Class 9 Bengali Chapter 8 ডাইনী

Class 9 Bengali Chapter 8 ডাইনী Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 9 Bengali Chapter 8 ডাইনী and select needs one.

Class 9 Bengali Chapter 8 ডাইনী

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 9 Bengali Chapter 8 ডাইনী for All Subject, You can practice these here…

ডাইনী

               Chapter – 8

ক-বিভাগ পদ্যাংশ

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তর :-

১। (ক) কীসের প্রভাবেছাতিফাটার মাঠের বীজ প্রসবিনী রসময়ীশক্তিবিনষ্ট হয়েছিল ?

উত্তরঃ কোনাে এক মহানাগের প্রভাবে ছাতিফাটার মাঠের বীজ প্রসবিনী রসময়ী শক্তি বিনষ্ট হয়েছিল।

(খ) ডাইনীটির বাসা কোথায় ? সেসমস্ত দিন কী করে ?

উত্তরঃ ছাতিফাটার মাঠের পূর্বপ্রান্তে দলদলির জলার উপরে রামনগরের সাহাদের আমবাগানে ডাকিনী বাস করে।

সে সারা দিন বারান্দায় বসে নিষ্পলক দৃষ্টিতে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকে।

(গ) কেন এ বৃদ্ধাটিকে ডাইনী বলা হত ?

উত্তরঃ গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে এই বৃদ্ধা যার দিকে দেখবে কিংবা কথা বলবে তারই মৃত্যু ঘটবে। গ্রামবাসীরা মনে করে বৃদ্ধার নিঃশ্বাসে বিষ। তাই এ বৃদ্ধাকে ডাইনী বলা হত।

(ঘ) শৈশবের কোন ঘটনায় তাকে ডাইনী বলে সন্দেহ করা হয়েছিল ?

উত্তরঃ বামুন বাড়ির হারু সরকারের ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। শিশুটির খুব পেটে ব্যথা হচ্ছিল। হারু সরকার ভেবেছিল শিশুটিকে আম দিয়ে মুড়ি খেতে দেখে বােধ হয় ডাইনীর নজর পড়েছে। এই ঘটনার পর থেকে তাকে ডাইনী বলে সন্দেহ শুরু হয়।

(ঙ) প্রতিবেশিরা ডাইনী সন্দেহে মেয়েটির প্রতি কী ধরনের আচরণ করত ?

উত্তরঃ প্রতিবেশিরা ডাইনী সন্দেহে মেয়েটিকে বাড়ির বারান্দায় পর্যন্ত উঠতে দিত না। বাড়িতে ঢুকলে প্রহার করে তাড়িয়ে দিত।

(চ) কোন বিশেষ ঘটনায় মেয়েটি ডাইনী সন্দেহে গ্রামছাড়া হল ?

উত্তরঃ মেয়েটির বাড়িতে একটি যুবতী তার শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রীষ্মের দুপুরে একটু জল খেয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বসে ছিল। পরে পরিচয় পেয়ে শিশুটিকে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় মেয়েটির দৃষ্টি থেকে নিজের সন্তানকে রক্ষা করার জন্য। এই ঘটনার পর লজ্জায় নিজের গ্রাম ছেড়েছিল।

(ছ) কী করে মেয়েটির নিজেরও বিশ্বাস জন্মাল যে তার দৃষ্টি অলুক্ষণে ?

উত্তরঃ বাউরিদের ছেলেটির মৃত্যুর পর মেয়েটির নিজেরও বিশ্বাস জন্মাল যে তার দৃষ্টি অলুক্ষণে।

(জ) হারু সরকারের বাড়ির ঘটনাটা কী ? এজন্য তার মনে কীরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

উত্তরঃ হারু সরকারের ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেজন্য হারু সরকার মেয়েটিকে প্রহার করেছিল। মেয়েটি হারু সরকারের বাড়ি গিয়ে অঝাের ধারায় কেঁদেছিল। তবে বারদুয়েক বমি করে ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ল। লজ্জায় ভয়ে মেয়েটি পালিয়ে গিয়েছিল।

(ঝ) সাবিত্রীর ছেলেকে দেখতে গিয়ে মেয়েটির কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল ?

উত্তরঃ সাবিত্রীর ছেলেকে দেখতে গেলে সাবিত্রীর শাশুড়ী গালিগালাজ করে ছিল। সাবিত্রীর শাশুড়ী বলেছিল ছেলেটির কিছু হলে মেয়েটিকে ছাড়া হবে না।

(ঞ) গল্পপাঠে তােমার কী মনে হয় ডাইনী বিষয়টি কী বাস্তব না এই কুটিল সমাজেরই সৃষ্টি ?

উত্তরঃ ডাইনী বিষয়টি মােটেইবাস্তব নয়। সংস্কারদীৰ্ণসমাজের কিছু কুটিল মানুষের সৃষ্টি হল ডাইনী।

২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।

(ক) ডাইনী বলে কথিত মেয়েটির নাম কী ?

উত্তরঃ ডাইনী বলে কথিত মেয়েটির নাম সরা বা সুরধনী।

(খ) সে ছাতিফাটার মাঠে কতদিন ধরে বাস করছে ?

উত্তরঃ সে ছাতিফাটার মাঠে ৪০ বছর ধরে বাস করছে।

(গ) ছাতিফাটার মাঠকে কেন এ-নামে ডাকা হয় ?

উত্তরঃ ছাতিফাটার মাঠের রূপ অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর। কয়েকটি খৈরী ও সেয়াফুল জাতীয় কাটাযুক্ত গুলা ছাড়া কোনাে বড়াে গাছ নেই, জল নেই। গােটাকয়েক শুষ্ক জলাশয় আছে। তাই এরূপ নামকরণ।

(ঘ) ডাইনীর চোখ, জিভ আর চুল কীরকম দেখতে ?

উত্তরঃ ডাইনীর ছােট আকারের চোখের মধ্যে ছিল পিঙ্গল বর্ণের দুটি তারা, ছুরির মতাে দৃষ্টি সে চোখে, জিভটা যেন নরুণ দিয়ে চেরা ছিল আর চুলগুলি ছিল শণের মতাে সাদা।

(ঙ) ভিক্ষা চাইতে গেলে লােকে তাকে কী করত ?

উত্তরঃ ভিক্ষা চাইতে গেলে লােকে দুরদুর করে তাড়িয়ে দিত। কারাের বাড়ির দাওয়ায় উঠতে দিত না। নিজেদের সন্তানদের ডাইনীর দৃষ্টির বাইরে রাখত।

৩। উত্তর দাও।

(ক) চৈত্রের দিনটিতে উঠান ঝাড়ু দিতে গিয়ে বৃদ্ধাটির কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ বৃদ্ধাটি বসে বসে ভেঙে পড়া দেহখানিকে টেনে উঠান ঝাড় দিতে লাগল। জড়াে করা পাতাগুলাে ফরফর করে হঠাৎ সর্পিল ভঙ্গিতে ঘুরপাক খেয়ে উড়তে আরম্ভ করল। দ্রুত আবর্তিত পাতাগুলাে তার সারা শরীরে যেন প্রহার করতে লাগল। বৃদ্ধা বারবার ঝাড়ু দিয়ে বাতাসের ওই আবর্তটাকে আঘাত করতে চেষ্টা করল, দ্রুত আবর্তটা মাঠের উপর দিয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে ছুটে গেল। মাঠের ধূলাে হু হু করে একটা ঘুরন্ত স্তম্ভ হয়ে উঠল। মাঠটা যেন নাচতে শুরু করল। একটা স্তম্ভ হাজারটা হয়ে উঠল। একটা অদ্ভুত আনন্দে বৃদ্ধার মন শিশুর মত অধীর হয়ে উঠল। হঠাৎ সে ন্যুবজ দেহে উঠে দাঁড়িয়ে ঝাড়ুশুদ্ধ হাতটা প্রসারিত করে সাধ্যমত গতিতে ঘুরতে আরম্ভ করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে টলতে টলতে বসে পড়ল। উঠে দাঁড়াবার শক্তিও নেই। ছােট শিশুর মতাে হামাগুড়ি দিয়ে সে দাওয়ার দিকে এগিয়ে গেল। দারুণ তৃষ্ণায় গলা পর্যন্ত শুকিয়ে গেল।

(খ) সেদিন শিশু কোলে পথহারা মায়ের বৃদ্ধার কুটিরে আগমন ঘটলে কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ ধুলিধূসর দেহে শুষ্ক পাণ্ডুর মুখের একটি যুবতী মেয়ে বুকের ভেতর কোনাে একটা বস্তু কাপড়ের আবরণে ঢেকে বহু কষ্টে আঁকড়ে ধরে বৃদ্ধার কাছে একটু জল চেয়েছিল। মমতায় বৃদ্ধার মন গলে গেল। যুবতী জানাল তার মায়ের খুব অসুখ। রাত থাকতে বেরিয়েছিল। মাঠের মাথায় এসে পথ ভুল হয়ে গিয়েছে। যুবতীর সাথে শিশুটিকে দেখে বৃদ্ধা শিহরিত হল। শিশুটি গরম জলে সিদ্ধ শাকের মতাে ঘর্মাক্ত দেহে নেতিয়ে পড়েছে। বাচ্চাটির চোখে মুখে জল দেবার জন্য বৃদ্ধা জল এনে দিল। যুবতী ছেলের মুখে চোখে জল দিয়ে আঁচল ভিজিয়ে সর্বাঙ্গ মুছে দিল। বৃদ্ধা দূরে বসে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাক। শিশুটি প্রচণ্ড ঘামতে শুরু করল। যেন বৃদ্ধা আর্তস্বরে বলে উঠল—“খেয়ে ফেললাম রে, পালা পালা, তুই ছেলে নিয়ে। পালা বলছি।” শিশুটির মা দুহাতে ঘটি তুলে জল খাচ্ছিল। তার হাত থেকে ঘটি পড়ে গেল। সে আতঙ্কিত বিবর্ণ মুখে জানতে চাইল এটা রামনগর কিনা আর বৃদ্ধা সেই ডাকিনী কিনা। যুবতী ডুকরিয়ে কেঁদে উঠে শিশুটিকে ছোঁ মেরে কুড়িয়ে নিয়ে পাখির মতাে ছুটে পালিয়ে গেল।

(গ) বাউরি ছেলেটির কী হয়েছে ? বৃদ্ধা কি সত্যিই তার ক্ষতি চেয়েছিল ?

উত্তরঃ ঝর্ণার ধারে বৃদ্ধাকে দেখে বাউরি ছেলেটি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছিল। পরমুহূর্তেই লাফ দিয়ে প্রাণপণে ছুটতে আরম্ভ করল। মুহূর্তের মধ্যে বৃদ্ধার মধ্যেও অভাবনীয় পরিবর্তন হয়ে গেল। ক্রুদ্ধা মার্জারীর মতাে ফুলে উঠে বারবার “মর মর” বলতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছা হল রাগে শােষণে তার রক্ত মাংস মেদ মজ্জা শুষে খেয়ে ফেলে। ছেলেটা আর্তনাদ করে বসে পড়ে। পরমুহূর্তেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে পালিয়ে যায়।

কিন্তু পরের দিন সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল যে সর্বনাশী ডাইনী বাউরিদের একটা ছেলেকে বাণ মেরেছে। পায়ের ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে সাথে গায়ে প্রবল জ্বর। কে যেন তার মাথা ও পায়ে চাপ দিয়ে তার শরীরটাকে ধনুকের মতাে বাঁকিয়ে দিয়ে দেহের রস নিঙড়িয়ে নিচ্ছে। একজন গুণিন এসে ছেলেটিকে ভালাে করে দেখল। স্তব্ধ দ্বিপ্রহরে বৃদ্ধা উন্মত্ত অস্থিরতায় অধীর হয়ে নিজের উঠোনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্মুখে নিঃস্পন্দ শবদেহের মত ছাতিফাটার মাঠ আগুনে পুড়ছে। বৃদ্ধা অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হেসে উঠল। সে ভাবল গুণিন বােধহয় মন্ত্র পড়ে তাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ উতপ্ত দ্বিপ্রহরে গ্রামে ওঠা কান্নার রােল জানিয়ে দিল বাউরি ছেলেটির মৃত্যু হয়েছে।না বৃদ্ধা বাউরি ছেলেটির মৃত্যু চায়নি।

(ঘ) কোন কোন ঘটনায় ডাইনীর মানবিক গুণের প্রকাশ দেখা যায় ?

উত্তরঃ গল্পে দেখা যায় উতপ্ত গ্রীষ্মের দুপুরে যুবতীটি তার শিশুসন্তানকে নিয়ে ডাইনীর কাছে আসে তখন মমতায় ডাইনীর মন গলে যায়। সে যুবতীর কাছে জানতে চায় এই রােদে সে কেন বেরিয়েছে। ঘর্মাক্ত শিশুটিকে নেতিয়ে পড়তে দেখে ডাইনীর মধ্যে মাতৃত্ববােধ জেগে ওঠে। শিশুটির চোখে মুখে জল দেওয়ার জন্য জল এগিয়ে দেয়।

বুড়াে শিবতলার সামনে দুর্গাসায়রে বাঁধাঘাটে বামুন বাড়ির হারু সরকার তার চুলের মুঠি ধরে সান বাঁধানাে সিড়ির উপরে ফেলে দিয়ে অভিযােগ করেছিল যে ডাইনীর অভিশাপে হারু সরকারের ছেলের অসুখ হয়েছে। ডাইনী হারু সরকারের বাড়ি গিয়ে অঝােরে কেঁদেছিল। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে বলেছিল—“হে ঠাকুর ওকে ভালাে করে দাও—দৃষ্টি ফিরাইয়া লইতেছি।”

(ঙ) ডাইনী বলে কথিত বৃদ্ধাটির শেষ পরিণতি কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ বাউরির ছেলেটির মৃত্যুসংবাদ শুনে পাগলের মতাে ঘরে ঢুকেখিল এঁটে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। সন্ধ্যার মুখে একটি ছােট পুটলি নিয়ে ছাতিফাটার মাঠে নেমে পড়ল পালিয়ে যাওয়ার জন্য। বৃদ্ধার পালানাের সময় একটা অস্বাভাবিক গাঢ় অন্ধকার ঘনিয়ে এল। কিছুক্ষণের মধ্যে ছুটে এল কালবৈশাখীর ঝড়। সে ঝড়ের মধ্যে বৃদ্ধা কোথায় হারিয়ে গেল। দুর্দান্ত ঘূর্ণিঝড়ের সাথে দুচার ফোঁটা বৃষ্টিও হল।

পরদিন সকালে ছাতিফাটার মাঠের প্রান্তে বহুদিনের কন্টকাকীর্ণ খৈরী গুল্মের একটা ভাঙা ডালের সূচালাে ডগার দিকে তাকিয়ে গ্রামবাসীরা অবাক হয়ে গেল। শাখার তীক্ষ প্রান্তে বৃদ্ধা ডাকিনী বিদ্ধ হয়ে ঝুলছে। ডালটার নিচে ছাতি-ফাটার মাঠের খানিকটা ধুলাে কালাে কাদার মতাে ডেলা বেঁধে ঝুলছে।

৪। দীর্ঘ উত্তর-

(ক) ডাইনী প্রথা যে কুটিল সমাজেরই সৃষ্টি এর সপক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ মানুষের মন নানারকম সংস্কারে ভরা। ওই সংস্কারগুলির ভেতর সবথেকে বেশি হল কুসংস্কার। ইংরাজীতে এই কুসংস্কারকে বলা হয় ‘Superstition’। অজানা জিনিসের ওপর অহেতুক ও অকারণ ভয় বা ভক্তিকে বলে ‘সুপারস্টিশন। মহামারী, অজন্মা, বন্যপশুর আক্রমণ ইত্যাদিকে ভয় পাই তাই, ওলাবিবি, শীতলা দেবী, মনসা, শনি ঠাকুরকে ভক্তি করি। অজন্মার জন্য আমরা নানাধরনের লৌকিক ক্রিয়াকর্ম করি যা আমাদের বৈজ্ঞানিক মানসিকতার বিরােধী। এছাড়া তন্ত্রমন্ত্র ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি দিয়ে আমরা প্রেত পিশাচকে তাড়াই। বলাবাহুল্য এ সবই কুসংস্কার। বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগেও এই কুসংস্কার পুরাে নির্মূল হয়নি।

বিজ্ঞানচেতনার মাধ্যমে প্রকৃতির বিপরীতমুখিতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অবস্থান করছে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। একদিকে যখন চলছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অপরদিকে হংল্যান্ডে, ভারতে অসহায় নারীদের ডাইনী সন্দেহে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ভারতে চলছে সতীদাহ, সহমরণ, চলছে হাঁচি, টিকটিকি, মাদুলি, তাবিজ, কবচ। অতি সুসভা সমাজে আজও একবিংশ শতাব্দীর আবির্ভাব মুহূর্তেও টিকে আছে এমন ধরনের কত অন্ধবিশ্বাস। কালাে বিড়াল সামনে দিয়ে গেলে সুসভ্য ইউরােপের অনেক লােকই গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করেন। আজও ডাইনী হত্যা, শিশুবলির মতাে ঘটনা ভারতের বুকে প্রায়শই ঘটে চলেছে।

সঠিক অর্থে কুসংস্কার মানে সেইসব আচরণ যা ব্যক্তি ও মানুষের মনে জাগিয়ে তােলে অহিতকর মানসিক অন্ধত্ব। আমাদের দুঃখ এই যে আমাদের দেশে বিজ্ঞান জেনেও বহু মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। জ্যোতিষীর নির্দেশে বহু শিক্ষিত লােক গ্রহরত্ন ধারণ করে চলেছেন। এরা ‘জলপড়া চোখ বুজে খান। গুরুচরণামৃত ভক্তির সাথে পান করেন।

এইসব কাজের সময় বিজ্ঞানকে দূরে সরিয়ে রাখে। শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন কুসংস্কারের উৎস সম্পর্কে বলেছিলেন- “It is this undefined source of fear and hope which is the genesis of irrational superstition”—ভয় ও আশার এই অব্যাখ্যাত উৎস থেকেই অযৌক্তিক কুসংস্কারের সৃষ্টি।

(খ) বর্তমান কালেও ডাইনী প্রথা প্রচলিত এর দৃষ্টান্ত দাও।

উত্তরঃ ডাইনী অভিযােগে মানসিক, শারীরিক কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনই নয়, এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটছে। অথচ এই প্রথা আটকানাের মতাে কোনাে সুনির্দিষ্ট আইন নেই।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরাের তথ্য অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এদেশে আইনী সন্দেহে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২০৯৭টি। ২০১৩ সাল পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩০০টি। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ঝাড়খণ্ডে ডাইনী হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৩৬৩টি।

কয়েকদিন আগে বীরভূমের বিনােদপুর গ্রামেও ডাইনী সন্দেহে চারজন মহিলার উপর আক্রমণ চালানাে হয়। সেই প্রহারে দিন কয়েক বাদে হাসপাতালে মৃত্যু হয় সােনামণি হেমব্রম নামে এক মহিলার। সাম্প্রতিক অতীতে বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুরের মতাে জেলাগুলিতেও বেশ কয়েকটি ডাইনী সন্দেহে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যা যথেষ্ট চিন্তার কারণ।

মেদিনীপুর সদর ব্লকের ইঞ্জিলিকচক গ্রামে ডাইনী অপবাদে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে গােটা পরিবারকে। তাদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পাশের গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাই পেলেও শান্তি ফেরেনি পরিবারটির। প্রাণনাশের আশঙ্কা তাে আছেই, তার উপর যুক্ত হয়েছে পরিবারের শিশুদের নানা রকম কটাক্ষ, মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়া। এখন পরিবারটি থাকে পাশের গ্রাম আউশাবারিতে। যার বিরুদ্ধে ডাইনীর অভিযােগ তার ছেলেমেয়েদের পাশে বসতে চায় না স্কুলের সহপাঠীরা। কটুক্তি শুনতে শুনতে বিভ্রান্ত হন ডাইনী অপবাদে বাড়ি-ছাড়া বাহা মুর্মু। বাহা জানান গ্রামের এক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এক শিশু কেঁদে ওঠার জন্য তাকে প্রথম অভিযুক্ত করা হয়। এরপর আরাে দুবার একই রকম ঘটনা ঘটায় তাকে ডাইনী আবাদ দিয়ে হেনস্থা করা হয়।

(গ) চোখের কুদৃষ্টিনজর লাগা এসবের মধ্যেও যে ডাইনী প্রথার ধারাবাহিকতা রয়েছে এ নিয়ে আলোচনা করাে।

উত্তরঃ প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে তেমনিই আধুনিক যুগে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ঔজ্জ্বল্যের সাথে মানবসমাজের আরেকটি বৈপরীত্য প্রকট হয়ে ওঠে, যার নাম কুসংস্কার। সংস্কার কথাটির অর্থ হল বিশ্বাস কুসংস্কার শব্দটির অর্থ হল যে বিশ্বাস মানবসমাজের কাছে ক্ষতিকারক বা অমঙ্গলকর। কুসংস্কার মানবজাতির চিরন্তন। বৈশিষ্ট্য এবং বিজ্ঞানের সঙ্গে তার বিরােধ নতুন নয়। গ্যালিলিয়ে গ্যালিলেই, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সাথে কুসংস্কারে আবদ্ধ সমাজের বিরােধ ইতিহাসে স্মরণীয়।

ইতিহাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় অতিক্রম করে আজ আমরা তথাকথিত আধুনিক যুগে পদার্পণ করেছি। কিন্তু আজও বিজ্ঞানের সঙ্গে কুসংস্কারের বিরােধ উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিজ্ঞানের এই অভাবনীয় উন্নতির যুগেও সমাজে ডাইনী সন্দেহে নরহত্যা হয়। সমাজের উন্নতির আশায় নরবলি হয়, আজও সমাজে ভণ্ড স্বার্থপর ধর্মব্যবসায়ীরা কুসংস্কারের জালে নির্বোধ মানুষকে বন্দি করে রাখে। সামাজিক দিক থেকে তাে বটেই, ব্যক্তিগতভাবেও মানুষ কুসংস্কার মুক্ত হতে পারে নি।এখনাে জাত দিয়ে মানুষের বিচার করা হয়। ছোঁয়া এড়িয়ে চলে। সব জাতির সব ধর্মের মানুষের রক্তই লাল সেকথা বিশ্বাস করেনা। তাই আজও সমাজের বুকে জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মান্ধতার মতাে কুসংস্কার বাসা বেঁধে রয়েছে।

(ঘ) গল্পের মধ্যে সামান্য কয়েকটি লতাগুল্মের, বৃক্ষের আর পক্ষীর নাম আছে, সেগুলাে লেখাে।

উত্তরঃ লতাগুল্ম – খৈরী ও সেয়াফুল জাতীয় কাটাগুল্ম। 

বৃক্ষ- আমবাগান।

পক্ষী – চোখ গেল।

(ঙ) গল্পের বর্ণনা সাধুভাষায় আর সংলাপ চলতি ভাষায়। উদাহরণ সহ এই পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ ১। হঠাৎ বাউরি বাড়ির হারু সরকার আসিয়া তাহার চুলের মুঠি ধরিয়া সান বাঁধানাে সিঁড়িরউপর আছাড় দিয়া ফেলিল- “হারামজাদি ডাইনী, তুমি আমার ছেলেকে নজর দিয়েছ।

২। সে বিহুল হইয়া কাঁদিয়া বলিল- “ওগাে বাবুগাে, তােমার দুটি পায়ে পড়ি গাে।”

৩। গ্রামের প্রান্তের ওই বুড়া শিবতলায় শুইয়া অঝােরঝরে সমস্ত রাত্রি কাদিয়া বলিয়া দিল- “হে ঠাকুর, আমার দৃষ্টিকে ভালাে করে দাও, না হয় আমাকে কানা করে দাও।

৪। বাহির দুয়ার হইতেই সে ভিক্ষা চাহিত- “দুটি ভিক্ষা পাই মা, হরিবােল।”

৫। নিতান্ত অসহায়ের মত আর্তস্বরে বলিয়া উঠিল- “খেয়ে ফেললাম রে। পালা পালা তুই ছেলে নিয়ে পালা বলছি।”

৬। শাশুড়ী হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিয়া তিরস্কার করিয়া বলিল- “আমার বাছার যদি কিছু হয়, তবে তাকে বুঝব আমি- হা।”

৭। তারপর বাহিরের দিকে আঙুল বাড়াইয়া বলিল- “বেরাে বলছি, বেরাে। হারামজাদির চোখ দেখ দেখি।”

৮। সে বলিয়াছিল- “ওই দেখাে, তুমি যাও বলছি, আমি চেঁচাব।”

৯। তাহার মনে পড়িল, ইহার পরেই সে তাহাকে বলিয়াছিল- “আমাকে বিয়ে করবি সরা ? আমি কলে কাজ করি। জাতে পতিত বলে আমাকে কেউ বিয়ে দেয় না। তু আমাকে বিয়ে করবি?”

১০। ছেলেটি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিল- “কি বলব বল? টাকা থাকলে আমি তােকে দিতাম, রুপাের চুড়িও দিতাম,বলতে হত না তােকে।”

ব্যাকরণ-

বিপরীত শব্দ –

১। অমঙ্গল – মঙ্গল।

জাগ্রত – নিদ্রিত।

প্রবীণ – নবীন।

পূর্ণিমা – অমাবস্যা।

প্রকাণ্ড – ছােট।

প্রমাণ – অপ্রমাণ।

নিষ্প্রভ – উজ্জ্বল।

বিশ্বাসে – অবিশ্বাসে।

বৃদ্ধ – যুবক।

দৃঢ় – শিথিল।

পদ পরিবর্তন-

২। আতঙ্ক আতঙ্কিত।

নীরব – নীরবতা।

নিশ্চয় – নিশ্চয়তা।

পুলক – পুলকিত।

প্রতাপ- প্ৰতাপী।

অনুমান – অনুমিত।

চক্ষু – চাক্ষুস।

রক্ত – রক্তাক্ত।

বিশ্বাস – বিশ্বাসী।

শঙ্কা – শঙ্কিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top