Class 11 Political Science Chapter 20 উন্নয়ন

Class 11 Political Science Chapter 20 উন্নয়ন answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 20 উন্নয়ন and select needs one.

Class 11 Political Science Chapter 20 উন্নয়ন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 20 উন্নয়ন Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

উন্নয়ন

পাঠ: ২০

দ্বিতীয় খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়? 

উত্তরঃ দেশের প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধির দ্বারা দেশের জনগণের জীবনের মানদণ্ড উন্নত করা।

প্রশ্ন ২। “উন্নয়ন” শব্দটি কী ধারণা দেয়?

উত্তরঃ “উন্নয়ন” শব্দটি সদা পরিবর্তনের ধারণা দেয়।

প্রশ্ন ৩। কখন উন্নয়নের অর্থ গুরুত্ব লাভ করে?

উত্তরঃ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে উন্নয়ন শব্দটির অর্থ গুরুত্ব লাভ করে। 

প্রশ্ন ৪। সংকীর্ণ অর্থে উন্নয়ন শব্দটির ব্যবহার কী?

উত্তরঃ সংকীর্ণ অর্থে উন্নয়ন শব্দটিকে জাতীয় আয় বৃদ্ধি বা জাতীয় আয়ের হার বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন ৫। “উন্নয়ন ও গণতন্ত্র উভয় শব্দই সকলের ভালোর জন্য ব্যবহৃত।”– ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ লেখ। 

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৬। মানব উন্নয়ন সূচক কী?

উত্তরঃ মানব উন্নয়ন সূচক হল মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশের মাপকাঠি।

প্রশ্ন ৭। উন্নয়ন কি একটি বহুমুখী ধারণা?

উত্তরঃ হ্যাঁ। উন্নয়ন একটি বহুমুখী অর্থবিশিষ্ট ধারণা। 

প্রশ্ন ৮। উন্নয়নের লক্ষ্য কী?

উত্তরঃ জনকল্যাণ।

প্রশ্ন ৯। উন্নয়নের ফলে কোন্ শ্রেণীর লোক অধিক উপকৃত হয়?

উত্তরঃ ধনিক শ্রেণীর।

প্রশ্ন ১০। উন্নয়নের ফলে কোন্ শ্রেণীর লোক অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

উত্তরঃ দরিদ্র শ্রেণীর।

প্রশ্ন ১১। উন্নয়নের ধারণাটি গতিশীল না স্থিতিশীল?

উত্তরঃ গতিশীল।

প্রশ্ন ১২। কেন্ সারো ভিওয়া কোন্ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন?

উত্তরঃ ওগোনি জনগণের সুরক্ষা সংগ্রামে।

প্রশ্ন ১৩। ‘গ্ৰীন পিচ’ কী?

উত্তরঃ পরিবেশ সুরক্ষাকারী একটি বেসরকারি সংস্থা।

প্রশ্ন ১৪। চিপকো আন্দোলনের নেতা কে?

উত্তরঃ সুন্দরলাল বহুগুণা।

প্রশ্ন ১৫। ‘গঙ্গা অ্যাক্ শন প্ল্যান’ কে শুরু করেছিলেন?

উত্তরঃ সুন্দরলাল বহুগুণা।

প্রশ্ন ১৬। চিপকো আন্দোলন কোন্ রাজ্যে শুরু হয়?

উত্তরঃ উত্তর প্রদেশে।

প্রশ্ন ১৭। WWF-এর সম্পূর্ণ নাম কী?

উত্তরঃ World Wildlife Fund. 

প্রশ্ন ১৮। সর্দার সরোবর বাঁধ কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত। 

প্রশ্ন ১৯। নর্মদা বাচাও আন্দোলন কে আরম্ভ করেন?

উত্তরঃ শ্রীমতি মেধা পাটকর। 

প্রশ্ন ২০। নর্মদা নদী কোন্ কোন্ রাজ্যের ভেতর নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে?

উত্তরঃ মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও মহারাষ্ট্র।

প্রশ্ন ২১। ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’–এর সঙ্গে কে জড়িত?

উত্তরঃ শ্রীমতি মেধা পাটকর।

প্রশ্ন ২২। UNDP-র সম্পূর্ণ রূপটি কী?

উত্তরঃ United Nations Development Programme.

প্রশ্ন ২৩। পরিবেশ সংরক্ষণকারী একটি বেসরকারি সংস্থার নাম লেখো? 

উত্তরঃ গ্রীন পীচ্।

প্রশ্ন ২৪। উন্নয়নের একটি বৈশিষ্ট্য লেখো?

উত্তরঃ উন্নয়ন বহুমুখী প্রক্রিয়া।

শুদ্ধ উত্তর বেছে লেখঃ

প্রশ্ন ১। কেন্ সারো ভিওয়া কোন্ দেশের লোক ছিলেন?

(ক) নাইজেরিয়া।

(খ) উগাণ্ডা।

(গ) কেনিয়া।

(ঘ) দক্ষিণ আফ্রিকা।

উত্তরঃ (ক) নাইজেরিয়া।

প্রশ্ন ২। “উন্নয়ন হল প্রগতিসহ পরিবর্তন” – কার অভিমত?

(ক) কল্ম ও জেইগার।

(খ) টি. এন. চতুর্বেদী।

(গ) শ্রীমতি মেধা পাটকর।

(ঘ) এদের কেউ নয়।

উত্তরঃ (ক) কল্ম ও জেইগার।

প্রশ্ন ৩। শুদ্ধ উত্তর বের করোঃ

(ক) উন্নয়ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আশ্রয় সম্পর্কিত নয়।

(খ) উন্নয়নের লক্ষ্য দারিদ্র্য সম্পর্কিত নয়।

(গ) উন্নয়ন জীবনের গুণগত মানের উন্নতকরণ।

(ঘ) উন্নয়ন হল ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বৃদ্ধি।

উত্তরঃ (গ) উন্নয়ন জীবনের গুণগত মানের উন্নতকরণ।

প্রশ্ন ৪। কোনটি সঠিক?

(ক) উন্নয়নের পরিমাপ করে মানব উন্নয়ন সূচক।

(খ) উন্নয়ন পছন্দকে মানে না।

(গ) উন্নয়নকে অক্ষন করতে পারা যায় না। 

উত্তরঃ (ক) উন্নয়নের পরিমাপ করে মানব উন্নয়ন সূচক।

প্রশ্ন ৫। “সায়লেন্ট ডেলি” প্রকল্প কোথায় অবস্থিত?

(ক) গুজরাট।

(খ) উত্তর প্রদেশ।

(গ) কেরালা।

(ঘ) বিহার।

উত্তরঃ (গ) কেরালা।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। উন্নয়নের সামাজিক পরিণাম বা পরিণতি কী?

উত্তরঃ উন্নয়নের সামাজিক পরিণাম অত্যধিক। উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ফলে একদিকে যেমন সামাজিক ও আর্থিক প্রগতির রূপায়ণ সম্ভব হয় অন্যদিকে সমাজে নানা প্রকার সমস্যারও সৃষ্টি হয়। নানাপ্রকার প্রকল্প রূপায়ণের ফলে বিরাট আকারে মানুষ বাস্তুচ্যুত ও এলাকাচ্যুত হয়ে পড়ে। তাছাড়া বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতির ফলে মানুষ পরম্পরাগত জীবিকার সুযোগ হতেও বঞ্চিত হয়।

প্রশ্ন ২। উন্নয়নের উদ্দেশ্য কী?

উত্তরঃ উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্য হল জনগণের জীবনযাত্রা প্রণালীর ন্যূনতম মানদণ্ড প্রদান করা, প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার করা এবং উন্নয়নের সুফল দরিদ্র জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া প্রভৃতি।

প্রশ্ন ৩। উন্নয়নের যে কোনো এক ধরনের নমুনা/প্রকল্প ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ কল্যাণকামী রাষ্ট্র উন্নয়ন প্রকল্প ১৯৪০ সালে ইংল্যাণ্ডে জনপ্রিয় হয়েছিল। কল্যাণকামী–রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন উইলিয়াম হেনরি বেভারিজ (William Henry Beveridge)। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

কল্যাণকামী রাষ্ট্র উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ

(ক) কল্যাণকারী রাষ্ট্র জনগনকে ব্যাপক হারে সামাজিক সেবা প্রদান করে।

(খ) কল্যাণকামী রাষ্ট্র মিশ্র অর্থনীতিকে প্রাধান্য দেয়।

(গ) ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক অসমতা দূর করার চেষ্টা করে।

ভারতে এই প্রকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। উন্নয়নের উপর দুটি বিতর্ক আলোচনা করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের উপর বিতর্ক দুটি নিম্নরূপঃ

(ক) উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বায় বহুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। অত্যধিক ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে নিমজ্জিত করেছে।

(খ) উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উভয়েরই লক্ষ্য সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে পৌঁছে সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ বা মঙ্গল সাধন করা।

প্রশ্ন ৫। “উন্নয়নশীল” দেশ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ এশিয়ার বহুদেশ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল হতে মুক্তি পাওয়ার পর সেসব দেশের জনগণ দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করছিল। এসব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অভাবে অধিকাংশ জনগণই ছিল দরিদ্র এবং সেখানকার জনগণের জীবনযাত্রার মানদণ্ড ছিল খুবই নিম্নমানের। স্বাধীনোত্তরকালে এই সকল দেশ উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে উন্নত হওয়ার চেষ্টা করছে এবং উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছে, এই সকল দেশগুলোকে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

প্রশ্ন ৬। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দুটি সমস্যা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে উদ্ভূত দুটি সমস্যা নিম্নরূপঃ

(ক) বিভিন্ন দেশে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প সমূহ ব্যয়বহুল। অত্যধিক ব্যয় বহু রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে নিমজ্জিত করছে।

(খ) উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বিশাল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত ও এলাকাচ্যুত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন ৭। উন্নয়নের দুটি লক্ষ্য ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের লক্ষ্য হলঃ

(ক) প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধি বা জাতীয় আয়ের হার বৃদ্ধি করে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ন্যূনতম মানদণ্ড প্রদান করা এবং

(খ) প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ বণ্টনের মাধ্যমে দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানদণ্ড উন্নত করা। 

প্রশ্ন ৮। দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের নাম উল্লেখ করো যেগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে।

উত্তরঃ (ক) চিপকো আন্দোলন। এবং

(খ) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন।

প্রশ্ন ৯। পারিবেশিক পরিণাম কী?

উত্তরঃ উন্নয়নমূলক কার্যকলাপ পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রভাব নেতিবাচক। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়িত করার জন্য মানবজাতি অধিক পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার ও ধ্বংস করছে যার দরুন পৃথিবীর পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে, বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত ও দূষিত হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর পরিবেশ মানব সমাজের সহায়ক না হয়ে বিনাশকারী হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এটাই পারিবেশিক পরিণাম।

প্রশ্ন ১০। উন্নয়নের যে কোনো দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

অথবা,

বিকাশের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের দুটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) উন্নয়ন একটি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী গতিশীল প্রক্রিয়া।

(খ) উন্নয়ন দেশের আদর্শের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।

প্রশ্ন ১১। উন্নয়নের যে কোনো প্রধান দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য নিম্নরূপঃ 

(ক) জনগণের জীবনযাপন প্রণালীর ন্যূনতম মানদণ্ড প্রদান করা।

(খ) উন্নয়নের সুফল দরিদ্র জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া।

প্রশ্ন ১২। পরিবেশ সংরক্ষণকারী দুটি বেসরকারি সংস্থার নাম লেখো?

উত্তরঃ পরিবেশ সংরক্ষণকারী দুইটি বেসরকারি সংস্থা হল –

(ক) গ্রীন পিচ। (Green Pitch)

(খ) বিশ্ব বন্যপ্রাণী কোষ। (World Wildlife Fund)

প্রশ্ন ১৩। উন্নয়নের পরিমাপের দুটি বিকল্প উপায় উল্লেখ করো?

উত্তরঃ উন্নয়ন পরিমাপের দুটি বিকল্প উপায় নিম্নরূপঃ

(ক) মানব উন্নয়ন সূচক।

(খ) মৌলিক প্রয়োজন সূচক।

প্রশ্ন ১৪। উন্নয়নের যে কোনো দুটি বিকল্প উপায় উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ উন্নয়নের দুটি বিকল্প উপায় নিম্নরূপঃ

(ক) অধিকারের উপর গুরুত্ব প্রদানের উন্নয়ন ব্যবস্থা।

(খ) উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা।

প্রশ্ন ১৫। উন্নয়নের দুটি কুফল উল্লেখ করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের দুটি কৃষ্ণ নিম্নরূপঃ

(ক) উন্নয়ন সমাজ ব্যবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।

(খ) উন্নয়ন পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে জীবজগতকে বিপদাপন্ন করে তোলে।

প্রশ্ন ১৬। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্বারা উদ্ভূত যে কোনো দুটি অধিকারের দাবি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ গণতন্ত্রে মানুষের উত্থাপিত দুটি দাবি নিম্নরূপঃ

(ক) জণগণের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর মালিকানা সত্ত্বের অধিকার।

(খ) অধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় জনগণের পরামর্শ দানের অধিকার।

প্রশ্ন ১৭। পরিবেশবাদ কী?

উত্তরঃ পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত বিষয় হল পরিবেশবাদ। প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পরিবেশবাদের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন ১৮। উন্নয়নের দুটি প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। দুটি প্রতিবন্ধকতা নীচে উল্লেখ করা হলো–

(ক) পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ ক্রিয়ার সমস্যা।

(খ) বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতির সমস্যা।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। উন্নয়নের মূল্যায়ন বলতে কী বোঝ? 

উত্তরঃ উন্নয়নের নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় ফলই বিদ্যমান। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামাজিক সমতা ও ন্যায় স্থাপনে উন্নয়ন ফলপ্রসূ হচ্ছে কি না, সামাজিক সুযোগ–সুবিধার সুবণ্টন, ধনী দরিদ্রের বৈষম্য, পরিবেশ গত অনুকূল বা প্রতিকূল অবস্থা, মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ের নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয়দিক পর্যালোচনা করে যে ফলাফলের মূল্যায়ন করা হয়, তাকেই উন্নয়নের মূল্যায়ন বলা হয়।

প্রশ্ন ২। উন্নয়ন সম্পর্কিত যে কোনো তিনটি সমস্যার নাম লেখো?

উত্তরঃ উন্নয়ন সম্পর্কিত তিনটি সমস্যা নিম্নরূপঃ

(ক) উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গৃহীত উন্নয়নসমূহের ব্যয়ভার অত্যধিক হওয়ার জন্য অনেক সময় বহু রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে নিমজ্জিত হতে দেখা যায়।

(খ) উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণকালে সামাজিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। উদাহরণ স্বরূপ বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতি ঘটে।

(গ) উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন ৩। পরিবেশবাদ ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ প্রদূষণ, বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার, সহনশীল উন্নয়ন, বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষণ এবং গোলকীয় উষ্ণায়ন প্রভৃতি পরিবেশ আন্দোলনে ব্যবহৃত সাধারণ শব্দ। পরিবেশ আন্দোলন প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত। মূলত পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত থাকাই হল পরিবেশবাদ। প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও জীববৈচিত্র রক্ষা পরিবেশবাদ অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমান প্রজন্ম যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনুর্বর পৃথিবী, বিষাক্ত ও দূষিত বায়ুমণ্ডল রেখে না যায় তার জন্য পরিবেশবাদ সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমাদের অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। তাই পরিবেশবিদগণ মনে করেন যে মানবজাতির পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে বাঁচতে শেখা উচিত।

প্রশ্ন ৪। উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্বারা উদ্ভূত অধিকারের জন্য নতুন দাবিগুলো কী কী?

উত্তরঃ উন্নয়নের ফসল প্রায়ই সমাজের হাতে গোনা কয়েকজন ধনী ও ক্ষমতাবান সম্প্রদায়ের নিকট কেন্দ্রীভূত হয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে বাস্তুচ্যুতি ও জীবিকাহানির ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরফলে পীড়িত শ্রেণীর জনসাধারণের সুরক্ষা–সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্বাভাবিকভাবেই উদ্ভব হয়। তাদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তাদের পরামর্শ দানের অধিকার থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তাই তাদের অধিকার সুরক্ষার কারণে তাদের নতুন দাবিসমূহ উপস্থাপন করার আবশ্যকতা এসে পড়ে। সরকারি কার্যকলাপের ফলে জীবিকা বিপন্ন হলে তাদের জীবিকার পুনর্ব্যাবস্থা করা, প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা কার অধীনে থাকবে? এটা কি স্থানীয় বাসিন্দাদের অধীনে থাকবে, না সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অধীনে থাকবে, না বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর হাতে থাকবে? এসব নতুন নতুন দাবিগুলোর উদ্ভব হয়।

প্রশ্ন ৫। ব্যাখ্যা করোঃ– “রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কার্যসূচী।”

উত্তরঃ রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কার্যসূচী হল মানব উন্নয়ন মূল্যায়নের একটি প্রতিবেদন। উন্নয়নের মূল লক্ষ্য মানুষের জীবনযাত্রার গুণগত মান বৃদ্ধি করা। উন্নয়ন কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়। তাই উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থাগুলো খোঁজে বের করা প্রয়োজন। সে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কার্যসূচী মানব উন্নয়নের অর্থ প্রদান করেছে। রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কার্যসূচী সকল দেশের জন্য মানব উন্নয়ন সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী উন্নয়ন কেবলমাত্র জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি বা জাতীয় আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি বা পণ্যদ্রব্য উৎপাদন বৃদ্ধি নয়। এ প্রতিবেদনে মানব উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মানুষের জীবনের তিনটি উপাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। 

এগুলো হল–

(ক) জন্ম সময়ে জীবনের প্রত্যাশিত আয়ু।

(খ) প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং প্রশাখা স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিপ্রাপ্ত প্রাপ্ত–বয়স্কদের সাক্ষরতার হার এবং এর ভিত্তিতে নির্ধারিত উত্থানের স্তর।

(গ) জীবন যাত্রার উন্নত মানদণ্ড। এই কয়েকটি নির্ণায়কের মাধ্যমে সর্বত্র সমান উন্নয়নের পরিকল্পনা গৃহীত হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কার্যসূচী প্রতিবেদনে মানব উন্নয়ন সূচক ও মৌলিক উন্নয়ন সূচক পদ্ধতির মাধ্যমে মানব উন্নয়ন পরিমাপ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৬। সহনশীল বা বহনযোগ্য উন্নয়নের সম্পর্কিত বিষয়গুলো কী কী?

উত্তরঃ মানুষ উৎপাদন কার্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে। এ উপকরণগুলোকে ‘নবীকরণযোগ্য উপকরণ এবং অনবীকরণযোগ্য উপকরণ এই দুভাগে ভাগ করা হয়। উভয়প্রকার উপকরণের ব্যবহার এমনভাবে হওয়া প্রয়োজন যে বর্তমান প্রজন্মের ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ব্যবহার যাতে ব্যবহৃত না হয় তাহলে পরিবেশের সু–বহনমানযোগ্য ক্ষমতা সংরক্ষিত আছে বলা যাবে। যদি পরিবেশ সু–বহমানযোগ্য হয় তবে বিভিন্ন প্রজন্মের ব্যবহারের মধ্যে সমতা রক্ষিত হবে। সেজনা উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে একটি বহনযোগ্য উন্নয়নের স্তরে উন্নিত করে মানুষের জীবনযাত্রার গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধনই হবে উন্নয়ন পরিকল্পনার কার্যকরী লক্ষ্য। তাই এমন একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন যা পরিবেশগত দিকে দিয়ে মানুষের উপকারে আসবে এবং আর্থিক বিচারে লাভজনক ও সামাজিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য ও মঙ্গলজনক হবে। এভাবে সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় বা হচ্ছে বা হবে, তাকেই বহনযোগ্য বা সহনশীল উন্নয়ন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ৭। উন্নয়ন বিষয়ে পরিবেশবিদগণের দাবিগুলো কী কী?

উত্তরঃ মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। জল, স্থল ও বায়ু প্রদূষণের জন্য মূলত মানুষ কর্তৃক উন্নয়ন পরিকল্পনাই দায়ী। বনাঞ্চল ধ্বংস বা দুর্লভ প্রাণীর অবলুপ্তি বা গোলকীয় উষ্ণায়ণের জন্যও মানুষের উন্নয়নমূলক কার্যকলাপই দায়ী। তাই পরিবেশবিদগণের দাবিগুলো হল– মানুষের পরিবেশগত উপাদানের ক্ষতি না করে বাঁচতে শেখা উচিত। বর্তমান প্রজন্মের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা উচিত। পরিবেশের স্বার্থে সরকার যেন শিল্পনীতি ও উন্নয়ননীতি প্রবর্তন করে।

প্রশ্ন ৮। কেন্ সারো ভিওয়া–র নেতৃত্বে ও গোনি জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার্থে আন্দোলনের একটি ধারণা দাও?

উত্তরঃ কেন্ সারো ভিওয়া নাইজেরিয়ার বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও দূরদর্শন প্রযোজক ছিলেন। তিনি জন্মসূত্রে ওগোনি সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর রচনায় চারদিকের শোষণ পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্প দরিদ্র ওগোনি কৃষকদের পায়ের নীচের ধনসম্পদ নিয়ে এক দূষিত ভূমি রেখে গেছে এবং জনগণকে ভোটাধিকার হীন করে রেখেছে।

১৯৯০ সালে কেন্ সারো ভিওয়া ওগোনি জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার্থে একটি আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন। এটা ছিল তৃণমূল পর্যায়ে গোষ্ঠী ভিত্তিক একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এই আন্দোলনের ফলে ১৯৯৩ সালে তেল কোম্পানী ওগোনি থেকে সরে যায়। আর নাইজেরিয়ার সামরিক শাসক তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যার অভিযোগ এনে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ১৯৯৫ সালে কেন্ সারো ভিওয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

প্রশ্ন ৯। ‘নর্মদা বাঁচাও’ আন্দোলন সম্পর্কে একটি ধারণা দাও?

উত্তরঃ নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন হল পরিবেশ সংক্রান্ত একটি আন্দোলন। গুজরাটের নর্মদা নদীতে সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণ রুখতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও সমাজসেবিকা মেধা পাটেকর হলেন এই আন্দোলনের নেত্রী। এই বাঁধের জন্য ব্যাপক পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয় এবং সমগ্র এলাকায় প্রতিবাদ আরম্ভ হয়। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিশাল উর্বর জমি জলমগ্ন হবে যা বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে বিশাল সংখ্যক বন্যজন্ত্ত নিশ্চিহ্ন হবে। তাছাড়া প্রায় দশ লক্ষ লোক বাঁধের জলের কৃত্রিম বন্যায় বাস্তুহারা হবে। শ্রীমতি মেধা পাটকরের দাবি হল নর্মদা উপত্যকায় আক্রান্ত বিশাল সংখ্যক জনজাতির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা নতুবা প্রকল্প পরিত্যাগ করা।

প্রশ্ন ১০। ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ স্বাধীনোত্তর কালে ভারতবর্ষে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই পরিকল্পনাগুলোতে বহুসংখ্যক বৃহৎ প্রকল্প, যেমন – ভাকরা–নাঙ্গাল বাঁধ প্রকল্প, ইস্পাত প্রকল্প, শিল্প প্রতিষ্ঠা, খনি, সার উৎপাদন, কৃষি প্রযুক্তিকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশের সমৃদ্ধি দেশের দরিদ্রতম লোকের নিকট পৌঁছে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাস করা, বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তি কৌশল ইত্যাদি গ্রহণ করা হয়। Indian Institute of Technology (IIT)-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। শিক্ষায় অগ্রসর দেশসমূহের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিয়োগের উপর জোর দেওয়া হয়। এ সকল পরিকল্পনার প্রতিটি পাঁচ বছর মেয়াদী ছিল। তাই এ পরিকল্পনাগুলোকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আরম্ভ হয়েছিল ১৯৫০ সালে।

প্রশ্ন ১১। উন্নয়নের পরিণাম বা পরিণতি ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে একদিকে যেমন সবধরনের প্রগতি পরিকল্পিত হয়, অন্যদিকে নানা প্রকার সমস্যারও উদ্ভব হয়। নিম্নে উন্নয়নের কিছু সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত পরিণতি/পরিণাম আলোচনা করা হল –

(ক) উন্নয়নের সামাজিক পরিণতিঃ বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমুখী প্রকল্প, যেমন– বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ, শিল্পায়ন ও খনিজ পদার্থ উদ্ঘাটন প্রক্রিয়া অথবা নানা প্রকল্প রূপায়ণের ফলে বিশাল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত ও এলাকাচ্যুত হয়ে পড়ে। গ্রামীণরা বাস্তুচ্যুত ও এলাকাচ্যুত হওয়ার দরুন পরম্পরাগত পেশা হারায়। বাস্তুচ্যুতির ফলে অনেক দেশে নানা প্রকার সংগ্রামও সংঘটিত হয়। ভারতে ‘নর্মদা বাচাও আন্দোলন’ এর একটি উদাহরণ।

(খ) উন্নয়নের পরিবেশগত পরিণতিঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিবেশ হানি ঘটায়। এরফলে সুনামি, গোলকীয় উষ্ণায়ন, বনরাজি ধ্বংস, নদী, হ্রদ, অন্যান্য জলাশয়ের জলের প্রদূষণ ও মাত্রা হ্রাস প্রভৃতি নানা প্রকার সমস্যার উদ্ভব হয়। উন্নয়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে বর্ধিত ‘সবুজ গৃহ’ (Green house) নির্গত গ্যাসের দরুন মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জল স্ফীত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ, ও মালদ্বীপের মতো নীচু এলাকার জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারতের দীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকাও তাতে প্রভাবিত হতে পারে।

শিল্পায়নের ফলে বায়ু প্রদূষণ হয় এবং এর ফলে সমাজের সকল শ্রেণী প্রভাবিত হয়। সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার সমাজ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে। বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে দরিদ্র মানুষ জ্বালানি কাঠ, ঔষধ ও ঔষধি সামগ্রী সংগ্রহের জন্য তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হয়।

(গ) উন্নয়নের মূল্যায়নঃ যদিও বহুদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যতা হ্রাস করেছে, তথাপি এখনও অনেক উন্নয়নশীল দেশ নানা প্রকার অর্থনৈতিক সমস্যায় ভোগছে। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে থাকা বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়নের ফল হতে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনেও এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বিশ্বের সম্পদ ও সেবার অধিক অংশ হাতে গোনা কয়েকটি ধনিকশ্রেণীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। এরূপ অসমতা সামাজিক সুযোগ–সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তবে এর সাফল্য খতিয়ান খুবই নিম্নগামী। 

প্রশ্ন ১২। উন্নয়নের বিকল্প প্রক্রিয়া সমূহ ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অধিক গণতান্ত্রিক সর্বস্ব তথা ন্যায় সংগত করে তোলার জন্য দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। এই নুতন ধ্যান–ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি উন্নয়নের প্রক্রিয়াসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

(ক) অধিকারের উপর গুরুত্ব প্রদানকারী উন্নয়ন ব্যবস্থাঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনসাধারণকে বিভিন্ন ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতি ঘটে। এরূপ পরিস্থিতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষ জীবিকার উৎস হতে বঞ্চিত হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকারের গুরুত্ব বিকল্প উন্নয়ন ব্যবস্থায় গ্রহণ করা হয়। শিল্পায়নের ফলে বাস্তচ্যুত বা এলাকাচ্যুত মানুষের পুনর্বাসনের অধিকার, জীবিকার অধিকার ইত্যাদি বিকল্প উন্নয়ন ব্যবস্থার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।

(খ) গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণঃ উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র উভয়েরই লক্ষ্য হল মানুষের সামগ্রিক বিকাশ সাধন। উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক করে তোলার। প্রধান উপায় হল উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করা কার্যসূচী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার স্থানীয় জনগণের উপর ন্যস্ত করা অর্থাৎ কোনো অঞ্চলের কোনো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সে অঞ্চলের জনগণের পরামর্শ গ্রহণ করা।

উন্নয়ন সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই কোনো অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পিত করার সময় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আবশ্যক।

(গ) উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার উপর গুরুত্ব দেওয়াঃ উন্নয়নের মূল্যায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন ও মানুষের জীবনযাত্রার উপর গুরুত্ব আরোপ করে উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অত্যধিক সামাজিক ও পরিবেশগত পরিণামযুক্ত উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্যাগ করে প্রাকৃতিক সম্পদের নবীকরণযোগ্য উপকরণ অধিক মাত্রায় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা উচিত। স্থানীয় পর্যায়ে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে রাখা, সৌরশক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কার্যপ্রণালী গ্রহণে জনগণকে উৎসাহ প্রদান করা উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে। বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ বা অন্য কোনো শিল্পায়নের সময় যাতে মানুষ বাস্তুচ্যুত না হয়, পরম্পরাগত জীবিকা হতে বঞ্চিত না হয় ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন ১৩। বর্তমান কালে উন্নয়নের পরিবর্তনশীলতার একটি ধারণা দাও?

উত্তরঃ আজকাল উন্নয়নের ধারণা পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন উন্নয়ন কেবলমাত্র কোনো দেশের আর্থিক উন্নয়ন নয়। বর্তমানে উন্নয়ন অর্থ হল সমাজের সকল শ্রেণীর সমহারে উন্নয়ন। সেজন্য উন্নয়নকে জনমুখী করে তোলার জন্য উন্নয়নের নানা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মানুষের জীবনযাত্রার মানদণ্ড বৃদ্ধি করা ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির বিকাশ সাধনের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে সহনশীল বা বহনযোগ্য উন্নয়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমানে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অধিকার তথা তাদের অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্তের কথাও বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নতুন ধ্যান–ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রশ্ন ১৪। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো? 

উত্তরঃ উন্নয়নের বিকল্প ব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয়তা গড়ে তোলার উপর নজর দেওয়া হয়। মানুষের সামগ্রিক উন্নতি গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উভয়েরই লক্ষ্য। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনসাধারণের কল্যাণ বা মঙ্গল কিভাবে সম্ভব তা নির্ণয় করার দায়িত্ব জনসাধারণের মতামতের উপর ন্যস্ত করা উচিত। উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গণতান্ত্রিক করে তোলার প্রধান উপায় হচ্ছে উন্নয়ন কার্যসূচী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার স্থানীয় জনগণের উপর ন্যস্ত করা। কোনো অঞ্চলের কোনো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণকে পরামর্শদান ও সিদ্ধান্তগ্রহণের সুবিধা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

উন্নয়ন সকলের জন্য জরুরি। সকলেরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসালয়, বৈদ্যুতিকবাতি ইত্যাদি সবকিছুরই প্রয়োজন। কিন্তু একটি অঞ্চলে রাস্তাঘাট কীভাবে নির্মাণ করলে সকল জনসাধারণ উপকৃত হবে, তা সেই অঞ্চলের জনসাধারণই ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারে। সেই রাস্তাঘাট নির্মাণে সেই অঞ্চলটির অন্যান্য সম্পদ কত কম ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা একমাত্র সেই অঞ্চলের জনসাধারণই উপলব্ধি করতে পারবে। তাই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের অংশ গ্রহণ গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে হওয়া একান্ত আবশ্যক।

প্রশ্ন ১৫। “বর্তমানে উন্নয়ন বিতর্কিত আলোচ্য বিষয়।”- মন্তব্য করো?

উত্তরঃ বর্তমানে উন্নয়ন বলতে কেবলমাত্র আর্থিক বিকাশ নয়; তাঁর চেয়েও অধিক কিছু বোঝায়। উন্নয়ন বলতে পূর্বে জাতীয় আয় বৃদ্ধিকে গণ্য করা হতো। এখন উন্নয়ন বলতে জনগণের সুখ–সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা, সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রার মানদণ্ড বৃদ্ধি করার সঙ্গে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতির বিকাশ সাধনকেও বোঝায়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পরিসর বর্তমানে ব্যাপক। ‘উন্নয়ন’ শব্দটির সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া যেমন কঠিন তেমনি উন্নয়ন–সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করাও দুঃসাধ্য। উন্নয়নের ফসল সমহারে জনসাধারণের মধ্যে বণ্টন হয় না। তবে উন্নয়নের পরিণতি সাধারণত দরিদ্র জনসাধারণের উপরই প্রভাব বিস্তার করে। তাই বর্তমানে উন্নয়ন একটি বিতর্কিত আলোচ্য বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

প্রশ্ন ১৬। প্রচলিত বিকাশের মডেলে পারিপার্শ্বিকতায় আনা ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা করো?

উত্তরঃ প্রচলিত বিকাশ মডেলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পারিপার্শ্বিকতার উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সুনামির একটি অন্যতম প্রধান কারণ। অত্যধিক কল–কারখানা স্থাপনের ফলে বায়ুমণ্ডলে সবুজ গৃহ গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াকে বিশ্ব উষ্ণায়ণ বলা হয়। বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ ক্রমাগত গলছে। যার দরুণ বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মতো নিচু এলাকাগুলো জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। তাছাড়া স্বল্পমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে।

উপরোক্ত উন্নয়ন প্রক্রিয়া কালক্রমে আমাদের সকলের উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রচলিত বিকাশ মডেলে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বায়ুপ্রদূষণ ও জল প্রদূষণের মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত পরিণাম মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

প্রশ্ন ১৭। উন্নয়নের বৈশিষ্ট্যমূলক আলোচনা করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের ধারণাটি বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গুরুত্ব লাভ করে। উন্নয়নের ধারণা বলতে সুজীবন যাপনের স্পৃহা বোঝায়। এটি একটি শক্তিশালী স্পৃহা। 

উন্নয়নের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ–

(ক) উন্নয়ন একটি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী গতিশীল প্রক্রিয়া।

(খ) উন্নয়ন দেশের আদর্শের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।

(গ) উন্নয়ন কেবল আর্থিক বিকাশ নয়, এর সঙ্গে মানব উন্নয়নও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

(ঘ) উন্নয়নের নেতিবাচক ও ইতিবাচক উভয় পরিণামই দেখা যায়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। উন্নয়নের পরিবেশগত পরিণাম আলোচনা করো?

অথবা,

পারিপার্শ্বিকতার উপর বিকাশের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে একটি টীকা লেখো?

উত্তরঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অধিক পরিমাণে পরিবেশ হানি ঘটে। ফলস্বরূপ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সুনামি, গোলকীয় উষ্ণায়ণ, হিমবাহের গলন, বনাঞ্চল ক্ষতি সাধন, নদী, হ্রদ ও অন্যান্য জলাশয়ের জল প্রদূষিত হওয়া প্রভৃতি নানা প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিল্পায়নের দরুন বায়ুমণ্ডলে বর্ধিত ‘সবুজ গৃহ’ (Green house) নির্গত গ্যাসের ফলে দুমেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জল স্ফীত হচ্ছে। যার দরুন বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং ভারতের দীর্ঘ উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবল বন্যার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

পরিবেশ সংকট কালক্রমে আমাদের সকলের উপরই প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শিল্পায়নের ফলে বায়ু প্রদূষণ ও জল প্রদূষণ হচ্ছে। শিল্পায়নের নামে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার সমাজের বঞ্চিত শ্রেণীকে তীব্রভাবে সমস্যার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত পরিলাম মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সুতরাং মানবজাতির পরিবেশের হানি না করে পরিবেশকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।

প্রশ্ন ২। উন্নয়ন প্রকল্প বা নমুনাগুলোর সমালোচনামূলক আলোচনা করো?

উত্তরঃ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বা নমুনাগুলোর নিম্নে পর্যালোচনা করা হলঃ

(ক) অধিকাংশ উন্নয়ন নমুনাগুলো জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানদও উন্নতির উপর গুরুত্ব প্রদান করে। এই উন্নয়ন নমুনাগুলো বাস্তবায়নের ফলে একদিকে যেমন সামাজিক ও আর্থিক প্রগতি পরিকল্পিত হয়, অন্যদিকে সমাজে নানাপ্রকার সমস্যার উদ্ভব হয়। বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্প রূপায়ণের সময় বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতি ঘটে এবং তারা পরম্পরাগত জীবিকা হতে বঞ্চিত হয়।

(খ) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে ও ধ্বংস করে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্প রূপায়ণ করে জাতীয় আয় সত্যিই বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশের উপকরণগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার মূল্যবান বিরল বনরাজি ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে সুনামি, গোলকীয় উষ্ণায়ন প্রভৃতি নানা প্রকার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিল্পায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে ‘সবুজ গৃহ’ (Green house) নির্গত গ্যাসের ফলে দুই মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর স্ফীত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ভারতের দীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন নমুনা/প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশ সংকট আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। তাই আমাদের পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে বাঁচতে শেখা উচিত।

(গ) বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন নমুনাগুলোর বাস্তবায়ন আলোচনা করে মূল্যায়ন নির্ধারণ করলে আমরা দেখতে পাই যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নিরক্ষতার হার হ্রাস পেয়েছে, শিশু মৃত্যুর হার ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল সমাজে সমতা ও ন্যায় সৃষ্টি করা। কিন্তু এটা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প/নমুনাই কার্যকরী করতে পারছে না। সামগ্রিকভাবে পুরো বিশ্বেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্র সংঘের বিভিন্ন প্রতিবেদনও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এরপ অসমতা সামাজিক সকল সুযোগ–সুবিধা বণ্টনের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।

প্রশ্ন ৩। আদর্শ উন্নয়ন প্রকল্পের আবশ্যকীয় শর্তসমূহের ধারণা দাও?

উত্তরঃ আদর্শ উন্নয়ন প্রকল্প/নমুনার রূপায়ণের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো নিম্নরূপঃ

(ক) জীবন যাত্রার মৌলিক প্রয়োজন মেটানোঃ মানুষের জীবনযাত্রার মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানো আদর্শ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম শর্ত। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যের যত্ন ও শিক্ষার মতো মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পরিপূর্ণ করা। 

(খ) বঞ্চিত শ্রেণীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য বহু মানুষ বাস্ত্যচ্যুত ও এলাকাচ্যুত হয় এবং পরম্পরাগত জীবিকা হতে বঞ্চিত হয়। আদর্শ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এ সকল বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যাতে অপেক্ষাকৃত কম হারে মানুষের বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতি ঘটে এর উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন ও ক্ষতি পুরণের ব্যবস্থা রাখা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য জীবিকার অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।

(গ) পরিবেশগত পরিণাম হ্রাসের ব্যবস্থাঃ আদর্শ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত পরিণাম হ্রাসের চেষ্টা করা হয়। বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের মত উন্নয়নমূলক কার্যে যাতে পরিবেশের উপকরণগুলো কম ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। আদর্শ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়। 

প্রশ্ন ৪। বর্তমান বিশ্বের উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য/লক্ষ্যগুলো আলোচনা করো?

উত্তরঃ বর্তমান বিশ্বের উন্নয়ন পরিকল্পনা সমূহের লক্ষ্য/উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) জীবনযাত্রা প্রণালীর উপযুক্ত মানদণ্ডঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হল সকলের জীবনযাত্রা প্রণালীর উপযুক্ত মানদণ্ড প্রদান করা। সকলের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানো ও শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা।

(খ) দরিদ্র শ্রেণীকে সুযোগ–সুবিধা প্রদানঃ উন্নয়ন পরিকল্পনা সমূহের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল উন্নয়নের ফসল দরিদ্র শ্রেণীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

(গ) গণতান্ত্রিক উপায়ঃ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সকলের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা। কারণ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এই দুটির সমন্বয়েই সকলের কল্যাণ সম্ভব। 

(ঘ) বেকার সমস্যার সমাধানঃ উন্নয়নের একটি প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হল বেকারত্ব দূর করা। এ উদ্দেশ্যে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় মানব সম্পদ উন্নয়নের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয় এবং বেকারদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া হয়।

(ঙ) সহনশীল বা বহনযোগ্য উন্নয়নঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে একটি বহনযোগ্য স্তরে উন্নীত করে মানুষের জীবনের গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধন করাই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য। নবীকরণযোগ্য ও অনবীকরণযোগ্য উভয় প্রকার প্রাকৃতিক উপকরণ এমনভাবে ব্যবহার হওয়া দরকার যেন বর্তমান প্রজন্মের ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যেৎ প্রজন্মের জন্য ব্যবহার ব্যবহৃত না হয় তাহলে পরিবেশের সু–বহনযোগ্য ক্ষমতা বজায় থাকবে। সহনশীল উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা বর্তমান বিশ্বের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহের মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন ৫। উন্নয়নের সংজ্ঞা দাও। উন্নয়নের বিকল্প ধারণাটি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

উত্তরঃ (ক) অধিকাংশ উন্নয়ন নমুনাগুলো জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানদও উন্নতির উপর গুরুত্ব প্রদান করে। এই উন্নয়ন নমুনাগুলো বাস্তবায়নের ফলে একদিকে যেমন সামাজিক ও আর্থিক প্রগতি পরিকল্পিত হয়, অন্যদিকে সমাজে নানাপ্রকার সমস্যার উদ্ভব হয়। বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্প রূপায়ণের সময় বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস্তুচ্যুতি ও এলাকাচ্যুতি ঘটে এবং তারা পরম্পরাগত জীবিকা হতে বঞ্চিত হয়।

(খ) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে ও ধ্বংস করে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্প রূপায়ণ করে জাতীয় আয় সত্যিই বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশের উপকরণগুলোর যথেচ্ছ ব্যবহার মূল্যবান বিরল বনরাজি ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে সুনামি, গোলকীয় উষ্ণায়ন প্রভৃতি নানা প্রকার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিল্পায়নের ফলে বায়ুমণ্ডলে ‘সবুজ গৃহ’ (Green house) নির্গত গ্যাসের ফলে দুই মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর স্ফীত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ভারতের দীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। 

বর্তমানে উন্নয়নের পরিমাণের বিকল্প রাস্তা খোঁজা হচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কার্যক্রম (UNDP) কর্তৃক প্রকাশিত মানব বিকাশ প্রতিবেদন এইরূপ একটি প্রচেষ্টা। চিরাচরিত উন্নয়নের অনুসৃত ধারণার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় বর্তমানে উন্নয়নের বিকল্প ধারণার উদ্ভব হয়েছে।

উন্নয়নের সুফল ক্ষমতাশীলগণ কুক্ষিগত করছে। এমতাবস্থায় উন্নয়নের কুফল সমাজের অবদমিত ও দরিদ্রতম শ্রেণি ভোগ করে তা পরিবেশ বিপর্যয়জনিত কারণেই হোক অথবা বাস্তুচ্যুত বা জীবিকা হারানো বশতই হোক। দুর্গত জনগণ জীবিকার অধিকার দাবি করতে পারে, তারা সম্পদের মালিকানা দাবি করতে পারে। বিকল্প ধারণায় সহনশীল বা বহনযোগ্য উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা–ভাবনা করা হয়। জনগণ গণতান্ত্রি ক উপায়ে উন্নয়ন কার্যে অংশগ্রহণ করতে পারবে। উন্নয়নের সুফল ভোগ করার অধিকার জনগণের থাকা উচিত। তাই উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা, রচনা করা এবং বাস্তবায়ন করার জন্য জনগণের সমান অধিকার থাকা উচিত। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উভয়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণের রূপায়নের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং উন্নয়নের বিকল্প ধারণায় জনগণের অধিকার দাবি এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ সহ বহনযোগ্য উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। “উন্নয়ন’ শব্দ বলতে তুমি কী বোঝ? উন্নয়নের এরূপ সংজ্ঞা থেকে সমাজের সকল শ্রেণীর লোক উপকৃত হবে কি?

উত্তরঃ উন্নয়ন হল একটি জটিল বিষয় যা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে। এইজন্য আমরা উন্নয়ন সম্বন্ধে ‘সামাজিক উন্নয়ন’, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ এবং ‘রাজনৈতিক উন্নয়ন’ প্রভৃতি কথাসমূহ ব্যবহার করি।

কল্ম ও জেইগারের মতে, – “উন্নয়ন হল প্রগতি সহ পরিবর্তন।” টি. এন. চতুর্বেদীর মতে, – “উন্নয়ন হল একটি পদ্ধতি যা সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত।” জনগণের সার্বিক সুখ–সমৃদ্ধির বিকাশ সাধনের একটি প্রক্রিয়া হল উন্নয়ন। 

উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণীর লোক উপকৃত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নাও হতে পারে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কিছু সংখ্যক মানুষ উপকৃত হতে পারে। আবার কিছু সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত বা এলাকাচ্যুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরম্পরাগত জীবিকা অর্জনের সুযোগ হতেও বঞ্চিত হতে পারে। তাই উন্নয়নের দ্বারা একশ্রেণীর লোক উপকৃত হলেও অন্য কোন শ্রেণীর লোকসমূহ ক্ষতিগ্রস্তও হয়। 

প্রশ্ন ২। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অনুসৃত উন্নয়নসমূহের সামাজিক ও পরিবেশগত কতিপয় পরিণাম আলোচনা করো? 

উত্তরঃ উন্নয়নের ধারণা হল সু জীবন যাপনের ইচ্ছা। তাই প্রথমদিকে উন্নয়নশীল দেশসমূহ পশ্চিমী দেশসমূহের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করত। এ সকল পশ্চিমী দেশসমূহের উন্নয়নের পরিকল্পনাগুলো ছিল অধিক ব্যয় বহুল। তাই অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ পশ্চিমী উন্নয়ন তত্ত্ব অনুসরণ করে বিশাল অঙ্কের ঋণে নিমজ্জিত হত। আর্থিক বিকাশের গতিও দ্রুত ছিল না।

এই প্রকার উন্নয়নের সামাজিক পরিণাম ছিল ভয়ানক। বড়ো বড়ো প্রকল্পগুলো স্থাপনকালে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত ও এলাকাচ্যুত হয়ে পড়ে। বিশাল সংখ্যক মানুষ পরম্পরাগত জীবিকা অর্জনের সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়। ফলে বহুদেশে নানাপ্রকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ভারতে নর্মদা নদীতে সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পের নির্মাণের বিরুদ্ধে ‘নর্মদা বাচাও আন্দোলন’ তীব্রভাবে চলছে। এই এলাকায় লক্ষ–লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষই জনজাতি এবং দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত। তাছাড়া এই বাঁধপ্রকল্প এই এলাকার বিশাল বনাঞ্চল জলমগ্ন করে পরিবেশের ভারসাম্যের নষ্ট করবে। উন্নয়ন প্রাকৃতিক পরিবেশকেও ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সুনামির একটি অন্যতম প্রধান কারণ। মেরুঅঞ্চলের বরফ গলার প্রধান কারণ হল পরিবেশে ক্রমাগত গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি। এককথায় আমরা বলতে পারি উপরোক্ত ধাঁচের উন্নয়নের সামাজিক ও পরিবেশগত পরিণাম আমাদেরকে ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ধাবমান করছে।

প্রশ্ন ৩। উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্বারা উদ্ভূত অধিকার সংক্রান্ত কতিপয় নতুন দাবি কী কী? 

উত্তরঃ উন্নয়নের ফসল প্রায়ই সমাজের হাতে গোনা কয়েকজন ধনী ও ক্ষমতাবান সম্প্রদায়ের নিকট কেন্দ্রীভূত হয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কালে বাস্তুচ্যুতি ও জীবিকাহানির ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরফলে পীড়িত শ্রেণীর জনসাধারণের সুরক্ষা–সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্বাভাবিকভাবেই উদ্ভব হয়। তাদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তাদের পরামর্শ দানের অধিকার থাকা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তাই তাদের অধিকার সুরক্ষার কারণে তাদের নতুন দাবিসমূহ উপস্থাপন করার আবশ্যকতা এসে পড়ে। সরকারি কার্যকলাপের ফলে জীবিকা বিপন্ন হলে তাদের জীবিকার পুনর্ব্যাবস্থা করা, প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা কার অধীনে থাকবে? এটা কি স্থানীয় বাসিন্দাদের অধীনে থাকবে, না সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অধীনে থাকবে, না বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর হাতে থাকবে? এসব নতুন নতুন দাবিগুলোর উদ্ভব হয়।

প্রশ্ন ৪। সাধারণ কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, এটি সুনিশ্চিত করতে অন্যান্য সকল প্রকার সরকারের চেয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের সুবিধা কতটুকু? 

উত্তরঃ বর্তমানে গণতন্ত্রকে একটি আদর্শ শাসন ব্যবস্থা বলে গণ্য করা হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অংশীদার হতে পারে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে স্থানীয় সংস্থা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে স্থানীয় সংস্থাগুলোকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা হয়েছে। তাছাড়া যে সকল বিষয় জনগণকে প্রভাবিত করে সে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করা আবশ্যক। কারণ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হওয়া উচিত। এজন্য সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে উন্নয়ন–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সুনিশ্চিত করবার জন্য অন্যান্য সরকারের অপেক্ষা গণতান্ত্রিক সরকার অধিক সুবিধাজনক। 

প্রশ্ন ৫। উন্নয়নের সামাজিক ও পরিবেশগত পরিণামের জন্য রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণকারী গণ আন্দোলনসমূহ তোমার মতে কতটুকু সফল? উদাহরণসহ আলচনা করো?

উত্তরঃ উন্নয়নের সামাজিক ও পরিবেশগত পরিণাম অত্যধিক। তাই এই পরিণাম হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য গণ আন্দোলন সংঘটিত হয়। আর এই গণআন্দোলনসমূহ উন্নয়নের সামাজিক ও পরিবেশগত পরিণামের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। পশ্চিমীদেশসমূহে গৃহীত উন্নয়নের নমুনা কতিপয় উন্নয়নশীল দেশে ব্যয়বহুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। যেমন উন্নত দেশ হতে ঋণ গ্রহণ করার ফলে আফ্রিকার বহুদেশ আজ পর্যন্ত ঋণে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। ভারতে ‘নর্মদা বাচাও’ আন্দোলন ও ‘চিপকো’ আন্দোলন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সফল হয়েছে। বড়ো বড়ো বাঁধ প্রকল্প নির্মাণের ফলে লক্ষ লক্ষ লোক সংশ্লিষ্ট এলাকা হতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং এ বাস্তুচ্যুতির ফলে অনেকের জীবনহানি হয়েছে। বহুলোক পরম্পরাগত জীবিকা হারিয়েছে।

এর ফলে অনেক দেশে বড়ো বড়ো নদী বাঁধ প্রকল্প নির্মাণ এবং অন্যান্য নানা প্রকল্প যা সাধারণ জনগণের অকল্যাণকারী সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে গণ আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে এবং তা অনেকাংশেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top