Class 11 Political Science Chapter 18 ধর্মনিরপেক্ষতা answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 18 ধর্মনিরপেক্ষতা and select needs one.
Class 11 Political Science Chapter 18 ধর্মনিরপেক্ষতা
Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 18 ধর্মনিরপেক্ষতা Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.
ধর্মনিরপেক্ষতা
পাঠ: ১৮
দ্বিতীয় খণ্ড
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ধর্মনিরপেক্ষতা কী?
উত্তরঃ ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্থ হল রাষ্ট্র বিশেষ কোনো ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে না, ধর্মবিরোধী হবে না, বা অধার্মিক বিষয়কে প্রশ্রয় দেবে না।
প্রশ্ন ২। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কী?
উত্তরঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল সেই রাষ্ট্র যে রাষ্ট্র সকল ধর্মকে সমানভাবে রক্ষা করে কিন্তু কোনো ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে না।
প্রশ্ন ৩। ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মবিরোধী বা অ–ধর্মীয় কি?
উত্তরঃ না। ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মবিরোধী নয়।
প্রশ্ন ৪। ধর্ম নিরপেক্ষতা আমাদের একটি ধর্মীয় পরিচিতি হিসাবে অনুমোদন করে না। ‘হ্যা’ বা ‘না’ লেখো।
উত্তরঃ না।
প্রশ্ন ৫। ধর্ম–রাষ্ট্র পৃথকীকরণ কী?
উত্তরঃ ধর্ম–রাষ্ট্র পৃথকীকরণ অর্থ হল রাষ্ট্র ও ধর্মের বিচ্ছিন্নতা অর্থাৎ রাষ্ট্র ও ধর্ম উভয়ই কেউ কারো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রশ্ন ৬। ধর্ম নিরপেক্ষতা বহুধর্মীয় রাষ্ট্রে সম্ভব কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ। বহুধর্মীয় রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্ভব।
প্রশ্ন ৭। একধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর আধিপত্য ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র অনুমোদন করে? ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ লেখো।
উত্তরঃ না। ধর্মনিরপেক্ষতা এ ধরনের আধিপত্য অনুমোদন করে না।
প্রশ্ন ৮। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় কোন্ সংশোধনীয় দ্বারা সংযোজিত হয়েছে?
উত্তরঃ ৪২তম সংশোধনী দ্বারা।
প্রশ্ন ৯। ‘আতাতুর্ক’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ তুর্কীর জনক।
প্রশ্ন ১০। Forsaking Paradise: Stories from Ladakh – গ্রন্থের লেখক কে?
উত্তরঃ আব্দুল গনি শেখ।
প্রশ্ন ১১। নীচের কোন্ বাক্যটি সঠিক?
(ক) ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
(খ) ভারত একটি ধর্মকে স্বীকৃতি দেয়।
(গ) ধর্মনিরপেক্ষতা হল একটি রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি।
(ঘ) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র।
উত্তরঃ (ক) ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ১২। নীচের বিবৃতিগুলির সঙ্গে তুমি কি একমত?
(ক) ধর্মনিরপেক্ষতা সমতাকে সমর্থন করে না।
উত্তরঃ (ক) না। আমরা এই বিবৃতির সঙ্গে একমত নই।
(খ) ধর্মনিরপেক্ষরতা ভারতের পক্ষে উপযুক্ত নয়।
উত্তরঃ (খ) না। আমরা এই বিবৃতির সঙ্গে একমত নই।
(গ) ধর্মনিরপেক্ষরতা আন্তঃধর্মীয় আধিপত্য সমর্থন করে।
উত্তরঃ (গ) না। আমরা একমত নই।
প্রশ্ন ১৩। পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতার যে কোনো একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ রাষ্ট্র ধর্মীয় সংস্কারে হস্তক্ষেপ করে না।
প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতার যে কোনো একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ রাষ্ট্র ধর্মীয় সংস্কারে হস্তক্ষেপ করে।
প্রশ্ন ১৫। ভারতবর্ষ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। (সত্য না অসত্য লেখো)
উত্তরঃ হ্যাঁ।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্র ও ধর্মের পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
(খ) ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সম্পূর্ণ বিরোধী।
(গ) রাষ্ট্র ধর্মীয় সংস্কারে হস্তক্ষেপ করে না।
প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সুনিশ্চয়ের দুটি উদাহরণ দাও?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার সুনিশ্চয়তা প্রদান করে।
এই সুনিশ্চয়তা গুলোর অন্যতম দুটি হলঃ
(ক) সংবিধানের ২৫ নং ধারায় বলা হয়েছে সকল নাগরিকের বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মাচরণ ও ধর্মপ্রচারে স্বাধীনতা রয়েছে।
(খ) সংবিধানের ২৮নং ধারায় বলা হয়েছে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সরকারি সাহায্যে পরিচালিত হয় সেখানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে না।
(গ) সংবিধানের ২৭নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ধর্ম বা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রসার বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর কর আরোপ করা যাবে না।
প্রশ্ন ৩। রাষ্ট্রকর্তৃক ধর্মীয় সংস্কার কী?
উত্তরঃ রাষ্ট্রকর্তৃক ধর্মীয় সংস্কার হল রাষ্ট্র অনুমোদিত ধর্মীয় সংস্কার। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা সরকার সমর্থিত ধর্মীয় সংস্কার অনুমোদন করে। হিন্দু ধর্মের দলিত শ্রেণীর লোকেরা হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করতে বাধা পায়। ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে হিন্দু মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের সমাজের কুপ্রথা অস্পৃশ্যতাকে রাষ্ট্র নিষিদ্ধ করেছে। সকল শ্রেণীর লোকের ধর্মাচরণের, সকল শ্রেণীর হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করে রাষ্ট্র ধর্মীয় সংস্কার সাধন করেছে।
প্রশ্ন ৪। ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতি সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?
উত্তরঃ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রায়ই রাজনৈতিক স্বার্থে ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করেন। প্রাথমিকভাবে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা নয়। নির্বাচনের সময় ধর্মকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট লাভ করার জন্য সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের কথা প্রচার করেন। নির্বাচনোত্তর কালে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্দেশ্য সার্থক হত। কিন্তু এই রাজনীতিবিদরা যদি সংখ্যাগুরুদের স্বার্থের গোপনে বিরুদ্ধাচরণ করেন, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতে প্রায় সকল রাজনীতিবিদরাই নির্বাচনের সময় ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন।
প্রশ্ন ৫। সংখ্যালঘুবাদ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ অনেক সমলোচকগণ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংখ্যালঘুবাদ বলে সমালোচনা করেন। কারণ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা প্রকৃত অর্থে সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রবক্তা। সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সুযোগ–সুবিধাগুলির প্রতি যখন সংখ্যগুরুদের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তখন তাকে আমরা সংখ্যালঘুবাদ বলি। কিন্তু অন্যান্যদের সঙ্গে সমপর্যায়ে বা সমমর্যাদায় আনার জন্য সংখ্যালঘুদের কোন বিশেষ সুযোগ–সুবিধা প্রদানকে আমরা সংখ্যালঘুবাদ হিসাবে গণ্য করতে পারি না।
প্রশ্ন ৬। ধর্মনিরপেক্ষতার দুটি লক্ষ্য লেখো?
উত্তরঃ ধর্ম মূল লক্ষ্য দুটি নিম্নরূপঃ
(ক) শান্তি স্থাপন।
(খ) ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা।
(গ) ধর্মীয় বৈষম্য দূর করা।
প্রশ্ন ৭। ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ ধর্মীয় সংখ্যালঘু শব্দটি ধর্মীয় সংখ্যাগুরু শব্দের বিপরীতার্থক। একটি জনসমষ্টিতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে। এই জনসমষ্টিতে যে ধর্মের মানুষ সংখ্যালঘু সেই ধর্মের মানুষকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলা হয়। আমাদের ভারতবর্ষে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলতে মুসলিম বা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী লোকদের বোঝায়।
প্রশ্ন ৮। ধর্মীয় সংস্কার কী?
উত্তরঃ বিভিন্ন ধর্মে নানাপ্রকার বৈষম্য এবং কু–প্রথা প্রচলিত থাকে। এই বৈষম্য ও কুপ্রথা সমূহের জন্য সমাজে অনাচার, অত্যাচার, অবিচার ও শোষণ হয়। এ সকল বৈষমা ও কুসংস্কার সমাজের মানুষের কল্যাণ সাধনে বাধাদানকারী হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। তাই সমাজে শান্তি, স্বাধীনতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মের এ বৈষম্যমূলক আচার–আচরণ ও ক্ষতিকর প্রথাসমূহের সংস্কার সাধন একান্ত আবশ্যক। ধর্মীয় এই সকল বৈষম্য ও অনিষ্টকারী প্রথাসমূহ নির্মূল করাকেই ধর্মীয় সংস্কার বলে। ভারতবর্ষে জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি কুপ্রথা সমূহ নিষিদ্ধ করে ধর্মীয় সংস্কার সাধন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। ধর্ম নিরপেক্ষতার যে কোন দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো?
উত্তরঃ ধর্মনিরপেক্ষতার দুটি বৈশিষ্ট্য হলঃ
(ক) রাষ্ট্র ধর্ম নেইঃ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রধর্ম নেই।
(খ) ধর্মের স্বাধীনতাঃ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মের নাগরিক ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করে।
প্রশ্ন ১০। ধর্মীয় বৈষম্য বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ ধর্মীয় বৈষম্য বলতে ধর্মাচরণে বা ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগে নানা প্রকার বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে বোঝায়। ভারতের বহু অঞ্চলে হিন্দু দলিত সম্প্রদায়ের মন্দিরে প্রবেশাধিকার নেই। কোনো কোনো অঞ্চলে হিন্দু মহিলাদেরও মন্দিরে প্রবেশাধিকার নেই। ধর্মীয় বিষয়গুলো পালন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মে নানা প্রকার বাধ্যবাধকতা থাকে। এই বাধাসমূহ জাতিগত, সম্প্রদায়গত বা লিঙ্গগত কারণে হয়ে থাকে। এই ধরনের বৈষম্যকে ধর্মীয় বৈষম্য বলা হয়।
প্রশ্ন ১১। ভারতবর্ষে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ সবল করার জন্য দুটি উপায় উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে ধর্মিরপেক্ষতাবাদ সবল করার জন্য দুটি উপায় হলঃ
(ক) ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি করা।
(খ) শান্তি, স্বাধীনতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মীয় স্বেচ্চাচারিতার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তোলা।
প্রশ্ন ১২। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্র ধর্মীয় সংস্কারে হস্তক্ষেপ করে।
(খ) ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় উভয়ের অধিকারসমূহের সংরক্ষণ অনুমোদন করে।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতে ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানের ২৫নং ধারায় বলা হয়েছে ধর্মাচরণের সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বিত্ত–সমন্ধীয় বা অন্যান্য কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাষ্ট্রের আছে। তাছাড়া সামাজিক কল্যাণ সাধন ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র প্রয়োজন মতো আইন প্রণয়ন করে ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ২৫নং ধারায় এও বলা হয়েছে যে হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির জন্য উন্মুক্ত রাখতে রাষ্ট্র আইন প্রণয়নের অধিকারী। এই সকল ধারা বিশ্লেষণ করে এই সত্যে উপনীত হওয়া যায় যে ভারতীয় সংবিধানে শান্তি, স্বাধীনতা ও সমতা বৃদ্ধির জন্য ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে। ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতা ধর্মীয় সংস্কার অনুমোদন করে।
প্রশ্ন ২। ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে নেহরুর অভিমত আলোচনা করো?
অথবা,
ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে নেহরুর মতামত কী?
উত্তরঃ নেহরুর ধর্ম নিরপেক্ষতা বলতে ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতাকে বোঝায়। এমনকী তার মতে, যারা কোনো ধর্ম পালন করে না তাদের স্বাধীনতাও এর অন্তর্ভুক্ত। নেহেরুর নিকট ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্ম বিরোধিতা নয়। তাঁর মতানুযায়ী ধর্ম নিরপেক্ষতা হল ভারতের একতা ও অখণ্ডতার প্রতীক।
প্রশ্ন ৩। কামাল আটাটুর্ক–এর ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে মন্তব্য করো?
উত্তরঃ কামাল আটাটুক আধুনিক তুর্কীর নির্মাতা। তিনি নির্ধারিত দূরত্ব নীতি অনুসরণ না করে ধর্ম দমনে সক্রিয় হস্তক্ষেপ নীতি অনুসরণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। মুসলমানদের পরিধেয় ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী টুপি ‘ফেজ’ কে ‘হ্যাট–আইন’ (Hat Law) দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষিত করেন। নারী ও পুরুষদের জন্য পাশ্চাত্য পোশাক পরিধানে উৎসাহ প্রদান করেন। এক কথায় তিনি ধর্মীয় গোড়ামীকে নির্মূল করে নতুন আদর্শ ধর্ম নিরপেক্ষতা স্থাপন করার চেষ্টা করেন।
প্রশ্ন ৪। ভারতে আন্তঃধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ তিনটি ঘটনার উল্লেখ করো?
উত্তরঃ ভারতে সংঘটিত তিনটি আন্তঃধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ঘটনা হলঃ
(ক) শিখ–বিরোধী দাঙ্গায় প্রায় চার হাজার শিথকে দিল্লী এবং দেশের অন্যপ্রান্তে ১৯৮৪ সালে হত্যা করা হয়েছিল।
(খ) গত কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার হিন্দু কাশ্মিরী পণ্ডিতদের কাশ্মীর উপত্যকায় তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
(গ) ২০০২ সালে গুজরাটে প্রায় দুই হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৫। ভারতীয় সংবিধানে ঘোষিত সংখ্যালঘু নাগরিকের অধিকারসমূহের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংখ্যালঘু অধিকারের প্রবক্তা হিসাবে গণ্য করা হয়। ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতা কেবলমাত্র ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতা নয়, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতাও সুনিশ্চিত করে। সংবিধান অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা তাদের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ধর্ম বা দানের উদ্দেশ্যে সংস্থা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ, নিজেদের ধর্মীয় কার্যকলাপ নিজেরা পরিচালনা করা, স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও উপভোগ করা, আইন অনুযায়ী নিজস্ব সম্পত্তি পরিচলনা করা ইত্যাদি অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে যে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর এই অধিকারকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। এজন্য ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংখ্যালঘুবাদ বলেও সমালোচনা করা হয়।
প্রশ্ন ৬। “ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়” এর ধারণা দাও?
উত্তরঃ পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল – ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার, আইন বা রাষ্ট্রের নয়। এই ধারণা মূলত আমেরিকার ধর্ম নিরপেক্ষতার ধারণা হতে অনুসৃত হয়েছে। এর মূল বক্তব্য হল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হতে ধর্মের পৃথকীকরণ বা বর্জন। রাষ্ট্র ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না, এবং ঠিক একইভাবে ধর্ম রাষ্ট্রের কোনো কার্যে হস্তক্ষেপ করবে না। রাষ্ট্র ধর্ম নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করতে পারবে না এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্পর্কের মধ্যে বাধাপ্রদান করতে পারবে না। ধর্মীয় নির্দেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে। তাই ধর্ম একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার, আইন বা রাষ্ট্রের নয়। এই সাধারণ ধারণা ব্যাখ্যা করে যে স্বাধীনতা এবং সমতা ব্যক্তিতান্ত্রিক বিষয়।
প্রশ্ন ৭। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের উপযোগিতা কী?
অথবা,
বর্তমান কালে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রয়োজন কেন?
উত্তরঃ আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা নিম্নোক্ত কারণে অনুভব করিঃ
(ক) ধর্মের স্বাধীনতাঃ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তার নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা অনুমোদন করে। এটি সকল ধর্মের সহাবস্থান নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
(খ) নৈতিকতাকে সমর্থনঃ ধর্মনিরপেক্ষতা নৈতিক আদর্শসমূহ যেমন– সত্য, সহনশীলতা এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্বকে সমর্থন করে। এগুলো নৈতিকভাবে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে।
(গ) গণতন্ত্রকে সমর্থনঃ ধর্মনিরপেক্ষতা সকলকে সমানভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই ধর্মনিরপেক্ষতা একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
(ঘ) রাষ্ট্র – ধর্ম পৃথকীকরণঃ ধর্ম নিরপেক্ষতা রাষ্ট্রকে ধর্ম হতে পৃথক করে এবং একই সঙ্গে এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শোষণের হাত থেকেও রক্ষা করে।
প্রশ্ন ৮। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) রাষ্ট্র ধর্ম নেইঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্র ধর্ম নেই। ভারতে কোনো নির্দিষ্ট সরকারি ধর্ম বা রাষ্ট্রধর্ম স্বীকৃত নয়।
(খ) ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল নাগরিকই ধর্মের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে।
(গ) সকল ধর্মের সম–মর্যাদাঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মাবলম্বী লোককে সমানভাবে মর্যাদা প্রদান করা হয়। সকল ধর্মকে সমান বলে গণ্য করা হয়।
(ঘ) ধর্মের ব্যাপারে বৈষম্যের অনুপস্থিতিঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে কোনরূপ বৈষম্যকে অনুমোদন করে না।
প্রশ্ন ৯। পাশ্চাত্য ধর্ম নিরপেক্ষতা বলতে তুমি কী বোঝ?
অথবা,
ধর্মনিরপেক্ষতার পাশ্চাত্য ধারণাটি পরীক্ষা করো?
উত্তরঃ সকল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সাদৃশ্য আছে যে এগুলো না ধর্মীয় রাষ্ট্র আবার না তারা কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে। তবুও সবচেয়ে বেশি যা প্রচলিত ধারণা তা হল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হতে ধর্মের পৃথকীকরণ বা বর্জন। রাষ্ট্র ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। ঠিক একইভাবে ধর্ম রাষ্ট্রের কোন কার্যে হস্তক্ষেপ করবে না। এই ধারণা আমেরিকার আদর্শ হতে অনুসৃত। পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র ও ধর্মের পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার উপর প্রতিষ্ঠিত।
রাষ্ট্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করতে পারবে না এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পর্কের মধ্যে বাধা প্রদান করতে পারবে না। ধর্মীয় নির্দেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে। তাই এ ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতায় ধর্ম একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, আইন বা রাষ্ট্রের নয়। তাছাড়া পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রকর্তৃক ধর্মীয় সংস্কারও অনুমোদন করে না।
প্রশ্ন ১০। ধর্মীয় রাষ্ট্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো?
উত্তরঃ ধর্মীয় রাষ্ট্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্যগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) ধর্মীয় রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিপরীত সত্তা বিশিষ্ট। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্মকে সমর্থন করে না। কিন্তু ধর্মীয় রাষ্ট্রের ভিত্তিই হল ধর্ম।
(খ) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মকে সমানভাবে মান মর্যাদা প্রদান করা হয়। কিন্তু ধর্মীয় রাষ্ট্রে কেবলমাত্র রাষ্ট্রের নিজস্ব ধর্মকে মর্যাদা দেওয়া হয়।
(গ) ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্মীয় রাষ্ট্র অপেক্ষা অধিক গণতান্ত্রিক।
(ঘ) ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে কোনোরূপ বৈষম্য অনুমোদন করে না। কিন্তু ধর্মীয় রাষ্ট্রে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়।
মধ্য ইউরূপের পোপ দ্বারা শাসিত রাষ্ট্রসমূহ হল ধর্মীয় রাষ্ট্র। আর বিপরীত আদর্শে ভারত হল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
প্রশ্ন ১১। একটি ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?
উত্তরঃ একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ
(ক) আন্তঃধর্মীয় ও স্ব–ধর্মীয় আধিপত্যের বর্তানঃ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ আন্তঃধর্মীয় ও স্ব–ধর্মীয় আধিপত্যের বিরোধিতা করে।
(খ) ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ সমাজের সকল ধর্মাবলম্বী লোকের ধর্মীয় স্বাধীনতার অনুমোদন করে।
(গ) সকল ধর্মের মর্যাদাঃ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে সকল ধর্মের সম মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে।
(ঘ) ধর্মীয় বৈষম্যের অনুপস্থিতি: ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ধর্মের ভিত্তিতে কোনোরূপ বৈষম্যের অনুমোদন করে না।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার সমালোচনাসমূহ আলোচনা করো?
উত্তরঃ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে নানাভাবে সমালোচনা করা হয়। এর অনেক দোষত্রুটি আছে।
প্রধান সমালোচনা সমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) ধর্মনিরপেক্ষতা চূড়ান্ত নয়ঃ ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা চূড়ান্ত নয়। সংবিধানের ২৫(২) (ক) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে ধর্মাচরণের সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বিত্ত সম্বন্ধীয় বা অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করবার অধিকার রাষ্ট্রের রয়েছে।
(খ) ধর্ম-বিরোধীঃ অনেকে ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধর্ম–বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ রূপে সত্য নয়। ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতা কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় আধিপত্যের বিরোধী।
(গ) পশ্চিমী আমদানীকৃতঃ অনেক সমলোচক মনে করেন, ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতা পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতা হতে আমদানীকৃত এবং এই কারণে তা ভারতের মতো বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের দেশে অনুপযুক্ত।
(ঘ) সংখ্যালঘুবাদঃ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে অনেক সময় সংখ্যালঘুবাদ বলে সমালোচনা করা হয়। এর কারণ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা সংখ্যলঘু অধিকারের প্রবক্তা।
(ঙ) হস্তক্ষেপবাদীঃ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাকে অনেক সমালোচক হস্তক্ষেপবাদী বলে অভিহিত করেন। কারণ ধর্মীয় সংস্কার বা অন্য যে কোনো বিষয়েই হউক ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতায় ধর্মের স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ হয়।
সর্বোপরি সরকারি কার্যকলাপেও ধর্মীয় প্রথা অনুসরণ করা হয়। মন্ত্রীগণ ধর্মের নামে শপথ বাক্য পাঠ করেন। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প উদ্বোধনের সময় ধর্মীয় প্রথা অনুসরণ করা হয়।
প্রশ্ন ২। ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ নীতি ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ নীতি ইতিবাচক অর্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় কুসংস্কার, রীতিনীতি আচরণ যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর সে সব বিষয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ যদি সমাজের কল্যাণকারী হিসাবে হয়, তাহলে ধর্মীর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ হওয়া উচিত। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্মের বিরোধিতা করে না এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো রাষ্ট্রধর্মও নেই। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সকল ধর্মকে সমান চক্ষে দেখে। প্রতিটি রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হল শান্তি, ধর্মীয় অত্যাচার বা শোষণ থেকে মুক্তি বৈষম্য বর্জন, আন্তঃধর্মীয় এবং স্বধমীয় সমতা স্থাপন। এসব লক্ষ্যপূরণের জন্য রাষ্ট্র ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। কামাল আতাতুর্ক ধর্ম হতে নির্ধারিত দূরত্ব নীতি তত্ত্ব পরিত্যাগ করে ধর্মীয় বিষয়ে সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নীতি অনুসরণ করেন। তিনি তুর্কীকে ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিকীকরণ করতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এজনা তিনি ধর্মীয় ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করে ধর্মের আহতুক প্রাধান্যতা দমন করেন।
ভারতীয় রাষ্ট্র ধর্ম থেকে নেতিবাচক দূরত্বে অবস্থান করে না। বরং ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ অস্পৃশ্যতার নিষেধাজ্ঞা। তাই সংবিধান ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যবস্থাও রেখেছে। এই ধরনের জটিল কৌশল গৃহীত হয়েছে কেবলমাত্র শান্তি, স্বাধীনতা এবং সমতা বৃদ্ধির জন্য। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রকে ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অধিকার দিয়েছে। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র সমর্থিত ধর্মীয় সংস্কার অনুমোদন করে। শান্তি, স্বাধীনতা ও সমতার জন্য ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রশ্ন ৩। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কী? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের চারটি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হল একটি মতবাদ যে মতবাদ একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের অনুমোদন করে যেখানে রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পক্ষাপতিত্ব করবে না বা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করবে না, এবং সকল নাগরিকের পছন্দ মতো ধর্ম গ্রহণ, ধর্মাচরণ বা ধর্ম বর্জনের অধিকার থাকবে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মূল নীতি হল রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ। অবশ্য ধর্মনিরপেক্ষতার ভারতীয় নমুনা অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য হলঃ
(ক) রাষ্ট্রধর্ম নেইঃ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কোনো রাষ্ট্র ধর্ম নেই। ভারতবর্ষেও রাষ্ট্রের কোনো নিজস্ব ধর্ম নেই। কারণ ভারতবর্ষ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
(খ) সকল ধর্মের সম মর্যাদাঃ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে সকল ধর্মের মর্যাদা সমানভাবে অক্ষুণ্ণ থাকে।
(গ) ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল – ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল নাগরিক ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করে এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় পরিচিতির অনুমোদন আছে।
(খ) ধর্মীয় বৈষম্যের অনুপস্থিতিঃ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে কোনো প্রকার বৈষম্যকে অনুমোদন করে না। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো নাগরিককে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
প্রশ্ন ৪। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভারতীয় মডেলের বিষয়ে আলোচনা করো?
অথবা,
ধর্মনিরপেক্ষতার ভারতীয় ধারণাটি পরীক্ষা করো?
উত্তরঃ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভারতীয় মডেল পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের নকল নয়। ভারতীয় ধর্মনিরপক্ষতাবাদের ধারণা পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ধারণা থেকে পৃথক। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতার মতো রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ অনুমোদন করেনি। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ রাষ্ট্র সমর্থিত ধর্মীয় সংস্কারের অনুমোদন করেছে।
ভারতবর্ষে ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতা ছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে। ভারতে সকল ধর্মের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে সকল ধর্মের লোকের সুরক্ষারও ব্যাবস্থা করা হয়।
ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আন্তঃধর্মীয় ও স্ব–ধর্মীয় আধিপত্যের বিরোধিতা করে। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আন্তঃধর্মীয় সমতা স্থাপনে গুরুত্ব প্রদান করে। ভারতে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মুখ্য উদ্দেশ্য হল স্ব–ধর্মীয় আধিপত্য বর্জন করা। ভারতবর্ষে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং হিন্দু সমাজে ভিন্নজাতের মধ্যে বিবাহ আইন স্বীকৃত হয়েছে।
ভারতীয় ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্রের বিরোধিতা করে। এতে প্রতিফলিত হয়েছে অস্পৃশ্যতার নিষেধাজ্ঞা। এটা একটা ইতিবাচক দিক। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ রাষ্ট্রকে ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অধিকার দিয়েছে।
ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হল ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সমতা স্থাপন করা।
ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ অপেক্ষা ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর অধিক আলোকপাত করে।
প্রশ্ন ৫। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তরায়গুলো আলোচনা করো?
উত্তরঃ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভারতীয় মডেল পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের নকল নয়। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা পশ্চিমী ধর্মনিরপেক্ষতার মতো রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ অনুমোদন করেনি। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ রাষ্ট্র সমর্থিত ধর্মীয় সংস্কারের অনুমোদন করেছে। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ অপেক্ষা ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর অধিক আলোকপাত করে। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার বাধা সব রকমের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় আধিপত্যের বিরোধিতা করে।
ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তরায়গুলো হল –
(ক) আন্তঃধর্মীয় অসমতাঃ আন্তঃধর্মীয় আধিপত্য ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ কলুষিত করছে। ভারতে কয়েকটি আন্তঃধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গা, কাশ্মিরী পণ্ডিতদের উপত্যকা থেকে বলপূর্বক বিতাড়ন, ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গা ইত্যাদি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়।
(খ) ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাঃ ভারতীয় সমাজে অনেক সময় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি হয়।
(গ) ধর্মীয় কুসংস্কার এবং ধর্মীয় স্বেচ্ছাচারিতা ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নষ্ট করে।
(ঘ) ধর্মীয় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার একটি অন্যতম বড় অন্তরায়।
(ঙ) নির্বাচনের সময় ধর্মকে রাজনৈতিক মুনাফা লাভের উপায় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক ব্যাপার।
এই অন্তরায়গুলো দূর করার জন্য সকল ধর্মকে সমান মর্যাদা প্রদান করতে এবং ধর্মকে রাজনৈতিক ব্যাপারে অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। নিম্নলিখিত কোন্ ধারণাগুলো ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? কারণ দর্শাও।
(ক) একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর দ্বারা অন্যটির আধিপত্যের অনুপস্থিতি।
উত্তরঃ এটি ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা সকল প্রকার আন্তঃধর্মীয় আধিপত্যের বিরোধিতা করে।
(খ) রাষ্ট্রীয় ধর্মের স্বীকৃতি।
উত্তরঃ এটি ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কারণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই।
(গ) সকল ধর্মকে রাষ্ট্র কর্তৃক সমান সহায়তা প্রদান।
উত্তরঃ এটি ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করে।
(ঘ) বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় প্রার্থনা।
উত্তরঃ এটির সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার কোনো মিল নেই। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিদ্যালয়ে কোনোপ্রকার ধর্মীয় প্রার্থনা বাধ্যতামূলক হতে পারে না।
(ঙ) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন।
উত্তরঃ এটির সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার মিল আছে। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়কে তাদের জন্যে পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালনার অনুমতি দেয়।
(চ) সরকার কর্তৃক মন্দির পরিচালনা সমিতির নিয়োগ।
উত্তরঃ এটি ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, কারণ মন্দির পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়।
(ছ) মন্দিরে দলিতদের প্রবেশ নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ।
উত্তরঃ এটির সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার মিল আছে। কারণ দলিতসহ সকল হিন্দুর মন্দিরে প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করা উচিত।
প্রশ্ন ২। পাশ্চাত্য এবং ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কতকগুলো মূল বৈশিষ্ট্য মিশ্রিত হয়ে গেছে। এগুলো পৃথক করো এবং নতুন একটি সারণী প্রস্তুত করো।
পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতা | ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা |
(ক) ধর্ম এবং রাষ্ট্রের একে অন্যের ব্যাপারে কঠোর হস্তক্ষেপহীনতা। | (অ) রাষ্ট্র সমর্থিত ধর্মীয় সংস্কার অনুমোদিত। |
(খ) ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সমতা, গুরুত্ব একটি মূল উদ্দেশ্য। | (আ) ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সমতার প্রদান। |
(গ) সংখ্যালঘু অধিকারের উপর কম মনোনিবেশ। | (ই) সম্প্রদায় ভিত্তিক অধিকারের উপর মনোনিবেশ। |
(ঘ) ব্যক্তি এবং তাকে কেন্দ্র করে অধিকারসমূহ। | (ঈ) ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়, উভয়ের অধিকারসমূহ সংরক্ষণ। |
উত্তরঃ
পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতা | ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা |
(ক) ধর্ম এবং রাষ্ট্রের একে অন্যের ব্যাপারে কঠোর হস্তক্ষেপহীনতা। | (অ) রাষ্ট্র সমর্থিত ধর্মীয় সংস্কার অনুমোদিত। |
(খ) ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সমতা, গুরুত্ব একটি মূল উদ্দেশ্য। | (আ) ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সমতার প্রদান। |
(গ) সংখ্যালঘু অধিকারের উপর কম মনোনিবেশ। | (ই) সম্প্রদায় ভিত্তিক অধিকারের উপর মনোনিবেশ। |
(ঘ) ব্যক্তি এবং তাকে কেন্দ্র করে অধিকারসমূহ। | (ঈ) ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়, উভয়ের অধিকারসমূহ সংরক্ষণ। |
প্রশ্ন ৩। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝ? এটি কি ধর্মীয় সহিঞ্চুতার সঙ্গে সমীকরণযোগ্য?
উত্তরঃ ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দের অর্থ হল ‘ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি উদাসীন বা ‘প্রত্যাখ্যান’। সাধারণ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা হল ধর্মীয় বিষয়ে রাষ্ট্রের পক্ষপাতহীনতা। সকল ধর্মের লোককে সমান সুযোগ প্রদান করা এবং ধর্মীয় ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থান রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য। সাংবিধানিক অর্থে রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবে না।
অনন্ত শায়ানাম আয়েঙ্গারের মতে, – “ধর্ম নিরপেক্ষতা হল কোনো বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র সাহায্য করবে না।”
ডাঃ বি. আর. আম্বেদকরের মতে, – “ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল রাষ্ট্র জনগণের উপর কোনো ধর্ম জোর করে চাপিয়ে দেবে না।”
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠাকল্পে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা অপরিহার্য। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় সহিষ্ণুতার সঙ্গে সমীকরণযোগ্য নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা সকল ধর্মের শাস্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা হতে অনেক বেশি অর্থবহ এবং এর ব্যাপকতাও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা অপেক্ষা অধিক।
প্রশ্ন ৪। নিম্নলিখিত বাক্যগুলোর সঙ্গে তুমি কি একমত? প্রতিটির সমর্থনে বা বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও।
(ক) ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের ধর্মীয় পরিচিতিকে অনুমোদন করে না।
উত্তরঃ আমরা এই বিবৃতির সঙ্গে একমত নই। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতায় জনগণ ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করে। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের ধর্মীয় পরিচিতিকে অনুমোদন করে।
(খ) একই ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে অথবা ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা অসমতার বিরুদ্ধবাদী।
উত্তরঃ এই বিবৃতির সঙ্গে আমরা একমত। ধর্মনিরপেক্ষতা একই ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বা ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে অসমতার বিরোধী।
(গ) ধর্মনিরপেক্ষতার একটি পাশ্চাত্য খ্রিস্টিয় মূল আছে। এটি ভারতের পক্ষে উপযোগী নয়।
উত্তরঃ এই বিবৃতির সঙ্গে আমরা একমত নই। পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতা খ্রিস্টান সমাজের সৃষ্ট নয়। সুতরাং এটা সত্য নয় যে ধর্ম নিরপেক্ষতা ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় উপযোগী নয়।
প্রশ্ন ৫। ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতা ধর্ম–রাষ্ট্র পৃথকীকরণ, থেকেও ধর্মের উপর অধিক আলোকপাত করে–ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ভারতের সংবিধান ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাশ্চাত্য ধর্মনিরপেক্ষতার মূল বৈশিষ্ট্য হল ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ। কিন্তু ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণে ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতার মূল লক্ষ্য হল শান্তি, ধর্মীয় অত্যাচার বা শোষণ হতে মুক্তি, বৈষম্য বর্জন, আন্তঃধর্মীয় এবং স্বধর্মীয় সমতার প্রতিষ্ঠা। তাই ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু উভয়পক্ষের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। সংবিধানের ২৫–২৮নং ধারায় সকল ভারতীয় নাগরিকের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বাধীনতার অধিকার ঘোষণা করা হয়েছে। ধর্মাচরণ, পূজার্চনা বা উপাসনা, ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্ম প্রচার প্রভৃতির স্বাধীনতা সংবিধানে স্বীকৃত। তাই আমরা এটা বলতে পারি যে ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ অপেক্ষা ধর্মের উপর অধিক আলোকপাত করে।
প্রশ্ন ৬। নির্ধারিত নীতির দূরত্বের ধারণা ব্যাখ্যা করো?
উত্তরঃ ধর্মনিরপেক্ষতায় নির্ধারিত নীতির দূরত্ব বা নিয়মাবদ্ধ দূরত্ব তত্ত্ব হল রাষ্ট্রের কোনো প্রকার ধর্মীয় কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা বা দূরত্বে অবস্থান করা। রাষ্ট্র ধর্মীয় ব্যাপারে নির্ধারিত দূরত্ব নীতি বজায় রাখবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর তুর্কীর তৎকালীন শাসক মোস্তাফা কামাল আটাটুক এই নীতি অনুসরণ না করে ধর্ম দমনের জন্য সক্রিয় হস্তক্ষেপ করেন। তিনি আধুনিক তুর্কীর নির্মাতা।

Hi! my Name is Parimal Roy. I have completed my Bachelor’s degree in Philosophy (B.A.) from Silapathar General College. Currently, I am working as an HR Manager at Dev Library. It is a website that provides study materials for students from Class 3 to 12, including SCERT and NCERT notes. It also offers resources for BA, B.Com, B.Sc, and Computer Science, along with postgraduate notes. Besides study materials, the website has novels, eBooks, health and finance articles, biographies, quotes, and more.