Class 11 Political Science Chapter 6 বিচার বিভাগ answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 6 বিচার বিভাগ and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 6 বিচার বিভাগ
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 6 বিচার বিভাগ Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
বিচার বিভাগ
পাঠ: ৬
প্ৰথম খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিচার বিভাগ কী?
উত্তরঃ সরকারের যে বিভাগ দেশের প্রচলিত আইনগুলির ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ পূর্বক যথাযথভাবে বিচারকার্যে প্রয়োগ করে তাকে বিচার বিভাগ বলে।
প্রশ্ন ২। বিচার বিভাগের প্রধান ভূমিকা কী?
অথবা,
বিচার বিভাগের প্রধান কার্য কী?
উত্তরঃ বিচার বিভাগের প্রধান কার্য হল সমগ্র দেশে ন্যায় বিচার প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং ব্যক্তি–স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করা।
প্রশ্ন ৩। ভারতের বিচারবিভাগ কি শাসনবিভাগের অধীন?
উত্তরঃ না; ভারতের বিচারবিভাগ শাসন বিভাগের অধীন নয়। বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ হতে পৃথক।
প্রশ্ন ৪। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিগণকে কে নিয়োগ করেন?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি।
প্রশ্ন ৫। PIL – এর সম্পূর্ণ নাম কী?
উত্তরঃ Public Interest Litigation (জনস্বার্থ-সংক্রান্ত মামলা)।
প্রশ্ন ৬। কত বছর বয়সে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি অবসরগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ৬৫ বছর।
প্রশ্ন ৭। হাইকোর্টের বিচারপতি কত বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন?
উত্তরঃ ৬২ বছর।
প্রশ্ন ৮। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা কত?
উত্তরঃ প্রধান বিচারপতি ও ৩০জন অন্যান্য বিচারপতি নিয়ে মোট বিচারপতির সংখ্যা ৩১ জন। (এপ্রিল, ২০০৮ সাল পর্যন্ত)।
প্রশ্ন ৯। কে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করেন।
উত্তরঃ ভারতের কেন্দ্রীয় সংসদ।
প্রশ্ন ১০। সুপ্রীম কোর্ট কি হাইকোর্টের বিচারপতিদের বদলি (transfer) করতেপারেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ; সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্টের বিচারপতিদের অন্য হাইকোর্টে বদলি করতে পারেন।
প্রশ্ন ১১। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কার্যকাল সংক্রান্ত কোন্ বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়?
উত্তরঃ সিনিয়রিটি।
প্রশ্ন ১২। আইনের শাসন বলতে তুমি কি বোঝ?
উত্তরঃ আইনের শাসন বলতে দেশে প্রচলিত আইনের প্রাধান্যকে বোঝায়। আইনের দৃষ্টিতে সকল সমান। সকল মানুষই একই আইন ও আদালতের বিচারাধীন। এটি আইনের শাসনের মূল বক্তব্য।
প্রশ্ন ১৩। আইনের শাসন তত্ত্বটির প্রবক্তা কে?
উত্তরঃ প্রখ্যাত ব্রিটিশ আইনবিদ ডাইসি।
প্রশ্ন ১৪। কে প্রথম দিল্লিতে লোক আদালত উদ্বোধন করেন?
উত্তরঃ বিচারপতি পি. এন. ভগবতী (১৯৮৫ সালে)।
প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ আদালত কোনটি?
উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্ট।
প্রশ্ন ১৬। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতবর্ষে দ্বৈত বিচার ব্যবস্থা আছে? (‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ লেখো)
উত্তরঃ না।
প্রশ্ন ১৭। ভারতের বিচার ব্যবস্থা হল এক এবং অখণ্ড? (হ্যাঁ বা না লেখো)
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ১৮। ভারতের অখণ্ড বিচার ব্যবস্থা (integrated chain of Judiciary)-র শীর্ষে আছে ……..? (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ সুপ্রিম কোর্ট।
প্রশ্ন ১৯। বর্তমানে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা কত?
উত্তরঃ ৩১জন (প্রধান বিচারপতিসহ)।
প্রশ্ন ২০। কোথায় প্রথম লোক আদালত অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ দিল্লিতে।
প্রশ্ন ২১। ভারতের বিচার ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যটি উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের বিচার ব্যবস্থা হল এক এবং অখণ্ড।
প্রশ্ন ২২। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কী ধরনের বিচার ব্যবস্থা থাকে?
উত্তরঃ দ্বৈত বিচার ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ২৩। উচ্চতম ন্যায়ালয় দ্বারা জারি করতে পারা একটি লেখ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ বন্দী প্রত্যক্ষকরণ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে কীভাবে নিযুক্ত করা হয়?
উত্তরঃ ভারতের সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সিনিয়রিটির প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়। রাষ্ট্রপতি সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতিকে অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতিরূপে নিয়োগ করেন।
প্রশ্ন ২। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের কীভাবে নিযুক্ত করা হয়?
উত্তরঃ সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে অন্যান্য বিচারপতিগণকে নিয়োগ করেন। যদি তিনি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সুপ্রীমকোর্টের অন্যান্য বিচারপতি ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণের সঙ্গে পরামর্শ করেই নুতন বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি একজন অতিরিক্ত বিচারপতিও নিয়োগ করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতির যে কোনো দুটি যোগ্যতা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হতে হলে একজন ব্যক্তির বিশেষ কতিপয় যোগ্যতা থাকতে হবে।
এইগুলির মধ্যে অন্যতম দুইটি হলঃ
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) কোন একটি হাইকোর্টের অথবা একাধিক হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে অন্ততঃ ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রশ্ন ৪। হাইকোর্টের বিচারপতির যে কোনো দুটি যোগ্যতা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ হাইকোর্টের বিচারপতির দুটি যোগ্যতা নিম্নরূপঃ
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) কোন একটি বা একাধিক হাই কোর্টে অন্ততঃ এক নাগাড়ে আইনজীবি হিসাবে দশ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রশ্ন ৫। সুপ্রীম কোর্টের মূল এলাকা বলতে তুমি কী বোঝ?
অথবা,
ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের মৌলিক অধিকার ক্ষেত্র কী সূচিত করে?
উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্টের মূল এলাকা বলতে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় সম্পর্কিত বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্র বোঝায় –
(ক) ভারত সরকার বনাম এক বা একাধিক রাজ্যের বিবাদ।
(খ) একদিকে ভারত সরকার ও কোন রাজ্য এবং অপরদিকে এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যের বিবাদ। এবং
(গ) দুই বা ততোধিক রাজ্যের মধ্যের বিবাদ।
প্রশ্ন ৬। বিচার পুনর্বিচার এবং লেখসমূহের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো?
উত্তরঃ বিচার পুনর্বিচার (Judicial Review) এবং লেখ (Writ)-এর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিচার পুনর্বিচারের ক্ষমতা বিচারালয়কে সংবিধান রক্ষা করার এবং নাগরিকের অধিকারকে সুরক্ষা করার ক্ষমতা প্রদান করে। লেখ- এর মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট ও হাই কোর্ট কেবল নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে। সংবিধান সুরক্ষার অধিকার বিচার–পুনর্বিচার প্রক্রিয়ায় থাকলেও লেখ জারির মাধ্যমে সংবিধান রক্ষার বিষয় পরিলক্ষিত হয় না। লেখ জারির মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট নাগরিকের কেবল মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।
প্রশ্ন ৭। মৌলিক অধিকার সুরক্ষার দুটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা কী কী?
উত্তরঃ বিচারালয় কর্তৃক মৌলিক অধিকার রক্ষা করার দুটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা হলঃ
(ক) সুপ্রীম কোটি বিভিন্ন লেখ জারি করে নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ করে।
(খ) মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে এমন কোনো আইনকে সুপ্রীম কোর্ট অসাংবিধানিক ঘোষণা করে মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।
প্রশ্ন ৮। বিচার বিভাগ ও সংসদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল এরূপ যে কোনো দুটি বিষয় লেখো।
উত্তরঃ (ক) সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত বিতর্ক।
(খ) সংসদের সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা বিষয়ক।
প্রশ্ন ৯। বিচারালয়ের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার যে কোনো দুটি উপায় উল্লেখ করো?
উত্তরঃ বিচারালয়ের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার দুটি উপায় নিম্নরূপঃ
(ক) বিচারপতিগণের উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির নিযুক্তি ও নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া।
(খ) বিচার বিভাগের উপর কার্যপালিকার ও আইনবিভাগের হস্তক্ষেপ না করা।
প্রশ্ন ১০। বিচারালয়ের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তরঃ বেন্থাম (Bentham) এর মতে, বিচার বিভাগের কার্য সম্পাদন ও বিচার পরিচালনার উপরই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিচার বিভাগ সরকারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। স্বাধীন বিচার বিভাগ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাই বিচারবিভাগ সরকারের শাসনবিভাগ বা আইনবিভাগ হতে মুক্ত থাকা প্রয়োজন। এজন্য ভারতীয় গণতন্ত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ১১। উচ্চতম ন্যায়ালয়ের মুখ্য ন্যায়াধীশকে কে নিযুক্ত করেন? মুখ্য ন্যায়াধীদের কার্যকালের মেয়াদ কতদিন?
উত্তরঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি উচ্চতম ন্যায়ালয়ের মুখ্য ন্যায়াধীশকে নিযুক্ত করেন। মুখ্য ন্যায়াধীশ সাধারণত ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকেন।
অবশ্য –
(ক) মুখ্য ন্যায়াধীশ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে।
(খ) তার মৃত্যু হলে, কিংবা।
(গ) তাঁকে পদচ্যুত করা হলে।
কার্যকাল পরিসমাপ্তির পূর্বেই মুখ্য ন্যায়াধীশের পদ শূন্য হতে পারে।
প্রশ্ন ১২। ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় কখন পরামর্শমূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে?
উত্তরঃ ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় দু’ ধরনের ক্ষেত্রে পরামর্শমূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
এই দু’ধরনের ক্ষেত্র হলঃ
(১) সংবিধানের ১৪৩ (১) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে যদি কোনো সময় রাষ্ট্রপতির এরকম মনে হয় যে সর্বজনীন গুরুত্ব সম্পন্ন আইন বা তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেক্ষেত্রে তিনি উচ্চতম ন্যায়ালয়ের কাছে বিচার বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারেন এবং উচ্চতম ন্যায়ালয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে।
(২) সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পূর্বে যে সব চুক্তি, সন্ধি, সনদ ইত্যাদি সম্পাদিত হয়েছিল সে সব বিষয়ে কোনো বিবাদ দেখা দিলে সে সম্বন্ধে উচ্চতম ন্যায়ালয়ের কাছে রাষ্ট্রপতি মতামত চেয়ে পাঠাতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে উচ্চতম ন্যায়ালয় পরামর্শ দিতে বাধ্য থাকে। তবে রাষ্ট্রপতি উচ্চতম ন্যায়ালয়ের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নন।
প্রশ্ন ১৩। ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ে কী কী ধরনের আপীল করা যায়?
উত্তরঃ ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ে চার ধরনের আপীল করা যেতে পারে –
(ক) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপীল।
(খ) দেওয়ানি আপীল।
(গ) ফৌজদারী আপীল।
(ঘ) বিশেষ অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে আপীল ।
প্রশ্ন ১৪। জাতীয় আইনমূলক সাহায্য আইন (National Legal Services Act) সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ ভারতের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালের আগষ্ট মাসে দিল্লীতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবের মাধ্যমে যে আইনটি পাশ করা হয়েছিল তার নাম জাতীয় আইনমূলক সাহায্য আইন। এই আইন অনুসারে ১৯৮৫ সালের ৬ই অক্টোবর দিল্লীতে প্রথম লোক আদালতের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বিচারপতি পি. এন. ভগবতী।
প্রশ্ন ১৫। ভারতের বিচার ব্যবস্থার যে কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতের বিচার ব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতের বিচার ব্যবস্থা এক এবং অখণ্ড।
(খ) ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় সংবিধানের অভিভাবক ও মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা।
প্রশ্ন ১৬। জনস্বার্থজনিত আবেদন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ যখন কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পীড়িত ব্যক্তির পক্ষে অধিকার ভঙ্গের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং তা যদি সমাজ বা জনস্বার্থ সম্পর্কিত হয় তখন একে জনস্বার্থজনিত আবেদন বলে।
যে কোনো নাগরিক বা নাগরিক গোষ্ঠী বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুপ্রীম কোর্ট বা হাইকোর্টে জনস্বার্থ রক্ষার্থে মামলা দায়ের করতে পারে। আদালত আবেদনের গুণাগুণ যাচাই করে বিচারের জন্য গ্রহণ করে।
প্রশ্ন ১৭। ভারতীয় ন্যায়ালয়ে জারি করা দুটি আদেশপত্রের নাম লেখো?
উত্তরঃ (১) বন্দী প্রত্যক্ষকরণ।
(২) পরমাদেশ।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সাংবিধানিক ব্যবস্থাসমূহ ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার্থে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিধিবদ্ধ করা হয়েছেঃ
(ক) ভারতের রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণকে নির্দিষ্ট কতিপয় যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ করেন। বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির নিজস্ব কোন মতামত নেই। সংসদও এই নিয়োগের ব্যাপারে অংশ গ্রহণ করে না।
(খ) বিচারপতির নির্দিষ্ট কার্যকাল আছে। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ ৬৫ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন এবং হাইকোর্টের বিচারপতিগণ ৬২ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন।
(গ) সংবিধানের ১২৫ নং ধারায় সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার উল্লেখ আছে।
(ঘ) বিচারপতিদের নিয়োগের পর বেতন, ভাতা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তন করা যায় না।
(ঙ) বিচারপতিদের সিদ্ধান্ত ও কার্যাবলীর সমালোচনা করা যায় না। তাদের সিদ্ধান্ত বা কার্যকে সমালোচনা করলে আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি ভোগ করতে হয়।
(চ) সংসদও বিচারপতিদের কার্যপ্রণালীর সমালোচনা করতে পারে না।
(ছ) স্বয়ং রাষ্ট্রপতিও আদালতের কার্যের সমালোচনা করতে পারেন না।
(জ) বিশেষ কোন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
প্রশ্ন ২। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের কীভাবে নিয়োগ করা হয়?
উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণকে নিয়োগ করেন। সুপ্রীম কোর্টের সাধারণ বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করেন। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন বোধ করলে সুপ্রীমকোর্টের অন্যান্য বিচারপতি ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণের সঙ্গে পরামর্শ করেই বিচারপতিদের নিয়োগ করতে পারেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির নিজস্ব কোন অভিমত নেই। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি একজন অতিরিক্ত বিচারপতিও নিয়োগ করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩। ভারতের সুপ্রীম কোর্টকে চূড়ান্ত কোর্ট বলা হয় কেন?
উত্তরঃ আমাদের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রীম কোর্ট। সুপ্রীম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক এবং ব্যাখ্যা কর্তা। সুপ্রীম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের রক্ষা কর্তা।
আমাদের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। এই সুপ্রীমকোর্টের অধীনে রয়েছে হাইকোর্টসমূহ এবং হাইকোর্টের অধীনে অন্যান্য আদালতসমূহ রয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের উপরে আর কোনও বিচারালয় নেই। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সুপ্রীমকোর্টের সিদ্ধান্ত মানতে অন্যান্য সকল বিচারালয় বাধ্য। তাই ভারতের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্টই চূড়ান্ত আদালত।
প্রশ্ন ৪। “সুপ্রীমকোর্ট ভারতের সর্বোচ্চ আপীল আদালত।”- ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্ট ভারতের সর্বোচ্চ আপীল আদালত। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের তিন ধরনের আপীল শোনার ক্ষমতা আছে।
যথা–
(ক) দেওয়ানী আপীলঃ সুপ্রীমকোর্টের দেওয়ানী সংক্রান্ত মামলার আপীল শোনার ক্ষমতা আছে।
(খ) ফৌজদারী আপীলঃ সুপ্রীমকোর্টের ফৌজদারী–সংক্রান্ত মামলার আপীল শোনার ক্ষমতা আছে।
(গ) সাংবিধানিক আপীলঃ সাংবিধানিক বিষয় – সম্পর্কিত মামলা নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করা যায়। এক্ষেত্রে সংবিধান ব্যাখ্যার প্রশ্ন জড়িত থাকে।
প্রশ্ন ৫। বিচার পুনর্বিচারের উদ্দেশ্যসমূহ লেখো?
উত্তরঃ বিচার পুনর্বিচার (Judicial Review)-এর মূল উদ্দেশ্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) আইনবিভাগ এবং শাসন বিভাগ যাতে সংবিধানের কোন ব্যবস্থা অতিক্রম করতে না পারে তার সুনিশ্চয়তা প্রদান করা।
(খ) নাগরিকের অধিকারসমূহ রক্ষা করা।
প্রশ্ন ৬। হাইকোর্টের গঠন প্রণালী আলোচনা করো?
উত্তরঃ প্রত্যেক হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনানুসারে অন্যান্য বিচারপতিদের নিযুক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি অনধিক দু বৎসরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতিও নিয়োগ করতে পারেন। হাইকোর্টের বিচারপতিগণের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।
৭। ভারতের সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় বিচার – ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রীম কোর্ট। সুপ্রীম কোর্ট ভারতের সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যা কর্তা। সুপ্রীম কোর্ট নাগরিকের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা।
ক্ষমতা ও কার্যাবলীঃ সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী রয়েছে। এগুলোকে নিম্নোক্ত চার ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
(ক) মূল এলাকা।
(খ) আপীল এলাকা।
(গ) পরামর্শ দান এলাকা।
(ঘ) লেখ জালি এলেকা।
(ক) মূল এলাকাঃ সুপ্রীম কোর্ট নিম্নোক্ত বিবাদগুলির সমাধান করে –
(অ) ভারত সরকার বনাম এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের মধ্যের বিবাদ।
(আ) ভারত সরকার ও কোনো রাজ্য বনাম এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যের বিবাদ। এবং
(ই) দুই বা ততোধিক রাজ্যের মধ্যের বিবাদ।
(খ) আপীল এলাকাঃ সুপ্রীমকোর্ট ভারতের সর্বোচ্চ আপীল আদালত। সুপ্রীমকোর্টের তিন ধরনের আপীল শোনার ক্ষমতা আছে।
যথা –
(অ) দেওয়ানী আপীল (Civil Appeal)
(আ) ফৌজদারী আপীল (Criminal Appeal)
(ই) সাংবিধানিক আপীল (Constitutional Appeal)
(গ) পরামর্শদান এলাকাঃ ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১৪৩নং অনুচ্ছেদ মতে আইন-সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রীমকোর্ট সেই ব্যাপারে পরামর্শ দান করতে পারে। তবে এরূপ পরামর্শ রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন।
(ঘ) লেখ জারিঃ সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলির সংরক্ষণের দায়িত্ব সুপ্রীমকোর্টের উপর ন্যস্ত। সুপ্রীমকোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় লেখ জারি করতে পারে।
সুপ্রীমকোর্টের রায় বা আদেশ ভারতে অবস্থিত অন্যান্য আদালত মেনে নিতে বাধ্য। সুপ্রীমকোর্ট সকল হাইকোর্টের কার্যাবলি দেখাশোনা করে।
প্রশ্ন ৮। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ পদ্ধতি বর্ণনা করো?
উত্তরঃ সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের ‘অসদাচরণ’ অথবা ‘অযোগ্যতা’ (Misbehaviour or Incapacity)–এর কারণে মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতি তাদের বরখাস্ত করতে পারেন। এজন্য অবশ্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সংসদের উভয়কক্ষে অপসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব অনুমোদনের পর উপস্থিত ভোটদানকারী সদস্যের দুই– তৃতীয়াংশ ভোটাধিক্যে অপসারণ প্রস্তাব গৃহীত হতে হয়। কোন প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর অভিযুক্ত বিচারপতি অপসারিত হন।
প্রশ্ন ৯। সুপ্রীমকোর্টের লেখ জারি সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলো সংরক্ষণের দায়িত্ব সুপ্রীমকোর্টের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হলে সে সুপ্রীমকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে। সুপ্রীমকোর্ট অভিযোগ বিচার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবার নির্দেশ দেয়। নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সুপ্রীমকোর্ট বিভিন্ন ধরনের লেখ জারি পারেন। সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক জারি করা বিভিন্ন নিম্নরূপঃ
(ক) বন্দী প্রত্যক্ষীকরণঃ যে কোনো ব্যক্তিকে বন্দী করা হলে তার কারণ জানবার জন্য এই লেখ জারি করা হয় এবং আটক ব্যক্তিকে আইন অনুযায়ী বন্দী না করা হলে আদালত আটক করা ব্যক্তিকে মুক্তি দেবার নির্দেশ প্রদান করে।
(খ) পরমাদেশঃ এই লেখ দ্বারা আদালত কর্তৃক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধস্তন আদালতকে আপন পদে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
(গ) প্রতিষেধ এই লেখ দ্বারা উচ্চ বিচারালয় নিম্ন বিচারালয়কে নিজ অধিকারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দেয়।
(ঘ) অধিকার পৃচ্ছাঃ যখন কোন ব্যক্তি এমন কোন পদ বা অধিকার দাবী করে যা তার যোগ্য নয়, তখন আদালত এই লেখ জারির মাধ্যমে দাবির বৈধতা অনুসন্ধান করে এবং দাবি বৈধ প্রমাণিত না হলে তাকে পদচ্যুত বা অধিকারচ্যুত করে।
(ঙ) উৎশ্লেষণঃ নিম্নতর বিচারালয়ে বিচার চলাকালীন ওই বিচারালয়ের হাত হতে বিচার উচ্চতম বিচারালয়ের হাতে অর্পণ করার জন্য এবং ক্ষমতা বহির্ভূত সিদ্ধান্তকে বাতিল করার জন্য উৎপ্রেষণ লেখ জারি করা হয়।
প্রশ্ন ১০। বিচার বিভাগের চারটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ বিচার বিভাগের চারটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) বিচার বিভাগের প্রধান কার্য হল সমগ্র দেশে ন্যায় বিচার প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
(খ) বিচারকগণ বিচারকার্যে আইনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে রায় দান করেন। পরবর্তীকালে এই রায় আইনের রূপ লাভ করে। সুতরাং আইন রচনায় বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(গ) প্রশাসনিক কার্যঃ বিচার বিভাগকে কিছু প্রশাসনিক কার্যও পালন করতে হয়। বিচার বিভাগের কিছু কিছু কর্মচারীর নিযুক্তি ও চাকরি হতে বরখাস্ত প্রভৃতি প্রশাসনিক কাজ বিচার বিভাগই করে থাকে।
(ঘ) সংবিধানের রক্ষণাবেক্ষণঃ বিচার বিভাগ সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। সংবিধানের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন ১১। সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শদান এলাকা ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ১৪৩নং ধারানুসারে রাষ্ট্রপতি আইন–সংক্রান্ত ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য নন। রাষ্ট্রপতির অনুরোধক্রমে সুপ্রীমকোর্ট তাঁকে এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এখনও পর্যন্ত একাধিকবার রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শ চেয়েছেন।
প্রশ্ন ১২। আইনের শাসন বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ আইনের শাসন বলতে দেশে প্রচলিত আইনের প্রাধান্যকে বোঝায়। প্রখ্যাত ব্রিটিশ আইনবিদ ডাইসি আইনের শাসন (Rule of Law)– তত্ত্বের মূল প্রবক্তা। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইন ও আদালতের সীমার ভেতর। ভারতীয় সংবিধানের ১৪-১৮ নং অনুচ্ছেদে আইনের শাসনের উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের শাসন অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তি আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সকলকেই সমানভাবে সংরক্ষণ করা হবে।
প্রশ্ন ১৩। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতির যোগ্যতাগুলো কী কী?
উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হতে হলে একজন ব্যক্তির নিম্নোক্ত যোগ্যতা থাকতে হবেঃ
(ক) তাঁকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
(খ) কোন একটি হাইকোর্টের অথবা একাধিক হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা তাঁর কমপক্ষে দশ বছর এক বা একাধিক হাইকোর্টের আইনজীবি হিসাবে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; অথবা রাষ্ট্রপতির মতে তাকে একজন বিশিষ্ট আইন বিশারদ হতে হবে।
প্রশ্ন ১৪। সুপ্রীম কোর্টের আপীল এলাকা ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্ট ভারতের চূড়ান্ত আপীল আদালত। সুপ্রীম কোর্টে চার ধরনের আপীল করা যায় –
(ক) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপীলঃ কোনো মামলায় হাইকোর্ট যদি এ মর্মে প্রমাণ পত্র দেয় যে সেই মামলার সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা জনিত আইনের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে তাহলে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা আনা যাবে [১৩২(১) নং অনুচ্ছেদ]। হাইকোর্ট যদি এরকম প্রমাণ পত্র দিতে অস্বীকার করে এবং সুপ্রীম কোর্ট যদি নিশ্চিত হয় যে মামলাটির সঙ্গে জড়িত আছে সংবিধানের ব্যাখ্যা জনিত আইনের প্রশ্ন তাহলে সুপ্রীম কোর্ট নিজেই আপীল করার বিশেষ অনুমতি দিতে পারে [১৩৬নং অনুচ্ছেদ ]।
(খ) দেওয়ানি আপীলঃ দেওয়ানি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্ট যদি প্রমাণপত্র দেয় যে মামলাটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রশ্ন জড়িত আছে সেক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করা যাবে।
(গ) ফৌজদারি আপীলঃ তিনটি ক্ষেত্রে এধরনের আপীল করা যায় –
(১) নিম্নতর আদালতে মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে আপীল বিচারে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড দিলে।
(২) যদি হাইকোর্ট কোনো মামলা নিম্নতম আদালত থেকে নিজের হাতে তুলে নেয়। এবং বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং
(৩) যদি হাইকোর্ট এ মর্মে প্রমাণ পত্র দেয় যে মামলাটি সুপ্রীম কোর্টে আপীল যোগ্য [১৩৪ (১) নং অনুচ্ছেদ]। সংবিধানের ১৩৪ (২) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ একটা আইন করে বলেছে যে বর্তমানে স্বল্প মেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যে কোনো নাগরিক সুপ্রীম কোর্টের কাছে আপীল করতে পারবে।
(খ) বিশেষ অনুমতিপ্রাপ্ত আপীলঃ সংবিধানের ১৩৬(১) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ভারতের যে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায়, আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য সুপ্রীম কোর্ট ‘বিশেষ অনুমতি’ (Special Leave) দিতে পারে। কিন্ত সামরিক আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য সুপ্রীম কোর্ট ‘বিশেষ অনুমতি’ দিতে পারে না [১৩৬ (২) নং অনুচ্ছেদ]।
প্রশ্ন ১৫। ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের পরামর্শদান ক্ষেত্রাধিকারের বিষয়ে ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় (Supreme Court)-এর পরামর্শ দানের ক্ষমতা আছে।
সংবিধানের ১৪৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে যদি কোনো সময় রাষ্ট্রপতির এরকম মনে হয় যে সার্বজনীন স্বার্থ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইন বা তথ্য সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে সে ক্ষেত্রে তিনি সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য নন। এখনও পর্যন্ত একাধিকবার রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চেয়েছেন।
প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় সংবিধানে একত্রিত ন্যায়পালিকা ব্যবস্থার ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ বিচার বিভাগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানে দ্বৈত বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তে একত্রিত বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে এক অখণ্ড বিচার ব্যবস্থার প্রণিধান রাখা হয়েছে। ভারতীয় বিচার বিভাগের কাঠামো পিরামিড আকৃতির, বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থান করে ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় (Supreme Court of India)। বিভিন্ন অংগ রাজ্যের উচ্চ আদালত (High Court) এর অধীনে থাকে। উচ্চ আদালতের অধীনে প্রতিটি জেলায় আছে জেলা আদালত (District Court ) এবং এর অধীনে আছে অন্যান্য নিম্ন আদালতসমূহ (Subordinate Courts)।
বিশ্বের অন্যান্য বিচারালয় অপেক্ষা ভারতের উচ্চতম আদালত অত্যন্ত শক্তিশালী। সংবিধানের নির্দেশ অনুসারে উচ্চতম আদালতের কার্য ও দায়িত্ব নির্ধারিত হয়। আর উচ্চতম আদালতের অধীন উচ্চ আদালতসমূহ এবং উচ্চ আদালতের অধীন অন্যান্য নিম্ন আদালতসমূহের কার্য ও দায়িত্ব সংবিধানের নির্দেশ অনুসারে নির্ধারিত আছে। ভারতে একটি স্বাধীন একত্রিত বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের সুপ্রীমকোর্টের ভূমিকা পর্যালোচনা করো?
উত্তরঃ সুপ্রীমকোর্ট ভারতের সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যকর্তা। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করে বোঝা যায় যে সুপ্রীম কোর্টের ভূমিকা ভারতীয় গণতন্ত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
(ক) সুপ্রীমকোর্ট ভারতের বিচার ব্যবস্থার মূলস্তম্ভ স্বরূপ। ভারতের সকল কোর্টের উপর সুপ্রীম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ আছে। ভারতের যে কোনো আদালতের সিদ্ধান্তকে অসম্মান বা অগ্রাহ্য করার অধিকার নেই।
(খ) সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। সংবিধানের ব্যাখ্যা করার অধিকার ভারতের সুপ্রীম কোর্টকে প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টকে আইন পর্যালোচনা করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট–এর বিচারের পুনর্বিচার করার অধিকার আছে।
(গ) সুপ্রীম কোর্ট নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলির সুরক্ষা প্রদান করে। কোন নাগরিক মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হলে সুপ্রীমকোর্ট আইনী পর্যালোচনা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। সংবিধানের ৩২নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্ট বিভিন্ন প্রকার লেখ (Writs) জারি করে নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করে।
(ঘ) ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সুরক্ষার্থে সুপ্রীম কোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্র ও রাজ্যের সাংবিধানিক ক্ষমতা সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দিলে সুপ্রীমকোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা করে সেই বিরোধের মীমাংসা সূত্র প্রদান করে।
(ঙ) সংবিধানের ১৪৩নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি আইন সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের নিকট পরামর্শ চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রীম কোর্ট সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। তবে এরূপ পরামর্শ গ্রহণে রাষ্ট্রপতি বাধ্য নন।
প্রশ্ন ২। জনস্বার্থ–সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পীড়িত ব্যক্তির পক্ষে অধিকার ভঙ্গের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং তা যদি সমাজ বা জনস্বার্থ সম্পর্কিত হয় তখন একে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলা (PIL) বলে। এই প্রকার মামলায় যে কোনো নাগরিক বা নাগরিক গোষ্ঠী বা যে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুপ্রীম কোর্ট বা হাই কোর্টে জনস্বার্থ রক্ষার্থে মামলা দায়ের করতে পারে। আদালত তার গুণাগুণ যাচাই করে বিচারের জন্য গ্রহণ করে। দরিদ্র, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের সপক্ষে যে কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান এই জনস্বার্থ- সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে পারে। এ ধরনের মামলায় দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে বিচার কার্য সম্পাদন করা হয়। ফলে সমাজের দরিদ্র নিপীড়িত শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হয়।
বিবেকবান নাগরিক বা নাগরিক গোষ্ঠী বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান দরিদ্র শ্রেণীর অধিকার রক্ষার্থে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলা আদালতে দায়ের করে। জনস্বার্থ–সংক্রান্ত মামলা আদালতে দায়ের করা খুব সহজ। একটি সাধারণ পত্রের মাধ্যমেও আদালতে এই মামলা দায়ের করা যায়। আদালত তা গ্রহণ করে বিচার বিবেচনা করে এবং তা বিচারযোগ্য হলে বিচার করার সিন্ধান্ত নেয়। জনস্বার্থ–সংক্রান্ত মামলা প্রথম গ্রহণ করেছিলেন বিচারপতি পি. এন. ভাগবতী। ১৯৭৯ সালের হোসেনারা খাতুন বনাম বিহার রাজ্য মামলা, ১৯৮০ সালের সুনীল বাত্রা বনাম দিল্লী এডমিনিস্ট্রেশন মামলা প্রভৃতি জনস্বার্থ–সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য মামলা। এই মামলাগুলো জেলে বন্দী কয়েদিদের দুর্দশা সংক্রান্ত বিষয়ের উপর দায়ের করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩। ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সমূহ কী কী?
উত্তরঃ ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতে একটি একক অবিচ্ছেদ্য বিচার ব্যবস্থা আছে। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রীমকোর্ট। সুপ্রীমকোর্টের নিম্নে আছে হাইকোর্টগুলো এবং তার নিম্নে আছে অন্যান্য অধীনস্থ আদালত সমূহ। কিন্তু সকল আদালত সুপ্রীমকোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন। রাজ্যের জন্য পৃথক কোন আদালত নেই। কেন্দ্র ও রাজ্যের জন্য একই বিচার ব্যবস্থা।
(খ) ভারতীয় বিচারবিভাগ স্বাধীন। সরকারের অন্যান্য বিভাগ হতে পৃথক হয়ে বিচার বিভাগ তার কার্য পরিচালনা করে।
(গ) বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক ও সংবিধানের ব্যাখ্যা কর্তা।
(ঘ) ভারতীয় বিচার বিভাগ নাগরিকের স্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষা করে।
(ঙ) ভারতীয় বিচারবিভাগ শাসন বিভাগের অধীনস্থ নয়। এটি স্বতন্ত্রভাবে তার কার্য সম্পাদন করে।
(চ) ভারতের বিচার বিভাগের বিচারের পুনর্বিচারের (Judicial Review) অধিকার আছে।
(ছ) আমাদের বিচার ব্যবস্থায় দুর্বল ও দরিদ্র শ্রেণী যাতে দ্রুত সুবিচার পায় তার জন্য জনস্বার্থ–সংক্রান্ত মামলার (PIL) প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪। বিচারালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার উপায়সমূহ উল্লেখ করো?
উত্তরঃ বেন্থাম (Bentham) এর মতে, বিচার বিভাগের কার্য সম্পাদন ও বিচার পরিচালনার উপরই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিচার বিভাগ সরকারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। স্বাধীন বিচার বিভাগ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাই বিচারবিভাগ সরকারের শাসনবিভাগ বা আইনবিভাগ হতে মুক্ত থাকা প্রয়োজন। এজন্য ভারতীয় গণতন্ত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ৫। উচ্চ ন্যায়ালয়ের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণনা করো?
উত্তরঃ গঠনঃ একজন প্রধান ন্যায়াধীশ এবং অন্যান্য কয়েকগুন ন্যায়াধীশ নিয়ে প্রত্যেকটি উচ্চ ন্যায়ালয় গঠিত হয়। উচ্চ ন্যায়ালয়ের ন্যায়াধীশগণের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। উচ্চ ন্যায়ালয়ের ন্যায়াধীশগণ ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকেন।
ক্ষমতা এবং কার্যাবলীঃ উচ্চ ন্যায়ালয়ের মূল এলাকা ও আপিল এলাকা আছে। অধিকন্তু লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করার ক্ষমতাও উচ্চ ন্যায়ালয়ের অধিকারভূক্ত। উচ্চ ন্যায়ালয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা রাজ্যগুলোর ফৌজদারি ও দেওয়ানি সংক্রান্ত মামলার অন্যতম আপিল আদালত। সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা রাজ্যগুলোর কোন ন্যায়ালয়ে সংবিধানের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন কোন মামলায় জড়িত থাকলে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া উচ্চন্যায়ালয়েই সম্পন্ন হয়। রাজ্য বা রাজাগুলোর সকল নিম্নতম ন্যায়ালয় ও ট্রাইবুনালসমূহের দেখাশুনার ভার ও উচ্চ ন্যায়ালয়ের উপর ন্যস্ত থাকে। উচ্চ ন্যায়ালয় নাগরিকের অধিকার সুরক্ষাকল্পে বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ, চরমাদেশ, উৎপ্রেষণ, প্রতিষেধ, অধিকারচ্ছা প্রভৃতি নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করে। উচ্চ ন্যায়ালয়ের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল জেলা ও দায়রা জজদিগকে নিযুক্ত করেন। উচ্চ ন্যায়ালয় বিচারবিভাগীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও ছুটির জন্য নিয়ম কানুন তৈরি করে।
প্রশ্ন ৬। ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের ক্ষমতা এবং কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় (Supreme Court)। ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় একাধারে সর্বোচ্চ আদালত, সংবিধানের রক্ষক ও ব্যাখ্যাকর্তা, নাগরিকের মৌলিক অধিকারের রক্ষক এবং রাষ্ট্রপতির আইনগত পরামর্শদাতা। এক্তিয়ারগত বিচারে ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় (Supreme Court) কে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বিচারালয় বলা হয়।
ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের কার্যক্ষেত্রকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা হয়ঃ
(১) মূল এলাকাঃ সংবিধানের ১৩১নং অনুচ্ছেদে ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয়ের মুগ এলাকার কথা আলোচনা করা হয়েছে। বৈধ অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্ন (আইনগত বা তথ্যগত) জড়িত আছে এমন কোনো বিবাদ যদি –
(ক) ভারত সরকার এবং এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যে দেখা যায়
অথবা,
(খ) একদিকে ভারত সরকার ও কোনো এক বা একাধিক রাজ্য এবং অন্যদিকে এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যে দেখা দেয় অথবা,
(গ) দুই বা ততোধিক রাজ্যের মধ্যে দেখা দেয়, তাহলে তার নিষ্পত্তি কেবলমাত্র উচ্চতম ন্যায়ালয়ের মূল এলাকায় হবে। অন্য কোনো আদালতে এধরনের বিরোধ বিচারের জন্য নেওয়া যাবে না।
(২) আপীল এলাকাঃ উচ্চতম ন্যায়ালয় বা সুপ্রীম কোর্ট ভারতের সর্বোচ্চ আপীল আদালত। সুপ্রীম কোর্টের চার ধরনের আপীল শোনার ক্ষমতা আছে –
(ক) সাংবিধানিক আপীল।
(খ) দেওয়ানি আপীল।
(গ) ফৌজদারী আপীল।
(ঘ) বিশেষ অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে আপীল।
(ক) সাংবিধানিক আপীলঃ দেওয়ানি, ফৌজদারী বা অন্য যে কোনো প্রকারের মামলাই হোক হাইকোর্ট যদি এ মর্মে প্রমাণপত্র (Certificate) দেয় যে মামলাটির সঙ্গে সংবিধান ব্যাখ্যাজনিত গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রশ্ন জড়িত আছে সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রীম কোর্টে মামলা আনা যাবে [১৩২ (১) নং অনুচ্ছেদ]। হাইকোর্ট এরকম প্রমাণপত্র দিতে অস্বীকার করলে সুপ্রীম কোর্ট নিজেই আপীল করার বিশেষ অনুমতি দিতে পারে যদি সুপ্রীম কোর্ট নিশ্চিত হয় যে মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা জনিত গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রশ্ন জড়িত আছে (১৩৬নং অনুচ্ছেদ)।
(খ) দেওয়ানি আপীলঃ দেওয়ানি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্ট যদি এ মর্মে প্রমাণ পত্র দেয় যে মামলাটির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আইনের প্রশ্ন জড়িত আছে তা হলে সেই মামলার সুপ্রীম কোর্টে আপীল করা যায়।
(গ) ফৌজদারী আপীলঃ তিনটি ক্ষেত্রে এই ধরনের আপীল করা যায় –
(১) নিম্নতর আদালতে মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে আপীল বিচারে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে।
(২) যদি হাইকোর্ট কোনো মামলা নিম্নতম আদালত থেকে নিজের হাতে নিয়ে বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়।এবং
(৩) হাইকোর্ট যদি মামলাটি সুপ্রীম কোর্টে আপীলযোগ্য বলে প্রমাণপত্র দেয় [অনুচ্ছেদ নং ১৩৪(১)]। বর্তমানে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যে কোনো নাগরিক সুপ্রীম কোর্টের কাছে আপীল করতে পারে [১৩৪ (২) অনুচ্ছেদ]।
(ঘ) বিশেষ অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে আপীলঃ সংবিধানের ১৩৬(১) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ভারতের যে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায়, আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য “বিশেষ অনুমতি’ সুপ্রীম কোর্ট দিতে পারে। অবশ্য সামরিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার জন্য সুপ্রীম কোর্ট বিশেষ অনুমতি দিতে পারে না।
(৩) পরামর্শদান এলাকাঃ সংবিধানের ১৪৩ (১) নং অনুচ্ছেদ অনুসারে যদি কোনো সময় রাষ্ট্রপতির মনে হয় যে সার্বজনীন গুরুত্ব সম্পন্ন আইন বা তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেক্ষেত্রে তিনি সুপ্রীম কোর্টের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রীম কোর্ট সেই ব্যাপারে পরামর্শ নিতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতি সুপ্রীম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য নন।
(৪) নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির এলাকাঃ সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলোর রক্ষাকর্তা ভারতের উচ্চতম ন্যায়ালয় বা সুপ্রীম কোর্ট। সুপ্রীম কোর্ট বিভিন্ন ধরনের লেখ জারি করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করে।
(৫) অন্যান্য ক্ষমতাঃ উপরোক্ত ক্ষমতাগুলো ছাড়াও সুপ্রীম কোর্টের কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা আছে।
এগুলো হল –
(ক) সুপ্রীম কোর্ট অভিলেখ আদালত হিসেবে কার্য করে।
(খ) সুপ্রীম কোর্ট নিজের দেওয়া রায়ের পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
(গ) সুপ্রীম কোর্টের ঘোষিত বিধিসমূহ ভারতের সব আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।
(ঘ) সুপ্রীম কোর্ট নিজ অবমাননার জন্য অবমাননাকারীকে শান্তি প্রদান করতে পারে।
প্রশ্ন ৭। ভারতে ন্যায়িক সক্রিয়তার উপরে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা ভারতবর্ষে জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা (Public Interest Litigation, PIL) এবং সামাজিক কার্য সংক্রান্ত মামলা (Social Action Litigation) এর মাধ্যমে উন্নতি লাভ করেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে আদালত এক নতুন পথ নির্দেশ করে যে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যরা তার পক্ষে মামলা করতে পারবে যদি মামলার মূল বিষয়বস্ত জনস্বার্থ সম্পর্কিত হয়। এসব মামলাকে বলা হয় জনস্বার্থ মামলা (PIL)। প্রায় একই সময়ে সুপ্রীম কোর্ট গ্রহণ করেছিল জেল বন্দীদের মামলার অধিকার। এর ফল স্বরূপ জনস্বার্থে উৎসাহিত নাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জন্য আদালতের দরজা খুলে যায়। জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা বিচার বিভাগের সক্রিয়তার একটি বাহন। সুপ্রীম কোর্ট আদালতে দাখিল করা মামলা ছাড়াও পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে বা ডাকযোগে প্রাপ্ত কোনো অভিযোগের বিষয়েও বিচার করে। ১৯৮০ সালে জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা এবং বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার মাধ্যমে আইনের বহু ধারা (Section)-র বিচার বিবেচনার পথও সুগম হয় যা পূর্বে সহজ ছিল না। এই উদ্দেশ্যে বিচার বিভাগ উৎসাহী জনগণ, সামাজিক সংস্থা এবং আইনবিদদের বঞ্চিত, নিঃস্ব জনগণের স্বপক্ষে মামলা উত্থাপন করার অনুমতি প্রদান করে।
সাম্প্রতিককালে বিচার বিভাগের ন্যায়িক সক্রিয়তা ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যরূপে পরিগণিত হয়েছে। ন্যায়িক সক্রিয়তা বর্তমানে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। ন্যায়িক সক্রিয়তা নিঃস্ব ও দরিদ্র জনগণের ন্যায় বিচার প্রদানে সহায়তা করে। ন্যায়িক সক্রিয়তা দরুন বর্তমানে দরিদ্র জনসাধারণ বহুলাংশে ন্যায় পেয়ে থাকেন। কিন্তু বিচারালয়ের সক্রিয়তা কখনো কখনো বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। ন্যায়িক সক্রিয়তার দরুন বর্তমানে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রার সংযোজন হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রধান ভিত্তি হল সরকারের প্রতিটি বিভাগের ক্ষমতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা। ন্যায়িক সক্রিয়তা এই গণতান্ত্রিক নীতির মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৮। ভারতে ন্যায় বিচারকের স্বাধীনতা সম্পর্কে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ ন্যায় বিচারকের স্বাধীনতা (Independence of Judiciary)-এর অর্থ হল –
(ক) অন্যান্য বিভাগের প্রভাবমুক্ত হয়ে ন্যায় কার্য সম্পাদন করা।
(খ) সরকারের অন্যান্য বিভাগ যেমন- আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের বিচারালয়ের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ না করা।
(গ) বিচারকদের নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করা।
ন্যায় বিচারকের স্বাধীনতা বলতে স্বেচ্ছাচারিতা অথবা দায়িত্বহীনতাকে বোঝায় না। ন্যায় বিচারক দেশের জনগণের, সংবিধানের এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের নিকট ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এবং দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ।
বেন্থাম (Bentham) এর মতে, বিচার বিভাগের কার্য সম্পাদন ও বিচার পরিচালনার উপরই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিচার বিভাগ সরকারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। স্বাধীন বিচার বিভাগ ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তাই বিচারবিভাগ সরকারের শাসনবিভাগ বা আইনবিভাগ হতে মুক্ত থাকা প্রয়োজন। এজন্য ভারতীয় গণতন্ত্রে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারবিভাগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের বিচার পুনরীক্ষণের ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের সুপ্রিমকোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হল বিচার পুনরীক্ষণ (Judicial Review)। এর অর্থ হল সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্ট প্রণীত কোন আইন, অধ্যাদেশ বা চুক্তি সংবিধান সঙ্গত না হলে তাকে অসংবিধানিক বলে ঘোষণা করতে পারে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবকরূপে ভূমিকা পালন করে। অবশ্য বিচার পুনরীক্ষণ “Judicial Review” শব্দদ্বয় সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই। বিচার পুনরীক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হল –
(ক) আইনবিভাগ এবং শাসনবিভাগ যাতে সংবিধানের কোন ব্যবস্থা অতিক্রম করতে না পারে তার সুনিশ্চয়তা প্রদান করা। এবং
(খ) নাগরিকের অধিকারসমূহ রক্ষা করা। সুপ্রিম কোর্ট মৌলিক অধিকারের রক্ষক এবং সেইজন্য মৌলিক বিরোধী যে কোনো আইন বাতিল করতে পারে। এর অন্তর্নিহিত অর্থে বিচার পুনরীক্ষণ (Judicial Review) ক্ষমতার উদ্ভব হয়েছে।
বিচার পুনরীক্ষণ (Judicial Review) এবং লেখ (Writ)-এর মধ্যে পার্থক্য আছে। বিচার পুনরীক্ষণ ক্ষমতা বিচারালয়কে সংবিধান রক্ষা করার এবং নাগরিকের অধিকারগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করার ক্ষমতা দান করে। অপরদিকে লেখ–এর মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট কেবল নাগরিকের অধিকারগুলোর সুরক্ষা প্রদান করে। সংবিধান সুরক্ষার অধিকার লেখ জারির মাধ্যমে পরিলক্ষিত হয় না। বিচার পুনরীক্ষণ ধারণাটি আমেরিকার বিচার ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার বিভিন্ন উপায়গুলি কী কী? এরমধ্যে অমিলটি খুঁজে বের করো।
(ক) সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিগণ অন্যান্য বিচারক নিয়োগে পরামর্শ দান করেন।
(খ) সাধারণতঃ বিচারকদের অবসর গ্রহণের সময়সীমার পূর্বে অপসারণ করা হয় না।
(গ) হাইকোর্টের কোন বিচারপতিকে অন্য কোন হাইকোর্টে স্থানান্তরিত করা যায় না।
(ঘ) বিচারক নিয়োগে সংসদের কোন ভূমিকা নেই।
উত্তরঃ (খ) এবং (গ)।
প্রশ্ন ২। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ কি বিচার বিভাগ অন্য কারো নিকট দায়বদ্ধ নয়? ১০০ শব্দের মধ্যে তোমার উত্তরটি লেখো?
উত্তরঃ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে সে কারো নিকট দায়বদ্ধ নয়। সহজ অর্থে বলা যায় যে বিচারালয়ের স্বাধীনতা হলো বিচারালয়ের সৎ এবং নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত প্রদানের স্বাধীনতা। বিচারালয় কার্যপালিকা ও আইনবিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকা উচিত। বিচারপতিগণের স্বাধীন ও নির্ভয়ে মামলার রায় দান করা উচিত। বিচারপতিদের চাকরির সকল শর্ত ও স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন যাতে তারা আইন অনুযায়ী ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩। বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা রক্ষার উদ্দেশ্যে সংবিধান কী কী শর্ত আরোপ করেছে?
উত্তরঃ গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সফলতার জন্য বিচারালয়কে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কার্য সম্পাদন করতে দেওয়া উচিত। ভারতীয় সংবিধানের একটি বিশেষত্ব হল যে এটা বিচারালয়ের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষাকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে।
বিচারালয়ের স্বাধীনতা রক্ষাকল্পে বিভিন্ন ব্যবস্থাগুলি নিম্নরূপঃ-
(ক) বিচারপতি নিয়োগঃ ভারতীয় সংবিধানে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করা আছে যার দ্বারা যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নিয়োগ সম্ভবপর হয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিগণ রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত হন কিন্তু এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির নিজস্ব কোনো মতামত থাকে না। মেধা যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের নিযুক্তি হয়।
(খ) উপযুক্ত বেতন ও ভাতাঃ বিচারপতিগণ যাতে অসাধু উপায় অবলম্বন করে আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করতে পারেন না তারজন্য বিচারপতিদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(গ) দীর্ঘ সুনিশ্চিত কার্যকালঃ বিচারপতিদের কার্যকালের সুনিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ ৬৫ বছর এবং হাইকোর্টের বিচারপতিগণ ৬২ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন। তাদের কার্যকালের মেয়াদ সুনিশ্চিত। বিচারপতিগণকে সহজ উপায়ে অপসারণ করা যায় না। একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের অপসারণ করা হয়।
(ঘ) যোগ্যতাঃ বিচারপতিগণের প্রধানতঃ আইন বিষয়ক যোগ্যতা থাকা একান্ত প্রয়োজন। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণের যোগ্যতা হল তাঁদের অন্তত দশ বছর হাইকোর্টে আইনজীবি হিসাবে কার্য করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা এক বা একাধিক হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। হাইকোর্টের বিচারপতির যোগ্যতা হল তাঁর কোন হাইকোর্টে অন্তত দশ বৎসর আইনজীবি, হিসাবে কার্য করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা কোন নিম্ন আদালতে অন্তত পাঁচ বছর বিচারপতি হিসাবে কার্য করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
(ঙ) ক্ষমতাঃ বিচারপতিদের যথেষ্ট ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধেও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। জনগণ সরকারের নিকট ন্যায় না পেলে বিচারালয়ে শরনাপন্ন হন। মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে অনর্গণ সুপ্রীম কোর্ট বা হাই কোর্টের দ্বারস্ব হতে পারেন। সংসদ প্রণীত আইন ও সরকারি নীতির পর্যালোচনা করার ক্ষমতা বিচারালয়ের আছে।
উপরোক্ত আলোচনা হতে এটাই প্রমাণিত হয় যে ভারতীয় সংবিধান বিচারালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে।
প্রশ্ন ৪। নিম্নের বিবৃতিগুলি পড়ে মৌলিক ক্ষেত্রাধিকার, আপীল ক্ষেত্রাধিকার এবং পরামর্শদান সংক্রান্ত অধিকার সঠিকভাবে নিরূপণ করো?
(ক) পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য যদি সরকার আইন প্রণয়ন করে।
(খ) কাবেরী নদী সংক্রান্ত বিবাদের মীমাংসায় তামিলনাডু সরকার আদালতে আবেদন করতে চায়।
(গ) বাঁধ নির্মানের জন্য এলাকার উচ্ছেদ করা জনগণের আপীল আদালত বাতিল করে।
উত্তরঃ (ক) পরামর্শ দান এলাকা।
(খ) মৌলিক ক্ষেত্রাধিকার। ও
(গ) আপীল ক্ষেত্রাধিকার।
প্রশ্ন ৫। জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা (PIL) কীভাবে দরিদ্র জনগণকে সাহায্য করে?
উত্তরঃ জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলায় পীড়িত ব্যক্তির পরিবর্তে তার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি বা সংস্থার আদালতে ন্যায় প্রার্থনা করার অধিকার আছে। ভারতবর্ষের দরিদ্র জনগণ আইন ও ন্যায় হতে সর্বদা বঞ্চিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে জেলে বন্দি অবস্থায় থাকা কোনো নিঃস্ব ব্যক্তি জেলে বন্দী কয়েদিদের দূরবস্থা দূর করার জন্য সুম্প্রীমকোর্টে মামলা করার কথা চিন্তা করতে পারে না। একমাত্র জনদরদী কতিপয় মানুষ বা রাজনৈতিক সচেতন কতিপয় মানুষ বা সংস্থা ওই দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে। ১৯৮০-র দশকের পর হতে সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্ট মানবাধিকার সংক্রান্ত নানা বিষয়ে বহু জনস্বার্থ–সংক্রান্ত মামলা (PIL) গ্রহণ করেছে। এই মামলাগুলোর রায়দান জনসাধারণকে নানাভাবে উপকৃত করেছে।
প্রশ্ন ৬। তুমি কি মনে কর বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বিচারবিভাগ ও শাসনবিভাগের মধ্যে মত বিরোধের সৃষ্টি করে? এবং কেন ?
উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে বিচারালয়ের সক্রিয়তা ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বেশিষ্টারূপে পরিগণিত হয়েছে। বিচারালয়ের সক্রিয়তা বর্তমানে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। কারণ এটা অজ্ঞ ও দরিদ্র জনগণের ন্যায় বিচার প্রদানে সহায়তা করে। বিচারালয়ের সক্রিয়তার ফলস্বরূপ বর্তমানে দরিদ্র জনসাধারণ বহুলাংশে ন্যায় বিচার পেয়ে থাকেন। কিন্তু বিচারালয়ের সক্রিয়তা কখনো কখনো বিচারবিভাগ ও শাসনবিভাগের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি করে। কারণ বিচারালয়ের সক্রিয়তা ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। বিচারালয়ের সক্রিয়তার ফলে বর্তমানে বিচার বিভাগ, আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করছে যার দরুন প্রশাসনের দক্ষতার উপর বিচার বিভাগ প্রভাব বিস্তার করছে। সুশাসনের জন্য প্রতিটি বিভাগেরই নিজ নিজ কার্য স্বাধীনভাবে সম্পাদন করা একান্ত আবশ্যক।
প্রশ্ন ৭। বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা কীভাবে মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় জড়িত? এর ফলে কি মৌলিক অধিকারের পরিধি বর্ধিত হয়?
উত্তরঃ ভারতে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলা (PIL) এবং সামাজিক কার্য বিষয়ক মামলা (SAL) সমুহের মাধ্যমে বিচারালয়ের সক্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৯ সাল হতে জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলার ভিত্তি স্থাপিত হয়। জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলা মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বিচারালয়ের সক্রিয়তা প্রতিফলিত হয়েছে। জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলা (PIL) বিচারবিভাগের বৈশিষ্ট্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই মামলার মূল ভিত্তি হল সমাজে অবহেলিত ও নিপীড়িত শ্রেণীর জনসাধারণের স্বার্থে তাদের পরিবর্তে যে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষে অধিকার ভঙ্গের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
কেবল মামলা সংক্রান্ত বিষয়টি সমাজ বা জনস্বার্থ সম্পর্কিত হতে হবে। সুনীল বাত্রা বনাম দিল্লী এডমিনিস্ট্রেশন মামলা এবং হুসেইনারা খাতুন বনাম বিহার মামলা জনস্বার্থ সংক্রান্ত মামলার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই মামলার অন্য একটি বিশেষত্ব হল এই ধরনের মামলা একটি সাধারণ পত্রের মাধ্যমেও আদালতে দায়ের করা যায় এবং এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। এই মামলাগুলো সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা প্রদান করেছে এবং মৌলিক অধিকারের পরিসীমা বর্ধিত করেছে।