Class 12 Economics Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990)

Class 12 Economics Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990) | Class 12 Economics Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter AHSEC Board HS 2nd Year Economics Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990) Notes and select needs one.

Class 12 Economics Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990)

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given AHSEC Board Bengali Medium Class 12 Economics Chapter 7 স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990) Solutions for All Subject, You can practice these here.

স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতীয় অর্থনীতি ও ভারতীয় অর্থনীতি (1950-1990)

Chapter: 7

খ – অংশ (ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন)

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। জীবিকার গঠনের সংজ্ঞা দাও। 

উত্তরঃ বিভিন্ন পেশা বৃত্তি বা জীবিকা অনুযায়ী জনসংখ্যা বন্টনকে জীবিকার গঠন বলে।

প্রশ্ন ২। কোন্ সনে ভারতের প্রথম শিল্পনীতি ঘোষিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ 1948 সালে।   

প্রশ্ন ৩। ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা সংস্থাটির নাম লেখো।

উত্তরঃ পরিকল্পনা আয়োগ।

প্রশ্ন ৪। ভারতবর্ষে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কবে আরম্ভ হয়েছিল ?

উত্তরঃ 1951 সালে।

প্রশ্ন ৫। প্রাক-স্বাধীনতার সময়ে ভারতবর্ষে জীবিকার প্রধান উৎস কী ছিল ?

উত্তরঃ কৃষি।

প্রশ্ন ৬। 1948 সালের শিল্পনীতিতে শিল্পগুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ?

উত্তরঃ চারভাগে।

প্রশ্ন ৭। 1956 সালের শিল্পনীতিতে শিল্পগুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয় ?

উত্তরঃ তিনভাগে।

প্রশ্ন ৮। কোন্ পরিকল্পনায় মূল ও ভারী শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় ?

উত্তরঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।

প্রশ্ন ৯। ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে অর্থসংস্থানের জন্য স্থাপিত একটি সংস্থার নাম করো।

উত্তরঃ ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে অর্থসংস্থানের জন্য Small Industries Development Bank of India সংক্ষেপে SIDBI স্থাপিত হয়েছে।

প্রশ্ন ১০। ভারতের প্রথম চটকল কোথায় স্থাপিত হয় ?

উত্তরঃ ভারতের প্রথম চটকল 1854 সালে রিষড়ায় স্থাপিত হয়।

প্রশ্ন ১১। ভারতের প্রথম কাপড়ের কল কোথায় স্থাপিত হয় ? 

উত্তরঃ ভারতের প্রথম কাপড়ের কল 1818 সালে হাওড়ার মুমুড়িতে স্থাপিত হয়।

প্রশ্ন ১২। প্রাক-স্বাধীনতার সময়ে ভারতীয় অর্থনীতির একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ প্রাক-স্বাধীনতার সময়ে ভারতবর্ষে জীবিকার প্রধান উৎস ছিল কৃষিকাৰ্য্য। প্রায় কর্মরত জনসংখ্যাই কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল।

প্রশ্ন ১৩। বিলগ্নীকরণ মানে কী ?

উত্তরঃ সরকারি সংস্থার শেয়ার বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করাকে বিলগ্নীকরণ বলে।

প্রশ্ন ১৪। ভারতের শিল্প বিকাশের প্রথম স্তর কোনটি ?

উত্তরঃ ভারতে শিল্প বিকাশের প্রথম স্তর হল প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কাল অর্থাৎ এই সময়কালটি।

প্রশ্ন ১৫। ভারতে শিল্প বিকাশের দ্বিতীয় স্তর কোনটি ?

উত্তরঃ ভারতে শিল্প বিকাশের দ্বিতীয় স্তর হল 1965-1980, এই সময়কাল যেটি শিল্পোৎপাদনের মন্দার স্তর।

প্রশ্ন ১৬। কোন্ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ভূমিসংস্কারের কর্মসূচি শুরু হয় ?

উত্তরঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।

প্রশ্ন ১৭। কোন্ শিল্পনীতি প্রণয়নের পর সরকারিভাবে ভারতীয় অর্থনীতিকে মিশ্র অর্থনীতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল ?

উত্তরঃ 1956 সালের শিল্পনীতি।

প্রশ্ন ১৮। ভারতের দ্বিতীয় শিল্পনীতি কত সালে ঘোষিত হয় ?

উত্তরঃ 1956 সালে।

প্রশ্ন ১৯। সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত কোন্ কোন্ খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনে সাফল্য লাভ করে ?

উত্তরঃ ধান ও গম।

প্রশ্ন ২০। ভারতীয় অর্থনীতিতে সবুজ বিপ্লবের প্রথম পর্যায়টি কত সালে শুরু হয়েছিল ?

উত্তরঃ 1966-67 সালে।

প্রশ্ন ২১। কোন্ রাজ্যে প্রজাস্বত্বের সংস্কারের উদ্দেশ্যে 1978 সালে ‘অপারেশন বর্গা’ নামক আইনসম্মত কর্মসূচিটি গৃহীত হয় ?

উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গে।

প্রশ্ন ২২। মিশ্র অর্থনীতি কাকে বলে ?

উত্তরঃ মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কিছু উৎপাদনের উপকরণের মালিক ব্যক্তিগত এবং কিছু উপকরণের মালিকানা সামাজিক হয়।

প্রশ্ন ২৩। মিশ্র অর্থনীতিতে কয়টি ক্ষেত্র থাকে ও কী কী ?

উত্তরঃ মিশ্র অর্থনীতিতে দুটি ক্ষেত্র থাকে – ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্র।

প্রশ্ন ২৪। শুল্ক কী ?

উত্তরঃ আমদানি দ্রব্যের ওপর আরোপিত কর বা বাধ্যবাধকতাকে শুল্ক বলে।

প্রশ্ন ২৫। শুল্ক কেন আরোপ করা হয় ?

উত্তরঃ শুল্ক হল সরকারি রাজস্বের উৎস। ইহা আরোপ করা হয় সরকারি রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ঘাটতি পূরণ করতে।

প্রশ্ন ২৬। ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয়দের গড় আয়ু কত ছিল ?

উত্তরঃ 32 বছর।

প্রশ্ন ২৭। কোনো অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা কয়টি ও কী কী ?

উত্তরঃ কোনো অর্থনীতির মৌলিক সমস্যা তিনটি মূল প্রশ্নের সমাধান করা। সেই তিনটি প্রশ্ন হল –

(১) কোন্ কোন্ দ্রব্যসামগ্রী কত পরিমাণে উৎপাদন করা হবে ?

(২) কীভাবে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হবে ?

(৩) কাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হবে ?

প্রশ্ন ২৮। অর্থনীতির তিনটি মৌলিক সমস্যা কী থেকে উদ্ভুত হয় ?

উত্তরঃ অর্থনীতির তিনটি মৌলিক সমস্যাই সম্পদের অপ্রাচুর্য থেকে অদ্ভুত হয়।

প্রশ্ন ২৯। অবাধ অর্থনৈতিক নীতি (Laissez Faire) কাকে বলে ?

উত্তরঃ অবাধ অর্থনৈতিক নীতির মূল কথা হল অর্থনৈতিক কাজকর্মে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকবে না।

প্রশ্ন ৩০। ঔপনিবেশিক আমলে ভারতের সাক্ষরতার হার কত ছিল ?

উত্তরঃ 16%

প্রশ্ন ৩১। TISCO-র পূর্ণ রূপ লেখো।

উত্তরঃ Tata Iron and Steel Company (TISCO)

প্রশ্ন ৩২। ব্রিটিশরা কবে ভারতে রেল বিভাগ চালু করেছিল ?

উত্তরঃ ব্রিটিশরা ভারতে 1850 সালে রেলবিভাগ চালু করেছিল।

প্রশ্ন ৩৩। ভরতুকি (Subsidy) কী ?

উত্তরঃ উৎপাদনের কাজে সরকারি সাহায্যকে ভরতুকি বলে।

প্রশ্ন ৩৪। ভারতবর্ষে কী ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আছে ?

উত্তরঃ ভারতবর্ষে অর্থনীতি হল মিশ্র অর্থনীতি।

প্রশ্ন ৩৫। অনুজ্ঞাপত্ৰ কী ?

উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফার্মের ক্ষেত্রে সরকারের লিখিত অনুমতিপত্রের নামই হল অনুজ্ঞাপত্র (Licensing)।

প্রশ্ন ৩৬। মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য কী ?

উত্তরঃ মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হল ব্যক্তিগত মালিকানা এবং সামাজিক মালিকানার সহাবস্থান।

প্রশ্ন ৩৭। বাজার ব্যবস্থাকে অদৃশ্য হস্ত বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ বাজার ব্যবস্থাকে অ্যাডাম স্মিথ অদৃশ্য হস্ত নামে আখ্যা দিয়েছিলেন কারণ এই অদৃশ্য হস্তের অঙ্গুলি সংকেতের মাধ্যমেই সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

প্রশ্ন ৩৮। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে ?

উত্তরঃ কোনো দেশের মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্ম যে সামাজিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক নিয়মনীতি মেনে চলে সেই নিয়মগুলিকে সংক্ষেপে ঐ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলা হয়।

প্রশ্ন ৩৯। কোনো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল কাজ কী ?

উত্তরঃ কোনো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল কাজ হল তিনটি মূল প্রশ্নের সমাধান করা।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

পশ্ন ১। ভারতীয় অর্থনীতির জন্য কৃষির উন্নয়ন কেন অতি আবশ্যক ? দুটি কারণ দেখাও।

উত্তরঃ দুটি কারণ হল- জাতীয় আয়ের উৎস এবং কর্মসংস্থান।

ভারতে জাতীয় আয়ের একটি বড়ো অংশ কৃষিক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত হয়। এছাড়া কর্মসংস্থানের দিক থেকে ও এককভাবে কৃষিক্ষেত্রের অবদান সর্বাধিক।

প্রশ্ন ২। শিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য কৃষিক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তরঃ দুটি কারণে শিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য কৃষিক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজাত দ্রব্য শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন – কাঁচাতূলো, কাঁচা পাট, তৈলবীজ প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত, শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সম্বপ্রসারণের জন্য ও কৃষির উন্নতি প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৩। ভারতের কৃষির দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতের কৃষির দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ –

(১) ভারতের কৃষি উৎপাদন অতি মাত্রায় প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। দেশের মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় 70% জলসেচের জন্য বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল।

(২) ভারতে কৃষি একটি জীবনধারনের উপায়মাত্র। এটিকে লাভজনক বৃত্তি বা পেশা হিসেবে গ্রহণ করা হয় না।

প্রশ্ন ৪। ভারতে কৃষির স্বল্প উৎপাদনশীলতার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতে কৃষির স্বল্প উৎপাদনশীলতার দুটি কারণ হল –

জোতের অন-অর্থনৈতিক আয়তন এবং চিরাচরিত উৎপাদন পদ্ধতির ব্যবহার।

প্রশ্ন ৫। কৃষির স্বল্প উৎপাদনশীলতার দুটি ফলাফল উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) কৃষির স্বল্প উৎপাদনশীলতার জন্য দেশে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে কারণ খাদ্যশস্য কৃষিক্ষেত্রেই উৎপন্ন হয়।

(২) কৃষির স্বল্প উৎপাদনশীলতার ফলে কৃষকদের আয় কম হচ্ছে। ফলে কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত থাকছে। এতে শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার বিস্তৃত হতে পারছে না।

প্রশ্ন ৬। কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত দুটি ব্যবস্থার উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত দুটি ব্যবস্থা হল –

(১) ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগত পরিবর্তন আনা।

(২) সেচ ব্যবস্থার প্রসারের জন্য বিভিন্ন সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা।

প্রশ্ন ৭। নগদশস্য কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে দ্রব্যের উৎপাদন কৃষক করে থাকে প্রধানত বিক্রির উদ্দেশ্যেই সেই দ্রব্যকে বলে নগদ শস্য। এই ধরনের নগদশস্য সাধারণত শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল হয়ে থাকে। নগদশস্যের উদাহরণ হল চা, কাঁচাপাট, কাঁচা তুলো, আম, তামাক ইত্যাদি। নগদ টাকা আয় করার জন্য এই ধরনের শস্য উৎপাদন করা হয় বলে একে নগদশস্য বা অর্থকরী ফসল বলা হয়।

প্রশ্ন ৮। খাদ্যশস্য কাকে বলে ? 

উত্তরঃ খাদ্যশস্য হল সেই সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্য যা মূলত খাদ্য জোগানোর জন্য উৎপাদন করা হয়। এই ধরনের উৎপন্ন দ্রব্যের একটা অংশ কৃষক নিজে ভোগ করে এবং বাকি উদ্বৃত্ত অংশ বাজারে বিক্রি করে। এই ধরনের খাদ্যশস্যের উদাহরণ হল- ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, ভূট্টা, ডাল, ফলমূল ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৯। আসামের দুটি নগদ শস্যের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ চা, পাট।

প্রশ্ন ১০। খাদ্যশস্যের বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ কৃষিক্ষেত্রে মাথাপিছু বার্ষিক উৎপাদন ও মাথাপিছু বার্ষিক ভোগের মধ্যে পার্থক্যকে মাথাপিছু বার্ষিক বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত বলে।

প্রশ্ন ১১। নগদ শস্য ও খাদ্যশস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ নগদ শস্য ও খাদ্যশস্যের মধ্যে একটি পার্থক্য হল নগদশস্য উৎপাদন করা হয় প্রধানত বিক্রির উদ্দেশ্যেই কিন্তু খাদ্যশস্যের উৎপাদন করা হয় প্রধানত ভোগ করার জন্য। নগদশস্যের উৎপাদন করা হয় শিল্পে কাঁচামালের জোগান দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন করা হয় খাদ্যের জোগান দেওয়ার জন্য।

প্রশ্ন ১২। বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত এবং বিক্রিত উদ্বৃত্তের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ কৃষিক্ষেত্রের বার্ষিক উৎপাদন এবং বার্ষিক ভোগের মধ্যে পার্থক্যকে বার্ষিক বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত অংশ বলে। অন্যদিকে, কোনো বছরে বাজারে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য প্রকৃতই বিক্রি হচ্ছে তাকে বলে বিক্রিত উদ্বৃত্ত।

প্রশ্ন ১৩। ভারতের খাদ্যশস্যের বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত কম হওয়ার দুটি কারণ লেখো।

উত্তরঃ (১) ভারতে কৃষির উৎপাদনশীলতা কম। উৎপাদনের পরিমাণ কম বলে বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্তও কম।

(২) ভারতের যৌথ পরিবার প্রথা প্রচলিত থাকায় এবং নানাবিধ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান থাকায় ভোগ ব্যয় বেশি হয় এবং তার ফলে বিক্রয়যোগ্য উদ্বৃত্ত কম হয়।

প্রশ্ন ১৪। সবুজ বিপ্লব বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ কৃষিতে আধুনিক উপকরণ তথা যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়িয়ে এবং কৃষির উৎপাদন কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে ও সর্বোপরি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে কৃষির ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনাই হল সবুজ বিপ্লব। ভারতের কৃষিতে এইরূপ বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে।

প্রশ্ন ১৫। সবুজ বিপ্লবের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সবুজ বিপ্লবের চারটি বৈশিষ্ট্য হল –

(১) উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার।

(২) রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অধিক ব্যবহার।

(৩) পর্যাপ্ত সেচের সুযোগ সুবিধা।

(৪) কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যাপক ব্যবহার।

প্রশ্ন ১৬। সবুজ বিপ্লবের দুটি ফলাফল উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সবুজ বিপ্লবের দুটি ফলাফল নিম্নরূপ-

(১) সবুজ বিপ্লবের ফলে মোট উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে, তবে সব শস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা সমান হারে বাড়েনি।

(২) সবুজ বিপ্লবের নতুন প্রযুক্তি ব্যয়বহুল। এর সুফল বড়ো চাষি বেশি করে ভোগ করছে। ছোটো চাষি নতুন প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রশ্ন ১৭। সবুজ বিপ্লবের ফলে কর্মসংস্থানের উপর কী প্রভাব পড়েছে তা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে না কমেছে তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। একদিকে সারা বছরে একাধিক ফসল ফলানোর জন্য শ্রমের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে সবুজ বিপ্লবের নতুন প্রযুক্তির ফলে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে কর্মসংস্থান কিছুটা কমেও যাচ্ছে। কাজেই সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষিতে মোট কর্মসংস্থান বাড়বে না কমবে তা নিশ্চিত করা বলা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন ১৮। জমির সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ জমির সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলে জমির অসম বন্টন দূর করা এবং আয় এবং সম্পদ বন্টনে বৈষম্য হ্রাস করা।

প্রশ্ন ১৯। প্রজাস্বত্ব সংস্কারের উদ্দেশ্য কী ?

উত্তরঃ প্রজাস্বত্ব সংস্কারের প্রধান উদ্দেশ্য হল খাজনার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া এবং কারণ খাদ্যশস্য কৃষিক্ষেত্রেই উৎপন্ন হয়। প্রজাদের স্বত্বের স্থায়িত্ব প্রদান করা।

প্রশ্ন ২০। ভূমি সংস্কার কার্যসূচির দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) গ্রামাঞ্চলে জমিদারদের প্রাধান্য খর্ব করা এবং জমির বন্টনে অসাম্য দূর করা।

(২) জমির উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধির পথে যে প্রাতিষ্ঠানিক বাধা আছে তা অপসারণ করা এবং জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।

প্রশ্ন ২১। সবুজ বিপ্লবের যে কোনো দুটি সুবিধা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কৃষির উৎপাদনে একটি বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগমে সাহায্য করছে।

(২) সবুজ বিপ্লবের প্রভাবে কৃষিক্ষেত্রে প্রায় সারাবছরই কৃষিকার্য অব্যাহত থাকছে। ফলস্বরূপ কৃষিক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন ও মরশুমি বেকারত্বের ভয়াবহতা অনেকটাই কমেছে।

প্রশ্ন ২২। আসামের চা শিল্পের সমস্যা কী কী?

উত্তরঃ আসামের চা শিল্পের সমস্যা হল- পুরানো চা গাছ, বিদেশের বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, শ্রমিক অসন্তোষ প্রভৃতি।

প্রশ্ন ২৩। মূল শিল্প কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে শিল্পের প্রসারের ফলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো সুদৃঢ় হয় এবং অন্যান্য শিল্প গড়ে ওঠে সেই শিল্পকে মূল শিল্প বলে।

প্রশ্ন ২৪। ভারী শিল্প কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে শিল্প গড়ে তোলার জন্য অত্যধিক মূলধন নিয়োগ করতে হয় তাকে ভারী শিল্প বলে।

প্রশ্ন ২৫। দুটি মূল ও ভারী শিল্পের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ মূল ও ভারী শিল্পের উদাহরণ হল – বৃহৎ আকারের লৌহ ও ইস্পাত শিল্প, তৈল পরিশোধন শিল্প।

প্রশ্ন ২৬। ভারতের অর্থনীতিতে শিল্পের বিকাশের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শিল্পের বিকাশের ফলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো উন্নত হয় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের পযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হয়।

প্রশ্ন ২৭। কোথায় কবে ‘টাটা আয়রন অ্যাণ্ড স্টীল’ শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয় ? কে এর প্রতিষ্ঠাতা ?

উত্তরঃ 1970 সালে জামসেদপুরে। জামশেদজী টাটা।

প্রশ্ন ২৮। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয় হস্তশিল্পের পতনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লেখো।

উত্তরঃ (১) ব্রিটিশ শাসনকালে রেলপথের প্রবর্তনের ফলে ভারতীয় অর্থনীতির রূপান্তর ঘটে। ইংল্যাণ্ডে ফলে তৈরি পোশাক-পরিচ্ছদ ভারতের হাটে বাজারে এসে পড়ায় দেশি সূতি শিল্পের বিরাট ক্ষতি হয়। গ্রামীণ হস্ত ও কুটির শিল্পগুলি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।

(২) ব্রিটিশ শাসনকালে ঔপনিবেশিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য ভারতকে কৃষিতে বিশেষীকরণ করার নীতি গ্রহণ করেছিল। ফলে ভারতে গৌরবময় কুটির ও হস্তশিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

প্রশ্ন ২৯। ভারতে সর্বপ্রথম সরকারিভাবে লোকগণনা কখন শুরু হয় ?

উত্তরঃ 1881 সালে ভারতে সর্বপ্রথম লোকগণনা আরম্ভ হয়েছিল। স্বাধীনতার পর ভারতের সর্বপ্রথম 1951 সালে জনগণনা হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩০। কৃষির বাণিজ্যকরণ বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ আসার পূর্বে স্থানীয়ভাবে যে শস্যের প্রয়োজন হত কৃষক তা-ই উৎপাদন করত। ব্রিটিশ রেল যোগাযোগ স্থাপন করার পর ভারতীয় কৃষিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত করে। আন্তর্জাতিক বাজারে যে পণ্যের অধিক মূল্য পাওয়া সম্ভব, কৃষক সেই পণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হয়। অর্থাৎ কৃষক ৰাণিজ্য পণ্য বা অর্থকরী পণ্য উৎপাদন করতে থাকে। বাণিজ্য পণ্য উৎপাদন করার পরিঘটনাকে কৃষির বাণিজ্যকরণ বলে।

প্রশ্ন ৩১। ইংরেজ আমলে লৌহ-শিল্পের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সফল ব্যক্তি কে ছিলেন ? তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর নাম কী ?

উত্তরঃ জামসেদজী টাটা। টাটা আয়রন অ্যাও স্টীল ফ্যাক্টরী।

প্রশ্ন ৩২। কার আমলে, কত সালে, কোথায় ভারতে প্রথম রেলপথ নির্মিত হয় ?

উত্তরঃ গভর্ণর জেনারেল লর্ড ডালহৌসীর শাসনকালে 1853 সালে বোম্বাই ও থানের মধ্যে রেলপথ নির্মিত হয়।

প্রশ্ন ৩৩। ভারতে প্রথম কার্পাস বস্ত্রশিল্পকেন্দ্র (Cotton Mill) কবে ও কোথায় নির্মিত হয় ?

জজউত্তরঃ 1818 সালে কলকাতার নিকটবর্তী হাওড়ায় ‘বাউরিয়া কটন মিল’ নির্মিত হয়।

প্রশ্ন ৩৪। ভারতে প্রথম পাটকল কবে ও কোথায় নির্মিত হয় ?

উত্তরঃ 1855 সালে কলকাতার নিকটবর্তী রিষড়ায় ভারতের প্রথম পার্ট কল স্থাপিত হয়।

প্রশ্ন ৩৫। ভারতে প্রথম লৌহ ও ইস্পাত কারখানা কবে কোথায় স্থাপিত হয় ?

উত্তরঃ 1820 সালে মাদ্রাজের কাছে পোটোনোভো-তে প্রথম লৌহ ও ইস্পাত কারখানা স্থাপিত হয়।

প্রশ্ন ৩৬। ভারতের প্রথম কাপড়ের কল কবে ও কোথায় নির্মিত হয় ?

উত্তরঃ 1853 সালে পার্সি শিল্পপতি কাউয়াসজী নানাভাঈ দাভর বোম্বাই-এ সর্বপ্রথম একটি কাপড়ের কল/বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন ৩৭। কে কত সালে চা গাছের আবিষ্কার করেন ?

উত্তরঃ 1823 সালে রবার্ট ব্রুস নামে জনৈক ইংরেজ সর্বপ্রথম আসামের জঙ্গলে চা গাছ আবিষ্কার করেন।

প্রশ্ন ৩৮। সৃতি কাপড়ের শিল্প প্রতিষ্ঠান কোথায় অবস্থিত ?

উত্তরঃ সূতি কাপড়ের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি আমাদের দেশের মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটে গড়ে উঠেছে।

প্রশ্ন ৩৯। যৌথ ক্ষেত্রের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায়, উভয়ের যুগ্ম পরিচালনায়, যৌথ উদ্যোগে যে সব শিল্প উদ্যোগ গড়ে তোলা হয় তাকে যৌথক্ষেত্র বলে।

প্রশ্ন ৪০। কাঠামোগত অধগমন (Structural retrogression) কাকে বলে ?

উত্তরঃ 1965-80 এই সময়কালে মূল ও মূলধন দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ার ঘটনাকে অধ্যাপক শেট্টি কাঠামোগত অধোগমন বলেছন।

প্রশ্ন ৪১। ভারতীয় অর্থনীতিতে সরকারি খণ্ডের গুরুত্ব প্রকাশ করে এমন দুটি বিষয়ের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ একটি বিষয় হল কর্মসংস্থান এবং অপর বিষয়টি হল জাতীয় আয়ে অবদান। ভারতে সংগঠিত ক্ষেত্রে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তার প্রধান অংশই রয়েছে সরকারি খণ্ডে। আবার ভারতের জাতীয় আয়ের প্রায় এক চতুর্থাংশ উদ্ভূত হচ্ছে সরকারি ক্ষেত্র থেকে। এই দুটি বিষয় থেকে ভারতের অর্থনীতিতে সরকারি খণ্ডের গুরুত্ব বোঝা যাবে।

প্রশ্ন ৪২। ভারতে সরকারি খণ্ডের দুটি সমস্যা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতে সরকারি খণ্ডের দুটি সমস্যা হল নিম্নরূপ-

(১) অনেক সরকারি ক্ষেত্র মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ।

(২) সরকারি সংস্থার পরিচালন ব্যবস্থায় অনেক ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়।

প্রশ্ন ৪৩। ভারতে সরকারি ক্ষেত্র গড়ে ওঠার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতে সরকারি ক্ষেত্র গড়ে ওঠার দুটি কারণ হল- মূল ও ভারী শিল্প গড়ে তোলা এবং আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা।

প্রশ্ন ৪৪। 1956 সালের শিল্পনীতিতে Schedule-A তে অন্তর্ভুক্ত শিল্পের সংখ্যা কটি এবং এগুলি কোন্ শ্রেণির অধীন ?

উত্তরঃ Schedule-A তে রয়েছে 17 টি শিল্প এবং এদের উন্নয়নের দায়িত্ব থাকবে সরকারের উপর।

প্রশ্ন ৪৫। 1960 এর দশকের মধ্যভাগ থেকে শিল্প উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ এর দশকের মধ্যভাগ থেকে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার হ্রাস পাওয়ার দুটি কারণ হলঃ

(১) প্রতিবেশী দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুৎপাদক ব্যয় বৃদ্ধি।

(২) খরা পরিস্থিতির জন্য কৃষিক্ষেত্রে ব্যর্থতা।

প্রশ্ন ৪৬। ভারতের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা।

(২) দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা দূরীকরণ।

প্রশ্ন ৪৭। ভারতের শিল্পক্ষেত্রের বিকাশে দুটি ব্যর্থতা উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতে শিল্পক্ষেত্রে বিকাশের দুটি ব্যর্থতা হলঃ

(১) সরকারি খণ্ডের ব্যর্থতা।

(২) স্বল্প কর্মনিয়োগ সৃষ্টি।

প্রশ্ন ৪৮। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ সামগ্রিকভাবে কোনো অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষার ভিত্তিতে দেশে কোন কোন দ্রব্য কত পরিমাণ উৎপাদন করা হবে এবং উৎপন্ন দ্রব্যগুলি কীভাবে কাদের মধ্যে বঞ্চিত হবে ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকেই অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বলে।

প্রশ্ন ৪৯। প্রাক্‌-স্বাধীনোত্তর ভারতে ইংরেজ সরকার সাধিত বে-শিল্পকরণের দ্বৈত অভিপ্রায় কী ছিল ?

উত্তরঃ প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করা এবং দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল ভারতবর্ষকে শিল্পজাত দ্রব্যসমূহের বাজারে পরিণত করা।

প্রশ্ন ৫০। দেশবিভাগের জন্য কৃষিক্ষেত্রে কি কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল ?

উত্তরঃ হ্যাঁ, দেশভাগের ফলে কৃষিক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। দেশের সর্বাধিক জলসিঞ্চিত উর্বর কৃষি ভূমি এবং পাট উৎপাদনকারী সমগ্র এলাকাই দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে যায়।

প্রশ্ন ৫১। ক্ষুদ্র শিল্প কাকে বলে ?

উত্তরঃ ফিসক্যাল কমিশনের মতানুসারে যে শিল্পের উৎপাদন ক্রিয়া সম্পাদনে মালিক ভাড়াটিয়া শ্রমিক নিযুক্ত করে তা হল ক্ষুদ্র শিল্প, যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ 25 লক্ষ থেকে 5 কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

প্রশ্ন ৫২। কুটির শিল্প কাকে বলে ?

উত্তরঃ ভারতের ফিসক্যাল কমিশনের অনুমোদন অনুযায়ী যে শিল্পে, মালিক ও তার পরিবারবর্গের সহযোগিতায় উৎপাদন কার্য সম্পন্ন হয়, সেই শিল্পই কুটির শিল্প হিসাবে পরিচিত।

প্রশ্ন ৫৩। অর্থব্যবস্থা মানে কী ?

উত্তরঃ মানুষের অসীম অভাব পূরণের জন্য সীমাবদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ উপযুক্তভাবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সমাজে যে সকল প্রতিষ্ঠান, রীতিনীতি ও নিয়মকানুন প্রচলিত থাকে তাকেই সংক্ষেপে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

পশ্ন ১। ভারতে উপনিবেশিক শাসনে অর্থনৈতিক নীতির কী উদ্দেশ্য ছিল ? এই নীতিসমূহের প্রভাব কী ছিল ?

উত্তরঃ ভারতে উপনিবেশিক শাসনে অর্থনৈতিক নীতির উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি ও ভারতীয় পুঁজিবাদের উন্মেষ ও শিল্পায়নের সূচনা। 

উপনিবেশিক শাসনকালে ইংল্যাণ্ড জাত পণ্যাদি জলস্রোতের মতো ভারতে প্রবেশ করতে থাকে। ইংল্যাণ্ডের কারখানায় উৎপন্ন সূতি, রেশম ও পশম বস্ত্রাদি বিনাশুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে আসতে থাকে। অপরপক্ষে, ভারতীয় বস্ত্রাদির ওপর চাপানো হয় বিরাট শুল্কের বোঝা। এর ফলে ভারতীয় শিল্প-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় এবং ভারত রপ্তানিকারক দেশের পরিবর্তে আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ২। উপনিবেশিক শাসনকালে চারজন বিখ্যাত অর্থনীতিবিদের নাম লেখ যারা ভারতের মাথাপিছু আয় গণনা করেছিলেন ?

উত্তরঃ উপনিবেশিক শাসনকালে ভারতে মাথাপিছু আয় গণনাকারী খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদগণ হলেন-

(১) দাদাভাই নৌরজী।

(২) ভি. কে. আর. ভি. রাও (ভিজয়েন্দ্র কস্তুরী রঙ্গ ভরদ্বাজ রাও)।

(৩) উইলিয়াম ডিগবাঈ।

(৪) ফিণ্ডলে সিরাস।

প্রশ্ন ৩। উপনিবেশিক আমলে ভারতের সম্পদের নির্গমন বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয় সম্পদগুলি শোষণ করে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে নিয়ে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টাকে সম্পদের নির্গমন বলা হয়। প্রশাসনিক ব্যয়, হোম চার্জ এবং ভারতের ক্রমবর্ধমান ঋণ মেটাতেই ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রাপ্ত লাভ ইংল্যাণ্ডে চলে যেত – এ ছিল এক ধরনের সম্পদের নির্গমন। দাদাভাঈ নৌরজীর লিখিত ‘Drain theory’ তত্ত্বে, সম্পদ নির্গমন কীভাবে ভারতের অর্থনৈতিক দেহ থেকে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে অর্থনীতির প্রাণশক্তি কেড়ে নিয়ে দারিদ্রতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা ব্যাখ্যা করেন। সম্পদ নির্গমনই ভারতের অনুন্নতির প্রধান কারণ বলে দাদাভাঈ নৌরজী ব্রিটিশ শাসনকেই দায়ী করেন।

প্রশ্ন ৪। ভারতবর্ষের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত ব্রিটিশ কর্মপন্থাগুলির আড়ালে কী উদ্দেশ্য ছিল ?

উত্তরঃ ভারতবর্ষের রেলপথ, স্থলপথ, টেলিগ্রাফ ইত্যাদি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন লর্ড ডালহৌসীর শাসনকালে ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে শুরু হয়। ভারতে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পেছনে ইংরেজদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ বিদ্যমান ছিল।

শিল্পবিপ্লবের ফলে ইংল্যাণ্ডের কলকারখানাগুলোতে প্রচুর পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত ছিল। ব্রিটিশ পণ্যের খোলাবাজার ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেগুলি ছড়িয়ে দেওয়া এবং ভারত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য রেলব্যবস্থা অতি প্রয়োজনীয় ছিল।

ব্রিটিশ ইস্পাত ব্যবসায়ীরা মনে করেছিল যে, ভারতে রেল ব্যবসা প্রবর্তিত হলে রেললাইন, ইঞ্জিন, মালগাড়ি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে তারা প্রচুর মুনাফা অর্জন করবে। এইসব লাভের লোভই আসল কথা, এ দেশের অর্থনীতির আধুনিকীকরণ মোটেই নয়।

রাজনৈতিক ও সামরিক প্রয়োজনে ও পরিকাঠামো প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিশাল ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে দ্রুত সংবাদ আদান-প্রদান ও যোগাযোগ অতি প্রয়োজনীয় ছিল। এছাড়া, বহিঃশত্রুর আক্রমন ও দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিদ্রোহের মোকাবিলা করা, সেনাবাহিনীকে দ্রুত খাদ্য ও রসদ পৌঁছে দেওয়া প্রভৃতি কাজে রেলপথ অপরিহার্য ছিল।

প্রশ্ন ৫। ভারতবর্ষে ইংরেজদের কোনো ইতিবাচক অবদান ছিল কি ?

উত্তরঃ 1853 সালে বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত একুশ মাইল পথ নির্মিত হয়। 1905 সাল পর্যন্ত ভারতে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল 28 হাজার মাইল। ভারতে রেলপথ নির্মাণ ভারতীয় জনজীবন, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে।

1823 সালে আসামের জঙ্গলে সর্বপ্রথম চা গাছের আবিষ্কার করেন রবার্ট ব্রুস নামক জনৈক ইংরেজ। 1839 সালে কিছু ইংরেজ বণিক ‘আসাম টি কোম্পানী’ গঠন করে চা শিল্পে মূলধন বিনিয়োগ করেন। কালক্রমে চা একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি দ্রব্যে পরিণত হয়।

লৌহ ও ইস্পাত এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ক্ষেত্রেও ইংরেজদের অবদান ছিল লক্ষণীয়। 1820 সালে মাদ্রাজে প্রথম লৌহ ও ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।

1814 সালে রাণীগঞ্জে সর্বপ্রথম কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয়। 1909 সালে কেবল বাংলাদেশেই 119 টি কয়লাখনি কোম্পানী ছিল। ব্রিটিশ শাসনকালে বালি, লক্ষ্ণৌ, টিটাগড় ও রাণীগঞ্জে কাগজের মিল গড়ে ওঠে। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে 91 টি রেলওয়ে কারখানা, কোলার স্বর্ণখনিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে ওঠে। 1905 সালে ভারতে মোট কলকারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় 2688।

ব্রিটিশ শাসনকালে কৃষি ব্যবস্থায় বাণিজ্যকরণের উৎকর্ষ সাধন হয়েছিল। কৃষি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে গ্রামাঞ্চলে আয় বৃদ্ধি পায়, জমির মূল্য বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, ভারতীয় গ্রাম্য অর্থনীতি আত্মনির্ভরশীল হয়েছিল।

প্রশ্ন ৬। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে বিদ্যমান কয়েকটি আধুনিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।

উত্তরঃ (১) লৌহ ও ইস্পাত শিল্প। 

(২) কাগজ কারখানা। 

(৩) কাপড়ের কল। 

(৪) পাটশিল্পের কারখানা। 

(৫) চা শিল্প। 

(৬) কয়লা শিল্প। 

(৭) সিমেন্ট শিল্প।

প্রশ্ন ৭। ইংরেজ ঔপনিবেশিক সরকারে অনুসৃত শিল্পনীতির কয়েকটি দোষত্রুটি সম্বন্ধে অবগত করো।

উত্তরঃ (১) ঔপনিবেশিক সরকার কখনই চাইত না যে, ভারতে কোনো আধুনিক শিল্প গড়ে উঠুক, কারণ তারা জানত যে, ভারতে কোনো আধুনিক শিল্প গড়ে উঠলে ভারতের বাজার ও কাঁচামাল তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।

(২) সাধারণত কোনো দেশে নতুন শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করলে বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত থেকে শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকার বিদেশী মালের ওপর অধিক শুল্ক ধার্য করে। ভারতের অবস্থা ছিল ভিন্ন ধরনের। সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ভারতে আমদানিকৃত বিলাতি মালের ওপর থেকে শুল্কের হার কমিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সস্তা বিদেশী মালে ভারতের বাজার ভরে যায় এবং ভারতীয় শিল্পের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

(৩) ব্রিটিশ সরকারের সংরক্ষণ শুল্ক নীতি। রমেশচন্দ্র দত্তের মতে, ভারতীয় বস্তু রপ্তানীর ওপর 10% শুল্ক আর ব্রিটিশ সৃতিবস্ত্র আমদানির ওপর 2% শুল্ক ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের ধ্বংসের কারণ।

(8) বিদেশী ঔপনিবেশিক শাসননীতিই ছিল ভারতীয় উদ্যোগের বিকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। ভারতীয় শিল্পগুলিকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে নানা বাধা দেওয়া হত। ভারতীয় স্মৃতি শিল্পকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে তার ওপর ব্যাপক উৎপাদন শুল্ক চাপানো হয় এবং অপরদিকে ম্যাঞ্চেষ্টার থেকে অগিত স্মৃতিবস্ত্রের ওপর নামমাত্র কর ছিল।

প্রশ্ন ৮। ভারতের বস্ত্রশিল্পের বা স্মৃতিশিল্পের ধ্বংসের মূল কারণগুলি সংক্ষেপে বিবৃত করো।

উত্তরঃ ভারতের বস্ত্রশিল্পের ধ্বংসের প্রধান কারণগুলি হল –

(১) সস্তায় বিদেশী পণ্যের আমদানি।

(২) ধনী ও মধ্যবিত্ত নাগরিকদের বিদেশী পণ্যের প্রতি ঝোঁক।

(৩) দেশীয় রাজণ্যবর্গ ও প্রাচীন অভিজাত সম্প্রদায় দেশীয় শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ও খরিদ্দার ছিলেন। এই রাজ্যগুলি অবলুপ্তির পর দেশীয় শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(৪) ব্রিটিশ বণিক ও পুঁজিপতিরা এদেশ থেকে শিল্পপণ্যের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহের নীতি।

(৫) ইংল্যাণ্ডে শিল্প বিপ্লব ও শিল্প পণ্যের বিপুল উৎপাদন ও অব্যাহত যোগান।

(৬) সর্বোপরি ব্রিটিশ সরকারের সংরক্ষণ শিল্পনীতি। ভারতীয় পণ্যের ওপর উঁচু কর ভার চাপিয়ে সরকার কৌশলে জাতীয় শিল্পকে ধ্বংস করে।

প্রশ্ন ৯। ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের ধ্বংসের ফলাফল বর্ণনা করো।

উত্তরঃ ভারতীয় শিল্পবাণিজ্যের ধ্বংসের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী। শিল্প বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতীয় বাণিজ্যের রূপান্তর ঘটল।

(১) ভারত একটি রপ্তানিকারী দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হল। তৈরি করা পণ্যাদির পরিবর্তে ভারত থেকে রপ্তানি হতে লাগল কাঁচা তুলো, কাঁচা রেশম, নীল, চা প্রভৃতি কাঁচা মাল। ভারত পরিণত হল কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে। শিল্প প্রধান দেশ ভারত রূপান্তরিত হল কৃষি প্রধান দেশে।

(২) শিল্প বাণিজ্যের ধ্বংসের ফলে দেশে প্রবল বেকারত্ব দেখা দেয়। বেকার শিল্পী ও কারিগরেরা অন্য পেশায় মন দেয় এবং অধিকাংশই কৃষিকার্য অবলম্বন করে। এর ফলে জমির ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। ভারতে কৃষিজীবি ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

(৩) অষ্টাদশ শতকে ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, সুরাট, মসুলিপট্টম, তাঞ্জোর প্রভৃতি ছিল শিল্প সমৃদ্ধ ও ঘনবসতিপূর্ণ নগর। এগুলি ক্রমে জনবিরল স্থানে পরিণত হয়।

(৪) চিরাচরিত অর্থনীতি ধ্বংসের ফলে ভারত একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়। দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ভারতীয় জীবনের অঙ্গে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় অর্থনীতির ওপর রেলপথ পত্তনের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ রেলপথের প্রবর্তন ভারতীয় অর্থনীতিতে যুগান্তর আনে। এর ফলে পরিবহন ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পের বিকাশ ও মানুষের জীবনধারায় সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটে যায়। নানা দিক থেকে কল্যাণকর হলেও রেল ভারতীয় জীবনে নানা বিপর্যয়ও ডেকে আনে। বলা হয় যে, রেলপথ নির্মাণ না করে সরকার যদি জলসেচের দিকে বেশি নজর দিত, তাহলে দুর্ভিক্ষের মোকাবিলা অনেক বেশি সহজতর হত।

নিম্নে রেলব্যবস্থার প্রতিকূল প্রভাব উল্লেখ করা হলঃ

(১) রেল যোগাযোগের ফলে ভারত ইংল্যাণ্ডের কারখানাগুলির কাছে খোলাবাজার এবং কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ইংল্যাগুজাত পণ্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় না পেরে ভারতীয় কুটির শিল্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

(২) রেল যোগাযোগের ফলে দুর্ভিক্ষে ত্রাণ পাঠানো সহজতর হয় ঠিকই কিন্তু রেলপথই পরোক্ষে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে। খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির ফলে ভারতের নানা স্থানে খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়।

(৩) মাল পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশী বিদেশী বণিকদের মধ্যে রেল মাশুলের বৈষম্য করা হয়। এর ফলে দেশীয় বণিকদের ক্ষতি হয়। রেলব্যবস্থার ফলে বিদেশী পণ্য ভারতীয় বাজারে বিক্রি হতে থাকে, ভারতীয় শিল্প ধ্বংস হয়, ভারতীয় অর্থ বহুল পরিমাণে বিদেশে চলে যায়।

(৪) বিদেশে পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকায় কৃষক তার জমিতে খাদ্যশস্য অপেক্ষা বাণিজ্যিক পণ্যের চাষে উৎসাহী হয়ে ওঠে। এর ফলে দেশে খাদ্যশস্যে ঘাটতি দেখা দেয় ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়।

সবশেষে বলা যায় যে, ‘স্ব-নির্ভরতার যে বর্ম ভারতের গ্রামগুলিকে এতদিন রক্ষা করে এসেছিল, ইস্পাতের রেল সেই বর্ম ভেদ করে গ্রাম-জীবনের রক্ত শোষণ করে দেয়।’

প্রশ্ন ১১। ব্রিটিশ আসার পূর্বে ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে ভারতের অর্থনীতি ছিল প্রধানত গ্রামীণ অর্থনীতি। তখনকার গ্রামগুলি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল।

(২) ব্রিটিশ আসার পূর্বে 95% ভারতীয় জনগণ গ্রামে বসবাস করত। গ্রাম্য অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। গ্রামে কৃষিযোগ্য ভূমির অভাব ছিল না কিন্তু কৃষির বাণিজ্যিক রূপ ছিল না।

(৩) জনসংখ্যার তুলনায় জমির প্রাচুর্যতা থাকায় জমির একাংশ পতিত হিসাবে থেকে যেত। গৃহপালিত গবাদি পশুর চারণভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হত।

(৪) সেই সময় ভারতে গ্রামীণ শিল্প উন্নত ছিল। গ্রামবাসীগণ তাদের প্রয়োজনেই তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, স্বর্ণ শিল্প, চর্ম শিল্প প্রভৃতি বহুবিধ শিল্প গড়ে তুলেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের শিল্পজাত দ্রব্যের খুব চাহিদা ছিল।

প্রশ্ন ১২। মিশ্র অর্থনীতির ধারণা দাও। একটি অনুন্নত দেশের জন্য এটি ফলদায়ক বলে কি তুমি মনে করো ?

উত্তরঃ মিশ্র অর্থনীতি হল এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক কাঠামো যেখানে সরকারি ক্ষেত্রের সাথে সাথে বেসরকারি ক্ষেত্রের অস্তিত্ব বিরাজ করে এবং কার্যতভাবে সরকারের আংশিক নিয়ন্ত্রণবিধির সাথে সাথে বাজার দেশের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রয়াসী হয়।

এই ধরনের অর্থব্যবস্থায় ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার উৎকৃষ্ট মানের বৈশিষ্ট্যগুলি একই সাথে বর্তায়।

অনুন্নত দেশে উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিই এর লক্ষ্য। মিশ্র অর্থনীতিতে পরিকল্পনার সাহায্যে সরকারি উদ্যোগে সৃষ্ট অনুকূল পরিবেশে বেসরকারি উদ্যোগ কাজ করে যা সরকারের সহযোগিতায় অর্থনীতিকে বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে উন্নয়নে সাহায্য করে। সুতরাং অনুন্নত দেশে মিশ্র অর্থনীতি ফলদায়ক বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন ১৩। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হিসাবে ‘আধুনিকীকরণ’ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ভারতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল আধুনিকীকরণ। আধুনিকীকরণ বলতে বুঝায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কাঠামোতে গঠনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনকে। অর্থাৎ একটি দেশের উৎপাদনের ক্ষেত্রগত গঠনের পরিবর্তন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে ও কার্যকলাপের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানগত দিক থেকে নতুনের পরিবর্তন যা একটি ঔপনিবেশিক দেশকে স্বাধীন ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করতে পারে তাকে আধুনিকীকরণ আখ্যা দেওয়া হয়।

দেশের উৎপাদনে ও রপ্তানিতে যে বৈচিত্র্যমুখী পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে, কৃৎকৌশলগত পরিবর্তনের ফলে উৎপাদনের মানগত ও উৎকর্ষগত পরিবর্তন ঘটেছে – যা দেশের আধুনিকীকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ের সাক্ষ্য বহন করছে।

প্রশ্ন ১৪। স্বাধীনতার পর অসমে প্রবর্তন করা যে কোন চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সংস্কার ব্যবস্থার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করো।

উত্তরঃ (১) অসম জমিদারী অধিগ্রহণ আইন, 1951

(২) আসাম রায়ত স্বত্ব আইন, 1971

(৩) আসাম ভূমি একত্রিকরণ আইন, 1960

(৪) ভূমির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ আইন, 1956

প্রশ্ন ১৫। ঔপনিবেশিক ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) আমদামি এবং রপ্তানি উভয়ক্ষেত্রেই বৈদেশিক বাণিজ্য প্রধানত ভারত এবং ইংল্যাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। যেসব ক্ষেত্রে ইংরেজদের স্বার্থ বজায় থাকত সেসব জায়গায় ভারত আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্ত থাকত। যেমন – মরিসাস ছিল ব্রিটেনের উপনিবেশ। সেখানকার ইংরেজ বেনিয়াদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ভারতকে সে দেশ থেকে চিনি আমদানিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

(২) ভারতে রপ্তানি দ্রব্য ছিল প্রধানত প্রাথমিক বিভাগজাত। কৃষিপণ্যই ছিল রপ্তানির সবচেয়ে বড় উৎস। পাট, তুলা, চা, তৈলবীজ, কাঁচা চামড়া, পাটজাত ও তুলাজাত দ্রব্য ছিল প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।

(৩) আমদানি দ্রব্য ছিল প্রধানত শিল্পজাত ভোগ্যপণ্য। বস্ত্র, চামড়ার দ্রব্য, কাঁচের জিনিস, ঘড়ি, খেলনা, মোটরগাড়ি, সাইকেল, সেলাইকল, কাগজ, কলম প্রভৃতি আমদানি হত।

(৪) বাণিজ্য খাতে উদ্বৃত্ত থাকলেও হোমচার্জ বাবদ তা মেটানো হত বলে ভারত বাণিজ্য উদ্বৃত্তের সুযোগ গ্রহণ করতে পারত না।

প্রশ্ন ১৬। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি কী ? এই ধরনের অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য‌ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলতে এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে দেশের উৎপাদন উপকরণের মালিকানা থাকবে বেসরকারি উদ্যোগপতিদের হাতে।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং উৎপাদন উপকরণের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে।

(২) উদ্যোগপতি ও ভোক্তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে।

(৩) বাজার-ব্যবস্থা অর্থাৎ দাম-ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের মৌলিক সমস্যাগুলির‌ সমাধান করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ১৭। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বলতে কী বোঝায় ? এই ধরনের অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি হল এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের উপকরণ সরকারের অধীনস্থ এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের উৎপাদন উপকরণের সদ্ব্যবহার করে আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধান করা হয়ে থাকে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

(১) এই অর্থব্যবস্থায় জাতীয় সম্পদের মালিকানা সরকারের হাতে থাকে। ব্যক্তিগত মালিকানার কোনো সুযোগ এই ব্যবস্থায় থাকে না।

(২) সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পদ ব্যবহার করা হয়।

(৩) সরকার পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের আয় ও সম্পদ বন্টনের বৈষম্য দূরীকরণে সক্ষম হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top