্দ হতে উদ্ভূত হয়েছে। “Foedus” একটি –

(ক) গ্রিক শব্দ।

(খ) ল্যাটিন শব্দ।

(গ) রোমান শব্দ।

(ঘ) ইংরাজি শব্দ।

উত্তরঃ (খ) ল্যাটিন শব্দ।

প্রশ্ন ৮। “foedus” শব্দের অর্থ কি?

উত্তরঃ চুক্তি। 

প্রশ্ন ৯। কোন্ দেশের সংবিধান হতে ‘রাজ্যসমূহের সংঘ’ ধারণাটি গ্রহণ করা হয়েছে?

(ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

(খ) আয়ারল্যাণ্ড।

(গ) কানাডা। 

(ঘ) ইংল্যাণ্ড।

উত্তরঃ (গ) কানাডা।

প্রশ্ন ১০। কে সর্বভারতীয় সেবা সৃষ্টি বা নির্মূল করতে পারে?

(ক) কেন্দ্রীয় সংসদ।

(খ) লোকসভা।

(গ) রাজ্যসভা। 

(ঘ) ইউ. পি. এস. সি।

উত্তরঃ (গ) রাজ্যসভা।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। যুক্তরাষ্ট্র বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ যে শাসন ব্যবস্থায় দুই প্রকারের সরকার থাকে এবং লিখিত ও অনমনীয় সংবিধান দ্বারা উভয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা থাকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানের যে কোনো দুটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য লেখো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) দ্বৈত সরকারঃ ভারতীয় সংবিধানে দু ধরনের সরকার ব্যবস্থার উল্লেখ আছে। একটি হল কেন্দ্রীয় সরকার এবং অপরটি হল রাজ্য সরকার। 

(খ) ক্ষমতা বণ্টনঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতা বণ্টন করেছে। 

প্রশ্ন ৩। অবশিষ্ট ক্ষমতা কী?

উত্তরঃ কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্যতালিকা ও যুগ্ম তালিকা – এই তিনটি তালিকার বহির্ভূত বিষয়ের ক্ষমতাকে অবশিষ্ট ক্ষমতা বলে। ভারতে এই ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সংসদের হাতে নাস্ত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় সংবিধানের যে কোনো দুটি অযুক্তরাষ্ট্রীয় (এককেন্দ্রিক) বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের অযুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য দুটি হলঃ 

(ক) ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রের হাতে রাজ্য অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে।

(খ) ভারতে এক নাগরিকত্ব প্রচলিত। 

প্রশ্ন ৫। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সাংবিধানিক বিবাদগুলো কীভাবে মীমাংসা করা হয়?

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এই স্বাধীন বিচারালয় সংবিধানের ব্যাখ্যা করে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংবিধান সম্পর্কিত বিবাদের মীমাংসা করে।

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারালয় যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা এবং অভিভাবক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

প্রশ্ন ৬। সাধারণ ভাষা কি রাষ্ট্রগঠনের একমাত্র ভিত্তি হওয়া উচিত এবং কেন?

উত্তরঃ সাধারণ ভাষা জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধ ও সৌভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্র গঠনে এই উপাদান যথেষ্ট সহায়তা করে। ভারতীয় অনেক রাজ্য ভাষার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। আবার সাধারণ অর্থনৈতিক সুবিধা রাজ্যসমূহের ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করেছে। সুতরাং রাষ্ট্রগঠনে বা রাজ্যগঠনে সাধারণ ভাষা, একমাত্র ভিত্তি হওয়া উচিত নয়। রাষ্ট্রগঠনের জন্য অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও আৱশ্যক।

প্রশ্ন ৭। তুমি কি মনে করো অবশিষ্ট ক্ষমতা পৃথকভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে? এবং কেন?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্র ও সরকারের মধ্যে তিনটি বিষয় সূচীর মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়েছে। এই তিনটি বিষয়সূচী হল– কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা ও যুগ্ম তালিকা। আর যে সকল বিষয় এই তিন বিষয়সূচীর অন্তর্ভুক্ত নয়, সেগুলোকে অবশিষ্ট ক্ষমতা বলা হয়। এই অবশিষ্ট ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের পরিপন্থি। তাই অবশিষ্ট ক্ষমতা পৃথকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। কারণ কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এই ক্ষমতা পৃথকভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল।

প্রশ্ন ৮। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন সম্পর্কে রাজ্যগুলো অখুশি কেন? 

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্র সরকারকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ বিরোধী। তিনটি তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়েছে। এই তালিকা তিনটি হল – (অ) কেন্দ্রীয় তালিকা, (আ) রাজ্য তালিকা ও (ই) যুগ্ম তালিকা। কেন্দ্রীয় তালিকায় সকল গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলোর উপর একমাত্র কেন্দ্রই আইন প্রণয়ন করতে পারে। অধিকও কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোর উপর আইন প্রণয়নের অধিকারী। যুগ্মতালিকার কোনো বিষয়ের উপর কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই যদি আইন পাশ করে তাহলে কেন্দ্রীয় আইন অগ্রাধিকার লাভ করে। তাছাড়া অবশিষ্ট ক্ষমতাও কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। এই সকল কারণে রাজাগুলো ক্ষমতা বণ্টন নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। 

প্রশ্ন ৯। ভারতীয় সংবিধানে একটি এককেন্দ্রীক প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। এই দাবির স্বপক্ষে দুটি কারণ দেখাও?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে একটি এককেন্দ্রীক প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। 

এর প্রধান দুটি কারণ হল নিম্নরূপঃ

(ক) কেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে। জরুরিকালীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়।

(খ) এক নাগরিকত্বঃ যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত দ্বিনাগরিকত্ব থাকে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধান সারা দেশের জন্য এক নাগরিকত্বের প্রবর্তন করেছে। 

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় সংবিধান বস্তুগতভাবে এককেন্দ্রীক। এই দাবির স্বপক্ষে দুটি কারণ দর্শাও?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্য অধিক পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়। কাঠামোগত দিক দিয়ে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রীয় মনে হলেও, প্রকৃত অর্থে ভারতীয় সংবিধান এককেন্দ্রীক। এর প্রধান কারণগুলোর অন্যতম দুটি হল নিম্নরূপঃ

(ক) এক–নাগরিকত্বঃ যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত দ্বি–নাগরিকত্ব থাকে। কিন্তু ভারতবর্ষে সারা দেশের জন্য এক–নাগরিকত্ব প্রবর্তন করা হয়েছে।

(খ) অসম ক্ষমতা বণ্টন নীতিঃ গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় কেন্দ্রীয় তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত। অধিকন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্য তালিকার বিষয়সমূহের উপরও কেন্দ্র আইন প্রণয়ন করতে পারে।

প্রশ্ন ১১। স্ব–শ্বাসন (autonomy) ও বিচ্ছিন্নতা (secession) এর মধ্যে পার্থক্য কী? 

উত্তরঃ স্ব–শাসন এবং বিচ্ছিন্নতা শব্দ দুটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। স্ব-শাসন অর্থ হল রাজ্যের আভ্যন্তরীণ বিষয় পরিচালনা করার স্বাধীনতা। অপর পক্ষে বিচ্ছিন্নতা হল পৃথক হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রগঠন। স্ব-শাসনের দাবিগুলো সাংবিধানিক সীমার মধ্যে থেকে উত্থাপিত হয় এবং সাধারণত স্ব-শাসন আন্দোলনগুলো মূলত অহিংসার উপর ভিত্তি করে আইনের সীমার মধ্যে থেকে সংগঠিত হয়। অপরদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ আন্দোলনগুলো হিংসাশ্রয়ী এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

রাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে স্ব-শাসনের দাবি উত্থাপন করেছিল তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, পঞ্জাবে অকালি দল ও পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই (এম)। অপরপক্ষে খালিস্তানি, নাগা, মিজো প্রভৃতি উগ্রপন্থী দলগুলো পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করেছিল। 

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত তিনটি তালিকায় কয়টি বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তপশীলে তিনটি তালিকা আছে– 

(ক) কেন্দ্রীয় তালিকা। 

(খ) রাজ্য তালিকা। ও 

(গ) যুগ্ম তালিকা।

কেন্দ্রীয় তালিকায় মোট ৯৭টি বিষয় লিপিবদ্ধ আছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – প্রতিরক্ষা, রেল, পারমাণবিক শক্তি, যুদ্ধ ও শান্তি প্রভৃতি। রাজ্য তালিকায় মোট ৬১টি বিষয় লিপিবদ্ধ করা আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয়সমূহ হল- পুলিশ, কৃষি, কারাগার, জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি। যুগ্মতালিকায় মোট ৫২টি, বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয়সমূহ হল- ফৌজিদারি আইন, শিক্ষা, বন, ট্রেড ইউনিয়ন প্রভৃতি। 

প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তালিকার যে কোনো তিনটি বিষয় উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত অন্যতম তিনটি বিষয় হল – 

(ক) প্রতিরক্ষা। 

(খ) পারমাণবিক শক্তি। ও 

(গ) রেল। 

প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত যে কোনো তিনটি বিষয় উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যতালিকাভুক্ত তিনটি বিষয় হল – 

(ক) পুলিশ।

(খ) কৃষি ও জনস্বাস্থ্য।

১৫। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যুগ্মতালিকার অন্তর্ভুক্ত যে কোনো তিনটি বিষয় উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ যুগ্ম তালিকাভুক্ত তিনটি বিষয় হল–

(ক) শিক্ষা। 

(খ) বন। ও 

(গ) শ্রমিক সংস্থা।

প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো তিনটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) দ্বৈত সরকারঃ ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আছে। 

(খ) লিখিত সংবিধানঃ ভারতের সংবিধান লিখিত।

(গ) ক্ষমতা বণ্টনঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা করেছে। সংবিধানের সপ্তম তপশীলে তিনটি তালিকার মাধ্যমে উভয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের বিষয়গুলো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেই তালিকাগুলোর মাধ্যমে উভয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ১৭। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) কেন্দ্রের হাতে ব্যাপক ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে। জরুরিকালীন অবস্থায় সারা দেশে কেন্দ্রের আধিপত্য বিস্তার হয়।

(খ) এক–নাগরিকত্বঃ যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত দ্বি–নাগরিকত্ব ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধান সারা দেশের জন্য এক–নাগরিকত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।

(গ) অ–সম ক্ষমতা বণ্টনঃ ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কেন্দ্র–তালিকাভুক্ত। অধিকন্তু বিশেষ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সংসদ রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়ের উপরও আইন প্রণয়ন করতে পারে। 

প্রশ্ন ১৮। অবশিষ্ট ক্ষমতা কী? ভারতবর্ষে কে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে?

উত্তরঃ অবশিষ্ট ক্ষমতা হল সপ্তম তপশীলে বিধিবদ্ধ তিনটি বিষয় সূচি (কেন্দ্র, রাজ্য ও যুগ্ম)-র বহির্ভূত বিষয়গুলোর উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা।

ভারতবর্ষে কেন্দ্রীয় আইনসভা অর্থাৎ সংসদ এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। 

প্রশ্ন ১৯। ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তপশীলে কয়টি বিষয়সূচি বিধিবদ্ধ করা আছে ? সূচিগুলো উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তপশীলে তিনটি বিষয়সূচি বিধিবন্ধ করা আছে। 

এই সুচি তিনটি হল – 

(ক) কেন্দ্রীয় সূচি (Union List)। 

(খ) রাজ্যিক সূচি (State) List)। এবং 

(গ) যুগ্ম সূচি (Concurrent List)। 

প্রশ্ন ২০। বর্তমানে ভারতবর্ষে কয়টি অঙ্গ রাজ্য এবং কয়টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল আছে?

উত্তরঃ বর্তমানে ভারতবর্ষে ২৯টি অঙ্গ রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল আছে। 

প্রশ্ন ২১। অবশিষ্ট ক্ষমতা কী? একটি উদাহরণ সহ সংক্ষেপে লেখো? 

উত্তরঃ অবশিষ্ট ক্ষমতা হল ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তপশীলে বর্ণিত তিনটি বিষয় সূচি (কেন্দ্র, রাজ্য এবং যুগ্ম)-র বহির্ভূত যে কোনো বিষয়ের উপর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা। উদাহরণ– সাইবার (Ciber)।

পূর্ব উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থা রাখার তিনটি কারণ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ যদিও ভারতীয় সংবিধানে অনেক যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তথাপি ভারতে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার আছে। 

ভারতে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থা থাকার কারণগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতীয় সংবিধান সভাকে দেশ বিভাজন প্রভাবিত করেছিল। তাই পুনরায় দেশের মানুষ যাতে এরূপ দেশবিভাজনের সম্মুখীন না হয়, তার জন্য সংবিধান নির্মাতাগণ একটি শক্তিশালী কেন্দ্র সরকার রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

(খ) জাতীয় নিরাপত্তা ও সংহতি বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন। এই সরকার দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে সক্ষম হবে। 

(গ) ভারতের মতো বিশাল দেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে । এই সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জন্য কী কী বিশেষ ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছে? কীভাবে তুমি তার মূল্যায়ন করবে?

উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে সংবিধানের ৩৭০নং ধারা অনুযায়ী বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। 

এই মর্যাদা প্রদানকারী বিষয়গুলো হল নিম্নরূপঃ

(ক) জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য পৃথক সংবিধান এবং পৃথক জাতীয় পতাকা থাকবে।

(খ) জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যসরকারের অনুমোদন ব্যাতীত আভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য জম্মু–কাশ্মীরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যাবে না।

(গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে ঘোষণা করা যাবে না। 

(ঘ) রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলো জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে প্রযোজ্য হবে না। 

(ঙ) ৩৬৮নং ধারা অনুযায়ী এই রাজ্যের স্বার্থ সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংশোধন কেবল মাত্র জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের অনুমোদন ক্রমেই করা যাবে।

জম্মু ও কাশ্মীরকে এই বিশেষ মর্যাদা প্রদান করায় দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বাইরের অন্যান্য রাজ্যের মানুষের মতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান ভারতের পূর্ণ সংহতিকে প্রতিহত করছে। তাই এই ধারা বিলুপ্তির প্রয়োজন। অন্যদিকে ওই রাজ্যের মানুষ বিশেষ করে কাশ্মীরীরা মনে করেন ৩৭০ ধারা তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে পারছে না। তাই তারা আরও বেশি স্বাধীনতা দাবি করছে। 

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় রাজ্যগুলোর সম প্রতিনিধিত্ব দেখা যায় না কেন?

উত্তরঃ ভারতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষ হল রাজ্যসভা (Council of States)। রাজ্যসভার রাজ্যগুলোর সম–প্রতিনিধিত্ব পরিলক্ষিত হয় না। রাজ্য সভায় ১২জন সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। রাজ্যসভার ওই ১২ জন সদস্য ব্যতীত বাকী সকল সদস্যগণ জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে জনগণ দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সদস্য সংখ্যা বণ্টিত হওয়ায় রাজ্যগুলোর রাজ্যসভায় সম প্রতিনিধিত্ব দেখা যায় না। কারণ জনবহুল রাজ্যগুলোর সদস্য সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল রাজা হতে অধিক। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের মতো ছোট–বড় সকল রাজ্য হতে একই সদস্য সংখ্যা রাজ্য সভায় প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে উত্তরপ্রদেশ হতে রাজ্যসভায় ৩১জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করে কিন্তু সিকিম, মণিপুর, মিজোরাম এর মতো ছোট রাজ্যগুলো হতে মাত্র ১জন সদস্য রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করে। তাই এই পদ্ধতি প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রের আদর্শ বিরোধী।

প্রশ্ন ৪। বৃহত্তর স্বশাসনের জন্য রাজ্যসমূহ কর্তৃক উত্থাপিত দাবিগুলো কী কী? 

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর হতে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। এর প্রধান কারণ হল কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ক্ষেত্রেই কংগ্রেস দলের সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু ১৯৬৬ সালের পর কয়েকটি রাজ্যে অ–কংগ্রেসী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই সমস্যার উদ্ভব হয়। বিশেষ করে সি. পি. আই (এম), ডি. এম. কে. এবং অকালি দল রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি করে। এই রাজনৈতিক দলগুলির মতে, কেন্দ্র হতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না হলে দেশে একতা ও সংহতি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাই রাজাগুলো নিম্নলিখিত দাবিসমূহ উত্থাপন করেঃ

(ক) ডি. এম. কে. দেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব ও সংহতি অক্ষুণ্ণ রেখে রাজ্য সরকারের হাতে অধিক ক্ষমতা ন্যস্ত করার দাবি উত্থাপন করে।

(খ) রাজাগুলো সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত হতে রাজ্য সরকারের হাতে অবশিষ্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি উত্থাপন করে। 

(গ) বিকাশমুখী কার্যের জন্য ঋণ, অনুদান, প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে রাজ্যসমূহের আলোচনা করার স্বাধীনতা থাকার দাবি উত্থাপন করেন।

(ঘ) রাজ্যসমূহ তাদের হাতে অধিক আর্থিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি তুলে। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাম ফ্রন্ট সরকার কেন্দ্র–রাজ্যের আর্থিক সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। 

(ঙ) রাজ্যসমূহ তাদের জন্য অধিক প্রশাসনিক ক্ষমতা পাওয়ার দাবি উত্থাপন করে। 

প্রশ্ন ৫। কী কী বিষয়কে কেন্দ্র করে কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়?

অথবা, 

কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধের প্রধান বিষয়গুলো কী কী? 

উত্তরঃ নিম্নোক্ত বিষয়সমূহকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়ঃ 

(ক) রাজ্যপালের ভূমিকাঃ রাজ্যপালের ভূমিকায় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বহুবার বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি নিয়োগ, বদলি ও অপসারণ করেন। প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সুপারিশক্রমেই রাষ্ট্রপতি তা করেন। তাই রাজ্যপালগণ কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসাবেই কাজ করে। থাকেন এবং কখনও কখনও রাজ্যপালগণ রাজ্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপও করেন। এর ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

(খ) সংবিধানের ৩৫৬নং ধারার অধীনে রাষ্ট্রপতি শাসনঃ সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকার বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করতে পারেন। রাজ্যপালের এই ক্ষমতার বহুবার বহুরাজ্যে অপব্যবহার করা হয়েছে। রাজ্যপালের এরূপ ক্রিয়াকলাপ কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

(গ) আর্থিক সম্পর্কঃ রাজ্যসরকারগুলোকে প্রায়ই অভিযোগ করতে শোনা যায় যে তারা আর্থিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। এজন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

(ঘ) রাজ্যগুলোর প্রতি কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণঃ রাজ্যগুলোকে প্রায়ই পরিকল্পনা আয়োগ ও অর্থ আয়োগের কার্যকলাপের বিরোধিতা করতে দেখা যায়। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের এ দুটি সংস্থা কেন্দ্রের নির্দেশানুযায়ী কার্য করে। এ দুটি সংস্থা রাজ্যের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের মতামতকে উপেক্ষা করে। এর ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিরোধ উৎপন্ন হয়।

প্রশ্ন ৬। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে একটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা করো।

(ক) জাতীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন।

(খ) দু ধরনের পরিচিতি।

(গ) একটি লিখিত সংবিধান।

(ঘ) জাতীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলোর বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি স্বাধীন বিচারবিভাগ।

উত্তরঃ আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) জাতীয় সরকার ও রাজ্যসরকারগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনঃ একটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে জাতীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে ক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে বণ্টন করা থাকে। সংবিধান অনুযায়ী উভয় ধরনের সরকার নিজ নিজ ক্ষমতার ব্যবহার করেন এবং দায়িত্বও নির্বাহ করেন। 

ভারতে ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এরূপ অসম ক্ষমতা বণ্টন ব্যবস্থা দেখা যায় না।

(খ) দু ধরনের পরিচিতিঃ একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নাগরিকের দু ধরনের পরিচিতি লক্ষ্য করা যায়। জাতীয় পর্যায়ে তার এক ধরনের পরিচিতি পরিলক্ষিত হয়। আবার রাজ্য পর্যায়ে আরেক ধরনের পরিচিতি পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ স্বরূপ আসামের জনগণ রাজ্যিক পর্যায়ে আসামবাসী এবং জাতীয় পর্যায়ে ভারতীয় হিসাবে পরিচিত।

(গ) লিখিত সংবিধানঃ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত ও অনমনীয় হয়। সংবিধান সংশোধনে একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। উভয় সরকারই সংবিধান সংশোধনে অংশগ্রহণ করে। ভারতের সংবিধান লিখিত এবং নমনীয়তা ও অনমনীয়তার সংমিশ্রণ। কিন্তু ভারতে ব্রাজ্যিক আইনসভা সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে না।

(ঘ) উভয় সরকারের বিরোধ মীমাংসার জন্য স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাঃ যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা এবং বিচারালয়ের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারালয় সংবিধানের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে এবং জাতীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংবিধান সম্পর্কিত বিবাদের মীমাংসা করে। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বিচারবিভাগের শীর্ষে সুপ্রীম কোর্ট অবস্থিত। সুপ্রীম কোর্ট কেন্দ্র ও রাজ্যের সাংবিধানিক বিরোধ মীমাংসা করে।

প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংবিধান কীভাবে কেন্দ্রকে শক্তিশালী করেছে?

অথবা, 

ভারতীয় সংবিধানের কেন্দ্রীয় প্রবণতার উপরে একটি টাকা লেখো?

অথবা, 

ভারতীয় সংবিধান কীভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে? 

উত্তরঃ ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ দেশের একতা ও সংহতি রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত শক্ত করবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে কতকগুলো ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

এই ব্যবস্থাগুলো নিম্নরূপঃ 

(ক) কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপক ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করেছে। জরুরিকালীন অবস্থায় সারা দেশে কেন্দ্রের আধিপত্য বিস্তার হয়। আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হওয়ায় স্বাভাবিক অবস্থায়ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। 

(খ) এক-সংবিধানঃ ভারতের সংবিধান তার অঙ্গ রাজ্যগুলোরও সংবিধান। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যগুলো শাসিত হয়। কেবল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পৃথক সংবিধান আছে।

(গ) এক–নাগরিকত্বঃ ভারতীয় সংবিধান সারা দেশের জন্য এক–নাগরিকত্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। রাজ্যিক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত নয়।

(ঘ) এক–বিচার ব্যবস্থাঃ ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই একই বিচার ব্যবস্থা। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে সুপ্রীমকোর্ট অবস্থিত। সুপ্রীমকোর্ট রাজ্যের হাইকোর্টগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।

(ঙ) অসম ক্ষমতা বণ্টনঃ ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কেন্দ্র–তালিকাভূক্ত। যুগ্মতালিকাভুক্ত বিষয়েও কেন্দ্রের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। অধিকস্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সংসদ রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়েও আইন প্রণয়ন করতে পারে।

উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলোর জন্য ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। 

প্রশ্ন ৮। ভারতীয় সংবিধান কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয়?

অথবা, 

কেন ভারতের সংবিধানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয়?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং এককেন্দ্রিক উভয় বৈশিষ্ট্যই পরিলক্ষিত হয়। 

নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য ভারতীয় সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয়ঃ 

(ক) ভারতে দুপ্রকার সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। জাতীয় পর্যায়ে কেন্দ্র সরকার ও রাজ্যিক পর্যায়ে রাজ্য সরকার।

(খ) ভারতীয় সংবিধান লিখিত। 

(গ) ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত তিনটি তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়েছে।

(ঘ) ভারতের সংবিধান ভারত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।

(ঙ) ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বিভাগের প্রাধান্য দেখা যায়। ভারতীয় বিচার বিভাগের শীর্ষে রয়েছে সুপ্রীম কোর্ট।

সুপ্রীম কোর্ট ভারতীয় সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা করেও সেই বিরোধের মীমাংসাও করে। সুপ্রীম কোর্ট নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। সুপ্রীম কোর্ট ভারতের সংবিধানের অভিভাবক।

অধিকাংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞগণ ভারতকে একটি প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্র হিসাবে আখ্যায়িত করতে রাজি নন। আমরা কাঠামোগত দিক দিয়ে বিচার করলে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারি কিন্তু ক্ষমতার দিক দিয়ে বিচার করলে ভারতকে এককেন্দ্রীক হিসাবে আখ্যায়িত করা সমীচীন হবে। 

প্রশ্ন ৯। আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ আদর্শ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) যুক্তরাষ্ট্রে দু ধরনের সরকার থাকে। সমগ্র দেশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের জন্য পৃথক রাজ্য সরকার।

(খ) যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত ও অনমনীয়। 

(গ) কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংবিধানের মাধ্যমে ক্ষমতা বণ্টন করা হয়ে থাকে।

(ঘ) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। 

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় সংবিধানের চারটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের চারটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ

(ক) ভারতে দু ধরনের সরকার আছে। সমগ্র দেশের জন্য একটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং অঙ্গরাজ্যগুলির জন্য পৃথক রাজ্য সরকারের ব্যবস্থা আছে।

(খ) ভারতের সংবিধান লিখিত সংবিধান।

(গ) বিশ্বের অন্যান্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতীয় সংবিধানেও কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

(ঘ) ভারতের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য থাকে।

প্রশ্ন ১১। ভারতে কেন্দ্রের প্রাধান্যতার চারটি কারণ উল্লেখ করো?

উত্তরঃ দেশ বিভাজন ভারতের সংবিধান নির্মাতাগণকে প্রভাবিত করেছিল। তাই দেশের মানুষ যাতে আবার এরূপ ঘটনার সম্মুখীন না হয়, তারজন্য তাঁরা একটি শক্তিশালী কেন্দ্র সরকার রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। 

ভারতে কেন্দ্রের প্রাধান্যতার চারটি কারণ নিম্নরূপঃ-

(১) এক দলীয় প্রাধান্যতা।

(২) পরিকল্পনা আযোগের ভূমিকা এবং কার্যকারিতার প্রাধান্য। বর্তমানে পরিকল্পনা আয়োগের পরিবর্তে নিটি আয়োগ জাতীয় পরিকল্পনার নীতি তৈরি করে এবং কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা গ্রহণ করে। আর্থিক পরিকল্পনার কেন্দ্রীয়করণের জন্য ভারতে কেন্দ্রের প্রাধান্যতা পরিলক্ষিত হয়।

(৩) জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার সঙ্গে সমগ্র দেশের শাসনব্যবস্থা এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পরিণত হয়। ১৯৬২, ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। তাই এটা স্পষ্ট যে, ভারতে কেন্দ্রের প্রাধান্যতা পরিলক্ষিত হয়।

(8) কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন ব্যবস্থায় ভারতের সংবিধান কেন্দ্রকে অধিক শক্তিশালী করেছে। রাজাগুলো কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। তাই ভারতে কেন্দ্রের প্রাধান্যতা পরিলক্ষিত হয়। 

ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। তথাপি ভারতে কেন্দ্রের প্রাধান্যতা পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় সংবিধানের দুটি যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং দুটি অযুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্র উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) দ্বৈত সরকারঃ ভারতীয় সংবিধানে দু ধরনের সরকার ব্যবস্থার উল্লেখ আছে। একটি হল কেন্দ্রীয় সরকার এবং অপরটি হল রাজ্য সরকার। 

(খ) ক্ষমতা বণ্টনঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে ক্ষমতা বণ্টন করেছে।

বা

ভারতীয় সংবিধানের অযুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য দুটি হলঃ 

(ক) ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রের হাতে রাজ্য অপেক্ষা অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে।

(খ) ভারতে এক নাগরিকত্ব প্রচলিত।

প্রশ্ন ১৩। রাষ্ট্রপতি শাসনের সময় রাজ্যপালের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো? 

উত্তরঃ রাজ্যপালের ভূমিকা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সর্বদা একটি বিতর্কিত বিষয়। রাজ্যপাল নির্বাচিত হন না। রাজ্যপালগণকে কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত করে এবং রাজ্যপালগণ প্রকৃত অর্থে কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন। তাই রাজ্যপালগণ প্রায়ই কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করে থাকেন।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও ভূমিকা আরও একটি কারণে বিতর্কিত। সংবিধানের ৩৫৬নং অনুচ্ছেদটি অত্যন্ত বিতর্কিত, এই অনুচ্ছেদে অংগ রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের (President’s Rule) উল্লেখ আছে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সরকার চালনার ক্ষেত্রে যদি সাংবিধানিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তখন রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য সুপারিশ করতে পারেন। রাজ্যের শাসন সম্বন্ধীয় কার্যপ্রক্রিয়া সংবিধান অনুসারে পরিচালিত হতে ব্যর্থ হলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হয়। রাজ্য সরকার সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা এবং রাজ্য বিধানসভা ভঙ্গ করার সুপারিশের ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যপালের। রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি শাসনের সময় ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করো? 

অথবা, 

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে কতকগুলো যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং কতকগুলো এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সংবিধানের কোনো অংশেই ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলে অভিহিত করা হয় নি। তথাপি ভারতীয় সংবিধানে কতকগুলো যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। 

এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) দ্বৈত সরকারঃ ভারতে দু ধরনের সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। সমগ্র দেশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের জন্য আলাদা রাজ্য সরকার। ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ২৯টি রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে। 

(খ) লিখিত সংবিধানঃ ভারতের সংবিধান লিখিত সংবিধান। 

(গ) সংবিধানের প্রাধান্যঃ সংবিধানের প্রাধান্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একটি অন্যতম উপাদান। ভারতের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। কেন্দ্র ও রাজ্য উত্তর সরকারই সংবিধান অনুযায়ী তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

(খ) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থাঃ ভারতে অন্যান্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচারালয় আছে। এই বিচারালয় সংবিধানের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যসরকারের মধ্যে সংবিধান সম্পর্কিত বিরোধের সমাধান করে। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ভারতীয় সংবিধানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান হিসাবে আখ্যা দেওয়া যায় না। 

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানের এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করো?

অথবা, 

ভারতীয় সংবিধানের অযুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করো?

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে কতকগুলো অনুক্তরাষ্ট্রীয় বা এককেন্দ্রীক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। 

এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) কেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রকে ক্ষমতার দিক দিয়ে অধিক শক্তিশালী করেছে। জরুরিকালীন অবস্থার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রীক ব্যবস্থার পরিবর্তিত হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

(খ) এক সংবিধানঃ ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য একই সংবিধান। আর তা হল ভারতীয় সংবিধান। কেবল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের জন্য পৃথক সংবিধানের ব্যবস্থা আছে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই শাসিত হয়। 

(গ) এক–নাগরিকত্বঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সাধারণত দ্বি–নাগরিকত্ব পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ভারতীয় সংবিধান সারা দেশের জন্য এক–নাগরিকত্ব ব্যবস্থা প্রদান করেছে। 

(ঘ) এক–বিচার ব্যবস্থাঃ ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য একই বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান। ভারতীয় বিচার–ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। রাজ্যের হাইকোর্টগুলো সুপ্রীমকোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন। 

(ঙ) অসম ক্ষমতা কণ্টনঃ ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের প্রাধান্যতা দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত। এই তালিকাভুক্ত বিষয়ে কেবল কেন্দ্রীয় সংসদ আইন প্রণয়ন করে। যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ের উপরও কেন্দ্রের প্রাধান্যতা দেখা যায়। বিশেষ পরিস্থিতিতে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়েও কেন্দ্রীয় সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে।

(চ) জরুরি অবস্থা ঘোষণাঃ জরুরি অবস্থা ভারতের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি মূলত প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ এর সুপারিশক্রমে তা করেন। জরুরিকালীন অবস্থা ঘোষণা করা হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো এক কেন্দ্রীক পরিকাঠামোতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। 

প্রশ্ন ৩। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত সম্পর্ক আলোচনা করো?

অথবা, 

কেন্দ্র ও রাজ্যসমূহের মধ্যে আইন প্রণয়ন–সংক্রান্ত ক্ষমতা বণ্টন পদ্ধতি আলোচনা করো?

অথবা, 

কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যসরকারের মধ্যে বৈধানিক সম্পর্ক বর্ণনা করো?

উত্তরঃ কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত সম্পর্ক নিম্নরূপঃ

(ক) তিনটি বিষয় তালিকাঃ সংবিধানের সপ্তম তপশীলে কেন্দ্র ও রাজ্য আইনসভার আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত তিনটি বিষয় তালিকার উল্লেখ আছে। 

এগুলো হল–

(অ) কেন্দ্র তালিকা।

(আ) রাজ্য তালিকা। ও

(ই) যুগ্ম তালিকা। 

(অ) কেন্দ্র তালিকাঃ কেন্দ্র তালিকায় জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত মোট ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। এই তালিকার প্রধান বিষয়গুলো হল– দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, রেল, বিমান, বিমান বন্দর, মুদ্রা, খনি, নাগরিকত্ব প্রভৃতি। কেবল কেন্দ্র সরকার এই তালিকার বিষয়গুলোর উপর আইন প্রণয়ন করতে পারে।

(আ) রাজ্য তালিকাঃ রাজ্য তালিকায় মোট ৬১টি বিষয় আছে। এই তালিকার প্রধান বিষয়গুলো হল– আইন ও শান্তি শৃঙ্খলা, পুলিশ বাহিনী, জেলখানা, স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, বনসম্পদ প্রভৃতি। আঞ্চলিক বা রাজ্যিক স্বার্থ সম্পর্কিত এই তালিকার বিষয়গুলোর উপর রাজ্যিক আইনসভা আইন প্রণয়ন করে। 

(ই) যুগ্ম তালিকাঃ যুগ্ম তালিকায় মোট ৫২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত। এই তালিকার প্রধান বিষয়গুলো হল– ফৌজদারী আইন, বিবাহ, বিবাহ–বিচ্ছেদ, শিক্ষা, শ্রমিক সংঘ ইত্যাদি। এই তালিকার বিষয়গুলোর উপর কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। অবশ্য এই তালিকার বিষয়গুলোর উপর কেন্দ্রের আইন প্রণয়নের প্রাধান্যতা। রাজা অপেক্ষা অধিক।

(খ) অবশিষ্ট ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান অবশিষ্ট ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত করেছে। উপরোক্ত তিনটি তালিকার বহির্ভূত বিষয়গুলোর উপর কেন্দ্র আইন প্রণয়ন করতে পারে। 

(গ) রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাঃ নিম্নোক্ত পরিস্থিতিতে সংসদ রাজ্যতালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। 

(অ) যদি সংসদের উচ্চ কক্ষ রাজ্যার দুই–তৃতীয়াংশ সদস্য প্রস্তাব পাস করে যে সংসদের রাজা তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করা উচিত তখন সংসদ এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

(আ) জরুরিকালীন অবস্থার সময় সংসদ রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

(ই) দু বা দু এর চেয়ে অধিক রাজ্যের অনুরোধে সংসদ রাজ্য তালিকাভুক্ত কোন বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

(ঘ) রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত যে কোনো বিল রাষ্ট্রপতির সুপারিশের জন্য রাজ্যপালের সংরক্ষণ ক্ষমতাঃ রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত যে কোনো বিল প্রয়োজনবোধে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ গ্রহণের জন্য সংরক্ষিত রাখতে পারেন।

(ঙ) কতিপয় বিল রাজ্য আইনসভায় উত্থাপনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন হয়। উদাহরণ স্বরূপ রাজ্যের ভেতরে ব্যবসা–বাণিজ্য সংক্রান্ত বিলের কথা উল্লেখ করা যায়। 

(চ) কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা প্রণীত আইন এবং রাজ্য সরকার দ্বারা প্রণীত আইনের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হলে কেন্দ্রীয় আইন প্রাধান্য লাভ করে। 

উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে আইন–সংক্রান্ত ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সংসদ রাজ্যসমূহ অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাশীল।

প্রশ্ন ৪। ভারতের কেন্দ্র–রাজ্য প্রশাসনিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করো? 

উত্তরঃ ভারতের সংবিধানে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে প্রশাসনিক ক্ষমতা নিম্নলিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

(ক) সংবিধানের ২৫৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্য সরকারের শাসন–সংক্রান্ত ক্ষমতা এমনভাবে পরিচালিত হতে হবে যাতে কেন্দ্রীয় সংসদ প্রণীত আইন সমূহকে অবমাননা করা না হয়। 

(খ) সংবিধানের ২৫৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজ্যের শাসন ক্ষমতা এইরূপভাবে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন যাতে তা কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতাকে বাধা প্রদান না করে।

(গ) সংবিধানের ২৫৮নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাজ্যের সম্মতিক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন–সংক্রান্ত কোনো বিষয় সম্মান স্বরূপ রাজ্য সরকারের উপর সমর্পণ করতে পারেন।

(ঘ) সংবিধানের ২৬২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে কেন্দ্রীয় সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আন্তঃরাজ্য জলবণ্টন–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

(ঙ) সংবিধানের ২৬৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যের মতানৈক্য দূর করে শাসনকার্যের সমন্বয় সাধন করার জন্য রাষ্ট্রপতি আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করতে পারেন।

ভারতের সংবিধান স্বাভাবিক এবং জরুরিকালীন অবস্থায় কতকগুলো নির্ধারিত বিষয়ে কেন্দ্র–সরকারকে রাজ্যসরকারগুলোর প্রতি নির্দেশ দান করার ক্ষমতা প্রদান করেছে। 

স্বাভাবিক অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে নিম্নোক্ত নির্দেশ দান করতে পারেঃ

(ক) রাজ্যে কেন্দ্রীয় আইনের যথাযথভাবে প্রয়োগ।

(খ) জাতীয় এবং সামরিক গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার নির্মাণ ও সংরক্ষণ। 

(গ) রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত রেলপথের সংরক্ষণ।

(ঘ) তপশীলভুক্ত সম্প্রদায়গুলোর কল্যাণের জন্য উল্লেখিত উপায়গুলো বলবৎ করা।

(ঙ) হিন্দি ভাষার উন্নতি সাধন করা।

জরুরিকালীন অবস্থায় নিম্নোক্ত উপায়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশ রাজ্য সরকারগুলোর উপর কার্যকর করা হয়ঃ

(ক) জরুরিকালীন অবস্থায় যে কোনো বিষয়ে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনায় কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিতে পারেন।

(খ) কোন রাজ্যে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিলে সেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন বলবৎ হতে পারে।

সুতরাং ভারতীয় সংবিধানে শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্যতা দেখা যায়। 

প্রশ্ন ৫। কেন্দ্র ও রাজ্য সমূহের মধ্যে আর্থিক (অর্থনৈতিক) সম্পর্ক আলোচনা করো?

উত্তরঃ স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করবার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারেরই যথোপযুক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। সুতরাং পর্যাপ্ত আয়ের উৎস ব্যতীত অঙ্গরাজ্যগুলোর পক্ষে স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। সেজন্যই অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে রাজস্বের উৎসগুলোর আয় নির্দিষ্ট নীতি অনুসারে বণ্টন করে দেওয়া হয়। অধিকন্তু রাজ্যগুলোকে প্রয়োজনানুসারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। 

ভারতের সংবিধানে রাজস্ব–সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র–তালিকা এবং রাজ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্র–তালিকাভুক্ত বিষয় সম্পর্কে কর ধার্য করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের। রাজ্য–তালিকাভুক্ত বিষয় সম্পর্কে কর ধার্য করার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের। অবশিষ্ট ক্ষমতা সম্পর্কিত বিষয়ের কর বা শুল্ক ধার্য করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের।

রাজ্যসরকার কর্তৃক ধার্য করগুলো হতে যে আয় হয় তা সম্পূর্ণভাবে রাজ্যসরকারগুলো উপভোগ করেন। 

কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ধার্য করসমূহকে নিম্নলিখিত চার শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ 

(ক) কতকগুলো কর ও গুপ্ত কেন্দ্রীয় সরকার ধার্য ও সংগ্রহ করেন। সেই সংগৃহীত অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার স্বয়ং ভোগ করেন; যথা– আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক, কর্পোরেশন কর প্রভৃতি। 

(খ) কতকগুলো কর কেন্দ্রীয় সরকার ধার্য ও সংগ্রহ করেন, কিন্তু সেই সংগৃহীত আয়ের একাংশ রাজ্যগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এই করগুলো হল আয়কর, আবগারী শুল্ক ইত্যাদি।

(গ) কতকগুলো কর কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ধার্য ও সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু তা হতে প্রাপ্ত আয় রাজাগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এধরনের করগুলোর মধ্যে অন্যতম করটি হল সম্পত্তি কর।

(ঘ) কতকগুলি কর যেমন–স্ট্যাম্প কর, প্রসাধন সামগ্রীর উপর ধার্য কর, ইত্যাদি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ধার্য হয়, কিন্তু করগুলো সংগ্রহ ও ভোগ করেন রাজ্য সরকার।

রাজাগুলোর প্রয়োজনের তুলনায় আর্থিক আয় অত্যন্ত কম। সেজন্য সংবিধানে রাজ্যের জন্য আর্থিক অনুদানের সংস্থান রাখা হয়েছে। সংবিধানের ২৮০নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ‘অর্থ কমিশন’ গঠন করেন। এই কমিশন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য–সরকারগুলোর মধ্যে রাজস্ব বণ্টন বিষয়ে নানা সুপারিশ প্রদান করে। 

ভারতীয় সংবিধানে রাজস্ব–সংক্রান্ত ক্ষমতা বণ্টনে কেন্দ্রীয় প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই সমগ্র দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রকে আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করা হয়েছে। 

(খ) যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দুটো ভিন্ন অঞ্চল যাদের পৃথক ধরনের সম্পদ রয়েছে তাদের সহজ আর্থিক কাজ–কারবারে (easier economic transaction) বাধার সৃষ্টি করে।

(গ) যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেন্দ্রের সীমিত ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নের কোন বিবৃতিটি সঠিক চিন্তা করে বের করো এবং কেন ব্যাখ্যা করো? 

(ক) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কোন অঞ্চলের জনসাধারণের উপর অন্য কোন সংস্কৃতি জোর করে না চাপিয়ে বা নির্ভয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন ও সহমর্মিতার সম্ভাবনা বর্ধিত করে। 

উত্তরঃ (ক) এই বিবৃতিটি সত্য। কারণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুস্পষ্ট ক্ষমতা বণ্টনের নীতি প্রতিষ্ঠিত। 

(খ) এই বিবৃতিটি সত্য নয়। দুটি পৃথক অঞ্চলের মধ্যে আর্থিক আদান প্রদানে কোনো প্রকার বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংবিধানে আর্থিক বন্টনের নীতি সম্পন্নভাবে বিধিবদ্ধ থাকে।

(গ) এই বিবৃতিটি সত্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা সংবিধানে পরিষ্কারভাবে লিপিবন্ধ করা আছে। তাছাড়া কেন্দ্র সরকারের ক্ষমতা নির্ধারিত থাকে এবং অত্যধিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। তাই কেন্দ্রের ক্ষমতা সীমিতকরণ সুনিশ্চিত করে। 

প্রশ্ন ২। কল্পনা কর তোমাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাগুলো পুনরায় অন্যভাবে লিখতে বলা হয়েছে। ৩০০ শন্দের মধ্যে একটি রচনা লিখে নিম্নলিখিত প্রসঙ্গে তোমার পরামর্শ দাও–

(ক) কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন।

(খ) আর্থিক সম্পদের বণ্টন।

(গ) আন্তঃরাজ্য বিরোধ মীমাংসার পদ্ধতি। এবং (ঘ) রাজ্যপালের নিয়োগ।

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো লিপিবন্ধ করা যেতে পারেঃ 

(ক) কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনঃ সংবিধানে কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা ও যুগ্ম তালিকা–এই তিনটি তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করার ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ করা আছে।

প্রস্তাবানুসারে কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয় কেন্দ্রের হাতে ন্যস্ত থাকা উচিত। রাজা তালিকাভুক্ত সকল বিষয় কেবল রাজ্যের হাতেই থাকা উচিত। তাই আমার মতানুযায়ী তিনটি তালিকার পরিবর্তে দুইটি তালিকা থাকা উচিত–কেন্দ্রীয় তালিকা ও রাজ্যতালিকা। অবশিষ্ট ক্ষমতা রাজ্যের হাতে থাকা উচিত।

(খ) আর্থিক সম্পদ বণ্টনঃ ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আর্থিক সম্পন বণ্টন করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রস্তাবানুসারে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে পরিষ্কারভাবে আর্থিক সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থা উল্লেখ করা উচিত এবং তা নিম্নোক্তভাবে করা উচিতঃ

(অ) কতকগুলো কর কেন্দ্র কর্তৃক ধার্য ও সংগ্রহ করা উচিত। এই কর হতে প্রাপ্ত আয় কেবল কেন্দ্রের হাতেই থাকা উচিত।

(আ) কতকগুলো কর রাজ্য কর্তৃক ধার্থ ও সংগ্রহ করা হবে। 

(ই) কতকগুলো কর কেন্দ্র কর্তৃক ধার্য ও সংগ্রহ করা হবে, কিন্তু এর আর কেন্দ্র ও রাজ্যসমূহের মধ্যে সমানুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে। কেন্দ্র অনুমোদিত ঋণ রাজ্যগুলোকে প্রদানের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলোর প্রতি কেন্দ্রকে সমান আচরণ করতে হবে।

(গ) আন্তঃরাজ্য বিরোধের মীমাংসার উপায়ঃ সকল ধরনের আন্তঃরাজ্য বিরোধ সুপ্রীমকোর্ট মীমাংসা করবে এবং সুপ্রীমকোর্টের সিদ্ধান্তকে সকল রাজ্য মান্য করে চলবে। 

(ঘ) রাজ্যপাল নিয়োগঃ রাজ্যের রাজ্যপালকে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উচিত। কিন্তু এই নিয়োগ–সংক্রান্ত ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

বর্তমানে এটা প্রথা হিসাবে আছে। রাজ্যপাল নিয়োগের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৩। নিম্নে উল্লিখিত কোন্ উপাদান রাজ্য গঠনের ভিত্তি হওয়া উচিত এবং কেন?

(ক) সাধারণ ভাষা।

(খ) সাধারণ অর্থনৈতিক স্বার্থ। 

(গ) সাধারণ ধর্ম।

(ঘ) প্রশাসনিক সুবিধা। (Administrative Convenience)।

উত্তরঃ আমাদের মতানুযায়ী প্রশাসনিক সুবিধাই রাজ্য গঠনের প্রধান ভিত্তি হওয়া উচিত। ভারতে ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে অনেক রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ অর্থনৈতিক স্বার্থ রাজ্যগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। তথাপি প্রশাসনিক সুবিধা রাজ্য গঠন হওয়ার ভিত্তি হওয়া উচিত। কারণ এই উপাদানটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে সার্থক করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই উপাদানের অনুপস্থিতি বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রশ্রয় দেয়। ধর্মের ভিত্তিতে কতিপয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও সাধারণ ধর্ম রাজা গঠনের ভিত্তি হওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন ৪। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ – রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, প্রভৃতি উত্তর ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ হিন্দি ভাষা ব্যবহার করে। যদি উপরোক্ত রাজ্যগুলোকে একত্রিত করে একক রাজ্য গঠন করা হয় তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থানুসারে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। যুক্তি প্রদর্শন করো।

উত্তরঃ না। এ ধরনের রাজ্যগঠন যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা সম্মত নয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জাতীয় ও রাজ্যিক পর্যায়ে দুটি পৃথক রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকে। যদি এই রাজাগুলো একত্রে মিলিত হয়ে একটি রাজ্য গঠন করে তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রবাদের আদর্শের পরিপন্থী হবে। এই রাজ্য এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পর্যবসিত হবে।

প্রশ্ন ৫। কেন রাজ্যপালের ভূমিকায় বিভিন্ন রাজ্য অখুশি? 

উত্তরঃ রাজ্যপালের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বহুবার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যপালগণকৈ কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত করে এবং রাজ্যপালগণ প্রকৃত অর্থে কেন্দ্র সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন। তাই প্রায়ই তাঁরা কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারে রাজ্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করেন। ফলস্বরূপ, রাজ্যগুলো তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে। ৩৫৬নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য সুপারিশ করতে পারেন। রাজ্যপালের এই ক্ষমতার অনেক বার অনেক রাজ্যে অপব্যবহার হয়েছে। রাজ্যপালের এ ধরনের কার্যকলাপে বহু রাজ্য সরকারই অখুশি।

প্রশ্ন ৬। স্বশাসনের (Greater Autonomy) জন্য অংগ রাজ্যগুলো কী কী দাবি উত্থাপিত করে?

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর হতে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। এর প্রধান কারণ হল কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ক্ষেত্রেই কংগ্রেস দলের সরকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু ১৯৬৬ সালের পর কয়েকটি রাজ্যে অ–কংগ্রেসী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই সমস্যার উদ্ভব হয়। বিশেষ করে সি. পি. আই (এম), ডি. এম. কে. এবং অকালি দল রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি করে। এই রাজনৈতিক দলগুলির মতে, কেন্দ্র হতে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না হলে দেশে একতা ও সংহতি রক্ষা করা সম্ভব হবে না। 

তাই রাজাগুলো নিম্নলিখিত দাবিসমূহ উত্থাপন করেঃ

(ক) ডি. এম. কে. দেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব ও সংহতি অক্ষুণ্ণ রেখে রাজ্য সরকারের হাতে অধিক ক্ষমতা ন্যস্ত করার দাবি উত্থাপন করে।

(খ) রাজাগুলো সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের হাত হতে রাজ্য সরকারের হাতে অবশিষ্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি উত্থাপন করে। 

(গ) বিকাশমুখী কার্যের জন্য ঋণ, অনুদান, প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে রাজ্যসমূহের আলোচনা করার স্বাধীনতা থাকার দাবি উত্থাপন করেন।

(ঘ) রাজ্যসমূহ তাদের হাতে অধিক আর্থিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি তুলে। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাম ফ্রন্ট সরকার কেন্দ্র–রাজ্যের আর্থিক সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। 

(ঙ) রাজ্যসমূহ তাদের জন্য অধিক প্রশাসনিক ক্ষমতা পাওয়ার দাবি উত্থাপন করে।

প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংবিধানের চারটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করো যেখানে কেন্দ্র সরকারকে রাজ্য সরকারের চেয়ে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে? 

উত্তরঃ সংবিধানে রাজ্য সরকারের তুলনায় কেন্দ্র সরকারের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। 

নিম্নোক্ত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য এর প্রকৃষ্ট প্রমাণঃ

(ক) কেন্দ্রের ব্যাপক ক্ষমতাঃ ভারতীয় সংবিধান কেন্দ্রের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান করেছে। জরুরিকালীন অবস্থায় সমগ্র দেশে কেন্দ্রের একাধিপত্য স্থাপিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রীক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হয়। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের পরিপন্থি। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন রাজ্য সৃষ্টি, রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন এবং রাজ্যের নামও পরিবর্তন করতে পারে।

(খ) এক সংবিধানঃ ভারতের সংবিধান কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েরই সংবিধান। একমাত্র জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে পৃথক সংবিধান আছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যগুলির শাসনকার্য পরিচালিত হয়। অঙ্গ রাজ্যগুলোর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার নেই।

(গ) রাজস্ব বণ্টনে কেন্দ্রীয় প্রাধান্যঃ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সকল কর কেন্দ্রীয় সরকার আরোপ করেন। ফলে আর্থিক সাহায্যের জন্য অঙ্গ রাজ্যগুলোকে কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাছাড়া ভারতে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির হাতে রয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। 

(ঘ) জরুরি অবস্থা ঘোষণাঃ ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এই জরুরী অবস্থা ঘোষণার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র দেশে তার কর্তৃত্ব কায়েম করে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এককেন্দ্রিক কাঠামোয় পরিবর্তিত হয়ে যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top