Class 12 Economics Chapter 10 ভারতের মানব মূলধন গঠন

Class 12 Economics Chapter 10 ভারতের মানব মূলধন গঠন | Class 12 Economics Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter AHSEC Board HS 2nd Year Economics Chapter 10 ভারতের মানব মূলধন গঠন Notes and select needs one.

Class 12 Economics Chapter 10 ভারতের মানব মূলধন গঠন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given AHSEC Board Bengali Medium Class 12 Economics Chapter 10 ভারতের মানব মূলধন গঠন Solutions for All Subject, You can practice these here.

ভারতের মানব মূলধন গঠন

Chapter: 10

খ – অংশ (ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন)

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন কার নেতৃত্বে এবং কত সালে স্থাপন করা হয় ?  

উত্তরঃ 1948 সালে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের নেতৃত্বে।

প্রশ্ন ২। University Grant Commission (UGC) কত সালে স্থাপিত হয় ?

উত্তরঃ 1953 সালে।

প্রশ্ন ৩। মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বা মুদালিয়ার কমিশন কবে রিপোর্ট পেশ করে ?

উত্তরঃ 1953 সালের আগষ্ট মাসে।

প্রশ্ন ৪। কোঠারি কমিশন কত সালে গঠিত হয় ?

উত্তরঃ 1964 সালে।

প্রশ্ন ৫। কোঠারি কমিশনের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

প্রশ্ন ৬। “The destiny of India is now being shaped in her classrooms” অর্থাৎ ‘ভারতের ভাগ্য তার শ্রেণিকক্ষেই স্থির হয়’ – কোন্ কমিশনের সূচনায় এই উক্তিটি করা হয় ?

উত্তরঃ কোঠারি কমিশন।

প্রশ্ন ৭। প্রাথমিক / প্রারম্ভিক শ্রেণি বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি।

প্রশ্ন ৮। 1968-র জাতীয় শিক্ষানীতিতে মোট জাতীয় সম্পদের কত শতাংশ শিক্ষার খাতে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ?

উত্তরঃ 6 শতাংশ।

প্রশ্ন ৯। ভারতবর্ষের কোন প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ (1986) প্রস্তুতে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তরঃ রাজীব গান্ধী।

প্রশ্ন ১০। AICTE এর পুরো নাম কী ?

উত্তরঃ All India Council for Technical Education.

প্রশ্ন ১১। NPE এর পুরো নাম কী ?

উত্তরঃ National Policy on Education.

প্রশ্ন ১২। ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ কী ?

উত্তরঃ ‘সকলের জন্য শিক্ষা’র অন্তর্নিহিত বক্তব্যটি হল জাতি-ধর্ম-অঞ্চল ও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমমানের শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

প্রশ্ন ১৩। NCERT এর সম্পূর্ণ নাম লেখো।

উত্তরঃ National Council of Education, Research and Training.

প্রশ্ন ১৪। ভারতীয় সংবিধানের 45 নং ধারায় উল্লেখিত নির্দেশাত্মক নীতি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভারতীয় সংবিধানে নির্দেশাত্মক নীতিগুলির 45 নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধান কার্যকরী হওয়ার দিন থেকে 10 বছরের মধ্যে রাষ্ট্র 6 থেকে 14 বছরের বয়সের সকল ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করবে।

প্রশ্ন ১৫। কত সালে ভারতীয় সংবিধান চালু হয়েছিল ?

উত্তরঃ 1950 সালের 26 জানুয়ারি।

প্রশ্ন ১৬। কত সালে কততম সংবিধান সংশোধন করে শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করা হয় ?

উত্তরঃ 2002 সালে 86 তম সংবিধান সংশোধনে শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য করা হয়।

প্রশ্ন ১৭। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে লিঙ্গ বৈষম্য সম্বন্ধে গবেষণার একজন পথিকৃৎ কে ছিলেন ?

উত্তরঃ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

প্রশ্ন ১৮। UGC এর পূর্ণরূপ লেখো।

উত্তরঃ University Grants Commission.

প্রশ্ন ১৯। ICMR এর পুরো নাম লেখো।

উত্তরঃ Indian Council for Medical Research.

প্রশ্ন ২০। সর্বশিক্ষা অভিযান কবে চালু হয় ?

উত্তরঃ 2001 সালে।

প্রশ্ন ২১। NCERT কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ 1961 সালে।

প্রশ্ন ২২। গ্রাম শহরের প্রব্রজনের প্রধান কারণ কী ?

উত্তরঃ বেকার সমস্যা

প্রশ্ন ২৩। MHRD মানে কী ?

উত্তরঃ Ministry of Human Resource Development.

প্রশ্ন ২৪। মূলধন কয় প্রকার ও কী কী ?

উত্তরঃ মূলধন দুই প্রকার। ভৌত মূলধন ও মানব মূলধন।

প্রশ্ন ২৫। মূলধন কী ?

উত্তরঃ উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদানকে মূলধন বলে। যেমন-কলকারখানার বাড়িঘর, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল এগুলিই হল ভৌত মূলধন।

প্রশ্ন ২৬। মানব উন্নয়ন ধারণা সর্বপ্রথম কে দিয়েছিলেন ?

উত্তরঃ পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মহবুব উল হক।

প্রশ্ন ২৭। মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কত সাল থেকে কোন সংস্থা প্রকাশিত করে ?

উত্তরঃ 1990 সাল থেকে UNDP (United Nations Development Programme) অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রশ্ন ২৮। মানব মূলধন কী ?

উত্তরঃ দেশে জনসাধারণের জ্ঞানের ও সচেতনার মাত্রাকে মানব মূলধন বলে গণ্য করা হয়।

প্রশ্ন ২৯। ভারতীয় সংবিধানের কোন ধারায় অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে ?

উত্তরঃ Article 21 A.

প্রশ্ন ৩০। কত সালে শিক্ষার অধিকার আইন পাশ হয় ?

উত্তরঃ 2009 সালে।

প্রশ্ন ৩১। 2017 সালের মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী ভারতের স্থান কত ?

উত্তরঃ 130 তম স্থান (189 টি দেশের মধ্যে)।

প্রশ্ন ৩২। ICDS এর পুরো নাম লেখো।

উত্তরঃ Integrated Child Development Scheme ( সুসংহত শিশু বিকাশ যোজনা)।

প্রশ্ন ৩৩। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হল এমন কতকগুলি শক্তির একত্র সমাবেশ যারা একে অপরের সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি দরিদ্র দেশকে দরিদ্র করে রাখে।

প্রশ্ন ৩৪। ভারতের জনসংখ্যার ইতিহাসে ‘বিরাট বিভাজনের বছর’ কোন বছরকে অভিহিত করা হয় ?

উত্তরঃ 1921 সালকে।

প্রশ্ন ৩৫। অর্থনৈতিক বিকাশ কাকে বলে ?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিকাশ হচ্ছে একটি দেশের জাতীয় আয় এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়া।

প্রশ্ন ৩৬। মানব উন্নয়ন কাকে বলে ?

উত্তরঃ মানব উন্নয়ন বলতে জনসাধারণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনধারণের মানদণ্ড, আর্থ- সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদির উন্নয়ন বোঝায়।

প্রশ্ন ৩৭। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান (RMSA) কত সালে চালু হয় ?

উত্তরঃ 2009 সালে।

প্রশ্ন ৩৮। 2011 সালের জনগণনা মতে, ভারতে শিক্ষিতের হার কত ?

উত্তরঃ 73%

প্রশ্ন ৩৯। 2011 সালের লোকগণনা মতে, ভারতে নারী-পুরুষের অনুপাত/লিঙ্গ অনুপাদ কত ?

উত্তরঃ 940

প্রশ্ন ৪০। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযান (NRHM) কত সালে সংসদে পাশ হয় ?

উত্তরঃ 2005 সালে।

প্রশ্ন ৪১। স্কুলে মধ্যাহ্ন ভোজনের জাতীয় কর্মসূচি কত সালে চালু হয় ?

উত্তরঃ 1995 সালে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বলিতে কী বুঝ ?

উত্তরঃ সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার অর্থ হল জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, সম্প্রদায়, সামাজিক, অর্থনৈতিক মর্যাদা নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে।

প্রশ্ন ২। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা লক্ষ্যে না পৌঁছানোর কারণগুলি কী কী ?

উত্তরঃ (১) জনবিস্ফোরণ। 

(২) দারিদ্রতা। 

(৩) কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। 

(৪) লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাতিত্ব।

প্রশ্ন ৩। ভারতে কোন প্রতিষ্ঠানগুলি শিক্ষাক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে ?

উত্তরঃ NCERT, AICTE এবং UGC.

প্রশ্ন ৪। প্রত্যাশিত আয়ু কী ?

উত্তরঃ কোনো নতুন জন্মগ্রহণকারী শিশুর জীবনে গড়ে কত বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে, তাকে ওই ব্যক্তির প্রত্যাশিত আয়ু বলে।

প্রশ্ন ৫। মেধা পাচার কী ?

উত্তরঃ অনুন্নত ও গরিব দেশ থেকে মেধাবী ছাত্র এবং দক্ষ মানবসম্পদ ধনী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই ধরনের গমনাগমনকে মেধাপাচার বা বলা হয়। বিশেষত বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার ইত্যাদিরা এই ধরনের স্থানান্তরের প্রধান অঙ্গ।

প্রশ্ন ৬। একটি দেশে মানব মূলধনের মূল উৎস দুটি কী কী ?

উত্তরঃ (১) শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ।

(২) স্বাস্থ্য, বৃত্তিগত প্রশিক্ষণ।

প্রশ্ন ৭। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ শিক্ষা – রাষ্ট্রীয় শিক্ষা-গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (NCERT) 

স্বাস্থ্য – ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (ICMR)

প্রশ্ন ৮। ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত হওয়ার দুটি কারণ লেখো। 

উত্তরঃ (১) উচ্চ জন্মহার এবং ক্রমহ্রাসমান মৃত্যুর হার।

(২) দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা।

প্রশ্ন ৯। এমন দুটি পরিস্থিতি উল্লেখ কর যেখানে অর্থনৈতিক বিকাশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে না।

উত্তরঃ (১) যদি বিলাসী সামগ্রী, মাদক দ্রব্য, নেশাযুক্ত সামগ্রীর পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য জাতীয় আয় বাড়ে, তাহলে সেই বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে না।

(২) যদি উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদগুলির অপব্যবহার করা হয় এবং তার ফলস্বরূপে পরিবেশ দূষিত হয় ও দূষিত পরিবেশে জনস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে, তবে সেই অর্থনৈতিক বিকাশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে পারে না।

প্রশ্ন ১০। মানব উন্নয়নের তিনটি সূচক কী কী ?

উত্তরঃ (১) প্রত্যাশিত আয়ু। 

(২) শিক্ষা। এবং 

(৩) জীবনযাত্রার মানদণ্ড।

প্রশ্ন ১১। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কী ?

উত্তরঃ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে এক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা দেশের অর্থনীতির স্বেচ্ছাকৃত নিয়ন্ত্রণ এবং দিগদর্শনই হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

প্রশ্ন ১২। অর্থনৈতিক বিকাশ ও মানব উন্নয়নের মধ্যে পার্থক্য কী ?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক বিকাশে কেবলমাত্র একটা পছন্দের কথা উল্লেখ রয়েছে আর সেটা হচ্ছে আয়। কিন্তু মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমষ্টিগত পছন্দের বিস্তার সাধনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সমষ্টিগত পছন্দের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পছন্দ ও ধরা হয়েছে।

প্রশ্ন ১৩। মানব উন্নয়নের তিনটি নতুন ধারণা কী কী ?

উত্তরঃ (১) বৈষম্য সাপেক্ষে মানব উন্নয়ন সূচক।

(২) লিঙ্গ বৈষম্য সূচক।

(৩) বহুমাত্রিক দারিদ্র।

প্রশ্ন ১৪। NCERT এর লক্ষ্যগুলি কী কী ?

উত্তরঃ (ক) বিদ্যালয় শিক্ষার মান উন্নয়ন।

(খ) প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ।

(গ) শিক্ষা বিস্তার।

(ঘ) বিদ্যালয় সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা।

প্রশ্ন ১৫। সর্বশিক্ষা অভিযান কী ?

উত্তরঃ প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার সাংবিধানিক নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে 2000 সালে ভারত সরকার একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’।

প্রশ্ন ১৬। শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি কী কী?

উত্তরঃ (১) সরকারি অর্থাভাব। শিক্ষার পরিমাণগত ও গুণগত মান উন্নয়ন করতে গেলে বাজেটে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন, তা আজও করা যায় নি। ফলে পরিকল্পনা রূপায়িত করা যাচ্ছে না।

(২) জনসংখ্যার বিপুল বিস্ফোরণ শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

(৩) সমাজে দারিদ্র্য, অভুক্তি, অপুষ্টি শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক চ্যালেঞ্জ। যাদের পেটে খাবার নেই, তারা শিক্ষায় উৎসাহিত বোধ করছে না।

প্রশ্ন ১৭। NCERT এর কার্যাবলি লেখো।

উত্তরঃ (১) বিদ্যালয় স্তরে পাঠক্রম প্রণয়ন।

(২) বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দান।

(৩) বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক রচনা করা।

(৪) বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা করা।

প্রশ্ন ১৮। মানব মূলধনের দুটি উৎস উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) শিক্ষা। 

(২) স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।

প্রশ্ন ১৯। অর্থনৈতিক বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ (১) অর্থনৈতিক বিকাশ হল জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি; অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে দেশের আর্থিক কাঠামোর পরিবর্তন।

(২) কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের মতে অর্থনৈতিক বিকাশ কথাটি উন্নত দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কথাটি অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ অর্থনৈতিক বিকাশ হল উন্নত দেশের সমস্যা আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল অনগ্রসর দেশের সমস্যা।

প্রশ্ন ২০। কোন্ কোন্ নির্দেশকের সাহায্যে মানব উন্নয়ন সূচক নির্ণয় করা যায় ?

উত্তরঃ তিনটি নির্দেশকের সাহায্যে মানব উন্নয়ন সূচক নির্ণয় করা যায়। 

সেই তিনটি নির্দেশক হল – 

(১) জন্মের সময় প্রত্যাশিত আয়ু। 

(২) শিক্ষা প্রসারে সাফল্য। এবং 

(৩) গ্রহণযোগ্য জীবনযাত্রার মান।

প্রশ্ন ২১। জনবিস্ফোরণ কাকে বলে ?

উত্তরঃ জনসংখ্যার রূপান্তর্ সংক্রান্ত তত্ত্বের দ্বিতীয় স্তরে মৃত্যু হার দ্রুত হ্রাস পায় কিন্তু জন্মের হার সেই অনুপাতে হ্রাস পায় না। ফলে এই স্তরে জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। একে জনবিস্ফোরণ বলে।

প্রশ্ন ২২। মানব উন্নয়ন সূচক কী ?

উত্তরঃ মানব উন্নয়ন সূচক হল এমন একটি সংখ্যা যার মাধ্যমে মানব উন্নয়ন কতটা হয়েছে তা জানা যায়। এই সূচকের মান 0 থেকে 1 এর মধ্যে অবস্থিত।

প্রশ্ন ২৩। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দুটি নির্দেশকের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ (১) মাথাপিছু প্রকৃত জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি। এবং

(২) জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

প্রশ্ন ২৪। মানব সম্পদ কাকে বলে ?

উত্তরঃ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কোন একজন মানুষ উচ্চ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৌশলী এবং দক্ষতাসম্পন্ন হয়ে উৎপাদনমূলক কাজে নিজেকে জড়িত করে তখনই তাকে মানবসম্পদ বলা হয়।

প্রশ্ন ২৫। জন-প্রব্রজন কাকে বলে ?

উত্তরঃ মানুষ কর্মসূত্রে বা অন্য কোনো কারণে নিজের স্থান ত্যাগ করে একটি নতুন স্থানে গিয়ে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে বসতির কার্যকে জনপ্রব্রজন বলে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। একটি জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তরঃ কোঠারী কমিশন রিপোর্টের শুরুতেই বলেছেন ‘The Destiny of India is now being shaped in her classroom’। এটা অতিশয়োক্তি নয়। বিজ্ঞান ও যন্ত্রবিদ্যার যুগে শিক্ষাই নিয়ন্ত্রণ করছে জাতির সম্পদ, কল্যাণ ও নিরাপত্তা। জাতি গঠনের কাজে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

শিক্ষা মানুষের প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে সমর্থ হয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রূপান্তরের যে লক্ষ্য, তা পূর্ণ করতে শিক্ষা একটি প্রধান অস্ত্র। শিক্ষার মাধ্যমে একজন মানুষ সর্বাধিক জ্ঞান ও তথ্য আহরণ করে। এই জ্ঞান তার মধ্যে সৃষ্টি করবে উন্নত চেতনা। চেতনা থেকে তৈরি হবে উপলব্ধি। শিক্ষা মানুষকে উচ্চমূল্যের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করে। মানুষকে জ্ঞান এবং ক্ষমতাসহ সুদক্ষ করে তুলতে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য। উৎপাদনশীল শ্রমশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন এই শিক্ষার।

সাম্প্রতিককালে ভারত জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির অভিমুখে যাত্রা করছে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তিগত শিল্পের প্রাধান্য থাকবে। আর এই ধরনের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। সুতরাং শিক্ষার প্রসার ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুতরাং দেশকে উন্নত করতে হলে শিক্ষার উন্নতি করতে হবে যাতে উৎপাদন বাড়ে, সামাজিক ও জাতীয় সংহতি অর্জন করা যায়, গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়, সামাজিক, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হয়, আধুনিক ধরনের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয় ও চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার যত উন্নতি হয়, মানুষ তত সক্ষম হয়, তত তার বেশি ক্ষমতা অর্জিত হয়।

প্রশ্ন ২। একটি দেশে মানব মূলধন গঠনের মুখ্য চারটি উৎস কী কী ?

উত্তরঃ মানব মূলধন বা মানব সম্পদ গঠনের মূল উৎসগুলি হল –

(১) শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ: মানব মূলধন গঠনের প্রধান উৎস হল শিক্ষা শিক্ষা মানুষের চিন্তাশক্তি জাগ্রত করে। শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলিকে আলোকিত করে। শিক্ষা মানবদেহে জাগ্রত করে দক্ষতা এবং গতিশীল মননশীলতা। শিক্ষা দ্বারা সৃষ্ট এই গুণগুলি মানবজাতিকে অধিক উৎপাদনশীল করে। শিক্ষায় বিনিয়োগ এই অন্তর্নিহিত গুণাবলিকে বাড়িয়ে দেয় এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবদান যোগাতে এগিয়ে আসে। সুতরাং মানব মূলধনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে উপযুক্ত শিক্ষা।

(২) স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয়: স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যয় মানব মূলধন তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পরিশ্রম করবার ক্ষমতা শ্রমিকের দৈহিক অবস্থার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। রুগ্ন শ্রমিক স্বভাবতই কর্মবিমুখ হয়। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে অন্যথায় শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হয় না। সুতরাং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যয় মানবজাতিকে মানব মূলধনে পরিণত করার জন্য প্রয়োজন।

(৩) কৰ্ম প্রশিক্ষণ: প্রশিক্ষণ শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি করে। শিল্প মালিক শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ করতে কর্মশালার আয়োজন করে ব্যাপক ব্যয়ভার বহন করে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং কর্মের উপর প্রশিক্ষণ ব্যয় মানব মূলধন তৈরির একটি অন্যতম উৎস।

(৪) প্রবজন ব্যয়: মানুষ কাজের সন্ধানে বা অধিক উপার্জনের জন্য গ্রাম থেকে শহরে চলে যায়। এই চলাচলকে প্রবজন বলে। নূতন স্থানে পরিবহন ব্যয়, ঘর ভাড়া, উচ্চ ব্যয়বহুল জীবনযাপন, অচেনা সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি জড়িত থাকে। নতুন জায়গায় বর্ধিত উপার্জন প্রবজন ব্যয় অপেক্ষা অধিক হয়। এজন্য প্রবজনের ক্ষেত্রে ব্যয় মানব মূলধন গঠনের উৎস।

প্রশ্ন ৩। নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে লেখো।

উত্তরঃ মানব সমাজের একটি বড়ো অংশ জুড়ে রয়েছে নারী। তাই নর ও নারীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যতীত জগতের কল্যাণ কখনোই আশা করা যায় না। নারীকে পর্দার আড়ালে রেখে মানবসভ্যতার অগ্রগতির কথা যারা ভাবেন, তাঁরা সুখের স্বর্গে বিরাজ করছেন। দেশের আপাময় মানুষের জন্যই শিক্ষার প্রয়োজন। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি না দিলে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য চাই শিক্ষা। মনের অন্ধকার না ঘুচলে দেশের অন্ধকার দূর হয় না। শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। বিদ্যার্জনের ক্ষেত্রে তাই নারীপুরুষের সমান অধিকার নিশ্চয়ই বাঞ্ছিত। আজকের নারী জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষালাভ করে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে। আধুনিক জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে নারীরা আজ প্রতিষ্ঠিত আপন আপন মর্যাদায়।

সমাজ দেহের দুটি প্রধান অঙ্গ – নারী ও পুরুষ। একটিকে বাদ দিয়ে, দুর্বল করে রাখা পক্ষান্তরে দেহকেই পঙ্গু করে রাখা। তাই সমাজকে বা দেশকে বলিষ্ঠ করে তুলতে পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীশিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে।

শিশু ভাবী জীবনের পার্ট নেয় মার কাছ থেকে। নারী শিক্ষার আলো দিয়ে সন্তানকে ভবিষ্যতের পথ দেখায়। মার শিক্ষা-রুচি-চিন্তা-চেতনা সন্তানকে জড়িয়ে রাখে গভীর উষ্ণতা, মমতায়। নারী শিক্ষার আলো দিয়েই শিশুকে ভবিষ্যতের পথ চেনায়। রচনা করে নবজাতকের বাসযোগ্য পরিবেশ। তাই নারী শিক্ষার প্রয়োজন আরও জরুরী।

বিভিন্ন দেশের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মায়েরা শিক্ষিত হলে সন্তানদেরও শিক্ষিত হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি। বিশেষত সাক্ষর মায়েদের সন্তান নিরক্ষর হয় না। তা ছাড়া দেখা গেছে যে, মায়েদের শিক্ষা সে সব দেশের শিশুদের স্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। শিশু মৃত্যুহার ও নারীদের উর্বরতাও কমিয়েছে। শিক্ষিত নারী যে পরিবার ও দেশের পক্ষে সম্পদ এ ধারণাটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। আফ্রিকার একটি প্রবাদ বাক্য বলা হয়েছে ‘If you educate a man, yon educated a person; but if you educate a woman, you educate a family.’ প্রকৃতপক্ষে মেয়েদের শিক্ষার জন্য ব্যয় যে কোনো বিনিয়োগের থেকে ভালো ফল দেয়। মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করা হলে তারা বেশি আয় করতে পারে, পরিবারের সকলের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে, শিশু মৃত্যুর হার কমে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে এবং সমাজের সকলের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন ৪। মানব উন্নয়নের সংজ্ঞা দাও। আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।

উত্তরঃ 1990 সালে প্রথম মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে ‘মানব উন্নয়ন’ সম্বন্ধে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, মানব উন্নয়ন হল মানুষের চয়নের ব্যাপ্তি বা বিস্তৃতি সাধনের একটি প্রক্রিয়া। ‘Human development is a process of enlarging people’s choices’। এছাড়া আরও কিছু পছন্দের কথাও বলা হয়েছে। সেগুলি হল রাজনৈতিক স্বাধীনতা।

আয় বেশি হলে অনেক পছন্দমতো জিনিষ পাওয়া যায় একথা সত্য। সেজন্য মাথাপিছু আয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আয় হল অনেক কিছু পাওয়ার একটি উপায় মাত্র, বেশি আয় অর্জন করাটাই মানুষের লক্ষ্য নয়। টাকা দিয়ে যেমন খাদ্য ও ওষুধপত্র কেনা যায় তেমনই হেরোইন ও কেনা যায়। টাকা দিয়ে কী করা হচ্ছে তার ওপর মানুষের কল্যাণ নির্ভর করে, টাকার পরিমাণের ওপর নয়।

মানব উন্নয়ন বলতে এখানে মানুষের প্রসারকে যেমন বোঝায় ঠিক সেরকম তারা কতটা কল্যাণ অর্জন করছে তার পরিমাপকেও বোঝায়। মানব উন্নয়নের একটি দিক হল ক্ষমতা অর্জন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা যত উন্নত হয়, মানুষ তত সক্ষম হয়, তত তার বেশি ক্ষমতা অর্জিত হয়।

মহবুব উল হকের মতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের চিন্তাধারার মধ্যে সংজ্ঞাগত পার্থক্য হল এই যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র মানুষের একটি পছন্দের কথাই বলে এবং তা হল আয়। অন্যদিকে মানব উন্নয়ন বলতে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিভিন্ন পছন্দ ও তাদের ব্যাপ্তিকে বোঝায়। মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে আয়ের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৫। মানব মূলধন গঠনের চারটি সমস্যা লেখো।

উত্তরঃ ভারতে মানব মূলধন গঠনে প্রধান সমস্যা নিম্নরূপ –

(১) সরকারের ঔদাসীন্যতা: শিক্ষা হল মানব মূলধনের প্রধান চালিকাশক্তি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় আয়ের মাত্র তিন শতাংশ শিক্ষার জন্য ব্যয় করে, যেখানে উন্নত দেশে এর হার 7-8 শতাংশ। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের উচিত ছিল, অতিরিক্ত শিক্ষা কর বসিয়ে অর্থ জোগাড় করা এবং সেই অর্থের দ্বারা শিক্ষার গুণগতমান উন্নত করে দেশের প্রতিটি মানুষকে মানবমূলধনে রূপান্তরিত করে।

(২) জনসংখ্যা বিস্ফোরণ: জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর মধ্যে ভারতবর্ষ হল দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় 16 শতাংশ বাস করে। মানব মূলধন গঠনের অভিপ্রায়ে বিদ্যালয়ের সংখ্যা শিক্ষকের সংখ্যা, শিক্ষোপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থের সংস্থান কীভাবে হবে তা একটি বড় প্রশ্ন। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানব মূলধন গঠনের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।

(৩) আমলাদের নিস্পৃহতা: স্বাধীনতা অর্জনের পর মানব মূলধন বা মানবসম্পদের উন্নয়নে ভারত সরকার যে সমস্ত শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছে তাত্ত্বিক দিক থেকে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও কীভাবে তা বাস্তবীকরণ করা হবে, সে সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থাগুলি যাদের দ্বারা পরিচালিত হবে তাদের মানসিকতা, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং দক্ষতার অভাব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সংবিধানের‌ 45 নং ধারায় বলা হয়েছে সংবিধান চালু হওয়ার 10 বছরের মধ্যে সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। ধারাটি মানবসম্পদ গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সংবিধান চালু হওয়ার 70 বছর পরও আজও আমাদের দেশে নিরক্ষরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি, রাজনৈতিক অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ নেতাগণের ভোটসর্বস্ব মানসিকতা, সুবিধাভোগীদের স্বার্থরক্ষা মানবমূলধন গঠনে বাধার সৃষ্টি করে।

(৪) কারিগরি শিক্ষার অভাব: ভারতের জনসংখ্যার গুণগত মান নিম্ন। তারা নানা সংস্কার ও রক্ষণশীলতায় আচ্ছন্ন। ফলে শ্রমের চলনশীলতা কম। শ্রমিকদের মধ্যে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার অভাব। ফলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম। SC, ST, আদিবাসী সম্প্রদায় যারা যুগ যুগ ধরে সমস্ত ধরনের বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছে, যার ফলে তাদের মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই এবং শিক্ষার অভাবে তারা বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্নের শিকার হয়েছে। তাদেরকে শিক্ষা অঙ্গনে নিয়ে আসা সমস্যা হয়ে পড়ে। এটি মানব মূলধন গঠন করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।

প্রশ্ন ৬। কোনো একটি দেশের মানব উন্নয়নের চারটি নির্দেশক দেখাও।

উত্তরঃ মানব উন্নয়নের চারটি নির্দেশক হল –

(১) জন্মের সময়কার জীবনের প্রত্যাশা: মানব উন্নয়নের একটি নির্দেশক হচ্ছে জীবনের প্রত্যাশা। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে কত বছর পর্যন্ত সুস্থ, সবলভাবে বেঁচে থাকবে তাকে জীবনের প্রত্যাশাই নির্ণয় করে। উচ্চ জীবন প্রত্যাশা মানব উন্নয়নের নির্দেশক।

(২) শিক্ষা: শিক্ষার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতাকে দুই-তৃতীয়াংশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাকে সমন্বিতভাবে এক তৃতীয়াংশ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যে দেশে শিক্ষার হার বেশি, সেই দেশের মানব উন্নয়নের হারও উচ্চ।

(৩) জীবনযাত্রার মান: ক্রয়ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে মাথাপিছু আয়ের সাহায্যে দেশের জনসাধারণের মান পরিমাপ করা হয়।

(৪) প্রতিষেধক টীকাকরণের হার: একটি দেশের প্রতিষেধক টীকাকরণের হার ও দেশটির মানব উন্নয়নের সাক্ষ্য বহন করে। কারণ টীকাকরণ শিশুর স্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের সুরক্ষা প্রদান করে।

প্রশ্ন ৭। ভারতে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোকপাত করো।

উত্তরঃ প্রাকৃতিক নিয়মে একজন মানুষ জন্ম থেকে নারী বা পুরুষ – এটি তার জৈবিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা নির্ধারিত। নারীর জৈবিক ভূমিকা এক হলেও তার সামাজিক ভূমিকা আলাদা হওয়ায় লিঙ্গ বৈষম্য দেখা যায়। খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, শ্রমদান, সম্পত্তির মালিকানা প্রভৃতি প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই নারীরা বৈষম্যের শিকার। পরিবারের বাইরে কর্মক্ষেত্রেও এই বৈষম্য প্রকট। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে ছেলেকে পরিবারের ভবিষ্যত রোজগারকারী হিসাবে ধরা হয়। গ্রামে গরিব ঘরে জল আনা, জ্বালানি সংগ্রহ করা, ছোটো ভাইবোনদের দেখাশুনা করা, রান্নার কাজে সাহায্য করা ইত্যাদি কাজগুলো সাধারণত মেয়েরাই করে থাকে। তাদের স্কুলে পাঠালে পরিবার এসব কাজ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব কারণে ছেলেদের তুলনায় কম সংখ্যক মেয়েদের স্কুলে পাঠানো হয়। এছাড়া অনেক মা বাবা মনে করেন যে মেয়েদের লেখাপড়া শেখালে তা পরিবারের কাজে লাগবে না যেহেতু মেয়েরা বিয়ের পর অন্য পরিবারে চলে যায়। ভারতের মতো পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বেশির ভাগ অঞ্চলে পুত্রসন্তানকে বৃদ্ধ বয়সে বিমাপত্র হিসাবে দেখা হয় আর যৌতুক প্রথা থাকায় কন্যা সন্তানকে দায় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। 

এসবের মিলিত ফল হিসাবে কন্যা সন্তানদের প্রতি অযত্ন ও অবহেলা অনেক সময় জন্মের সময় থেকে শুরু হয়ে যায়। এমনকি কন্যাসন্তানকে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। পশ্চিমভারতের রাজ্যগুলিতে লিঙ্গ বৈষম্য অত্যন্ত বেশি। মহিলাদের কাজের একটি বড়ো অংশ হল গৃহশ্রম – যে কাজের জন্য সে মজুরি এবং স্বীকৃতি কোনোটাই পায় না। আবার বাইরের কর্মক্ষেত্রেও মেয়েরা কম মজুরি পায়। ভারতের সর্বত্রই নারী ও পুরুষের মজুরির হারের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ সাম্প্রতিককালে মহিলাদের ক্ষমতায়নে উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করা সত্বেও আজও দেখা যাচ্ছে যে, আয়, পুষ্টি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ, ঋণ গ্রহণের সুযোগ, মজুরির হার, বেকারত্ব প্রভৃতি সব দিক থেকে নারীর তুলনামূলকভাবে খারাপ অবস্থানে রয়েছেন।

প্রশ্ন ৮। মানব মূলধন অর্থনৈতিক উন্নয়নে কীভাবে সাহায্য করে ?

উত্তরঃ মানব মূলধন অর্থনৈতিক উন্নয়নে নানাভাবে সাহায্য করে।

(১) উৎপাদন খরচ হ্রাস: শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিক আরও বেশি উৎপাদনে সক্ষম হয়। ফলে গড় খরচ কমে। শুধু উৎপাদনের পরিমাণই নয়, উৎপাদনের গুণমানও উন্নত হয়। ফলে লাভ অধিক হয়।

(২) মজুরি বৃদ্ধি: মানব মূলধনের ব্যবহার যেমন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে উদ্যোক্তার উৎসাহ বাড়ায় তেমনি মজুরি বাড়িয়ে শ্রমিকের উৎসাহও বাড়ায়। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ালে বাড়তি মজুরি দিয়েও কাজ করিয়ে লাভ হয়। তাই উদ্যোক্তা মজুরি বাড়াতে উৎসাহ পায়। শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক।

(৩) অন্যান্য উপকরণের উৎপাদিকা শক্তি: বর্তমান যুগে জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তি অর্থনৈতিক উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এখন আর নেহাৎ কায়িক শ্রম দেশের উপকরণের নিপুণ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট নয়। নতুন জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তি কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মেধাশ্রমের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষ শ্রমিকই পারে তার উৎপাদনের উপায়গুলোর নিপুণতার ব্যবহার সম্ভব করতে। এদের হাতে পুঁজিদ্রব্যের অপচয় খরচ কমে। নিপুণ শ্রমিক মানব মূলধন উদ্ভাবনে বাণিজ্যিক প্রয়োগ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা করে।

(8) বস্তুগত মূলধন বৃদ্ধি: মানব মূলধন কেবল ভোগ্যদ্রব্য উৎপাদনে সহায়ক নয়, মূলধন দ্রব্য উৎপাদনেও সহায়ক। মানব মূলধন উৎপাদন বাড়িয়ে এবং উদ্ভাবন ঘটিয়ে পুঁজির যোগান বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৯। মানব উন্নয়নের প্রধান প্রধান নির্ধারকগুলি / উপাদানগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মহবুব উল হকের মতে মানব উন্নয়নের চারটি প্রধান নির্ধারক/উপাদান হল: 

(১) সমতা। 

(২) সুস্থায়িত্ব। 

(৩) উৎপাদনশীলতা। 

(৪) ক্ষমতা।

(১) সমত‌া: উন্নয়ন বলতে যদি মানুষের পছন্দের বিস্তার বোঝায় তাহলে প্রতিটি মানুষের সমান সুযোগ পাবার অধিকার থাকা উচিত। প্রতিটি মানুষের সমান সুযোগের অধিকার পেতে গেলে ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস এবং পরিবর্তন দরকার। যেমন – প্রগতিশীল কর সংক্রান্ত নীতির মাধ্যমে ধনীদের কাছ থেকে দরিদ্রদের হাতে আয়ের হস্তান্তর করে আয় বন্টনে পুনর্বিন্যাস করা, ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদনযোগ্য সম্পদের বন্টনে পরিবর্তন আনা ইত্যাদি।

(২) সুস্থায়িত্ব: আজকের প্রজন্ম যে সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মো যাতে অনুরূপ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে সেজন্য মানব উন্নয়নের ধারণা সুস্থায়িত্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে গণ্য করা হয়। বর্তমানের যা কিছু ভালো, যা কিছু মানুষের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সেগুলিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে দেওয়া দরকার।

(৩) উৎপাদনশীলতা: মানব উন্নয়ন মতবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল উৎপাদনশীলতা। উৎপাদনশীলতার জন্য মানব সম্পদে বিনিয়োগ করতে হয়। জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশগুলি মানব সম্পদে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে বলে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষ একদিকে উন্নয়নের উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষের জন্যই উন্নয়ন, অন্যদিকে মানুষই উন্নয়ন করে অর্থাৎ মানুষের উন্নয়নের উপায়।

(৪) ক্ষমতায়ন: মানব উন্নয়ন মতবাদ মানুষের পূর্ণ ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। বিভিন্ন বিকল্প বিষয়ের মধ্যে নিজের স্বাধীন ইচ্ছামতো পছন্দ করতে পারার অধিকার বা ক্ষমতাকে ক্ষমতায়ন বলে। পুরুষ ও নারীর সমানভাবে ক্ষমতায়ন দরকার যাতে তারা সমানভাবে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। ক্ষমতায়নের জন্য দরকার হচ্ছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যাতে মানুষ সমস্ত রকম অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ঊর্দ্ধে নিজেদের বিকশিত করতে পারে।

প্রশ্ন ১০। ভারতবর্ষের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত হওয়ার প্রধান কারণগুলি লেখো।

উত্তরঃ 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা হয়েছে 120 কোটি। বিশ শতকের মধ্যভাগে অর্থাৎ 1951 সালে ভারতে জনসংখ্যা ছিল 36 কোটি। ঐ ষাট বছরের মধ্যে জনসংখ্যা 84 কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

(১) দারিদ্র্য: দারিদ্র্য ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। দরিদ্র পরিবারে জন্মহার বেশি। দারিদ্র্যদশা মানুষকে টিকে থাকার জন্য মরিয়া করে তোলে। অল্প বয়স্ক শিশুরা আর উপার্জনকারী একক হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই অতিরিক্ত সন্তান অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসাবে গণ্য হয়।

(২) নিরক্ষরতা: শিক্ষার অভাব ভারতে জন্মহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। শিক্ষার বিস্তার না হওয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনার প্রসার ঘটে না। নিয়তি নির্ভর জীবনদর্শন, আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্বন্ধে অজ্ঞতা ইত্যাদি জন্মহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

(৩) মৃত্যুহার হ্রাস: স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে মৃত্যুহার দ্রুতহারে হ্রাস পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করার ফলে শিশু মৃত্যুর হারো কমে এসেছে। এর ফলে জনসংখ্যা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(৪) সার্বজনীনতা: ভারতে মেয়েদের বিবাহ একটি সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত। অল্প বয়সে অধিকাংশ মেয়েদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়। এর ফলে অধিক সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকে।

(৫) বিদেশি আগমন: বিদেশ থেকে ভারতে আগমনের ফলে ভারতের জনসংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ বিভাগের ফলে 1950 এর দশকে পাকিস্তান থেকে বহু লোক ভারতে আসে। আবার, 1971 সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ঐ দেশ থেকে বহু সংখ্যক উদ্বাস্তু ভারতে আসে। এর ফলেও ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রশ্ন ১১। সর্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রবর্তনের সমস্যাগুলি আলোচনা করো।

উত্তর সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের সমস্যাগুলি হল –

(১) অর্থাভাব: সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের সবচেয়ে বড়ো অন্তরায় হল সরকারি অর্থের অভাব। কেন্দ্রিয় বাজেটের শতকরা 3% শিক্ষার জন্য ব্যয় হয়। ভারতে কোঠারি কমিশন জাতীয় আয়ের 6 শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছিল। ফলে স্বাধীনতার পর শিক্ষার মানোন্নয়ন সরকারি অর্থাভাবে বিশেষ ফলপ্রসূ হয় নি।

(২) দারিদ্র্য: ভারতের জনসংখ্যার বিশাল অংশ চরম দারিদ্র্যে থাকার দরুণ অন্নবস্ত্রের অভাব মেটাতে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবার চেয়ে শিশুশ্রমিক হিসাবে নিয়োগ করতে বেশি উৎসাহিত হল। সরকার সকলের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেও তা শিক্ষাগত সমতা বিধানের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ভারতের প্রায় 40 মিলিয়ন শিশু শ্রমিক কল-কারখানায়, খনিতে, গৃহনির্মাণ শিল্পে এবং কৃষিকাজে নিযুক্ত। যাদের মধ্যে অধিকাংশই বিদ্যালয়মুখী শিশু।

(৩) রক্ষণশীলতা: আমাদের বিভিন্ন সমাজে মেয়েদের সামর্থ্য, আগ্রহ, রুচি, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার মূল্য না দিয়ে শুধুমাত্র বিয়ের উপযোগী করে বড়ো করে তোলা হয়। তা ছাড়া রক্ষণশীল হিন্দু ও মুসলমানন পরিবারের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ ও পর্দাপ্রথার মতো সামাজিক ব্যাধি নারীশিক্ষার ন্যূনতম প্রসারে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

(৪) জনসংখ্যা বিস্ফোরণ: মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি সর্বজনীন শিক্ষার পথে একটি বিরাট বাধা। বর্তমান ভারতের জনসংখ্যা 120 কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যাও বিপুল পরিমাণে বাড়ছে।

(৫) ভাষাগত বৈচিত্র্য: আমাদের দেশের ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সর্বজনীন শিক্ষার পথে অন্তরায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ভারতের তপশিলি জাতি, উপজাতি ও পশ্চাৎপদশ্রেণির শিশুদের মধ্যে শিক্ষার অনগ্রসরতার কারণ হল তাদের নিজের ভাষায় শিক্ষা অর্জনে অসুবিধা, তাদের জীবন পরিবেশের উপযোগী পাঠক্রমের অভাব, SC, ST শিক্ষকের অভাব।

প্রশ্ন ১২। মানব উন্নয়ন কাকে বলে ? কী কী কারণে মানব উন্নয়ন প্রয়োজন তা আলোচনা করো।

উত্তরঃ মানব উন্নয়ন বলতে বোঝানো হয় জনসাধারণের পছন্দের ব্যাপ্তিকে বাড়ানো। পছন্দের ব্যাপ্তি বলতে ধরা হয় দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনযাপন, শিক্ষালাভের সুযোগ, ভদ্র জীবনযাত্রার মান অর্জন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অন্যান্য মানবাধিকার ভোগ।

নিম্নলিখিত কারণে মানব উন্নয়ন প্রয়োজন –

প্রথমত, মানব উন্নয়নই আসল লক্ষ্য, অর্থনৈতিক বিকাশ তার উপায় মাত্র।

দ্বিতীয়ত, মানব উন্নয়নের ফলে শ্রমিদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

তৃতীয়ত, মানব উন্নয়ন ঘটলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সীমিত হবে এবং পরিবারের আয়তন ছোটো হবে।

চতুর্থত, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্যও মানব উন্নয়ন দরকার।

পঞ্চমত, মানব উন্নয়নের ফলে সমাজে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস পায়। রাজনৈতিক স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন ১৩। ভারতে মানব সম্পদ উন্নয়নের অসুবিধাসমূহ আলোচনা করো।

উত্তরঃ নীচে মানব সম্পদ উন্নয়ের পথে আমাদের দেশে যে সকল অসুবিধা বা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তা সংক্ষেপে আলোচনা করো হলঃ

(১) অধিক জনসংখ্যা: ভারত পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসাবে সীমিত আয়ে অত্যধিক জনসংখ্যাকে উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা দিয়ে সম্পদে রূপান্তরিত করার পথ আমাদের দেশের পক্ষে সহজসাধ্য নয়। তাই অধিক জনসংখ্যা মানব সম্পদ উন্নয়নের একটি অন্যতম বাধা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

(২) দারিদ্র্যতা: দারিদ্র্যতা মানব সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম বাধা। দারিদ্র্যতার জন্য আমাদের দেশের এক বিশাল সংখ্যক লোক শারীরিক এবং মানসিকভাবে সফল হতে পারে নি। শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য এবং উপযুক্ত শিক্ষা যার অভাবে আমাদের দেশের দরিদ্রলোকদের বিপর্যস্ত অবস্থা। ফলস্বরূপ, তারা আত্মমর্যাদা হারিয়ে ভাগ্যের ওপর বিশ্বাসী হয় এবং নিজেদের সেই অবস্থার থেকে উন্নীত করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে।

(৩) পুঁজির অভাব: মূলধন বা পুঁজির অভাব মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো একটি উল্লেখযোগ্য বাধা। মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হল শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য পৌর সুবিধা, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগর এবং বৃত্তিমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পানীয় জল ব্যবস্থা, উন্নত মানের রাস্তাঘাট, সেতু, নালা-নর্দমা ইত্যাদি পরিকাঠামো। কিন্তু মূলধনের অভাবের জন্য আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় এই ব্যবস্থাসমূহ সীমিত।

(৪) নিরক্ষরতা: নিরক্ষরতা সমাজের একটি বড়ো অভিশাপ। আমাদের দেশের প্রায় 26% লোকই নিরক্ষর। নিরক্ষরতা জ্ঞান, উপযুক্ততা, দক্ষতা, কারিগরি কুশলতা ইত্যাদি বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করে এবং মানুষকে মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় স্বরূপ হয়ে ওঠে।

(৫) অন্ধবিশ্বাস: মানব সম্পদ উন্নয়নের পথে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বাধা হচ্ছে অন্ধবিশ্বাস। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা আজ বিশ্বের সামগ্রিক ছবি বদলে দিয়েছে যদিও শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে আমাদের দেশের এক বিশাল সংখ্যক লোক এখনও অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারে বিশ্বাসী। এ ধরনের লোকেরা বৈজ্ঞানিক এবং পরিবর্তনশীল চিন্তাধারার পরিপন্থী যার ফলে তাঁরা এখনও উন্নত মানের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে নি।

(৬) বৈষম্যতা: বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যতা মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও একটি বাধা। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত আজ বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক পরম্পরা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের জনসাধারণের মধ্যে ধর্মীয় বৈষম্যতা, ভাষাভিত্তিক বৈষ্যমতা, জাতিগত বা গোষ্ঠীভিত্তিক বৈষম্যতা, লিঙ্গ বৈষম্যতা এবং অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্যতা দূর করতে পারে নি। এই বৈষম্যতাই আজ মানুষের মধ্যে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যার ফলে সামাজিক প্রগতির পথে রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top