Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত

Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত and select needs one.

Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Bengali Chapter 13 জীবন সংগীত for All Subject, You can practice these here…

জীবন সংগীত

               Chapter – 13

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

ক্রিয়াকলাপ–

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।

(ক) ‘জীবন-সংগীত’ কবিতার কবি কে?

উত্তরঃ ‘জীবন-সংগীত’ কবিতার কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

(খ) কবি মানুষের আয়ুকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?

উত্তরঃ কবি মানুষের আয়ুকে শৈবালের উপর জলবিন্দুর সাথে তুলনা করেছেন।

(গ) এ পৃথিবীতে কোন বস্তু দুর্লভ?

উত্তরঃ এ পৃথিবীতে মহিমা দুর্লভ বস্তু।

(ঘ) কবিতাটি কোন কবির কোন কবিতার বঙ্গানুবাদ?

উত্তরঃ কবিতাটি ইংরেজ কবি লংফেলোর ‘The Psalm of Life’ কবিতাটির বঙ্গানুবাদ।

(ঙ) কবি সংসারকে কিসের সাথে তুলনা করেছেন?

উত্তরঃ কবি সংসারকে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছেন।

(চ) কবির মতে যশোদ্বারে আসার উপায় কী?

উত্তরঃ কবির মতে প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে যশোদ্বারে আসা যায়।

(ছ) কবির মতে পৃথিবীর মানুষের জীবন কয়বার হয়?

উত্তরঃ কবির মতে পৃথিবীতে মানুষের জীবন একবার পাওয়া যায়।

(জ) সময়ের সার কী?

উত্তরঃ সময়ের সার বর্তমান।

(ঝ) আত্মার স্বরূপ কী?

উত্তরঃ আত্মার স্বরূপ অনিত্য বা অস্থায়ী নয়।

(ঞ) কবির মতে কী করে দুঃখের ফাঁস গলায় পরে?

উত্তরঃ কবির মতে মানুষ ভবিষ্যতের মনোহর রূপ কল্পনা আর অতীতের সুখস্মৃতি রোমন্থন করেই দুঃখের ফাঁস গলায় পরে।

(ট) সময়ের ধর্ম কী?

উত্তরঃ সময়ের ধর্ম বয়ে চলা।

২। শূন্যস্থান পূরণ করো।

(ক) কর যুদ্ধ ………..        যায় যাবে যাক প্রাণ

                 ………….জগতে দুর্লভ।

উত্তরঃ কর যুদ্ধ বীর্যবান          যায় যাবে যাক প্রাণ

                  মহিমাহ জগতে দুর্লভ।

(খ) সংকল্প সাধন হবে          ………. কীর্তি রবে

                      সময়ের সার ………..

উত্তরঃ সংকল্প সাধন হবে       ধরাতলে কীর্তি রবে

                    সময়ের সার বর্তমান

(গ) ……….. মহাজন          যে পথে করে গমন

                     হয়েছেন…………..।

উত্তরঃ মহাজ্ঞানী মহাজন       যে পথে করে গমন

                         হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়

(ঘ) করো না………….          বৃথা ক্ষয় এ জীবন

                  সংসার ………. মাঝে।

উত্তরঃ করো না মানবগণ          বৃথা ক্ষয় এ জীবন

                     সংসার সমরাঙ্গন মাঝে।

৩। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।

(ক) পৃথিবীতে যশোলাভের প্রকৃষ্ট উপায় কী?

উত্তরঃ পৃথিবীতে যশোলাভের প্রকৃষ্ট উপায়—একনিষ্ঠভাবে নিজের সংকল্প সাধন এবং নির্দিষ্ট ব্রত উদ্‌যাপন।

(খ) কবি দারা-পুত্র-পরিবার পরিবেষ্টিত সংসার নিয়ে মানুষকে ক্রন্দন করতে নিষেধ করেছেন কেন?

উত্তরঃ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জীবন সঙ্গীত’ কবিতাটিতে উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে অদ্বৈতবাদীদের মতকে নস্যাৎ করেছেন, কেননা যে সংসারে আমাদের অস্তিত্ব সেটা বাস্তব, তাকে অস্বীকার করলে সত্যকে অস্বীকার করা হয়। সেজন্য স্ত্রী, পুত্র, পরিবার কেউ কারো নয়, সবই মায়া, মিথ্যা একথা বলে যারা সংসার থেকে মুক্তির জন্য দেবতার পায়ে মাথা খোঁড়েন, কাঁদেন, তাঁরা ভ্রান্ত। কেননা স্ত্রী পুত্র পরিবারের সম্বন্ধগুলো থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সমাজ। সেই মনুষ্য সমাজকে অস্বীকার করার মানে সত্যকে অস্বীকার করা।

(গ) জীবাত্মা সম্বন্ধে কবির অভিমত কী?

উত্তরঃ মানুষের আত্মা অক্ষয় অব্যয় নিত্য এবং যার ধ্বংস নেই। অযথা ক্রন্দনে ব্যস্ত থেকে কোনো লাভ নেই। তীব্র আশার বশবর্তী হয়ে এই সংসারে মানুষ নিজের নিজের কাজে যত্নবান হতে পারলেই জীবনের সার্থকতা লাভ করা যায়।

(ঘ) কবি আপন ব্রত সাধনে মানুষকে কি করতে বলেছেন?

উত্তরঃ কর্তব্যকর্ম যত্ন করে সুচারুরূপে সম্পন্ন করলে পরিণামে জয় অবশ্যম্ভাবী। কেননা মানুষকে কাজের মাধ্যমেই বাঁচতে হয়। জীবাত্মা অনিত্য না হওয়ায় কর্তব্য কর্ম সময়ে সম্পন্ন না করলে আগামীদিনে তা আর সম্পন্ন করা যায় না। অতএব বাইরের রূপবৈভবে না ভুলে, অতীত ভবিষ্যৎকে চিন্তা না করে কেবলমাত্র বর্তমানকে আশ্রয় করেই কর্তব্যকর্ম সমাধা করলেই নিজের তথা সকলের উন্নতি হয়। প্রত্যেকে নিজের কাজটুকু ঠিকমতো করলেই সকলের সব দায়িত্ব পালিত হয় ও সমাজের উন্নতি ঘটে।

(ঙ) মানুষের জীবনে বরণীয় হবার পথ কীভাবে প্রশস্ত হওয়া সম্ভব?

উত্তরঃ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জীবন সংগীত’ কবিতায় বলেছেন আমরা সংসারে আমাদের নির্দিষ্ট কাজটি সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে সম্পন্ন করলেই জয়ী হতে পারবো বা জগতের মঙ্গলসাধন করা হবে। এই কাজ করার জন্য আদর্শ হিসেবে প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের সাহায্য নিতে হবে। তাঁদের আদর্শে নিজেদের আগামী প্রজন্মের কাছে আদর্শ করে তুলতে হবে।

(চ) বিশ্বের মানবজাতিকে কবি ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করতে নিষেধ করেছেন কেন?

উত্তরঃ কবি মানবজাতিকে ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করতে নিষেধ করেছেন, কেননা ভবিষ্যত অনিশ্চিত আর বর্তমান নিশ্চিত। নিশ্চিতকে আশ্রয় করে কাজ করলে সাফল্য আসে কিন্তু অনিশ্চিতকে অবলম্বন করে সুখের স্বর্গ গড়া সম্ভব নয় কারণ তাতে ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী।

৪। রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর।

(ক) “জীবন সংগীত” কবিতাটির সারাংশ লেখো।

উত্তরঃ মনুষ্যজন্মকে রাতের স্বপ্নের মতো অসার, বৃথা বলা উচিত নয়। অদ্বৈতবাদীদের ন্যায় পৃথিবীটাকে অলীক, স্ত্রী পুত্র পরিজন কেউ কারো নয়, সবই মায়া এসব ভেবে কান্নাকাটি না করে মনুষ্য জীবনকে সার মনে করে অনন্যমনা হয়ে নিজের দায়িত্বটুকু নির্ভুলভাবে পালন করলেই সার্থকতা লাভ সম্ভব। জীবাত্মা পরমাত্মার চিরন্তন অংশ মনে করে সাগ্রহে সংসারের দায়িত্ব পালন কর্তব্য। সুখের অন্বেষণে দুঃখকে বরণ না করে সংসারে কাজটুকু নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করলেই বিশ্বের উন্নতি অপরিহার্য। জীবনের সময় অতি স্বল্প। সেই স্বল্প সময়ে সংসাররূপ যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের ন্যায় লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুও ভালো, কিন্তু পলায়ন একেবারেই কাম্য নয়। যুদ্ধ করে আপন মহিমা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অপর উপায় নেই। ভবিষ্যতের কাল্পনিক মনে ছবি বা অতীতের সুখস্মৃতি রোমন্থন দুটোকেই বর্জন করে ঈশ্বরকে স্মরণের মাধ্যমে বর্তমানের কর্তব্য সম্পন্ন করে ধরাতলে কীর্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। মহাজ্ঞানী ও মহাজনদের পথে অনুগমন করে আমরাও বরণীয় হতে পারি। আর আমাদের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করে পর-প্রজন্মও সেইভাবে কীর্তিমান হতে পারবে। অতএব সংসার রূপ যুদ্ধক্ষেত্রে বৃথা সময় নষ্ট না করে সংকল্প রূপায়ণ করে যাওয়াই আমাদের কর্তব্য।

‘জীবন সংগীত’ কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য “মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী, এ জীবন মানুষ বার বার লাভ করে না। অতএব স্বল্প সময়ে যত শীঘ্র সম্ভব জীবনের সুনির্দিষ্ট কাজগুলি সম্পন্ন করা একান্ত কর্তব্য। জীবনের সমস্ত হতাশা, অতীতের গৌরবস্মৃতির অনুধ্যান বা ভবিষ্যতের স্বর্ণকল্পনা পরিত্যাগ করে কেবলমাত্র বর্তমানকেই মানুষের কাজে লাগানো দরকার। ঈশ্বর বা চিরন্তন মঙ্গলকে চিন্তা করে নিজের কাজ সুষ্ঠু সমাধানেই কীর্তিস্থাপন করা যায়। যাঁরা এই পৃথিবীতে মহাজ্ঞানী, মহাজন হিসেবে পরিচিত, তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা আমাদের কীর্তির পতাকাকে উড্ডীন করতে পারবো। আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও সেইপথ ধরেই নিজেদের বরণীয় করতে পারবে।” অতএব সংসাররূপ যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো হতাশা বা অক্ষমতাকে সংসার ক্ষমা করে না, কেবলমাত্র সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করাটাই সংসারের একমাত্র দাবী। এটাই কবিতাটির অন্তর্নিহিত সত্য।

(খ) জীবন-সংগীত কবিতাটি মুখস্থ করে আবৃত্তি করো।

উত্তরঃ পাঠ্যপুস্তক দেখে নিজেরা মুখস্থ করে আবৃত্তি করো।

(গ) কবিতায় কবি হেমচন্দ্ৰ কীভাবে মানব জীবনের প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেছেন, তা আলোচনা করো।

উত্তরঃ বিশ্ববিধাতার মহান সৃষ্টি মানুষ বিধাতা তাকে যে মহাসম্মান দান করেছেন তাকে রক্ষা করাই তার কর্তব্য। আত্মস্বার্থের সীমিত গণ্ডীর মধ্যে তার স্থান নয়। বিশাল বিশ্বে বৃহত্তর মানবসমাজের মাঝে তার স্থান। মানুষ যদি নিজের জৈবিক প্রয়োজনের কথা নিরন্তরভাবে নিজের আত্মীয় পরিজনের সুখের কথাই চিন্তা করে, দেশ ও দশের কথা ভুলে যায়, তাহলে সে মনুষ্যত্বের গৌরব দাবী করতে পারে না। এই পৃথিবীর সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের মূলে রয়েছে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ। জগতের বিশাল ক্ষেত্রে যাঁরা নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে মানবজাতির কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, হৃদয়ধর্মের প্রেরণায় যাঁরা দুঃখীজনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের জীবনই সার্থক। পরার্থ-পরতাই জীবনের চরিতার্থতার মূল। নিঃস্বার্থ এবং উদার মন নিয়ে যাঁরা বেঁচে থাকেন, তাঁদের জীবনই সফল। পৃথিবীতে যে সকল মহাপুরুষ আবির্ভূত হয়েছেন তাঁরা সকলেই পরহিতব্রতে দীক্ষিত। প্রকৃতপক্ষে স্বার্থমগ্ন মানুষের সঙ্গে বিশ্বজনের হৃদয়ের কোনো যোগ নেই, সেজন্য তাদের কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই। পৃথিবীর অন্নপানে তাদের কোনো অধিকারও নেই। যদি তারা স্বার্থত্যাগের মাধ্যমে নিজের সত্তাকে বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর সত্তার সঙ্গে মিশিয়ে দিত, তবে তাদের জীবন ব্যর্থ হত না।

এ জগৎ লীলাময়ের অপরূপ সৃষ্টি, মানুষ তারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুতরাং জাগতিক মোহবন্ধনকে অস্বীকার করে লাভ নেই। জীবনের সব দ্বারই খোলা রাখতে হবে। ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে যাঁরা যোগাসনে বসে সত্যান্বেষণ করেন, তাঁরা নরলোকের ঊর্ধ্বে অধিষ্ঠান করেন। সত্যসন্ধানী সেই সাধক জগতের যথার্থ স্বরূপ জানতে পারেন না, সেজন্য তাঁর কাছে সত্য দূরাগত। সত্য মানুষের মুক্তির দিশারী, কিন্তু মুক্তি জাগতিক ক্রিয়াকলাপ থেকে দূরে নয়। ধরণীর রূপরসের মধ্যেই মুক্তির সুর বাজে। অনেকের ধারণা মানুষ ইন্দ্রিয়পরবশ হয়ে ভ্রমের শিকার হয়, মোহাবরণে আচ্ছন্ন হয়। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। জীবনে আমরা ভুল করি, আমাদের কর্তব্যে ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটে, পদস্খলন হয়। সংসারের জটিল আবর্তে বারংবার দিশাহারা হলেও জীবনের ধারা বয়ে চলে নিরন্তর। ভুল ভ্রান্তি বা মিথ্যার আশঙ্কায় যারা নিশ্চেষ্ট এবং নিরুদ্যম তারা কোনদিনই সত্যের সন্ধান পেতে পারে না। ইন্দ্রিয়ের দ্বার বন্ধ করলেই সত্যের বিমল আলোকে হৃদয় প্রোজ্বল হয়ে ওঠে না, উপরন্তু দ্বার খুলে রাখলেই বহির্জগতের সত্যমিথ্যা, ভালো মন্দ, আলোছায়ায় মনোভূমিতে বিচিত্র রূপ দৃশ্যমান হয়। অসত্য থেকে সত্যের পথে, অন্ধকার থেকে আলোকের জগতে এবং মৃত্যু থেকে অমৃতলোকে তখন মানুষের উত্তরণ ঘটে থাকে।

জীবনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এ পথে পদে পদে বাধা বিপত্তির কণ্টক মাড়িয়ে চলতে হয়। বহু আঘাত এবং যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়। কখনো বা মনে হয় দুঃখ-রজনীর বুঝি শেষ নেই। যারা দুর্বল এবং কাপুরুষ তারা মনে করে দুঃখেই জীবনের পরিসমাপ্তি, কিন্তু এর চেয়ে বড় ভ্রান্তি আর কিছু নেই। মেঘ ক্ষণিকের, সূর্য চিরদিনের। দুঃখের অমারাত্রির অবসান ঘটে, আর তখনই পূর্ব গগনে ঘটে নব অরুণোদয়। সেজন্য দুঃখ বিপদের কালো মেঘ দেখে ভয় পেলে চলবে না। বাধা বিঘ্ন জীবনের দুঃস্বপ্ন নয়, উপরন্তু তা জীবনে সংগ্রামী চেতনা জাগিয়ে তোলে। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ জীবন সাগরে পাড়ি দিতে হলে চাই দৃঢ় সংকল্প এবং অটুট মনোবল। জীবনের ধর্ম লক্ষ্য স্থির রেখে এগিয়ে চলা। নব নব আঘাত আসুক, দুর্যোগের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসুক, তবুও ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। বাধার প্রাচীর করেই সাফল্যের পথে মানুষের জয়যাত্রা। তামসী রাত্রির গভীর বৃত্তেই জড়িয়ে রয়েছে ফুটন্ত সকাল।

(ঘ) মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং সমরাঙ্গন তুল্য – কীভাবে এ জীবন সার্থক হতে পারে তার এক যুক্তিসংগত আলোচনা করো।

উত্তরঃ ব্যক্তিই আপন ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। সাহিত্যে কিংবা ইতিহাসে যে সকল মহাপুরুষদের বা ঐতিহাসিক পুরুষদের কথা পাওয়া যায় তারা সকলেই পরিশ্রমের দ্বারা বড়ো হয়েছেন। পরিশ্রমকে অবজ্ঞা করে “সৌভাগ্যের জয়টিকা” করায়ত্ত হয়নি। আত্মবিশ্বাস ও স্বাবলম্বন সাফল্যের বীজমন্ত্র । সংগ্রামমুখর জীবন ভাগ্য মানে না, দৈবকে ভয় পায় না। কাবণ কর্ম ও প্রচেষ্টা তার নিত্য সহচররূপে সাহস জোগায়। পৌরুষই তার প্রকৃত শক্তি। এই শক্তি বলে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে, অজেয়কে জয় করে দুর্লভকে সুলভ করে। উদ্যমী পুরুষ কেবলমাত্র লক্ষ্মীকেই পান না সরস্বতীকেও লাভ করেন। আর যারা পুরুষকারহীন তারা দৈবের দোহাই পেয়ে পড়ে পড়ে মার খায়। সংস্কৃতে আছে–

উদ্যোগিনং পুরুষসিংহমুপৈতি লক্ষ্মীঃ

দৈবেন দেয়মিতি কাপুরুষোঃ বদন্তি।

“জন্মিলে মরিতে হবে” কথাটি সব জীবের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হলেও দেশ ও দশের কল্যাণে প্রাণদানে সেই দেহটি মানবমনে চিরজাগ্রত থাকে। নশ্বর এই বিশ্বে সেই সব প্রাণই মহাপ্রাণরূপে চিরবন্দিত হয়।

জীবনের গণ্ডি একটি বিশেষ কালের সীমায় আবদ্ধ। মানুষ পৃথিবীতে এক একটি সময়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সেই সময়টি অতিক্রান্ত হলেই মৃত্যুবরণ করে। জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী কালটি যাকে বলা হয় আয়ুষ্কাল, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। আত্মসুখ সর্বস্ব মানুষ আয়ুষ্কালটিকে ভোগ ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের বোঝায় ভারী করে। অজ্ঞানতার মোহে দেহের বিনাশের কথা ভেবে ভয় পায়, প্রাণকে আকড়ে ধরে পরম মমতায়। কিন্তু আয়ুষ্কাল নয়, কৃতকাজই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ। যে মানুষ মানবজাতির হিতের জন্য, মানুষকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তাঁদের প্রাণ পর্যন্ত নিবেদন করতে কুণ্ঠিত হন না তারা মানুষের মনের মন্দিরে চিরকাল বেঁচে থাকেন। তাঁরা মারা গেলেও মৃত্যুঞ্জয়। সক্রেটিস যখন ভয়ংকর বিষের পাত্র তুলে নেন তখন সত্যের জন্য তাঁর নিষ্ঠা সকলকে বিস্মিত করে। কোপারনিকাস লাঞ্ছিত হয়েছিলেন পৃথিবীর আবর্তন সম্বন্ধে নতুন তথ্যের জন্য। তাই ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ নয়, মানুষের কল্যাণই অর্থাৎ Greatest good to the greatest number-ই প্রত্যেক মানুষের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হওয়া উচিত। যাঁরা যথার্থই এ কাজ করতে পারেন তাঁরা মানব মনে চিরজাগ্রত থাকেন।

ইচ্ছাই কাজের মূল প্রেরণা। মানুষের কাজের আগ্রহ ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। পৃথিবীতে যেকোনো কাজ করতে গেলেই তাতে কিছু না কিছু বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু সেইসব বাধা পেরিয়ে যেতে হলে প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। এই ইচ্ছাশক্তির বলে সবরকম অসুবিধা অতিক্রম করা সম্ভব এবং অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করা যায়। ইচ্ছাশক্তির অভাবে মানুষ দুঃখের বোঝা কষ্টভোগ করে থাকে।

মানুষের জীবনে পদে পদে নানারকম বাধাবিঘ্ন। অনেক সময়েই সফল হবার পথটা সহজে চোখে পড়ে না। এ সময় হতাশ হওয়া উচিত নয়। মানুষের অন্তরে এমন একটা আশ্চর্য শক্তি নিহিত রয়েছে যার সম্যক অনুশীলন ও ব্যবহার করতে জানলে খুব কঠিন বিষয়ও সহজ হয়। এই শক্তিই হল ইচ্ছাশক্তি। মনের মধ্যে যে সাময়িক বাসনার উদ্রেক হয় তা ক্ষণিকের খেয়াল মাত্র। তা দিয়ে কোনো কাজ সুসম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে জগতের খুব কঠিন কাজও সুসাধ্য হতে পারে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণে তপোবনের উল্লেখ রয়েছে। সেটা ইচ্ছাশক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। দুর্দমনীয় ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাতে গেলে একাগ্রতা, সহিষ্ণুতা ও অধ্যবসায় আয়ত্ত করতে হয়। ইচ্ছাশক্তি নেই এমন জাতির সাফল্যও অসম্ভব।

(ঙ) “জীবাত্মা অনিত্য নয়”—কথাটির বিস্তারিত আলোচনা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় দার্শনিকগণ আত্মাকে দেহ ও মন হতে ভিন্ন এক সত্তারূপে ব্যাখ্যা করেছেন। মানুষের দেহ বিনাশপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর ও শাশ্বত। মন ও আত্মা সমার্থক নয়। চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক গুণ। সাংখ্য ও যোগ দর্শনে আত্মাকে পুরুষ বলা হয়েছে। দেহ, মন, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি বা অহঙ্কার হতে পুরুষ ভিন্ন এক সত্তা। চৈতন্য পুরুষের স্বাভাবিক গুণ নয়; পুরুষই চৈতন্যস্বরূপ। পুরুষ নির্গুণ, নিষ্ক্রিয় ও অপরিণামী। পুরুষ অপরিবর্তনশীল, কিন্তু জগতের সকল পরিবর্তনের দ্রষ্টা। পুরুষ শুদ্ধ, বুদ্ধ ও মুক্ত স্বভাব। সাংখ্য ও যোগ দার্শনিকদের মতে পুরুষ এক নয়, বহু।

নৈয়ায়িকগণ বলেন, আত্মা দেহাতিরিক্ত এক সত্তা। কেননা দেহ বুদ্ধিহীন ও চৈতন্যহীন। কিন্তু আত্মার বুদ্ধি ও চৈতন্য রয়েছে। আত্মা যখন দেহে অবস্থান করে তখন আত্মা চৈতন্যপ্রাপ্ত হয়। দেহহীন আত্মার কোনো চৈতন্য থাকে না। আত্মা ইন্দ্রিয় নয় ; কেননা ইন্দ্রিয় ভৌতিক, কিন্তু আত্মা ভৌতিক নয়। আত্মা মন হতে ভিন্ন, কেননা নৈয়ায়িকদের মতে মন একটি ইন্দ্রিয়। নৈয়ায়িকগণ বলেন, আত্মা একটি অদ্বিতীয় পদার্থ। বুদ্ধি, সুখ, দুঃখ, রাগ, দ্বেষ প্রভৃতি মানসিক গুণগুলি আত্মার মধ্যে বিরাজ করে। আত্মা অসীম, নিত্য ও বিভূ এবং বহু।

বৈশেষিকগণ বলেন, আত্মা বিভূ ও শাশ্বত একটি দ্রব্য। আত্মা দু’ প্রকার— জীবাত্মা ও পরমাত্মা। জীবাত্মা বহু, কিন্তু পরমাত্মা এক। চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক গুণ নয়, আগন্তুক গুণ। আত্মা স্বরূপত নির্গুণ ও নিষ্ক্রিয়।

মীমাংসা দর্শনে বলা হয়েছে আত্মা নিত্য ও বিভূ। আত্মা ইন্দ্রিয়, মন ও দেহ হতে ভিন্ন এক সত্তা। দেহ বিনাশপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। আত্মা যখন দেহের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন আত্মাতে চৈতন্যের আবির্ভাব ঘটে। প্রভাকরের মতে চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক গুণ নয়, আগন্তুক গুণ। কিন্তু কুমারিল ভট্টের মতে চৈতন্য আত্মার স্বাভাবিক গুণ।

শঙ্করের মতে আত্মা এবং ব্রহ্ম এক ও অভিন্ন। ব্যবহারিক দৃষ্টিতে আত্মা বহু ; কিন্তু পারমার্থিক দৃষ্টিতে আত্মা এক ও অদ্বিতীয়। আত্মা নিত্য, নির্বিশেষ, নিষ্ক্রিয়, অখণ্ড এবং অনাদি। আত্মা সৎ-চিৎ-আনন্দস্বরূপ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় মানুষ দেহ ও আত্মার সমষ্টি। কিন্তু মানুষের দেহ অন্যান্য জড়বস্তুর মতো মিথ্যা অবভাস মাত্র। একমাত্র আত্মাই সৎ, দেহ সৎ বস্তু নয়। এই আত্মাই ব্রহ্ম এবং শঙ্করের মতে আত্মা নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ ও মুক্ত।

রামানুজের মতে আত্মা ব্রহ্মের অংশ। আত্মা দেহ, মন, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয় হতে ভিন্ন, আত্মা নিত্য ও বিভূ। চৈতন্য আত্মার আগন্তুক গুণ নয়। আত্মা চৈতন্যস্বরূ নয়। চৈতন্য আত্মার নিত্য গুণ। জীব দেহবিশিষ্ট আত্মা। রামানুজের মতে ব্রহ্ম ও জীব একান্তভাবে অভিন্ন নয়। আবার জীবকে ব্রহ্ম হতে ভিন্ন বলা যায় না। সুতরাং জীবন ও ব্রহ্মের মধ্যে যে সম্বন্ধ তা হল ভেদ ও অভেদ সম্বন্ধ।

জড়বাদী চার্বাক দর্শন দেহাতিরিক্ত সনাতন আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই আত্মা। চৈতন্য আত্মার গুণ নয় ; চৈতন্য দেহের গুণ এবং দেহের বিনাশপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে চৈতন্যও বিনাশপ্রাপ্ত হয়।

জৈন দর্শন মতে আত্মা দেহাতিরিক্ত এক সত্তা। আত্মা জ্ঞাতা, কর্তা, ভোক্তা, নিত্য ও অপরিণামী। চৈতন্য আত্মার ধর্ম। এই আত্মা এক নয়, বহু। প্রতিটি সজীব দেহের মধ্যে আত্মা বিরাজমান। আত্মার অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ ও অনুমানলব্ধ।

বুদ্ধদেবের মতে জগতে সবকিছুই অনিত্য এবং ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং নিত্য ও অপরিবর্তনশীল আত্মা বলে কিছু নেই। বুদ্ধদেব চেতনার অবিনশ্বর প্রবাহকে (continuous stream of consciousness) আত্মা বলেছেন। বিভিন্ন মুহূর্তে তোমাদের মনে যে সকল মানসিক প্রক্রিয়াগুলি সৃষ্টি হয়, সে সকল মানসিক প্রক্রিয়ার ধারা বা প্রবাহ হল আত্মা। এই মানসিক প্রক্রিয়াগুলি ক্ষণস্থায়ী ও অনিত্য। এদের অন্তরালে কোনো নিত্য ও অপরিবর্তনশীল সত্তা নেই। আত্মা সম্পর্কে বুদ্ধদেবের এই মতের সঙ্গে পাশ্চাত্ত্য দার্শনিক হিউম, মিল ও উইলিয়াম জেমসের মতের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

৫। নিহিতার্থ লেখো।

(ক) ‘সময়ের সার বর্তমান’।

উত্তরঃ কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জীবন-সংগীত’ কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃত পংক্তিটি।

সময় নদীস্রোতের মতো চলমান ; কারও সাধ্য নেই যে তার গতি রুদ্ধ করতে পারে। সেই সময়ের গতিপথে স্বপ্নপ্রসূ অতীত ও অনির্দেশ্য ভবিষ্যতের কোনো মূল্য নেই। শুধুমাত্র বর্তমান সময়কে কাজে লাগিয়ে মানুষ সাফল্য লাভ করতে পারে। সেজন্য কবি বর্তমান সময়টুকুকে সার বলেছেন।

(খ) ‘মহিমাই জগতে দুর্লভ।

উত্তরঃ উক্তিটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন-সংগীত কবিতার অংশ।

গড়পড়তা সাধারণ মানুষের সংখ্যাধিক্য। বিশেষ কিছু প্রতিভাবানদেরও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত দেখা যায়। প্রকৃত অর্থে মহৎ ব্যক্তির সংখ্যা পৃথিবীতে নেহাৎই গণনার অযোগ্য; আর মহৎ ব্যক্তিরই তো মহিমা বা মাহাত্ম্য থাকে। তাই সংসাররূপ রণক্ষেত্রে সংগ্রাম করেই মহিমা বা মাহাত্ম্য অর্জন করা একমাত্র কর্তব্য, যা জগতে অত্যন্ত দুর্লভ।

(গ) ‘আয়ুঃ যেন শৈবালের নীর।

উত্তরঃ উক্তিটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জীবন-সংগীত’ কবিতার অন্তর্গত।

পৃথিবীতে মানুষের আয়ুষ্কাল অত্যল্প। এ সম্পর্কে কবির বক্তব্য, নির্দিষ্ট করণীয় কার্য সঠিক সময়ে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলে সফলকাম হওয়া সম্ভব। শ্যাওলার পাতার উপর জলবিন্দু পড়লে মুহূর্তের মধ্যে তা তৈলাক্তধর্মী পত্র বেয়ে নীচে পড়ে যায়। জলবিন্দুর শৈবালের ওপর পতন ও তা জলগত হওয়ার মুহূর্তটিকেই মানুষের আয়ুষ্কালের স্থিতি বলেছেন।

(ঘ) ভবিষ্যতে করো না নির্ভর।

উত্তরঃ জীবন সংগীত কবিতাটি তন্ময়ধর্মী নীতি কবিতার পর্যায়ভুক্ত। যেহেতু কবিতাটিতে উপদেশ ও তত্ত্ব প্রচারের বিষয়টাই মূল উদ্দেশ্য। এই ধরনের কবিতার বৈশিষ্ট্য হাল্কা বা গম্ভীর চালে দীর্ঘ বা স্বল্প পরিসরে শুদ্ধ তত্ত্ব বা জ্ঞান কল্পনার জারক রসে জারিত হয়ে সুভাষিত রূপে পাঠককে আকর্ষণ করে। সেদিক থেকে ‘জীবন-সংগীত’ সফল। এই কবিতাটিতে কবি মানুষকে আলস্য ও হতাশার বেদনা পরিত্যাগ করে তার অভীষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ভুলভাবে পালনের মাধ্যমেই যে সার্থকতার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। কবি তাঁর বিশ্বাসকে পাঠকের কাছে এমন ভঙ্গীতে উপস্থাপিত করেছেন যে, তাঁর বক্তব্য পাঠকের হৃদয়গ্রাহী ও আস্বাদ্য হতে পেরেছে। এইখানেই কবিতাটির বিশেষত্ব নিহিত।

(ঙ) ‘সংসার সমরাঙ্গন’।

উত্তরঃ শব্দ দুটি কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জীবন-সংগীতের অন্তর্গত।

কবি সংসারকে সমরাঙ্গন বলেছেন কেননা, সংসার জীবন কেবলই কুসুমাস্তীর্ণ নয় সেখানে নিরন্তর বিরুদ্ধ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। এই লড়াই পশুশক্তির সাহায্যে হয় না। মানসিক স্থৈর্য, ধৈর্য, বুদ্ধি দ্বারাই এই সংসারের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হয় বা জয়ী হতে হয়। পরাজিতকে সংসার মেনে নেয় না, তাকে নির্মমভাবে পরিত্যাগ করে। তাই কবি সংসার সমরাঙ্গন বলেছেন।

টীকা লেখো।

হেনরি ওয়ার্ডওয়ার্থ লংফেলো – হেনরি ওয়ার্ডওয়ার্থ লংফেলো একজন আমেরিকান কবি ও শিক্ষাবিদ। লংফেলো পোর্টল্যান্ডে ১৮০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন এবং ৭৫ বছর বয়সে কেমব্রিজে ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ মারা যান। লংফেলো প্রথমে বোডেন (Bowdoin) এবং পরে হাভার্ড কলেজে অধ্যাপনা করেন। তিনিই প্রথম আমেরিকান যিনি দান্তে আলিযিরেই (Dante Alighieri) ডিভাইন কমেডির অনুবাদ করেন। লংফেলো অনেকগুলি গীতিকবিতা লিখেছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড়ো কবিতা সংকলন হল ‘ভয়েস অফ দি নাইট’ (১৮৩৯)।

৬। ব্যাখ্যা লেখো।

(ক) “মানব জীবন সার             এমন পাবে না আর

                       বাহ্য দৃশ্যে ভুলো না রে মন।

উত্তরঃ সীমাহীন কালসমুদ্রে পৃথিবী নামক ছোট্ট একটা উপগ্রহে মানুষ নামক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীর জীবনকাল ততোধিক ক্ষণস্থায়ী। তা কবিদের কাছে শৈবালের পত্রে অথবা পদ্মপত্রে জলবিন্দুর মতোই ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে কিছু কর্তব্যকর্ম নির্দিষ্ট থাকে, যা তার অবশ্য করণীয়। যেহেতু মানুষ জীবজগতে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন, সেজন্য তার দায়িত্বও কিছু বেশি থাকে। কিন্তু মানুষ বুদ্ধির ভুলে সঠিকভাবে তার কর্তব্যকে সাধন করতে পারে না অনেক সময়। ফলে হতাশায় সে জীবনকে বৃথা বলে মনে করে ক্রন্দন করে বা অনুশোচনায় অস্থির হয়। কখনও সে অতীতের সুন্দর দিনগুলির স্মৃতি চিন্তা বা ভবিষ্যতের স্বপ্নকল্পনার বিস্তারে নিজেকে নিমগ্ন রেখে বর্তমান থেকে বিচ্ছিন্ন করে। ফলে তার জীবনে ব্যর্থ হতাশা ছাড়া অপর কিছুই লাভ হয় না। তাই কবি বলেছেন সমস্ত হতাশাকে ছেড়ে কেবল বর্তমানকে ভিত্তি করে নিজের কর্তব্যকর্ম সঠিক সমাধা করতে পারলেই নিজের, পরিবারের তথা জগতের মঙ্গল করা যাবে। এই কর্তব্যকর্ম সাধনের পথে সহায়ক হিসেবে আমরা আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের স্মরণাপন্ন হতে পারি। তবে তাঁদের পন্থা অনুসরণে আমরাও নিজেদের সংসারে স্মরণীয় ও বরণীয় করে তুলতে পারবো। আর আমাদের পরের প্রজন্মও একইরূপে আমাদের অনুসরণ করে নিজেদের জীবনকে স্মরণীয় করে তুলতে পারবে।

মানবজীবনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে কেউ অলসভাবে সময় নষ্ট করলে সামগ্রিক ভাবে মানব সমাজেরই ক্ষতি হবে—এই বিষয়টা সমস্ত মানুষকে বুঝতে হবে। কর্তব্যকর্ম করা ছাড়া মানুষের অপর কোনো ধর্ম নেই। তাই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব সংসারে থেকে পাঁকাল মাছের মতো হতে বলেছেন। সংসারে থেকেও সংসারের পাঁক গায়ে না মেখে নিজের কাজটি ঠিকমতো করে গেলেই মানুষ স্বয়ংসিদ্ধ ও জগৎ সিদ্ধ। এইরূপেই ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষ সার্থকতা লাভ সম্ভব।

(খ) “সাধিতে আপন ব্রত         স্বীয় কার্যে হও রত

                          একমনে ডাক ভগবান।”

উত্তরঃ জীবন সংগীত কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কর্তব্য- কর্ম যত্ন করে সুচারুরূপে সম্পন্ন করলে পরিণামে জয় অবশ্যই হবে। কেননা মানুষকে বাঁচতে হয় কাজের মাধ্যমেই। জীবাত্মা অনিত্য না হওয়ায় কর্তব্যকর্ম সময়ে সম্পন্ন না করলে আগামীদিনে তা আর সম্পন্ন করা যায় না। ফলে জীবন অসার্থক হয়। অতএব বাইরের রূপবৈভবে না ভুলে, অতীত ভবিষ্যতকে চিন্তা না করে কেবল বর্তমানকে আশ্রয় করেই কর্তব্যকর্ম সমাধা করলেই নিজের তথা সকলের উন্নতি হয়। প্রত্যেকে নিজের কাজটুকু ঠিকমতো করলেই সকলের সব দায়িত্ব পালিত হয় ও সমাজের উন্নতি ঘটে। সে কারণেই কবি বলেছেন যত্ন করে কাজ করলে জয় আসবে।

কয়েকজন মানুষ নিয়ে হয় পরিবার, কিছু পরিবারের সমষ্টি তৈরি করে গোষ্ঠী আর অনেক গোষ্ঠী সমাজ সৃষ্টি করে। কাজেই পরিবারের সদস্যদের ক্রিয়াকর্ম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃহত্তর সমাজকে প্রভাবান্বিত করে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির কার্য, কর্তব্য সমাধানে সমাজের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে আর সমাজের শ্রীবৃদ্ধিতে জগতের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। সেজন্য কবি সংসারকে সফল করে জগতের সাফল্যকে সুনিশ্চিত করার দিশা নির্দেশ করেছেন।

(গ) সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে           অন্য কোন জন পারে

                          যশোদ্বারে আসিবে সত্বর।

উত্তরঃ ‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কর্তব্য কর্ম যত্ন করে সুচারুরূপে সম্পন্ন করলে পরিণামে জয় লাভ সম্ভব। কেননা মানুষকে বাঁচতে হয় কাজের মাধ্যমেই। জীবাত্মা অনিত্য না হওয়ায় কর্তব্য কর্ম সময়ে সম্পন্ন না করলে আগামী দিনে তা আর সম্পন্ন করা যায় না। ফলে জীবন অসার্থক হয়। অতএব বাইরের রূপবৈভবে না ভুলে, অতীত-ভবিষ্যতকে চিন্তা না করে কেবল বর্তমানকে আশ্রয় করেই কর্তব্যকর্ম সমাধা করলেই নিজের তথা সকলের উন্নতি হয়। প্রত্যেকে নিজের কাজটুকু ঠিকমতো করলেই সকলের সব দায়িত্ব পালিত হয় ও সমাজের উন্নতি ঘটে। তাই কবি যত্ন করে কাজ করলে জয় আসবে বলেছেন।

কয়েকজন মানুষ নিয়ে পরিবার, কিছু পরিবারের সমষ্টি তৈরি করে গোষ্ঠী আর অনেক গোষ্ঠী সমাজ সৃষ্টি করে। কাজেই পরিবারের সদস্যদের ক্রিয়াকর্ম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃহত্তর,সমাজকে প্রভাবান্বিত করে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির কার্য, কর্তব্য সমাধানে সমাজের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে আর সমাজের শ্রীবৃদ্ধিতে জগতের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। সেজন্য কবি সংসারকে সফল করে জগতের সাফল্যকে সুনিশ্চিত করার দিশা নির্দেশ করেছেন।

(ঘ) করো না সুখের আশ        পরো না দুঃখের ফাঁস

                     জীবনের উদ্দেশ্য তা নয়।

উত্তরঃ মনুষ্য জন্মকে রাতের স্বপ্নের মতো অসার, বৃথা বলা উচিত নয়। অদ্বৈতবাদীদের মতে পৃথিবীটাকে অলীক, স্ত্রী-পুত্র, পরিজন কেউ কারো নয়, সবই মায়া এসব ভেবে কান্নাকাটি না করে মনুষ্য জীবনকে সার মনে করে অনন্যমনা হয়ে নিজের দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করলেই সার্থকতা লাভ করা যায়। জীবাত্মা পরমাত্মার চিরন্তন অংশ মনে করে সাগ্রহে সংসারের দায়িত্ব পালন কর্তব্য। সুখের অন্বেষণে দুঃখকে বরণ না করে সংসারে কাজটুকু সঠিকভাবে সম্পন্ন করলেই বিশ্বের উন্নতি অপরিহার্য। জীবনের সময় অত্যল্প, সেই স্বল্প সময়ে সংসাররূপ যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুও ভালো। কিন্তু পলায়ন একেবারেই কাম্য নয়। যুদ্ধ করে আপন মহিমা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। ভবিষ্যতের কাল্পনিক মনোহর ছবি বা অতীতের সুখস্মৃতি রোমন্থন দুটোকেই বর্জন করে ঈশ্বরকে স্মরণের মাধ্যমে বর্তমানের কর্তব্য সম্পন্ন করে ধরাতলে কীর্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মহাজ্ঞানী ও মহাজনদের পথে অনুগমন করে আমরাও বরণীয় হতে পারি। আর আমাদের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করে পর-প্রজন্মও সেইভাবে কীর্তিমান হতে পারবে। অতএব সংসাররূপ যুদ্ধক্ষেত্রে বৃথা সময় নষ্ট না করে সকল্প রূপায়ণ করে যাওয়াই আমাদের কর্তব্য।

৭। ব্যাকরণ।

(ক) ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো।

মহাজন — মহান যে জন (উপপদ সমাস)

সমরাঙ্গন — সমর রূপ অঙ্গন (রূপক কর্মধারয়)

অনিত্য — ন-নিত্য (নঞ তৎপুরুষ সমাস)

নিজে করো— 

ধরাতল, যশোদ্বারে, প্রাতঃস্মরণীয়, কীর্তি ধ্বজা, বরণীয়, জীবাত্মা।

উত্তরঃ ধরাতলে– ধরার তল — সম্বন্ধ তৎপুরুষ।

যশোদ্বারে — যশের দ্বারে সম্বন্ধ তৎপুরুষ।

প্রাতঃস্মরণীয় — প্রাতে যাকে স্মরণ করা হয় — বহুব্রীহি সমাস।

কীর্তিধ্বজা — কীর্তির বজা — সম্বন্ধ তৎপুরুষ।

বরণীয় — বরণ করা হয় যাকে — কর্মধারয় সমাস।

জীবাত্মা — জীবের যে আত্মা — কর্মধারয় সমাস।

(খ) বিপরীত শব্দে পরিবর্তন করো।

গমন —আগমন। 

মহাজন — নীচজন।

স্থির — অস্থির। 

অনিত্য — নিত্য।

জীবন — মরণ।

নিজে করো—

লক্ষ্য, ভয়, জন্ম, সময়, সুখ, যত্ন, কাতর, বর্তমান, রত, দৃঢ়, সার।

উত্তরঃ লক্ষ্য — লক্ষ্যহীন। 

ভয় — সাহস। 

জন্ম — মৃত্যু। 

সময় — অসময়। 

সুখ — দুঃখ। 

যত্ন — অযত্ন। 

কাতর — অকাতর। 

বর্তমান — অতীত। 

রত — বিরত। 

দৃঢ় — আলগা। 

সার — অসার।

(গ) পদ পরিবর্তন করো।

নির্ভর — নির্ভরতা।

সমর — সামরিক। 

চিন্তা — চিন্তনীয়। 

চিহ্ন — চিহ্নিত। 

জীব — জৈব।

দুঃখ — দুঃখিত।

নিজে করো—

বীর্যবান, ভয়, লক্ষ্য, ব্রত, সময়, সংকল্প, সাধন, সার, কাতর।

উত্তরঃ বীর্যবান — বীর্য। 

ভয় — ভীতি। 

লক্ষ্য — লক্ষণীয়। 

ব্রত — ব্রতী। 

সময় — সাময়িক।

সংকল্প — সঙ্কলিত।

সাধন — সাধনা। 

সার — সারাংশ। 

কাতর — কাতরতা।

৮। (ঘ) বিশেষ্যপদের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগ।

‘হাত’

হাত করা (আয়ত্ত করা) — লোকটি টাকা দিয়ে সাক্ষীকে হাত করেছে।

হাত ছাড়া (বেহাত হওয়া) — সুযোগটা আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে।

হাত টান (চুরির অভ্যেস) — চাকরটির হাত টানের দোষ আছে।

হাত খালি (রিক্ত হস্ত) — বর্তমানে আমার হাত খালি।

হাত দেওয়া (শুরু করা) — কাল থেকেই আমি ঘরের কাজে হাত দেব।

‘মাথা’

মাথা খাওয়া (নষ্ট করা) — আদর বেশি দিয়েই মা-বাবারা ছেলের মাথা খেয়েছেন।

মাথা ঘামান (চিন্তা করা) — এ ব্যাপারে বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। 

মাথা ঠাণ্ডা করা (শান্ত হওয়া) — মাথা ঠাণ্ডা করেই বড় কাজ করতে হয়, তবেই ফল পাওয়া যায়।

মাথায় ঢোকা (বোধগম্য) — এ সহজ অঙ্কটিও তোমার মাথায় ঢুকছে না দেখছি।

বিশেষণপদের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগ।

‘কাঁচা’

কাঁচা পয়সা (সহজ লভ্য) — বইয়ের ব্যবসায় লোকটি কাঁচা পয়সা কামিয়েছে।

কাঁচা হাত (অদক্ষ) — এ কাজটি কাঁচা হাতের বলে মনে হয়।

কাঁচা ঘুম (অপূর্ণ) — কাঁচা ঘুমে শরীর খারাপ করে।

কাঁচা পথ (মেঠো পথ) — কাঁচা পথে চলাফেরা করতে বড়ই কষ্ট হয়।

‘ছোট’

ছোট করা (হীনজ্ঞান করা) — কাউকে কখনও ছোট করে দেখতে নেই।

ছোট নজর (নিন্দিত) — লোকটির নজর খুব ছোট, তাকে কেউ সম্মান দেয় না।

ছোট লোক (অভদ্র) — ছোট লোকের মতো গালাগাল করছ কেন?

(১) মুখ, কান, চোখ, গা।

(২) পাকা, বড়া, কড়া, নরম।

উত্তরঃ ১। মুখ দেখানো (দায় সারা) — ওখানে তার মুখ দেখানো কাজ।

মুখ (ঝগড়া করা) — মেয়েটির খুব মুখ।

মুখ পুড়ে যাওয়া (নিন্দিত হওয়া) — ছেলের জন্য বাবা-মায়ের মুখ পুড়েছে।

কান কাটা (লজ্জাহীন) — বিমলবাবুর দু’কান কাটা।

কানে কালা (শুনতে পায় না) — লোকটি কানে কালা।

চোখ বুজে থাকা (দেখেও না দেখা) — করণীকরা ঘুষ খেলে ওপরওয়ালারা চোখ বুজে থাকে।

চোখ পড়েছে (নজর পড়া) — গোকুলবাবুর জমিতে জমিদারের চোখ পড়েছে।

গা (শরীর) —আমার সারা গা ব্যথা।

গাঁ (গ্রাম) —গাঁ-গঞ্জে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়।

গা লাগানো (খেয়াল করা) — হেডস্যার স্কুলের ব্যাপারে গা লাগাচ্ছেন না।

২। পাকা (বেশি বোঝে) — সৌরভ এঁচোড়ে পাকা।

পাকা —পাকা পেপে খেতে বেশির ভাগ লোখ পছন্দ করে।

পাকানো — বাচ্চাদের পাকামো ভালো লাগে না।

বড় ব্যাপার (বিরাট ব্যাপার) — মদনবাবু বাড়িতে অনুষ্ঠান মানে বড় ব্যাপার।

বড়সড় (আকারে বড়) — গরুটি বেশ বড়সড়।

কড়াই (রান্নার পাত্র) — ড়াইতে তেল দাও।

কড়া পাক — কড়া পাকের সন্দেশ খেতে ভালো লাগে।

নরম মনের — আমার বাবা একেবারে নরম মনের মানুষ ।

নরমে গরমে — অফিসের বড়বাবু নরমে গরমে চলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top