Class 12 Bengali Chapter 2 অন্নদার আত্মপরিচয়

Class 12 Bengali Chapter 2 অন্নদার আত্মপরিচয় | Class 12 Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board HS 2nd Year Bengali Chapter 2 অন্নদার আত্মপরিচয় Notes and select needs one.

Class 12 Bengali Chapter 2 অন্নদার আত্মপরিচয়

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Bengali Chapter 2 অন্নদার আত্মপরিচয় Solutions for All Subject, You can practice these here.

অন্নদার আত্মপরিচয় – ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর

Chapter 2

বাংলা (MIL)

গোট : ১ নির্বাচিত পদ্যাংশ

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ

( ক ) অন্নদার আত্মপরিচয় কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্গত ? 

উত্তরঃ অন্নদার আত্মপরিচয় কবিতাটি কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর “ অন্নদামঙ্গল ’ কাব্যের অন্তর্গত

( খ ) ‘ পাটুনীর বাক্যে মাতা হাসিয়া অন্তরে ’ – মাতার পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ এখানে মাতা হলেন দেবী অন্নপূর্ণা । 

( গ ) ‘ জীবন স্বরূপা সে স্বামীর শিরোমণি ’ – এখানে ‘ জীবন স্বরূপা ‘ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ এখানে জীবন স্বরূপা বলতে জলের দেবী গঙ্গাকে বোঝানো হয়েছে। 

( ঘ ) সেঁউতী বলতে কী বোজ ? 

উত্তরঃ নৌকার জমা জল ছেঁচে ফেলার জন্য কাঠের চারকোনা বিশিষ্ট পাত্রকে সেঁউতী বলা হয় ।

( ঙ ) ‘ পঞ্চমুখ ’ শব্দের দ্ব্যর্থবোধক দিক নির্দেশ করো । 

উত্তরঃ শব্দটি একটি বাংলা বাগধারা । এক অর্থে দুবাক্যে অত্যন্ত মুখর আর অপর অর্থে মহাদেব । মহাদেবের পাঁচখানি মুখ আছে তাই তার অপর নাম পঞ্চানন । 

( চ ) ‘ না মরে পাষাণ বাপ ’ পাষাণ বাপটি কে ? 

উত্তরঃ এখানে পাষাণ বাপ বলতে পর্বতরাজ হিমালয়কে বোঝানো হয়েছে। 

২। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) ‘ অভিমানে সমুদ্রেতে ঝাঁপ দিলা ভাই – বক্তার ভাই কে ? তার সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার পৌরাণিক প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে বলো ৷ 

উত্তরঃ হিমালয় পর্বতের একটি শাখা মৈনাক পর্বত । সেই দিক থেকে বক্তার ভাই বলতে ভগবতী দেবীর ভাই মৈনাক পর্বত । 

সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার পৌরাণিক প্রসঙ্গটি হ’ল – আপাত অর্থে দেবী ভগবতীর ভাই মৈনাক সমুদ্রে ঝাপ দিয়েছেন দুঃখে , কারণ তার প্রিয় ভগিনীকে এমন কুপাত্রে দান করা হয়েছে । প্রকৃত অর্থে পুরাণে কথিত আছে পূর্বে নাকি পর্বতসমূহের পাখা ছিল । তারা ইচ্ছামত সর্বত্র উড়ে যেতে পারত । যেখানে দিয়ে উড়ে পড়ত , সেখানের অধিবাসীদের ক্ষয় ক্ষতি হত । তখন দেবরাজ ক্রুদ্ধ হয়ে বজ্র দ্বারা এই পর্বতদের পক্ষচ্ছেদ করতে থাকেন । যাতে মৈনাক পর্বত দেবরাজের ভয়ে উড়ে গিয়ে সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হল । ভগবতী এখানে এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন । 

( খ ) ‘ সিদ্ধিতে নিপুণ ’ – সিদ্ধি কথাটির দুইটি অর্থ কী কী ? 

উত্তরঃ সিদ্ধিতে নিপুণ – প্রথম অর্থ – ভাঙ নামক উদ্ভিদ যা মাদক কেউ গাঁজাকেও সিদ্ধি বলে । 

দ্বিতীয় – অনিমা লাখিমা ব্যাপ্তি , প্রাকাশ্য , মহিমা , ঈশিতা , বশিতা , কামবশায়িতা এই অষ্টসিদ্ধি যাঁর করায়ত্ত সেই মহাদেব । 

( গ ) ‘ কু কথায় পড়মুখ কণ্ঠভরা বিষ 

         কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ । 

        — উদ্ধৃত পংক্তিদ্বয়ে দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় যে কথা বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে বলো । 

উত্তরঃ ‘ কু ’ শব্দের অর্থ হল খারাপ এবং অন্য অর্থ পৃথিবী । আর দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ কলহ আবার অন্য অর্থ মিলন ।

উদ্ধৃত পংক্তিদ্বয়ে দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় বলা হয়েছে যে দেবী অন্নপূর্ণা তাঁর স্বামী গুনহীন খারাপ পুরুষ । তিনি অত্যন্ত মন্দ ভাষায় কথা বলেন তই দেবী অন্নপূর্ণার সঙ্গে স্বামীর কলহ হয় । অন্যদিকে অর্থ হল – দেবী অন্নপূর্ণার স্বামী দেবাদিদেব মহাদেব । পৃথিবীর ভালো – মন্দ সমস্ত আলোচনায় তার পাঁচটি মুখ সর্বদা ব্যস্ত থাকে । দেবী অন্নপূর্ণার সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছেদ্য মিলন ।

( ঘ ) ‘ ঈশ্বরীরে জিজ্ঞাসিল ঈশ্বরী পাটনী ’ – এখানে বর্ণিত উল্লিখিত দুই ঈশ্বরীর পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ প্রথম ঈশ্বরী হচ্ছেন মহাদেবের পত্নী দেবী অন্নপূর্ণা ভগবতী । দ্বিতীয় ঈশ্বরী হচ্ছে ঈশ্বরী পাটুনী । যিনি গঙ্গা নদী পারাপার করায় । মাঝি রমনীর নাম । 

( ঙ ) ‘ কোন গুন নাহি তার কপালে আগুন ’ – কে কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ দেবী অন্নপূর্ণা দেবাদিদেব মহাদেব সম্পর্কে এই কথা বলেছেন ৷ 

স্বত্ত রজঃ তম , এই তিনগুনের অতীত মহাদেব , আর সেই দিক থেকে তাঁর কোনো গুণ নেই । অন্যদিকে মহাদেবের কপালে তৃতীয় নয়ন জাজ্বল্যমান । আর এই অগ্নিস্বরূপ তৃতীয় নয়নকেই দেবী কপালের আগুন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন । 

৩। দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) দেবী অন্নদা হরিহোড়ের গৃহ ত্যাগ করলেন কেন ? তিনি হরিহোড়ের গৃহ ত্যাগ করে কোথায় যাচ্ছেন ? 

উত্তরঃ দেবী অন্নপূর্ণা নিজ মাহাত্ম্য প্রচার করার জন্য স্বর্গের বসুন্ধরকে মর্ত্যে প্রেরণ করেন । এই বসুন্ধরই মর্ত্যে হরিহোড় নাম নিয়ে দরিদ্র পিতা বিষ্ণুহোড় ও মাতা পদ্মিনীদেবীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেন । হরিহোড় ছিলেন ধর্মপরায়ণ । দেবী অন্নপূর্ণা ছল করে একরার হরিহোড়ের গৃহে এসে আশ্রয় নেন এবং হরিহোড়ের সংসারের দুঃখ দারিদ্র ধীরে ধীরে দূর হয় । দেবী অন্নপূর্ণা সেই থেকে বড়গাছি গ্রামে হরিহোড়েও গৃহেই বাস করতে থাকেন । কিন্তু হরিহোড়ের বাড়িতে নিত্য কলহ – বিবাদ হত , এজন্য দেবী অন্নপূর্ণা হরিহোড়ের গৃহ ত্যাগ করে ভবানন্দ মজুমদারের বাড়িতে বাস করতে যাচ্ছেন । 

( খ ) ইহাতে বুঝিনু তুমি দেবতা নিশ্চয় ’ – কে কাকে এই কথা বলেছিল সে কিভাবে বুঝল যে উদ্দীষ্ট ব্যক্তি নিশ্চয় দেবতা ? 

উত্তরঃ গাঙ্গিনী নদীর মাঝি ঈশ্বরী পাটুনী দেব অন্নপূর্ণাকে এই কথা বলেছিল । 

গাঙ্গিনী নদী পার হওয়ার সময় দেবী ঈশ্বরী পাটুনীকে তাঁর নিজের প্রকৃত পরিচয় দেননি । কিন্তু দেবীর পায়ের ছোঁয়ায় নৌকার কাঠের সেঁউতি সোনায় পরিণত হয় । কাঠের সেঁউতি সোনা পরিণত হওয়া আশ্চর্য্য ঘটনাটি দেখেই ঈশ্বরী পাটুনী বুঝতে পারে যে উদ্দীষ্ট ব্যক্তি নিশ্চয় কোনো দেবতা । তাই দেবীকে অবতরণ করে পাটুনী দেবীর প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে এবং দেবীর কাছে মিনতি করে । অবশেষে দেবী পাটুনীকে দেখা দিয়ে পাটুনীকে ধন্য করেছেন । 

( গ ) ‘ অন্নদার আত্মপরিচয় ’ পাঠটিতে তৎকালীন সমাজের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো । 

উত্তরঃ ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যে অষ্টাদশ শতাব্দীর সমাজ জীবনের ছাপ গভীর ভাবে পড়েছে । তৎকালীন রাষ্ট্রিক জীবনের নানা ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন । জমিদারী ব্যাপারে তার পিতার সঙ্গে বর্দ্ধমানের মহারাজার বিরোধ এবং পরিনামে তাঁর পিতার পরাজয় ও দুর্দশা , পরবর্তীকালে বৈষয়িক ব্যাপারে বর্দ্ধমানে তার উপস্থিতি ও কারাবরণ , কারারক্ষীর সহৃদয়তা সেখান থেকে মুক্তি ও উড়িষ্যায় পলায়ন এই সমস্ত নার তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁর কাব্যে নানা ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । আর তাছাড়া তিনি যে রাজার আশ্রিত কবি ছিলেন সেই কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্থান পতনের সঙ্গে জড়িত একজন প্রধান পুরুষ । তিনিও দুবার মুর্শিদাবাদের কারাগারে বন্দী হয়েছিলেন একবার নবাব অলীবর্দী খাঁর আমলে আর একবার নবাব মীরকাশিমের আমলে । ফলে ব্যক্তিগতভাবে এবং কৃষ্ণচন্দ্রের আশ্রিত কবি হিসাবে ভারতচন্দ্রের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল ব্যাপক ও গভীর । 

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এই সুখী জীবনের পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের শোচনীয় জীবন কাহিনিও চিত্রিত হয়েছে । ভারতচন্দ্রের কাব্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে পর্যুদস্ত ও হতদরিদ্র মানুষের জীবন ছবি দেখতে পাওয়া যায় । দরিদ্র মানুষকে কি দুঃসহ দক্ষানলে দগ্ধ হতে হয় পরিচয় আমরা পাই হরিহোড়ের জীবন কাহিনিতে । 

দরিদ্র মানুষের কাছে অন্ন চিন্তাই এক মাত্র চিন্তা । তাই খেয়া পারাপারকারী ঈশ্বরী পাটনী অন্নদার কাছ থেকে বর প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেছে “ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে । ” সেই অরাজক বিশৃঙ্খলতার যুগে দরিদ্র মানুষের প্রাণের আকাঙ্খাটুকু যেন ব্যক্ত হয়েছে ঈশ্বরী পাটনীর মধ্য দিয়ে । দরিদ্র মানুষের দুঃখ জ্বালা অনাহার উপবাসের মর্মন্তুদ ছবি দেখেছিলেন বলেই হয়তো কবি আরাধ্য দেবী হিসাবে বরণ করে নিয়েছিলেন অন্নদাত্রী অন্নপূর্ণাকে । 

সমাজে যে বাল্য বিবাহ , বহু বিবাহ ও সতীন সমস্যা বিদ্যমান ছিল অন্নদামঙ্গল কাব্যে তারছবি আছে । হরিহোড় বিমটি কুলীন কন্যা বিবাহ করার পরও সোহাগীকে বিবাহ করেছিল চতুর্থ পত্নী হিসাবে । সতীনী নারীরা একে অপরকে প্রবল ভাবে ঈর্ষা করত বলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসত অশান্তির কালো মেঘ । দেবী অন্নদা কৌতুকচ্ছলে আত্মপরিচয় প্রদান কালে ঈশ্বরী পাটনীকে যে কথা বলেছিল তার মধ্যে দিয়ে বাঙালি সমাজ জীবনে সতীন সমস্যায় জর্জরিত নারী হৃদয়ের ঈর্ষাক্ষত দিকটি উদঘাটিত হয়েছে ।

বহু পত্নীক স্বামীর গৃহ থেকে ক্রোধ বা অভিমান করে অনেক স্ত্রীলোকেই পিত্রালয়ে বা আত্মীয়গৃহে চলে যেতেন । অবশ্য অভিজাত মহিলাকে তখনকার সমাজে সম্মান জানিয়ে কথা বলত । তাই ঈশ্বরী পাটনীও দেবীকে সেঁউতির উপর তার রাঙা চরণ রাখতে বলেছিল । তখনকার সমাজে মানুষের মনে ধর্মভাব ও দেবদেবীতে ভক্তি ও বিশ্বাস ছিল প্রবল, তাই কাঠের সেঁউতি সোনা হয়ে যাওয়া , ঈশ্বরীকে দেবী দর্শন দিলেন এগুলো লোকে বিশ্বাস করেছে । সর্বশেষ সেই ছবিটি বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে তা হল মাতৃস্নেহ ৷ একজন মায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ কামনা সন্তানের মঙ্গলকামনা । তাই ঈশ্বরী পাটনী ও দেবীর কাছে কামনা হিসাবে সন্তানের দুধ – ভাতের কামনাই করেছে । 

( ঘ ) ঈশ্বরী পাটুনীর চরিত্র সৃষ্টিতে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর কতদূর সার্থক হয়েছেন তা এই চরিত্রটি বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দাও ৷ 

উত্তরঃ ‘ অন্নদার আত্মপরিচয় ’ কবিতাটিতে দেবতা ও সাধারণ দুই ধরণের চরিত্র উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে । দেবী চরিত্র হচ্ছেন দেবী অন্নদা এবং ঈশ্বরী পাটুনী চরিত্রটি স্নিগ্ধ সরলতায় ভরা । তবে অশিক্ষিত হলেও চরিত্রটির নীতিজ্ঞান প্রবল ছিল তা আমরা দেখতে পাই কবিতাটিতে । স্ত্রীলোকের পক্ষে ঘাটে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত নয় বুঝে পাটুনী নৌকাটি তাড়াতাড়ি ঘাটে নিয়ে এল । আবার ঘাটে এসে যুবতী রমনীকে একা দেখে তাঁকে পার করতে তাঁর মন চায়নি । এখন আবার কোনো অপরিচিতকে নদী পার করা আইন বিরুদ্ধ ছিল । পাটুনীর ন্যায় নিষ্ঠা তাকে কি সামাজিক কি রাষ্ট্রীয় কোনও আইনই অমান্য করতে দেয়নি । পরে তার পরিচয় নিয়ে তবে সে তাঁকে পার করে । 

নৌকা পার করার সময় ঈশ্বরী পাটুনীর জীবনের স্বাভাবিকতা ও কর্তব্যপরায়নার কিছু পরিচয় পাওয়া যায় ৷ পাটুনী অন্নদার কাছে থেকে নৌকা পার করবার পারিশ্রমিক আগে থেকেই ঠিক করে , ভাড়া শুনে তবেই সে অন্নদাকে নৌকায় তুলেছে । এরপর ঈশ্বরী দেবীকে সম্মান প্রদর্শন করে সেউতির উপরে দেবীর পা রাখতে বলেছিল । এখানে চরিত্রটি কর্তব্যপরায়নকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায় । 

এমনটী দেবীর পারিবারিক ব্যাপারেও ঈশ্বরী কোনোরকম কৌতুহল প্রকাশ করেনি । দেবীর পরিচয় পেয়ে সে যতটুকু বুঝেছিল তাতেই সে সন্তুষ্ট ছিল , কোনরূপ আলোচনায় স্পৃহা তার মধ্যে দেখা যায়নি । শুধু এইটুকুই সে দেবীকে বলেছে যে ‘ যেখানে কুলীন জাতি সেখানে  কোন্দল’। এরপর যখন সেঁউতি সোনা হয়ে গেল , এখনও ঈশ্বরীর চরিত্রে ভক্তিভাবই প্রদর্শিত হতে দেখা গেল । অশ্রুপূর্ণ নয়নে তাঁকে বলেছে – 

‘ তপ জপ নাহি জানি ধ্যান জ্ঞান আর 

তবে যে দিয়াছো দেখা দয়া সে তোমার । ‘ 

এরপর ঈশ্বরী মুগ্ধ হয়ে দেবীকে দর্শন করে । দেবী আসল পরিচয় পেয়ে এবং দেবী যখন তাকে জিজ্ঞেস করে বর চাইতে এখনও সে স্বার্থত্যাগ করে মাতৃহৃদয়ের পরিচয় দিয়েছে । ঈশ্বরী শুধুমাত্র বলেছে – ‘ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে ’ সোনা দানা সম্পত্তি আরও অনেক কিছুই সে চাইতে পারত , কিন্তু মাতৃহৃদয়ের আহুতি সর্বদা সন্তানের মঙ্গলের জন্য , সন্তানের সমৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য । তাই ঈশ্বরী দেবীর থেকে এই আশীর্বাদই চাইল । এরমধ্যে দিয়ে চরিত্রটির অমায়কিতা , স্বার্থশূন্যতা ও ভদ্রতার পরিচয় ফুটে উঠে । 

৫। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো :

( ক ) ‘ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে – ভাতে । ‘ 

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি কবি ভারতচন্দ্র রায়ের ‘ অন্নদার আত্মপরিচয় ’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে । 

দেবী অন্নপূর্ণা গাঙ্গিনী নদী পার হয়েছেন ঈশ্বরী পাটুনীর নৌকাতে । পাটুনীর ব্যবহারে দেবী মুগ্ধ হয়েছেন । দেবী তার কাছে নিজের পরিচয় লুকিয়েছিলেন কিন্তু ঈশ্বরী তার সততা ও ভক্তির গুণে বুঝতে পারে অন্নদা দেবী । কিন্তু ঈশ্বরীর কোনো লোভ ছিল না , তাই দেবীর আসল পরিচয় জেনেও সে কিছু চায়নি । দেবী মুগ্ধ হয়ে তাকে বর দিতে চাইলেন । কিন্তু নির্লোভ পাটুনী দেবীর কাছে সন্তানের জন্য সামান্য স্বাচ্ছল্য চাইলেন । পাটুনী ধনরত্ন মহামূল্য সম্পদ অনেক কিছুই চাইতে পারতেন , কিন্তু সরলতা অমায়িকতা ও সৎচিন্তার অধিকারী ঈশ্বরী তার সন্তানের জন্য স্বচ্ছলতা স্বরূপ সামান্য দুধ – ভাত চেয়েছেন । অর্থাৎ ঈশ্বরী চেয়েছে তার সন্তান যেন দুধে – ভাতে থাকে । অন্নের অভাবে যেন কষ্ট না পায় ৷ ভাতের অভাবই সবথেকে বড় অভাব এই অভাব না থাকলে জীবনের তো আর কোনো কষ্টই থাকে না । তাই সে দেবীর কাছে এই প্রার্থনাই করেছে ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর

১। কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর কবে , কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ? 

উত্তরঃ ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার পেঁড়ো গ্রামে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর জন্মগ্রহণ করেন । 

২। ‘ অন্নদার আত্মপরিচয় ’ কোন যুগের , কোন কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

উত্তরঃ অন্নদার আত্মপরিচয় মধ্যযুগের ‘ অন্নদামঙ্গল ’ কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে । 

৩। দেবী অন্নপূর্ণা কোন নদী পার হয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ গঙ্গিনী নদী পার হয়েছিলেন দেবী অন্নপূর্ণা । 

৪। অন্নপূর্ণা দেবীর অপর নাম কী ? 

উত্তরঃ দেবী দূর্গা । 

৫। ঈশ্বরী পাটুনী কেন দেবীর পরিচয় জানতে চাইল ? 

উত্তরঃ ঈশ্বরী পাটুনী দেবীর পরিচয় জানতে চাইল , কারণ , একাকী কূলবধূ নদী পার হতে চয়েছে । 

৬। দেবী অন্নপূর্ণা কোন ভাষায় নিজের পরিচয় দিয়েছেন ? 

উত্তরঃ দেবী অন্নপূর্ণা দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় নিজের পরিচয় দিলেন । 

৭। কোন তিথিতে দেবী অন্নপূর্ণার পূজা হয় ? 

উত্তরঃ চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে দেবী অন্নপূর্ণার পূজা হয় । 

৮। ঈশ্বরী পাটুনী দেবীর কাছে কি বর চায় ? 

উত্তরঃ ঈশ্বরী পাটুনী দেবীর কাছে বর চায় এই বলে যে , তার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে । 

৯। ‘ বিশেষণে সবিশেষ কহিবারে পারি ’ – বলতে কি বুঝিয়েছে ? 

উত্তরঃ প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হিন্দু স্ত্রী স্বামীর নাম উচ্চারণ করেন না । অথচ স্বামীর সম্পূর্ণ পরিচয় দিতে হবে , তাই দেবী অন্নপূর্ণা স্বামীর ভালো – মন্দ সম্পূর্ণ পরিচয় দেওয়ার জন্য বিশেষণের মধ্যম গ্রহণ করতে চেয়েছেন । 

১০। “ ঈশ্বরীরে পরিচয় কহেন ঈশ্বরী ’ – দুজন ঈশ্বরী কে ? 

উত্তরঃ প্রথম ঈশ্বরী হলেন ঈশ্বরী পাটুনী গাঙ্গিনী নদীর খেয়া পারাবার মাঝি । তার দ্বিতীয় ঈশ্বরী হলেন দেবী অন্নপূর্ণা । 

১১। “ এ মেয়ে ত মেয়ে নয় দেবতা নিশ্চয় ’ – কে একথা বলেছে ? সে মেয়ে বলতে কি বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ এ কথা ঈশ্বরী পাটুনী তার নিজের মনে মনে বলেছে । দেবী অন্নপূর্ণাকে ঈশ্বরী পাটুনী সম্ভ্রান্ত বংশের কুলীন বধূ বলেই মনে করেছেন , কিন্তু নৌকার সেঁউতিতে দেবীর চরণ স্পর্শ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সোনায় পরিণত হয় । এই দেখে পাটুনী উক্ত কথাটি মনে করেন যে এই মেয়ে কোনো সাধারণ মেয়ে নয় , তিনি আসলে দেবতা । 

১২। তীরে উত্তরিল তরি তারা উত্তরিলা ’ – এখানে উত্তরিল এবং উত্তরিলা শব্দ দুটির অর্থ কী ? 

উত্তরঃ প্রথম উত্তরিল শব্দটি একটি ক্রিয়াপদ , যার কর্তা তরী অর্থাৎ তরি তীরে বা পারে লাগল । আর দ্বিতীয় উত্তরিলা ক্রিয়াপদটির কর্তা তারা । অর্থাৎ তারা নৌকা থেকে নামলেন । 

শব্দার্থ : 

ত্বরায় – শীঘ্র।

কোকনদ – পদ্ম , কমল। 

অহর্নিশ – দিনৰাত।

অষ্টাপদ – সোনা।

দ্বন্দ্ব – কলহ , বিবাদ।

বন্দ্যবংশ – বন্দ্যোপাধ্যায় বংশ , বন্দী বংশ বা দেবতা ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top