Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর

Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর Question Answer in Bengali Medium | AHSEC Class 12 History Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর Notes and select needs one.

Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 History Chapter 8 একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর Solutions for All Subjects, You can practice these here.

একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজধানী – বিজয়নগর

দ্বিতীয় খণ্ড

Chapter: 8

HISTORY

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ হরিহর ও বুক্ক রায়।

প্রশ্ন ২। বিজয়নগরের প্রাচীন নাম কি ছিল?

উত্তরঃ হাম্পী।

প্রশ্ন ৩। হাস্পীর ধ্বংসাবশেষ কে আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ কলিন মেকেঞ্জি।

প্রশ্ন ৪। হাম্পীর ধ্বংসাবশেষ কখন আবিষ্কৃত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৫। বিজয়নগরের রাজাগণ কি উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তরঃ ‘রায়’ উপাধি।

প্রশ্ন ৬। বিজয়নগরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

উত্তরঃ কৃষ্ণদেব রায়।

প্রশ্ন ৭। কৃষ্ণদেব রায়ের রাজত্বকাল কত?

উত্তরঃ ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দ।

প্রশ্ন ৮। তালিকোটার যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন ৯। তালিকোটার যুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ বাহমনী সুলতানদের ও বিজয়নগরের প্রধানমন্ত্রী রামা রায়ের মধ্যে।

প্রশ্ন ১০। হাম্পীকে কখন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ ঘোষণা করা হয়?

উত্তরঃ ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কে, কখন বিজয়নগর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উত্তরঃ হরিহর ও বুক্কা রায় নামক দুই ভ্রাতা ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রশ্ন ২। বিজয়নগর শাসনকারী বিভিন্ন রাজবংশের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ বিজয়নগর শাসনকারী বিভিন্ন রাজবংশগুলি হল –

(ক) সঙ্গম রাজবংশ।

(খ) সালুভ রাজবংশ। 

(গ) তুলুভা রাজবংশ। ও 

(ঘ) আরবিডু রাজবংশ।

প্রশ্ন ৩। বিজয়নগরের সর্বাধিক বিখ্যাত রাজা কে ছিলেন? তিনি কোন্ বংশের অন্তর্গত?

উত্তরঃ বিজয়নগরের সর্বাধিক বিখ্যাত রাজা হলেন কৃষ্ণদেব রায়। তিনি তুলুভা রাজবংশের অন্তর্গত ছিলেন।

প্রশ্ন ৪। কৃষ্ণদেব রায়ের শাসনকাল কত? বাহমনী রাজ্যের কোন্ দুটি নগর তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল?

উত্তরঃ কৃষ্ণদেব রায় ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। তিনি গুলবর্গা ও বিদর নামক নগর দুইটি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।

প্রশ্ন ৫। তালিকোটার যুদ্ধ কাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল? এই যুদ্ধে পরাজিত রাজ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তালিকোটার যুদ্ধ বাহমনী সুলতানদের এবং বিজয়নগরের প্রধানমন্ত্রী রামা রায়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে বিজয়নগর সাম্রাজ্য পরাজিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ৬। কোন্ চারটি নগরে বিজয়নগরের সঙ্গে জড়িত মন্দির দেখতে পাওয়া যায়?

উত্তরঃ বিজয়নগর শহর, কাঞ্চীপুরম, ভেলোর ও শ্রীরঙ্গপত্তম শহরে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সঙ্গে জড়িত মন্দির দেখতে পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৭। হাম্পী নামটি কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল? কে, কখন এর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছিল?

উত্তরঃ হাম্পী ছিল বিজয়নগরের অপর নাম। এই নাম স্থানীয় দেবতা পম্পাদেবীর নামে হয়েছিল। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হাম্পীর ধ্বংসাবশেষ কর্নেল কলিন মেকেঞ্জি নামক এক ইঞ্জিনিয়ার আবিষ্কার করেছিলেন।

প্রশ্ন ৮। কলিন মেকেঞ্জি কে ছিলেন? কোন্ সামগ্রীর উপর তার হাম্পীর তথ্যাদি প্রতিষ্ঠিত ছিল?

উত্তরঃ কলিন মেকেঞ্জি একজন ইঞ্জিনিয়ার ও পুরাতত্ত্ববিদ ছিলেন। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন আধিকারিক ছিলেন। তিনি প্রথম সমীক্ষা তৈরি করেন। হাম্পী সম্পর্কে তাঁর প্রথম তথ্য বিরূপাক্ষ মন্দিরের পুরোহিতদের স্মৃতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।

প্রশ্ন ৯। বিজয়নগর প্রসঙ্গে রায় ও নায়ক কারা ছিলেন?

উত্তরঃ নিম্নোক্তরা বিজয়নগর প্রসঙ্গে রায় ও নায়ক ছিলেন:

(ক) বিজয়নগরের রাজাগণ নিজেদের ‘রায়’ বলতেন।

(খ) নায়কগণ হলেন সামরিক বাহিনীর প্রধান।

প্রশ্ন ১০। অমরানায়ক কারা ছিলেন? তাদের দুটি কার্য উল্লেখ কর।

অথবা,

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অমরানায়কদের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ অমরানায়কগণ ছিলেন বিজয়নগরের সেনাধ্যক্ষ। তারা নিম্নোক্ত কার্যাবলী সম্পাদন করতেনঃ

(ক) তারা কৃষক, বণিক ও হস্তশিল্পীদের নিকট থেকে কর সংগ্রহ করতেন।

(খ) তারা বিজয়নগরে একটি কার্যকরী যুদ্ধবাহিনীর যোগান দিতেন।

প্রশ্ন ১১। বিজয়নগরের শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জলের প্রধান উৎস কি কি ছিল?

উত্তরঃ বিজয়নগরের শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জলের প্রধান উৎস হল– 

(ক) কূপ।

(খ) বৃষ্টির জলের জলাধার। ও 

(গ) মন্দিরের জলাধার।

প্রশ্ন ১২। বিজয়নগরের মহানবমী ডিব্বার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ বিজয়নগরের মহানবমী ডিব্বার দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) মহানবমী ডিব্বা একটি বিশাল মঞ্চ, যা শহরের সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত ছিল।

(খ) এই মঞ্চের বেদীতে বিভিন্ন প্রকার চিত্র খোদিত ছিল।

প্রশ্ন ১৩। মহানবমী উৎসবের সঙ্গে জড়িত যে-কোন চার প্রকার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষকের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মহানবমী উৎসবের সঙ্গে জড়িত চার প্রকার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষক হল— 

(ক) নৃত্য।

(খ) মল্লযুদ্ধ।

(গ) সুসজ্জিত রথ, হাতি ও ঘোড়া সহযোগে শোভাযাত্রা। ও 

(ঘ) মূর্তিপূজা।

প্রশ্ন ১৪। বিজয়নগর রাজ্যের বিশেষত্ব কি ছিল?

উত্তরঃ বিজয়নগর হিন্দুধর্ম ও সভ্যতার কেন্দ্র ছিল। দাক্ষিণাত্যের মুসলমান শক্তিকে প্রতিহত করে হিন্দু স্বাধীনতা রক্ষা করা বিজয়নগরের রাজগণের অপূর্ব কির্তি। তাঁরা সংস্কৃত, কানাড়ি ও তেলুগু সাহিত্যের উৎসাহদাতা ছিলেন। তাঁদের নির্মিত বহু সুন্দর মন্দির ও প্রাসাদ তাঁদের শিল্পানুরাগের পরিচায়ক।

প্রশ্ন ১৫। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) বিজয়নগর সাম্রাজ্যে সংঘটিত অনেকগুলি যুদ্ধ তাকে দুর্বল করেছিল।

(খ) ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগরের পরাজয় ঘটে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। হাম্পী আবিষ্কার কাহিনি সংক্ষেপে ব্যক্ত কর।

উত্তরঃ বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন ইঞ্জিনিয়ার তথা পুরাতত্ত্ববিদ্‌ কর্নেল কলিন মেকেঞ্জী ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে হাম্পী শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। তিনিই সর্বপ্রথম এই স্থানের জরিপ মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি বিরূপাক্ষ মন্দিরের পুরোহিত ও পম্পাদেবীর স্মৃতির উপর ভিত্তি করে বহুসংখ্যক প্রাথমিক তথ্য আহরণ করেছিলেন। পরে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ফটোগ্রাফারগণ তার ভগ্নাবশেষসমূহের ফটো সংগ্রহ করেন এবং এইগুলি ইতিহাসবিদ- গণকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ইতিহাস অধ্যয়নে সহায়তা করে। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে পম্পাদেবী ও অন্যান্য মন্দিরসমূহের বহুসংখ্যক লিপি উদ্ধার করা হয়। ইতিহাসবিদ্‌গণ বিদেশি লেখকের টীকা, তেলুগু, কানাড়া, তামিল ও সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্যের উপর নির্ভর করে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ইতিহাস পুনরুদ্ধার করেন।

প্রশ্ন ২। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বিজয়নগর সাম্রাজ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা মত প্রচলিত আছে। তবে দুটি প্রাথমিক বিষয়ে সবাই একমত যে, মহম্মদ- বিন্-তুঘলকের আমলে দাক্ষিণাত্যে তুর্কী মুসলমানদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া এই হিন্দুরাজ্যের উৎপত্তির প্রেরণা দিয়েছিল এবং সঙ্গমবংশীয় দুই ভাই হরিহর ও বুব্ধ ছিলেন এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ঐতিহাসিক সীওয়েল (Sewell) তাঁর বিখ্যাত ‘এ ফরগন এম্পায়্যার’ গ্রন্থে বিজয়নগরের উৎপত্তি সম্পর্কে সাতটি কিংবদন্তীর উল্লেখ করেছেন। এগুলির মধ্যে হরিহর ও বুব্ধ সম্পর্কিত কাহিনিটি একাধিক পণ্ডিতের বক্তব্যে সমর্থিত হয়েছে। সীওয়েল লিখেছেন যে, ওয়ারাঙ্গালের কাকতীয় বংশের অধীনে সামন্ত হিসেবে সঙ্গমবংশ নিয়োজিত ছিল। কাকতীয় বংশীয় রাজা প্রতাপরুদ্রদেবের অধীনে সঙ্গম বংশীয় হরিহর ও বুক্ক নামক দুই ভাই নিয়োজিত ছিলেন। সুলতানি বাহিনী বরঙ্গল আক্রমণ করলে এই দুই ভাই হোয়সলরাজ তৃতীয় বীরবল্লালের রাজ্যে চলে আসেন এবং তাঁর অধীনে চাকুরি গ্রহণ করেন। সুলতানি বাহিনী হোয়সল রাজ্য আক্রমণকালে এই দুই ভাইকে বন্দী হিসেবে দিল্লিতে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ইসলাম ধর্মান্তরিত করা হয়। পরে দাক্ষিণাত্যের হিন্দু বিদ্রোহকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে মহম্মদ তুঘলক এদের আনেগুণ্ডিতে শাসকপদে নিযুক্ত করেন। পরে সুযোগমতো এঁরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন বিজয়নগর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন ৩। বিজয়নগর সাম্রাজ্য পতনের কারণসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের তালিকোটার যুদ্ধকে বিজয়নগর রাজ্যের ‘মৃত্যু-ঘণ্টা’ বলে অভিহিত করা যায়। এই যুদ্ধের বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা বিজয়নগরের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এর পরেও বিজয়নগর রাজ্যের অস্তিত্ব অরবিডু বংশীয় তিরুমল, দ্বিতীয় রঙ্গ, দ্বিতীয় ভেঙ্কট, তৃতীয় রঙ্গ প্রমুখের নেতৃত্বে হয়তো কিছুকাল টিকেছিল; কিন্তু অতীতের মর্যাদা ও প্রতিপত্তি সে কখনো পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। প্রথমত, তালিকোটার বিপর্যয় এবং অবাধ ধ্বংসকার্যের ফলে বিজয়নগরের আর্থিক মেরুদণ্ড সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। স্বভাবতই রাজনৈতিক প্রতিপত্তি পুনরুদ্ধার তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত, তালিকোটার যুদ্ধের ধাক্কা থেকে পর্তুগীজদের বাণিজ্যও রক্ষা পায়নি। এই যুদ্ধের ফলে দক্ষিণ ভারতের বহু ব্যস্ত বাজার ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে পর্তুগীজদের সম্ভার বাজারজাত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, মুসলমান রাজ্যগুলির পক্ষেও এই যুদ্ধ শুভ ছিল না। আপাতভাবে তালিকোটার যুদ্ধ মুসলমানদের ঐক্য ও সাফল্যের প্রতীক। কিন্তু এর পরিণতি ছিল ক্ষতিকর। হিন্দুরাজ্য বিজয়নগরের সদর্প উপস্থিতি মুসলিম রাজ্যগুলির মধ্যে ঐক্যবন্ধনের উপাদান হিসেবে কাজ করত। কিন্তু এই রাজ্যের বিপর্যয় তাদের মনে এক ধরনের সামরিক নিস্পৃহতার জন্ম দেয় এবং তারা ক্রমে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে আনে। তাই বলা চলে তালিকোটার যুদ্ধ যদি বিজয়নগর রাজ্যকে ধ্বংস করে, তাহলে এই যুদ্ধই মুসলমান রাজ্যগুলির পতনের পথও প্রশস্ত করে দেয়।

প্রশ্ন ৪। বিজয়নগরের আর্থিক অবস্থা সংক্ষেপে ব্যক্ত কর।

উত্তরঃ বিদেশি পর্যটকদের বিবরণী থেকে বিজয়নগরের ঐশ্বর্য, চাকচিক্য এবং জনসাধারণের আর্থিক প্রাচুর্যের আভাস পাওয়া যায়। এঁদের বর্ণনায় রাজধানী নগরী বিজয়নগরের এক মনোরম চিত্র ফুটে উঠেছে। বিজয়নগর ছিল সমকালীন বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী রাজ্য। বিজয়নগরের বর্ণনা প্রসঙ্গে নিকোলো কষ্টি লিখেছেন— “শহরের পরিধি ছিল ৬০ মাইল; এর দেওয়ালগুলি দূরের পাহাড়ঘেরা উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই শহরে প্রায় ৯০ হাজার অস্ত্রধারণে সক্ষম পুরুষ বাস করত। ভারতের যে-কোন রাজার থেকে এখানকার রাজা ছিলেন অধিক শক্তিশালী।” পারসিক দূত আব্দুর রজ্জাক লিখেছেন—“দেশটি এতই জনবহুল যে, তার প্রকৃত চিত্র লিখে বোঝানো কষ্টকর। রাজার কোষাগারে একাধিক প্রকোষ্ঠ আছে, যার প্রতিটি তরল সোনায় পরিপূর্ণ। রাজ্যের সমস্ত মানুষ উচ্চনীচ, এমনকী বাজারের কারিগররাও, দেহের নানা অঙ্গে অলংকারাদি পরিধান করত।” পর্তুগীজ পর্যটক পায়েজ বিজয়নগরকে বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে চিহ্নিত করে এখানকার সমৃদ্ধ বাণিজ্যের উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন—“এখানকার উন্নত বহির্বাণিজ্যের কারণে বিশ্বের নানা দেশের লোকের সন্ধান বিজয়নগরে পাওয়া যায়। বাজারগুলিতে নানা ধরনের সামগ্রী, ধান, চাল, ডাল, গম, বার্লি প্রভৃতি মজুত থাকত। খাদ্যদ্রব্যের দাম খুবই সস্তা।” পায়েজ বিজয়নগরের রাজার অপরিমেয় ঐশ্বর্য ও হাতি, ঘোড়া-সহ বিশাল সেনাবাহিনীর কথাও উল্লেখ করেছেন।

প্রশ্ন ৫। বিজয়নগরের স্থাপত্যকার্য সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ শিল্প-স্থাপত্যের দিকটিও বিজয়নগর রাজ্যে অবহেলিত ছিল না। শিল্প-স্থাপত্যের প্রতি বিজয়নগরের রাজাদের সহজাত আকর্ষণ ছিল। রাজা কৃষ্ণদেব রায় ছিলেন এক মহান নির্মাতা। কৃষ্ণদেব রায়ের আমলে নির্মিত হাজারা মন্দিরটিকে বিশেষজ্ঞরা ‘হিন্দু স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিজয়নগরের স্থাপত্যকর্মের আর একটি অমর দৃষ্টান্ত হল বিঠলস্বামী মন্দির। পর্যটকেরা বিজয়নগর শহর ও রাজপ্রাসাদের নির্মাণ-শৈলীর প্রশংসা করেছেন। রাজপ্রাসাদটি ছিল অতি-সুরক্ষিত দুর্গবিশেষ। আব্দুর রজ্জাক লিখেছেন—“সারা পৃথিবীতে বিজয়নগরের মতো শহর চোখে দেখিনি, কানেও শুনিনি। সাতটি প্রাচীর দিয়ে নগরটি তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রাচীর দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত। নগরের মধ্যস্থলে আছে সপ্তম দুর্গটি, এই দুর্গটি হিরাট শহরের প্রধান বাজারটির দশগুণেরও বেশি জমি অধিকার করে আছে।” পায়েজের মতে, বিজয়নগর রাজপ্রাসাদটি লিসবনের দুর্গের থেকেও বড়। বিজয়নগরের স্থাপত্যকর্মে ইন্দো-সারাসেনীয় (বা, ইন্দো-পারসিক) স্থাপত্য-রীতির প্রভাব স্পষ্ট। মন্দিরগুলির ক্ষেত্রে পল্লব বা জৈনরীতির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। বিজয়নগর রাজ্যটি ইসলামের বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মের রক্ষক হিসেবে গড়ে উঠলেও, ধর্মীয় অনুদারতা এই রাজ্যকে গ্রাস করেনি। নাগরিকদের ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা ছিল, সামরিক বাহিনীতে বহু মুসলমান সদস্য ছিল।

প্রশ্ন ৬। তালিকোটার যুদ্ধ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ কৃষ্ণদেব রায়ের মৃত্যুর পর বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। পরবর্তী দুইজন শাসক যথাক্রমে অচ্যুৎ রায় ও সদাশিব রায় ছিলেন দুর্বল। সদাশিব রায়ের আমলে (১৫৪২-৭০ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর মন্ত্রী রামা রায় সমস্ত ক্ষমতা হস্তগত করে নেন। তিনি দাক্ষিণাত্যের পাঁচটি মুসলমান রাজ্যের পারস্পরিক বিভেদকে কাজে লাগিয়ে একে একে তাদের ধ্বংস করতে উদ্যোগী হন। অচিরেই মুসলিম রাজ্যগুলি রামা রায়ের কূট চাল বুঝতে পারে। অতঃপর তারা মিলিতভাবে বিজয়নগর রাজ্য আক্রমণ করে। ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধে মুসলমানদের কাছে বিজয়নগর পরাজিত হয়। মুসলমান সৈন্যরা বিজয়নগরে প্রবেশ করে ব্যাপক লুণ্ঠন ও ধ্বংস চালায়। অতঃপর রামা রায়ের ভ্রাতা তিরুমল সদাশিব রায়কে সিংহাসনচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বিজয়নগর রাজ্যের উত্থান ও পতনের বিবরণ দাও।

উত্তরঃ উৎপত্তি (Origin): বিজয়নগর রাজ্যের উৎপত্তি রহস্যজালে আবৃত। কথিত আছে মুহম্মদ বিন্ তুঘলকের রাজত্বকালে হিন্দুর স্বাতন্ত্র্য ও ধর্মরক্ষা এবং মুসলমান শক্তি প্রতিহত করার জন্য সঙ্গম নামে এক ব্যক্তির পাঁচ পুত্র দাক্ষিণাত্যে বিজয়নগর রাজ্য স্থাপন করেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, এই জনশ্রুতি ভিত্তিহীন। তাঁরা বলেন যে, হোয়েসলরাজ তৃতীয় বল্লাল বিজয়নগরে কিংবা তার নিকটবর্তী আনেগুণ্ডি নামক স্থানে দুর্গ স্থাপন করেছিলেন এবং সঙ্গমের পুত্রগণ এই বংশের রাজগণের সামন্ত ছিলেন। সে যা হোক, এই আনেগুণ্ডি দুর্গকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে বিজয়নগর রাজ্য গঠিত হয়েছিল।

ইতিহাস (History): বিজয়নগরে পর পর চারটি বিভিন্ন রাজবংশ প্রায় ২২৯ বৎসর (১৩৩৬–১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্ব করে; যথা- 

(ক) সঙ্গম বংশ। 

(খ) সালুভা বংশ। 

(গ) তুলুভা বংশ। এবং 

(ঘ) আরবিডু বংশ।

(ক) সঙ্গম বংশ – বিজয়নগরের প্রথম রাজবংশ সঙ্গম বংশ নামে পরিচিত। সঙ্গমের পাঁচ পুত্রের মধ্যে প্রথম হরিহর ও বুব্ধ সমধিক প্রসিদ্ধ। বেদের ভাষ্যকার সায়ন ও তাঁর ভ্রাতা মাধব বুব্ধ এবং তাঁর পুত্রগণের সমসাময়িক ছিলেন। বুদ্ধের পুত্র দ্বিতীয় হরিহর এই বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি। তিনি দক্ষিণে কাঞ্চী ও ত্রিচিনপল্লী পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। তিনি ‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি ধারণ করেছিলেন। তাঁর পুত্র প্রথম দেবরায় ও তাঁর পরবর্তী রাজাগণের সঙ্গে বাহমনী রাজ্যের সুলতানদের প্রায়ই যুদ্ধ চলত। প্রথম দেবরায় বাহমনীরাজ ফিরোজ শাহের হাতে পরাজিত হয়ে তাঁকে কন্যাদান করে। তাঁর পৌত্র দ্বিতীয় দেবরায়ও বাহমনী সুলতানের নিকট পরাজিত হন।

(খ) সালুভা বংশ – পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে চন্দ্রগিরির শাসনকর্তা নরসিংহ শাদ্ভুব বিজয়নগরের সিংহাসন অধিকার করেন। নরসিংহ কৃতীপুরুষ ছিলেন এবং পর্তুগীজগণ তাঁর নামানুসারে বিজয়নগরকে ‘নরসিংগাঁ’ বলত।

(গ) তুলুভা বংশ – ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে নরসনায়ক তুলুভা রাজবংশ স্থাপন করেন। কৃষ্ণদেব রায় এই বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি এবং দক্ষিণ ভারতের সকল রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। শৌর্য, সাহস, উদারতা এবং বিদ্যানুরাগের জন্য তাঁর নাম প্রসিদ্ধ। তাঁর বিংশবৎসর-ব্যাপী রাজত্বকালে বিজয়নগর রাজ্য গৌরবের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিল। তিনি রায়চুরের দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন, বিজাপুরের রাজধানী লুণ্ঠন করেন, গুলবর্গা ধ্বংস করেন এবং উড়িষ্যার হিন্দুরাজা বীরভদ্রকে পরাজিত করেন।

কৃষ্ণদেব রায়ের পর তার ভ্রাতা অচ্যুত রায় ও তাঁর পরে তার ভ্রাতুষ্পুত্র সদাশিব রায় রাজা হন। কিন্তু রাজ্যের প্রকৃত ক্ষমতা ছিল তাঁর মন্ত্রী রামরাজা বা রামা রায়ের হাতে। রামরাজা বিজাপুর ও গোলকুণ্ডার সঙ্গে মিলিত হয়ে আহম্মদনগর জয় করেন। কিন্তু আহম্মদনগরের অধিবাসীদের প্রতি হিন্দু সৈন্যদের অত্যাচার এবং মুসলমান মিত্রগণের সহিত রামরাজার দুর্ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে বিজাপুর, গোলকুণ্ডা, আহম্মদনগর ও বিদরের মুসলমান রাজাগণ সম্মিলিতভাবে বিজয়নগর আক্রমণ করেন। বিখ্যাত তেলিকোট (অথবা রাক্ষস-তরঙ্গী) নামক স্থানের যুদ্ধে (Battle of Talikota) রামা রায় পরাজিত ও নিহত হন (১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ)। মুসলমানগণ বিজয়নগর শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

(ঘ) আরবিডু বংশ – ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে সদাশিবকে পদচ্যুত করে রামরায়ের ভ্রাতা তিরুমল পেনুগোণ্ডিতে আরবিড়ু বংশ প্রতিষ্ঠিত করেন। এই বংশের প্রসিদ্ধ নরপতি ছিলেন প্রথম বেঙ্কট। তিনি বৈষ্ণব ধর্ম ও তেলুগু সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি চন্দ্রগিরি নামক স্থানে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। কিন্তু রাজ্যের সুদিন আর ফিরল না। প্রাদেশিক সামন্তগণ একে একে স্বাধীন হল। এইভাবে ধীরে ধীরে রাজ্যের পতন হল এবং কয়েকটি স্বাধীন রাজ্যের উৎপত্তি হল।

প্রশ্ন ২। বিজয়নগরের শাসক হিসাবে কৃষ্ণদেব রায়ের শাসনব্যবস্থা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বীর নরসিংহের পর তাঁর সৎ – ভ্রাতা কৃষ্ণদেব রায় বিজয়নগরের সিংহাসনে বসেন। তিনি কেবল এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন না; অনেকেই তাঁকে বিজয়নগরের সমস্ত রাজার মধ্যে ‘শ্রেষ্ঠতম শাসক’ বলে মনে করেন। এই মুল্যায়ন অযৌক্তিকও নয়। ব্যক্তিগত গুণাবলীর বিচারে তিনি ছিলেন অসাধারণ। সামরিক ও অসামরিক উভয় কাজে তাঁর দক্ষতা ছিল অতুলনীয়। তাঁর রাজত্বকালে (১৫০৯–৩০ খ্রিস্টাব্দ) বিজয়নগর রাজ্য গৌরবের শীর্ষে আরোহণ করেছিল।

সমস্যাবলী – কৃষ্ণদেব রায়ের সিংহাসনারোহণকালে দেশ অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সমস্যাকীর্ণ ছিল। বীর নরসিংহ প্রাদেশিক শাসকদের দমন করলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব তখনো সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল না। দেশের নানা অংশে ক্ষমতাবান পলিগারগণ কেন্দ্রের আনুগত্য অস্বীকার করতে দ্বিধান্বিত ছিল না। বিজয়নগরের পূর্বাঞ্চল উড়িষ্যার রাজা গজপতির দখলে ছিল। বাহমনী রাজ্য ভেঙে গেলেও বিজয়নগরের বিরুদ্ধে মুসলমান সুলতানদের প্রতিরোধ তখনো ছিল অব্যাহত। উত্তর সীমান্তে নবগঠিত বিজাপুর সুলতানি বিজয়নগরের পক্ষে যথেষ্ট শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছিল। কৃষ্ণদেব রায় যথেষ্ট সাহস ও বিচক্ষণতার দ্বারা এই বহুমুখীর সমস্যার মোকাবিলা করেন।

বাহমনী রাজ্যের সাথে সংঘাত – শাসনের শুরুতেই কৃষ্ণদেব বাহমনী রাজ্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। সুলতান মামুদ শাহ বিশাল বাহিনী ও অভিজাতবৃন্দের সাহায্যপুষ্ট হয়ে বিজয়নগর আক্রমণ করেন (১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ)। দোনি ও কোভেলা কোণ্ডার যুদ্ধে কৃষ্ণদেব পরপর মুসলিম বাহিনীকে বিধ্বস্ত করেন। কোভেলা কোণ্ডার যুদ্ধে বিজাপুরের শাসক ইউসুফ আদিল শাহ নিহত হন। এর ফলে সদ্যগঠিত বিজাপুর রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সেই সুযোগ নেন রাজা কৃষ্ণদেব। ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণদেব রায় কৃষ্ণা-তুঙ্গভদ্রার দোয়াব আক্রমণ করে রায়চুর দুর্গ দখল করে নেন। অতঃপর তিনি গুলবর্গা দুর্গও দখল করতে সক্ষম হন। বিদর আক্রমণ করে বারিদ দুর্গটিও তিনি হস্তগত করেন। এরপর কৃষ্ণদেব কূটনৈতিক চাল হিসেবে মামুদ শাহকে বাহমনী রাজ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। এই কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি ‘যবন রাজ্যস্থাপন আচার্য’ উপাধি নেন। এইভাবে মুসলমান রাজ্যগুলির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে তিনি বিজয়নগরের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেন।

উড়িষ্যার বিরুদ্ধে সাফল্য – উড়িষ্যার রাজা গজপতি প্রতাপরুদ্র বিজয়নগরের অন্তর্গত উদয়গিরি ও কোণ্ডাভিডু অঞ্চল দুটি আগেই দখল করেছিলেন। কৃষ্ণদেব রায় হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারে উড়িষ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রসর হন। বিজয়নগর বাহিনী পরপর উদয়গিরি (১৫১৩ খ্রিস্টাব্দ) ও কোণ্ডাভিডু (১৫১৪ খ্রিস্টাব্দ) দখল করে। কৃষ্ণা নদীর তীর পর্যন্ত উপকূল অঞ্চল কৃষ্ণদেব রায়ের হস্তগত হয়। কোণ্ডাভিডুর পতনের সাথে সাথে উড়িষ্যার যুবরাজ ও ভাবী রাজা বীরভদ্র ও গজপতির এক রানি কৃষ্ণদেবের হাতে বন্দী হয়ে বিজয়নগরে আনীত হন। উড়িষ্যার বিরুদ্ধে অন্য দুটি যুদ্ধ দ্বারা কৃষ্ণদেব বেজওয়াদা এবং কোন্দাপল্লী দুর্গ দুটিও দখল করে নেন। এই অঞ্চল দখল করার ফলে উড়িষ্যার অধীনস্থ তেলেঙ্গানা ও ভেঙ্গী দখল করার জন্য কৃষ্ণদেব উৎসাহিত বোধ করেন। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে তেলেঙ্গানা ভেলমাদের অধীনে ছিল। জনৈক সিতাব খাঁ (সীতাপতি) গজপতির সাহায্য নিয়ে ঐ অঞ্চল দখল করে শাসন করেছিলেন।

বিজাপুরের বিরুদ্ধে সাফল্য – বিজাপুর রাজ্যের বিরুদ্ধে কৃষ্ণদেব রায়ের সাফল্য ছিল উল্লেখযোগ্য। একাধিকবার তিনি এই মুসলিম রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং প্রতিবারেই বিজয়ী হন। ইতিপূর্বে কৃষ্ণদেব যখন রায়চুর দুর্গ দখল করেন (১৫১২ খ্রিস্টাব্দ) তখন বিজাপুরের ইসমাইল আদিল শাহ ছিলেন নাবালক। সাবালক হয়ে ক্ষমতা দখল করার সঙ্গে সঙ্গে ইসমাইল আদিল রায়চুর দুর্গ পুনর্দখলের উদ্যোগ নেন এবং কৃষ্ণদেব রায়ের উড়িষ্যা যুদ্ধে ব্যস্ততার সুযোগে রায়চুর দখল করতে সক্ষম হন। ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে সালুভ তিস্মার নেতৃত্বে বিজয়নগর বাহিনী রায়চুর পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধ শুরু করে। বিজাপুর বাহিনী যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয় এবং আদিল শাহ প্রাণভয়ে আত্মগোপন করেন। অবশ্য পর্তুগীজ বণিকদের সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রেও কৃষ্ণদেব বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। ইতিমধ্যে পর্তুগীজরা বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। আরব ও পারসিক নাবিকদের পরাস্ত করে এবং মিশরীয় নৌবাহিনী ধ্বংস করে পর্তুগীজরা কার্যত অশ্বের বাণিজ্যে একচেটিয়া কর্তৃত্ব অর্জন করেছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই অশ্বের যোগান ছিল আবশ্যিক। তাই কৃষ্ণদেব পর্তুগীজ বণিকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করেন। এর ফলে তিনি উন্নতমানের অশ্বের যোগান পান। কৃষ্ণদেবের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারের জন্য বহু পর্তুগীজ পর্যটক ও দূত তাঁর রাজ্যে আগমন করেন ও অবস্থান করেন।

প্রশ্ন ৩। কৃষ্ণদেব রায়ের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।

উত্তরঃ কেবল সুযোদ্ধা নয়, বিচক্ষণ শাসক ও সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি হিসেবেও রাজা কৃষ্ণদেব রায় সমসাময়িক লেখকদের প্রশংসা অর্জন করেছেন। পর্তুগীজ পর্যটক ও বণিক পায়েজ, নুনিজ, বারবোসা প্রমুখের বিবরণী থেকে তাঁর ব্যক্তিগত গুণাবলী ও চারিত্রিক মাধুর্যের আভাস পাওয়া যায়। পায়েজ লিখেছেন — “তিনি (কৃষ্ণদেব) ছিলেন একজন মহান শাসক ও ন্যায়বিচারক। তবে আকস্মিক তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতেন।”

প্রজাদরদী ও পরিশ্রমী শাসক হিসেবে কৃষ্ণদেব সমসাময়িক লেখকদের প্রশংসা অর্জন করেছেন। প্রশাসনের খুঁটিনাটি বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজখবর রাখতেন। বছরে অন্তত একবার তিনি সারা রাজ্য পরিভ্রমণ করে ব্যক্তিগতভাবে প্রজাদের অভাব-অভিযোগ শুনতেন এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতেন। কৃষ্ণদেবের এই ব্যবস্থার ফলে আঞ্চলিক শাসকদের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং এই গণসংযোগ রাজতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছিল। কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি বিশেষ যত্নবান ছিলেন। সেচব্যবস্থার উন্নতির জন্য কৃষ্ণদেব একাধিক সেচ-খাল ও কূপ খনন করেন। প্রজাদের উপর থেকে কয়েকটি জবরদস্তিমূলক কর, যেমন—বিবাহ কর তুলে তিনি সাধারণ মানুষের ভার লাঘব করেন। কৃষিজমি বৃদ্ধির জন্য তাঁর নির্দেশে বহু জঙ্গল কেটে সেখানে চাষযোগ্য জমি তৈরি করা হয়েছিল।

কৃষ্ণদেব রায়ের রাজত্বকালে দক্ষিণ – ভারতের সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা হয়। কৃষ্ণদেব স্বয়ং তেলুগু ও সংস্কৃত ভাষায় প্রতিভাবান পণ্ডিত ছিলেন। কবি ও সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতাকে তিনি রাজার অন্যতম কর্তব্য বলেই বিবেচনা করতেন। একজন সাহিত্যসেবী হিসেবে তিনি সংস্কৃত, কানাড়ি-সহ দক্ষিণ ভারতের সমস্ত ভাষার চর্চাকে উৎসাহিত করতেন। তবে তেলুগু সাহিত্যের বিকাশের ক্ষেত্রে কৃষ্ণদেবের আমল ‘তেলুগু ভাষার স্বর্ণযুগ’ রূপে বিবেচিত হতে পারে।

দেশের আটজন প্রখ্যাত পণ্ডিত তাঁর রাজসভা আলোকিত করতেন। এঁরা ‘অষ্টদিগ্‌গজ’ নামে সম্মানিত ছিলেন। কৃষ্ণদেব স্বয়ং একাধিক সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। তবে সেগুলির মধ্যে মাত্র দুটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এগুলি হল তেলুগু ভাষায় রচিত ভারতের রাষ্ট্রদর্শন বিষয়ক গ্রন্থ ‘আমুক্তমাল্যদা’ এবং সংস্কৃত ভাষায় রচিত নাটক ‘জাম্ববতি-কল্যাণম্’। এছাড়া অল্পসনি পেড্ডান-এর ‘মনুচরিতম্’, নন্দী তিমায়ার ‘পারিজাত পহরনামু’ প্রভৃতি তেলুগু ভাষায় সাহিত্যচর্চার ফসলরূপে স্বীকৃতি পেয়েছে।

কৃষ্ণদেব একজন মহান নির্মাতাও ছিলেন। বিজয়নগরের অনতিদূরে মাতা নাগলম্বর স্মৃতির উদ্দেশ্য তিনি একটি সুসজ্জিত নতুন শহর নির্মাণ করেন। এই শহর ‘নাগলপুর’ নামে পরিচিত হয়। এছাড়া কৃষ্ণমন্দির, হাজার স্বামীমন্দির, বিঠলমন্দির প্রভৃতি তাঁর স্থাপত্যকীর্তি ও ধর্মভাবনার অন্যতম নিদর্শন।

ধর্মীয় উদারতা ও পরধর্মসহিষ্ণুতা ছিল কৃষ্ণদেব রায়ের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি নিজে ছিলেন বৈষ্ণব। কিন্তু সমস্ত ধর্মের প্রতি ছিল তাঁর সমান শ্রদ্ধাবোধ। তাঁর সাম্রাজ্যে প্রজাদের ধর্মাচরণ সম্পর্কে কোন বিধিনিষেধ ছিল না। সব মিলিয়ে রাজা কৃষ্ণদেব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ শাসক।

প্রশ্ন ৪। বিজয়নগর রাজ্যের শাসনব্যবস্থা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ বিজয়নগরের শাসকেরা রাজ্যের এইসব বিপদ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং সুনিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় শাসনের প্রয়োগের দ্বারা এই সীমাবদ্ধতার মোকাবিলা করেছিলেন। মধ্যযুগীয় রীতি অনুযায়ী রাজা ছিলেন সমস্ত ক্ষমতার আধার। তিনি ছিলেন প্রধান শাসক, প্রধান আইন প্রণেতা ও প্রধান বিচারক। রাজাই ছিলেন প্রধান সেনাপতি। প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হলেও রাজা স্বেচ্ছাচারী বা অত্যাচারী ছিলেন না। বিজয়নগরের শাসনব্যবস্থা প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচারিতার আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ ছিল। বিজয়নগরের তথা দক্ষিণ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের ‘আমুক্ত মাল্যদা’ গ্রন্থ থেকে সেখানকার শাসনের প্রকৃতি বোঝা সম্ভব।

কেন্দ্রীয় শাসক: একটি মন্ত্রিপরিষদের সাহায্যে কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনা করতেন। সম্ভবত ছয় থেকে আটজন মন্ত্রী থাকতেন। ব্রাহ্মাণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রীদের নিয়োগ করা হত। অনেক ক্ষেত্রেই, প্রধানত উচ্চবর্ণের ক্ষেত্রে মন্ত্রীপদ বংশানুক্রমিক ছিল। মন্ত্রীগণকে দপ্তর পরিচালনায় সাহায্য করতেন একদল দায়িত্বশীল কর্মী। এঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন খাজাঞ্চি, বাণিজ্য অধিকর্তা, পুলিশ অধিকর্তা, পরিবহণ অধিকর্তা প্রমুখ। রাজপ্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হত।

প্রাদেশিক শাসন: বিজয়নগর রাজ্যটি কয়েকটি মণ্ডলম্ বা প্রদেশে বিভক্ত ছিল। এগুলি আবার জেলা (নাডু), মহকুমা (স্থল), গ্রাম প্রভৃতি ছোট ছোট এককে বিভক্ত ছিল। প্রদেশের শাসনদায়িত্বে থাকতেন একজন করে গভর্নর। সাধারণত রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে গভর্নরদের নিয়োগ করা হত। কোন কোন ক্ষেত্রে রাজা দায়িত্ববান অভিজাতদেরও এই পদে নিযুক্ত করতেন। কেন্দ্রের মতো প্রাদেশিক শাসকরাও (গভর্নর) সামরিক, অসামরিক ও বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রাদেশিক শাসকরা কেন্দ্রে আয়-ব্যয়ের হিসেব পেশ করতে বাধ্য ছিলেন। রাজার প্রয়োজনে গভর্নররা সামরিক বাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেন। আইনত রাজার অধীনস্থ হলেও প্রাদেশিক শাসকরা প্রচুর পরিমাণে স্বাধীনতা ভোগ করতেন। তাঁদের নিজস্ব দরবার ছিল, নিজস্ব সেনাবাহিনী ছিল। প্রদেশের কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদচ্যুতি গভর্নর-এর ইচ্ছাধীন ছিল। এ ব্যাপারে রাজা হস্তক্ষেপ করতেন না।

গ্রাম-শাসক: বিজয়নগরের সর্বনিম্ন বা ক্ষুদ্রতম শাসনবিভাগ ছিল গ্রাম। চোলদের গ্রাম্য স্বায়ত্তশাসনের ঐতিহ্য এখানেও বর্তমান ছিল। উত্তর ভারতের পঞ্চায়েত-এর মতো দক্ষিণে গ্রাম্য ‘সভা’ শাসন পরিচালনা করত। গ্রামীণ প্রশাসনিক কর্মচারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সেনাতোভা বা হিসাবরক্ষক, তলরা বা পরিদর্শক, বেগারা ইত্যাদি। এইসকল কর্মচারী তাদের বেতন হিসেবে জমি ভোগ করতেন। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সাথে গ্রামীণ প্রশাসনের সংযোগ রক্ষা করতেন ‘মহানায়কাচার্য’ নামক কর্মচারী। পূর্বের তুলনায় পরবর্তীকালে গ্রামগুলির স্বশাসন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল এবং এর মূলে ছিল ‘নায়ক’-দের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির প্রসার।

সেনাবাহিনী: বিজয়নগর রাজ্যকে প্রতিনিয়ত বাহমনী রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হত। তাই দক্ষ বাহিনী গঠনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কৃষ্ণদেব রায়ের আমলে সাত লক্ষ পদাতিক, সাড়ে তিন হাজার অশ্বারোহী এবং সাড়ে ছয়শত রণহস্তী ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল একটি কামান বাহিনী। উন্নত মানের অশ্বসংগ্রহের জন্য বিজয়নগরের রাজারা পর্তুগীজ বণিকদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করতেন। সেনাবিভাগের তত্ত্বাবধান করত ‘কাণ্ডাচার’ নামক একটি দপ্তর। এই দপ্তরের প্রধান ছিলেন প্রধান সেনানায়ক বা ‘দণ্ডুপতি’।

বিচারব্যবস্থা: অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ বিচারক। তবে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বিচারালয়ের মাধ্যমে বিচারকার্য নিষ্পত্তি হত। গ্রামীণ বিরোধ গ্রাম পঞ্চায়েতে নিষ্পত্তি করা হত। কোন কোন ক্ষেত্রে সরকার-নিযুক্ত বিচারক স্থানীয় সভার সাথে আলোচনা করে গ্রামীণ বিরোধের মীমাংসা করতেন। সাধারণভাবে দেশের প্রচলিত রীতি-নীতি, প্রথা-প্রকরণ ও আচার-ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হত। ফৌজদারী দণ্ডবিধির যথেষ্ট কঠোরতা ছিল। চুরি, নৈতিক ব্যভিচার, দেশদ্রোহিতা প্রভৃতি অপরাধে কঠোর শারীরিক নির্যাতন বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। সাধারণ অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ ইত্যাদি শাস্তি দেওয়া হত।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বিগত দুই শতকে হাস্পীর ধ্বংসাবশেষ অধ্যয়নে কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন ইঞ্জিনিয়ার তথা পুরাতত্ত্ববিদ কর্নেল কলিন মেকেঞ্জী ১৮৮০ সালে হাম্পী শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রাচীন নাম ছিল হাম্বী। এই নাম স্থানীয় দেবতা পম্পাদেবীর নামে হয়েছিল। তিনিই সর্বপ্রথম এই স্থানের জরিপ মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি বিরূপাক্ষ মন্দিরের পুরোহিত ও পম্পাদেবীর স্মৃতির উপর ভিত্তি করে বহুসংখ্যক প্রাথমিক তথ্য আহরণ করেছিলেন। পরে ১৮৫৬ সালে ফটোগ্রাফারগণ তার ভগ্নাবশেষসমূহের ফটো সংগ্রহ করেন এবং এইগুলি ইতিহাসবিদগণকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ইতিহাস অধ্যয়নে সহায়তা করে। ১৮৩৬ সালে পম্পাদেবী ও অন্যান্য মন্দিরসমূহের বহুসংখ্যক লিপি উদ্ধার করা হয়। ইতিহাসবিদ্‌গণ বিদেশি লেখকের টীকা, তেলুগু, কানাড়া, তামিল ও সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্যের উপর নির্ভর করে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ইতিহাস পুনরুদ্ধার করেন। ১৯৮৬ সালে হাস্পীকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ ঘোষণা করা হয়।

প্রশ্ন ২। বিজয়নগরের জলের চাহিদা পূরণ কিভাবে হয়েছিল?

উত্তরঃ উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হওয়া তুঙ্গভদ্রা নদীর দ্বারা সৃষ্টি হওয়া এক বিশাল প্রাকৃতিক জলধারা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ভৌগোলিক স্থিতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। নগরের চারিদিকে রমণীয় গ্রানিট পাথরের পাহাড়ে আবৃত করে রেখেছিল। এই পাহাড়সমূহ থেকে প্রচুর পরিমাণে জলধারা প্রবাহিত হয়ে আসত। এই জলধারার নিকট বাঁধ নির্মাণ করে বিভিন্ন আকৃতির জলাশয় নির্মাণ করা হয়েছিল। উপদ্বীপটির খরা অঞ্চলসমূহের মধ্যে এই অঞ্চলটি অন্যতম ছিল। সেইজন্য বৃষ্টির জল সংরক্ষণ ও সেই জল শহরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৫শ শতকের প্রথমার্ধে নির্মাণ করা অন্য একটি বিশাল জলাশয় কমলপুরম নামে আজও দেখা যায়। এই জলাশয় হতে আশেপাশের কৃষিক্ষেতে জলসেচ করা হত।

প্রশ্ন ৩। নগরের সুরক্ষিত স্থানে কৃষিজমি সংলগ্নের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ সম্পর্কে তুমি কি চিন্তা কর?

উত্তরঃ পঞ্চদশ শতকে বিজয়নগরকে বিশাল প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত করা হয়েছিল। তাতে কৃষিজ জমি ও বনাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

সুবিধা: প্রাচীর বেষ্টনীর সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) এতে কৃষিভূমি, বাগান ও বনাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

(খ) এর মধ্যে একটি সুবিন্যস্ত নালা ও নর্দমা ব্যবস্থা ছিল, যার মাধ্যমে তুঙ্গভদ্রা নদী থেকে জল আনা হত।

(গ) এর ফলে বিশাল শস্যভাণ্ডার সুরক্ষিত থাকত।

(ঘ) এই বেষ্টনী পশুদের থেকে শস্য রক্ষা করত।

অসুবিধা: প্রাচীর বেষ্টনীর প্রধান অসুবিধা নিম্নরূপ:

(ক) এই ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ ছিল।

(খ) প্রতিকূল অবস্থায় কৃষকদের জন্য তা সুবিধাজনক ছিল।

প্রশ্ন ৪। মহানবমী ডিব্বার সঙ্গে জড়িত ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠানের তাৎপর্য কি ছিল বলে তুমি মনে কর?

উত্তরঃ মহানবমী ডিব্বা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদ ছিল যদিও এর কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ নি। এটা অতি দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ ছিল। এই প্রাসাদ প্রায় ১১০০০ বর্গফুট বিশিষ্ট একটি বেদীর উপর ছিল। এর উচ্চতা ছিল ৪০ ফুট। এই প্রাসাদের বেদীতে বিভিন্ন প্রকার চিত্র খোদিত করা ছিল।

এই মঞ্চের নাম এর সঙ্গে জড়িত অনুষ্ঠানে, সম্ভবত হিন্দুগণের শরৎকালে উদ্‌যাপন করা দশদিনের উৎসব হতে উদ্ভূত হয়েছে যা উত্তর ভারতে দশেরা, পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা তথা দক্ষিণ ভারতে নবরাত্রি বা মহানবমী নামে পরিচিত। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আড়ম্বরপূর্ণভাবে বিজয়নগরের সম্রাট নিজের মানসম্মান, প্রতিপত্তি ও সার্বভৌমত্ব প্রদর্শন করেছিলেন।

এই ধর্মানুষ্ঠানে মূর্তি পূজা, ঘোড়ার পূজা, মহিষ ও অন্যান্য জীবজন্তু প্রভৃতি বলি দেওয়া হয়েছিল। এই উপলক্ষ্যে নৃত্যগীত, মল্লযুদ্ধ, সুসজ্জিত হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্যসামন্ত দ্বারা শোভাযাত্রা বের করা হত।

এইসব অনুষ্ঠানাদির প্রতীকী অর্থ বিদ্যমান। এইগুলির অধিকাংশই রাজা ও তাঁর অতিথিদের সামনে পরিবেশিত হত। উৎসবের শেষদিনে রাজা তাঁর সেনাবাহিনীকে পরিদর্শন করতেন। তিনি সেনানায়কদের নিকট থেকে মূল্যবান উপহারসামগ্রী গ্রহণ করতেন।

প্রশ্ন ৫। লোটাসমহল এবং এলিফ্যান্ট স্টেবল-এর মতে অট্টালিকার স্থাপত্যরীতি এর প্রতিষ্ঠাপক রাজাদের বিষয়ে কি প্রকাশ করে?

অথবা,

পদ্মমহল এবং হাতিশালার মতো স্থাপত্যগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করা শাসকদের বিষয়ে কি ধারণা দেয়?

উত্তরঃ লোটাসমহল হল রাজকীয় কেন্দ্রের প্রাসাদসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর। ঊনবিংশ শতকে বৃটিশ পর্যটকগণ এই নাম দিয়েছেন। এই প্রাসাদগুলি কি উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারেন নি। কিন্তু মেকেঞ্জীর মানচিত্র অনুযায়ী এটা কাউন্সিল গৃহ, যেখানে রাজা তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে মিলিত হতেন।

লোটাসমহলের সন্নিকটেই এলিফ্যান্ট স্টেবল ছিল, যাতে বেশ কয়টি কক্ষ সারিবদ্ধভাবে ছিল। রাজা এখানে বিশাল সংখ্যক হাতি রাখতেন।

লোটাসমহলের স্থাপত্যকার্যে ইন্দো-ইসলামিক রীতি দৃষ্ট হয়। বিজয়নগরের শাসকগণ সাধারণত সুবিন্যস্ত প্রাসাদ নির্মাণ করতেন এবং তাতে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হত। এগুলোতে রাজার রুচিবোধ ও মর্যাদা প্রতিফলিত হত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top