Class 12 Political Science Chapter 10 একদলীয় প্রাধান্যের যুগ

Class 12 Political Science Chapter 10 একদলীয় প্রাধান্যের যুগ Question Answer | AHSEC Class 12 Political Science Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 12 Political Science Chapter 10 একদলীয় প্রাধান্যের যুগ Notes and select needs one.

Class 12 Political Science Chapter 10 একদলীয় প্রাধান্যের যুগ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Political Science Chapter 10 একদলীয় প্রাধান্যের যুগ Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Political Science Chapter 10 একদলীয় প্রাধান্যের যুগ Solutions for All Subjects, You can practice these here.

একদলীয় প্রাধান্যের যুগ

Chapter: 10

দ্বিতীয় খন্ড (স্বাধীনোত্তর ভারতের রাজনীতি)

অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় সংবিধান কখন বলবৎ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি।

প্রশ্ন ২। অন্যান্য বহুদেশের নেতৃবৃন্দ কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল যে ভারত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সফল হবে না?

উত্তরঃ কারণ ভারতে বহু অশিক্ষিত ও দরিদ্র লোক ছিল এবং ভারত একটি জনবহুল বিশাল দেশ এবং মানুষের মধ্যে মতানৈক্যও বিদ্যমান।

প্রশ্ন ৩। ভারতের নির্বাচনী আয়োগ কখন গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে।

প্রশ্ন ৪। ভারতের প্রথম মুখ্য নির্বাচনী আয়ুক্ত কে ছিলেন?

উত্তরঃ সুকুমার সেন।

প্রশ্ন ৫। নির্বাচন আয়োগ কেন প্রথম ভোটার তালিকা নাকচ করেছিল?

উত্তরঃ ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ মহিলার নাম বাদ পড়ার কারণে।

প্রশ্ন ৬। EVM-এর সম্পূর্ণ নামটি লেখ।

উত্তরঃ Electronic Voting Machine (বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্র)।

প্রশ্ন ৭। কোন্ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালে।

প্রশ্ন ৮। সরকার গঠন করবার জন্য কংগ্রেস কতবার সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করেছিল?

উত্তরঃ তিনবার।

প্রশ্ন ৯। ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কত শতাংশ ভোট লাভ করেছিল?

উত্তরঃ ৪৫ শতাংশ।

প্রশ্ন ১০। কংগ্রেস সমাজবাদী দল কখন গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৩৪ সালে। 

প্রশ্ন ১১। PRI-এর প্রতিস্থাপক কে ছিলেন?

উত্তরঃ পি. ই. কালেস বা প্লুটার্কো ইলিয়াস কালেস।

প্রশ্ন ১২। বিশ্বের এমন দুটি দেশের নাম লেখ যেখানে সংবিধান কেবল একটি দলকে অনুমতি প্রদান করেছে।

উত্তরঃ চীন ও কিউবা।

প্রশ্ন ১৩। সংবিধান সভার খসড়া সমিতির (Drafting Committee) সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভীমরাও আম্বেদকর।

প্রশ্ন ১৪। বলশেভিক বিপ্লব কোন্ দেশে হয়েছিল?

উত্তরঃ সোভিয়েত রাশিয়ায়।

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় জনসংঘ কখন গঠন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫১ সালে।

প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় জনসংঘের প্রতিস্থাপক সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।

প্রশ্ন ১৭। স্বতন্ত্র দল কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৯ সালে।

প্রশ্ন ১৮। সরকারে নিকট স্বতন্ত্র দল কি দাবি করেছিল?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ন্যূনতম হস্তক্ষেপ।

প্রশ্ন ১৯। দুটি মহিষের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে ঘাসের কি হয়?

উত্তরঃ দলিত হয়।

প্রশ্ন ২০। শুদ্ধ উত্তরটি বেছে নাও:

(ক) ১৯৫২ সালে হওয়া প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার সঙ্গে ভারতে (রাষ্ট্রপতি/ রাজ্যিক বিধানসভা/ রাজ্যসভা/ প্রধানমন্ত্রী)-র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উত্তরঃ রাজ্যিক বিধানসভার।

(খ) (১৯৮৫/ ১৯৯০/ ১৯৯৫/ ২০০৪) সালের শেষদিকে নির্বাচন আয়োগ বৈদ্যুতিন ভোট যন্ত্র ব্যবহার আরম্ভ করেছিল।

উত্তরঃ ১৯৯০

(গ) (১৯৩৪/ ১৯৪৮/ ১৯৫২) সালে কংগ্রেস দলের মধ্যে একদল যুবনেতা, যারা কংগ্রেসের অধিক মৌলিক ও গতিশীল হওয়ার পক্ষপাতী ছিল তারাই কংগ্রেস সমাজবাদী দল গঠন করেছিল।

উত্তরঃ ১৯৩৪।

প্রশ্ন ২১। কি অবস্থায় ভারতীয় দলীর ব্যবস্থা গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ বৃটিশ শাসনকালে বা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়।

প্রশ্ন ২২। কখন ও কার দ্বারা ভারতে কংগ্রেস পার্টি গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৮৫ সালে এলান অক্টোভিয়ান হিউম কর্তৃক ভারতে কংগ্রেস পার্টি গঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন ২৩। প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু।

প্রশ্ন ২৪। ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ বহুদলীয় ব্যবস্থা।

প্রশ্ন ২৫। ভারতীয় সংবিধান কখন বলবৎ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি।

প্রশ্ন ২৬। ১৯৫৭ সালে কেরালায় কোন্ দল সরকার গঠন করেছিল?

উত্তরঃ কমিউনিস্ট দল।

প্রশ্ন ২৭। কোন্ সালে সোসালিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে।

প্রশ্ন ২৮। ভারতীয় জনতা পার্টির গঠন কোন্ দল থেকে হয়েছিল?

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ।

প্রশ্ন ২৯। কোন্ বছরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার যুগ আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালে।

প্রশ্ন ৩০। কোন্ ভারতীয় দল এশিয়ার মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন দল?

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।

প্রশ্ন ৩১। দীনদয়াল উপাধ্যায় কে ছিলেন?

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সক্রিয় সদস্য ও ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

প্রশ্ন ৩২। ভারতীয় ইন্ডিপেডেন্ট লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ ডঃ বি. আর. আম্বেদকর।

প্রশ্ন ৩৩। কংগ্রেসকে ছত্র সংগঠন কে বলেছিলেন?

উত্তরঃ পালমের।

প্রশ্ন ৩৪। কোন্ সালে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশন বসেছিল?

উত্তরঃ ১৯২০ সালে।

প্রশ্ন ৩৫। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) স্বতন্ত্র পার্টির আদর্শের মার্গ-দর্শন নীতিসমূহের একটি হল_______।

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত অর্থনীতি

(খ) প্রথম নির্বাচনে লোকসভার দ্বিতীয় বৃহৎ সংখ্যক আসন লাভ করা দলটি হল________।

উত্তরঃ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

প্রশ্ন ৩৬। ভারতে দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতে দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি হল—

(ক) বহুদলীয় ব্যবস্থা। 

(খ) সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি।

(গ) আঞ্চলিক ভিত্তিতে দল গঠন।

(ঘ) শৃঙ্খলা, আদর্শ ও আনুগত্যের অভাব। 

(ঙ) ব্যক্তি প্রাধান্যতা।

(চ) দলত্যাগ। এবং 

(ছ) ত্রুটিপূর্ণ সংগঠন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ৩৭। একদলীয় আধিপত্যের যুগ বলতে কোন্ দলের কথা বোঝায়?

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের।

প্রশ্ন ৩৮। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম।

প্রশ্ন ৩৯। ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার আসন সংখ্যা কত ছিল?

উত্তরঃ ৪৮৯টি আসন।

প্রশ্ন ৪০। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯২৪ সালে।

প্রশ্ন ৪১। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি কখন গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৪ সালে।

প্রশ্ন ৪২। কেরালায় সর্বপ্রথম কখন কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫৭ সালে।

প্রশ্ন ৪৩। কার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র পার্টি গঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী।

প্রশ্ন ৪৪। ভারতীয় জনতা পার্টির মূল পার্টি কোনটি?

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ।

প্রশ্ন ৪৫। কংগ্রেস কোন্ সালে নিজস্ব সংবিধান সংশোধন করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে।

প্রশ্ন ৪৬। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন হয় কত সালে?

উত্তরঃ ১৯৬৪ সালে।

প্রশ্ন ৪৭। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দুইটি আদর্শ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দুইটি আদর্শ-

(ক) গণতান্ত্রিক সমাজবাদ। ও 

(খ) ধর্মনিরপেক্ষতা।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। কোন্ সালের কত তারিখে ভারতীয় সংবিধানের খসড়া স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং তা কখন থেকে বলবৎ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর খসড়া সংবিধান স্বাক্ষরিত বা অনুমোদিত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে বলবৎ হয়।

প্রশ্ন ২। সমাজবাদীগণ কেন কংগ্রেসের সমালোচনা করেছিল?

উত্তরঃ কৃষক ও শ্রমিকের অবহেলা করা ও পুঁজিপতি এবং জমিদার শ্রেণীকে সমর্থন করার জন্য সমাজবাদীগণ কংগ্রেসের সমালোচনা করেছিল।

প্রশ্ন ৩। আর.এস.এস.-এর সম্পূর্ণ নাম কি? এর প্রতিস্থাপক সভাপতির নাম লেখ।

উত্তরঃ আর.এস.এস.-এর সম্পূর্ণ নাম হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। এর প্রতিস্থাপক সভাপতি ছিলেন বালাসাহেব হেগড়ে।

প্রশ্ন ৪। কোন্ সালে ভারতের সাম্যবাদী দল গঠিত হয়েছিল? এই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া যে-কোন একজন ব্যক্তির নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৯২৪ সালে ভারতের সাম্যবাদী দল গঠিত হয়েছিল। এই দলকে নেতৃত্ব দানকারী একজন প্রখ্যাত নেতা হলেন এ. কে. গোপালন।

প্রশ্ন ৫। ভারতের নির্বাচন আয়োগ কখন গঠন করা হয়েছিল?,প্রথম নির্বাচন আয়ুক্ত কে ছিলেন?

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের নির্বাচন আয়োগ গঠিত হয়েছিল। প্রথম নির্বাচন আয়ুক্ত ছিলেন সুকুমার সেন।

প্রশ্ন ৬। ব্যালটপত্রে একজন প্রার্থীর দুটি জিনিসকে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল। সেই দুটি কি কি?

উত্তরঃ ব্যালটপত্রে প্রার্থীর চিহ্ন ও নাম সন্নিবিষ্ট করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ৭। সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেরালার সাম্যবাদী সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার ভেঙে দিয়েছিল এবং কোন্ সালে?

উত্তরঃ সংবিধানের ৩৫৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৯৫৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার কেরালার সাম্যবাদী সরকার ভেঙে দিয়েছিল।

প্রশ্ন ৮। একদলের আধিপত্যের অভিজ্ঞতা লাভ করা দুটি দেশের নাম লেখ।

উত্তরঃ একদলের আধিপত্য লাভ করা দুটি দেশে হল—চীন ও কিউবা।

প্রশ্ন ৯। কোন সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালে।

প্রশ্ন ১০। নির্বাচনের কোন্ যুগকে কংগ্রেস ব্যবস্থার যুগ বলে অভিহিত করা হয়েছে?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় জনসংঘ কবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল? এই দলের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এই দলের প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি ছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।

প্রশ্ন ১২। কংগ্রেস পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কার দ্বারা?

উত্তরঃ কংগ্রেস দল ১৮৮৫ সালে এলান অক্টোভিয়ান হিউম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের প্রথম অধিবেশন বোম্বাই-এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর প্রথম সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন ১৩। সোস্যালিস্ট পার্টির দুজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ সোস্যালিস্ট পার্টির দুজন নেতা হলেন – 

(ক) জয়প্রকাশ নারায়ন। এবং 

(খ) আচার্য নরেন্দ্র দেব।

প্রশ্ন ১৪। ভারতে একদলীয় শাসনের যুগটি উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত।

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় জনসংঘের দুটি আদর্শ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘের দুটি আদর্শ নিম্নরূপ:

(ক) এক দেশ, এক সংস্কৃতি ও এক জাতি।

(খ) ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর আস্থা।

প্রশ্ন ১৬। ভারতের যে-কোন দুটি রাষ্ট্রীয় দলের নাম ও প্রতীক উল্লেখ কর।

উত্তরঃ দুটি রাষ্ট্রীয় দলের নাম ও প্রতীক নিম্নরূপ:

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস — প্রতীক (হাত)

(খ) ভারতীয় জনতা পার্টি — প্রতীক (পদ্মফুল)

প্রশ্ন ১৭। ভারতের মতো একটি দেশে মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবার মূল প্রয়োজনীয়তা সমূহের তালিকা দাও।

উত্তরঃ মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয়তাসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আবেগের দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা।

(খ) নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি মান্য করা।

(গ) জনগণের সচেতনতা।

প্রশ্ন ১৮। সি. পি. আই-এর মুখ্য নেতা কয়েকজনের নাম লেখ।

উত্তরঃ সি. পি. আই-এর মুখ্য কয়েকজন নেতা হলেন—

(ক) এ. কে. গোপালন ৷

(খ) এস. এ. ডাঙ্গে ৷

(গ) মুজাফ্ফর আলি ৷

প্রশ্ন ১৯। কি পরিস্থিতিতে ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল?

উত্তরঃ প্রাক-স্বাধীনতা যুগে দেশকে বৃটিশ শাসন মুক্ত করতে ভারতে রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি হয়েছিল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে দল ব্যবস্থার সূচনা হয়।

প্রশ্ন ২০। ১৯৫২-৬৭-এর নির্বাচনের মধ্যে কিছুদিনের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় না থাকা দুটি রাজ্যের নাম লেখ।

উত্তরঃ ১৯৫২-৬৭-এর নির্বাচনের মধ্যে কিছুদিনের জন্য কংগ্রেস ক্ষমতায় না থাকা দুটি রাজ্য হল—

(ক) মাদ্রাজ ৷ ও 

(খ) উড়িষ্যা।

প্রশ্ন ২১। শূন্যস্থান পূরণ কর:

(ক) _______সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভা ও ________র নির্বাচন একসঙ্গে হয়েছিল।

উত্তরঃ ১৯৫২/বিধানসভা।

(খ) ________ সালে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার________ র কমিউনিস্ট সরকারকে বরখাস্ত করেছিল।

উত্তরঃ ১৯৫৯/কেরালা।

প্রশ্ন ২২। স্বতন্ত্র দল কখন গঠিত হয়েছিল? এই দলের দুইজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ স্বতন্ত্র দল ১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের দুইজন নেতা হলেন—চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী ও কে. এম. মুন্সি।

প্রশ্ন ২৩। কোন্ প্রসঙ্গে ভারতের সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রক্রিয়া অত্যন্ত বলিষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন সার্বজনীন ভোটাধিকার পদ্ধতিতে সম্পাদন করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য কাজ ছিল কারণ দেশের অধিকাংশ ভোটার ছিল অশিক্ষিত। ভোটার তালিকাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ।

প্রশ্ন ২৪। হ্যাঁ অথবা না লেখ:

(ক) ডঃ আম্বেদকর ১৯৫৬ সালে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

উত্তরঃ হ্যাঁ।

(খ) শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

উত্তরঃ না।

(গ) প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী নেতৃত্ব দিয়েছিল।

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ২৫। কোন্ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়েছিল?

উত্তরঃ বৃটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যার সমাধানকল্পে।

প্রশ্ন ২৬। কোন্ সালে একদলীয় আধিপত্যের যুগ আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৫২ সালে।

প্রশ্ন ২৭। ভারতে দলীয় ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত।

প্রশ্ন ২৮। শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) লোকসভা এবং_________ (রাজ্য বিধানসভা/রাজ্যসভা)।

উত্তরঃ রাজ্যসভা।

(খ) প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যক সদস্য জয়লাভ করা দলটি হল_________  (প্রজা সোসালিস্ট পার্টি/ভারতীয় জনসংঘ/ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি/ভারতীয় জনতা পার্টি)।

উত্তরঃ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ২৯। প্রথম সাধারণ নির্বাচনে মোট কয়টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল? এদের মধ্যে যে-কোন দুটির নাম লেখ।

উত্তরঃ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে মোট ৫৩টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে দুটি হল—

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ও 

(খ) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

প্রশ্ন ৩০। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন ৩১। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময় এর দুইজন নেতার নাম লেখ।

উত্তরঃ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর গুরুত্বপূর্ণ দুইজন নেতা হলেন—

(ক) এ. কে. গোপালন। ও 

(খ) শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গে।

প্রশ্ন ৩২। স্বতন্ত্র পার্টি কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? এর নেতৃত্বে কারা ছিলেন?

উত্তরঃ স্বতন্ত্র পার্টি ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন—চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী, কে. এম. মুন্সী, এন. জি. রঙ্গা ও মিনু মাসানি।

প্রশ্ন ৩৩। ভারতের দলব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ (ক) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। ও

(খ) ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য লক্ষণীয়।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতের নির্বাচন আয়োগ ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য কি কি প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের নির্বাচন আয়োগ গঠন করা হয়েছিল। ভারতে সকল প্রকার লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত এবং পরিচালনা করার ক্ষেত্রে এই আয়োগ প্রথম থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। 

ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবার জন্য ভারতের নির্বাচন আয়োগ নিম্নোক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করে:

(ক) ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা।

(খ) মনোনয়ন পত্র দাখিল করা, পরীক্ষা করা ও প্রত্যাহার করার দিন ধার্য করা।

(গ) মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা ও পরীক্ষা করা।

(ঘ) ভোট দানের দিন ধার্য্য করা ও ভোট দান পরিচালনা করা।

(ঙ) নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিষয়াগণের নিযুক্তি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া।

(চ) প্রার্থীগণকে নির্বাচনী প্রতীক প্রদান করা।

(ছ) প্রচার অভিযানে দৃষ্টি রাখা ও নির্বাচনী বিধিভঙ্গ-সম্পৰ্কীয় বিবাদ নিষ্পত্তি করা।

(জ) ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় একজন সংবাদপত্র সম্পাদক কেন নির্বাচনকে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জুয়াখেলা বলে অভিহিত করেছেন?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম নির্বাচনকে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহৎ নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পণ্ডিতগণ কখনও ভাবতে পারে নি যে ভারত এই নির্বাচন সাফল্যমণ্ডিত করতে পারবে। কারণ সেইসময় ভারতীয় গণতন্ত্রের সম্মুখে নানাপ্রকার প্রত্যাহ্বান ছিল। কিন্তু সকলের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যখন ভারতে সুচারুরূপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল তখন অধিকাংশ লোক আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেল। প্রথমাবস্থায় এই নির্বাচন দুবার স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরে এই নির্বাচন ১৯৫১ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন ছিল প্রতিযোগিতামূলক এবং গড় হিসাবে প্রত্যেক সমষ্টিতে চারজন করে প্রার্থী ছিলেন। এইপ্রকার বৃহৎ প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হয়েছিল বলে একে ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ জুয়াখেলা বলে অভিহিত করা হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩। কংগ্রেস কেন নিজস্ব সংবিধান সংশোধন করেছিল এবং এই সংশোধনের ফল কি হয়েছিল?

উত্তরঃ স্বাধীনতা লাভের পূর্বে কংগ্রেস সমাজবাদী চিন্তাধারা গ্রহণ করা লোকদের দ্বারা প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ১৯৩৪ সালে তাঁরা কংগ্রেসকে অধিক শক্তিশালী ও গতিশীল করার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজবাদী দল গঠন করে। ভবিষ্যতে এই প্রকার দলীয় বিভাজন রুখতে ১৯৪৮ সালে কংগ্রেসের সংবিধান সংশোধন করতে হয়েছিল।

সংবিধান সংশোধনের ফলে দলের সদস্যগণ দুটি দলীয় পদে আসীন থাকতে বারণ করে। ফলে সমাজবাদীগণ ১৯৪৮ সালে একটি প্রথম সমাজবাদী দল গঠন করতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ৪। বি. আর. আম্বেদকর কে ছিলেন? তিনি কার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন?

উত্তরঃ ডঃ বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর একজন পণ্ডিত এবং বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট লেবার পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে সিডিউড্ কাস্ট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি ভাইসরয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ভারতের সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন ডঃ আম্বেদকর। স্বাধীনতার পরে নেহরুর প্রথম ক্যাবিনেটে তিনি মন্ত্রী হন, কিন্তু হিন্দু রোড বিলের ব্যাপারে মতপার্থক্যের দরুন ১৯৫১ সালে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৬ সালে কয়েক হাজার অনুগামীসহ তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন।

ডঃ আম্বেদকর জাতিভেদ বিরোধী এবং দলিতদের ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ৫। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর সাম্যবাদী গোষ্ঠীর ধারণার বিষয়ে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর সাম্যবাদী গোষ্ঠী একটি বামপন্থী ধারণা গ্রহণ করেছিল। তাদের অধিকাংশই সোভিয়েত রাশিয়ার সাম্যবাদী আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ১৯২০ সালের প্রথম দিকে ভারতের বিভিন্ন অংশে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব থেকে প্রেরণা নিয়ে কমিউনিস্ট গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয় এবং তারা সওয়াল করে যে সমাজতন্ত্র ভারতের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। ১৯৩৫ সাল থেকে সাম্যবাদীরা প্রধানত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আওতার ভিতর থেকেই কাজ করতে থাকে। সাম্যবাদীরা জার্মানীর নাজীদের বিরুদ্ধে বৃটিশদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ১৯৪১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অন্যান্য অ-কংগ্রেস দলের সঙ্গে তুলনায় সিপিআই-এর একটি মজবুত সংগঠন ছিল এবং স্বাধীনতার সময়ে একটি উৎসর্গীত দলীয় কর্মীবৃন্দ ছিল। সাম্যবাদীদের বুলেটের বদলে বুলেট নীতি বৃটিশদের ভীত সন্ত্রস্ত করেছিল। যার দরুণ বৃটিশ শাসক সাম্যবাদীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং সাম্যবাদীদের গ্রেপ্তার করে ও একতরফা বিচারে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দণ্ডীত করে।

ভারতীয় স্বাধীনতার স্বরূপ নিয়ে তাদের প্রশ্ন ছিল এবং তারা মনে করেন যে ১৯৪৭ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরকরণ প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। তারা তেলেঙ্গানা অঞ্চলে সহিংস আন্দোলন সংগঠিত করার প্রয়াস করেন যা সামরিক বাহিনী পর্যুদস্ত করে। ১৯৫১ সালে সন্ত্রাসবাদীরা সহিংস বিপ্লবের পথ পরিত্যাগ করে এবং প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সিপিআই প্রথম নির্বাচনে ১৬টি আসনে জয়লাভ করে ও বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রশ্ন ৬। কংগ্রেস দলকে কেন ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু বলা হয় সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস হল এশিয়ার সর্বাপেক্ষা প্রাচীন রাজনৈতিক দল এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস থেকে কংগ্রেসকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। কংগ্রেস দল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। স্বাধীনতার পর কংগ্রেস দল ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। ভারতীয় জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস দলীয় ব্যবস্থার উৎপত্তি ও বিকাশের প্রধান উৎস। স্বাধীনতার পর তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস জাতির নেতৃত্ব প্রদান করেছে। কংগ্রেস দল ভারতের জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কেবল তা নয়, ভারতের অধিকাংশ বিরোধী দলের আবির্ভাব ঘটেছে কংগ্রেস দলের ভাঙন ও কংগ্রেস দলের দলত্যাগের ফলে। বর্তমান কোয়ালিশন রাজনীতিতে কংগ্রেস ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে।

প্রশ্ন ৭। প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় কয়টি জাতীয় দল ও রাজ্যিক দল ছিল?

উত্তরঃ ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫১ সালে। নির্বাচন আয়োগের হিসেব অনুযায়ী সেই সময় ভারতে যোগ্য ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৭৬ কোটি এবং লোকসভার ৪৯৮টি আসনের জন্য প্রায় ১৮০০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যাদের মধ্যে ৬টি জাতীয় দলের এবং ৪৭টি রাজ্যিক দলের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

প্রশ্ন ৮। বামপন্থী দলসমূহের নীতি এবং কার্যসূচী ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ সমাজবাদী আদর্শ এবং নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক এবং কৃষকদের অধিকার এবং স্বার্থ সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে বামপন্থী দল প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। এই দলসমূহ পুঁজিপতিগণের শোষণ নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল। সাম্যবাদী দলসমূহ সমতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার দাবী উত্থাপন করেছিল। বামপন্থী দলসমূহের মধ্যে কিছু মতান্তর থাকলেও তাদের উদ্দেশ্য এক—শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। সম্পদ সৃষ্টি করার যারা মূল কারিগর তাদের সেই সম্পদের উপর সমান অধিকার থাকা উচিত বলে সাম্যবাদীরা দাবী করেন অর্থাৎ শ্রমিক এবং কৃষকের অধিকার নিয়ে সাম্যবাদীরা বা বামপন্থীরা সর্বদা সংগ্রাম করে থাকেন। লোকসভাতে বামপন্থীদের কতটা আসন আছে বা রাজ্য বিধানসভাগুলিতে কতটা আসন আছে এই হিসাবে বামপন্থীদের ভারতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা বিচার করা যাবে না।

বামপন্থীরা নিরলসভাবে শ্রমিকদের এবং কৃষকদের সংগঠিত করে সরকারের শ্রমিক ও কৃষক স্বার্থ-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন। আজ ভারতবর্ষের বৃহত্তর শ্রমিক এবং কৃষক সংগঠনগুলি বাম আন্দোলনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে যে রাজ্যে বামপন্থীরা সরকার গঠন করতে পেরেছে সেই সেই রাজ্যে ভূমিসংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সফলভাবেই করা সম্ভব হয়েছে, যা গোটা দেশের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

প্রশ্ন ৯। ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মোর্চা যুগের সৃষ্টি হওয়ার যে-কোন চারটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মোর্চা যুগের সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম চারটি কারণ নিম্নরূপ:

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আধিপত্যের অবসান।

(খ) আঞ্চলিক দলের উত্থান ও কংগ্রেসের প্রতি অনীহা প্রকাশ।

(গ) সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ।

(ঘ) শোষিত ও দলিত শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি।

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার যে-কোন চারটি বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তরঃ ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার অন্যতম চারটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত।

(খ) ভারতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি।

(গ) ভারতে সাম্প্রদায়িক দলের উপস্থিতি।

(ঘ) ভারতে একদলীয় আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?

উত্তরঃ স্বাধীন ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাম্প্রদায়িক দলের অবস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। দীর্ঘদিনব্যাপী ভারতে একদলের আধিপত্য ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটে। বর্তমানে কয়েকটি জাতীয় দল ও বহুসংখ্যক আঞ্চলিক দলের উত্থানে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটেছে। অধিকাংশ রাজ্যেই আঞ্চলিক দল সক্রিয়। কয়েকটি রাজ্যে আঞ্চলিক দল ক্ষমতাসীন। জাতীয় রাজনীতিতেও আঞ্চলিক দল একটি বিরাট ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন ১২। ভারতের একদলীয় ব্যবস্থার শাসনের যে-কোন চারটি কারণ লেখ।

উত্তরঃ ভারতের একদলীয় ব্যবস্থার শাসনের অনেকগুলি কারণের মধ্যে চারটি নিম্নরূপ:

(ক) একদলীয় ব্যবস্থার শাসনের জন্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

(খ) কংগ্রেস দল সমগ্র ভারতবর্ষে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।

(গ) সেই সময় ভারতবর্ষে অন্য কোন আঞ্চলিক দলের উৎপত্তি না হবার জন্যই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের লক্ষণীয় আধিপত্য ছিল।

(ঘ) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থার ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী বহু বছর কংগ্রেস রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রশ্ন ১৩। সোসালিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যসমূহ ও লক্ষ্যের তালিকা দাও। দলটি কেন নিজেকে কংগ্রেসের বিকল্প হিসাবে প্রমাণ করতে পারল না?

উত্তরঃ ১৯৪৮ সালে ভারতে সমাজবাদী দলের জন্ম হয়েছিল। এই দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:

সমাজবাদী দল গণতান্ত্রিক সমাজবাদে বিশ্বাসী। এই দল জনস্বার্থজনিত বিষয়গুলির রাষ্ট্রীয়করণের উপর গুরুত্ব দেয়। শ্রমিক, কৃষক, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী ইত্যাদির কল্যাণে সমাজবাদী সমাজ গঠন করা প্রভৃতির উপর এই দলটি গুরুত্ব প্রদান করে।

ভারতের সমাজবাদী দলটি কংগ্রেসের পুঁজিবাদ প্রীতির বিরোধিতার মাধ্যমে গঠিত হয়। কিন্তু ১৯৫৫ সালে যখন কংগ্রেস সমাজবাদী সমাজ গঠনের ঘোষণা করে তখন এই দল বিপাকে পড়ে। তারা ক্রমশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। এর ফলে তারা নিজেদেরকে কংগ্রেসের বিকল্প হিসাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু পরবর্তী সময়ে এই দলটি বিভিন্ন কারণে ভাঙনের সম্মুখীন হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ক্রমশ বিলুপ্ত করে।

প্রশ্ন ১৪। ‘বিরোধী পক্ষ হল ভারতের এক বিভাজিত সদন।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় দলীয় ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাব এবং অসংগঠিত ও বিভিন্ন বিভাজনের সম্মুখীন হওয়া বিরোধী দল। ভারতের বিরোধী দলগুলির মধ্যে কোন ধরনের ঐক্য ও সংহতি নেই। এই দলগুলি নানান সময়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করলেও তা সফলতা অর্জন করতে পারেনি। এই দলগুলির মধ্যে প্রায়শই মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। এর কারণ এদের ক্ষুদ্র স্বার্থ, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যর সংঘাত। কেন্দ্রীয় সংসদ বা রাজ্যিক বিধানসভাতেও বিরোধী দলসমূহ একত্রিত হয়ে সরকারি দলের বিরোধিতা করতে অপারগ হয়েছে।

প্রশ্ন ১৫। শুদ্ধ না অশুদ্ধ লেখ:

(ক) ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ১৪টি জাতীয় দল ছিল।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(খ) ডঃ আম্বেদকর ১৯৫৬ সালে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(গ) ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা আছে।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(ঘ) শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাপক সভাপতি ছিলেন।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(ঙ) প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(চ) স্বতন্ত্র পার্টি ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

প্রশ্ন ১৬। স্বাধীনতার পূর্বে গঠিত চারটি রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পূর্বে গঠিত চারটি রাজনৈতিক দল হল—

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।

(খ) ভারতের সাম্যবাদী দল।

(গ) সমাজবাদী দল। এবং

(ঘ) মুসলিম লীগ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৭। কেরালায় কমিউনিস্টদের জয় সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ কংগ্রেস দল ১৯৫৭ সালে কেরালায় পরাজয় বরণ করে। ১৯৫৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সাম্যবাদী (কমিউনিস্ট দল) কেরালা বিধানসভায় অধিক সংখ্যক আসন লাভ করে। এই দল ১২৬টি আসনের মধ্যে ৬০টি আসন লাভ করে এবং পাঁচজন নির্দলীয় সদস্যের সমর্থন লাভ করিয়া সাম্যবাদী দলের নেতা ই. এম. এস. নাম্বুদ্রিপাদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে এইটিই পৃথিবীর প্রথম কমিউনিস্ট সরকার। কংগ্রেস ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ‘মুক্তির আন্দোলন’ আরম্ভ করে। ভারতের কমিউনিস্ট দল মৌলিক সংস্কার উন্নয়নশীল নীতি গ্রহণের প্রতিজ্ঞা করেছিল। সাম্যবাদীগণ এই বিদ্রোহকে কায়েমী স্বার্থ জড়িত ধর্মীয় সংস্থা দ্বারা পরিচালিত বলে বিশ্বাস করে। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ১৯৫৯ সালে সংবিধানের ৩৫৬নং অনুচ্ছেদ অনুসারে কেরালার সাম্যবাদী সরকার ভেঙে দেয়। সাংবিধানিক জরুরি ক্ষমতা অপব্যবহারের এটিই প্রথম দৃষ্টান্ত।

প্রশ্ন ১৮। ভারতে ভোটদানের পরিবর্তিত পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভোট গ্রহণের জন্য আজকাল আমরা বৈদ্যুতিন ভোটিং যন্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করি। প্রথম সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য তার নির্বাচন প্রতীক থাকা একটি বাক্স প্রত্যেক নির্বাচনী কক্ষের মধ্যে থাকত। প্রত্যেক ভোটারকে একটি ব্যালটপত্র দেওয়া হত এবং সে ভোট দিয়ে প্রার্থীর বাক্সে ফেলে দিত।

প্রথম দুইটি নির্বাচনের পর এই পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়। ব্যালট পত্রে সকল প্রার্থীর নাম ও প্রতীক লিপিবদ্ধ করা হয় এবং ভোটারগণও তাদের পছন্দের প্রার্থীর নামের উপর ছাপ মেরে দেন। এই পদ্ধতি প্রায় চল্লিশ বৎসর প্রচলিত ছিল। ১৯৯০-এর দশকে নির্বাচন আয়োগ বৈদ্যুতিন ভোটিং যন্ত্র (Electronic Voting Machine, EVM) ব্যবহার করে। সমগ্র দেশে ২০০৪ সালে বৈদ্যুতিন ভোটিং যন্ত্রের ব্যবহার আরম্ভ হয়। বর্তমানে প্রত্যেক নির্বাচনে এই ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রশ্ন ১৯। সমাজবাদী পার্টি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পূর্বে কংগ্রেস পরিচালিত গণআন্দোলনের সময়ে সমাজবাদী পার্টির জন্ম হয়। ১৯৩৪ সালে কংগ্রেসের মধ্যে কয়েকজন নেতা কংগ্রেসকে অধিক গতিশীল করার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টি গঠন করে। ১৯৪৮ সালে কংগ্রেস দলীয় সংবিধান সংশোধন করে এর সদস্যদের দুইটি দলের সদস্যপদ নিতে বাধা প্রদান করে। এইজন্য ১৯৪৮ সালে সমাজবাদীগণ একটি পৃথক সমাজবাদী পার্টি গঠন করে। আচার্য নরেন্দ্রদেব সমাজবাদী পার্টির সভাপতি ছিলেন। সমাজবাদী পার্টির নির্বাচনী কার্যকলাপ তার সমর্থকদের হতাশ করে। দলের উপস্থিতি সকল রাজ্যে থাকলেও তার চিত্র হতাশাজনক ছিল।

সমাজবাদী দল গণতান্ত্রিক সমাজবাদে বিশ্বাসী যা কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমাজবাদীদের পৃথক করত। কৃষক ও শ্রমিককে অবহেলা করে পুঁজিপতি ও জমিদার শ্রেণীর সমর্থন করার কারণে সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসকে সমালোচনা করেছিল।

সমাজবাদী পার্টি নানা কারণে কালক্রমে ভেঙে বেশ কয়েকটি সমাজবাদী পার্টিতে পরিণত হয়েছিল। এইগুলির মধ্যে অন্যতম হল কিষাণ মজদুর প্রজা পার্টি, প্রজা সোসালিস্ট পার্টি ও সংযুক্ত সোসালিস্ট পার্টি। জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুৎ পটবর্ধন, অশোক মেহতা, আচার্য নরেন্দ্র দেব, রাম মনোহর লোহিয়া এবং এস. এম. যোশী প্রমুখ এই দলের প্রখ্যাত নেতা ছিলেন।

অতি-দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ইতিহাস সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম গণতন্ত্রের ধারণার প্রতি বিশেষভাবে দায়বদ্ধ ছিল। তাই আমাদের দেশের সরকার গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ভারতের মতো বিশাল আকারের দেশে মুক্ত ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন আয়োজন করা সহজ কাজ ছিল না। 

প্রথম সাধারণ নির্বাচন ছিল একটি গরীব ও নিরক্ষর দেশে প্রথম বৃহৎ আকারে গণতন্ত্রের পরীক্ষা। তখনও পর্যন্ত গণতন্ত্র ইউরোপের স্বচ্ছ্বল দেশগুলি ও উত্তর আমেরিকায় ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার সত্যিই খুব সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য ১৯৫০ সালে নির্বাচন আয়োগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সুকুমার সেন হয়েছিলেন প্রথম মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক। সেই সময় ১৭.৬ কোটি যোগ্য ভোটার ছিলেন, যাদের ৩২৮৩ জন বিধানসভ সদস্য এবং ৪৮৯ জন লোকসভা সদস্যকে নির্বাচিত করতে হয়েছে। এই ভোটারদের শতকরা মাত্র ১৫ জন সাক্ষর ছিলেন।

নির্বাচন ১৯৫১ সালের অক্টোবর ও ১৯৫২ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী প্রচার, ভোটগ্রহণ, ভোটগণনা শেষ করতে চার মাস সময় লাগে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়—গড়ে প্রত্যেক আসন প্রতি চারজন করে প্রার্থী ছিলেন। ভোটদানের হার ছিল ৫০ শতাংশেরও বেশি। ফল ঘোষণার পর পরাজিতরাও একে পক্ষপাতহীন বলে গ্রহণ করেছিলেন। ভারতের ১৯৫২ সালের নির্বাচন পৃথিবীর সর্বত্র গণতন্ত্রের ইতিহাসে পথপ্রদর্শক হয়েছিল। হিন্দুস্থান টাইমস দাবী করেছিল, সার্বজনীন সহমত রয়েছে যে ভারতীয় জনগণ প্রশংসনীয় আচরণ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক নির্বাচনে।” কংগ্রেস দল ৩৬৪টি আসনে জয়লাভ করে জওহরলাল নেহরুর প্রধানমন্ত্রীত্বে সরকার গঠন করেছিল এবং ১৬টি আসনে জয়লাভ করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিতীয় স্থানে ছিল।

প্রশ্ন ২। রাষ্ট্রীয় বিপ্লবী দলের বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় বিপ্লবী দল একটি স্পেনীয় রাজনৈতিক দল। ১৯২৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল রিভলিউশনারী পার্টি নামে। পরবর্তীতে নাম বদলে হয় ইনস্টিটিউশনাল রিভলিউশনারী পার্টি। স্পেনীয় ভাষায় বলে দি পিআরআই। এই দল মেক্সিকোতে প্রায় ছয় দশক শাসন ক্ষমতায় থাকে। এই দল মেক্সিকোতে সফলভাবে বিপ্লবের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়েছিল। এই দলটি কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনসাধারণের স্বার্থ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বৈপ্লবিক কার্যসূচী পরিচালনা করেছিল। সময়ের ব্যবধানে পিআরআই-এর প্রতিষ্ঠাতা প্লুটার্কো ইলিয়াস কালেস প্রতিষ্ঠানটি এবং তার মাধ্যমে সরকার দখল করেন। এই দলের শাসনকে ‘পরিপূর্ণ স্বৈরতন্ত্র’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ২০০০ সালে দলটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরাজিত হয়।

প্রশ্ন ৩। ভারতের প্রথম তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের আধিপত্য ব্যাখ্যা কর।

অথবা,

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কংগ্রেসের আধিপত্যের প্রকৃতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর। 

উত্তরঃ আধিপত্য বা প্রাধান্যকারী দলীয় ব্যবস্থা হল সেই ব্যবস্থা যেখানে বেশ কিছু সংখ্যক দলের অবস্থিতি থাকে। কিন্তু মাত্র একটি দল চলমান রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে। এই ব্যবস্থায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থিত থাকলেও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকা নগণ্য। ভারতের দলীয় ব্যবস্থায় একদলীয় প্রাধান্যের উদাহরণ হল নির্বাচনে অনেক দল অংশগ্রহণ করলেও ১৯৬৭ সালের আগে কেন্দ্র ও অধিকাংশ রাজ্যে কংগ্রেস প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।

প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস লোকসভার মোট ৪৮৯টি আসনের মধ্যে ৩৬৪টি আসন লাভ করে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৬টি আসন লাভ করে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে রাজ্যসমূহের বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনসমূহে কংগ্রেস বিপুল আসন লাভ করে জয়যুক্ত হয়। ত্রিবাঙ্কুর, কোচিন, মাদ্রাজ ও উড়িষ্যা ব্যতীত সকল রাজ্যে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তথাপি এই রাজ্যসমূহে কংগ্রেস সরকার গঠন করে। এইভাবে কংগ্রেস কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েরই সরকার গঠন করে। নির্বাচনের পর জওহরলাল নেহরুই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।

এইভাবে কংগ্রেস ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত নিজের প্রাধান্য বিস্তার করে। ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লোকসভার তিন-চতুর্থাংশ আসন লাভ করেও কংগ্রেস দশ ভাগের একভাগ ভোট পেতে সক্ষম হয়নি। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দুই-চারটি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। উদাহরণস্বরূপ ১৯৫৭ সালে কেরালার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যায়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে কেরালায় একটি সংযুক্ত সরকার গঠিত হয়। তাছাড়া অবশিষ্ট রাজ্য ও কেন্দ্র কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল।

কংগ্রেস প্রত্যেক চারটি আসনের তিনটিতে জয়লাভ করে যদিও মোট ভোটের অর্ধেকও পায়নি। উদাহরণস্বরূপ ১৯৫২ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস মোট ভোটের ৪৫ ভাগ অর্জন করে এবং শতকরা ৭৪ ভাগ আসন লাভ করতে সমর্থ হয়। সমাজবাদী দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে সমগ্র দেশে শতকরা দশ শতাংশের অধিক ভোট লাভ করলেও শতকরা তিন ভাগ আসনও পায়নি।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় জনসংঘ কখন গঠিত হয়েছিল? এর আদর্শের বিষয়ে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও হিন্দু মহাসভার সঙ্গে এর যোগসূত্র ছিল। আদর্শ ও কর্মসূচির দিক দিয়ে জনসংঘ অন্যান্য দলসমূহ থেকে পৃথক। এর আদর্শ হল—এক দেশ, এক সংস্কৃতি ও এক জাতি।

নীতি ও কর্মসূচি: ভারতীয় জনসংঘের প্রধান নীতি ও কর্মসূচীসমূহ নিম্নরূপ –

(ক) এই দল অখণ্ড ভারতে বিশ্বাস করে।

(খ) ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যই হবে ভারতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের মূল ভিত্তি।

(গ) হিন্দি হবে ভারতের সরকারি ভাষা।

(ঘ) জনসংঘ দারিদ্র দূরীকরণে বদ্ধপরিকর।

(ঙ) জনসংঘ কৃষি ও কৃষকের উন্নতি এবং একই সঙ্গে শিল্প বিকাশের পক্ষপাতী।

(চ) বস্ত্রশিল্পে আধুনিকীকরণ হওয়া দরকার।

(ছ) জনসংঘ পরিবার পিছু একটি বাসস্থান থাকার পক্ষপাতী।

জনসংঘ বিশ্বাস করে যে ভারতীয় সংস্কৃতি ও কৃষির উপর ভিত্তি করে দেশ আধুনিক, উন্নতশীল ও শক্তিশালী হতে পারবে। ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনসংঘ লোকসভায় মাত্র ৩টি আসন এবং ১৯৫৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই দল চারটি আসন লাভ করে। প্রথমাবস্থায় কেবলমাত্র হিন্দিভাষী অঞ্চলে এর প্রভাব বিস্তৃত ছিল। বর্তমান ভারতীয় জনতা পার্টির মূল হল জনসংঘ।

প্রশ্ন ৫। স্বতন্ত্র দলের বিষয়ে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ স্বতন্ত্র পার্টি ১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দল বয়োজ্যেষ্ঠ কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছিল। এর তিনজন দক্ষ পরিচালক ছিলেন কে. এম. মূথি, এন. জি. রঙ্গা এবং মিনো মাসানি। এই দল অর্থনৈতিক কারণে অন্যান্য দল হতে পৃথক ছিল। 

স্বতন্ত্র দল সরকার-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির বিরোধী ছিল। দল মনে করত রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পিত অর্থনীতিতে সার্বিক উন্নয়ন যথাযথ সম্ভবপর নয়, বরঞ্চ ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে তারা সমৃদ্ধির কারণ বলে মনে করত। এই দলের আদর্শ এবং নীতি দেশী জমিদার ও রাজকুমারদের খুব স্বাভাবিকভাবে আকর্ষিত করে, কারণ এই দল ভূমি সংস্কারের বিরোধী ছিল। এই দল জোট নিরপেক্ষতা ও সোভিয়েত মিত্রতার বিরোধী ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অধিকতর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রবক্তা ছিল। দেশের বিস্তৃত অঞ্চলে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের স্বার্থের সাথে মিশে যাওয়ায় দলটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু সংকীর্ণ সামাজিক ভিত্তি এবং সমর্পিতপ্রাণ দলগত কর্মী সদস্যের অভাবে দলটি একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেনি।

প্রশ্ন ৬। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির উৎপত্তি ও বিভাজন বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভারতের কমিউনিস্ট দল ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতেও সোভিয়েত ব্যবস্থার অনুরূপ এক শ্রেণীহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এই দলের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ সাধন, শিল্প জাতীয়করণ, ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন, অনুন্নত শ্রেণীর উন্নয়ন ও উদ্বাস্তুদের বিনা ব্যয়ে পুনর্বাসন।

কমিউনিস্ট দল প্রকাশ্যভাবে হিংসাত্মক বিপ্লব সমর্থন করত বলে তা বেআইনি প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষিত হয়েছিল। ক্রমশ ভারতের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট দল নীতি ও কার্যক্রমের পরিবর্তন করে। ১৯৫২ সালের নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রথম নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল মূলত কংগ্রেসের বিরোধিতা করে। কংগ্রেসের দোষ-ত্রুটির তীব্র সমালোচনা করে কমিউনিস্ট দল নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। প্রথম নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল সাফল্য লাভ করে। দ্বিতীয় নির্বাচনে কমিউনিস্ট দলের লক্ষ্য বিশেষ পরিবর্তিত হয়নি। ভারতের কমিউনিস্ট দল মার্কস ও লেনিনের আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক-কৃষক কর্তৃক রাষ্ট্রযন্ত্র অধিকার এবং মেহনতী মানুষের কল্যাণে তা প্রয়োগ করাকে লেনিনের আদর্শ বলে গ্রহণ করে।

প্রথম ও দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল লোকসভায় যথাক্রমে ২৬টি ও ২৭টি আসল লাভ করে সাফল্য অর্জন করে। দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর কেরলে কিছুদিনের জন্য (১৯৫৯) কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের তৃতীয় নির্বাচনে লোকসভায় ২৯টি আসন লাভ করে। ১৯৬২ সালের চীনের আক্রমণের পরবর্তী অধ্যায়ে কমিউনিস্ট দলের প্রভাব বিশেষ হ্রাস পেয়েছিল। তাছাড়া, এই দলের মধ্যে তীব্র অন্তর্বিরোধ দেখা দিয়েছিল।

চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে ১৯৬৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট দলে ভাঙন দেখা দেয়। মূলত চীনা আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক প্রশ্নে দলের এক অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন করে এবং অন্য অংশ সোভিয়েত ইউনিয়ন শোধনবাদের পথ গ্রহণ করেছে বলে ঘোষণা করে পৃথক সংগঠন গড়ে তোলে। এই অংশ ভারতের (মার্কস্বাদী) কমিউনিস্ট দল বলে পরিচিত। মার্কসবাদী দল চীন বা অন্য কোন দেশকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করে না। সংসদীয় পদ্ধতিকে সাময়িকভাবে তারা স্বীকার করে এবং যত দিন না দেশে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ততদিন সংসদীয় ব্যবস্থাকে জনগণের সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করাই মার্কসবাদী দলের লক্ষ্য। মার্কস্ ও লেনিনের নির্দেশিত পথে দেশে সমাজ-বিপ্লব সংগঠিত করা এই দলের মৌল আদর্শ।

মার্কসবাদী কমিউনিস্ট দল ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে লোকসভায় ১৯টি আসন লাভ করে। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় দলের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কেরলে নাম্বুদ্রিপাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। মার্কসবাদী দল ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ একটানা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন ছিল। ত্রিপুরায়ও ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিল। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে ত্রিপুরায় তারা আবার ক্ষমতা দখল করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়ে তারা ক্ষমতা হারায়।

২০১১ সালে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় ক্ষমতাচ্যুত হয়, কিন্তু ২০১৬ সালে আবার কেরালায় ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে।

প্রশ্ন ৭। ভারতে বিরোধী দলের আবির্ভাব বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। ভারতে অনেকগুলি বিরোধী দল আছে। কংগ্রেসের একাধিপত্য থাকা সত্ত্বেও ভারতে অন্যান্য বহুদলীয় গণতন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি বিভিন্ন ও কার্যকরী বিরোধীদল ছিল। এর কতকগুলি ১৯৫২ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বেই উদ্ভূত হয়েছিল। এইসব দলের কয়েকটি ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানের অকংগ্রেসী দলগুলির উৎস ১৯৫০-এর দশকের একটি বা অন্যটির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।

এইসব বিরোধী দলগুলো লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় কেবলমাত্র প্রতীকি প্রতিনিধিত্ব অর্জন করতে পেরেছিল। তথাপি তাদের উপস্থিতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই দলগুলি কংগ্রেসের দলীয় নীতি ও কাজকর্মের অবিরত নীতিভিত্তিক সমালোচনা করত। ফলে শাসকদল চাপে থাকত এবং প্রায়শই কংগ্রেস দলের মধ্যে ভারসাম্য পরিবর্তিত হত। রাজনৈতিক বিকল্প বজার রেখে এই দলগুলো তাদের মধ্যে অসন্তোষ করে গণতন্ত্র বিরোধী হাওয়া থেকে রক্ষা করত।

প্রথম দিকের বছরগুলিতে কংগ্রেস ও বিরোধী নেতৃবৃন্দের মধ্যে অসাধারণ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। ডঃ আম্বেদকার এবং ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মতো বিরোধী নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের ক্যাবিনেট সদস্য ছিলেন বা জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো সমাজতান্ত্রিক নেতাদেরকেও সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠোর হওয়ার পর রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি এই ধরনের সম্পর্ক বা শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়।

প্রশ্ন ৮। আধিপত্যকারী দলীয় ব্যবস্থা কি? এই ব্যবস্থার একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ আধিপত্যকারী দলীয় ব্যবস্থা বলতে এমন পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে বহু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, কিন্তু প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই একটি রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

ভারত হল একদলীয় আধিপত্য বা প্রাধান্যের একটি জলন্ত উদাহরণ। ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচন থেকে ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রাধান্য বা আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়। এরপরও কেন্দ্রে ও বহু রাজ্যে কংগ্রেসের প্রাধান্য বা আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়।

ভারতই একমাত্র দেশ নয় যেখানে প্রাধান্যকারী একদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান। পৃথিবীরর অন্যান্য দেশেও একদলীয় প্রাধান্য দেখা যায়। কিন্তু ভারতের অভিজ্ঞতা এই গুলির মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। চীন, কিউবা, সিরিয়ার মতো দেশে সংবিধান কেবলমাত্র একটি দলকে শাসন করার অনুমতি দেয়। মিশর হরিত্রিয়া প্রভৃতির মত দেশ আইনগত ও সামরিক ব্যবস্থা অনুযায়ী কার্যকরীভাবে একদলীয় রাষ্ট্র। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান ও কার্যকরীভাবে একদলের প্রাধান্যকারী রাষ্ট্র ছিল। ভারতে কংগ্রেস দলের প্রাধান্য এইসব উদাহরণ থেকে পৃথক, কেননা তা হয়েছে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে। অনেক দলই মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তবু কংগ্রেস নির্বাচনের পর নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এই অবস্থা বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকায়, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রাধান্যের সমতুল।

প্রশ্ন ৯। রাজ্যিক স্তরে কংগ্রেসের অসম ধারাটি আলোচনা কর।

উত্তরঃ ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে কেরালা ছাড়া অন্য সকল রাজ্যে ও কেন্দ্রে কংগ্রেস দলই সরকার গঠন করেছিল। কেরালায় প্রথমবারের জন্য কংগ্রেস দল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। সেখানে কমিউনিস্ট দল সরকার গঠন করেছিল। ১৯৬২ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস কেন্দ্র এবং অধিকাংশ রাজ্যে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় ক্ষেত্রে প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়েছিল। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মোট সাতটি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং দুটি রাজ্যে কতিপয় বিধায়ক দলত্যাগ করার ফলে কংগ্রেস সরকার গঠন করতে পারেনি। উল্লেখ্য যে একসঙ্গে মোট নয়টি রাজ্যে অকংগ্রেসী মোর্চা সরকার গঠিত হলেও এই সরকারসমূহ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

প্রশ্ন ১০। স্বাধীনতার পূর্বে রাজনৈতিক দলসমূহের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ নিম্নরূপ:

(ক) ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে এলান অক্টোভিয়ান হিউম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের প্রথম অধিবেশন বোম্বাই (মুম্বাই)-এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর প্রথম সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

(খ) ভারতের সাম্যবাদী দল: ভারতের সাম্যবাদী দল ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতেও সোভিয়েত ব্যবস্থার অনুরূপ এক শ্রেণীহীন শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এই দলের কার্যক্রম হল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ, শিল্প জাতীয়করণ, ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন, অনুন্নত শ্রেণীর উন্নয়ন ও উদ্বাস্তুদের বিনা ব্যয়ে পুনর্বাসন।

(গ) মুসলিম লীগ: মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছিল ১৯০৬ সালে। মূলত মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে এই দল গঠিত হয়েছিল। পিছিয়ে পড়া মুসলমান জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে এই দল সচেষ্ট ছিল।

(ঘ) কংগ্রেস সমাজবাদী দল: কংগ্রেস সমাজবাদী দল গঠিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। কংগ্রেস দলের মধ্যে একদল যুবনেতা, যারা কংগ্রেসের অধিক মৌলিক ও গতিশীল হওয়ার পক্ষপাতী ছিল তারাই এই দল গঠন করেছিল।

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় জনসংঘ ও কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য দেখাও।

উত্তরঃ ভারতীয় জনসংঘ ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে নিম্নোক্ত বহু আদর্শগত পার্থক্য আছে:

(ক) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মূল আদর্শ সমাজবাদ, কিন্তু ভারতীয় জনসংঘের মূল আদর্শ ব্যক্তিবাদ।

(খ) ভারতীয় জনসংঘ ভারতের সংস্কৃতি, ঐক্য, সংহতি ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেয় এবং বিদেশী সংস্কৃতির বিরোধিতা করে, কিন্তু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি রাশিয়া ও চীনের মতো সাম্যবাদী সমাজ গঠনের উপর গুরুত্ব দেয়।

(গ) চীনের ভারত আক্রমণের সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বিরোধিতা করেনি, কিন্তু ভারতীয় জনসংঘ এর তীব্র বিরোধিতা করেছিল।

(ঘ) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক শ্রেণীর কল্যাণের উপর গুরুত্ব দেয়, কিন্তু ভারতীয় জনসংঘ শ্রমিক শ্রেণী ছাড়াও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের কল্যাণের কথাও বলে।

(ঙ) ভাতের কমিউনিস্ট পার্টি উৎপাদনের বড় সংগঠনসমূহ রাষ্ট্রীয়করণ করতে চায়, অন্যদিকে ভারতীয় জন্য ব্যক্তিগতকরণকে সমর্থন করে।

(চ) ভারতীয় জনসংঘ ভারত ও পাকিস্থানকে একত্র করে অখণ্ড ভারত গঠনের কথা বললেও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তা সমর্থন করে না।

প্রশ্ন ১২। কংগ্রেস কোন অর্থে একটি ‘আদর্শবাদী কোয়ালিশন’? কংগ্রেসের মধ্যে থাকা আদর্শবাদী প্রবণতাসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় এই দলে ইংরেজি শিক্ষিত লোক, উচ্চবংশ, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং শহুরে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের আধিপত্য ছিল। কিন্তু কংগ্রেস পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনের শুরু হতেই এই দল তার সামাজিক ভিত্তি পরিব্যাপ্ত করে। এইভাবে স্বাধীনতার সময়ে কংগ্রেস দল ভারতের সকল শ্রেণী, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা প্রভৃতি বিচিত্র ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই সকল জাতি গোষ্ঠীর পরস্পরবিরোধী স্বার্থ ছিল—গ্রামবাসী ও শহরের বাসিন্দা, কৃষক ও জমিদারবর্গ, শ্রমিক ও শিল্পপতি, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী। এই সকল পরস্পর বিরোধী শ্রেণী কংগ্রেসে স্থান পেয়েছিল। এই সব গোষ্ঠীর অনেকেই কংগ্রেসে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্ট কতিপয় শ্রেণী গোষ্ঠী নিজেদের অস্তিত্ব বহাল রেখে কংগ্রেসের সঙ্গেই ছিল। সুতরাং এই অর্থে কংগ্রেস অবশ্যই একটি আদর্শবাদী কোয়ালিশন।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১৩। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ ভারতের কমিউনিস্ট দল ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের প্রধান উদ্দেশ্য হল ভারতেও সোভিয়েত ব্যবস্থার অনুরূপ এক শ্রেণীহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এই দলের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ সাধন, শিল্প জাতীয়করণ, ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন, অনুন্নত শ্রেণীর উন্নয়ন ও উদ্বাস্তুদের বিনা ব্যয়ে পুনর্বাসন।

কমিউনিস্ট দল প্রকাশ্যভাবে হিংসাত্মক বিপ্লব সমর্থন করত বলে তা বেআইনি প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষিত হয়েছিল। ক্রমশ ভারতের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট দল নীতি ও কার্যক্রমের পরিবর্তন করে। ১৯৫২ সালের নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। প্রথম নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল মূলত কংগ্রেসের বিরোধিতা করে। কংগ্রেসের দোষ-ত্রুটির তীব্র সমালোচনা করে কমিউনিস্ট দল নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। প্রথম নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল সাফল্য লাভ করে। দ্বিতীয় নির্বাচনে কমিউনিস্ট দলের লক্ষ্য বিশেষ পরিবর্তিত হয়নি। ভারতের কমিউনিস্ট দল মার্কস ও লেনিনের আদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক-কৃষক কর্তৃক রাষ্ট্রযন্ত্র অধিকার এবং মেহনতী মানুষের কল্যাণে তা প্রয়োগ করাকে লেনিনের আদর্শ বলে গ্রহণ করে।

প্রথম ও দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল লোকসভায় যথাক্রমে ২৬টি ও ২৭টি আসন লাভ করে সাফল্য অর্জন করে। দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর কেরলে কিছুদিনের জন্য (১৯৫৯) কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের তৃতীয় নির্বাচনে লোকসভায় ২৯টি আসন লাভ করে। ১৯৬২ সালের চীনের আক্রমণের পরবর্তী অধ্যায়ে কমিউনিস্ট দলের প্রভাব বিশেষ হ্রাস পেয়েছিল। তাছাড়া, এই দলের মধ্যে তীব্র অন্তর্বিরোধ দেখা দিয়েছিল। দলের একটি বিরাট অংশ চীনের নীতির সমর্থক হিসাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল। তারা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) [C.P.I.(M)] নামে দল গঠন করেন। চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল লোকসভায় ২৪টি আসন, লাভ করেছিল।

কমিউনিস্ট দল ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে সমর্থন জানায়। ১৯৭৭ সালের ষষ্ঠ লোকসভা নির্বাচনে দলের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৭। সপ্তম লোকসভা নির্বাচনের আগে (ডিসেম্বর ১৯৭৯) কমিউনিস্ট দল বাম ও গণতান্ত্রিক ঐক্যর সম্প্রসারণে বামপন্থী অন্যান্য দলগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে।

প্রশ্ন ১৪। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে ১৯৬৪ সালের ভারতের কমিউনিস্ট দলে ভাঙন দেখা দেয়। মূলত চীনা আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক প্রশ্নে দলের এক অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন করে এবং অন্য অংশ সোভিয়েত ইউনিয়ন শোধনবাদের পথ গ্রহণ করেছে বলে ঘোষণা করে পৃথক সংগঠন গড়ে তোলে। এই অংশ ভারতের (মার্কস্বাদী) কমিউনিস্ট দল বলে পরিচিত। মার্কসবাদী দল চীন বা অন্য কোন দেশকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করে না। সংসদীয় পদ্ধতিকে সাময়িকভাবে তারা স্বীকার করে এবং যত দিন না দেশে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় ততদিন সংসদীয় ব্যবস্থাকে জনগণের সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করাই মার্কসবাদী দলের লক্ষ্য। মার্কস্ ও লেনিনের নির্দেশিত পথে দেশে সমাজবিপ্লব সংগঠিত করা এই দলের মৌল আদর্শ।

মার্কসবাদী কমিউনিস্ট দল ১৯৬৭ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে লোকসভায় ১৯টি আসন লাভ করে। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় দলের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কেরলে নাম্বুদ্রিপাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। মার্কসবাদী দল ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ একটানা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন ছিল। ত্রিপুরায়ও ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিল। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে ত্রিপুরায় তারা আবার ক্ষমতা দখল করে। ২০১৮ সালে বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়ে তারা ক্ষমতা হারায়।

২০১১ সালে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় ক্ষমতাচ্যুত হয়, কিন্তু ২০১৬ সালে আবার কেরালায় ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে।

মার্কসবাদী দলের মৌলিক স্বীকৃত লক্ষ্যগুলি হল—বেসরকারি বিদেশি পুঁজি জাতীয়করণ, বৃহৎ শিল্প ও অর্থনীতির জাতীয়করণ, শিল্প ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকতা ও পরিচালনায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ, ক্ষেতমজুর ও গরীব চাষির জীবনযাত্রার উন্নতি সাধন ও উদ্বৃত্ত জমি তাহাদের মধ্যে বণ্টন, গরীবদের উপর করের বোঝা হ্রাস, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন, বিচার বিভাগের পুনর্গঠন, রাজ্যপালের পদ ও রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান, রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রকৃত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বৈদেশিক নীতি অবলম্বন।

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম এবং বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রাচীনত্বে এবং ঐতিহ্যে সর্বপ্রথম স্থান অধিকার করে আছে। ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতবন্ধু অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের প্রেরণায় ও কয়েকজন ভারতীয় নেতার প্রচেষ্টায় ১৮৮৫ সালের বড়দিনের ছুটির সময় কলিকাতার ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত ৭২ জন রাজনীতিবিদের উপস্থিতিতে বোম্বাই শহরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন হয়। বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অভাব-অভিযোগ জানাবার জন্য জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে কংগ্রেস ভেঙে যায় এবং সমাজতন্ত্রীগণ কংগ্রেস ত্যাগ করে পৃথক দল গঠন করেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে জাতীয় কংগ্রেসই সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল হিসাবে কেন্দ্র ও রাজ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে কংগ্রেসে আবার ভাঙন দেখা দেয়। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিজলিঙ্গপ্পার যৌথ নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানায়। ফলে নিজলিঙ্গপ্পার নেতৃত্বে কংগ্রেস (সংগঠন) এবং ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস (নূতন) নামে দুই কংগ্রেস দলের আবির্ভাব ঘটে। সংগঠন কংগ্রেস ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির সহিত মিশে যায়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯৭৭ সালে নির্বাচনে কংগ্রেসের বিপর্যয় ঘটে। ইন্দিরা গান্ধীকে দলীয় সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে কংগ্রেস (ই) নামে নূতন দল গঠন করেন। কংগ্রেসের অবশিষ্ট অংশ দেবরাজ আর্সের নেতৃত্বে কংগ্রেস (ইউ) নামে পরিচিত হয় এবং পরে শারদ পাওয়ারের নেতৃত্বে কংগ্রেস (স) নাম ধারণ করে। নির্বাচন কমিশন কংগ্রেস (ই)-কে জাতীয় কংগ্রেসের স্বীকৃতি দান করে। নীতি ও আদর্শগত দিক দিয়ে সব কংগ্রেসই প্রায় সমান।

প্রশ্ন ১৬। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যগুলি বর্ণনা কর।

উত্তরঃ ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রাচীনত্বে এবং ঐতিহ্যে সর্বপ্রথম স্থান অধিকার করেছে। বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অভাব-অভিযোগ জানাবার জন্য এই দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে জাতীয় কংগ্রেস যে আদর্শ ও নীতির কথা ঘোষণা করেছিল তাতে ভারতের জনগণের কল্যাণ ও প্রগতি সম্প্রসারিত করা এবং শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে সমবায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা সৃষ্টি করবার কথা বলা হয়েছিল। সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের উপর ভিত্তি করে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠিত হবে এবং বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দ্যের বাস্তব রূপায়ণে সহায়তা করবে। দ্বিতীয় নির্বাচনের পূর্বে আবাদী কংগ্রেসের (১৯৫৫) প্রস্তাবানুযায়ী জাতীয় কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের রাষ্ট্র গঠনের আদর্শ প্রচার করে। মিশ্র অর্থনীতির প্রবর্তন, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা দূরীকরণ লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করা জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম লক্ষ্য। 

জাতীয় কংগ্রেস ঘোষিত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও কর্মসূচীকে নূতন উদ্যমে সার্থক রূপায়ণের জন্য শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের আদর্শ ও লক্ষ্যকে নূতন করে ঘোষণা করলেন। ১৯৭১ সালে সংবিধানের ১৪তম ও ২৫তম সংশোধনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। তাছাড়া ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ ও রাজন্য ভাতা বিলোপ প্রভৃতি কাজের মধ্য দিয়ে নূতন পথে যাত্রা আরম্ভ হয়। কংগ্রেসের পথ গণতন্ত্র, লক্ষ্য সমাজতন্ত্র।

সংক্ষেপে বলা যায়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মূল আদর্শ হল গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা সমাজতন্ত্র ও জোট-নিরপেক্ষতা। কংগ্রেসের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমতার পক্ষপাতি। জাতীয় কংগ্রেস সমাজ হতে অস্পৃশ্যতা এবং অন্যান্য সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। এই দল সমাজের দরিদ্র ও নিপীড়িতদের কল্যাণে আগ্রহী। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মানুষের সার্বিক বিকাশের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। কংগ্রেস দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বেকার সমস্যা সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। তপশীলভুক্ত জাতি ও তপশীলভুক্ত উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণীর মানুষের কল্যাণেও কংগ্রেস অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। বর্তমানে নূতন অর্থনৈতিক কর্মসূচী রূপায়ণে জাতীয় কংগ্রেস তার লক্ষ্য ও আদর্শের কিছুটা পরিবর্তন করেছে।

প্রশ্ন ১৭। ভারতবর্ষে দলীয় ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।

উত্তরঃ পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো ভারতেও দলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত। ভারতীয় দল ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য পশ্চিমী দেশগুলির দলীয় প্রথার বৈশিষ্ট্য হতে ভিন্ন। 

ভারতীয় দল ব্যবস্থারও বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:

(ক) বহুদলীয় ব্যবস্থা: ভারতীয় দল ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে ফ্রান্সের মতো ভারতেও বহু রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন অংশের জাতি, ধর্ম, ভাষা, আঞ্চলিকতা এবং আদর্শের পার্থক্যের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে।

(খ) সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি: ভারতে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের ভিত্তিতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, যারা দেশের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক।

(গ) আঞ্চলিক দল: ভারতে আঞ্চলিক ভিত্তিতে বহু রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। তাদের কার্যকারিতা একটি বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

(ঘ) শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের অভাব: ভারতীয় দল ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দলীয় শৃঙ্খলার অভাবে কোন দলই সঠিকভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারে না।

(ঙ) আদর্শের অভাব: ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শের অভাব পরিলক্ষিত হয়। দলীয় নেতারা জাতীয় স্বার্থ অপেক্ষা দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখে।

(চ) ব্যক্তি প্রাধান্যতা: ভারতের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ব্যক্তিত্বের প্রভাব লক্ষণীয়। কয়েকজন বিশিষ্ট নেতাকে কেন্দ্র করেই দলের সংগঠন শক্তিশালী হয়।

(ছ) দলত্যাগ: দলত্যাগ ভারতীয় দলীয় প্রথার আর একটি বৈশিষ্ট্য। দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রণয়ন সত্ত্বেও দলত্যাগ সম্পূর্ণরূপে রোধ করা যায়নি।

(জ) ত্রুটিপূর্ণ সংগঠন: ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি যথাযথভাবে সংগঠিত নয়। কতকগুলি রাজনৈতিক দল কেবল নামেই অবস্থান করছে। তাদের কোন সংগঠন নেই।

প্রশ্ন ১৮। ভারতবর্ষে বিরোধী দলের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভারতবর্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। সংসদীয় গণতন্ত্রের সুষ্ঠু পরিচালনা ও সাফল্যের ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতবর্ষে বহুদলীয় ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যিক আইনসভাগুলিতে বিরোধী আসনে বহু দল থাকে। ফলে ভারতে এখনও পর্যন্ত কোন শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে ওঠেনি। ভারতে ১৯৭৭ সালের পূর্বে কোন শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল না। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি গঠিত হয় এবং কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে কংগ্রেস ১৫০টিরও বেশি আসন লাভ করে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। অধিকাংশ রাজ্যেও কংগ্রেস বিরোধী আসনে অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে কংগ্রেস আবার ক্ষমতা দখল করে। তখন ৩৫টি আসন নিয়ে সি.পি.আই.(এম) প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে এবং এই সময় তেলেগু দেশম ৪০টি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পরাজিত হয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলে পরিণত হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে এবং বি. জে. পি. বিরোধী দলে পরিণত হয়।

ভারতবর্ষে একাধিক বিরোধী দল থাকায় এবং তাহাদের দলীয় নীতিতে সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক সময় তাদের পক্ষে সংগঠিত হয়ে সরকারের বিরোধীতা করা সম্ভব হয় না। ভারতে ছোট ছোট অনেকগুলি দল গড়ে ওঠায় সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য যেমন শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজন সেইরূপ বিরোধী দলের অভাব পরিলক্ষিত হয়। কেন্দ্র ও অধিকাংশ রাজ্য আইনসভায় সরকারি দলের আপেক্ষিক সংখ্যাধিক্য এত বেশি যে আইনসভায় পরাজয়বরণ দূরের কথা, একমাত্র মৌখিক বিরোধীতা ব্যতীত সরকারের কোন সক্রিয় বিরোধিতার সম্মুখীন হবার আশঙ্কা নেই। এতদসত্ত্বেও ভারতীয় বিরোধী দলের ভূমিকা উপেক্ষণীয় নয়। ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতাসম্পন্ন বিরোধী নেতারা নিজেদের যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে অনেক সময় সরকারকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আইনসভার বাইরেও বিরোধী দলগুলি জনস্বার্থের পরিপন্থী সরকারি নীতিগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরে। বিরোধী দলগুলি অনেক সময় সরকারকে সাহায্যও করে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সঠিক শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূর্ণ কর:

(ক) ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে লোকসভার সঙ্গে একই সাথে ________ নির্বাচন হয়েছিল। (ভারতের রাষ্ট্রপতি/ রাজ্যসমূহের বিধানসভা/রাজ্যসভার/ভারতের প্রধানমন্ত্রী)

উত্তরঃ রাজ্যসমূহের বিধানসভা।

(খ) প্রথম লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দলটি ছিল ________। (প্রজা সোসালিস্ট পার্টি/ ভারতীয় জনসংঘ/ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি/ভারতীয় জনতা পার্টি)

উত্তরঃ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

(গ) স্বতন্ত্র পার্টির আদর্শের নির্দেশিত একটি নীতি হইল__________। (শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ/ দেশীয় রাজাশাসিত রাজ্যসমূহ রক্ষা করা/ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত অর্থনীতি/ ইউনিয়নের মধ্যে রাজ্যগুলির স্বশাসন।)

উত্তরঃ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত অর্থনীতি।

প্রশ্ন ২। তালিকার (ক)-এর সঙ্গে তালিকা (খ) মিলাও:

তালিকা (ক)তালিকা (খ)
(a) এস. এ. ডাঙ্গে(i) ভারতীয় জনসংঘ
(b) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি(ii) স্বতন্ত্র পার্টি
(c) মিনু মাসানি(iii) প্রজা সোসালিস্ট পার্টি
(d) অশোক মেহতা(iv) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি

উত্তরঃ 

তালিকা (ক)তালিকা (খ)
(a) এস. এ. ডাঙ্গে(iv) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি
(b) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি(i) ভারতীয় জনসংঘ
(c) মিনু মাসানি(ii) স্বতন্ত্র পার্টি
(d) অশোক মেহতা(iii) প্রজা সোসালিস্ট পার্টি

প্রশ্ন ৩। একদলীয় প্রাধান্য সম্পর্কে নিম্নে ভাষ্য প্রদান করা হল। এইগুলির প্রতিটিতে শুদ্ধ বা অশুদ্ধ লেখ:

(ক) শক্তিশালী বিকল্প রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতিতে একদলীয় প্রাধান্য দৃঢ়মূল হয়।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(খ) দুর্বল জনমতের জন্য একদলীয় প্রাধান্য দেখা দেয়।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

(গ) একদলীয় প্রাধান্য দেশের অতীতের ঔপনিবেশিকতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

উত্তরঃ অশুদ্ধ।

(ঘ) একদলীয় প্রাধান্য দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শের অনুপস্থিতি প্রতিফলিত করে।

উত্তরঃ শুদ্ধ।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় জনসংঘ অথবা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি যদি প্রথম নির্বাচনের পর সরকার গঠন করত তাহলে কি কি ক্ষেত্রে সরকারের নীতি পৃথক হত? উভয় দলের প্রত্যেকের তিনটি পার্থক্য নির্দেশ কর।

উত্তরঃ ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতীয়, জনসংঘ অথবা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি যদি কেন্দ্রে সরকার গঠন করত তা হলে সরকারের নীতির নিম্নলিখিত পার্থক্য থাকত:

(ক) ভারতীয় জনসংঘ ধর্মের ভিত্তিতে দেশের সংবিধান প্রণয়ন করত এবং ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করত। কিন্তু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করত এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সহায়ক সংবিধান প্রণয়ন করত।

(খ) জনসংঘ ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিশেষ অধিকার দেওয়ার বিরোধী। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি সমাজবাদে বিশ্বাসী।

(গ) জনসংঘ পরমাণু শক্তির পক্ষপাতী। তাদের মতে দেশের নিরাপত্তার জন্য পরমাণুশক্তি অত্যাবশ্যক। কিন্তু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি পরমাণুশক্তি ও পরমাণু অস্ত্রের বিরোধী।

প্রশ্ন ৫। কংগ্রেস কোন্ অর্থে একটি ‘আদর্শবাদী কোয়ালিশন’? কংগ্রেসের মধ্যে থাকা আদর্শবাদী প্রবণতাসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় এই দলে ইংরেজি শিক্ষিত লোক, উচ্চবংশ, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং শহুরে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের আধিপত্য ছিল। কিন্তু কংগ্রেস পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনের শুরু হতেই এই দল তার সামাজিক ভিত্তি পরিব্যাপ্ত করে। এইভাবে স্বাধীনতার সময়ে কংগ্রেস দল ভারতের সকল শ্রেণী, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা প্রভৃতি বিচিত্র ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই সকল জাতি গোষ্ঠীর পরস্পরবিরোধী স্বার্থ ছিল—গ্রামবাসী ও শহরের বাসিন্দা, কৃষক ও জমিদারবর্গ, শ্রমিক ও শিল্পপতি, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী। এই সকল পরস্পর বিরোধী শ্রেণী কংগ্রেসে স্থান পেয়েছিল। এই সব গোষ্ঠীর অনেকেই কংগ্রেসে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। অবশিষ্ট কতিপয় শ্রেণী গোষ্ঠী নিজেদের অস্তিত্ব বহাল রেখে কংগ্রেসের সঙ্গেই ছিল। সুতরাং এই অর্থে কংগ্রেস অবশ্যই একটি আদর্শবাদী কোয়ালিশন।

প্রশ্ন ৬। একদলীয় আধিপত্যের অবস্থান ভারতীয় রাজনীতির গণতান্ত্রিক প্রকৃতিতে কীরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল?

উত্তরঃ ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একদলীয় আধিপত্য ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিল। যদিও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, ভারতীয় জনসংঘ, প্রজা সোসালিস্ট পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি প্রথম তিনটি লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু সফল হতে পারেনি। এটা সত্য যে এই দলগুলি কংগ্রেসের সমালোচনা করলেও লোকসভায় কংগ্রেসের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এই সমালোচনা ফলপ্রসূ হতে পারেনি। তাছাড়া জওহরলাল নেহরুর মতো পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব এই সমালোচনায় কর্ণপাত করেন নি। সুতরাং এই সময়কাল একদলীয় প্রাধান্যের যুগ বলে পরিগণিত হয়।

প্রশ্ন ৭। সমাজবাদী পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি এবং ভারতীয় জনসংঘ ও স্বতন্ত্র পার্টির মধ্যে তিনটি করে পার্থক্য নির্ণয় কর।

উত্তরঃ সমাজবাদী দল ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) সমাজবাদীগণ গণতান্ত্রিক সমাজবাদে বিশ্বাসী। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি ভারতীয় ব্যবস্থার মধ্যে থেকে গণতান্ত্রিক উপায়ে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে কেবলমাত্র সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

(খ) সমাজবাদীগণ শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক পদ্ধতির উপর বিশ্বাসী, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী।

(গ) সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসকে দরিদ্র শ্রেণী ও কৃষকদের স্বার্থের পরিবর্তে পুঁজিপতি ও জমিদারদের স্বার্থরক্ষার জন্য সমালোচনা করে, কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক ও কৃষকদের সংঘটিত করে শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতৃত্বদান করে। CITU এবং কৃষকসভার মতো সর্বভারতীয় স্তরে প্রভাবশালী প্রেসার গ্রুপ বাম আন্দোলনের ফসল।

ভারতীয় জনসংঘ ও স্বতন্ত্র পার্টির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

(ক) ভারতীয় জনসংঘ এক দেশ, এক জাতি, এক কৃষ্টি এবং এক জাতীয় আদর্শে বিশ্বাসী। অন্যদিকে স্বতন্ত্র পার্টি সকলের সমান সুযোগের নীতিতে বিশ্বাসী।

(খ) ভারতীয় জনসংঘ মৌলিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্যোগ রাষ্ট্রায়ত্বে বিশ্বাসী। ইহা অধিক পরিমাণে শিল্পপ্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী নয়। কারণ তা গণতন্ত্র ও আর্থিক বিকাশের পরিপন্থী। অন্যদিকে স্বতন্ত্র পার্টি ব্যক্তির সর্বাধিক স্বাধীনতা ও ন্যূনতম রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী।

(গ) জনসংঘ বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে জোট-নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। কিন্তু স্বতন্ত্র পার্টি জোট-নিরপেক্ষতা বিরোধী এবং আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top