Class 12 Economics Chapter 4 আয় নির্ধারণ | Class 12 Economics Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter AHSEC Board HS 2nd Year Economics Chapter 4 আয় নির্ধারণ Notes and select needs one.
Class 12 Economics Chapter 4 আয় নির্ধারণ
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given AHSEC Board Bengali Medium Class 12 Economics Chapter 4 আয় নির্ধারণ Solutions for All Subject, You can practice these here.
আয় নির্ধারণ
Chapter: 4
ক – অংশ (সমষ্টিগত অর্থবিজ্ঞান)
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। সামগ্রিক চাহিদা কী ?
উত্তরঃ ঘরোয়া খণ্ড, উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এবং সরকার একটি অর্থনীতিতে নির্দিষ্ট বছরে উৎপাদিত দ্রব্য এবং সেবা ক্রয় করতে যে পরিমাণ মুদ্রা খরচ করে তাকে সামগ্রিক চাহিদা বলে। অর্থাৎ একটি অর্থনীতিতে চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবার মোট চাহিদাকে সামগ্রিক চাহিদা বলে।
প্রশ্ন ২। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা (MPS) যদি 0.3 হয়, আয়ু গুণক নির্ধারণ করো।
উত্তরঃ
প্রশ্ন ৩। Ceteris Paribus এর আক্ষরিক অর্থ কী ?
উত্তর। ‘সেটারিস পারিবাস’ (Ceteris Paribus) এর আক্ষরিক অর্থ ‘অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত থাকে।’
প্রশ্ন ৪। ‘একটি নির্দিষ্ট বছরে জনসাধারণ যা ব্যবহার করে তাকে উপভোগ বলে কিন্তু ওই সময়ে ব্যবহার করার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা ধরা হবে না’ শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখো।
উত্তরঃ অশুদ্ধ।
প্রশ্ন ৫। অর্থনীতির ভারসাম্য অবস্থাতে যখন চূড়ান্ত দ্রব্যের বাজার ভারসাম্যতা থাকে, তখন প্রত্যাশিত যোগান প্রত্যাশিত চাহিদার সমান হয়। (শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখো।)
উত্তরঃ শুদ্ধ।
প্রশ্ন ৬। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
পরিকল্পিত উপভোগের মূল্যকে ……….উপভোগ বলা হয়।
উত্তরঃ প্রত্যাশিত।
প্রশ্ন ৭। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
চলকের প্রকৃত মূল্যের বিপরীতে তার পরিকল্পিত মূল্যকে ……….. বলা হয়।
উত্তরঃ প্রত্যাশিত।
প্রশ্ন ৮। মানুষ যত বেশি মিতব্যয়ী হয়, তাদের সঞ্চয় তত কম হয় বা পূর্বের সমান থাকে এই অবস্থানের / পরিস্থিতির নাম লেখো।
উত্তরঃ মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র।
প্রশ্ন ৯। একটি ধ্রুবকের মানের পরিবর্তনের ফলে রেখাচিত্রের পরিবর্তনকে বলা হয়। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ পরামিতিক/বেষ্টনীগত পরিবর্তন (Parametric shift) |
প্রশ্ন ১০। শুদ্ধ উত্তর বেছে শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
অতিরিক্ত ভোগ ও অতিরিক্ত আয়ের অনুপাতটি হল ………..
(প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা/প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা/প্রান্তিক আয়)
উত্তরঃ প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (MPC)।
প্রশ্ন ১১। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার অর্থ লেখো।
উত্তরঃ অতিরিক্ত আয়ে অতিরিক্ত উপভোগের অনুপাতকে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা বলে।
প্রশ্ন ১২। প্রত্যাশিত বিনিয়োগের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ পরিকল্পিত বিনিয়োগের মূল্যকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ বলে।
প্রশ্ন ১৩। গুণক এবং প্রান্তিক উপভোগের প্রবণতার মধ্যে সম্পর্ক দেখাও।
উত্তরঃ গুণক এবং প্রান্তিক উপভোগ পরস্পর সম্পর্কিত। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা অধিক হলে গুণক অধিক হবে।
প্রশ্ন ১৪। MPS এর মান শূন্য হলে, MPC এর মান কত ?
উত্তরঃ ⇒ MPC + MPS = 1
⇒ MPC = 1- MPS
⇒ MPC = 1 – 0
⇒ MPC = 1
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
1. MPC এবং MPS এর মধ্যে সম্পর্ক কী ?
উত্তরঃ MPC + MPS = 1
2. কার্যকরী চাহিদা কী ?
উত্তরঃ কার্যকরী চাহিদা হল সামগ্রিক চাহিদার নির্দিষ্ট স্তর, যে স্তরে সামগ্রিক চাহিদা সামগ্রিক যোগানের সমান হয়।
3. ‘সে’-র (Say’s) বাজার বিধি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ‘সে’-র বাজার বিধি অনুযায়ী, Supply creates its own demand অর্থাৎ যোগান নিজেই তার চাহিদা সৃষ্টি করে।
4. পরিবারের ভোগ কীসের ওপর নির্ভর করে ?
উত্তরঃ ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয়ের ওপর নির্ভর করে।
5. বিনিয়োগ গুণকের সর্বাধিক মূল্য কত ?
উত্তরঃ অসীম।
6. বিনিয়োগ গুণকের সর্বনিম্ন মূল্য কত ?
উত্তরঃ 1 (one)
7. উপভোগ কাকে বলে ?
উত্তরঃ প্রাকৃতিক উপকরণ ও মানুষের শ্রম দ্বারা যে সকল দ্রব্য ও সেবাকার্য উৎপাদন করা হয় ওদের প্রত্যক্ষ ও চূড়ান্ত ব্যবহারকে উপভোগ (consumption) বলে। যেমন – খাদ্য দ্রব্য ভোগ করা, পোশাক পরিধান করা, মোবাইল বা আসবাবপত্র ব্যবহার করা ইত্যাদি।
8. Keynesian আয় নিরূপণ নক্সার 45° রেখাটির তাৎপর্য কী ?
উত্তরঃ সামগ্রিক যোগান এবং সামগ্রিক চাহিদা পরস্পর সমান।
9. স্বতন্ত্র ভোগব্যয় মানে কী ?
উত্তরঃ একটি অর্থনীতির সকল পরিবার বাঁচার তাগিদে ন্যূনতম স্তরের ভোগকে অর্থনীতির পরিভাষায় স্বতন্ত্র ভোগব্যয় বলে।
10. আয় ও নিয়োগ নির্ধারণের প্রসঙ্গে অতিরিক্ত চাহিদার সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ প্রচলিত দামে বাজার যোগান থেকে বাজার চাহিদা বেশি হয়, এই পরিস্থিতিকে ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ বলা হয়। এই অবস্থায় উৎপাদকরা যোগান হ্রাস করবে, ফলে আয় ও নিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা কী ?
উত্তরঃ আয়ের পরিবর্তনের ফলে সঞ্চয়ের পরিবর্তনের অনুপাতকে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা বলে।
প্রশ্ন ২। দীর্ঘকালে কেবল দামের তারতম্য ঘটে বলে ধরা হয় কেন ?
উত্তরঃ দ্রব্যের চাহিদা ও যোগান পরস্পর সমান থাকা অবস্থায় বাজার দর নির্ধারিত হয়। স্বল্পকালে চাহিদা ও যোগানের কোন পরিবর্তন হয় না বলে ধরা হয়। কিন্তু দীর্ঘকালে, চাহিদা ও যোগানের বাজার ক্রিয়া পরিবর্তন হওয়ায় বাজার দামের পরিবর্তন হয়। তাই, ধরা হয়, দীর্ঘকালে শুধু দামের তারতম্য ঘটে।
প্রশ্ন ৩। উৎপন্ন গুণিতক কী ?
অথবা,
বিনিয়োগ গুণক কী ? যদি 200 কোটি টাকার বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আয় 800 কোটি টাকা বৃদ্ধি পায় তাহলে বিনিয়োগ গুণকের মান কত হবে নির্ণয় করো।
উত্তরঃ বিনিয়োগ গুণক হল বিনিয়োগের পরিবর্তন ও আয়ের পরিবর্তনের অনুপাত।
উদাহরণস্বরূপ, 200 কোটি টাকা বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে জাতীয় আয় যদি 600 কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়, তাহলে গুণক হবে 3।
প্রশ্ন ৪। উপভোগ ব্যয় কী ?
উত্তরঃ একটি অর্থনীতির সকল পরিবার ব্যক্তিগত উপভোগের উদ্দেশ্যে দ্রব্য এবং সেবা ক্রয় করা মোট ব্যয়কে উপভোগ ব্যয় বলে।
প্রশ্ন ৫। একটি অর্থ ব্যবস্থায় যদি প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (C) 0.9 হয়, তাহলে আয় গুণকের মান বের করো।
উত্তরঃ
প্রশ্ন ৬। একটি অর্থনীতির স্বয়ংচালিত (autonomous) ভোগ হল 500 কোটি টাকা, স্বয়ংচালিত বিনিয়োগ 150 কোটি টাকা, সরকারি ব্যয় 200 কোটি টাকা এবং ব্যক্তিগত আয় 600 কোটি টাকা। যদি প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা (MPS) 0.8 হয়, তাহলে অর্থনীতির সামগ্রিক আয়ম্ভর নির্ণয় করো।
প্রশ্ন ৭। মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র/আপাতবিরোধী সত্য (Paradox of thrift) ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ‘মিতব্যয়িতার আপাত বিরোধী সত্য’ এই আপ্তবাক্যটি অধ্যাপক কেইনসের আয় সত্য এই পরিস্থিতিতে মানুষ যত বেশি মিতব্যয়ী হয়, তাদের সঞ্চয় ততো কম হয়, বা পূর্বের সমান থাকে।
প্রশ্ন ৮। গুণক (K) ও প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা (MPS) এর মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তরঃ
প্রশ্ন ৯। গুণক এবং প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তরঃ
প্রশ্ন ১০। সঞ্চয় কাকে বলে ?
উত্তরঃ আয়ের যে অংশ ব্যয় করা হয় না, সেই অংশটিকে সাধারণতঃ সঞ্চয় বলা হয়। সূত্রাকারে বলা যায়, S = Y – C
এখানে,
S = সঞ্চয়
Y = আয়
C = ভোগ/ ব্যয়
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
1. অধ্যাপক কেইনসের মূল কথা/ প্রতিপাদ্য বিষয় কী কী ?
উত্তরঃ অধ্যাপক কেইনস বিশ্বাস করতেন –
(১) পূর্ণ নিয়োগাবস্থা কম হলেও একটি অর্থনীতি ভারসাম্যে পৌঁছতে পারে।
(২) চাহিদাই যোগান সৃষ্টি করে।
(৩) উৎপাদন স্তর, আয় ও নিয়োগ – এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চলক সামগ্রিক চাহিদা দ্বারা নির্ধারিত হয়।
(৪) সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সামগ্রিক চাহিদা ও সামগ্রিক যোগান সমাবস্থায় আনা সম্ভব।
2. প্রত্যাশিত ও প্রকৃত বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তরঃ পরিকল্পিত বিনিয়োগের মূল্যকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ বলে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট বছরে সরকার বা উৎপাদক বিনিয়োগ বৃদ্ধির নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে, এটাকে বলা হবে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ। কিন্তু প্রকৃত বিনিয়োগ হল একটি নির্দিষ্ট বছরে সরকার বা উৎপাদক বাস্তব অর্থে বিনিয়োগ করে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। প্রত্যাশিত বিনিয়োগ কী ?
উত্তরঃ যখন উৎপাদক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে বিনিয়োগ করে, তাকে প্রত্যাশিত বা Ex-ante বিনিয়োগ বলে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ভারত সরকার নিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে, এটাকে বলা হবে প্রত্যাশিত বা পরিকল্পিত বিনিয়োগ। যখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লাভের উদ্দেশ্য সামনে রেখে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বাসনা করে, সেটিও প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হবে।
প্রশ্ন ২। প্রত্যাশিত উপভোগের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ সকল পরিবারের পরিকল্পিত মোট ভোগ ব্যয়কে প্রত্যাশিত উপভোগ বলে। ভোগ কার্যকে প্রকাশ করা যায়।
প্রশ্ন ৩। স্বনিরূপিত বিনিয়োগ এবং প্রণোদিত বিনিয়োগ ধারণা দুটি ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
স্বতন্ত্র বিনিয়োগ ও অভিপ্রেত বিনিয়োগের পার্থক্য লেখো।
উত্তরঃ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার অধীনে সমাজ কল্যাণের উদ্দেশ্যে সরকার বা সরকারি কর্তৃপক্ষ যে বিনিয়োগ করে থাকেন, তা-ই স্বনিরূপিত বিনিয়োগ। সকল আয়স্তরে স্বতন্ত্র বিনিয়োগ স্থির থাকে। অর্থাৎ আয় অস্থিতিস্থাপক।
আয়স্তর, ভোগ, মূল্যস্তর, সুদের হার প্রভৃতির পরিবর্তন লক্ষ্য করে মুনাফা অর্জনের আশায় যে বিনিয়োগ করা হয় তাকে উদ্দেশ্যমূলক বা অভিপ্রেত বিনিয়োগ বলে। ঘরোয়া খণ্ড এবং ফার্ম অভিপ্রেত বিনিয়োগ করেছিল নন। অভিপ্রেত বিনিয়োগ আয়ের স্তরের সঙ্গে ধনাত্মকভাবে সম্পর্কিত অর্থাৎ এটি আয় স্থিতিস্থাপক।
তাদের সঞ্চয় ততো কম হয় বা পূর্বের সমান থাকে।
প্রশ্ন ৪। প্রত্যাশিত (Ex-ante) এবং বাস্তবায়িত (Ex-post) কী ?
উত্তরঃ চলকের বাস্তবমূল্যের বিপরীতে পরিকল্পিত মূল্যকে Ex-ante বা প্রত্যাশিত বলে। একটি অর্থনীতির প্রত্যাশিত উপার্জন, প্রত্যাশিত চাহিদা ও যোগান এবং প্রত্যাশিত বিনিয়োগের স্তরকে বুঝাতে Ex-ante শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
চলকের পরিকল্পিত মূল্যের বিপরীতে বাস্তব বা আদায়কৃত মূল্যকে Ex-post বা বাস্তবায়িত বলে। একটি অর্থনীতির প্রকৃত উপার্জন, প্রকৃত চাহিদা, প্রকৃত যোগান ও প্রকৃত বিনিয়োগের স্তরকে বুঝাতে Ex-post শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন ৫। প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা এবং প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো।
উত্তরঃ প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা এবং প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার মধ্যে পার্থক্য উভয়ের সংজ্ঞার মধ্যে নিহিত আছে।
আয়ের পরিবর্তনের ফলে সঞ্চয়ের যে আনুপাতিক পরিবর্তন হয় তাকে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা (MPS) বলে। কিন্তু আয়ের পরিবর্তনের ফলে ভোগের যে আনুপাতিক পরিবর্তন হয় তাকে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (MPC) বলে।
সাংকেতিকভাবে, প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা
আন্তঃসম্পর্ক ভিত্তিতে, প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা (MPS) = 1 – MPC, প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (MPC) = 1 – MPS
প্রশ্ন ৬। সামগ্রিক চাহিদার উপাদানগুলো কী কী ?
অথবা,
সামগ্রিক চাহিদা কী ? সামগ্রিক চাহিদার উপাদানগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ একটি দেশের একটি নির্দিষ্ট বছরে যে সকল দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন হয়, সেই সকল দ্রব্য সামগ্রীর মোট চাহিদাকে সামগ্রিক চাহিদা বলে।
সামগ্রিক চাহিদার উপাদানগুলো হল –
(১) পরিবারের ভোগ্য চাহিদা: পরিবার দৈনন্দিন ভোগকার্যের জন্য বিভিন্ন দ্রব্য ব্যবহার করে। পরিবার ভোগের জন্য কী পরিমাণ দ্রব্য ব্যবহার করবে, তা আয়ের স্তর এবং ভোগ প্রবণতা এ দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। আয়ের পরিমাণ অধিক হলে সাধারণত মোট ভোগের পরিমাণ অধিক হয় এবং আয়ের পরিমাণ কম হলে মোট ভোগের পরিমাণ কম হয়। ভোগ ব্যয় নির্ধারণের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে ভোগ প্রবণতা। ভোগ্যদ্রব্য ক্রয়ের ইচ্ছার তীব্রতাকে ভোগ প্রবণতা বলে। ভোগ প্রবণতার একটি অন্যতম বিশেষত্ব হল ব্যক্তির আয় বৃদ্ধি পেলে ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায় কিন্তু যে পরিমাণ আয় বৃদ্ধি ঘটে, সে পরিমাণ ভোগ বৃদ্ধি পায় না।
(২) ব্যক্তিগত বিনিয়োগ চাহিদা: অতিরিক্ত বাস্তব মূলধন সৃষ্টি হওয়াকে বিনিয়োগ বলে। যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, উৎপাদনের সাজ সরঞ্জাম, কাঁচামাল ইত্যাদি প্রকৃত মূলধনের নেট বৃদ্ধির জন্য উৎপাদক বিনিয়োগ চাহিদা সৃষ্টি করে। উৎপাদকের বিনিয়োগ করার মূল প্রেরণা হচ্ছে মুনাফার প্রত্যাশা।
(৩) সরকারি ব্যয়: সরকার সমাজের চাহিদা মেটাতে ভোগ্যদ্রব্য ও মূলধনজাত দ্রব্য ক্রয় করতে পরিকল্পিত ব্যয় করে। সুতরাং, সরকারি ব্যয় হচ্ছে সামগ্রিক চাহিদার একটি অন্যতম উপাদান।
(৪) শুদ্ধ রপ্তানি: শুদ্ধ রপ্তানি হল কোন দেশে রপ্তানিকৃত দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় অন্যান্য দেশ সেই দেশ থেকে অধিক দ্রব্য আমদানি করে। অর্থাৎ রপ্তানি থেকে আমদানি বিয়োগ করলেই শুদ্ধ রপ্তানি বের করা যায়।
প্রশ্ন ৭। একজন ব্যক্তির স্বতন্ত্র ভোগের পরিমাণ 500 কোটি টাকা এবং তার ব্যক্তিগত ব্যয়যোগ্য আয় হল 5000 কোটি টাকা। যদি তার প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা 0.8 হয়, তাহলে সামগ্রিক ভোগের পরিমাণ নির্ণয় করো।
উত্তরঃ
প্রশ্ন ৮। একটি অর্থব্যবস্থায় নতুন করে 1000 কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদি MPS = 0.4 হয়, তাহলে জাতীয় আয় কি পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে ?
উত্তরঃ
সুতরাং, জাতীয় আয় 2500 কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।
প্রশ্ন ৯। সামগ্রিক যোগান কী ? সামগ্রিক যোগানের উপাদানগুলো কী কী ?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট বছরে একটি অর্থনীতিতে উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবাসামগ্রীর মুদ্রামূল্যকে সামগ্রিক যোগান বলে।
সামগ্রিক যোগানের উপাদানগুলো হল –
(১) ভোগ: কোন দ্রব্যের উপযোগ নিঃশেষ করাকেই ভোগ বলে। দ্রব্য ব্যবহার করার ফলে উপযোগ নিঃশেষ হয়। ভোগকে কেন্দ্র করে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যের শুরু এবং সমাপ্তি। বিভিন্ন প্রকার দ্রব্য এবং সেবাকার্য ভোগের মাধ্যমে মানুষ তার অনন্ত অভাবকে তৃপ্তি দান করে।
(২) সঞ্চয়: বর্তমানে ভোগ না করে যা ভবিষ্যতের জন্য জমা করে রাখা হয় তাকে সঞ্চয় বলে। অর্থাৎ বর্তমান আয় হতে ভোগ বাবদ ব্যয় বাদ দিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকে তাকেই সঞ্চয় বলে। সঞ্চয় সামগ্রিক যোগানের উপাদান। কারণ সঞ্চয় ভবিষ্যতের জন্য মজুত হিসাবে থাকে।
প্রশ্ন ১০। কোন অর্থনীতির প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা 0.85,
(ক) আয় গুণক/বিনিয়োগ গুণক নির্ণয় করো।
(খ) যদি সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ 250 কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে কী পরিমাণ অতিরিক্ত আয় সৃষ্টি করে ?
উত্তরঃ
∴ অতিরিক্ত আয়ের পরিমাণ = 1667.5 কোটি টাকা।
প্রশ্ন ১১। বিনিয়োগ চাহিদার নির্ধারকসমূহ কী কী ?
উত্তরঃ বিনিয়োগ চাহিদার নির্ধারকসমূহ হল –
(১) মূলধনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা: এক একক মূলধন সামগ্রী প্রয়োগ করার ফলে যে অতিরিক্ত উৎপাদন আশা করতে পারি, সেটিই হবে সংশ্লিষ্ট মূলধন সামগ্রীর প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা। মূলধনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা বাড়লে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হবে। কিন্তু মূলধনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতা কমলে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে এবং দেশের আর্থিক অবস্থা সংকোচনমুখী হবে।
(২) সুদের হার: যদি বিনিয়োগের জন্য অন্যের নিকট থেকে ঋণ ধার করতে হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীকে সুদ দিতে হয়। প্রত্যেক ফার্ম নতুন বিনিয়োগ করার সময় মূলধনের প্রান্তিক উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে সুদের হারের তুলনা করে। মূলধনের প্রান্তিক দক্ষতা সুদের হারের সঙ্গে সমান হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বিনিয়োগ করা লাভজনক হবে। সুদের হার এর চেয়ে বেশি হলে বার্ষিক শুদ্ধ লাভ হ্রাস পায় এবং ফলে বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পায়।
প্রশ্ন ১২। Paradox of thrift অর্থাৎ মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র অর্থাৎ Paradox of thrift – এই আপ্তবাক্যটি অধ্যাপক কেইনসের আয় এবং নিয়োগ নির্ধারণ তত্ত্বের অন্যতম উপাদান যা সক্রিয় চাহিদার সঙ্গে জড়িত। কেইনস বিশ্বাস করতেন, বিনিয়োগ ছাড়া সঞ্চয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে না এবং এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বর্তমানের ভোগ কর্তন করে সঞ্চয় বৃদ্ধি করলে সক্রিয় চাহিদা হ্রাস পাবে। চাহিদা হ্রাস পেলে দ্রব্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে। উৎপাদন হ্রাস পেলে বিনিয়োগ হ্রাস করতে লাগবে। বিনিয়োগ হ্রাস পেলে উৎপাদনের উপাদানসমূহের নিয়োগ হ্রাস পাবে অর্থাৎ জনসাধারণের উপার্জন হ্রাস পাবে। এরকম অবস্থায় একটি জাতি অধিক সঞ্চয়ের কথা ভাবলেও সঞ্চয় কম হয় বা পূর্বের সমান থাকে। কেইনস যুক্তির দ্বারা প্রতিপন্ন করা এই সত্যটিকে ‘মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র’ বলা হয়।
প্রশ্ন ১৩। গুণকের চারটি অভিধারণা বা অনুমান লেখো।
উত্তরঃ বিনিয়োগ গুণকের অভিধারণাগুলি হল –
(১) অর্থনীতিতে স্বয়ংচালিত বিনিয়োগ হবে।
(২) প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা অপরিবর্তিত থাকবে।
(৩) আয় উপার্জন এবং ভোগের জন্য ব্যয় – এ দুটির মধ্যে সময়ের ব্যবধান থাকবে না।
(৪) বর্তমান আয় দিয়ে ভোগক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
(৫) বিনিয়োগের নেট বৃদ্ধি হবে।
প্রশ্ন ১৪। বিনিয়োগ গুণকের চারটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ বিনিয়োগ গুণকের চারটি বৈশিষ্ট্য হল –
(১) বিনিয়োগ পরিবর্তনের সাথে গুণক সম্পর্কিত।
(২) গুণকের আকার প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার ওপর নির্ভর করে। MPC অধিক হলে গুণকের আকার বৃদ্ধি পাবে।
(৩) গুণক এবং প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার সম্পর্ক পরস্পর বিপরীতমুখী। MPS অধিক হলে গুণকের আকার হ্রাস পায়।
(৪) গুণকের মূল্য নিম্নতম এক থেকে সর্বাধিক অসীম হতে পারে।
(৫) গুণক সম্মুখ ও পশ্চাত উভয় দিকে ক্রিয়া করে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
1. এক অর্থব্যবস্থায় জাতীয় আয় 1000 কোটি টাকা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। MPC = 0.6 হলে উক্ত লক্ষ্যে উপনীত হতে বিনিয়োগ কত পরিমাণ বৃদ্ধি হতে হবে ?
উত্তরঃ দেওয়া আছে,
2. একটি অর্থনীতিতে MPC- এর মান 0.4। অর্থনীতিটিতে নতুন করে 500 কোটি টাকা আয় প্রবাহিত করার জন্য কী পরিমাণের নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে ?
উত্তরঃ দেওয়া আছে,
আয়ের পরিবর্তনের অনুপাত (∆Y) = 500 কোটি
MPC = 0.4
বিনিয়োগের পরিবর্তনের অনুপাত (∆I) = ?
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। বিনিয়োগ গুণক এবং প্রান্তিক উপভোগ প্রবণতার মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ জাতীয় আয়ের ওপর বিনিয়োগের প্রভাব বিনিয়োগ গুণক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এক নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ বাড়লে যে হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় তাকেই গুণক বলে।
আয়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভোগের যে আনুপাতিক পরিবর্তন হয় তাকে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (MPC) বলে।
বিনিয়োগ গুণক ধারণাটি প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা হতে এসেছে।
নিচের সূত্র থেকে বুঝা যায়,
ওপরের সমীকরণ থেকে বুঝা যায়, গুণকের মূল্য প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার ওপর নির্ভর করে। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা অধিক হলে গুণকের আকার অধিক হবে। এবং প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা কম হলে গুণকের আকার ছোট হবে।
সুতরাং, গুণক এবং প্রান্তিক ভোগ প্রবণতার মধ্যে নিকট সম্পর্ক আছে। MPC পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গুণক পরিবর্তন হয়।
প্রশ্ন ২। চিত্রের সাহায্যে সক্রিয় চাহিদা নীতির ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
সামগ্রিক যোগান এবং সামগ্রিক চাহিদা রেখার সাহায্যে একটি অর্থনীতির ভারসাম্য আয় নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ অধ্যাপক কেইনসের মতে, তারল্য প্রীতি মানবতার জন্য এক ভয়ানক অভিশাপ। ধনী শ্রেণির সঞ্চয় স্পৃহা এবং দরিদ্র শ্রেণির ভোগস্পৃহা অধিক থাকে। ফলে ধনী শ্রেণি থেকে দরিদ্র শ্রেণির হাতে ক্রয় ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন। কারণ, তা করলে দেশে সক্রিয় বা কার্যকর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সঞ্চয় প্রবণতা যে হারে বৃদ্ধি হবে, ঠিক একই হারে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা কমে যাবে এবং গুণকের মূল্য হ্রাস পাবে। এই অবস্থাকে ‘মিতব্যয়িতার আপাতবিরোধী সত্য’ বলে অভিহিত করা হয়। মানুষ মিতব্যয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সঞ্চয় কমে যায়। এর কারণ হল – কার্যকর চাহিদা হ্রাস পেলে নিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং সেটা হলে আয়ের পরিমাণ কমে যাবে এবং সঞ্চয় করার ক্ষমতা এবং প্রবণতা উভয়ই হ্রাস পাবে।
সর্বমোট চাহিদা এবং সর্বমোট যোগান ক্রিয়ার দ্বারা সক্রিয় চাহিদা নির্ধারণ হয়। সর্বমোট চাহিদা সূচিতে নিয়োগের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদকের উৎপাদিত দ্রব্যের মোট চাহিদার ছবি প্রতিফলিত হয়। আবার সর্বমোট যোগান সূচিতে এক নির্দিষ্ট সময়সীমার ভিতরে উপলব্ধ মোট উৎপাদনের মূল্য প্রকাশ করা হয়। সর্বমোট চাহিদা সূচি দ্বারা উৎপাদকের প্রাপ্তি অর্থাৎ আয় বুঝায় এবং সর্বমোট যোগান সূচি দ্বারা উৎপাদকের ব্যয় বুঝায়। যখন মোট আয় এবং মোট ব্যয় সমান হবে, তখনই কার্যকর বা সক্রিয় চাহিদা নির্ধারিত হবে।
নিচে রেখাচিত্রের সাহায্যে কার্যকর চাহিদা দেখানো হল –
এই চিত্রে E’ হল কার্যকর চাহিদা বিন্দু। এই বিন্দুতে সর্বমোট চাহিদা এবং সর্বমোট যোগান পরস্পর সমান হয়েছে । কার্যকর বা সক্রিয় চাহিদাকে কেন্দ্র করে কেইনসের অর্থনীতি আবর্তিত। বিনিয়োগ, গুণক, উৎপাদন ক্ষমতা, বিনিয়োগ স্পৃহা ইত্যাদি অর্থনীতির ধারণা সক্রিয় চাহিদার বেড়াজালে আবদ্ধ।
প্রশ্ন ৩। গুণক কী ? গুণকের কার্যধারা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
বাজারে কীভাবে গুণক প্রক্রিয়া কাজ করে, ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ অধ্যাপক স্যামুয়েলসনের মতে, বিনিয়োগ পরিবর্তনের পরিমাণকে যে সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে আয় পরিবর্তনের পরিমাণ পাওয়া যায়, তাই হচ্ছে গুণক। যেমন, 200 কোটি টাকা বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে জাতীয় আয় 600 কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়, তাহলে গুণক হবে 3।
সূত্রাকারে,
সুতরাং, গুণক হচ্ছে বিনিয়োগের পরিবর্তন ও আয়ের পরিবর্তনের অনুপাত।
গুণকের কার্যধারা বলতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা হ্রাসের ফলে জাতীয় আয় কত গুণ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় এবং কীভাবে তা ঘটে থাকে তাকেই বুঝায়। এর উত্তর প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা হতে পাওয়া যায়। ভোগ প্রবণতার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দেশের আয় বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তির ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যে পরিমাণ আয় বৃদ্ধি ঘটে, সে পরিমাণে নয়। সুতরাং প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা সকল ক্ষেত্রেই একের কম হবে।
এ থেকে বুঝা যায়, প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা অধিক হলে গুণক অধিক হবে এবং ফলে বিনিয়োগের পরিবর্তনের নিমিত্তে আয়ের পরিবর্তনের মাত্রা অধিক গুণ হবে। যদি প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা অধিক হয়, তাহলে গুণক কম হবে এবং ফলে বিনিয়োগের পরিবর্তনের নিমিত্তে আয়ের পরিবর্তনের মাত্রা কমগুণ হবে।
প্রশ্ন ৪। মানুষ যত বেশি মিতব্যয়ী হয়, তাদের সঞ্চয় তত কম হয় বা পূর্বের সমান থাকে। ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র অর্থাৎ Paradox of thrift – এই আপ্তবাক্যটি অধ্যাপক কেইনসের আয় এবং নিয়োগ নির্ধারণ তত্ত্বের অন্যতম উপাদান যা সক্রিয় চাহিদার সঙ্গে জড়িত। কেইনস বিশ্বাস করতেন, বিনিয়োগ ছাড়া সঞ্চয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে না এবং এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বর্তমানের ভোগ কর্তন করে সঞ্চয় বৃদ্ধি করলে সক্রিয় চাহিদা হ্রাস পাবে। চাহিদা হ্রাস পেলে দ্রব্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে। উৎপাদন হ্রাস পেলে বিনিয়োগ হ্রাস করতে লাগবে। বিনিয়োগ হ্রাস পেলে উৎপাদনের উপাদানসমূহের নিয়োগ হ্রাস পাবে অর্থাৎ জনসাধারণের উপার্জন হ্রাস পাবে। এরকম অবস্থায় একটি জাতি অধিক সঞ্চয়ের কথা ভাবলেও সঞ্চয় কম হয় বা পূর্বের সমান থাকে। কেইনস যুক্তির দ্বারা প্রতিপন্ন করা এই সত্যটিকে ‘মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র’ বলা হয়।
প্রশ্ন ৫। বিনিয়োগের দ্বৈত দিক (Dual aspects of investment) ধারণা বর্ণনা করো।
উত্তরঃ একটি দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ ব্যয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে।
প্রথমতঃ বিনিয়োগ করা হলে দেশে মোট ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেমন – 100 কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগের অর্থ হচ্ছে 100 কোটি টাকা ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি। বিনিয়োগ ব্যয় দেশের মোট ব্যয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে স্বভাবতই দেশের মোট ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এরূপ ব্যয় বৃদ্ধি পেলে মূলধনজাত শিল্পে নিযুক্ত কর্মীদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে দেশে দ্রব্য সামগ্রীর ‘কার্যকর চাহিদা’ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং দেখা যায়, নতুন বিনিয়োগ সৃষ্টির একটি দিক হচ্ছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পায়, এবং তৎসঙ্গে আয় ও কার্যকর চাহিদা (Effective demand) বৃদ্ধি পায়। কেইনসীয় অর্থনীতির অনুগামী লেখকরা অর্থনৈতিক প্রসারের জন্য কার্যকর অর্থাৎ সক্রিয় চাহিদার দিকে অধিক গুরুত্ব দেন। বিনিয়োগের দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, নতুন বিনিয়োগের ফলে দেশে অধিক পরিমাণে মূলধন সামগ্রী উৎপাদন হয় এবং তা সমাজের বর্তমান মূলধন সামগ্রীর মোট পরিমাণের bসঙ্গে সংযুক্ত হয়। এর ফলে সমাজে দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নতুন বিনিয়োগ সৃষ্টির ফলে যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, উৎপাদনের সাজ সরঞ্জাম, পরিবহন সামগ্রী ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। ফলে পূর্বের তুলনায় সমাজ ওই সকল সৃষ্ট মূলধন সামগ্রীর দ্বারা ভবিষ্যতে আরও অধিক দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করতে পারে বলে এর উৎপাদন করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তর
প্রশ্ন ১। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা কী ? তা প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত ?
উত্তরঃ ব্যক্তিগত আয় বৃদ্ধি পেলে ভোগ কার্যের যে পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটে সেই বৃদ্ধিই হল প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তির আয় হল 1000 টাকা এবং ব্যয়ের পরিমাণ হল 800 টাকা। 200 টাকা হল সঞ্চয়ের পরিমাণ। এখন ধরা হল, এই ব্যক্তির আয় বৃদ্ধি পেয়ে 1200 টাকা হল। 200 টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই ব্যক্তির ভোগকার্য যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে সেই পরিমাণই হবে প্রান্তিক ভোগস্পৃহা। যদি 200 টাকার ভিতরে 100 টাকা ভোগকার্য বাবদ খরচ হয় তাহলে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা হবে 1/2 ভাগ, বাকি অংশ হবে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা। সুতরাং, প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা + প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা বর্ধিত আয়ের পরিমাণ। কেইনসের মতে, প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা এক থেকে কম হবে। প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা হ্রাস পাবে। কিন্তু প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা কম হলে প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্ন ২। প্রত্যাশিত বিনিয়োগ ও বাস্তবায়িত বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তরঃ যখন উৎপাদক নির্দিষ্ট লক্ষ্য সেট করে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে, সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিনিয়োগ করে তাকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ বলে। যখন ফার্ম লাভের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইচ্ছা করে তখন তাকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ বলে।
নির্দিষ্ট সময়ে অর্থনীতিতে প্রকৃত বা বাস্তব বিনিয়োগকে বাস্তবায়িত বিনিয়োগ বলে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার ভিত্তিতে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন আর্থিক কার্যকলাপের ফলই হল বাস্তবায়িত বিনিয়োগ।
প্রত্যাশিত বিনিয়োগ সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক কিন্তু বাস্তবায়িত বিনিয়োগ একটি প্রকৃত ধারণা।
প্রশ্ন ৩। মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র অর্থাৎ Paradox of thrift – এই আপ্তবাক্যটি অধ্যাপক কেইনসের আয় এবং নিয়োগ নির্ধারণ তত্ত্বের অন্যতম উপাদান যা সক্রিয় চাহিদার সঙ্গে জড়িত। কেইনস বিশ্বাস করতেন, বিনিয়োগ ছাড়া সঞ্চয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে না এবং এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বর্তমানের ভোগ কর্তন করে সঞ্চয় বৃদ্ধি করলে সক্রিয় চাহিদা হ্রাস পাবে। চাহিদা হ্রাস পেলে দ্রব্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে। উৎপাদন হ্রাস পেলে বিনিয়োগ হ্রাস করতে লাগবে। বিনিয়োগ হ্রাস পেলে উৎপাদনের উপাদানসমূহের নিয়োগ হ্রাস পাবে অর্থাৎ জনসাধারণের উপার্জন হ্রাস পাবে। এরকম অবস্থায় একটি জাতি অধিক সঞ্চয়ের কথা ভাবলেও সঞ্চয় কম হয় বা পূর্বের সমান থাকে। কেইনস যুক্তির দ্বারা প্রতিপন্ন করা এই সত্যটিকে ‘মিতব্যয়িতার আপাত স্ববিরোধী চরিত্র’ বলা হয়।
প্রশ্ন ৪। একটি রেখার ধ্রুবমানক স্থান পরিবর্তন কী ? একটি রেখা স্থান পরিবর্তন কিরূপে হয়।
(ক) যখন ঢাল কমে। ও
(খ) যখন তার ছেদ বৃদ্ধি পায়।
উত্তরঃ ধ্রুবমানকের মূল্য পরিবর্তনের চিত্রলেখকে ধ্রুবমানক পরিবর্তন বলে।
(১) যখন রেখার ঢাল (slope) কমে তখন রেখা নিচের দিকে স্থান পরিবর্তন করে। কিন্তু ঢাল বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে ঊর্দ্ধমুখী ঝুঁকি নেয়।
(২) যখন রেখার ছেদ বৃদ্ধি পায় তখন রেখা সমান্তরালভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়।
প্রশ্ন ৫। সক্রিয় বা কার্যকর চাহিদা কী ?
উত্তরঃ যখন অর্থনীতিতে চূড়ান্ত সামগ্রীর নির্দিষ্ট মূল্য এবং সুদের হার স্থির থাকবে, তখন সামগ্রিক চাহিদা সামগ্রিক যোগানের সমান হবে। এক্ষেত্রে সামগ্রিক যোগান পূর্ণ স্থিতিস্থাপক হওয়ায় সামগ্রিক যোগানের নির্ণায়ক হচ্ছে সামগ্রিক চাহিদা। একে বলা হয় সক্রিয় বা কার্যকরী চাহিদা।
প্রশ্ন ৬। যখন স্বয়ংচালিত বিনিয়োগ ও উপভোগ ব্যয় হল 50 কোটি টাকা এবং MPS হল 0.2 এবং আয়ের স্তর 4000 কোটি, তখনকার প্রত্যাশিত সামগ্রিক চাহিদা নির্ণয় করো। অর্থব্যবস্থা ভারসাম্য আছে কি না ? (কারণ দর্শাও)
উত্তরঃ
সামগ্রিক চাহিদা (AD) 3250 কোটি টাকা, যা আয়ের স্তর (Y) 4000 কোটি টাকা থেকে কম। তাই, অর্থনীতি ভারসাম্য অবস্থায় নয়।