Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া

Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া Solutions for All Subjects, You can practice these here.

সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া

Chapter: 5

প্রথম খন্ড (সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। দক্ষিণ এশিয়া বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ দক্ষিণ এশিয়া বলতে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপ প্রভৃতি রাষ্ট্রকে নিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাকে দক্ষিণ এশিয়া বোঝায়।

প্রশ্ন ২। চীন দক্ষিণ-এশিয়ার অংশ কি?

উত্তরঃ না, চীন দক্ষিণ এশিয়ার অংশ নয়।

প্রশ্ন ৩। দক্ষিণ এশিয়ার কোন্ রাষ্ট্র নিজের অর্থনীতিকে সর্বপ্রথম উদারীকরণ করেছিল?

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা।

প্রশ্ন ৪। SAARC-এর সম্পূর্ণ নাম লেখ।

উত্তরঃ South Asian Association for Regional Cooperation (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা)।

প্রশ্ন ৫। হ্যাঁ বা না লেখ:

SAFTA ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ১২তম সার্ক অধিবেশন সম্পাদিত হয়।

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৬। ভারত শ্রীলঙ্কায় কেন শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণ করেছিল?

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের এক চুক্তির ফলস্বরূপ ভারত শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণ করেছিল।

প্রশ্ন ৭। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

CATE শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ______ সম্প্রদায় প্রাধান্য বিস্তার করেছে।

উত্তরঃ সিংহলি।

প্রশ্ন ৮। ভারতের Look East Policy-র অংশীদার কোন্ রাষ্ট্র ছিল?

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা।

প্রশ্ন ৯। ভারত ১৯৯৮ সালে কোন্ স্থানে পরমাণু পরীক্ষণ কার্যসূচী রূপায়িত করেছিল?

উত্তরঃ রাজস্থানের পোখরানে।

প্রশ্ন ১০। SAARC-এর প্রধান উদ্দেশ্য কি?

উত্তরঃ দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা স্থাপনের উদ্দেশ্যে SAARC গড়ে তোলা হয়।

প্রশ্ন ১১। ভারত এবং পাকিস্তান কখন স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারত এবং ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছিল।

প্রশ্ন ১২। কোন্ স্থানে চতুর্দশ SAARC শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ নিউ দিল্লী।

প্রশ্ন ১৩। কোন্ বছর ভারত শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৮৭ সালে।

প্রশ্ন ১৪। কোন্ বছর ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৮ সালে।

প্রশ্ন ১৫। শ্রীলঙ্কা কখন স্বাধীন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে।

প্রশ্ন ১৬। প্রথম SAARC শীর্ষ সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ঢাকায়।

প্রশ্ন ১৭। SAARC কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে।

প্রশ্ন ১৮। কোন্ বছর মালদ্বীপে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল?

উত্তরঃ ২০০৫ সালে।

প্রশ্ন ১৯। কোন্ স্থানে পঞ্চদশ SAARC শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উত্তরঃ কলম্বোয়।

প্রশ্ন ২০। কোন্ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাহোর বাসযাত্রা করেছিলেন?

উত্তরঃ অটল বিহারী বাজপেয়ী।

প্রশ্ন ২১। দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিবৃতিগুলির কোনটি অশুদ্ধ?

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার সকল রাষ্ট্র গণরাজ্য।

(খ) ভারত ও বাংলাদেশ নদীর জল বণ্টন বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

(গ) ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে সাটা (SAFTA) স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

(ঘ) চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উত্তরঃ (খ) দক্ষিণ এশিয়ার সকল রাষ্ট্র গণরাজ্য।

প্রশ্ন ২২। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে কোন্ জাতিগোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তার করে আছে?

উত্তরঃ সিংহলী জাতিগোষ্ঠী।

প্রশ্ন ২৩। হ্যাঁ বা না লেখ:

চীন ভারতের পূর্বামুখী নীতির একটি অঙ্গ।

উত্তরঃ না।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৪। সার্কের মোট সদস্য সংখ্যা কত?

উত্তরঃ ৭টি (আফগানিস্তানসহ ৮টি)।

প্রশ্ন ২৫। সাফটা কখন আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে?

উত্তরঃ ২০০৬ সালের ১লা জানুয়ারি।

প্রশ্ন ২৬। কার্গিল যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৯ সালে।

প্রশ্ন ২৭। সিমলা চুক্তি কখন সম্পাদিত হয়?

উত্তরঃ ১৯৭২ সালে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত যে-কোন চারটি রাষ্ট্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ।

প্রশ্ন ২। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

বাংলাদেশ _____ সাল থেকে ______  সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের অঙ্গ ছিল।

উত্তরঃ ১৯৪৭/১৯৭১

প্রশ্ন ৩। শ্রীলঙ্কা সংঘাতে লিপ্ত থাকা পরস্পর বিবাদমান দুটি গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা সংঘাতে লিপ্ত থাকা পরস্পর বিবাদমান দুটি গোষ্ঠী হল—সিংহলি এবং তামিল।

প্রশ্ন ৪। পূৰ্বামুখী (Look East) নীতি কি?

উত্তরঃ ভারতবর্ষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক বিশেষত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির যে নীতি গ্রহণ করেছে তাকে পূর্বামুখী নীতি বা Look East Policy বলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই রাষ্ট্রগুলি হল— ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড।

প্রশ্ন ৫। পাকিস্তান ভারতের পরমাণু পরীক্ষার ক্ষেত্রে কি প্রকার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৯৮ সালের ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাকিস্তান কিছুদিনের মধ্যেই ছামাই পাহাড়ে পারমাণবিক পরীক্ষা করে। এরপর দুই দেশের মধ্যে এমন এক সামরিক সম্পর্ক স্থাপন হল যে প্রত্যক্ষ ও পূর্ণ যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

প্রশ্ন ৬। এরূপ দুটি বিষয়ের নাম উল্লেখ কর যাকে ভারত ও বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে।

উত্তরঃ ভারত ও বাংলাদেশ সহযোগিতা করছে এরূপ দুটি বিষয় নিম্নরূপঃ

(ক) দুটি রাষ্ট্রই দৃঢ়ভাবে নিজ নিজ দেশের ভৌগোলিক এলাকায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ না চালাতে মত প্রকাশ করেছে।

(খ) দুটি দেশ অর্থনীতি, বিত্ত, ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত, যোগাযোগ উন্নতির ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা করবে বলে আশা ব্যক্ত করেছে।

প্রশ্ন ৭। ভারত ও নেপালের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক আছে বলে তুমি মনে কর কি? কিভাবে?

উত্তরঃ ভারত ও নেপাল এক বিশেষ সম্পর্ক রক্ষা করে যা পৃথিবীতে বহু কম রাষ্ট্রের সঙ্গে আছে। দুটি দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া যাতায়াত ও কাজকর্ম করা সম্ভব। উভয় দেশের মধ্যে কিছু বিভেদ থাকা সত্ত্বেও ভারত ও নেপালের মধ্যে সম্পর্ক স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ । বাণিজ্য, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা, সাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং যৌথ জলসম্পদ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি দুটি দেশকে একজোট করে রেখেছে।

প্রশ্ন ৮। SAARC-কে একটি প্রভাবশালী সংগঠন করে তোলার জন্য ভারতের যে-কোন দুটি প্রচেষ্টার বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ SAARC-কে একটি প্রভাবশালী সংগঠন করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা দুটি নিম্নরূপ:

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে যৌথ সহযোগিতা বৃদ্ধির চেষ্টা।

(খ) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়া গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।

প্রশ্ন ৯। SAFTA কি বোঝায়?

উত্তরঃ South Asian Free Trade Area (দক্ষিণ এশীয় অবাধ বাণিজ্য এলাকা)।

প্রশ্ন ১০। LTTE-এর অর্থ লেখ।

উত্তরঃ Liberation Tigers of Tamil Eelam.

প্রশ্ন ১১। রাজতন্ত্রের পর নেপালে কিভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নেপালে রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। মাওবাদীদের ক্রমাগত চাপের ফলে অবশেষে ২০০৭ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ১২। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের যে-কোন দুটি ক্ষেত্র বিষয়ে লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের দুটি ক্ষেত্র হল – 

(ক) কাশ্মীর সমস্যা। ও 

(খ) সীমান্ত পারের সন্ত্রাসবাদ।

প্রশ্ন ১৩৷ SAARC গঠন করা সাতটি রাষ্ট্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।

প্রশ্ন ১৪। ১৯৯৮ সালে ডিসেম্বরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হওয়া দেশসমূহের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারত ও শ্রীলঙ্কা।

প্রশ্ন ১৫। SAARC-এর দুটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ চীন ও জাপান।

প্রশ্ন ১৬। SAARC-এর সদস্যদের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।

প্রশ্ন ১৭। দক্ষিণ এশিয়া বলে জানা দেশসমূহের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।

প্রশ্ন ১৮। ফারাক্কা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ দুটির নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও বাংলাদেশ।

প্রশ্ন ১৯। ভারতের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত SAARC-এর যে-কোন দুটি দেশের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।

প্রশ্ন ২০। তাসখন্ড চুক্তির তাৎপর্য লেখ।

উত্তরঃ ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে পরাজয় বরণ করে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্ডে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্তানুসারে ভারত সকল সক্রিয়বাদীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠায়।

প্রশ্ন ২১। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং সংঘাতের একটি করে ক্ষেত্র উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং সংঘাতের ক্ষেত্র নিম্নরূপ:

(ক) সহযোগিতার ক্ষেত্র — আন্তঃরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ দমন।

(খ) সংঘাতের ক্ষেত্র — গঙ্গা জল বণ্টন বিরোধ।

প্রশ্ন ২২। স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের ব্যর্থতার দুটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের ব্যর্থতার দুটি কারণ হল—

(ক) সামরিক বাহিনী। এবং 

(খ) মৌলবাদী শক্তি।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৩। সার্কের যে-কোন দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সার্কের দুটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:

(ক) দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রসমূহের জনগণের উন্নতিসাধন করা।

(খ) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি।

প্রশ্ন ২৪। ভারতের উত্তরে অবস্থিত সার্কের দুটি সদস্য রাষ্ট্রের নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারতের উত্তরে অবস্থিত সার্কের দুটি সদস্য রাষ্ট্র হল —

(ক) নেপাল। ও 

(খ) ভুটান।

প্রশ্ন ২৫। সিমলা চুক্তি কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তরঃ সিমলা চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৬। সিমলা চুক্তির যে-কোন দুটি শর্ত উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সিমলা চুক্তির দুটি শর্ত নিম্নরূপ:

(ক) উভয় দেশই পারস্পরিক ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।

(খ) উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে তাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করবে।

প্রশ্ন ২৭। ভারত ও চীনের মধ্যে মতবিরোধের দুটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারত ও চীনের মধ্যে মতবিরোধের দুটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) দুই রাষ্ট্রের সীমানা বিরোধ।

(খ) ১৯৬২ সালে চীনের ভারত আক্রমণ ও ভারতের ভূখণ্ড দখল।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। দক্ষিণ এশিয়ার সকল রাষ্ট্রই এক ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অনুসরণ করে বলে তুমি মনে কর কি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দর্শাও।

উত্তরঃ দক্ষিণ এশিয়ার সকল রাষ্ট্রে একই প্রকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেই। ভারতবর্ষ ও শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর থেকেই গণতান্ত্রিক পরম্পরা মেনে চলছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সামরিক ও অসামরিক উভয় ধরনের শাসনের অধীন ছিল। বর্তমানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে। নেপালে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। ২০০৬ সালে এক গণঅভ্যুত্থানে নেপালে দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ হয়। ভুটানে এখনও রাজতন্ত্র প্রচলিত। মালদ্বীপ ১৯৬৮ সাল থেকে সুলতান শাসনাধীন ছিল। এর পরবর্তী পর্যায়ে মালদ্বীপ গণরাজ্য এবং রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকারে পরিবর্তিত হয়।

প্রশ্ন ২। পাকিস্তানে স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণসমূহ উল্লেখ কর।

অথবা,

সুস্থির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ব্যর্থতার দুটি কারণ আলোচনা কর।

উত্তরঃ পাকিস্তানে স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সামরিক বাহিনী, মৌলভী এবং জমির মালিকানাসম্পন্ন অভিজাতশ্রেণী বারংবার নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশকে সামরিক শাসন জারি করার পথে ঠেলে দিয়েছে।

(খ) পাকিস্তানের ভারতের সাথে নিরন্তর সংঘর্ষ সামরিক শাসনপন্থী দলকে অধিকতর শক্তিশালী করেছে। এই গোষ্ঠী প্রায়শই বলে থাকে যে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলসমূহ ও গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ।

(গ) পাকিস্তানের নিরাপত্তা স্বার্থপর মানসিকতার দল ও বিশৃঙ্খল গণতন্ত্রের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং সেইজন্যই সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় থাকা ন্যায়সঙ্গত।

(ঘ) আন্তর্জাতিক মহলের পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি অকৃত্রিম সমর্থনের অভাব সামরিক বাহিনীকে তাদের প্রাধান্য বজায় রাখার ব্যাপারে প্রোৎসাহিত করেছে।

পাকিস্তানে গণতন্ত্র সফল না হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে একটি শক্ত গণতন্ত্রপন্থী ভাবপ্রবণতা রয়েছে। পাকিস্তানে একটি নির্ভীক ও অপেক্ষাকৃত স্বাধীন সংবাদপত্র ও একটি শক্তিশালী মানবাধিকার আন্দোলন রয়েছে।

প্রশ্ন ৩। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ কি কি কারণে স্বাধীনতা আন্দোলন আরম্ভ করেছিল?

অথবা,

পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ এক মুক্তি আন্দোলনের পথ গ্রহণ করার কারণসমূহ নির্দেশ কর।

উত্তরঃ বাংলাদেশ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের অংশ ছিল। বৃটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের বাংলা ও আসামের বিযুক্ত অঞ্চলসমূহ নিয়ে এটি গঠিত হয়েছিল। এই অঞ্চলের বাসিন্দাগণ পাকিস্তানের প্রাধান্য এবং উর্দুভাষা চাপিয়ে দেবার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে। দেশভাগের অব্যবহিত পরেই এরা বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি অসম্মানজনক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। তারা প্রশাসনে যথাবিহিত প্রতিনিধিত্ব এবং রাষ্ট্রনৈতিক ক্ষমতার ন্যায়সঙ্গত অধিকার দাবি করে। ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানের নির্বাচনে শেখ মুজিবরের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ পূর্ব পাকিস্তানের সব কয়টি আসনে জয়লাভ করে এবং সমগ্র পাকিস্তানের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃত্ব সভা আহ্বান করতে অস্বীকার করে। শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন আরম্ভ করে।

প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা এবং সংঘাতের দুটি দিকের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ কর।

উত্তরঃ সহযোগিতার ক্ষেত্র : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার দুটি ক্ষেত্র নিম্নরূপ:

(ক) উভয় রাষ্ট্রই নিজ নিজ দেশের ভূভাগ কোন সন্ত্রাসবাদী ও অবাঞ্ছিত শক্তিকে ব্যবহার করতে অনুমতি দেওয়া হবে না।

(খ) উভয় দেশই অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র ও গতি সঞ্চারে রাজী হয়েছে।

সংঘাতের ক্ষেত্র: দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের দুটি ক্ষেত্র নিম্নরূপ –

(ক) গঙ্গার জলবণ্টন সংক্রান্ত বিবাদ।

(খ) বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে অনুপ্রবেশ অস্বীকার ভারতকে অখুশি করে।

প্রশ্ন ৫। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্পর্কের জটিলতাসমূহ নির্দেশ কর।

উত্তরঃ ভারত বংশোদ্ভূত বহুসংখ্যক তামিলভাষী মানুষ বহুকাল ধরে শ্রীলঙ্কায় বসবাস করছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকার এর এক ক্ষুদ্রতম অংশকেই নাগরিকত্ব প্রদান করেছে এবং বাকি জনসাধারণকে ভারতে ফিরে যাবার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।

তাছাড়াও দুই দেশেরই মৎসজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরার সময় অজ্ঞাতসারে সাগরসীমা অতিক্রম করে ফেলে। ফলে উভয় দেশের বহু মৎসজীবীকে সীমা উল্লঙ্ঘন করার দায়ে হত্যা করা হয় বা গ্রেপ্তার করা হয়। এই ধরনের ঘটনার জন্যও উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিক্ততা সৃষ্টি হয়।

তাছাড়াও তামিল উগ্রবাদীদের ধ্বংসাত্মক কার্যের জন্য শ্রীলঙ্কা ভারতকে দায়ী করে। এই জটিলতা এতই গভীর যে সহজে মিটবার নয় এবং ফলে একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন ৬। সার্ক গঠনের মূল কারণসমূহ কি কি?

উত্তরঃ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার মোট ৭টি রাষ্ট্রের একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এই দেশগুলি হল—ভারত, ভুটান, বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। সার্ক মূলত এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে কৃষি, গ্রামীণ বিকাশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চোরাকারবার ও সন্ত্রাসবাদ প্রভৃতি বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা করা।

উদ্দেশ্য: সার্কের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণসাধন।

(খ) এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক উন্নতি ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

(গ) এই রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যৌথ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করা।

(ঘ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা।

(ঙ) আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা করা।

প্রশ্ন ৭। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার অবস্থান পরীক্ষা কর।

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এবং ভারতের প্রতিবেশী। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার প্রচুর মিল দেখা যায়। প্রচুর দক্ষিণ ভারতীয়, বিশেষ করে তামিলভাষীরা শ্রীলঙ্কায় বহুদিন ধরে বসবাস করছে। কয়েক দশক ধরে এই তামিলভাষী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শ্রীলঙ্কার জনগোষ্ঠীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছিল এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিপজ্জনক আকার নেয়। ভারত প্রতিবেশী হিসাবে এই বিরোধ মেটাবার চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে এই বিরোধের বলি হতে হয়। যা হোক, অবশেষে শ্রীলঙ্কা সরকার এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে একটা স্থিতাবস্থা এনেছে। শ্রীলঙ্কায় তামিলভাষীদের কয়েক দশক ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধ ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিবাদও সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ। যাই হোক পারস্পরিক আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এমতাবস্থায় চীন প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে শ্রীলঙ্কাকে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে নিজের দলে টানতে চাইছে, যাতে ভারত মহাসাগরে চীন একটি ঘাঁটি বানাতে পারে। ভারতের পক্ষে এটা বিপজ্জনক, কারণ চীন যদি শ্রীলঙ্কায় ঘাঁটি গড়তে পারে তবে শুধু ভারত নয় সার্কভুক্ত দেশগুলির উপর চীন খবরদারির সুযোগ পাবে। তাই এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের উচিত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে চীনের এই অপচেষ্টা রোধ করা।

প্রশ্ন ৮। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে ভারত কিভাবে সহায়তা করেছিল?

উত্তরঃ পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব-পাকিস্তানের সমস্ত আসনে জয়লাভ করে পাকিস্তান সংবিধান সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা ও মৌলবাদী গোষ্ঠী তা মেনে নেয়নি এবং সংবিধান সভা গঠন করতে দেয়নি। শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সেনাশাসনাধীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই গণআন্দোলন দমনের প্রয়াস করে। পাকিস্তানী সেনা বহু মানুষকে হত্যা ও গ্রেপ্তার করে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবীকে ভারত সমর্থন করে এবং সামরিকভাবে তাদের সাহায্য প্রদান করে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং পাকিস্তানী সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে আত্মসমর্পণ করে ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

প্রশ্ন ৯। পঞ্চশীল বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ পঞ্চশীল ভারতে বৈদেশিক নীতির একটি বৈশিষ্ট্য। পঞ্চশীলের অর্থ হল পাঁচটি নীতি। ১৯৫৪ সালে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন রেন যাতে পাঁচটি নীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

এই পাঁচটি নীতি নিম্নরূপ:

(ক) প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন।

(খ) অন্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ না করা।

(গ) কোন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

(ঘ) সমতা ও পারস্পরিক সাহায্য।

(ঙ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

প্রশ্ন ১০। ভারত ও নেপালের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

উত্তরঃ বহুধর্মীয় দেশ হিসাবে ভারত সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত। এখানে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ধর্মের লোক সহাবস্থান করে। সংবিধানে বিভিন্ন ভাষা ও ধর্মের স্বীকৃতি আছে। অপরদিকে নেপাল বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত।

ভারতের শাসনব্যবস্থাকে একটি সুস্থির গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলা যায়। অপরদিকে নেপালে রাজতন্ত্র বা গণতন্ত্র কোনটাই পূর্ণরূপে বিদ্যমান নয়। ফলে শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে কোন সুস্থির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটে না।

প্রশ্ন ১১। ২০০১ সালের আগ্রা শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০০১ সালের ১৪-১৬ জুলাই এক ঐতিহাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মুসারফের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে পরমাণু অস্ত্র, কাশ্মীর অবস্থা, ভারত-পাক সীমা সমস্যা প্রভৃতি সম্পর্কে কতিপয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এই সম্মেলন কার্যত ফলপ্রসূ হয়নি।

প্রশ্ন ১২। সামরিক শাসন ও গণতন্ত্র পাকিস্তানের ক্ষেত্রে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে সামরিক শাসন ও গণতন্ত্র—এই দুই ধরনের মিশ্রণ ঘটেছে। সংবিধান অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান করে জেনারেল আয়ুব খান দেশের শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে সামরিক শাসনের সূচনা করেন। তারপর পাকিস্তান আবার গণতন্ত্র ফিরে পায় ১৯৭১ সালে এবং তা ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চলেছিল। যদিও ১৯৭৭ সালে পুনরায় জেনারেল জিয়াউল হক সামরিক শাসন প্রবর্তন করেন এবং ক্ষমতা হস্তগত করে | বার কিছুদিন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চলে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিকের নেতৃত্বে। ১৯৯৯ সালে আবার জেনারেল পারভেজ মুসারফ নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তগত করেন। যদিও বর্তমানে পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক শাসন বজায় আছে এটা বলা মুশকিল উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা ও ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের চাপে কতদিন এই ব্যবস্থা চালু থাকবে, প্রশাসনিক অস্থিরতার কারণে যে-কোন সময়ে সামরিক বাহিনী আবার ক্ষমতার দখল নিতে পারে।

প্রশ্ন ১৩। পাকিস্তানের সঙ্গে নদীজল বণ্টন সমস্যা আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে এবং তারপর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংঘর্ষ বাধে। তাছাড়া পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীদের মদত দান, কাশ্মীরকে অশান্ত করার চক্রান্ত ইত্যাদির জন্য ভারতের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা যায় নি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নদীর জল বণ্টন নিয়েও বিবাদ আছে। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সিন্ধু অববাহিকার জলের বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তীব্র বিবাদ ছিল। এই বিবাদ মিটানো দুটি দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তার জন্য দুটি দেশকেই চুক্তিবদ্ধ হতে হত। অবশেষে ১৯৬০ সালে বিশ্ব অধিকোষের সাহায্যে ভারত ও পাকিস্তান ‘সিন্ধু জল চুক্তি’ স্বাক্ষর করে, যা আজও দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান। তবে ২০১৬ সালে আবার সিন্ধু নদের জল বণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়।

প্রশ্ন ১৪। “ভারত হল নেপালে সাহায্যদানের একক বৃহত্তম রাষ্ট্র।” সত্যাসত্য প্রমাণ কর।

উত্তরঃ ভারত ও নেপাল উভয় দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এইরূপ সম্পর্ক সমগ্র বিশ্বে বিরল। দুইটি দেশের ভৌগোলিক পরিসীমায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার প্রমাণপত্র বা পরিচয়পত্রের প্রয়োজন নেই। সুতরাং এই ক্ষেত্রে উভয় দেশের জনগণের যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা বিদ্যমান। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, আর্থিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১১ সালের ২১শে অক্টোবর ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই একাধিক আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

প্রশ্ন ১৫। সার্কে ভারতের ভূমিকা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভারত সার্কের একটি সদস্যরাষ্ট্র হিসাবে সার্কের জন্মকাল থেকে এই অঞ্চলের উন্নয়ন, শান্তি, নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

(ক) ভারত ১৯৮৫ সালে সার্ক প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

(খ) সার্কের দ্বিতীয় সম্মেলন তদানীন্তন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে বাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

(গ) ভারত সার্কের জন্য ১৯৮৭–৮৮ সালে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিল।

(ঘ) ১৯৮৮ সালে ভারত খাদ্যশস্যের একটি মজুত ভাণ্ডার স্থাপনের জন্য ১,৫৩,২০০ টন খাদ্যশস্য দিয়েছিল।

(ঙ) ভারত ১৯৮৯-৯০ বর্ষে সার্কের কার্যকারিতার জন্য মোট দুই কোটি টাকা দান করে।

(চ) ভারতের শিল্পোন্নত ব্যাঙ্ক ১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসে সার্কভুক্ত সকল দেশের উন্নয়ন সংস্থাগুলির এক বৈঠকের আহ্বান করে।

(ছ) ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সার্কের সম্মেলনে ভারত এই অঞ্চলের যৌথ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছিল।

(জ) নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

(ঝ) সার্কের চতুর্দশ সম্মেলন ২০০৭ সালের ৪ঠা এপ্রিল নূতন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সুতরাং ভারত সার্কে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন ১৬। সার্কের সাম্প্রতিক গ্রহণ করা বিষয়সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সার্কের সাম্প্রতিক গ্রহণ করা বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সার্কভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের জনগণের কল্যাণসাধনে গুরুত্ব প্রদান।

(খ) জনসাধারণের জীবনের মানদণ্ড উন্নত করা।

(গ) অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।

(ঘ) সামগ্রিক আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টি করা।

(ঙ) পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাবুঝি সুদৃঢ় করা।

(চ) সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কারিগরী প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতার ভাব গড়ে তোলা।

(ছ) উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

প্রশ্ন ১৭। ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক বি একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের জল বণ্টন-সংক্রান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ আছে। বাংলাদেশ সরকারের বেআইনি অভিবাসনের অভিযোগ অস্বীকার, ভারতবিরোধী ইসলামীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রতি তার সমর্থন, ভারতীয় সৈন্যদলের বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্ব অভিমুখে গন্তব্যে আপত্তি ইত্যাদি নিয়ে বাংলাদেশের উপর ভারত সরকার অখুশী। দুটি দেশ সীমান্ত বিরোধ মেটাতেও সক্ষম হয়নি। বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশ বহু বিষয়ে সহযোগিতা করে। গত দশকে অর্থনৈতিক সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের ‘পূর্বালোকন’ নীতির অংশীদার যেটি মায়ানমারের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সাথে যুক্ত হতে চায়। বিপর্যয় মোকাবিলা কর্মসূচী এবং পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়ে দুটি দেশ নিয়মিতভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার লক্ষ্যে সাধারণ হুমকিগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে এবং পরস্পরের প্রয়োজন সম্পর্কে অধিকতর সংবেদনশীল হওয়ার আগ্রহও পরিলক্ষিত হয়েছে। ইদানিং ছিটমহল হস্তান্তর শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পন্ন হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দুই দেশই কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন ১৮। ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্ক বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবেশী এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এক বিবাদমুখর উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। কাশ্মীর সমস্যা, নদীর জল বণ্টন সমস্যা, সামরিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে বিবাদ চলছেই। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদে মদত দান, বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে অসহযোগিতা ইত্যাদি সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা নেয়। এর ফলে ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ ঘটে। পাকিস্তানে যেহেতু কখনো গণতান্ত্রিক সরকার কখনো সামরিক শাসন বলবৎ থাকে, তাই আলোচনা খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না। যাই হোক গত কয়েক বছরে যেমন সম্পর্কের কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে তেমনি কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দানের ক্ষেত্রে অবনতিও ঘটেছে। বর্তমানে নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে আমাদের মোদী সরকারের কিছু ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাস ও ট্রেন পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা মৌলবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। পাকিস্তান এর কবল এড়িয়ে কতদূর এগোতে পারবে তার উপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নীত হওয়া নির্ভর করে। SAARC-ভুক্ত অন্যান্য দেশগুলিও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে।

প্রশ্ন ১৯। ভারত ও নেপাল সম্পর্ক বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারত ও নেপাল এক বিশেষ সম্পর্ক উপভোগ করে যার তুলনা পৃথিবীতে বিরল। দুটি দেশের মধ্যে একটি চুক্তির ফলে দুটি দেশের নাগরিক একে অপরের দেশে ভ্রমণ ও কার্যে নিযুক্তি বিশেষ প্রবেশাজ্ঞা (ভিসা) এবং পারপত্র (পাসপোর্ট) ছাড়াই করতে পারে। এই সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও অতীতে দুটি দেশের সরকারের মধ্যে বাণিজ্য-সম্পর্কিত বিবাদ ছিল। ভারত সরকার প্রায়ই চীন ও নেপালের উষ্ণ সম্পর্কের বিষয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে। ভারতবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নেপাল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ব্যাপারেও ভারতের অসন্তোষ আছে। নেপালের বহু নেতা ও নাগরিক মনে করে ভারত সরকার নেপালের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। নদীর জল ও জলবিদ্যুৎ সম্পর্কে অভিযোগ আছে এবং আরও অভিযোগ যে ভূখণ্ডবেষ্টিত দেশ নেপালকে ভারত তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে সমুদ্রে সহজ প্রবেশের পথে নেপালকে বাধাদান করছে। তৎসত্ত্বেও ভারত ও নেপালের সম্পর্ক যথেষ্ট স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ এবং বাণিজ্য, বিজ্ঞানের সহযোগিতা, সাধারণ প্রাকৃতিক সম্পদ, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি উভয় দেশকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে।

প্রশ্ন ২০। ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতবর্ষের দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে একটি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথমাবধি ভারতের কোন বিরোধ ছিল না। কিন্তু গত কয়েক দশক যাবৎ শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিলভাষী জনগণের স্বাধীকার আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করে। যদিও ভারত এ ব্যাপারে তামিলভাষী জনগণকে কোনরূপ সহায়তা দেয়নি, তবুও একটা অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়। ভারত এই অবিশ্বাসের বাতাবরণ দূর করতে সেখানে ভারতীয় সৈন্য বাহিনী পাঠায় তামিলভাষীদের দমন করার উদ্দেশ্যে। যাই হোক, এখন শ্রীলঙ্কা এই সমস্যার মোটামুটি একটা সমাধান করতে পেরেছে। আর একটি সমস্যা হল সমুদ্র এলাকা। মাছ ধরা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মাঝেমধ্যেই বিরোধ ঘটে। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার কিছু কিছু মানুষ মনে করে যে রাষ্ট্রসংঘে ভারত শ্রীলঙ্কাকে যথাযথ সহযোগিতা করছে না। এই ধারণা একেবারেই অমূলক। শ্রীলঙ্কার এই অসন্তোষ কাজে লাগাতে চীন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা শ্রীলঙ্কাকে নানারকম সাহায্যের প্রলোভন দেখাচ্ছে যাতে শ্রীলঙ্কায় তারা একটি ঘাঁটি গড়তে পারে। ভারত চীনের এই অপচেষ্টা রুখতে সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে, কারণ চীন যদি শ্রীলঙ্কায় ঘাঁটি গড়তে পারে তবে ভারতের তথা সার্কভুক্ত সকল দেশের সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। এই দিকে নজর দিয়ে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে যে জটিলতা আছে তার আশু নিষ্পত্তি প্রয়োজন।

প্রশ্ন ২১। সার্কের গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা আলোচনা কর।

উত্তরঃ আমরা দেখেছি যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি কিভাবে OEEC এবং পরে EU গঠনের মাধ্যমে পারস্পরিক সহায়তার দ্বারা উন্নতিসাধন করেছে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহ আসিয়ান (ASEAN) প্রতিষ্ঠা করে পারস্পরিক সহায়তায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেছে। দুটি অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহ এই বিষয়ে একমত যে সম্মিলিত প্রয়াসে একটি অঞ্চলের উন্নয়নের সাথে নিজেকে জড়িত করলে দ্রুত উন্নয়ন সম্ভবপর হয়। 

দক্ষিণ এশিয়া মাথাপিছু আয়ের নিরিখে বিশ্বের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল। তাই এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহ তাদের মধ্যে বিবাদ বা মতবিরোধকে দূরে সরিয়ে পরস্পরের সহযোগিতায় অঞ্চলের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠন করে। সার্ক দক্ষিণ এশিয়া রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা পালন করছে। 

সার্ক অধ্যুষিত অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিম্নলিখিত লক্ষ্য পূরণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ:

(ক) সার্ক দক্ষিণ এশিয়া রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চার করবে।

(খ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করবে।

(গ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের যৌথ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।

(ঘ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা সার্ক দেশসমূহকে একতাবদ্ধ করবে।

(ঙ) ভুল বোঝাবুঝি ও বিবাদ হ্রাস পাবে।

(চ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা এই অঞ্চলের জনগণকে সম্মানিত জীবনযাত্রায় পর্যবসিত করবে।

সুতরাং প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সার্ক দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা নিঃসন্দেহে এই অঞ্চলের উন্নয়নের একটি উপায়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২২। দক্ষিণ এশিয়া বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ দক্ষিণ এশিয়া বলতে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপ প্রভৃতি রাষ্ট্রকে নিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোঝায়। উত্তর দিকে বিশাল হিমালয় পর্বতমালা, দক্ষিণ দিকে বিশাল ভারত মহাসাগর; আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর যথাক্রমে পশ্চিম ও পূর্বদিকে অবস্থিত। আফগানিস্তান ও মায়ানমারকেও এই অঞ্চলের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

প্রশ্ন ২৩। সার্কের নীতিসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সার্কের প্রধান নীতিসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) সার্ক স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের সম-সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, কোন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা প্রভৃতি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।

(খ) সহমতের ভিত্তিতে সকল প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

(গ) সার্ক কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের গতি সঞ্চারের জন্য এটি গঠিত হয়েছে।

(ঘ) সার্কের সদস্যরাষ্ট্রসমূহ কোন নির্দিষ্ট সদস্য রাষ্ট্র বা অন্য কোন রাষ্ট্রের সম্পর্কে অন্তরায় হবে না।

প্রশ্ন ২৪। সিমলা চুক্তি বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তান পুনরায় ভারতের হাতে পরাজিত হয় এবং এর এক বিশাল অংশ স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ভারত ও পাক প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ১৯৭২ সালে সিমল এক বৈঠকে মিলিত হন এবং তাঁদের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা সিমলা চুক্তি নামে পরিচিত। উভয় দেশই শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে ভবিষ্যতে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। 

এই চুক্তির প্রধান শর্তসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) উভয় রাষ্ট্রই একে অন্যের সার্বভৌমত্বের সম্মান, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করবে বলে রাজি হয়।

(খ) উভয় রাষ্ট্রই পারস্পরিক আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সমস্যা সমাধানে রাজি হয়।

(গ) উভয় রাষ্ট্রই একে অন্যের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধ-পূর্বোত্তর সময়ে যুদ্ধ সীমারেখা পুনরায় চিহ্নিত করবে।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ প্রায়ই ভাবে যে ভারত প্রতিবেশী ক্ষুদ্রতর রাষ্ট্রসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করে ও আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে।” তুমি এই ধারণাকে সঠিক বলে মনে কর কি?

উত্তরঃ ভারতের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান অঙ্গ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ভারত বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশোকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে আসছে; 

যেমন—

(ক) অপরকে আক্রমণ না করা। 

(খ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। 

(গ) রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা। 

(ঘ) সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান। এবং 

(ঙ) অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করে ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে এই ধারণা নিতান্তই অমূলক। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত সর্ববৃহৎ দেশ এবং সামরিক শক্তিতেও সর্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু আজ অবধি ভারত কোন রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে নি। পাকিস্তান বারংবার সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ভারত তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে উপযুক্ত সামরিক জবাব দিয়েছে মাত্র। ২০১৬ সালে পাঠানকোট ও উরির ঘটনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানের এরূপ আচরণের পরেও ভারত শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। শ্রীলঙ্কা সরকারের অনুরোধে ভারত সেখানে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে সেনা পাঠিয়েছিল। নেপাল ও ভুটানের মতো দেশকে ভারত আর্থিক সাহায্য করে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান ভূখণ্ডের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃবৃন্দের আহ্বানে ভারত সামরিক সহায়তা করে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়।

ভারত মনে করে যে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। যার ফলস্বরূপ ১৯৮৫ সালে ‘সার্ক’ গঠিত হয় এবং বাণিজ্যিক প্রসারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ২০০৪ সালে ‘সাফ্‌টা’ গঠিত হয়।

তাই এ কথা বলা যেতে পারে যে সহিষ্ণু ও সংযমী হয়ে কীভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করা যায় ভারত সে ব্যাপারে বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রশ্ন ২। সাফ্‌টা (SAFTA) কখন স্বাক্ষরিত হয়েছিল? এর প্রধান উদ্দেশ্য কি?

অথবা,

সাফটা (SAFTA) কি উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে? সাফটার ধারণাটি পরীক্ষা কর।

উত্তরঃ বহু সংঘর্ষ সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা ও মিত্রতাপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব স্বীকার করে। বহুপাক্ষিক উপায় দ্বারা সহযোগিতার পথ তৈরির লক্ষ্যে দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠিত হয়। সার্ক সদস্যেরা দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা সাফ্‌টা স্বাক্ষর করে ২০০৪ সালে।

সাফটা (SAFTA)-র সম্পূর্ণ নাম হল South Asian Free Trade Area অর্থাৎ দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা। ইহার প্রধান উদ্দেশ্য হল দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করা। মুক্ত বাণিজ্য এলাকা হল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে কর, শুল্ক ব্যতীত বাণিজ্য করা। ২০০১ সালের সার্কের দশম সম্মেলনে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে সদস্যরাষ্ট্রসমূহ একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি ২০০৬ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকরী হয়। 

সাফ্‌টা দক্ষিণ এশীয় এলাকায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর উদ্দেশ্য হল বাণিজ্য শুল্ক হ্রাস করা। কিন্তু দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রসমূহের আশঙ্কা যে সাফটা হল এই রাষ্ট্রসমূহে বাজার, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি প্রভাবিত করার জন্য ভারতের একটি রাস্তা। কিন্তু ভারত সাফটাকে দক্ষিণ এশিয়ার সকল রাষ্ট্রের একটি আর্থিক সুযোগ হিসাবে গণ্য করে।

প্রশ্ন ৩। আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংগঠন হিসাবে সার্কের ভূমিকা এবং সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।

উত্তরঃ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সার্ক (SAARC) দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। 

সার্ক অধ্যুষিত অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ:

(ক) সার্ক দক্ষিণ এশিয়া রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চার করেছে।

(খ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করবে।

(গ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের যৌথ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।

(ঘ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা সার্ক দেশসমূহকে একতাবদ্ধ করবে।

(ঙ) ভুল বোঝাবুঝি ও বিবাদ হ্রাস পাবে।

(চ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা এই অঞ্চলের জনগণকে সম্মানিত জীবনযাত্রায় পর্যবসিত করবে।

সুতরাং প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সার্ক দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা নিঃসন্দেহে এই অঞ্চলের উন্নয়নের একটি উপায়।

কিন্তু চলমান রাজনৈতিক মতভেদের জন্য সার্ক আশানুরূপ সাফল্য লাভ করতে পারে নি। এই সীমাবদ্ধতার কারণগুলি নিম্নরূপ:

(ক) এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিবেশ কৃতকার্যতা লাভের অন্তরায়। বিশেষত, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মতভেদ এর প্রধান কারণ।

(খ) সার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সম্পদের বৈষম্যও অন্তরায় সৃষ্টি করে।

(গ) সার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র; কিন্তু এই রাষ্ট্রসমূহের উন্নয়নের পর্যায় এক নয়।

(ঘ) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে অসহযোগিতাও সার্কের উদ্দেশ্য সাধনের অন্তরায়।

(ঙ) সার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দুর্বল যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও সাফল্যের অন্তরায়।

প্রশ্ন ৪। চীনের বর্তমান অর্থব্যবস্থা পূর্বের অর্থব্যবস্থা থেকে কিরূপ পৃথক উল্লেখ কর।

উত্তরঃ চীনের অর্থব্যবস্থা বিগত ৩০ বছরে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছে। পরিকল্পিত রুদ্ধ অর্থব্যবস্থা থেকে চীনে উন্মুক্ত বাজার ও অর্থনীতির দিকে গতি সঞ্চারিত করেছে।

১৯৪৯ সালে মাও-এর নেতৃত্বে গণসাম্যবাদী বিপ্লবের পর গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের যাত্রা শুরু হয়। এর পরবর্তী সময়ে চীনের অর্থনীতির ভিত্তি ছিল সোভিয়েত অর্থনীতির ছাঁচ অনুসারে। আর্থিক অনগ্রসর গণসাম্যবাদী চীন পুঁজিবাদী বিশ্ব থেকে তার সংযোগ ছিন্ন করা স্থির করে। নিজের সম্পদের উপর নির্ভর করা এবং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সোভিয়েত সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করা ছাড়া এর আর গত্যন্তর ছিল না। নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থনীতির ফলে চীনের আর্থিক বিকাশের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। আর্থিক বিকাশের হার ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

চীনের নেতৃবৃন্দ কার্যধারা সম্পর্কে প্রধান সিদ্ধান্তসমূহ ১৯৭০ সালে গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৯৭০ সালে সম্পর্ক স্থাপনের সাথে সাথে চীন তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার পরিসমাপ্তি ঘটায়। প্রধানমন্ত্রী চৌ এন্‌-লাই ১৯৭৩ সালে কৃষি, শ্রমশিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সেনাবাহিনী—এই চারটি খণ্ডের আধুনিকীকরণের প্রস্তাব করেন। ১৯৭৮ সাল নাগাদ তদানীন্তন নেতা দেং জিয়াও পিং ‘মুক্ত দ্বার’ (Open Door) নীতি এবং আর্থিক সংস্কারের ঘোষণা করেন। প্রস্তাবিত নীতিটি ছিল বিদেশ হতে মূলধন ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ করে অধিকতর উচ্চউৎপাদন ক্ষমতা উৎপন্ন করা।

চীন তার নিজস্ব পথ অনুসারে বাজার অর্থনীতি চালু করে। ১৯৮২ সালে কৃষিকে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন করার পর ১৯৯৮ সালে শ্রমশিল্পকে ব্যক্তিগত মালিকানার অধীনে নিয়ে আসে। বিশেষ অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল, যাকে সংক্ষেপে ‘সেজ’ (SEZ) বলা হয়, সে সকল অঞ্চলে বাণিজ্যিক বাধা অপসারিত করা হয় যাতে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারী উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারে।

নূতন অর্থনৈতিক নীতিসমূহ দৈনিক অর্থনীতিকে নিশ্চলতা বা জড়তা থেকে নির্গত করতে সাহায্য করছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় ২০০১ সালে চীনের অন্তর্ভুক্তি, চীনকে বহির্বিশ্বে উন্মুক্ত করার একটি প্রধান পদক্ষেপ। অতীতের ‘রুদ্ধ অর্থনীতি’ থেকে বর্তমানের মুক্ত অর্থনীতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চীন বর্তমানে এক উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন ৫। দক্ষিণ এশিয়ার কতিপয় দেশের ক্ষেত্রে সমরূপ, কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার দেশ- সমূহ থেকে পৃথক কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশকে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া গঠিত। উত্তরদিকে হিমালয় পর্বত এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর তথা মায়ানমার এবং পশ্চিমে আরব সাগর তথা আফগানিস্তান। এই অঞ্চলের দেশগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহির্বিশ্বের জনগণের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এই অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। দক্ষিণ এশিয়া মাথাপিছু আয়ের নিরীখে বিশ্বের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল। ২০০৫ সালে বিশ্ব অধিকোষের সমীক্ষা অনুসারে এই অঞ্চলের ৪০%-এরও বেশি জনগণের মাথাপিছু প্রতিদিন গড় আয় ১.২৫ মার্কিন ডলারের চাইতেও কম। এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হল এই অঞ্চলের সকল রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের অধীনে ছিল ২০০ বছরেরও অধিককাল যাবৎ।

পশ্চিম এশীয় দেশসমূহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের থেকে আর্থিক দিক দিয়ে অনেক উন্নত। পশ্চিম এশিয়ার দেশসমূহের আর্থিক উন্নয়নের মূল উপাদান হল খনিজ তেল। পশ্চিম এশিয়ার এই অঞ্চলটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রপ্তানিকারী অঞ্চল। ইউরোপ মহাদেশের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ উপায়ে সম্ভব হয় বলে বাণিজ্যের প্রসার খুব দ্রুত সম্ভব হয়েছে, যার ফলে পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ে অনেক বেশি।

প্রশ্ন ৬। বিশ্বশান্তির জন্য গৃহীত ভারতের ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভারতের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান অঙ্গ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশোকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসারে পাঁচটি নীতি গ্রহণ করেছিলেন। নীতিগুলি ছিল—

(ক) অপরকে আক্রমণ না করা।

(খ) গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। 

(গ) রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা। 

(ঘ) সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান। এবং 

(ঙ) অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

একটি শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নীতি দ্বারা পরিচালিত দেশ ভারতবর্ষ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে এসেছে। ভারত আন্তর্জাতিক বিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। কারণ শীতল যুদ্ধের সময়কালে ভারত গোষ্ঠী নিরপেক্ষ নীতির দ্বারা বিশ্বশান্তি তৈরি করতে অভূতপূর্ব প্রেরণা যুগিয়েছিল। দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বশান্তি রচনার জন্য ভারত অভূতপূর্ব দিক রচনা করতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রসংঘের নীতি ও আদর্শের প্রতি ভারত সূচনালগ্ন থেকেই সমর্থন জানাচ্ছে। সকল প্রকার সংঘাত তথা বিবাদের প্রতি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার জন্য সহযোগিতা করছে।

প্রশ্ন ৭। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নীত করার লক্ষ্যে কিছু পরামর্শ দাও।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবেশী এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এক বিবাদমুখর উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। কাশ্মীর সমস্যা, নদীর জল বণ্টন সমস্যা, সামরিক নীতি প্রভৃতি বিষয়ে বিবাদ চলছেই। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি, সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদত দান, বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে অসহযোগিতা ইত্যাদি সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা নেয়।

বিগত কয়েক বছর যাবৎ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে ও সম্পর্ক স্থাপনে বেশ কিছু প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে সমাজসেবী, জ্ঞানি ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবিরা সহযোগিতা করছেন। ১৯৯৮ সালে উভয় দেশই পরমাণু পরীক্ষা চালানোয় যে উত্তেজনা দেখা দেয় সেই পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিককালে দুই দেশ একে অন্যের পরমাণু-সংক্রান্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করে। উভয় দেশই জম্মু ও কাশ্মীরের মতো দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় সিন্ধু নদ জল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০০৭ সালে উভয় দেশ পরমাণু অস্ত্র থেকে সম্ভাবিত ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। দুই দেশের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ সমাধানে বহুবার আলোচনায় বসেন। দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি বাস পরিষেবা ও সমঝোতা এক্সপ্রেস নামক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু মূল সমস্যা মৌলবাদ ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। পাকিস্তান এর কবল এড়িয়ে কতদূর এগোতে পারবে তার উপর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নীত হওয়া নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৮। “দক্ষিণ এশিয়ার সমগ্র অঞ্চলে গণতন্ত্র একটি গৃহীত নীতি।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আমরা দেখেছি যে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা তাদের স্বাধীনতার পর থেকে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত রেখেছে। দুই দেশেরই গণতান্ত্রিক ভিত্তি খুবই দৃঢ়। ভারত ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহ অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুটিই সামরিক শাসন ব্যবস্থার সাক্ষী আছে। পাকিস্তানে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসন ছিল। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার থাকে। তারপর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকার শাসন চালায়। আবার ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গণতন্ত্র স্থাপন হয়। পাকিস্তানে এইভাবেই সামরিক এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পট পরিবর্তন হতে থাকে। অবশ্য বর্তমানে পাকিস্তানে একটি নির্বাচিত সরকার আছে।

বাংলাদেশ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের অংশ ছিল। ১৯৭১ সালে ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়। উভয় শাসন ব্যবস্থারই সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশ বহুদলীয় প্রতিনিধিমূলক গণতন্ত্র সক্রিয় রয়েছে।

নেপালে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ২০০৬ সাল থেকে সেখানে বহুদলীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বিদ্যমান।

নেপালের ন্যায় ভুটানে রাজতন্ত্র প্রচলিত। কিন্তু সম্প্রতি ভুটানও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাবান হয়েছে, এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

মালদ্বীপ ১৯৬৮ সালে রাজতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি-শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং ২০০৫ সালে বহুদলীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে।

প্রশ্ন ৯। শ্রীলঙ্কায় জাতি দাঙ্গার মুখ্য ভূমিকা পালনকারী গোষ্ঠীসমূহের নাম লেখ। এই দাঙ্গা সমাধানের সম্ভাবনা কিরূপ বলে তুমি অনুমান কর?

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কার জাতি দাঙ্গার মুখ্য ভূমিকা পালনকারী হ’ল সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী জাতি ও সংখ্যালঘু তামিল।

সিংহলী জাতিগোষ্ঠীভুক্ত জনগণ তামিলদের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন। তামিলগণ ভারত থেকে শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সিংহলী জাতি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে তামিলদের কোন প্রকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিৎ নয়, কারণ শ্রীলঙ্কা সিংহলীদের জন্য, তামিলদের জন্য নয়। তামিলদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ফলে সক্রিয় তামিল জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে লিবারেশন টাইগার অফ তামিল ইলম (LTTE) নামক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘তামিল ইলম’ বা শ্রীলঙ্কায় পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে।

তামিল ইলম বাহিনী এবং শ্রীলঙ্কার বাহিনীর মধ্যে ভীষণ লড়াইয়ে তামিল ইলম নেতা প্রভাকরণ নিহত হওয়ার পর এবং ইলম বাহিনী বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রায় ৩২ বছরের লড়াইয়ের আপাতত অবসান হয়েছে। তবে তামিলদের দাবীদাওয়ার প্রতি শ্রীলঙ্কার সরকারের আন্তরিক হওয়া উচিত নতুবা এই ধরনের সংগঠন আবার জন্ম নিতে পারে এবং শ্রীলঙ্কার আভ্যন্তরীণ সুরক্ষার ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ হতে পারে।

প্রশ্ন ১০। দক্ষিণ এশিয়াতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা কিভাবে সম্ভব হতে পারে? আলোচনা কর।

উত্তরঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক মতভেদ, মনোমালিন্য ও সংঘর্ষ দেখা যায়। কিন্তু দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহনশীলতা ও আলোচনার মাধ্যমে এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

ভারত ও পাকিস্তানের কাশ্মীর প্রসঙ্গ, সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত সংঘর্ষ প্রভৃতি সমস্যা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে তামিল জনগোষ্ঠী-সংক্রান্ত সমস্যা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বকেয়া সমস্যা সমাধান সম্ভব।

এটা অনস্বীকার্য যে বহু সংঘর্ষ সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা ও মিত্রতাপূর্ণ সম্পর্কের গুরুত্ব স্বীকার করে। সার্ক অর্থাৎ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা একটি প্রধান আঞ্চলিক উদ্যোগ। বহুপাক্ষিক উপায় দ্বারা সহযোগিতার পথ তৈরির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে শুরু হয়। সার্ক সদস্যরা দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত করে যেটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের সম্ভাবনা ব্যক্ত করে। শান্তি ও সহযোগিতার এক নূতন অধ্যায় শুরু হবে দক্ষিণ এশিয়ায়, যদি এই অঞ্চলের সকল দেশ সীমান্তপারের মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য অনুমোদন করে।

শূন্যতার মধ্যে কোন অঞ্চলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না। অ-আঞ্চলিক শক্তিসমূহের হাত হতে নিজেকে যতই বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা হোক না কেন সকল অঞ্চলই বহিঃক্ষমতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির দুটি প্রধান খেলোয়াড় হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বিগত দুই দশকে চীন ও ভারত সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। শীতল যুদ্ধের সমাপ্তিকাল হতে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে দক্ষিণ এশিয়াকে সংঘর্ষদীর্ণ এলাকা হিসাবে জানা যাবে না, এটি একটি আঞ্চলিক জোট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।

প্রশ্ন ১১। পূর্ব পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দাবিসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল। পাকিস্তানের এই অংশকে পূর্ব পাকিস্তান বলা হত। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের বাংলা ও আসামের বিযুক্ত অঞ্চলসমূহ নিয়ে এটি গঠিত হয়েছিল।

এই অঞ্চলের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাধান্য এবং উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে। তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অসম্মানজনক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিস্বত্ত্বাকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে লাগল। তাই তারা প্রশাসনে যথাবিহিত প্রতিনিধিত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার ন্যায়সংগত অধিকার দাবি করে। পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্যের বিরুদ্ধে শেখ মজিবুর রহমান গণসংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলের জন্য স্বায়ত্বশাসন দাবি করেন। ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানের নির্বাচনে শেখ মজিবুরের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ্ পূর্ব পাকিস্তানের সবকটি আসনে জয়ী হয় এবং সমগ্র পাকিস্তানের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সভায় সংখ্যাগুরু দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব সবকিছুকে অস্বীকার করে এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালীদের গণআন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করেন। হাজার হাজার মানুষ পাকিস্তানী সৈন্যের হাতে প্রাণ হারায়। ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন জানায় এবং এদের আর্থিক ও সামরিক সাহায্য করে। অবশেষে, ১৯৭১ সালে ভারতের কাছে পাকিস্তান পরাস্ত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান নামের অবসান হয়ে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নিম্নোক্তগুলি সম্পর্কিত রাষ্ট্রের নাম লেখ:

(ক) রাজতন্ত্রপন্থী, গণতন্ত্রপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে বিরোধ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

উত্তরঃ নেপাল।

(খ) বহুদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভূখণ্ডবেষ্টিত দেশ।

উত্তরঃ নেপাল।

(গ) দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের একমাত্র অর্থনৈতিক উদারীকরণকারী দেশ।

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কা।

(ঘ) সামরিক ও গণতান্ত্রিক দলের মধ্যেকার সংঘর্ষে সামরিক শক্তি গণতান্ত্রিক শক্তির উপর বহাল হয়।

উত্তরঃ পাকিস্তান।

(ঙ) কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং অধিকাংশ দক্ষিণ এশীয় দেশের সঙ্গে সীমানা সংলগ্ন।

উত্তরঃ ভারত।

(চ) পূর্বে দ্বীপটির শাসনকর্তা ছিল সুলতান, এখন এটি একটি লোকতন্ত্র।

উত্তরঃ মালদ্বীপ।

(ছ) ক্ষুদ্র সংঞ্চয় এবং ঋণ সমবায় গ্রামীণ অঞ্চলে দেশের দারিদ্র দূর করতে সাহায্য করেছে।

উত্তরঃ ভারত।

(জ) একটি ভূখণ্ড পরিবেষ্টিত দেশ রাজতন্ত্রসহ।

উত্তরঃ ভূটান।

প্রশ্ন ২। দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত উক্তিগুলির কোনটি অশুদ্ধ?

(ক) দক্ষিণ এশিয়ার সকল রাষ্ট্রই গণতান্ত্রিক।

(খ) বাংলাদেশ ও ভারত নদীর জল বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

(গ) সাফটা ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

(ঘ) দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে আমেরিকা ও চীন একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে।

উত্তরঃ (খ) বাংলাদেশ ও ভারত নদীর জল বণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

প্রশ্ন ৩। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তাদের গণতান্ত্রিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে কতিপয় সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য কি কি?

উত্তরঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই গণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকারের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকার: স্বাধীনতার পর পাকিস্তান প্রথম সংবিধান রচনা করে। জেনারেল আয়ুব খান দেশের শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তাকে নিজের পদ ত্যাগ করতে হয়, কারণ তার শাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অসন্তোষ দেখা দেয়। এর ফলে ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তার শাসনকালে বাংলাদেশ সংকট দেখা দেয় এবং পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। এর পর জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৭৭ সালে তার সরকার জেনারেল জিয়াউল হকের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তিত হয়। দীর্ঘ গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের ফলে ১৯৮৮ সালে বেনজির ভুট্টোর নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত সরকারের কার্যকাল ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সালে পারভেজ মুশারফ নওয়াজ শরিফের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ২০০১ সালে মুশারফ নিজেকে পাকিস্তানের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি করে নেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলী জারদারীর পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি ও নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে পাকিস্তান মুসলিম লীগ পাকিস্তানে একটি সম্মিলিত সরকার গঠন করে। ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকার: ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রভৃতি নীতি ও আদর্শের উপর ভিত্তি করিয়া সংবিধান প্রণয়ন করে। ১৯৭৫ সালে দেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে নেন। তিনি তাঁর দল আওয়ামী লীগ ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দলকে বাতিল করেন। ১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু তিনিও আততায়ীর হস্তে নিহত হন এবং লে. জে. এইচ্. এম. এরশাদ-এর নেতৃত্বে অপর এক সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু ব্যাপক গণপ্রতিবাদের চাপে ১৯৯০ সালে এরশাদকে পদত্যাগ করতে হয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তখন হইতে বহুদলীয় নির্বাচন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে।

প্রশ্ন ৪। নেপালে গণতন্ত্রের তিনটি প্রত্যাহ্বান তালিকাবদ্ধ কর।

উত্তরঃ নেপালে গণতন্ত্রের তিনটি প্রত্যাহ্বান নিম্নরূপ:

(ক) মাওবাদীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। মাওবাদীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজতন্ত্র ও ধনিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লব করে।

(খ) পার্লামেন্টের নির্বাচন ও জনপ্রিয় সরকারের জন্য নির্বাচন।

(গ) নেপালের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন।

প্রশ্ন ৫। শ্রীলঙ্কায় জাতি দাঙ্গার মুখ্য ভূমিকা পালনকারী গোষ্ঠী কারা? এই দাঙ্গা সমাধানের সম্ভাবনা কিরূপ বলে তুমি অনুমান কর?

উত্তরঃ শ্রীলঙ্কার জাতি দাঙ্গার মুখ্য ভূমিকা পালনকারী হল সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলী জাতি ও সংখ্যালঘু তামিল।

সিংহলী জাতিগোষ্ঠীভুক্ত জনগণ তামিলদের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন। তামিলগণ ভারত থেকে শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সিংহলী জাতি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে তামিলদের কোন প্রকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিৎ নয়, কারণ শ্রীলঙ্কা সিংহলীদের জন্য, তামিলদের জন্য নয়। তামিলদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ফলে সক্রিয় তামিল জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে লিবারেশন টাইগার অফ তামিল ইলম (LTTE) নামক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘তামিল ইলম’ বা শ্রীলঙ্কায় পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে।

তামিল ইলম বাহিনী এবং শ্রীলঙ্কার বাহিনীর মধ্যে ভীষণ লড়াইয়ে তামিল ইলম নেতা প্রভাকরণ নিহত হওয়ার পর এবং ইলম বাহিনী বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রায় ৩২ বছরের লড়াইয়ের আপাতত অবসান হয়েছে। তবে তামিলদের দাবীদাওয়ার প্রতি শ্রীলঙ্কার সরকারের আন্তরিক হওয়া উচিত নতুবা এই ধরনের সংগঠন আবার জন্ম নিতে পারে এবং শ্রীলঙ্কার আভ্যন্তরীণ সুরক্ষার ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ হতে পারে।

প্রশ্ন ৬। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি উল্লেখ কর। আমরা কি নিশ্চিন্ত হতে পারি যে দুটি দেশ তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষে?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। দুটি দেশ শত্রু সম্পত্তি, নদীর জল বণ্টন প্রভৃতি বিষয়, হায়দ্রাবাদ ও জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যের সমস্যা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টি প্রভৃতি সমস্যা হেতু দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বস্তুত, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক হল বিবাদ ও সংঘাতের কাহিনি।

কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন ও শান্তি স্থাপনে বেশ কিছু প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দুটি দেশ ভবিষ্যতে যাতে যুদ্ধে নিমগ্ন না হয় তার উপর আস্থা জ্ঞাপন করে। দুটি দেশের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে সমাজসেবী, জ্ঞানী ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবী সহযোগিতা করেন। উভয় দেশই ১৯৯৮ সালে পরমাণু পরীক্ষা চালায় যার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। কিন্তু উভয় দেশ সাম্প্রতিককালে একে অন্যের পরমাণু সংক্রান্ত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করে। উভয় রাষ্ট্রই জম্মু ও কাশ্মীরের মতো দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী। ২০০৭ সালে উভয় দেশ পরমাণু অস্ত্র থেকে সংঘটিত ঝুঁকি হ্রাস করতে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। উভয় দেশের নেতৃবৃন্দ দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ নিরসনে বহুবার আলোচনায় বসেন। দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি বাস পরিষেবা এবং ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ নামক ট্রেন চলাচল শুরু করে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে।

অবশেষে, বলা যেতে পারে ভারত সবসময়ই শান্তি স্থাপনে আগ্রহী, কিন্তু পাকিস্তান এক পা এগিয়ে দু পা পিছিয়ে যাওয়ার নীতি নিয়ে চলেছে, যার জ্বলন্ত উদাহরণ পাঠানকোট এবং উরিকাণ্ড ও সীমান্তে বারংবার যুদ্ধবিরতি উল্লঙ্ঘন। তাই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

প্রশ্ন ৭। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা ও মতানৈক্যের প্রত্যেকটির দুটি করে ক্ষেত্র উল্লেখ কর।

উত্তরঃ সহযোগিতার ক্ষেত্র : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার দুটি ক্ষেত্র নিম্নরূপ:

(ক) উভয় রাষ্ট্রই নিজ নিজ দেশের ভূভাগ কোন সন্ত্রাসবাদী ও অবাঞ্ছিত শক্তিকে ব্যবহার করতে অনুমতি দেওয়া হবে না।

(খ) উভয় দেশই অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র ও গতি সঞ্চারে রাজী হয়েছে।

সংঘাতের ক্ষেত্র: দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের দুটি ক্ষেত্র নিম্নরূপ –

(ক) গঙ্গার জলবণ্টন সংক্রান্ত বিবাদ।

(খ) বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে অনুপ্রবেশ অস্বীকার ভারতকে অখুশি করে।

প্রশ্ন ৮। বহির্শক্তি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কিভাবে প্রভাবিত করছে? তোমার মত ব্যক্ত করতে একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ কোন রাষ্ট্র বা অঞ্চল প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তা বাইরের শক্তি ও ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য। দক্ষিণ এশিয়া ও চীন আমেরিকার মতো বৃহৎশক্তি দ্বারা প্রভাবিত। ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি বিরাট অন্তরায়।

শীতল যুদ্ধের পর দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার উপস্থিতি ও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। বহু সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে আমেরিকা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। উদারীকরণের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার জড়িত হওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বাজার অত্যন্ত বিস্তৃত এবং তাতে আমেরিকার অংশগ্রহণ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং আমেরিকা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

প্রশ্ন ৯। দক্ষিণ-এশীয় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সহায়ক সংস্থা হিসেবে সার্ক (SAARC)-এর ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সার্ক (SAARC) দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। 

সার্ক অধ্যুষিত অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ:

(ক) সার্ক দক্ষিণ এশিয়া রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চার করেছে।

(খ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করবে।

(গ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের যৌথ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।

(ঘ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা সার্ক দেশসমূহকে একতাবদ্ধ করবে।

(ঙ) ভুল বোঝাবুঝি ও বিবাদ হ্রাস পাবে।

(চ) অর্থনৈতিক সহযোগিতা এই অঞ্চলের জনগণকে সম্মানিত জীবনযাত্রায় পর্যবসিত করবে।

সুতরাং প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সার্ক দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা নিঃসন্দেহে এই অঞ্চলের উন্নয়নের একটি উপায়।

কিন্তু চলমান রাজনৈতিক মতভেদের জন্য সার্ক আশানুরূপ সাফল্য লাভ করতে পারে নি। এই সীমাবদ্ধতার কারণগুলি নিম্নরূপ:

(ক) এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিবেশ কৃতকার্যতা লাভের অন্তরায়। বিশেষত, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মতভেদ এর প্রধান কারণ।

(খ) সার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সম্পদের বৈষম্যও অন্তরায় সৃষ্টি করে।

(গ) সার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র; কিন্তু এই রাষ্ট্রসমূহের উন্নয়নের পর্যায় এক নয়।

(ঘ) ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে অসহযোগিতাও সার্কের উদ্দেশ্য সাধনের অন্তরায়।

(ঙ) সার্কের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দুর্বল যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও সাফল্যের অন্তরায়।

প্রশ্ন ১০। ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ মনে করে যে ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশসমূহের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আধিপত্য ও হস্তক্ষেপ বিস্তার করবে? এটা কি একটি সঠিক অভিমত?

উত্তরঃ ভারতের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান অঙ্গ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ভারত বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশোকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে আসছে; 

যেমন—

(ক) অপরকে আক্রমণ না করা। 

(খ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

(গ) রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা। 

(ঘ) সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান। এবং 

(ঙ) অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।

ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করে ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে এই ধারণা নিতান্তই অমূলক। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত সর্ববৃহৎ দেশ এবং সামরিক শক্তিতেও সর্বশ্রেষ্ঠ। কিন্তু আজ অবধি ভারত কোন রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে নি। পাকিস্তান বারংবার সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ভারত তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে উপযুক্ত সামরিক জবাব দিয়েছে মাত্র। ২০১৬ সালে পাঠানকোট ও উরির ঘটনা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানের এরূপ আচরণের পরেও ভারত শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। শ্রীলঙ্কা সরকারের অনুরোধে ভারত সেখানে শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে সেনা পাঠিয়েছিল। নেপাল ও ভুটানের মতো দেশকে ভারত আর্থিক সাহায্য করে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান ভূখণ্ডের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃবৃন্দের আহ্বানে ভারত সামরিক সহায়তা করে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়।

ভারত মনে করে যে পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। যার ফলস্বরূপ ১৯৮৫ সালে ‘সার্ক’ গঠিত হয় এবং বাণিজ্যিক প্রসারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ২০০৪ সালে ‘সাফ্‌টা’ গঠিত হয়।

তাই এ কথা বলা যেতে পারে যে সহিষ্ণু ও সংযমী হয়ে কীভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করা যায় ভারত সে ব্যাপারে বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

1 thought on “Class 12 Political Science Chapter 5 সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়া”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top