Class 11 Logic and Philosophy Chapter 6 ভারতীয় দর্শন

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 6 ভারতীয় দর্শন answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 Logic and Philosophy Chapter 6 ভারতীয় দর্শন and select needs one.

Class 11 Logic and Philosophy Chapter 6 ভারতীয় দর্শন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 Logic and Philosophy Chapter 6 ভারতীয় দর্শন Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

ভারতীয় দর্শন

পাঠ:

দ্বিতীয় খণ্ড

 অতি- সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। পারিভাষিক অর্থে ‘দর্শন’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ পারিভাষিক অর্থে ‘দর্শন’ হল জগৎ ও জীবনের সম্যক্ উপলব্ধি।

প্রশ্ন ২। ভারতবর্ষে ‘দর্শন’ শব্দটির উৎস কী?

উত্তরঃ সংস্কৃত ‘দৃশ্’ ধাতু।

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় দর্শনের মূল শাখা দুটি কী কী?

উত্তরঃ বৈদিক দর্শন এবং অবৈদিক দর্শন।

প্রশ্ন ৪। জড়বাদ কী?

উত্তরঃ যে মতবাদ জড়তত্ত্বকে একমাত্র সত্য বলে মনে করে, সেই মতবাদকে জড়বাদ বলে।

প্রশ্ন ৫। অধ্যাত্মবাদ কী?

উত্তরঃ যে তত্ত্ব স্থূল জড়ের অতিরিক্ত চেতনসত্তাকে স্বীকার করে তাকে অধ্যাত্মবাদ বলে।

প্রশ্ন ৬। ভারতীয় দর্শনের সকল সম্প্রদায় আশাবাদী না নৈরাশ্যবাদী? 

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শনের সকল সম্প্রদায়ই আশাবাদী, নৈরাশ্যবাদী নয়।

প্রশ্ন ৭। চারটি আর্যসত্য কোন্ দর্শনের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তরঃ বৌদ্ধ দর্শনের।

প্রশ্ন ৮। বৌদ্ধ দর্শনের মতে দুঃখের মূল কারণ কী?

উত্তরঃ অবিদ্যা।

প্রশ্ন ৯। বৌদ্ধ দর্শন বৈদিক না অবৈদিক?

উত্তরঃ অবৈদিক।

প্রশ্ন ১০। বৌদ্ধ ধর্মের দুটি শাখা কী কী?

উত্তরঃ হীনযান ও মহাযান।

প্রশ্ন ১১। বৌদ্ধ দর্শনের চারটি উপসম্প্রদায় কী কী?

উত্তরঃ মাধ্যমিক, যোগাচার, সৌত্রান্ত্রিক ও বৈভাষিক।

প্রশ্ন ১২। কোন্ দর্শনের প্রবক্তা ও ভাষ্যকার সম্বন্ধে মতভেদ আছে এবং কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ পাওয়া যায় না?

উত্তরঃ চার্বাক দর্শন।

প্রশ্ন ১৩। চার্বাক দর্শনের স্থপয়িতা কে?

উত্তরঃ অনেকের মতে ‘বৃহস্পতি’ চার্বাক দর্শনের স্থপয়িতা। 

প্রশ্ন ১৪। চার্বাক দর্শনের ভাষ্যকার কে?

উত্তরঃ ‘চার্বাক’ নামক কোনো এক মুনিকে চার্বাক দর্শনের ভাষ্যকার বলে মনে করা হয়।

প্রশ্ন ১৫। ‘চার্বাক’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ চারু বাক্ বা ‘মিষ্টি কথা’ থেকে চার্বাক শব্দ সৃষ্ট হয়েছে।

প্রশ্ন ১৬। চার্বাক দর্শনে মৌলিক উপাদানগুলি কী কী? 

উত্তরঃ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ বা বায়ু।

প্রশ্ন ১৭। চার্বাক দর্শন মতে মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী?

উত্তরঃ পার্থিব সুখ লাভ করা।

প্রশ্ন ১৮। চার্বাক ব্যতীত সকল ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায় মতে মনুষ্য জীবনের লক্ষ্য কী?

উত্তরঃ মোক্ষলাভ করা।

প্রশ্ন ১৯। বৌদ্ধ দর্শনের কয়েকজন দার্শনিক মনীষীর নাম লেখো।

উত্তরঃ বসুবন্ধু, নাগার্জুন, ধর্মকীর্তি।

প্রশ্ন ২০। জৈন দর্শন কয়প্রকার মুক্তি স্বীকার করে? 

উত্তরঃ দুইপ্রকার—জীবন্মুক্তি ও বিদেহ-মুক্তি।

প্রশ্ন ২১। কোন্ দর্শনকে ‘সুখবাদ’ বলা হয়?

উত্তরঃ চার্বাক দর্শনকে। 

প্রশ্ন ২২। কোন্ দর্শনকে লোকায়ত দর্শন বলে?

উত্তর। চার্বাক দর্শনকে। 

প্রশ্ন ২৩। জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা চব্বিশজন তীর্থঙ্কর। ঋষভদেব এঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং মহাবীর হলেন সর্বশেষ তীর্থঙ্কর।

প্রশ্ন ২৪। জৈন দর্শনের দুইটি সম্প্রদায় কী কী?

উত্তরঃ শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর।

প্রশ্ন ২৫। জৈন ‘ত্রিরত্ন’ কী কী?

উত্তরঃ সম্যক্ দর্শন, সম্যক জ্ঞান ও সম্যক্ চরিত্র।

প্রশ্ন ২৬। বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বা প্রবক্তা কে?

উত্তরঃ গৌতম বুদ্ধ।

প্রশ্ন ২৭। সাংখ্য দর্শনের প্রবক্তা কে?

উত্তরঃ কপিল মুনি।

প্রশ্ন ২৮। সাংখ্য মতে প্রকৃতি গুণের সমষ্টি কী কী?

উত্তরঃ সত্ত্ব, রজঃ, তম—এই তিনটি গুণ।

প্রশ্ন ২৯। ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ গৌতম মুনি বা ‘অক্ষপাদ’।

প্রশ্ন ৩০। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ মহর্ষি কণাদ।

প্রশ্ন ৩১। মীমাংসা দর্শনের স্থপয়িতা বা প্রতিষ্ঠাতা কে? 

উত্তরঃ মহাঋষি জৈমিনি।

প্রশ্ন ৩২। যোগ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ মহর্ষি পতঞ্জলী। এই দর্শনকে পাতঞ্জল দর্শনও বলা হয়।

প্রশ্ন ৩৩। বেদান্ত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ মহর্ষি বাদরায়ন।

প্রশ্ন ৩৪। যোগ দর্শনে চিত্তবৃত্তিকে কয়ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে? 

উত্তরঃ পাঁচভাগে বিভক্ত করা হয়েছে—প্রমাণ, বিপর্যয়, বিকল্প, নিদ্রা ও স্মৃতি।

প্রশ্ন ৩৫। যোগ দর্শনে ক্লেশ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ পাঁচ প্রকার—অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ এবং অভিনিবেশ। 

প্রশ্ন ৩৬। যোগ দর্শনে ‘অক্লিষ্ট’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ যেসব বৃত্তি ক্লেশের (অবিদ্যা, অস্মিতা, রাগ, দ্বেষ ও অভিনিবেশ) বিপরীত, যোগ দর্শনে তাদের নাম অক্লিষ্ট।

প্রশ্ন ৩৭। ‘উলুক’ কে?

উত্তরঃ মহর্ষি কণাদ বৈশেষিক দর্শনের সূত্রকার। তিনি ‘উলুক’ নামেও পরিচিত।

প্রশ্ন ৩৮। কোন্ দর্শনকে ‘ঔলুক্য দর্শন’ও বলা হয়?

উত্তরঃ বৈশেষিক দর্শনকে।

প্রশ্ন ৩৯। কোন্ দর্শনকে সর্বপ্রাচীন বা প্রাচীনতম দর্শন বলে মনে করা হয়?

উত্তরঃ সাংখ্য দর্শনকে।

প্রশ্ন ৪০। সাংখ্য দর্শনের আদিগ্রন্থ কোনটি?

উত্তরঃ ‘সাংখ্যকারিকা’।

প্রশ্ন ৪১। ‘সাংখ্যকারিকা’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ ঈশ্বরকৃষ্ণ।

প্রশ্ন ৪২। সাংখ্য দর্শনের কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ‘সাংখ্যকারিকা’, ‘তত্ত্বকৌমুদী’। 

প্রশ্ন ৪৩। ‘তত্ত্বকৌমুদী’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ বাচস্পতি মিশ্র। 

প্রশ্ন ৪৪। সাংখ্যপ্রবচনভাষ্য’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ বিজ্ঞানভিক্ষু।

প্রশ্ন ৪৫। বৈশেষিক দর্শনের দুইটি গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তরঃ ‘কণাদসূত্রনিবন্ধ’ ও অন্নভট্টের ‘তর্কসংগ্রহ’।

প্রশ্ন ৪৬। বৈশেষিক সম্প্রদায় কয়টি পদার্থ স্বীকার করেছেন?

উত্তরঃ সাতটি।

প্রশ্ন ৪৭। বৈশেষিক সম্প্রদায়ের সাতটি পদার্থ কী কী?

উত্তরঃ দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমবায় ও অভাব। 

প্রশ্ন ৪৮। কোন্ দর্শন সর্বশাস্ত্রপ্রদীপ স্বরূপ?

উত্তরঃ ন্যায় দর্শন।

প্রশ্ন ৪৯। ন্যায় দর্শনের দুটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ বাৎস্যায়নের ‘ন্যায়ভাষ্য’ এবং জয়ন্তভট্টের ‘ন্যায়মঞ্জরী’।

প্রশ্ন ৫০। নব্যন্যায় বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ মহানৈয়ায়িক গঙ্গেশোপাধ্যায় ন্যায় দর্শনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। এই নতুন অধ্যায় নব্যন্যায় নামে পরিচিত।

প্রশ্ন ৫১। ‘তত্ত্বচিন্তামণি’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে? 

উত্তরঃ মহানৈয়ায়িক গঙ্গেশোপাধ্যায় বা গঙ্গেশ৷

প্রশ্ন ৫২। নব্যন্যায়ের ভিত্তিস্তম্ভ কী?

উত্তরঃ গঙ্গেশের যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘তত্ত্বচিন্তামণি’।

 প্রশ্ন ৫৩। মীমাংসা সম্প্রদায়ের দুটি উপসম্প্রদায় কী কী?

উত্তরঃ প্রভাকর ও কুমারিল।

প্রশ্ন ৫৪। ‘মীমাংসাসূত্র’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

উত্তরঃ জৈমিনি।

প্রশ্ন ৫৫। মীমাংসা দর্শন বেদের কোন্ কাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত?

উত্তরঃ কর্মকাণ্ড।

প্রশ্ন ৫৬। ‘ব্রহ্মসূত্র’ গ্রন্থটি কার লেখা?

উত্তরঃ বাদরায়ন।

প্রশ্ন ৫৭। উপনিষদভিত্তিক দর্শন কোনটি? 

উত্তরঃ বেদান্ত দর্শন।

প্রশ্ন ৫৮। বেদ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ চার প্রকার—ঋগবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ।

প্রশ্ন ৫৯। প্রতিটি বেদ কয়টি অংশে বিভক্ত ও কী কী?

উত্তরঃ চারটি অংশে—সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ্। 

প্রশ্ন ৬০। বেদের জ্ঞানকাণ্ডের উপর কোন্ দর্শন প্রতিষ্ঠিত?

উত্তরঃ বেদান্ত দর্শন।

প্রশ্ন ৬১। শংকরাচার্যের বেদান্তব্যাখ্যা কী নামে পরিচিত?

উত্তরঃ অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন। 

প্রশ্ন ৬২। বিশিষ্ট অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ভাষ্যকার কে?

উত্তরঃ রামানুজ।

প্রশ্ন ৬৩। অদ্বৈতবেদান্তের মূল বক্তব্য কী? 

উত্তরঃ ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ব্রহ্মস্বরূপ।

প্রশ্ন ৬৪। যোগ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ মনঃসংযোগ।

প্রশ্ন ৬৫। যোগ দর্শনের দুটি অংশ কী কী?

উত্তরঃ তত্ত্ববিষয়ক ও ক্রিয়াবিষয়ক। 

প্রশ্ন ৬৬। ‘কপিল দর্শন’ কোন্ দর্শনকে বলা হয়?

উত্তরঃ সাংখ্য দর্শন।

প্রশ্ন ৬৭। কোন্ সম্প্রদায় আস্তিক দর্শন হলেও নিরীশ্বরবাদী?

উত্তরঃ সাংখ্য।

প্রশ্ন ৬৮। সাংখ্য দর্শন মতে চরম সত্তা বা মূল তত্ত্ব কয়টি ও কী কী?

উত্তরঃ দুইটি—পুরুষ ও প্রকৃতি। 

প্রশ্ন ৬৯। যোগদর্শনে কয় প্রকারের যোগাঙ্গের উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ আট প্রকারের।

প্রশ্ন ৭০। কোন্ দর্শনকে ‘বাদবিদ্যা’ বা ‘তর্কবিদ্যা’ বলা হয়? 

উত্তরঃ ন্যায় দর্শন।

প্রশ্ন ৭১। বেদের অপর নাম কী?

উত্তরঃ শ্রুতি।

প্রশ্ন ৭২। ‘বেদ’ কথাটির অর্থ কী?

উত্তরঃ জ্ঞান।

প্রশ্ন ৭৩। ‘বেদ’ শব্দটি কোথা থেকে উৎপন্ন হয়েছে?

উত্তরঃ সংস্কৃত ‘বিদ্‌’ ধাতু থেকে, যার অর্থ ’জানা’।

প্রশ্ন ৭৪। বৈশেষিক দর্শন মতে আত্মা কয় প্রকার ও কী কী? 

উত্তরঃ দুই প্রকারের—জীবাত্মা ও পরমাত্মা।

প্রশ্ন ৭৫। বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি কী?

উত্তরঃ উপনিষদ।

প্রশ্ন ৭৬। ’বেদান্ত’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ বেদের অন্ত বা শেষ।

প্রশ্ন ৭৭। যোগ দর্শনের আটটি যোগাঙ্গ কী কী?

উত্তরঃ যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ও সমাধি।

প্রশ্ন ৭৮। অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ শংকরাচার্য।

প্রশ্ন ৭৯। বিশিষ্টাদ্বৈত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তরঃ রামানুজ।

প্রশ্ন ৮০। ন্যায় দর্শনের তিনটি কারণের নাম লেখো।

উত্তরঃ সমব্যয়ী, অসমব্যয়ী ও নিমিত্ত কারণ। 

প্রশ্ন ৮১। “ন্যায় দর্শন সৎকার্যবাদে বিশ্বাসী।” উক্তিটি কি সত্য?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্তিটি সত্য। 

প্রশ্ন ৮২। সৎকার্যবাদে বিশ্বাসী ভারতীয় দর্শনগুলির নাম লেখো।

উত্তরঃ সাংখ্য ও অদ্বৈত বেদান্ত।

প্রশ্ন ৮৩। চার্বাক কি জড়বাদী দর্শন?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৮৪। চার্বাক মতবাদ কী নামে পরিচিত?

উত্তরঃ জড়বাদ বা বস্তুবাদ।

প্রশ্ন ৮৫। চার্বাক মতে মনের চেতনার উৎস কী?

উত্তরঃ জড় পদার্থ।

প্রশ্ন ৮৬। ‘নির্বাণ’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘নিভে যাওয়া’ অর্থাৎ দুঃখ এবং বন্ধনের পরিসমাপ্তি।

প্রশ্ন ৮৭। বৈশেষিক মতে দর্শন কি বহুত্ববাদী?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৮৮। সাংখ্য দর্শন কি দ্বৈতবাদী?

উত্তরঃ হ্যাঁ।

প্রশ্ন ৮৯। সাংখ্য দর্শনে ‘পুরুষ’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ আত্মা বা চৈতন্য।

প্রশ্ন ৯০। সাংখ্য দর্শনে ‘প্রকৃতি’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ প্রকৃতি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল প্র-করোতি বা যা প্রকৃষ্ট কারণ।

প্রশ্ন ৯১। যোগ দর্শনের প্রথম গ্রন্থের নাম কী? 

উত্তরঃ পতঞ্জলসূত্র।

প্রশ্ন ৯২। ব্রহ্মসূত্র কার লেখা?

উত্তরঃ বাদরায়ন।

প্রশ্ন ৯৩। বেদান্ত দর্শনের মুখ্য শাখাগুলি কী?

উত্তরঃ শংকরের অদ্বৈত বেদান্ত এবং রামানুজের বিশিষ্ট অদ্বৈত বেদান্ত। 

প্রশ্ন ৯৪। শংকরাচার্যের বেদান্তকে অদ্বৈত বেদান্ত বলা হয় কেন?

উত্তরঃ শংকরাচার্যের মতে ব্রহ্ম সত্য এবং জগৎ মিথ্যা। জীব এবং ব্রহ্ম সম্পূর্ণ অভিন্ন।

প্রশ্ন ৯৫। রামানুজের বেদান্তকে বিশিষ্ট অদ্বৈত বেদান্ত বলা হয় কেন?

উত্তরঃ রামানুজের মতে, ব্রহ্মই চরম সত্য, তিনিই চিৎ, তিনিই অচিৎ। এই জগৎ এবং জীবাত্মা ব্রহ্মেরই অংশ।

প্রশ্ন ৯৬। সৎকার্যবাদ কী?

উত্তরঃ সৎকার্যবাদ মতে, কারণের মধ্যেই কার্য অন্তর্নিহিত বা সুপ্তভাবে থাকে।

প্রশ্ন ৯৭। অসৎকার্যবাদ কী?

উত্তরঃ উৎপাদনের পূর্বে কার্যকারণের মধ্যে থাকে না। কার্য একটি সম্পূর্ণ নূতন সৃষ্টি।

প্রশ্ন ৯৮। সাংখ্য মতে দুঃখ কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ তিন প্রকার—আধিভৌতিক, আধিজৈবিক এবং আধ্যাত্মিক।

প্রশ্ন ৯৯। সাংখ্য মতে জ্ঞান কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তরঃ জ্ঞান দ্বিবিধ—তত্ত্বজ্ঞান ও ব্যাবহারিক জ্ঞান।

প্রশ্ন ১০০। সাংখ্য শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘সাংখ্য’ শব্দের অর্থ ‘সংখ্যা’।

প্রশ্ন ১০১। সাংখ্য সম্প্রদায়কে কেন নিরীশ্বর সাংখ্য বলা হয়?

উত্তরঃ যেহেতু সাংখ্য সম্প্রদায় ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন, সেহেতু সাংখ্য সম্প্রদায়কে নিরীশ্বর সাংখ্য বলা হয়।

প্রশ্ন ১০২। কোন্ সম্প্রদায়কে সেশ্বর সাংখ্য বলে? 

উত্তরঃ যোগ দর্শনে যেহেতু ঈশ্বর স্বীকৃত, সেহেতু যোগ দর্শনকে সেশ্বর সাংখ্য বলা হয়।

প্রশ্ন ১০৩। ষোড়দর্শন বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ ছয়টি বৈদিক দর্শনকে একসঙ্গে ষোড়দর্শন বলা হয়।

প্রশ্ন ১০৪। অসৎকার্যবাদের অপর নাম কী?

উত্তরঃ আরম্ভবাদ।

প্রশ্ন ১০৫। দুইটি সৎকার্যবাদ সম্প্রদায়ের নাম লেখো।

উত্তরঃ সাংখ্য এবং বেদান্ত সম্প্রদায়।

প্রশ্ন ১০৬। দুইটি অসৎকার্যবাদ সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ন্যায়-বৈশেষিক এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়।

প্রশ্ন ১০৭। দুইটি সমানতন্ত্র দর্শনের নাম লেখো। 

উত্তরঃ সাংখ্য ও যোগ দর্শন।

প্রশ্ন ১০৮। আর্যসত্য কী?

উত্তরঃ দুঃখ ও দুঃখ নিবৃত্তির উপায় সম্বন্ধে বুদ্ধদেব যে চারটি সত্য আবিষ্কার করেছিলেন, সেগুলিকে বলা হয় আর্যসত্য। 

প্রশ্ন ১০৯। চার্বাকেরা পরাজ্ঞানে বিশ্বাসী কি?

উত্তরঃ না।

প্রশ্ন ১১০। মীমাংসা এবং বেদান্ত দর্শন স্বাধীন চিন্তায় বিশ্বাস করে কি?

উত্তরঃ না, এই দুই দর্শন সম্পূর্ণভাবে বেদের উপরে নির্ভরশীল। 

প্রশ্ন ১১১। বুদ্ধদেবের মতে জীবের উৎপত্তির মূল কারণ কী?

উত্তরঃ মনের চেতন বা অবচেতন বাসনা। 

প্রশ্ন ১১২। ন্যায়কে ‘প্রমাণ শাস্ত্র’ বলা হয় কেন?

উত্তরঃ ন্যায় প্রমাণের অর্থাৎ জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে অধিক প্রাধান্য দেয়।

শুদ্ধ উত্তর দাও:

১। চার্বাক জড়বাদী/আধ্যাত্ম্যবাদী দার্শনিক।

উত্তরঃ জড়বাদী।

২। সাংখ্য দর্শন সৎকার্যবাদে/অসৎকার্যবাদে বিশ্বাসী। 

উত্তরঃ সৎকার্যবাদে।

৩। অদ্বৈত বেদান্ত সৎকার্যবাদে/অসৎকার্যবাদে বিশ্বাসী।

উত্তরঃ সৎকার্যবাদে।

৪। ন্যায় দর্শন মতে, কারণ তিন/চার/পাঁচ প্রকার।

উত্তরঃ তিন।

৫। ভারতীয় দর্শনকে হিন্দু/অহিন্দু/বৈদিক ও অবৈদিক শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।

উত্তরঃ বৈদিক ও অবৈদিক।

৬। বৈদিক দর্শন সম্প্রদায় তিনটি/চারটি/ছয়টি।

উত্তরঃ ছয়টি।

৭। অবৈদিক দর্শন দুইটি/তিনটি/ছয়টি।

উত্তরঃ তিনটি।

৮। সাংখ্য ও বেদান্ত অবৈদিক/বৈদিক সম্প্রদায়।

উত্তরঃ বৈদিক।

৯। চার্বাক দর্শন বৈদিক/অবৈদিক।

উত্তরঃ অবৈদিক। 

১০। ভারতীয় দর্শনে ছয়টি/তিনটি/নয়টি সম্প্রদায় আছে।

উত্তরঃ নয়টি।

১১। বৌদ্ধ দর্শনে মানুষের যাবতীয় দুঃখের কারণ জন্ম/অবিদ্যা।

উত্তরঃ অবিদ্যা।

১২। ভারতীয় দর্শনের মূল লক্ষ্য সুখ/পার্থিব উন্নতি/ মোক্ষ।

উত্তরঃ মোক্ষ।

শূন্যস্থান পূর্ণ করো:

১। সাংখ্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব ______ করে।

উত্তরঃ অস্বীকার।

২। ভারতীয় দর্শনে ______ টি অবৈদিক সম্প্রদায় আছে।

উত্তরঃ তিন।

৩। অবৈদিক দর্শন সম্প্রদায়গুলো ______ কর্তৃত্ব স্বীকার করে না।

উত্তরঃ বেদের।

৪। ব্ৰহ্মই একমাত্র ______ জগৎ মিথ্যা, জীব ও ব্রহ্ম ______ অভিন্ন।

উত্তরঃ সত্য।

৫। প্রকৃতি তিনটি গুণের সমষ্টি, সেগুলি হল ______, রজ এবং তম।

উত্তরঃ সত্ত্ব। 

৬। চার্বাক শব্দের অর্থ হল ______ বাক্। 

উত্তরঃ চারু।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ভারতীয় দর্শনকে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? 

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শনকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হল— 

(ক) বৈদিক দর্শন। এবং 

(খ) অবৈদিক দর্শন।

প্রশ্ন ২। বৈদিক দর্শন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে-সব দর্শন বা দার্শনিক সম্প্রদায় বেদকে অভ্রান্ত এবং স্বতঃসিদ্ধ বলে স্বীকার করে এবং অন্যতম প্রামাণিক শাস্ত্র হিসাবে গ্রহণ করে, সেইসব দর্শনকে ‘বৈদিক বা আস্তিক দর্শন’ বলে।

প্রশ্ন ৩। অবৈদিক দর্শন কাকে বলে?

উত্তরঃ যে-সব দর্শন বা দার্শনিক সম্প্রদায় বেদকে অভ্রান্ত ও স্বতঃসিদ্ধ বলে স্বীকার করে না, এবং অন্যতম প্রামাণিক গ্রন্থ হিসাবেও গ্রহণ করে না, সেই সব দর্শনকে ‘অবৈদিক বা নাস্তিক দর্শন’ বলে।

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় দর্শনের বৈদিক সম্প্রদায়গুলি কী কী?

উত্তরঃ ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, মীমাংসা এবং বেদান্ত—এই ছয়টি বৈদিক দর্শন। এই ছয় দর্শনকে একসঙ্গে ‘ষড়দর্শন’ বলেও অভিহিত করা হয়। এই ছয়টি দর্শন প্রত্যেকেই বেদ বিশ্বাসী।

প্রশ্ন ৫। ভারতীয় দর্শনের অবৈদিক সম্প্রদায়গুলি কী কী?

উত্তরঃ চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন—এই তিনটি অবৈদিক দর্শন। এই তিনটি দর্শনের প্রত্যেকেই বেদবিরোধী। 

প্রশ্ন ৬। বৈদিক বা আস্তিক দর্শনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?

উত্তরঃ বৈদিক বা আস্তিক দর্শনকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন—

(ক) বেদানুগত বা বেদনির্ভর দর্শন। এবং 

(খ) বেদস্বতন্ত্র দর্শন। 

প্রশ্ন ৭। বেদানুগত বা বেদনির্ভর দর্শন সম্প্রদায়গুলো কী কী?

উত্তরঃ মীমাংসা দর্শন এবং বেদান্ত দর্শন সম্পূর্ণভাবে বেদানুগত অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে বেদের উপর নির্ভরশীল। বেদই এই দর্শনের মূল ভিত্তি। মীমাংসা দর্শন বেদের কর্মকাণ্ড এবং বেদান্ত দর্শন বেদের জ্ঞানকাণ্ডকে সমর্থন করে তাদের নিজ নিজ দার্শনিক মতবাদকে তুলে ধরেছে।

প্রশ্ন ৮। অবৈদিক বা বেদবিরোধী নাস্তিক দর্শনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উত্তরঃ অবৈদিক দর্শনকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়; যেমন—

(ক) চরমপন্থী নাস্তিক দর্শন। এবং 

(খ) নরমপন্থী নাস্তিক দর্শন। 

চার্বাক এবং বৌদ্ধ দর্শনকে চরমপন্থী নাস্তিক দর্শন বলা হয়। আবার, জৈন দর্শনকে নরমপন্থী নাস্তিক দর্শন বলা হয়।

প্রশ্ন ৯। বেদে-স্বতন্ত্র দর্শন সম্প্রদায়গুলো কী কী? 

উত্তরঃ ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য এবং যোগ—এই চারটি সম্প্রদায় বেদ-বিশ্বাসী এবং বেদ-স্বতন্ত্র দর্শন সম্প্রদায়। 

প্রশ্ন ১০। ভারতীয় দর্শনের অর্থ কী?

উত্তরঃ ভারতে দর্শন শব্দটি সংস্কৃত ‘দৃশ’ ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ‘দৃশ’ শব্দের অর্থ ‘দেখা’। তবে এই দেখা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষণ নয়, তত্ত্বদর্শন অর্থাৎ জগতের এবং জীবনের স্বরূপ উপলব্ধি। সত্যের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি বা তত্ত্বসাক্ষাৎকারকেই ‘দর্শন’ বলে। এককথায়, ভারতীয় দর্শন হচ্ছে তত্ত্বদর্শন বা সত্যদর্শন। পারিভাষিক অর্থে দর্শন হল জগৎ ও জীবনের সম্যক্ উপলব্ধি। 

প্রশ্ন ১১। ভারতীয় দর্শনে ‘আস্তিক’ এবং ‘নাস্তিক’ এবং সাধারণ অর্থে ‘আস্তিক’ এবং ‘নাস্তিক’ শব্দের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শনে ‘আস্তিক’ শব্দের অর্থ হল যারা বেদকে অভ্রান্ত এবং স্বতঃসিদ্ধ বলে বিশ্বাস করেন; অর্থাৎ যারা বেদের প্রাধান্যকে স্বীকার করেন। অন্যদিকে, ‘নাস্তিক’ শব্দের অর্থ হল যারা বেদকে অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস করেন না; অর্থাৎ বেদের প্রাধান্যকে স্বীকার করেন না।

কিন্তু সাধারণ অর্থে ‘আস্তিক’ শব্দের অর্থ যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এবং ‘নাস্তিক’ শব্দের অর্থ যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।

প্রশ্ন ১২। বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্যসত্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ প্রথম আর্যসত্য → এই জগৎ দুঃখময়।

দ্বিতীয় আর্যসত্য → এই দুঃখের কারণ আছে। 

তৃতীয় আর্যসত্য → দুঃখের নিবৃত্তি বা অবসান আছে।

চতুর্থ আর্যসত্য → দুঃখ থেকে মুক্তিলাভের উপায় আছে।

প্রশ্ন ১৩। অষ্টাঙ্গিক মার্গ কী?

উত্তরঃ বুদ্ধদেব মানুষের যাবতীয় দুঃখের অবসানের জন্য আটটি উপায় বা মার্গের উল্লেখ করেছেন। এগুলোকে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়৷

সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্, সম্যক কর্মান্ত, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি—এই আটটি উপায়ই অষ্টাঙ্গিক মার্গ।

প্রশ্ন ১৪। কর্মফলবাদ কী?

উত্তরঃ চার্বাক ছাড়া সমস্ত ভারতীয় দর্শনই কর্মফলবাদে বিশ্বাসী। কর্মফলবাদ বলে— প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের ফলভোগ করতে হয়। মানুষ জন্মজন্মান্তর ধরে তার কর্মফল ভোগ করে।

প্রশ্ন ১৫। ভারতীয় দর্শনকে আধ্যাত্মবাদ বলা হয় কেন? 

উত্তরঃ দার্শনিকগণ জগৎ ও জীবনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুটি বিপরীতমুখী মৌলিক তত্ত্বে বিশ্বাস করেন। এই দুটি মৌলিক তত্ত্বের একটি হল জড়তত্ত্ব এবং অপরটি হল চেতনতত্ত্ব। যে তত্ত্ব স্থুল জড়ের অতিরিক্ত চেতনসত্তাকে স্বীকার করে, তাকে বলে আধ্যাত্মবাদ। আধ্যাত্মবাদীদের ভিত্তি হল দেহের অতিরিক্ত আত্মায় বিশ্বাস। চার্বাক ব্যতীত সকল ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়ের মধ্যে আধ্যাত্মবাদে বিশ্বাস অতি গভীর। এই কারণে ভারতীয় দর্শনকে আধ্যাত্মবাদী দর্শন বলা হয়।

প্রশ্ন ১৬। নির্বাণ কী?

উত্তরঃ গৌতম বুদ্ধের মতে, দুঃখ নিরোধের নাম নির্বাণ। অবিদ্যাকে দূর করতে পারলেই নির্বাণলাভ সম্ভব হয়।

প্রশ্ন ১৭। কর্মকাণ্ড এবং জ্ঞানকাণ্ড বলতে কী বোঝো? 

উত্তরঃ প্রত্যেকটি বেদের চারটি অংশ—মন্ত্র বা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। এর মধ্যে সংহিতা ও ব্রাহ্মণকে কর্মকাণ্ড এবং আরণ্যক ও উপনিষদকে জ্ঞানকাণ্ড বলা হয়। কর্মকাণ্ড ক্রিয়াপ্রধান, জ্ঞানকাণ্ড বিচারপ্রধান।

প্রশ্ন ১৮। বেদ বলতে কী বোঝো?

উত্তরঃ প্রাচীন মুনি-ঋষিরা তাঁদের উপলব্ধ সত্যকে যে সাহিত্যভাণ্ডারে সঞ্চিত করে রেখে গিয়েছেন, তাই বেদ।

প্রশ্ন ১৯। শংকরাচার্যের বেদান্তকে অদ্বৈত বেদান্ত কেন বলা হয়? 

উত্তরঃ শংকরাচার্যের মতে ব্রহ্ম সত্য এবং জগৎ মিথ্যা। জীব এবং ব্রহ্ম সম্পূর্ণ অভিন্ন। এই কারণে শংকরাচার্যের বেদান্তকে অদ্বৈত (যার কোনো দ্বৈত নেই) বেদান্ত বলা হয়। 

প্রশ্ন ২০। রামানুজের বেদান্তকে কেন বিশিষ্ট অদ্বৈত বেদান্ত বলে?

উত্তরঃ রামানুজের মতে, ব্রহ্ম নির্গুণ নয়, সগুণ। এই সগুণ ব্রহ্মই পরম সত্য। জীবজগতের সত্তা আছে এবং তারা ব্রহ্মেরই অংশ।

রচনাভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বৈদিক এবং অবৈদিক দর্শনের মধ্যে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বৈদিক এবং অবৈদিক দর্শনের মধ্যে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য নিম্নরূপ:

(ক) যেসব দর্শন বা দার্শনিক সম্প্রদায় বেদকে অভ্রান্ত এবং স্বতঃসিদ্ধ বলে স্বীকার করে, সেইসব দর্শনকে বৈদিক দর্শন বলে। অন্যদিকে, যেসব দর্শন বা দার্শনিক সম্প্রদায় বেদকে অভ্রান্ত বা স্বতঃসিদ্ধ বলে স্বীকার করে না, সেইসব দর্শনকে অবৈদিক দর্শন বলে।

(খ) বৈদিক সম্প্রদায়কে বলা হয় আস্তিক দর্শন এবং অবৈদিক সম্প্রদায়কে বলা হয় নাস্তিক দর্শন। 

(গ) ভারতবর্ষে বৈদিক বা আস্তিক দর্শনের অন্তর্গত ছয়টি সম্প্রদায় এবং অবৈদিক বা নাস্তিক দর্শনের অন্তর্গত তিনটি সম্প্রদায় আছে।

(ঘ) ছয়টি বৈদিক সম্প্রদায় হল—সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত। তিনটি অবৈদিক সম্প্রদায় হল— চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন।

প্রশ্ন ২। ভারতীয় দর্শনের স্বরূপ বা প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শন বলতে ভারতভূমিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করা প্রাচীন-নবীন, হিন্দু-অহিন্দু, আস্তিক-নাস্তিক ইত্যাদি সকল দর্শনকে বোঝায়।

ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দার্শনিক মতবাদের বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মতামত বা সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতা প্রদর্শন করা হয়। দৃষ্টিভঙ্গির এই উদারতা এবং সহনশীলতা ভারতীয় দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

ভারতীয় দর্শন মূলত তত্ত্বদর্শন বা সত্যদর্শন হলেও এই দর্শনের একটি প্রায়োগিক দিক আছে। ভারতীয় দর্শন প্রকৃতিগতভাবে জীবন দর্শন।

সংশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ভারতীয় দর্শনের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাশ্চাত্য দর্শনে অধিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা, তর্কবিদ্যা, জ্ঞানবিদ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন দার্শনিক সমস্যার আলোচনা পৃথক পৃথকভাবে করে থাকে। কিন্তু ভারতীয় দর্শনসমূহ এই সমস্ত আলোচনা একটি সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে করে থাকে। সেকারণেই ভারতীয় দর্শন এক সর্বব্যাপক দর্শন।

প্রশ্ন ৩। ভারতীয় দর্শনের বিশেষত্ব বা বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শনের বিশেষত্ব বা বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

(ক) ব্যাবহারিক প্রয়োজনবোধ বা বাস্তব প্রয়োজনঃ ভারতীয় দর্শনের মূল উৎস হচ্ছে মানুষের জাগতিক জীবনের দুঃখ, কষ্ট ইত্যাদি। মানুষের জীবনে রোগ, শোক, জরা, বার্ধক্য আছে ও সেই কারণেই দুঃখ-কষ্টও আছে। এইসব দুঃখ-কষ্ট থেকে কী করে মানুষ মুক্তি পেতে পারে ভারতীয় দর্শন তাই অন্বেষণ করে গেছে। এই বাস্তব প্রয়োজনই ভারতীয় দর্শনের উৎস।

(খ) আধ্যাত্মিক অতৃপ্তিঃ চার্বাক সম্প্রদায় ব্যতীত সকল ভারতীয় সম্প্রদায় মনে করেন জগৎ দুঃখময়। জীবনে দুঃখ থেকে যে সমস্ত অপূর্ণতা ও মানসিক অতৃপ্তি জন্মায় সেই আধ্যাত্মিক অতৃপ্তি ভারতীয় চিন্তাবিদদের দর্শন চিন্তায় প্রবৃত্ত করে।

(গ) কর্মফলবাদঃ চার্বাক ছাড়া সমস্ত ভারতীয় দর্শনই কর্মফলবাদে বিশ্বাসী। কর্মফল-বাদ বলে—প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের ফলভোগ করতে হয়। মানুষ জন্মজন্মান্তর ধরে এই কর্মফল ভোগ করে।

(ঘ) অবিদ্যা বা অজ্ঞতাই দুঃখের কারণঃ চার্বাক ব্যতীত অন্যান্য সকল ভারতীয় দর্শনের অপর একটি বিশ্বাস এই যে মানুষ অজ্ঞতার কারণেই দুঃখ ভোগ করে। জন্ম, মৃত্যু তথা সংসারচক্রে আবদ্ধ হবার মূল কারণই হল অবিদ্যা বা অজ্ঞতা।

(ঙ) সম্যক্ জ্ঞান ও নৈতিক সংযমঃ ভারতীয় দার্শনিকদের মতে অবিদ্যা দুরীকরণের উপায় হল সম্যক্ জ্ঞান ও নৈতিক সংযম।

(চ) একাগ্র সাধনাঃ ভারতীয় দর্শন বিশ্বাস করে যে, একমাত্র একাগ্র সাধনার দ্বারাই মানুষ মুক্তির আলোকের সন্ধান পেতে পারে।

(ছ) মোক্ষলাভঃ যখন একাগ্র এবং তন্ময় সাধনার আলোতে মানুষ, সত্যকে জানবে এবং উপলব্ধি করবে, তখনই তার দুঃখের অবসান হবে এবং সে বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ করবে। এই মুক্তিলাভের অপর নামই মোক্ষলাভ। 

প্রশ্ন ৪। ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নীচে দেওয়া হলঃ 

চার্বাক দর্শনঃ চার্বাক দর্শন বেদ-বিরোধী দর্শন, সেই কারণে এই দর্শনকে অবৈদিক বা নাস্তিক দর্শন বলা হয়। এই দর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্ব, বেদের অভ্রান্ততা, পুনর্জন্মবাদ বা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করে না। এই দর্শন ভোগবাদী এবং জড়বস্তুবাদী দর্শন।

চার্বাক দর্শন সম্পর্কে কোনো প্রামাণ্য গ্রন্থ পাওয়া যায় না। সেজন্য এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘চার্বাক’ শব্দের অর্থ সম্বন্ধে নানা বিতর্ক আছে। অনেকে বলেন, ‘বৃহস্পতি’ চার্বাক দর্শনের স্থপয়িতা। আবার অনেকে বলেন, ‘চার্বাক’ কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়। ‘চারু বাক্’, অর্থাৎ ‘মিষ্টি বা মধুর বাক্য’ থেকে ‘চার্বাক’ শব্দ সৃষ্ট হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, চার্বাক সকলের দার্শনিক মতবাদ, ‘লোক’ অর্থাৎ ‘সাধারণ মানুষের আয়ত্ত’ অর্থাৎ ‘বোধগম্য’ বলে, এই দর্শনকে ’লোকায়ত দর্শন’ বলেও অভিহিত করা হয়। 

চার্বাক মতানুসারে ‘প্রত্যক্ষ’ই (Perception) যথার্থ জ্ঞানের একমাত্র উপায়।

জৈন দর্শনঃ ‘জিন’ শব্দ থেকে ‘জৈন’ শব্দের উৎপত্তি। আবার, ‘জি’ ধাতু থেকে ‘জিন’ শব্দের উৎপত্তি। ‘জি’ ধাতুর অর্থ হল ‘জয় করা’। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘জিন’ শব্দের অর্থ হল ‘যে জয় করে’ (Conqueror)।

জৈন দর্শন অবৈদিক ও নিরীশ্বরবাদী। কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও এই দর্শন দেবতায় বিশ্বাস করে। এই দর্শন মতে মোক্ষপ্রাপ্ত সকল জীবই দেবতা। 

জৈন সকলকে তীর্থঙ্কর বলেও অভিহিত করা হয়। তীর্থঙ্কর শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক। জৈন দর্শনের চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে ‘ঋষভদেব’ আদি এবং ‘মহাবীর’ শেষ তীর্থঙ্কর বা প্রচারক।

জৈন দর্শন মতে, যথার্থ জ্ঞান অর্জনের তিনটি উপায় হল—প্রত্যক্ষ, অনুমান এবং শব্দ। 

বৌদ্ধ দর্শনঃ বৌদ্ধ দর্শন বেদবিরোধী দর্শন এবং সেই কারণেই এই দর্শনকে অবৈদিক বা নাস্তিক দর্শন বলে। ‘গৌতম বুদ্ধ’ বৌদ্ধ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। এই দর্শনের প্রধান গ্রন্থ হল ‘ত্রিপিটক’।

বুদ্ধদেব ধ্যানলব্ধ প্রজ্ঞার আলোকে চারটি আর্যসত্য আবিষ্কার করেন। বুদ্ধদেবের মতে, দুঃখের মূল কারণ অবিদ্যাকে ধ্বংস করলেই দুঃখ নিবৃত্তি হয়। দুঃখের চিরনিবৃত্তিকে বৌদ্ধদর্শনে ‘নির্বাণ’ বলা হয়। নির্বাণ চিত্তের বাসনাশূন্য, স্থির, আনন্দপুর্ণ এক শান্ত অবস্থা।

নির্বাণ লাভের আটটি মার্গ বা উপায় আছে। এই আটটি মার্গকে ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ বলে।

বৌদ্ধ দর্শন নিরীশ্বরবাদী দর্শন। বুদ্ধদেবের মতে, যথার্থ জ্ঞানলাভের দুটি উপায় হল— প্রত্যক্ষ এবং অনুমান।

ন্যায় দর্শনঃ ন্যায় দর্শন বৈদিক দর্শনের একটি সম্প্রদায়। ‘ন্যায়সূত্র’ প্রণেতা মহাঋষি ‘গৌতম’ বা ‘গোতম’এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। ন্যায় দর্শনের অপর নাম বাদবিদ্যা বা তর্কবিদ্যা।

ন্যায় দর্শন মতে, যথার্থ জ্ঞানলাভের চারটি উপায় হল – 

(ক) প্রত্যক্ষ।

(খ) অনুমান।

(গ) শব্দ। এবং

(ঘ) উপমান। 

ন্যায় দর্শন মোক্ষলাভকে মানবজীবনের পরম উদ্দেশ্য বলে স্বীকার করে। ভারতীয় দর্শনে বেদান্তের পরই ন্যায়ের স্থান। এই দর্শন বহুবস্তুবাদী।

বৈশেষিক দর্শনঃ বৈশেষিক দর্শন একটি বৈদিক সম্প্রদায়। ‘বৈশেষিক সূত্র’ প্রণেতা মহাঋষি ‘কণাদ’ এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। কণাদ ‘উলুক’ নামেও পরিচিত। 

বৈশেষিক দর্শনের মতে অবিদ্যাই সকল দুঃখের মূল কারণ। দুঃখের পরিসমাপ্তিই মুক্তি বা মোক্ষ। যথার্থ জ্ঞান দ্বারাই অবিদ্যা দূরীভূত হয় এবং মুক্তিলাভ হয়। বৈশেষিক দর্শনের মতে, যথার্থ জ্ঞানের উপায় কেবল দুটি; যেমন—

(ক) প্রত্যক্ষ। এবং 

(খ) অনুমান।

সাংখ্য দর্শনঃ ভারতীয় দর্শনের মধ্যে সাংখ্য দর্শন এক অতিপ্রাচীন বৈদিক দর্শন। মহর্ষি ‘কপিল’ এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। সাংখ্য দর্শন সম্পর্কে যতগুলি গ্রন্থ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে ‘সাংখ্যকারিকা’ প্রাচীনতম গ্রন্থ। এই দর্শনের অপর নাম ‘কপিল দর্শন’। ‘সাংখ্যকারিকা’ গ্রন্থটির লেখক হলেন ঈশ্বরকৃষ্ণ’। সাংখ্য দর্শন দ্বৈতবাদী দর্শন। সাংখ্যদর্শন মতে মূলতত্ত্ব দুইটি; যেমন—

(ক) পুরুষ। এবং 

(খ) প্রকৃতি। 

পুরুষ নির্গুণ, নিষ্ক্রিয়; অন্যদিকে প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মিকা সক্রিয়। প্রকৃতি সত্ত্ব, রজ, তম—এই তিনটি গুণের সমন্বয়।

সাংখ্যদর্শন মতে, প্রমাণ অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানার্জনের উপায় তিনটি—প্রত্যক্ষ, অনুমান এবং শব্দ।

‘সাংখ্য’ শব্দটি ‘সংখ্যা’ শব্দ থেকে এসেছে। সাংখ্য দর্শন মতে জগৎ এবং জীবন দুঃখময় এই দুঃখ তিন প্রকারের হয়; যেমন—আধ্যাত্মিক দুঃখ, আধিভৌতিক দুঃখ এবং অধিদৈবিক দুঃখ।

যোগ দর্শনঃ যোগ দর্শন বৈদিক দর্শনের একটি সম্প্রদায়। ‘যোগসূত্র’ প্রণেতা ‘মহর্ষি পতাঞ্জলী’ এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। তাই যোগ দর্শনকে ‘পতাঞ্জলী দর্শন’-ও বলা হয়। ‘যোগ’ শব্দের অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কেউ কেউ বলেন, ‘যোগ’ মানে ‘মনসংযোগ’।

সাংখ্য এবং যোগের দার্শনিক মতবাদ একই বলে এই দুই দর্শনকে ‘সমানতন্ত্র’ বলা হয়। সাংখ্য দর্শন যোগ দর্শনের দার্শনিক ভিত্তি। কিন্তু সাংখ্যের ন্যায় যোগ দর্শন নিরীশ্বরবাদী দর্শন নয়। যোগ দর্শন ঈশ্বরবাদী দর্শন।

যোগ দর্শন মতে যোগের আটটি অঙ্গ আছে। এই আটটি অঙ্গকে ‘যোগাঙ্গ’ বলে। আটতি অঙ্গ যথাক্রমে—যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান এবং সমাধি। 

মীমাংসা দর্শনঃ মীমাংসা দর্শন বৈদিক দর্শন। এই দর্শন বেদানুগত। ‘মীমাংসা সূত্র’ প্রণেতা ‘জৈমিনি’ এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। মীমাংসা দর্শন বেদের পূর্ব অংশ ব্যাখ্যা করে, তাই এই দর্শনকে ‘পূর্বমীমাংসা’ বলে অভিহিত করা হয়। এই দর্শন বেদের কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করে। বেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে বলে এই দর্শনকে ‘কর্মমীমাংসা’-ও বলা হয়।

‘প্রভাকর মিশ্র’ এবং ‘কুমারিল ভট্ট’ মীমাংসা সূত্রের দুজন প্রধান ভাষ্যকর। পরবর্তীকালে এই দুজন যথাক্রমে ‘প্রভাকর মীমাংসা’ এবং ‘ভট্ট মীমাংসা’ নামে মীমাংসা দর্শনের দুটি সম্প্রদায় গঠন করেন।

মীমাংসা দর্শন মতেও জ্ঞান দুই প্রকারের—প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। 

প্রভাকর মীমাংসা সকলের মতে প্রমাণ অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানার্জনের উপায় পাঁচ প্রকারের। যেমন—প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান এবং অর্থাপত্তি। কিন্তু ভট্ট মীমাংসা সকলের মতে প্রমাণ ছয় প্রকারের; যেমন— প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান, অর্থাপত্তি এবং অনুপলব্ধি।

বেদান্ত দর্শনঃ মীমাংসা দর্শনের মতো বেদান্ত দর্শনও সম্পূর্ণরূপে বেদানুগত দর্শন। ‘মহর্ষি বাদরায়ন’ হলেন এই দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। মহর্ষি বাদরায়ন উপনিষদগুলোর মূল দার্শনিক তত্ত্ব অতিসংক্ষিপ্ত আকারে ‘ব্রহ্মসূত্র’ নামক গ্রন্থে প্রকাশ করেন। এই ‘ব্রহ্মসূত্র’ বা ‘বেদান্তসূত্র’ বেদান্ত দর্শনের ভিত্তিস্বরূপ।

‘বেদান্ত’ শব্দের অর্থ বেদের অন্ত (শেষ)। উপনিষদগুলো বেদের অন্ত বা শেষ। সুতরাং, বেদান্ত দর্শন বিভিন্ন বিভিন্ন উপনিষদের উপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। বেদের শেষভাগ (উত্তরভাগ) সম্পর্কে এই দর্শন আলোচনা করে বলে, তাকে ‘উত্তরমীমাংসা’ বলেও অভিহিত করা হয়। বাদরায়নের ‘ব্রহ্মসূত্র’ বা ‘বেদান্তসূত্র’ বেদের জ্ঞানকাণ্ড-এর উপর নির্ভরশীল বলে এই দর্শনকে ‘জ্ঞান মীমাংসা’ও বলা হয়।

বেদান্ত দর্শন ছয় ধরনের প্রমাণ বা যথার্থ জ্ঞান অর্জনের কথা স্বীকার করে। সেগুলো হল—প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান, অর্থাপত্তি, অনুপলব্ধি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top