Class 12 Bengali Chapter 18 কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা – ড° কাবেরী সাহা

Class 12 Bengali Chapter 18 কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা – ড° কাবেরী সাহা | Class 12 Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board HS 2nd Year Bengali Chapter 18 কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা Notes and select needs one.

Class 12 Bengali Chapter 18 কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 12 Bengali Chapter 18 কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা Solutions for All Subject, You can practice these here.

মূল্যবোধ শিক্ষা – ড° সুজিত বর্ধন

Chapter: 18

বাংলা (MIL)

তৃতীয় গোট

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা পাঠটির লেখক কে ? 

উত্তরঃ কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা পাঠটির লেখিকা ড° কাবেরী সাহা । 

( খ ) কৈশোরকাল কোন শব্দ থেকে উদ্ভুত ? 

উত্তরঃ কৈশোরকাল অর্থাৎ যৌবনকাল Adolescence শব্দটি ল্যাটিন Adolesure শব্দ থেকে উদ্ভুত । 

( গ ) কৈশোরকাল শিশু বিকাশের কোন স্তর ? 

উত্তরঃ কৈশোরকাল শিশু বিকাশের তৃতীয় স্তর । 

( ঘ ) কত সালে ভারত সরকার জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষাকে নতুন করে সাজাবার জন্য সুপারি করেছিল ? 

উত্তরঃ ১৯৮৬ সালে ভারত সরকার জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষাকে নতুন করে সাজাবার জন্য সুপারিশ করেছিল । 

( ঙ ) আন্তঃরাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ কোন শিক্ষাকে ‘ জীবনের সন্ধিক্ষণ ’ বলে অভিহিত করেছে ? 

উত্তরঃ আন্তঃরাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ মাধ্যমিক শিক্ষাকে জীবনের সন্ধিক্ষণ বলে অবিহিত করেছে। 

২। সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) রুশো শিশু বিকাশের ধারাকে কয়টি ভাগে ভাগ করেছিলেন ? সেগুলো কী কী ? 

উত্তরঃ শিশু বিকাশের ধারাকে রুশো চারটি ভাগে ভাগ করেছিলেন –

( ১ ) শৈশবকাল ( জন্ম থেকে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত ) 

( ২ ) বাল্যকাল ( পাঁচ থেকে বারো বৎসর পর্যন্ত ) 

( ৩ ) যৌবনকাল ( বারো থেকে আঠারো বৎসর পর্যন্ত ) 

( ৪ ) যৌবনোত্তর কাল ( আঠারো বৎসরের পর ) 

( খ ) স্ট্যানলি হল কৈশোর কালকে জীবনের জটিলতম এবং সংকটপূর্ণ সময় বলে মনে করেন কেন ? 

উত্তরঃ কৈশোরকাল হল শিশু বিকাশের তৃতীয় স্তর । এই স্তরে শিশুর আচার আচরণের পরিবর্তন ঘটে । তারা কখনো শিশুদের মতো আচরণ করে কখনো বা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো । এই সময় কৈশোরের জগতে শৈশবের কল্পনা আবার প্রাপ্ত বয়স্কদের বাস্তব এই দুইই অনূভূত হয় । এই জন্য স্ট্যানলি হল কৈশোকালকে জীবনের জটিলতম এবং সংকটপূর্ণ সময় বলে মনে করেন । 

( গ ) মনোবিজ্ঞানীরা কৈশোরকালের সময়সীমা কীভাবে ভাগ করেছেন ? 

উত্তরঃ মনোবিজ্ঞানীরা কৈশোকালের সময়সমীয়া ভাগ করেছেন এগারো- বারো বৎসর থেকে আঠারো উনিশ বৎসর বয়স পর্যন্ত । কিন্তু কখনো এর ব্যতিক্রমও দেখা যায় । কারণ , লিঙ্গভেদ , জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে । এইসব কারণে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের , শীতের দেশের শিশুদের থেকে গরম জলবায়ু দেশের শিশুদের পরিবর্তন আগে ঘটে । 

৩। দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) কৈশোরকালের যে কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ মানুষের জীবনের বারো থেকে আঠারো বৎসর পর্যন্ত সময়সীমাকে কৈশোরকাল বলা হয় । এই বয়সের দুটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল – 

( ১ ) শারীরিক বিকাশ :- কৈশোর কালের শারীরিক বিকাশ লক্ষণীয় বিষয় । এই সময় শরীরের নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে । তাদের দেহের আকার , ওজন , দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি , গলার স্বরের পরিবর্তনের সঙ্গে নারী পুরুষের দেহ গঠনের পার্থক্য দেখা যায় । প্রজনন ক্ষমতার প্রাপ্তি কিশোর কালের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য । এই সমস্ত অভাবনীয় পরিবর্তন কিশোর – কিশোরীদের মনে আত্মচেতনার ভাব জাগ্রত করে । যার ফলে তাদের মনে অহেতুক লজ্জা , ভয় বা উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয় । বিপরীত লিঙ্গকামিতা কৈশোরকালের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য । ফ্রয়েডের মতে যৌন চেতনা বয়ঃসন্ধির মূল প্রেরণা । আসলে এই সময় দেহের অন্তঃস্রাবী গ্রন্থিগুলির নিঃসরণ হয় । ফলে দেহের মধ্যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তন দেখা দেয় । এই প্রক্রিয়ার ফলে কিশোর – কিশোরী অফুরন্ত যৌবনের অধিকারী হয়ে ওঠে । এই সময় তাদের সুপথে পরিচালিত করতে পারলে কৈশোর কালে দেখা দেওয়া বহু সমস্যার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে । 

( ২ ) বৈদ্ধিক বিকাশ :- শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কৈশোর অবস্থায় দ্রুত মানসিক বিকাশ ঘটে । মস্তিষ্কের গঠন প্রক্রিয়া পূর্ণতা পাওয়ার ফলে উচ্চস্তরীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক শিক্ষালাভের জন্য তারা উপযুক্ত হয়ে ওঠে । বিমূর্ত চিন্তা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এইকালে কিশোর – কিশোরীদের বিশ্লেষণাত্মক এবং সংশ্লেষণাত্মক শক্তির পূর্ণ বিকাশ ঘটে । এর ফলে তারা স্বাধীন ও মৌলিক চিন্তাধারার শক্তি অর্জন করে । 

( খ ) জীবনের কোন সময়কে কৈশোরকাল বলা হয় ? এই বয়সের সময়সীমা উল্লেখ করে বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো ? 

উত্তরঃ মানুষের জীবনের বাল্যকাল এবং যৌবনোত্তর কাল এর মধ্যবর্তী সময়কে কৈশোর কাল বলে । মানুষের জীবনের কৈশোরকালের সময়সীমা হল ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত । এই বয়সে মানুষের বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । এই বয়সের বৈশিষ্ট্যগুলো হ’ল –

শারীরিক বিকাশ :- কৈশোর কালের শারীরিক বিকাশ লক্ষণীয় বিষয়।এইসময় শরীরের নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে । এই সময় দেহের আকার , ওজন , দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি গলার স্বরের পরিবর্তনের সঙ্গে নারী পুরুষের দেহ গঠনের পার্থক্য দেখা যায় । প্রজনন ক্ষমতার প্রাপ্তি কিশোর কালের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য । এই সমস্ত পরিবর্তন কিশোর – কিশোরীদের মনে আত্মচেতনার ভাব জাগ্রত করে । যার ফলে মনে অহেতুকে লজ্জা , ভয় বা উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয় । বিপরীত লিঙ্গকামিকা কৈশোরকালের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য । 

আবেগিক বিকাশ :- দেহের আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে কিশোর – কিশোরীর মনোজগতে এক বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয় । আবেগের প্রবলতার ফলে কিশোর – কিশোরীরা অনেক সময় অতি আশাবাদী বা নিরাশাবাদী হয়ে পড়ে । অনেকের মধ্যে একাকীত্বের ভাব লক্ষ্য করা যায় বা অনেকে বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন হয়ে ওঠে । ফলে এই সময় নানা জটিলতার সন্মুখীন হতেও দেখা যায় । 

বৌদ্ধিক বিকাশ :- শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কৈশোর অবস্থায় দ্রুত মানসিক বিকাশ ঘটে । মস্তিষ্কের গঠন প্রক্রিয়া পূর্ণতা পাওয়ার ফলে উচ্চস্তরীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক শিক্ষালাভের জন্য তারা উপযুক্ত হয়ে উঠে । এইকালে কিশোর – কিশোরীদের বিশ্লেষণাত্মক এবং সংশ্লেষণাত্মক -শক্তির পূর্ণ বিকাশ ঘটে । 

সামাজিক বিকাশ :- কৈশোর কালে সামাজিক বিকাশ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । সমবয়সীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভাব গড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম হয় প্রতিযোগিতার মনোভাব । চাল – চলন , পোষাক – পরিচ্ছদ , বাকভঙ্গী ধ্যান – ধারণা , বিভিন্ন মতাদর্শের ক্ষেত্রে এই বয়সে কিশোর , কিশোরীর মধ্যে এক স্বাতন্ত্র্য লক্ষ্য করা যায় । 

নৈতিক বিকাশ :- কৈশোরকালে মানুষের মধ্যে ন্যায় – অন্যায় সত্য – অসত্যের বিচার ক্ষমতা গড়ে উঠে । ধর্মের প্রতি , দর্শনের প্রতি বা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রতি জিজ্ঞাসা জাগ্রত হবার ফলে মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে । অনেক সময় প্রচলিত আদর্শ ত্যাগ করে বিবেচনা অনুসারে নৈতিকতা সমৃদ্ধ নতুন সমাজ গড়ার চেষ্টা করে । 

আত্মনির্ভরশীলতা , আত্মসন্মানবোধ ও নিজস্বতার সংঘাত :- কৈশোর অবস্থাতেই তারা হয়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল । অন্যের উপর নির্ভর না করে এই সময় নিজের শক্তি , সামর্থ্যে আস্থা রেখে নিজের কাজ করতে পছন্দ করে তারা । বাধা নিষেধের সম্মুখীন হলে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে । কৈশোর কালে আদর্শবাদের সঙ্গে বাস্তবতার সংঘতা ঘটে । এই সংঘাত তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি করে । বীর পূজার প্রবৃত্তি এই বয়সের একটি লক্ষ্য বলা যেতে পারে । যাকে ভালো লাগে তাকে জীবনের আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করার প্রবণতা এই বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে দেখা যায় ।

( গ ) কী ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা কৈশোরকালের উপযোগী ? উদাহরণ সহকারে বর্ণনা করো ? 

উত্তরঃ কৈশোর কালের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা হলো মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা । এই সময় শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯৫২-৫৩ ত সালে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল । সেগুলো হলো— 

( ১ ) দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক , সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা পুরণের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে গঢ়ে তোলা ।

( ২ ) ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের সুনাগরিক হিসাবে প্রয়োজনীয় গুণাবলি আয়ত্ত করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়তা করা । 

( ৩ ) জাতীয় সংহতির বিকাশ সাধন করা । 

ভারত সরকারে ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ সালে মাধ্যমিক শিক্ষাকে নতুন করে ঢেলে সাজাবার জন্য কিছু সুপারিশ করেছিল । এর মধ্যে প্রধান দুটো হলো – 

( ১ ) মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর একটি উপযুক্ত স্তর যেখানে ছেলে মেয়েদের কলা , বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের উপযোগিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান প্রদান করা সম্ভব , যার ফলে ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিভাগ বেছে নিতে পারে । 

( ২ ) এই স্তরেই , ছাত্র – ছাত্রীদের দেশের ইতিহাস , সংস্কৃতি ও জাতীয় সংহতি দেশের প্রতি দায়িত্ব , কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা যেতে পারে । 

রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষাকে বৃত্তিমুখী করবার জন্য ব্যবস্থা করে দেশের জনশক্তিকে অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়াস করতে বলা হয়েছে । এছাড়াও  আন্তঃরাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ ( ১৯৯৬ ) মাধ্যমিক শিক্ষাকে জীবনের সন্ধিক্ষণ বলে অভিহিত করেছে । কারণ এই স্তরেই ছাত্র – ছাত্রীরা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও কৌশল আয়ত্ব করে নিজ নিজ যোগ্যতা ও রুচি অনুযায়ী জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারে । কেননা শিক্ষাই হলো সমাজ পরিবর্তন করার এক শক্তিশালী মাধ্যম । 

এক কথায় বলা চলে , মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র – ছাত্রীদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে । এই স্তরে কোনো ধরনের বিশেষীকরণ পাঠ্যক্রম নেই । সেই জন্য নানা ধরনের সহপাঠ্য ক্রমিক বিষয়গুলি মধ্য দিয়ে কিশোর – কিশোরীদের পূর্ণাংগ বিকাশ অর্থাৎ শারীরিক , মানসিক , বৌদ্ধিক , সামাজিক , নৈতিক আবেগিক সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো সম্ভব । 

( ঘ ) “ আত্মনির্ভরশীলতা , আত্মসম্মানবোধ ও নিজস্বতার সংঘাত ” কৈশোরকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য –আলোচনা কর । 

উত্তরঃ কৈশোর অবস্থাতেই তারা হয়ে উঠে আত্মনির্ভরশীল । অন্যের উপর নির্ভর না করে । এই সময় নিজের শক্তি সামর্থ্যে আস্থা রেখে নিজের কাজ করতে পছন্দ করে । এই আত্মসন্মান বোধের প্রাবল্যে কোনো ধরনের কটু সমালোচনা ছেলে – মেয়েরা সহ্য করতে পারে না , বাধা নিষেধের সম্মুখীন হলে তার বিদ্রোহী হয়ে উঠে । এই স্তরে নিজস্বতার সংঘাতে ভুগতে দেখা যায় । এই সংঘাত এদের মনে জেগে উঠে বিপরীত ভাবাপন্ন অনুভূতির ফলে । কৈশোরকালে আদর্শবাদের সঙ্গে বাস্তবতার সংঘাত ঘটে এবং তার থেকে জন্ম হয় নিজস্বতার সংঘাত । সমাজ গঠনে এই ধরনের সংঘাত তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি করে। শক্তিশালী সংঘাতে সমাজের ভিত পরিবর্তন করে তারা নতুন সমাজ গঠনে সাহায্য করে । 

বীর পূজার প্রবৃত্তি এই বয়সের একটি লক্ষণ বলা যেতে পারে । যাকে ভালো লাগে তাকে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা এই বয়সের ছেলে – মেয়েদের মধ্যে দেখা যায় । 

শারীরিক , মানসিক বিকাশের বাইরেও আরো কিছু বৈশিষ্ট্য এই বয়সে দেখা যায় , যেমন দিবাস্বপ্ন ও অলীক কল্পনা । কাল্পনিক শক্তির অতি মাত্রায় বিকাশের ফলে তারা কল্পনার মোহজালে আবদ্ধ হয়ে বাস্তব জগতে থেকে সরে গিয়ে অবাস্তবের জগতে ভেসে বেড়ায় । তবে সৃষ্টিশীল কর্মের জন্যে কল্পনারও প্রয়োজন আছে । এই অবস্থায় অনেকের মনে ভ্রমণ ও দুঃসাহসিক কর্মের স্পৃহা জেগে উঠে । আবার অনেক বাড়ির অজ্ঞাতে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দৃষ্টান্ত দেওয়ারও দৃষ্টান্ত দেখা যায় । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। কৈশোরকালে কিশোর – কিশোরীদের মধ্যে কী ধরণের আচরণ লক্ষ্য করা যায় ? 

উত্তরঃ এই সময় কিশোর বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হয় । এই সময়ে তাদের আচরণ কখনো শিশুদের মতো । কখনও বা প্রাপ্তবয়স্কের মতো । 

২। কৈশোরকালে ষ্টেনলি হল কীরকম কাল বলে মনে করেন ? 

উত্তরঃ ষ্টেনলি হলের মতে কৈশোরকাল সময়টি জীবনের জটিলতম সংকটপূর্ণ সময় । 

৩। দিবা স্বপ্নের আর একটি নাম কি ? দিক স্বপ্নে ধনাত্মক না ঋণাত্মক দিক কোনটি প্রধান ? 

উত্তরঃ দিবা স্বপ্নের আর একটি নাম অলীক কল্পনা । দিবা স্বপ্নের একটি ধনাত্মক দিক থাকলেও তার ঋণাত্মক দিকটিই প্রধান ।

৪। দিবা স্বপ্নের ধনাত্মক দিকটি কি ? 

উত্তরঃ কিশোর – কিশোরর অফুরন্ত কল্পনা শক্তিকে সৃষ্টিশীল কার্যে প্রয়োগ করাকেই দিবা স্বপ্নের ধনাত্মক দিক বলা হয় । 

৫I শূন্যস্থান পূর্ণ করোঃ 

( ক ) কৈশোর হল শিশু বিকাশের ___স্তর । 

উত্তরঃ কৈশোর হল শিশু বিকাশের তৃতীয় স্তর । 

( খ ) শিশুর জগত ও প্রাপ্ত বয়স্কের জগতের সন্ধিক্ষণকে ___কাল বা কৈশোর কাল বলা হয়েছে । 

উত্তরঃ বয়ঃসন্ধিকাল ।

( গ ) বীর পজার ____ এই বয়সের একটি লক্ষণ বলা যেতে পারে ।

উত্তরঃ প্রবৃত্তি ।  

৬। মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য তিনটি কি কি ? 

উত্তরঃ মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য তিনটি হল – 

( ক ) দেশের সমসাময়িক , রাজনৈতিক , সামাজিক বা অর্থনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তোলা । 

( খ ) ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের সুনাগরিক হিসাবে প্রয়োজনীয় গুণাবলী আয়ও করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়তা করা । 

( গ ) জাতীয় সংহতির বিকাশ সাধন করা ।

৭। নিজস্বতার সংঘাত কি এবং কিভাবে তা সৃষ্টি হয় ? 

উত্তরঃ কিশোর – কিশোরীদের মনে বিপরীত মনোভাবাপন্ন অনুভূতির ফলে মনে সংঘাত আসে । নৈতিকতাবোধ , মূল্যবোধ , সামাজিক দায়বদ্ধতা ইত্যাদি আদর্শের সঙ্গে বাস্তব জগতের পার্থক্যের জন্য কিশোর – কিশোরী নিজের মনোভাবকে বিশদ ব্যাখ্যার দ্বারার বোঝার চেষ্টা করতে পারে না , এর ফলে আবেগ ও ঔদ্ধত্যের শিকার হয়ে কিশোর – কিশোরীদের নিজস্বতার সংঘাত হয় । 

৮। কৈশোর কালের জন্য প্রস্তুত করা মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে থাকা চারটি প্রধান প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয় কি কি ? 

উত্তরঃ কৈশোর কালের জন্য প্রস্তুত করা মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে সন্নিবিষ্ট করা চারটি প্রাথমিক ও মৌলিক বিষয় হল – 

( ১ ) ভাষাশিক্ষা ।

( ২ ) গণিত ।

( ৩ ) বিজ্ঞান ।

( ৪ ) সমাজ বিজ্ঞান । 

৯। কিশোর – কিশোরীদের মনে প্রতিযোগিতার মনোভাব কীভাবে গড়ে উঠে ? এর ফলে কী হয় ? 

উত্তরঃ কৈশোরকালে মানুষের নিজস্ব মতাদর্শ গড়ে উঠে ও নৈতিক ক্ষেত্রে তার প্রভাবও পড়ে । ধর্ম দর্শন বা জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি উৎকণ্ঠা জাগে এবং তার ফলেই মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি হতে পারে । কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবক বা সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির মতাদর্শ এড়িয়ে নিজস্ব যুক্তি বিচার বিবেচনার এক নতুন নৈতিকতা সমৃদ্ধ সমাজ সৃষ্টি করতে চায় কিশোরেরা । যৌবনের অফুরন্ত শক্তি যোগায় কৈশোর মনে এক সার্বজনীন বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের মনোভাব সৃষ্টি করে । সমাজ সচেতনার সঙ্গে গড়ে ওঠে নিঃস্বার্থ মনোভাব , যার ফলে কিশোরেরা নতুন সমাজ গড়তে ব্রতী হয় । ন্যায়ের জন্য লড়ার মনোভাবেই তাদের বিশ্বের অনেক সামাজিক বিপ্লবে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে । নৈতিকতার এই বিকাশেই সামাজিক দায়বদ্ধতা দেশপ্রেম বা বিশ্বপ্রেমের ভাবের উদয় করে কিশোর মনে । 

১০। জীবনের কোন সময়কালকে মনোবৈজ্ঞানিকেরা কৈশোরকাল বলে চিহ্নিত করেছেন ? এই কালের ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায় কেন ? 

উত্তরঃ এগারো বারো বৎসর থেকে আঠারো উনিশ বৎসর পর্যন্ত সময়কে মনোবিজ্ঞানীরা কৈশোর কাল বলেছেন । 

এই কালের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় নিঙ্গভেদে , ব্যক্তিভেদে বা জলবায়ু তারতম্য অনুসারে । উপরোক্ত কারণের ফলে ছেলেদের চাইতে মেয়েদের, শীতের দেশের শিশু থেকে গরম জলবায়ুর দেশের শিশুদের কৈশোর অবস্থা প্রাপ্তি আগে ঘটে । 

১১। কৈশোর কালে দৃষ্ট বৌদ্ধিক বিকাশ সম্বন্ধে লেখো । 

উত্তরঃ বৌদ্ধিক বিকাশ — শারিরীক বিকাশের সঙ্গে কৈশোর অবস্থায় দ্রুত মানসিক বিকাশ ঘটে । মস্তিষ্কের গঠন প্রক্রিয়া পূর্ণতা পাওয়ার ফলে উচ্চস্তরীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক শিক্ষা লাভের জন্য তারা উপযুক্ত হয়ে উঠে । বিমূর্ত চিন্তা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কালে কিশোর – কিশোরীদের বিশ্লেষণাত্মক এবং সংশ্লেষণাত্মক শক্তির পূর্ণ বিকাশ ঘটে । এর ফলে তার স্বাধীন ও মৌলিক চিন্তাধারার শক্তি অর্জন করে । 

১২। কত সনে ভারত সরকার শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য কিছু নতুন বিষয় সুপারিশ করেছিলেন ? সেগুলো কী কী সংক্ষেপে লেখো। 

উত্তরঃ ১৯৮৬ সালে ভারত সরকারে শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য কিছু নতুন বিষয় সুপারিশ করেছিলেন । সেগুলো হলো—

( ক ) মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর একটি উপযুক্ত স্তর যেখানে ছেলে মেয়েদের কলা , বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের উপযোগিতা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করা সম্ভব । যার ফলে ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিভাগ বেছে নিতে পারে । 

( খ ) এই স্তরের ছাত্র – ছাত্রীদের দেশের ইতিহাস , সংস্কৃতি ও জাতীয় সংহতি দেশের প্রতি দায়িত্ব , কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা যেতে পারে । 

১৩। কিশোর – কিশোরীদের শিক্ষাস্তর বিশেষীকরণ পাঠ্যক্রম না থাকার কারণ কী ? সংক্ষেপে লেখো । 

উত্তরঃ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র – ছাত্রীদের পূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে । এই স্তরে কোনো ধরনের বিশেষীকরণ পাঠ্যক্রম নেই । সেইজন্য নানা ধরনের সহপাঠ্যক্রমিক বিষয়গুলি মধ্য দিয়ে কিশোর – কিশোরীদের পূর্ণ বিকাশ অর্থাৎ শারীরিক , মানসিক বৌদ্ধিক , সামাজিক , নৈতিক আবেগিক , সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো সম্ভব । 

১৪। কৈশোর কাল ও তার উপযোগী শিক্ষা ‘ পাঠটি তোমাদের পাঠ্যক্রমে সন্নিবিষ্ট করা কতখানি যুক্তিযুক্ত বলে তুমি মনে করো , আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও । 

উত্তরঃ সমস্ত জীব জগতের বৃদ্ধি ও বিকাশ এক স্বতঃস্ফূর্ত অন্তহীন ধারা, মানব জীবন তার ব্যতিক্রম নয় । একটি শিশু বেড়ে ওঠে বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে । বাল্যকাল ও প্রাপ্ত বয়স্কের মাঝের সময় হলো কৈশোর কালের সময়সীমা । ব্যক্তি জীবনের জটিলতাপূর্ণ কৈশোর কালের কথা প্রসঙ্গে আলোচ্য কৈশোরকাল ও তার উপযোগী শিক্ষা ’ ― একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঠ । 

আলোচ্য পাঠটিতে কৈশোরকালকে ‘ বয়ঃসন্ধিকাল ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে । স্টেনলি হলের মতে এই সময়টি জীবনের একটি জটিলতম সময়।মনোবৈজ্ঞানিকেরা কৈশোর কালের যে সময়সীমা নির্ণয় করেছে তা ১১-১২ বছর ধরে ১৮-১৯ বছর পর্যন্ত । 

এই সময়সীমাতে কিশোরেরা এমন একটি পর্যায়ে থাকে যেখানে তারা না শিশু না প্রাপ্তবয়স্ক — কোনো দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না । ফলে একটি অদ্ভুত দোদুল্যমান মানসিকতায় তার ভোগে । এছাড়া এসময়ই তাদের শারীরিক , বৌদ্ধিক , আবেগিক নৈতিক ও সামাজিক বিকাশও লক্ষ্য করা যায় । 

বিশেষত শারীরিক ও আবেগিক বিকাশের ফলে এই সময়ের ছেলে – মেয়েরা বিভিন্ন বিমূর্ত চিন্তার অধিকারী হয় । অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি নিঃসরণ তাদের মানসিকভাবে বিভিন্ন পরিবর্তনের সম্মুখীন করে । 

এছাড়া এই কৈশোরকালেই সামাজিক ও নৈতিকভাবে তাদের সঠিক শিক্ষা দিতে পারলে তাদের বলিষ্ঠ চিন্তাধারা গড়ে তুলতে সহায় করে । 

কৈশোর কালের উপযোগী শিক্ষাকে ১৯৫২-৫৩ সালে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে । কারণ এই তিন স্তরে তাদের মানসিক বিকাশ হয় । 

কৈশোরকালেই Co – curricular activities সম্পর্কে কিশোরদের সঠিকভাবে অবহিত করতে পারলে তবেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক বলিষ্ঠ মেরুদণ্ড নিয়ে দেশ গঠন করতে পারবে । 

সুতরাং এই পাঠটি উচ্চতর মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে অন্তর্ভুক্ত করায় বর্তমান প্রজন্ম নিজের প্রতিভার বিকাশ ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব গঠন করতে সক্ষম হবে । 

১৫। কৈশোর কালের উপযোগী শিক্ষার সঙ্গে মূল্যবোধ শিক্ষা ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত । এই মন্তব্যের পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তিসহ আলোচনা করো । 

উত্তরঃ কৈশোরকালে মানুষের নিজস্ব মতাদর্শ গড়ে ওঠে ও নৈতিক ক্ষেত্রে তার প্রভাবও পড়ে । ধর্ম দর্শন বা জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি উৎকণ্ঠা জাগে এবং তার ফলেই মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে । কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবক বা সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির মতাদর্শ এড়িয়ে নিজস্ব যুক্তি , বিচার – বিবেচনার এক নতুন নৈতিকতা সমৃদ্ধ সমাজ সৃষ্টি করতে চায় কিশোরেরা , যৌবনের অফুরন্ত শক্তির জোয়ার কৈশোর মনে এক সার্বজনীন বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের মনোভাব সৃষ্টি করে । সমাজ সচেতনার সঙ্গে গড়ে ওঠে নিঃস্বার্থ মনোভাব , যার ফলে কিশোরেরা নতুন সমাজ গড়তে ব্রতী হয় । ন্যায়ের বিপ্লবে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করে । নৈতিকতার এই বিকাশই সামাজিক দায়বদ্ধতা দেশপ্রেম বা বিশ্বপ্রেমের ভাবের উদয় করে কিশোর মনে । 

শব্দার্থ : 

অভাবনীয় :- অপ্রত্যাশিত।

মনোবিজ্ঞান :- মনের প্রকৃতি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান।

দিবাস্বপ্ন :- অলীক কল্পনা।

পরানুভূতি :- অন্যের জন্য অনুভব বা আত্মত্যাগ করা।

জন্মলগ্ন :- জন্মানোর সময়।

দ্রুতগতি :- খুব তাড়াতাডি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top