Class 12 Advance Bengali Chapter 8 ভালবাসার অত্যাচার

Class 12 Advance Bengali Chapter 8 ভালবাসার অত্যাচার Question Answer | AHSEC Class 12 Advanced Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 12 Advance Bengali Chapter 8 ভালবাসার অত্যাচার Notes and select needs one.

Class 12 Advance Bengali Chapter 8 ভালবাসার অত্যাচার

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 12 Advance Bengali Chapter 8 ভালবাসার অত্যাচার Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 12 Advance Bengali Chapter 8 ভালবাসার অত্যাচার Solutions for All Subjects, You can practice these here.

ভালবাসার অত্যাচার

Chapter: 8

ADVANCE BENGALI

গদ্যাংশ

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘ভালবাসার অত্যাচার’ প্রবন্ধের রচয়িতা কে?

উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

প্রশ্ন ২। ‘ভালবাসার অত্যাচার’ প্রবন্ধ কোন্ গ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তরঃ ‘বিবিধ প্রবন্ধের’ অন্তর্গত।

প্রশ্ন ৩। “রাজার অত্যাচার নিবারণের উপায় বহুকাল উদ্ভুত হইয়াছে।” – ‘অত্যাচার’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ অত্যাচার শব্দের অর্থ উৎপীড়ন।

প্রশ্ন ৪। ‘স্নেহের যথার্থ স্বরূপ ______।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ অস্বার্থপরতা।

প্রশ্ন ৫। “নীতিজ্ঞেরা আমাদিগকে নিন্দা করেন”

‘নীতিজ্ঞ’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ নীতিবিদ।

প্রশ্ন ৬। প্রণয়ের অত্যাচার কীসের দ্বারা দূর করা যায়?

উত্তরঃ ভালবাসার দ্বারা।

প্রশ্ন ৭। “মনুষ্যজীবন _______ অত্যাচারে পরিপূর্ণ।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ ভালবাসার।

প্রশ্ন ৮। ‘ভালবাসার অত্যাচার’ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র কত প্রকার অত্যাচারের উল্লেখ করেছিলেন?

উত্তরঃ চার প্রকার।

প্রশ্ন ৯। “কৈকেয়ী আপনার কোন ইষ্ট কামনা করে নাই; আপনার পুত্রের শুভ কামনা করিয়াছিল।” – কৈকেয়ী কে ছিলেন?

উত্তরঃ রামায়ণে বর্ণিত রাজা দশরথের স্ত্রী।

প্রশ্ন ১০। ‘এ অত্যাচারে প্রবৃত্ত অত্যাচারী অনেক।’ – কোন্ অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ভালবাসার অত্যাচার।

প্রশ্ন ১১। জেরেমি বেন্থাম কোন মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন?

উত্তরঃ জেরেমি বেন্থাম হিতবাদের প্রবর্তক ছিলেন।

প্রশ্ন ১২। মনুষ্য জীবন কীসের অত্যাচারে পরিপূর্ণ?

উত্তরঃ ভালবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ।

প্রশ্ন ১৩। যে ভালবাসে সেই _____করে। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)

উত্তরঃ অত্যাচার।

প্রশ্ন ১৪। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, কোন্ প্রকার পীড়ন থেকে নিস্কৃতি নেই?

উত্তরঃ ধর্মের ও স্নেহের পীড়ন থেকে।

প্রশ্ন ১৫। “পরের অনিষ্ট না ঘটিলেই.ইহা স্বানুবৰ্ত্তিতা’’ – ‘স্বানুবর্ত্তিতা’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ স্বাধীনতা।

প্রশ্ন ১৬। “ধর্ম্মের যিনি যে ব্যাখ্যা করুন না, ধর্ম _____। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

উত্তরঃ এক।

প্রশ্ন ১৭। যে কর্মে পরের অনিষ্ট হয় তাকে কী বলে?

উত্তরঃ স্বেচ্ছাচারিতা।

প্রশ্ন ১৮। যে কর্মে পরের অনিষ্ট হয় না তাকে কী বলে?

উত্তরঃ স্বানুবর্ত্তিতা।

প্রশ্ন ১৯। ‘ধর্মত্যাগ’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘ধর্মত্যাগ’ শব্দের অর্থ হল নিজ ধর্ম ত্যাগ করা।

প্রশ্ন ২০। কারা অনন্ত জ্ঞান বিশিষ্ট?

উত্তরঃ কবিগণ।

প্রশ্ন ২১। ধর্মের অত্যাচার নিবারণ করে কোন শক্তি?

উত্তরঃ জ্ঞানশক্তি।

প্রশ্ন ২২। মানুষের জীবনে বাহুবলের প্রয়োজন কেন?

উত্তরঃ জড় পদার্থকে আয়ত্ত না করতে পারলে মনুষ্য জীবন নির্বাহ হয় না। এজন্য বাহুবলের প্রয়োজন।

প্রশ্ন ২৩। ‘হিতাহিত বেত্তাস্বরূপ’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ মঙ্গল ও অমঙ্গলের জ্ঞাতার মত।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “যে ভালবাসে, সেই অত্যাচার করে।”

– উদ্ধৃতিটি কোন রচনাংশে? লেখক কে?

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘ভালবাসার অত্যাচার’ রচনাংশের। লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধায়।

প্রশ্ন ২। ‘‘আমার মতের বিরুদ্ধে আপন মত প্রবল করিয়া তদানুসারে কার্য করায়, সেই অত্যাচারী।”

– উদ্ধৃতিটি কোন্ রচনার অন্তর্গত? লেখক কে?

উত্তরঃ ‘ভালবাসার অত্যাচার’ রচনার অন্তর্গত। লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধায়।

প্রশ্ন ৩। ‘মনুষ্য যে সকল অত্যাচারের অধীন, সে সকলের ভিত্তিমূল মনুষ্যের প্রয়োজনে।

– উদ্ধৃতিটি কোন্ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে? লেখক কে?

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘ভালবাসার অত্যাচার’ থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখক বঙ্কিমচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায়।

প্রশ্ন ৪। “দশরথ সত্য পালনার্থে রামকে বনে প্রেরণ করিয়া ভরতকে রাজ্যাভিষিক্ত করিলেন।”

– দশরথ কে ছিলেন? রাম ও ভরত দশরথের কে হন?

উত্তরঃ রামায়ণে বর্ণিত দশরথ ছিলেন অযোধ্যার রাজা। রাম ও ভরত দশরথের সন্তান হন।

প্রশ্ন ৫। ভালবাসার অত্যাচার কীরূপে হয়?

উত্তরঃ আমরা যদি কাউকে ভালবাসি তবে তার উপর নিজের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করি, তার নিজের ভালোবাসার কথা ভাবি না। এভাবে ভালোবাসার অত্যাচার হয়ে থাকে। পিতা, মাতা, ভাই, বন্ধু এদের দ্বারা এই অত্যাচার হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ৬। “এখানে দশরথ স্বার্থপরতা শূন্য নহেন।”

– উক্তিটি কোন রচনার অংশ? দশরথ কে ছিলেন?

উত্তরঃ উক্তিটি ‘ভালবাসার অত্যাচার’ রচনার অংশ। দশরথ ছিলেন অযোধ্যার রাজা।

প্রশ্ন ৭। “যদি সতী কুলবতী; কুচরিত্র পুরুষের কাছে ধর্মত্যাগে প্রতিশ্রুতা হয়, তবে সে সত্য কি পালনীয়?”

– উক্তিটি কোন্ পাঠ থেকে গৃহীত হয়েছে? ‘ধর্মত্যাগ’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ উক্তিটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ভালবাসার অত্যাচার’ পাঠ থেকে গৃহীত হয়েছে। ‘ধর্মত্যাগ’ শব্দের অর্থ হল নিজ ধর্ম ত্যাগ করা।

প্রশ্ন ৮। কোন্ দুটি অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না?

উত্তরঃ ধর্মের ও স্নেহের অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন ৯। ‘চিরকাল মনুষ্য অত্যাচারে পীড়িত।’

– উদ্ধৃতিটি কোন পাঠের অন্তর্ভুক্ত? পাঠ অবলম্বনে যে কোনো দুই প্রকারের মনুষ্য দ্বারা অত্যাচারের উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ভালবাসার অত্যাচার পাঠের অন্তর্ভুক্ত। দুইপ্রকার মনুষ্য দ্বারা অত্যাচার হলো – 

(ক) বাহুবলের অত্যাচার। এবং 

(খ) ধর্মের অত্যাচার।

প্রশ্ন ১০। ‘হিতবাদ’-কে ইংরেজিতে কী বলে? কে এই মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন?

উত্তরঃ হিতবাদকে ইংরেজিতে বলে Utilitarianism। এই মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন জেরেমি বেন্থাম।

প্রশ্ন ১১। “দুইটি মাত্র মূলসূত্রে সমস্ত মনুষ্যের নীতিশাস্ত্র কথিত হইতে পারে।” – সূত্র দুটি কী কী?

উত্তরঃ (ক) আত্ম-সম্বন্ধীয়। 

(খ) পরসম্বন্ধীয়।

প্রশ্ন ১২। টীকা লেখো – 

(ক) হিতবাদী।

উত্তরঃ (ক) হিতবাদী – ‘হিতবাদ’ নামে এই মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন জেরেমি বেন্থাম। ‘হিতবাদ’ নামে এই নীতিকে ইংরেজিতে Utilitarianism বলা হয়। এই মতবাদ অনুযায়ী যে কাজ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের সর্বাপেক্ষা কল্যাণ সাধন করে সেই কাজ করাই উত্তম। বঙ্কিমের মতে, এ মতবাদটি মানুষের প্রতি অত্যাচার। কারণ, এটি মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করলেও তা মানুষকে নাস্তিক করে তোলে।

প্রশ্ন ১৩। “মনুষ্য জীবন ভালবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ”। – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ মনুষ্য জীবন ভালোবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ। প্রত্যেক মানুষ প্রথমাবস্থায় বাহুবলের অত্যাচার, দ্বিতীয় অবস্থায় ধর্মের অত্যাচার, তৃতীয়াবস্থায় সামাজিক অত্যাচার এবং সর্বাবস্থায় ভালোবাসার অত্যাচারে আক্রান্ত।

প্রশ্ন ১৪। নীতিশাস্ত্রের বা ধর্মনীতির সার উপদেশ কী?

উত্তরঃ “পরের অনিষ্ট করিও না; সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।” অর্থাৎ পরহিত রতি এবং পরের অহিতে বিরতি; পরসম্বন্ধীয় এই পরহিত নীতি ধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের মূল।

প্রশ্ন ১৫। _____ প্রেম এবং ______ ইহাদের একই গতি, একই চরম। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ অস্বার্থপর, ধর্ম।

প্রশ্ন ১৬। ভালবাসার অত্যাচারে প্রবৃত্ত অত্যাচারী কারা?

উত্তরঃ মা, বাবা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, স্ত্রী-স্বামী, বন্ধু-চাকর যে ভালোবাসে সেই অত্যাচার করে।

প্রশ্ন ১৭। ভালোবাসার অত্যাচার বিষয়ে কবি কৃত বর্ণনার দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ কৈকেয়ীর অত্যাচার দশরথকৃত রামের নির্বাসন এবং দ্যুতাসক্ত যুধিষ্ঠির কর্তৃক ভ্রাতৃগণের নির্বাসন।

প্রশ্ন ১৮। আমাদের প্রকৃতি দমনের অধিকার আমরা কাকে দিয়েছি এবং কেন?

উত্তরঃ আমাদের প্রকৃতি দমনের অধিকারী একমাত্র রাজা, কারণ তাকে আমরা সমাজের ভালোমন্দ বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত করি।

প্রশ্ন ১৯। মানুষের জীবনের ‘চতুর্বিধ’ পীড়ন কী কী?

উত্তরঃ রাজার অত্যাচার, ধর্মের অত্যাচার, সমাজের অত্যাচার এবং ভালোবাসার অত্যাচার।

প্রশ্ন ২০। অনেকের মতে সত্য সর্বাবস্থায় পালনীয় কেন?

উত্তরঃ কারণ, সত্য নিত্য ধর্ম, অবস্থাভেদে পুণ্যত্ব পাপত্ব প্রাপ্ত হয় না।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “ইহার মধ্যে কৈকেয়ীর কার্য্য স্বার্থপর এবং নৃশংস বলে চিরপরিচিত।” – কার্যটি কী?

উত্তরঃ রামায়ণে বর্ণিত অযোধ্যার রাজা দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রী কৈকেয়ী এক সময় রাজা দশরথ যুদ্ধে আহত হয়ে কৈকেয়ীর শুশ্রূষায় সত্ত্বর আরোগ্য লাভ করেন। এজন্য দশরথ খুশি হয়ে কৈকেয়ীকে দুটি বর প্রদানের অঙ্গীকার করেন। তখন কৈকেয়ী বলেছিলেন, সময়ানুসারে তিনি সেই বর চেয়ে নিবেন। তাঁর একটি বর ছিল নিজ পুত্র ভরতকে অযোধ্যার সিংহাসনে বসানো আর দ্বিতীয় বর ছিল রামচন্দ্রকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো। দশরথ কৈকেয়ীকে দেওয়া কথার মর্যাদা রাখতে গিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও রামকে বনবাসে পাঠান। কৈকেয়ীর এই বর চাওয়া স্বার্থপর এবং নৃশংস বলে পরিচিত।

প্রশ্ন ২। “মনুষ্য জীবন ভালবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ”। – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল কোনো না কোনো ভাবে অত্যাচারিত হয়। যেমন- বাহুবলের অত্যাচার; সবল ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তির উপর অত্যাচার করেন। অপরের অনিষ্ট না করে নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করার অধিকার সকল মানুষেরই আছে। যারা এই অধিকারে হস্তক্ষেপ তারাই কম বেশী অত্যাচার করে। একটু বিচার করলেই দেখা যায়, যারাই ভালোবাসে, তারাই ভালোবাসার পাত্রের নিজের ইচ্ছামত কাজ করাবার অধিকার সংকুচিত করে নিজের মতাবলম্বী করতে চায়। এই ঘটনা অত্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। তাঁরা হলেন পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগিনী প্রভৃতি। যে ভালবাসে সে অত্যাচার করে। রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠাবার ব্যাপারে কৈকেয়ী রাজা দশরথের উপর ভালবাসার অত্যাচার করেছেন আর দশরথ পুত্র রামের উপর এই ভালবাসার অত্যাচার করেছেন।

প্রশ্ন ৩। “দুইটি মাত্র মূলসূত্রে সমস্ত মনুষ্যের নীতিশাস্ত্র কথিত হতে পারে।”

– সূত্র দুটি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ সূত্র দুটির মধ্যে একটি হল আত্মসম্বন্ধীয় এবং অপরটি হল পরসম্বন্ধীয়। যেটি আত্মসম্বন্ধীয়, তাকে আত্মসংস্কার নীতির মূল বলা যায়। আত্মচিত্তের স্ফূর্ত্তি এবং নির্মলতা রক্ষাই তার উদ্দেশ্য। পরসম্বন্ধীয় বলেই তাকে যথার্থ ধর্মনীতির মূল বলা যেতে পারে। “পরের অনিষ্ট করিও না; সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।” এই মহতী উক্তির মূল পরসম্বন্ধীয় নীতিতে বিদ্যমান। পরহিতনীতি এবং আত্মসংস্কারনীতি একই তত্ত্বের ভিন্ন-ভিন্ন ব্যাখ্যা মাত্র। পরহিত রতি এবং পরের অহিতে বিরতি, এটিই সমগ্র ধর্মশাস্ত্রের সার উপদেশ।

প্রশ্ন ৪। “সত্য কি সর্বত্র পালনীয়? এই বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের অভিমত নিজের ভাষায় ব্যক্ত করো।

উত্তরঃ লেখক বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, যে সত্য পালনে অন্যের অনিষ্ট হয় সেই সত্য পালন করা অনুচিত। কারণ ধর্মনীতির মূল হল, “পরের অনিষ্ট করিও না; সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল বা উপকার করিও।” তাই সত্য ভঙ্গ করলে যদি অন্যের উপকার হয় তবে বঙ্কিম মনে করেন সে সত্য পালনীয় নয়। উদাহরণস্বরূপ দশরথ কৈকেয়ীর প্রতি সত্যপালনের জন্য রামচন্দ্রকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বনবাসে পাঠিয়ে ভরতকে অযোধ্যার সিংহাসনে বসালেন। এতে নিজের সত্য পালনের জন্য পুত্রের অধিকারকে তিনি লাঞ্ছনা করে অন্যায় অধর্ম করেছেন। এই সত্য দশরথ যদি পালন না করতেন তবে গুরুতর অনিষ্টের সম্মুখীন হতেন না।

প্রশ্ন ৫। “স্নেহের যথার্থ স্বরূপই অস্বার্থপরতা।”

উক্তিটি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ স্নেহের যথার্থ স্বরূপ হল অস্বার্থপরতা। কেউ যদি কাউকে সত্যি সত্যিই ভালবাসে তবে সেই ভালবাসার পেছনে স্বার্থ থাকতে পারে না। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, যে ভালবাসে সে তার ইচ্ছা, পছন্দ চাপিয়ে দেয় তার ভালবাসার পাত্রের উপর। সেই ভালবাসাকে নিঃস্বার্থ ভালবাসা বলা যায় না। কারণ সে যার উপর তার ইচ্ছা ও পছন্দ চাপিয়ে দেয় হয়তো সে তাকে ভালবাসে বলে মেনে নিচ্ছে। যেমন- কোনো ছেলে যাদ দূরদেশে চাকুরি পায়, তার মা ছেলেটিকে সবসময় দেখতে পাবে না বলে তাকে দূরদেশে চাকুরিতে যেতে দিলেন না। এখানে বলতে গেলে মা স্বার্থপর। তিনি ছেলের সুখের কথা চিন্তা না করে নিজের কথাই ভাবলেন। এখানে মার স্নেহ স্বার্থশূন্য নয়। এটা ছেলের উপর মার স্নেহের অত্যাচার বলা যায়।

প্রশ্ন ৬। “যেখানে সত্য লঙ্ঘনাপেক্ষা সত্য রক্ষায় অধিক অনিষ্ট, সেখানে সত্য রাখিবে, না সত্যভঙ্গ করিবে?”

– উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ যুগ-যুগ ধরে মহান ব্যক্তিরা বলে গেছেন ‘সদা সত্য কথা বলবে’। কিন্তু কখনও কখনও এমনও হয় সত্যকথা বলার চেয়ে সে স্থানে সত্যভঙ্গ করা মঙ্গলদায়ক। রাজা দশরথের কৈকেয়ীকে দেওয়া সত্য পালনের চেয়ে যদি সে স্থানে সত্যভঙ্গ করতেন তাহলে রামচন্দ্রের উপর এত বড় অন্যায় করা হত না। দশরথ আপন যশের লোভে রামচন্দ্রের উপর ভালোবাসার অত্যাচার করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, তা ঘোরতর পাপ। তবে সাধারণ লোকের মতে সত্য সর্বাবস্থায় পালনীয়, কেননা সত্য নিত্য ধর্ম, অবস্থাভেদে তা পুণ্য বা পাপ বলে বিবেচিত হয় না। বঙ্কিমচন্দ্রের মতানুসারে এ বিষয়ে হিতবাদীরা এক প্রকার মীমাংসা করে রেখেছেন।

প্রশ্ন ৭। “যে ভালবাসে, সেই অত্যাচার করে, ভালবাসিলেই অত্যাচার করবার অধিকার প্রাপ্ত হওয়া যায়।”

– উদ্ধৃতাংশের যথার্থ বিশ্লেষণ করো।

অথবা, 

ভালবাসার অত্যাচার কীরূপে হয়?

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল অত্যাচার পীড়িত। যেমন – বাহুবলের অত্যাচার, ধর্মের অত্যাচার, সমাজের অত্যাচার প্রভৃতি। তবে এ ধরনের অত্যাচারের হাত থেকে মানুষ নিষ্কৃতি পেতে পারে। কিন্তু প্রণয়ের অত্যাচারের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় না। একজন প্রণয়ী তার পছন্দ ও ইচ্ছাকে তার ভালবাসার পাত্রের উপর চাপিয়ে দেয়। সে ভাবে তার ভালোবাসার মানুষ তার কথা মতো চলবে ফলে ভালবাসার পাত্রকে নিজের ইচ্ছা মতো চলতে না দিয়ে তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। যা ভালবাসার অত্যাচারে পরিণত হয়। আবার কখনও দেখা যায় পুত্র সুলক্ষ্মণা, বিনয়ী, নম্র, সচ্চরিত্রা কন্যাকে বিয়ে করতে চাইলে পিতা বলেন বিষয়াপন্ন লোকের কন্যার সঙ্গেই তাকে বিয়ে করতে হবে তখন পুত্র পিতৃ প্রেমে বশীভূত হয়ে কুরূপা কন্যাকে বিয়ে করে। এখানে পিতা পুত্রের উপর ভালবাসার অত্যাচার করে। সুতরাং বলা যায় যে ভালবাসে সে-ই অত্যাচার করে।

প্রশ্ন ৮। “যেই ভালবাসে সেই একটু অত্যাচার করে এবং অনিষ্ট করে।”

– এ বিষয়ে প্রাবন্ধিক যে দুটি লৌকিক উদাহরণ দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করো।

উত্তরঃ প্রাবন্ধিকের মতো আমরাও আমাদের সমাজে নিত্য দেখি যে, কেউ হয়তো নম্র, ভদ্র বিনয়ী সচ্চরিত্র একটি মেয়েকে বিয়ে করবে ঠিক করেছে তখন যদি তার বাবা এসে এক বড় লোকের মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিবে বলে ঠিক করে সে অবস্থায় ছেলেটি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও বাবার ওপর ভক্তিতে নিজের মতামতকে বিসর্জন দিয়ে বড়োলোকের মেয়েটিকেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়। আবার আমরা দেখি একজন দরিদ্র পীড়িত যুবক ভাগ্যের জোরে বাড়ি থেকে অনেক দূরে একটা ভাল চাকরি পেল, তবু কিন্তু সে চাকরিতে যোগ দিতে পারছে না কারণ, তার মায়ের আপত্তি বা তাকে কাছ ছাড়া করে অতদূরে চাকরিতে যেতে দিতে চান না, ফলে ছেলেটিও মায়ের ভালোবাসার অত্যাচারে দুঃখময় জীবনেই আটকে যেতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন ৯। “রাজা, সমাজ ও প্রণয়ী এই তিনজনে এরূপ অত্যাচার করে থাকেন।

– রাজা, সমাজ, ও প্রণয়ী কীভাবে অত্যাচার করে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধানুসরণে দৃষ্টান্তসহ, আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রত্যেক মানুষের আপন মতানুসারে কাজ করার বা চলাফেরার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যখন অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় তখন তা অত্যাচারের রূপ নেয়। রাজার প্রজাদের ভালোমন্দ বিচার করার অধিকার আছে তবে রাজা তার নিজস্ব মত প্রজাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। প্রজাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার রাজার অধিকার নেই। যদি রাজা হস্তক্ষেপ করেন তবে তা অত্যাচারের রূপ নেয়। সমাজ মানুষের উপর বিভিন্ন নিয়ম-নীতি চাপিয়ে দেয় এর ফলে মানুষের আপন ইচ্ছানুযায়ী কাজকর্ম বা চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি হয়। তখন তা অত্যাচারের রূপ নেয়। যে ভালবাসে সেই ব্যক্তি তার ভালবাসার পাত্রের উপর নিজস্ব ইচ্ছা ও পছন্দ চাপিয়ে দিয়ে তার উপর অত্যাচার করে থাকে। যদিও সে ইচ্ছা করে ভালবাসার পাত্রের অমঙ্গল করে না।

প্রশ্ন ১০। “চিরকাল মানুষ অত্যাচার পীড়িত।”

– লেখকের মতানুসারে এই অত্যাচার কয় প্রকার ও কী কী?

অথবা, 

‘এ অত্যাচারে প্রবৃত্ত অত্যাচারী অনেক।’

– অত্যাচারীদের একটি তালিকা দাও।

উত্তরঃ লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘ভালবাসার অত্যাচার’ প্রবন্ধে চার প্রকার পীড়নের কথা বলেছেন। প্রথমাবস্থায় আছে বাহুবলের অত্যাচার; অসভ্য জাতি সমূহের মধ্যে যে বলবান থাকে সে-ই দুর্বল ব্যক্তির উপর অত্যাচার করে। দ্বিতীয়াবস্থায় আছে ধর্মের অত্যাচার। তৃতীয়াবস্থায় আছে সামাজিক অত্যাচার। তাছাড়া সকল অবস্থাতেই আছে ভালোবাসার অত্যাচার। এই চার প্রকার অত্যাচারের মধ্যে ভালোবাসার পীড়ন সবচেয়ে বেশি বলিষ্ঠ। পিতা, মাতা, ভাই, বোন, পুত্র, কন্যা, স্বামী প্রভৃতি যারাই ভালবাসে তারাই অত্যাচার করে। সকলেই চায় সে যাকে ভালবাসে, সেই ব্যক্তি তার কথা মতো চলুক। ফলে সেই ব্যক্তি প্রণয়ীর কথা মতো চলতে গিয়ে তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে। তাই সেটা ভালবাসার অত্যাচারে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ১১। “দশরথ স্বার্থপরতাশূন্য নহেন।”

– এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে যুক্তি কী?

অথবা, 

“তিনি সত্য পালনার্থে আত্মপ্রাণ বিয়োগ এবং প্রাণাধিক পুত্রের বিরহ স্বীকার করিলেন, ইহাতে ভারতবর্ষীয় সাহিত্যের ইতিহাস তাঁর যশ:কীর্তনে পরিপূর্ণ।”

– উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ এখানে রামায়ণের বর্ণিত অযোধ্যার রাজা দশরথের কথা বলা হয়েছে। দশরথ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কৈকেয়ীকে দুটি বর দিয়েছিলেন। কৈকেয়ী এই দুটি বর হিসেবে প্রথমতঃ চেয়েছিলেন তার পুত্র ভরত রাজসিংহাসনে বসবে। দ্বিতীয়তঃ চেয়েছিলেন রামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যাবেন। দশরথ কৈকেয়ীকে দেওয়া কথার মর্যাদা রাখতে গিয়ে তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠান। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, এখানে দশরথের স্বার্থ লুকিয়ে ছিল, সত্য ভঙ্গে জগতে তাঁর নামে কলঙ্ক ঘোষিত হওয়ার ভয়ে তিনি রামের অনিষ্ট করেন। তিনি নিজের যশোরক্ষার জন্য রামকে অধিকার চ্যুত করে রামের উপর ভালবাসার অত্যাচার করেন। এর ফলে তিনি মহাপাপ করে বসেন।

পশ্ন ১২। ‘এখানে দশরথ স্বার্থপরতা শূন্য নহেন।’ – বাক্যটি কোন্ রচনার অংশ? দশরথকে কেন স্বার্থপর বলা হয়েছে?

উত্তরঃ এখানে রামায়ণের বর্ণিত অযোধ্যার রাজা দশরথের কথা বলা হয়েছে। দশরথ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী কৈকেয়ীকে দুটি বর দিয়েছিলেন। কৈকেয়ী এই দুটি বর হিসেবে প্রথমতঃ চেয়েছিলেন তার পুত্র ভরত রাজসিংহাসনে বসবে। দ্বিতীয়তঃ চেয়েছিলেন রামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যাবেন। দশরথ কৈকেয়ীকে দেওয়া কথার মর্যাদা রাখতে গিয়ে তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠান। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, এখানে দশরথের স্বার্থ লুকিয়ে ছিল, সত্য ভঙ্গে জগতে তাঁর নামে কলঙ্ক ঘোষিত হওয়ার ভয়ে তিনি রামের অনিষ্ট করেন। তিনি নিজের যশোরক্ষার জন্য রামকে অধিকার চ্যুত করে রামের উপর ভালবাসার অত্যাচার করেন। এর ফলে তিনি মহাপাপ করে বসেন।

প্রশ্ন ১৩। “এ অত্যাচারে প্রবৃত্ত অত্যাচারী অনেক।” – কোন অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে? অত্যাচারী কারা তাদের বিষয়ে একটি করে বাক্য লেখো।

উত্তরঃ এখানে ভালোবাসার অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে।

ভালোবাসার অত্যাচারের অত্যাচারীরা হলেন – বাবা, মা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী এছাড়াও যে ভালোবাসে সেই অত্যাচার করে।

সুন্দরী ও সুলক্ষণা কন্যাকে বিবাহে ইচ্ছুক এমন অনেক পুত্রকে পিতার ইচ্ছায় কালকুটরূপিনী ধনী পাত্রী বিবাহ করে অশান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এটি পিতার অত্যাচার।

দূরদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দারিদ্র্য দূর করতে ইচ্ছুক এমন অনেক পুত্রকে মায়ের ইচ্ছায় গৃহে থেকে দারিদ্র্য কষ্ট পেতে হয় এটি পুত্রের প্রতি মায়ের অত্যাচার।

অপদার্থ ভ্রাতা পরিশ্রমী কৃর্তী-ভ্রাতার উপার্জিত অর্থ ধ্বংস করে। এটি ভ্রাতার উপর ভ্রাতার অত্যাচার।

প্রশ্ন ১৪। ‘অতএব এই ধর্মনীতির মূলসূত্র অবলম্বন করলেই ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ হইবে।’ বঙ্কিমের বক্তব্য অনুযায়ী ধর্মনীতির মূলসূত্র কোনটি? তা কীভাবে ভালাবাসার অত্যাচার নিবারণ করতে পারে?

উত্তরঃ বঙ্কিমের মতে ধর্মনীতির মূলসূত্রটি হলো – ‘পরের অনিষ্ট করিও না, সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।’ অতএব এই ধর্মনীতির মূল সূত্রকে অবলম্বন করলেই ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ করা সম্ভব। যখন কোনো ব্যক্তি স্নেহ বা ভালোবাসার জোরে ভালোবাসার বা স্নেহের পাত্রের কোনো কাজে হাত বাড়ান তখন তাঁর মনে দৃঢ় সংকল্প থাকা উচিত যে, আমি শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য হস্তক্ষেপ করব না। নিজের মনে করে যাকে ভালোবাসি বা স্নেহ করি তার কোনো ক্ষতি করব না। সেক্ষেত্রে আমার যত কষ্টই হোক না কেন তবু আমি কারোর খারাপ হয় এমন কাজ করব না। এই ভাবনা, এই ভালোবাসা তথা এই মনুষ্য ধর্মই ভালোবাসার অত্যাচারের একমাত্র নিবারক।

প্রশ্ন ১৫। “ধর্মের যিনি যে ব্যাখ্যা করুক না কেন, ধর্ম এক।”

– লেখকের যুক্তি প্রদর্শন করো।

উত্তরঃ প্রেমের যথার্থ স্বরূপ অস্বার্থপরতা। বঙ্কিমের মতে, প্রেমে বিশুদ্ধতা, যতদিন না মানুষের ভালবাসা হতে স্বার্থপরতা দূর হবে না, ততদিন প্রাপ্ত হবে না। ধর্মের শাসনে প্রণয় শাসিত করাই ভালবাসার অত্যাচার নিবারণের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন বঙ্কিমচন্দ্র। ধর্মের যে যাই ব্যাখ্যা করুক না কেন, ধর্ম এক, দুটি মাত্র সূত্রে মানুষের নীতিশাস্ত্র ও ধর্মশাস্ত্র কথিত হতে পারে। প্রথমটি আত্মসম্বন্ধীয়, আত্মচিত্তের স্ফূর্তি এবং নির্মলতা রক্ষাই তার উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়টি পরসম্পর্কীয়, পরের অনিষ্ট না করা ও সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করা। এই মহতী উক্তি প্রত্যেক ধর্মশাস্ত্রের মূল কথা। বঙ্কিম মনে করেন, ধর্মের যিনি যে ব্যাখ্যাই দেন না কেন, ধর্ম এক।

প্রশ্ন ১৬। ভালবাসার অত্যাচার নিবারণের উপায় কী?

অথবা, 

‘চিরকাল মনুষ্য অত্যাচারে পীড়িত।’- মানুষ চিরকাল কোন অত্যাচারে পীড়িত? অত্যাচার থেকে পরিত্রাণের যে উপায় লেখক নির্দেশ করেছেন, সে সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল ভালবাসার অত্যাচারে পাড়িত।

লেখকের মতে দুটি উপায়ে ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ করা যায়। প্রথমতঃ ভালোবাসার দ্বারা ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ – এক্ষেত্রে ভালোবাসাকে নিঃস্বার্থ হতে হবে। কারণ ভালবাসার স্বরূপই হলো অস্বার্থপরতা। যে মা তার ছেলের সুখের কামনায় ছেলের মুখ দেখার কামনাকে ত্যাগ করতে পারেন তিনিই যথার্থ স্নেহবতী। যে প্রেমিকা প্রেমিকের মঙ্গলের জন্য নিজের প্রেমের সুখ ভোগ ত্যাগ করতে পারে সেই যথার্থ প্রেমিকা।

দ্বিতীয়তঃ ধর্মের অনুশাসনে – মনে রাখতে হবে যে ধর্মের মূল কথা হলো ‘পরের অনিষ্ট করিও না, সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।’ অতএব এই ধর্মনীতির মূলসূত্রগুলিকে অবলম্বন করলেই ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – যখন কোন স্নেহশীল ব্যক্তি তাঁর স্নেহের পাত্রের কাজে হাত দিতে যায় তখন তাকে মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য বা খ্যাতির জন্য অন্যের অনিষ্ট সে করবে না। সেক্ষেত্রে আমার যতই কষ্ট হোক না কেন তবু কারোর খারাপ হয় এমন কাজ করব না। এই মনুষ্য ধর্মই ভালোবাসার অত্যাচারের একমাত্র নিবারক।

উদাহরণ হিসেবে এখানে আমরা রামায়ণের কথা আনতে পারি। সেখানে দেখি রাজা দশরথ রামচন্দ্রকে বনে পাঠাবার পিছনে তার যশবৃদ্ধি (খ্যাতি) লুকায়িত ছিল, কিন্তু তিনি যদি যশের প্রতি লালায়িত না হয়ে রামচন্দ্রকে বনবাসে না পাঠাতেন তাহলে তাঁর অধিক পুণ্য হত। তিনি যদি ধর্মের মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন তা হলে ভালোবাসার এই অত্যাচার হতো না। সুতরাং একমাত্র ধর্মের মূল নীতি অনুসরণেই ভালোবাসার অত্যাচার দূর করা সম্ভব।

প্রশ্ন ১৭। “এই চতুর্বিধ পীড়নের মধ্যে প্রণয়ের কাহারও পীড়ন অপেক্ষা হীনবল বা অল্পানিষ্টকারী নহে।” প্রণয়ের পীড়ন কেন অল্প অনিষ্টকারী নয়?

উত্তরঃ লেখকের মতে, মানুষ চিরকাল অত্যাচার পীড়িত। রাজার অত্যাচার, ধর্মের অত্যাচার, সমাজের অত্যাচার এবং ভালবাসার অত্যাচার। এসব ধরনের অত্যাচারের ফলে মানুষের অনিষ্ট হয়। এই চার প্রকার পীড়নের মধ্যে প্রণয়ের পীড়ন অন্যান্য পীড়ন থেকে কম অনিষ্টকারী নয়। কারণ কেউ যদি কাউকে ভালবাসে, তবে সে চায় তার প্রণয়ী তার মতাবলম্বী হউক এবং তার কথামতো চলবে। এক কথায় তার সকল কথা শুনবে। এরফলে দেখা যায় সেই ব্যক্তির স্বানুবর্ত্তিতায় বাধা সৃষ্টি হয়। হয়তো সে কোনো কাজ করতে চাইলেও তার কাজে হস্তক্ষেপ করা হয় বা সে কাজ করতে নিষেধ করা হয়।

প্রশ্ন ১৮। “কিন্তু ধর্মের পীড়নে এবং স্নেহের পীড়নে নিষ্কৃতি নাই।”

– এই সিদ্ধান্তের পক্ষে লেখক যে যুক্তি ও দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তা লেখো।

অথবা, 

ধর্মের ও স্নেহের পীড়নে নিষ্কৃতি নেই কেন?

উত্তরঃ মানব জীবন চিরকাল অত্যাচার পীড়িত। যেমন – রাজা ‘সমাজ, ধর্ম ও ভালোবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ। রাজা ও সমাজের অত্যাচারের হাত থেকে মানুষ নিজেকে রক্ষা করতে পারে। স্বেচ্ছাচারী বা অত্যাচারী রাজাকে প্রজারা সিংহাসনচ্যুত করে সে স্থানে প্রজা হিতৈষী রাজাকে বসাতে পারে। যে সমাজ মানুষের পীড়ার কারণ হয়, মানুষ সেই সমাজকেও পরিত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু ধর্ম ও ভালোবাসার অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনও দাঁড়াতে পারেন না। হরিদাস নামে এক বৈষ্ণবের পাঠার মাংস দেখলে লালসায় মুখে জল আসে। কিন্তু সে তার এই ইচ্ছাকে জোর করে দাবিয়ে রাখে। তাঁর বিশ্বাস মাংস না খেলে মৃত্যুর পর স্বর্গ লাভ হবে। সুতরাং বৈষ্ণব হরিদাস ধর্মের অত্যাচার সহ্য করেন। অন্যদিকে দেখা যায়, পুত্র সৎবংশ, সচ্চরিত্রা, রূপসী কন্যাকে বিবাহ করতে চায় কিন্তু পিতা বলেন অমুক বিষয়াপন্ন লোকের কন্যাকেই তাকে বিয়ে করতে হবে তখন পুত্র পিতৃপ্রেমে বশীভূত হয়ে আজ্ঞা পালনে বাধ্য হয়। এখানে পুত্র স্নেহের অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়। যার থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই।

প্রশ্ন ১৯। “কিন্তু জ্ঞানেরও অত্যাচার আছে।”

– জ্ঞানের অত্যাচার বলতে কী বোঝায়? জ্ঞানের অত্যাচার নিবারণের উপায় কী?

উত্তরঃ লেখকের মতে, সম্যক জ্ঞানের সাহায্যে ধর্মে অত্যাচার নিবারণ করা যায়। কিন্তু এই জ্ঞানেরও আবার অত্যাচার আছে। এর উদাহরণ হল হিতবাদ এবং প্রত্যক্ষবাদ। লেখকের বক্তব্য, এই দুই মতবাদের বেগে মানুষের হৃদয় সাগরে একটা ভাগ চড়া পড়ে যাচ্ছে। তাই এই জ্ঞান কখনো কখনো অত্যাচারী হয়ে ওঠে।

এজন্য লেখকের ধারণা, জ্ঞান ব্যতীত জ্ঞানের অত্যাচার শাসনের জন্য অন্য কোনো শক্তি যে মানুষ ব্যবহার করতে পারবে এমন বিবেচনা হয় না। একমাত্র জ্ঞানই জ্ঞানের অত্যাচার নিবারণ করতে পারে।

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভালবাসার অত্যাচার কীভাবে হয়? বঙ্কিমচন্দ্রের নিবন্ধ অনুসারে আলোচনা করো।

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল কোনো না কোনো ভাবে অত্যাচারিত হয়। এগুলি হল বাহুবলের, ধর্মের, সমাজের এবং ভালবাসার। মানুষ সবচাইতে বেশি যে অত্যাচারে অত্যাচারিত হয় সেটি হল ভালবাসার অত্যাচার। এই অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন।

পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগিনী, পুত্র, কন্যা, স্বামী প্রভৃতি যে-ই ভালবাসে সে-ই অত্যাচার করে। যেমন – পুত্র সুন্দরী, সুলক্ষণা, সদবংশজাত সচ্চরিত্র মেয়েকে বিয়ে করবে এমন অনেক পুত্রকে পিতার ইচ্ছায় কালকূট রূপিনী ধনী পাত্রী বিবাহ করে অশান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এখানে পুত্রের উপর পিতার অত্যাচার।

দূর দেশে গিয়ে অর্থোপার্জ্জন করে দারিদ্র দূর করতে ইচ্ছুক এমন পুত্রকে মায়ের ইচ্ছায় গৃহ থেকে দারিদ্র রূপ কষ্ট পেতে হয়। এটি পুত্রের প্রতি মায়ের অত্যাচার।

অপদার্থ ভ্রাতা পরিশ্রমী কৃতী ভ্রাতার উপার্জিত অর্থ ধ্বংস করে এটি ভ্রাতার উপর ভ্রাতার অত্যাচার। সুতরাং বলা যায় যে-ই ভালবাসে সে-ই অত্যাচার করে।

প্রশ্ন ২। বঙ্কিমচন্দ্র ভালবাসার অত্যাচারের যে বিভিন্ন পর্যায় ভাগ করেছেন তা আলোচনা করো।

উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর প্রবন্ধে বলেছেন – মানুষের জীবন ভালবাসার অত্যাচারে পরিপূর্ণ। মানুষ চিরকাল কোনো না কোনোভাবে অত্যাচারের সম্মুখীন হয়। যেমন সৃষ্টির আদিতে বাহুবলের অত্যাচারের শিকার। সভ্য হবার পূর্বে মানুষের সমাজে যে বলবান ছিল সেই দুর্বলের উপর অত্যাচার করত। কালের পরিবর্তনে সেই অত্যাচার রাজা তথা শাসক এবং অর্থের অত্যাচারে পরিণত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে মানুষের জীবনে নেমে আসে ধর্মের অত্যাচার। ধর্ম মানুষকে সুস্থির জীবন দান করবার উদ্দেশ্যেই নির্মিত অথচ কখনো কখনো মানুষের উপরে অত্যাচার চালায়। তৃতীয় পর্যায়ে আমরা নানা সামাজিক অত্যাচারের সম্মুখীন হই। সমাজ ও মানুষের জন্যই স-ষ্টি, মানুষের উপর তার দায়বদ্ধতাও অনেক অথচ সময়ে অসময়ে সে মানুষের ওপর অত্যাচার করে। এই সকল পর্যায়ের মধ্যে এক সাধারণ অত্যাচার মানুষ জন্মাবধি পেয়ে আসছে তা হলো ভালোবাসার অত্যাচার।

প্রশ্ন ৩। ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ সম্পর্কে লেখক কী বলেছেন?

উত্তরঃ মানুষ চিরকাল ভালবাসার অত্যাচারে পাড়িত।

লেখকের মতে দুটি উপায়ে ভালবাসার অত্যাচার নিবারণ করা যায়। প্রথমতঃ ভালোবাসার দ্বারা ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ – এক্ষেত্রে ভালোবাসাকে নিঃস্বার্থ হতে হবে। কারণ ভালবাসার স্বরূপই হলো অস্বার্থপরতা। যে মা তার ছেলের সুখের কামনায় ছেলের মুখ দেখার কামনাকে ত্যাগ করতে পারেন তিনিই যথার্থ স্নেহবতী। যে প্রেমিকা প্রেমিকের মঙ্গলের জন্য নিজের প্রেমের সুখ ভোগ ত্যাগ করতে পারে সেই যথার্থ প্রেমিকা।

দ্বিতীয়তঃ ধর্মের অনুশাসনে – মনে রাখতে হবে যে ধর্মের মূল কথা হলো ‘পরের অনিষ্ট করিও না, সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।’ অতএব এই ধর্মনীতির মূলসূত্রগুলিকে অবলম্বন করলেই ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ সম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – যখন কোন স্নেহশীল ব্যক্তি তাঁর স্নেহের পাত্রের কাজে হাত দিতে যায় তখন তাকে মনে রাখতে হবে যে শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য বা খ্যাতির জন্য অন্যের অনিষ্ট সে করবে না। সেক্ষেত্রে আমার যতই কষ্ট হোক না কেন তবু কারোর খারাপ হয় এমন কাজ করব না। এই মনুষ্য ধর্মই ভালোবাসার অত্যাচারের একমাত্র নিবারক।

উদাহরণ হিসেবে এখানে আমরা রামায়ণের কথা আনতে পারি। সেখানে দেখি রাজা দশরথ রামচন্দ্রকে বনে পাঠাবার পিছনে তার যশবৃদ্ধি (খ্যাতি) লুকায়িত ছিল, কিন্তু তিনি যদি যশের প্রতি লালায়িত না হয়ে রামচন্দ্রকে বনবাসে না পাঠাতেন তাহলে তাঁর অধিক পুণ্য হত। তিনি যদি ধর্মের মূলনীতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন তা হলে ভালোবাসার এই অত্যাচার হতো না। সুতরাং একমাত্র ধর্মের মূল নীতি অনুসরণেই ভালোবাসার অত্যাচার দূর করা সম্ভব।

প্রশ্ন ৪। ধর্মের শাসনে ভালবাসার অত্যাচার নিবারণের যে উপায় লেখক নির্দেশ করেছেন সে সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তরঃ বঙ্কিমের মতে ধর্মনীতির মূলসূত্রটি হলো – ‘পরের অনিষ্ট করিও না, সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।’ অতএব এই ধর্মনীতির মূল সূত্রকে অবলম্বন করলেই ভালোবাসার অত্যাচার নিবারণ করা সম্ভব। যখন কোনো ব্যক্তি স্নেহ বা ভালোবাসার জোরে ভালোবাসার বা স্নেহের পাত্রের কোনো কাজে হাত বাড়ান তখন তাঁর মনে দৃঢ় সংকল্প থাকা উচিত যে, আমি শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য হস্তক্ষেপ করব না। নিজের মনে করে যাকে ভালোবাসি বা স্নেহ করি তার কোনো ক্ষতি করব না। সেক্ষেত্রে আমার যত কষ্টই হোক না কেন তবু আমি কারোর খারাপ হয় এমন কাজ করব না। এই ভাবনা, এই ভালোবাসা তথা এই মনুষ্য ধর্মই ভালোবাসার অত্যাচারের একমাত্র নিবারক।

প্রশ্ন ৫। সত্যধর্ম রক্ষা সম্বন্ধে লেখকের মতামত আলোচনা করো।

উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, যে সত্যপালনে অন্যের অনিষ্ট হয় সেই সত্য পালন করা উচিত নয়। কারণ ধর্মনীতির মূল হল, “পরের অনিষ্ট করিও না; সাধ্যানুসারে পরের মঙ্গল করিও।” রাজা দশরথ কৈকেয়ীর কথায় সত্যপালনের জন্য রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠিয়ে ভরতকে সিংহাসনে বসালেন তাতে সত্যপালন হলেও একথা অস্বীকার করবার উপায় নেই যে নিজের সত্যপালনের জন্য তিনি পুত্রের অধিকারকে লাঞ্ছনা করে অন্যায় অধর্ম করেছেন।

আবার যদি কোনো সতী স্ত্রী, যদি কোন কপুরুষের কাছে ধর্মত্যাগের প্রতিশ্রুতি করে কিংবা কোন বন্ধু যদি দস্যুর ভয়ে তার কোন বন্ধুকে হত্যা করতে সম্মত হয় তবে সে সকল সত্য কি পালনীয়? যেখানে সত্যপালনে ক্ষতি বেশি সেক্ষেত্রেও অনেকের মত সত্যপালনের দিকে। লেখক এ মতকে অবাস্তব মনে করেছেন। কারণ লেখকের লক্ষ্য মানুষের প্রধান ধর্মকে রক্ষা করা তা যদি সত্য ভঙ্গ করেও সম্ভব তা-ই শ্রেয়।

টীকা লেখো:

১। হিতবাদ: হিতবাদ হল যে কাজ হয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকের সবচেয়ে বেশি মঙ্গল সাধন করে সেই কাজ করার মতবাদকে হিতবাদ বলে। এটা একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ইংরাজিতে এই নীতিকে বলা হয় Utilitarianism। জেরেমি বেন্থাম এই মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন।

২। দশরথ: রামায়ণে বর্ণিত অযোধ্যার রাজা ছিলেন দশরথ। তাঁর তিন রাণী ও চার পুত্র ছিল। দশরথ আপন যশ লাভের জন্য পুত্র রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন। যশের জন্য দশরথ রামের উপর ভালোবাসার অত্যাচার করেন এবং শেষ পর্যন্ত পত্রবিয়োগে মারা যান দশরথ।

৩। কৈকেয়ী: কেকয় দেশের রাজকন্যা ও অযোধ্যার রাজা দশরথের দ্বিতীয় স্ত্রী। এক সময়ে রাজা দশরথ যুদ্ধে আহত হলে কৈকেয়ীর সেবা শুশ্রূষায় তিনি ভাল হয়ে উঠেন। আর সেই সময়ে দুটি বর প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সুযোগ বুঝে কৈকেয়ী এই দুটি বর দশরথের কাছে চান। এক বরে নিজপুত্র ভরতের রাজ্যাভিষেক এবং অন্য বরে রামচন্দ্রের চৌদ্দ বৎসরের জন্য বনবাসে যাওয়া।

৪। প্রত্যক্ষবাদ: প্রত্যক্ষবাদ একটি মতবাদ। যার মূলকথা হল যা সরাসরি চোখে দেখা যায় তা সত্য। প্রত্যক্ষবাদে নির্ভর হলে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যায়। এটি জড়বাদ নামেও পরিচিত। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রে প্রত্যক্ষবাদের প্রধান প্রচারক ছিলেন মহামুনি চার্বাক।

৫। জন স্টুয়ার্ট মিল: ফরাসি দার্শনিক কাঁতের মতাবলম্বী প্রসিদ্ধ ইংরাজ দার্শনিক। জন্ম ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দ। তিনি দার্শনিক বেন্থামের প্রয়োগবাদের উন্নতি সাধন করেন। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সর্বপ্রথম প্রচারক। তাঁর দুটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম হল ‘প্রিন্সিপলস অব পলিটিক্যাল ইকনমি’ এবং ‘এসে অন লিবার্টি’। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।

৬। স্বানুবর্তিতা: পরের অনিষ্ট ঘটলেই এটি স্বেচ্ছাচারিতা, পরের অনিষ্ট না ঘটলে এটি স্বানুবর্তিতা। স্বানুবর্তিতা শব্দের অর্থ স্ব+ অনুবর্তিতা অর্থাৎ স্বাধীনতা। কোনো ব্যক্তি যদি অন্যের স্বানুবর্তিতায় বাধা সৃষ্টি করে তবে তাকে অত্যাচার করা বলে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top