Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ

Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ and select needs one.

Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Social Science Chapter 11 নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ for All Subject, You can practice these here…

নানা প্রকার সরকার বা সরকারের শ্রেণিবিভাগ

               Chapter – 11

তৃতীয় খণ্ড : রাজনীতি বিজ্ঞান

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সরকারের শ্রেণিবিভাজনকারী প্রথম রাজনৈতিক দার্শনিক কে ছিলেন ?

উত্তরঃ গ্ৰিক দার্শনিক প্লেটো।

প্রশ্ন ২। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকার কোনটি ? 

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতির সরকার।

প্রশ্ন ৩। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের প্রচলন আছে এমন একটি রাষ্ট্রের নাম বলো।

উত্তরঃ ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ড।

প্রশ্ন ৪। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান কে ?

উত্তরঃ সরকারের প্রধান হল প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রের প্রধান হল রাষ্ট্রপতি।

প্রশ্ন ৫। ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি কোন প্রকারের সরকার থাকে ?

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতিয় সরকার থাকে।

প্রশ্ন ৬। রাষ্ট্রপতি-প্রধান সরকার আছে এমন একটি রাষ্ট্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

প্রশ্ন ৭। এক-কেন্দ্রীয় সরকার প্রচলিত আছে, এমন একটি রাষ্ট্রের নাম বলো।

উত্তরঃ ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, ইটালী ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৮। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে যে দু-রকম সরকার থাকে তাদের নাম বলো ?

উত্তরঃ (১) কেন্দ্রীয় সরকার।ও 

(২) কয়েকটি রাজ‍্য সরকার। 

উদাহরণ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

প্রশ্ন ৯। স‍্যুইজারল‍্যান্ড কোন পদ্ধতির সরকার আছে ?

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সরকার।

প্রশ্ন ১০। ভারতবর্ষে দ্বৈত-নাগরিকত্বের ব‍্যবস্থা আছে কিনা ?

উত্তরঃ ভারতবর্ষে দ্বৈত নাগরিকত্বের ব‍্যবস্থা নাই।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বর্তমান সময়ে প্রচলিত বিশ্বের বিভিন্ন প্রকার সরকার কী কী ?

উত্তরঃ বর্তমান সময়ে প্রচলিত বিশ্বের বিভিন্ন প্রকারের সরকারগুলি হল—-

এককেন্দ্রীয় সরকার, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার, সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতিয় সরকার।

প্রশ্ন ২। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো—

উত্তরঃ সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য হল—-

(১) দুজন নেতা বা মুরব্বী : এই সরকারে দুজন নেতা বা মুরব্বীর ব‍্যবস্থা আছে। একজন প্রকৃত কার্যপালিকা আর অন‍্যজন নামমাত্র কার্যপালিকা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদটি হল প্রকৃত কার্যপালিকা এবং রাষ্ট্রপ্রধান জন (রাজা/রানী/রাষ্ট্রপতি) নামমাত্র কার্যপালিকা।

(২) কার্যপালিকার সদস‍্যগণ বিধান মণ্ডলেরও সদস্য : এই সরকারের কার্যপালিকা অর্থাৎ মন্ত্রী পরিষদের সদস‍্যগণ বিধান মণ্ডলেরও সদস্য।

প্রশ্ন ৩। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের দুটি দোষ এবং গুণের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের দুটি গুণ হল—

(১) সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে কার্যপালিকা এবং বিধান মণ্ডলের মধ্যে সু-সম্পর্ক ও সহযোগিতা থাকে। ফলে যে-কোন সমস্যা আইনের সহায়তায় সহজে সমাধান করা যায়।

(২) এই সরকার বিধান মণ্ডলের নিকট দায়বদ্ধ হওয়ার জন্য দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিপরীতে যাওয়া কোনো কাজ এই সরকার করতে পারে না।

(৩) এই শাসন ব‍্যবস্থায় দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শ ক্ষুণ্ন হয় না।

সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের দুটি দোষ হল—

(১) এই শাসন ব‍্যবস্থা দলীয় সমর্থনের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে প্রত‍্যেক দল নিজের দলের স্বার্থের দিকেই বেশি নজর দেয়। ফলে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

(২) এই শাসন ব‍্যবস্থায় সংখ‍্যাগরিষ্ঠ দলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পযর্ন্ত সমস্ত ক্ষমতা দলের নেতার হাতে চলে যায়।

(৩) এই সরকারে মন্ত্রীগণ বিভাগীয় কাজ- কর্মে প্রায়ই অনভিজ্ঞ হওয়ার জন্য অনেক সময় আমলাদের (আই.এস.অফিসার) উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে সরকারের কাজ-কর্মে আমলাদের প্রভাব বেশি হয় এবং সরকারটি আমলাতান্ত্রিক সরকারের রূপ নেয়।

প্রশ্ন ৪। ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের তিনটি অংগ—

(১) কার্যপালিকা।

(২) বিধান মণ্ডল।ও

(৩) ন‍্যায়পালিকা।

প্রত‍্যেকটি অংগ নিজের নিজের কর্মক্ষেত্র স্বাধীন।একটি আরেকটির পরিপূরক হয় না। রাষ্ট্রপতিয় সরকারের কার্যপালিকা বিধান মণ্ডলের নিকট দায়বদ্ধ হয় না। দুটির স্থিতি সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিধান মণ্ডলের সদস্য কার্যপালিকার সদস্য হতে পারে না। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের ন‍্যায় বা মতো রাষ্ট্রপতিয় সরকারের কার্যপালিকার সদস‍্যগণই বিধান মণ্ডলের কার্যপালিকায় অংশ নিতে পারে না।

প্রশ্ন ৫। রাষ্ট্রপতি-প্রধান সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের দুটি বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হল—-

(১) রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ কর্তৃক ভোটে নির্বাচিত হন।যথা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি।

(২) রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের মধ্যে পার্থক্য নাই। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মতো রাষ্ট্রপতিয় সরকারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান বলে দুইজন ব‍্যক্তি থাকে না। এখানে রাষ্ট্রপতিই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সরকার প্রধানও।

(৩) রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দিষ্ট কার্যকাল : রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অমান্য করলে তাঁকে পদ‍ত‍্যাগ করতে হয়।

(৪) রাষ্ট্রপতি শাসন ব‍্যবস্থায় কার্যপালিকা এবং বিধান মণ্ডলীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে না।

প্রশ্ন ৬। এককেন্দ্রীয় সরকারের দুটি দোষ গুণ ও দুটি গুণের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ এককেন্দ্রীয় সরকারের দুটি গুণ হল—

(১) এককেন্দ্রীয় শাসন ব‍্যবস্থায় সমগ্ৰ দেশের জন্য একই ধরনের আইন ও শাসন ব‍্যবস্থা প্রচলিত থাকায় প্রশাসন শক্তিশালী হয় এবং জাতীয় ঐক্য গঠনের সহায়ক হয়। এখানে কোনো জটিলতা থাকে না।

(২) এককেন্দ্রীয় সরকারে সরকার পরিচালনায় ব‍্যয় কম। ফলে উন্নয়নমূলক কাজে অধিক ধন ব‍্যয় করার সুযোগ থাকে।

(৩) জরুরীকালীন অবস্থায় এককেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ উপযোগী। অতি ক্ষীণপ্রভাবে এই ধরনের সরকার যে-কোন ব‍্যবস্থা গ্ৰহণ এবং কার্যকর করতে পারে।

এককেন্দ্রীয় সরকারের দুটি দোষ হল—-

(১) এককেন্দ্রীয় শাসন ব‍্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমলা সকলেই প্রকৃতপক্ষে শাসন চালায়।

(২) একটি বৃহৎ সরকারের রাষ্ট্রের পক্ষে এই সরকার উপযুক্ত নয়।

(৩) এককেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন রকমের স্থানীয় সমস‍্যার কাজকর্মে মনযোগ দেওয়া সম্ভবপর হয় না।

দীর্ঘ উত্তর লেখ :

প্রশ্ন ১। রাষ্ট্রপতি-প্রধান সরকারের দোষ-গুণ নিয়ে একটি আলোচনা প্রস্তুত করো।

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতিয় সরকারের গুণগুলি নিচে দেওয়া হল—-

(১) রাষ্ট্রপতি শাসিন সরকারের প্রধান গুণ হল সরকারের স্থায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসননীতি প্রবর্তন করা যায়।

(২) ক্ষমতার পৃথকীকরণ ব‍্যবস্থার জন্য সরকারের তিনটি অংগই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। এই  সরকারে ‘অবরোধন ও সঞ্চলন’ (checks and balance) নীতি থাকার জন্য সরকারের কোনো অংগই স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।

(৩) রাষ্ট্রপতি চালিত সরকার দেশের যুদ্ধ প্রভৃতি জরুরী অবস্থায় বিশেষ উপযোগী। কারণ রাষ্ট্রপতি কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে ও কার্যকরী করতে পারেন।

(৪) কার্যপালিকা শক্তিশালী হওয়ার জন্য এই ধরনের সরকার দেশের ঐক‍্য ও সংহতি সহজে রক্ষা করতে পারে।

(৫) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার রাজনৈতিক দলের প্রভাব হতে মুক্ত হওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কার্যসম্পাদন করার ক্ষেত্রে সংসদের সংখ‍্যাগরিষ্ঠতা সমর্থনের উপর নির্ভর করতে হয় না

(৬) এই শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারী হতে পারেন না। কারণ রাষ্ট্রপতিকে আইন ও রাজস্বের জন্য আইনসভার উপর নির্ভর করতে হয়।

(৭) রাষ্ট্রপতি শাসন ব‍্যবস্থায় মন্ত্রীসভা গঠনের ব‍্যাপারে রাষ্ট্রপতি সম্পূর্ণ স্বাধীন। ফলে তিনি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব‍্যক্তিদিগকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিতে পারেন।

রাষ্ট্রপতিয় সরকারের দোষসমূহ হল—-

(১) রাষ্ট্রপতিয় সরকারে রাষ্ট্রপতিকে বিধানমণ্ডল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে এই সরকার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশংকা থাকে।

(২) ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির জন্য রাষ্ট্রপতিয় সরকারের কার্যপালিকা ও বিধানমণ্ডলের মধ্যে সহযোগিতা থাকে না। সামগ্ৰিকভাবে দেশের প্রশাসনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

(৩) রাষ্ট্রপতি সরকারের অন‍্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর অনমনীয় সংবিধান। সংবিধানটি অনমনীয় হলে সংশোধন করতে জটিলতা আসে।

(৪) রাষ্ট্রপতিয় সরকারে কার্যপালিকা ও বিধানমণ্ডল ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হলে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

(৫) এই সরকারে মন্ত্রীত্ব (সেক্রেটারী/সচিব) লাভের ক্ষেত্রে ব‍্যক্তিগত আনুগত‍্যই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা হতে বা থেকে অধিক গুরুত্ব লাভ করার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন ২। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।

উত্তরঃ বর্তমান সময়ে বহু সমাদৃত সরকার হল সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। প্রকৃতপক্ষে কার্যপালিকা ও বিধানমণ্ডলের সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে এই সরকারকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বলা হয়। এই শ্রেণির সরকারের জন্মস্থান হয়েছে ইংল্যান্ড। সেইজন্য এই সরকারকে বেষ্ট মিনিষ্টার মডেল সরকার বলা হয়।

সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ হল—–

(১) দুজন মুরব্বী : এই সরকারে দুজন মুরব্বী বা নেতার ব‍্যবস্থা আছে। একজন প্রকৃত কার্যপালিকা এবং অন‍্যজন নামমাত্র কার্যপালিকা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদটি হল প্রকৃত কার্যপালিকা এবং রাষ্ট্রপ্রধান জন (রাজা/রানী/ রাষ্ট্রপতি) নামমাত্র কার্যপালিকা হয়—-

(২) কার্যপালিকা সদস‍্যগণ বিধানমণ্ডলেরও সদস্য : এই সরকারে কার্যপালিকা অর্থাৎ মন্ত্রীপরিষদের সদস‍্যগণ বিধানমণ্ডলেরও সদস্য।

(৩) বিধানমণ্ডল ও কার্যপালিকা ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ : সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে বিধানমণ্ডল ও কার্যপালিকার নিবিড় সম্পর্ক।

(৪) মন্ত্রীপরিষদ বিধানমণ্ডলের নিকট দায়বদ্ধ : সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে কার্যপালিকা সকল কাজ করার জন্য বিধানমণ্ডলের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। বিধানমণ্ডল অনাস্থা প্রস্তাব গ্ৰহণ করলে মন্ত্রীপরিষদ পদ‍ত‍্যাগ করতে বাধ্য হয়।

(৫) মন্ত্রীপরিষদের সামূহিক দায়বদ্ধতা : এই সরকারে মন্ত্রীপরিষদটি সাময়িকভাবে বিধানমণ্ডলের নিকট দায়বদ্ধ হয়। মন্ত্রীপরিষদের একজন সদস‍্যের ব‍্যর্থতার জন্য সকল সদস‍্যই দায়বদ্ধ হয়।

প্রশ্ন ৩। যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সরকার বর্তমানে কেন জনপ্রিয় হয়েছে, উদাহরণসহ আলোচনা করো।

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে একটি কেন্দ্রীয় এবং সঙ্গে কয়েকটি রাজ‍্য সরকার থাকে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকাতেই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সৃষ্টি হয়েছিল।সেজন্য আমেরিকাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের গৃহভূমি’ (Homeland of Federation) বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণসমূহ—–

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে প্রতিটি রাজ‍্যই স্বায়ত্ত শাসনের সুবিধা লাভ করার সঙ্গে একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের অংগরাজ‍্য হয়। ফলে আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসন এবং জাতীয় একতা দুটির সুবিধাসমূহ লাভ করতে দেখা যায়।

(২) বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, ভাষা ও ধর্মের লোক বসবাস করা একটি বিশাল রাষ্ট্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বেশি ফলপ্রসু হয়।

(৩) এই শাসন ব‍্যবস্থায় রাজ‍্যসরকার স্থানীয় স্বার্থ জড়িত সমস‍্যাগুলির দ্রুত সমাধান করতে পারে। এর ফলে জাতীয় গুরুত্ব থাকা বিষয়গুলিতে অধিক গুরুত্ব দিতে কেন্দ্রীয় সরকার সুবিধা পায়।

(৪) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ব‍্যবস্থা থাকায় অন্তর্বিপ্লবের আশংকা কম থাকে এবং কেন্দ্রীয় সরকার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার প্রবণতা থাকে না।

(৫) এই শাসনব‍্যবস্থা গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুযায়ী গঠিত হয়। স্থানীয় শাসনকার্যে জনগণকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষসমূহ—-

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ব‍্যবস্থা নিয়ে কোনো কোনো সময় বিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদা রাজ‍্য সরকারগুলির উপর কর্তৃত্ব চাপাতে চায় এবং রাজ‍্য সরকারগুলি সর্বদা বেশি ক্ষমতা ভোগ করতে চায়।

(২) এই সরকারে কেন্দ্র ও রাজ‍্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

(৩) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সংবিধানটি দৃঢ়তম অনমনীয় হওয়ার জন্য সময় ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে সংবিধান সংশোধন করতে জটিলতা আসে। ফলে প্রগতিতে বাধা আসে।

(৪) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে আঞ্চলিকতাবাদ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আঞ্চলিকতাবাদ যুক্তরাষ্ট্রীয় দুর্বল করে।

(৫) এই শাসনব‍্যবস্থায় দেশে দুই ধরনের সরকার থাকায় প্রশাসনিক খরচ খুব বেশি হয়।

(৬) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব‍্যবস্থায় কোনো কোনো অবশিষ্ট অঙ্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাজ‍্য গঠনের চেষ্টা অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। 

কিছু কিছু দোষ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থা গণতান্ত্রিক যুগে শ্রেষ্ঠ শাসনব‍্যবস্থা বলে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড ও ভারতবর্ষের মতো দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার সফল হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। এক-কেন্দ্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ যে শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন‍্যস্ত থাকে তাকে এককেন্দ্রীয় সরকার বলে। দেশের স্থানীয় অঞ্চলসমূহ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ করে এবং উহার নিকট হতে ক্ষমতা পেয়ে থাকে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, ইটালী, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশে এই সরকার আছে।

এককেন্দ্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে উল্লেখ করা হল—–

(১)শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার : এই ধরণের সরকারে সংবিধানে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ন‍্যস্ত থাকে। ফলে এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থিতি অতি শক্তিশালী।

(২) লিখিত বা অলিখিত সংবিধান : এককেন্দ্রীয় সরকারে সংবিধানটি লিখিত বা অলিখিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ইংল‍্যান্ডের সংবিধানটি অলিখিত এবং নেদারল্যান্ডের সংবিধানটি লিখিত।

(৩) একক নাগরিকত্ব : একখ নাগরিকত্ব এককেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় থাকার মতো দ্বি-নাগরিকত্বের ব‍্যবস্থা নাই।

(৪) দুর্বল ন‍্যায়পালিকা : এককেন্দ্রীয় সরকারে আইনসভার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। আইনসভা প্রস্তুত করা আইন সমগ্ৰ দেশের জন্য প্রযোজ্য হয় এবং সেই আইনের উপরে ন‍্যায়িক পুনরীক্ষার  ব‍্যবস্থা থাকে না। আইনসভা প্রণয়ন করা আইনকে ন‍্যায়পালিকা অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করতে পারবে না।

(৫) নমনীয় সংবিধান : এককেন্দ্রীয় সরকারের সংবিধান সাধারণত নমনীয় হয়। সরকার নিজের প্রয়োজন সংবিধানটি সংশোধন করতে পারে।

(৬) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় কোনরূপ ক্ষমতা ভাগ হয় না।

(৭) এককেন্দ্রীয় সরকার মন্ত্রীসভা অথবা রাষ্ট্রপতি শাসিত হতে পারে।

ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশে এককেন্দ্রীয় শাসন ব‍্যবস্থার প্রচলন আছে।

প্রশ্ন ৫। এক-কেন্দ্রীয় সরকার কি প্রকৃতই গণতান্ত্রিক ? সমালোচনামূলক যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ যে দেশের সম্পূর্ণ শাসন ক্ষমতা একমাত্র কেন্দ্রের হাতে থাকে তাকে এককেন্দ্রীয় সরকার বলে। এখানে আঞ্চলিক সরকার থাকতে পারে। কিন্তু তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, ইটালী, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এই সরকার আছে।

এককেন্দ্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে দেওয়া হল : 

(১) শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার : এককেন্দ্রীয় সরকারে সংবিধানে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে ন‍্যস্ত করে। ফলে এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থিতি অতি শক্তিশালী।

(২) লিখিত বা অলিখিত সংবিধান : এককেন্দ্রীয় সরকারে সংবিধানটি লিখিত বা অলিখিত হতে পারে।

(৩) এককেন্দ্রীয় শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রে একটি নাগরিকতা স্বীকার করে।

(৪) দুর্বল ন‍্যায়পালিকা : এককেন্দ্রীয় সরকারে আইনসভার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। আইনসভা প্রস্তুত করা আইনই সমগ্ৰ দেশের জন্য প্রযোজ্য হয়। আইনসভা প্রণয়ন করা আইনকে ন‍্যায়পালিকা অসংবিধানিক বলে ঘোষণা করতে পারবে না।

(৫) নমনীয় সংবিধান : এককেন্দ্রীয় সরকারের সংবিধান নমনীয় হয়। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের প্রয়োজন সংবিধান সংশোধন করতে পারে।

(৬) এককেন্দ্রীয় রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ আদালতের কোনো গুরুতর ভূমিকা নাই। 

(৭) এককেন্দ্রীয় সরকার মন্ত্রীসভা শাসিত অথবা রাষ্ট্রপতি শাসিত হতে পারে।

এককেন্দ্রীয় সরকারের গুণ :

(১) এককেন্দ্রীয় সরকারে হমগ্ৰ দেশের জন্য একই ধরনের প্রশাসন প্রয়োগ ও কার্যকরী করার জন্য প্রশাসন শক্তিশালী হয়। এখানে কোনো জটিলতা থাকে না।

(২) এককেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ব‍্যবস্থায় সমগ্ৰ দেশে একই ধরনের আইন ও শাসন ব‍্যবস্থা প্রচলিত থাকে বলে জাতীয় ঐক‍্য গঠনের সহায়ক।

(৩) এককেন্দ্রীয় সরকারে সরকার পরিচালনার ব‍্যয় কম। ফলে উন্নয়নমূলক কাজে অধিক ধন বা অর্থ ব‍্যয় করার সুযোগ থাকে।

(৪) এককেন্দ্রীয় সরকার আভ‍্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব‍্যাপারে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে।

(৫) জরুরী অবস্থাকালে দ্রুত ব‍্যবস্থা গ্ৰহণ এবং কার্যকরী করা এই সরকারের পক্ষে সহজসাধ্য।

(৬) এই সরকারের সংবিধানটি নমনীয় চরিত্রের হওয়ার জন্য পরিবেশ ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে সহজে সংশোধন করতে পারা যায়।

(৭) কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য থাকায় আঞ্চলিক সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সংঘাত অথবা বিরোধ কম।ফলে সরকারটি শক্তিশালী হয়।

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য ও গুণসমূহ ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এইটি অনুমান করতে পারি যে এককেন্দ্রীয় সরকার প্রকৃতই গণতান্ত্রিক। অবশ্য এইক্ষেত্রে শাসকজন স্বেচ্ছাচারী হতে হবে না।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। রাজতন্ত্র বলতে কি বোঝ ? এটি কতপ্রকার ও কি কি ?

উত্তরঃ রাজার শাসন প্রচলিত থাকা শাসন পদ্ধতিকে রাজতন্ত্র বলে। রাজতন্ত্র সবচেয়ে পুরান ধরনের সরকার।

রাজতন্ত্র দুই প্রকারের— চরম রাজতন্ত্র এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বা সীমিত রাজতন্ত্র।

প্রশ্ন ২। সীমিত রাজতন্ত্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে সকল রাষ্ট্রে রাজার হাতে কোনো ক্ষমতা থাকে না তাকে সীমিত রাজতন্ত্র বলে।

যেমন—ইংল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি রাষ্ট্রে রাজা বা রানী আছে। যদিও সেখানে রাজা বা রানীর শাসন চলে না । এইসকল রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শাসনই চলে।

প্রশ্ন ৩। অভিজাত তন্ত্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে সকল ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রের ক্ষমতা রাজবংশীয় অথবা কিছু সংখ্যক লোকের উপর ন‍্যস্ত থাকে তাকে অভিজাত তন্ত্র বলে।

প্রশ্ন ৪। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক কাকে বলে ?

উত্তরঃ অ্যারিষ্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

প্রশ্ন ৫। ষ্টিফেনলীক আধুনিক যুগের সরকারসমূকে কয়ভাগে ভাগ করেছেন ও কি কি ?

উত্তরঃ ষ্টিফেনলীক আধুনিক যুগের সরকারকে দু, ভাগে করেছেন—— একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র ও গণতন্ত্র।

প্রশ্ন ৬। একনায়কতন্ত্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ একজন কর্তৃক পরিচালিত শাসন ব‍্যবস্থাকে একনায়কতন্ত্র বলে। ‘একজাতি, একরাষ্ট্র ঐ একনায়ক’ এই শাসন ব‍্যবস্থার মূল মন্ত্র।

প্রশ্ন ৭। গণতন্ত্র কাকে বলে ?

উত্তরঃ গণতন্ত্র বলতে সেই শাসন ব‍্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে জনগণই শাসন ক্ষমতার অধিকারী। গণতন্ত্র হচ্ছে প্রজাসাধারণের দ্বারা পরিচালিত সরকার। আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এব্রাহাম লিঙ্কনের মতে ‘জনসাধারণকে নিয়ে জনসাধারণের কল‍্যাণে জনসাধারণ কর্তৃক যে শাসন ব‍্যবস্থা পরিচালিত হয় তাহাই গণতন্ত্র’। (Democracy is a Government of the people by the people and for the people.) 

প্রশ্ন ৮। গণতন্ত্র সর্বপ্রথম কোথায় প্রচলন হয়েছিল ?

উত্তরঃ গ্ৰিস দেশের এথেন্স নগরে সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের প্রচলন হয়েছিল।

প্রশ্ন ৯। উত্তরঃ পৃথিবীতে কে সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের প্রচলন করেছিলেন ?

উত্তরঃ এথেন্সের সালোন পৃথিবীতে সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের প্রচলন করেছিলেন।

প্রশ্ন ১০। বর্তমানে কোন ধরনের সরকার সবচেয়ে ভাল ?

উত্তরঃ সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার।

প্রশ্ন ১১। বর্তমানে আমেরিকায় কোন ধরনের সরকার প্রচলিত আছে ?

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি চালিত সরকার।

প্রশ্ন ১২। পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ কোনটি ?

উত্তরঃ ভারতবর্ষ।

প্রশ্ন ১৩। ভারতবর্ষে কি প্রকার সরকার স্থাপিত হয়েছে ?

উত্তরঃ সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার।

প্রশ্ন ১৪। আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে কোন প্রকারের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রচলন বেশি করে দেখা যায়।

উত্তরঃ সংসদীয় গণতন্ত্র।

প্রশ্ন ১৫। প্লেটো কোন ধরনের শাসনের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন ?

উত্তরঃ প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসনের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৬। গণতন্ত্র কত প্রকার ও কি কি ?

উত্তরঃ গণতন্ত্র দুই প্রকার—প্রত‍্যক্ষ গণতন্ত্র ও পরোক্ষ গণতন্ত্র।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসন ব‍্যবস্থায় সরকারসমূহকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে এবং কি কি ?

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শাসন ব‍্যবস্থায় সরকারসমূহকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

যেমন——-

(১) এককেন্দ্রীয় সরকার।

(২) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।

(৩) সংসদীয় সরকার।ও

(৪) রাষ্ট্রপতিয় সরকার।

প্রশ্ন ২। এককেন্দ্রীয় সরকার কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে দেশের সম্পূর্ণ শাসন ক্ষমতা একটি মাত্র কেন্দ্রের হাতে থাকে তাকে এককেন্দ্রীয় সরকার বলে।এখানে প্রাদেশিক বা স্থানীয় সরকার থাকতে পারে। কিন্তু তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন।প্রাদেশিক বা স্থানীয় সরকারগুলি সাংবিধানিক হয় না। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপান, ইটালী, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশে এই সরকার আছে।

প্রশ্ন ৩। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কাকে বলে ?

উত্তরঃ যে শাসন ব‍্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় সরকার ও কয়েকটি রাজ‍্য সরকার পাশাপাশি শাসনকার্য পরিচালনা করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বলে। এই শাসন ব‍্যবস্থায় একটি সংবিধান থাকে। ঐ সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ‍্য সরকারের মধ্যে শাসন ক্ষমতা ভাগ হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ‍্য সরকারের বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি সুপ্রীম কোর্ট আছে। ভারতবর্ষে এই শাসন ব‍্যবস্থা প্রচলিত আছে।

প্রশ্ন ৪। সংসদীয় গণতন্ত্র কি ?

উত্তরঃ যে গণতান্ত্রিক সরকার সংসদ বা পার্লামেন্টকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে স্বীকৃতি দেয় এবং সংসদের মাধ্যমে সরকারের সমস্ত কার্য পরিচালনা করে তাকে সংসদীয় গণতন্ত্র বলা হয়।

প্রশ্ন ৫। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কি ?

উত্তরঃ যে শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রের সমস্ত শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন‍্যস্ত থাকে এবং তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরাসরিভাবে জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হন তাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি- প্রধান সরকার প্রচলিত আছে।

প্রশ্ন ৬। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হল: 

(১) রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণ কর্তৃক ভোটে নির্বাচিত হন। যথা— আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি।

(২) এই শাসন ব‍্যবস্থায় শাসন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে।

(৩) রাষ্ট্রপতি তাঁর শাসনকার্যের জন্য বিধানমণ্ডলীর নিকট দায়ী থাকেন না। 

(৪) রাষ্ট্রপতি তাঁর শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য কয়েকজন মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। মন্ত্রীগণ তাঁদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট দায়ী থাকেন।

প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারকে দায়িত্বহীন সরকার বলা হয় কেন ?

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে প্রশাসন বিভাগ কারও নিকটে দায়িত্বশীল হয়ে থাকে না, সেইজন্য এই সরকারকে দায়িত্বহীন সরকার বলা হয়।

প্রশ্ন ৮। সংসদীয় সরকারকে মন্ত্রীসভা পরিচালিত সরকার বলা হয় কেন।

উত্তরঃ মন্ত্রীসভা সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারের বিভিন্ন কাজকর্ম পরিচালনা করে বলে একে মন্ত্রীসভা পরিচালিত সরকার বলা হয়। এই সরকারকে দায়িত্বশীল সরকার বলেও অভিহিত করা হয়। কারণ মন্ত্রীসভাকে এর কাজকর্মের জন্য সংসদের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে থাকতে হয়।

প্রশ্ন ৯। বর্তমানে কোন কোন দেশে এককেন্দ্রীয় সরকারের প্রচলন আছে ?

উত্তরঃ বর্তমানে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালী, জাপান, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এককেন্দ্রীয় সরকারের প্রচলন আছে।

প্রশ্ন ১০। ভারতবর্ষে কয় ধরনের সরকার আছে ও কি কি ?

উত্তরঃ ভারতবর্ষে দুই ধরনের সরকার আছে। যথা—-

(১) কেন্দ্রীয় সরকার।ও 

(২) রাজ‍্য সরকার।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ষ্টিফেন লীওকক (Stephen Leocock) কিভাবে সরকারের শ্রেণিবিভাজন করেছেন লেখ।

উত্তরঃ আধুনিক পণ্ডিতগণের মধ্যে ষ্টিফেন লীওকক-এর সরকারের শ্রেণিবিভাগ প্রায় সকলেই মেনে নিয়েছে। তাঁর মতে সরকারসমূহকে দুটি বৃহৎ অর্থাৎ দুটি বড় ভাগে ভাগ করা হয়েছে—–

(১) স্বৈরতন্ত্র (Dictatorship) ও

(২) গণতন্ত্র (Democracy)

গণতন্ত্রকে আবার দুটি  ভাগে ভাগ করা হয়েছে—-

(১) প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র (Direct Democracy)

(২) পরোক্ষ গণতন্ত্র (Indirect Democracy) সেইভাবে পরোক্ষ গণতন্ত্র দুই প্রকার হতে পারে—-

(ক) সীমিত বা সাংবিধানিক রাজতন্ত্র (Limited or Constitutional Monarchy) ও 

(খ) প্রজাতন্ত্র (Republic)

পুনরায় এই দুই সরকার 

(১) এককেন্দ্রীয় বা একাত্মক (Unitary) ও 

(২) যুক্তরাষ্ট্রীয় সংখ‍্যাত্মক (Federal)দুই ভাগে বিভক্ত। এই দুই প্রকার আবার (ক) রাষ্ট্রপতি শাসিত (Presidential) ও 

(খ) মন্ত্রীসভা পরিচালিত বা সংসদীয় (Cabinet or Parliamentary) এই দুইভাবে বিভক্ত। সুতরাং তাঁর মতে সরকার আট প্রকার।

প্রশ্ন ২। সংসদীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সংসদীয় সরকার বা মন্ত্রীপরিষদীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের মধ্যে কতকগুলি পার্থক্য দেখা যায়। যথা— 

(১) সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদীয় শাসনব‍্যবস্থায় বংশানুক্রমিক রাজা , রানী বা নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি থাকেন। সংবিধান অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী নহেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীপরিষদই রাষ্ট্রপতি প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। ইংল্যান্ডের রানী এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি নামে মাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতিই দেশের প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। 

যেমন—-আমেরিকার রাষ্ট্রপতি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সকল ক্ষমতার অধিকারী।

(২) সংসদীয় শাসনব‍্যবস্থায় প্রকৃত শাসনক্ষমতার অধিকারী মন্ত্রীসভা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব‍্যবস্থার সকল ক্ষমতার অধিকারী রাষ্ট্রপতি।

(৩) সংসদীয় শাসনব‍্যবস্থায় মন্ত্রীরা তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি তাঁর কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন না, কারণ তিনি আইনসভার সদস্য না।

(৪) সংসদীয় শাসনব‍্যবস্থায় মন্ত্রীপরিষদ সংখ‍্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবর্গের দ্বারা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী অন‍্যান মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব‍্যবস্থায় মন্ত্রীসভার সদস‍্যগণ রাষ্ট্রপতির অধীনস্থ কর্মচারী মাত্র।

(৫) সংসদীয় শাসনব‍্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চালিত সরকারে শাসনব‍্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে এইরূপ সহযোগিতা নাও থাকতে পারে।

(৬) সংসদীয় শাসনব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি আইনসভা ভেঙ্গে দিতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চালিত শাসনব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি আইনসভা ভেঙ্গে দিতে পারে না।

(৭) সংসদীয় শাসনব‍্যবস্থায় জরুরী অবস্থায় মন্ত্রীপরিষদের পক্ষে দ্রুত কার্যকরী ব‍্যবস্থা গ্ৰহণের অসুবিধা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চালিত শাসনব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থায় দ্রুত কার্যকরী ব‍্যবস্থা গ্ৰহণ করতে পারেন।

(৮) সংসদ চালিত শাসনব‍্যবস্থায় , যে-কোন সিদ্ধান্ত সংখ‍্যাগরিষ্ঠের ভোট দ্বারা গ্ৰহণ করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চালিত শাসনব‍্যবস্থায় সিদ্ধান্তগুলি রাষ্ট্রপতির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

(৯) সংসদ চালিত শাসনব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি কোনো মন্ত্রীকে পদচ‍্যুত করতে পারেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি চালিত শাসনব‍্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে যে-কোন মন্ত্রীকে পদচ‍্যুত করতে পারেন।

প্রশ্ন ৩। এককেন্দ্রীয় সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে কি কি পার্থক্য আছে উল্লেখ কর।

উত্তরঃ এককেন্দ্রীয় ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মধ্যে কতকগুলি পার্থক্য দেখা যায়, যথা—–

(১) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় একটিমাত্র শাসনব‍্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকার বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় সরকার এবং একাধিক রাজ‍্য সরকার পাশাপাশি থাকে।

(২) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সরকারের শাসনক্ষমতার কোনো ভাগ হয় না।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ‍্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ হয়।

(৩) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সরকারই হল ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সমস্ত ক্ষমতা সংবিধানের উপর ন‍্যস্ত থাকে।

(৪) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত দুরকমই হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সংবিধান অবশ্যই লিখিত হতে হবে।

(৫) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সংবিধান নমনীয় ও অনমনীয় দুরকমই হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সংবিধান সাধারণত অনমনীয় হয়।

(৬) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় উচ্চ বিচারালয়ের কোনো গুরুত্ব নেই বা এর কোনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচারালয় অবশ্যই থাকবে।

(৭) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় স্থানীয় রাজ‍্য সরকারগুলির পৃথক অস্তিত্ব ও সত্তা থাকে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় স্থানীয় রাজ‍্য সরকারগুলির পৃথক অস্তিত্ব ও সত্তা থাকে।

(৮) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় জরুরী অবস্থায় দ্রুত গ্ৰহণ করা যায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত লওয়া সম্ভব হয় না।

(৯) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সরকারের গঠনপদ্ধতি সহজ ও সরল । কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সরকারের গঠনপদ্ধতি সহজ ও সরল নয়।

(১০) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় খরচের পরিমাণ কম হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় খরচের পরিমাণ বেশি হয়।

(১১) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় অনেক সময় আঞ্চলিক স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় আঞ্চলিক স্বার্থ উপেক্ষিত হয় না।

প্রশ্ন ৪। আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে সংসদীয় গণতন্ত্রের অধিক প্রচলনের কারণসমূহ কি কি বলে বিবেচনা কর ?

উত্তরঃ আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে সংসদীয় গণতন্ত্রের অধিক প্রচলনের কারণসমূহ নিম্নে উল্লেখ হল :

(১) এই শাসনব‍্যবস্থায় আইনসভা ও শাসনবিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় সু- শাসন ব‍্যবস্থা গঠন করা সম্ভব হয়।

(২) মন্ত্রীপরিষদ তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকেন বলে স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না।

(৩) এই শাসনব‍্যবস্থায় দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শ ক্ষুণ্ন হয় না।

(৪) এই শাসনব‍্যবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলাপ আলোচনার সাহায্যে শাসনকার্য পরিচালিত হয় বলে দেশের সামগ্ৰিক কল‍্যাণ সাধন হয়।

(৫) সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকারে জরুরী অবস্থায় প্রয়োজন অনুসারে সহজেই শাসনব‍্যবস্থা পরিবর্তন করা যায়।

(৬) এই শাসনব‍্যবস্থায় নাগরিকদের রাজনৈতিক চেতনা জাগ্ৰত হয়।

প্রশ্ন ৫। সংসদীয় সরকারের গুণগুলি ও দোষগুলি আলোচনা কর।

উত্তরঃ সংসদীয় সরকারের গুণগুলি হল—

(১)সংসদীয় সরকারে শাসনব‍্যবস্থায় আইনসভা ও শাসন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা বর্তমান থাকায় সুষ্ঠু শাসনব‍্যবস্থা গঠন করা সম্ভব।

(২) সংসদীয় সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। কারণ সংসদ সর্বদা মন্ত্রীসভা নিয়ন্ত্রণ করে।

(৩) যেহেতু বিরোধী দল সর্বদা সরকারের কাজের উপর দৃষ্টি রাখে সেইজন্য সংসদীয় সরকার সাধারণত দুর্নীতি মুক্ত হয়।

(৪) প্রয়োজন অনুসারে এই শাসনব‍্যবস্থা পরিবর্তন করা যায়। কারণ, এখানে পরিস্থিতির অনুকূলে মন্ত্রীসভা পরিবর্তন হতে পারে। অর্থাৎ জনমতের অনুকূলে এই ধরণের সরকার পরিবর্তন হতে পারে।

(৫) এই শাসনব‍্যবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সাহায্যে শাসনকার্য পরিচালিত হয় বলে দেশের সামগ্ৰিক কল‍্যাণ সাধন হয়।

সংসদীয় সরকারের দোষগুলি হল—-

(১) সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে যদি কোনো একটি রাজনৈতিক দল ও বিধান মণ্ডল সংখ‍্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করতে না পারে, তখন মোর্চা সরকার গঠন হয়। মোর্চা সরকার অস্থায়ী এবং যে-কোন সময়ে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

(২) এই শাসনব‍্যবস্থা দলীয় সমর্থনের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে প্রত‍্যেক দল নিজের দলের স্বার্থের দিকেই বেশি নজর দেয়। ফলে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

(৩) এই শাসনব‍্যবস্থা একটি অস্থায়ী শাসনব‍্যবস্থা। মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ হলে মন্ত্রীসভার পতন ঘটে। সুতরাং এইরূপ শাসনব‍্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী নীতি গ্ৰহণ করা সম্ভব হয় না।

(৪) মন্ত্রীপরিষদ সরকার বহু শাসক নিয়ে গঠিত বলে যুদ্ধ ইত্যাদি জরুরী ব‍্যবস্থার সময়ে কোনো দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারে না।

(৫) এই শাসনব‍্যবস্থার সংখ‍্যাগরিষ্ঠ দলের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শেষপর্যন্ত সমস্ত ক্ষমতা দলের নেতার হাতে চলে যায়।

(৬) যে সকল দেশে অনেকগুলি রাজনৈতিক দল থাকে, সেখানে মন্ত্রীসভা পুনঃ পুনঃ পরিবর্তন হয়। এর ফলে দেশের জন্য কোনরূপ কল‍্যাণমূলক কার্যসূচী গ্ৰহণ করা যায় না।

প্রশ্ন ৬। এককেন্দ্রীয় সরকারের দোষ-গুণগুলি বর্ণনা কর।

উত্তরঃ এককেন্দ্রীয় সরকারের গুণগুলি নিম্নরূপ : 

(১) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় সমগ্ৰ দেশে একই ধরনের আইন ও শাসনব‍্যবস্থা প্রচলিত থাকে বলে ইহা দেশের ঐক‍্য, শান্তি ও প্রগতির জন্য সহায়ক।

(২) এককেন্দ্রীয় সরকার আভ‍্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব‍্যাপারে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারে।

(৩) জরুরী অবস্থাকালে দ্রুত গ্ৰহণ এবং কার্যকরী করা এই সরকারের পক্ষে সহজসাধ্য। কারণ, সকল ধরনের সিদ্ধান্ত এই সরকার গ্ৰহণ করে।

(৪) এই ধরনের সরকারে বিভিন্ন উন্নতিবিভাগের মধ্যে সু-সমন্বয় থাকে। ফলে সরকার দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনীয় কাজকর্মগুলি পরিচালনা করতে পারে।

(৫) এককেন্দ্রীয় সরকারের গঠন পদ্ধতি সহজ ও সরল। প্রশাসনিক ব‍্যয়ভার কম হয়।

(৬) এককেন্দ্রীয় রাষ্ট্রের সংবিধান সংশোধন সহজেই করা যায়।

এককেন্দ্রীয় সরকারের দোষসমূহ : 

(১)বৃহদায়তন ও  বিরাট জনবহুল দেশে এই শাসনব‍্যবস্থার দ্বারা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা বড়ই কষ্টকর।

(২) কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সম্পূর্ণ শাসনক্ষমতা থাকায় স্থানীয় শাসকরা অনেকটা উদাসীন থাকেন। এই ধরনের সরকার গণতন্ত্রের পক্ষে উপযোগী নয়।

(৩) কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন রকমের স্থানীয় সমস‍্যার কাজকর্ম মনযোগ দেওয়া সম্ভবপর হয় না।

(৪) এককেন্দ্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সব ক্ষমতা ন‍্যস্ত থাকার জন্য সরকার দেশে স্বৈরাচারী শাসনব‍্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারে।

(৫) এককেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে দেশের দূরতম আঞ্চলিক সমস‍্যাগুলির দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করা সম্ভব হয় না।

(৬) একটি বৃহৎ দেশে ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত‍্যাদির বিভিন্নতা থাকতে পারে। এইরূপ স্থলে সমস্ত দেশের জন্য একপ্রকার আইন করা সম্ভব নয় এবং উপযোগীও নয়।

(৭) এককেন্দ্রীয় শাসনে জনসাধারণের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে না।

প্রশ্ন ৭। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের দোষ-গুণ সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের দোষ-গুণ সমূহ নিচে দেওয়া হল : 

গুণ : 

(১) রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রধান গুণ হল সরকারের স্থায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন। এর ফলে নিদিষ্ট সময়ের জন্য শাসননীতি প্রবর্তন করা যায়।

(২) রাষ্ট্রপতি চালিত সরকার দেশের যুদ্ধ প্রভৃতি জরুরী অবস্থায় বিশেষ উপযোগী। কারণ রাষ্ট্রপতি কারো সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে ও তাকে কার্যকরী করতে পারেন।

(৩) এই শাসনব‍্যবস্থায় আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগ পৃথক । শাসনবিভাগকে আইন প্রণয়ন করতে হয় না এবং আইনবিভাগকেও আইনগুলি কার্যকরী করার দায়িত্ব বহন করতে হয় না। যার ফলে উভয় বিভাগই নিজ নিজ দায়িত্ব ভালভাবে পালন করতে পারে।

(৪) এই ধরনের সরকার ব‍্যক্তি-স্বাধীনতার জন্য উপযোগী হয়, কারণ কোনো বিভাগই নিজে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নাগরিকের স্বাধীনতা হরণে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

দোষ : 

(১) রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারও নিকট দায়ী না থাকায় শাসন বিভাগ স্বেচ্ছাচারী হতে পারে।

(২) এই শাসনব‍্যবস্থায় আইনসভা ও শাসনবিভাগের মধ্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকার ফলে অনেক সময় নানাবিধ বিরোধ উপস্থিত হয়। এর ফলে শাসনব‍্যবস্থা অচল হয়ে বিকৃতরূপ ধারণ করে।

প্রশ্ন ৮। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণ ও দোষগুলি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণ :

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে স্বেচ্ছাচারী শাসনের পরিবর্তন হতে পারে।

(২) এই শাসনব‍্যবস্থায় আঞ্চলিক বা স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ সুরক্ষিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংহতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হয়।

(৩) এই শাসনব‍্যবস্থায় রাজ‍্য সরকার স্থানীয় স্বার্থ জড়িত সমস‍্যাগুলির দ্রুত সমাধান করতে পারে। এইজন্য তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভর করতে হয় না।

(৪) এই শাসনব‍্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় শাসনের ভারমুক্ত হওয়ার ফলে জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত ব‍্যাপারে অধিক মনযোগ দিতে পারে।

(৫) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থা গণতান্ত্রিক। এই শাসনব‍্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলিকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের দোষ :

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় দুই ধরনের সরকার থাকায় অনেক সময় শাসনব‍্যবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। বিভিন্ন রাজ‍্য বিভিন্ন ধরনের ভাষা সংস্কৃতি থাকায় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি ব‍্যাহত হয়।

(২) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার জরুরীকালীন অবস্থার সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারে না।

(৩) এই শাসনব‍্যবস্থায় দেশে দুই ধরনের সরকার থাকায় প্রশাসনিক খরচ খুব বেশি।

(৪) এই শাসনব‍্যবস্থায় সংবিধান সংশোধন করতে হলে রাজ‍্য সরকারগুলির সম্মিত নিতে হয়। রাজ‍্য সরকারগুলি অনেক সময় সম্মিত দিতে দেরী হয়। যার ফলে শাসনব‍্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।

(৫) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থায় কোনো কোনো অবশিষ্ট অঙ্গরাজ‍্য যুক্তরাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাজ‍্য গঠনের চেষ্টা করলে অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

কিছু কিছু দোষ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব‍্যবস্থা গণতান্ত্রিক যুগে শাসনব‍্যবস্থা বলে বিবেচনা করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top