Class 12 Political Science Chapter 7 সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা

Class 12 Political Science Chapter 7 সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 7 সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 7 সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 7 সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 7 সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা Solutions for All Subjects, You can practice these here.

সমসাময়িক বিশ্বে নিরাপত্তা

Chapter: 7

প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিরাপত্তা বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ যে-কোন ধরনের ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি পাওয়াকে নিরাপত্তা বলে। ভয়-ভীতি সামরিক ও অসামরিক হতে পারে।

প্রশ্ন ২। আভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত মানুষ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ যে-সকল মানুষ নিরাপত্তাহীনতার দরুন নিজ ঘর ছেড়ে যায়, কিন্তু নিজের দেশের চারিসীমার মধ্যে থাকে—এসব লোককে আভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত মানুষ বলা হয়।

প্রশ্ন ৩। ভারত কি কারণে পারমাণবিক পরীক্ষাকার্য সম্পাদন করেছিল?

উত্তরঃ ভারত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার স্বার্থে পারমাণবিক পরীক্ষাকার্য সম্পাদন করেছিল।

প্রশ্ন ৪। মানব নিরাপত্তা বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ মানব নিরাপত্তা হল জনগণের নিরাপত্তা। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা।

প্রশ্ন ৫। গোলকীয় ভীতির একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ গোলকীয় দরিদ্রতা।

প্রশ্ন ৬। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ কি?

উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বলতে একাধিক দেশের জনগণ বা ভৌগোলিক অঞ্চলে বিস্তৃত সন্ত্রাসবাদকে বোঝায়।

প্রশ্ন ৭। কি ধনী রাষ্ট্রকে অধিকতর ধনী করে?

উত্তরঃ জনসংখ্যা হ্রাস ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি।

প্রশ্ন ৮। সহযোগিতামূলক নিরাপত্তা কি?

উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভয়-ভীতির মোকাবিলা করাকে সহযোগিতামূলক নিরাপত্তা বলে।

প্রশ্ন ৯। মানুষ কেন প্রব্রজন করে?

উত্তরঃ মানুষ নিরাপত্তার কারণে প্রব্রজন করে।

প্রশ্ন ১০। NATO-র সম্পূর্ণ রূপটি কি?

উত্তরঃ North Atlantic Treaty Organization.

প্রশ্ন ১১। ভারত সর্বপ্রথম কখন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়?

উত্তরঃ ১৯৭৪ সালে।

প্রশ্ন ১২। কোন্ বছর গোলকীয় নিরাপত্তার উদ্ভব হয়?

উত্তরঃ ১৯৯০ সালে।

প্রশ্ন ১৩। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক (ABM) চুক্তি, ১৯৭২।

প্রশ্ন ১৪। কোন্ সালে পারমাণবিক নিঃপ্রসারণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৮ সালে।

প্রশ্ন ১৫। ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের একটি উপাদান লেখ।

উত্তরঃ সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি।

প্রশ্ন ১৬। প্ৰদূষণ কি?

উত্তরঃ জল, স্থল, অন্তরীক্ষে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অবাঞ্ছিত পরিবর্তন যা জীবনধারণের পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বিঘ্নিত করে মানুষের জীবনকে বিষময় করে তোলে তাকে প্রদূষণ বলে।

প্রশ্ন ১৭। সামাজিক সুরক্ষা জাল বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার বিভিন্ন উপায়কে একত্রে সামাজিক সুরক্ষা জাল বলে।

প্রশ্ন ১৮। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) গোলকীয় দারিদ্র _______ র অন্য একটি উৎস।

উত্তরঃ নিরাপত্তা।

(খ) নিরাপত্তার অর্থ হল ভীতি থেকে________।

উত্তরঃ মুক্তি।

(গ) অপরম্পরাগত নিরাপত্তা ধারণাসমূহ ______ ঊর্ধ্বে।

উত্তরঃ সামরিক ভয়ের।

প্রশ্ন ১৯। কয়টি দেশ রাসায়নিক অস্ত্রচুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে?

উত্তরঃ ১৮১টি দেশ।

প্রশ্ন ২০। নিরস্ত্রীকরণের ধারণা কিভাবে হিংসা এড়িয়ে চলাকে সহায়তা করে?

উত্তরঃ নিরস্ত্রীকরণের ধারণা ঠিকভাবে প্রযুক্ত হলে প্রত্যেক দেশের মধ্যে এই বিশ্বাসটা আসবে যে হঠাৎ করে হিরোসিমা বা নাগাসাকি ঘটবে না; ফলত হিংসার পরিবেশ এড়িয়ে চলা যাবে।

প্রশ্ন ২১। সকল সমাজে নিরাপত্তার ধারণাটি এক কি?

উত্তরঃ সকল সমাজে নিরাপত্তা ধারণাটি এক নয়। কারণ বিশ্বের ২০০টি দেশের ৬৫০ কোটি মানুষের নিরাপত্তা সম্পর্কিত ধারণা এক হওয়া সম্ভব নয়।

প্রশ্ন ২২। গোলকীয় দরিদ্রতা কি?

উত্তরঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু মানুষ এখনও দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। একে গোলকীয় দরিদ্রতা বলে।

প্রশ্ন ২৩। সন্ত্রাসবাদ কি?

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ হল অসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসাত্মক কার্যকলাপ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৪। জৈবিক অস্ত্র সম্মেলন কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

প্রশ্ন ২৫। রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলন কখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯২ সালে।

প্রশ্ন ২৬। CTBT-র সম্পূর্ণ রূপ কি?

উত্তরঃ Comprehensive Test Ban Treaty.

প্রশ্ন ২৭। NPT-এর সম্পূর্ণ রূপ কি?

উত্তরঃ Non-Proliferation Treaty.

প্রশ্ন ২৮। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সন্ত্রাসবাদী হানা কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর।

প্রশ্ন ২৯। START-এর সম্পূর্ণ নাম কি?

উত্তরঃ Strategic Arms Reduction Treaty.

প্রশ্ন ৩০। CENTO-র সম্পূর্ণ নাম কি?

উত্তরঃ Central Treaty Organization.

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

অপরম্পরাগত নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গিকে ____ অথবা _____ বলা হয়।

উত্তরঃ মানব নিরাপত্তা/গোলকীয় নিরাপত্তা।

প্রশ্ন ২। পরম্পরাগত এবং অপরম্পরাগত নিরাপত্তার মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তরঃ চিরাচরিত নিরাপত্তায় রাষ্ট্র তার ভৌগোলিক সীমারেখা এবং শাসন সংস্থা বা সরকার হল মূল লক্ষ্যবস্তু। অপরদিকে অচিরাচরিত নিরাপত্তার মূল লক্ষ্য কেবল রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তিগোষ্ঠী এমনকি সমস্ত মানুষ।

প্রশ্ন ৩। প্রব্রজনকারী ও শরণার্থীর মধ্যে পার্থক্য লেখ।

উত্তরঃ এক উন্নততর জীবন, বিশেষ করে উন্নততর অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে মানুষের যে স্থানান্তর হয় তাকে প্রব্রজন বলে। অন্যদিকে মানুষ যখন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক উৎপীড়নের কারণে পলায়ন করে তখন তাদের শরণার্থী বলে।

প্রশ্ন ৪। দুটি স্বাস্থ্যজনিত মহামারীর নাম লেখ।

উত্তরঃ দুটি স্বাস্থ্যজনিত মহামারী হল—

(ক) এইড্স। এবং 

(খ) পক্ষীজ্বর।

প্রশ্ন ৫। ভারতের নিরাপত্তা পরিকল্পনার দুটি উপাদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের নিরাপত্তা পরিকল্পনার দুটি উপাদান হল—

(ক) সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি। এবং 

(খ) আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা।

প্রশ্ন ৬। সন্ত্রাসবাদকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভয়-ভীতি বলে মনে কর কি? কেন?

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে ভীতিস্বরূপ। সন্ত্রাসবাদ হল একটি সংগঠিত রাজনৈতিক হিংসা ও অত্যাচার যার সাহায্যে দেশে জনসাধারণকে লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করে পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়।

প্রশ্ন ৭। ভয়-ভীতির (হুমকির) দুটি নূতন উৎসের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভয়-ভীতির দুটি নূতন উৎস হল—

(ক) গোলকীয় দরিদ্রতা। এবং 

(খ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ।

প্রশ্ন ৮। নূতন স্বাধীন দেশসমূহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে ধরনের ভয়-ভীতি বা বিপদের সম্মুখীন হয়েছে তা অপেক্ষা ইউরোপে সম্মুখীন হওয়া ভয়-ভীতি কিভাবে পৃথক?

উত্তরঃ ভয়-ভীতিতে পৃথকত্ব নিম্নরূপ:

(ক) উন্নত দেশের জন্য আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু নূতন দেশসমূহ আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুদিকেই নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে।

(খ) উন্নত দেশ বা ইউরোপীয় দেশসমূহ সাধারণত নিরাপত্তার অপরম্পরাগত দিক্‌সমূহের সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু নূতন স্বাধীন দেশসমূহ অপারম্পরিক ও পারম্পরিক দুই প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

প্রশ্ন ৯। গোলকীয় নিরাপত্তা ধারণাটি কি?

উত্তরঃ গোলকীয় উষ্ণতা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, মহামারী, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রভৃতি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নিরাপত্তাকে গোলকীয় নিরাপত্তা বলে।

প্রশ্ন ১০। ব্যক্তির প্রতি হুমকির নূতন উৎস উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ব্যক্তির প্রতি হুমকির নূতন উৎস হল—সন্ত্রাসবাদ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গোলকীয় দারিদ্রতা প্রভৃতি।

প্রশ্ন ১১। সামরিক হুমকি কি? তা কিভাবে দেশের প্রতি বৃহত্তম বিপদ হতে পারে?

উত্তরঃ সামরিক হুমকি হল সামরিক ক্রিয়াকলাপ যা কোন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপদস্বরূপ হতে পারে।

সামরিক হুমকি সাধারণ নাগরিকের জীবন বিপন্ন করতে পারে। প্রায়শই সাধারণ মানুষ ও মহিলা এর লক্ষ্য হয়।

প্রশ্ন ১২। পরম্পরাগত নিরাপত্তা নীতির দুটি উপাদান লেখ।

উত্তরঃ পরম্পরাগত নিরাপত্তা নীতির দুটি উপাদান হল—

(ক) প্রতিরক্ষা। ও 

(খ) শক্তির সমতা।

প্রশ্ন ১৩। সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তার প্রতি পরম্পরাগত বা অপরম্পরাগত হুমকি কি?

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তার অণুরম্পরাগত হুমকি।

প্রশ্ন ১৪। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) _____ যা কাশ্মীর উপত্যকায় হিংসা ছড়ায় তা হল ______ র একটি উদাহরণ।

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ/সংঘটিত হিংসা।

(খ) মানব নিরাপত্তা হল ____ সুরক্ষার চেয়ে ______ র  অধিক সুরক্ষা।

উত্তরঃ ব্যক্তিগত/জাতিরাষ্ট্র।

(গ) নিরাপত্তার অপরাম্পরাগত _______ হল ______ ঊর্ধ্বে।

উত্তরঃ ধারণা/সামরিক আক্রমণের।

প্রশ্ন ১৫। হুমকি থেকে মুক্তির বিরুদ্ধে একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা – সমূহ কি কি?

উত্তরঃ হুমকি থেকে মুক্তির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাসমূহ হল—

(ক) যুদ্ধে আত্মসমর্থন করা। 

(খ) যুদ্ধব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি করা। এবং 

(গ) যুদ্ধ আরম্ভ হলে আক্রমণকারী রাষ্ট্রকে যুদ্ধে পরাস্ত করা।

প্রশ্ন ১৬। মানব অধিকারের বিভিন্ন প্রকার শ্রেণী বিভাগসমূহ কি কি?

উত্তরঃ বিভিন্ন প্রকার মানবাধিকার হল – 

(ক) রাজনৈতিক অধিকার; যেমন — ভোটাধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার, বাক্ স্বাধীনতা। 

(খ) সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার; যেমন—কাজের অধিকার, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার প্রভৃতি। 

(গ) উপনিবেশিক জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর অধিকার।

প্রশ্ন ১৭। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠনের নাম লেখ।

উত্তরঃ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন হল—

(ক) রাষ্ট্রসংঘ।

(খ) বিশ্বব্যাঙ্ক। ও 

(গ) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

প্রশ্ন ১৮। মানব অধিকার বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ যে সকল অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার এবং যা মানুষের সার্বিক বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য তাদের মানব অধিকার বলে; যেমন—রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার ইত্যাদি।

প্রশ্ন ১৯। বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার আধিপত্য বা প্রভুত্ব মানে কি?

উত্তরঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বে মহাশক্তি হিসাবে একমাত্র আমেরিকাই স্বীকৃত এবং সে তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধ্যান-ধারণা অন্যান্য দেশের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে। একেই আমেরিকার আধিপত্য বা প্রভুত্ব বলে।

প্রশ্ন ২০। ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের দুটি উপাদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের দুটি উপাদান হল—

(ক) আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, নিশ্চিত করা। ও 

(খ) অর্থনৈতিক বিকাশ সাধন।

প্রশ্ন ২১। ব্যক্তির প্রতি নতুন দুটি ভীতির উৎস উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ব্যক্তির প্রতি নতুন দুটি ভীতির উৎস হল—

(ক) দরিদ্রতা। ও 

(খ) মারাত্মক রোগ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২২। নিরাপত্তার দুটি ধারণা উল্লেখ কর।

উত্তরঃ নিরাপত্তার দুটি ধারণা হল – 

(ক) চিরাচরিত ধারণা। ও 

(খ) অচিরাচরিত ধারণা।

প্রশ্ন ২৩। চিরাচরিত নিরাপত্তা ধারণার যে-কোন দুটি উপাদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চিরাচরিত নিরাপত্তা ধারণার দুটি উপাদান হল—

(ক) প্রতিনিবৃত্ত করা। ও 

(খ) প্রতিরক্ষা।

প্রশ্ন ২৪। আঁতাঁত বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ যৌথভাবে আক্রমণ বা যুদ্ধ প্রতিহত করবার জন্য কতকগুলো রাষ্ট্রের সম্মিলিত জোটকে আঁতাত বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো (NATO) সামরিক জোট গঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৫। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কি?

উত্তরঃ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বলতে অস্ত্রের মজুত ও অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বোঝায়। ১৯৭২ সালের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ চুক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে।

প্রশ্ন ২৬। নিরস্ত্রীকরণ কি?

উত্তরঃ সাধারণ অর্থে নিরস্ত্রীকরণ বলতে অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার হ্রাস করা বোঝায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে নিরস্ত্রীকরণ বলতে অস্ত্রশস্ত্রের সম্পূর্ণ বিলোপ অথবা কতিপয় অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বোঝায়।

প্রশ্ন ২৭। অচিরাচরিত নিরাপত্তার দুটি উপাদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ অচিরাচরিত নিরাপত্তার দুটি উপাদান হল – 

(ক) মানব নিরাপত্তা। ও 

(খ) গোলকীয় দারিদ্র।

প্রশ্ন ২৮। তিন প্রকার মানবাধিকার উল্লেখ কর।

উত্তরঃ তিন প্রকার মানবাধিকার হল—

(ক) রাজনৈতিক অধিকার। 

(খ) অর্থনৈতিক অধিকার। এবং 

(গ) উপনিবেশিক জনগণ ও স্বদেশীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার।

প্রশ্ন ২৯। প্রব্রজনকারী ও শরণার্থীর মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ।

উত্তরঃ আপন ইচ্ছানুসারে যারা নিজ দেশ পরিত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যায় তাদেরকে প্রব্রজনকারী বলে। কিন্তু যারা যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রাজনৈতিক উৎপীড়নের শিকার হয়ে নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে তাদেরকে শরণার্থী বলে। বর্তমানে সারা বিশ্বে শরণার্থীসমস্যা বেশ প্রকট। রাষ্ট্র সাধারণ শরণার্থীদের গ্রহণ করে, প্রব্রজনকারীকে গ্রহণ নাও করতে পারে।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। পারস্পরিক নিরাপত্তার ধারণার বাহ্যিক ভীতির ক্ষেত্রে চারটি উপাদান কি কি? উদাহরণ দাও।

অথবা,

বাহ্যিক আক্রমণের ভীতি প্রদর্শন প্রতিহত করার নিরাপত্তার পরম্পরাগত ধারার উপাদান চারটি কী কী? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ উপাদানসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) অবরোধ — এর অর্থ হচ্ছে যুদ্ধের আশংকাকে বাধা প্রদান করা। এই ক্ষেত্রে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ করা যায়।

(খ) সুরক্ষা — যুদ্ধকে সীমিত রাখা বা তাকে সমাপ্ত করাকে সুরক্ষা বলে।

(গ) শক্তির সমতা — প্রতিটি সরকার অন্য দেশের সঙ্গে নিজের ক্ষমতার ভারসাম্যতা রক্ষা করতে চায়।

(ঘ) মিত্রজোট গঠন — মিত্রজোট হল কয়েকটি রাষ্ট্রের সম্মিলিত জোট নিজের কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে যুদ্ধ সংগঠিত করতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে; যেমন — NATO, CENTO প্রভৃতি।

প্রশ্ন ২। মানবাধিকার কি? মানবাধিকারের বিভিন্ন প্রকার কি কি?

উত্তরঃ মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক অবস্থা বা সুযোগ-সুবিধাকেই অধিকার বা মানবাধিকার বলে। 

বিভিন্ন প্রকার মানবাধিকার হল—

(ক) পৌর অধিকার। 

(খ) রাজনৈতিক অধিকার। 

(গ) সামরিক অধিকার। ও 

(ঘ) অর্থনৈতিক অধিকার।

প্রশ্ন ৩। শক্তির সমতা কি? কিভাবে একটি রাষ্ট্র তা অর্জন করে?

উত্তরঃ শক্তির সমতা চিরাচরিত নিরাপত্তা নীতির একটি উপাদান। যখন কোন দেশ অত্যন্ত শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী হয় তখন অন্যান্য দেশ তার দ্বারা বিপদগ্রস্ত বলে অনুভব করে। যদিও ক্ষমতাশালী দেশের অন্য দেশ আক্রমণ করা বা দখল করার কোন অভিপ্রায় থাকে না তথাপি ভবিষ্যতে যে-কোন সময়ে বৃহৎ রাষ্ট্র আক্রমণকারী হতে পারে। স্বভাবতই দেশসমূহ শক্তির সমতার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর থাকে। তারা শক্তির সমতা স্থাপনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে। 

সুতরাং শক্তির সমতা হল বিভিন্ন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার সামঞ্জস্য রক্ষা করা, যাতে কোন শক্তি বা শক্তিগোষ্ঠী অত্যধিক ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী হয়ে অন্য দুর্বল রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠীর বিপদের কারণ না হয়। শক্তির সমতা শক্তির স্থিতিশীলতা তৈরি করে যা অস্থায়ী এমনকি ক্ষণস্থায়ী। এই অর্থে শক্তিসমতা গতিশীল।

অর্জনের উপায়সমূহ: শক্তির সমতা নিরূপণ ও সংরক্ষণের নানা প্রকার উপায় বা প্রতিআঁতাঁত, পদ্ধতি আছে। শক্তির সমতা অর্জনের অন্যতম উপায়সমূহ হল — আঁতাত ও অস্ত্রীকরণ ও নিরস্ত্রীকরণ, ক্ষতিপূরণ, হস্তক্ষেপ ও অহস্তক্ষেপ, বিভেদের নীতি, বাফার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি।

প্রশ্ন ৪। অপারম্পরিক নিরাপত্তাজনিত হুমকির ক্ষেত্রে সহযোগিতা খুব প্রয়োজনীয় বলে তুমি মনে কর কি? আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপারম্পরিক হুমকিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে?

উত্তরঃ অপারম্পরিক নিরাপত্তাজনিত হুমকির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপারম্পরিক সুরক্ষা হুমকির ক্ষেত্রে সামরিক বিরোধিতার পরিবর্তে সহযোগিতার প্রয়োজন। সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার জন্য অথবা মানবাধিকার কার্যকরী করার জন্য সামরিক কার্যকলাপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রব্রজন, দরিদ্রতা, মহামারী প্রভৃতি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যায় না। এই প্রকার হুমকির থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্বপর্যায়ে সহযোগিতার প্রয়োজন।

এই ধরনের সুরক্ষা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক, বিশ্বজনীন চরিত্রের হতে পারে। সাধারণত সুরক্ষা হুমকির প্রকৃতির উপর সহযোগিতার চরিত্র নির্ভর করে। সহযোগিতার সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন; যেমন—রাষ্ট্রসংঘ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার প্রভৃতি জড়িত থাকে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান; যেমন—রেডক্রস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বিভিন্ন প্রকার নিগম প্রভৃতিও জড়িত থাকে। এরূপ প্রয়াসে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিগণও সহায়তার হাত প্রসারিত করে।

প্রশ্ন ৫। ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের উপাদান চারটি কি কি?

উত্তরঃ ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের উপাদান চারটি নিম্নরূপ:

(ক) ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের প্রথম উপাদান হল সামরিক দক্ষতা শক্তিশালী করা। কারণ ভারত ইতিপূর্বে চীন ও পাকিস্তান কর্তৃক কয়েকবার আক্রান্ত হয়েছে।

(খ) দ্বিতীয় উপাদান হল আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা শক্তিশালী করা যাতে নিরাপত্তাজনিত স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।

(গ) ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের তৃতীয় বা প্রধান উপাদান হল আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। ভারতে নানা প্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সক্রিয়। এদের শায়েস্তা না করলে ভারতের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হবে।

(ঘ) নিরাপত্তা কৌশলের চতুর্থ বা একটি অন্যতম উপাদান হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন। ভারতের অর্থনীতিকে এমনভাবে উন্নত করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হতে পারে।

প্রশ্ন ৬। পরম্পরাগত নিরাপত্তা নীতির চারটি উপাদান লেখ।

উত্তরঃ পরম্পরাগত নিরাপত্তার ধারণাটি প্রধানত একটি দেশের সামরিক শক্তির প্রয়োগ বা সামরিক শক্তি প্রয়োগের ভীতির সঙ্গে জড়িত। 

এই নিরাপত্তার প্রধান চারটি নীতি বা উপাদান নিম্নরূপ:

(ক) সামরিক বাহিনী গঠন করা ও শক্তিশালী করে তোলা যাতে অন্য দেশের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।

(খ) নিজ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য অন্য শত্রু দেশকে হুমকি অথবা আক্রমণ করে নিজের অধীনে রাখা।

(গ) ক্ষমতার ভারসাম্য নীতির প্রচলন করা এবং সামরিক মিত্র জোট গঠন করা।

(ঘ) নিরস্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করা।

প্রশ্ন ৭। মহাশক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের সম্মুখীন হওয়া বহিভীতিসমূহ কি কি?

উত্তরঃ মহাশক্তিধর রাষ্ট্রসমূহে সম্মুখীন হওয়া বহির্ভীতি বা হুমকি হল—সন্ত্রাসবাদ, স্বাস্থ্য তথা মহামারী, পারমাণবিক হুমকি ও প্রদূষণ।

প্রশ্ন ৮। ক্ষমতার সন্তলন কি? বর্তমানে কোন দেশ কিভাবে এটা অর্জন করতে পারে?

উত্তরঃ ক্ষমতার ভারসাম্যকে ক্ষমতার সন্তুলন বলে। কোন দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকলেই সেই দেশের ক্ষমতার সুস্থিরতার ভাব প্রকাশ পায়। এই ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই বৃহৎ শক্তিশালী দেশসমূহ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে কিছু কিছু প্রয়োজনীয় উপায় অবলম্বন করে থাকে। বিশেষত, মিত্রতা স্থাপন, নিরস্ত্রীকরণ, বিভাজন ও শাসন, যুদ্ধ, আভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ, অস্ত্র আহরণ ইত্যাদির মাধ্যমে অন্য দেশকে বৃহৎ শক্তিশালী দেশ নিয়ন্ত্রণ করে নিজ ক্ষমতার ভারসাম্য বা সত্তলন বজায় রাখে।

প্রশ্ন ৯। মানুষের নিরাপত্তার প্রতি সুরক্ষার বিভিন্ন ধারণাগুলি কি কি?

উত্তরঃ মানব নিরাপত্তায় জনসাধারণ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হবার জন্য হওয়া সমস্যাসমূহের নিরাপত্তাকে বোঝায়। এটা বর্তমান সময়ে খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। মানবজাতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া প্রধান প্রত্যাহ্বানসমূহ হল—বিশ্ব দরিদ্রতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি। অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহের জনসংখ্যার বৃদ্ধি অতি দ্রুতগতিতে হওয়ার জন্য বিশ্ব দরিদ্রতা এবং উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলি মধ্যে থাকা জনপ্রতি আয়ের ব্যবধান যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এইড্স, ডেঙ্গু, পক্ষীজ্বর ইত্যাদি ধরনের মহামারীগুলি নতুন করে মানবজাতির জন্য নতুন হুমকির সৃষ্টি করেছে। শিক্ষাই হল মানব উন্নয়নের মূল, কিন্তু অনুন্নত দেশসমূহে শিক্ষার সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য নয়। 

প্রশ্ন ১০। শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ কিছু কিছু বিশেষ কারণবশত শরণার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিশেষত যুদ্ধ, হিংসা বা সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়ে নিজের বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হতে হয়; যেমন—কাশ্মিরী পণ্ডিত যারা কাশ্মীর উপত্যকার হিংসাত্মক ঘটনার শিকার হয়ে ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে বসতি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে নিজের আশ্রয়স্থল, ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয় এবং জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শরণার্থীকে সমগ্র জীবনটা দুঃখ আর কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়। ভারতবর্ষও দেশ ভাগাভাগির সময় এই সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং শরণার্থী সমস্যায় সবথেকে বেশি যে প্রদেশগুলি ভুগেছিল তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, পাঞ্জাব প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এর ফলে সংশ্লিষ্ট প্রদেশগুলি এবং সর্বোপরি সমস্ত দেশের উপর যে অর্থনৈতিক চাপ আসে তা কাটাতে বেশ সময় লাগে।

প্রশ্ন ১১। হুমকির একটা নতুন উৎস হিসাবে স্বাস্থ্য মহামারীর সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ অপরম্পরাগত নিরাপত্তার ধারণার একটা বিষয়বস্তু হল মহামারী। বিগত কিছু বছর যাবৎ পক্ষীজ্বর, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি সমগ্র বিশ্ববাসীর জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাণ্ডবের সৃষ্টি করেছে। এই রোগ এখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে কোন রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে অন্যান্য রাষ্ট্রের জনগণ সাধারণভাবে সেই দেশ এড়িয়ে চলে। আক্রান্ত রাষ্ট্রের কেউ অন্য রাষ্ট্রে যেতে চাইলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। পক্ষীজ্বর বা সোয়াইন ফ্লু আরম্ভ হলে প্রতি রাষ্ট্রই সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এইড্‌স্‌-জাতীয় রোগ একরকম মারাত্মক রোগ। এটি প্রব্রজনের মাধ্যমে এখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালে বিশ্বের প্রায় ৪ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং তার এক-তৃতীয়াংশ রোগী আফ্রিকায় ছিল। ১৯৯০ সালের শেষদিকে উত্তর আমেরিকা ও অন্যান্য প্রগতিশীল রাষ্ট্রসমূহ এইড্স রোগের প্রতিষেধক ঔষধ আবিষ্কার করে এই রোগজনিত মৃত্যুর হার কমাতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসা এতই ব্যয়বহুল যে আফ্রিকার মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। এই রোগসমূহ সাধারণত প্রব্রজন, ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে নতুন নতুন রোগ; যেমন—Ebola virus, Hantavirus, Hepatitis C ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর উপর পুরাতন রোগ; যেমন—যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুজ্বর, কলেরা ইত্যাদি আবার কোথাও কোথাও ফিরে আসছে। এগুলির প্রতিরোধক ঔষধ থাকলেও চিকিৎসা করা খুব একটা সহজ নয়।

প্রশ্ন ১২। মানুষের নিরাপত্তার ধারণাটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বিশেষভাবে জড়িত উদ্দেশ্যকে মানব নিরাপত্তা বলে। এই উদ্দেশ্য জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হচ্ছে এবং তার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। মানব জাতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া প্রধান প্রত্যাহ্বানগুলি হল—বিশ্ব দরিদ্রতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি। অনুন্নত রাষ্ট্রগুলিতে জনসংখ্যার বৃদ্ধি অতি দ্রুতগতিতে হওয়ার জন্য বিশ্ব দরিদ্রতা এবং উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির মধ্যে জনপ্রতি আয়ের ব্যবধান যথেষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। এইডস, ডেঙ্গু, পক্ষীজ্বর প্রভৃতি ধরনের মহামারী নতুন করে মানবজাতির জন্য নতুন হুমকির সৃষ্টি করছে। শিক্ষাই হল মানব উন্নয়নের কেন্দ্রস্বরূপ। বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলিতে বর্তমানে বহু দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দেখা যায়। বিশেষত, শিক্ষার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অনীতি সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলিতে প্রকট। এটি মানব জাতির জন্য এক গভীর সমস্যারূপে আবির্ভূত হয়েছে। শিক্ষার অভাবে মানব জাতির বিকাশ সাধন হতে পারছে না। সেজন্য শিক্ষার প্রয়োজনে মানুষের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার প্রয়াস করাটা অতীব প্রয়োজন।

প্রশ্ন ১৩। ১৯৭২ সালে জৈবিক অস্ত্র সম্পর্কীয় সম্মেলনে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ নিরাপত্তার প্রথাগত ধারণায় সহযোগিতার দ্বারা হিংসাকে সীমিত করে আনার ব্যাপারটির স্বীকৃতি আছে। এই সীমাবদ্ধতা যুদ্ধের ইপ্সিত লক্ষ্য এবং সাধন এই দুটি বিষয়ের সাথেই সংম্পৃক্ত। নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রথাগত ধারণা সহযোগিতার অন্যান্য ধারাকেও বাতিল করে না। এই ধরনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্বাসের আবহ গড়ে তোলা। নিরস্ত্রীকরণ বলতে কিছু বিশেষ ধরনের অস্ত্র ত্যাগ বা বর্জন করাকে বোঝায়। ১৯৭২ সালের জৈব অস্ত্র সম্মেলন (বি ডব্লিউ সি) এই সকল অস্ত্রের উৎপাদন এবং অধিকারে রাখার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা ১৫৫টিরও বেশি রাষ্ট্র মেনে নেয়।

প্রশ্ন ১৪। ভৌগোলিক নিরাপত্তা সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ কোন একটি দেশের বা বিশ্বে কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকার আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে ভৌগোলিক নিরাপত্তা বলে।

প্রশ্ন ১৫। “মানব নিরাপত্তা অভাব থেকে মুক্তি এবং ভয় হতে মুক্তিকে সূচিত করে।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা যখন আলোচনা করি তখন প্রশ্ন ওঠে ‘কার জন্য নিরাপত্তা’। অপ্রথাগত সুরক্ষার প্রবক্তরা উত্তর দেন—“শুধুমাত্র রাষ্ট্র নয়, সুরক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তি, সম্প্রদায় ও সমগ্র মনুষ্যজাতি।” সুরক্ষার এই প্রথাগত ধারণাকে ‘মানব সুরক্ষা’ তথা ‘বিশ্বব্যাপী’ বা ‘সর্বব্যাপী’ সুরক্ষা বলে।

‘মানব সুরক্ষা’ হচ্ছে রাষ্ট্র হতেও জনসাধারণের রক্ষণাবেক্ষণে মনোনিবেশ। নাগরিকদের বিদেশী আক্রমণ হতে রক্ষা করা ব্যক্তি সুরক্ষার একটি প্রয়োজনীয় শর্ত। কিন্তু দেখা যায় গত ১০০ বছরে বিদেশী আক্রমণে যত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে নিজের দেশের সরকারের হাতে। মানব সুরক্ষার সকল ব্যাখ্যাকারক এই বিষয়ে এক মত যে এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ব্যক্তি সুরক্ষা। প্রাক্তন রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব কোফি আন্নান বলেন মানব সুরক্ষা হল ‘জনসম্প্রদায় এবং ব্যক্তিকে আভ্যন্তরীণ হিংসার কুবল হতে নিরাপত্তা প্রদান’। মানব সুরক্ষার বিস্তৃত অর্থের প্রবক্তাগণের যুক্তি হল হুমকির বিষয়গুলিতে ক্ষুধা, ব্যাধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কেননা যুদ্ধ, গণহত্যা এবং সন্ত্রাসের বলি হয়ে যত প্রাণহানি হয় তার বহুগুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয় ক্ষুধা, ব্যাধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে। বিস্তৃততম আকারে মানব সুরক্ষার বিষয়টি বেষ্টন করে অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং মানুষের মর্যাদার প্রতি হুমকিকে। অন্যভাবে বলতে গেলে বিস্তৃততম আকারে এটি যথাক্রমে ‘অভাব হতে মুক্তি’ ও ‘ভয় হতে মুক্তি’-কে বোঝায়।

প্রশ্ন ১৬। পরিবেশের মারাত্মক দ্রুত অবনতি নিরাপত্তার একটি মারাত্মক বিপদের কারণ হচ্ছে। তুমি এই যুক্তিতে একমত কি? তোমার যুক্তি প্রতিপন্ন কর।

উত্তরঃ পরিবেশের দ্রুত অবনতি নিঃসন্দেহে নিরাপত্তার একটি সাংঘাতিক বিপদের কারণ। মানুষের নিরাপত্তা ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ব্যাধি, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি হতে নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ এইসব ঘটনা যুদ্ধ, নরহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ একত্রে যত জীবনহানি ঘটায় তা অপেক্ষা অধিক জীবনহানি ঘটায়।

বস্তুত বিশ্ব নিরাপত্তার ধারণাটি বিংশ শতকের শেষ দশকে বিস্তার লাভ করে। এর কারণস্বরূপ প্রকৃতিজাত ঘটনা, যেমন—বন্যা, ভূমিকম্প, খরা, বিশ্ব উষ্ণায়ণ প্রভৃতি উল্লেখ করা যায়। কোন দেশই একাকী সমস্যার সম্মুখীন ও সমাধান করতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি দেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান এবং অন্যান্য উপাদানের জন্য অপরাপর দেশ অপেক্ষা অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ব উষ্ণায়নের দরুন সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা ১.৫-২.০ মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ, মালদ্বীপের অধিকাংশ এবং থাইল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক প্লাবিত করবে। তদ্রুপ দরিদ্র দেশগুলির এইডসের মতো মারাত্মক ব্যাধি বিস্তারের সম্ভাবনা ধনী দেশসমূহের তুলনায় অধিক। যেহেতু এই সকল ব্যাধি বিশ্বজনীন সেইহেতু আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলা বাঞ্ছনীয়।

প্রশ্ন ১৭। অপরম্পরাগত নিরাপত্তা কি? সন্ত্রাসবাদ পরম্পরাগত না অপরম্পরাগত নিরাপত্তার ভীতি?

উত্তরঃ অপরম্পরাগত, নিরাপত্তা বলতে রাষ্ট্ররক্ষা অপেক্ষা জনগণকে অধিক রক্ষা করা বোঝায়। অপরম্পরাগত নিরাপত্তার প্রবক্তাগণের মতে রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য হল এর জনগণকে রক্ষা করা। তাদের মতে অপরম্পরাগত নিরাপত্তায় ক্ষুধা, ব্যাধি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কারণ এইগুলি যুদ্ধ অপেক্ষা অধিক জীবনহানি ঘটায়। সুতরাং তাদের মতে অপরম্পরাগত নিরাপত্তা নীতিতে মানুষকে এই সকল বিপদ ও হিংসা ও যুদ্ধ হতে রক্ষা করা উচিত।

সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তার একটি অচিরাচরিত বিপদ বা ভয়। সন্ত্রাসবাদ হল রাজনৈতিক হিংসা যা ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নির্বিচারে সাধারণ মানুষের বিপদের কারণ হয়। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী যে রাজনৈতিক অবস্থা পছন্দ করে না তা পরিবর্তনের জন্য বল প্রয়োগ বা বল প্রয়োগের ভয় দেখানোর মাধ্যমে পরিবর্তন করতে চায়। সহজলভ্য অসামরিক লক্ষ্যবস্তু সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হয়। সন্ত্রাসবাদীরা সরকার বা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সশস্ত্র ও সহিংস পদ্ধতি অবলম্বন করে।

প্রশ্ন ১৮। যখন কোন দেশের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয় তখন তার সম্মুখে কি কি বিকল্প ব্যবস্থা থাকে?

উত্তরঃ চিরাচরিত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুসংগঠিত নীতি হল যে এই ব্যবস্থায় হিংসা হ্রাসে সহযোগিতা সম্ভব। বর্তমানে এটাই সর্বজনগ্রাহ্য অভিমত যে কোন রাষ্ট্র একমাত্র যুক্তিসঙ্গত কারণে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে। যুদ্ধে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল আত্মরক্ষা, দেশরক্ষা ও নরহত্যা হতে জনগণকে রক্ষা করা। ব্যবহৃত যুদ্ধের পদ্ধতি অনুযায়ী যুদ্ধকে সীমাবদ্ধ করা যায়। সেনাবাহিনীকে হত্যা, সাধারণ নাগরিকদের আঘাত করা এবং নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদেরকে আঘাত করা হতে বিরত থাকতে হবে। যখন সকল প্রকার বিকল্প ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যায় একমাত্র তখনই বলপ্রয়োগ সঙ্গত।

সহযোগিতার প্রধান প্রকারসমূহ হল – নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মবিশ্বাস গড়া। নিরস্ত্রীকরণের অর্থ হল সকল রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র পরিত্যাগ করা। উদাহরণস্বরূপ ১৯৭২ সালে ‘জীবাণু অস্ত্র সম্মেলন’ (Biological Weapons Convention, BWC) এবং ১৯৯২ সালের ‘রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলন’ (Chemical Weapons Convention, CWC)। এই প্রকার অস্ত্রশস্ত্র তৈরি ও মজুত রাখা বেআইনি করা হয়েছে। মোট ১৫৫টি দেশ BWC এবং ১৮১টি দেশ CWC গ্রহণ করে।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র সংগ্রহ ও অস্ত্র উন্নত করা নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৭২ সালের ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী চুক্তি (Anti-Ballistic Missile, ABM) দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার প্রতিহত করতে ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ প্রতিহত করতে চেষ্টা করা হয়।

চিরাচরিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিংসা প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে আত্মবিশ্বাস গড়াকেও গ্রহণ করে। আত্মবিশ্বাস গড়া হল একটি পদ্ধতি যাতে রাষ্ট্রসমূহ প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে চিন্তাধারা ও তথ্যাদি বিনিময় করে। তারা একে অন্যকে তাদের সামরিক অভিপ্রায় এবং সামরিক পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে। তারা একে অপরকে তাদের প্রত্যেকের কি পরিমাণ সৈন্য আছে এবং কোথায় তা মোতায়েন করা আছে তা প্রকাশ করে। সংক্ষেপে বলা যায় যে আত্মবিশ্বাস গড়া হল একটি পদ্ধতি যা নিশ্চিত করে দেয় যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে আগের দেশকে যাতে আক্রমণ না করে। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই প্রক্রিয়া চলছে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৯। নিরাপত্তা বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ শান্তি ও নিরাপত্তা মানুষের সকল প্রকার উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ অর্থে নিরাপত্তা বলতে বোঝায় বিপদ ও ভয়ভীতি হতে মুক্তি। কিন্তু প্রত্যেক প্রকার বিপদই নিরাপত্তার বিপদ নয়। একমাত্র যেসব বিষয় বৃহৎ মূল্যবোধের বিপদের কারণ হয় তাই নিরাপত্তার বিপদ।

প্রশ্ন ২০। অপরম্পরাগত অথবা মানবীয় নিরাপত্তা মানে কি?

উত্তরঃ অপরম্পরাগত, নিরাপত্তা বলতে রাষ্ট্ররক্ষা অপেক্ষা জনগণকে অধিক রক্ষা করা বোঝায়। অপরম্পরাগত নিরাপত্তার প্রবক্তাগণের মতে রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য হল এর জনগণকে রক্ষা করা। তাদের মতে অপরম্পরাগত নিরাপত্তায় ক্ষুধা, ব্যাধি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কারণ এইগুলি যুদ্ধ অপেক্ষা অধিক জীবনহানি ঘটায়। সুতরাং তাদের মতে অপরম্পরাগত নিরাপত্তা নীতিতে মানুষকে এই সকল বিপদ ও হিংসা ও যুদ্ধ হতে রক্ষা করা উচিত।

প্রশ্ন ২১। সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ কি?

উত্তরঃ সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ হল প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমূহ দ্বারা সীমান্তে সন্ত্রাস চালানো, যা একপ্রকার ছদ্মবেশী যুদ্ধ বা Proxy War। যার উদ্দেশ্য হল প্রতিবেশী রাষ্ট্র অথবা তার ভৌগোলিক বিভাগকে দুর্বল করা। সীমান্তপারে সন্ত্রাসবাদে নিমগ্ন সন্ত্রাসবাদী নিজ রাষ্ট্র হতে এই ব্যাপারে সাহায্য ও সমর্থন লাভ করে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারতের অন্যত্র সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের অন্যতম উদাহরণ।

প্রশ্ন ২২। সন্ত্রাসবাদ বলতে কি বোঝ? এর বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ কোন অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য অবৈধ ক্রিয়াকলাপকে সন্ত্রাসবাদ বলা হয়। সন্ত্রাসবাদ হল একপ্রকার হিংসা যা ইচ্ছাকৃতভাবে ও নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করে। বোমা বিস্ফোরণ, ছিনতাই, আত্মঘাতী বোমাবাজি, হত্যা প্রভৃতি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। বর্তমানকালে কেবল জনসাধারণই নয় সশস্ত্রবাহিনীকেও সন্ত্রাসবাদীরা লক্ষ্যবস্তু হিসাবে ব্যবহার করে।

সন্ত্রাসবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সন্ত্রাসবাদ হল সংঘটিত, পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ।

(খ) সন্ত্রাসবাদ অবৈধ, অমানবিক এবং অসাংবিধানিক।

(গ) সন্ত্রাসবাদের গণতান্ত্রিক ও মানবীয় মূল্যবোধের প্রতি আস্থা নেই।

(ঘ) সন্ত্রাসবাদ অসামরিক ও সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করে ও লক্ষ্যবস্তু করে।

(ঙ) সন্ত্রাসবাদ সরকারের বিরুদ্ধে একপ্রকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিংসা।

প্রশ্ন ২৩। শক্তির সমতা বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শক্তির সমতার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) শক্তির সমতা হল শক্তির স্থিতিশীলতা। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্রসমূহ ক্ষমতার স্থিতিশীলতার পরিবর্তে ক্ষমতার আধিপত্য কামনা করে।

(খ) শক্তির সমতা ঈশ্বর প্রদত্ত দান নয়। তা মানুষের সক্রিয় হস্তক্ষেপের ফল।

(গ) শক্তির সমতা অস্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী।

(ঘ) শক্তির সমতা প্রধানত শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের ক্রীড়াবিশেষ।

(ঙ) শক্তির সমতা শান্তির সুনিশ্চিত উপায় নয়। বরং তা বিবাদের সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ২৪। নিরাপত্তার নূতন বিপদসমূহ কি কি?

উত্তরঃ মানব সুরক্ষা এবং বিশ্ব সুরক্ষার মতো অপ্রথাগত ধারণা নিরাপত্তার প্রতি হুমকির পরিবর্তনশীল প্রকৃতিকে মান্যতা দেয়। 

এই ধরনের বিপদ বা হুমকিসমূহ নিম্নরূপ: 

(ক) সন্ত্রাসবাদ: সন্ত্রাসবাদ রাজনৈতিক হিংসাকে উল্লেখ করে যা সাধারণ নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নির্বিচারে হত্যা করে।

(খ) মানবাধিকার হানি: মানবাধিকার হল রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার এবং উপনিবেশের অধীনস্থ মানুষের অথবা জনজাতি এবং দেশীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার।

(গ) গোলকীয় দারিদ্র্য: বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম একটি উৎস। দরিদ্র দেশগুলিতে উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং নিম্ন আয় দরিদ্র দেশসমূহ এবং দরিদ্র গোষ্ঠীকে আরও দরিদ্র করে তোলে।

(ঘ) প্রব্রজন: দক্ষিণ গোলার্ধের দারিদ্র্য এক বড়সর মাপের প্রব্রজনের পথ দেখায় অধিকতর উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে।

(ঙ) স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত মহামারী: প্রব্রজন, বাণিজ্য, পর্যটন এবং সামরিক অভিযানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত মহামারী; যেমন—‘এইচ আই ভি’, ‘এইড্‌ড্স’, ‘বার্ডফ্লু’, তীব্র শ্বাস- প্রশ্বাসজনিত লক্ষণসমূহ (সার্স) প্রভৃতি এক দেশ হতে আরেক দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

প্রশ্ন ২৫। গোলকীয় দরিদ্রতা কিভাবে মানব নিরাপত্তার একটি বিপদস্বরূপ?

অথবা,

বিশ্ব দরিদ্রতার বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ গোলকীয় দারিদ্র মানব নিরাপত্তার বিপদের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। গরীব রাষ্ট্রসমূহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। অন্যদিকে ধনী দেশসমূহে জনসংখ্যার ঘাটতি অনুভব করা হয়। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। গরীব রাষ্ট্রসমূহ সাধারণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে না। এই রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবেশ প্রদূষণ প্রতিরোধ, ব্যাধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। কোন কোন রাষ্ট্র যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে কিছুটা সফল হয়েছে কিন্তু অধিকাংশ রাষ্ট্রই এই ব্যাপারে সফল হয় নি। বিশ্বের অধিকাংশ বিরোধ এই সকল দরিদ্র এলাকায় সংঘটিত হয়ে থাকে। একবিংশ শতকের প্রথম দিকেও এই সকল অঞ্চলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় জীবনহানি ঘটতে দেখা যায়।

প্রশ্ন ২৬। সহযোগিতাপূর্ণ নিরাপত্তা বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একটি অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল যা নিরাপত্তার চিরাচরিত বিপদের মোকাবিলা করতে পারে। এই সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক (দুই দেশের মধ্যে), আঞ্চলিক, মহাদেশীয় ও গোলকীয় হতে পারে। তা বিপদের প্রকৃতি এবং রাষ্ট্রসমূহের সাড়া দেওয়ার উপর নির্ভর করে। সহযোগিতাপূর্ণ নিরাপত্তা জাতীয় স্তরের সংস্থা ও রাষ্ট্রসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রেক্রুশ সোসাইটি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকেও অন্তর্ভুক্ত করে। মহাত্মা গান্ধী, মাদার টেরেসা, নেলসন মেন্ডেলা প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সহযোগিতাপূর্ণ নিরাপত্তা ও শেষ উপায় হিসাবে বল প্রয়োগ অবলম্বন করতে পারে।

প্রশ্ন ২৭। প্রব্রজন ও মানবীয় নিরাপত্তার মধ্যে সম্পর্ক কি? আলোচনা কর।

উত্তরঃ বিশ্বব্যাপী দারিদ্র বিশেষত দক্ষিণ গোলার্ধের অনুন্নত দেশসমূহ এক বড় মাপের প্রব্রজনের পথ দেখায় অধিকতর উন্নত জীবনের সন্ধানে, বিশেষ করে উত্তরের দেশসমূহে অধিকতর উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে। এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছে। বিশ্ব উদ্বাস্তু মানচিত্র, বিশ্বের সংঘর্ষের মানচিত্রের সাথে নিখুঁতভাবে মিলে যায় কেননা দক্ষিণের দেশগুলিতে যুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে কয়েক মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, যারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে ৭০টি রাষ্ট্র ৯৩টি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যার ফলে প্রায় ৫৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি, পরিবার এবং কোন কোন সময় সমগ্র জনসম্প্রদায় প্ৰব্ৰজন করতে বাধ্য হয়েছে। হিংসা সম্বন্ধে সাধারণ ভীতি অথবা জীবিকা নির্বাহের সাধন, পরিচিত এবং জীবনের উপযোগী পরিবেশ ক্লিষ্ট হওয়ার কারণে। জনপ্রব্রজনের ফলে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত মহামারী, যেমন—‘এইচ.আই.ভি’, ‘বার্ড-ফ্লু’, তীব্র শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত লক্ষণসমূহ যাকে সার্স (SARS)-বলা হয় সেই সকল জীবাণু এক দেশ থেকে আরেক দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যা মানব নিরাপত্তার পক্ষে মারাত্মক।

প্রশ্ন ২৮। মানবীয় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক কী? আলোচনা কর।

উত্তরঃ যে-কোন ধরনের ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি পাওয়াকে নিরাপত্তা বলে । ভয়-ভীতি সামরিক ও অসামরিক হতে পারে। মানব নিরাপত্তা হল জনগণের নিরাপত্তা। এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ব্যাক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা। মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বিশেষ ভাবে জড়িত উদ্দেশ্যকে মানব নিরাপত্তা বলে। মানব জাতির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া অন্যতম প্রধান প্রত্যাহ্বান হল স্বাস্থ্য।

মানবীয় নিরাপত্তার একটি বিষয়বস্তু বল মহামারী। বিগত কিছু বছর যাবৎ পক্ষীজ্বর, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি সমগ্র বিশ্ববাসীর জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাণ্ডবের সৃষ্টি করেছে। এই রোগ এখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। পক্ষীজ্বর বা সোয়াইন ফ্লু আরম্ভ হলে প্রতি রাষ্ট্রই সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এইডস্ জাতীয় রোগ একরকম মারাত্মক রোগ। এটি প্রব্রজনের মাধ্যমে এখন এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৩ সালের এক হিসাব মতে বিশ্বের প্রায় ৪ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং এর এক-তৃতীয়াংশ রোগী ছিল আফ্রিকার। এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার হলেও কেবলমাত্র উন্নত দেশগুলির লোকেরাই এর সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছেন, কারণ এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই রোগ প্রব্রজন ছাড়াও ভ্রমণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামরিক অভিযান ইত্যাদির মাধ্যমে এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া আরও কিছু নতুন নতুন রোগ; যেমন- Ebola virus, Hantavirus, Hepatitis C ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব বর্তমানে দেখা দিয়েছে, আবার পুরাতন রোগ; যেমন—যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুজ্বর, কলেরা ইত্যাদি অনেক শক্তিশালী হয়ে কোথাও কোথাও আবার ফিরে আসছে। এই সকল মারাত্মক রোগগুলি মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইকে প্রতিনিয়ত কঠিন থেকে কঠিনতর করছে আর যেহেতু এই সকল ব্যাধি বিশ্বজনীন সেই হেতু আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলা বাঞ্ছনীয়।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। মানব নিরাপত্তা কি? এর সংকীর্ণ ও বহুল ধারণা সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মানব নিরাপত্তা: অপরম্পরাগত, নিরাপত্তা বলতে রাষ্ট্ররক্ষা অপেক্ষা জনগণকে অধিক রক্ষা করা বোঝায়। অপরম্পরাগত নিরাপত্তার প্রবক্তাগণের মতে রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য হল এর জনগণকে রক্ষা করা। তাদের মতে অপরম্পরাগত নিরাপত্তায় ক্ষুধা, ব্যাধি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কারণ এইগুলি যুদ্ধ অপেক্ষা অধিক জীবনহানি ঘটায়। সুতরাং তাদের মতে অপরম্পরাগত নিরাপত্তা নীতিতে মানুষকে এই সকল বিপদ ও হিংসা ও যুদ্ধ হতে রক্ষা করা উচিত। 

সংকীর্ণ ও বহুল ধারণা: মানব নিরাপত্তার সংকীর্ণ ধারণার প্রবক্তাগণের মতে, মানব নিরাপত্তার প্রাথমিক লক্ষ্য হল ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা। এই সংকীর্ণ ধারণার প্রবক্তাগণ ব্যক্তির প্রতি থাকা হিংসাত্মক হুমকির দিকটিতে গুরুত্ব আরোপ করে। রাষ্ট্রসংঘের পূর্বতন মহাসচিব কোফি আন্নান মন্তব্য করেন—“আভ্যন্তরীণ হিংসা থেকে সম্প্রদায় ও ব্যক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা।”

মানব নিরাপত্তার উদার ধারণার প্রবক্তাগণ এরূপ যুক্তি প্রদর্শন করে যে হুমকির তালিকায় রোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কারণ এগুলো যুদ্ধ, গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ অপেক্ষা অধিক মানুষ হত্যা করে। তাঁদের মতে, মানব নিরাপত্তা নীতিতে মানুষকে হিংসার সঙ্গে এইসব হুমকি থেকেও সুরক্ষা দিতে হবে। মানব নিরাপত্তার বহুল দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও মানবীয় মর্যাদাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। একটি কথা এখানে বলা প্রয়োজন, মানব নিরাপত্তা ‘অভাব থেকে মুক্ত’ ও ‘ভয় থেকে মুক্ত’ হওয়ার উপর গুরুত্ব প্রয়োগ করে।

প্রশ্ন ২। সামরিক জোটসমূহের উদ্দেশ্য কি কি?

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে কতিপয় সামরিক আঁতাত তৈরি হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমী ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সামরিক জোট NATO এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সামরিক জোট WARSAW। আঁতাত হল কতিপয় রাষ্ট্রের একটি জোট যা তাদের কার্যের সমন্বয় সাধন করে অন্য সামরিক আক্রমণ প্রতিহত করে। অধিকাংশ আঁতাতই লিখিত চুক্তি অথবা বোঝাপড়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। আঁতাতসমূহ জাতীয় স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং জাতীয় স্বার্থ পরিবর্তিত হলে আঁতাতেরও পরিবর্তন ঘটে।

উদ্দেশ্যসমূহ: সামরিক আঁতাতের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সামরিক আঁতাত ক্ষুদ্র শক্তির বিরুদ্ধে বৃহৎ শক্তির আক্রমণ প্রতিহত করতে যৌথ নিরাপত্তা প্রদান করে।

(খ) সামরিক আঁতাত বৃহৎ শক্তিবর্গ যা আঁতাতের নেতৃত্ব দেয়, তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

(গ) শক্তির সমতা রক্ষা করা সামরিক আঁতাতের একটি প্রধান উপায়।

প্রশ্ন ৩। “নিরাপত্তার অপরম্পরাগত ধারণা নিরাপত্তার হুমকির পরিবর্তনশীল প্রকৃতির উপর আলোকপাত করে।” এই নূতন হুমকিগুলি কি কি?

অথবা,

মানবীয় নিরাপত্তার প্রতি দুটি হুমকির বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মানব সুরক্ষা ও বিশ্ব সুরক্ষার মতো অপরম্পরাগত ধারণা নিরাপত্তার প্রতি হুমকির পরিবর্তনশীল প্রকৃতিকে অধিশ্রবণ করে। ফলে নূতন হুমকি উৎপত্তি হয়। এইরূপ কয়েকটি হুমকি নিম্নরূপ:

(ক) সন্ত্রাসবাদ: সন্ত্রাসবাদ বর্তমান বিশ্বে একটি বড় হুমকি। সন্ত্রাসবাদ হল একপ্রকার হিংসা যা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করে। বোমা বিস্ফোরণ, ছিনতাই, আত্মঘাতী বোমাবাজি, হত্যা প্রভৃতি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ।

(খ) মানবাধিকার লঙ্ঘন: মানুষের ব্যক্তিবিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক অবস্থা বা সুযোগ-সুবিধাকেই অধিকার বা মানব অধিকার বলে। মানবাধিকারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়; যথা—রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার ও উপনিবেশের অধীনস্থ মানুষের অথবা জনজাতি এবং দেশীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এটা নিরাপত্তার একটি হুমকি বা প্রত্যাহ্বানস্বরূপ। মানবাধিকার হনন হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি ব্যবস্থা নেবেন সে বিষয়ে এখনও একমত হওয়া যায়নি।

(গ) বিশ্বব্যাপী দারিদ্র: বিশ্বব্যাপী দারিদ্র নিরাপত্তাহীনতার আরও একটি উৎস। মাথাপিছু উচ্চ আয় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিম্ন হার ধনী রাষ্ট্রসমূহ অথবা ধনী সামাজিক গোষ্ঠীকে আরও বিত্তশালী করে তোলে, যেখানে উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং নিম্ন আয় দরিদ্র দেশসমূহ এবং দরিদ্র গোষ্ঠীকে অধিকতর দরিদ্র করে তোলে। সমগ্র বিশ্বে এই বৈষম্য উত্তর ও দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

দক্ষিণের দরিদ্র এক বড়সড় মাপের প্রব্রজনের পথ দেখায় অধিকতর উন্নত জীবনের সন্ধানে। বিশেষ করে উত্তরের দেশে অধিকতর উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে। জন প্রব্রজনের ফলে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত মহামারী; যেমন—এইচ আই ভি, এইড্‌ড্স, বার্ড ফ্লু, তীব্র শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত লক্ষণসমূহ যাকে সার্স (SARS) বলা হয় তা এক দেশ হতে অন্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং এটাও নিরাপত্তার একটি প্রধান হুমকিস্বরূপ।

প্রশ্ন ৪। সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য কয়েকটি পরামর্শ দাও।

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়:

(ক) পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে আধুনিক করতে হবে, অর্থাৎ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করতে হবে।

(খ) সন্ত্রাসবাদ ও হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে যথেষ্ট কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবাদী কার্য বা হিংসার আশ্রয় যাতে গৃহিত হতে না পারে তার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

(গ) ভূমি সংস্কার ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে কার্যকরী করতে হবে যাতে সমাজে সমতা থাকে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়।

(ঘ) জনগণকে সরকারের প্রতি সকল প্রকার সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হবে।

(ঙ) সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। যে সকল রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করে তাদেরকে এই প্রকার কার্য থেকে বিরত থাকার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

(চ) যে সকল রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ আছে সে সকল দেশে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।

এই সকল ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে মানব নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হবে।

প্রশ্ন ৫। তৃতীয় বিশ্ব ও প্রথম বিশ্বে বাস করা জনগণের সম্মুখীন হওয়ার ভয়ভীতির মধ্যে পার্থক্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা তাদের মধ্যে শান্তি স্থাপন আশা করেছিল। তারা কোন জোট বা শক্তিগোষ্ঠী হতে বিপদের সম্মুখীন হয় নি। অন্যদিকে নব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের সম্মুখীন হওয়া বিপদ প্রথম বিশ্বের দেশ (আমেরিকা), সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশসমূহের সম্মুখীন হওয়া. বিপদ অপেক্ষা ভিন্নতর। প্রথমত এই সকল দেশ তাদের সীমান্তের ওপার অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশসমূহ হতে বিপদের সম্মুখীন হয় নি। তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরেই বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। অপরদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ আমেরিকা বা সোভিয়েত ইউনিয়ন অপেক্ষা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ হতে অধিক বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। তারা সীমানা, ভূখণ্ড, জনসংখ্যা অথবা এইগুলির সব কয়টি হতে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল।

এছাড়া তৃতীয় বিশ্বের নব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সম্পর্কিত বিপদ সম্পর্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি মূল ভূভাগ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরির সমর্থক ছিল। কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে মদত এমনকি সহায়তা করে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে মানসিক চাপ দেখা দেয় এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সুতরাং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত ও আভ্যন্তরীণ কলহ তাদের নিরাপত্তার একটি বিরাট প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন ৬। সন্ত্রাসবাদ গুরুতর আইন-শৃঙ্খলা সমস্যার সৃষ্টি করে এবং সমাজের সংহতি বিনষ্ট করে। উদাহরণসহ উক্তিটির যুক্তিযুক্ততা প্রতিপন্ন কর।

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ রাজনৈতিক হিংসাকে উল্লেখ করে যা সাধারণ নাগরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নির্বিচারে হত্যা করে। সন্ত্রাসবাদের ধ্রুপদী বিষয়গুলি হল নাশকতার লক্ষ্যে বিমান ছিনতাই, অপহরণ এবং রেলগাড়ি, কফিখানা, বাজার ও অন্যান্য জনবহুল স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ইত্যাদি। সন্ত্রাসবাদ দুই ধরনের হয়, যেমন—আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকায় বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলা হল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের এক উদাহরণ এবং ২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা (অন্তর্ঘাত) হল অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের উদাহরণ।

সন্ত্রাসবাদ গুরুতরভাবে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা সৃষ্টি করে এবং সমাজের সংহতি বিনষ্ট করে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি যে কাশ্মীর উপত্যকা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের শিকার। ভূস্বর্গ বলে পরিচিত কাশ্মীর উপত্যকা সর্বদাই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থল ছিল। কিন্তু বিগত দুই-এক দশক থেকে সন্ত্রাসবাদের কারণে সেখানকার পর্যটন শিল্প মার খাচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা সংস্থা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কাশ্মীর উপত্যকার যুবসমাজ সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে এবং কাশ্মীর উপত্যকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে।

অন্যদিকে ভারতের কিছু রাজ্য, যেমন—পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি—অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের ফলে বিপর্যস্ত। এইসব রাজ্যে চরমপন্থী সংঘটনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র আন্দোলনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল এবং নন্দীগ্রামে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে আমরা দেখেছি। ভারতের পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ চরমপন্থী মাওবাদী সংঘটনকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবচাইতে বড় বিপদ বলে মত প্রকাশ করেছিলেন।

প্রশ্ন ৭। গোলকীয় দরিদ্রতা কি? গোলকীয় পরিমণ্ডলে এর জটিল প্রকৃতির তালিকা দাও।

উত্তরঃ গোলকীয় দারিদ্র মানব নিরাপত্তার বিপদের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। গরীব রাষ্ট্রসমূহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। অন্যদিকে ধনী দেশসমূহে জনসংখ্যার ঘাটতি অনুভব করা হয়। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। গরীব রাষ্ট্রসমূহ সাধারণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে না। এই রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবেশ প্রদূষণ প্রতিরোধ, ব্যাধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। কোন কোন রাষ্ট্র যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে কিছুটা সফল হয়েছে কিন্তু অধিকাংশ রাষ্ট্রই এই ব্যাপারে সফল হয় নি। বিশ্বের অধিকাংশ বিরোধ এই সকল দরিদ্র এলাকায় সংঘটিত হয়ে থাকে। একবিংশ শতকের প্রথম দিকেও এই সকল অঞ্চলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় জীবনহানি ঘটতে দেখা যায়। 

প্রশ্ন ৮। অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ নিরাপত্তার প্রথাগত ধারণায় সহযোগিতার দ্বারা হিংসাকে সীমিত করে আনার ব্যাপারটির স্বীকৃতি আছে। এই সীমাবদ্ধতা যুদ্ধের ইপ্সিত লক্ষ্য এবং সাধন এই দুটি বিষয়ের সাথেই সংম্পৃক্ত। নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রথাগত ধারণা সহযোগিতার অন্যান্য ধারাকেও বাতিল করে না। এই ধরনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্বাসের আবহ গড়ে তোলা।

বৃহৎ দুটি শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত সংঘ পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজী হয়নি, বরং এরা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ হল অস্ত্র আহরণ ও উন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণ করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত সংঘকে পারমাণবিক হামলা চালানোর লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা থেকে নিরস্ত করার জন্য ১৯৭২ সালে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক (এ বি এম) চুক্তি সম্পাদিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া দুটি অন্যতম চুক্তি হল ‘যুদ্ধ-সংক্রান্ত অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি—II’ (SALT II) এবং ‘যুদ্ধ সংক্রান্ত অস্ত্র হ্রাসকরণ চুক্তি—–II’ (START II)।

প্রশ্ন ৯। অস্ত্ৰদৌড় এবং তার প্রভাব সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ অস্ত্রদৌড় বলতে বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের অস্ত্রভাণ্ডার গড়ার প্রতিযোগিতাকে বোঝায়। অস্ত্রভাণ্ডার স্ফীত করার উদ্দেশ্য দুই ধরনের—প্রথমটা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে (উদাহরণ—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং দ্বিতীয়টা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে (উদাহরণ—ভারত)।

সমরবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়নের ফলে প্রধানত উন্নত অর্থনীতির রাষ্ট্রসমূহ প্রতিনিয়ত অত্যাধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন মারণাস্ত্র প্রস্তুতে ব্যস্ত। এর ফলে সমগ্র বিশ্ব নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। তাই দেখা যায় যারা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র নির্মাণে অক্ষম তারা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র প্রস্তুতকারী রাষ্ট্রসমূহ হতে অস্ত্র কিনে নেয়। তার সবচেয়ে বড় কারণ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র চলে আসলে তার নিরাপত্তা সংকটে পড়ে যায়।

এইভাবে অস্ত্র প্রস্তুত এবং অস্ত্র মজুত রাখা দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই অস্ত্র প্রস্তুত এবং সংরক্ষণে রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় আয়ের একটি বিপুল অংশ ব্যয় হয়, যা মানব কল্যাণে ব্যয় করা যেত। সমরাস্ত্রের আধুনিকীকরণে মানব কল্যাণ সাধিত হয় না, কারণ সমরাস্ত্রের প্রয়োগে কেবলমাত্র প্রাণহানিই হয়। ভারতের মতো বিকাশশীল দেশ তার জাতীয় আয়ের ৩০%-এর কাছাকাছি অর্থ সামরিক খাতে ব্যয় করে অথচ শিক্ষা খাতে ব্যয় করে জাতীয় আয়ের মাত্র ৪%। এই অস্ত্রদৌড়ের ফলে বিশেষ করে অনুন্নত বা বিকাশশীল দেশসমূহের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সামরিক খাতে অত্যাধিক ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা সেইসব রাষ্ট্রসমূহকে মানব উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে আপস করতে বাধ্য করে। আর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নয়ন ছাড়া কোন রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে অস্ত্র বর্জন করে মানব উন্নয়নের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত।

প্রশ্ন ১০। ক্ষমতার ভারসাম্যের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বিরোধে জয়লাভ ও প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার সামর্থ্যকে ক্ষমতা বলা হয়। বাস্তব রাজনীতির প্রবক্তাগণ বলেন যে, রাষ্ট্র শক্তিধর হতে না পারলে তার দেশের জাতীয় প্রগতি, স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রতিটি রাষ্ট্রের লক্ষ্য নিজ অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা এবং শক্তি সঞ্চয় করা।

ক্ষমতার ভারসাম্য হল দেশের অবাধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে এই ক্ষমতা অশান্তিময় অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে না। 

ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) কোন দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকলেই সেই দেশের ক্ষমতার সুস্থিরতার ভাব প্রকাশ পায়।

(খ) ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার জন্যই বৃহৎ শক্তিশালী দেশসমূহ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কিছু প্রয়োজনীয় উপায় অবলম্বন করে।

(গ) নিরস্ত্রীকরণ, মিত্রতা স্থাপন, বিভাজন ও শাসন, যুদ্ধ, আভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ, অস্ত্র আহরণ ইত্যাদির মাধ্যমে অন্য দেশকে বৃহৎ শক্তিশালী দেশ নিয়ন্ত্রণ করে নিজ ক্ষমতার ভারসাম্য বা সন্তুলন বজায় রাখে।

প্রশ্ন ১১। ক্ষমতার সমতা কি? একটি রাষ্ট্র কিভাবে তা অর্জন করতে পারে?

উত্তরঃ শক্তির সমতা চিরাচরিত নিরাপত্তা নীতির একটি উপাদান। যখন কোন দেশ অত্যন্ত শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী হয় তখন অন্যান্য দেশ তার দ্বারা বিপদগ্রস্ত বলে অনুভব করে। যদিও ক্ষমতাশালী দেশের অন্য দেশ আক্রমণ করা বা দখল করার কোন অভিপ্রায় থাকে না তথাপি ভবিষ্যতে যে-কোন সময়ে বৃহৎ রাষ্ট্র আক্রমণকারী হতে পারে। স্বভাবতই দেশসমূহ শক্তির সমতার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর থাকে। তারা শক্তির সমতা স্থাপনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে। 

সুতরাং শক্তির সমতা হল বিভিন্ন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার সামঞ্জস্য রক্ষা করা, যাতে কোন শক্তি বা শক্তিগোষ্ঠী অত্যধিক ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী হয়ে অন্য দুর্বল রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠীর বিপদের কারণ না হয়। শক্তির সমতা শক্তির স্থিতিশীলতা তৈরি করে যা অস্থায়ী এমনকি ক্ষণস্থায়ী। এই অর্থে শক্তিসমতা গতিশীল।

অর্জনের উপায়সমূহ: শক্তির সমতা নিরূপণ ও সংরক্ষণের নানা প্রকার উপায় বা প্রতিআঁতাঁত, পদ্ধতি আছে। শক্তির সমতা অর্জনের অন্যতম উপায়সমূহ হল—আঁতাত ও অস্ত্রীকরণ ও নিরস্ত্রীকরণ, ক্ষতিপূরণ, হস্তক্ষেপ ও অহস্তক্ষেপ, বিভেদের নীতি, বাফার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি।

প্রশ্ন ১২। সামরিক আঁতাতের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি? নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসহ যে-কোন একটি সামরিক আঁতাতের কার্যাবলির একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে কতিপয় সামরিক আঁতাত তৈরি হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমী ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সামরিক জোট NATO এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সামরিক জোট WARSAW। আঁতাত হল কতিপয় রাষ্ট্রের একটি জোট যা তাদের কার্যের সমন্বয় সাধন করে অন্য সামরিক আক্রমণ প্রতিহত করে। অধিকাংশ আঁতাতই লিখিত চুক্তি অথবা বোঝাপড়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। আঁতাতসমূহ জাতীয় স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং জাতীয় স্বার্থ পরিবর্তিত হলে আঁতাতেরও পরিবর্তন ঘটে।

উদ্দেশ্যসমূহ: সামরিক আঁতাতের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সামরিক আঁতাত ক্ষুদ্র শক্তির বিরুদ্ধে বৃহৎ শক্তির আক্রমণ প্রতিহত করতে যৌথ নিরাপত্তা প্রদান করে।

(খ) সামরিক আঁতাত বৃহৎ শক্তিবর্গ যা আঁতাতের নেতৃত্ব দেয়, তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

(গ) শক্তির সমতা রক্ষা করা সামরিক আঁতাতের একটি প্রধান উপায়।

উদাহরণ: ন্যাটো (NATO) এবং ওয়ারশ চুক্তি সামরিক আঁতাতের উদাহরণ। ন্যাটো সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য দমনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উত্তর অতলান্তিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organization, NATO) আমেরিকা ও তার মিত্র জোটভুক্ত মোট ১২টি রাষ্ট্র নিয়ে ১৯৪৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৩। সামরিক ভীতি বা হুমকি কি? তা কিভাবে একটি দেশের বিপদের কারণ হতে পারে?

উত্তরঃ সামরিক ভীতি বা হুমকি হল নিরাপত্তার একটি পরম্পরাগত ধারণা। প্রাচীনকাল থেকেই একটি দেশ অন্য দেশকে সামরিকভাবে আক্রমণ করে। সামরিক অভিযানের শাসানি দিয়ে একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌম এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সর্বমূলকে বিপদাপন্ন করে তোলে। সামরিক অভিযান সাধারণ নাগরিকের জীবনও বিপদগ্রস্ত করে। যুদ্ধে কেবলমাত্র সৈন্যরাই আহত অথবা নিহত হবে তেমনটি নয়। প্রায়ই নিরীহ জনসাধারণকে লক্ষ্যবস্তু স্থির করা হয় যাতে সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন ভেঙে যায়। সামরিক অভিযানের ফলে দেশের অর্থের অপচয় হয়। দেশের আর্থিক অস্থিরতা দেখা দেয়। সামরিক হুমকি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। এর ফলে দেশের আর্থিক এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

প্রশ্ন ১৪। গোলকীয় দারিদ্র বলতে তুমি কি বোঝ?

উত্তরঃ গোলকীয় দারিদ্র মানব নিরাপত্তার বিপদের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। গরীব রাষ্ট্রসমূহে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। অন্যদিকে ধনী দেশসমূহে জনসংখ্যার ঘাটতি অনুভব করা হয়। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। গরীব রাষ্ট্রসমূহ সাধারণ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে না। এই রাষ্ট্রসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পরিবেশ প্রদূষণ প্রতিরোধ, ব্যাধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। কোন কোন রাষ্ট্র যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে কিছুটা সফল হয়েছে কিন্তু অধিকাংশ রাষ্ট্রই এই ব্যাপারে সফল হয় নি। বিশ্বের অধিকাংশ বিরোধ এই সকল দরিদ্র এলাকায় সংঘটিত হয়ে থাকে। একবিংশ শতকের প্রথম দিকেও এই সকল অঞ্চলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় জীবনহানি ঘটতে দেখা যায়।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। অর্থ অনুযায়ী সাজিয়ে লেখ:

(a) আত্মবিশ্বাস তৈরি পদ্ধতি – (i) কতিপয় অস্ত্র পরিত্যাগ।

(b) অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ – (ii) বিভিন্ন রাষ্ট্র নিয়মিতভাবে নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত তথ্যাদি বিনিময় পদ্ধতি।

(c) আঁতাঁত – (iii) সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধস্বরূপ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্মিলিত জোট।

(d) নিরস্ত্রীকরণ – (iv) অস্ত্র উন্নত করা অথবা অর্জন নিয়ন্ত্রণ করা।

উত্তরঃ (a) আত্মবিশ্বাস তৈরি পদ্ধতি – (ii) বিভিন্ন রাষ্ট্র নিয়মিতভাবে নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত তথ্যাদি বিনিময় পদ্ধতি।

(b) অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ – (iv) অস্ত্র উন্নত করা অথবা অর্জন নিয়ন্ত্রণ করা।

(c) আঁতাঁত – (iii) সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধস্বরূপ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্মিলিত জোট।

(d) নিরস্ত্রীকরণ – (i) কতিপয় অস্ত্র পরিত্যাগ।

প্রশ্ন ২। নিম্নোক্তগুলির কোনটি চিরাচরিত নিরাপত্তা বিষয়/ অচিরাচরিত নিরাপত্তা বিষয়/কোন বিপদাশঙ্কা নয়?

(ক) চিকনগুনিয়া/ডেঙ্গুজ্বর বিস্তার।

উত্তরঃ (ক) অচিরাচরিত নিরাপত্তা বিষয়।

(খ) প্রতিবেশি রাষ্ট্র থেকে শ্রমিকদের আগমন।

উত্তরঃ (খ) অচিরাচরিত নিরাপত্তা বিষয়।

(গ) কোন গোষ্ঠী তাদের অঞ্চলের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে উদ্ভব হওয়া।

উত্তরঃ (গ) অচিরাচরিত নিরাপত্তা বিষয়।

(ঘ) কোন গোষ্ঠী তাদের অঞ্চলের স্বশাসনের দাবিতে উদ্ভব হওয়া।

উত্তরঃ (ঘ) কোন বিপদাশঙ্কা নয়।

(ঙ) একটি সংবাদপত্র যা দেশে সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি কঠোর।

উত্তরঃ (ঙ) কোন বিপদাশঙ্কা নয়।

প্রশ্ন ৩। নিরাপত্তা কি? চিরাচরিত এবং অচিরাচরিত নিরাপত্তার মধ্যে পার্থক্য কি? জোট সৃষ্টি বা বজায় রাখা কোন শ্রেণীর অন্তর্গত?

উত্তরঃ সাধারণ অর্থে নিরাপত্তা হল ভয় ও ভীতি হতে মুক্তি। মানুষের অস্তিত্ব কোন দেশের জীবনযাত্রা প্রণালী ভয়ভীতিতে পরিপূর্ণ। সেসব ভয়ভীতি চরম বিপজ্জনক। এইগুলিই নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

চিরাচরিত এবং অচিরাচরিত নিরাপত্তার পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) চিরাচরিত নিরাপত্তা প্রধানত এক দেশ অন্য দেশকে বাহ্যিক ভয়ভীতি অথবা সামরিক শক্তি প্রয়োগের ভয় দেখানোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সামরিক শক্তি প্রয়োগের ভয় দেখানো দ্বারা এক দেশ অন্য দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিপন্ন করে তোলে। অচিরাচরিত নিরাপত্তা সামরিক ভিত্তি অপেক্ষা বেশি বিপজ্জনক। তা ভয়, ভীতি ও বিপদ, যা মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার শর্তসমূহকে প্রভাবিত করে, তা অন্তর্ভুক্ত করে।

(খ) চিরাচরিত নিরাপত্তায় রাষ্ট্র, তার ভৌগোলিক সীমারেখা এবং শাসন সংস্থা বা সরকার হল মূল লক্ষ্যবস্তু। অন্যদিকে অচিরাচরিত নিরাপত্তায় মূল লক্ষ্যবস্তু কেবল রাষ্ট্রই নয় ব্যক্তিগোষ্ঠী এবং এমনকি সমস্ত মানুষ। সুতরাং অচিরাচরিত নিরাপত্তাকে ‘মানব নিরাপত্তা’ অথবা ‘বিশ্ব নিরাপত্তা’ বলা হয়।

(গ) চিরাচরিত নিরাপত্তায় সামরিক বাহিনী এবং সাধারণ নাগরিক অপর দেশের সামরিক বাহিনী ও সাধারণ নাগরিকদের নিকট হতে বিপদের সম্মুখীন হয়। কিন্তু অচিরাচরিত নিরাপত্তায় পূর্ব উল্লেখিত ভয়-ভীতি ব্যতীত নাগরিকগণকে নিজ দেশের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা হতে সুরক্ষিত করা হয়।

জোট সৃষ্টি বা বজায় রাখা প্রথাগত চিরাচরিত নিরাপত্তা শ্রেণীর অন্তর্গত।

প্রশ্ন ৪। তৃতীয় বিশ্বের জনগণের সম্মুখীন হওয়া ভয়ভীতি এবং প্রথম বিশ্বের জনগণের সম্মুখীন হওয়া ভয়ভীতির মধ্যে পার্থক্যসমূহ কি কি?

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা তাদের মধ্যে শান্তি স্থাপন আশা করেছিল। তারা কোন জোট বা শক্তিগোষ্ঠী হতে বিপদের সম্মুখীন হয় নি। অন্যদিকে নব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের সম্মুখীন হওয়া বিপদ প্রথম বিশ্বের দেশ (আমেরিকা), সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশসমূহের সম্মুখীন হওয়া. বিপদ অপেক্ষা ভিন্নতর। প্রথমত এই সকল দেশ তাদের সীমান্তের ওপার অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশসমূহ হতে বিপদের সম্মুখীন হয় নি। তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরেই বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। অপরদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ আমেরিকা বা সোভিয়েত ইউনিয়ন অপেক্ষা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ হতে অধিক বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল। তারা সীমানা, ভূখণ্ড, জনসংখ্যা অথবা এইগুলির সব কয়টি হতে বিপদের সম্মুখীন হয়েছিল।

এছাড়া তৃতীয় বিশ্বের নব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সম্পর্কিত বিপদ সম্পর্কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি মূল ভূভাগ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরির সমর্থক ছিল। কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্র এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে মদত এমনকি সহায়তা করে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে মানসিক চাপ দেখা দেয় এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সুতরাং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত ও আভ্যন্তরীণ কলহ তাদের নিরাপত্তার একটি বিরাট প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দিয়েছে। 

প্রশ্ন ৫। সন্ত্রাসবাদ কি নিরাপত্তার একটি চিরাচরিত না অচিরাচরিত বিপদ?

উত্তরঃ সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তার একটি অচিরাচরিত বিপদ বা ভয়। সন্ত্রাসবাদ হল রাজনৈতিক হিংসা যা ইচ্ছাকৃতভাবে এবং নির্বিচারে সাধারণ মানুষের বিপদের কারণ হয়। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী যে রাজনৈতিক অবস্থা পছন্দ করে না তা পরিবর্তনের জন্য বল প্রয়োগ বা বল প্রয়োগের ভয় দেখানোর মাধ্যমে পরিবর্তন করতে চায়। সহজলভ্য অসামরিক লক্ষ্যবস্তু সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হয়। সন্ত্রাসবাদীরা সরকার বা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সশস্ত্র ও সহিংস পদ্ধতি অবলম্বন করে। 

প্রশ্ন ৬। চিরাচরিত নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যদি বিপন্ন হয় তাহলে তার সম্মুখে কি কি বিকল্প ব্যবস্থা থাকে?

উত্তরঃ চিরাচরিত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুসংগঠিত নীতি হল যে এই ব্যবস্থায় হিংসা হ্রাসে সহযোগিতা সম্ভব। বর্তমানে এটাই সর্বজনগ্রাহ্য অভিমত যে কোন রাষ্ট্র একমাত্র যুক্তিসঙ্গত কারণে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে। যুদ্ধে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল আত্মরক্ষা, দেশরক্ষা ও নরহত্যা হতে জনগণকে রক্ষা করা। ব্যবহৃত যুদ্ধের পদ্ধতি অনুযায়ী যুদ্ধকে সীমাবদ্ধ করা যায়। সেনাবাহিনীকে হত্যা, সাধারণ নাগরিকদের আঘাত করা এবং নিরস্ত্র ও আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদেরকে আঘাত করা হতে বিরত থাকতে হবে। যখন সকল প্রকার বিকল্প ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে যায় একমাত্র তখনই বলপ্রয়োগ সঙ্গত।

সহযোগিতার প্রধান প্রকারসমূহ হল – নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং আত্মবিশ্বাস গড়া। নিরস্ত্রীকরণের অর্থ হল সকল রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র পরিত্যাগ করা। উদাহরণস্বরূপ ১৯৭২ সালে ‘জীবাণু অস্ত্র সম্মেলন’ (Biological Weapons Convention, BWC) এবং ১৯৯২ সালের ‘রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলন’ (Chemical Weapons Convention, CWC)। এই প্রকার অস্ত্রশস্ত্র তৈরি ও মজুত রাখা বেআইনি করা হয়েছে। মোট ১৫৫টি দেশ BWC এবং ১৮১টি দেশ CWC গ্রহণ করে।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র সংগ্রহ ও অস্ত্র উন্নত করা নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৭২ সালের ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী চুক্তি (Anti-Ballistic Missile, ABM) দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার প্রতিহত করতে ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ প্রতিহত করতে চেষ্টা করা হয়।

চিরাচরিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিংসা প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে আত্মবিশ্বাস গড়াকেও গ্রহণ করে। আত্মবিশ্বাস গড়া হল একটি পদ্ধতি যাতে রাষ্ট্রসমূহ প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে চিন্তাধারা ও তথ্যাদি বিনিময় করে। তারা একে অন্যকে তাদের সামরিক অভিপ্রায় এবং সামরিক পরিকল্পনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে। তারা একে অপরকে তাদের প্রত্যেকের কি পরিমাণ সৈন্য আছে এবং কোথায় তা মোতায়েন করা আছে তা প্রকাশ করে। সংক্ষেপে বলা যায় যে আত্মবিশ্বাস গড়া হল একটি পদ্ধতি যা নিশ্চিত করে দেয় যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে আগের দেশকে যাতে আক্রমণ না করে। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই প্রক্রিয়া চলছে। 

প্রশ্ন ৭। শক্তির সমতা কি? কিভাবে একটি রাষ্ট্র তা অর্জন করে?

উত্তরঃ শক্তির সমতা চিরাচরিত নিরাপত্তা নীতির একটি উপাদান। যখন কোন দেশ অত্যন্ত শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী হয় তখন অন্যান্য দেশ তার দ্বারা বিপদগ্রস্ত বলে অনুভব করে। যদিও ক্ষমতাশালী দেশের অন্য দেশ আক্রমণ করা বা দখল করার কোন অভিপ্রায় থাকে না তথাপি ভবিষ্যতে যে-কোন সময়ে বৃহৎ রাষ্ট্র আক্রমণকারী হতে পারে। স্বভাবতই দেশসমূহ শক্তির সমতার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর থাকে। তারা শক্তির সমতা স্থাপনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে। 

সুতরাং শক্তির সমতা হল বিভিন্ন রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার সামঞ্জস্য রক্ষা করা, যাতে কোন শক্তি বা শক্তিগোষ্ঠী অত্যধিক ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী হয়ে অন্য দুর্বল রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠীর বিপদের কারণ না হয়। শক্তির সমতা শক্তির স্থিতিশীলতা তৈরি করে যা অস্থায়ী এমনকি ক্ষণস্থায়ী। এই অর্থে শক্তিসমতা গতিশীল।

অর্জনের উপায়সমূহ: শক্তির সমতা নিরূপণ ও সংরক্ষণের নানা প্রকার উপায় বা প্রতিআঁতাঁত, পদ্ধতি আছে। শক্তির সমতা অর্জনের অন্যতম উপায়সমূহ হল—আঁতাত ও অস্ত্রীকরণ ও নিরস্ত্রীকরণ, ক্ষতিপূরণ, হস্তক্ষেপ ও অহস্তক্ষেপ, বিভেদের নীতি, বাফার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি। 

প্রশ্ন ৮। সামরিক আঁতাতের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি? নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসহ যে-কোন একটি সামরিক আঁতাতের কার্যাবলির একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে কতিপয় সামরিক আঁতাত তৈরি হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমী ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সামরিক জোট NATO এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের সামরিক জোট WARSAW। আঁতাত হল কতিপয় রাষ্ট্রের একটি জোট যা তাদের কার্যের সমন্বয় সাধন করে অন্য সামরিক আক্রমণ প্রতিহত করে। অধিকাংশ আঁতাতই লিখিত চুক্তি অথবা বোঝাপড়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। আঁতাতসমূহ জাতীয় স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং জাতীয় স্বার্থ পরিবর্তিত হলে আঁতাতেরও পরিবর্তন ঘটে।

উদ্দেশ্যসমূহ: সামরিক আঁতাতের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সামরিক আঁতাত ক্ষুদ্র শক্তির বিরুদ্ধে বৃহৎ শক্তির আক্রমণ প্রতিহত করতে যৌথ নিরাপত্তা প্রদান করে।

(খ) সামরিক আঁতাত বৃহৎ শক্তিবর্গ যা আঁতাতের নেতৃত্ব দেয়, তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

(গ) শক্তির সমতা রক্ষা করা সামরিক আঁতাতের একটি প্রধান উপায়।

উদাহরণ: ন্যাটো (NATO) এবং ওয়ারশ চুক্তি সামরিক আঁতাতের উদাহরণ। ন্যাটো সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য দমনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উত্তর অতলান্তিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organization, NATO) আমেরিকা ও তার মিত্র জোটভুক্ত মোট ১২টি রাষ্ট্র নিয়ে ১৯৪৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

ন্যাটোর উদ্দেশ্য: ন্যাটোর উদ্দেশ্যসমূহ তার প্রস্তাবনা ও ১৪টি অনুবিধির উপর প্রতিষ্ঠিত:

(ক) ন্যাটোর প্রস্তাবনা রাষ্ট্রসংঘের সনদে বর্ণিত তার উদ্দেশ্য ও নীতিসমূহের উপর পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করেছে।

(খ) সদস্যরাষ্ট্রসমূহ তাদের স্বাধীনতা, ঐতিহ্য, সভ্যতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রভৃতি রক্ষার্থে কৃতসংকল্পবদ্ধ।

(গ) ন্যাটোর প্রধান উদ্দেশ্য হল ইউরোপে সোভিয়েত আক্রমণ প্রতিহত করা।

(ঘ) ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহকে নিরাপত্তা প্রদান করা যাতে তারা তাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও সামরিক উন্নতি সাধন করতে পারে।

প্রশ্ন ৯। পরিবেশের মারাত্মক দ্রুত অবনতি নিরাপত্তার একটি মারাত্মক বিপদের কারণ হচ্ছে। তুমি এই যুক্তিতে একমত কি? তোমার যুক্তি প্রতিপন্ন কর।

উত্তরঃ পরিবেশের দ্রুত অবনতি নিঃসন্দেহে নিরাপত্তার একটি সাংঘাতিক বিপদের কারণ। মানুষের নিরাপত্তা ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ব্যাধি, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি হতে নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ এইসব ঘটনা যুদ্ধ, নরহত্যা ও সন্ত্রাসবাদ একত্রে যত জীবনহানি ঘটায় তা অপেক্ষা অধিক জীবনহানি ঘটায়।

বস্তুত বিশ্ব নিরাপত্তার ধারণাটি বিংশ শতকের শেষ দশকে বিস্তার লাভ করে। এর কারণস্বরূপ প্রকৃতিজাত ঘটনা, যেমন—বন্যা, ভূমিকম্প, খরা, বিশ্ব উষ্ণায়ণ প্রভৃতি উল্লেখ করা যায়। কোন দেশই একাকী সমস্যার সম্মুখীন ও সমাধান করতে পারে না। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি দেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান এবং অন্যান্য উপাদানের জন্য অপরাপর দেশ অপেক্ষা অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ব উষ্ণায়নের দরুন সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা ১.৫-২.০ মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ, মালদ্বীপের অধিকাংশ এবং থাইল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক প্লাবিত করবে। তদ্রুপ দরিদ্র দেশগুলির এইডসের মতো মারাত্মক ব্যাধি বিস্তারের সম্ভাবনা ধনী দেশসমূহের তুলনায় অধিক। যেহেতু এই সকল ব্যাধি বিশ্বজনীন সেইহেতু আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলা বাঞ্ছনীয়। 

প্রশ্ন ১০। প্রতিনিবৃত্ত অথবা প্রতিরক্ষা হিসাবে পরমাণু অস্ত্র রাষ্ট্রসমূহের সমসাময়িক নিরাপত্তা হানির বিরুদ্ধে প্রয়োগ সীমিমাত্র। উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ নিরাপত্তার চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী কোন দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ হল অপরাপর দেশের সামরিক শক্তি। যেসব দেশ পরমাণু অস্ত্র উন্নত করে এবং হাতে রাখে তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে তারা বৈদেশিক আক্রমণ হতে নিজেদের রক্ষা ও শক্তির সমতা রক্ষার জন্য এইরূপ করে থাকে। কিন্তু সমসাময়িক বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র কেবলমাত্র রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সম্পূর্ণ সুনিশ্চিত করে দিতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে পরমাণু অস্ত্র সন্ত্রাসবাদ রুখতে পারে না অথবা পরিবেশ দূষণজনিত কারণে ব্যাধি বিস্তারও রোধ করতে পারে না। আবার পরমাণু অস্ত্র কোন দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণও করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সকল ক্ষমতা ও পরমাণু অস্ত্র দ্বারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রোধ করতে অথবা বিশ্বের জনগণকেও রক্ষা করতে পারে না। সুতরাং এটা বলা যায় যে সমসাময়িককালে রাষ্ট্রসমূহের নিরাপত্তা বিঘ্ন রোধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার সীমিতমাত্র।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় দৃশ্যপট প্রত্যক্ষ করে ভারতে কোন প্রকার নিরাপত্তা, চিরাচরিত না অচিরাচরিত, ব্যবস্থার উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই যুক্তিটি প্রতিপন্ন করতে কি প্রকার উদাহরণ তুমি দেখাতে পার?

উত্তরঃ ভারত নিরাপত্তার চিরাচরিত এবং অচিরাচরিত উভয় প্রকার বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। এইসব বিপদ সীমান্তের এপার ও ওপার উভয় দিক হতে আসছে। সুতরাং নিরাপত্তার চিরাচরিত ও অচিরাচরিত উভয় উপায়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।

প্রথমত, ভারত সামরিক ও পরমাণু ক্ষমতা শক্তিশালী করবার জন্য সকল প্রকার প্রচেষ্টা করছে। ভারত ইতিপূর্বে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানের (উভয়ই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র) সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। চীন ১৯৬২ সালে ভারত আক্রমণ করে। পাকিস্তান ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। ১৯৭৪ ও ১৯৯৮ সালের পরমাণু পরীক্ষাকে ভারত নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসাবে তুলে ধরে। 

ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের দ্বিতীয় উপাদান হল তার নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ রক্ষা করা। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু উপনিবেশিকতা, নিরস্ত্রীকরণ এবং এশীয় ঐক্যের সমর্থন করেছিলেন। ভারত, আমেরিকা ও সোভিয়েত উভয় শক্তিগোষ্ঠী থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখবার জন্য জোট নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করেছে।

ভারতের নিরাপত্তা কৌশলের তৃতীয় উপাদানটি হল দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা সমস্যার মোকাবিলা করা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য, যেমন—পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ভারত যুক্তরাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রয়াসে ব্যস্ত। ভারত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষার প্রচেষ্টা করছে।

চতুর্থত, ভারত তার অর্থনীতি এমনভাবে উন্নত করছে যাতে সকলেই দারিদ্রের কবল হতে মুক্তি লাভ করতে পারে এবং ব্যাপক আর্থিক বৈষম্য দূরীভূত হয়।

সুতরাং ভারত উভয় প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top