Class 12 Political Science Chapter 11 জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান

Class 12 Political Science Chapter 11 জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 11 জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 11 জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 11 জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 11 জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান Solutions for All Subjects, You can practice these here.

জাতিগঠনের প্রত্যাহ্বান

Chapter: 11

দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?

উত্তরঃ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু।

প্রশ্ন ২। স্বাধীন ভারত কয় প্রকার প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়েছিল?

উত্তরঃ তিন প্রকার।

প্রশ্ন ৩। ১৯৪৭ সালের ১৪–১৫ আগস্ট দুটি জাতিরাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। একটি হল ভারতবর্ষ, অন্যটি কি?

উত্তরঃ পাকিস্তান।

প্রশ্ন ৪। দেশ বিভাজনের সময় সাম্প্রদায়িক অঞ্চলে বিভক্ত দুটি শহরের নাম লেখ।

উত্তরঃ  দেশ বিভাজনের সময় সাম্প্রদায়িক অঞ্চলে বিভক্ত দুটি শহরের নাম হল—

(ক) কলকাতা। ও 

(খ) লাহোর।

প্রশ্ন ৫। দেশীয় রাজ্য মানে কি?

উত্তরঃ দেশীয় রাজ্য হল বৃটিশ আমলে রাজার শাসিত রাজ্য।

প্রশ্ন ৬। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কে ছিলেন?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রশ্ন ৭। স্বাধীনতা লাভের সময় মণিপুরের মহারাজা কে ছিলেন?

উত্তরঃ মহারাজা বোধচন্দ্র।

প্রশ্ন ৮। কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশন কোন্ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯২০ সালে।

প্রশ্ন ৯। দেশ বিভাজনের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া দুটি রাজ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ দেশ বিভাজনের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া দুটি রাজ্যের নাম হল—

(ক) বঙ্গদেশ। ও 

(খ) পাঞ্জাব।

প্রশ্ন ১০। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখ।

(ক) স্বাধীন ভারত প্রধানত তিন প্রকার প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়েছিল।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(খ) ১৯৪৭ সালটি ছিল একটি সর্ববৃহৎ, সর্বাপেক্ষা অপরিকল্পিত ও দুঃখজনক ঘটনার বছর।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(গ) পাকিস্তানের সৃষ্টি ও রাজাশাসিত রাজ্যসমূহের সংহতির সঙ্গে সঙ্গে জাতিগঠনের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছিল।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(ঘ) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’ (Struggle for Survival) প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১/ ১৯৫৩/ ১৯৫৫ সালে।

উত্তরঃ ১৯৫৩ সালে।

প্রশ্ন ১১। ভারত কখন স্বাধীনতা লাভ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট।

প্রশ্ন ১২। বৃটিশ মহাসাম্রাজ্য বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ সমগ্র বিশ্বে বৃটিশ সাম্রাজ্য বা উপনিবেশিকে বৃটিশ মহাসাম্রাজ্য বলে।

প্রশ্ন ১৩। ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’-র ধারণাটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ দ্বিজাতি তত্ত্ব হল ভারতের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে পৃথক হিন্দুস্থান এবং মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন। মহম্মদ ইকবাল এই সূত্রের প্রধান প্রবর্তক।

প্রশ্ন ১৪। পণ্ডিত নেহেরুর লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তরঃ পণ্ডিত নেহেরুর প্রধান লক্ষ্য ছিল জাতিগঠন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা।

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় সংবিধান কখন বলবৎ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি।

প্রশ্ন ১৬। হায়দরাবাদের জনসাধারণ নিজাম শাসনের বিরোধিতা কেন করেছিল?

উত্তরঃ হায়দরাবাদের জনসাধারণ নিজামের অত্যাচারী শাসনের বিরোধিতা করেছিল।

প্রশ্ন ১৭। নিজামের অত্যাচারী শাসনের বলি কে হয়েছিল?

উত্তরঃ হায়দরাবাদের অত্যাচারিত কৃষকরা।

প্রশ্ন ১৮। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে কোন্ রাজকীয় রাজ্যে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছিল?

উত্তরঃ মণিপুর।

প্রশ্ন ১৯। ভারতের অঙ্গরাজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে কোন্ রাজকীয় রাজ্য কতিপয় সমস্যার সৃষ্টি করেছিল?

উত্তরঃ হায়দরাবাদ।

প্রশ্ন ২০। ‘সামিলকরণের দলিল’ চুক্তিখানার মূল বিধানসমূহ কি ছিল?

উত্তরঃ সামিলকরণ চুক্তির মূল বিধান ছিল যে রাজ্যসমূহ ভারত যুক্তরাষ্ট্রে অঙ্গরাজ্যে পরিণত হবে।

প্রশ্ন ২১। কোন্ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা ভারত সামিলকরণ দলিলে স্বাক্ষর করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের ২৫শে অক্টোবর।

প্রশ্ন ২২। শূন্যস্থান পূর্ণ কর।

(ক) ১৯৭২ সালে মেঘালয়কে_________ থেকে পৃথক করা হয়েছিল।

উত্তরঃ আসাম।

(খ) পণ্ডিত নেহেরু এমন কোন_________ সৃষ্টি করতে পারেন নি যার চারদিকে ভারতীয় জনগণ একত্রিত হতে পারে।

উত্তরঃ প্রতীক।

প্রশ্ন ২৩। কোন্ সালে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৪। শূন্যস্থান পূর্ণ কর।

তেলেঙ্গানা ভারতের _________ তম রাজ্য হিসাবে পরিগণিত হয়েছে।

উত্তরঃ ২৯

প্রশ্ন ২৫। স্বাধীনতার পর ভারতের যে-কোন একটি সমস্যা বা প্রত্যাহ্বান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা।

প্রশ্ন ২৬। ভারত বিভাজনের একটি ফলশ্রুতি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শরণার্থী সমস্যা।

প্রশ্ন ২৭। জুনাগড়ের ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে।

প্রশ্ন ২৮। হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে।

প্রশ্ন ২৯। জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালে।

প্রশ্ন ৩০। মণিপুরের ভারতভুক্তি কখন হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে।

প্রশ্ন ৩১। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৩ সালে।

প্রশ্ন ৩২। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগের সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ফজল আলী।

প্রশ্ন ৩৩। কিসের ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ রাজ্য গঠনের সুপারিশ করেছিল?

উত্তরঃ ভাষার ভিত্তিতে।

প্রশ্ন ৩৪। সংবিধানের কোন্ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে?

উত্তরঃ ৩৭০ ধারা।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতকে গ্রহণ করতে হয়েছিল এরূপ প্রথম প্রত্যাহ্বানটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারত নানা জাতি, ধর্ম, ভাষা-ভাষিক মানুষের একটি বিশাল দেশ। স্বাধীনতার পর এই বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের ঐক্য, সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষা করা একটি প্রধান প্রত্যাহ্বান ছিল।

প্রশ্ন ২। “আমাদের একটি মুসলমান সম্প্রদায় আছে যাদের সংখ্যা এত বেশি যে তারা চাইলেও অন্য কোন স্থানে যেতে পারবে না।”

কে এবং কখন এ-কথা বলেছিলেন?

উত্তরঃ জওহরলাল নেহেরু এ-কথা বলেছিলেন।

১৯৪৭ সালের ১৫ই অক্টোবর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রেরণ করা পত্রে এরূপ বলেছিলেন।

প্রশ্ন ৩। “স্বাধীনতার পূর্বে এখানে একটি দ্বি-জাতিতত্ত্ব ছিল”—মুসলিম লীগের মন্তব্য। এই তত্ত্বটির অন্তর্গত দুটি জাতি কি কি?

উত্তরঃ এই তত্ত্বটির অন্তর্গত দুটি জাতি হল— হিন্দু ও মুসলমান।

প্রশ্ন ৪। মহাত্মা গান্ধীকে কখন এবং কে হত্যা করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল।

প্রশ্ন ৫। ব্রিটিশ ভারতবর্ষকে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছিল। এই দুটি কি কি ছিল?

উত্তরঃ ব্রিটিশ ভারতবর্ষকে যে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করেছিল তা হল—ভারত ও পাকিস্তান।

প্রশ্ন ৬। ‘নিজাম’ বলতে কি বোঝায়?

উত্তরঃ বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে হায়দ্রাবাদের শাসককে ‘নিজাম’ বলে জানা যায়। স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদকে ভারত ও পাকিস্তানে সামিলকরণে নিজাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রশ্ন ৭। সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের উপর ভিত্তি করে ভারতবর্ষের কোন্ অংশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল?

উত্তরঃ মণিপুরে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসে।

প্রশ্ন ৮। দেশ বিভাজনের ফলস্বরূপ প্রভাবিত হওয়া দুটি রাজ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ দেশ বিভাজনের ফলস্বরূপ প্রভাবিত হওয়া দুটি রাজ্য হল—

(ক) বঙ্গদেশ। ও 

(খ) পাঞ্জাব।

প্রশ্ন ৯। এক সময়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে থাকা বর্তমান দুটি রাজ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ এক সময়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে থাকা দুটি রাজ্য হল—

(ক) গোয়া । ও 

(খ) অরুণাচল প্রদেশ।

প্রশ্ন ১০। রাজ্য পুনর্গঠন আইন কখন গঠন করা হয়েছিল? এই আইনের উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হওয়া যে-কোন একটি রাজ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে রাজ্য পুনর্গঠন আইন গৃহীত হয়। এই আইনের উপর ভিত্তি করে মোট ১৪টি রাজ্য, যেমন—মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাট প্রভৃতি গঠন করা হয়।

প্রশ্ন ১১। স্বাধীন ভারতে সম্মুখীন হওয়া প্রত্যাহ্বান তিনটি কি কি ছিল?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতে সম্মুখীন হওয়া প্রত্যাহ্বান তিনটি ছিল—

(ক) বৈচিত্র্যতার মধ্যে ঐক্য। 

(খ) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। ও 

(গ) কল্যাণমুখী বিকাশ নীতি গ্রহণ করা।

প্রশ্ন ১২। ‘দ্বিরাষ্ট্র সূত্র’-র তাৎক্ষণিক ফল কি ছিল?

উত্তরঃ ‘দ্বিরাষ্ট্র সূত্র’-র তাৎক্ষণিক ফল হল—ভারত বিভাজন এবং ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন।

প্রশ্ন ১৩। বৃটিশ গভর্নর-জেনারেল মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন কি ঘোষণা করেছিলেন?

উত্তরঃ মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৮ সালের জুন মাসের পরিবর্তে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত বিভাজনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ঘোষণা করেছিলেন।

প্রশ্ন ১৪। জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা যে-কোন দুটি ব্যবস্থার উল্লেখ কর।

উত্তরঃ জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ব্যবস্থা দুটি নিম্নরূপ:

(ক) সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীরকে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়েছে।

(খ) জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজস্ব সংবিধান প্রণয়নের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

প্রশ্ন ১৫। নেহেরুর নীতির দুটি নেতিবাচক লক্ষণ লেখ।

উত্তরঃ নেহেরুর নীতির দুটি নেতিবাচক লক্ষণ নিম্নরূপ:

(ক) নেহেরু এমন কোন নীতি বা আদর্শ সৃষ্টি করতে পারেন নি যার উপর ভারতের মানুষ সমবেত হতে পারবে।

(খ) নেহেরুর জাতিগঠন তত্ত্ব ও কৌশল ত্রুটিপূর্ণ ছিল।

প্রশ্ন ১৬। রাজ্য পুনর্গঠন আইনের অধীন কয়টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ রাজ্য পুনর্গঠন আইনের অধীন ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৭। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগের অতি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শটি কি ছিল?

উত্তরঃ রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করা আয়োগের অতি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ছিল।

প্রশ্ন ১৮। জাতীয় আন্দোলনের নেতৃবর্গ কেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধারণা পোষণ করেছিল? কারণ দর্শাও।

উত্তরঃ ভারত বিভাজন ধর্মীয় ভিত্তিতে হলেও জাতীয় আন্দোলনের অধিকাংশ নেতাই বিশ্বাস করতেন যে ভারত সকল ধর্মের মানুষকে সমান মর্যাদা দেবে এবং কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রদর্শন করবে না।

প্রশ্ন ১৯। কেন্দ্রীয় সরকার চায়নি বলে গোয়াকে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি কেন?

উত্তরঃ গোয়াকে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি; কারণ গোয়ার অধিকাংশ মানুষ মহারাষ্ট্রের বাইরে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।

প্রশ্ন ২০। দেশ বিভাজন সম্পর্কে নীচে দেওয়া ভাষ্যসমূহের কোন্‌টি অশুদ্ধ?

(ক) ভারত বিভাজন দ্বিজাতি তত্ত্বের ফলশ্রুতি ছিল।

(খ) পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশ ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছিল।

(গ) পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান সংযুক্ত হয়ে অবস্থান করছিল না।

(ঘ) দেশ বিভাজনের প্রকল্পে জনসাধারণকে দেশান্তর করার একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

উত্তরঃ (ঘ) দেশ বিভাজনের প্রকল্পে জনসাধারণকে দেশান্তর করার একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ২১। শিলং কোন্ রাজ্যের রাজধানী ছিল? কোন্ সালে এটি ঐ রাজ্য থেকে পৃথক হয়?

উত্তরঃ শিলং আগে আসামের রাজধানী ছিল। ১৯৭২ সালে মেঘালয় রাজ্য গঠনের পর এটি আসাম থেকে পৃথক হয়।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২২। স্বাধীনতার পূর্বে মুসলিম লীগ ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব’-র পোষকতা করেছিল। এই তত্ত্বে অন্তর্ভুক্ত করা রাষ্ট্র দুটি কি ছিল?

উত্তরঃ দ্বি-জাতি তত্ত্বে অন্তর্ভুক্ত করা রাষ্ট্র দুটি হল— ভারত ও পাকিস্তান।

প্রশ্ন ২৩। জাতি গঠনে সহায়ক দুটি উপাদান উল্লেখ কর।

উত্তরঃ জাতি গঠনে সহায়ক দুটি উপাদান হল—

(ক) শিক্ষার বিস্তার। ও 

(খ) গণমাধ্যম।

প্রশ্ন ২৪। জাতীয়তা/ জাতি গঠনের দুটি উপাদান লেখ।

উত্তরঃ জাতি গঠনের দুটি উপাদান হল—

(ক) সাধারণ বাসস্থান। ও 

(খ) জাতিগত ঐক্য।

প্রশ্ন ২৫। ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতা আইনে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কি ব্যবস্থার উল্লেখ ছিল?

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা আইনে ব্যক্ত করা হয়েছে যে ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির রাজন্যবর্গের একাধিপত্যের সমাপ্তি ঘটবে। তাদের ভারত অথবা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি নিজেদের ইচ্ছাধীন হবে। 

প্রশ্ন ২৬। কোন্ কোন্ দেশীয় রাজ্য ভারতে অন্তর্ভুক্তি হতে সমস্যার সৃষ্টি করেছিল?

উত্তরঃ যে দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতে অন্তর্ভুক্তিতে সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তারা হল— 

(ক) জুনাগড়। 

(খ) হায়দ্রাবাদ। 

(গ) জম্মু ও কাশ্মীর। এবং 

(ঘ) মণিপুর।

প্রশ্ন ২৭। নিম্নোক্ত রাজ্যগুলি কোন্ কোন্ রাজ্য হতে সৃষ্টি হয়েছিল?

(ক) মেঘালয়।

(খ) গুজরাট।

(গ) মহারাষ্ট্র।

উত্তরঃ (ক) মেঘালয় আসাম হতে। 

(খ) গুজরাট। ও 

(গ) মহারাষ্ট্র বোম্বে প্রদেশ বিভক্ত করে।

প্রশ্ন ২৮। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ কখন গঠিত হয়েছিল? এর সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ ১৯৫৩ সালে গঠিত হয়েছিল। এর সভাপতি ছিলেন ফজল আলি।

প্রশ্ন ২৯। ভারত বিভাজনের দুটি ফলশ্রুতি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারত বিভাজনের দুটি ফলশ্রুতি হল—

(ক) শরণার্থী সমস্যা। ও 

(খ) সংখ্যালঘু সমস্যা।

প্রশ্ন ৩০। দেশ বিভাজন দ্বারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া রাজ্য দুটির নাম লেখ।

উত্তরঃ দেশ বিভাজন দ্বারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া রাজ্য দুটি হল—

(ক) বঙ্গদেশ। ও 

(খ) পাঞ্জাব।

প্রশ্ন ৩১। দেশ বিভাজন দ্বারা কোন্ দুটি রাজ্য ভারত ও পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি অস্বীকার করেছিল?

উত্তরঃ দেশ বিভাজন দ্বারা যে দুটি রাজ্য ভারত ও পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি অস্বীকার করেছিল তারা হল—

(ক) ত্রিবাঙ্কুর। ও 

(খ) হায়দ্রাবাদ।

প্রশ্ন ৩২। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগের সুপারিশক্রমে ভারতে মোট কয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?

উত্তরঃ রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগের সুপারিশক্রমে ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী ভারতে মোট ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩৩। ভারতে বর্তমানে মোট কয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে?

উত্তরঃ ভারতে বর্তমানে মোট ২৯টি রাজ্য ও ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহ্বানের বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষকে একটি জাতি হিসাবে গড়ে তুলবার পথে নানা প্রকার প্রত্যাহ্বান পরিলক্ষিত হয়। 

এখানে দুটো পার্থক্য নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল: 

(ক) বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা: ভারত নানা জাতি, ধর্ম, ভাষা-ভাষিক মানুষের একটি বিশাল দেশ। স্বাধীনতার পর এই বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের ঐক্য, সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষা করা একটি প্রধান সমস্যা ছিল। বৃটিশ সরকার দেশের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার বিভাজনের বীজ বপন করেছিল। এই বিভাজন নীতির ফলেই স্বাধীনতার সময় দেশ বিভাজন হয়েছিল। সুতরাং স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নটিই স্বাভাবিকভাবে গুরুত্ব লাভ করেছিল।

(খ) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: ভারতীয় সংবিধান গণতন্ত্রের একটি বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। গণতন্ত্রের অর্থ নির্বাচন, নির্বাচিত সরকার নয়। গণতন্ত্র কেবল রাজনৈতিক গণতন্ত্রই নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র হল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র; অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক মানসিকতা। গণতন্ত্রের এক ব্যাপক অর্থ প্রদান করা ভারতীয় সংবিধানের দর্শন অবমাননা না করে জাতি নির্মাণের পথে অগ্রসর হওয়া ভারতবর্ষের প্রতি এক বিরাট প্রত্যাহ্বানস্বরূপ ছিল।

প্রশ্ন ২। দ্বি-জাতিতত্ত্ব বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মুসলিম লীগ ‘দ্বি-জাতিতত্ত্ব’ উত্থাপন করেছিল। এই তত্ত্ব মতে ভারতবর্ষে প্রধানত দুটি জাতির লোক বসবাস করে—হিন্দু ও মুসলমান। এই তত্ত্বের সমর্থকদের মতে, ইংরেজগণকে ভারতবর্ষকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। তারা মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলকে নিয়ে পাকিস্তান গঠনের দাবি উত্থাপন করেছিল এবং ইংরেজ সরকার এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা প্রদান করেছিল। ‘ফ্রন্টিয়ার গান্ধী’ বা ‘সীমান্ত গান্ধী’ খান আব্দুল গফ্ফর খান দ্বিজাতি তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।

প্রশ্ন ৩। ‘হৃদয়ের বিভাগ’ শব্দ দুটি কি অর্থ প্রকাশ করে? আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারত বিভাজনের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন দুটি দেশ আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ভারত বিভাজন সুখদায়ক ছিল না। দেশ বিভাজনের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে দুই দেশের মধ্যে জন হস্তান্তর। লক্ষ লক্ষ লোক বাস্তুহারা হয়। শরণার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভারত ও পাকিস্তানের লেখক, কবি ও চলচ্চিত্রকার নির্মম হত্যা, বাস্তুচ্যুতির বেদনা এবং হিংসার কথা তাঁদের উপন্যাসে, ছোটগল্পে, কবিতা ও চলচ্চিত্রে প্রকাশ করেছেন। দেশবিভাগের আখ্যান বর্ণনাকালে প্রায়শই কোনরকমে বেঁচে থাকা লোকদের বোঝাতে যে বিশিষ্টার্থক শব্দযুগল দেশবিভাগ বোঝাতে ব্যবহার করতেন— ‘হৃদয়ের বিভাগ’ তাই।

প্রশ্ন ৪। “গান্ধীজির কার্যপ্রণালী সকলের পছন্দ হয়নি।” কেন ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ দেশ বিভাজনের পর গান্ধীজি সাম্প্রদায়িক একতার জন্য যে সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন তা সকল শ্রেণীর লোক, বিশেষ করে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। ভারতবর্ষকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার গোঁড়া হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহকে গান্ধীজি শত্রুজ্ঞান করেছিলেন। গান্ধীজিকে তারা মুসলমানদের স্বার্থের প্রতি অধিক সতর্ক ও সংবেদনশীল বলে অভিহিত করেছিল। তাঁর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভাবধারাকে বারংবার বাধা দেওয়ার জন্য এই সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ এমনকি তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। অবশেষে ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গড়সে তাঁকে হত্যা করে।

প্রশ্ন ৫। বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশসমূহ কি কি ছিল? সেই প্রদেশসমূহ দেশীয় রাজ্যসমূহ থেকে কিভাবে পৃথক ছিল?

উত্তরঃ বৃটিশ উপনিবেশিককালে ভারতে দুই ধরনের প্রদেশ ও রাজ্য ছিল—বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যসমূহ। যেসব প্রদেশ সম্পূর্ণরূপে বৃটিশ সংসদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তারা ছিল বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশ। এই প্রদেশসমূহের কোনপ্রকার স্বাধীনতা ছিল না।

দেশীয় রাজ্য ও বৃটিশ-শাসিত প্রদেশের মধ্যে অনেক প্রভেদ ছিল। দেশীয় রাজ্যসমূহ বহুক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। বৃটিশগণ এই রাজ্যসমূহের রাজাগণকে নিজ দেশের জনসাধারণ থেকে সম্ভাব্য বিদ্রোহ তথা বহিঃশত্রুর আক্রমণ—দুটির ক্ষেত্রেই রক্ষণাবেক্ষণ প্রদান করেছিল। কিন্তু এই রাজ্যসমূহও বৃটিশদের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব মেনে নিয়েছিল।

প্রশ্ন ৬। রাষ্ট্রগঠনের নির্ণায়ক যে-কোন চারটি উপাদান ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ রাষ্ট্র গঠনের নির্ণায়ক চারটি উপাদান নিম্নরূপ:

(ক) জাতির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত করা আর জাতির অন্তর্গত সকল লোকের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করা।

(খ) জাতির মনস্তাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জোট শক্তিশালী করা।

(গ) জাতির অর্থনৈতিক বিকাশ সুনিশ্চিত করা।

(ঘ) জাতিকে বৈদেশিক আক্রমণ বা আক্রমণের হুমকি থেকে মুক্ত করা।

প্রশ্ন ৭। ভারতের ভাষা সমস্যার চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতের ভাষা সমস্যার চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) ভারত একটি বহুভাষিক রাষ্ট্র।

(খ) ভারতে ভাষার উপর ভিত্তি করে রাজ্য গঠন করা হয়েছে আর বর্তমানেও এই একই দাবিতে কয়েকটি রাজ্য বিভাজন করার দাবী উঠেছে।

(গ) ভাষার উপর ভিত্তি করে উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হচ্ছে।

(ঘ) ভাষার উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলগুলিকে রাজনীতি করতে দেখা যাচ্ছে।

প্রশ্ন ৮। ভারত বিভাজনের সঙ্গে সম্পর্কীত ঘটনাবলী আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৪৬ সালের ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাবে ভারতকে ধর্মের উপর ভিত্তি করে বিভাজনের বিষয় সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল। অবশেষে মাউন্টব্যাটেন-এর প্রস্তাবমতো পরাধীন ভারতকে ভারত এবং পাকিস্তান নামে বিভাজন করে স্বাধীনতা প্রদান করা হয়। বিভাজন বিষয়টি তত্ত্বগতভাবে সহজ মনে হলেও বিভিন্ন কারণে প্রয়োগে নিম্নোক্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়:

(ক) বৃটিশ ভারতে এমন কোন একত্রিত অঞ্চল ছিল না যেখানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

(খ) সকল মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চায়নি।

(গ) মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গে এমন কিছু অঞ্চল ছিল যেখানে অমুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।

(ঘ) দুই রাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাস করা সংখ্যালঘু জনগণের জন্য বিভাজনের সময়টা ছিল খুবই যন্ত্রণাকাতর সময়।

প্রশ্ন ৯। কাশ্মীরের ভারতভুক্তি বিশদে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের সময় ‘ভারতীয় স্বাধীনতার আইন’-এর সুযোগ নিয়ে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ‘কাশ্মীর’কে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হন। প্যাটেল কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু নেহরু মনে করতেন, ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য কাশ্মীরকেও ভারতের সাথে যুক্ত করা আবশ্যিক। অন্যদিকে কাশ্মীরের রাজা স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার পক্ষপাতী হলেও কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’ কাশ্মীরের ভারতভুক্তির সমর্থক ছিল।

এমত পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে অকস্মাৎ পাক সামরিক বাহিনীর মদতে উপজাতীয় হানাদাররা কাশ্মীরে প্রবেশ করে ব্যাপক লুণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে মহারাজ হরি সিং হানাদারদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হন। এই সময় পাক সরকারও কাশ্মীরের উপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে হরি সিং-কে বিব্রত করতে চেষ্টা করে। এমত পরিস্থিতিতে হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। কিন্তু ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, মহারাজা ভারতভুক্তির দলিলে (Instrument of Accession) স্বাক্ষর না করলে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত মহারাজা হরি সিং ১৯৪৭ সালের ২৬শে অক্টোবর ‘ভারতভুক্তির দলিলে’ স্বাক্ষর করেন।

অতঃপর ২৭শে অক্টোবর ভারত সরকার কাশ্মীরকে হানাদারমুক্ত করার জন্য দ্রুত দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। ৩১শে অক্টোবর শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে কাশ্মীরে জরুরি শাসন চালু করা হয়।

প্রশ্ন ১০। হায়দ্রাবাদের গণআন্দোলনের উপর একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা লাভের মুহূর্তে নিজাম ছিলেন ওসমান আলি খাঁ। নিজাম তাঁর রাজ্যকে ব্রিটিশের অনুগত মিত্র বলেই মনে করতেন। স্বাধীন ভারতরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে নিজামের কোন দায়বদ্ধতা নেই বলে তিনি মনে করতেন। নিজামের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পীড়ন নীতি অমুসলমান জনগণকে ক্ষুব্ধ করেছিল। মুসলিম শাসিত নিজামের রাজ্যে জনগণের ৮৫ শতাংশ ছিল হিন্দু। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হিন্দু জনগণ হায়দ্রাবাদকে ভারত রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত করার দাবি তোলে।

১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, নিজাম স্বেচ্ছায় ভারতের সাথে হায়দ্রাবাদের সংযুক্তি মানবেন না। কিন্তু জনতার দাবি, হায়দ্রাবাদের ভৌগোলিক অবস্থান, সামরিক গুরুত্ব ইত্যাদির বিচারে এই রাজ্যের ভারতভুক্তি ছিল অতি জরুরি। এমতাবস্থায় ভারতীয় বাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে। জনগণ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মুক্তিবাহিনী হিসেবে স্বাগত জানায়। এক গণভোটের আয়োজন করা হয়, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভারতভুক্তির পক্ষে মত দেন। হতাশ নিজাম ১৯৪৯-এর গোড়ায় এক চুক্তি দ্বারা ভারতভুক্তিতে সম্মতি দেন।

প্রশ্ন ১১। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পথটি মসৃণ ছিল না। ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা লাভের পথটি মসৃণ ছিল না। এর জন্য অনেক কারণ উল্লেখ করা যায়। বিশেষত এমন রাষ্ট্র তৈরি করা যেখানে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রক্ষা করতে হবে। ভারতবর্ষ এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির লোক বিরাজমান। অনেকে মন্তব্য করেছিলেন যে এহেন অবস্থায় ভারতবর্ষ একটি রাষ্ট্র হিসাবে বেশিদিন চলতে পারবে না। দেশ বিভাজনে সকলের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্রের ধারণাই সৃষ্টি করেছিল প্রত্যাহ্বান। ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার ও প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটদানের অধিকার আছে। ভারতবর্ষে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র আছে। যার ভিত্তি হল সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা। একমাত্র এরকম গণতান্ত্রিক সংবিধানের দ্বারা এখানে প্রকৃত গণতন্ত্র সৃষ্টি করা অসম্ভব। সংবিধান অনুযায়ী প্রকৃত গণতন্ত্র বিকাশ করাটাও ছিল আরও একটি প্রত্যাহ্বান। তৃতীয় প্রত্যাহ্বান হল সমাজের সকল শ্রেণীর লোকের বিকাশ ও হিতের চিন্তা করা। ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারে সমতা ও পিছিয়ে পড়া জনসাধারণের জন্য বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা উল্লেখ আছে। সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনগণের ক্ষেত্রও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। সংবিধানে থাকা নির্দেশাত্মক নীতির দ্বারা কল্যাণকামী লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার কথাও বলা আছে। এই ক্ষেত্রে প্রকৃত প্রত্যাহ্বান হল আর্থিক পরিবর্তনের দ্বারা দরিদ্রতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতির ব্যবস্থা করা।

প্রশ্ন ১২। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের বিষয়ে একটি টীকা লেখ।

উত্তরঃ ১৮৭৫ সালে জন্মলাভ করা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্রণী সৈনিক ও নেতা। তিনি দেশের সংবিধান রচনায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সংবিধান সভার গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার উপসমিতির তিনি সভাপতি ছিলেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমিতির সদস্য ছিলেন। স্বাধীন ভারতের তিনি ছিলেন প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী। দেশীয় রাজ্যসমূহকে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে সামিল করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রশ্ন ১৩। স্বাধীনতার পর সম্মুখীন হওয়া ভারতের প্রত্যাহ্বানসমূহ কি কি ছিল?

উত্তরঃ স্বাধীনতার ঠিক পরে ভারত তিনটি প্রধান প্রত্যাহ্বান বা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এইগুলি হল—প্রথমত, ভারতবর্ষে বৈচিত্র্যতার মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা; অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বিভিন্নতা সত্ত্বেও জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে অখণ্ডতা রক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, সংবিধানে প্রদান করা গণতন্ত্রের ব্যাপক অর্থ বাস্তবায়িত করা। অর্থাৎ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার ভিত্তিতে ভারতে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তৃতীয়ত, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণসাধন করে বিকাশ নীতি গ্রহণ করা; অর্থাৎ ধনী-দরিদ্র, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য, উঁচু জাত-নীচু জাত, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি বিচার না করে সমতার ভিত্তিতে কল্যাণসাধন।

প্রশ্ন ১৪। কোন্ কোন্ ব্যবস্থা জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাকে প্রতিফলিত করে?

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের আগে জম্মু এবং কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। রাজ্যের শাসক হরি সিং ভারতে বিলীন হতে অনিচ্ছুক ছিলেন এবং রাজ্যের স্বতন্ত্র মর্যাদা বজার রাখার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালাবার চেষ্টা করেন। ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান তার দিক থেকে কাশ্মীর দখল করবার জন্য উপজাতি অনুপ্রবেশকারী পাঠায়। এই ঘটনা মহারাজকে ভারতীয় সামরিক সাহায্যের আবেদন করতে বাধ্য করে। ভারত সামরিক সাহায্য প্রসারিত করে এবং মহারাজা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করবার পর অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করে। আলোচনায় স্থির করা হয় যে যখন অবস্থা স্বাভাবিক হবে তখন জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ স্থির করার জন্য জনগণের মতামত গ্রহণ করা হবে। ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন বজায় রাখতে সহমত হয় এবং রাজ্যটিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ব্যবস্থা দুটি নিম্নরূপ:

(ক) সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীরকে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়েছে।

(খ) জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজস্ব সংবিধান প্রণয়নের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৫। জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তে অবস্থিত কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের রাজ্য ছিল জুনাগড়। এর শাসক ছিলেন মুসলমান, কিন্তু প্রজাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিলেন হিন্দু। ভারতের স্বাধীনতা ঘোষিত হলে জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানের সাথে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জুনাগড়ের অধিবাসীরা ভারতের সাথে সংযুক্তির ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কাথিয়াবাড়ের অন্যান্য রাজ্যগুলিও ভারতের সাথে যোগ দিয়েছিল। ঐ সকল রাজ্য জুনাগড়ের অধিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ জানান। কংগ্রেস নেতা সামাল দাস গান্ধীর নেতৃত্বে ‘জুনাগড়ে’ একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সামাল দাসকে সামনে রেখে জুনাগড়ের জনগণ ব্যাপক নবাববিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। জনতার চাপে শঙ্কিত নবাব সপরিবারে করাচিতে পালিয়ে যান। সর্দার প্যাটেলের নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক গণভোটের আয়োজন করা হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ‘জুনাগড়’ ভারত ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়।

প্রশ্ন ১৬। মণিপুরের ভারতভুক্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ মণিপুরের মহারাজা বোধচন্দ্র ১৯৪৭ সালের ১১ই আগস্ট ভারতবর্ষের সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভারত সরকার মণিপুরের আভ্যন্তরীণ স্বায়ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আসামের রাজ্যপাল ও মণিপুরের রাজ দরবারের সদস্যদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মণিপুর সংবিধান সভা বা গণপরিষদে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। জনসাধারণের চাপে মহারাজা বোধচন্দ্র ১৯৪৮ সালের জুন মাসে রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বিধানসভা গঠন হওয়ার পর মণিপুর ভারতে সামিল হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক আরম্ভ হয়। অতঃপর বিধানসভায় বিতর্ক চলাকালীন সময়ে বিধানসভার অনুমতি না নিয়ে মণিপুরের মহারাজা ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে আসামের তৎকালীন রাজধানী শিলং-এ ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সামিলকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এইভাবে মণিপুর ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ১৭। কোন্ নীতির ভিত্তিতে ভারতবর্ষের বিভাজন সম্পূর্ণ হয়েছিল?

উত্তরঃ দীর্ঘ প্রায় দুশ বছরের বৃটিশ শাসনের পরাধীনতার পর ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষ এক স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই স্বাধীনতা বহু সংগ্রাম এবং বহু আত্মবলিদানের বিনিময়ে আমাদেরকে অর্জন করতে হয়েছে; অর্থাৎ এই স্বাধীনতা সহজে আসেনি। আর এই স্বাধীনতা এসেছিল একটি দুঃখজনক ঘটনাকে সাক্ষী করে—দেশ বিভাজনের মধ্য দিয়ে। মহাত্মা গান্ধী ১৪ই আগস্ট কোলকাতায় বলেছিলেন, “আগামীকাল আমরা বৃটিশ আধিপত্যের দাসত্ব থেকে মুক্ত হব। কিন্তু মধ্যরাত্রে ভারত বিভাজিত হবে। আগামীকাল একটি আনন্দের ও শোকের দিন হবে।”

১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মুসলিম লীগ ‘দ্বি-জাতিতত্ত্ব’ উত্থাপন করেছিল। এই তত্ত্ব মতে ভারতবর্ষে প্রধানত দুটি জাতির লোক বসবাস করে—হিন্দু ও মুসলমান। এই তত্ত্বের সমর্থকদের মতে, ইংরেজগণকে ভারতবর্ষকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। তারা মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলকে নিয়ে পাকিস্তান গঠনের দাবি উত্থাপন করেছিল এবং ইংরেজ সরকার এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা প্রদান করেছিল। ‘ফ্রন্টিয়ার গান্ধী’ বা ‘সীমান্ত গান্ধী’ খান আব্দুল গফ্ফর খান দ্বিজাতি তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১। স্বাধীন ভারতে সহজভাবে লাভ করতে পারা দুটি লক্ষ্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতবর্ষের মূল লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা বিষয়সমূহের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল—গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা, দরিদ্র ও অনগ্রসর লোকের কল্যাণ সাধন, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা ইত্যাদি। এইগুলির মধ্যে স্বাধীন ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ও গরীব ও অনগ্রসর শ্রেণীর লোকদের কল্যাণ সাধন করা—প্রথম দুটি লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে অধিক কষ্ট করতে হয়নি। ১৯৫২ সালের মধ্যে দেশের সকল অঞ্চলের মধ্যে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছিল। দ্বিতীয় লক্ষ্য; অর্থাৎ দরিদ্র ও অনগ্রসর লোকদের কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতির পথে দ্রুত অগ্রসর হয়েছিল। এই লক্ষ্যের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকার বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। উদাহরণ হিসাবে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উল্লেখ করা যায়। ভারতের কৃষি ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দ্বারা উপকৃত হয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক ভিত গড়ে দেওয়ার জন্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অবদান অনস্বীকার্য।

প্রশ্ন ২। ভারতবর্ষে গ্রহণ করতে হয়েছিল এমন তিনটি প্রত্যাহ্বান বর্ণনা কর।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষকে একটি জাতি হিসাবে গড়ে তুলবার পথে নানা প্রকার প্রত্যাহ্বান পরিলক্ষিত হয়। 

এখানে দুটো পার্থক্য নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল: 

(ক) বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা: ভারত নানা জাতি, ধর্ম, ভাষা-ভাষিক মানুষের একটি বিশাল দেশ। স্বাধীনতার পর এই বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের ঐক্য, সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষা করা একটি প্রধান সমস্যা ছিল। বৃটিশ সরকার দেশের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার বিভাজনের বীজ বপন করেছিল। এই বিভাজন নীতির ফলেই স্বাধীনতার সময় দেশ বিভাজন হয়েছিল। সুতরাং স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নটিই স্বাভাবিকভাবে গুরুত্ব লাভ করেছিল।

(খ) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: ভারতীয় সংবিধান গণতন্ত্রের একটি বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। গণতন্ত্রের অর্থ নির্বাচন, নির্বাচিত সরকার নয়। গণতন্ত্র কেবল রাজনৈতিক গণতন্ত্রই নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র হল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র; অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক মানসিকতা। গণতন্ত্রের এক ব্যাপক অর্থ প্রদান করা ভারতীয় সংবিধানের দর্শন অবমাননা না করে জাতি নির্মাণের পথে অগ্রসর হওয়া ভারতবর্ষের প্রতি এক বিরাট প্রত্যাহ্বানস্বরূপ ছিল।

(গ) কল্যাণমুখী বিকাশ নীতি গ্রহণ করা: স্বাধীনতা আন্দোলন দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশা জাগিয়েছিল। স্বাধীনতাপ্রাপ্তি দেশের সকল লোকের দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা, গৃহহীনতা, বেকার সমস্যা প্রভৃতি সমাধান করবে বলেও আশা করা হয়েছিল। এই সকল প্রত্যাশাকে বাস্তব রূপ দানের জন্য বিকাশ নীতি গ্রহণ করা ভারতীয় জাতি নির্মাণ প্রক্রিয়ার একটি প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দেয়।

প্রশ্ন ৩। ভারত বিভাজনের পরিণতিসমূহ বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ ভারত বিভাজন ভারতের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তরকারী ঘটনা। ভারত বিভাজনের মাধ্যমেই ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন দুইটি দেশ আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ভারত বিভাজন সুখদায়ক ছিল না। 

ভারত বিভাজন নিম্নোক্ত প্রকার সমস্যার সৃষ্টি করেছিল:

(ক) জন হস্তান্তর ও গণহত্যা: দেশ বিভাজনের প্রথম ফলশ্রুতি হল অপরিকল্পিতভাবে দুই দেশের মধ্যে জন হস্তান্তর। সীমান্তের উভয় পারে বিরাট সংখ্যক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সংখ্যালঘুদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে সীমান্তের ওপারে ঠেলে দেওয়া হয়। প্রায় ৮০ লক্ষ লোক সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। দেশবিভাগ-সংক্রান্ত হিংসার কার্যকলাপে ৫ থেকে ১০ লক্ষ লোক নিহত হয়েছিলেন।

(খ) শরণার্থী সমস্যা: শরণার্থী সমস্যা দেশ বিভাজনের একটি অন্যতম সমস্যা। শরণার্থীগণ এদেশে এসে গৃহহীন হয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ লোক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভারত সরকার অকস্মাৎ শরণার্থী সমস্যার সম্মুখীন হয়। শরণার্থী সমস্যা এমন জটিল ছিল যে সরকারের এই সমস্যা সমাধানে বহু বছর লেগেছিল।

(গ) সংখ্যালঘু সমস্যা: বিশাল সংখ্যক মুসলমান পাকিস্তানে চলে গেলেও ভারতের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মুসলমান। এই বিশাল সংখ্যক মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভারত সরকারের একটি বিরাট সমস্যা ছিল।

(ঘ) সম্পত্তি বিভাজন: দেশ বিভাজনের অন্য অর্থ হল সম্পত্তি ও আর্থিক দায়-দায়িত্ব বিভাজন । সরকারী কর্মী ও রেলকর্মীদের বিভাজনেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।

সুতরাং দেশ বিভাজন নানা প্রকার সমস্যার সৃষ্টি করেছিল।

প্রশ্ন ৪। সংহতি স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের বিবেচনাধীন তিনটি বিষয় আলোচনা কর।

উত্তরঃ সংহতি স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের বিবেচনাধীন তিনটি বিষয় নিম্নরূপ:

(ক) বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করা: ভারত নানা জাতি, ধর্ম, ভাষা-ভাষিক মানুষের একটি বিশাল দেশ। স্বাধীনতার পর এই বিশাল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের ঐক্য, সংহতি ও অখণ্ডতা রক্ষা করা একটি প্রধান সমস্যা ছিল। বৃটিশ সরকার দেশের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার বিভাজনের বীজ বপন করেছিল। এই বিভাজন নীতির ফলেই স্বাধীনতার সময় দেশ বিভাজন হয়েছিল। সুতরাং স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নটিই স্বাভাবিকভাবে গুরুত্ব লাভ করেছিল।

(খ) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: ভারতীয় সংবিধান গণতন্ত্রের একটি বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। গণতন্ত্রের অর্থ নির্বাচন, নির্বাচিত সরকার নয়। গণতন্ত্র কেবল রাজনৈতিক গণতন্ত্রই নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র হল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র; অর্থাৎ গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক মানসিকতা। গণতন্ত্রের এক ব্যাপক অর্থ প্রদান করা ভারতীয় সংবিধানের দর্শন অবমাননা না করে জাতি নির্মাণের পথে অগ্রসর হওয়া ভারতবর্ষের প্রতি এক বিরাট প্রত্যাহ্বানস্বরূপ ছিল।

(গ) কল্যাণমুখী বিকাশ নীতি গ্রহণ করা: স্বাধীনতা আন্দোলন দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশা জাগিয়েছিল। স্বাধীনতাপ্রাপ্তি দেশের সকল লোকের দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা, গৃহহীনতা, বেকার সমস্যা প্রভৃতি সমাধান করবে বলেও আশা করা হয়েছিল। এই সকল প্রত্যাশাকে বাস্তব রূপ দানের জন্য বিকাশ নীতি গ্রহণ করা ভারতীয় জাতি নির্মাণ প্রক্রিয়ার একটি প্রত্যাহ্বান হিসাবে দেখা দেয়।

প্রশ্ন ৫। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ কখন নিযুক্ত করা হয়েছিল? এর কার্যাবলীর বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ ১৯৫৩ সালে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

স্বাধীনতার পর ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৫৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর জওহরলাল নেহরু লোকসভায় রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ গঠনের কথা ঘোষণা করেন। ফজল আলীর নেতৃত্বে রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ গঠন করা হয়। আয়োগ ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে রাজ্যসমূহের শ্রেণীবিন্যাসের সুপারিশ করে। এর প্রধান সুপারিশসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণের সাংস্কৃতিক ও সমন্বয় সাধনকারী চাহিদার প্রতি যথোপযুক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করা।

(খ) হিন্দী ভাষা ব্যতীত অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করা উচিত।

(গ) ভাষিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষিত করা উচিত।

আয়োগের প্রধান পরামর্শ ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন।

প্রশ্ন ৬। স্বাধীনতার পর দেশীয় রাজ্যগুলির একত্রীকরণ ও প্রদেশগুলির পুনর্গঠনের জন্য কি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ দেশীয় রাজ্য সমস্যা: ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন ভারতবর্ষে ছোট বড় দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৫৬৫। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আইনে এই রাজ্যগুলির রাষ্ট্রিক অধিকার স্বীকৃত হয় নি। উক্ত আইনে বলা হয়েছিল যে দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের সুবিধামতো ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র অথবা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে। উপমহাদেশের আয়তনের অর্ধেক থেকে কিছু কম স্থান জুড়ে এই দেশীয় রাজ্যগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লৌহমানব সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল দেখলেন যে দেশীয় রাজ্যগুলিতে মধ্যযুগীয় শাসনতন্ত্র চলছিল। ভারতের ভৌগোলিক সীমানাযুক্ত সমুদয় দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে অংশভুক্ত না করলে সেই রাজ্যগুলির জনসাধারণের সার্বিক উন্নতি হবে না। অন্যদিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সংহতিও সুদৃঢ় হবে না।

সর্দার প্যাটেলের সংহতি প্রচেষ্টা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার প্যাটেল ভারতের এলাকাস্থিত দেশীয় রাজ্যের নৃপতিবর্গকে ভারত রাষ্ট্রে যোগদান করে নিজ রাজ্যগুলিকে এক-একটি গণতান্ত্রিক খণ্ডরূপে গড়ে তুলবার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টার ফলে একে একে ভারতের দেশীয় রাজ্যের নৃপতিরা ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করলেন। একমাত্র হায়দ্রাবাদের নবাব, কাশ্মীরের মহারাজা এবং জুনাগড়ের নবাব ভারত সরকারের আহ্বানে সাড়া দিলেন না। ভারত সরকার দেখলেন যে, এই রাজ্যগুলি ভারতের ভৌগোলিক সীমানাভুক্ত। সুতরাং সেগুলি যদি ভারতের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে অন্য কোন অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয় তাহলে ভারতের পক্ষে তা বিষময় ফলে পরিণত হবার সম্ভাবনা। হায়দ্রাবাদ ও জুনাগড়ের নবাবদ্বয় ভিতরে ভিতরে পাকিস্তানে যোগাযোগের পরিকল্পনা করতে থাকায় বাধ্য হয়ে ভারত সরকার সেনাপতি জয়ন্ত নারায়ণ চৌধুরীর নেতৃত্বে হায়দ্রাবাদ অভিযান প্রেরণ করেন। সেনাপতি চৌধুরী বিনা রক্তপাতে হায়দ্রাবাদ দখল করলে নিজাম চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারত রাষ্ট্রে যোগদান করলেন। জুনাগড়ে কোন ফৌজ পাঠাবার প্রয়োজন হয়নি। জুনাগড়ের জনসাধারণ ভারতভুক্তির জন্য তীব্র দাবি করতে থাকায় বাধ্য হয়ে নবাব ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে জুনাগড়কে যুক্ত করেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের ভারত ভুক্তি: জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা ভারত সরকারের আহ্বানে সাড়া দেন নি। জম্মু ও কাশ্মীর মুসলমানপ্রধান, কিন্তু শাসক হিন্দু। মুসলমানপ্রধান রাজ্য বলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য উপজাতিদের অভিযান আখ্যা দিয়ে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান কাশ্মীর রাজ্যে পাক সৈন্য প্রেরণ করেন। আক্রমণকারীরা রাজধানী শ্রীনগরের নিকটবর্তী হলে মহারাজ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হন।

রাজ্য পুনর্গঠন: ইংরাজ সরকার জাতীয় সংহতি, সংস্কৃতি, ভাষা প্রভৃতি উপেক্ষা করে তাদের সুবিধা মতো এক-একটি প্রদেশ গঠন করেছিল যাতে ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদির জন্য একটি প্রদেশের সকল অধিবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। সেই উদ্দেশ্যেই তারা প্রদেশগুলির সীমানা নির্ধারণ করে। স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার প্রত্যেক জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নতিকল্পে প্রদেশ (অধুনা রাজ্য) পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন: ভারত সরকার ভারতীয় রাজ্যগুলির পুনর্গঠনকল্পে ১৯৫৩ সালে সৈয়দ ফজল আলির নেতৃত্বে একটি কমিশন নিয়োগ করেন। কমিশনের সদস্যরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে জনসাধারণের মতামত গ্রহণক্রমে ভারত সরকারের নিকট রিপোর্ট দাখিল করেন।

রাজ্য পুনর্গঠন: ফজল আলি কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত সরকার সমগ্র ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রকে তেরটি রাজ্যপাল শাসিত এবং ছয়টি কেন্দ্রীয় শাসিত প্রদেশে বিভক্ত করেন। দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সর্দার প্যাটেলের ভূমিকা চিরস্মরণীয়।

প্রশ্ন ৭। রাজ্য পুনর্গঠন বলতে কি বোঝ? এটা কখন সম্পাদিত হয়েছিল?

উত্তরঃ স্বাধীনতার আন্দোলন চলাকালেই জাতীয় কংগ্রেস ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিষয়টিকে দাবি সনদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এখন স্বাধীনতা অর্জনের পর রাজ্য পুনর্গঠনের বিষয়টি আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংবিধান সভা ১৯৪৮ সালে ‘ভাষাভিত্তিক রাজ্য কমিশন’ গঠন করে। বিচারপতি এস. কে. ধরের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিশন আপাতত সংহতির স্বার্থে পুনর্গঠনের কাজ গ্রহণ না-করার সুপারিশ করে। দক্ষিণ ভারতের জনগণের চাপে জাতীয় কংগ্রেস জওহরলাল নেহেরু, সর্দার প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে আরো একটি কমিটি নিয়োগ করে ১৯৪৮ সালে। কিন্তু এই কমিটিও এই সমস্যা নিরসনে ব্যর্থ হয়। ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে দক্ষিণ ভারতে আন্দোলন তীব্রতর হয়। তেলেগু ভাষাভিত্তিক অন্ধ্র রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে কংগ্রেস সদস্য শ্রীরামাসু অনশনে প্রাণত্যাগ করেন। শুরু হয় প্রবল গণবিক্ষোভ। চাপে পড়ে সরকার ১৯৫৩ সালে অক্টোবরে তেলেগুভাষী অন্ধ্র ও তামিলভাষী তামিলনাড়ু রাজ্য গঠন অনুমোদন করে। ১৯৫৩ সালে বিচারপতি ফজল আলির নেতৃত্বে আর একটি ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠিত হয়। কমিশন তার সুপারিশ পেশ করে ১৯৫৫ সালে। এই সুপারিশে ভাষার অর্থনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে বলা হয়। ১৯৫৬ সালে সংবিধান সংশোধন করা হয়। নতুন আইনের ভিত্তিতে ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত ৬টি ইউনিয়ন এলাকা গঠিত হয়। ১৯৬০ সালে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট নামে দুটি পৃথক রাজ্য গঠিত হয়। ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব বিভক্ত হয় ও হিন্দি ভাষাভাষী অধ্যুষিত হরিয়ানা একটি পৃথক রাজ্যের মর্যাদা পায়।

২০০০ সালে উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় নামে তিনটি রাজ্য গঠিত হয়। এই তিনটি রাজ্য ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

১৯৭২ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতের পুনর্গঠন শুরু হয়। ১৯৭২ সালে মেঘালয় রাজ্য গঠন করা হয় এবং মিজোরামকে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। ১৯৮৭ সালে মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। নাগাল্যান্ড ১৯৬৩ সালে এবং মণিপুর ও ত্রিপুরা ১৯৭২ সালে পূর্ণরাজ্যে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ৮। ভারত বিভাজনের প্রক্রিয়াটির নীতি এবং সমস্যাগুলি আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে লর্ড মাউন্টব্যাটেন গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে আসেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব কার্যকর করার দায়িত্ব তাঁর উপর অর্পণ করা হয়। কার্যভার গ্রহণ করেই মাউন্টব্যাটেন বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে আপোসের কোন সম্ভাবনা না দেখেই ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন ভারতবর্ষকে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়।

আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও দেশ বিভাজন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল ছিল। 

প্রধানত চারটি সমস্যাই এই জটিলতার সৃষ্টি করেছিল:

(ক) বৃটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষের দুইটি অঞ্চলে মুসলমান ঘনবসতিপূর্ণ ছিল। এই দুইটি অঞ্চলের একটি পশ্চিমপ্রান্তে ও অন্যটি পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত ছিল। অঞ্চল দুইটির মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল না। সেই কারণে নবগঠিত পাকিস্তান দুইটি পৃথক অঞ্চলে অবস্থিত ছিল—পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমানে পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)। ১৯৭১ সালে এই পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসাবে জন্ম নেয়।

(খ) দ্বিতীয়ত, মুসলমান অধ্যুষিত সকল অঞ্চল পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হতে রাজী ছিল না। সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফুর খান পাকিস্তানের সৃষ্টির বিরোধী ছিলেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির বিরোধী ছিল।

(গ) তৃতীয় সমস্যাটি ছিল বঙ্গ ও পাঞ্জাব প্রদেশ দুটিকে কেন্দ্র করে। প্রদেশ দুটি ছিল মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ। আবার দুটি প্রদেশের অনেক অঞ্চলে অমুসলমান লোকের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। সেইজন্য এই দুই প্রদেশ বিভাজনের ক্ষেত্রে নূতন সমস্যা দেখা দেয়।

(ঘ) ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়া দুই দেশেই বহুলোক ধর্মীয় সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ পাকিস্তানে বহু লক্ষ হিন্দু তথা শিখ ধর্মের লোক এবং ভারতে কত লক্ষ মুসলমান লোক নিজ জন্মভূমিতে বিদেশি হয়ে পড়েছিল।

এইসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত লোক একটি বিরাট সমস্যার কারণে পরিণত হয়েছিল।

উপরোক্ত সমস্যাবলী ব্যতীত দেশ বিভাজনের ক্ষেত্রে আরও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ দুই দেশের মধ্যে সম্পদ বিতরণের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রশ্ন ৯। স্বাধীনতার পর বিগত ছয় দশকে জাতীয় সংহতি সম্বন্ধীয় যে-কোন চারটি বিষয়ে আলোকপাত কর।

উত্তরঃ ভারত আকারে ও বিভিন্নতায় মহাদেশসদৃশ। এর জনসাধারণ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে এবং বিভিন্ন কৃষ্টি ও ধর্ম অনুসরণ করে। স্বাধীনতার পর ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হত, যে দেশ এত রকমের বিভিন্নতায় ভরা তা খুব বেশিদিন একসঙ্গে থাকতে পারবে না। দেশ বিভাজন প্রত্যেকের কাছে তাদের খারাপতম ভীতির প্রমাণ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু এত বিভিন্নতা সত্ত্বেও ভারতবর্ষকে একটি জাতি হিসাবে গণ্য করা যায়।

স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি ভারতের জাতীয় সংহতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

জাতিগত ও ভাষাগত ঐক্য: ভারতবর্ষ বিভিন্ন জাতির বাসভূমি। মুলভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার সংখ্যা প্রায় ২১০০-র মতো। কিন্তু অসমীয়া, বাঙালি, হিন্দুস্থানি প্রভৃতি সকল জাতির লোকেরাই নিজেকে ভারতীয় বলে মনে করে থাকেন। যদিও ভারতবর্ষে প্রধান প্রধান ১৫টি ভাষা সহ আঞ্চলিক ভাষার সংখ্যা ২১০০, তবুও একমাত্র দ্রাবিড়দের মূল ভাষা ব্যতীত সবগুলি ভাষাই সংস্কৃত ভাষা হতে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

ধর্মনৈতিক ঐক্য: ভারতবর্ষে যেভাবে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা বাস করছেন পৃথিবীর মধ্যে তা কোথাও দেখা যায় না। এই দেশ বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তিস্থল। যদিও হিন্দু ধর্ম ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ধর্ম এবং এই ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সর্বাপেক্ষা অধিক; তবুও এটা সহজেই চোখে পড়ে যে এই দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ভারতীয় চিন্তা ও ভাবধারায় অভিন্ন অর্থাৎ তার প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাধারা হতে বিচ্যুত হতে পারেন নি।

রাজনৈতিক ঐক্য: অতি প্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষে অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন হয়েছে। ফলে বহুবার দেশ রাজনৈতিক দিক দিয়ে বহুধা বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় মৌর্য, গুপ্ত, বর্ধন প্রভৃতি রাজবংশীয়রা দেশে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন করেছেন। বিদেশ হতে মুসলমান ও ইংরেজরা এদেশে এসে সমগ্র দেশকে একটি রাজনৈতিক দেশে পরিণত করেছিলেন। তাঁরাও সমগ্র দেশকে একটি দেশ হিসাবে গণ্য করেছেন। বিদেশি ইংরেজ শাসককে দেশ হতে বিতাড়িত করবার জন্য সমগ্র ভারতবাসী একযোগে আন্দোলন করেছেন।

সাংস্কৃতিক ঐক্য: ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতি, উপজাতি, ভাষাভাষি, ধর্মাবলম্বী রয়েছেন; তবুও সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল ভারতীয় সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে তাদের মধ্যে একটি মৌলিক ঐক্য রয়েছে যা পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না।

সুবিশাল ভারতবর্ষের জনগণের মধ্যে এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটি সমন্বয়ের বীজ নিহিত আছে, তা পৃথিবীর অতি ক্ষুদ্র একটি দেশেও বিরল।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। নীচে দেওয়া নীতিসমূহের সঙ্গে ঘটনাসমূহ সংযুক্ত কর:

(a) ধর্মের ভিত্তিতে সীমা নির্ধারণ।

(b) ভাষার উপর ভিত্তি করে সীমা নির্ধারণ।

(c) ভৌগোলিক অবস্থিতির উপর ভিত্তি করে সীমা নির্ধারণ।

(d) রাজনৈতিক ও প্রশাসনীয় ভিত্তিতে দেশের মধ্যে পৃথক সীমা নির্ধারণ।

(i) ভারত ও বাংলাদেশ।

(ii) ভারত ও পাকিস্তান।

(iii) ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়।

(iv) হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড।

উত্তরঃ (a) ধর্মের ভিত্তিতে সীমা নির্ধারণ।

(b) ভাষার উপর ভিত্তি করে সীমা নির্ধারণ।

(c) ভৌগোলিক অবস্থিতির উপর ভিত্তি করে সীমা নির্ধারণ।

(d) রাজনৈতিক ও প্রশাসনীয় ভিত্তিতে দেশের মধ্যে পৃথক সীমা নির্ধারণ।

(ii) ভারত ও পাকিস্তান।

(i) ভারত ও বাংলাদেশ।

(iv) হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড।

(iii) ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়।

প্রশ্ন ২। নেহেরু ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য কি কি যুক্তি দেখিয়েছিলেন? এই যুক্তিসমূহ নৈতিক ও আবেগপ্রবণ ছিল বলে তুমি মনে কর কি? না এই যুক্তিসমূহে কিছু বিজ্ঞতাও ছিল?

উত্তরঃ ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে তৈরি করতে নেহেরুর যুক্তিসমূহ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি তাঁর পত্রে প্রতীয়মান হয়। 

এই যুক্তিসমূহ হল:

(ক) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা।

(খ) ভারতের সমস্যা সমাধানে নেহেরুর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বৈজ্ঞানিক ও বাস্তববাদী। তিনি পরস্পর গণঐতিহ্যের বিরোধী ছিলেন।

(গ) নেহেরু রাজনীতি হইতে ধর্মকে পৃথক করতে চেয়েছিলেন। গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক।

(ঘ) নেহেরুর মতে ঐক্যবদ্ধ জাতিনির্মাণে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের জন্য আজ ভারত পৃথিবীর অন্যতম বলিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে গড়তে পেরেছে। রাষ্ট্র গঠনের মূল কারিগর হচ্ছে সেই রাষ্ট্রের জনগণ, যাকে বলা হয় মানব সম্পদ। ধর্ম কখনও কোন রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি হতে পারেনা। পৃথিবীর যতগুলি রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে বা করার প্রয়াস করেছে সেই রাষ্ট্রগুলির উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়না। তর্কের খাতিরে হয়ত মধ্য প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলির উদাহরণ কেউ দিতে পারেন। কিন্তু সেই স্থানের ভূগর্ভস্থ তেল না থাকলে উন্নয়ন হওয়া সম্ভব ছিলনা। পৃথিবীর সকল ধর্মকে সযত্নে লালন করে আসা আমাদের এই দেশ সমগ্র বিশ্বে এক অনন্য নজির। আর এটা সম্ভবপর হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করার মাধ্যমে এবং ভারতীয়দের এই নীতিকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে।

প্রশ্ন ৩। স্বাধীনতার সময় ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় সম্মুখীন হওয়া দুটি মূল পার্থক্য নির্ণয় কর।

উত্তরঃ স্বাধীনতার সময় ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে জাতিগঠন প্রক্রিয়ায় সম্মুখীন হওয়া দুইটি মূল পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) প্রদেশসমূহে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা।

(খ) ভারতের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিকাশ।

প্রশ্ন ৪। রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগের কার্য কি ছিল? এর মুখ্য পরামর্শটি কি ছিল?

উত্তরঃ স্বাধীনতার পর ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৫৩ সালের ২২শে ডিসেম্বর জওহরলাল নেহরু লোকসভায় রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ গঠনের কথা ঘোষণা করেন। ফজল আলীর নেতৃত্বে রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ গঠন করা হয়। আয়োগ ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে রাজ্যসমূহের শ্রেণীবিন্যাসের সুপারিশ করে। এর প্রধান সুপারিশসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণের সাংস্কৃতিক ও সমন্বয় সাধনকারী চাহিদার প্রতি যথোপযুক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করা।

(খ) হিন্দী ভাষা ব্যতীত অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করা উচিত।

(গ) ভাষিক সংখ্যালঘুদের সুরক্ষিত করা উচিত।

আয়োগের প্রধান পরামর্শ ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন।

প্রশ্ন ৫। জাতি বললে বহুলাংশে এক ‘কল্পনাপ্রসূত সম্প্রদায়কে’ বোঝায়—যা এক সামূহিক ইতিহাস, বিশ্বাস তথা রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্খার দ্বারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা। ভারতকে জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ জাতীয় জনসমাজ রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন হলে জাতিতে পরিণত হয়। সুতরাং যে উপাদানগুলি জাতীয় জনসমাজ গঠনে সহায়তা করে, সেগুলি জাতি গঠনেরও সহায়ক। একমাত্র রাজনৈতিক চেতনার অবস্থিতি বা অভাবের উপর এদের পার্থক্য প্রতিষ্ঠিত। 

জাতি গঠনের প্রধান উপাদানসমূহ হল—

(ক) সাধারণ বাসস্থান। 

(খ) কুলগত ঐক্য। 

(গ) ধর্মগত ঐক্য।

(ঘ) ভাষাগত ঐক্য।

(ঙ) রাজনৈতিক ঐক্য। 

(চ) অর্থনৈতিক ঐক্য। 

এছাড়া সম সংস্কৃতি, সম ঐতিহাসিক পটভূমি ও ভাবগত ঐক্য ও জাতিগঠনে সহায়ক।

জাতির উপরোক্ত অর্থ ও জাতি গঠনের উপাদানসমূহ বিচার করলে ভারতবর্ষকে অবশ্যই একটি জাতি হিসাবে গণ্য করা যায়:

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য: প্রাকৃতিক দিক দিয়া ভারতবর্ষ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত অঞ্চলসমূহে যেভাবে শীত অনুভূত হয় কঙ্কন ও করমণ্ডল উপকূলভাগে ঠিক সেইভাবে গরমের তীব্রতা বেশি। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জী ও মৌসিনরাম অঞ্চলে গড়ে বৎসরে বৃষ্টিপাত হয় ৪৮০ ইঞ্চি, অপরদিকে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের গড় ৩ ইঞ্চিরও কম।

প্রাকৃতিক ঐক্য: কিন্তু এই বিভিন্নতার মধ্যেও ভারতবর্ষে প্রাকৃতিক ঐক্য সহজেই বোঝা যায়। উত্তরদিকে সুবিশাল হিমালয় পর্বত, পূর্বদিকে পাতকৈ, নাগা ও লুসাই পাহাড়, দক্ষিণ দিকে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিম দিকে আরব সাগর, হিন্দুকুশ পর্বত প্রভৃতি দেশে এক প্রাকৃতিক ঐক্যের সৃষ্টি করেছে।

জাতিগত ও ভাষাগত ঐক্য: ভারতবর্ষ বিভিন্ন জাতির বাসভূমি । মুলভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার সংখ্যা প্রায় ২১০০-র মতো। কিন্তু অসমীয়া, বাঙালি, হিন্দুস্থানি প্রভৃতি সকল জাতির লোকেরাই নিজেকে ভারতীয় বলে মনে করে থাকেন। যদিও ভারতবর্ষে প্রধান প্রধান ১৫টি ভাষা সহ আঞ্চলিক ভাষার সংখ্যা ২১০০, তবুও একমাত্র দ্রাবিড়দের মূল ভাষা ব্যতীত সবগুলি ভাষাই সংস্কৃত ভাষা হতে রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

ধর্মনৈতিক ঐক্য: ভারতবর্ষে যেভাবে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা বাস করছেন পৃথিবীর মধ্যে তা কোথাও দেখা যায় না। এই দেশ বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তিস্থল। যদিও হিন্দু ধর্ম ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ধর্ম এবং এই ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সর্বাপেক্ষা অধিক; তবুও এটা সহজেই চোখে পড়ে যে এই দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ভারতীয় চিন্তা ও ভাবধারায় অভিন্ন অর্থাৎ তার প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাধারা হতে বিচ্যুত হতে পারেন নি।

রাজনৈতিক ঐক্য: অতি প্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষে অনেক রাজনৈতিক উত্থান-পতন হয়েছে। ফলে বহুবার দেশ রাজনৈতিক দিক দিয়ে বহুধা বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় মৌর্য, গুপ্ত, বর্ধন প্রভৃতি রাজবংশীয়রা দেশে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন করেছেন। বিদেশ হতে মুসলমান ও ইংরেজরা এদেশে এসে সমগ্র দেশকে একটি রাজনৈতিক দেশে পরিণত করেছিলেন। তাঁরাও সমগ্র দেশকে একটি দেশ হিসাবে গণ্য করেছেন। বিদেশি ইংরেজ শাসককে দেশ হতে বিতাড়িত করবার জন্য সমগ্র ভারতবাসী একযোগে আন্দোলন করেছেন।

সাংস্কৃতিক ঐক্য: ভারতবর্ষে বিভিন্ন জাতি, উপজাতি, ভাষাভাষি, ধর্মাবলম্বী রয়েছেন; তবুও সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল ভারতীয় সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে তাদের মধ্যে একটি মৌলিক ঐক্য রয়েছে যা পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না।

সুবিশাল ভারতবর্ষের জনগণের মধ্যে এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটি সমন্বয়ের বীজ নিহিত আছে, তা পৃথিবীর অতি ক্ষুদ্র একটি দেশেও বিরল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top