Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি

Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি and select needs one.

Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Bengali Chapter 16 অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি for All Subject, You can practice these here…

অরণ্য প্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি

               Chapter – 16

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

১। (ক) লবটুলিয়ার কোন বুনো ফুল বসন্তের আগমনী বার্তা ঘোষণা করছে? এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ লবটুলিয়ার মাঠে মাঠে দুধলি ঘাসের ফুল বসন্তের আগমনী বার্তা ঘোষণা করছে।

দুধলি ফুল খুবই সুন্দর, দেখতে নক্ষত্রের মতো আকৃতি, রং হলদে, লম্বা সরু লতার মতো ঘাসের ডাঁটায় অনেকখানি জমি জুড়ে মাটি আঁকড়িয়ে থাকে, নক্ষত্রাকৃতি হলদে ফুল ধরে গাঁটে গাঁটে। ভোরবেলায় মাঠে পথের ধারে সর্বত্র আলো করে ফুটে থাকত। কিন্তু সূর্যের তেজ বাড়বার সাথে সাথে সব ফুল কঁকড়িয়ে পুনরায় কঁড়ির মতো হয়ে যেত। পরদিন সকালে সেই কঁড়িগুলিই আবার ফুটত।

(খ) বাংলাদেশের কী কী গাছগাছালির কথা লেখকের হঠাৎ মনে পড়েছিল?

উত্তরঃ মাঝে মাঝে মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে বাংলাদেশে ফেরার জন্য লেখকের মন হাঁপিয়ে উঠত। বাংলাদেশের পল্লির সুমধুর বসন্ত কল্পনায় দেখতেন। তাঁর মনে পড়ত বাঁধানো পুকুরঘাটে স্নানশেষে ভেজা কাপড়ে চলে যাওয়া কোনো তরুণী বধূর ছবি। কিংবা মাঠের ধারে ফুলফোটা ঘেঁটুবন, বাতাবি লেবুফুলের সুগন্ধে মোহময় ঘনছায়া ভরা অপরাহ্ন।

(গ) যে সমস্ত ভ্রমণকারীদের কথা পাঠে বলা হয়েছে এরা কারা?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Join Now

উত্তরঃ পাঠে বলা হয়েছে হ্যারি জনস্টন, মার্কো পোলো, হাডসন, শ্যাকলটন ভ্রমণকারীদের কথা।

হ্যারি জনস্টন (১৮৫৮-১৯২৭) – ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী, ভাষাতাত্ত্বিক এবং অভিযাত্রী। আফ্রিকা মহাদেশের অভ্যন্তরে সফল অভিযান করেন।

মার্কো পোলো (১২৫৮-১৩২৮) – ইতালির পরিব্রাজক। মধ্যযুগে জন্মভূমি ভেনিস থেকে মধ্য এশিয়া অতিক্রম করে চীনদেশে পৌঁছান। দেশে ফিরে এসে বন্দি হন এবং কারাবন্দীদের কাছে ভ্রমণ কাহিনি শোনান। মুখে কথিত সেই ভ্রমণ কাহিনি গ্রন্থিত হয়ে Travels of Marco Polo (১৩০০ খ্রি.) প্রকাশিত হয়।

হ্যাডসন হেনরি (১৫৬৫-১৬১১) – ইংরেজ নাবিক এবং অভিযাত্রী। তিনি সপ্তদশ শতাব্দীতে কানাডা এবং উত্তর পূর্ব আমেরিকা অভিযান করেন।

শেকলটন আর্নেস্ট (১৮৭৮-১৯২৯) – আয়ারল্যান্ডের সন্তান এই মেরু অভিযাত্রী অ্যান্টার্টিকা অভিযানে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ মেরুতে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি Mount Erebus আরোহণ করে দেশে ফিরে এলে রাজা সপ্তম এডোয়ার্ড তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।

(ঘ) মোহনপুরা জঙ্গলে কী কী বন্যজন্তু দেখা যায়?

উত্তরঃ মোহনপুরা জঙ্গলে বন্যশূকর, বুনো মহিষ, হরিণ, নানাধরনের পাখি দেখা যায়।

(ঙ) বনে পথ হারিয়ে লেখক কী দিয়ে দিক নির্ণয় করেন?

উত্তরঃ মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে পূর্ণিয়া যাওয়ার সময় বনের মধ্যে লেখক এবং সঙ্গী সুজন সিং পথ হারিয়ে ফেলেন। চাঁদের অকৃপণ আলোর মধ্যে দিয়ে তারা যাচ্ছিলেন। কাশের মাথায় ঝুঁটি বেঁধে জঙ্গলের পথ ঠিক করা আছে। সুজন সিং বলল, পথ ভুল হয়েছে। লেখক সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখে ধ্রুবতারা ঠিক করলেন। পূর্ণিয়া লেখকের মহাল থেকে খাড়া উত্তরে। সেদিকেই যেতে হবে।

২। (ক) কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে লেখকের কী অনুভূতি হয়েছিল?

উত্তরঃ কৃষ্ণপক্ষের রাতে পূর্ণিয়া স্টেটের কাজ সম্পন্ন করে লেখক ফিরছিলেন। কৃষ্ণপক্ষে চাঁদ একটু দেরি করে উঠলেও ভোর পর্যন্ত জ্যোৎস্না ছিল। চাঁদের আলোর নিচে দাঁড়িয়ে লেখকের মনে হচ্ছিল কৃষ্ণপক্ষের স্তিমিত আলোকে চাঁদের জ্যোৎস্না বনে পাহাড়ে যেন এক শান্ত স্নিগ্ধ অথচ এক আশ্চর্যরূপে অপরিচিত স্বপ্নজগতের রচনা করেছে। ছোট ছোট কাশজঙ্গল, পাহাড়ের সানুদেশে পীতবর্ণ গোলগোলাপি ফুল, উঁচু নিচু পথ—সব মিলে যেন কোনো বহুদূরের নক্ষত্রলোক—মৃত্যুর পরে অজানা কোনো অদৃশ্যলোকে অশরীরী হয়ে উড়ে চলেছে—ভগবান বুদ্ধের সেই নির্বাণলোকে, যেখানে চন্দ্রের উদয় হয় না, অথচ অন্ধকারও নেই।

(খ) সরস্বতী কুণ্ডীর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ লবটুলিয়ার উত্তরপ্রান্তে সরস্বতী কুণ্ডী অবস্থিত। সরস্বতী কুণ্ডীর পাড়ের তিনদিকে ঘন বন। এধরনের বন লবটুলিয়াতে নেই। বনে বড়ো বড়ো বনস্পতি রয়েছে। বনের তলদেশে নানা বিচিত্র লতাপাতা, বন্যপুষ্প রয়েছে। বিশাল বনটি সরস্বতী কুণ্ডীর নীল জলকে তিনদিকে অর্ধচন্দ্রাকারে ঘিরে রেখেছে। একদিকে ফাঁকা অংশ থেকে পূর্বদিকের বহুদূর প্রসারিত নীল আকাশ ও দূরের পর্বতমালা দেখা যেত। পূর্বপশ্চিম কোণের তীরের কোনো এক জায়গায় বসে দক্ষিণ বা বাঁদিকে দেখলে সরস্বতী কুণ্ডীর সৌন্দর্যের অপূর্বতা বোঝা যায়।

(গ) সরস্বতী কুণ্ডীর বনে সে সকল পাখির আড্ডা তাদের নাম লেখো।

উত্তরঃ সরস্বতী কুণ্ডীর বনে শ্যামা, শালিক, হরট্রিট, বনটিয়া, ছাতারে ঘুঘু, হরিয়াল, বাজবৌরি, চিল, কুল্লো; সরস্বতীর নীল জলে বক, সিল্লি, রাঙা হাঁস, মাণিক পাখি, কাক প্রভৃতি জলচর পাখিদের আড্ডা বসত।

(ঘ) বন্য হরিণের কথা কী বলা হয়েছে এ পাঠে?

উত্তরঃ সরস্বতী কুণ্ডীর বনে লেখক বন্য হরিণ দেখেছিলেন। ঝোপের নিভৃত, দুর্গম অঞ্চলে নিবিড় লতাপাতার জড়াজড়ির মধ্যে একটি হরিণ শাবককে লেখক হঠাৎ একদিন দেখেছিলেন। বন্য হরিণ শাবকটি অবাক বিস্মিত বড়ো বড়ো চোখে লেখককে দেখছিল। দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। আধমিনিট পরে ভালো করে বোঝার জন্য লেখকের দিকে কিছুটা এগিয়ে এল। শাবকটির দুচোখে ভরা কৌতূহল। তারপর হঠাৎ লেখকের ঘোড়ার গা-ঝাড়া দেওয়ার শব্দে পালিয়ে গেল।

(ঙ) ভোমরা লতা কী? এটা দেখতে কেমন? এর ফুল কী রকম?

উত্তরঃ ভোমরা লতা একজাতীয় লতানো গাছ। এর প্রকৃত নাম ভিঁয়োরা লতা। লেখক এই গাছের নাম দিয়েছেন ভোমরা লতা। ভোমরা লতা গাছের মাথায় উঠে গাছটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে থাকে।

ছোটো ছোটে বনজুঁইয়ের মতো সাদা সাদা ফুলে বড়ো গাছের মাথা আলো করে রাখে। অত্যন্ত সুন্দর ঘ্রাণ, অনেকটা যেন প্রস্ফুটিত সর্ষে ফুলের মতো তবে অতটা উগ্র নয়।

৩। (ক) “এই সরস্বতী কুণ্ডীর ধারে একদিন দুপুরে এক অদ্ভূত লোকের সন্ধান পাইলাম”— কে এই ব্যক্তি? সে কী করছিল?

উত্তরঃ সার্বে ক্যাম্প থেকে ফেরবার পথে একদিন হ্রদের তীরের বনপথ ধরে আস্তে আস্তে আসছিলেন। হঠাৎ লেখক দেখলেন বনের মধ্যে একটি লোক মাটি খুঁড়ে কিছু করছে। কৌতূহলবশতঃ ঘোড়া থেকে নেমে লোকটির কাছে গিয়ে দেখলেন সে কোনো গাছের বীজ মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে। লেখকের জিজ্ঞাসার উত্তরে জানাল তার নাম যুগলপ্রসাদ।

যুগলপ্রসাদ লবটুলিয়ার পাটোয়ারি বনোয়ারীলালের চাচাতো ভাই। বয়স্ক যুগলপ্রসাদের মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। সঙ্গে একটা চটের থলি। তার মধ্যে ছোট কোদাল, শাবল থাকে।

(খ) যুগলপ্রসাদের কী সখ? সে বনের ভেতরে কী করে বেড়ায়?

উত্তরঃ যুগলপ্রসাদের শখ হল বনের ভেতর গাছের বীজ লাগিয়ে বেড়ানো। যুগলপ্রসাদ ঘন জঙ্গলের মধ্যে নানা গাছের বীজ ছড়িয়ে দেয়। যুগলপ্রসাদ জানাল পূর্ণিয়ার একজন সাহেবের বাগান থেকে চমৎকার বিলিতি লতার বীজ, আরো অনেকরকম ফুলের বীজ দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করে এনে জঙ্গলের মাটিতে ছড়িয়ে দেয়। তাতে গাছ হয়ে দুবছরের মধ্যে ঝাড় বেঁধে বনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

(গ) পূর্ণিয়া থেকে সে কী এনেছে? লেখক তাকে কলকাতা থেকে কী এনে দিয়েছেন?

উত্তরঃ যুগলপ্রসাদ পূর্ণিয়ার এক সাহেবের বাগানে চমৎকার বিলিতি লতার বীজ এনেছিল। বিলিতি লতায় লালবর্ণের ফুল ফোটে।

কলকাতা থেকে সাটনের বিদেশী বন্য ফুলের বীজ এনে দিয়েছিলেন।

(ঘ) আজকের দিনের নিরিখে যুগলপ্রসাদকে একজন পরিবেশবিদ বলা যাবে কী?

উত্তরঃ আজকের দিনের নিরিখে যুগলপ্রসাদকে অবশ্যই একজন পরিবেশবিদ বলা যাবে। সমগ্র জীবজগত নির্ভর করে উদ্ভিদ জগতের উপর। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গাছের অবদান অপরিসীম। বিজ্ঞানের এত অগ্রগতির যুগেও গাছ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয় গাছ ছাড়া জীবজগতে বেঁচে থাকাও অসম্ভব।

দরিদ্র যুগলপ্রসাদ শুধুমাত্র একজন সৌন্দর্যের পূজারী। বনে বনে ভালো ফুল ও লতার বীজ ছড়িয়ে তার কোনো স্বার্থ নেই, আর্থিক লাভ নেই। যুগলপ্রসাদ নিজে অত্যন্ত গরীব অথচ শুধু বনের সৌন্দর্য সম্পদ বাড়িয়ে তুলবার চেষ্টায় তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও উদ্বেগ।

(ঙ) লেখক কেন যুগলপ্রসাদকে বলেন যে তাদের প্রয়াস যেন গোপন রাখে?

উত্তরঃ যুগলপ্রসাদের উদ্দেশ্য শুনে তার প্রতি লেখকের শ্রদ্ধা জন্মেছিল। লেখক নিজেও ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমিক। তিনি বন জঙ্গল গাছপালা খুবই ভালোবাসতেন। তাই যুগলপ্রসাদের কাজকর্ম লেখককে মুগ্ধ করেছিল। গাছ লাগানো এবং ফুল ফোটানোর যে আনন্দ তা একমাত্র প্রকৃতিপ্রেমিকরাই বুঝে থাকেন। এই আনন্দ পবিত্র, নির্মল। মন অসীম আনন্দ লাভ করে।

কিন্তু মানুষ সব কিছুর পিছনে লাভের সন্ধান করে। বিশেষত অর্থকরী লাভ না থাকলে মানুষ তেমন উৎসাহ পায় না। সৌন্দর্যের পূজারীরা যে কেবল আনন্দ ও সৌন্দর্যের কারণে বনসৃজন করে, ফুল ফোটায়—সেকথা অনেকেরই বোধগম্য হবে না। বরং অনেকের পরিহাসের পাত্র হবে। তাই লেখক যুগলপ্রসাদকে নিষেধ করেছিলেন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ।

১। “অরণ্যপ্রেমিক : লবটুলিয়ার কাহিনি”—অংশটি কোথা থেকে নেওয়া?

উত্তরঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাস থেকে নেওয়া।

২। দুধলি ঘাসের ফুল কখন ফুটত?

উত্তরঃ দুধলি ঘাসের ফুল বসন্ত ঋতুতে ফুটত।

৩। লেখক কোথায় চাকরি করতেন?

উত্তরঃ লেখক মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টে চাকরি করতেন।

৪। বাংলাদেশের বন কিসের সুগন্ধে মোহময় হয়ে উঠত?

উত্তরঃ বাংলাদেশের বন ফুল ফোটা ঘেঁটুবন, বাতাবি-লেবু ফুলের সুগন্ধে মোহময় হয়ে উঠত।

৫। প্রকৃতির মোহিনীরূপ কাদের ঘরছাড়া করেছিল?

উত্তরঃ হ্যারি জনস্টন, মার্কো পোলো, হাডসন, শ্যাকলটন—এদের প্রকৃতির মোহিনীরূপ ঘরছাড়া করেছিল।

৬। লবটুলিয়া বইহারে কিসের বন ছিল?

উত্তরঃ লবটুলিয়া বইহারে দিগন্তব্যাপী দীর্ঘ বনঝাউ ও কাশের বন ছিল।

৭। লেখকের মহাল থেকে পূর্ণিয়ার দূরত্ব কত?

উত্তরঃ লেখকের মহাল থেকে পূর্ণিয়ার দূরত্ব ৫৫ মাইল।

৮। লেখক কিসে চড়ে কাকে নিয়ে পূর্ণিয়ায় গেলেন?

উত্তরঃ লেখক ঘোড়ায় চড়ে তহসিলদার সুজন সিংকে নিয়ে পূর্ণিয়ায় গেলেন।

৯। তারা কখন রওনা দিলেন?

উত্তরঃ তারা দুজন সন্ধ্যায় রওনা দিলেন।

১০। মোহনপুরা জঙ্গলের কাছে কিসের ভয়?

উত্তরঃ মোহনপুরা জঙ্গলের কাছে বুনো মহিষের ভয়।

১১। লেখক কী দেখে ধ্রুবতারা ঠিক করলেন?

উত্তরঃ লেখক সপ্তর্ষি মণ্ডল দেখে ধ্রুবতারা ঠিক করলেন।

১২। কুণ্ডী কাকে বলে?

উত্তরঃ লবটুলিয়ার উত্তর প্রান্ত খুব একটা বড়ো হ্রদের মতো। এরকম জলাশয়কে এদেশে কুণ্ডী বলে।

১৩। সরস্বতী কুণ্ডীর বন কাদের আড্ডাখানা?

উত্তরঃ সরস্বতী কুণ্ডীর বন পাখিদের আড্ডাখানা।

১৪। যুগলপ্রসাদ কোথায় চাকরি পেল?

উত্তরঃ যুগলপ্রসাদ আজমাবাদ কাছারিতে দশটাকা বেতনের মুহুরির চাকরি পেল।

১৫। যুগলপ্রসাদের অবস্থা কেমন ছিল?

উত্তরঃ যুগলপ্রসাদ খেতে পেত না, সংসারে ভীষণ কষ্ট ছিল।

রচনাধর্মী প্রশ্ন

১। সরস্বতী কুণ্ডী ও লেখকের অনুভূতি সম্পর্কে লেখো।

উত্তরঃ লবটুলিয়ার উত্তরপ্রান্তে খুব বড়ো হ্রদটির নাম সরস্বতী কুণ্ডী। সরস্বতী কুণ্ডীর পাড়ের তিনদিকে ঘন জঙ্গল। এধরনের বন লবটুলিয়াতে নেই। এই বনে রয়েছে বড়ো বড়ো বনস্পতির সমাবেশ। বনের তলদেশে নানা বন্যপুষ্প, বিচিত্র লতাপাতা। এই বন বিশাল সরস্বতী কুণ্ডীর নীল জলকে তিনদিক থেকে অর্ধচন্দ্রাকারে ঘিরে রেখেছে। একদিকে ফাঁকা—সেদিক থেকে পূর্বদিকের বহুদূর প্রসারিত নীল আকাশ ও দূরের পর্বতসারি চোখে পড়ে। পূর্বপশ্চিম কোণের তীরের কোনো এক জায়গায় বসে দক্ষিণ বা বাঁদিকে তাকালে গভীর থেকে গভীরতর বনের মধ্যে দৃষ্টি চলে গিয়ে ঘন নিবিড় শ্যামলতার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। দক্ষিণে দেখলে স্বচ্ছনীল জলের উপরে সুদূরে বিস্তৃত আকাশ ও অস্পষ্ট পাহাড়ের ছবি মনকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে পৃথিবীর মাটিতে উড়িয়ে নিয়ে চলে। সরস্বতী কুণ্ডীতে একটি শিলাখণ্ডের উপর প্রায় লেখক একা একা বসে থাকতেন। কখনো বনের মধ্যে দুপুরবেলা আপন মনে ঘুরে বেড়াতেন। কখনো আবার বড়ো বড়ো গাছের ছায়ায় বসে পাখির কূজন শুনতেন। মাঝে মাঝে গাছপালা, বন্যলতার ফুল সংগ্রহ করতেন। হ্রদের তীরের ঘন বন প্রায় তিন মাইলের বেশি লম্বা, গভীরতায় প্রায় দেড় মাইল। জলের ধার দিয়ে বনের মধ্যে গাছপালার ছায়ায় একটা সুঁড়িপথ বনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গিয়েছে। লেখক এই পথ ধরে বেড়াতেন। গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে সরস্বতীর নীল জল তার উপর উপুড় হয়ে পড়া দূরের আকাশ এবং দিগস্তলীন পর্বতমালা চোখে পড়ত, ঝিরঝির করে স্নিগ্ধ হাওয়া বইত, বন্যফুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে যেত।

লেখক একদিন একটি গাছের ডালে উঠে বসলেন। তার মাথার উপরে বনস্পতির ঘন সবুজ পাতার রাশি, পাতার ফাঁকে দেখা যাচ্ছে নীল আকাশের টুকরো, প্রকাণ্ড লতায় থোকা থোকা ফুল দুলছে। পায়ের দিকে ভেজা মাটিতে রয়েছে ব্যাঙের ছাতা। এখানে এসে প্রত্যেক বৃক্ষলতার হৃদস্পন্দন লেখক নিজের বুকের মধ্যে অনুভব করেন। মনের মধ্যে নতুন নতুন অনুভূতির সৃষ্টি হয়। সরস্বতী কুণ্ডীর নিবিড় বনের মধ্যে বসে লেখকের শুধু ভাবতে ইচ্ছা করে।

সরস্বতী কুণ্ডী তার নিজের সুমিষ্ট সুরের মধুর ও কোমল বিলাসিতায় মনকে আর্দ্র ও স্বপ্নময় করে তোলে। স্তব্ধ দুপুরে ফাল্গুন চৈত্রমাসে তীরতরুর ছায়ায় বসে পাখির কূজন শুনতে শুনতে লেখকের মন সুদূরে হারিয়ে যেন, বন্য নিমগাছে, নিমফুলের সুগন্ধি সুবাস বাতাসে ছড়াত, জলে জলজ লিলি ফুল ফুটত। অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে লেখক সন্ধ্যার পর সেখান থেকে ফিরতেন।

সরস্বতী কুণ্ডীর বন ছিল পাখিদের আড্ডাস্থল। এখানকার বনে নানাধরনের নানা রংবেরঙের পাখি শ্যামা, শালিক, হরট্রিট, বনটিয়া, ছাতারে ঘুঘু, হরিয়াল, উঁচু গাছের মাতায় বাজবৌরি, চিল, কুল্লো, সরস্বতীর নীল জলে বক, সিল্লি, রাঙা হাঁস, মাণিক পাখি, কাক প্রভৃতি জলচর পাখি বিচরণ করত। অনেক সময় মানুষকে গ্রাহ্য না করেই মুখর হয়ে উঠত।

পাখিদের এই অসঙ্কোচ সঞ্চরণ লেখকের ভালো লাগত। লেখকের উপস্থিতি তাদের বিন্দুমাত্র ভয় পাওয়ায় না। একটু হয়তো উড়ে যায় কিন্তু একেবারে উড়ে পালিয়ে যায় না। কিছুক্ষণ পরে নাচতে নাচতে ডাকতে ডাকতে আবার মানুষের কাছাকাছি চলে আসে।

সরস্বতী কুণ্ডীর বনে লেখক এক অদ্ভুত শান্তি লাভ করেন। জনশূন্য স্থানে শুধু পাখিদের পায়ে ডালপালার মচ্‌মচানি, শুষ্কপত্র বা লতার টুকরো পতনের শব্দ। এখানকার বনস্পতিদের শীর্ষদেশের নানা বিচিত্র গড়ন। সন্ধ্যার সময় রাঙা রোদ পড়ে অদ্ভুত শোভা বৃদ্ধি পায়। এখানকার ভিয়োরা লতা কত গাছের মগডাল জড়িয়ে উঠে যায়। ভিয়োরা লতায় জুঁই ফুলের মতো সাদা সাদা থোকা থোকা ফুল ফোটে। সরস্বতী হ্রদের অবর্ণনীয় শোভা লেখকের হৃদয় হরণ করেছিল।

২। লেখকের পূর্ণিয়া যাওয়ার যাত্রাপথের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ লেখক পূর্ণিয়া থেকে উকিলের টেলিগ্রাম পেলেন যে পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সেখানে হাজির হতে হবে। নাহলে স্টেটের একটা মোকদ্দমায় হার হবে।

লেখকের মহাল থেকে পূর্ণিয়া ৫৫ মাইল দূরে। ১৭ মাইল দূরের কাটারিয়া স্টেশনে গিয়ে একটি মাত্র ট্রেন ধরা অসম্ভব তাই তিনি ঘোড়ায় রওনা দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

সুদীর্ঘ অরণ্য অঞ্চল কিছুটা বিপদসঙ্কুল তাই লেখক সঙ্গে তহসিলদার সুজন সিংকে সঙ্গে নিলেন।

সন্ধ্যায় দুজন যাত্রা শুরু করলেন। কাছারি ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকতেই কৃষ্ণা তৃতীয়ার চাঁদ উঠল। বনজ্যোৎস্নায় বনপ্রান্তর আরো অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। উঁচু নিচু পথ, সাদা বালির উপর জ্যোৎস্না পড়ে চক্‌চক্ করছে। মাঝে মাঝে ঝোপঝাড়, দুপাশে কাশ আর ঝাউয়ের বন। জ্যোৎস্না ক্রমশ ফুটছে—বন জঙ্গল বালুচর স্পষ্ট হচ্ছে। বহুদূর পর্যন্ত নিচু জঙ্গলের শীর্ষদেশ একটানা সরলরেখায় চলে গিয়েছে—যতদূর দেখা যায় একদিকে ধূ ধূ প্রান্তর অপরদিকে জঙ্গল। বাঁদিকে দূরে অনুচ্চ পর্বতশ্রেণি। নির্জন নীরব কোথাও মানুষের বসতি নেই, সাড়া নেই, শব্দ নেই।

এক জায়গায় এসে সুজন সিং ঘোড়া থামাল। পাশের জঙ্গল থেকে একটি বাড়ি বন্যশূকর ছেলেমেয়ে নিয়ে পথ পার হয়ে জঙ্গলে ঢুকছে। সুজন সিং বলল, মোহনপুরা জঙ্গলের কাছে খুব বুনো মহিষের উপদ্রব। যেকোনো সময় আক্রমণ করে। কিছুদূর গিয়ে কালোমতো কিছু দেখে ঘোড়া দাঁড়িয়ে গেল। তারপর বোঝা গেল কালোমতো বস্তুটি আসলে কাশের খুপরি। মাঠঘাট, বন, ধূ-ধূ জ্যোৎস্না ভরা বিশ্বের মধ্য দিয়ে ঘোড়া আবার চলতে শুরু করল। একটি সঙ্গীহারা পাখি বনের মধ্যে টি টি করে ডেকে উঠল। ঘোড়ার খুরে বড়ো বালি উঠছে।

ঘোড়ার পিঠে অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে লেখকের পিঠের ব্যথা শুরু হল। ঘোড়াটিও ক্লান্ত হয়ে দুলকি চালে হেঁটে চলেছে। কাশের মাথায় ঝুঁটি বেঁধে জঙ্গলে পথ ঠিক করা আছে। রাস্তা বলে কিছু নেই, কাশের ঝুঁটি দেখে পথ ঠিক করতে হয়। সুজন সিংয়ের মনে হল পথ ভুল হয়েছে। লেখক সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখে ধ্রুবতারা ঠিক করলেন। তিনি বললেন পূর্ণিয়া মহাল থেকে খাড়া উত্তরে তাই পথ ঠিক আছে। কিন্তু সুজন সিং অরাজি হয়ে বলল—কুশী নদীর খেয়া পেরিয়ে সোজা উত্তরে যেতে হবে। উত্তরপূর্ব কোণ থেকে যেতে হবে। অবশেষে পথ মিলল। নির্জন বালুচরে দীর্ঘ বনঝাউয়ের মধ্যে দিয়ে ছুটতে ছুটতে দুটো ঘোড়াই হাঁপিয়ে উঠেছিল। শীতের রাত্রেও লেখক ও সুজন সিং ঘামছিলেন।

বনের মধ্যে একটা শিমূলগাছের তলায় মিনিট দশেকের জন্য ঘোড়া থামিয়ে তারা বিশ্রাম করলেন। এবার আশেপাশে ছোট ছোট পাহাড়, তাঁর মধ্য দিয়ে পথ, পাহাড়ের মাথায় পাতাহীন সাদাকাণ্ড গালগোলি ফুলের গাছ, কোথাও রক্ত পলাশের বন, শেষরাত্রের চাঁদ ডোবা অন্ধকারে বনপাহাড় অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। ধীরে ধীরে ভোর হল ভোরের হাওয়া বইছে, পাখির ডাক শোনা গেল। ঘোড়ার সর্বাঙ্গ দিয়ে ঘাম ঝরছে। সন্ধ্যায় বেরিয়ে ভোর হয়ে গেলেও লেখক পূর্ণিয়া পৌঁছাতে পারলেন না।

সামনের পাহাড়ের পিছন থেকে টকটকে লাল সিঁদুরের গোলার মতো সূর্যের উদয় হচ্ছে। পথের ধারে এক গ্রামে ঘোড়া থামিয়ে লেখক ও সৃজন সিং দুধ কিনে খেলেন। এরপরে আরো ঘণ্টা দুয়েক পথ চললে তবেই পূর্ণিয়া শহর ।

৩। লেখকের সাথে যুগলপ্রসাদের কীভাবে পরিচয় হল? এরপর কী ঘটল?

উত্তরঃ একদিন লেখক সার্বে ক্যাম্প থেকে হ্রদের তীরের বনপথ ধরে ফিরছিলেন হঠাৎ দেখলেন বনের মধ্যে একটা লোক মাটি খুঁড়ে কিছু করছে। লেখক ভাবলেন লোকটি বোধহয় ভই কুমড়ো তুলছে। কৌতূহলবশতঃ ঘোড়া থেকে নেমে কাছে গিয়ে লেখক দেখলেন লোকটি কিছু একটা বীজ পুঁতছে। লেখককে দেখে থতমত খেয়ে অপ্রতিভ দৃষ্টিতে তাকাল। মোটামুটি বয়স, মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। সঙ্গে একটি চটের থলি, তার ভেতর থেকে ছোট একখানা কোদালের মাথা দেখা যাচ্ছে, একটা শাবল পাশে পড়ে, এখানে ওখানে কয়েকটি কাগজের মোড়ক ছড়ানো। লেখক জানতে চাইল সে এখানে কি করছে। উত্তরে লোকটি জানাল তার নাম যুগলপ্রসাদ, লবটুলিয়ার পাটোয়ারি বনোয়ারী লালের চাচাতো ভাই।

যুগলপ্রসাদ প্রকৃত একজন প্রকৃতিপ্রেমিক। তাঁর কাজই হল সম্পূর্ণ বিনা স্বার্থে একটা বিস্তৃত বন্যভূমির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য নিজের পয়সা ও সময় ব্যয় করে কাজ করে চলেছে। যে বনে তার নিজের ভূস্বত্ব বলে কিছু নেই—সেই বনের জন্যই যুগলপ্রসাদ পরিশ্রম করে। যুগলপ্রসাদ জানাল তার কাছে অনেকরকম গাছের বীজ আছে। দূরদূরান্ত থেকে নানা রংয়ের নানা ধরনের ফুল ও বন্যলতার বীজ সংগ্রহ করে আনে যেগুলি এখানকার বনে নেই। সে জানাল বীজ থেকে গাছ হয়ে দুবছরের মধ্যে ঝাড় বেঁধে সৌন্দর্য বর্ধন করবে।

যুগলপ্রসাদ লেখককে জানাল লবটুলিয়াতে যত বন্যফুল কিংবা ফুলের লতা রয়েছে সেগুলি সবই সে দশবারো বছর আগে পূর্ণিয়ার বন থেকে, দক্ষিণ ভাগলপুরের লছমিপুর স্টেটের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে এনে লাগিয়েছিল। এখন একেবারে সব ফুলের জঙ্গল বেঁধে গিয়েছে। যুগলপ্রসাদ নিজের ইচ্ছার কথা জানাল যে -লবটুলিয়া বইহারের জঙ্গল কিংবা ছোটখাটো পাহাড়ের গায়ে অথবা এখানকার বনে ঝোপে নতুন নতুন ফুল ফোটানো। লেখক বুঝলেন যুগলপ্রসাদ এ দেশের বহু ফুল ও সুদৃশ্য বৃক্ষলতার খবর রাখে। গাছ সম্পর্কেতার অসাধারণ জ্ঞান। যুগলপ্রসাদ নিছকই সৌন্দর্যের পূজারী। প্রকৃতিকে সাজানো ভিন্ন তার আর কোনো স্বার্থ নেই।

একপয়সা আয় নেই, নিজে সে নিতান্তই গরীব, অথচ শুধু বনের সৌন্দর্য সম্পদ বাড়াবার চেষ্টায় তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও উদ্বেগ। যুগলপ্রসাদ আরো জানাল— ধরমপুরের পাড়াগাঁ অঞ্চলের পুকুর থেকে পদ্মের গেঁড় এনে সে সরস্বতী কুণ্ডীর জলে পুঁতে দেবে।

লেখক মনে মনে তাকে সাহায্য করার সংকল্প নিলেন। দুজনে মিলে এই বনকে নতুন বনের ফুলে, লতায়, গাছে সাজিয়ে তুলতে চাইলেন। না খেতে পাওয়া, সাংসারিক কষ্টে ভোগা যুগলপ্রসাদকে দশ টাকা বেতনের বিনিময়ে আজমাবাদ কাছারিতে মুহুরির চাকরি দিলেন। সেই বছরে কোলকাতা থেকে সাটনের বিদেশী জুঁইয়ের লতার কাটিং এনে যথেষ্ট পরিমাণে সরস্বতী হ্রদের বন্যভূমিতে রোপণ করলেন। যুগলপ্রসাদ প্রচুর আনন্দ পেল। লেখক তাকে শিখিয়ে দিলেন তার উৎসাহ ও আনন্দ যেন কাছারির লোকের কাছে প্রকাশ না করে, তাহলে তারা দুজনকেই হয়তো পাগল ভাববে।

৪। উপন্যাসিক বিভূতিভূষণ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্রের মতোই বাংলাসাহিত্যে বিভূতিভূষণের আবির্ভাব যেমন আকস্মিক, তেমনই বিস্ময়কর। আপন অন্তরে গ্রামবাংলার পল্লীপ্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানবজীবন- রসের এক স্নিগ্ধোজ্জ্বল ‘বিভূতি’ নিয়ে যেন তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই সংসারের শত দারিদ্র্যও কোনদিনই তাঁর অন্তরের ঐশ্বর্যকে কেড়ে নিতে পারেনি। প্রাচীন ভারতীয় অধ্যাত্মচেতনা, প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের নিগূঢ় সম্পর্ক-সচেতনতা এবং ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে চির ঔদাসীন্য তাঁর জীবন ও সাহিত্যকে একটি বিরল স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল করে রেখেছে। তাঁর সৃষ্টির বিরাট ব্যাপ্তি নেই, রয়েছে বৈচিত্র্য ও ঐশ্বর্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল পথের পাঁচালী (১৯২৯), অপরাজিত (১৯৩২), আরণ্যক (১৯৩৯), আদর্শ হিন্দু হোটেল (১৯৪০), দেবযান (১৯৪৪), কেদার রাজা (১৯৪৫), ইচ্ছামতী (১৯৫০) এবং অশনি সংকেত (১৯৫৯)। 

বিভূতিভূষণের উপন্যাসগুলির মধ্যে পথের পাঁচালী ও অপরাজিত (দু’খণ্ড), আরণ্যক, দেবযান ও ইচ্ছামতী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পথের পাঁচালী বিভূতিভূষণের সর্বপ্রথম এবং সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি। তাঁর যশ, খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠার সিংহভাগই জুড়ে রয়েছে এই গ্রন্থটি। তাঁর মৃত্যুর পরে হলেও ‘অস্কার পুরস্কার’ বিজয়ী চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের এক অভিনব পরিচালনা কৌশলে পথের পাঁচালী চলচিত্রায়ন লাভ করে। ফলে এই গ্রন্থের মাধ্যমে গ্রন্থকারও বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। ইংরেজী, ফরাসী ও অন্যান্য ভাষায় গ্রন্থটি অনূদিতও হয়।

পথের পাঁচালী গ্রামবাংলার অরণ্যপ্রকৃতির স্নেহচ্ছায়ে গড়ে উঠা শিশু ও কিশোর জীবনের এক অনবদ্য গদ্য মহাকাব্য। ৩৫টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত এই বৃহৎ গ্রন্থটি তিনটি পর্বে বিভক্ত,—১ম-ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ‘বল্লালী বালাই’, ৭ম-২৯তম পরিচ্ছেদ ‘আম আঁটির ভেঁপু’ এবং ৩০-৩৫তম পরিচ্ছেদ ‘অক্রূর সংবাদ’ রূপে লেখক বিন্যস্ত করেছেন। এই পর্ব-বিভাগ যুগধর্মের তাৎক্ষণিক তাৎপর্যে পৃথক এবং সামগ্রিক চেতনায় অখণ্ড এক চলমান জীবনেরই, পথ চলার পাঁচালী।

প্রথম পর্ব ‘বল্লালী বালাই’ অংশে অপুর পূর্বপুরুষের কিছু কথা ও কাহিনি রয়েছে। আর রয়েছে অপুর দূর সম্পর্কের বিধবা, নিঃসন্তান ও অসহায় পিসিমা বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকরুণের করুণ জীবনের এক বাস্তবধর্মী অসামান্য শিল্পরূপ। তার ‘মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিন্দপুর গ্রামে সেকালের অবসান হইয়া গেল।’ -সমাজ সচেতন জীবনশিল্পীর কী অসাধারণ মন্তব্য।

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনজীবন প্রবাহের পথ বেয়ে চলার এক অপরূপ রত্নভাণ্ডার হল এ গ্রন্থের ‘আম আঁটির ভেঁপু’ অংশ। পথের পাঁচালী উপন্যাসের দুটি শিশু চরিত্র হল দুর্গা ও তার ভাই অপু। দুর্গার বয়স যখন ছয়/সাত তখন অপুর জন্ম হয়। নিশ্চিন্দিপুরের অরণ্যপ্রকৃতি, চারপাশের জগৎ ও জীবন, বড়ো গাড়ি (রেলগাড়ি) এবং বিভিন্ন ঋতুর বিচিত্র ফুল ও ফলের, রূপ ও রসের জগতে হাত ধরে ধরে অপুকে পরিচিতি করে ও পৌঁছে দিয়েই কিশোরী দুর্গা ইহলোক হতে বিদায় নিয়েছে। এই দুর্গার চিত্রাঙ্কনে বিভূতিভূষণ লিখেছেন—“দুর্গার বয়স ১০-১১ হইল, গড়ন পাতলা-পাতলা, রঙ অপুর মত অতটা ফর্সা নয়, …চোখ দুটি বেশ ডাগর ডাগর।” দুর্গার এই মৃত্যুর দৃশ্যে অনন্ত জীবনের পরম আশ্বাসে বিভূতিভূষণ বলেছেন, —“আকাশের নীল আস্তরণ ভেদ করিয়া মাঝে মাঝে অনন্তের হাতছানি আসে—পৃথিবীর বুক থেকে ছেলেমেয়েরা চঞ্চল হইয়া ছুটিয়া গিয়া অনন্ত নীলিমার মধ্যে ডুবিয়া নিজেদের হারাইয়া ফেলে।…”(অধ্যায়-২৫)

‘নিশ্চিন্দিপুরের পথ ঘাট, কুঠির মাঠের ঘাট, ইচ্ছামতীর তীরে তীরে বনধূধূল ও বনসরসেলতার ঝোপে ঝাড়ে টুনটুনি পাখির কলতান, শুকনো বাঁশপাতার গন্ধ, ঘেঁটু ফুলের মাদকতা— সবটা মিলে অপুর জীবনে চেনা-অচেনার রহস্যময় যে আনন্দনিকেতন, তাও একদিন তাকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। ১০-১১ বছর বয়সে অপু সেই শৈশবের লীলাভূমি ছেড়ে মা বাবার সঙ্গে কাশীধামে চলে যায়। এমন একান্ত করে পাওয়ার’ আনন্দের পিছনেই লুকিয়ে থাকে ভালো আনন্দমেলা’র বেদনা। তাই এই গ্রামের সঙ্গে সেই বিচ্ছেদ বেদনায় অপুর হৃদয়বীণার তারে ঝঙ্কৃত হয় করুণ সুরের মীড় মূৰ্চ্ছনা। এই অংশের ‘অক্রূর সংবাদ’ নামকরণ সেই তাৎপর্যেই রূপকধর্মী হয়ে উঠেছে।

পথের পাঁচালী তাই জীবনে পথচলার পাঁচালী, জীবনের আনন্দগান। সেই পথের পথিকও হল চিরশিশু মন, উদাসী জীবন। তাই গ্রন্থের উপসংহার ভাগে নিশ্চিন্দিপুরের স্বপ্নবিভোর অপু যখন সেখানে ফিরে যাবার জন্য ঈশ্বরের কাছে ব্যাকুল প্রার্থনা জানায়, —তখন বিভূতিভূষণ বলেন,—“পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথতো আমার শেষ হয়নি,… পথ আমার চলে গেল সামনে, সামনে, শুধুই সামনে…দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে, সূর্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে…দিনরাত্রি পার হয়ে, জন্মমরণ পার হয়ে…মহাযুগ পার হয়ে চলে যায়…

সে পথের বিচিত্র আনন্দ যাত্রার অদৃশ্য তিলক তোমার ললাটে পরিয়েই তো তোমায় ঘরছাড়া করে এনেছি!…চল, এগিয়ে যাই।”

—এপথ অনন্ত জীবনের পরম আশ্বাসে ভরা আনন্দলোকের পথ। আর তারই যা ছন্দ, সুর ও গান—তাইতো পাঁচালী। এ পথের পাঁচালী তাই শুধু অপু, দুর্গা ও হরিহরের নয়, আমাদের প্রতি প্রত্যেকেরই।

বিভূতিভূষণের পরবর্তী সৃষ্টি ‘অপরাজিত’ একটি পৃথক উপন্যাস হয়েও কাহিনি ও ঘটনাসূত্রে পথের পাঁচালীরই উত্তরপর্ব। পথের পাঁচালীতে শিশু অপুর কৈশোরে পদার্পণ, আর অপরাজিত-তে কিশোর অপুর জীবনে পূর্ণতা অর্জন—একই জীবনধারার ঘটনাবহুল ক্রমবিকাশ । পথের পাঁচালী প্রকৃতিপ্রধান, অপরাজিত জীবনপ্রদান। তাই জীবন এখানে কথা ও কাহিনিতে গল্পরসে ভরপুর। পুত্র কাজলকে নিয়ে জীবনরসে ভরপুর অপুও।

‘অপরাজিত নামকরণের মাধ্যমে এ উপন্যাসে জীৱনশিল্পী বিভূতিভূষণেরজীবনদর্শনই প্রতিফলিত হয়েছে। দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগকে দলিত করে অপু পরিণত জীবনে খ্যাতিমান সাহিত্যিকরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই সে অপরাজিত—এই স্থূল অর্থে নয়, অপরাজিত নামকরণের অপর একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। উপন্যাসটির উপসংহার ভাগে আমরা তার পরিচয় পাই। অপু শিশু-কালকে নিয়ে গিয়েছে নিশ্চিন্দিপুরে, তার শৈশবের লীলাভূমিতে। এই সময় একদিন নির্জন দুপুরে আপনমনে ঘুরতে ঘুরতে নিজের অজ্ঞাতসারেই কাজল এসে পড়ে তার ‘বাপপিতামোর’ ভাঙা পুরানো বাস্তুভিটায়। সেই উদাসী বাউল দুপুরে কাজলের কেমন যেন মনে হল, ‘এক ঝলক হাওয়া যেন পাশের পোড়ো ঢিবিটার দিক হইতে অভিনন্দন বহন করিয়া আনিল—সঙ্গে সঙ্গে ভিটার মালিক ব্রজ চক্রবর্তী, ঠাঙারে বীরু রায়, ঠাকুর্দা হরিহর রায়, ঠাকুরমা সর্বজয়া, পিসিমা দুর্গা…

প্রসন্ন হাসিতে অভ্যর্থনা করিয়া বলিল—এই যে তুমি আমাদের হয়ে ফিরে এসেছ, আমাদের সকলের প্রতিনিধি যে আজ তুমি।”

আর এই প্রসঙ্গে লেখক বিভূতিভূষণের মন্তব্যে পাই—“যুগে যুগে অপরাজিত জীবন রহস্য কি অপূর্ব মহিমাতেই আবার আত্মপ্রকাশ করে।”—সুতরাং অপুর ব্যক্তিগত, জীবনসাফল্যকে নয়, যুগে যুগে হরিহর-অপু-কাজলের বংশানুক্রমিক স্মৃতিবাহী সত্তার অপার রহস্যময় আবির্ভাবকেই তিনি বলেছেন, –‘অপরাজিত’।

সুতরাং ‘পথের পাঁচালী’ এবং ‘অপরাজিত’ একই জীবনের দুটি রূপ—একটি স্বপ্নবিভোর রোমান্টিক, অপরটি কর্মমুখর রিয়ালিষ্টিক। একটি স্ফুটনোন্মুখ, অপরটি বিকশিত। একটির লীলাভূমি গ্রামবাংলার মাঠ, ঘাট, বনবাদাড়, নদীর ধার—অপরটির পটভূমি কর্মমুখর শহরের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভার। এই দুটি মহাকাব্য পরস্পরের পরিপূরকরূপে একটি জীবনেরই যেন আনন্দময় পূর্ণরূপ হয়ে উঠেছে। প্রসঙ্গতঃ ডক্টর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য মনে পড়ে—“পথের পাঁচালী ও অপরাজিত—দুই খণ্ড বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এই তিন খণ্ডে বিভক্ত উপন্যাস একটি কল্পনাপ্রবণ, অধ্যাত্মদৃষ্টিসম্পন্ন জীবনের ক্রমাভিব্যক্তির মহাকাব্য নামে অভিহিত হইতে পারে। ইহার মৌলিকতা ও সরস নবীনতা বঙ্গ-উপন্যাসের গতানুগতিশীলতার মধ্যে একটি বিস্ময়াবহ আবির্ভাব।”

‘আরণ্যক’ বিভূতিভূষণের এক অভিনব ও অনবদ্য সৃষ্টি। বাংলাদেশের বাইরের পটভূমি ও পরিবেশ, পাহাড় ঘেরা বনজঙ্গল ও গভীর অরণ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর তারই কোলে কোলে ‘বন্যরা বনে সুন্দর’—বাণীকে সার্থক করে সেখানকার আর্য-অনার্য জাতির সরল ও সাবলীল জীবনের বিচিত্র চরিত্রাবলীকে বিভূতিভূষণই বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম বিস্তৃতভাবে পরিবেশন করেন তাঁর আরণ্যক উপন্যাসে।

আরণ্যক উপন্যাসটির পরিকল্পনা ও পরিবেশিত জীবনরসও অভিনব। প্রকৃতির সৌন্দর্য রসিক বিভূতিভূষণ আরণ্যক জীবনের প্রাণস্পন্দন অনুভব করেছেন, রূপ রঙ ও রসের চিত্র এঁকেছেন এ উপন্যাসের নায়ক সত্যচরণের দৃষ্টিতে। বিহারের ভাগলপুর জেলার মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের সন্নিহিত ও দক্ষিণ অঞ্চলের মহালিখা, নাড়া লবটুলিয়া প্রভৃতি অঞ্চল এ উপন্যাসের পটভূমি। সেখানকার অরণ্য প্রকৃতি ও তার কোলের সন্তানরূপে পশু-পাখি, জীবজন্তু ও বিচিত্র মানুষ এ উপন্যাসের পাতায় পাতায় শ্রদ্ধা, মমত্ব ও প্রীতিরসে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। অরণ্যসঙ্কুল পথে পথে চলায় রোদ-পোড়া মাটির সোঁদা গন্ধ, শুকনো ঘাসের গন্ধ, বিচিত্র বনফুলের গন্ধ—সবটা মিলে এক মোহময় আবেদন বিভূতিভূষণের অন্তরে এক অননুভত সৌন্দর্যরস সৃষ্টি করেছে। এই পরিবেশেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন তার মনের মুক্তি ও প্রাণের তৃপ্তি—“মনের মধ্যে এই উন্মুক্ত বন্যজীবন আনিয়া দিয়াছে একটা মুক্তি ও আনন্দের অনুভূতি—যাহা কোথাও কখনও আসে না এই রকম বিরাট নির্জন প্রান্তর ও জনহীন অঞ্চল ছাড়া।”

শুধু প্রকৃতি নয়, প্রকৃতি আর মানুষের বিচিত্র জীবনের কলতানে মুখরিত আরণ্যক উপন্যাসে মানবজীবনও স্বাভাবিকতায় ঐ বনকুসুমের মতোই ফুটে ফুটে উঠেছে। সেখানে রয়েছে সরল বিশ্বাসী গণু মাহাতো, ধার্মিক রাজু পাঁড়ে, টোলের পণ্ডিত মটুকনাথ, গ্রাম্যকবি বেঙ্কটেশ্বর, সৌন্দর্যরসিক যুগলপ্রসাদ, নাটুয়া বালক ধাতুরিয়া, বাইজীর মেয়ে দুঃখিনী কুত্তামঞ্চী ও অনার্য রাজকন্যা ভানুমতী প্রমুখ নরনারী। শুধু প্রকৃতি ও মানুষেরই নয়, আর্য ও অনার্য জাতিরও এক পরম আশ্বাসভরা জীবনচিত্র রূপায়িত হয়েছে এই আরণ্যক উপন্যাসে।

আদিম অনার্য জাতির গৌরবদীপ্ত রাজবংশের শেষ প্রতিভূস্বরূপ ৯০/৯২ বছরের দোত্রু পান্না বীরবদ্দী, তার যুবক নাতি জগরুপান্না এবং কিশোরী নাতনি ভানুমতী—এদের প্রাণখোলা সারল্যে ও উদার আতিথেয়তায় মুগ্ধ বিভূতিভূষণের মনে হয়েছে যে, এরা সকলেই সাবলীল প্রাণের আলোয় ‘সুন্দর সরল, শুভ্র।’ শুধু প্রাণের আনন্দলীলাতেই নয়, তাদের পাথর কঁদে গড়া নিটোল দেহও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও প্রাণদীপ্ত।— 

জগরুপান্না—“যুবক যেন নবীন শালতরু, পেশীবহুল সবল নধর দেহ।” আর “রাজকন্যা ভানুমতী!… ভানুমতী নিটোল স্বাস্থ্যবতী, সুঠাম মেয়ে। লাবণ্যমাখা মুখশ্রী।”

লেখকের মতে পাঠকের স্মৃতিপটে এরা যেন আজও প্রাণের সজীবতায় ভেসে বেড়ায়। “—মনে হয়, কেমন আছে কুস্তা, কত বড় হইয়া উঠিয়াছে সুরতিয়া, মটুকনাথের টোল আজও আছে কিনা, ভানুমতী তাহাদের সেই শৈলবেষ্টিত অরণ্যভূমিতে কী করিতেছে।…কতকাল তাহাদের আর খবর রাখিনা।”

বন কেটে বসতি বিস্তারের সর্বনাশা কর্মযজ্ঞে একজন বেতনভুক কর্মচারীরূপে অংশগ্রহণ করেছিলেন এ উপন্যাসের সত্যচরণরূপী বিভূতিভূষণ। বাহ্যিক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সে কর্ম সম্পাদনে অরণ্যপ্রেমিক, সৌন্দর্যরসিক বিভূতিভূষণের যে অশ্রুঝরা বেদনা তাঁকে মর্মপীড়িত করে তুলেছিল,—তারই দীর্ঘশ্বাসরূপে যেন আজও আমরা শুনতে পাই;—

(ক) “ঘন বন কাটিয়া আমিই এই হাস্যদীপ্ত শস্যপূর্ণ অঞ্চলে জনপদ বসাইয়াছি ছয়-সাত বৎসরের মধ্যে। …নাঢ়া লবটুলিয়া কি ছিল, আর কি হইয়াছে।”

(খ) “দিগন্তলীন মহলিখারূপের পাহাড় ও মোহনপুরা অরণ্যানীর উদ্দেশ্যে দূর হইতে নমস্কার করিলাম। হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়। বিদায়।”

বিভূতিভূষণের দেবযান গ্রন্থখানি বাহ্যতঃ এক রোমান্টিক কল্পনার স্বপ্নলোক। জন্ম, মৃত্যু ও জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে বিশ্বাসী বিভূতিভূষণ ছিলেন অনন্ত কৌতূহলী। পথের পাঁচালীতে কিশোরী দুর্গার মৃত্যুভাবনা, দৃষ্টিপ্রদীপ উপন্যাসের নায়ক জিতু-র অতীন্দ্রিয় জগতের বিশ্বাসই যেন একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করেছে তাঁর দেবযান উপন্যাসে। Seven Sphere বা সপ্ত স্বর্গের রোমান্টিক কল্পনার স্বপ্নলোকের সঙ্গে বাস্তবজীবনের মর্তলোকের এক অপূর্ব সংযোগ সেতু-স্বরূপ দেবযান গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে আজও একক স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।

বাংলা সাহিত্যে অতিপ্রাকৃতের উপস্থাপনা সর্বপ্রথম পাই বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে, বিশেষ করে রজনী ও চন্দ্রশেখর উপন্যাসে। রবীন্দ্রনাথও এর ব্যবহার করেছেন চরিত্রের সংস্কারেও পরিবেশ রচনায়। তাঁর ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, নিশীথে, মণিহারা প্রভৃতি ছোটগল্প এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসে এর ব্যবহার পাই পরিবেশগত চিত্রেও অনুভবে। অস্পষ্ট পদধ্বনিতে পথসংকেত, এক মহাশ্মশান হতে আর এক মহাশ্মশানে উত্তরণ এবং নদীকূলে সেই মহাশ্মশানে রাত্রি নিশীথে শ্রীকান্তের ঘাড়ে ও কানের পাশে কার যেন তপ্ত নিঃশ্বাসে স্পর্শানুভূতি আমাদের যেন এক শ্বাসরোধ করা ভৌতিক জগতে উত্তীর্ণ করে। কিন্তু বিভূতিভূষণের মনন ও শিল্পে অতিপ্রাকৃত আর অতিপ্রাকৃত থাকেনি, তা তাঁর অধ্যাত্মচেতনাদীপ্ত বিশ্বাসে জগৎ ও জীবনের অতলগভীর রহস্যমোচনে ছিল চিরউৎসুক। তারই সন্ধানে সে কখন অরণ্যে গহন গভীর পথে প্রান্তরে, কখন কোলাহলমুখর জীবনের মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছে, আবার কখনও বা অতীন্দ্রিয় জগতের অলৌকিক বিশ্বাসে ডানা মেলেছে জীবন ও মরণের সীমানা ছাড়িয়ে লোকে, লোকান্তরে। সেই চেতনায় অতিপ্রাকৃত ও প্রাকৃত, লৌকিক ও অলৌকিক তাঁর মননে ও শিল্পে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। বিভূতিভূষণের দেবযান গ্রন্থখানি তাই এক নূতন জগৎ ও জীবনের আশ্বাসের বার্তাস্বরূপ—সেখানে ‘মৃত্যু উঠে প্রাণ হয়ে ঝলকে ঝলকে’।

ইছামতী বিভূতিভূষণের শেষ পর্বের উপন্যাস। নদীয়া, ২৪ পরগণা জেলার মধ্যে দিয়ে যে সরু এক ফালি নদী মন্দাক্রান্তা ছন্দে তার কাজলকালো জলে দু’পাশের জনপদ ও জনজীবনকে শ্যামল, সরস ও সজীব করে আজও বহমানা সেটিই হল নদী ইছামতী। বনগ্রাম থানার কিছু উত্তরে এরই পশ্চিমকূলে বিভূতিভূষণের পৈতৃক বাসস্থান, বারাকপুর গ্রাম তার শৈশবের লীলাভূমি! এই জনপদ ও জনজীবনের নিত্য বহমান জীবনধারা রূপায়িত হয়েছে এ উপন্যাসে। এই গ্রন্থের সূচনা অংশে এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন- …..কত সুখ-দুঃখের অলিখিত ইতিহাস বর্ষাকালে জলধারাঙ্কিত ক্ষীণ রেখার মত আঁকা হয় শতাব্দীতে শতাব্দীতে এদের বুকে। সূর্য আলো দেয়, হেমন্তের আকাশ শিশির বর্ষণ করে, জ্যোৎস্নাপক্ষের চাঁদ জ্যোৎস্না ঢালে এদের বুকে।”

—সেই সব বাণী সেই সব ইতিহাস আমাদের আসল জাতীয় ইতিহাস। মুক জনগণের ইতিহাস…..

বিভূতিভূষণের প্রথম উপন্যাস পথের পাঁচালীতে যে কৌলিন্য প্রথা রূপায়িত হয়েছে‘বল্লালী বালাই’ রূপে ইন্দির ঠাকরুণের জীবনে, তাই আবার তিনটি দশকের বৃত্তপরিধিতে এসে মিশেছে তিলু, বিলু ও নীলুর জীবনে। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের পটভূমিতে রচিত ইছামতী উপন্যাসে একইলগ্নে, একই ‘বর’ ভবানী বাঁড়ুজ্যের সঙ্গে তিলু-বিলু-নীলু-তিন বোনের বিয়ে হয়।

একটি বিশেষ জনপদের প্রকৃতি ও জনজীবন ধারা একটি যুগরেখায় ইছামতী উপন্যাসে বিকশিত হয়ে উঠেছে ভবানী বাঁড়ুজ্যে, তিলু ও নীলু পালদের জীবন ও উপলব্ধিকে আশ্রয় করে। তথাপি তারা এ উপন্যাসের মূল অবলম্বন, এমনকি ফলশ্রুতিও নয়। পরিবর্তনশীল ও চলমান জনজীবনের তারা মুহূর্তের পথিকমাত্র। ইছামতী উপন্যাসের উপসংহারে তাই লেখককে বলতে শুনি,—“…কত যাওয়া-আসার অতীত ইতিহাস-মাখানো ঐ সব মাঠ, ঐ সব নির্জন ভিটের ঢিপি—কত লুপ্ত হয়ে যাওয়া ওতে অদৃশ্য রেখায় আঁকা। আকাশের প্রথম তারাটি তার খবর রাখে হয়তো। 

ওদের সকলের সামনে দিয়ে ইছামতীর জলধারা চঞ্চলবেগে বয়ে চলে বড় লোনা গাঙের দিকে, সেখান থেকে মোহানা পেরিয়ে, রায়মঙ্গল পেরিয়ে, গঙ্গাসাগর পেরিয়ে মহা সমুদ্রের দিকে।”

দারিদ্র্যই যাঁর ঐশ্বর্য, চিরঔদাসীন্যই যাঁর বিভূতি, শিশুর সারল্যই যাঁর ভূষণ, অমৃতলোকের আনন্দপথের যিনি চিরপথিক,–সেই বিভূতিভূষণ রাজসিক স্বীকৃতি ও সম্মানের জয়তিলক লাভ করেছেন মরণোত্তর পর্বে। চলচ্চিত্রে সারা বিশ্বে অভিনন্দিত হয়েছে তাঁর পথের পাঁচালী। মরণোত্তর ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ তাঁর প্রতি উৎসর্গীকৃত হয়েছে ইছামতী উপন্যাস রচনার উৎকর্ষে।

জনসংখ্যার বিচারে বিভূতিভূষণের উপন্যাসের জগৎ বিপুল নয়। তিনি কোনো মহৎ জীবনকথা অঙ্কন করেননি, কোনো মহান আদর্শের কথাও বলেননি। পরিপূর্ণতার অমিয় আশ্বাসে,প্রীতিবিনম্র জীবনরসে তিনি পল্লীপ্রকৃতির ও সাধারণ মানবজীবনের স্নেহমধুর জীবনচিত্র এঁকেছেন। তাঁর পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও আরণ্যক যেন উদাসী বাউলের একতারার একটি তারেই বাঁধা। এদিক থেকে বিভূতিভূষণের এই উপন্যাসত্রয়ী বাংলা সাহিত্যের এক অসাধারণ ও অনবদ্য ‘ট্রিলজি’।

টীকা –

মার্কো পোলো — মার্কো পোলো একজন ভেনিসিয় পর্যটক এবং বণিক (১৫ সেপ্টেম্বর ১২৫৪–৮ জানুয়ারী ১৩২৪)। পশ্চিমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সিল্করোড পাড়ি দিয়ে চীন দেশে এসে পৌঁছান। ইউরোপীয়দের কাছে চীনের তৎকালীন নাম ছিল ক্যাথে। তিনিই সর্বপ্রথম ইউরোপীয় হিসেবে মঙ্গোলদের সাম্রাজ্যে পদার্পণকারীদের অন্যতম। মার্কো পোলোর বই “লিভ্রে দেস মারলেস দ্য মন্ডে” সমগ্র ইউরোপের কাছে এশিয়া ও চায়নার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মার্কো পোলোর ভ্রমণসঙ্গী ছিল তার পিতা নিক্কোলো এবং কাকা মাফ্টেও।

মার্কো পোলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত বইটি পড়েই ইউরোপের মানুষ চীন, মধ্য এশিয়া সম্পর্কে জানতে পারে। তাদের জন্য এক নতুন দ্বার উন্মোচন হয়। মার্কো পোলোর যখন ভ্রমণ শুরু হয় তখন তার বয়স ৬ বছর। তার বাবা নিকোল পোলো এবং কাকা, মাফফেও পোলো বণিক ছিলেন। তাদের ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র ছিল কনস্ট্যান্টিনোপল। ব্যবসার কাজে একবার ক্রিমিয়ায় গেলেন। সেখান থেকে বখরায়ে। এখানে তাদের দেখা হল কুবলাই খানের সেনাদল-এর সাথে। সেনাদূত তাদের কুবলাই খানের দরবারে আমন্ত্রণ জানালেন।

১৩২৩ সালে মার্কো পোলো অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী হন, শয্যাশায়ী অবস্থায় নিজের সম্পত্তি স্ত্রী, তিন মেয়ে, চার্চ এবং আরো কিছু ধর্মীয় সংগঠনের নামে উইল করেন। মার্কো পোলোর মৃত্যুর সঠিক দিন তারিখ জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে ১৩২৪ সালের ৮ কিংবা ৯ জানুয়ারী তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আর্নেস্ট শ্যাকলটন — পুরো নাম স্যার আর্নেস্ট হেনরী শ্যাকলটন, তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভ্রমণপিপাসু। শ্যাকলটন অ্যান্টার্কটিকায় তিনবার অভিযান করেছিলেন। শ্যাকলটন জন্মগ্রহণ করেছেন ১৮৭৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী আয়ারল্যান্ডের কিলকিয়াতে। মৃত্যু ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারী দক্ষিণ জর্জিয়ায়।

শ্যাকলটন পেশায় ছিলেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার এবং অ্যান্টার্কটিকার অন্বেষণকারী ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম এমিলি ডোরম্যান। শ্যাকলটন রয়াল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি অফ অন্তরীপ থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। এছাড়াও বস্টন মেডেল ও ভেগা মেডেল পেয়েছিলেন।

হেনরি হাডসন — হেনরি হাডসন ছিলেন একজন ইংরেজ সমুদ্র অভিযানকারী ও অভিযাত্রী। হাডসন ইংল্যান্ডে ১৫৬৫ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৬১১ খ্রি. তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি সপ্তদশ শতাব্দীতে কানাডা এবং উত্তরপূর্ব আমেরিকা অভিযান করেন।

হ্যারি জনস্টন — পুরো নাম স্যার হেনরি হ্যামিলটন জনস্টন। জনস্টন ১৮৫৮ খ্রি. ১১ জুন দক্ষিণ লন্ডনের কেনিংটন পার্ক নামক স্থানে জন্মেছিলেন। তাঁর পিতা মাতার নাম ছিল জন ব্রুকারস জনস্টন এবং এসথার লেইটিটিয়া হ্যামিলটন। জনস্টন ছিলেন ব্রিটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী, ভাষাতাত্ত্বিক এবং অভিযাত্রী। তিনি আফ্রিকা মহাদেশের অভ্যন্তরে সফল অভিযান করেন। জনস্টন অনেক আফ্রিকান ভাষা জানতেন। আফ্রিকার উপরে প্রায় ৪০টি বই প্রকাশ করেন। জনস্টন ১৯২৭ সালের ৩১ জুলাই মারা যান।

ব্যাকরণ

সমাস নির্ণয়-

১। বন্যজন্তু অধ্যুষিত — (বন্য জন্তুর দ্বারা অধ্যুষিত) তৃতীয়া তৎপুরুষ।

কুম্ভকার — (কুম্ভকারক যে) উপপদ তৎপুরুষ। 

প্রস্তরাকীর্ণ — (প্রস্তর দ্বারা আকীর্ণ) তৃতীয় তৎপুরুষ। 

জীবজন্তু — (জীব ও জন্তু) দ্বন্দ্ব সমাস।

বৃক্ষলতা — (বৃক্ষ ও লতা) দ্বন্দ্ব, (বৃক্ষের লতা) ষষ্ঠী তৎপুরুষ। 

রোদপোড়া — (রোদেতে পোড়া) সপ্তমী তৎপুরুষ, (রোদ দ্বারা পোড়া) তৃতীয়া তৎপুরুষ। 

প্রস্তরস্তম্ভের — (প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভ, তার) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।

পাহাড় জঙ্গল — (পাহাড় ও জঙ্গল) দ্বন্দ্ব।

২। সন্ধিবিচ্ছেদ –

প্রস্তরাকীর্ণ — প্রস্তর + আকীর্ণ। 

বনস্পতি — বনঃ + পতি।

দীর্ঘায়ত — দীর্ঘ + আয়ত। 

সিংহাসন — সিংহ + আসন।

আহারাদি — আহার + আদি।

দুর্জয় — দুঃ + জয়।

অদ্যাপি — অদ্য + অপি।

৩। পদান্তর –

নির্জন — নির্জনতা। 

বন — বুনো।

বিচিত্র — বৈচিত্র্য, বিচিত্রতা।

বিস্তৃত — বিস্তার।

আদেশ — আদিষ্ট। 

পার্বত্য — পর্বত। 

সংক্ষেপ — সংক্ষিপ্ত। 

নৈশ — নিশা।

শোভা — শোভিত। 

লতা — লতানে। 

অনুভূতি — অনুভূত। 

উল্লাস — উল্লসিত।

গরীব — গরীবী। 

উপযুক্ত — উপযুক্ততা। 

পরিষ্কার — পরিষ্কৃত। 

অনুচ্চ — অনুচ্চতা।

অরণ্য — আরণ্য। 

অভিজাত — আভিজাত্য। 

দরিদ্র — দারিদ্র্য। 

গর্ব — গর্বিত।

শাসিত — শাসন। 

প্রাচীন — প্রাচীনত্ব। 

অবহেলিত — অবহেলা। 

প্রদর্শিত — প্রদর্শন।

আর্দ্র — আর্দ্রতা। 

প্রদান — প্রদেয়। 

বৃক্ষ — বৃক্ষী। 

অরণ্য — আরণ্যক। 

ক্ষয় — ক্ষীণ।

অবশিষ্ট — অবশেষ।

শ্রবণ — শ্রুত।

৪। বিপরীতার্থক শব্দ।

আবির্ভূত — তিরোহিত। 

অনুগ্রহ — নিগ্রহ। 

অসমৰ্থ — সমর্থ। 

প্রকৃতিস্থ — অপ্রকৃতিস্থ।

অপরিশুদ্ধ — পরিশুদ্ধ। 

পবিত্র — অপবিত্র। 

সঞ্চয় — ব্যয়। 

পাণ্ডিত্য — মূৰ্খতা। 

প্রবৃত্ত — নিবৃত্ত।

কনিষ্ঠ — জ্যেষ্ঠ।

গমন — আগমন।

সাদৃশ্য — বৈসাদৃশ্য।

বার্ধক্যে — যৌবনে। 

রাগ — অনুরাগ।

বিশ্বাস — অবিশ্বাস। 

আরম্ভ — শেষ।

সক্ষম — অক্ষম।

৫। নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করো।

(ক) যতীন্দ্রনাথয — তীন্ – দ্ৰ – নাথ – চারটি দল।

(খ) চঞ্চলা — চঞ্চ – চ – লা – তিনটি দল।

(গ) ব্যাকরণ — ব্যা – ক – রণ – তিনটি দল।

(ঘ) অভিধান — অ – ভি – ধান – তিনটি দল।

(ঙ) অলৌকিক — অ – লৌ – কিক – তিনটি দল।

(চ) মহাবিদ্যালয় — ম – হা – বি – দ্যা – লয় – পাঁচটি দল।

(ছ) প্রশংসা — প্র-শং-সা–তিনটি দল।

(জ) অভিনন্দন — অ – ভি – নন্ – দন্ – চারটি দল।

(ঝ) বসুমতী — ব – সু – ম – তী – চারটি দল।

(ঞ) বিদ্যাসাগর — বি – দ্যা – সা – গর – চারটি দল।

(ট) মৌমাছি — মৌ – মা – ছি – তিনটি দল।

(ঠ) ছান্দসিক — ছান – দ – সিক – তিনটি দল।

৬। উদাহরণ দাও।

(ক) ধ্বনি বিপর্যাস—

বাতাসা > বাসাতা। 

বাক্স > বাস্ক।

(খ) অভিশ্রুতি—

পটুয়া > পউটা > পোটো। 

রাখিয়া > রাইখ্যা > রেখে।

(গ) ব্যঞ্জনলোপ— 

ছোটোকাকা > ছোট্‌কা। 

বড়োদিদি > বড়দি।

(ঘ) অপিনিহিতি—

বানিয়া > বাইন্যা। 

আশু > আউস।

(ঙ) স্বরভক্তি—

হর্ষ> হরষ। 

স্নান > সিনান। 

কর্ম > করম।

(চ) স্বর সংগতি— 

বিকাল > বিকেল। 

ভিক্ষা > ভিক্ষে।

উনুন > উনান।

নৌকো > নৌকা। 

শিখে > শেখে।

শিয়াল > শেয়াল।

(ছ) সমীভবন—

রাঁধনা > রান্না। 

উৎলেখ > উল্লেখ। 

শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ।

গল্প > গল্প। 

পদ্ম > পদ্দ। 

কুৎসিত > কুচ্ছিত।

৭। কারক বিভক্তি—

(ক) বন্দনা করেন অত্রিমুনির চরণ — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

(খ) এক পিতা হইতে সবার উৎপত্তি — হইতে উপসর্গ যোগে অপাদান কারক।

(গ) আমিনা চল আমরা যাই — সম্বোধন পদে শূন্য বিভক্তি।

(ঘ) মাটিরে আমি যে বড়ো ভালোবাসি — কর্মকারকে রে বিভক্তি।

(ঙ) গন্ডারের শৃঙ্গে গড়া কোশা কোশী ভরা — করণকারকে এ বিভক্তি।

(চ) সমস্ত রাত্রি এই দাবানল জ্বলিয়াছিল — অধিকরণে শূন্য বিভক্তি।

(ছ) আমি রেলগাড়ি দেখব বাবা — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

(জ) মেবারের পাহাড় লজ্জায় মুখ ঢাকছে — করণ কারকে য় বিভক্তি।

(ঝ) এই নাও তরবাবি — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

(ঞ) আর পথ পাইলেন না — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

৮। কোনটি কী সর্বনাম বিচার করো।

(ক) ইনি একজন অভিনেতা — ব্যক্তিবাচক সর্বনাম।

(খ) কেউ হয়তো লোকটাকে ডেকেছে — অনির্দেশক সর্বনাম।

(গ) আমরা সকলেহ খেলতে যাচ্ছি — সমষ্টিবাচক সর্বনাম।

(ঘ) সে নিজে নিজেই কাজটি করছে — আত্মবাচক।

(ঙ) যে যাবে সে কই? — পারস্পরিক সর্বনাম।

(চ) কেউ কেউ ভিন্ন মতাবলম্বী — যৌগিক বা মিশ্র অনির্দেশক সর্বনাম।

(ছ) এগুলি এখানেই পড়ে থাকে — নির্দেশক সর্বনাম।

(জ) কে এমন কাজ করলে? — প্রশ্নবোধক সর্বনাম।

(ঝ) ওটা রেখে দাও কাজে লাগবে — পরোক্ষ নির্দেশক সর্বনাম।

(ঞ) এখানে সবাই তো ভালো — সমষ্টিবাচক সর্বনাম।

(ট) কেউ হয়তো বলেছে — অনির্দেশক সর্বনাম।

(ঠ) আপনাআপনি করেছি এ কাজ — পারস্পরিক সর্বনাম।

(ড) আমি নিজেই যাচ্ছি — আত্মবাচক সর্বনাম।

(ঢ) রহিমকে সবাই ভালোবাসে — সমষ্টিবাচক সর্বনাম।

(ণ) তুমি কে? — প্রশ্নবোধক সর্বনাম।

(ত) যে সহে সে রহে — সাপেক্ষ/পারস্পরিক সর্বনাম।

(থ) তবুও এই গাঁও রহিয়াছে চেয়ে — প্রত্যক্ষ নির্দেশক সর্বনাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top