Class 11 Political Science Chapter 19 শান্তি answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 19 শান্তি and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 19 শান্তি
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 19 শান্তি Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
শান্তি
পাঠ: ১৯
দ্বিতীয় খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। শান্তি কী?
উত্তরঃ সাধারণ অর্থে শান্তি বলতে যুদ্ধের অনুপস্থিতি বোঝায়। কিন্তু বাস্তব অর্থে শান্তি হল এমন এক পরিবেশ যেখানে বিশ্বের সকল মানুষ উন্নতির সকল প্রকার সুযোগ–সুবিধা লাভ করে এবং কোনো প্রকার শোষণ থাকে না।
প্রশ্ন ২। বিখ্যাত জার্মান দার্শনিকের নাম করো যিনি যুদ্ধকে গৌরবময় আখ্যা দিয়েছেন?
উত্তরঃ ফ্রেডারিক নিটসচে।
প্রশ্ন ৩। শান্তি সংস্থাপক হিসেবে উল্লেখযোগ্য একজন ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করো?
উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধী।
প্রশ্ন ৪। কাকে শান্তিবাদী বলা হয়?
উত্তরঃ যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সদা নিজেকে নিয়োজিত রাখে অর্থাৎ যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সংস্থাপক, ধারক ও বাহক এবং যুদ্ধ–বিরোধী।
প্রশ্ন ৫। রাষ্ট্রসংঘ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ৫১টি রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপন করে। এই আন্তর্জাতিক সংস্থাকে রাষ্ট্রসংঘ বলা হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য রাষ্ট্র সংখ্যা ১৯৩।
প্রশ্ন ৬। যে কোন্ এক প্রকার সংঘটিত হিংসার উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ সাম্প্রদায়িকতা।
প্রশ্ন ৭। শান্তির একটি প্রত্যাহ্বান কী?
উত্তরঃ সাম্প্রদায়িকতা।
প্রশ্ন ৮। কোন্ প্রকার যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহৃত হয় না?
উত্তরঃ ঠান্ডা যুদ্ধ বা স্নায়ু যুদ্ধ।
প্রশ্ন ৯। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে আমেরিকা কর্তৃক বোমা নিক্ষেপ করা জাপানের শহর দুটির নাম কী কী?
উত্তরঃ হিরোসিমা ও নাগাসাকি।
প্রশ্ন ১০। কিউবার মিসাইল সংকট কখন হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬২ সালে।
প্রশ্ন ১১। আমেরিকায় নিগ্রো দাসপ্রথা কোন্ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল?
উত্তরঃ ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত।
প্রশ্ন ১২। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণ বৈষম্যের সমাপ্তি কখন ঘটে?
উত্তরঃ ১৯৯২ সালে।
প্রশ্ন ১৩। খামের রোজ কে ছিলেন?
উত্তরঃ কম্বোডিয়ার শাসক ছিলেন।
প্রশ্ন ১৪। ভারতে অহিংসা নীতির প্রবক্তা কে ছিলেন?
উত্তরঃ মহাত্মা গান্ধী।
প্রশ্ন ১৫। মার্টিন লুথার কিং আমেরিকাতে কখন বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন?
উত্তরঃ ১৯৬০ দশকে।
প্রশ্ন ১৬। ‘পহালা গির মাতিয়া’ গ্রন্থের লেখক কে?
উত্তরঃ গিরিরাজ কিশোর।
প্রশ্ন ১৭। ইরাক কত সালে কুয়েত আক্রমণ করে?
উত্তরঃ ১৯৯০ সালে।
প্রশ্ন ১৮। বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে সন্ত্রাসবাদী হামলা কোন্ তারিখে সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর।
প্রশ্ন ১৯। যখন স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়, তখনই শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ লেখো।
উত্তরঃ হ্যাঁ।
প্রশ্ন ২০। ভুল উত্তরটি বেছে লেখোঃ
আন্তর্জাতিক আইন উন্নত করে উগ্রপন্থী কার্যকলাপ/শান্তি/সমষ্টিগত নিরাপত্তা/ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ।
উত্তরঃ উগ্রপন্থী কার্যকলাপ।
প্রশ্ন ২১। সঠিক উত্তর খোঁজে বের করোঃ
(ক) হিংসা শান্তির বিঘ্ন ঘটায়।
(খ) স্বজাতির প্রতি অনুরাগ শাস্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
(গ) জাতিভেদ প্রথা শান্তির একটি অবস্থা।
(ঘ) শান্তি রক্ষার জন্য সাম্প্রদায়িকতা উপযুক্ত।
উত্তরঃ (খ) স্বজাতির প্রতি অনুরাগ শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
প্রশ্ন ২২। কে প্রথম “সংঘটিত হিংসা’ (Structural Violence) শব্দটি ব্যবহার করেন?
উত্তরঃ জোহান গালটুং (Johan Galtung)
প্রশ্ন ২৩। “দি ফ্লাওয়ার্স অফ্ হিরোসিমা” গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তরঃ এদিতা মরিস।
প্রশ্ন ২৪। কিউবায় মিসাইল সংকট কখন সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৬২ সালে।
প্রশ্ন ২৫। কোন সালে সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙন সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে।
প্রশ্ন ২৬। গাঁথনিগত হিংসার একটি উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ সাম্প্রদায়িকতা।
প্রশ্ন ২৭। CTBT এর সম্পূর্ণ নাম রূপটি লেখো?
উত্তরঃ Comprehensive Test Ban Treaty.
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। আন্তর্জাতিক আইন কী?
উত্তরঃ বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে কতিপয় নিয়মনীতি নির্ধারণ করা হয় যা বিশ্বের বিভিন্ন সভ্য রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য অনুসরণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক অনুসৃত এই নিয়মনীতিগুলোকে আন্তর্জাতিক আইন বলা হয়।
প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রসংঘ কি নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রসংবরণ করতে সক্ষম হচ্ছে?
উত্তরঃ অধিক অস্ত্র সংগ্রহ ও মজুত শান্তি রক্ষার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রসংবরণ হল সর্বোত্তম উপায়। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য রাষ্ট্রসংঘ নিরস্ত্রীকরণ কমিশন গঠন করেছে। নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রসংবরণে রাষ্ট্রসংঘের সাফল্য মোটামোটি আশানুরূপ।
প্রশ্ন ৩। শান্তিবাদ কী?
উত্তরঃ শান্তিবাদ যুদ্ধ বা যে কোনো ধরনের হিংসাত্মক কার্যাবলীর বিরোধিতা করে। শান্তিবাদ নীতি বাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত। শান্তিবাদ যুদ্ধ, বলপ্রয়োগ, শোষণ প্রভৃতি নৈতিকভাবে ভুল বলে প্রচার করে। বাস্তববাদী শান্তিবাদ এরূপ নিয়মাবলী বিশ্বাস করে না। বাস্তববাদী শান্তিবাদ ভালো উপায়ে বিবাদের মীমাংসা করতে চায়।
প্রশ্ন ৪। সাম্রাজ্যবাদ কি শান্তির জন্য বিপজ্জনক?
উত্তরঃ হ্যাঁ। সাম্রাজ্যবাদ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিপজ্জনক। কারণ সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের জন্য সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা সব সময় যুদ্ধের আশ্রয় গ্রহণ করে। তাছাড়া সংঘটিত হিংসাগুলো সংঘটিত করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শাসকরাই দায়ী থাকেন। সাম্রাজ্যবাদ স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। তাই সাম্রাজ্যবাদ শাস্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।
প্রশ্ন ৫। শান্তির অর্থ ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ সাধারণ অর্থে শান্তি বলতে যুদ্ধের অনুপস্থিতি বোঝায়। কিন্তু বৃহৎ অর্থে শান্তি হল এমন একটি বিষয় যা যুদ্ধ, আগ্রাসন, গৃহযুদ্ধ, সংঘটিত হিংসাসমূহ এবং রাজনৈতিক হত্যার অনুপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত করে। প্রকৃত অর্থে শান্তি হল এমন এক পরিবেশ যেখানে বিশ্বের সকল মানুষ সার্বিক বিকাশের জন্য সকল প্রকার সুযোগ–সুবিধা লাভ করবে। এবং কোন প্রকার শোষণ বা বৈষম্য থাকবে না।
প্রশ্ন ৬। যে কোনো দুইপ্রকার হিংসার উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ (ক) সাম্প্রদায়িকতা।
(খ) অস্পৃশ্যতা।
প্রশ্ন ৭। কী অবস্থায় যুদ্ধ ন্যায় সঙ্গত?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক বাস্তববাদীগণের মতে শান্তি রক্ষার জন্য যুদ্ধ ন্যায় সম্মত। আন্তর্জাতিক আইন রাষ্ট্রসমূহকে প্রয়োজনবোধে আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে আক্রমণের অনুমতি নেয়। যদি কোনো রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে অন্য একটি রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে তখন আত্মরক্ষার জন্য আক্রান্ত রাষ্ট্রকে যুদ্ধঘোষণা করতে হয় এবং যুদ্ধ করে আক্রমণকারী রাষ্ট্রের আক্রমণ মোকাবিলা করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় যুদ্ধ করা ন্যায় সম্মত।
প্রশ্ন ৮। গান্ধীজির অহিংস নীতি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ গান্ধীজী হিংসাকে দুর্বলদের হাতিয়ার বলে মনে করতেন। তিনি অহিংসার পুজারী ছিলেন। গান্ধীজির মতে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে যখনই মানুষ সত্য ও অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সমাজকে পরিচালিত করেছে তখনই সমাজের প্রগতি সম্ভব হয়েছে। যখন মানুষ সত্য ও অহিংসার আদর্শ হতে বিচ্যুত হয়েছে তখনই সমাজের অবনতি হয়েছে। গান্ধীজি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তথা সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবার জন্য সত্য ও অহিংসাকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
প্রশ্ন ৯। গোলকীয় সম্প্রদায় বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ গোলকীয় সম্প্রদায় বলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝায়। বিশ্বের সকল সম্প্রদায়কে গোলকীয় সম্প্রদায় বলা হয়। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের জনসাধারণই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যখন বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশ্বের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করে সিন্ধান্ত গ্রহণ করে তখন আমরা সেই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্ত বলি।
প্রশ্ন ১০। বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের যে কোনো দুটি কারণ দর্শাও?
উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদের দুটি কারণ নিম্নরূপঃ
(ক) স্বাধীনতা, অধিকার ও সুযোগ–সুবিধা হতে বঞ্চিত হওয়ার জন্য।
(খ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের জন্য।
প্রশ্ন ১১। বিশ্বে সংঘটিত যে কোনো দুটি হিংসাত্মক ঘটনার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ বিশ্বে সংঘটিত হিংসাত্মক ঘটনাবলির দুটি হল নিম্নরূপঃ
(ক) জার্মানির একনায়ক শাসক অ্যাডল্ফ্ হিটলার কর্তৃক ইহুদি হত্যা।
(খ) ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দের উপর উগ্রপন্থী সংগঠন আল কায়দার বিমান হানা।
প্রশ্ন ১২। রাষ্ট্রসংঘের যে কোনো দুটি লক্ষ্যের উল্লেখ করো?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের দুটি লক্ষ্য হলঃ
(ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(খ) আন্তর্জাতিক যুদ্ধ–বিবাদ নির্ধারণ করা।
প্রশ্ন ১৩। গঠনগত হিংসার দুটি প্রকার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ গঠনগত হিংসার দুটি প্রকার হলঃ
(ক) জাতিভেদ প্রথা। এবং
(খ) সাম্প্রদায়িকতা।
প্রশ্ন ১৪। শান্তি রক্ষা প্রতিষ্ঠার দুটি উপায় উল্লেখ করো?
উত্তরঃ শান্তি রক্ষার দুটি উপায় হল –
(ক) শক্তির সমতা বজায় রাখা।
(খ) নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্র সংবরণ।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় হিংসাবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো কী কী?
উত্তরঃ আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) জাতিভেদ প্রথা ও অস্পৃশ্যতাঃ আমাদের সমাজে অদ্যাবধি জাতিভেদ প্রথা ও অস্পৃশ্যতা বিদ্যমান। অস্পৃশ্য ও সমাজের নীচুস্তরের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চিত। এই সামাজিক অবস্থা সমাজে শোষণ ও বৈষম্যের সূত্রপাত করে। ফলস্বরূপ হিংসাত্মক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(খ) সন্ত্রাসবাদঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মগত, জাতিগত ইত্যাদি কারণে সমাজে শোষণ ও আর্থিক বৈষম্যের সূত্রপাত হয়েছে। এ অবস্থা হতে মুক্তিলাভের জন্য শোষিত, পীড়িত ও বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। অবশ্য রাজনৈতিক অপশক্তি এ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত যোগাচ্ছে। এ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপগুলো হিংসাত্মক কার্যকলাপের রূপ ধারণ করছে।
(গ) সাম্প্রদায়িকতাঃ আমাদের ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করছে। তাই ধর্মের নামে প্রায়ই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। শিখ–বিরোধী দাঙ্গা, গোধরা দাঙ্গা প্রভৃতি সাম্প্রতিককালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জ্বলন্ত উদাহরণ।
প্রশ্ন ২। বিশ্বে সংঘটিত তিনটি হিংসাত্মক ঘটনার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ (ক) জার্মানির একনায়ক হিটলার কর্তৃক ইহুদি হত্যা।
(খ) ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গা।
(গ) ২০০২ সালের গোধরা দাঙ্গা।
(ঘ) ২০০১ সালের ১১সেপ্টেম্বর উগ্রপন্থী সংগঠন আলকায়দা কর্তৃক নিউইয়র্কে অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে আক্রমণ।
প্রশ্ন ৩। রাষ্ট্রসংঘের লক্ষ্যগুলো কী কী?
উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের লক্ষ্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
(খ) আন্তর্জাতিক যুদ্ধ–বিবাদ নিবারণ করা।
(গ) বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন করা।
(ঘ) দারিদ্রতা, রোগ ও নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিভিন্ন রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা এবং পরস্পরের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাগুলোকে শ্রদ্ধা ও উৎসাহ প্রদান করা।
(ঙ) সকল রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসেবে তাদের উদ্দেশ্য সফলের জন্য সহায়তা করা।
প্রশ্ন ৪। শান্তির অন্তরায়গুলো উল্লেখ করো?
উত্তরঃ (ক) প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহের উদ্ধত মনোভাবঃ শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও ছোটো রাষ্ট্রগুলোর প্রতি উদ্ধত মনোভাব বিশ্বে শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তানের প্রতি উদ্ধত মনোভাব বিশ্বের শান্তি বিঘ্নিত করছে।
(খ) সন্ত্রাসবাদঃ সন্ত্রাসবাদ হল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ। সন্ত্রাসবাদ শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়।
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডঃ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসমূহ শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বসনিয়া ও হার্জগোভিনায় নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের একটি উদাহরণ।
প্রশ্ন ৫। সাম্প্রতিক কালে আমেরিকায় সংঘটিত একটি সন্ত্রাসবাদ কার্যকলাপের ধারণা দাও?
উত্তরঃ উগ্রপন্থি সংগঠন আলকায়দার ১৯ জন উৎপন্থী সদস্য ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে, আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তরের সদর কার্যালয় ও আমেরিকান কংগ্রেসের প্রধান প্রাসাদে একযোগে চারটি আমেরিকান বাণিজ্যিক বিমানের সহায়তায় আক্রমণ চালায়। এই বিমানগুলো উগ্রপন্থীরা অপহরণ করে করায়ত্ত করেছিল। এর মধ্যে দুটি বিমান বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের দুটি উঁচু চূড়ায় আঘাত হানে, একটি বিমান আমেরিকা প্রতিরক্ষা বিভাগ অর্থাৎ পেন্টাগনে আক্রমণ চালায় এবং চতুর্থ বিমানটি আমেরিকান কংগ্রেসে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এ আক্রমণ বা হানার নাম দেওয়া হয়েছে “৯/১১”।
এই আক্রমণে ৩০০০ আমেরিকাবাসীদের সঙ্গে অন্যান্যদেশের জনগণও নিহত হন। এই আক্রমণ ছিল তীব্র ও ভয়ানক।
প্রশ্ন ৬। “হিংসা একটি অনিষ্টকারী কার্য”- ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ এই সত্যে পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষই একমত যে হিংসা হল একটি অনিষ্টকারী কার্ষ। হিংসার অর্থ হল ধ্বংস। হিংসা ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। হিংসা সদাই ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপকে বৃদ্ধি করে।
এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে ইতিহাস অনেক হিংসাত্মক ঘটনাবলীর সাক্ষী বহন করছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, হিরোসীমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বর্ষণ, উগ্রপন্থী সংগঠন আলকায়দা কর্তৃক বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে আঘাত হানা প্রভৃতি হিংসাত্মক ঘটনাবলীর জ্বলন্ত উদাহরণ। এসব হিংসাশ্রয়ী ঘটনায় অনেক জীবন ও সম্পত্তির হানি হয়েছে। এখনও হিংসাত্মক কার্য অব্যাহত আছে।
প্রশ্ন ৭। কেন শাস্তি ন্যায়সঙ্গত?
অথবা,
শান্তির প্রয়োজনীয়তা কী?
অথবা,
শান্তির গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ শান্তি একটি সার্বজনীন বিষয়। এটি বহুদিন ধরে চলে আসা একটি মূল্যবোধ। এটি প্রায় সকল ধর্মের মূল সার কথা। শাস্তি হল এমন একটি পরিবেশ যেখানে যুদ্ধ, আগ্রাসন, জাতিদাঙ্গা, সন্ত্রাসবাদী কার্য ও রাজনৈতিক হত্যালীলা প্রভৃতির কোন স্থান নেই। শাস্তি হল এমন এক পরিবেশ যেখানে একজন ব্যক্তি উন্নয়নের সমান সুযোগ–সুবিধা লাভ করবে এবং যেখানে কোন প্রকার শোষণ বা বৈষম্য থাকবে না। সমাজে প্রগতি ও উন্নয়নের জন্য শাস্তি অপরিহার্য। এজন্য সমাজে শান্তি স্থাপন করা ন্যায় সম্মত কার্য।
প্রশ্ন ৮। কীভাবে শান্তি রক্ষা করা যেতে পারে?
অথবা,
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কী করা যেতে পারে?
উত্তরঃ বিখ্যাত চিন্তাবিদ মর্গেনথো শান্তি রক্ষার্থে নিম্নলিখিত তিনপ্রকার ব্যবস্থার উল্লেখ করেছেনঃ
(ক) সীমিতকরণের মাধ্যমে শান্তিঃ এই ব্যবস্থায় তিনি যৌথ নিরাপত্তা, নিরস্ত্রীকরণ এবং বিচারালয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।
(খ) পরিবর্তনের মাধ্যমে শান্তিঃ জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের পরিবর্তে বিশ্বরাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায় গঠনের মাধ্যমে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
(গ) সমন্বয়ের মাধ্যমে শান্তিঃ কুটনীতির মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
এতদ্ব্যতীত দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বেকার সমস্যা, রোগগ্রস্ততা, অশিক্ষা এবং শোষণ ও সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা বা রক্ষা করা সম্ভব।
প্রশ্ন ১। শান্তি আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
অথবা,
শান্তি স্থাপনের জন্য গৃহীত সংগ্রাম বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ সাম্প্রতিক কালে শান্তি সুনিশ্চিত করতে সমষ্টিগতভাবে যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাকে শান্তির জন্য আন্দোলন বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের আন্দোলনে জনগণ রাস্তায় নেমে যুদ্ধ ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। জনগণের প্রতিবাদ মিছিল, অসহযোগ আন্দোলন ও যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শান্তি আন্দোলনের কতিপয় সর্বজনগ্রাহ্য রণকৌশল। আমেরিকার আফগানিস্তান ও ইরাক আক্রমণের সময় জনগণ, যুদ্ধবিরোধী সংগঠন প্রভৃতির বিক্ষোভ প্রদর্শন শান্তি আন্দোলনের উদাহরণ।
প্রশ্ন ১০। ভারতের স্বাধীনতা লাভে গান্ধীজীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে গান্ধীজীর ভূমিকা অসীম। গান্ধীজী ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অহিংস আন্দোলনের আশ্রয় নিয়েছিলেন। কারণ তিনি অহিংসার একনিষ্ঠ পুজারী ছিলেন। গান্ধীজী মনে করতেন স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র পথ বা উপায় হল অহিংস আন্দোলন। গান্ধীজীর মতে মানুষ সত্য ও অহিংসাকে ভিত্তি করে সমাজের মঙ্গল সাধন করতে পারে। গান্ধীজী সত্য ও অহিসার উপর ভিত্তি করে বৃটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। সত্য ও অহিংসাকে আশ্রয় করে গান্ধীজী বৃটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগ, আইন–অন্যান্য আন্দোলন চালিয়েছিলেন। তিনি তাঁর
নেতৃত্বাধীন যে কোনো আন্দোলন যখনই হিংসার আশ্রয় নিয়েছে তখনই সেই আন্দোলন তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে সত্য ও অহিংসার উপর ভিত্তি করে তাঁর নেতৃত্বাধীন আন্দোলনগুলো ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য। তিনি শান্তি সংস্থাপক হিসেবেও অন্যতম রাজনৈতিক নেতা ছিলেন।
প্রশ্ন ১১। জাতিবাদ ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ জাতিবাদ হল কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায়ভাবে অত্যাচার, উৎপীড়ন ও হিংসাত্মক কার্যাবলী। ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা আমেরিকার নিগ্রো দাস প্রথা, জার্মান একনায়ক এডলফ্ হিটলার কর্তৃক নির্বিচারে ইহুদিদের হত্যা ও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় চলতে থাকা বর্ণ বৈষম্যনীতি উগ্রজাতিবাদের উদাহরণ। এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহ হতে পাশ্চাত্য দেশসমূহে প্রব্রজনকারী জনসাধারণের উপর জাতিবাদের কুপ্রভাব চলছে।
প্রশ্ন ১২। শান্তিরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিগুলো আলোচনা করো?
উত্তরঃ যুদ্ধ প্রতিহত করে শাস্তি প্রতিষ্ঠা কল্পে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করাঃ
(ক) শক্তির সমতাঃ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তির সমতা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই নীতির মূল বক্তব্য হল কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী অধিক ক্ষমতাশীল হওয়া উচিত নয়। কারণ এর ফলে এই রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠী শক্তি প্রদশর্নের মাধ্যমে বিশ্বে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
(খ) আন্তর্জাতিক আইনঃ আন্তর্জাতিক আইন বিভিন্ন সভ্য রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। আন্তর্জাতিক আইন কতকগুলো নিয়ম–নীতি নির্ধারণ করে যার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এর ফলে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব হয়।
(গ) আন্তর্জাতিক সংস্থাঃ বর্তমান কালে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রসংঘ বিভিন্ন কমিশন, সংস্থাপক, মধ্যস্থকারী প্রভৃতি নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক বিবাদ নিষ্পত্তি করে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
(ঘ) যৌথ নিরাপত্তাঃ যৌথ নিরাপত্তা বলতে শান্তিভঙ্গের মোকাবিলায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের যৌথ পদক্ষেপ বোঝায়। রাষ্ট্রসংঘ সনদের ১নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রসংঘ শান্তি বজায় রাখতে শান্তির বিপদাশঙ্কা রুখতে ও আক্রমণ দমন করতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করবে।
(ঙ) আন্তর্জাতিক নৈতিকতাঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক নৈতিকতা একটি উত্তম উপায়। ‘বাঁচো ও বাঁচতে দাও’, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সমতা, সৌভ্রাতৃত্ব প্রভৃতি আন্তর্জাতিক নৈতিকতার কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী।
(চ) নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রসংবরণঃ অধিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ ও মজুত শান্তির জন্য বিপদ ডেকে আনে। তাই আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সংবরণ হল একটি সর্বোত্তম কার্যকরী উপায়। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘ নিরস্ত্রীকরণ কমিশন গঠন করেছে।
তাছাড়া বিশ্বজনমত গঠন, বিশ্ব নাগরিকত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা প্রদান ও কল্যাণকামী কুটনৈতিক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার সহায়ক।
প্রশ্ন ১৩। বিংশ শতাব্দীতে শান্তির জন্য বিপজ্জনক অবস্থার সম্পর্কে একটি চিত্র তুলে ধরো?
উত্তরঃ বিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনাবলী সংঘটিত হয়েছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। হিংসাত্মক অনেক ঘটনাবলীর সাক্ষী হয় আমাদের এ বিশ্ব। এসকল ঘটনাবলী বিশ্ব শান্তি নষ্ট করে। ইটালীর একনায়ক মুসৌলিনির আগ্রাসন নীতি, জার্মানির একনায়ক হিটলারের শাসনাধীনে ইহুদিদের নির্বিচারে হত্যা, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা বর্ণ বৈষম্য প্রথা, আমেরিকায় ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা নিগ্রো দাস ব্যবস্থা, আমেরিকা কর্তৃক ইরাক আক্রমণ, বসনিয়া–হার্জগোভিনার জাতিগত দাঙ্গা, প্যালেস্টাইনদের উপর ইজরায়েলিদের হামলা, পশ্চিমীদেশগুলোতে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা হতে আগত প্ররজনকারীদের প্রতি পশ্চিমীদেশগুলোর উদ্ধৃত মনোভাব, মায়ান্নারের সামরিক শাসনের অত্যাচার উৎপীড়ন, কম্বোডিয়ার শাসক খাম রোজের শাসনকালে ব্যাপক হারে সংঘটিত নর হত্যা; ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বিংশ শতাব্দী ব্যাপিয়া বারবার বিশ্বের শান্তির বাতাবরণ বিপদাপন্ন করে তোলেছিল। এই বিংশ শতাব্দীতে প্রথমে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রসংঘ বিশ্বের শান্তি রক্ষার্থে অগণিত চেষ্টা করেছে। বর্তমানেও রাষ্ট্রসংঘ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে সবধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিংশ শতাব্দী যেমন হিংসত্মক ঘটনাবলীর জন্য উল্লেখনীয়। তেমনি এ সময় শান্তি স্থাপনের বিভিন্ন প্রচেষ্টার জন্যও বিশ্ববাসী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
প্রশ্ন ১৪। সমসাময়িক বিশ্বে শান্তির বিভিন্ন প্রকার প্রত্যাহ্বানের সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?
অথবা,
শান্তির বিভিন্ন প্রকার প্রত্যাহ্বানগুলোর আলোচনা করো?
উত্তরঃ শান্তির বিভিন্ন প্রকার প্রত্যাহ্বানগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর উদ্ধত মনোভাবঃ বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো ক্ষুদ্র ও–দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর প্রতি উদ্ধৃত মনোভাব দেখায় এবং প্রায় সবসময় ওই দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে অন্যায় ও অযৌক্তিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এতে বিশ্বের শান্তির কলুষিত হয়।
(খ) সন্ত্রাসবাদঃ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন উগ্রপন্থি সংগঠনগুলো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এতে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ডঃ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হত্যা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। যেমন ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকার বর্তমান বাংলাদেশের অনেক বাঙ্গালীদের হত্যা করে।
(ঘ) দারিদ্র্যতাঃ গোলকীয় দারিদ্র্যতাও শান্তি স্থাপনের একটি অন্যতম প্রত্যাহ্বান।
(ঙ) রোগগ্রস্ততা ও মহামারিঃ এইডস, বার্ড ফ্লু ও অন্যান্য কঠিন রোগসমূহ যেগুলো মহামারির আকার ধারণ করে সে রোগসমূহের বিস্তার শাস্তি স্থাপনের জন্য মারাত্মক প্রত্যাহ্বান স্বরূপ কার্য করে।
প্রশ্ন ১৫। আন্তর্জাতিক শান্তিস্থাপন রক্ষার্থে গৃহীত কৌশলগুলো কী কী?
অথবা,
আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষাকে শক্তিশালী করার নকশাগুলো কী কী?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও উপায় ব্যবহৃত হয়।
এই উপায় বা কৌশলগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) শক্তির ভারসাম্যতাঃ আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার প্রথম ও প্রধান উপায় হল প্রতিটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করবে যাতে বিশ্বে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাস পায়। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাস পেলে হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপও হ্রাস পাবে। এভাবে আন্তর্জাতিক শান্তির বাতাবরণ সুস্থ ও সুন্দর থাকবে।
(খ) বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পরস্পর সামাজিক ও আর্থিক সহযোগিতার সম্পর্কঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সামাজিক ও আর্থিক সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নত হলে আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপিত হবে। এই ধরনের সহযোগিতায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।
প্রশ্ন ১৬। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতাবাদ সৃষ্টির কারণসমূহ কী কী?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা সংঘটিত হিংসের একটি কদর্য রূপ। সাম্প্রদায়িকতা দক্ষিণ এশিয়ার জাতিভেদ প্রথারূপে পরিদৃষ্ট হয় এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই এর শিকার হয়। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং অন্ধপ্রদেশে বেশিরভাগ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতাবাদ সৃষ্টির কারণগুলো হলঃ
(ক) বিভেদকামী অপশক্তিঃ ভারতে বহু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। তাদের ভাষা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। এই সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সদ্ভাব থাকলেও অনেক সময় স্বার্থান্বেষী কিছু সংখ্যাক দুষ্ট লোকের প্ররোচনায় তাদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হয়। ওই সকল দুষ্ট লোক ধর্ম ও ভাষার নামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়ায়। ধর্মীয় উন্মাদনায় এক সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের উপর অত্যাচার উৎপীড়ন করে। এভাবেই সাম্প্রদায়িকতাবাদের সৃষ্টি হয়।
(খ) ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনঃ ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলো তাদের সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের জন্য এবং ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি কায়েম রাখার জন্য প্রায়ই ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করে। এভাবেই ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতাবাদ সৃষ্টি হয়েছে।
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যঃ ভারতবর্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করে। এর ফলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লিপ্ত থাকা উৎপীড়িত হওয়া সম্প্রদায় সমূহের মানুষকে হাতিয়ার করে তাদের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করে। সুতরাং ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতাবাদ সৃষ্টির মূলে রাজনৈতিক দলগুলোও অনেকাংশে দায়ী।
(ঘ) ধর্মীয় উন্মাদনাঃ মূলত ধর্মীয় উন্মাদনাকে কেন্দ্র করেই সাম্প্রদায়িকতাবাদের সৃষ্টি হয়। আন্তঃধর্মীয় আধিপত্যের দরুন সাধারণত সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার উৎপীড়ন হয়। ভারতবর্ষে সংঘটিত শিখবিরোধী দাঙ্গা (১৯৮৪) একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উদাহরণ। ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ বসবাস করেন। তাই এখানে ধর্মের নামে বিভেদের প্রচার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে ধর্মীয় উন্মাদনার জন্ম দেয়। এই ধর্মীয় উন্মাদনা ও বিভেদের রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতাবাদ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
প্রশ্ন ১৭। অহিংসার উপরে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ অহিংসা পন্থাটি সত্যাগ্রহের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অনেকে অহিংসাকে দুর্বলদের হাতিয়ার বলে মনে করেন। গান্ধীজি এই যুক্তিকে খণ্ডন করেন এবং একটি নতুন অহিংসা নীতির উদ্ভাবন করেন। তিনি দুভাবে এই নীতির পরিবর্তন করেন। তাঁর মতে, অহিংসা বলতে কেবল দৈহিক এবং মানসিক আক্রমণ প্রতিহত করা নয়। তিনি সংঘটিত হিংসার প্রতিবাদ স্বরূপ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য সত্য এবং অহিংসাকে হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। আইন অমান্য আন্দোলন অহিংস নীতির একটি প্রধান পন্থা ছিল। এই নীতির মাধ্যমে গান্ধীজী শোষক শ্রেণীর উপর তীব্র আঘাত হানেন। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে মার্টিন লুথার কিং ১৯৬০ এর দশকে আমেরিকায় বর্ণ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে লিপ্ত হন।
প্রশ্ন ১৮। হিংসা কি কখনও শাস্তি আনতে পারে? যুক্তি দাও?
উত্তরঃ হিংসা অশুভ ও ক্ষতিকর হলেও কখনও কখনও শান্তি স্থাপনে হিংসা একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। যুক্তিসঙ্গতভাবে বলা যায় যে বল প্রয়োগের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ও শোষকদের ক্ষমতাচ্যুত করে মানুষের প্রতি বিরামহীন ক্ষতি সাধন প্রতিরোধ করতে পারা যায়। মুক্তির জন্য আন্দোলনরত নিপীড়িত মানুষ হিংসার আশ্রয় অবলম্বন করলেও তা যুক্তিগ্রাহ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু হিংসাত্মক কার্যকলাপ কখনও কখনও নিজেদের বিনাশ সাধন করতে পারে। হিংসাত্মক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে প্রাণহানি ও ধ্বংস অনিবার্য। সুতরাং স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হিংসাকে বর্জন করা উচিত।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। শান্তির বিপদাশল্প স্বরূপ বিভিন্ন প্রকার সংঘটিত হিংসার পর্যালোচনা করো?
অথবা,
গঠনগত হিংসার উপরে একটি টীকা লেখো?
উত্তরঃ অস্পৃশ্যতা, পুরুষ প্রাধান্য সমাজ, সাম্রাজ্যবাদ, জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দারিদ্র্যতা প্রভৃতি সংঘটিত হিংসার বিভিন্ন প্রকার রূপ। সংঘটিত হিংসাত্মক কার্যকলাপের দরুন বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। যুদ্ধ বা অন্যান্য প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক হিংসাত্মক কার্যকলাপেও এত মানুষের প্রাণহানি বা সম্পত্তি নষ্ট হয়নি।
বিভিন্ন প্রকার সংঘটিত হিংসা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(ক) অস্পৃশ্যতাঃ আমাদের ভারতবর্ষে অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদ প্রথা আজও বিদ্যমান। অস্পৃশ্য ও সমাজের নীচু স্তরের মানুষ শতাব্দী ধরে উৎপীড়িত ও বঞ্চিত। এই সামাজিক অবস্থা সমাজে শোষণ ও বৈষম্যের সূত্রপাত করে। এর ফলে হিংসাত্মক কার্যকলাপের সৃষ্টি হয় এবং সমাজের শান্তি বিঘ্নিত হয়।
(খ) পুরুষ–প্রধান সমাজ ব্যবস্থাঃ পুরুষ প্রধান সমাজে কন্যাভ্রুণ হত্যার মতো মহিলা ঘটিত অপরাধ, বাল্যবিবাহ, স্ত্রী নির্যাতন, পণ–সম্পর্কিত অপরাধ, মেয়েদের জন্য শিক্ষার অভাব, ধর্ষণ প্রভৃতি সংঘটিত হিংসাত্মক কার্য সংঘটিত হয়। এ ধরনের সংঘটিত হিংসার ফলে সমাজ তথা রাষ্ট্রের শান্তির বাতাবরণ নষ্ট হয়।
(গ) জাতিবাদঃ সংঘটিত হিংসার অন্য এক প্রকার রূপ হল জাতিবাদ। এই জাতিবাদ হল কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের অন্য এক জাতি বা সম্প্রদায়ের উপর অন্যায় অত্যাচার এবং উৎপীড়ন। এ ধরনের সংঘটিত হিংসা রাষ্ট্র তথা আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য বিপদ ডেকে আনে। ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকা আমেরিকায় নিগ্ৰো দাস ব্যবস্থা, হিটলারের শাসনকালে জার্মানিতে ইহুদিদের নির্বিচারে হত্যা, পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলোতে আগত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রসমূহ হতে প্রব্রজনকারীদের প্রতি উদ্ধত আচরণ প্রভৃতি উগ্রজাতিবাদের কতকগুলো উদাহরণ।
(ঘ) সাম্রাজ্যবাদঃ সাম্রাজ্যবাদী শাসক বা রাষ্ট্রের অত্যাচার ও উৎপীড়ন শান্তির বাতাবরণ কলুষিত করে। ইজরায়েল কর্তৃক গাজায় প্যালেস্টাইনদের উপর ঘন ঘন হামলা এই প্রকার হিংসার উদাহরণ।
(ঙ) সাম্প্রদায়িকতাঃ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সমাজ তথা রাষ্ট্রের শান্তির বাতাবরণে বিপদ ডেকে আনে। ভারতে শিখ–বিরোধী দাঙ্গা গোধরা–দাঙ্গা, প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক জাতি দাঙ্গার উদাহরণ। এই দাঙ্গাগুলো সংঘটিত হওয়ার ফলে ভারতে শান্তির বাতাবরণ কলুষিত হয়েছে।
প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত শান্তি রক্ষার উপায় বা পদ্ধতিগুলোর প্রকৃতি ব্যাখ্যাকরো?
অথবা,
আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার্থে রাষ্ট্রসংঘ দ্বারা স্বীকৃত উপায় বা পদ্ধতিসমূহের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ রাষ্ট্র সনদের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি হল সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের আন্তর্জাতিক বিরোধগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে মীমাংসা করবে। সে উদ্দেশ্যে সনদে আন্তর্জাতিক ঝগড়া–বিবাদ মীমাংসার কতিপয় উপায় সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
উপায়গুলো নিম্নরূপঃ
(ক) আলাপ–আলোচনাঃ চুক্তি করার উদ্দেশ্যে কুটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসার চেষ্টা করা।
(খ) তৃতীয় পক্ষ দ্বারাঃ বিবদমান দু রাষ্ট্রের মধ্যস্থকারী হিসেবে তৃতীয়পক্ষ অর্থাৎ অন্য কোনো বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের দ্বারা বিবদমান ওই রাষ্ট্র দুটিকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনার চেষ্টা করা।
(গ) মধ্যস্থতাকারীঃ মধ্যস্থতাকারী বিবদমান দু রাষ্ট্রকে আলাপ–আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।
(ঘ) অনুসন্ধানঃ যখন বিবদমান দুটি রাষ্ট্রের ঝগড়া–বিবাদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সন্দেহ থাকে অথবা ওই দুটি রাষ্ট্রই আলোচনার মুখোমুখি হতে চায় না তখন অনুসন্ধান পদ্ধতি প্রয়োজনীয় ও উপযোগী হয়ে পড়ে।
(ঙ) পরামর্শদাতাঃ এই পদ্ধতিতে বিবদমান রাষ্ট্রগুলোর বিবাদের বিষয়গুলোর প্রতিটি খুঁটিনাটি কারণ খোঁজে বের করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পরামর্শদাতা বা পরামর্শ আযোগের কাছে পাঠানো হয়।
উপরোক্ত পদ্ধতিতে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করা হয়।
প্রশ্ন ৩। শান্তি অনুসরণে বা স্থাপনে রাষ্ট্রসংঘের সফলতা ও বিফলতাগুলোর উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রসংঘের গঠন হয়েছিল।
বিগত ৬৯ বৎসর ধরে বিশ্বশান্তি স্থাপনে রাষ্ট্রসংঘের সফলতাগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) ভারত–পাক যুদ্ধ নিরসনে রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
(খ) কোরিয়া যুদ্ধের সময় রাষ্ট্রসংঘ পুনরায় শান্তি স্থাপন করেছিল। শান্তি প্রস্তাবের মাধ্যমে দুই কোরিয়াকে একত্রিত করে।
(গ) আফগানিস্তান (২০০২), হাইতি (২০০৪), বুরুণ্ডী (২০০৪) এবং পূর্ব তিমর (২০০৬) প্রভৃতি রাষ্ট্রে শান্তি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রসংঘ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বসনিয়া–হার্জগোভিনায়ও শান্তি রক্ষার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে।
(ঘ) রাষ্ট্রসংঘ বিশ্ব শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্রসংবরণ নীতির উপর জোর দিয়েছে। সে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘ নিরস্ত্রীকরণ কমিশন গঠন করেছে। রাষ্ট্রসংঘ নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র সংবরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর কতিপয় উদাহরণ হলঃ Partial Test Ban Treaty (1963), Nuclear Non–Proliferation Treaty (1968), এবং Comprehensive Test Ban Treaty (1996).
অবশ্য রাষ্ট্রসংঘ বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে ও শান্তির বিরুদ্ধে আগত বিপদসমূহের সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয় নি।
এর কতিপয় বিফলতা নিম্নরূপঃ
(ক) এঙ্গোলা, কঙ্গো, ইথিওপিয়া এবং অন্যান্য দেশের গৃহযুদ্ধে বাস্তুহারা মানুষদের জন্য কিছুই করতে সক্ষম হয় নি।
(খ) বিভিন্ন রাষ্ট্রের অস্ত্র প্রতিযোগিতা রাষ্ট্রসংঘ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি যা বিশ্বশান্তির জন্য মারাত্মক ভয়ের কারণ।
(গ) সন্ত্রাসবাদ, জাতিবাদ এবং অন্যান্য সংঘটিত হিংসাত্মক ঘটনা রুখতে সক্ষম হচ্ছে না। এটি বিশ্বশান্তির জন্য বিপজ্জনক।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। শান্তিপূর্ণ পৃথিবী পরিবর্তনে মানুষের চিন্তার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তুমি মনে কর কি? মানুষের মন কি শাস্তি বৃদ্ধি করতে পারে এবং মানুষের অন্তরে আলোকপাত করা কি যথেষ্ট?
উত্তরঃ শান্তি সকল ধর্মের মূল কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভেই জাতি সংঘের পতন ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও অনেক অনেক বেশি ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়। ফলে সমগ্র বিশ্বে শান্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়। এর ফলস্বরূপ ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রসংঘের প্রধান উদ্দেশ্যে হল বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। ১৯৪৫ সালের পর হতে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে।
কিন্তু বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য মানুষের চিন্তার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মানুষের মন শাস্তি বৃদ্ধি করে। রাষ্ট্রসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পৰ্কীয় সংস্থা (UNESCO)-র প্রস্তাবনায় উল্লেখ আছে– “যেহেতু যুদ্ধ মানুষের মনে আরম্ভ হয় তাই শান্তি রক্ষাও মানুষের মনে তৈরি হতে হবে।” যুদ্ধের নানাপ্রকার কারণের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক কারণই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সচেতন মন হতেই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের মানসিক চিন্তাধারা পরিবর্তিত হতে পারে।
শান্তির জন্য কেবল মানুষের মনকেই আলোকপাত করলে চলবে না, শান্তির জন্য আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক উপাদানগুলোর উপরও সদর্থক আলোকপাত করা উচিত।
প্রশ্ন ২। মানুষের জীবন ও অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের উচিত। তথাপি কোনও সময় রাষ্ট্রের ক্রিয়াকলাপ কতিপয় নাগরিকের বিরুদ্ধে হিংসা ও সংঘর্ষের কারণ হয়ে উঠে। উদাহরণের সাহায্যে মন্তব্য করো?
উত্তরঃ রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান কাজ হল শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবন, সম্পত্তি ও অধিকার রক্ষার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। রাষ্ট্র আইন কানুন বিধিবদ্ধ করে নাগরিকদের সমাজ বিরোধীদের হাত হতে রক্ষা করে। যারা আইন ভঙ্গ করে রাষ্ট্র তাদের শাস্তি দেয়। কিন্তু কখনও কখনও রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ নাগরিকদের বিরুদ্ধে হিংসার কারণ হয়ে উঠে। যেমন– ভারতে অন্যান্য অনুন্নতজাতি সম্প্রদায়কে সুযোগ–সুবিধা প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার সময় তা কতিপয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে হিংসার কারণ হয়ে উঠে।
একনায়কতন্ত্র শাসন ব্যবস্থায় একনায়কের কার্যকলাপ প্রায়ই জনগণের প্রতি হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় প্রচলিত নিগ্ৰো দাস ব্যবস্থা, জার্মানিতে হিটলারের শাসনকালে ইহুদিদের হত্যা, ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণআফ্রিকায় প্রচলিত বর্ণ বৈষম্য প্রথা প্রভৃতি রাষ্ট্রের কতিপয় মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় হিংসাত্মক কার্যকলাপের উদাহরণ। পশ্চিমীদেশগুলোতে এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকা হতে আগত প্ৰব্ৰজনকারীদের প্রতি উদ্ধত ব্যবহার করা হয়। মায়াম্মারে বহু লোককে কারাবন্দী করে রাখা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়িনী ‘আও সাঙ সু কী’– কে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। কলম্বিয়ায় থামের রোজ – এর শাসনকালে ব্যাপক নরহত্যা হয়। এই সকল রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে হিংসার কারণ হয়ে উঠে।
প্রশ্ন ৩। স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় থাকলে শান্তি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে। এ বিষয়ে তুমি কি একমত?
উত্তরঃ হ্যা। এটা সত্যি যে স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় থাকলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। হিংসা স্বরণাতীত কাল হতেই সমাজে বিদ্যমান আছে। তাই সমাজের মৌলিক পরিবর্তন সাধনের জন্য সমাজে স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য স্বাধীনতা একান্ত আবশ্যক।
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার সঙ্গে সমতারও প্রয়োজন থাকে। রাষ্ট্র, জাতি, বর্ণ, ধর্ম প্রভৃতির ভিত্তিতে বৈষম্যের সৃষ্টি না করে মানুষকে সমানভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রদান করা উচিত। স্বাধীনতা ও সমতা ছাড়াও সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাও অত্যন্ত জরুরি। সামাজিক, আর্থিক, রাজনৈতিক ও আইনগত ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে শান্তি বজায় রাখতে হবে। স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সুতরাং স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায় থাকলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৪। হিংসার মাধ্যমে কোনো উদ্দেশ্য দীর্ঘকাল অর্জন করা যায় না। এ মন্তব্য বিষয়ে তুমি কী ভাব?
উত্তরঃ হিংসাকে সাধারণভাবে অশুভ (Evil) বলা হয়। অবশ্য হিংসা দমনে কখনও কখনও হিংসার আশ্রয় নেওয়া হয়। স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী শাসককে অপসারণের ক্ষেত্রে কখনও কখনও হিংসার পথ অবলম্বন করলে সাফল্য পাওয়া যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনে হিংসার পথ অবলম্বন করলেও তাকে সাধারণভাবে ন্যায়সঙ্গত বলা যায়। কিন্তু হিংসার দ্বারা কোনো মহৎ কার্য সম্পন্ন হয় না। তাছাড়া হিংসা হল ধ্বংসেরই নামান্তর। এই কারণে আশাবাদীরা শান্তিকে সর্বোচ্চ মূল্যবান হিসাবে গণ্য করেন। আমাদের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী সকল ধরনের বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে অহিংসা ও সত্যাগ্রহের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কারণ শান্তিই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে সকল বিরোধের মীমাংসা সম্ভব। গান্ধীজি অহিংসাকেই একমাত্র বাস্তববাদী শক্তি হিসাবে মানতেন। তাই গান্ধীজি যথার্থই বলেছেন যে সৎ উদ্দেশ্য পালনের জন্য সৎ উপায় অবলম্বন করা উচিত।
প্রশ্ন ৫। এই অধ্যায়ে আলোচিত বিশ্বে শান্তি স্থাপনে বিভিন্ন পদ্ধতির তুলনামূলক আলোচনা করো?
উত্তরঃ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় নানা প্রকার পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
তিনটি প্রধান পদ্ধতির তুলনামূলক আলোচনা নিম্নে করা হলঃ
(ক) প্রথম পদ্ধিতিটি রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয়তার সঙ্গে সহমত পোষণ করে তার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। এই পদ্ধতি রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে জীবনের বাস্তবতা বলে স্বীকার করে। এর মুখ্য আলোচ্য বিষয় হল এই প্রতিযোগিতা যথাযথভাবে পরিচালনা ও আন্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্ভাব্য বিরোধের মোকাবিলা করা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
(খ) দ্বিতীয় পদ্ধতি হল আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্জুরি। এই পদ্ধতি রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সম্ভাব্য স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। এটি রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার অবমূল্যায়ন করে। এ ধরনের সহযোগিতা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ করে এবং আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করে। এর ফলে বিশ্বে ঝগড়া বিবাদ হ্রাস পায় এবং শাস্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
(গ) তৃতীয় পদ্ধতিটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে মানব ইতিহাসের অতীত অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করে। এ পদ্ধতিটি বিশ্ব রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করে। এটি একটি বিশ্বগোষ্ঠী গঠনকে বিশ্বশান্তি স্থাপনের সঠিক পদ্ধতি বলে মত ব্যক্ত করে।