Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Question Answer | AHSEC Class 12 History Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Notes and select needs one.
Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা)
Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 History Chapter 1 ইট, মনি ও হাড় (হরপ্পা সভ্যতা) Solutions for All Subjects, You can practice these here.
প্রশ্নঃ ২৫। মানচিত্র অনুসারে বর্তমান ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হরপ্পা সভ্যতার পরিণত পর্যায়ে চারটি স্থানের নাম রাজ্য সহ উল্লেল্লখ করো।
উত্তরঃ
স্থান | ৰাজ্য |
চোলীস্তান ও রানাওয়ালী | হরিয়ানা |
কালীবাংগান | পাঞ্জাব |
ধোলাভিরা | গুজরাট |
লোথাল | গুজরাট |
প্রশ্নঃ ২৬। হরপ্পা সভ্যতার দুর্গ এবং নিম্ননগরগুলির বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতা একটি সুসংহত পরিকল্পিত সভ্যতা। এই সভ্যতার বসতিটি দুই ভাগে বিভাজিত ছিল; একটি ক্ষুদ্রতর কিন্তু উচ্চতর, তাপরটি যথেষ্ট বড় কিন্তু অবতল। পুরাতত্ত্ববিদগণ এদের যথাক্রমে দুর্গ এবং নিম্ননগর হিসাবে নামাঙ্কিত করেছেন। দুর্গের উচ্চতা নির্ধারিত হয়েছিল তৎকালীন অট্টালিকা ইত্যাদির কাদা ও ইটের মিশ্রণে তৈরি মঞ্চসদৃশ ভিত্তিভূমির নির্মাণ শৈলীর উপর। দুর্গ ছিল প্রাচীরঘেরা। অর্থাৎ দুর্গগুলো ছিল নিম্ননগর থেকে বিচ্ছিন্ন।
নিম্ননগরগুলি ছিল থ্রাছীরঘেরা। বেশ কিছু গৃহ এবং অট্টালিকা মঞ্চের ওপর নির্মিত ছিল, যেগুলি ভিত্তিভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হত। একটি মানদণ্ড অনুযায়ী ব্যবহৃত ইট রোদে শুকনো অথবা ঝলসানো অথবা সেঁকাই করা হত। যেখানে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে উচ্চাতার চারগুণ এবং দ্বিগুণ ছিল।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্নঃ ১। হরপ্পা যুগের মানুষের জীবনধারণ প্রণালী সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তরঃ হরপ্পা যুগের মানুষের জীবন যাত্রার মান সমকালীন অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় উন্নত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে খাদ্যের জন্য হরপ্রাবাসী কৃষিকাজ এবং পশুপালনের উপর নির্ভর করত। হরপ্পাবাসীগণ নানান ধরনের লতাগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ এবং মৎসসহ বিভিন্ন প্রাণীজ আহার গ্রহণ করত। সেই সময় লোকেদের প্রধান খাদ্যছিল গম, যব, মসুর ইত্যাদি। চালের প্রচলন কম দেখা যায়। মাংসের জন্য লোক গৃহপালিত পশুর উপর নির্ভর করত। তাছাড়া সেযুগে মাংসের জন্য বন্যপ্রাণীর শিকারও করা হত। হরপ্পা যুগে মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। হরপ্পীয়রা গম, যব, বার্লি ইত্যাদির চাষ করত। তারা কাটের লাঙ্গলের সাহায্যে জমি চাষ করত এবং উন্নত ধরনের জলসেচ্ ব্যবস্থার সাহায্য নিত। কৃষিকাজ ছাড়াও পশু পালন ছিল লোকের আরেকটি প্রধান জীবিকা। সেযুগে মানুষ হাতী, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির পালন করতে। সেই সময় হরপ্পাবাসীরা অন্যান্য দূরৱৰ্তী দেশের লোকেদের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। হরপ্পাবাগীরা আফগানিস্তান, ইরাণ, মেসোপটেমিয়া ইত্যাদি দেশের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা চালাত।
হরপ্পা যুগের বসতি দেখে বুঝা যায় যে সেসময় সমাজে লোকেদের মধ্যে শ্রেণি বিভাজন ছিল। সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকেরা বসতির উপরের ভাগ দুর্গে এবং নিম্নশ্রেণীর লোকেরা গগতির নীচের ভাগ নিশ্বশহরে বসবাস করত। সে সময় সমাজে ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন ছিল। পুরুষেরা ধৃতি এবং শাল জাতীয় পোশাক পরিধান করত এবং মহিলারা ফুলের ছবি আঁকা রঙিন পোষাক পরতে পছন্দ করত। বিনোদনের জন্য লোক বিভিন্ন ধরনের গৃহ ক্রীড়ার সাহায্য নিত। ছোট ছোট ছেলেবেরের পুতুল নিম্নে খেলা করত। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই তঅলঙ্কার পরিধান করত। হরপ্পা যুগে মানুষ বিভিন্ন ধরনের দেবতা, গাছ-পালার পূজা করত।
প্রশ্নঃ ২। মহেঞ্জোদারোর স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার সবচেয়ে সুপরিচিত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থান ছিল মহেঞ্জোদারো। মহেঞ্জোদারোর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের জন্য উহাকে সভ্যতার সর্বাধিক পরিচিত এবং বৈশিষ্টপূর্ণ বলা যায়।
(i) পরিকল্পিত নগর – মহেঞ্জোদারোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল উহার পরিকল্পিত নগারকেন্দ্রীক বসতি। নগরের ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, পয়ঃপ্রণালী ইত্যাদি নির্দেশ করে যে মহেঞ্জোদারো নগরটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পনা করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
(ii) বিভাজিত বসতি – মহেঞ্জোদারোর বসতিটি দুই ভাগে বিভাজিত ছিল। প্রথমটি ছোট কিন্তু উপরে অবস্থিত যাতে অভিজাত শ্রেণির লোকেরা বসবাস করত অন্যদিকে নীচের ভাগটি বড়ছিল যেখানে শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা বাস করত।
(iii) পরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালী – মহেঞ্জোদারোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল পরিকল্পিত পয়ঃ প্রণালী। সড়কের নীচে দিয়ে পাকা নর্দমা তৈরী করা হত এবং আধুনিক কালের মত নার্দনাগুলিতে ম্যানহোল থাকত।
(iv) গৃহনির্মাণে উন্নত কারিগরী ব্যবস্থা – মহেঞ্জোদারোর নিম্নশহরের ঘরবাড়িগুলি ঝলসানো ইট দ্বারা তৈরী করা হত। তানেকগুলি ঘরে উঠান মধ্যস্থলে রেখে চারিদিকে কোঠা নির্মিত হতো। ঘরগুলি একতল এবং দ্বিতল বিশিষ্ট হত। দ্বিতল বিশিষ্ট ঘরগুলিতে দোতালায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি থাকতো। প্রতিটি ঘরে নিজস্ব শানবাধানো নর্দমাযুক্ত স্প্যানিঘর থাকতো। নর্দমাগুলি থ্রাচীরের মধ্য দিয়ে পথের নর্দমার সাথে যুক্ত থাকতো।
(v) বৃহৎ স্নানাগার – মহেঞ্জোদারোর সবচেয়ে উল্লেখজনক স্থাপত্য কীর্তি ছিল এর বৃহৎ স্নানাগার। এটি একটি বৃহৎ আয়তক্ষেত্র সদৃশ স্নানাগার ছিল। এই স্নানাগারটির মাঝখানে একটি জলাশয় ছিল। নগর দুর্গের ঠিক মাথায় স্নানাগারটি অবস্থিত ছিল। স্নানাগারটির উভয় প্রান্তে উঠা নামার জন্য সিঁড়ি ছিল।
প্রশ্নঃ ৩। ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদ্যায় স্যার জন মার্শালের অবদান বর্ণনা করো।
অথবা,
হরপ্পা সভ্যতা কীভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল? এই বিষয়ে স্যার জন মার্শালের অবদান বর্ণনা করো।
উত্তরঃ বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে প্রত্নতাত্ত্বিক দয়ারাম সাহানী হরপ্পাতে কিছু শীল – মোহত আবিষ্কার করেন। এই শীল-মোহরগুলি তৎকালীন আমিষ্কৃত প্রাচীন শীল-মোহরগুলির থেকেও অনেক পাচীন ছিল। অন্যদিকে আরেক প্রত্নতত্ববিদ রাখাল দাস ব্যাগার্লি মহেঞ্জোদারোতে একই ধরনের শীল-মোহর আবিষ্কার করেন এবং এর থেকে এটা উপলব্ধ হয় যে এই স্থানগুলি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতির অঙ্গ। এই তথ্যের উপর নির্ভর করে তৎকালীন এ এস আই এর মুখ্য অধিকর্তা স্যার অন মার্শাল সিন্ধু সভ্যতায় এক নতুন সভ্যতার আবিষ্কারের কথা বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেন।
বস্তুতঃ আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার ভাধিকর্তা হিসাবে জন মার্শালের কার্যাল ভারতীয় পুরাতত্ত্বে এক বিশাল পরিবর্তন সাধিত করে। জন মার্শাল ছিলেন ভারতে কাজ করা প্রথম পেশাদারী প্রত্নতাত্ত্বিক। তিনি গ্রীস এবং ক্রীটে তার কাজের তাভিজতাকে এখানে কাজে লাগান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তিনি যদিও কানিংহ্যামের মত অত্যাশ্চর্য আধিকারের প্রতি আগ্রহী ছিলেন তথাপি তিনি সমানভাবে দৈনন্দিন জীবনধারার প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
‘দ্য চোরী অব ইণ্ডিয়ান আর্কিওলজিতে’ এস এন রায় লেখেন যে ‘মার্শাল ভারতকে যে ভাবে গেয়েছেন তা হতেও তিন হাজার বৎসর প্রাচীন হিসাবে রেখে যান। এর কারণ হরপ্পার খননস্থলে গাওয়া শীল-মোহর মেসোপটেমিয়াতেও পাওয়া যায় যার থেকে এটা বুঝা যায় হরপ্পা সভ্যতা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সমকালীন সভ্যতা। জন মার্শাল প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যে এক নতুন যুগের সুচনা করলেও তার খনন কার্যে কিছুটা গলদ ছিল। মার্শাল তার খনন কার্যে নিয়মিত একটি একক হিসাবে সুষমরূপে পরিমাপ করে ঢিবিগুলি আগাগোড়া মৃত্তিকার শুরভেদ সংক্রান্ত সব জ্ঞান অগ্রাহ্য করে খনন করেছিলেন। তাছাড়া বিভিন্ন স্তরে ঊরীভূত উদ্ধারীকৃত বস্তুগুলি একই দলে জড়ো করার ফলে বহু মূল্যবান তথ্য অপূরণীয় ভাবে হারিয়ে গেছে।
প্রশ্নঃ ৪। সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা,
হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এর নগরকেন্দ্রীক সভ্যতা। হরপ্পার যে সমস্ত নগর খননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলি পরিকল্পিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিটি নগরে বাজার, রাস্তা-ঘাট, পয়ঃপ্রণালী ইত্যাদি থাকার ফলে বুঝা যায় যে হরপ্পা সভ্যতার প্রতিটি নগরই পরিকল্পনা করে তৈরী করা হয়েছিল। প্রতিটি শহরকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। হরপ্পা শহরগুলির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে উল্লেখ করা হল।
(i) পরিকল্পিত রাস্তা – শহরগুলির সড়ক এবং গলিসমূহ পরিকল্পনা করে নির্মাণ করা হরেছিল। প্রতিটি সড়ক প্রশস্ত অর্থাৎ চওড়া ছিল এবং রাস্তাগুলি একটি আরেকটিকে পরস্পর লম্বভাবে ছেদ করত। রাস্তাগুলি উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিমে থাকত। রাস্তার দুই পাশে মানুষের থাকার ঘরগুলি নির্মাণ করা হত।
(ii) পয়ঃপ্রণালী – হরপ্পার নগরগুলিতে পরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালী ছিল উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত পথঘাট এবং পয়ঃপ্রণালী প্রথম পরিকল্পনা করে তার ধারে গৃহাদি নির্মাণ করা হত। এই পরিকল্পনা সভ্যতাটির নগরকেন্দ্রীতা নির্দেশ করে।
(iii) পরিকল্পিত ঘর-বাড়ি – হরপ্পা সভ্যতার নগরসমূহের ঘর-বাড়িসমূহ পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হত। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব শানবাধানো নদশাযুক্ত স্থানগর থাকতো এবং নর্দমাগুলি প্রাচীরের মধ্য দিয়ে পথের নর্দমার সাথে যুক্ত থাকতো। বহু গৃহে উঠান মাঝখানে রেখে চারদিকে কোঠা নির্মাণ করা হত।
(iv) বিভাজিত বসতি – শহরগুলি বসতি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল একটি ভাগ ছিল ছোট এবং সেটা উপরে অবস্থিত ছিল এবং অন্য ভাগটি ছিল বড় এবং সেটা নীচে অবস্থিত ছিল। উপরের ভাগটিকে দুর্গ বলা হত যেখানে সমাজের অভিজাত শ্রেণির লোকেরা বাস করত অন্যদিকে নীচের ভাগটিকে নিম্নশহর বলা হত। নিম্নশহর ছিল থ্রাচীর বেষ্টিত। এই স্থানে শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা বাস করত।
(v) বৃহৎ কাঠামো – হরপ্পা সভ্যতাতে কিছু বৃহৎ ঘরের কাঠামো পাওয়া গেছে যেগুলি জনসাধারণের স্বার্থে ব্যবহৃত হত। এগুলির মধ্যে বিশাল গুদামঘর, শস্যাগার, বৃহৎ স্নানাগার, মন্দির ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্নঃ ৫। হরপ্পা সভ্যতাতে শাসকশ্রেণি থাকার কী কী যুক্তি পুরাতত্ত্ববিদগণ দিয়ে থাকেন?
উত্তরঃ প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতে বিভিন্ন জটিল এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত, এর অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোন একটি সভ্যতার বিশাল সংখ্যক লোককে নিয়ে গঠিত জনসংখ্যাতে কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা শাসক ছাড়া কোন সামগ্রিক জটিল সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব ছিল না। এই রকম কিছু সিদ্ধান্ত যেমন বিভিন্ন ধাতব বা মাটির পাত্রের ওজন এবং আকার, শীল-মোহরের ওজন, ইটে থাকা কারুকার্য ইত্যাদি আশ্চর্যভাবে সুষম ছিল যা কোন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি নির্দেশ করে। তাছাড়া এক্ষেত্রে ইটের আকারের বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য। কারণ সভ্যতার সমস্ত ইট যদিও বিভিন্ন স্থানে তৈরী করা হত তথাপিও সেগুলির আকার একই ছিল। কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া একটি বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের সভ্যতার ইটের আকার ‘একই’ হওয়া অসম্ভব ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপনের কৌশলও কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি নির্দেশ করে। অন্যদিকে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জন্য শ্রমিকদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হত। এই নির্দেশ নিশ্চয় কোন শাসক শ্রেণির লোকের থেকে আসত।
মহেঞ্জোদারোর একটি সুবিশাল ইমারতকে পুরাতত্ত্ববিদরা প্রাসাদ বলে পরিচিতি জ্ঞাপন করলেও এর সঙ্গে জড়িত কোন অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার ছিল না। একটি পাথরের মূর্তিকে পুরোহিত রাজা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ পুরাতত্ত্ববিদগণ মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলেন যেখানে পুরোহিতরা শাসক ছিলেন। পুরাতত্ত্ববিদরা মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার সাদৃশ্য থাকায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পুরোহিতরা শাসকের ভূমিকা নিতেন। অন্যদিকে কিছু পুরাতত্ত্ববিদ এই অভিমত পোষণ করেন যে হরপ্পা সমাজে কোন শাসক ছিল না এবং প্রত্যেকের সমান মর্যাদা ছিল। অন্য অনেকের ধারণা হল সেখানে একের বেশী শাসক ছিল যেমন মহেঞ্জোদারোতে একজন হরপ্পাতে একজন এই রকম। কিন্তু হস্তকলার সাদৃশ্য, পরিকল্পিত উপনিবেশ, ইটের সুষম আয়তন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হয় যে এখানে একটি রাষ্ট্র ছিল যার, কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল কারণ এটি সম্ভব নয় যে সত্ৰ জন-সম্প্রদায় একত্রে মিলিতভাবে এইসব জটিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জেগুলি আার্যকরী হয়েছে এবং এই ধারণাই এযাবৎ অনুমানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সঠিক বলে ধরা হয়।
প্রশ্নঃ ৬। হরহ্মা সভ্যতার পতনের কারণসমূহ আলোচনা করো।
উত্তরঃ হরহ্মা সভ্যতার পতনের কোন নির্দিষ্ট কারণ পুরাতত্ত্ববিদগণ দিতে পারেননি কিন্তু বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং গুরাতত্ত্ববিদ এই সভ্যতার পতনের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেন। হররা সভ্যতার পনের কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ নিচে দেওয়া হল।
(i) বন্যা – কিছু ঐতিহাসিকের মতে সিন্ধু নদ এবং উহার উপনদী সমূহতে ক্রমাগত জনীতির ফলে হরপ্পা সভ্যতার নগরগুলিতে হওয়া বন্যার ফলে সিন্ধু সভ্যতার পতন হয়েছিল। এবং ক্রমে ক্রমে সমস্ত সভ্যতা মাটির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল।
(ii) খরা – কিছু শ্রেণির ঐতিহাসিকের মতে ক্রমাগত হওয়া খরার ফলে কৃষিকার্য কাওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং খাদ্যাভাবে ধীরে ধীরে এই সভ্যতার অবলুপ্তি ঘটে।
(iii) মহামারি – আরেক শ্রেণির ঐতিহাসিক মনে করেণ মহামারির ফলে সেই সভ্যতার অঞ্চল উজাড় হয়ে যায় এবং ফলস্বরূপ এই সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে।
(iv) মরুভূমির বিস্তার – খুব সম্ভবত পার্শ্ববর্তী মরুভূমি অঞ্চল বিস্তৃতি লাভ করার হলে সভ্যতার কৃষিজমিতে লোনাভাব বৃদ্ধি পায় এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় ফলে কৃষিকাৰ্য্য ও ভাবে ব্যাহত হয় যা সভ্যতার পতন ডেকে আনে।
(v) প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার – সভ্যতার অত্যধিক বিস্তারের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রারিক্ত এবং যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এই সভ্যতার বিনাশ ঘটে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
(vi) ভূমিকম্প – অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন যে সিন্ধু সভ্যতার অঞ্চলে হওয়া প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে সভ্যতার ধ্বংস ঘটেছিল এবং কালক্রমে তা ভূগর্ভে তলিয়ে যায়।
(vii) আর্যদের আক্রমণ – মার্টিমার হুইলারের মতে আর্যদের আক্রমণে হরপ্পীয় সভ্যতার ধ্বংস হয়েছিল। কারণ খনন কার্যে অনেকগুলি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল সেগুলির গায়ে অস্ত্রাঘাতের চিহ্ন ছিল।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তরঃ
প্রশ্নঃ ১। হরপ্পীয় নগরসমূহের লোকের খাদ্য সম্ভারের একটি তালিকা প্রস্তুত করো। এই খাদ্যসামগ্রী যোগান দেওয়া দলসমূহকে সনাক্ত করো।
উত্তরঃ হরপ্পাবাসীরা নানান ধরনের লতাগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ও মৎস সহ বিবিধ প্রাণীজ আহার গ্রহণ করত। ঐ স্থানসমূহ হতে প্রাপ্ত দগ্ধ শস্য ও বীজ বিশ্লেষণ করে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এদের খাদ্যাভাস পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। মাংসের জন্য হরপ্পাবাসীরা পশুপালন এবং শিকার করার উপর নির্ভর করত। নীচে হরঙ্গীয় লোকের খাদ্যসত্তারের তালিকা এবং এই খাদ্য সামগ্রী যোগান দেওয়া দলসমূহকে চিহ্নিত করা হল।
খাদ্য সামগ্রী | যোগানকারী গোষ্ঠী |
১। উদ্ভিদ হতে আহোরিত খাদ্য সামগ্রী | ১। খাদ্য সংগ্রহকারী গোষ্ঠী। |
২। মাংস এবং মাছ | ২। পশুপালনকারী এবং শিকারীগোষ্ঠী। |
৩। গম, যব, ভুট্টা, মসুর, মটরকলাই, তিল ইত্যাদি। | ৩। কৃষক গোষ্ঠী। |
প্রশ্নঃ ২। পুরাতত্ত্ববিদগণ কীভাবে হরপ্পীয় সমাজের আর্থ-সামাজিক বৈষম্যসমূহ তুলে ধরেছিলেন? এই ক্ষেত্রে তারা কী কী বৈষম্য লক্ষ্য করেছিলেন?
উত্তরঃ পুরাতত্ত্ববিদগণ সাধারণত নিম্নলিখিত কৌশলগুলির দ্বারা লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে থাকেন।
(i) সমাধি – সমাধির মধ্যে পার্থক্যকে বিশ্লেষণ করে লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হত। হরপ্পীয় সমাধিস্থলে মৃতদেহ গহ্বরে শায়িত করা হত। এর মধ্যে কিছু কিছু গহ্বরের ভেতরের দেওয়ালে ইটের গাঁথনি দেওয়া আভিজাত্যের ইঙ্গিত দেয়। যে সকল সমাধিতে মৃতদেহের সঙ্গে মূল্যবান সামগ্রী এবং অলঙ্কারাদি পাওয়া যেত সেগুলি অভিজাত লোকের আবার সাধারণ সামগ্রী থাকা সমাধিটি সাধারণ লোকের বলে মনে করা হয়।
(ii) বিলাস বহুল সামগ্রী – পুরাতত্ত্ববিদগণ কলা শিল্পের সামগ্রীগুলিকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেন-
(ক) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রী। এবং
(খ) বিলাস ব্যাসনের উপকরণ।
প্রথম শ্রেণীর সামগ্রীগুলি যেমন পাথর, এবং কাদা দিয়ে তৈরী সামগ্রী জাঁতাকল, সূঁচ ইত্যাদি কম মূল্যবান এবং এগুলি জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির সামগ্রী যেমন কেয়িন্স দ্বারা নির্মিত ক্ষুদ্র পাত্র, সূতাকাটার টাকু ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী বলে গণ্য হয়। যেসব অঞ্চলে দ্বিতীয় শ্রেণির সামগ্রীর চিহ্ন বেশী পাওয়া যায় সেই অঞ্চলকে অপেক্ষাকৃত ভাবে অভিজাত শ্রেণীর লোকের বাসস্থান বলে চিহ্নিত করা হয়।
প্রশ্নঃ ৩। হরপ্পীয় নগরসমূহের পয়ঃপ্রণালী নগর পরিকল্পনার ঈঙ্গিতবাহী কি? তোমার উত্তরের কারণ দর্শাও।
উত্তরঃ হরপ্পীয় সভ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য অতি অবশ্যই সভ্যতাটির নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। হরপ্পার প্রতিটি নগর ছিল পরিকল্পিতভাবে তৈরী। হরপ্পা সভ্যতার নগরসমূহ বর্তমান কালের উন্নত নগরের মতই পরিকল্পনা করে তৈরী করা। হরপ্পীয় নগরসমূহের পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থাটি নগরগুলির পরিকল্পিত হওয়ার ঈঙ্গিত দেয়। হরপ্পা সভ্যতার অন্যতম স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য হল উহার উত্তমভাবে পরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা। হরপ্পার নগরগুলিতে পথঘাটের সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে পয়ঃপ্রণালী অর্থাৎ নর্দমা নির্মাণ করা হত। সম্ভবত পথ-ঘাট এবং নালা-নর্দমা প্রথম পরিকল্পনা অনুসারে প্রস্তুত করার পরে তার ধারে ধারে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হতো। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব নর্দমাযুক্ত স্নানঘর ছিল এবং প্রতিটি ঘর রাস্তার পরো প্রণালীর সাথে নর্দমা দ্বারা যুক্ত থাকতো। মূল খালগুলি কংক্রীটের ইটের গাঁথনি দিয়ে তৈরী ছিল এবং আলগা ইটের দ্বারা ঢাকা ছিল, যা পরিষ্কার করার জন্য অপসারিত করা যেত। ঘরের নর্দমাগুলি প্রথমে একটি নিষ্কাশন কূপ অথবা আচ্ছাদিত গর্তে খালি করা হত এবং এটাতে বর্জ্য পদার্থ থিতিয়ে গেলে বর্জ্য জল পথনালীতে বয়ে যেত। দীর্ঘ পথনালীতে কিছু দূর পরে পরে পরিষ্কার করার জন্য নিষ্কাশন কূপও থাকত। পয়ঃনালীগুলি রাস্তার নীচে দিয়ে তৈরী করা হত।
সুতরাং দেখা গেল যে হরপ্পীয় নগরসমূহে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল যা পরিকল্পনা ছাড়া অসম্ভব ছিল। কাজেই হরপ্পীয় নগরসমূহের পয়ঃপ্রণালী নগর পরিকল্পনার ঈঙ্গিতবাহী।
প্রশ্নঃ ৪। হরপ্পীয় সভ্যতায় পুঁতি তৈরি করার আবশ্যকীয় উপাদানগুলির তালিকা প্রস্তুত করো। কোন একটি ধরনের পুঁতি তৈরি করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করো।
উত্তরঃ হরপ্পা যুগে পুঁতি তৈরির জন্য কার্ণেলিয়া, জেস্পা’র, স্ফটিক, সিয়েটাইট জাতীয় পাথর, সোনা, পিতল, ব্রোঞ্জ, তামা ইত্যাদি ধাতু ছাড়াও ঝিনুক ফেয়িন্স এবং টেরাকোটা জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হত। কোন কোন পুঁতি দুই বা ততোধিক পাথরকে সংযোজক পদার্থ দ্বারা যুক্ত করে নির্মাণ করা হত। পুঁতিগুলি গোলাকার, চোঙাকৃতি ইত্যাদি আকারের হতো। উপাদান অনুযায়ী নির্মাণকৌশলও পরিবর্তিত হতো। ষ্টিয়াটাইট্ নামক কোমল পাথরের চূর্ণের কাদাটে মিশ্রণ থেকেও পুঁতি তৈয়ারী করা হত। কাৰ্ণেলিয়ান নামক পুঁতি উৎপাদনের কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে আগুনে গলিয়ে পাওয়া পিণ্ডগুলিকে পাতলা টুকরা করে কর্কশ আকার দেওয়া হত এবং সবশেষে চূড়ান্ত আকার দেওয়ার জন্য পরত করা হত এবং এরপর পেষণ করা, ঘষামাজা ও ছিদ্র করার সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হত।
চানহুদারো, লোথাল এবং চোলাভিরাতে বিভিন্ন ধরনের পুঁতি তৈরী করা হত।
প্রশ্নঃ ৫। মহেঞ্জোদারোর স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
উত্তরঃ হরপ্পা সভ্যতার সবচেয়ে সুপরিচিত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থান ছিল মহেঞ্জোদারো। মহেঞ্জোদারোর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের জন্য উহাকে সভ্যতার সর্বাধিক পরিচিত এবং বৈশিষ্টপূর্ণ বলা যায়।
(i) পরিকল্পিত নগর – মহেঞ্জোদারোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল উহার পরিকল্পিত নগারকেন্দ্রীক বসতি। নগরের ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, পয়ঃপ্রণালী ইত্যাদি নির্দেশ করে যে মহেঞ্জোদারো নগরটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পনা করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
(ii) বিভাজিত বসতি – মহেঞ্জোদারোর বসতিটি দুই ভাগে বিভাজিত ছিল। প্রথমটি ছোট কিন্তু উপরে অবস্থিত যাতে অভিজাত শ্রেণির লোকেরা বসবাস করত অন্যদিকে নীচের ভাগটি বড়ছিল যেখানে শ্রমিক শ্রেণির লোকেরা বাস করত।
(iii) পরিকল্পিত পয়ঃপ্রণালী – মহেঞ্জোদারোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল পরিকল্পিত পয়ঃ প্রণালী। সড়কের নীচে দিয়ে পাকা নর্দমা তৈরী করা হত এবং আধুনিক কালের মত নার্দনাগুলিতে ম্যানহোল থাকত।
(iv) গৃহনির্মাণে উন্নত কারিগরী ব্যবস্থা – মহেঞ্জোদারোর নিম্নশহরের ঘরবাড়িগুলি ঝলসানো ইট দ্বারা তৈরী করা হত। তানেকগুলি ঘরে উঠান মধ্যস্থলে রেখে চারিদিকে কোঠা নির্মিত হতো। ঘরগুলি একতল এবং দ্বিতল বিশিষ্ট হত। দ্বিতল বিশিষ্ট ঘরগুলিতে দোতালায় যাওয়ার জন্য সিঁড়ি থাকতো। প্রতিটি ঘরে নিজস্ব শানবাধানো নর্দমাযুক্ত স্প্যানিঘর থাকতো। নর্দমাগুলি থ্রাচীরের মধ্য দিয়ে পথের নর্দমার সাথে যুক্ত থাকতো।
(v) বৃহৎ স্নানাগার – মহেঞ্জোদারোর সবচেয়ে উল্লেখজনক স্থাপত্য কীর্তি ছিল এর বৃহৎ স্নানাগার। এটি একটি বৃহৎ আয়তক্ষেত্র সদৃশ স্নানাগার ছিল। এই স্নানাগারটির মাঝখানে একটি জলাশয় ছিল। নগর দুর্গের ঠিক মাথায় স্নানাগারটি অবস্থিত ছিল। স্নানাগারটির উভয় প্রান্তে উঠা নামার জন্য সিঁড়ি ছিল।
প্রশ্নঃ ৬। হস্তশিল্প উৎপাদনের জন্য হরপ্পা সভ্যতায় প্রয়োজনীয় উপাদানের তালিকা প্রস্তুত করো এবং সেই উপাদান কীরূপে জোগাড় করা হত আলোচনা করো।
উত্তরঃ পুরাতত্ত্ববিদগণ সাধারণত নিম্নলিখিত কৌশলগুলির দ্বারা লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে থাকেন।
(i) সমাধি – সমাধির মধ্যে পার্থক্যকে বিশ্লেষণ করে লোকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হত। হরপ্পীয় সমাধিস্থলে মৃতদেহ গহ্বরে শায়িত করা হত। এর মধ্যে কিছু কিছু গহ্বরের ভেতরের দেওয়ালে ইটের গাঁথনি দেওয়া আভিজাত্যের ইঙ্গিত দেয়। যে সকল সমাধিতে মৃতদেহের সঙ্গে মূল্যবান সামগ্রী এবং অলঙ্কারাদি পাওয়া যেত সেগুলি অভিজাত লোকের আবার সাধারণ সামগ্রী থাকা সমাধিটি সাধারণ লোকের বলে মনে করা হয়।
(ii) বিলাস বহুল সামগ্রী – পুরাতত্ত্ববিদগণ কলা শিল্পের সামগ্রীগুলিকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করেন-
(ক) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সামগ্রী। এবং
(খ) বিলাস ব্যাসনের উপকরণ।
প্রথম শ্রেণীর সামগ্রীগুলি যেমন পাথর, এবং কাদা দিয়ে তৈরী সামগ্রী জাঁতাকল, সূঁচ ইত্যাদি কম মূল্যবান এবং এগুলি জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির সামগ্রী যেমন কেয়িন্স দ্বারা নির্মিত ক্ষুদ্র পাত্র, সূতাকাটার টাকু ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী বলে গণ্য হয়। যেসব অঞ্চলে দ্বিতীয় শ্রেণির সামগ্রীর চিহ্ন বেশী পাওয়া যায় সেই অঞ্চলকে অপেক্ষাকৃত ভাবে অভিজাত শ্রেণীর লোকের বাসস্থান বলে চিহ্নিত করা হয়।
প্রশ্নঃ ৭। পুরাতত্ত্ববিদগণ অতীতকে কীরূপে পূনর্নিমাণ করেন, আলোচনা করো।
উত্তরঃ পুরাতত্ত্ববিদগণ সাধারণতঃ বস্তুগত নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে অতীতকে পূনর্নির্মাণ করে থাকেন। যে বস্তুগুলি প্রাচীন কাল থেকে অক্ষত থাকে সেগুলি সাধারণত পাথর ঝলসানো মাটি অথবা ধাতু নির্মিত হয়ে থাকে। এই বস্তুগুলি বিভিন্ন প্রকারের পাত্র, যন্ত্রপাতি, অলঙ্কারাদি, গৃহে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকারের বস্তু ইত্যাদি হয়। অন্যদিকে জৈবিক বস্তু যেমন কাপড়, চামড়া, কাঠ ইত্যাদি দ্বারা তৈরী বস্তু পচনশীল এবং বিয়োজনযোগ্য হওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই অতীতের পূনর্নির্মাণের জন্য পুরাতত্ত্ববিদদের অবিয়োজনযোগ্য বস্তু উপরই নির্ভর করতে হয়। এই সকল বস্তু আবিষ্কারের পর প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বস্তু সমূহের শ্রেণিবিভাগ করেন। এই শ্রেণিবিভাগ দুই ধরনের হয়—
(i) বস্তুটি কি তার উপর ভিত্তি করে যেমন পাথর, কাদা, ধাতু, অস্থি, হাতীর দাঁত ইত্যাদি। এবং
(ii) বস্তুটির কাজের অর্থাৎ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে, যেমন এটা বুঝতে হবে বস্তুটি একটি যন্ত্রাংশ না অলংকার। নাকি দুটোই আচার-অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত কোন বস্তু। কোন বস্তুর ব্যবহার বা কার্যকারিতা নির্ণয় একটি জটিল বিষয়। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিভিন্ন উপায়ের দ্বারা বস্তুগুলির কার্যকারিতা নির্ণয় করেন। যেমন–
(i) বস্তুর কার্যকারিতা বুঝার একটি উপায় হল বর্তমানে ব্যবহৃত হয় এমন সকল বস্তুর সঙ্গে তার সাদৃশ্য বিবেচনা করা, যেমন— জাতাকল, পাথরের ফলক, পাত্র ইত্যাদি।
(ii) তাছাড়া আরেকটি উপায় হল বস্তুটি কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে আবিষ্কার হয়েছিল তা নির্ণয় করা। যেমন বস্তুটি কি ঘরে, নর্দমায়, সমাধিস্থলে, চুল্লীতে বা ইটের পাজায় পাওয়া গেছে তা নির্ণয় করা।
(iii) কখনও প্রত্নতত্ত্ববিদরা অপ্রত্যক্ষ প্রমাণের সাহায্য নিয়ে থাকেন যেমন কাপড় সম্বন্ধে তথ্য উদ্ধারের জন্য আমাদের ভাস্কর্যের বর্ণনার উপর নির্ভর করতে হয়।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের উল্লেখনীয় বস্তুর পরিকাঠামোর বিকাশ করতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি শীল-মোহরের পরিপ্রেক্ষিত নির্ণয় করা সম্ভব হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত ওর সাংস্কৃতিক পরম্পরা নির্ণয় করা যায় না। কাজেই কোন একটি শীল-মোহর কোথায় কী পরিপ্রেক্ষিতে আবিষ্কার করা হয়েছে তাও নির্ণয় করতে হয়। অতীতের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার- অনুষ্ঠান পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টা হয়েছে শীলমোহরগুলির পরীক্ষার মাধ্যমে। হরপ্পীয় ধর্মের পূনর্নির্মাণ এই ধারণার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে যে পরবর্তী পরম্পরাসমূহ পূর্ববর্তী পরম্পরার অর্থাৎ বর্তমান হতে অতীতের দিকে অনুসন্ধান করেন। সমান্তরালে উপস্থাপিত হয়। এটির কারণ হল প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানা হতে অজানার দিকে অৰ্থাৎ বৰ্তমান হতে অতীতের দিকে অনুসন্ধান করেন।
প্রশ্নঃ ৮। রঞ্জীয় সমাজে শাসকদের কার্যকলাপ বর্ণনা করে।
উত্তরঃ হরপ্পীয় সমাজে শাসকদের কার্যকলাপ বর্ণনা করার সময় এই বিষয় উল্লেখযোগ্য যে হরপ্পা সমাজে শাসক শ্রেণির উপস্থিতি সম্বন্ধে ঐতিহাসিক এবং পুরাতত্ত্ববিদগণের মধ্যে কোন ঐক্যমত গড়ে উঠেনি। এর প্রধান কারণ হল বিভিন্ন সময়ে আবিষ্কার হওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যসমূহ এই বিষয়ে কিছুটা ভিন্ন ভাবধারার প্রদর্শন করে এবং তাছাড়া কোন রাজা বা শাসক সেই সময়ে থাকার কোন বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তবুও কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে শাসক থাকার কথা উপস্থাপন করেন।
মহেঞ্জোদারোতে একটি সুবিশাল ইমারতকে পুরাতত্ত্ববিদরা থ্রাসাদ বলে পরিচিতি জ্ঞাপন করলেও এর সঙ্গে জড়িত কোন অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার ছিল না। একটি পাথরের মূর্তিকে পুরোহিত রাজা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ পুরাতত্ত্ববিদ গণ মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলেন যেখানে পুরোহিতরা শাসক ছিলেন। পুরাতত্ত্ববিদরা মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার সাদৃশ্য থাকায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পুরোহিতরা শাসকের ভূমিকায় ছিলেন। অন্যদিকে কিছু ঐতিহাসিক এই মত পোষণ করেন যে হরপ্পা সমাজে কোন শাসকছিলেন না এবং সকলের সমান মর্যাদা ছিল। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে সভ্যতার বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন শাসক সমাজের নিয়ন্ত্রণ করতেন।
কিন্তু তথাপিও বেশীরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেণ যে হরপ্পাতে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল কারণ এমন কিছু নিদর্শন বা সাক্ষ্য পাওয়া গিয়েছিল যেগুলি শাসক ছাড়া অসম্ভব ছিল। যেমন—
(i) সুষম হস্তকলা – বিভিন্ন ধাতব পাত্র, মাটির পাত্র, শীল-মোহরের ওজন এবং আকৃতি বিভিন্ন হস্তকলাসমূহ একই ধরনের ছিল যা নিশ্চয়ই শাসকের নেওয়া সিদ্ধান্তের বলে হয়েছে। কাজেই এই বিষয়টি শাসক শ্রেণির অবদান বলে ধরা যায়।
(ii) ইটের নির্দিষ্ট আকার – জম্মু হতে গুজরাট এই বিস্তৃত অঞ্চলে ইটের একটি আকার এবং আয়তন কোন শাসক দ্বারা নেওয়া সিদ্ধান্ত ছাড়া অসম্ভব ছিল। সুতরাং ইটের সুকম আকার এবং আয়তন শাসকের অবদান বলা যায় নিশ্চিতভাবে।
(iii) নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসতি স্থাপন – কিছু কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে কৌশলগতভাবে বসতি স্থাপনও কেন্দ্রীয় শাসকের সিদ্ধান্তের ফলে সম্ভব হয়েছিল।
(iv) শ্রমিকদের স্থানান্তর – বিভিন্ন নির্মাণ কার্যের জন্য শ্রমিকদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরও শাসকের একটি কার্য বলে মনে করা হয়।
(v) নগর পরিকল্পনা প্রস্তুত – হরপ্পার নগরগুলিকে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় যে প্রতিটি নগর পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। নগরের রাস্তাঘাট, পয়ঃপ্রণালী, স্নানাগার ইত্যাদির পরিকল্পনা শাসক শ্রেণিত ছাড়া অসম্ভব ছিল। কাজেই নগর পরিকল্পনা শাসকের অবদান বলা যায়।
(vi) দূরবর্তী স্থান হতে কাঁচামাল সংগ্রহ – হরপ্পার শাসকগণ হস্তশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের জন্য দূরবর্তী স্থানে অভিযান চালাতেন।
উৎস ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্নঃ ১। নিচে দেওয়া পাঠাংশটি ভালভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
খাদ্যপ্রক্রিয়ার জন্য পেষক যন্ত্রের (grinding equipment) সাথে সাথে মিশ্রণ ও রন্ধনের নিমিত্ত কিছু পাত্রের প্রয়োজন। ঐ সকল পাত্র প্রস্তর, ধাতু ও টেরাকোটার দ্বারা নির্মিত হতো। হরপ্পা সংস্কৃতির বিখ্যাত স্থান মহেন্জোদারোর খননকার্য সম্পর্কিত অন্যতম প্রাচীন বিবরণের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করা হল।
“প্রচুর সংখ্যায় জাঁতাকল আবিষ্কার হয়েছে এবং সম্ভবতঃ এটি একমাত্র মাধ্যম ছিল যার দ্বারা খাদ্যশস্য পেষা হত। নিয়ম অনুযায়ী জাঁতাকলগুলি অমসৃণভাবে শক্ত কঙ্করযুক্ত বালুকাময় আগ্নেয়শিলা অথবা বালিপাথর দ্বারা নির্মিত এবং অধিকাংশই রুক্ষ ব্যবহারের চিহ্ন বহন করে। এদের ভিত উত্তল (convex) সম্ভবতঃ এই কারণে, যে, এটি ভূমি অথবা কদমের উপর স্থিত যন্ত্রটিকে দোদুল্যমান হওয়া থেকে নিরস্ত করে অর্থাৎ দৃঢ়ভাবে সংস্থাপিত করে। আবিষ্কৃত জাঁতাকলগুলি দু’ধরনের : কতকগুলির উপর আরো একটি ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড আছে যা এধারে ওধারে গড়িয়ে বা ঠেলে কাজ করতে হতো এবং অন্যগুলিতে দ্বিতীয় পাথরটি মূষল বা নোড়া হিসাবে ব্যবহার হত। যার ফলে ক্রমে নিম্নতর পাথরটিতে একটি বড় গহ্বরের সৃষ্টি হত। প্রথম ধরনের জাঁতাকলগুলি সম্ভবতঃ শুধুমাত্র খাদ্যশস্য পেষণ করার জন্য ব্যবহার করা হত, দ্বিতীয় ধরনটির ব্যবহার সম্ভবতঃ শুধুমাত্র মশলাপাতি, ওষধি চূর্ণ অথবা থেঁতো করার জন্য, যেগুলি রন্ধনে ব্যবহার হত। আমাদের কর্মীরা শেষোক্ত প্রস্তরখণ্ডগুলির নামকরণ করেছিলো ‘ব্যঞ্জন প্রস্তর’ (Currystone)। আমাদের পাচক আমাদের প্রদর্শনশালা বা জাদুঘর হতে ঐ জাতীয় একটি প্রস্তরখণ্ড পাঁকশালায় ব্যবহার করার জন্য ধার হিসাবে চাইছিলো।” —আর্নেষ্ট ম্যাকে (Arnest Mackay) ‘ফারদার এক্সক্যাভেশন অ্যাট্ মহেন্জোদারো ১৯৩৭।
পুরাতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন হস্তকলা কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয় সেটি হৃদয়ংগম করার উদ্দেশ্যে বর্তমান সময়ে ব্যবহৃত সামগ্রীর সাদৃশ্য বা মিলের সাহায্য নিচ্ছেন। আর্নেষ্ট ম্যাকে আজকের দিনের জাঁতাকলের সাথে উনি যা আবিষ্কার করেছেন সেই সামগ্রীর তুলনা করেছেন। এটা কি কার্যকরী পদ্ধতি?
(i) সাধারণতঃ জাঁতাকলে গুড়া করা হত এমন সামগ্রীগুলির নাম লেখো।
(ii) সেগুলিকে কেন ‘ব্যঞ্জন প্রস্তর’ নাম দেওয়া হয়েছিল?
(iii) হরপ্পায় আবিষ্কার হওয়া দুপ্রকার শস্য গুড়া করার জাঁতাকলের নাম লেখো।
উত্তরঃ (i) সাধারণতঃ জাঁতাকলে খাদ্যশস্য, মশলা, ঔষধ ইত্যাদি গুড়ো করা হত বা ঔষধ জাতীয় বস্তু থেঁতো করা হত।
(ii) এক ধরনের জাঁতাকল রান্নাতে ব্যবহৃত মশলাগুড়ো করার কাজে ব্যবহৃত হত। সেজন্য এগুলিকে ব্যঞ্জন প্রস্তর নাম দেওয়া হয়েছিল।
(iii) আবিষ্কৃত জাঁতাকলের প্রথম প্রকারে বড় চওড়া পাথরের উপর ছোট পাথর গড়িয়ে শস্য গুড়া করা হত। এবং দ্বিতীয় প্রকারে একটি পাথরকে মূষল হিসাবে অন্য পাথরে আঘাত করা হত এটাকে ব্যঞ্জন প্রস্তর বলে যার দ্বারা বান্নার জন্য ব্যবহৃত মশলা গুড়া করা হত।
প্রশ্নঃ ২। ১নং প্রশ্নের পাঠ্য অংশ টুকু পড়ে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
(i) খাদ্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত বস্তুগুলি কীসের দ্বারা নির্মিত হত।
(ii) জাঁতাকল গুলি কীসের দ্বারা নির্মিত হত?
(iii) দুই ধরনের জাঁতাকলের ব্যবহার লেখো।
উত্তরঃ (i) খাদ্য প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত বস্তুগুলি পাথর, ধাতু এবং টেরাকোটার (পোড়া মাটি) দ্বারা নির্মিত হত।
(ii) জাঁতাকলগুলি অমসৃণভাবে শক্ত কঙ্করযুক্ত বালুকাময় আগ্নেয়শিলা দ্বারা নির্মিত হত।
(iii) হরপ্পার এক ধরনের জাঁতাকল খাদ্যশস্য গুড়া করার জন্য এবং আরেক ধরনের জাঁতাকল মশলা গুড়া করার এবং ঔষধ গুড়া বা থেঁতো করার কাজে ব্যবহৃত হত।
প্রশ্নঃ ৩। ১ নং প্রশ্নের পাঠ্যাংশটুকু পড়ে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
(i) শস্যের বীজগুঁড়ো করতে কোন্ যন্ত্র ব্যবহার করা হতো?
(ii) শস্য গুঁড়ো করার যন্ত্র প্রস্তুত করতে কী ব্যবহার করা হতো?
(iii) শস্য গুঁড়ো করার যন্ত্র কী কী ছিল? এগুলির ব্যবহার কীভাবে করা হতো?
উত্তরঃ (i) জাঁতাকল বা চর্ণন-যন্ত্র ব্যবহার করা হতো।
(ii) শস্য গুঁড়ো করার যন্ত্র জাঁতাকল প্রস্তুত করতে কঠিন, অমসৃণ আগ্নেয় শিলা বা বেলেপাথর (বালুশিলা) ব্যবহার করা হতো।
(iii) জাঁতাকলগুলো ছিল দু-ধরনের — কিছু কিছু জাঁতাকল সম্ভবত শুধুমাত্র বীজশস্য গুঁড়ো করার জন্য ব্যবহৃত হতো। এক্ষেত্রে বড়ো চাওড়া আকৃতির পাথরের উপর ছোটো আকারে একটি পাথর সামনে/পিছনে ঠেলে ঠেলে শস্য গুড়ো করা হতো। অন্যা ধরনের ক্ষেত্রে একটি পাথরকে মুফল হিসাবে অন্য আরেকটি পাথরের উপর রাখা জিনিসকে থেতলাতে বা গুঁড়ো করতে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন ধরনের বনৌষধি বা শাকপাতা থেতলাবার জন্য বা রান্নার জন্য মশলা তৈরিতে এধরনের চূর্ণন-যন্ত্রের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল।
প্রশ্নঃ ৪। নিচে দেওয়া পাঠাংশটি ভালভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
উত্তরঃ ‘মৃতমানবের গলিপথ’ বা ডেড্ম্যাস লেন হচ্ছে একটি সঙ্কীর্ণ পথ যা ৩ হতে ৬ ফুট চওড়া। যে বিন্দু হতে পথটি পশ্চিমপ্রান্তে ঘুরে গেছে সেখানে করোটির অংশ, বক্ষের অস্থিসমূহ এবং একটি প্রাপ্তবয়স্ক মনুষ্যের ঊর্দ্ধবাহু অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। এসকল আবিত হয়েছে ৪ ফিট ২ ইঞ্চি গভীর হতে। মৃত দেহটি চিৎ হয়ে আড়াআড়ি ভাবে পথটিতে শায়িত আছে। এর পনেরো ইঞ্চি দূরত্বে একটি ছোট্ট করোটির অংশবিশেষ আছে। এই দেহাবশেষগুলির জন্যই এই পথটির ঐ নামাকরণ করা হয়েছে। জন মার্শালের ‘মহেন্জোদারো এবং সিন্ধুসভ্যতা’ ১৯৩১ পুস্তক হতে।
মৃত্যুকালে পরিহিত অলংকারসমেত ১৬ টি নরকঙ্কাল ঐ একই স্থান হতে ১৯২৫ সালে আবিষ্কৃত হয়। আরো পরে এএসআই এর সর্বাধ্যক্ষ আর.ই.এম.হুইলার এই পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের সাথে উপমহাদেশের সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ ঋগ্বেদের সাদৃশ্যের চেষ্টা করেছিলেন। উনি লিখেছেন- ‘ঋগ্বেদ ‘পুর’ কথাটির উল্লেখ করেছে যার অর্থ কেল্লা, দুর্গ অথবা দুর্ভেদ্য স্থান। আর্য যুদ্ধদেবতা ইন্দ্রকে বলা হচ্ছে ‘পুরমদ্বার’ অর্থাৎ দুর্গ ধ্বংসকর্তা।
কোথায় আছে — কোথায় ছিল সেই দুর্গসমূহ? অতীতে একথা ভাবা হতো এগুলি পৌরাণিক কিন্তু সম্প্রতি হরাপ্পার খননকার্য সমস্ত চিত্রটি পাল্টে দিয়েছে। এখানে আমরা একটি উন্নতমানের অনার্য ধরনের সভ্যতার সন্ধান পাচ্ছি যেটি বিশাল পরিখা-প্রাচীরাদি নির্মাণ করত। এই সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সভ্যতাটি কীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো? জলবায়ু, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবনয়ন একে দুর্বল করতে পারে, কিন্তু এর চূড়ান্ত নির্বাপন সম্পূর্ণ হয়েছে ইচ্ছাকৃত এবং বিপুলাকার ধ্বংসের ফলে। এটি মোটেই আকস্মিক নয় যে কোন একটি পরবর্তী সময়ে মহেনজোদারোতে পুরুষমহিলা এবং শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রতিপন্ন হবে। আনুষঙ্গিক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে আমরা ইন্দ্রকেই দোষী সাব্যস্ত করছি। আর ই এম হুইলারের ‘হরাপ্পা ১৯৪৬, এনসিয়েন্ট ইণ্ডিয়া, ১৯৪৭ হতে ১৯৬০ সালে মহেন্জোদারোর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জর্জ ডালেস্ নামে এক পুরাতত্ববিদ্। উনি প্রতিপাদন করেছেন যে, নরকঙ্কালগুলি পাওয়া গেছে সেগুলি একই সময়ের নয়।
যদিও এদের মধ্যে কিছু নিশ্চয়ই ইঙ্গিত করে হত্যার অধিকাংশ অস্থির স্তূপ যার উল্লেখ করা হচ্ছে সেটি অনুভাবিত করে যে কবরগুলি ছিল অত্যন্ত চালু এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধাহীনতার সাথে সাধিত প্রকৃতির। নগরের সর্বশেষ যুগেও কোন ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া যায় না, বিস্তৃত দহনের কোন চিহ্নও পাওয়া যায়নি, বর্মপরিহিত এবং চতুস্পার্শ্বে অস্ত্রশস্ত্রে পরিবৃত কোন যোদ্ধার শবদেহও পাওয়া যায়নি। দুর্গ, যেটি নগররের সর্বাপেক্ষা দুর্ভেদ্য অংশ, সেটিও শেষ প্রতিরোধের কোন চিহ্ন বহন করে না।
(i) গলিপথকে মৃত মানুষের গলিপথ বলা হত কেন?
(ii) এই তথ্য থেকে কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
(iii) জন মার্শাল কে ছিলেন? উনার লিখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ (i) একটি সরু গলি যা 3 ফুট থেকে 6 ফুট চওড়া সেটাকে মৃতমানুষের গলিপথ বলা হয়। এই গলিতে একটি প্রাপ্তবয়সের মানুষের মৃতদেহ আড়াআড়িভাবে শোয়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাছাড়া সেটাতে 4 ফুট 2 ইঞ্চি গভীর হতে মানুষের করোটির অংশ, বুকের অস্থি এবং ঊর্দ্ধবাহুর অংশ পাওয়া গেছে। এই সব কারণে এই গলিকে মৃতমানুষের গলি বলা হয়।
(ii) এই তথ্য থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদদের কয়েকজন এই সিদ্ধান্ত নেন যে সিন্ধু সভ্যতাতে আর্যদের আক্রমণ হয়েছিল এবং এই আক্রমণের ফলেই সভ্যতাটি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে।
(iii) জন মার্শাল আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়ার একজন অধিকর্তা যখন হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কৃত হয়েছিল। তার লেখা একটি বই হল ‘মহেনজোদারো এবং ‘সিন্ধুসভ্যতা’।
প্রশ্নঃ ৫। ৩নং প্রশ্নের পাঠাংশ থেকে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও—
(i) ঋগবেদে ‘পুর’ কথাটির অর্থ কী?
(ii) জর্জ ডালেস কী তথ্য দিয়েছিলেন?
(iii) হরপ্পা সভ্যতার বিলুপ্তির কারণ সম্বন্ধে তুমি কী মনে করো?
উত্তরঃ (i) ঋগবেদে ‘পুর’ কথাটির অর্থ হল দুর্ভেদ্য স্থান।
(ii) জর্জ ডালেস্ বলেছিলেন যে হরপ্পার ধ্বংসস্তূপে পাওয়া নরকঙ্কালগুলি এক সময়ের নয়।
(iii) হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের কোন একটি কারণ নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব। বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণ, রাজনৈতিক কারণ এবং অর্থনৈতিক কারণ এই উন্নত সভ্যতাকে দুর্বল করেছিল হয়তো কিন্তু এগুলির দ্বারা এত উন্নত এবং বিশাল সভ্যতা একেবারে বিলুপ্ত হওয়া অসম্ভব ছিল। হয়তো আর্যদের দ্বারা আক্রমণই এই সভ্যতাকে একেবারে বিলপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছিল। যদিও জর্জ ডালেস এর মত কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক এই ধারণার বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন।
প্রশ্নঃ ৬। নিচের পাঠাংশগুলি ভালোভাবে পড়ে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
পরবর্তীকালে হরাপ্পায় শীলমোহর আবিষ্কৃত হয় দয়ারাম সাহানীর মত প্রত্নতাত্ত্বিক দ্বারা বিংশ শতকের প্রথমার্ধে। এসকল শীলমোহর স্তরের মধ্যে পাওয়া যায়, যেসকল প্রাচীন ঐতিহাসিক পর্যায় হতেও যথেষ্ট প্রাচীন। এই সময় হতে এদের বিশেষত্ব উপলব্ধি করা শুরু হয়। আরেক প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখাল দাস ব্যানার্জি একই ধরনের শীলমোহর মহেন্জোদারোতে আবিষ্কার করেন যা এই অনুমানে-এ উপনীত করে যে এই স্থানগুলি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতির অঙ্গ। এইসকল তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করে এ এস আই-এর মুখ্য অধিকর্তা বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেন সিন্ধু উপত্যকায় এক নূতন সভ্যতার আবিষ্কারের কথা। ‘দ্য স্টোরী অব ইন্ডিয়ান আর্কিওলজি’তে এস্. এন. রায় লেখেন, ‘নার্শাল ভারতকে যেভাবে পেয়েছেন তা হতেও তিন হাজার বৎসর প্রাচীন হিসাবে রেখে যান। এর কারণ হলো তখন পর্যন্ত একই প্রকার, অচিহ্নিত শীলমোহর মেসোপটেমিয়ার খননস্থলেও পাওয়া যায়। এর ফলে গোটা বিশ্ব জানতে পারে যে শুধুমাত্র একটি নূতন সভ্যতাই নয়, মেসোপটেমিয়ার সমকালীন এক নূতন সভ্যতার কথা।
বস্তুতঃ এ. এস. আই.-এর মুখ্য অধিকর্তা হিসাবে জন মার্শালের কার্যকাল ভারতীয় পুরাতত্ত্বে এক বিশাল পরিবর্তন সাধিত করে। এবং গ্রীস ও ক্রীটে তার কর্মঅভিজ্ঞতাকে এইক্ষেত্রে কাজে লাগান। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যদিও কানিংহামের ন্যায় অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের প্রতি মার্শাল আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু তিনি সমানভাবে দৈনন্দিন— জীবনশৈলীর প্রতিও আগ্রহী ছিলেন।
(i) সিন্ধু উপত্যকার নতুন সভ্যতা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদনকারী দুজন পুরাতত্ত্ববিদদের নাম লেখো।
(ii) শীলমোহরের আবিষ্কার পুরাতত্ত্ববিদদের কীভাবে সাহায্য করেছিল?
(iii) ভারতীয় পুরাতত্ত্বে জন মার্শালের অবদানসমূহ কী ছিল?
উত্তরঃ (i) দুজন পুরাতত্ত্ববিদের নাম হল রাখাল দাস ব্যানার্জি এবং দয়ারাম সাহানী।
(ii) শীলমোহরের আবিষ্কার পুরাতত্ত্ববিদদের সামনে নতুন সভ্যতার আবিষ্কারের পথ খুলে দিয়েছিল। দয়ারাম সাহানী হরপ্পাতে যে শীলমোহর আবিষ্কার করেন সেগুলি যে শীলমোহর স্তরে পাওয়া যায়, সেগুলি প্রাচীন ঐতিহাসিক পর্যায় হতেও যথেষ্ট প্রাচীন ছিল। আরেক প্রত্নতাত্ত্বিক রাখাল দাস ব্যানার্জি মহেঞ্জোদারোতে একই ধরনের শীলমোহর আবিষ্কার করেন যা এই অনুমানে উপনীত করে যে এই স্থানগুলি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতির অঙ্গ।
(iii) ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বে জন মার্শাল নতুন যুগের সূচনা করেন। জন মার্শালের নেতৃত্বে রাখাল দাস ব্যানার্জি, দয়ারাম সাহানী এবং আরও কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেন।
মানচিত্র কার্য
প্রশ্নঃ ১। নিচে মানচিত্রে যেসকল স্থানে কৃষি কাজের প্রমাণ পাওয়া গেছে সেই স্থানগুলি পেন্সিলের সাহায্যে বৃত্তাঙ্কন করো। যেখানে কাঁচামাল উৎপন্ন হওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে সেখানে ‘X’ এবং যেসকল স্থলে হস্তশিল্প উৎপাদনের প্রমাণ পাওয়া গেছে সেই স্থলে ‘R’ চিহ্ন বসাও।
উত্তরঃ
প্রশ্নঃ ২। মানচিত্রে হরপ্পার প্রধান পাঁচটি স্থানের চিহ্ন দেখাও।
উত্তরঃ