Class 12 History Chapter 16 সংবিধান প্রণয়ন Question Answer In Bengali Medium| AHSEC Class 12 History Question Answer in Bengali Medium to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class Class 12 History Chapter 16 সংবিধান প্রণয়ন Notes in Bengali Medium and select needs one.
Class 12 History Chapter 16 সংবিধান প্রণয়ন
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 History Chapter 16 সংবিধান প্রণয়ন Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 12 History Chapter 16 সংবিধান প্রণয়ন These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 History Chapter 16 সংবিধান প্রণয়ন Solutions for All Subjects, You can practice these here.
সংবিধান প্রণয়ন
তৃতীয় খণ্ড
Chapter: 16
HISTORY
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধান রচনাকারী সংস্থার নাম কি?
উত্তরঃ গণ পরিষদ অথবা কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেম্বলী।
প্রশ্ন ২। গণ পরিষদ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ৩। গণ পরিষদের সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ।
প্রশ্ন ৪। গণ পরিষদের খসড়া কমিটির সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তরঃ ডঃ আম্বেদকার।
প্রশ্ন ৫। ভারতের সংবিধান কখন বলবৎ হয়?
উত্তরঃ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি।
প্রশ্ন ৬। ভারতের সংবিধানে কয়টি অধ্যায় আছে?
উত্তরঃ ২২টি।
প্রশ্ন ৭। ভারতের সংবিধানে কয়টি অনুসূচী (তপশীল) আছে?
উত্তরঃ ১২টি।
প্রশ্ন ৮। প্রস্তাবনা সংবিধানের অংশবিশেষ কি?
উত্তরঃ না।
প্রশ্ন ৯। ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন কখন প্রণয়ন করা হয়?
উত্তরঃ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ১০। বর্তমান সংবিধানে কয়টি মৌলিক অধিকার আছে?
উত্তরঃ ছয়টি।
প্রশ্ন ১১। সংবিধানের কোন্ অধ্যায়ে মৌলিক অধিকার সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে?
উত্তরঃ তৃতীয় অধ্যায়ে।
প্রশ্ন ১২। মৌলিক অধিকারগুলির অভিভাবক কে?
উত্তরঃ সুপ্রীম কোর্ট।
প্রশ্ন ১৩। সংবিধানের কোন্ সংশোধনী সম্পত্তির অধিকার মৌলিক অধিকার হতে বাতিল করে?
উত্তরঃ ৪৪তম সংশোধনী।
প্রশ্ন ১৪। সংবিধানের প্রদত্ত ভারতীয় নাগরিকদের কয়টি মৌলিক কর্তব্য আছে?
উত্তরঃ ১০টি।
প্রশ্ন ১৫। এমন একটি মৌলিক অধিকার উল্লেখ কর যা ভারতীয় নাগরিক ও বিদেশি উভয়েই ভোগ করতে পারে।
উত্তরঃ ধর্মের অধিকার।
প্রশ্ন ১৬। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:
(ক) ভারতবর্ষের সংবিধান __________ দ্বারা গৃহীত হয়েছিল।
উত্তরঃ গণ পরিষদ।
(খ) গণ পরিষদ __________ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল।
উত্তরঃ ১৯৪৬।
(গ) __________ গণ পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
উত্তরঃ ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ।
(ঘ) __________ গণ পরিষদের খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন।
উত্তরঃ ডঃ আম্বেদকর।
(ঙ) __________ তারিখে ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হয়।
উত্তরঃ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর।
(চ) __________ তারিখে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়।
উত্তরঃ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি।
(ছ) ভারতীয় সংবিধানে __________ টি অনুসূচী আছে।
উত্তরঃ ১২।
(জ) ভারতীয় সংবিধানে __________ টি অধ্যায় আছে।
উত্তরঃ ২২।
(ঝ) __________ সংসদ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন প্রণয়ন করেছিলেন।
উত্তরঃ ব্রিটিশ।
(ঞ) ভারতীয় সংবিধান পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক __________ লিখিত সংবিধান।
উত্তরঃ বৃহৎ।
(ট) প্রস্তাবনা সংবিধানের __________ নয়।
উত্তরঃ অংশ।
(ঠ) ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম, সমাজবাদী, ধর্ম নিরপেক্ষ এবং __________ প্রজাতন্ত্র।
উত্তরঃ গণতান্ত্রিক৷
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গণ পরিষদের খসড়া কমিটির যে-কোন দুইজন সদস্যের নাম লেখ।
উত্তরঃ গণ পরিষদের খসড়া কমিটির দুইজন সদস্য হলেন—
(ক) গোপাল স্বামী আয়েঙ্গার। এবং
(খ) কে. এম. মুন্সী।
প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে সন্নিবিষ্ট করা দুটি আদর্শ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে সন্নিবিষ্ট করা দুটি আদর্শ হল—
(ক) ন্যায়। এবং
(খ) সমতা।
প্রশ্ন ৩। ৪২তম সংবিধান সংশোধন দ্বারা সংবিধানের প্রস্তাবনাতে বিধিবদ্ধ করা দুটি শব্দ লেখ।
উত্তরঃ ৪২তম সংবিধান সংশোধন দ্বারা সংবিধানের প্রস্তাবনাতে বিধিবদ্ধ করা শব্দ হল—
(ক)সমাজতান্ত্রিক। এবং
(খ) ধর্মনিরপেক্ষ।
প্রশ্ন ৪। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোন দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(ক) ভারতীয় সংবিধান দীর্ঘতম।
(খ) ভারতীয় সংবিধানের একটি প্রস্তাবনা আছে।
প্রশ্ন ৫। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোন দুটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(ক) ভারতীয় সংবিধান লিখিত সংবিধান।
(খ) ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ব্যবস্থা আছে।
প্রশ্ন ৬। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোন দুটি এককেন্দ্রীয় বা অযুক্তরাষ্ট্রীয় বা একাত্মক বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের দুটি এককেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(ক) ক্ষমতা বণ্টনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রাধান্য।
(খ) এক নাগরিকত্ব।
প্রশ্ন ৭। ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের দুটি পদ্ধতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের দুটি পদ্ধতি নিম্নরূপ:
(ক) জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জন।
(খ) নথিভুক্ত পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব অর্জন।
প্রশ্ন ৮। ভারতীয় নাগরিকত্বহানির দুটি কারণ লেখ।
উত্তরঃ ভারতীয় নাগরিকত্বহানির দুটি কারণ নিম্নরূপ:
(ক) কোন ভারতীয় নাগরিক অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে।
(খ) কোন ভারতীয় মহিলা বিদেশিকে বিবাহ করলে।
প্রশ্ন ৯। নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(ক) মৌলিক অধিকার শাশ্বত নয়।
(খ) জরুরীকালীন অবস্থায় মৌলিক অধিকার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
প্রশ্ন ১০। ভারতীয় নাগরিকের যে-কোন দুটি মৌলিক অধিকারের নাম লেখ।
উত্তরঃ ভারতীয় নাগরিকের দুটি মৌলিক অধিকার হল —
(ক) সমতার অধিকার। এবং
(খ) স্বাধীনতার অধিকার।
প্রশ্ন ১১। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত যে-কোন দুই প্রকার স্বাধীনতার অধিকার লেখ।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত দুই প্রকার স্বাধীনতার অধিকার নিম্নরূপ:
(ক) বাক্-স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।
(খ) নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার স্বাধীনতা।
প্রশ্ন ১২। মৌলিক অধিকারের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখ।
উত্তরঃ মৌলিক অধিকারের দুটি সীমাবদ্ধতা নিম্নরূপ:
(ক) মৌলিক অধিকার সংশোধনযোগ্য।
(খ) জরুরিকালীন অবস্থায় মৌলিক অধিকার সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকে।
প্রশ্ন ১৩। ভারতীয় নাগরিকদের যে-কোন দুটি মৌলিক কর্তব্য লেখ।
উত্তরঃ ভারতীয় নাগরিকদের দুটি মৌলিক কর্তব্য নিম্নরূপ:
(ক) সংবিধান মান্য করা; সংবিধানের আদর্শ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।
(খ) যে সকল মহান আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল তা পালন করা।
প্রশ্ন ১৪। রাষ্ট্র পরিচালনার যে-কোন দুইটি নির্দেশাত্মক নীতি উল্লেখ কর।
অথবা,
যে-কোন দুই প্রকার সমাজতান্ত্রিক বা অর্থনৈতিক নির্দেশাত্মক নীতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ রাষ্ট্র পরিচালনার দুটি নির্দেশাত্মক নীতি নিম্নরূপ:
(ক) জীবিকা অর্জনের যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করা।
(খ) সমান কাজের জন্য সমান পারিশ্রমিক প্রদান।
প্রশ্ন ১৫। যে-কোন দুই প্রকার গান্ধীবাদী নির্দেশাত্মক নীতি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ দুই প্রকার গান্ধীবাদী নির্দেশাত্মক নীতি নিম্নরূপ:
(ক) গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েতরাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন।
(খ) কুটির শিল্পের উন্নয়ন।
প্রশ্ন ১৬। রাষ্ট্রের নির্দেশক নীতির অন্তর্গত আন্তঃরাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্নিবিষ্ট দুটি নীতি লেখ।
উত্তরঃ রাষ্ট্রের নির্দেশক নীতির অন্তর্গত অন্তঃরাষ্ট্রীয় নীতিতে সন্নিবিষ্ট দুটি নীতি নিম্নরূপ:
(ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(খ) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা।
প্রশ্ন ১৭। মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ।
উত্তরঃ মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপ:
(ক) মৌলিক অধিকার কার্যকরী করতে সরকার বাধ্য; কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতি কার্যকর করতে সরকার বাধ্য নন।
(খ) মৌলিক অধিকারগুলি বিচারযোগ্য, কিন্তু নির্দেশাত্মক নীতি বিচারযোগ্য নয়।
প্রশ্ন ১৮। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুই প্রকারের স্বাধীনতা/স্বতন্ত্রতা উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুই প্রকার স্বাধীনতা/স্বতন্ত্রতা হল—
(ক) চিন্তা ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতা। এবং
(খ) ধর্মের স্বাধীনতা।
প্রশ্ন ১৯। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুই প্রকারের সমতার উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুই প্রকার সমতা হল—
(ক) সমান মর্যাদা। এবং
(খ) সমান সুযোগ।
প্রশ্ন ২০। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুই প্রকার ন্যায় উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সন্নিবিষ্ট দুই প্রকার ন্যায় হল—
(ক) সামাজিক ন্যায়। এবং
(খ) রাজনৈতিক ন্যায়।
প্রশ্ন ২১। লোকগণনাকারী আধিকারিকরা তথ্য সংগ্রহ ও শ্রেণীবিভাগ করতে সম্মুখীন হওয়া যে-কোন দুটি সমস্যার বিষয়ে লেখ।
উত্তরঃ লোকগণনাকারী আধিকারিকরা তথ্য সংগ্রহ ও শ্রেণীবিভাগ করতে সম্মুখীন হওয়া দুটি সমস্যা হল—
(ক) জনগণ সাধারণত আধিকারিকদের সঙ্গে সহযোগিতা ও শুদ্ধ উত্তর দিতে অস্বীকার করে। ও
(খ) জনগণ বিশ্বাস করে যে নুতন কর আরোপের জন্য আধিকারিকরা অনুসন্ধান কার্য করছে। এজন্য তারা প্রকৃত তথ্যাদি প্রদান করত না।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। গণ পরিষদের গঠন বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
অথবা,
গণ পরিষদ কিভাবে গঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই মে ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনার মধ্যে গণ পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়। গণ পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৮৯ জন। এর মধ্যে ৯৩টি আসন দেশীয় রাজ্যের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই সদস্যগণ দেশীয় রাজা কর্তৃক মনোনীত হতেন। বাকি ২৯৬ জন সদস্য বিভিন্ন প্রদেশ হতে প্রদেশের আইনসভা কর্তৃক নির্বাচিত হয়। গণ পরিষদের সভাপতি নিযুক্ত হন ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ। তাছাড়া ডঃ আম্বেদকরের সভাপতিত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া কমিটিও গঠন করা হয়।
প্রশ্ন ২। গণ পরিষদ বা সংবিধান সভা বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
অথবা,
সংবিধানের খসড়া সমিতি গঠন সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই মে স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার জন্য গণ পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গণ পরিষদের নির্বাচন ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয় এবং মোট ৩৮৯ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ গণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ডঃ আম্বেদকরের সভাপতিত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। খসড়া কমিটি সংবিধান রচনা করে যা ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর গণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি সংবিধান কার্যকর হয়। এই কারণে ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
প্রশ্ন ৩। সংবিধানের প্রস্তাবনা বলতে কি বোঝ?
উত্তরঃ প্রস্তাবনার অর্থ হল ভূমিকা বা মুখবন্ধ। প্রত্যেক সংবিধানের একটি নিজস্ব দার্শনিক ভিত্তি থাকে। প্রস্তাবনার সাহায্যে সংবিধানের ক্ষমতার উৎস এবং সংবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়। সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি বলতে বোঝায় সেই রাজনৈতিক আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যা সংবিধান প্রণেতাগণকে নতুন সমাজ ও রাষ্ট্রের রূপরেখা অঙ্কন করতে অনুপ্রেরণা দেয়। প্রস্তাবনায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটে।
প্রশ্ন ৪। প্রস্তাবনার আবশ্যকতা কি?
অথবা,
প্রস্তাবনার গুরুত্ব বা তাৎপর্য কি?
অথবা,
ভারতবর্ষের সংবিধানে প্রস্তাবনার গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তরঃ প্রস্তাবনার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। প্রস্তাবনাকে সংবিধানের কার্যকরী অংশের সঙ্গে সমান মর্যাদায় ভূষিত করা সম্ভব না হলেও এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। প্রস্তাবনায় সংবিধানের আদর্শের প্রতিফলন ঘটে। প্রস্তাবনার প্রধান কার্য হল সংবিধান কর্তৃক শাসন কর্তৃপক্ষ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের উপরে প্রদত্ত ক্ষমতাগুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা। সংবিধানের কোন অংশের অভিপ্রায় সম্পর্কে যদি কখনও কোন সংশয় জাগে, তাহলে বিচারপতিগণ প্রস্তাবনায় বর্ণিত উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে সংবিধান ব্যাখ্যা করেন।
প্রশ্ন ৫। “আমরা ভারতীয় জনগণ।” ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথমেই ‘আমরা ভারতীয় জনগণ’ উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হল জনগণ প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকারী।
নবগঠিত ভারত রাষ্ট্রের ক্ষমতার কথার নিম্নোক্ত তিনটি অর্থ আছে:
(ক) সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের উপর ন্যস্ত।
(খ) সংবিধান প্রণেতাগণ জনসাধারণের প্রকৃত প্রতিনিধি। এবং
(গ) সংবিধান জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সংবিধানের উৎস হল ভারতীয় জনগণ।
প্রশ্ন ৬। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার চারটি নীতি বা আদর্শ উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় কতকগুলি আদর্শের কথা বর্ণিত আছে।
এর চারটি নীতি বা আদর্শ নিম্নরূপ:
(ক) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় বিচার।
(খ) চিন্তার, মতামত প্রকাশের, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা।
(গ) ব্যক্তিসত্ত্বার স্বীকৃতি ও সুযোগের বিষয়ে সমতা লাভ। এবং
(ঘ) ব্যক্তির মর্যাদা ও রাষ্ট্রে ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ভাব বর্ধিত করা।
প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোন চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। এইগুলি নিম্নরূপঃ
(ক) ভারতের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান।
(খ) ভারতের সংবিধান পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সংবিধান।
(গ) ভারতের সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা আছে যা ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করেছে।
(ঘ) ভারতের সংবিধানের কতকাংশ নমনীয় এবং কতকাংশ অনমনীয়।
(ঙ) ভারতের সংবিধান নাগরিকদের জন্য কতকগুলি মৌলিক অধিকার ও মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ করেছে।
(চ) ভারতের সংবিধানে কতকগুলি নির্দেশাত্মক নীতির উল্লেখ আছে। অধিকন্তু ভারতের সংবিধান ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্র, এক নাগরিকত্ব, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রভৃতির ব্যবস্থা করেছে।
প্রশ্ন ৮। মৌলিক অধিকার কি কি?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় (১২-৩৫ ধারায়) নাগরিকদের জন্য কতকগুলি অধিকার আইনসিদ্ধ করা হয়েছে। এইগুলিকে মৌলিক অধিকার বলা হয়। এই অধিকারগুলি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এই অধিকারগুলিকে মৌলিক বলা হয়, কারণ সংবিধান এইগুলিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছে। জনসাধারণের এই অধিকারগুলিকে কেউই অমান্য করতে পারে না। কেউ এই অধিকার অমান্য করলে এই বিষয়ের নির্দিষ্ট ব্যবস্থাও সংবিধানে গৃহীত আছে।
প্রশ্ন ৯। ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলি উল্লেখ কর।
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২ হতে ৩৫ ধারায় সন্নিবিষ্ট ছয়টি মৌলিক অধিকারগুলি নিম্নরূপ:
(ক) সাম্যের অধিকার (১৪–১৮ ধারা)।
(খ) স্বাধীনতার অধিকার (১৯–২২ ধারা)।
(গ) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (২৩/২৪ ধারা)।
(ঘ) ধর্মের স্বাধীনতা (২৫-২৮ ধারা)।
(ঙ) সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার (২৯/৩০ ধারা)।
(চ) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার (৩২ ধারা)।
প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতির বিষয়ে আলোচনা কর।
অথবা,
রাষ্ট্রের নির্দেশাত্মক নীতির বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে কতকগুলি নির্দেশাত্মক নীতিরও উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ের ৩৬ হতে ৫১ ধারা পর্যন্ত এই নীতিগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নির্দেশাত্মক নীতিগুলি মৌলিক অধিকারের মতো আদালতে বলবৎযোগ্য নয়। এইগুলি বাধ্যতামূলকও নয়। ভারতকে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করাই এই নীতিগুলির প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতিটি নাগরিক যাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, ন্যায়সঙ্গত অধিকার ভোগ করতে পারেন, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে এই নীতিগুলি প্রণয়ন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ অবৈতনিক শিক্ষা, বেকার সমস্যার সমাধান, বার্ধক্য ভাতা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতের সংবিধান কখন এবং কিভাবে প্রণয়ন করা হয় আলোচনা কর।
অথবা,
গণ পরিষদের গঠন ও কার্যাবলী সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা,
গণ পরিষদ বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
উত্তরঃ ভারতের সংবিধান একটি সভা বা গণ পরিষদ কর্তৃক রচিত হয় ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা অনুযায়ী। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে এই গণ পরিষদ গঠিত হয়। গণ পরিষদ মোট ৩৮৯ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে ৯৩টি আসন রাজন্যবর্গের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক আইন সভার প্রতিনিধিগণ দ্বারা ২৯৬ জন্য সদস্য ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে নির্বাচিত হন। প্রত্যেক দশ লক্ষ জনসংখ্যায় একজন প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ৯৩ জন সদস্য দেশীয় রাজ্যগুলির রাজা কর্তৃক মনোনীত। নির্বাচনে কংগ্রেস ২১১টি আসনে এবং মুসলিম লীগ ৭৩টি আসনে জয়লাভ করে। সমগ্র ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনা করাই ছিল গণ পরিষদের মূল লক্ষ্য।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ই ডিসেম্বর গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। ১১ই ডিসেম্বর ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ গণ পরিষদের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় অধিবেশন বসে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জানুয়ারি। এই অধিবেশনে সভার কার্য পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি, সংখ্যালঘু সম্পর্কিত কমিটি এবং ইউনিয়ন ক্ষমতা সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়। গণ পরিষদের তৃতীয় অধিবেশন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে এপ্রিল বসে এবং তা সংবিধান রচনায় মনোনিবেশ করে। চতুর্থ অধিবেশন আরম্ভ হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই। ইউনিয়ন ও প্রাদেশিক কমিটির প্রস্তাব পেশ করা হয়। গণ পরিষদে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জুলাই ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা গৃহীত হয়। পঞ্চম অধিবেশন আরম্ভ হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই আগস্ট। এই অধিবেশনে ডঃ আম্বেদকরের সভাপতিত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। খসড়া কমিটি খসড়া সংবিধান রচনা আরম্ভ করে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর গণ পরিষদে খসড়া সংবিধান গৃহীত হয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়।
প্রশ্ন ২। উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাবসমূহ কি ছিল সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ‘উদ্দেশ্য- সম্পর্কিত প্রস্তাব’ (Objective Resolution) উত্থাপন করেন। তিনি একে ভারতের জনগণের পবিত্র প্রতিজ্ঞা (Solemn Pledge) বলে অভিহিত করেন যা সংবিধান প্রণয়নকালে অনুসরণ করা হবে। সংবিধানের দার্শনিক দিক এবং ভিত্তি এই ‘উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাব’ দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল। সংবিধান প্রণয়নের সময়ে সংবিধান প্রণেতাগণ ‘উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাব’ দৃষ্টিগোচরে রেখেছিলেন।
প্রস্তাবগুলি নিম্নরূপ:
(ক) গণ পরিষদ ভারতকে ‘স্বাধীন, সার্বভৌম, সাধারণতন্ত্র’ (Independent, Sovereign, Republic) বলে ঘোষণা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। [কিন্তু ‘স্বাধীন’ (Independent) শব্দটি পরে বর্জিত হয়। যুক্তি হিসাবে বলা হয় যে ‘সার্বভৌম (Sovereign) শব্দটির মধ্যে স্বাধীনতার তাৎপর্য নিহিত আছে, সুতরাং পুনর্বার উল্লেখের প্রয়োজন নেই।]
(খ) যেখানে সমগ্র ভূখণ্ড যা সমগ্র ব্রিটিশ-ভারত অন্তর্ভুক্ত করে এবং দেশীয় রাজ্যগুলি এবং অন্যান্য ভূখণ্ড যা স্বাধীন ভারতে অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক তাদের সকলকে নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত হবে।
(গ) যাতে উক্ত ভূখণ্ড এবং গণ পরিষদ নির্ধারিত অন্যান্য ভূখণ্ড এবং অবশিষ্ট ক্ষমতা (Residuary Power) সহ অন্যান্য সকল ক্ষমতা ভোগ করবে এবং স্বশাসিত অঙ্গের মর্যাদা পাবে।
(ঘ) যেখানে স্বাধীন সার্বভৌম ভারত ও এর অবশিষ্ট অংশ এবং সরকারের সকল অঙ্গ জনসাধারণের নিকট হতে ক্ষমতা অর্জন করবে।
(ঙ) যেখানে সকল জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়, সমতা, চিন্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত হবে।
(চ) যেখানে সংখ্যালঘু, পশ্চাৎপদ জাতি এবং উপজাতি এবং নিপীড়িত শ্রেণীর সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা থাকবে।
(ছ) যেখানে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষা করা হবে।
উপরের বর্ণিত নেহরু প্রদত্ত উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাব’ (Objective Resolution) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জানুয়ারি গণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। ভারতের সংবিধানের প্রণেতাগণ এই উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলি অনুসরণ করেন।
প্রশ্ন ৩। ভারতবর্ষের সংবিধানের প্রস্তাবনার মূলনীতিগুলি আলোচনা কর।
অথবা,
ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার বিষয়ে একটি টীকা লেখ।
অথবা,
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার আদর্শ আলোচনা কর।
উত্তরঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধানের অনুসরণে ভারতের সংবিধানেও একটি প্রস্তাবনা সংযোজিত হয়েছে। প্রস্তাবনায় সংবিধান রচনার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের মূল প্রস্তাবনার সঙ্গে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৪২তম সংশোধন আইন দ্বারা কিছু নূতন অংশ সংযোজিত হয়েছে। ‘সমাজতন্ত্র’ ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ এবং ‘জাতীয় সংহতি’-র কথা প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নূতন সংযোজনসহ প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে:
“আমরা ভারতের জনগণ এক সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় সঙ্কল্প হয়ে ভারতের সকল নাগরিকের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তার, বাক্যের, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা; অবস্থা ও সুযোগের সমতা এবং তাদের সকলের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধি করে ব্যক্তির মর্যাদা ও জাতির ঐক্য ও সংহতি রক্ষার উদ্দেশ্যে আমাদের গণ পরিষদে এই সংবিধান আজ ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভেম্বর তারিখে গ্রহণ ও প্রণয়ন করে নিজদিগকে অর্পণ করছি।”
সংবিধানের প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করলে আমরা সংবিধানের নীতি ও আদর্শগুলি দেখতে পাই:
(ক) ‘আমরা ভারতীয় জনগণ’ বলতে ভারতের জনসাধারণ হলেন দেশের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী এই কথা বোঝানো হয়েছে।
(খ) ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র করবার সঙ্কল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
(গ) ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী গঠন করবার পবিত্র উদ্দেশ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সকল নাগরিককে সমান অধিকার দেওয়া হবে এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা প্রভৃতিতে কোন ভেদাভেদ থাকবে না।
প্রস্তাবনা অনুসারে ভারতকে সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্ররূপে গড়ে তোলা হবে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ
প্রশ্ন ১। উদ্দেশ্যমূলক প্রস্তাবে কোন্ প্রকার আদর্শ গ্রহণ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ‘উদ্দেশ্য- সম্পর্কিত প্রস্তাব’ (Objective Resolution) উত্থাপন করেন। তিনি একে ভারতের জনগণের পবিত্র প্রতিজ্ঞা (Solemn Pledge) বলে অভিহিত করেন যা সংবিধান প্রণয়নকালে অনুসরণ করা হবে। সংবিধানের দার্শনিক দিক এবং ভিত্তি এই ‘উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাব’ দ্বারা স্থাপিত হয়েছিল। সংবিধান প্রণয়নের সময়ে সংবিধান প্রণেতাগণ ‘উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাব’ দৃষ্টিগোচরে রেখেছিলেন। প্রস্তাবগুলি নিম্নরূপ:
(ক) গণ পরিষদ ভারতকে ‘স্বাধীন, সার্বভৌম, সাধারণতন্ত্র’ (Independent, Sovereign, Republic) বলে ঘোষণা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। [কিন্তু ‘স্বাধীন’ (Independent) শব্দটি পরে বর্জিত হয়। যুক্তি হিসাবে বলা হয় যে ‘সার্বভৌম (Sovereign) শব্দটির মধ্যে স্বাধীনতার তাৎপর্য নিহিত আছে, সুতরাং পুনর্বার উল্লেখের প্রয়োজন নেই।]
(খ) যেখানে সমগ্র ভূখণ্ড যা সমগ্র ব্রিটিশ-ভারত অন্তর্ভুক্ত করে এবং দেশীয় রাজ্যগুলি এবং অন্যান্য ভূখণ্ড যা স্বাধীন ভারতে অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক তাদের সকলকে নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত হবে।
(গ) যাতে উক্ত ভূখণ্ড এবং গণ পরিষদ নির্ধারিত অন্যান্য ভূখণ্ড এবং অবশিষ্ট ক্ষমতা (Residuary Power) সহ অন্যান্য সকল ক্ষমতা ভোগ করবে এবং স্বশাসিত অঙ্গের মর্যাদা পাবে।
(ঘ) যেখানে স্বাধীন সার্বভৌম ভারত ও এর অবশিষ্ট অংশ এবং সরকারের সকল অঙ্গ জনসাধারণের নিকট হতে ক্ষমতা অর্জন করবে।
(ঙ) যেখানে সকল জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়, সমতা, চিন্তা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত হবে।
(চ) যেখানে সংখ্যালঘু, পশ্চাৎপদ জাতি এবং উপজাতি এবং নিপীড়িত শ্রেণীর সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা থাকবে।
(ছ) যেখানে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষা করা হবে।
উপরের বর্ণিত নেহরু প্রদত্ত উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাব’ (Objective Resolution) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে জানুয়ারি গণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। ভারতের সংবিধানের প্রণেতাগণ এই উদ্দেশ্য-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলি অনুসরণ করেন।
প্রশ্ন ২। বিভিন্ন দলসমূহ সংখ্যালঘুর সংজ্ঞা কিভাবে দিয়েছিল?
উত্তরঃ সংখ্যালঘু বলতে একটি বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে বোঝায় যাদের সংখ্যা অন্যান্যদের তুলনায় অতি নগণ্য। সংবিধান রচনার সময় গণ পরিষদের বিভিন্ন সদস্য সংখ্যালঘুর সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন।
বিশিষ্ট আইনবিদ ও সংবিধানসভার সদস্য এন. জি. রাঙ্গার মতে প্রকৃত সংখ্যালঘুরা হইলেন দেশের সাধারণ মানুষ। তাঁর মতে দেশের সাধারণ মানুষ এত নিষ্পেশিত, অবহেলিত ও অত্যাচার-পীড়িত ও অবদমিত যে তারা কখনও নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারেনি।
ডঃ আম্বেদকারের মতে নিপীড়িত শ্রেণীর মানুষই হল সংখ্যালঘু। কিন্তু নাগাপ্পার মতে সংখ্যাগতভাবে বঞ্চিত জাতক সম্প্রদায় সংখ্যালঘু ছিল না কারণ তারা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০-২৫ শতাংশ।
কিছু সংখ্যক সদস্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কথা বলেছিলেন এবং তাদের রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলেন।
প্রশ্ন ৩। প্রদেশগুলিকে অধিক ক্ষমতা প্রদান সম্পর্কে যুক্তিসমূহ কি কি ছিল?
উত্তরঃ গণ পরিষদে মাদ্রাজের সদস্য কে. সান্তানাম রাজ্যের জন্য অধিক ক্ষমতা দানের পক্ষে নিম্নরূপ যুক্তি দেখান:
(ক) সান্তানাম কেন্দ্রের হাতে অধিক ক্ষমতার বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর মতে অত্যধিক ক্ষমতাশালী কেন্দ্র সুচারুরূপে শাসন পরিচালনা করতে পারে না।
(খ) সান্তানাম প্রস্তাবিত কেন্দ্র-রাজ্য ক্ষমতা বণ্টন ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে এইরূপ ক্ষমতা বণ্টন রাজ্যসমূহকে পঙ্গু করবে।
(গ) সাত্তানাম শক্তিশালী কেন্দ্রের বিরোধী ছিলেন। এমনকী তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন।
প্রশ্ন ৪। মহাত্মা গান্ধী হিন্দুস্থানী ভাষাকে কেন জাতীয় ভাষা হিসাবে গণ্য করেছিলেন?
উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩০-এর দশকে হিন্দুস্থানী অর্থাৎ হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষা হওয়া উচিত এই অভিমত গ্রহণ করেছিল। মহাত্মা গান্ধী উপলব্ধি করেছিলেন যে সকল মানুষকে এমন একটি ভাষায় কথা বলা উচিত যা সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে পারে। হিন্দি ও উর্দুর সংমিশ্রণে গঠিত হিন্দুস্তানী ভারতের অতি জনপ্রিয় ভাষা ছিল। একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ এই ভাষা বুঝতে ও বলতে পারে। বিভিন্ন সংস্কৃতির সমন্বয়ে এটি একটি সমৃদ্ধশালী ভাষা হিসাবে পরিণত হয়েছে। সুতরাং গান্ধীজি উপলব্ধি করেছিলেন যে এইরূপ একটি বহুবিধ সংস্কৃতি-সমন্বয়ী যৌগিক ভাষা বিভিন্ন মানুষের মধ্যে মতামত বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ভাষা হিন্দু ও মুসলমানদের ঐক্য শক্তিশালী করবে। উত্তর ভারতের মানুষকে এবং দক্ষিণ ভারতের মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করে তুলবে। এককথায় গান্ধীজি হিন্দুস্থানী ভাষার মিশ্র বৈশিষ্ট্য বিশ্বাস করতেন।