Class 11 Political Science Chapter 14 সামাজিক ন্যায়

Class 11 Political Science Chapter 14 সামাজিক ন্যায় answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Political Science Chapter 14 সামাজিক ন্যায় and select needs one.

Class 11 Political Science Chapter 14 সামাজিক ন্যায়

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Political Science Chapter 14 সামাজিক ন্যায় Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

সামাজিক ন্যায়

পাঠ: ১৪

দ্বিতীয় খণ্ড

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। প্লেটো তার কোন্ গ্রন্থে ন্যায়ের তত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন? 

উত্তরঃ “দি রিপ্লাবিক” (The Republic)। 

প্রশ্ন ২। অ্যারিস্টটল তাঁর কোন্ গ্রন্থে ন্যায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন? 

উত্তরঃ “দ্যা পলিটিক্স” (The Politics)।

প্রশ্ন ৩। ‘ A Theory of Justice’ গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ জন রাওলস্ (John Rawls)। 

প্রশ্ন ৪। অ্যারিস্টটল প্রদত্ত যে কোনো এক প্রকার ন্যায়ের উল্লেখ করো?

উত্তরঃ বিতরণ মূলক ন্যায়।

প্রশ্ন ৫। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ ধারায় আইনগত ন্যায়ের উল্লেখ আছে? 

উত্তরঃ ২১ নং ধারায়। 

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদ অনুসারে ভারতে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে?

উত্তরঃ ১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী।

প্রশ্ন ৭। ভারতে MNREGA ও IRDP কার্যসূচী কোন্ প্রকার ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য চালু করা হয়েছে?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক ন্যায়।

প্রশ্ন ৮। কোন প্রকার ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য জমিদারি প্রথা নির্মূল করা হয়েছে?

উত্তরঃ সামাজিক ন্যায়।

প্রশ্ন ৯। ম্যাগসাই পুরস্কার কোন্ রাষ্ট্র বিনোভা ভাবেকে প্রদান করেছিল?

উত্তরঃ ফিলিপাইনস্ সরকার।

প্রশ্ন ১০। প্লেটোর “গণরাজ্য” বা Republic- এর ভিত্তি কী ছিল?

উত্তরঃ ন্যায়।

প্রশ্ন ১১। “ন্যায় হচ্ছে এমন কিছু একটা, যেটি শুধুমাত্র করা ন্যায়সঙ্গত এবং না–করা অসঙ্গত বুঝায় না, কিন্তু কিছু ব্যক্তিবর্গ আমাদের কাছে তাদের নৈতিক অধিকার হিসেবে দাবি করতে পারে।” – একথা কে বলেছেন?

উত্তরঃ জন স্টুয়ার্ট মিল।

প্রশ্ন ১২। বাজার বিতরণের স্বপক্ষে যে যুক্তিটি উপস্থাপিত হয়েছে সেটি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ বাজার বিতরণের স্বপক্ষে যে যুক্তিটি উপস্থাপিত হয়েছে সেটি হচ্ছে বাজার বিতরণ আমাদেরকে অধিকতর পছন্দের সুযোগ করে দেয়। 

প্রশ্ন ১৩। “সত্য বলা এবং অপরের ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে ন্যায় নিহিত।” – এটি কোন্ দার্শনিকের অভিমত?

উত্তরঃ গ্রিক দার্শনিক সেফালাস।

প্রশ্ন ১৪। “অপরের কাজে হস্তক্ষেপ না করে নিজ কার্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করাকেই ন্যায় বলে।” – কার অভিমত?

উত্তরঃ প্লেটো।

প্রশ্ন ১৫। কোন জার্মান দার্শনিক ন্যায়ের ধারণাকে মানুষের মর্যাদার সঙ্গে যুক্ত করেছেন?

উত্তরঃ ইমানুয়েল কান্ট (Immanuel Kant)। 

প্রশ্ন ১৬। বিতরণমূলক সুবিচারের ধারণাটি কে প্রবর্তন করেছিলেন?

উত্তরঃ অ্যারিস্টটল।

সঠিক উত্তর বেছে লেখোঃ

প্রশ্ন ১। ন্যায় বা ইংরেজি ‘জাস্টিস’ (Justice) শব্দটি জাস্ (Jus) শব্দ হতে উদ্ভূত হয়েছে। ‘জাস্’ (Jus) শব্দটি কোন্ ভাষার অন্তর্ভুক্ত?

(ক) ল্যাটিন ভাষা।

(খ) গ্রিক ভাষা।

(গ) ইংরেজি ভাষা।

(ঘ) ফরাসি ভাষা। 

উত্তরঃ (ক) ল্যটিন ভাষা।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় সংবিধানে কোনপ্রকার ন্যায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে?

(ক) সামাজিক।

(খ) রাজনৈতিক।

(গ) অর্থনৈতিক।

(ঘ) বৃষ্টিগত।

উত্তরঃ (ক) সামাজিক।

প্রশ্ন ৩। কোন ধরনের শাসনব্যবস্থায় জনগণ সঠিক ন্যায় পেতে পারে?

(ক) একনায়কতন্ত্র।

(খ) সমষ্টিতন্ত্র।

(গ) রাজতন্ত্র।

(ঘ) গণতন্ত্র।

উত্তরঃ (ঘ) গণতন্ত্র।

প্রশ্ন ৪। সামাজিক ন্যায় দাবি করে –

(ক) আইনগত ও রাজনৈতিক সমতা। 

(খ) বৈষম্য সমূহের অনুপস্থিতি ও সমান সুযোগের উপস্থিতি।

(গ) অর্থনৈতিক সমতা ও পূর্ণ কর্ম সংস্থান। 

(ঘ) সমান অধিকার ও স্বাধীনতা।

উত্তরঃ (খ) বৈষম্যসমূহের অনুপস্থিতি ও সমান সুযোগের উপস্থিতি।

প্রশ্ন ৫। নীচের কোনটি ন্যায়ের মৌলিক নীতি নয়?

(ক) সত্য।

(খ) আইনের দৃষ্টিতে সমান।

(গ) স্বাধীনতা।

(ঘ) সম্পত্তি।

উত্তরঃ (ঘ) সম্পত্তি। 

প্রশ্ন ৬। ন্যায় পরিচালিত হয় ……. দ্বারা।

(ক) শাসন বিভাগ। 

(খ) বিচার বিভাগ। 

(গ) আইন বিভাগ। 

(ঘ) রাজনৈতিক দলসমূহ।

উত্তরঃ (খ) বিচার বিভাগ।

প্রশ্ন ৭। কে যুক্তি দেখিয়েছেন যে রাজার ন্যায় রক্ষাকল্পে দোষীকে শান্তি এবং সাধুকে পুরষ্কৃত করা উচিত? 

(ক) প্লেটো। 

(খ) কনফুসিয়াস।

(গ) সক্রেটিস। 

(ঘ) অ্যারিস্টটল। 

উত্তরঃ (খ) কনফুসিয়াস।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। যে কোনো দুটি পৌর অধিকার উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ দুটি পৌর অধিকার হল– 

(ক) জীবনের অধিকার। এবং 

(খ) স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার।

প্রশ্ন ২। যে কোনো দুপ্রকার রাজনৈতিক অধিকার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ দু প্রকার রাজনৈতিক অধিকার হল–

(ক) ভোটাধিকার। ও 

(খ) নির্বাচিত হওয়ার অধিকার। 

প্রশ্ন ৩। যে কোনো দু প্রকার অর্থনৈতিক অধিকার উল্লেখ করো?

উত্তরঃ দু প্রকার অর্থনৈতিক অধিকার হলঃ 

(ক) কর্মের অধিকার। ও 

(খ) পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের অধিকার।

প্রশ্ন ৪। ন্যায়ের যে কোনো দুটি মৌলিক নীতি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ (ক) সততা। 

(খ) স্বাধীনতা। 

(গ) আইনের দৃষ্টিতে সমান।

প্রশ্ন ৫। ন্যায়ের যে কোনো দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ন্যায়ের দুটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ

(ক) সততাঃ সততা হল ন্যায়ের প্রধান ভিত্তি। সততার অর্থ হল ঘটনার প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করা।

(খ) আইনের চক্ষে সমানঃ সকল নাগরিকই আইনের চক্ষে সমান। জাতি, বর্ণ, ধর্ম প্রভৃতির ভিত্তিতে নাগরিকদের বৈষম্য করা উচিত নয়।

প্রশ্ন ৬। ন্যায়ের যে কোন দুটি নীতি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ন্যায়ের দুটি নীতি হল নিম্নরূপঃ

(ক) সকলের প্রতি সম–আচরণ।

(খ) সমানুপাতিক ন্যায়।

(গ) বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি।

প্রশ্ন ৭। দুজন মহান চিন্তাবিদদের নাম করো যাদের মতে, অন্যায় ন্যায় অপেক্ষা অধিকতর ভাল।

উত্তরঃ গ্লৌকন (Glaucon) এবং অ্যাডিমেন্টাস (Adeimantus )। 

প্রশ্ন ৮। মুক্ত বাজার অর্থনীতির দুটি সুবিধা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ মুক্ত বাজার অর্থনীতির দুটি সুবিধা হলঃ

(ক) মুক্ত বাজার অর্থনীতি ব্যক্তির সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের জন্য স্বাধীনভাবে প্রতিযোগিতার সুযোগ প্রদান করে।

(খ) জনগণকে অধিকতর পছন্দের সুযোগ করে দেয়।

প্রশ্ন ৯। মুক্ত বাজার অর্থনীতির দুটি অসুবিধা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ মুক্ত বাজার অর্থনীতির অসুবিধাগুলো হল নিম্নরূপঃ

(ক) মুক্ত প্রতিযোগিতা ধনিক শ্রেণীর জন্য কল্যাণকর হলেও এটা দরিদ্র শ্রেণীর জন্য ক্ষতিকর।

(খ) মুক্ত বাজার অর্থনীতি সকলকে মৌলিক দ্রব্য ও সেবা সমূহের যোগান দিতে পারে না।

প্রশ্ন ১০। অ্যারিস্টটলের দু প্রকার ন্যায় উল্লেখ করো?

উত্তরঃ অ্যারিস্টটলের দুপ্রকার ন্যায় নিম্নরূপঃ

(ক) সংশোধনমূলক ন্যায় (Corrective Justice)।

(খ) বিতরণ মূলক ন্যায় (Distributive Justice)।

প্রশ্ন ১১। ন্যায়ের যে কোনো দুটি সংজ্ঞা দাও? 

উত্তরঃ গ্রিক দার্শনিক সেফালাস–এর মতে “সত্য বলা ও অপরের ঋণ পরিশোধের মধ্যে ন্যায় নিহিত।”

প্লেটোর মতে – “অপরের কাজে হস্তক্ষেপ না করে নিজ কার্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করাকেই ন্যায় বলে।”

প্রশ্ন ১২। ভারতীয় রাষ্ট্রে নাগরিকদের সামাজিক ন্যায় রক্ষাকল্পে গৃহীত যে কোনো দুটি ব্যবস্থা উল্লেখ করো?

উত্তরঃ ভারতীয় রাষ্ট্রের নাগরিকদের সামাজিক ন্যায় রক্ষার্থে গৃহীত ব্যবস্থা দুটি হলঃ 

(ক) সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদ সমাজে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করেছে।

(খ) ভূমি সংস্কার কার্যকরী হয়েছে।

প্রশ্ন ১৩। সামাজিক ন্যায় বলতে তুমি কী বোঝ?

উত্তরঃ সামাজিক ন্যায় কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা প্রদান, দারিদ্রতা দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান প্রভৃতি সামাজিক ন্যায়ের বিষয়বস্তু। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্বাভাবিক যোগানও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। সমাজে দরিদ্র শ্রেণীর উন্নতি সামাজিক ন্যায় স্থাপনের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। জনগণের অধিকার ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষার সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমেই সামাজিক ন্যায় পরিলক্ষিত হয়।

প্রশ্ন ১৪। অর্থনৈতিক ন্যায় বলতে তুমি কী বোঝ?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক ন্যায় সামাজিক ন্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থনৈতিক ন্যায় ব্যতীত অন্যান্য সকলপ্রকার ন্যায় অর্থহীন। অর্থনৈতিক ন্যায় স্থাপনের জন্য জনগণকে কাজের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে এবং যথাযথ পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে। অর্থনৈতিক ন্যায় সমাজে প্রতিষ্ঠা হলে ধনিক শ্রেণী দরিদ্র শ্রেণীকে শোষণ করতে পারবে না। সমাজের জনগণ সমানভাবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করবে এবং অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে।

প্রশ্ন ১৫। সামাজিক ন্যায়ের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো? 

উত্তরঃ সামজিক ন্যায়ের দুটি বৈশিষ্ট্য হল নিম্নরূপঃ

(ক) সমাজের সকল ব্যক্তির জন্য সমান সুযোগ প্রদান করা। 

(খ) জাতি, ধর্ম, বর্ণ অথবা জন্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি না করা।

প্রশ্ন ১৬। বিতরণমূলক ন্যায়ের সংজ্ঞা দাও? 

উত্তরঃ সমাজব্যবস্থায় সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন ও নীতির সমানভাবে বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি। সামাজিক ন্যায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের মধ্যে সেবা ও সুবিধা সমভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য দূর করে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোকে সমাজের সর্বস্তরে পূর্ণবণ্টন করা উচিত। 

প্রশ্ন ১৭। সামাজিক ন্যায় ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ করো?

উত্তরঃ সামাজিক ন্যায় ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের মধ্যে দুটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ 

(ক) সামাজিক ন্যায় দাবি করে সামাজিক বৈষম্যের অনুপস্থিতি এবং সকলের জন্য সুযোগের উপস্থিতি। আর অর্থনৈতিক ন্যায় জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দাবি করে।

(খ) সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা প্রদান, দারিদ্র দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ প্রভৃতি সামাজিক ন্যায়ের বিষয়বস্তু। অন্যদিকে কাজের অধিকার লাভে সমান সুযোগ–সুবিধা, উপযুক্ত মজুরি লাভ ইত্যাদি অর্থনৈতিক ন্যায়ের বিষয়বস্তু।

প্রশ্ন ১৮। মুক্ত বাজার এবং বেসরকারি উদ্যোগের সমর্থনে যে যুক্তিটি প্রায়ই প্রদর্শন করা হয়, সেটি উল্লেখ করো?

উত্তরঃ মুক্ত বাজার এবং বেসরকারি উদ্যোগের সমর্থনে যে যুক্তিটি প্রায়ই প্রদর্শন করা হয়, সেটি হল তাদের প্রদান করা গুণগত সেবা এবং সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অধিকতর উন্নত মানের হয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। গান্ধীজীর “বিশ্বস্ততা নীতি” – র অর্থ লেখো?

অথবা,

গান্ধীজীর বিশ্বস্ততার ধারণা দাও? 

উত্তরঃ গান্ধীজীর মতে, সমাজের ধনিক শ্রেণী নিজেদেরকে তাদের সম্পত্তির একমাত্র মালিক বলে ভাবা উচিত নয়। তারা নিজেদেরকে কেবল সমাজের সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করার বিশ্বস্ত হিসেবে ভাবা উচিত। তারা মানব সেবার জন্য তাদের সম্পত্তির ব্যবহার করা উচিত। গান্ধীজীর মতে, আমাদের প্রয়োজনের অতিরিফ সম্পদ হাতে রাখা উচিত নয়।

প্রশ্ন ২। ন্যায় সম্পর্কে জন স্টুয়ার্ট মিলের অভিমত লেখো? 

উত্তরঃ ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে, – “ন্যায় হচ্ছে এমন কিছু একটা যেটি কেবলমাত্র করা ন্যায় সঙ্গত এবং তা না করা অসঙ্গত বোঝায় না, কিন্তু কিছু ব্যক্তি বর্গ আমাদের কাছে তাদের নৈতিক অধিকার হিসাবে দাবি করতে পারে।” 

জন স্টুয়ার্ট মিলের ন্যায় অধিকারও স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাঁর মতে ন্যায় হল সেই অধিকার যা বাতীত মানুষের নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হয়ে পড়বে। ব্যক্তি ন্যায়কে নৈতিক অধিকার হিসেবে সমাজের কাছে দাবি করতে পারে।

প্রশ্ন ৩। বিনোভা ভাবের ভূ–ধন যজ্ঞ বা ভূ–খন আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা দাও। 

উত্তরঃ আচার্য বিনোভা ভাবে গান্ধীজীর একজন মহান শিষ্য ছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালে ভূ–ধন যজ্ঞ বা ভূ–ধন আন্দোলন আরম্ভ করেন। এই আন্দোলনের নীতি হল চাষীদের ভূমিদান। সকলের কল্যাণ বা সর্বোদয় ছিল তাঁর আদর্শ। তিনি হয় নিযুতের চেয়েও বেশি ভূমি সংগ্রহ করে সেই ভূমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করেছিলেন। তিনি ১৯৫৯ সালে তাঁর মহান কার্যের জন্য ফিলিপাইন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ম্যাগসাই পুরস্কার পেয়েছিলেন।

প্রশ্ন ৪। বিভিন্ন প্রকার ন্যায় সম্পর্কে আলোচনা করো?

অথবা,

বিভিন্ন প্রকার ন্যায় আলোচনা করো?

উত্তরঃ বিভিন্ন প্রকার ন্যায় নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) আইনগত ন্যায়ঃ এই ন্যায়ের ভিত্তি হল আইন। প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দৃষ্টিতে সমান। যে কোনো ব্যক্তিকে তার অপরাধ অনুযায়ী আইনের মাধ্যমে শান্তি দেওয়া হয়। 

(খ) রাজনৈতিক ন্যায়ঃ একটি নির্দিষ্ট বয়সে জনগণকে ভোটাধিকার প্রদান এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার অধিকারকে রাজনৈতিক ন্যায় বলে। শাসনকার্যে অংশ গ্রহণ করবার অধিকারকে সংক্ষেপে রাজনৈতিক ন্যায় বলা হয়।

(গ) সামাজিক ন্যায়ঃ সামাজিক ন্যায় কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা প্রদান, দারিদ্রতা দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান প্রভৃতি সামাজিক ন্যায়ের বিষয়বস্তু। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্বাভাবিক যোগানও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। সমাজে দরিদ্র শ্রেণীর উন্নতি সামাজিক ন্যায় স্থাপনের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। জনগণের অধিকার ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষার সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমেই সামাজিক ন্যায় পরিলক্ষিত হয়। 

(ঘ) অর্থনৈতিক ন্যায়ঃ অর্থনৈতিক ন্যায় সামাজিক ন্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থনৈতিক ন্যায় ব্যতীত অন্যান্য সকলপ্রকার ন্যায় অর্থহীন। অর্থনৈতিক ন্যায় স্থাপনের জন্য জনগণকে কাজের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান করতে হবে এবং যথাযথ পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে। অর্থনৈতিক ন্যায় সমাজে প্রতিষ্ঠা হলে ধনিক শ্রেণী দরিদ্র শ্রেণীকে শোষণ করতে পারবে না। সমাজের জনগণ সমানভাবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভ করবে এবং অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে।

প্রশ্ন ৫। অর্থনৈতিক ন্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করো?

উত্তরঃ অর্থনৈতিক ন্যায়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে সমাজের সকল সম্পদ কেন্দ্রিয়ভূত হওয়ার বিরোধী।

(খ) ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরোধী।

(গ) দরিদ্র শ্রেণীর জীবনধারণের ন্যূনতম মানদণ্ড বজায় রাখা।

প্রশ্ন ৬। মুক্ত বাজার অর্থনীতি বলতে কী বোঝ? এর সুবিধাসমূহ কী কী? 

উত্তরঃ মুক্ত বাজারের সমর্থকগণ মনে করেন যে যতটুকু সম্ভব সম্পত্তির মালিক হতে এবং অন্যদের সহিত মূল্য ও পারিশ্রমিক এবং লাভ সম্পর্কিত অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। তাদের প্রত্যককে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্যে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। এরূপ অর্থনীতিকে মুক্ত বাজার বা মুক্ত অর্থনীতি বলা হয়।

মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবিধাগুলো নিম্নরূপঃ 

(ক) জনগণকে অধিকতর পছন্দের সুযোগ করে দেয়।

(খ) সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় স্বাধীনতা দেওয়া হয়। ফলে সমাজে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। 

(গ) সম্পত্তির মালিক হতে এবং অন্যদের সঙ্গে মূল্য ও পারিশ্রমিক এবং লাভ সম্পর্কিত অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে ব্যক্তিকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। 

(ঘ) বাজারে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ না থাকার দরুন লেনদেন, লাভ ও বণ্টন ব্যবস্থা সুন্দর হয়।

প্রশ্ন ৭। রাজনৈতিক ন্যায়ের উপরে একটি টীকা লেখো?

উত্তরঃ একটি গণতান্ত্রিক সরকারের সাফল্য রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপর নির্ভর করে। এর অর্থ হল জনগণ যে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হয়ে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় অংশ গ্রহণের জন্য সব ধরনের রাজনৈতিক অধিকার উপভোগ করার স্বাধীনতা। যে কোনো সরকারের শাসন কার্য রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং প্রত্যেক নাগরিকেরই সরকারের শাসন কার্যে অংশ গ্রহণ করার অধিকার থাকা উচিত। এজন্য সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটদানের অধিকার থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক ন্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার। রাষ্ট্রসংঘ সার্বজনীন মানব অধিকার ঘোষণা পত্রে প্রত্যেক নাগরিকের তার দেশের সরকারে অংশগ্রহণ করার অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতবর্ষে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক (অন্তত ১৮ বছর বয়স্ক)– কে ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকারের এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক ন্যায়ের একটি দিক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার ও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার অধিকার রাজনৈতিক ন্যায়ের নিদর্শন। রাজনৈতিক ন্যায় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। 

প্রশ্ন ৮। ন্যায় এবং সমতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো?

উত্তরঃ ন্যায় এবং সমতার মধ্যে সম্পর্ক একটি বিতর্কিত বিষয়। উদারবাদীরা সাম্যের মূল্যবোধ অপেক্ষা ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দিতে ইচ্ছুক। অবশ্য অসাম্যের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ ন্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

ন্যায় সম্বপর্কিত প্রতিটি মতবাদই সমতাকে ন্যায়ের মৌলিক নীতি হিসাবে পর্যালোচনা করে। সম আচরণ এবং অসমতা দূরীকরণ ন্যায়ের মূল লক্ষ্য। ন্যায্য ও সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সমতার নীতি রূপায়ণ একান্ত আবশ্যক। সমতা প্রতিষ্ঠিত হলে ন্যায়ও প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই ন্যায় এবং সমতা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সমান সুযোগ, সম আচরণ, সম বন্টন ইত্যাদি আবশ্যক। যখন আইনের চোখে সকল সমান এবং সবার জন্য সমানভাবে আইনের সংরক্ষণ নীতিগুলি বাস্তবায়িত হবে, তখনই আমরা ন্যায় পাব। 

সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অসাম্য নির্মূল হলে ন্যায় নিশ্চিত হবে। কিন্তু এর সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে সবার জন্য সমভাবে সম আচরণ করতে হবে। অসমতা দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সম আচরণ নিশ্চিতভাবে ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় শর্ত। অবশ্য সম আচরণই ন্যায়ের একমাত্র শর্ত নয় ।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। সামাজিক ন্যায় কী? সামাজিক ন্যায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করো?

উত্তরঃ সামাজিক ন্যায় কথাটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা প্রদান, দারিদ্রতা দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান প্রভৃতি সামাজিক ন্যায়ের বিষয়বস্তু। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্বাভাবিক যোগানও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। সমাজে দরিদ্র শ্রেণীর উন্নতি সামাজিক ন্যায় স্থাপনের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। জনগণের অধিকার ও সামাজিক স্বার্থ রক্ষার সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমেই সামাজিক ন্যায় পরিলক্ষিত হয়।

সামজিক ন্যায়ের প্ৰধান বৈশিষ্ট্য হলঃ

(ক) সমাজের সকল ব্যক্তির জন্য সমান সুযোগ প্রদান করা। 

(খ) জাতি, ধর্ম, বর্ণ অথবা জন্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি না করা।

প্রশ্ন ২। জন্ রাওলস্–এর ন্যায়তত্ব ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ জন রাওলস্ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ছিলেন। তাঁর মতানুযায়ী ন্যায়ের ধারণা আমাদের সামাজিক ও বাহ্যিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত এবং ন্যায় হল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম উপাদান।

রাওলস্ সামাজিক পটভূমির প্রেক্ষাপটে ন্যায়কে অনুধাবন করেছেন। ন্যায় সমাজের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত। সামাজিক প্রতিষ্ঠান এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। মানুষের মধ্যে বিশেষ অধিকার ও সুযোগ–সুবিধা যথাযথভাবে নির্ধারণ করা সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রধান কাজ। সংবিধান এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত। এজন্য ন্যায় নীতিকে সামাজিক নীতি হিসাবে গণ্য করা হয়। এ সামাজিক নীতিই সমাজের সদস্যদের মধ্যে অধিকার ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের উপায় ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেয়। রাওলস্ ন্যায়কে সামাজিক প্রকল্পরূপে আখ্যা দিয়েছেন। এর ভিত্তিতেই অধিকার, কর্তব্য, সুযোগ ও শর্তসমূহ ধার্য করা হয়।

প্রশ্ন ৩। সামাজিক ন্যায়ের বিভিন্ন দিকগুলো ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ সামাজিক ন্যায় হল সমাজের সকল ব্যক্তি সমান সুযোগের অধিকারী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে সমাজে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। 

সামাজিক ন্যায়ের বিভিন্ন দিকগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিবর্গই সমাজের সদস্য হিসাবে সমান অধিকার এবং সমান আচরণের প্রত্যাশী। সমাজের সকল মানুষকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য সমান সুযোগ প্রদান তাদেরকে সামাজিক ন্যায় প্রদানের মাধ্যম রূপে গণ্য করা হয়। সমাজের সকল ব্যক্তিই তাদের আত্মবিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অধিকার সমান ভাবে উপভোগ করার অধিকারী। সুতরাং সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গকে সামাজিক ন্যায় প্রমানের জন্য তাদেরকে সমান সুযোগ প্রদান করা একান্ত আবশ্যক। 

(খ) জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে সমাজের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা প্রশ্রয় দেওয়া সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত কাজ নয়। কারণ সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গই সমান অধিকার এবং সমান আচরণ প্রত্যাশা করে। তাই তাদের ক্রিয়াকলাপের ভিত্তিতেই তাদের বিচার করা ন্যায় সঙ্গত কাজ। ভিন্ন শ্রেণি বা ভিন্ন বর্গের ব্যক্তি হওয়ার জন্য একই কাজের জন্য তাদের ভিন্ন ভিন্ন পারিশ্রমিক দেওয়া অন্যায়। অনুরূপভাবে লিঙ্গের ভিত্তিতেও কোনো রূপ বৈষম্যমূলক আচরণ করা ন্যায় সঙ্গত নয়। সুতরাং, সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গকে সামাজিক ন্যায় প্রদানের লক্ষ্যে জাতি, নাম বর্ণ, বংশ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল বক্তিবর্গকে একই কাজের জন্য সমানভাবে পারিশ্রমিক প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

(গ) রাষ্ট্র শোষণ মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে সমাজের সকল ব্যক্তিবর্গকে সামাজিক ন্যায় প্রদান করতে পারে। সকল সমাজ ব্যবস্থায়ই কিছু না কিছু শোষণমূলক কার্য পরিলক্ষিত হয়। এই শোষণমূলক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে রাষ্ট্র শোষিত শ্রেণি বা বৰ্গকে সামাজিক ন্যায় প্রদান করে। ভারতবর্ষে শিশুপাচার ও বিক্রি, ভিক্ষাবৃত্তি ও বলপূর্বক শ্রম আদায় আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি সমাজেই কিছু না কিছু সামাজিক কু–প্রথা বা অমানবিক নিয়ম–নীতি, আচার–আচরণ প্রচলিত আছে। এসব প্রথা বা আচার–আচরণ বলবৎ থাকা অবস্থায় সমাজে ন্যায় স্থাপন করা অসম্ভব। তাই বিভিন্ন রাষ্ট্র এসব প্রথা বা আচার–আচরণ নিষিদ্ধ করে জনগণকে সামাজিক ন্যায় প্রদান করে। ভারতবর্ষে সামাজিক ন্যায় স্থাপনের লক্ষ্যে সতীদাহ প্রথা, বাল্য বিবাহ এবং অস্পৃশ্যতা আইন প্রণয়ন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

(ঘ) রাষ্ট্র সমাজে সামাজিক ন্যায় স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে জনগণ ন্যায্য অধিকার উপভোগ করে এবং সম আচরণ পায়। জনগণের মধ্যে সম্পদ ও সেবার ন্যায্য বণ্টন তাদের সামাজিক ন্যায় প্রদান করে। যদি সমাজে আর্থ–সামাজিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় তবে সম্পদগুলোর পুনর্বণ্টন করা একান্ত আবশ্যক।

(ঙ) সমাজের সংখ্যালঘু ব্যক্তিবর্গের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের সামাজিক ন্যায় প্রদান করা হয়। সংখ্যালঘুদের তাদের ভাষা ও কৃষ্টি সংরক্ষণের অধিকার প্রদান করে তাদের সামাজিক ন্যায় প্রদান করা হয়। ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে সংখ্যালঘুদের জন্য ভাষা, হরফ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

(চ) সমাজের অক্ষম, বৃদ্ধ, অসুস্থ ও পঙ্গু ব্যক্তিদের বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি অনুসারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে রাষ্ট্র তাদেরকে সামাজিক ন্যায় প্রদান করে। কারণ জনগণের মধ্যে বৈষম্যহীনতা বা তাদেরকে চেষ্টার অনুপাতে পুরস্কৃত করা জনগণের সামাজিক জীবনে অন্যান্য বিভিন্ন ব্যাপারে সমতা উপভোগের নিশ্চিত কারণ নাও করতে পারে, তাই জনগণের বিশেষ স্বীকৃতি অনুসারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান ন্যায় স্থাপনের জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও পঙ্গুদের বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি অনুসারে বৃদ্ধভাতা, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি প্রদান করে তাদেরকে সামাজিক ন্যায় প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। কল্যাণকামী রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন ধরনের কার্যসূচি গ্রহণ করে সমাজের দুস্থ, গরিব, বেকার যুবক–যুবতীদের সামাজিক ন্যায় প্রদানের ব্যবস্থা করে। জনগণের বিশেষ প্রয়োজনে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো সম আচরণের নীতিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বমূলক নয়, এখানে সমানকে সমানভাবে আচরণের নীতি বলতে বোঝায় যারা কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সমান না হওয়ার জন্য ভিন্নভাবে আচরণের যোগ্য।

সামাজিক ন্যায়ের অর্থ ব্যাপক। এটি একটি গতিশীল ধারণা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ন্যায়ের ধারণাও পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে সামাজিক ন্যায়ের বিভিন্ন দিক বা মাত্রা পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

প্রশ্ন ৪। ন্যায়ের বিভিন্ন নীতিগুলো আলোচনা করো? 

উত্তরঃ ন্যায়ের বিভিন্ন নীতিসমূহ হলঃ

(ক) সকলের প্রতি সম–আচরণঃ সকল মানুষের জন্য সমান গুরুত্বের ব্যাপারটি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সর্বজন গ্রাহ্য হলেও প্রত্যেক ব্যক্তিকে কীভাবে তার প্রাপ্য দিতে হবে তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। এ প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন নীতি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সকলের প্রতি সম–আচরণ নীতিটি উল্লেখযোগ্য। এ নীতি অনুযায়ী বিবেচনা করা হয় যে প্রত্যেক ব্যক্তিবর্গই মানুষ হিসাবে কতকগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সেজন্য তারা সমান অধিকার এবং সমান আচরণের প্রত্যাশী। কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যা অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনুমোদিত এবং তা সমাজের সকল সদস্য সমানভাবে উপভোগ করে। এই অধিকারসমূহ হল – জীবনের অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার এবং কতকগুলো সামাজিক অধিকার।

সমান অধিকার ছাড়াও সকলের প্রতি সম–আচরণের নীতি অনুসারে জনগণকে শ্রেণী, বর্ণ বা জাতি, বংশ অথবা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যায় না। ভিন্ন জাতির হওয়ার জন্য একই কাজের জন্য একজনকে একশ টাকা এবং অন্যজনকে একশ টাকার কম দেওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে এই নীতি অনুসারে একজন পুরুষ শিক্ষক ও একজন মহিলা–শিক্ষক সমান বেতনের অধিকারী।

(খ) সমানুপাতিক ন্যায় (Proportionate Justice): সকলের প্রতি সম–আচরণই ন্যায়ের একমাত্র নীতি নয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে এই সম–আচরণের নীতি ন্যায় সঙ্গত নয়। উদাহারণ স্বরূপ বলা যায় যে একটি স্কুলে নবম শ্রেণীর সকল ছাত্র–ছাত্রীকে সমান নম্বর দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এই নীতি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের উত্তর পত্রের গুণগত দিক বা মানের উপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হলে তা ন্যায় সঙ্গত হবে। সুতরাং সকল মানুষকে তাদের প্রয়োজনীয় চেষ্টা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সম্ভাব্য বিপদ ইত্যাদির মাত্রার অনুপাতে পুরস্কৃত করাই হচ্ছে ন্যায়।

(গ) বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি (Recognition of special needs): মানুষের বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি ন্যায়ের একটি অন্যতম নীতি। জনগণের মধ্যে বৈষমাহীনতা এবং তাদেরকে চেষ্টার অনুপাতে পুরস্কৃত করা অনেক সময় জনগণের সামাজিক জীবনে অন্যান্য ব্যাপারে সমতা উপভোগের নিশ্চিতকরণ নাও করতে পারে, তাই জনগণের বিশেষ প্রয়োজনের বিবেচনার নীতিটি সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বৃদ্ধ, অসুস্থ বা পঙ্গুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া বলতে কী বোঝ? কীভাবে প্রত্যেকের প্রাপ্য দেওয়ার অর্থ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছিল? 

উত্তরঃ প্রাচীন ভারতীয় সমাজে ধর্ম এবং ধর্ম রক্ষণাবেক্ষণ অথবা প্রচলিত রীতিনীতির সঙ্গে ন্যায় সংযুক্ত ছিল যা রাজাগণের প্রাথমিক কর্তব্য বলে বিবেচিত হত। প্লেটো তার “The Republic’ গ্রন্থে ন্যায়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ন্যায় কেবলমাত্র বন্ধুদের জন্য ভাল করা বা শত্রুর ক্ষতি করা বা নিজ স্বার্থকে রক্ষা করা বোঝায় না। ন্যায় হচ্ছে সকল জনসাধারণের কল্যাণ সাধন। ডাক্তার যেমন তার রোগীর কল্যাণের জন্য উদ্বেগে থাকেন, অনুরূপভাবে নায্য শাসক বা নায্য সরকার জনগণের জন্য নিবেদিত থাকেন। জনগণের কল্যাণ সাধনের নিশ্চিতকরণ বলতে প্রত্যেক ব্যক্তির নায্য পাওনার ব্যাপারটিকে বোঝায়। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নায্য বা প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া বলতে ন্যায়ের ধারণাকে বোঝায়।

ন্যায়ের ধারণা হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া যা বর্তমান কালেও ন্যায়বোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ধারণা প্লেটোর সময় হতে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। আজ আমাদের ন্যায় সম্পর্কিত বোধ বলতে একজন ব্যক্তি মানুষ হিসাবে যা প্রাপ্য এবং এর বোধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বিষয়কে বোঝায়। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট (Immanuel Kant)-এর মতানুযায়ী মানবজাতি মর্যাদার অধিকারী। প্রত্যেক ব্যক্তিকেই যদি মর্যাদা দান করা হয়, তাহলে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে এবং পছন্দমতো গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। ন্যায়ের দাবি হচ্ছে যে আমরা সকল ব্যক্তিবর্গকে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেব এবং সমানভাবে বিবেচনা করব।

প্রশ্ন ২। এই অধ্যায়ে উল্লিখিত ন্যায়ের তিনটি নীতি সংক্ষেপে আলোচনা করো। প্রত্যেকটি নীতি দৃষ্টান্ত সহকারে ব্যাখ্যা করো?

উত্তরঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ন্যায়ের মাধ্যমে একটি সুসংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। 

ন্যায়ের নিম্নোক্ত তিনটি নীতি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ

(ক) সকলের প্রতি সম–আচরণঃ সকল মানুষের জন্য সমান গুরুত্বের ব্যাপারটি আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সর্বজন গ্রাহ্য হলেও প্রত্যেক ব্যক্তিকে কীভাবে তার প্রাপ্য দিতে হবে তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। এ প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন নীতি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সকলের প্রতি সম–আচরণ নীতিটি উল্লেখযোগ্য। এ নীতি অনুযায়ী বিবেচনা করা হয় যে প্রত্যেক ব্যক্তিবর্গই মানুষ হিসাবে কতকগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সেজন্য তারা সমান অধিকার এবং সমান আচরণের প্রত্যাশী। কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যা অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনুমোদিত এবং তা সমাজের সকল সদস্য সমানভাবে উপভোগ করে। এই অধিকারসমূহ হল – জীবনের অধিকার, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার এবং কতকগুলো সামাজিক অধিকার।

সমান অধিকার ছাড়াও সকলের প্রতি সম–আচরণের নীতি অনুসারে জনগণকে শ্রেণী, বর্ণ বা জাতি, বংশ অথবা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যায় না। ভিন্ন জাতির হওয়ার জন্য একই কাজের জন্য একজনকে একশ টাকা এবং অন্যজনকে একশ টাকার কম দেওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে এই নীতি অনুসারে একজন পুরুষ শিক্ষক ও একজন মহিলা–শিক্ষক সমান বেতনের অধিকারী।

(খ) সমানুপাতিক ন্যায় (Proportionate Justice): সকলের প্রতি সম–আচরণই ন্যায়ের একমাত্র নীতি নয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে এই সম–আচরণের নীতি ন্যায় সঙ্গত নয়। উদাহারণ স্বরূপ বলা যায় যে একটি স্কুলে নবম শ্রেণীর সকল ছাত্র–ছাত্রীকে সমান নম্বর দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এই নীতি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের উত্তর পত্রের গুণগত দিক বা মানের উপর ভিত্তি করে নম্বর দেওয়া হলে তা ন্যায় সঙ্গত হবে। সুতরাং সকল মানুষকে তাদের প্রয়োজনীয় চেষ্টা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সম্ভাব্য বিপদ ইত্যাদির মাত্রার অনুপাতে পুরস্কৃত করাই হচ্ছে ন্যায়।

(গ) বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি (Recognition of special needs): মানুষের বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি ন্যায়ের একটি অন্যতম নীতি। জনগণের মধ্যে বৈষমাহীনতা এবং তাদেরকে চেষ্টার অনুপাতে পুরস্কৃত করা অনেক সময় জনগণের সামাজিক জীবনে অন্যান্য ব্যাপারে সমতা উপভোগের নিশ্চিতকরণ নাও করতে পারে, তাই জনগণের বিশেষ প্রয়োজনের বিবেচনার নীতিটি সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বৃদ্ধ, অসুস্থ বা পঙ্গুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। জনগণের বিশেষ প্রয়োজন বিবেচনা করার নীতির সঙ্গে সকলের প্রতি সম–আচরণের নীতির দ্বন্দ্ব আছে কি? 

উত্তরঃ মানুষ সামাজিক জীব। সকলের উন্নয়নেই সমাজের উন্নয়ন। সমাজের সকল সদস্যদের মৌলিক মর্যাদা এবং অধিকারের নিরিখে জনগণকে সমানভাবে ন্যায়ের প্রয়োজন অনুসারে বিবেচনা করতে হবে। কারণ জনগণের মধ্যে বৈষম্যহীনতা এবং তাদেরকে চেষ্টার অনুপাতে পুরষ্কৃত করাও জনগণের মধ্যে সমতা উপভোগের ব্যাপার সুনিশ্চিতকরণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে, তাই জনগণের বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি দেওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে। সুতরাং জনগণের বিশেষ প্রয়োজন বিবেচনার নীতিটি সম–আচরণের নীতির সঙ্গে দ্বন্দ্বমূলক নয়। কারণ যারা কতকগুলি গুরুত্ব ব্যাপারে সমান নয় তারা অবশ্যই ভিন্নভাবে আচরণের যোগ্য।

অক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ কতকগুলো নির্দিষ্ট ব্যাপারে অসমান বলে বিবেচিত হওয়ার কারণে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা ন্যায় সঙ্গত। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য এই ধরনের সুবিধাতে প্রায়ই জাতপাতের কারণে বৈষম্যমুলক বাতাবরণের সৃষ্টি হয়। সেজন্য আমাদের সংবিধান অনুসূচীত জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য সরকারি চাকুরিতে সংরক্ষণ, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে আনুপাতিক হারে সংরক্ষণ অনুমোদন করেছে। সুতরাং বিশেষ প্রয়োজনের স্বীকৃতি নীতিটি সম–আচরণের নীতিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বমূলক নয়।

প্রশ্ন ৪। অজ্ঞানতার অবগুণ্ঠনের ধারণা ব্যবহার করে জন রাওলস্ (John Rawls) কীভাবে ভাল এবং নায্য বিতরণকে যুক্তি গ্রাহ্য কারণে সমর্থন করার যুক্তি প্রদর্শন করেন?

উত্তরঃ রাওলস্ এর মতানুযায়ী ন্যায় হল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম বৈশিষ্ট্য। রাওলস্ এর তত্ত্ব অনুসারে ন্যায় যেহেতু সামাজিক ব্যবস্থার ভিত্তি, সেহেতু সকল রাজনৈতিক ও আইনগত সিদ্ধান্ত ন্যায়ের নীতির গণ্ডীর মধ্যেই হওয়া উচিত।

কল্পিত ‘অজ্ঞানতার অবগুণ্ঠন’ পরিধান ভাল আইন এবং নীতির একটি পদ্ধতিতে পৌঁছানোর প্রথম পদক্ষেপ। সিদ্ধান্তকৃত আইন এবং নীতি যা সমগ্র সমাজের হিত সাধন করতে পারে এমন ব্যবস্থাই সকলের স্বার্থ রক্ষা করবে। এ রকম ফলাফল মহানুভবতা না হলেও একটি যুক্তিসঙ্গত কাজ বলে গণ্য হবে।

Rawls যুক্তি দিয়ে বলেন যে, নৈতিকতা নয়, যুক্তিসঙ্গত চিন্তাধারাই সমাজের সুফল এবং বোঝা বণ্টনে নিরপেক্ষভাবে সঠিক বিচারে পৌঁছাতে আমাদেরকে পথ দেখাবে। পক্ষপাতশূন্য এবং ন্যায় সম্পর্কিত প্রশ্নটিকে মোকাবিলা করার জন্য রাওলস্–এর তত্ত্বটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক পথ।

প্রশ্ন ৫। স্বাস্থ্যপ্রদ এবং কর্মশীল জীবনযাপনে প্রাথমিক নিম্নতম প্রয়োজন হিসাবে সাধারণত কী বিবেচিত হয়? এই নিম্নতম অবস্থা নিশ্চিতকরণের প্রচেষ্টায় সরকারের দায়িত্ব কী?

উত্তরঃ স্বাস্থ্যপ্রদ এবং কর্মশীল জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক নিম্নতম চাহিদা হল খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান। একটি ন্যায়িক সমাজ জনসাধারণের প্রাথমিক নিম্নতম প্রয়োজনের যোগান দেয়। এই প্রয়োজনগুলো জনসাধারণের স্বাস্থ্যপ্রদ এবং কর্মশীল জীবনযাপনকে নিশ্চিত করে।

জনসাধারণের ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রতিটি সরকারের একান্ত কর্তব্য। সরকারের এমন ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন যাতে দেশের সকল জনসাধারণের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সুনিশ্চিত হয়। পানীয় জল, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ, শিক্ষা প্রভৃতির যোগান দেওয়া সরকারের কর্তব্য। জনগণের কাজের সুযোগ, উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রভৃতির ব্যবস্থা করা সরকারের প্রধান কর্তব্য। জনগণের নিম্নতম প্রাথমিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য সরকারকে আরও অনেক দায়িত্বশীল কার্য সম্পাদন করতে হয়।

প্রশ্ন ৬। নিম্নোক্ত কোন্ কোন্ যুক্তিগুলো সকল নাগরিকের জীবনযাপনের ন্যূনতম মৌলিক শর্ত পূরণে সরকারি তৎপরতার সমর্থনে ব্যবহার করা যেতে পারে? 

(ক) দরিদ্র এবং নিঃস্বদের বিনামূল্যে সেবাপ্রদানকে একটি বদান্যতার কাজ হিসেবে যুক্তিগ্রাহ্য করা যায়। 

(খ) সকল নাগরিককে প্রাথমিক নিম্নতম জীবন যাপনের মান প্রদান করা সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণের একটি পথ।

(গ) কিছু মানুষ প্রকৃতিগত কারণে অলস এবং আমাদের তাদের প্রতি দয়াশীল হওয়া উচিত। 

(ঘ) সকলকে প্রাথমিক সুবিধাসমূহ এবং সর্বনিম্ন জীবনযাত্রার মান নিশ্চিতকরণ আমাদের যৌথভাবে ভাগ করে নেওয়া মানবিকতা এবং একটি মানবিক অধিকারের স্বীকৃতি। 

উত্তরঃ (খ) সকল নাগরিককে প্রাথমিক নিম্নতম জীবনযাপনের মান প্রদান করা সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণের একটি পথ।

(ঘ) সকলকে প্রাথমিক সুবিধাসমূহ এবং সর্বনিম্ন জীবনযাত্রার মান নিশ্চিতকরণ আমাদের যৌথভাবে ভাগ করে নেওয়া মানবিকতা এবং একটি মানবিক অধিকারের স্বীকৃতি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top