Class 11 Political Science Chapter 8 স্থানীয় সরকার answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 8 স্থানীয় সরকার and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 8 স্থানীয় সরকার
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 8 স্থানীয় সরকার Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
স্থানীয় সরকার
পাঠ: ৮
প্ৰথম খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতে স্থানীয় সরকার স্থাপনের অগ্রদুত কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ লর্ড রিপন।
প্রশ্ন ২। স্থানীয় সরকারের যে কোনো একটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ স্থানীয় সরকার সার্বভৌম ক্ষমতাহীন।
প্রশ্ন ৩। কোন্ সালে ৭৩-তম সংশোধনী পাশ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৯২ সালে।
প্রশ্ন ৪। পঞ্চায়েতের কার্যকাল উল্লেখ করো?
উত্তরঃ পাঁচ বছর।
প্রশ্ন ৫। কোন্ সালে গোষ্ঠী উন্নয়ন কার্যসূচী (Community Development Programme) আরম্ভ হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৫২ সালে।
প্রশ্ন ৬। ভারতের কোন্ রাজ্যে প্রথম পঞ্চায়েতীরাজ কার্যকরী হয়?
উত্তরঃ রাজস্থান।
প্রশ্ন ৭। কত শতাংশ আসন ৭৩-তম সংশোধন দ্বারা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হৈছে?
উত্তরঃ ৩৩ শতাংশ।
প্রশ্ন ৮। ভারতে প্রথম কে কখন স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তরঃ ১৮৮২ সালে ভারতে প্রথম স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তদানীন্তন ভারতের ভাইসরয় লর্ড রিপন।
প্রশ্ন ১। ৭৩-তম সংশোধনী মতে ভারতে স্থানীয় শাসন কয়টি স্তরে বিভক্ত?
উত্তরঃ তিনটি স্তরে বিভক্ত।
প্রশ্ন ১০। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা কোন্ বিষয় সূচী/ তালিকার অন্তর্ভুক্ত?
উত্তরঃ রাজ্যিক তালিকাভুক্ত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
প্ৰশ্ন ১১। সংবিধানের কোন্ সংশোধনী স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসিত সংস্থাকে সাংবিধানিক মৰ্যাদা দিয়েছে?
উত্তরঃ ৭৩-তম ও ৭৪-তম সংশোধনী।
প্রশ্ন ১২। স্থানীয় সরকার বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ প্রত্যেক রাষ্ট্র শাসন কার্যের সুবিধার জন্য স্ব-শাসিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সংস্থাগুলিকে স্থানীয় সরকার বলে।
প্রশ্ন ১৩। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের কোন্ শহরে সর্বপ্রথম পৌরসংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ চেন্নাই (মাদ্রাজ)।
প্রশ্ন ১৪। প্রাচীন ভারতে পঞ্চায়েতকে কী বলা হতো?
উত্তরঃ সভা ও সমিতি।
প্রশ্ন ১৫। সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে পঞ্চায়েতরাজ গঠনের লক্ষ্য নির্দেশ করা হয়েছে?
উত্তরঃ ৪০নং অনুচ্ছেদে।
সঠিক উত্তর বেছে লেখোঃ
প্রশ্ন ১। নীচের কোনটি গ্রামীণ স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠান নয়?
(ক) পঞ্চায়েত সমূহ।
(খ) পৌর নিগম।
(গ) জিলা পরিষদ।
(ঘ) গ্রাম সভা।
উত্তরঃ (খ) পৌরনিগম।
প্রশ্ন ২। জম্মু ও কাশ্মীরে নীচের কোন্ স্তরীয় গ্রামীণ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রচলন আছে?
(ক) দ্বি-শ্বরীয়।
(খ) ত্রি-স্তরীয়।
(গ) এক–স্তরীয়।
(ঘ) চার-স্তরীয়।
উত্তরঃ (গ) এক–স্তরীয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গ্রামসভার গঠন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো?
উত্তরঃ গ্রামসভা হল গ্রামগুলোর সাধারণ সভা। সংশ্লিষ্ট গ্রামসমূহের ভোটার তালিকাভুক্ত সকল নাগরিক গ্রাম সভার অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ২। জিলা পরিষদের দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ জিলা পরিষদের দুটি কার্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) স্থানীয় আইন তৈরি করা।
(খ) ঋণ বৃদ্ধি করা।
(গ) কর ও মাতল ধার্য করা।
(ঘ) পঞ্চায়েত সমিতির বাজেট পরীক্ষা করা ও অনুমোদন করা।
প্রশ্ন ৩। গ্রামসভার দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ গ্রামসভার দুটি প্রধান কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) গ্রাম প্রধান ও গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের নির্বাচিত করা।
(খ) গ্রাম পঞ্চায়েতে বাজেট পাশ করা।
প্রশ্ন ৪। গ্রাম পর্যায়ে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থার তিনটি সংস্থা কী কী?
উত্তরঃ (ক) গ্রাম সভা।
(খ) গ্রাম পঞ্চায়েত। ও
(গ) নয়া পঞ্চায়েত।
প্রশ্ন ৫। গ্রাম পঞ্চায়েতের আরের যে কোনো দুটি উৎস উল্লেখ করো?
উত্তরঃ গ্রাম পঞ্চায়েত সমূহের আম্রের দুটি উৎস হলঃ
(ক) সম্পত্তি দ্রব্য, ভূমি ও গবাদি পশুর উপর ধার্য্যকৃত কর এবং
(খ) বাজার ও মেলাসমূহে ধার্যকৃত বিক্রয় কর।
প্রশ্ন ৬। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইনের যে কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত সংস্থাঃ পঞ্চায়েত আইনে ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আছে। এগুলো হল গ্রাম স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত (G. P.). ব্লক স্তরে আঞ্চলিক পঞ্চায়েত (AP) এবং জেলা স্তরে জেলাপরিষদ (ZPC)।
(খ) আসন সংরক্ষণঃ সকল পঞ্চায়েত সংস্থায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। অনুসূচীত জাতি ও জনজাতির জন্যও জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা ৭৩-তম সংশোধনী আইনে আছে।
প্রশ্ন ৭। জিলা পরিষদ সম্পর্কে যা জানো লেখো?
উত্তরঃ পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী গ্রামীণ এলাকার জেলা পর্যায়ে স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠানটি হল জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের সদস্যগণ সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়কগণ ও সাংসদ পদাধিকারবলে জেলা পরিষদের সদস্যপদ লাভ করেন। জেলা পরিষদে নির্বাচিত সদস্যগণ তাদের মধ্য হতে একজনকে সভাপতি ও একজনকে উপসভাপতি পদে নির্বাচিত করেন। গ্রামীণ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হল জেলা পরিষদের প্রধান কার্য।
প্রশ্ন ৮। পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার যে কোনো দুটি সমস্যা উল্লেখ করো?
উত্তরঃ পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার প্রধান দুটি সমস্যা হল –
(ক) ভারতের অনেক রাজ্যে পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোকে সরকার পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ফলস্বরূপ অধিকাংশ রাজ্যে পঞ্চায়েত সংস্থাগুলো সীমিত স্বাধীনতা উপভোগ করছে।
(খ) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোর সূচারুরূপে কার্য সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
প্রশ্ন ৯। সংবিধানের ৭৪-তম সংশোধনী আইনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৪-তম সংশোধনী আইনের দুটি বৈশিষ্ট্য এইরূপঃ
(ক) সংবিধানের ৭৪-তম সংশোধনী আইন বা নগরপালিকা আইন তিন শ্রেণীর পৌর সংস্থার উল্লেখ করেছে। এগুলো হল- গুয়াহাটী ও কলকাতার মত বড় শহরের জন্য কর্পোরেশন বা নগর নিগম, মাঝারি মানের শহরের জন্য মিউনিসিপ্যালিটি বা পৌরসভা এবং ক্ষুদ্র শহরগুলোর জন্য নগর সমিতি (Town Committee) |
(খ) ৭৪-তম সংশোধনী আইনের অধীনে রাজ্যিক নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যিক অর্থ কমিশনের ব্যবস্থা আছে।
প্রশ্ন ১০। স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা ভারতীয় গণতন্ত্রকে তৃণমূলস্তরে কতটুকু শক্তিশালী করেছে?
উত্তরঃ স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা তৃণমূল স্তরে জনগণকে গণতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত করে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। ভারতের স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। জনগণের মধ্যে তৃণমূলস্তরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় এবং সমাজের তৃণমূল স্তরের জনগণ তাদের স্থানীয় সমস্যাবলী সমাধানের জন্য স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অংশ গ্রহণ করে। এভাবে স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন ব্যবস্থা ভারতীয় গণতন্ত্রকে তৃণমূলস্তরে শক্তিশালী করে তুলেছে।
প্রশ্ন ১১। শহর বা নগর এলাকা বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ভারতের আদমসুমারি মতে শহর বা নগর এলাকা বলতে আমরা বুঝিঃ
(ক) যে এলাকায় কমপক্ষে ৫০০০ জনসংখ্যা আছে।
(খ) এই এলাকার জনসংখ্যার অন্তত তিন চতুর্থাংশ লোক অকৃষিজ কার্যে রত।
(গ) উক্ত এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪০০ জন/বর্গ কিঃমিঃ।
প্রশ্ন ১২। সংবিধানের দ্বাদশ তপশীলে অন্তর্ভূক্ত নগরপালিকার যে কোনো দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ নগরপালিকার দুটি কার্য হলঃ
(ক) শহর এলাকার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
(খ) শহর এলাকায় রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ ও মেরামত করা।
প্রশ্ন ১৩। ১৯৯৪ সালের আসাম পঞ্চায়েত আইনানুসারে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন সংস্থার শ্রেণী বিভাজন করো?
উত্তরঃ স্থানীয় সরকারকে দু শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
যথা–
(অ) গ্রামীণ। এবং
(আ) পৌর।
গ্রামীণ পর্যায়ে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক পর্যায়ে আঞ্চলিক পঞ্চায়েত ও জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ। অন্যদিকে শহরাঞ্চলের স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠান হলঃ নগরনিগম, পৌরসভা ও টাউন কমিটি।
প্রশ্ন ১৪। সংবিধানের একাংশ অনুসূচীতে উল্লেখিত পঞ্চায়েতের যে কোনো দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ পঞ্চায়েতের দুটি কার্য নিম্নরূপঃ
(ক) কৃষি উন্নয়ন।
(খ) গ্রামীণ গৃহ নির্মাণ।
প্রশ্ন ১৫। গ্রাম সভার গঠন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো?
উত্তরঃ ৭৩-তম সংবিধান সংশোধনী আইন পঞ্চায়েতের গঠন সম্পর্কে যে নতুন বিষয়টির সংযোজন করেছে সেটি হল গ্রাম–সভা গঠন। প্রতিটি পঞ্চায়েতের জন্য একটি করে গ্রামসভা গঠনের কথা বলা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাভুক্ত সব ভোটারদের নিয়ে গঠিত হয় এই গ্রামসভা। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণে চরম রূপ হল গ্রামসভা।
প্রশ্ন ১৬। রাজ্য বিত্তীয় আয়োগ কী?
উত্তরঃ রাজ্য সরকারকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর রাজ্য বিত্তীয় আয়োগ (State Finance Commission) মনোনীত করতে হয়। এ আয়োগ রাজ্যের স্থানীয় সরকার সমূহের আর্থিক অবস্থা পরীক্ষা করে। রাজ্য বিত্তীয় আযোগ একদিকে রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে এবং অপরদিকে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের স্থানীয় সরকারের মধ্যে রাজস্ব গঠন পুনর্বিবেচনা করে দেখে। এ আয়োগ গ্রামীণ স্থানীয় সরকারসমূহে তহবিল বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে যাতে রাজনীতিকরণ না হয় সেই প্রচেষ্টা সুনিশ্চিত করে।
প্রশ্ন ১৭। সংক্ষেপে টীকা লেখোঃ রাজ্যিক নির্বাচন আয়ুক্ত?
উত্তরঃ রাজ্যিক নির্বাচন আয়ুক্তঃ রাজ্য সরকারকে পঞ্চায়েতরাজ সংস্থাসমূহের নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একজন নির্বাচন আয়ুক্ত (State Election Commissioner ) মনোনীত করতে হয়। রাজ্যিক নির্বাচন আয়ুক্তের পদটি ভারতের নির্বাচন আয়ুক্তের মতো স্ব-স্বাধীন। তিনি একজন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আধিকারিক এবং ভারতের নির্বাচন আয়ুগের নিয়ন্ত্রণাধীন নন।
প্রশ্ন ১৮। স্থানীয় সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ স্থানীয় সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) স্থানীয় সরকারগুলো আইনসভা কর্তৃক আইনের অধীনে গঠিত।
(খ) স্থানীয় সরকারগুলো স্থানীয় সমস্যার সমাধানকল্পে কার্য সম্পাদান করে।
প্রশ্ন ১৯। শহর বা নগর এলাকা বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ ভারতের আদমসুমারি (Census) অনুযায়ী শহর বা নগর এলাকা বলতে সেই অঞ্চলকে বোঝায় যে অঞ্চলে কমপক্ষে ৫০০০ জনসংখ্যা আছে এবং উক্ত জনসংখ্যার কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ লোক অকৃষিজ কার্যে রত ও উক্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪০০ জন।
প্রশ্ন ২০। সংবিধানের একাদশ অনুসূচিতে বিধিবদ্ধ পঞ্চায়েতের যে কোনো দুটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ পঞ্চায়েতের দুটি কার্য হল –
(ক) কৃষি উন্নয়ন।
(খ) গ্রামাঞ্চলের পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
প্রশ্ন ২১। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়ে তৃণমূল পর্যায়ে হস্তান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়। গণতন্ত্রের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। তাই আমাদের দেশে স্থানীয় জনগণের উন্নতিকল্পে স্থানীয় সরকারগুলোর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। গণতন্ত্র হলো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণকে অধিক ক্ষমতা প্রদান।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। রাজ্যিক নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী বা পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী প্রতিটি রাজ্য সরকার একজন রাজ্যিক নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন। এর মুখ্য কাজ হল– পঞ্চায়েত ও পৌর নির্বাচন পরিচালনা করা। রাজ্যিক নির্বাচন কমিশনার ভারতের নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন নন। তিনি স্বাধীনভাবে ভারতের নির্বাচন আয়োগের মতো নির্বাচন কার্য পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন ২। পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার প্রধান দুর্বলতাগুলো কী কী?
অথবা,
পঞ্চায়েতরাজ আইনের প্রধান অন্তরায়গুলো কী কী?
উত্তরঃ পঞ্চায়েতরাজ আইনের প্রধান ত্রুটিগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতের অনেক রাজ্যে এখনও পঞ্চায়েত সংস্থাসমূহকে শাসন–সংক্রান্ত ক্ষমতা পূর্ণরূপে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলস্বরূপ বহু রাজ্যে পঞ্চায়েত সংস্থাগুলো সীমিত স্বাধীনতা উপভোগ করে।
(খ) পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোর উন্নয়নমূলক কার্যে রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই হস্তক্ষেপ করে।
(গ) পঞ্চায়েতগুলো আর্থিক অনুদান প্রাপ্তির জন্য রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল।
(ঘ) পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোতে প্রায় সময়ই যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত হতে দেখা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপে স্থানীয় জনগণের মধ্যে গোষ্ঠী বাজী, গোষ্ঠী সংঘর্ষ প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
(ঙ) পঞ্চায়েতগুলোতে সামাজিক পদমর্যাদা এবং আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিগণ নির্বাচিত হন। তাই প্রায় সময়ই পঞ্চায়েত সংস্থাগুলো ধনী ও উচ্চ সম্প্রদায়ের সংস্থায় পরিণত হয়।
প্রশ্ন ৩। স্থানীয় সরকার বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ প্রত্যেক রাষ্ট্র শাসনকার্যের সুবিধার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাসন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সংস্থাগুলোকে স্থানীয় সরকার বলা হয়। এগুলো স্থানীয় অঞ্চলের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয়।
ভারতে স্থানীয় সরকার রাজ্য বিষয়সূচীর অন্তর্ভুক্ত। তাই স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থা সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
সুতরাং স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠান হল রাজ্য সরকারের সেই অংশ যা মূলত স্থানীয় সমস্যাদির সমাধান করে এবং রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়।
প্রশ্ন ৪। ব্লক সমিতির চারটি কার্য লেখো?
উত্তরঃ ব্লক সমিতি বা ব্লক পর্যায়ে পঞ্চায়েত সমিতিসমূহের চারটি কার্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) পানীয় জল সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সুব্যবস্থা করা।
(খ) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন।
(গ) গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজেট পরীক্ষা করা।
(ঘ) উন্নয়নমূলক কার্যসূচী গ্রহণ করা।
(ঙ) গ্রামীণ রোজগার কর্মসূচীর রূপায়ণ করা।
প্রশ্ন ৫। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইনের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইনের তিনটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) ত্রি–স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থাঃ ৭৩-তম সংশোধনী আইনে ত্রি–স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উল্লেখ আছে। এর বিশেষত্ব হল – গ্রাম পর্যায়ে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক পর্যায়ে আঞ্চলিক পঞ্চায়েত এবং জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ।
(খ) নির্বাচনী ব্যবস্থাঃ সকল পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানই জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত। প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্কার কার্যকাল পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কোন পঞ্চায়েত সংস্থা ভঙ্গ হলে ছয়মাসের ভেতর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পঞ্চায়েত গঠন করতে হবে।
(গ) উক্ত আইন অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করবার জন্য একজন রাজ্যিক নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করেন।
প্রশ্ন ৬। গণতন্ত্রে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা কী?
উত্তরঃ স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন জনগণকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দেয়। গণতন্ত্র ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একে অপরের পরিপুরক। স্থানীয় সরকার স্থানীয় জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়। এর ফলে জনগণ পৌরবোধ, আত্মবিশ্বাস এবং সুনাগরিকত্ব প্রভৃতির সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। স্থানীয়–স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাজের চাপ কমায়। তাই স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের শক্তির উৎস স্বরূপ।
প্রশ্ন ৭। পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা করো?
উত্তরঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মদক্ষতার উপর গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। পঞ্চায়েত– ব্যবস্থা সরকারি শাসনকার্যের উৎকর্ষতার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কারণ স্থানীয় সমস্যাবলী স্থানীয় জনসাধারণ কর্তৃক সমাধানের ফলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাজের চাপ অনেকটা হ্রাস পায়। ফলে কেন্দ্র বা রাজা সরকার জাতীয় স্বার্থের প্রতি অধিক নজর দিতে পারে।
স্থানীয় সমস্যাবলী সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারণ অধিক পরিচিত থাকে। কাজেই পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান সমূহ স্থানীয় সমস্যাগুলোর সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে সক্ষম হয়।
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা জনসাধারণকে রাজনৈতিক শিক্ষা দান করে। পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান সুনাগরিক হবার যাবতীয় শিক্ষা প্রদান করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। তাই পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন ৮। পঞ্চায়েত সংস্থাসমূহে আসন সংরক্ষণের কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইন অনুযায়ী সকল পঞ্চায়েত সংস্থাসমূহে ৩০% আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনুসূচীত জাতি ও জনজাতিদের জন্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোর সভাপতি/সভানেত্রীর আসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। ব্রাজিলে কীভাবে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকরী হয়েছে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তরঃ ব্রাজিল ল্যাটিন আমেরিকার একটি বৃহত্তম রাষ্ট্র। এর রাজধানী হল ব্রাসিলিয়া। ব্রাজিলের সংবিধান রাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা এবং মিউনিসিপাল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছে। এগুলোর প্রত্যেকটিকে স্বাধীন ক্ষমতা ও প্রক্রিয়া অর্পণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার অর্থাৎ কেন্দ্র সরকার রাজ্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সংবিধান নির্ধারিত ক্ষেত্র ব্যতীত রাজাগুলোও মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে। এই অনুবিধি স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা রক্ষা করে। ব্রাজিল একটি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম উদাহরণ।
প্রশ্ন ১০। শহরাঞ্চলের স্বায়ত্ব শাসনের যে কোনো চারটি বৈশিষ্ট্যের তালিকা প্রস্তত করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৪-তম সংশোধনী আইন বা নগরপালিকা আইনানুসারে শহরাঞ্চলের স্বায়ত্ব শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) শহরাঞ্চলের জন্য তিন ধরনের পৌরসংস্থার উল্লেখ করা হয়েছে। বড় শহরের জন্য কর্পোরেশন বা নগরনিগম, মাঝারি মানের শহরের জন্য পৌরসভা এবং ক্ষুদ্র শহরগুলোর জন্য নগর সমিতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
(খ) পৌরসংস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় এবং সকল পৌরসংস্থার কার্যকাল পাঁচ বছর।
(গ) পৌরসংস্থাসমূহে মহিলাদের জন্য ৩০% আসন সংরক্ষণ এবং জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে অনুসূচিত জাতি ও জনজাতিদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(ঘ) উপরোফ আইনের অধীনে রাজ্যিক নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যিক অর্থ কমিশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ১১। শহরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলোর যে কোনো চারটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৪-তম সংশোধনী আইনানুসারে শহরাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন, সংস্থাসমূহের কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) শহরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
(খ) শহরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ এবং মেরামত করা।
(গ) বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা।
(ঘ) শহর এলাকায় হাসপাতাল – মাতৃমঙ্গল ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা।
প্রশ্ন ১২। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের স্থানীয় সরকার সমূহের মূল চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ গ্রামীণ এবং পৌর এলাকার স্থানীয় সরকারগুলোর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) স্থানীয় সংস্থাগুলো সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। এগুলো কেন্দ্র ও রাজা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
(খ) স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন সংস্থার নিজস্ব প্রশাসনিক এলাকা আছে। এই এলাকা রাজ্যসরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। নিজস্ব এলাকার মধ্যে সংস্থাগুলোর কার্য সীমাবদ্ধ।
(গ) স্থানীয় সরকারের কার্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। এই সরকার কেবল স্থানীয় কাজ সম্পাদন করে। স্থানীয় সমস্যা স্থানীয় জনগণ সমাধান করতে পারেন।
(ঘ) স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী গঠিত হয়। এর নিজস্ব সীলমোহর আছে। এই সীলমোহর দ্বারা প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী সকল কার্য সম্পাদন করে।
প্রশ্ন ১৩। শহরাঞ্চলের স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের শহরাঞ্চলের স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানগুলো হল – নগরনিগম, পৌরসভা, এবং নগর সমিতি। নগরপালিকা আইন শহরাঞ্চলে তিনশ্রেণীর স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করেছে – বৃহৎ শহরের জন্য নগরনিগম, মাঝারি মানের শহরের জন্য পৌরসভা এবং ক্ষুদ্র শহরের জন্য নগরসমিতি।
এগুলোর গঠন নিম্নরূপঃ
কর্পোরেশন বা নগরনিগমঃ নগর নিগম প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটার কর্তৃক নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে গঠিত হয়। এই কাউন্সিলরা তাদের মধ্য হতে একজনকে কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত করেন। মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লী, ব্যাঙ্গালোরে নগর নিগম আছে।
পৌরসভাঃ প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটার কর্তৃক নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনারদের নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। এই কমিশনারদের মধ্য হতে একজন সদস্যকে তারা পৌরপতি এবং একজনকে উপ পৌরসভাপতি নির্বাচিত করেন।
নগর সমিতিঃ শহর এলাকার ভোটারগণ কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে নগর সমিতি গঠিত হয়। এই নির্বাচিত সদস্যগণ তাদের মধ্য থেকে একজন সদস্যকে সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত করেন।
উপরোক্ত তিনশ্রেণীর পৌর প্রতিষ্ঠানসমূহে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে অনসূচীত জাতি ও জনজাতিদের জন্য আসন সংরক্ষিত আছে।
প্রশ্ন ১৪। গ্রাম উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত যে কোনো তিনটি পদক্ষেপ সম্পর্কে বর্ণনা দাও?
উত্তরঃ স্বাধীনতা লাভের সময় হতে ভারত সরকার গ্রামোপ্পোয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) সম্প্রদায় উন্নয়ন কার্যসূচী (Community Development Programme): গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় উন্নয়ন কার্যসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২রা অক্টোবর। এই কার্যসূচীর মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন কার্যে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই কার্যসূচী গ্রামীণ অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়েছে। এটা ছিল গ্রামীণ সম্প্রদায়ের এবং সরকারের উৎকর্ষ সাধনের প্রধান মাধ্যম।
(খ) পঞ্চায়েত ব্যবস্থাঃ গ্রামগুলোর সার্বিক উন্নয়নের জন্য ১৯৫৯ সালে পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। পঞ্চায়েতরাজ আইন বহুবার সংশোধিত হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার গ্রাম পর্যায়ে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক পর্যায়ে পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিগণ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। এই সংস্থাগুলো গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা তেরি করে এবং তা কার্যক্ষেত্র রূপায়ণ করে।
(গ) সুসংহত গ্রামীণ বিকাশ প্রকল্প (IRDP): গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই কার্যসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল। এই কার্যসূচী সফল করার প্রধান দায়িত্ব ছিল স্থানীয় জনগণের হাতে। এই কার্যসূচীর মাধ্যমে গ্রামীণ যুবকদের স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। অধিকন্ত গ্রামীণ মহিলা ও শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের জন্যও এই কাৰ্যসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৫। স্বাধীনতার পূর্ববর্তীকালে ভারতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা,
ব্রিটিশ শাসন কালে ভারতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতে ‘সভা’ এবং সমিতি’ নামে গ্রামীণ মানুষের দুটি স্বশাসিত সংস্থা। ছিল। পরবর্তীকালে এইসব গ্রামীণ সংস্থাই পঞ্চায়েতে পরিণত হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৮২ সালের পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারি সংস্থাসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড রিপথ। তাঁকে ভারতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের জনক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। তখন স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোকে লোকেল বোর্ড বলা হত। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে কয়েকটি প্রদেশে গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন পর্যন্ত চলতে থাকে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মহাত্মা গান্ধী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের উপর গুরুত্ব প্রদানে মত প্রকাশ করেন। তাঁর মতে গ্রাম পঞ্চায়েত শক্তিশালী হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হবে। লর্ড রিপণ কর্তৃক ভারতে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সূচনা হলেও স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকাল অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন বিশেষ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারে নি।
প্রশ্ন ১৬। স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসনের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসনের চারটি বৈশিষ্ট্য হলঃ
(ক) স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন সংস্থাগুলো বিধিবন্ধ আইনের অধীনে গঠিত।
(খ) স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন সংস্থাগুলো স্বশাসিত সংস্থা।
(গ) স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন সংস্থাগুলো সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন।
(ঘ) স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন সংস্থাগুলোর সার্বভৌম ক্ষমতা নেই।
প্রশ্ন ১৭। অসম পঞ্চায়েত আইন, ১৯৯৪ অনুসারে গাঁও পঞ্চায়েতের চারটি কার্য লেখো?
উত্তরঃ অসম পঞ্চায়েত আইন, ১৯৯৪ অনুসারে গাঁও পঞ্চায়েতের কার্যক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে।
এর চারটি কার্য হল নিম্নরূপঃ
(ক) গ্রামীণ গৃহ নির্মাণ, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ ইত্যাদি কার্যাবলির রূপায়ণ।
(খ) পশু প্রজনন, দুগ্ধ পালন, মীন পালন ইত্যাদি প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
(গ) গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণ, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কম্যুনিটি হল নির্মাণ প্রভৃতি উন্নয়নমূলক কার্যাবলি।
(ঘ) দারিদ্র দূরীকরণ কার্যসূচীর রূপায়ণ, সরকারী বণ্টন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১৮। স্থানীয় সরকারগুলোর চারটি কার্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ স্থানীয় সরকারগুলোর কার্যাবলি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
(ক) পর্যবেক্ষণমূলক কার্যাবলিঃ স্থানীয় সরকারগুলো নানাধরনের পর্যবেক্ষণমূলক কার্যাবলি সম্পাদন করে। যেমন – জল সরবরাহ, জল নিষ্কাশন, ময়লা ও আবর্জনা পরিষ্কার, রাস্তাঘাটে আলোর ব্যবস্থা প্রভৃতি।
(খ) রক্ষণাবেক্ষণমূলক কার্যাবলিঃ স্থানীয় সরকারসমূহ স্বাস্থ্য রক্ষা, গৃহ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, মহামারী প্রতিরোধ সহ নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্য সম্পাদন করে।
(গ) সামাজিক কার্যাবলিঃ স্থানীয় সরকারগুলো জনগণের কল্যাণার্থে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক দায়িত্ব পালন করে। এই সংস্থাগুলো শিশু–প্রসূতি কল্যাণ, সামাজিক উৎসব, মেলা, গ্রন্থাগার ইত্যাদির ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করে।
(ঘ) জনহিতকর কার্যাবলিঃ স্থানীয় সরকারগুলো বিভিন্ন প্রকারের জনহিতকর কার্যাবলি সম্পাদন করে। যেমন – বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা, স্থানীয় সরকারি পরিবহণের ব্যবস্থা করা, বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, রান্নার গ্যাস সরবরাহ করা প্রভৃতি।
প্রশ্ন ১৯। ভারতের ৭৩-তম সংবিধান সংশোধনের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ (ক) ত্রি–স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থাঃ ৭৩-তম সংশোধনী আইনে ত্রি–স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উল্লেখ আছে। এর বিশেষত্ব হল – গ্রাম পর্যায়ে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক পর্যায়ে আঞ্চলিক পঞ্চায়েত এবং জেলা পর্যায়ে জেলা পরিষদ।
(খ) নির্বাচনী ব্যবস্থাঃ সকল পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানই জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত। প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্কার কার্যকাল পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে কোন পঞ্চায়েত সংস্থা ভঙ্গ হলে ছয়মাসের ভেতর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পঞ্চায়েত গঠন করতে হবে।
(গ) উক্ত আইন অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করবার জন্য একজন রাজ্যিক নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করেন।
(ঘ) ৭৩-তম সংবিধান সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে একাদশ তপশিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তপশিলে ২৯টি বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে নাস্ত।
প্রশ্ন ২০। ভারতীয় সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইন অনুসারে পঞ্চায়েতীরাজ প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৩-তম ও ৭৪-তম সংশোধনী আইনের পর পঞ্চায়েতীরাজ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭৩-তম সংশোধনী আইন দ্বারা পঞ্চায়েতীরাজ প্রতিষ্ঠানের গঠন ও নির্বাচন ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ত্রিস্তরীয় কাঠামোতে বর্তমানে সকল রাজ্যেই একই প্রকার ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। নীচু স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত যা এক বা একাধিক গ্রাম অন্তর্ভুক্ত করে। মধ্যবর্তী স্তর আঞ্চলিক পঞ্চায়েত বা তালুক পঞ্চায়েত। সর্বোচ্চ স্তরে আছে জেলা পরিষদ যা সমগ্র জেলার গ্রামীণ এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
ত্রিস্তরীয় সকল পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানই জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্থার কার্যকাল পাঁচ বছর। পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভঙ্গ করলে ছয়মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৭৩-তম সংশোধনীর পূর্বে বহু রাজ্যের জেলা সংস্থাগুলোতে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল। আর সংস্থাসমূহ ভঙ্গ করার ঠিক পরই নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হত না। বর্তমানে পঞ্চায়েতীরাঞ্জ ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় সুসংহত ও অধিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ২১। সংবিধানের ৭৩ তম সংশোধন অনুসারে পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির গঠন সংক্ষেপে উল্লেখ করো?
উত্তরঃ সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধন অনুসারে পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে ভারতের সকল রাজ্যেই একই প্রকার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থা প্রচলিত। ৭৩-তম সংশোধনী আইন অনুসারে নীচু স্তরে হলো, গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রাম পঞ্চায়েত এক বা একাধিক গ্রাম অন্তর্ভুক্ত করে। মধ্যবর্তী স্তর হলো ব্লক পর্যায়ে আঞ্চলিক পঞ্চায়েত। আঞ্চলিক পঞ্চায়েতকৈ মণ্ডল (Block) বা তালুকও বলা হয়। মধ্যবর্তী স্তরের এই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র রাজ্যে গঠন করার দরকার হয় না। সর্বোচ্চ স্তর হলো জিলা পরিষদ বা জিলা পঞ্চায়েত যা সমগ্র জিলার গ্রামীণ এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে।
উক্ত সংশোধনী আইন গ্রামসভা স্থাপন করা বাধ্যতামূলক করেছে। গ্রামসভা এলাকার ভোটার তালিকায় নথিভূক্ত সকল নির্বাচক (ভোটার) নিয়ে গঠিত হয়। রাজ্য আইনসভা এর ভূমিকা ও কার্যাবলী নির্ধারণ করে।
নিস্তরীয় সকল পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। প্রত্যেক পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানের কার্যকাল পাঁচ বছর। যদি পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে পঞ্চায়েত ভঙ্গ হয় তবে ভঙ্গ হওয়ার ছয় মাসের ভিতর নতুনভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৭৩-তম সংশোধনীর পূর্বে বহু রাজ্যে জিলা সংস্থাগুলোতে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল। উক্ত সংশোধনী আইন অনুসারে প্রত্যেক রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একজন রাজ্যিক নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করেন।
৭৩-তম সংশোধনী অনুসারে সকল পঞ্চায়েত সংস্থার এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। অনুসূচিত জাতি এবং অনুসূচিত জনজাতির জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা পঞ্চায়েতের সকল স্তরের সভাপতি/সভানেত্রীর আসনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সংবিধানের একাদশ অনুসূচীতে (the Eleventh schedule) তালিকাবদ্ধ পঞ্চায়েতের কার্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো কী কী?
উত্তরঃ সংবিধানের একাদশ অনুসূচী পঞ্চায়েত সংস্থা সমূহের উপর মোট ২৯টি বিষয় নাস্ত করেছে।
এই অনুসূচীতে তালিকাবদ্ধ প্রধান বিষয়সমূহের কয়েকটি নিম্নরূপঃ
(ক) কৃষি ও কৃষি উন্নয়ন।
(খ) ক্ষুদ্র জলসেচ প্রকল্প, জল সংরক্ষণ ও জলাধার উন্নয়ন।
(গ) খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্প।
(ঘ) গ্রামীণ গৃহ নির্মাণ।
(ঙ) পানীয় জল সরবরাহ।
(চ) রাস্তা ও সেতু নির্মাণ ও মেরামত।
(ছ) গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ।
(জ) দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচি।
(ঝ) শিক্ষা – প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
(ঞ) দুর্বল শ্রেণীর উন্নয়ন – বিশেষভাবে অনুসূচীত জাতি ও জনজাতি।
(ট) সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ।
(ঠ) সরকারি বণ্টন ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ২। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইনে গ্রামসভার কার্যগুলো কী কী?
উত্তরঃ ৭৩-তম সংশোধনী আইন অনুযায়ী গ্রামসভার প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপঃ
(ক) গ্রামসভা গ্রামপ্রধান ও গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নির্বাচন করে।
(খ) গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজেট পাশ করে।
(গ) নতুন কর ধার্য করার অনুমতি প্রদান করে।
(ঘ) গ্রাম পঞ্চায়েতের হিসাবের প্রতিবেদন বিচার করে।
(ঙ) গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যের পুনর্বিচার করে।
(চ) গ্রামপ্রধান যদি ঠিকমতো কার্য না করে তাহলে তাকে অপসারণ করে।
প্রশ্ন ৩। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা কী?
অথবা,
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা বিশাল হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কার্যাবলীও জটিল ও বিস্তৃত হয়েছে। তাই কেবল একটি সরকারি কর্তৃপক্ষের দ্বারা এই কার্যগুলো সম্পাদন করা সম্ভবপর নয়। এমনকী যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্যগুলোর পক্ষেও এই সকল বিবিধ স্থানীয় সমস্যার সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা সম্ভবপর নয়। এই কারণেই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা হয়। বিকেন্দ্রীকরণ হল সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় এলাকার জনগণের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া। এটি কেন্দ্র হতে গ্রাম পর্যন্ত ক্ষমতা বণ্টনের একটি শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এর প্রধান কারণ হল স্থানীয় এলাকার মানুষ নিজেদের সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দরুন তারা নিজেদের সমস্যা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন ৪। স্থানীয় স্বায়ক শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করো?
উত্তরঃ স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
(ক) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠান আইন দ্বারা গঠিত প্রতিষ্ঠান। স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব সীলমোহর দ্বারা আইনানুসারে কার্য সম্পাদন করে।
(খ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো রাজ্য সরকারের নীতি ও পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।
(গ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বভৌম ক্ষমতা নেই।
(ঘ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থার নিজস্ব এলাকা আছে। এই এলাকার মধ্যে তাদের কার্য সীমাবদ্ধ।
(ঙ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় সমস্যার সমাধানকল্পে কার্য সম্পাদন করে।
(চ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থাগুলো আর্থিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও এই সংস্থাগুলোর অনেক আয়ের উৎস আছে।
স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কার্য সম্পাদন করে।
প্রশ্ন ৫। স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থার সাফল্যের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী আলোচনা করো?
উত্তরঃ স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থার সাফল্যের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(ক) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থাগুলোর সাফল্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদের একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য পর্যাপ্ত উৎস থাকা প্রয়োজন।
(খ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থাগুলোর সাফল্যের জন্য রাজ্যসরকারের যথাযথভাবে পরিদর্শন ও সহায়তার প্রয়োজন।
(গ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থাগুলোকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উৎসাহ দান করা প্রয়োজন। এই সংস্থাগুলোকে অধিক স্বাধীনতা প্রদান করা উচিত।
(ঘ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন সংস্থাগুলোর সাফল্য স্থানীয় জনগণের উপর নির্ভর করে। এজন্য স্থানীয় জনগণের স্থানীয় সরকারের কাজকর্মে উৎসাহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করা উচিত।
(ঙ) স্থানীয় স্বায়ত্ব শাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের জন্য জনগণের মধ্যে পৌর চেতনাবোধ বৃদ্ধি করা উচিত। এজন্য জনগণের মধ্যে পৌরবোধ জাগ্রত করা ও শিক্ষার বিস্তার করা অত্যন্ত জরুরি।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের সংবিধান গ্রাম পঞ্চায়েতসমূকে স্বশাসনের সংখা রূপে অবলোকন করেছে। নিম্নের উক্তিগুলোতে বর্ণিত পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা করো এবং ব্যাখ্যা করো কীভাবে এ সব পরিস্থিতি পঞ্চায়েতসমূহকে স্থানীয় সরকার সংস্থায় পরিণত হতে শক্তিশালী অথবা দুর্বল করে?
(ক) কোনো রাজ্য সরকার একটি বৃহৎ কোম্পানিকে একটি ইস্পাত কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয়। এই ইস্পাত কারখানা দ্বারা বহু ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রামের গ্রাম সভা একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে যে এই এলাকায় কোন বৃহৎ শিল্প স্থাপনের পূর্বে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে এবং তাদের অভিযোগ দূর করতে হবে।
(খ) সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে প্রকল্পের মোট ব্যায়ের ২০শতাংশ পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
(গ) কোনো গ্রাম পঞ্চায়েত গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে তহবিল জমা রেখেছে। সরকারি আধিকারিক এই বলে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন যে নিন্ধারিত প্রকল্পের জন্য মঞ্জুরীকৃত তহবিল অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
(ঘ) সরকার দুঙ্গারপুর গ্রামকে দুভাগে ভাগ করেন এবং এক ভাগকে যমুনা, অপর ভাগকে সোহানী নাম দেওয়া হলো। বর্তমানে সরকারি খাতায় দুসারপুর গ্রাম মুছে গেল।
(ঙ) কোনো গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যবেক্ষণ করল যে তাদের এলাকার জলের উৎস দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা স্থির করল যে কিছু স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের জন্য গ্রামের যুবক একত্রিত করবে এবং গ্রামের পুরাতন পুকুর ও কূপ পুনরুজ্জীবিত করবে।
উত্তরঃ উপরোক্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলঃ
(ক) গ্রামসভার অনুমতি ও পরামর্শ ব্যতীত ইস্পাত কারখানা স্থাপন করলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দুর্বল হবে।
(খ) এটা পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।
(গ) গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে।
(ঘ) সরকারের এই কার্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে।
(ঙ) গ্রাম পঞ্চায়েতের এই প্রচেষ্টা পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে মজবুত করবে।
প্রশ্ন ২। মনে করো তোমাকে কোনো রাজ্যের স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব অর্পণ করা হলো, তুমি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে স্বশাসনের সংস্থা রূপে কী কী ক্ষমতা ন্যস্ত করবে? যে কোনো পাঁচটি ক্ষমতার উল্লেখ করো এবং এই ক্ষমতা দানের যৌক্তিকতায় প্রতিটি ক্ষমতার জন্য দু–লাইনে উল্লেখ করো।
উত্তরঃ যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন করবার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে নিম্নলিখিত ক্ষমতা দেওয়া উচিতঃ
(ক) গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে কর ধার্য ও সংগ্রহ করবার অধিকার প্রদান করা উচিত। এর ফলে পঞ্চায়েতগুলো স্বনির্ভরশীল হবে এবং এরজন্য পঞ্চায়েতগুলো জনকল্যাণকামী প্রকল্প তৈরি করতে উৎসাহ বোধ করবে।
(খ) গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিকল্পনা তৈরির ক্ষমতা থাকা উচিত। স্থানীয় বিষয় সম্পর্কে স্থানীয়দের মতামত গ্রহণ করা সঠিক পদক্ষেপ।
(গ) কৃষির উন্নতির জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা উচিত। কারণ ভারতবর্ষের গ্রামগুলোর অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই কৃষির উন্নতিকল্পে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে এই ক্ষমতা প্রদান করা উচিত।
(ঘ) গ্রামের মঙ্গল সাধনের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে জনকল্যাণমুখী প্রকল্প তৈরির ক্ষমতা প্রদান করা একান্ত আবশ্যক। কারণ গ্রামের সমস্যাগুলো সম্পর্কে পঞ্চায়েতগুলো ওয়াকিবহাল।
(৫) গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তহবিল মঞ্জুরের ক্ষমতা প্রদান করা একান্ত জরুরি। কারণ তহবিল মঞ্জুরির ক্ষমতা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোর হাতে থাকলে পঞ্চায়েতগুলো উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন করতে পারবে।
প্রশ্ন ৩। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধন অনুযায়ী সামাজিকভাবে সুবিধাভোগীহীন শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাসমূহ কী কী?
উত্তরঃ সামাজিকভাবে সুবিধাভোগীহীন শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধন অনুযায়ী পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোতে অনুসূচীত জাতি ও জনজাতির জন্য আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
(খ) যে সকল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২০% এর অধিক জনসংখ্যা অনগ্রসর শ্রেণীর সেই এলাকার পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(গ) জেলার তপশীলভুক্ত সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোতে সরপক্ষের পদেও সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
স্থানীয় সংস্থাসমূহে বর্তমানে সকল শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কালের স্থানীয় সরকার সমূহের মধ্যে প্রধান পার্থক্য সমূহ কী কী?
উত্তরঃ ৭৩-তম সংশোধনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের স্থানীয় সরকার সমূহের মধ্যে প্রধান পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) পূর্বে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থায় কোনো সমরূপতা (Uniformity) ছিল না। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রূপে প্রচলিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সকল রাজ্যেই এক ধরনের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বিদ্যমান।
(খ) পূর্বে পঞ্চায়েত সংস্থাসমূহের কার্যকাল সমান ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সকল রাজ্যেই পঞ্চায়েত সংস্থার কার্যকাল পাঁচ বছর।
(গ) পূর্বে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু ৭৩-তম সংশোধনের পরবর্তীকালে পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(ঘ) পূর্বে পৃথক নির্বাচন কমিশন ও পৃথক অর্থ কমিশন নিয়োগের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে প্রত্যেক রাজ্যে এই সংস্থা দুটি গঠিত হয়েছে।
প্রশ্ন ৫। নীচের কথোপকথনটি পড়ো। এ কথোপকথনে উত্থাপিত বিষয়গুলো সম্পর্কে তোমার অভিমত দুশত শব্দের মধ্যে লেখো।
অলকঃ আমাদের সংবিধান পুরুষ ও মহিলাদের সমতা সুনিশ্চিত করেছে। স্থানীয় সংস্থায় মহিলাদের সংরক্ষণ ক্ষমতায় তাদের ন্যায্য অংশ সুনিশ্চিত করেছে।
নেহা: কিন্তু মহিলাদের ক্ষমতার পদমর্যাদাই যথেষ্ট নহে। স্থানীয় সংস্থাসমূহের বাজেটে মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকা উচিত।
জয়েসঃ আমি এ সংরক্ষণ ব্যবস্থা পছন্দ করি না। স্থানীয় সংস্থাকে গ্রামীণ জনগণের প্রতি দৃষ্টি দিতে হয় এবং তা স্বাভাবিক ভাবেই মহিলাদের স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি দিবে।
উত্তরঃ সংবিধান অনুযায়ী ভারতের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। ভারতের সংবিধানে নারী ও পুরুষকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৫নং ধারা অনুযায়ী সরকার লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, জন্ম প্রভৃতির ভিত্তিতে কোনোপ্রকার বৈষম্য করতে পারবে না। সংবিধানের ৭৩-তম ও ৭৪-তম সংবিধান সংশোধনীর পূর্বে স্থানীয় সংস্থাগুলোতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ সংক্রান্ত কোন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্ত সংশোধনী আইন দুটিতে মহিলাদের জন্য স্থানীয় সংস্থাগুলোতে ৩৩% আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা স্থানীয় সংস্থাগুলোর সভাপতি/সভানেত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। স্থানীয় সংস্থায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ সমতার নীতি বিরোধী হলেও বাস্তব অর্থে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা জাতির সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার পূর্বে স্থানীয় সংস্থায় মহিলাদের প্রতিনিধি সংখ্যা একেবারে নগণ্য ছিল। কিন্ত বর্তমানে স্থানীয় সংস্থাগুলোতে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সংরক্ষণ নীতির ফল স্বরূপ এটা সম্ভব হয়েছে। মহিলাদের অংশগ্রহণে স্থানীয় সংস্থাগুলোতে কার্যপ্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে মহিলাদের বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। এভাবে মহিলারা রাজনীতি ও প্ৰশাসন সংক্ৰান্ত কার্যে দক্ষ হচ্ছে।
প্রশ্ন ৬। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনীর অনুবিধিগুলো পড়ো। নিম্নের বিষয় সমূহের মধ্যে কোনটি এই সংশোধনী সমাধান করবে?
(ক) সদস্যগণকে বদলের ভয় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করে রাখে।
(খ) প্রভাবশালী সম্প্রদায় এবং সামন্ত জমিদার স্থানীয় সংস্থা সমূহে প্রাধান্য বিস্তার করে।
(গ) গ্রামে নিরক্ষরতা অত্যন্ত বেশি। নিরক্ষর লোক গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।
(ঘ) গ্রামের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং ফলপ্রসু করতে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোর অর্থ এবং ক্ষমতার প্রয়োজন।
উত্তরঃ (ঘ) গ্রামের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে এবং তা ফলপ্রসু করতে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোর অর্থ এবং ক্ষমতা উভয়েরই প্রয়োজন। সংবিধানের ৭৩-তম সংশোধনী আইন পঞ্চায়েত সংস্থাগুলোর হাতে মোট ২৯টি বিষয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে। এই বিষয়গুলো সংবিধানের একাদশ অনুসূচীতে বিধিবন্ধ আছে।
প্রশ্ন ৭। নিম্নলিখিতগুলোর মধ্যে কোনটি তোমার মতে বিকেন্দ্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত করে? অন্যান্য বিকল্প পছন্দগুলো বিকেন্দ্রীকরণের জন্য কেন পর্যাপ্ত নয়?
(ক) গ্রাম সভা আহবান করার ক্ষমতা।
(খ) গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজ্য সরকার দ্বারা শুরু করা প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে খণ্ড উন্নয়ন অধিকারিকের নিকট থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন।
উত্তরঃ (খ) গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে গ্রামবাসী কর্তৃক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। এর ফলে গ্রামে বিকেন্দ্রীকরণের পরিসর বর্ধিত হবে। সুতরাং গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজ্য সরকারের আরম্ভ করা প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে খণ্ড উন্নয়ন আধিকারিকের (B. D. O.) নিকট হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বিকেন্দ্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত করে। অন্য বিকল্প পছন্দ বিকেন্দ্রীকরণের প্রধান বিষয়ভূক্ত নয়।
প্রশ্ন ৯। রাঘবেন্দ্র পরপান্না নামে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র প্রাথমিক শিক্ষায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্র বিকেন্দ্রীকরণের ভূমিকা অধ্যয়ন করতে চেয়েছিল। সে গ্রামবাসীকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এই প্রশ্নগুলো নিম্নে দেওয়া হলো। তুমি যদি এ সকল গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন হতে তা হলে এসকল প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কী দিতে?
গ্রামের প্রতিটি শিশু যাতে বিদ্যালয়ে যেতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তা আলোচনা করতে গ্রাম সভার একটি সভা আহ্বান করা হবে।
(ক) সভার সুবিধাজনক দিন তুমি কীভাবে স্থির করবে? চিন্তা করে দেখো তোমার পছন্দ মত দিনে সভায় কে কে উপস্থিত থাকতে সমর্থ হবে/সমর্থ হবে না।
১। খণ্ড উন্নয়ন আধিকারিক অথবা জিলাশাসক কর্তৃক নির্ধারিত দিন।
২। গ্রামের বাজার দিন।
৩। রবিবার।
৪। নাগপঞ্চমী–সংক্রান্তি।
(খ) সভার সুবিধাজনক স্থান কোনটি? এবং কেন?
১। জিলাশাসকের নির্দেশনামা দ্বারা নিদ্ধারিত স্থান।
২। গ্রামের ধর্মীয় স্থান।
৩। দলিত মহল্লা।
৪। উচ্চ সম্প্রদায়ের তলা।
৫। গ্রামের বিদ্যালয়।
(গ) গ্রামসভার সভায় প্রথমত জিলাশাসক প্রেরিত একটি নির্দেশনামা পাঠ করা হয়। এটি একটি শিক্ষা পদযাত্রা সংগঠিত করতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত এবং এর যাত্রাপথ কী হওয়া উচিত তা নিদ্ধারণ করে দেয়। এই সভা যে সকল শিশু কখনও বিদ্যালয়ে যায় না, অথবা মেয়েদের শিক্ষা অথবা বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা অথবা বিদ্যালয়ের সময় প্রভৃতি বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি। সভায় কোনো মহিলা উপস্থিত হয়নি কারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় রবিবার। জনগণের অংশ গ্রহণের উদাহরণ রূপে সভায় আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে তুমি কী ভাবো?
(ঘ) মনে করো তোমার শ্রেণী কক্ষ হলো একটি গ্রাম সভা। সভার কার্যসূচি আলোচনা করো এবং লক্ষ্য রূপায়ণে কতিপয় পদক্ষেপ উত্থাপন করো।
উত্তরঃ উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের ব্যাখ্যা নিম্নরূপঃ
(ক) (৩) রবিবার সভার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দিন। কারণ রবিবার বন্ধের দিন। তাই অধিক সংখ্যক গ্রামবাসী সভায় উপস্থিত থাকবে।
(খ) (৫) গ্রামের বিদ্যালয় উপযুক্ত সভাস্থল।
(গ) গ্রামসভার বৈঠকে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ ও মহিলার যোগদান করা উচিত। বৈঠকে সকলের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত। গ্রামসভার বৈঠকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের উপস্থিত হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে এই উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। সকল বিষয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে আলোপ আলোচনা হওয়া উচিত। জনগণের নিকট হতে পরামর্শ চাওয়া উচিত। স্কুলে অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে সভায় আলোচনা জরুরি। বিদ্যালয় গৃহের অবস্থা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে।
(ঘ) সভার কার্যসূচি আলোচনা পূর্বক গ্রামের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া সুনিশ্চিত করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজনঃ
(অ) অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে তাদের সন্তান পাঠানোর ব্যাপারে সচেতন করা উচিত।
(আ) গ্রামবাসীদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(ই) ছেলে–মেয়েদের উৎসাহ প্রদানকারী কিছু কিছু জিনিসপত্র দেওয়া উচিত। যেমন – বই, খাতা, স্কুলের পোশাক, মধ্যাহ্নভোজন প্রভৃতি উৎসাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।