Class 12 Political Science Chapter 8 পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ

Class 12 Political Science Chapter 8 পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 8 পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 8 পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 8 পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 8 পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ Solutions for All Subjects, You can practice these here.

পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ

Chapter: 8

প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। UNEP-র সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ United Nations Environment Programme.

প্রশ্ন ২। বসুন্ধরা সম্মেলন কি?

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন-বিষয়ক সম্মেলনকে বসুন্ধরা সম্মেলন বলা হয়।

প্রশ্ন ৩। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

প্রথম বিশ্বকে সাধারণত _____ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

উত্তরঃ গোলকীয় উত্তর।

প্রশ্ন ৪। ভারত কখন ‘কিয়োটো আচরণবিধি’ স্বাক্ষর করে?

উত্তরঃ ২০০২ সালের আগস্ট মাসে।

প্রশ্ন ৫। হ্যাঁ বা না লেখ:

রিও সম্মেলনে ‘এজেন্ডা-২১’ নামক উন্নয়নমূলক প্রকারের এক তালিকায় অনুমোদন জানিয়েছে।

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৬। সবুজগৃহ গ্যাস নির্গমন বলতে কি বোঝায়?

অথবা,

সবুজগৃহ গ্যাস বলতে তুমি কি বোঝ?

উত্তরঃ শিল্প-কারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি গ্যাস নির্গমনের ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এটাই সবুজগৃহ গ্যাস নির্গমন।

প্রশ্ন ৭। UNFCCC -র সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ United Nations Framework Convention on Climate Change.

প্রশ্ন ৮। জনজাতি সম্প্রদায়ের বিশ্ব পরিষদ কোন্ সালে গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।

প্রশ্ন ৯। পরিবেশ সচেতনতা দিবস কোন্ দিনটিতে উদযাপন করা হয়?

উত্তরঃ ৫ই জুন।

প্রশ্ন ১০। এজেন্ডা-২১ কি?

উত্তরঃ রিও বসুন্ধরা সম্মেলনে গৃহীত উন্নয়ন কার্যসূচীকে এজেন্ডা-২১ বলা হয়।

প্রশ্ন ১১। পরিবেশ সম্পৰ্কীয় আইন প্রণয়ন প্রয়োজন কেন?

উত্তরঃ পরিবেশ সুরক্ষা ও সচেতনতার জন্য প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন ১২। ১৯৯২ সালের ধরিত্রী সম্মেলনে কয়টি রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৭০টি রাষ্ট্র।

প্রশ্ন ১৩। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কীয় রাষ্ট্রসংঘের আধার অভিবর্তন কোন্ সনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সনে।

প্রশ্ন ১৪। গোলকীয় ভীতির একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৫। হ্যাঁ বা না লেখ:

রিও সম্মেলন ২১ দফা কার্যসূচী গ্রহণ করেছিল।

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ১৬। প্রথম বিশ্বকে সাধারণত কি বলে জানা যায়?

উত্তরঃ Global North বা ‘উত্তর পৃথিবী’।

প্রশ্ন ১৭। কোন্ আন্তর্জাতিক সম্মেলন পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়কে বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের রিও বসুন্ধরা সম্মেলন।

প্রশ্ন ১৮। বসুন্ধরা সম্মেলন কখন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও-ডি জেনিরো শহরে।

প্রশ্ন ১৯। স্টকহোম পরিবেশ সম্মেলন কোন্ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

প্রশ্ন ২০। বিশ্ব জনজাতি পরিষদ কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭৫ সালে।

প্রশ্ন ২১। পরিবেশ সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সংস্থাটির নাম লেখ।

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ কার্যসূচী।

প্রশ্ন ২২। কোন্ বছরটিকে আন্তর্জাতিক জনজাতি বছর হিসাবে পালন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৩ সালকে।

প্রশ্ন ২৩। কিয়োটো প্রোটোকল কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৭ সালে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘কিয়োটো আচরণবিধি’ থেকে ভারতকে কেন নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ বর্তমানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহে মাথাপিছু নির্গম করা সবুজগৃহ গ্যাসের পরিমাণ উন্নত দেশের মাথাপিছু নির্গমনের তুলনায় যথেষ্ট কম। সেজন্য ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহকে কিয়োটো আচরণবিধি থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ২। বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক সম্পদের (Global Commons)-এর দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক সম্পদের দুটি উদাহরণ হল-

(ক) পৃথিবীর জলবায়ু। ও 

(খ) দক্ষিণ মেরু মহাদেশ।

প্রশ্ন ৩। বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক সম্পদের ক্ষেত্রে সহযোগিতা সহজ নয় বলে তুমি মনে কর কি? কেন?

উত্তরঃ বিশ্ব সর্বজনীনতা বা বিশ্বের সামূহিক সম্পদরাজির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতা সহজ নয়। পরিবেশ-সম্বন্ধীয় বিষয়সমূহের সঙ্গে জড়িত একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল অস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে সামূহিক পরিবেশগত বিষয়সমূহের উপরে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে থাকা জটিলতা।

প্রশ্ন ৪। বিশ্ব উষ্ণায়ণ বা Global Warming সৃষ্টির ক্ষেত্রে দায়ী গুরুত্বপূর্ণ দুটি গ্যাসের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য দায়ী গুরুত্বপূর্ণ দুটি গ্যাস হল—

(ক) কার্বন ডাইঅক্সাইড। ও 

(খ) মিথেন।

প্রশ্ন ৫। রাষ্ট্রসংঘ প্রদত্ত অধিবাসী জনগণের সংজ্ঞাটি লেখ।

অথবা,

অধিবাসী জনগণ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ অধিবাসী জনগণের সংজ্ঞা নিরূপণ করেছে এভাবে—অধিবাসী জনগণ হল সেইসব অধিবাসীদের সন্ততি যারা বর্তমান ভূখণ্ডে বসবাস করত, যতদিন না অন্য সংস্কৃতি বা নৃতাত্ত্বিক উৎসের মানুষজন পৃথিবীর অন্য প্রান্ত হতে এসে এদেরকে কোণঠাসা করে। অধিবাসীরা আজও তাদের নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথানুসারে জীবনযাপন করে।

প্রশ্ন ৬। বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক সম্পদ (Global Commons) কি?

উত্তরঃ বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক সম্পদ হল বিশ্বের যে সকল এলাকা, পণ্যসামগ্রী ও সম্পদ কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের এক্রিয়ারভুক্ত নয়, তা বিশ্বের সকলে সমভাবে ভোগ করে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া, বায়ুমণ্ডল, সমুদ্রপৃষ্ঠ, মহাকাশ, কুমেরু প্রভৃতি বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামুহিক সম্পদের উদাহরণ।

প্রশ্ন ৭। পারিপার্শ্বিকতার বিষয়সমূহকে বর্তমান বিশ্বরাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেন?

উত্তরঃ পারিপার্শ্বিক বিপদ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার গুরুত্ব বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করেছে। সুষম উন্নয়নের ধারণা পারিপার্শ্বিকতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন ৮। জল প্রদূষণের দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ জল প্রদূষণের দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) জলাশয়ে ঘরোয়া আবর্জনা নির্গমন ও নিক্ষেপ।

(খ) ঔদ্যোগিক বর্জিত পদার্থ নির্গমন ও নিক্ষেপ।

প্রশ্ন ৯। পারিপার্শ্বিক অবনতির সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি বিষয় লেখ।

উত্তরঃ পারিপার্শ্বিক অবনতির সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি বিষয় হল—

(ক) জনসংখ্যা বিস্ফোরণ। এবং 

(খ) নির্বনানীকরণ।

প্রশ্ন ১০। জনজাতি লোকদের মূল বিষয়টি কি?

উত্তরঃ জনজাতি লোকদের মূল বিষয়টি হল বাস্তুচ্যূত বা ভূমিহারা, যার ফলে অর্থনৈতিক সম্পদের ভিত্তি নষ্ট হয়। ফলে জনজাতি সম্প্রদায় অস্তিত্বের সংকটে। এই সম্প্রদায় সার্বভৌমত্ব, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পর্কের প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন।

প্রশ্ন ১১। কিয়োটো প্রোটোকল থেকে চীন ও ভারতকে কেন নিষ্কৃতি দেওয়া হয়?

উত্তরঃ চীন ও ভারত অন্যান্য উন্নত দেশ অপেক্ষা কম শিল্পোন্নত হওয়ায় সবুজগৃহ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম, যা পরিবেশ প্রদূষণে দায়ী নয়। ফলে এই দুটি দেশকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ১২। ধরিত্রী শীর্ষ সম্মেলনের তাৎপর্য লেখ।

উত্তরঃ ১৯৯২ সালের ধরিত্রী সম্মেলনের তাৎপর্য হল এই সম্মেলন পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।

প্রশ্ন ১৩। সম্পদ ভূরাজনীতির ধারণাটি দাও।

উত্তরঃ সম্পদের ভূ-রাজনীতি হল কে, কি, কখন, কোথায়, কিভাবে সম্পদ পাচ্ছে সেই বিষয়টি। বিশ্বে ইউরোপীয় শক্তি বিস্তারের হেতু ও চাবিকাঠি যুগিয়েছে ভূ-সম্পদ; অর্থাৎ খনিজ সম্পদ এবং জল সম্পদ।

প্রশ্ন ১৪। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) পৃথিবীর একটি বৃহৎ অংশ হল_______ অপেক্ষা _______।

উত্তরঃ স্থল/জল।

(খ) ভারতে অনুসূচিত _______ হল ______।

উত্তরঃ জাতি/জনজাতি।

(গ) বহনক্ষম________ বিষয়ক দ্বিতীয় বিশ্ব সম্মেলন সেপ্টেম্বর মাসে________ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উত্তরঃ উন্নয়ন/রিওতে।

প্রশ্ন ১৫। সাগরীয় এবং উপকূলীয় অবনতি কি?

উত্তরঃ বিশ্বব্যাপী সাগরীয় এবং উপকূলীয় প্রদূষণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগরের জলে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ ও নির্গমন সাগরীয় এবং উপকূলীয় অবনতির কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও পর্যটন উপকূলীয় অবনতির জন্য বহুলাংশে দায়ী।

প্রশ্ন ১৬। বিশ্বের জনসংখ্যার কত সংখ্যক গোলকীয় উষ্ণতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে?

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ৪০ শতাংশ জনগণ গোলকীয় উষ্ণতা হুমকির সম্মুখীন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৭। পরিবেশ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদেরকে চতুর্দিকে আবৃত করে রেখেছে তাকে পরিবেশ বলে। বায়ু, বাতাস, নদী, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, অরণ্য, জীৱজন্তু প্রভৃতি পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন ১৮। পরিবেশ প্রদূষণের দুটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পরিবেশ প্রদূষণের দুটি কারণ হল—

(ক) গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন। এবং 

(খ) নির্বনানীকরণ ও ভূমিক্ষয়।

প্রশ্ন ১৯। পরিবেশ সংরক্ষণের যে-কোন দুটি পদ্ধতি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ পরিবেশ সংরক্ষণের দুটি পদ্ধতি হল—

(ক) জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ। ও 

(খ) বনারণ্য সংরক্ষণ।

প্রশ্ন ২০। সমভোগ্য বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ সমভোগ্য হল সেই সব সম্পদ যাতে কারও মালিকানা নেই। তা সকলেই ভোগ ও ব্যবহার করতে পারে; যেমন—পার্ক, কমিউনিটি হল, কমনরুম হতে পারে।

প্রশ্ন ২১। গোলকীয় সমভোগ্য কী?

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্য হল বিশ্বের সেই সকল অঞ্চল যা যে-কোন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এক্তিয়ারের বাইরে থাকে। সাগর, মহাসাগর, মহাকাশ, দক্ষিণ মেরু প্রভৃতি গোলকীয় সমভোগ্য।

প্রশ্ন ২২। কিওটো প্রোটোকল কি?

উত্তরঃ কিওটো প্রোটোকল হল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা ১৯৯৭ সালে জাপানের কিওটো শহরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই প্রোটোকল উন্নত দেশগুলিকে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস করবার নির্দেশ দিয়েছিল।

প্রশ্ন ২৩। কিয়টো চুক্তি কোন্ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল? এই চুক্তি পরিবেশের কোন্ সমস্যার সঙ্গে জড়িত?

উত্তরঃ কিয়টো চুক্তি ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

এই চুক্তি সবুজগৃহ গ্যাস নির্গমের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন সমস্যার সঙ্গে জড়িত।

প্রশ্ন ২৪। গোলকীয় সমভোগ্যের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্যের দুটি উদাহরণ হল—

(ক) মহাকাশ।ও 

(খ) সমুদ্রপৃষ্ঠ।

প্রশ্ন ২৫। সহনশীল বা সুষম উন্নয়ন কি?

উত্তরঃ সহনশীল বা সুষম উন্নয়ন বলতে পরিবেশের কোন প্রকার ক্ষতি না করে উৎপাদন ও অন্যান্য উপায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোঝায়।

প্রশ্ন ২৬। পবিত্র বনরাজি (Sacred Grove) কি?

উত্তরঃ ধর্মীয় কারণে পরিবেশ সংরক্ষণ ভারতে একটি প্রাচীন প্রথা। পবিত্র বা বিশুদ্ধ বনরাজি হল কয়েকটি বৃক্ষের সমষ্টি যা কোন দেবতা বা বংশের কারও নামে নামকরণ করা হয়। এই সকল বনরাজি পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক।

প্রশ্ন ২৭। গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের যে-কোন দুটি উপায় উল্লেখ কর।

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের উপায় দুটি নিম্নরূপ:

(ক) গোলকীয় সমভোগ্য কেবলমাত্র সীমিত কাজে ব্যবহার করা উচিত।

(খ) গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।

প্রশ্ন ২৮। সামূহিক সম্পদ কি? দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ সামুহিক সম্পদ হল বিশ্বের যে সকল এলাকা, পণ্যসামগ্রী ও সম্পদ কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের এক্তিয়ারভুক্ত নয়, তা বিশ্বের সকলে সমবেতভাবে ভোগ করে থাকে।

পৃথিবীর আবহাওয়া, বায়ুমণ্ডল, সমুদ্রপৃষ্ঠ, মহাকাশ সামূহিক সম্পদের উদাহরণ।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। রাষ্ট্রসংঘ পারিপার্শ্বিকতা বিষয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে কি ভূমিকা পালন করেছে?

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘ পারিপার্শ্বিকতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ কার্যসূচীর অধীন বিভিন্ন আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করার সঙ্গে পরিবেশ-সংক্রান্ত সমস্যাসমূহের বিস্তৃত অধ্যয়ন করে এইগুলি সমাধানের অর্থে ফলপ্রসূ উপায় আবিষ্কারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ কার্যসূচী ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা রাষ্ট্রসংঘের প্রথম সংস্থা এবং যার প্রধান কার্যালয় উন্নয়নশীল দেশ কেনিয়ার নাইরোবিতে অবস্থিত। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল পরিবেশ সংরক্ষণ এবং এই ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করা। মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালীর মান উন্নত করা। পরিবেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের একমাত্র সংস্থা হিসাবে এরা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিশ্ব কার্যক্রম প্রস্তুত করে। এরা বহনযোগ্য উন্নয়নের পারিবেশিক দিকসমূহ উৎসাহিত করে।

রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ কার্যক্রমে ১৯৯২ সালে রিও বসুন্ধরা সম্মেলনের নির্দেশিত পারিবেশিক কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই সংস্থা সদস্যরাষ্ট্রসমূহকে প্রযুক্তিগত সাহায্য প্রদান, বিশ্বের পরিবেশ নিরীক্ষা এবং বিকল্প শক্তির উৎস সুপারিশ করে।

প্রশ্ন ২। বিশ্বায়ন সার্বজনীনতা বা বিশ্বের সামূহিক সম্পদরাজি বলতে কি বোঝায়? এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুটি পরামর্শ দাও।

উত্তরঃ বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক সম্পদ হল বিশ্বের যে সকল এলাকা, পণ্যসামগ্রী ও সম্পদ কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের এক্রিয়ারভুক্ত নয়, তা বিশ্বের সকলে সমভাবে ভোগ করে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া, বায়ুমণ্ডল, সমুদ্রপৃষ্ঠ, মহাকাশ, কুমেরু প্রভৃতি বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামুহিক সম্পদের উদাহরণ।

পরামর্শ: বিশ্বায়ন সার্বজনীনতা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরামর্শ নিম্নরূপ:

(ক) সামূহিক সম্পদসমূহ রক্ষা করতে হলে উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এইক্ষেত্রে ঐক্যমত থাকতে হবে।

(খ) উপকূলীয় অঞ্চলে জনবসতি হ্রাস করার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

(গ) রাষ্ট্রসমূহ মিতব্যয়ীভাবে সম্পদ ব্যবহার করবে।

প্রশ্ন ৩। রিও সম্মেলনের সিদ্ধান্ত কি ছিল?

উত্তরঃ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে ১৯৯২ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একে বসুন্ধরা সম্মেলন বা Earth Summit বলা হয়। এই সম্মেলন বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়কে মুখ্য বিষয়ে পরিণত করেছিল। এই সম্মেলনে বিশ্বের ১৭০টি রাষ্ট্র, কয়েক হাজার বেসরকারি সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল। রিও সম্মেলনে দীর্ঘ আলোচনার পর জলবায়ু পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র্য, বনাঞ্চল প্রভৃতি সংক্রান্ত অলিখিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সম্মেলনে Agenda-21 নামে উন্নয়নমুখী একটি তালিকা সুপারিশ করা হয়। রিও সম্মেলনে পরিবেশ দায়বদ্ধতা সহ আর্থিক বিকাশ বিষয়ে সহমত প্রকাশিত হয়। এই পদ্ধতিকে সুষম বা বহনযোগ্য উন্নয়ন বলা হয়। এই সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতার আহ্বান করা হয়।

প্রশ্ন ৪। “আদিবাসী জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ দীর্ঘকাল অবহেলিত ছিল।” আদিবাসী জনগণের অধিকার রক্ষাসংক্রান্ত গৃহীত পদক্ষেপসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ দীর্ঘ সময়ব্যাপী আদি জনজাতি সম্প্রদায়ের অধিকার-সংক্রান্ত বিতর্কিত বিষয়সমূহ দেশ ও বিদেশের রাজনীতিতে অবহেলিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে জনজাতি নেতৃত্বের ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক সংযোগ সমগ্র বিশ্বজুড়ে এক সার্বজনীন উদ্বেগ এবং অভিজ্ঞতার অংশদারিত্বের জন্ম দিয়েছে।

(ক) ১৯৭৫ সালে আদি জনজাতি লোকদের বিশ্ব জনজাতি পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে তা রাষ্ট্রসংঘের পরামর্শদাতা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

(খ) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সকল লোকদের অধিকার রক্ষার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে।

(গ) ভারতের মতো দেশে এই সকল লোকদের ন্যায় প্রদান করার জন্য সংরক্ষণ প্রভৃতি ব্যবস্থা করা হয়েছে।

(ঘ) যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আদি জনজাতি লোকের মধ্যে যোগাযোগ ও ভাবের আদান-প্রদান হচ্ছে।

প্রশ্ন ৫। সম্পদের ভূ-রাজনীতি বলতে কি বোঝায়? বিশ্ব রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা থাকা দুটি সম্পদের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সম্পদের ভূ-রাজনীতি হল কে, কি, কখন, কোথায়, কিভাবে সম্পদ পাচ্ছে সেই বিষয়টি। বিশ্বে ইউরোপীয় শক্তি বিস্তারের হেতু ও চাবিকাঠি যুগিয়েছে ভূ-সম্পদ; অর্থাৎ খনিজ সম্পদ এবং জল সম্পদ।

বিশ্বজনীন সম্পদ বলতে আমরা সেই সকল সম্পদ বুঝি, যেগুলির মালিক কোন ব্যক্তিবিশেষ নয়, বরঞ্চ যা একটি জনসম্প্রদায় ব্যবহার করতে পারে। এটি একটি সাধারণের ব্যবহার্য ঘর, লোক সমাজ কেন্দ্র, একটি উদ্যান অথবা নদী হতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা থাকা দুটি সম্পদ হল—

(ক) খনিজ তেল। ও 

(খ) জলসম্পদ।

প্রশ্ন ৬। সবুজগৃহ পরিঘটনা কি? এর প্রভাবসমূহ কি কি?

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসের নির্গমণের ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে এবং পৃথিবীর উপরিভাগের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেইসব গ্যাসকে সবুজগৃহ গ্যাস বলা হয়। এই গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি। এই গ্যাস নানান শিল্প ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, ছাই ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সবুজগৃহ গ্যাসের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই গ্যাসসমূহ পৃথিবীর উপরিস্থিত বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তা দূষিত করে ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এর ফলে জলবায়ুর উপর নানাপ্রকার প্রভাব পড়েছে। পৃথিবীর নানান স্থানে অ্যাসিড বৃষ্টি হচ্ছে, দুই মেরুতে থাকা বরফের পাহাড় গলে গিয়ে সাগরের জল বৃদ্ধি করছে—যা মানবজাতির ক্ষেত্রে সংকট ডেকে আনছে। ঋতুচক্রেরও পরিবর্তন ঘটেছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে সমূহ বিপদের আশংকা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন ৭। পরিবেশ-বিষয়ক প্রধান সমস্যাগুলি লেখ।

উত্তরঃ পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রসমূহের দৃষ্টিভঙ্গীতে বহুত পার্থক্য দেখা যায়। ফলে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল। উত্তর গোলার্ধের ধনী রাষ্ট্রসমূহ পারিবেশিক সমস্যাসমূহ সমাধানের ক্ষেত্রে সকল রাষ্ট্রের সমদায়বদ্ধতার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। এর বিপরীতে দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ দাবি করে যেহেতু পারিবেশিক অবক্ষয়ের মূল কারণ উন্নত রাষ্ট্রসমূহের ঔদ্যোগিক বিকাশ তাই পারিবেশিক সংরক্ষণের জন্য উন্নত রাষ্ট্রসমূহকেই অধিকতর দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করতে হবে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ আরও দাবি করে যে তাদের ঔদ্যোগিক বিকাশ প্রক্রিয়া যেহেতু চালু আছে তাই তাদের উপর কঠোর প্রতিবন্ধকতা যাতে আরোপ করা না হয়; অর্থাৎ পারিবেশিক আইনের শর্তসমূহ প্রয়োগের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলিকে শিথিলতা দেওয়া প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশসমূহের এই দাবি বসুন্ধরা সম্মেলনে মেনে নেওয়া হয়। রায় ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে যে বিশ্বের পর্যাবরণের স্বাস্থ্যরক্ষার ও অখণ্ডতার সংরক্ষণের, রক্ষণাবেক্ষণের ও পুনঃসংস্থাপনের লক্ষ্যে বিশ্বজনীন অংশীদারিত্বের মনোভাব পোষণ করতে হবে। বিশ্বজনীন পারিবেশিক অবক্ষয় নিবারণে সমস্ত রাষ্ট্র সমবেতভাবে ও পৃথকভাবে দায়বদ্ধ থাকবে।

প্রশ্ন ৮। উদাহরণসহ জলযুদ্ধ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ জল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ যার বিশ্ব রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা আছে। আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং অলবণাক্ত জলের ক্রমবর্ধমান অপ্রতুলতার ফলে জলসম্পদের অংশীদারিত্ব নিয়ে বিভেদের সম্ভাবনা রয়েছে। ২১ শতকে এই বিষয়টি সংঘর্ষের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই জীবনদায়ী সম্পদ নিয়ে ভয়ানক সংঘর্ষের সম্ভাবনা বর্ণন করার সময় বিশ্ব রাজনীতির কিছু ভাষ্যকার একে ‘জলসম্পদ যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছেন। যে সকল দেশ এই নদীর জল ভাগবাটোয়ারা করে ব্যবহার করে তারা বহু ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে। অলবণাক্ত জলের রক্ষণাবেক্ষণ অথবা দখল নেবার লক্ষ্যে রাষ্ট্রসমূহ সামরিক শক্তিও নিয়োগ করেছে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে ইজরায়েল, সিরিয়া এবং জর্ডনের সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রত্যেক পক্ষই জর্ডন ও ইয়ারমুক নদীর জলকে নিজের সুবিধামতো ব্যবহারের চেষ্টা করে। ইদানীংকালে ইউফ্রেটিস্ নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাক পরস্পরের প্রতি হুমকি জারি রেখেছে। পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে সকল দেশ নদী জলসম্পদ ব্যবহার করে, তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে সামরিক সংঘর্ষে জড়িত। ভারত ও পাকিস্তান এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেও জলসম্পদ ব্যবহার নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। যদিও তা যুদ্ধে পরিবর্তনে আশু সম্ভাবনা নেই।

প্রশ্ন ৯। রাষ্ট্রসংঘ প্রদত্ত অধিবাসী জনগণের সংজ্ঞা ও অধিকার বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ সংজ্ঞা: রাষ্ট্রসংঘ অধিবাসী জনগণের সংজ্ঞা নিরূপণ করেছে এভাবে—অধিবাসী জনগণ হল সেইসব অধিবাসীদের সন্ততি যারা বর্তমান ভূখণ্ডে বসবাস করত, যতদিন না অন্য সংস্কৃতি বা নৃতাত্ত্বিক উৎসের মানুষজন পৃথিবীর অন্য প্রান্ত হতে এসে এদেরকে কোণঠাসা করে। অধিবাসীরা আজও তাদের নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথানুসারে জীবনযাপন করে।

অধিকার: অধিবাসী জনগণের কতিপয় অধিকারের উল্লেখ করা হয়েছে। এইগুলির মধ্যে অন্যতম হল—অধিবাসী জনগণের নিজস্ব কলা-সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। সমস্ত অধিবাসী জনগণের ভূমির অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে উপযুক্ত বিধিগত ব্যবস্থা প্রদান করা এবং সম্পদের উপর অধিকার সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনিশ্চিত করা। তাছাড়া এই সকল লোকদের স্বায়ত্বশাসন থেকে বঞ্চিত না করা।

প্রশ্ন ১০। কি কি বিভিন্ন বিষয়ে ধনী ও গরীব দেশসমূহ বিশ্ব রক্ষার্থে সহমত পোষণ করে?

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বের উন্নত এবং ধনী রাষ্ট্রসমূহ গোলকীয় উত্তর বা Global North নামে পরিচিত। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহকে গোলকীয় দক্ষিণ বা Global South বলা হয়। গোলকীয় উত্তর গোলকীয় দক্ষিণ অপেক্ষা একটি পৃথক পারিবেশিক কার্যক্রম অনুসরণ করছে। উত্তরের রাষ্ট্রসমূহ বেশি পরিমাণে ওজোন স্তর বিদীর্ণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য দায়ী। অন্যদিকে দক্ষিণের রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ এই দুইটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে বদ্ধপরিকর। ১৯৯২ সালের রিও বসুন্ধরা সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সম্মেলনে অর্থনৈতিক বিকাশ ও পারিবেশিক দায়িত্বশীলতা বিষয়ে সহমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে বহনযোগ্য বা সুষম বিকাশ পদ্ধতি বলা যায়।

ভারত, চীন ও অন্যান্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে কিওটো প্রটোকলের বিধিনিষেধ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল কারণ এই সকল দেশের পরিবেশ প্রদূষণের মাত্রা অত্যন্ত নগণ্য। জি–৮ (G–8) ভুক্ত দেশসমূহের ২০০৫ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারত যথার্থই বলেছিল যে উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের মাথাপিছু প্রদূষকের পরিমাণ খুবই কম। ভারতের মতে প্রদূষণের মাত্রা হ্রাসের প্রধান দায়িত্ব উন্নত দেশগুলির। রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনও উন্নত দেশসমূহের পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছে। সুতরাং রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আপোষ ও সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই পরিবেশ-সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ সমাধান করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ১১। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ:

(ক) ভূমির অবনতি।

(খ) প্রদূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন।

(গ) গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি।

উত্তরঃ (ক) ভূমির অবনতি: ভূমির অবনতি বলতে ভূমির অবক্ষয়কে বোঝায়। বিশেষত, কৃষিভূমি হ্রাস পাওয়া, কৃষিভূমির উর্বরতার পরিমাণ কমে যাওয়া ইত্যাদিকে ভূমির অবনতি বলা হয়। তদুপরি নদীতে বানের জলের ফলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং প্রদূষণের ফলে ভূমির অবক্ষয় ঘটে।

(খ) প্রদূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন: সমগ্র বিশ্বজুড়ে বর্তমানে দেখা দেওয়া জলবায়ুর পরিবর্তনের মূল কারণ হল প্রদূষণ। প্রদূষণের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হতে দেখা যায়। প্রদূষণের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যতার বিরূপতা সমগ্র বিশ্বে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। অনুকূল পরিবেশের অভাবে সমগ্র বিশ্ববাসী তাদের জীবন এবং স্বাস্থ্য সংকটের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের মড়ক ও মহামারী দেখা দিচ্ছে।

(গ) গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি: বর্তমান বিশ্বে বৃদ্ধি পাওয়া গোলকীয় উষ্ণতাই ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করছে। কিছু কিছু গ্যাস, যেমন—কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, হাইড্রো- ফ্লুরোকার্বন ইত্যাদির নির্গমন বিশ্বের উষ্ণায়নের জন্য আংশিকভাবে দায়ী। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মানুষ দিনকে দিন স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষত, এই পরিবর্তনের মূল কারণ হিসাবে সমগ্র বিশ্বে প্রদূষণ সৃষ্টিকেই দায়ী করা হয়। প্রদূষণের ফলে যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে ঠিক সেভাবেই প্রদূষণের ফলেই গোলকীয় উষ্ণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মানুষ এক ভয়ংকর বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রশ্ন ১২। সমভোগ্য কিন্তু পৃথক দায়িত্বশীলতা বলতে কি বোঝ? এই ধারণা আমরা কতটুকু বাস্তবায়িত করতে পেরেছি?

উত্তরঃ মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে মনুষ্যজাতি তার সৃষ্টি লগ্ন থেকেই বুদ্ধিমত্তার দ্বারা বেঁচে থাকার উপায়কে সহজতর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চেষ্টাতেই মনুষ্যজাতি প্রত্নপ্রস্তর যুগ থেকে লাখো বছর পেরিয়ে আজ যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। আর এই দীর্ঘ যাত্রাপথে মানুষ প্রকৃতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার অপচেষ্টা করে গেছে এবং এখনও করছে। যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়। যেহেতু এই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সমগ্র মানবজাতি তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের দায়ও মানবজাতির উপর বর্তায়।

রিও সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পৃথিবীর পরিবেশ সংরক্ষণ, রক্ষা করা এবং এর স্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধতা পুনরুত্থান করতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে সম-অংশদারীত্বের ভিত্তিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়। গোলকীয় পরিবেশ হানির বিভিন্নতার নিরিখে রাষ্ট্রের সমান কিন্তু ভিন্ন দায়িত্বশীলতা বিদ্যমান। উন্নত দেশসমূহ হতে অতীতে এবং বর্তমানে অধিকাংশ গোলকীয় প্রদূষণের উৎপত্তি হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের মাথাপিছু প্রদূষণের পরিমাণ এখনও অপেক্ষাকৃত কম। এই কারণে ভারত, চীন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ কিওটো প্রোটোকলের বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত নয়। কিওটো প্রোটোকল অনুযায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলিকে সবুজঘর গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস করতে হয়। সমভোগ্য কিন্তু ভিন্ন দায়িত্বশীলতা নীতি অনুযায়ী ভারতের মতে প্রদূষক নির্গমন হ্রাসের প্রধান দায়িত্ব উন্নয়নশীল দেশসমূহের। এই দেশগুলি দীর্ঘকাল ধরে প্রদূষক মজুত করে রেখেছে।

গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবে গোলকীয় সমভোগ্যের উপর সহযোগিতা সহজ ব্যাপার নয়। গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এইগুলির মধ্যে ১৯৫৯ সালের দক্ষিণ মেরু চুক্তি (Antarctic Treaty), ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকল (Montreal Protocol) এবং ১৯৯১ সালের দক্ষিণমেরু পরিবেশ প্রোটোকল (Antarctic Environment Protocol, 1991) উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই সকল চুক্তি ও বোঝাপড়ার প্রধান সমস্যা হল সহমতের অভাব। যার ফলে এইগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। 

গোলকীয় সমভোগ্য হিসাবে মহাকাশের ইতিহাস প্রমাণ করে যে এই এলাকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা উত্তর-দক্ষিণ বৈষম্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে প্রধান সমস্যা হল প্রযুক্তি ও শিল্পোন্নয়ন।

প্রশ্ন ১৩। পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য আমাদের কেন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন?

উত্তরঃ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের সর্বত্র পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ শোষণ করছে। নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস ও বন্যপ্রাণী নিধনের ফলে জৈব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য হানি ঘটছে। পরিবেশ প্রদূষণ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পরিবেশ রক্ষা ও জৈব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আইন প্রণয়নের প্রয়োজন। বায়ু প্ৰদূষণ, শব্দ প্ৰদূষণ, জল প্রদূষণ, মৃত্তিকা প্রদূষণ প্রভৃতি রোধে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন একান্ত প্রয়োজন। জৈববৈচিত্র্য রক্ষার্থে বন আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আইন, ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ আইন প্রভৃতি একান্ত প্রয়োজন। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ এই ব্যাপারে বিহিত ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে। আমাদের দেশও এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন ১৪। প্রদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ প্রকৃতি তার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে পৃথিবীতে জীবন সৃষ্টি করেছে। প্রাণী এবং উদ্ভিদ জগৎ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকৃতি ভারসাম্য রক্ষা করেছে। জল, স্থল ও বায়ু উভয় জগতের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু মানবসমাজ এই ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রদূষণ। প্ৰদুষণ হল প্রকৃতি-সৃষ্ট জল, স্থল ও বায়ুর শুদ্ধতা এবং পবিত্রতা নষ্ট করা।

প্রদূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন: সমগ্র বিশ্বজুড়ে বর্তমানে দেখা দেওয়া জলবায়ুর পরিবর্তনের মূল কারণ হল প্রদূষণ। প্রদূষণের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হতে দেখা যায়। প্রদূষণের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যতার বিরূপতা সমগ্র বিশ্বে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। অনুকূল পরিবেশের অভাবে সমগ্র বিশ্ববাসী তাদের জীবন এবং স্বাস্থ্য সংকটের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের মড়ক ও মহামারী দেখা দিচ্ছে।

প্রশ্ন ১৫। গোলকীয় উষ্ণায়ন কি? বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কাঠামোগত সম্মেলন বসে। এই সম্মেলনে গোলকীয় উষ্ণায়ন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সকল অংশগ্রহণকারীগণ এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেন যে গোলকীয় উষ্ণায়নের জন্য ‘গ্রীন-হাউস গ্যাস’-এর নির্গমন আংশিকভাবে দায়ী যা ব্যাপকভাবে উদ্ভূত হয় উন্নত দেশসমূহে।

বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসের নির্গমণের ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে এবং পৃথিবীর উপরিভাগের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেইসব গ্যাসকে সবুজগৃহ গ্যাস বলা হয়। এই গ্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি। এই গ্যাস নানান শিল্প ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, ছাই ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সবুজগৃহ গ্যাসের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই গ্যাসসমূহ পৃথিবীর উপরিস্থিত বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তা দূষিত করে ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এর ফলে জলবায়ুর উপর নানাপ্রকার প্রভাব পড়েছে। পৃথিবীর নানান স্থানে অ্যাসিড বৃষ্টি হচ্ছে, দুই মেরুতে থাকা বরফের পাহাড় গলে গিয়ে সাগরের জল বৃদ্ধি করছে—যা মানবজাতির ক্ষেত্রে সংকট ডেকে আনছে। ঋতুচক্রেরও পরিবর্তন ঘটেছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে সমূহ বিপদের আশংকা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৬। সমভোগ্য সহযোগিতার সমস্যাসমূহ কি কি?

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবে গোলকীয় সমভোগ্যের উপর সহযোগিতা সহজ ব্যাপার নয়। গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এইগুলির মধ্যে ১৯৫৯ সালের দক্ষিণ মেরু চুক্তি (Antarctic Treaty), ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকল (Montreal Protocol) এবং ১৯৯১ সালের দক্ষিণমেরু পরিবেশ প্রোটোকল (Antarctic Environment Protocol, 1991) উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই সকল চুক্তি ও বোঝাপড়ার প্রধান সমস্যা হল সহমতের অভাব। যার ফলে এইগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। 

গোলকীয় সমভোগ্য হিসাবে মহাকাশের ইতিহাস প্রমাণ করে যে এই এলাকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা উত্তর-দক্ষিণ বৈষম্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে প্রধান সমস্যা হল প্রযুক্তি ও শিল্পোন্নয়ন।

প্রশ্ন ১৭। বর্তমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্বারা পরিবেশ কিভাবে প্রদূষিত হয়েছে?

উত্তরঃ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের মধ্যে উন্নয়ন প্রতিযোগিতা মানুষের নিজের স্বাস্থ্য বিপন্ন করেছে। কৃষি এবং শিল্পে উন্নয়নকেই উন্নয়নের সাধারণ মানদণ্ড বলে বিবেচনা করা হয়। এই প্রতিযোগিতা পরিবেশের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রকে সীমাহীন শোষণ করছে। 

এর ফলাফলসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) পরিবেশজনিত ব্যাধি বিস্তার।

(খ) মানুষের ক্রিয়াকলাপ ওজোন স্তর বিদীর্ণের কারণ।

(গ) উন্নয়ন প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার শেষ করে।

(ঘ) বিশ্ব উষ্ণায়ণের কারণস্বরূপ।

(ঙ) পরিবেশে দূষিত প্রদূষকের সংযোজন।

প্রশ্ন ১৮। স্বদেশীয় জনসাধারণের অধিকার ও পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক কী? সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতবর্ষে স্বদেশী জনগোষ্ঠী বলতে সাধারণত পার্বত্য তফসিলি সম্প্রদায়কে বোঝায় যারা দেশের সমগ্র জনসাধারণের ৮ শতাংশের অধিকারী। শিকারী এবং সংগ্রহকারী কিছু গোষ্ঠী ব্যতীত ভারতের স্বদেশী জনজাতি জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি পালনের উপর নির্ভরশীল। বহু শতক ধরে এদের অবাধ ছাড়পত্র ছিল যত জমি আবাদ করা সম্ভব ততখানি জমির উপর। পার্বত্য অঞ্চলের বনাঞ্চল পরিষ্কার করে জুমচাষের মাধ্যমে তারা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করত। এই জনগোষ্ঠী দেশের উন্নতির জন্য বিশাল মূল্য দিয়েছে। কেননা, স্বাধীনতার সময় হতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের স্বার্থে যে সমস্ত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে স্বদেশী জনগোষ্ঠী তাদের মধ্যে অন্যতম।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তরঃ যে প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদেরকে চতুর্দিকে আবৃত করে রেখেছে তাকে পরিবেশ বলে। বায়ু, বাতাস, নদী, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, অরণ্য, জীবজন্তু প্রভৃতি পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতির এই সকল দানকে শুদ্ধ, স্বচ্ছ এবং প্রদূষণ মুক্ত রাখার দায়িত্ব মানবজাতির এবং সভ্য রাষ্ট্রসমূহের।

পরিবেশ প্রদূষতা রোধে সকল প্রকাশ প্রয়াসকে ভারত সদা সমর্থন করে। ভারত ২০০২ সালের আগস্ট মাসে কিওটো প্রোটোকল স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে। ২০০৫ সালে জি-৮ সম্মেলনে ভারত বিকাশশীল দেশসমূহের কম মাথাপিছু প্রদূষকের উল্লেখ করেছে। ভারত সরকার বেশ কিছু সংখ্যক কার্যসূচীর মাধ্যমে গোলকীয় পরিবেশ সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ ভারতের জাতীয় জ্বালানি নীতি যানবাহনে বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। ২০০১ সালে শক্তি সংরক্ষণ আইন শক্তির দক্ষতা উন্নত করবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৩ সালের বিদ্যুৎ আইন নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। অধিকন্তু ভারত সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত অনেকগুলি আইন প্রণয়ন করেছে।

প্রশ্ন ২। বিশ্বায়ন সর্বজনীনতা বা সামূহিক কিন্তু পৃথক দায়বদ্ধতা কি?

উত্তরঃ মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে মনুষ্যজাতি তার সৃষ্টি লগ্ন থেকেই বুদ্ধিমত্তার দ্বারা বেঁচে থাকার উপায়কে সহজতর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চেষ্টাতেই মনুষ্যজাতি প্রত্নপ্রস্তর যুগ থেকে লাখো বছর পেরিয়ে আজ যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে অবতীর্ণ হয়েছে। আর এই দীর্ঘ যাত্রাপথে মানুষ প্রকৃতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার অপচেষ্টা করে গেছে এবং এখনও করছে। যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়। যেহেতু এই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী সমগ্র মানবজাতি তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের দায়ও মানবজাতির উপর বর্তায়।

রিও সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পৃথিবীর পরিবেশ সংরক্ষণ, রক্ষা করা এবং এর স্বাস্থ্য ও বিশুদ্ধতা পুনরুত্থান করতে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে সম-অংশদারীত্বের ভিত্তিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়। গোলকীয় পরিবেশ হানির বিভিন্নতার নিরিখে রাষ্ট্রের সমান কিন্তু ভিন্ন দায়িত্বশীলতা বিদ্যমান। উন্নত দেশসমূহ হতে অতীতে এবং বর্তমানে অধিকাংশ গোলকীয় প্রদূষণের উৎপত্তি হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের মাথাপিছু প্রদূষণের পরিমাণ এখনও অপেক্ষাকৃত কম। এই কারণে ভারত, চীন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ কিওটো প্রোটোকলের বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত নয়। কিওটো প্রোটোকল অনুযায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলিকে সবুজঘর গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস করতে হয়। সমভোগ্য কিন্তু ভিন্ন দায়িত্বশীলতা নীতি অনুযায়ী ভারতের মতে প্রদূষক নির্গমন হ্রাসের প্রধান দায়িত্ব উন্নয়নশীল দেশসমূহের। এই দেশগুলি দীর্ঘকাল ধরে প্রদূষক মজুত করে রেখেছে।

প্রশ্ন ৩। বিশ্ব রাজনীতিতে জল ও তেলের তাৎপর্য কি?

উত্তরঃ জল: বিশ্ব রাজনীতিতে সাম্প্রতিককালে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়া একটি প্রাকৃতিক সম্পদ হল জল। জলের আঞ্চলিক তারতম্য ও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সৃষ্ট জলের অপ্রতুলতা সন্দেহাতীত করে তুলেছে যে একবিংশ শতকে জলই রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংঘাতের মূল কারণ হয়ে পড়বে।

দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে আসা নদীর জলধারা ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। নদীর উৎস বা উজানি অংশ যে রাষ্ট্রে থাকে সেই রাষ্ট্রই নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ব্যাপক জল সিঞ্চনের ব্যবস্থা করে নদীর নিম্ন অংশের জল দূষিত করা বা জলের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে।

উজান ও জারমুখ নদীর জলধারাকে নিজ নিজ সুবিধাজনক দিকে গতি পরিবর্তনের চেষ্টার ফলে ইজরায়েল, জর্ডন ও সিরিয়ার মধ্যে হিংসাত্মক বিরোধের সূত্রপাত ঘটেছিল। ইউফ্রেটিস নদীতে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে তীব্র বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল।

তেল: ইন্ধন হিসাবে অতি অপরিহার্য তথা সহজে বহনের সুবিধা থাকার জন্য বিংশ শতকে বিশ্ব অর্থনীতি তেলনির্ভর হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের যাতায়াত ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় ইন্ধনের ৯৫ শতাংশ খনিজ তেল থেকে পাওয়া যায়। শিল্পোদ্যোগে অগ্রসর বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ তেলের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। মানুষ প্রকৃতপক্ষে তেল ছাড়া বাঁচতে পারবে না।

তেলের সঙ্গে জড়িত থাকা বিশাল ধনসম্পদের কারণে তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ করার ফলে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল এবং বর্তমানেও এই সংঘর্ষ চলছে। এজন্য বলা হয় যে খনিজ তেলের ইতিহাস হল প্রকৃত সংঘাত ও সংঘর্ষের ইতিহাস। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার ইতিহাস তা প্রমাণ করে।

প্রশ্ন ৪। বিশ্বের সামূহিক সম্পদরাজির উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ সামূহিক বা সর্বসাধারণের সম্পদ বলতে সেই সকল সম্পদ বোঝায় যেগুলির মালিক কোন ব্যক্তিবিশেষ নয়, বরঞ্চ যা একটি জনসম্প্রদায় ব্যবহার করতে পারে; যেমন—নদী, বায়ুমণ্ডল, সমুদ্র, মহাকাশ, সূর্যালোক ইত্যাদি।

সমভোগ্য সম্পত্তি সম্পদ হল একটি জনগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পত্তি। জনগোষ্ঠীর সকল সদস্যদের নির্দিষ্ট সম্পদের উপর অধিকার ও কর্তব্য উভয়ই আছে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও শতাব্দী ধরে ব্যবহারের ফলে ভারতে অনেক গ্রামীণ সম্প্রদায় তাহাদের সদস্যদের অধিকার ও কর্তব্য সংজ্ঞায়িত করেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেসরকারিকরণ, কৃষিকার্য তরান্বিতকরণ এবং পরিবেশ হানি প্রভৃতি সমভোগ্য সম্পত্তির পরিমাণ হ্রাস করেছে। দক্ষিণ ভারতে বিশুদ্ধ কুঞ্জবন সমভোগ্য সম্পত্তি সম্পদের একটি প্রকৃষ্টতম উদাহরণ। বিশুদ্ধ কুঞ্জবন (Sacred Grove) পরম্পরাগতভাবে গ্রামীণ গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন ৫। গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং প্রদূষণ নির্গমনের বিরুদ্ধে গোলকীয় প্রচেষ্টায় ভারত সরকারের গ্রহণ করা কয়েকটি কার্যসূচির উল্লেখ কর।

উত্তরঃ যে প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদেরকে চতুর্দিকে আবৃত করে রেখেছে তাকে পরিবেশ বলে। বায়ু, বাতাস, নদী, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, অরণ্য, জীবজন্তু প্রভৃতি পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতির এই সকল দানকে শুদ্ধ, স্বচ্ছ এবং প্রদূষণ মুক্ত রাখার দায়িত্ব মানবজাতির এবং সভ্য রাষ্ট্রসমূহের।

পরিবেশ প্রদূষতা রোধে সকল প্রকাশ প্রয়াসকে ভারত সদা সমর্থন করে। ভারত ২০০২ সালের আগস্ট মাসে কিওটো প্রোটোকল স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে। ২০০৫ সালে জি-৮ সম্মেলনে ভারত বিকাশশীল দেশসমূহের কম মাথাপিছু প্রদূষকের উল্লেখ করেছে। ভারত সরকার বেশ কিছু সংখ্যক কার্যসূচীর মাধ্যমে গোলকীয় পরিবেশ সংরক্ষণ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ ভারতের জাতীয় জ্বালানি নীতি যানবাহনে বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। ২০০১ সালে শক্তি সংরক্ষণ আইন শক্তির দক্ষতা উন্নত করবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৩ সালের বিদ্যুৎ আইন নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। অধিকন্তু ভারত সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত অনেকগুলি আইন প্রণয়ন করেছে।

প্রশ্ন ৬। “বর্তমান সময়ে পারিপার্শ্বিক সংকটের বিষয়ে সচেতনতা এক বৃহৎ উদ্বেগের বিষয় হয়ে পড়েছে।” যথাযথ উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ পারিবেশিক অবনতি সম্পর্কে সচেতনতা এবং পরিবেশ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার রাখা বর্তমান দিনে বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। 

নিম্নের উপাদানসমূহ তার জন্য দায়ী:

(ক) সমগ্র বিশ্বে কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণ কদাচই বিস্তৃত হতে দেখা যায়। বর্তমানের কৃষিযোগ্য জমি ও উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।

(খ) উন্নয়নশীল দেশসমূহের লক্ষ লক্ষ মানুষের পানীয় জল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সুযোগ – সুবিধা নেই। যার ফলে এই সকল দেশগুলিতে প্রতি বছর ৩০ লক্ষাধিক শিশুর জীবনহানি ঘটে থাকে।

(গ) প্রাকৃতিক বনাঞ্চল যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সহায়ক তা নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে। ফলে বহুসংখ্যক মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে।

(ঘ) পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের পরিমাণ দ্রুত হ্রাসের ফলে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের বিপদের কারণ হচ্ছে।

(ঙ) সমগ্র বিশ্বে উপকূলীয় প্রদূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝদরিয়া অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার হলেও উপকূলবর্তী এলাকার সমুদ্রের জল উপকূল – সংলগ্ন ভূ-ভাগে বসবাসকারী মানুষের নানাপ্রকার ক্রিয়াকলাপের ফলে বহুল পরিমাণে দূষিত হচ্ছে।

প্রশ্ন ৭। পারিপার্শ্বিক বিষয়সমূহ সম্পর্কে গোলকীয় উত্তর এবং গোলকীয় দক্ষিণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীসমূহ কি কি?

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বের উন্নত এবং ধনী রাষ্ট্রসমূহ গোলকীয় উত্তর বা Global North নামে পরিচিত। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহকে গোলকীয় দক্ষিণ বা Global South বলা হয়। গোলকীয় উত্তর গোলকীয় দক্ষিণ অপেক্ষা একটি পৃথক পারিবেশিক কার্যক্রম অনুসরণ করছে। উত্তরের রাষ্ট্রসমূহ বেশি পরিমাণে ওজোন স্তর বিদীর্ণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য দায়ী। অন্যদিকে দক্ষিণের রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ এই দুইটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে বদ্ধপরিকর। ১৯৯২ সালের রিও বসুন্ধরা সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সম্মেলনে অর্থনৈতিক বিকাশ ও পারিবেশিক দায়িত্বশীলতা বিষয়ে সহমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে বহনযোগ্য বা সুষম বিকাশ পদ্ধতি বলা যায়।

ভারত, চীন ও অন্যান্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে কিওটো প্রটোকলের বিধিনিষেধ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল কারণ এই সকল দেশের পরিবেশ প্রদূষণের মাত্রা অত্যন্ত নগণ্য। জি–৮ (G–8) ভুক্ত দেশসমূহের ২০০৫ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারত যথার্থই বলেছিল যে উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের মাথাপিছু প্রদূষকের পরিমাণ খুবই কম। ভারতের মতে প্রদূষণের মাত্রা হ্রাসের প্রধান দায়িত্ব উন্নত দেশগুলির। রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনও উন্নত দেশসমূহের পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছে। সুতরাং রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আপোষ ও সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই পরিবেশ-সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ সমাধান করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ৮। কিয়োটো প্রোটোকল কি? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কিয়োটো প্রোটোকল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিয়োটো প্রোটোকল উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে সংঘাতকে পুনরায় উজ্জীবিত করে। জাপানের কিয়োটো শহরে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘের পরিচালনায় জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ১৫০টি রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে যা কিয়োটো প্রোটোকল নামে খ্যাত।

কিয়োটো প্রোটোকলের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) পরিশিষ্ট-১-এর অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রসমূহকে ১৯৯০ সালের সবুজগৃহ নির্গমণ তুলনামূলকভাবে গড়ে ৫.২ শতাংশ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিকাশমূলক সংগঠন (OECD)-এর ২৪টি রাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এবং পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ এই পরিশিষ্ট-১ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত। ২০১২ সালের ভিতর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে ৭ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে ৮ শতাংশ, কানাডাকে ৬ শতাংশ ও জাপানকে ৬ শতাংশ সবুজগৃহ নির্গমণ হ্রাস করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(খ) উন্নয়নশীল বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে যদিও সবুজগৃহ নির্গমণ হ্রাসের ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়নি, তবুও এই লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা শুরু করতে বলা হয়েছে।

(গ) প্রোটোকলে উল্লিখিত সবুজগৃহ ছয়টি গ্যাসের নিয়ন্ত্রণে ও হ্রাসকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

(ঘ) এই হ্রাসকরণ ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিয়োটো প্রোটোকলে উন্নয়নশীল বিশ্বের দুটি প্রধান রাষ্ট্র চীন ও ভারতের জনপ্রতি নির্গমণের হার কম হওয়ায় সবুজগৃহ গ্যাস নির্গমণ হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে এই দুই রাষ্ট্রকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। এতে কিছু রাষ্ট্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। যাই হোক, কিয়োটো প্রোটোকল বিশ্বের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।

প্রশ্ন ৯। গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে লেখ।

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবে গোলকীয় সমভোগ্যের উপর সহযোগিতা সহজ ব্যাপার নয়। গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এইগুলির মধ্যে ১৯৫৯ সালের দক্ষিণ মেরু চুক্তি (Antarctic Treaty), ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকল (Montreal Protocol) এবং ১৯৯১ সালের দক্ষিণমেরু পরিবেশ প্রোটোকল (Antarctic Environment Protocol, 1991) উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই সকল চুক্তি ও বোঝাপড়ার প্রধান সমস্যা হল সহমতের অভাব। যার ফলে এইগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। 

গোলকীয় সমভোগ্য হিসাবে মহাকাশের ইতিহাস প্রমাণ করে যে এই এলাকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা উত্তর-দক্ষিণ বৈষম্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে প্রধান সমস্যা হল প্রযুক্তি ও শিল্পোন্নয়ন।

প্রশ্ন ১০। UNFCCC (ইউ.এন.এফ.সি.সি.সি.) ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কাঠামোগত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৭০টি রাষ্ট্র এবং কয়েক হাজার বেসরকারি সংস্থা ও বাণিজ্যিক সংস্থা এতে অংশগ্রহণ করেছিল।

বিশ্ব সমুদায় যাকে ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অথবা সংক্ষেপে ইউ.এন.এফ.সি.সি.সি. বলে। এই কনভেনশন অনুযায়ী সকল দলেরই জলবায়ু ধারা রক্ষাকারীর লক্ষ্যে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে এবং তাদের সাধারণ অথচ প্রভেদক দায়িত্ব অনুযায়ী আপন আপন ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করা উচিত। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীগণ স্বীকার করে যে ঐতিহাসিক এবং সাম্প্রতিকতম বিশ্বব্যাপী ‘গ্রীনহাউস গ্যাস’ এর নির্গম উদ্ভূত হয় উন্নত দেশসমূহে। একথাও স্বীকার করে নেওয়া হয় যে এই নির্গমনের মাথাপিছু হার উন্নয়নশীল দেশসমূহে এখনও তুলনামূলকভাবে কম। চীন, ভারত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে কিয়েটো খসড়ার বিধিনিষেধ হতে রেহাই দেওয়া হয়েছে। এই খসরা ইউ.এন.এফ.সি.সি.সি-এর নীতির উপর ভিত্তি করে রচিত।

প্রশ্ন ১১। সুষম উন্নয়ন বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ বিংশ শতকের শেষ ভাগে সুষম উন্নয়ন বা বহনক্ষম উন্নয়ন নামে একটি নতুন ধারণা আসে যাতে উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা হয়। সম্প্রতি পরিবেশ সংরক্ষণকারী, পরিবেশবিদ, প্রকল্পবিদ এবং নীতি নির্ধারকগণ একযোগে বহনক্ষম উন্নয়ন বা সুষম উন্নয়ন ধারণাটির মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য বা পরিবেশের মান রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেছেন।

১৯৮৭ সালে পরিবেশ এবং উন্নয়নের বিশ্ব সংস্থা (WCED)-এর উদ্যোগে ‘বার্টল্যান্ড রিপোর্ট’ বা ‘আওয়ার কমন ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে সুষম বা বহনক্ষম উন্নয়নের ধারণাটি যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করে। বার্টল্যান্ডের মতে বহনক্ষম উন্নয়ন হচ্ছে এমন এক উন্নয়ন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের নিজেদের প্রয়োজনসমূহ পূরণ করবে। জি. এইচ. বার্টল্যান্ড নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। পরিবেশ এবং উন্নয়নের বিশ্ব সংস্থার মতে সুষম বা বহনক্ষম উন্নয়ন হচ্ছে পরিবর্তনের এমন এক প্রক্রিয়া যা সম্পদ আহরণ, বিনিয়োগের পরিমাণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিক নির্ণয় এবং প্রতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের প্রয়োজন এবং সুরক্ষিত ভবিষ্যতের মধ্যে ঐক্য রক্ষা করে।

প্রশ্ন ১২। পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলন ধারণাটি আলোচনা কর।

উত্তরঃ যে প্রাকৃতিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদেরকে চতুর্দিকে আবৃত করে রেখেছে তাকে পরিবেশ বলে। বায়ু, বাতাস, নদী, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়, পর্বত, অরণ্য, জীবজন্তু প্রভৃতি পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের জীবনে উন্নয়নের মান বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় পরিবেশের প্রভূত ক্ষতি হয়ে চলেছে। বাতাবরণে বিভিন্ন কারখানা থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর গ্যাস নির্গমিত হয়ে বায়ুদূষণ করছে, অথবা বর্জ্যপদার্থের নিষ্কাশনে জল এবং মাটি দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বিশ্বের সর্বত্রই ব্যাপক গণআন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এদের মধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করে। কিন্তু অধিকাংশই কাজ করে স্থানীয় স্তরে। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ নিয়ে এই আন্দোলনগুলি সবথেকে স্পন্দনশীল, বৈচিত্র্যপূর্ণ, বহুরূপী এবং শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন। এই আন্দোলনগুলি নতুন চিন্তাধারা এবং সুদূরপ্রসারী কল্পদর্শন স্থাপিত করে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামূহিক জীবনে। উচিত বা অনুচিত করণীয় কার্যের হদিশও দিয়ে থাকে। মেক্সিকো, চিলি, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, উপমহাদেশীয় আফ্রিকার বনভূমি রক্ষার্থে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ভারতে চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, আরক-বিরোধী আন্দোলন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বৃক্ষ, নদী-বাঁধ বিরোধী আন্দোলনও অনেক দেশে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। বহু দেশে যেখানে বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ চলছে সেখানে এটির বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখা যায়।

প্রশ্ন ১৩। “বিশ্ব রাজনীতিতে তেল একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যা ভূ-রাজনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতি প্রভাবিত করে।” আলোচনা কর।

উত্তরঃ সম্পদের ভূমণ্ডলীয় রাজনীতি হল কে, কি, কখন, কোথায়, কিভাবে সম্পদ পাচ্ছে সেই বিষয়টি। বিশ্বে ইউরোপীয় শক্তি বিস্তারের হেতু ও চাবিকাঠিটি যুগিয়েছে ভূসম্পদ। আন্তঃরাষ্ট্র রেষারেষির কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে ভূসম্পদ; অর্থাৎ খনিজ সম্পদ ও জল সম্পদ।

তেল: ইন্ধন হিসাবে অতি অপরিহার্য তথা সহজে বহনের সুবিধা থাকার জন্য বিংশ শতকে বিশ্ব অর্থনীতি তেলনির্ভর হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের যাতায়াত ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় ইন্ধনের ৯৫ শতাংশ খনিজ তেল থেকে পাওয়া যায়। শিল্পোদ্যোগে অগ্রসর বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ তেলের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। মানুষ প্রকৃতপক্ষে তেল ছাড়া বাঁচতে পারবে না।

তেলের সঙ্গে জড়িত থাকা বিশাল ধনসম্পদের কারণে তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ করার ফলে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল এবং বর্তমানেও এই সংঘর্ষ চলছে। এজন্য বলা হয় যে খনিজ তেলের ইতিহাস হল প্রকৃত সংঘাত ও সংঘর্ষের ইতিহাস। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার ইতিহাস তা প্রমাণ করে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৪। সম্পদের ভূ-রাজনীতির বিষয়ে সমালোচনামূলক আলোচনা কর।

উত্তরঃ সম্পদের ভূ-রাজনীতি হল কে, কি, কখন, কোথায়, কিভাবে সম্পদ পাচ্ছে সেই বিষয়টি। বিশ্বে ইউরোপীয় শক্তি বিস্তারের হেতু ও চাবিকাঠি যুগিয়েছে ভূ-সম্পদ; অর্থাৎ খনিজ সম্পদ এবং জল সম্পদ।

বিশ্বজনীন সম্পদ বলতে আমরা সেই সকল সম্পদ বুঝি, যেগুলির মালিক কোন ব্যক্তিবিশেষ নয়, বরঞ্চ যা একটি জনসম্প্রদায় ব্যবহার করতে পারে। এটি একটি সাধারণের ব্যবহার্য ঘর, লোক সমাজ কেন্দ্র, একটি উদ্যান অথবা নদী হতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা থাকা দুটি সম্পদ হল—

(ক) খনিজ তেল। ও 

(খ) জলসম্পদ।

জল: বিশ্ব রাজনীতিতে সাম্প্রতিককালে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়া একটি প্রাকৃতিক সম্পদ হল জল। জলের আঞ্চলিক তারতম্য ও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সৃষ্ট জলের অপ্রতুলতা সন্দেহাতীত করে তুলেছে যে একবিংশ শতকে জলই রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংঘাতের মূল কারণ হয়ে পড়বে।

দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে আসা নদীর জলধারা ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। নদীর উৎস বা উজানি অংশ যে রাষ্ট্রে থাকে সেই রাষ্ট্রই নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে ব্যাপক জল সিঞ্চনের ব্যবস্থা করে নদীর নিম্ন অংশের জল দূষিত করা বা জলের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে।

উজান ও জারমুখ নদীর জলধারাকে নিজ নিজ সুবিধাজনক দিকে গতি পরিবর্তনের চেষ্টার ফলে ইজরায়েল, জর্ডন ও সিরিয়ার মধ্যে হিংসাত্মক বিরোধের সূত্রপাত ঘটেছিল। ইউফ্রেটিস নদীতে বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে তীব্র বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল।

তেল: ইন্ধন হিসাবে অতি অপরিহার্য তথা সহজে বহনের সুবিধা থাকার জন্য বিংশ শতকে বিশ্ব অর্থনীতি তেলনির্ভর হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের যাতায়াত ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় ইন্ধনের ৯৫ শতাংশ খনিজ তেল থেকে পাওয়া যায়। শিল্পোদ্যোগে অগ্রসর বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ তেলের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। মানুষ প্রকৃতপক্ষে তেল ছাড়া বাঁচতে পারবে না।

তেলের সঙ্গে জড়িত থাকা বিশাল ধনসম্পদের কারণে তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ করার ফলে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল এবং বর্তমানেও এই সংঘর্ষ চলছে। এজন্য বলা হয় যে খনিজ তেলের ইতিহাস হল প্রকৃত সংঘাত ও সংঘর্ষের ইতিহাস। পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার ইতিহাস তা প্রমাণ করে।

প্রশ্ন ১৫। পরিবেশ বলতে কি বোঝ? পরিবেশ প্রদূষণের কারণসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ পরিবেশ বা ইংরেজি ‘Environment’ শব্দটি ফরাসি শব্দ ‘environer’ হতে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ হল ‘to surround’; অর্থাৎ ঘিরে রাখা বা আবৃত করা বা চারিদিকে আবৃত করে রাখা। যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা আমাদের বেষ্টিত করে বা ঘিরে রখেছে তাকে পরিবেশ বলে। বন, জঙ্গল, শিলা, পাহাড়, পর্বত, নদী, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর, মাটি, ভূমি, জল, জলবায়ু, উদ্ভিদ, বন্যজন্তু প্রভৃতি সবই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।

কারণসমূহ: পরিবেশ প্রদূষণের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) জনসংখ্যা বৃদ্ধি: দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ প্রদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। বর্ধিত জনসংখ্যার কারণে বাসস্থান ও আহারের জন্য বনজঙ্গল ধ্বংস করা হচ্ছে। এর ফলে নির্বনানীকরণ ও মরুকরণ হচ্ছে যা পরিবেশের হানির কারণ।

(খ) নির্বনানীকরণ ও ভূমিক্ষয়: অধিক পরিমাণে বৃক্ষ কাটার ফলে পরিবেশ প্রদূষিত হচ্ছে। নির্বনানীকরণের ফলে ভূমিক্ষয় হচ্ছে। নির্বনানীকরণ জীব বৈচিত্র্যের উপর এরূপ প্রভাব বিস্তার করছে যা পরিবেশ হানির সহায়ক।

(গ) শিল্পায়ন: দ্রুত শিল্পায়নের ফলে পরিবেশ প্রদূষণ হচ্ছে। নদী, নালা, হ্রদ, সাগর প্রভৃতিতে শিল্প কারখানার বর্জ্যপদার্থ নিক্ষেপের ফলে জল প্ৰদূষণ হচ্ছে।

(ঘ) পরিবহণের উপায়: পরিবহণ ও যানবাহন বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ হচ্ছে, ফলে সামগ্রিক পরিবেশ প্রদূষণ হচ্ছে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নোক্তগুলির কোনটি পরিবেশ সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করে?

(ক) উন্নত দেশসমূহ প্রকৃতি সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

(খ) পরিবেশ সংরক্ষণ হল জনজাতি মানুষ ও স্বাভাবিক বাসিন্দাদের মুখ্য বিষয়।

(গ) মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা সংঘটিত পারিবেশিক অধঃপতন ব্যাপক ও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

উত্তরঃ (গ) মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা সংঘটিত পারিবেশিক অধঃপতন ব্যাপক ও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রশ্ন ২। বসুন্ধরা সম্মেলন সংক্রান্ত নিম্নোক্ত উক্তিগুলির পাশে শুদ্ধ বা অশুদ্ধ লেখ।

(ক) সম্মেলনে ১৭০ দেশ, কয়েক হাজার বেসরকারি সংস্থা ও অনেক বহুজাতিক সংস্থা যোগদান করেছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(খ) সম্মেলনটি রাষ্ট্রসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(গ) প্রথমবারের মতো বিশ্ব পরিবেশ বিষয়টি রাজনৈতিক পর্যায়ে কঠোরভাবে বিবেচিত হয়েছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(ঘ) এটা একটি সম্মেলন সভা ছিল।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

প্রশ্ন ৩। গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে নিম্নলিখিতগুলির কোনগুলি শুদ্ধ?

(ক) পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল, দক্ষিণ মেরু, সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং দূর মহাকাশকে গোলকীয় সমভোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়।

(খ) গোলকীয় সমভোগ্য সার্বভৌম এক্তিয়ারের বাইরে থাকে।

(গ) গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের প্রশ্নে উত্তর-দক্ষিণ বিভেদ প্রতিফলিত হয়েছিল।

(ঘ) উত্তরের রাষ্ট্রসমূহ দক্ষিণের রাষ্ট্রসমূহের তুলনায় গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে অধিক সম্পর্কযুক্ত।

উত্তরঃ (ক) পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল, দক্ষিণ মেরু, সমুদ্রপৃষ্ঠ এবং দূর মহাকাশকে গোলকীয় সমভোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়।

(খ) গোলকীয় সমভোগ্য সার্বভৌম এক্তিয়ারের বাইরে থাকে।

(গ) গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের প্রশ্নে উত্তর-দক্ষিণ বিভেদ প্রতিফলিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ৪। রিও সম্মেলনের ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে ১৯৯২ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একে বসুন্ধরা সম্মেলন বা Earth Summit বলা হয়। এই সম্মেলন বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়কে মুখ্য বিষয়ে পরিণত করেছিল। এই সম্মেলনে বিশ্বের ১৭০টি রাষ্ট্র, কয়েক হাজার বেসরকারি সংস্থা ও বহুজাতিক কোম্পানি অংশগ্রহণ করেছিল। রিও সম্মেলনে দীর্ঘ আলোচনার পর জলবায়ু পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র্য, বনাঞ্চল প্রভৃতি সংক্রান্ত অলিখিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সম্মেলনে Agenda-21 নামে উন্নয়নমুখী একটি তালিকা সুপারিশ করা হয়। রিও সম্মেলনে পরিবেশ দায়বদ্ধতা সহ আর্থিক বিকাশ বিষয়ে সহমত প্রকাশিত হয়। এই পদ্ধতিকে সুষম বা বহনযোগ্য উন্নয়ন বলা হয়। এই সম্মেলনে পরিবেশ রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতার আহ্বান করা হয়।

প্রশ্ন ৫। গোলকীয় সমভোগ্য বলতে কি বোঝ? এইগুলি কিভাবে শোষিত ও দূষিত হয়?

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্য হল বিশ্বের যে সকল এলাকা, বস্তুসামগ্রী ও সম্পদ কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের এক্তিয়ারভুক্ত নয় তা বিশ্বের সকলে সমভাবে ভোগ করে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া ও বায়ুমণ্ডল, সমুদ্রপৃষ্ঠ, বায়ু, মহাকাশ, কুমেরু প্রভৃতি গোলকীয় সমভোগ্যের উদাহরণ। গোলকীয় সমভোগ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য বলা হয় কারণ এই বিষয়সমূহ বর্তমান প্রজন্ম হতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে অতিক্রম করে। গোলকীয় পরিবেশকে গোলকীয় সমভোগ্য ও গোলকীয় ঐতিহ্য বলা হয়।

গোলকীয় সমভোগ্যের উপর সহযোগিতা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। কারণ এই সকল বিষয়ের উপর রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহমতের অভাব দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র গোলকীয় সমভোগ্য বস্তুগুলিকে নির্বিচারে ব্যবহার করে থাকে। এইগুলিকে রক্ষা করবার দায়িত্ব সম্পর্কে তারা কখনই চিন্তা করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাণিজ্যিক জাহাজ, রণতরী, যাত্রীবাহী জাহাজ, নৌকা প্রভৃতি স্বাধীনভাবে সমুদ্রপথ ও সমুদ্র জল ব্যবহার করে। এই জলযানগুলি ডিজেলচালিত হওয়ায় সমুদ্রের জল দূষিত হয়। অধিকন্তু শিল্পোন্নত দেশগুলি তাহাদের শিল্পোদ্যোগের বর্জ্যপদার্থ সমুদ্রে নিক্ষেপ করে। নদীতীরে বসবাসকারী মানুষও বর্জ্যপদার্থ নদীতে নিক্ষেপ করে। উন্নত ও পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহও পরমাণু পরীক্ষার দ্বারা পরিবেশ দূষিত করতে পারে।

প্রশ্ন ৬। সমভোগ্য কিন্তু পৃথক দায়িত্বশীলতা বলতে কি বোঝ? এই ধারণা আমরা কতটুকু বাস্তবায়িত করতে পেরেছি?

উত্তরঃ গোলকীয় সমভোগ্য সংরক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। কিন্তু বাস্তবে গোলকীয় সমভোগ্যের উপর সহযোগিতা সহজ ব্যাপার নয়। গোলকীয় সমভোগ্য সম্পর্কে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এইগুলির মধ্যে ১৯৫৯ সালের দক্ষিণ মেরু চুক্তি (Antarctic Treaty), ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকল (Montreal Protocol) এবং ১৯৯১ সালের দক্ষিণমেরু পরিবেশ প্রোটোকল (Antarctic Environment Protocol, 1991) উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই সকল চুক্তি ও বোঝাপড়ার প্রধান সমস্যা হল সহমতের অভাব। যার ফলে এইগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। 

গোলকীয় সমভোগ্য হিসাবে মহাকাশের ইতিহাস প্রমাণ করে যে এই এলাকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা উত্তর-দক্ষিণ বৈষম্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে প্রধান সমস্যা হল প্রযুক্তি ও শিল্পোন্নয়ন।

প্রশ্ন ৭। গোলকীয় পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ ১৯৯০-এর দশক থেকে কেন রাষ্ট্রসমূহের উদ্বেগের কারণ হয়েছে?

উত্তরঃ পারিবেশিক অবনতি সম্পর্কে সচেতনতা এবং পরিবেশ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার রাখা বর্তমান দিনে বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়েছে। 

নিম্নের উপাদানসমূহ তার জন্য দায়ী:

(ক) সমগ্র বিশ্বে কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণ কদাচই বিস্তৃত হতে দেখা যায়। বর্তমানের কৃষিযোগ্য জমি ও উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।

(খ) উন্নয়নশীল দেশসমূহের লক্ষ লক্ষ মানুষের পানীয় জল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সুযোগ – সুবিধা নেই। যার ফলে এই সকল দেশগুলিতে প্রতি বছর ৩০ লক্ষাধিক শিশুর জীবনহানি ঘটে থাকে।

(গ) প্রাকৃতিক বনাঞ্চল যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সহায়ক তা নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে। ফলে বহুসংখ্যক মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে।

(ঘ) পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোনের পরিমাণ দ্রুত হ্রাসের ফলে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের বিপদের কারণ হচ্ছে।

(ঙ) সমগ্র বিশ্বে উপকূলীয় প্রদূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝদরিয়া অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার হলেও উপকূলবর্তী এলাকার সমুদ্রের জল উপকূল – সংলগ্ন ভূ-ভাগে বসবাসকারী মানুষের নানাপ্রকার ক্রিয়াকলাপের ফলে বহুল পরিমাণে দূষিত হচ্ছে।

প্রশ্ন ৮। পৃথিবীকে রক্ষা করতে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আপোষ ও সমন্বয় সাধন এই দুইটি অপরিহার্য নীতি প্রয়োজন। পরিবেশ সংক্রান্ত বর্তমানে চলমান উত্তর-দক্ষিণ আলোচনার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন কর।

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বের উন্নত এবং ধনী রাষ্ট্রসমূহ গোলকীয় উত্তর বা Global North নামে পরিচিত। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশসমূহকে গোলকীয় দক্ষিণ বা Global South বলা হয়। গোলকীয় উত্তর গোলকীয় দক্ষিণ অপেক্ষা একটি পৃথক পারিবেশিক কার্যক্রম অনুসরণ করছে। উত্তরের রাষ্ট্রসমূহ বেশি পরিমাণে ওজোন স্তর বিদীর্ণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য দায়ী। অন্যদিকে দক্ষিণের রাষ্ট্রসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ এই দুইটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে বদ্ধপরিকর। ১৯৯২ সালের রিও বসুন্ধরা সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সম্মেলনে অর্থনৈতিক বিকাশ ও পারিবেশিক দায়িত্বশীলতা বিষয়ে সহমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে বহনযোগ্য বা সুষম বিকাশ পদ্ধতি বলা যায়।

ভারত, চীন ও অন্যান্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহকে কিওটো প্রটোকলের বিধিনিষেধ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল কারণ এই সকল দেশের পরিবেশ প্রদূষণের মাত্রা অত্যন্ত নগণ্য। জি–৮ (G–8) ভুক্ত দেশসমূহের ২০০৫ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারত যথার্থই বলেছিল যে উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের মাথাপিছু প্রদূষকের পরিমাণ খুবই কম। ভারতের মতে প্রদূষণের মাত্রা হ্রাসের প্রধান দায়িত্ব উন্নত দেশগুলির। রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনও উন্নত দেশসমূহের পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করেছে। সুতরাং রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আপোষ ও সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই পরিবেশ-সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ সমাধান করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ৯। রাষ্ট্রসমূহের সামনে মারাত্মক প্রত্যাহ্বান হল গোলকীয় পরিবেশের অধিক ক্ষতিসাধন না করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনুসরণ করা। আমরা তা কিভাবে অর্জন করিতে পারি? কয়েকটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আধুনিক রাষ্ট্র হল কল্যাণ রাষ্ট্র। কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হল জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং একমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমেই জনগণের উন্নতি সাধন সম্ভব। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান এবং অন্যান্য উন্নত দেশসমূহ ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন করেছে। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হল বিশ্ব পরিবেশের অধিক ক্ষতিসাধন না করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনুসরণ করা। 

নিম্নোক্ত উপায়সমূহ অবলম্বনের দ্বারা এই সমস্যা সমাধান করতে পারা যায়:

(ক) তীক্ষ্ণ বিচক্ষণ ও সুসংহত চিন্তাধারা: ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিতে পার্থিব দর্শনের উপর অধিক জোর দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন সর্বাগ্রে প্রয়োজন। ভারতের মতে বিচক্ষণ ও সুসংহত চিন্তাধারার প্রয়োজন।

(খ) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ প্রদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। সুতরাং জনসংখ্যা রোধ অত্যন্ত প্রয়োজন। জনসংখ্যা প্রতিরোধকল্পে রাষ্ট্রসমূহের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

(গ) বনাঞ্চল সংরক্ষণ: পরিবেশ রক্ষা করবার জন্য বনাঞ্চল সংরক্ষণ একান্ত আবশ্যক। ভারতে ভারতীয় বন গবেষণা ও শিক্ষা পরিষদ (Indian Council of Forestry Research and Education) ব্যাপক সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top