Class 12 Logic and Philosophy Chapter 5 বাস্তববাদ

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 5 বাস্তববাদ answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 12 Logic and Philosophy Chapter 5 বাস্তববাদ and select needs one.

Class 12 Logic and Philosophy Chapter 5 বাস্তববাদ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Logic and Philosophy Chapter 5 বাস্তববাদ Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

বাস্তববাদ

পাঠ:

অতি সংক্ষিপ্ত  উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সরল বাস্তববাদ মতে সকল ———- সহ জ্ঞানের বিষয় বস্তুর মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে।

উত্তরঃ গুণ।

প্রশ্ন ২। সরল বাস্তববাদ মতে জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয়র সম্পর্ক ——-।

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ।

প্রশ্ন ৩। ‘ সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত জ্ঞানের ব্যাখ্যা দিতে পারে না।’ কথাটি কি তুমি স্বীকার কর ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, স্বীকার করি।

প্রশ্ন ৪।‌ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রতিষ্ঠাতা কে ?

উত্তরঃ জন লক।

প্রশ্ন ৫। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মতে বস্তুর সকল গুণই ——— নয়।

উত্তরঃ মৌলিক বা মুখ্য।

প্রশ্ন ৬। ‘Essay Concerning human understanding ‘ গ্ৰন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ জন লক।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কোন দার্শনিক সরল বাস্তববাদ শব্দটি প্রথম বার প্রয়োগ করেছেন ?

উত্তরঃ ডুর্যাণ্ট ড্রেক।

প্রশ্ন ২। সরল বাস্তববাদ সত্যতার অনুরূপতাবাদকে সমর্থন করে —- এটা শুদ্ধ কি ?

উত্তরঃ হ্যাঁ , শুদ্ধ।

প্রশ্ন ৩। মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ সমূহের মধ্যে কে পার্থক্য নিরূপণ করেছেন ?

উত্তরঃ জন লক।

প্রশ্ন ৪। সরল বাস্তববাদ মতে, জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয়র সম্পর্ক প্রত্যক্ষ/ পরোক্ষ।

উত্তরঃ প্রত্যক্ষ।

প্রশ্ন ৫। সরল বা লৌকিক বাস্তববাদের রূপ কীরকম ?

উত্তরঃ সরলতম।

প্রশ্ন ৬। বাস্তববাদের মূল উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ বাস্তববাদের মূল উদ্দেশ্য হল জ্ঞানের বিষয় বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ।

প্রশ্ন ৭। লক এর বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বিশ্ব পৃথিবীকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছে ?

উত্তরঃ দুটি।

প্রশ্ন ৮। জন লক এর মতে গুণ কত প্রকার ও কী কী ?

উত্তরঃ জন লক এর মতে, গুণ দুই প্রকার। যেমন —- 

(ক) মুখ্য গুণ।

(খ) গৌণ গুণ।

প্রশ্ন ৯। একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ জন লক।

প্রশ্ন ১০। জন লক এর মতবাদকে কী নামে অভিহিত করা হয় ?

উত্তরঃ স্ববিচার বাস্তববাদ।

প্রশ্ন ১১। জন লক এর বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদকে কী নামে অভিহিত করা হয় ?

উত্তরঃ প্রতীকবাদ।

প্রশ্ন ১৩। জন লক এর গৌণ গুণসমূহ পরিবর্তনশীল কি না ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, পরিবর্তনশীল।

প্রশ্ন ১৪। R.W.Sellers সরল বাস্তববাদকে কী কী নামে অভিহিত করেছেন ?

উত্তরঃ R.W.Sellers সরল বাস্তববাদকে লৌকিক বাস্তববাদ এবং প্রাকৃতিক বাস্তববাদ নামে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন ১৫। ডুর্যাণ্ট ড্রেক কোন বইটিতে সরল বাস্তববাদ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ?

উত্তরঃ ” Imitation to philosophy”  তে সরল বাস্তববাদ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

প্রশ্ন ১৬। বাস্তববাদ/ ভাববাদের মতে মন বা আত্মাই পরম সত্তা।

উত্তরঃ ভাববাদ।

প্রশ্ন ১৭। ” পূর্ব স্থাপিত শৃঙ্খলা” মতবাদের প্রবর্তক কে ?

উত্তরঃ লাইবনিজ।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সরল বাস্তববাদ কী ?

উত্তরঃ যে মতবাদ অনুযায়ী জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল নয়, সেই মতবাদকে সরল বাস্তববাদ বলে।

সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের বিষয়বস্তু এবং প্রকৃতি নির্ণায়ক মতবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী বস্তু এবং গুণ মন বহির্ভূত। আমরা যে বস্তু জানি বা দেখি তা মনের উপর নির্ভরশীল নয়। জগতের সকল বস্তুর মন নিরপেক্ষগুণ আছে এবং বস্তু মন থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। জ্ঞেয় বস্তু তার গুণাবলি সহ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল থাকে। একেই সরল বাস্তববাদ বলে। কারণ, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব বিচার না করে সাধারণ এভাবেই চিন্তা করা হয়। তাদের মতে বস্তুকে সরাসরি জানতে পারি। সেইজন্য এই মতবাদকে সাক্ষাৎ বাস্তববাদ বলেও জানা যায়।

প্রশ্ন ২। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের সংজ্ঞা লেখো।

উত্তরঃ দার্শনিক লক জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর হম্পর্ককে  বিজ্ঞান সম্মতভাবে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন। এই জন্য লক এর বাস্তববাদ তত্ত্বটিকে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বলে।

প্রশ্ন ৩। মুখ্য গুণ কাকে বলে ? অথবা প্রাথমিক গুণগুলি কী কী ?

উত্তরঃ যে সমস্ত গুণ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ অথবা বস্তুনিষ্ঠ ধর্ম, তাদের মুখ্য গুণ বলা হয়। যেমন — বিস্তৃতি, ওজন, বিভাজ্যতা, গতি ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪। গৌণ গুণ কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখো।

উত্তরঃ যে সমস্ত গুণ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ নয় অথবা যে সমস্ত গুণ বস্তুর মনগত ধর্ম, তাদের গৌণ গুণ বলা হয়। যেমন —- বস্তুর রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫। ” সরল বাস্তববাদ ভ্রান্তি বা ভুলের ব্যাখ্যা করতে পারে না।” কেন ?

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ মতে, প্রত্যক্ষ দ্বারা আমরা বাস্তব জগতের সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করি। কাজে প্রত্যক্ষ দ্বারা লব্ধ সকল জ্ঞানই শুদ্ধ বা সত্য হয়। তাহলে প্রত্যক্ষ জ্ঞান ভুল হওয়ার কথা নয়। আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা ভুল ব্যাখ্যার অনেক উদাহরণ পাই । যেমন —- অন্ধকার রাত্রে একটুকরা দড়ি সাপ বলে দেখা, ল্যাম্প পোষ্টকে মানুষ বলে দেখা ইত্যাদি। তাই বলা যায়,সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত বা ভুল প্রত্যক্ষ, অলীক প্রত্যক্ষ,স্বপ্ন ইত্যাদিকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

প্রশ্ন ৬। বাস্তববাদ কী ? তার বিভিন্ন প্রকারগুলি কী কী ?

উত্তরঃ বাস্তববাদ মতে জ্ঞানের বিষয়বস্তু জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয়। যে বস্তুকে জানা যায় তার নিজস্ব জ্ঞান নিরপেক্ষ সত্তা আছে। আমরা কোন বস্তুকে জানলাম বলে বস্তুটির সৃষ্টি হল, এটা ঠিক নয়, বস্তুটির অস্তিত্ব আছে বলে তাকে জানা গেল। আমরা বলতে পারি বস্তুর নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। বাস্তববাদ দুই প্রকার। 

এইগুলি হল —–

(১) সরল বাস্তববাদ।

(২) বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ।

প্রশ্ন ৭। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের দুটি দোষ বা অসুবিধা বা সমালোচনা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের দুটি দোষ বা অসুবিধা হল—–

(ক) জন লক এর মতে,বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব অজ্ঞাত এবং অজ্ঞেয়। আমরা দেখতে পাই যে, লক জ্ঞানের সীমাকে অনেক সংকোচিত করেছেন এবং নিশ্চিত জ্ঞানে প্রবেশের দরজাটি একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন।

(খ) লক এর মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণগুলির পার্থক্যের বিষয়টি সন্তোষজনক নয়। বার্কিল এই মন্তব্য করেছেন গৌণ গুণ গুলির মত মুখ্য গুণ গুলিও মন নির্ভর।

প্রশ্ন ৮। সরল বাস্তববাদের দুটি দোষ বা কুফল উল্লেখ করো।

অথবা, সরল বাস্তববাদের দুটি সমালোচনা লেখো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের দুটি দোষ বা কফুল হল—

(ক) সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

(খ) প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ায় সরল বাস্তববাদে জ্ঞানের সার্বিকতা লুপ্ত হয়ে যায়। গুণের দিক থেকে ব্যক্তি বিশেষের অভিজ্ঞতা অপেক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ৯। লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বিশ্ব পৃথিবীকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছে এবং কী কী ?

উত্তরঃ জন লক এর বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বিশ্ব পৃথিবীকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। 

এইগুলি হল —–

(ক) ধারণার আত্মনিষ্ঠ জগৎ।

(খ) বাহ্য পৃথিবীর বস্তুনিষ্ঠ জগৎ।

প্রশ্ন ১০। সরল বাস্তববাদ ও বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ ও বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য হল——

(ক) সরল বাস্তববাদ মতে, বাহ্য জগতের মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে। জ্ঞাতা প্রত্যক্ষভাবে তাকে জানতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মতে বস্তুর মন নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে বটে, বস্তুর জ্ঞান ধারণার মাধ্যমে পাওয়া যায়।

(খ) সরল বাস্তববাদ মতে , জ্ঞাতা যখন বাহ্য জগত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে তখন বাহ্য জগতের বস্তুগুলোর সঙ্গে তাদের যাবতীয় গুণগুলোকেই প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বস্তুর দুই ধরণের গুণের কথা বলে। যেমন — মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণগুলোর স্বাধীন, মন- নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে, কিন্তু গৌণ গুলোর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর।

প্রশ্ন ১১। সেই মতবাদের নাম লেখো,যার মতে বাহ্য জগতকে প্রত্যক্ষভাবে জানা যায়। মতবাদটির সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ।

যে মতবাদ অনুসারে বাহ্য জগতের মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে এবং সকলগুণ সহ বাহ্য জগৎ যে ভাবে আছে, সে ভাবেই তার সম্পর্কে আমরা প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করতে পারি, তাকে সরল বাস্তববাদ বলে।

প্রশ্ন ১২। যে মতবাদ অনুসারে বস্তুর সকল গুণ‌‌‌ বস্তুনিষ্ঠ নয়, তার নাম উল্লেখ করো এবং মতবাদটির সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ।

দার্শনিক লক জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর সম্পর্ককে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন। এই জন্য লক এর বাস্তববাদ তত্ত্বটিকে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বলে।

প্রশ্ন ১৩।  আত্মবাদ কী ? আত্মবাদের সঙ্গে জড়িত তত্ত্বটির নাম লেখো।

উত্তরঃ আত্মবাদ এমন একটি তত্ত্ব যা বিশ্বাস করে যে শুধুমাত্র ব্যক্তির আত্মাই অস্তিত্বশীল । আত্মবাদের সঙ্গে জড়িত তত্ত্বের নাম আত্মগত ভাববাদ।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১।  জন লক এর মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ দার্শনিক লক এর মতে মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —-

(ক) মুখ্য গুণগুলি বস্তুর ভিতরে অন্তর্নিহিত ধর্ম হিসাবে থাকে। কিন্তু গৌণ গুণগুলি বস্তুর মৌলিক গুণ নয়, কারণ,তারা জ্ঞাতার মনের উপরে নির্ভরশীল।

(খ) স্থানও কালের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েও মুখ্য গুণগুলি একই থাকে। যেমন —-বস্তুর আকৃতি, বিস্তৃতি ইত্যাদি সকল অবস্থায় অপরিবর্তনীয় থাকে। কিন্তু গৌণ গুণগুলি মানুষে মানুষে,স্থান থেকে স্থানান্তরে পরিবর্তন হয়। যেমন —- বস্তুর স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়।

(গ) লক এর মতে, বাহ্য বস্তুগুলি মুখ্যগুণের প্রধান আশ্রয় বা আধার। অন্যদিকে, বাহ্যবস্তু এবং জ্ঞাতার মন উভয়ই গৌণ গুণের আধার।

(ঘ) মুখ্য গুণগুলি বস্তুর অপরিবর্তনীয় গুণ হওয়াতে প্রত্যক্ষভাবে মনে ধারণা সৃষ্টি করে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে গৌণ গুণগুলি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ২। সরল বাস্তববাদের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

উত্তরঃ যে মতবাদ অনুযায়ী জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল নয়, সেই মতবাদকে সরল বাস্তববাদ বলে।

সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের বিষয়বস্তু এবং প্রকৃতি নির্ণায়ক মতবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী বস্তু এবং গুণ মন বহির্ভূত। আমরা যে বস্তু জানি বা দেখি তা মনের উপর নির্ভরশীল নয়। জগতের সকল বস্তুর মন নিরপেক্ষগুণ আছে এবং বস্তু মন থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। জ্ঞেয় বস্তু তার গুণাবলি সহ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল থাকে। একেই সরল বাস্তববাদ বলে। কারণ, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব বিচার না করে সাধারণ এভাবেই চিন্তা করা হয়। তাদের মতে বস্তুকে সরাসরি জানতে পারি। সেইজন্য এই মতবাদকে সাক্ষাৎ বাস্তববাদ বলেও জানা যায়।

প্রশ্ন ৩। ‘ মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণসমূহের মধ্যে পার্থক্য অমনস্তাত্বিক ।’ তুমি কি বিশ্বাস করো। তোমার দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থনে কারণ দেখাও।

উত্তরঃ লক তার বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদে মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণ সমূহের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করেছেন। কিন্তু এই পার্থক্যগুলি যুক্তি সম্মত নয়।

যেগুলো গুণ প্রত্যেক্ষের দ্বারা স্বতন্ত্র এবং বস্তুগত থাকে, তাকেই মুখ্য গুণ বা মৌলিক গুণ বলে। উদাহরণ হিসাবে বস্তুর আকার, গঠন, ওজন ইত্যাদি মুখ্য গুণ।

অন্যথায় , যেগুলো গুণ, প্রত্যেক্ষের দ্বারা স্বতন্ত্র নয় এবং কেবল আমরা মনের ‘ ধারণা ‘ বা মনগত ধর্ম হিসাবে থাকে, তাকে গৌণ গুণ বলে। উদাহরণ হিসাবে রং, গন্ধ , স্বাদ ইত্যাদি গৌণ গুণ।

ভাববাদী দার্শনিক বার্কলি বলেন যে, গৌণ গুণ যেভাবে মনের ওপর নির্ভরশীল ঠিক একই ভাবে মুখ্য গুণগুলো ব্যক্তির মনের ওপরে নির্ভরশীল।

উদাহরণ  হিসাবে একটি বস্তুর বিস্তৃতি,দৈর্ঘতা বা ওজন ইত্যাদিগুলো একজন মানুষের কারণে বেশি হলেও অন্য একজনের ক্ষেত্রে কম হতে পারে। কাজেই লকের মতে, গৌণ গুণগুলি মনস্তাত্বিক নয়।

উপরোক্ত কারণের ভিত্তিতে আমি মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের সমূহের মধ্যে পার্থক্য অমনস্তাত্বিক বলে সমর্থন করি।

প্রশ্ন ৪। দার্শনিক লক এর প্রতীকাত্মক বা বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রধান মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ জন লক এর প্রতীকাত্মক বাস্তববাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) বাস্তববাদের অন্যান্য তথ্যের মতে, বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদও বলে যে, জ্ঞেয় বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে।

(খ) আমরা কোন বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না। বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতিকল্পকে দেখতে পাই মাত্র।

(গ) জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন এক প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া দ্বারা বস্তুর প্রকৃতি প্রভাবিত হয় না, কেবল তার প্রতিরূপ বা প্রতিকল্প প্রভাবিত হয়।

(ঘ) বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ মুখ্য গুণগুলি দ্বারাই প্রকাশিত হয়, কারণ, এগুলি বস্তুর অপরিবর্তনীয় এবং বস্তুগত ধর্ম।

প্রশ্ন ৫। সরল বাস্তববাদের সাধারণ মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) জ্ঞানের বিষয়বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব,কেউ তাকে জানবে কি জানবে না, তার উপরে নির্ভর করে না।

(খ) আমাদের মনের বাইরে একটি বহিজগৎ আছে।

(গ) বাহ্য জগত যে ভাবে আছে, আমরা তাকে সেইভাবে প্রত্যক্ষ করি।

(ঘ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের সত্যতা সম্পর্কিত অনুরূপতা ভাবকে সমর্থন করে।

প্রশ্ন ৬। সরল বাস্তববাদের চারটি দোষ বা সমালোচনা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের চারটি সমালোচনা বা দোষ হল নিম্নরূপ—–

(ক) সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

(খ) প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ায় সরল বাস্তববাদে জ্ঞানের সার্বিকতা লুপ্ত হয়ে যায়। গুণের দিক থেকে ব্যক্তি বিশেষের অভিজ্ঞতা অপেক্ষিত হয়।

(গ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের আত্মনিষ্ঠতাকে অস্বীকার করে।

(ঘ) সরল বাস্তববাদের মতে , বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা একেবারেই সঠিক নয়। বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের মনে ধারণা বা প্রত্যয়ের সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ৭। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের চারটি দোষ বা সমালোচনা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের চারটি দোষ বা সমালোচনা হল নিম্নরূপ——

(ক) জন লক এর মতে, বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব অজ্ঞাত এবং অজ্ঞেয়। আমরা দেখতে পাই যে লক জ্ঞানের সীমাকে অনেক সংকোচিত করেছেন এবং নিশ্চিত জ্ঞানে প্রবেশের দরজাটি একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন।

(খ) লক এর মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণগুলির পার্থক্যের বিষয়টি সন্তোষজনক নয়। বার্কলি এই মন্তব্য করেছেন গৌণ গুণগুলির মত মুখ্য গুণগুলির মন নির্ভর।

(গ) লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বিশ্ব পৃথিবীকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে — ধারণার আত্মনিষ্ঠ জগৎ এবং বাহ্য পৃথিবীর বস্তুনিষ্ঠ জগৎ।

(ঘ) ভাববাদের প্রবণতা লকের দর্শনে বাস্তববাদের পতন ঘটিয়েছে এই কারণে যে, গৌণ গুণগুলিকে  তিনি মন নির্ভর বলেছেন।

প্রশ্ন ৮। সরল বাস্তববাদ এবং বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ ও বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —–

(ক) সরল বাস্তববাদ মতে, বাহ্য জগতের মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে। জ্ঞাতা প্রত্যক্ষভাবে তাকে জানতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মতে, বস্তুর মন নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে বটে, বস্তুর জ্ঞান ধারণার মধ্যে পাওয়া যায়।

(খ) সরল বাস্তববাদ মতে,জ্ঞাতা যখন বাহ্য জগতের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে তখন বাহ্য জগতের বস্তুগুলোর সঙ্গে তাদের যাবতীয় গুণগুলোকেই প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বস্তুর দুই ধরণের গুণের কথা বলে —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণগুলোর স্বাধীন, মন-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে, কিন্তু গৌণ গুণগুলোর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর।

প্রশ্ন ৯। বাস্তববাদের সংজ্ঞা হিসাবে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের সমালোচনামূলক আলোচনা করো।

উত্তরঃ দার্শনিক জন লক সরল বাস্তববাদের দোষ ক্রটির সমালোচনা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তন করেছিলেন। সরল বাস্তববাদের প্রত্যক্ষের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাস্তববাদের প্রকার হিসাবে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মনের বাইরে একটি স্বতন্ত্র বস্তুজগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে। সরল বাস্তববাদের মতে, চেতনা আলোক রশ্মির মতো। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চেতনা বাহ্য জগতের বস্তুসমূহের উপর আলোকপাত করে। বাহ্য জগতের বস্তু যেমন, চেতনা তাকে সেই ভাবেই প্রকাশ করে।

কিন্তু লক বলেন, মন অনেকটা ক্যামেরার ফিলমের মতো। ক্যামেরার ফিলমে যেমন বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে, তেমনি মনের পটেও বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে। লকের বাস্তববাদে সরল বাস্তববাদের মতোই মন ও বাহ্য বস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় বাহ্য বস্তুর মধ্যে অনেক গুণ দেখতে পাই। যেমন —- আকার, ওজন, বর্ণ, কাঠিন্য ইত্যাদি। এই গুণগুলি কে লক দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন—– মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। বস্তুর পরিবর্তনের সঙ্গে যে গুণ বস্তুর মধ্যে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত সেগুলি মুখ্য গুণ। যেমন — আকার , ওজন, কাঠিন্য। আর যেগুলি বস্তু নির্ভর নয়, মানুষের মন নির্ভর, সেগুলি গৌণ গুণ। যেমন — স্বাদ , বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি।

লক এর মতে, কোন বস্তু সম্পর্কে মানুষের যখন ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য অভিজ্ঞতা হয়, তখন তার মুখ্য গুণগুলির সম্পর্কে আমাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়। এই সব মুখ্যগুণের আধার হিসাবে অস্তিত্ব থাকলেও মন প্রত্যক্ষভাবে গুণগুলিকে জানতে পারে। গুণের আধার হিসাবে যে দ্রব্য, তা অজ্ঞেয় এবং অজ্ঞাত।

দার্শনিক লক এর মতে,মন বাইরের কোন কিছুকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না। নিজের ধারণাগুলিকেই প্রত্যক্ষ করতে পারে। ধারণাগুলি বস্তুর প্রতীক । আমরা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মনের ধারণাগুলিকেই জানতে পারি। বস্তু সম্পর্কে আমাদের পরোক্ষ জ্ঞান হয় মাত্র। 

এহ জ্ঞানের সত্যতা জানা যাবে, যখন ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল থাকে। ধারণাগুলি বস্তুর হুবহু প্রতীক বা প্রতিলিপি হয়। এই জন্যই বাস্তববাদকে প্রতীকবাদ বলে। লকের এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বা স্ববিচার বাস্তববাদ বলা হয়।

বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) বাস্তববাদের অন্যান্য তথ্যের মতে, বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদও বলে যে, জ্ঞেয় বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে।

(খ) আমরা কোন বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না। বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতিকল্পকে দেখতে পাই মাত্র।

(গ) জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন এক প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া দ্বারা বস্তুর প্রকৃতি প্রভাবিত হয় না, কেবল তার প্রতিরূপ বা প্রতিকল্প প্রভাবিত হয়।

(ঘ) বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ মুখ্য গুণগুলি দ্বারাই প্রকাশিত হয়, কারণ, এগুলি বস্তুর অপরিবর্তনীয় এবং বস্তুগত ধর্ম।

প্রশ্ন ১০। দার্শনিক লক এর প্রতিনিধিত্ববাদ সম্পর্কে টীকা লেখো।

উত্তরঃ দার্শনিক জন লক সরল বাস্তববাদের দোষ ক্রটির সমালোচনা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তন করেছিলেন। সরল বাস্তববাদের প্রত্যক্ষের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাস্তববাদের প্রকার হিসাবে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মনের বাইরে একটি স্বতন্ত্র বস্তুজগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে। সরল বাস্তববাদের মতে, চেতনা আলোক রশ্মির মতো। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চেতনা বাহ্য জগতের বস্তুসমূহের উপর আলোকপাত করে। বাহ্য জগতের বস্তু যেমন, চেতনা তাকে সেই ভাবেই প্রকাশ করে।

কিন্তু লক বলেন, মন অনেকটা ক্যামেরার ফিলমের মতো। ক্যামেরার ফিলমে যেমন বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে, তেমনি মনের পটেও বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে। লকের বাস্তববাদে সরল বাস্তববাদের মতোই মন ও বাহ্য বস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় বাহ্য বস্তুর মধ্যে অনেক গুণ দেখতে পাই। যেমন —- আকার, ওজন, বর্ণ, কাঠিন্য ইত্যাদি। এই গুণগুলি কে লক দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন—– মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। বস্তুর পরিবর্তনের সঙ্গে যে গুণ বস্তুর মধ্যে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত সেগুলি মুখ্য গুণ। যেমন — আকার , ওজন, কাঠিন্য। আর যেগুলি বস্তু নির্ভর নয়, মানুষের মন নির্ভর, সেগুলি গৌণ গুণ। যেমন — স্বাদ , বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি।

লক এর মতে, কোন বস্তু সম্পর্কে মানুষের যখন ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য অভিজ্ঞতা হয়, তখন তার মুখ্য গুণগুলির সম্পর্কে আমাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়। এই সব মুখ্যগুণের আধার হিসাবে অস্তিত্ব থাকলেও মন প্রত্যক্ষভাবে গুণগুলিকে জানতে পারে। গুণের আধার হিসাবে যে দ্রব্য, তা অজ্ঞেয় এবং অজ্ঞাত।

দার্শনিক লক এর মতে,মন বাইরের কোন কিছুকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না। নিজের ধারণাগুলিকেই প্রত্যক্ষ করতে পারে। ধারণাগুলি বস্তুর প্রতীক । আমরা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মনের ধারণাগুলিকেই জানতে পারি। বস্তু সম্পর্কে আমাদের পরোক্ষ জ্ঞান হয় মাত্র। 

এহ জ্ঞানের সত্যতা জানা যাবে, যখন ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল থাকে। ধারণাগুলি বস্তুর হুবহু প্রতীক বা প্রতিলিপি হয়। এই জন্যই বাস্তববাদকে প্রতীকবাদ বলে। লকের এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বা স্ববিচার বাস্তববাদ বলা হয়।

লক এর এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বা সবিচার বাস্তববাদ বলে। এই মতবাদ প্রতিলিপি হিসাবে বা প্রতীকী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাই এই মতবাদকে প্রতীকবাদ বা প্রতিনিধিত্ব বাস্তববাদ বলা হয়।

প্রশ্ন ১১। বাস্তববাদের সংজ্ঞা হিসাবে সরল বাস্তববাদের সমালোচনামূলক আলোচনা করো।

উত্তরঃ বাস্তববাদের সরলতম রূপ হল, সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ। বাস্তববাদের মুখ্য বক্তব্য হল জ্ঞেয় বস্তুর জ্ঞাতার মনের বাইরে একটি স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। সরল বাস্তববাদের মতে, আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে বাহ্য জগতকে দেখতে পাই, তার মন নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। বাহ্যজগতে নানা প্রকার বস্তু আছে এবং সেই সব বস্তুর অস্তিত্ব স্বাধীন, আমাদের জানা না বা জানার ওপর নির্ভর করে না। এই সমস্ত জাগতিক বস্তুর কতকগুলি গুণ আছে। বস্তু ও তার গুণ আমাদের মন নিরপেক্ষ। বাহ্যজগতের অস্তিত্ব যেমন আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি, বস্তু ও তাদের গুণগুলিকেও আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। এই গুণগুলো হল রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, আকৃতি ইত্যাদি। আয়তন, আকৃতি, ওজন ইত্যাদি মুখ্য গুণ এবং বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি গৌণ গুণ। এই সমস্ত গুণই আমাদের প্রত্যক্ষ নির্ভর বা ধারণা মাত্র নয়। বাহ্যজগতকে আমরা ইন্দ্রিয় দিয়ে সরাসরি প্রত্যক্ষ করি, এবং বাহ্য বস্তুগুলো যেমন, তাদের সেভাবেই প্রত্যক্ষ করি। এই মতবাদকে লোকায়ত বা সাধারণ মানুষের বাস্তববাদ বলা হয়।

সরল বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) জ্ঞানের বিষয়বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব,কেউ তাকে জানবে কি জানবে না, তার উপরে নির্ভর করে না।

(খ) আমাদের মনের বাইরে একটি বহিজগৎ আছে।

(গ) বাহ্য জগত যে ভাবে আছে, আমরা তাকে সেইভাবে প্রত্যক্ষ করি।

(ঘ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের সত্যতা সম্পর্কিত অনুরূপতা ভাবকে সমর্থন করে।

সরল বাস্তববাদের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলো —-

(ক) সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

(খ) প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ায় সরল বাস্তববাদে জ্ঞানের সার্বিকতা লুপ্ত হয়ে যায়। গুণের দিক থেকে ব্যক্তি বিশেষের অভিজ্ঞতা অপেক্ষিত হয়।

(গ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের আত্মনিষ্ঠতাকে অস্বীকার করে।

(ঘ) সরল বাস্তববাদের মতে , বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা একেবারেই সঠিক নয়। বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের মনে ধারণা বা প্রত্যয়ের সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ১২। সরল বাস্তববাদের চারটি মুল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) জ্ঞানের বিষয়বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব,কেউ তাকে জানবে কি জানবে না, তার উপরে নির্ভর করে না।

(খ) আমাদের মনের বাইরে একটি বহিজগৎ আছে।

(গ) বাহ্য জগত যে ভাবে আছে, আমরা তাকে সেইভাবে প্রত্যক্ষ করি।

(ঘ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের সত্যতা সম্পর্কিত অনুরূপতা ভাবকে সমর্থন করে।

প্রশ্ন ১৩। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের দুটি বৈশিষ্ট্য এবং দুটি সমালোচনা লেখো।

উত্তরঃ জন লক এর প্রতীকাত্মক বাস্তববাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) বাস্তববাদের অন্যান্য তথ্যের মতে, বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদও বলে যে, জ্ঞেয় বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে।

(খ) আমরা কোন বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না। বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতিকল্পকে দেখতে পাই মাত্র।

(গ) জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন এক প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া দ্বারা বস্তুর প্রকৃতি প্রভাবিত হয় না, কেবল তার প্রতিরূপ বা প্রতিকল্প প্রভাবিত হয়।

(ঘ) বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ মুখ্য গুণগুলি দ্বারাই প্রকাশিত হয়, কারণ, এগুলি বস্তুর অপরিবর্তনীয় এবং বস্তুগত ধর্ম।

বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের দুটি দোষ বা অসুবিধা হল—–

(ক) জন লক এর মতে,বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব অজ্ঞাত এবং অজ্ঞেয়। আমরা দেখতে পাই যে, লক জ্ঞানের সীমাকে অনেক সংকোচিত করেছেন এবং নিশ্চিত জ্ঞানে প্রবেশের দরজাটি একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন।

(খ) লক এর মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণগুলির পার্থক্যের বিষয়টি সন্তোষজনক নয়। বার্কিল এই মন্তব্য করেছেন গৌণ গুণ গুলির মত মুখ্য গুণ গুলিও মন নির্ভর।

প্রশ্ন ১৪। সরল বাস্তববাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য এবং তিনটি সমালোচনা লেখো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) জ্ঞানের বিষয়বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব,কেউ তাকে জানবে কি জানবে না, তার উপরে নির্ভর করে না।

(খ) আমাদের মনের বাইরে একটি বহিজগৎ আছে।

(গ) বাহ্য জগত যে ভাবে আছে, আমরা তাকে সেইভাবে প্রত্যক্ষ করি।

(ঘ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের সত্যতা সম্পর্কিত অনুরূপতা ভাবকে সমর্থন করে।

সরল বাস্তববাদের চারটি সমালোচনা বা দোষ হল নিম্নরূপ—–

(ক) সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

(খ) প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ায় সরল বাস্তববাদে জ্ঞানের সার্বিকতা লুপ্ত হয়ে যায়। গুণের দিক থেকে ব্যক্তি বিশেষের অভিজ্ঞতা অপেক্ষিত হয়।

(গ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের আত্মনিষ্ঠতাকে অস্বীকার করে।

(ঘ) সরল বাস্তববাদের মতে , বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা একেবারেই সঠিক নয়। বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের মনে ধারণা বা প্রত্যয়ের সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ১৫। কোনটি মতবাদ বস্তুর মুখ্য গুণ এবং গৌণ গুণ বিভক্ত করেছে ? দুটি সমালোচনা সহ এই মতবাদ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ জন লক এর বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণকে বিভক্ত করেছে।

দার্শনিক জন লক সরল বাস্তববাদের দোষ ক্রটির সমালোচনা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তন করেছিলেন। সরল বাস্তববাদের প্রত্যক্ষের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাস্তববাদের প্রকার হিসাবে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মনের বাইরে একটি স্বতন্ত্র বস্তুজগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে। সরল বাস্তববাদের মতে, চেতনা আলোক রশ্মির মতো। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চেতনা বাহ্য জগতের বস্তুসমূহের উপর আলোকপাত করে। বাহ্য জগতের বস্তু যেমন, চেতনা তাকে সেই ভাবেই প্রকাশ করে।

কিন্তু লক বলেন, মন অনেকটা ক্যামেরার ফিলমের মতো। ক্যামেরার ফিলমে যেমন বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে, তেমনি মনের পটেও বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে। লকের বাস্তববাদে সরল বাস্তববাদের মতোই মন ও বাহ্য বস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় বাহ্য বস্তুর মধ্যে অনেক গুণ দেখতে পাই। যেমন —- আকার, ওজন, বর্ণ, কাঠিন্য ইত্যাদি। এই গুণগুলি কে লক দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন—– মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। বস্তুর পরিবর্তনের সঙ্গে যে গুণ বস্তুর মধ্যে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত সেগুলি মুখ্য গুণ। যেমন — আকার , ওজন, কাঠিন্য। আর যেগুলি বস্তু নির্ভর নয়, মানুষের মন নির্ভর, সেগুলি গৌণ গুণ। যেমন — স্বাদ , বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি।

লক এর মতে, কোন বস্তু সম্পর্কে মানুষের যখন ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য অভিজ্ঞতা হয়, তখন তার মুখ্য গুণগুলির সম্পর্কে আমাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়। এই সব মুখ্যগুণের আধার হিসাবে অস্তিত্ব থাকলেও মন প্রত্যক্ষভাবে গুণগুলিকে জানতে পারে। গুণের আধার হিসাবে যে দ্রব্য, তা অজ্ঞেয় এবং অজ্ঞাত।

দার্শনিক লক এর মতে,মন বাইরের কোন কিছুকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না। নিজের ধারণাগুলিকেই প্রত্যক্ষ করতে পারে। ধারণাগুলি বস্তুর প্রতীক । আমরা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মনের ধারণাগুলিকেই জানতে পারি। বস্তু সম্পর্কে আমাদের পরোক্ষ জ্ঞান হয় মাত্র। 

এহ জ্ঞানের সত্যতা জানা যাবে, যখন ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল থাকে। ধারণাগুলি বস্তুর হুবহু প্রতীক বা প্রতিলিপি হয়। এই জন্যই বাস্তববাদকে প্রতীকবাদ বলে। লকের এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বা স্ববিচার বাস্তববাদ বলা হয়।

প্রশ্ন ১৬। সরল বাস্তববাদকে কি তুমি সমর্থন করো ? তোমার মতের সমর্থেন যুক্তি প্রদান করো।

উত্তরঃ না, সরল বাস্তববাদকে আমি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করিনা। তার কারণ হলো নিম্নরূপ —- 

(ক) সরল বাস্তববাদ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

(খ) প্রত্যক্ষ নির্ভর হওয়ায় সরল বাস্তববাদে জ্ঞানের সার্বিকতা লুপ্ত হয়ে যায়। গুণের দিক থেকে ব্যক্তি বিশেষের অভিজ্ঞতা অপেক্ষিত হয়।

(গ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের আত্মনিষ্ঠতাকে অস্বীকার করে।

(ঘ) সরল বাস্তববাদের মতে , বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা একেবারেই সঠিক নয়। বাহ্য বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের মনে ধারণা বা প্রত্যয়ের সৃষ্টি করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলির উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সরল বাস্তববাদ কী? সরল বাস্তববাদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ যে মতবাদ অনুযায়ী জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল নয়, সেই মতবাদকে সরল বাস্তববাদ বলে।

সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের বিষয়বস্তু এবং প্রকৃতি নির্ণায়ক মতবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী বস্তু এবং গুণ মন বহির্ভূত। আমরা যে বস্তু জানি বা দেখি তা মনের উপর নির্ভরশীল নয়। জগতের সকল বস্তুর মন নিরপেক্ষগুণ আছে এবং বস্তু মন থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। জ্ঞেয় বস্তু তার গুণাবলি সহ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল থাকে। একেই সরল বাস্তববাদ বলে। কারণ, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব বিচার না করে সাধারণ এভাবেই চিন্তা করা হয়। তাদের মতে বস্তুকে সরাসরি জানতে পারি। সেইজন্য এই মতবাদকে সাক্ষাৎ বাস্তববাদ বলেও জানা যায়।

সরল বাস্তববাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ—–

(ক) জ্ঞানের বিষয়বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ স্বাধীন অস্তিত্ব আছে। বাহ্য বস্তুর অস্তিত্ব,কেউ তাকে জানবে কি জানবে না, তার উপরে নির্ভর করে না।

(খ) আমাদের মনের বাইরে একটি বহিজগৎ আছে।

(গ) বাহ্য জগত যে ভাবে আছে, আমরা তাকে সেইভাবে প্রত্যক্ষ করি।

(ঘ) সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের সত্যতা সম্পর্কিত অনুরূপতা ভাবকে সমর্থন করে।

প্রশ্ন ২। বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ কী? তার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ দার্শনিক লক জ্ঞাতা এবং জ্ঞেয় বস্তুর হম্পর্ককে  বিজ্ঞান সম্মতভাবে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন। এই জন্য লক এর বাস্তববাদ তত্ত্বটিকে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বলে।

জন লক এর প্রতীকাত্মক বাস্তববাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল—–

(ক) বাস্তববাদের অন্যান্য তথ্যের মতে, বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদও বলে যে, জ্ঞেয় বস্তুর জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে।

(খ) আমরা কোন বস্তুকে প্রত্যক্ষ করি না। বস্তুর প্রতিরূপ বা প্রতিকল্পকে দেখতে পাই মাত্র।

(গ) জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন এক প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়া দ্বারা বস্তুর প্রকৃতি প্রভাবিত হয় না, কেবল তার প্রতিরূপ বা প্রতিকল্প প্রভাবিত হয়।

(ঘ) বস্তুর প্রকৃত স্বরূপ মুখ্য গুণগুলি দ্বারাই প্রকাশিত হয়, কারণ, এগুলি বস্তুর অপরিবর্তনীয় এবং বস্তুগত ধর্ম।

প্রশ্ন ৩। মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের পার্থক্য নির্দেশ করো।

উত্তরঃ দার্শনিক লক এর মতে মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল নিম্নরূপ —-

(ক) মুখ্য গুণগুলি বস্তুর ভিতরে অন্তর্নিহিত ধর্ম হিসাবে থাকে। কিন্তু গৌণ গুণগুলি বস্তুর মৌলিক গুণ নয়, কারণ,তারা জ্ঞাতার মনের উপরে নির্ভরশীল।

(খ) স্থানও কালের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েও মুখ্য গুণগুলি একই থাকে। যেমন —-বস্তুর আকৃতি, বিস্তৃতি ইত্যাদি সকল অবস্থায় অপরিবর্তনীয় থাকে। কিন্তু গৌণ গুণগুলি মানুষে মানুষে,স্থান থেকে স্থানান্তরে পরিবর্তন হয়। যেমন —- বস্তুর স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়।

(গ) লক এর মতে, বাহ্য বস্তুগুলি মুখ্যগুণের প্রধান আশ্রয় বা আধার। অন্যদিকে, বাহ্যবস্তু এবং জ্ঞাতার মন উভয়ই গৌণ গুণের আধার।

(ঘ) মুখ্য গুণগুলি বস্তুর অপরিবর্তনীয় গুণ হওয়াতে প্রত্যক্ষভাবে মনে ধারণা সৃষ্টি করে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে গৌণ গুণগুলি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ৪। লকের বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ একটি সন্তোষজনক মতবাদ কি যুক্তি দাও।

উত্তরঃ দার্শনিক জন লক সরল বাস্তববাদের দোষ ক্রটির সমালোচনা করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের প্রবর্তন করেছিলেন। সরল বাস্তববাদের প্রত্যক্ষের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাস্তববাদের প্রকার হিসাবে বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মনের বাইরে একটি স্বতন্ত্র বস্তুজগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে। সরল বাস্তববাদের মতে, চেতনা আলোক রশ্মির মতো। ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চেতনা বাহ্য জগতের বস্তুসমূহের উপর আলোকপাত করে। বাহ্য জগতের বস্তু যেমন, চেতনা তাকে সেই ভাবেই প্রকাশ করে।

কিন্তু লক বলেন, মন অনেকটা ক্যামেরার ফিলমের মতো। ক্যামেরার ফিলমে যেমন বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে, তেমনি মনের পটেও বাহ্য বস্তুর ছবি পড়ে। লকের বাস্তববাদে সরল বাস্তববাদের মতোই মন ও বাহ্য বস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় বাহ্য বস্তুর মধ্যে অনেক গুণ দেখতে পাই। যেমন —- আকার, ওজন, বর্ণ, কাঠিন্য ইত্যাদি। এই গুণগুলি কে লক দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন—– মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। বস্তুর পরিবর্তনের সঙ্গে যে গুণ বস্তুর মধ্যে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত সেগুলি মুখ্য গুণ। যেমন — আকার , ওজন, কাঠিন্য। আর যেগুলি বস্তু নির্ভর নয়, মানুষের মন নির্ভর, সেগুলি গৌণ গুণ। যেমন — স্বাদ , বর্ণ, গন্ধ ইত্যাদি।

লক এর মতে, কোন বস্তু সম্পর্কে মানুষের যখন ইন্দ্রিয় গ্ৰাহ্য অভিজ্ঞতা হয়, তখন তার মুখ্য গুণগুলির সম্পর্কে আমাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়। এই সব মুখ্যগুণের আধার হিসাবে অস্তিত্ব থাকলেও মন প্রত্যক্ষভাবে গুণগুলিকে জানতে পারে। গুণের আধার হিসাবে যে দ্রব্য, তা অজ্ঞেয় এবং অজ্ঞাত।

দার্শনিক লক এর মতে,মন বাইরের কোন কিছুকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না। নিজের ধারণাগুলিকেই প্রত্যক্ষ করতে পারে। ধারণাগুলি বস্তুর প্রতীক । আমরা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের মনের ধারণাগুলিকেই জানতে পারি। বস্তু সম্পর্কে আমাদের পরোক্ষ জ্ঞান হয় মাত্র। 

এহ জ্ঞানের সত্যতা জানা যাবে, যখন ধারণার সঙ্গে বস্তুর মিল থাকে। ধারণাগুলি বস্তুর হুবহু প্রতীক বা প্রতিলিপি হয়। এই জন্যই বাস্তববাদকে প্রতীকবাদ বলে। লকের এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বা স্ববিচার বাস্তববাদ বলা হয়।

প্রশ্ন ৫। সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো —

(ক) সরল বা লৌকিক বাস্তববাদ।

উত্তরঃ যে মতবাদ অনুযায়ী জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মনের ওপর নির্ভরশীল নয়, সেই মতবাদকে সরল বাস্তববাদ বলে।

সরল বাস্তববাদ জ্ঞানের বিষয়বস্তু এবং প্রকৃতি নির্ণায়ক মতবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী বস্তু এবং গুণ মন বহির্ভূত। আমরা যে বস্তু জানি বা দেখি তা মনের উপর নির্ভরশীল নয়। জগতের সকল বস্তুর মন নিরপেক্ষগুণ আছে এবং বস্তু মন থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। জ্ঞেয় বস্তু তার গুণাবলি সহ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষভাবে অস্তিত্বশীল থাকে। একেই সরল বাস্তববাদ বলে। কারণ, বাহ্যবস্তুর অস্তিত্ব বিচার না করে সাধারণ এভাবেই চিন্তা করা হয়। তাদের মতে বস্তুকে সরাসরি জানতে পারি। সেইজন্য এই মতবাদকে সাক্ষাৎ বাস্তববাদ বলেও জানা যায়।

(খ) মুখ্য গুণ।

উত্তরঃ যে সমস্ত গুণ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ অথবা বস্তুনিষ্ঠ ধর্ম, তাদের মুখ্য গুণ বলা হয়। যেমন — বিস্তৃতি, ওজন, বিভাজ্যতা, গতি ইত্যাদি।

(গ) গৌণ গুণ।

উত্তরঃ যে সমস্ত গুণ জ্ঞাতার মন নিরপেক্ষ নয় অথবা যে সমস্ত গুণ বস্তুর মনগত ধর্ম, তাদের গৌণ গুণ বলা হয়। যেমন —- বস্তুর রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি।

(ঘ) জন লক এর প্রতীকী বাস্তববাদ।

উত্তরঃ লক এর এই মতবাদকে বৈজ্ঞানিক বা সবিচার বাস্তববাদ বলে। এই মতবাদ প্রতিলিপি হিসাবে বা প্রতীকী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাই এই মতবাদকে প্রতীকবাদ বা প্রতিনিধিত্ব বাস্তববাদ বলা হয়।

প্রশ্ন ৬। সরল বাস্তববাদ ও বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।

উত্তরঃ সরল বাস্তববাদ ও বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল —–

(ক) সরল বাস্তববাদ মতে, বাহ্য জগতের মন নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে। জ্ঞাতা প্রত্যক্ষভাবে তাকে জানতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ মতে, বস্তুর মন নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে বটে, বস্তুর জ্ঞান ধারণার মধ্যে পাওয়া যায়।

(খ) সরল বাস্তববাদ মতে,জ্ঞাতা যখন বাহ্য জগতের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে তখন বাহ্য জগতের বস্তুগুলোর সঙ্গে তাদের যাবতীয় গুণগুলোকেই প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ বস্তুর দুই ধরণের গুণের কথা বলে —- মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণ। মুখ্য গুণগুলোর স্বাধীন, মন-নিরপেক্ষ অস্তিত্ব আছে, কিন্তু গৌণ গুণগুলোর অস্তিত্ব জ্ঞাতার মন নির্ভর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top