Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব

Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব and select needs one.

Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 History Chapter 9 শিল্প বিপ্লব Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

শিল্প বিপ্লব

পাঠ:

ঘ- বিভাগ– আধুনিকতার পথে

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. কার রাজত্বকালে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল?

উত্তরঃ তৃতীয় জর্জের রাজত্বকালে। 

2. শিল্প বিপ্লব কথাটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তরঃ ব্রিটিশ দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ টোয়েনবি।

3. ইউরোপের কোন্ দেশে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ইংল্যান্ডে।

4. ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৭৮০-এর দশক থেকে ১৮৫০-এর দশকের মধ্যে। 

5. ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের পর।

6. এশিয়ার কোন্ দেশে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ জাপানে।

7. কৃষি বিপ্লব কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে। 

8. উড়ন্ত মাকু” কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ জন কেই।

9. ‘স্পিনিং জেনি’ কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ জেমস হারগ্রীভস্।

10. স্টীম ইঞ্জিন কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ জেমস ওয়াট।

11. জেমস ওয়াট কখন স্টীম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে।

12. যন্ত্রচালিত তাঁত কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ এডমন্ড কার্টরাইট।

13. হস্তচালিত তাঁত কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ স্যামুয়েল ক্রম্পটন।

14. ‘ওয়াটার ফ্রেম’ কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ রিচার্ড আর্করাইট।

15. রেলইঞ্জিন কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃ জর্জ স্টিফেনসন।

16. জর্জ স্টিফেনসন কখন রেলইঞ্জিন আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে।

17. রেলগাড়ি সর্বপ্রথম কখন চালু হয়েছিল? 

উত্তরঃ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে।

18. বাষ্পচালিত জাহাজ কখন চালু হয়েছিল? 

উত্তরঃ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে।

19. ফ্যাক্টরি আইন কখন প্রণয়ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে।

20. Ten Hours Bill কি?

উত্তরঃ এর মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য প্রাত্যহিক দশ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

21. দশ ঘণ্টা আইন’ কখন প্রণয়ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে।

22. কোন্ আইনের দ্বারা শিশু ও মহিলাদের খনিতে কাজ করা বারণ করা হয়?

উত্তরঃ The Mines and Collieries Act, 1842.

23. বেলজিয়াম এবং জার্মানিতে কখন শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বেলজিয়ামে এবং ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়েছিল।

24. কোন উদ্যোগে প্রথম ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ হস্ততাঁত বা বস্ত্র উদ্যোগে। 

25. ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে।

26. লৌহ উদ্যোগকে কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

উত্তরঃ দ্বিতীয় আব্রাহাম ডার্বি।

27. আর্নল্ড টয়েনবির মতে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব কখন সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৭৮০-১৮২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।

28. নিরাপদ বাতি কে আবিষ্কার করেন?

উত্তরঃ হামফ্রে ডেভি।

29. যন্ত্রচালিত তাঁত কে আবিষ্কার করেছিলেন? 

উত্তরঃ কার্টরাইট।

30. টেলিফোন কে আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তরঃআলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ।

31. কে প্রথম লোহার চেয়ার তৈরি করেন?

উত্তরঃ জন উইলকিনসন (১৭৭০-এর দশকে)।

32. কারা কৃত্রিম খাল খনন করতেন?

উত্তরঃ সাধারণত জমিদার শ্রেণীর লোক তাদের অধীনস্থ খনি, পাহাড়, জঙ্গল বা মহালের গুরুত্ব ও ব্যবসায়িক চাহিদা বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম খাল খনন করতেন।

33. ফরাসি বিপ্লব কখন সংগঠিত হয়?

উত্তরঃ ১৭৮১–১৪ খ্রিস্টাব্দে।

34. ফরাসি বিপ্লবের মূল মন্ত্র কি ছিল?

উত্তরঃ ‘স্বাধীনতা’, ‘সমতা’ ও ‘ভ্রাতৃত্ব’। 

35. Corn Law কি?

উত্তরঃ ব্রিটিশ সংসদ পাশ করা এই আইনে বলা হয় যে যতদিন পর্যন্ত ব্রিটেনে দ্রব্যের মূল্য একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছায় ততদিন পর্যন্ত স্বল্পমূল্যে খাদ্যবস্তু আমদানি বন্ধ থাকবে। 

36. নেড লুড কে ছিলেন?

উত্তরঃ নেড লুড একজন প্রাক্তন সেনা আধিকারিক ছিলেন। যিনি লুডিজম বলে প্রতিবাদের এক নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন।

37. ‘পিটারলো’ কোন যুদ্ধের নামানুকরণে? 

উত্তরঃ ওয়াটারলুর যুদ্ধ, যা ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সংগঠিত হয়।

38. Crystal Palace কোথায়?

উত্তরঃ লন্ডনে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

 1. ‘শিল্প বিপ্লব’ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্য, নানাপ্রকার বৈজ্ঞানিক দ্রব্য ও যন্ত্রের আবিষ্কার, যান্ত্রিক শক্তির সাহায্যে অল্প সময়ে অধিক শিল্পোৎপাদ ও যানবাহন ব্যবস্থার বিরাট পরিবর্তন সাধিত হওয়ার ফলে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়। একেই শিল্প বিপ্লব বলে।

2. প্রথম শিল্প বিপ্লব কি?

উত্তরঃ ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের শিল্পে ও অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। একে প্রথম শিল্প বিপ্লব বলে।

3. ‘শিল্প বিপ্লব’ শব্দটি করে কিভাবে আরম্ভ হয়েছিল?

উত্তরঃ ফরাসি দার্শনিক জর্জ মিসলেট এবং জার্মান দার্শনিক ফ্রেডারিক এঙ্গেলস শি বিপ্লব কথাটি ব্যবহার করেছিলেন। ব্রিটিশ দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ আর্নল্ড টয়েনবি সর্বপ্রথম এই কথাটি ব্যবহার করেছিলেন।

4. দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব কি?

উত্তরঃ দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাব ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের পরে ঘটেছিল। এই বিপ্লবে রাসায়নিক এবং বৈদ্যুতিক শিল্পে বিশেষ প্রসার ঘটেছিল। এই সময়ে ব্রিটেন বিশ্বের প্রধান শক্তি হিসাবে ছিল না। জার্মানি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুখ্য ভূমিকায় ছিল। 

5. ‘শিল্প বিপ্লব’ কথাটি ব্যবহার করা কয়েকজন পণ্ডিতের নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লব কথাটি ফ্রান্সের জর্জেস মিসেলেট, জার্মানির ফ্রেডারিক এঙ্গেলস এবং ইংল্যান্ডের দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ পণ্ডিত টয়নবি ব্যবহার করেছিলেন।

6. শিল্প বিপ্লবের পর শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতিকল্পে গৃহীত যে-কোন দুইটি ব্যবস্থা উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের পর শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতিকল্পে নিম্নোক্ত দুইটি ব্যবস্থা গ্রহ করা হয়েছিলঃ

(ক) ফ্যাক্টরি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাজের সীমা ধার্য করে দেওয়া হয়।

(খ) একটি নির্দিষ্ট বয়সের শিশুদের নীচের বয়সের শিশুদের ফ্যাক্টরিতে কাজ করানো বারণ করা হয়।

7. শিল্পোদ্যোগ গড়ে ওঠার ফলে জন্মলাভ করা দুইটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শিল্পোদ্যোগ গড়ে ওঠার ফলে জন্মলাভ করা দুইটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হল- 

(ক) উপনিবেশিকতাবাদ। এবং 

(খ) ধনতন্ত্রবাদ। 

8. ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবকালীন গুরুত্বপূর্ণ শহরের নাম লেখ।

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবকালীন ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি হল- 

(ক) লাংকেশিয়ার। 

(খ) ইয়র্কশিয়ার।

(গ) ম্যানচেস্টার। 

(খ) ডাবিশিয়ার। 

(ঙ) বার্মিংহাম ইত্যাদি।

9. কৃষি বিপ্লব কি ছিল? 

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং নূতন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষিকার্য ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াকেই কৃষি বিপ্লব বলে।

10. অষ্টাদশ শতকে কৃষি বিপ্লবের দুইটি কারণ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে কৃষি বিপ্লবের দুইটি কারণ নিম্নরূপঃ

(ক) কৃষিখণ্ডে নুতন বৈজ্ঞানিক গবেষণা আরম্ভ হয়েছিল।

(খ) নূতন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে স্বপ্ন সময়ে জমি চাষ ও শস্য সংগ্রহ সম্ভব হয়েছিল। এর ফলে কৃষি উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়।

11. কৃষি বিপ্লবের দুইটি সুফল উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ কৃষি বিপ্লবের দুইটি সুফল নিম্নরূপঃ 

(ক) মানুষ ধনী হতে থাকে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানদণ্ড উন্নত হয়।

(খ) ক্ষুদ্র চাষির স্থানে বৃহৎ চাষির আবির্ভাব ঘটে।

12. কৃষি বিপ্লবের দুইটি কুফল উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ কৃষি বিপ্লবের দুইটি কুফল নিম্নরূপঃ 

(ক) বৃহৎ জমিদার ভূমিহীন কৃষকদের শোষণ করতে আরম্ভ করে।

(খ) সৃতি কাপড়ের উদ্যোগ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

13. ইংল্যান্ডে প্রথমাবস্থায় কেন এবং কিভাবে খাল খনন করা হয়েছিল? 

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের শহর ও নগরগুলিতে কমলা সরবরাহের জন্য প্রথমাবস্থায় খাল খনন করা হয়েছিল। এর কারণ হল কয়লার পরিধি ও ওজন অধিক থাকায় এর পরিবহণ রাস্তা অপেক্ষা মালপথে কম ব্যয়সাপেক্ষ ও কম সময়সাপেক্ষ।

14. ১৮৩০-এর দশকে খাল ব্যবহারে কি কি সমস্যা দেখা দিয়েছিল? 

উত্তরঃ ১৮৩০-এর দশকে খাল ব্যবহারে নিম্নোক্ত সমস্যা দেখা দিয়েছিলঃ

(ক) খানপথের কোন কোন স্থানে জলযানের যানজট জলযান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছিল।

(খ) খালে বরফ জমা, বন্যা অথবা খরার সময় জলের পরিমাণ হ্রাস খাল ব্যবহারের সময় হ্রাস করেছিল।

15. কোন্ সময়কাল Canal Mania বা ‘কৃত্রিম খাল উন্মত্ততা’ নামে পরিচিত?

উত্তরঃ জ ১৭৬০ থেকে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ২৫টি কৃত্রিম নালা নির্মাণের গুরু হয়। এই সময়কাল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে Canal Mania বা ‘করিম নালা তৈরির উচ্চতা” নামে পরিচিত।

16. কৃত্রিম খাল খননের কারণ কি কি?

উত্তরঃ প্রাথমিক অবস্থায় কৃত্রিম খাল নির্মাণ করা হত কয়লা খনি থেকে শহরে কয়লা পৌঁছানোর জন্য, কারণ- 

(ক) খালের মাধ্যমে যাত্রার খরচ কম ছিল। এবং 

(খ) সড়কপথে চার অপেক্ষাকৃত সময়সাপেক্ষ ছিল।

17. কৃত্রিম খালের ব্যবহারে কি কি সমস্যা ছিল? সংক্ষেপে লেখ 

উত্তরঃ কৃত্রিম খালের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) মাত্রাধিক যানের ব্যবহারে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে।

(খ) কন্যা বা শীতের সময় জমে যাওয়ার যাতায়াত বাধাগ্রস্থ হয়।

18. খাল নির্মাণের দুটি ফলাফল উল্লেখ কর।

উত্তরঃ খাল নির্মাণের দুটি ফলাফল নিম্নরূপঃ 

(ক) খাল খননের ফলে উদ্যোগসমূহে কালা সরবরাহ সুবিধাজনক হয়।

(খ) খালসমূহ নূতন নূতন বাজার স্থাপনে সহায়তা করেছিল।

19. ইংল্যান্ডের কোথায় কে এবং কখন প্রথম খাল খনন করেছিলেন? 

উত্তরঃ জেমস্‌ বিউগুলে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্সলে নামক স্থানে সর্বপ্রথম খাল খনন করেছিলেন। 

20. বার্মিংহাম শহর কিভাবে গড়ে উঠেছিল?

অথবা,

কৃত্রিম খালের সংগমস্থল কিভাবে শহরের বিকাশ করেছিল লেখ। 

উত্তরঃ কৃত্রিম নালার সংগমস্থলে বাজার তৈরির জন্য নতুন শহরের বিকাশ হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বার্মিংহাম শহর তৈরি হয়েছিল কৃত্রিম নালার ঠিক সংগমস্থলে। বার্মিংহাম লন্ডন শহরের সাথে যুক্ত ছিল ব্রিস্টল চ্যানেল, এবং মারসি ও হাম্বার নদীগুলির মাধ্যমে।

21. বাষ্পচালিত ইঞ্জিন কে এবং কখন আবিষ্কার করেছিলেন? 

উত্তরঃ জর্জ স্টিফেনসন নামে ইংল্যান্ডের একজন বিজ্ঞানী ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কার করেছিলেন। 

22. ইংল্যান্ডের কোন দুটি শহরের মধ্যে প্রথম রেল পরিষেবা চালু হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের স্টকটন এবং ডার্লিংটন শহরের মধ্যে সর্বপ্রথম রেল চলেছিল।

23. রেলপথ যোগাযোগের সুবিধা কি হয়?

উত্তরঃ রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) কম ব্যয়বহুল পরিবহণ ব্যবস্থা। 

(খ) সারা বছর যোগাযোগ সম্ভব।

(গ) দ্রুত পরিবহণ ব্যবস্থা।

24. উড়ন্ত মাকু বা তাঁতশাল বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ জন কেই ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে উড়ন্ত মাকু বা ভাতশাল নির্মাণ করেছিলেন। এই তাঁতশালে অতি কম সময়ের মধ্যে অনেক বস্ত্র উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছিল। 

25. স্পিনিং জেনির বিষয়ে সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ জেন হাবীবস ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন। এই যন্ত্রের মাধ্যমে একজন লোক একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ সুতা তৈরি করতে পারত।

26. কে এবং কখন প্রথম লোহার সেতু তৈরি করেন?

উত্তরঃ ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় আব্রাহাম ডার্বি কোলব্রুকডেইলে নামক জায়গায় সিবারণ নদীর উপর পৃথিবীর প্রথম লোহার সেতু তৈরি করেন।

27. দি ব্লুটস্থেস কি ছিল?

উত্তরঃ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিফেনসন আবিষ্কৃত বাষ্পচালিত ইঞ্জিনটির নাম ছিল  দি  ব্লুটস্থেস। এই ইঞ্জিন দ্বারা চালিত গাড়িখানা ত্রিশ টন ওজনের মাল ঘণ্টায় চার মাইল বেগে ‘ওখ” পার্ট বহন করে সকলকে চমৎকৃত করেছিল।

28. কোন সময়কালকে ক্ষুদ্রতর রেল উস্মত্ততা এবং বৃহত্তর রেল উচ্চতা’ বলে। আখ্যায়িত করা হয়?

উত্তরঃ ১৮৩৩-১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দকে ‘ক্ষুদ্রতর রেল উন্মত্ততা এবং ১৮৪৮-5889 খ্রিস্টাব্দকে বৃহত্তর রেল উম্মত্ততা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

29. শিল্পবিপ্লবকালীন আবিষ্কারকদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। 

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবকালীন আবিষ্কারকদের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) অধিকাংশ আবিষ্কারকই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না।

(খ) আবিষ্কারগুলি ছিল মূলত কৌতূহল, আগ্রহ ও সময় উপযোগী পদক্ষেপের ফল নাকি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার ফসল।

30. কখন এবং কোথায় Society of Arts প্রতিষ্ঠিত হয় ? 

উত্তরঃ ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে ইংলন্ডে Society of Arts প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থার সভ্যরা বক্তৃতার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বৈজ্ঞানিক চেতনার উন্মেষ ঘটাতে চেয়েছিলেন। 

31. ব্রিটিশ সংসদ কখন Combination Act দুটি পাশ করে? এর শর্তগুলি কি কি?

উত্তরঃ ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সংসদ যুগ্ম আইন প্রণয়ন করেছিল। এগুলির শর্ত হচ্ছে- 

(ক) রাজা, সরকার ও সংবিধানের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ লিখিত বা মৌখিক যেভাবেই হোক বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়।

(খ) পঞ্চাশজন লোক একসঙ্গে কোথাও কোন জনসভায় মিলিত হওয়া বেআইনি ঘোষণা করা হয় ইত্যাদি।

32. Enclosure কি?

উত্তরঃ Enclosure বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামার হৎ ভূস্বামীদের অঞ্চলের সঙ্গে সংযোজন করা হয়, যাতে শক্তিশালী ভূস্বামী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গড়ে তোলা যায়।

এর ফলে সাধারণ গ্রামীণ কৃষক জীবিকার সন্ধানে শহরের কারখানায় যোগ দেয়, কিন্তু মেশিনের ব্যবহার শুরু হলে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে।

33. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সময় গ্রামের মানুষ কেন শহরমুখী হয়েছিল?

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে বৃহৎ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ফলে গ্রাম্য কুটির শিল্পের অবনতি ঘটে এবং গ্রামের মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। সেই জন্য জীবিকা নির্বাহের তাড়নায় যমের লোক শহরের ভারী ও বৃহৎ উদ্যোগসমূহে কাজে যোগদান করে। এর ফলে গ্রামের লোক শহরমুখী হয়। 

34. শিল্প বিপ্লবকালে উদ্যোগপতিগণের অবস্থা কিরূপ হয়েছিল? 

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগপতিগণ ক্রমে ধনী থেকে ধনীতর হতে থাকে। তারা অতিরিক্ত লভ্যাংশ সমূহ বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ করেছিল অন্যদিকে বিদ্যোগে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কর্মী ও শ্রমিকগণ প্রকৃত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

35. ১৭৯৩–১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের প্রভাব ইংল্যান্ডের উদ্যোগসমূহের উপর কি প্রকার ছিল? 

উত্তরঃ ১৭৯৩-১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের সময়সীমাকে নেপোলিয়নের যুগ বলা হয়। এই সময়সীমার মধ্যে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ‘মহাদেশীয় ব্যবস্থার’ মাধ্যমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করেছিল। এর ফলে ইংল্যান্ডের পণ্যসামগ্রীসমূহের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় ইংল্যান্ডের উদ্যোগসমূহ সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

36. উদ্যোগসমূহে নিয়োজিত মহিলা ও শিশুগণের অবস্থা কিরূপ ছিল? 

উত্তরঃ উদ্যোগসমূহে মহিলা ও শিশু শ্রমিকের অবস্থা অতি শোচনীয় ছিল। ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ৫০ হাজার জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহরের সংখ্যা দুটির বিপরীতে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এর সংখ্যা ২৯টিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু নগরসমূহে বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়া লোকের জন্য প্রয়োজনীয় গৃহ, স্বাস্থ্য, বিধিসম্মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বিশুদ্ধ জলের যোগানের কোন ব্যবস্থা ছিল না। ফলে মহিলা শ্রমিকদের কম বয়সে মৃত্যু হয়েছিল। অন্যদিকে শিশুদের অধিকাংশই পাঁচ বছর বয়স হওয়ার পূর্বেই মৃত্যু কলেরা, টাইফয়েডের মতো মহামারী এবং বৃদ্ধ ও শিশু শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছিল। 

37. শিল্প বিপ্লব কোন ধরনের সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল?

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লব সমাজে ধনী ও গরিব নামে দুটি সমাজব্যবস্থার জন্ম দিয়েছিল। শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজে এক ধনী শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছিল। এই শ্রেণীটি উৎপাদনের দিকসমূহ নিজে পরিচালনা করেছিল। উৎপাদিত সামগ্রীসমূহ অধিক দামে বিক্রি করে তারা অধিক ধনী হয়ে পড়েছিল।

অন্যদিকে উদ্যোগে জড়িত শ্রমিকগণ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিল, যদিও তারা প্রকৃত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। ফলে সমাজে শ্রেণীবৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছিল।

38. উদ্যোগপতিরা তাদের কারখানাতে মহিলা এবং শিশু নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব করার দুটি কারণ লেখ। করার

উত্তরঃ উদ্যোগপতিরা তাদের কারখানাতে মহিলা এবং শিশু নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব দুটি কারণ নিম্নরূপঃ 

(ক) পুরুষদের তুলনায় কম পারিশ্রমিক দিতে হত। 

(খ) বেশি সময় এবং তাড়াতাড়ি কাজ করানো যেত।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটেন যুদ্ধে জড়িত হয়ে থাকার ফলে তার উদ্যোগসমূহে কী ধরনের প্রভাব পড়েছিল? 

উত্তরঃ ফরাসী বিপ্লবের প্রভাব ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের উপরও পড়েছিল এবং শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিবাদ। কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার প্রতিবাদ দমনের আইন প্রণয়ন করে। এদিকে আবার ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং এর ফলে—

(ক) ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়।

(খ) কল-কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে। 

(গ) বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। 

(ঘ) শ্রমিকরা কাজ অর্থাৎ উপার্জনের পথ হারায়। এবং 

(ঙ) নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় ইত্যাদি।

এইভাবে ১৭৯৩–১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইঙ্গ-ফ্রান্স যুদ্ধের ফলে ইংল্যান্ডের উদ্যোগ ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। 

2. ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) পর্যাপ্ত পুঁজি বা মূলধন। 

(খ) পর্যাপ্ত কাঁচামালের যোগান।

(গ) পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা ও লোহার বিশাল ভাণ্ডারের অবস্থান।

(ঘ) নুতন নুতন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। 

(ঙ) ইংল্যান্ডে শিল্পোদ্যোগের অনুকূল জলবায়ু ও আবহাওয়া।

(চ) আর বিশেষ করে সুস্থির রাজনৈতিক ব্যবস্থা। 

3. শিল্প বিপ্লবের প্রধান ফলাফলসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের প্রধান ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) শিল্প বিপ্লবের ফলে কুটির শিল্পের পরিবর্তে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে যে সকল লোক বাড়িতে ক্ষুদ্র শিল্প পরিচালিত করত তারা বৃহৎ শিল্পে মজুরি ভিত্তিতে কাজ করত।

(খ) শিল্প বিপ্লবের পূর্বে অধিকাংশ গ্রামই কৃষি নির্ভরশীল ছিল। জনগণের প্রায় সকল প্রকার চাহিদাই গ্রামে মেটানো সম্ভব হত। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের ফলে শহরগুলি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। কৃষকরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতে বাধ্য হয়। এইভাবে অধিকাংশ মানুষেরই জমির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

(গ) শহরাঞ্চলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, গৃহ, স্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতি নানা প্রকার পৌর সমস্যা সৃষ্টি করে।

(ঘ) শিল্প বিপ্লবের ফলে উৎপাদন অত্যধিক বৃদ্ধি পায়, ফলে স্বল্প দামে দ্রব্যসামগ্রী কেনা সম্ভব হয়।

(ঙ) শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিকরা কল-কারখানায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় দীর্ঘ সময় কাজ করতে হত। তারা স্বল্প মজুরি পেত। ফলে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে।

4. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) শিল্প বিপ্লব সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল। অনুকূল নানা প্রকার উপাদানের জন্যই তা সম্ভব হয়েছিল।

(খ) শিল্প বিপ্লবের ফলে কুটির শিল্পের পরিবর্তে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

(গ) শিল্প বিপ্লব যন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা শিল্পোৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি করে। 

(ঘ) ব্রিটেনের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিবর্তিত হয়েছিল। কৃষকগণ শিল্প শ্রমিকে পরিণত হয়েছিল।

(ঙ) শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমিকদের অবস্থার অবনতি ঘটে। 

5. শিল্প বিপ্লব কথাটিকে যথাযথ নয় বলে গণ্য করা হয় কেন?

উত্তরঃ প্রগতির ইতিহাসে শিল্প বিপ্লব একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিভিন্ন দেশের ইতিহাসে নানা ধরনের শিল্প বিপ্লবের উদাহরণ পাওয়া যায়। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বিপ্লব হয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়ায়ও বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লবগুলো হঠাৎ শুরু হয়েছিল; এর ফলে অনেক প্রাণহানিও ঘটেছিল। কিন্তু শিল্প বিপ্লব এই বিপ্লবগুলোর মতো হঠাৎ শুরু হয়নি। শিল্প-বাণিজ্যে এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে ও ক্রমান্বয়ে এসেছিল। অন্যান্য বিপ্লবের মতো এই বিপ্লবে হিংসার আশ্রয় নিতে হয়নি। এই বিপ্লব ছিল শান্তিপূর্ণ। অনেকে এজন্য একে শিল্পের ক্রমবিকাশ অথবা বিবর্তন আখ্যা দিতে চান। এর ফলে সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির আমূল পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করলে একে শিল্প বিবর্তন অপেক্ষা শিল্প বিপ্লব বলাই যুক্তিযুক্ত।

6. শিল্প বিপ্লবের সামাজিক ফলাফলসমূহ উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের সামাজিক ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) শিল্প বিপ্লবের ফলে নূতন নূতন শহর গড়ে উঠল এবং অনেক পুরাতন পল্লী পরিত্যক্ত হল। 

(খ) দেশের মূলধন-দাতাগণ কারখানার মালিক হিসাবে শ্রমিকদের আরম্ভ করলেন।

(গ) স্ত্রী ও শিশুগণকে অল্প বেতনে খাটানো হত।

(ঘ) শ্রমিকগণকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হত। ফলে শ্রমিকগণের দৈহিক ও নৈতিক অবনতি ঘটতে লাগল।

(ঙ) যন্ত্রশিল্পে উৎপন্ন পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হস্তশিল্পগুলির মৃত্যু ঘটতে লাগল; ফলে অসংখ্য শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ল। 

7. শিল্প বিপ্লবের অর্থনৈতিক ফলাফলসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের অর্থনৈতিক ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) অল্প সময়ে কম খরচে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন সামগ্রী উৎপন্ন হওয়ার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটল। 

(খ) শিল্পে উন্নত দেশগুলিতে প্রচুর অর্থাগম হল। 

(গ) যাতায়াতের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এক দেশের উৎপন্ন দ্রব্য অন্য দেশে রপ্তানীর সুবিধা হল।

(ঘ) পৃথিবীর প্রায় সকল দেশকেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের উপর নির্ভর করতে হল।

(ঙ) বৃহদায়তন শিল্প গড়ে উঠল।

(চ) শিল্পক্ষেত্রে শ্রম বিভাজন নীতি চালু হল ও এর সুবিধাগুলি বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি ভোগ করবার সুযোগ পেল।

8. শিল্প বিপ্লবের রাজনৈতিক ফলাফলসমূহ উল্লেখ কর। 

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের রাজনৈতিক ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকেও এবং নিজেদের জীবন বিপন্ন করেও যখন উপযুক্ত বেতন পেত না তখন শ্রমিকগণ নিজেদের অভাব-অভিযোগ দূর করবার জন্য করতে বাধ্য হল; যেমন- ইংল্যান্ডের চার্টিস্ট আন্দোলন। ফলে শ্রমিকদের মঙ্গলের জন্য কয়েকটি আইন প্রণয়ন করা হল।

(খ) এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই গঠিত হল ট্রেড ইউনিয়ন। 

(গ) এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই সমাজতন্ত্রবাদ উদ্ভব হয় এবং ক্রমে তা স্বীকৃতি লাভ করে। 

(ঘ) এই শিল্প বিপ্লবের ফলেই পাশ্চাত্য দেশগুলিতে ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়।

(ঙ) কলকারখানায় পণ্যদ্রব্য বিক্রয়ের বাজারের জন্য এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জাতির মধ্যে উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতা আরম্ভ হল। এর ফলেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদ প্রকট হয়ে পড়ল এবং নানা যুদ্ধ-বিগ্রহ আরম্ভ হল।

9. ভারতে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব কিরূপ ছিল? 

উত্তরঃ ইউরোপে সংঘটিত শিল্প বিপ্লব ভারতের অর্থনীতির উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। ইংল্যান্ডে উৎপন্ন কাপড় ভারতের বাজার দখল করে ফেলে। কুটির শিল্পজাত ভারতীয় কাপড় কলকারখানায় উৎপাদিত ইংল্যান্ডের কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছিল না। ফলে ভারতের বস্ত্রশিল্পের অবনতি ঘটে এবং মানুষ ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড়চোপড় ব্যবহার করতে শুরু করে। ভারতে এভাবেই ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ভারতবর্ষ ইংল্যান্ডের কাছে একটি লাভজনক বাজারে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীকালে কয়েকজন বণিক ভারতে কল-কারখানা স্থাপন করতে প্রয়াসী হন। ফলে ভারতেও কারখানাদি স্থাপন শুরু হয়। তা দেখে ভারতের শিল্পপতিরা এখানে কারখানাদি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। স্বদেশী আন্দোলনও ভারতীয় শিল্পপতিদের এ-ব্যাপারে উদ্যোগ স্থাপন করতে উৎসাহ দেয়। বস্ত্রশিল্পেই এর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।

10. বিশ্বের অন্যান্য দেশে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব কিরূপ ছিল? 

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইংল্যান্ডে যে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, সে বিপ্লব সেখানেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রান্সেও সে সময় বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তবে ইংল্যান্ডের সঙ্গে একই সময়ে সেখানে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে অর্থাৎ লুই ফিলিপের রাজত্বকালে ফ্রান্সে শিল্প বাণিজ্যের আমুল পরিবর্তন আসে। ইংল্যান্ডের মতো ফ্রান্সেও নতুন নতুন যন্ত্রপাতির সহায়তায় বিভিন্ন সামগ্রীর উৎপাদন ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা হয়। কুটির শিল্পের পরিবর্তে সেখানেও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। হল্যান্ড এবং বেলজিয়ামেও শিল্প-বিপ্লবের প্রভাব বিস্তারিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে জার্মানীতে নানা ধরনের শিল্পানুষ্ঠান স্থাপিত হয়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ঐক্য সাধনের পরই সেখানে নতুন নতুন কল-কারখানা গড়ে ওঠে। এভাবে ইউরোপের ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড। ও জার্মানিতে শিল্প-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন হয়। উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও শিল্প বিপ্লবের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানেও নতুন নতুন শিল্প স্থাপিত হয়।

11. শিল্প বিপ্লব কি কি সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করেছিল?

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে সমাজে দুটি শ্রেণীর আবির্ভাব হয়। এক শ্রেণী বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন, আর আরেকটি শ্রেণী সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে মজুরি করে দিন কাটাচ্ছেন। অর্থাৎ সমাজে মালিক ও শ্রমিক এই দুটি শ্রেণীর মানুষের সৃষ্টি হয়। একটি শ্রেণীর লোকেরা কোন কাজ না করেই লাভের বিরাট অংশ তথা সকল অংশ ভোগ করেন আর অন্য শ্রেণীর লোকেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করেও ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারছেন না। মিলের মালিক তথা শিল্পপতিরা ক্রমান্বয়ে ধনী হতে থাকেন কিন্তু শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা অথবা অর্থনৈতিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না। মালিকরা শ্রমিকদের স্বার্থের প্রতি একটুও মনোযোগ না দেওয়ায় তারা শ্রমিক সঙ্ঘ গঠন করে নিজেদের ন্যায্য দাবি সাব্যস্ত করতে বাধ্য হন। যাতায়াতের উন্নতির জন্য শ্রমিকদের মধ্যে একতার ভাব গড়ে ওঠা সহজ হয়। কোন একটি কারখানায় শ্রমিক-মালিক সংঘর্ষের মতভেদ বা সংঘর্ষ অন্য কারখানায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করতে সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে হয়। ফ্যাক্টরি আইন, দরিদ্র আইন এভাবেই প্রণীত হয়েছিল। এরপর শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য পার্লামেন্টে শ্রমিক দলের সৃষ্টি হয়। 

12. শিল্প বিপ্লব কি কি অর্থনৈতিক পরিবর্তন সূচিত করেছিল?

উত্তরঃ নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও খনিজ পদার্থের ব্যবহারের ফলে শিল্পজগতে বিপ্লবের সূচনা হয়। এগুলোর সহায়তায় বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয় এবং কম খরচে কম সময়ে অধিক সামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত সামগ্রী বিক্রির জন্য বিদেশের বাজারের দরকার হয়। এগুলোতে উৎপাদিত সামগ্রী বিদেশে পাঠাতে এবং বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম করাতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে দেশের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ও যাতায়াতের ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। কল-কারখানা গড়ে ওঠা স্থানগুলোতে এক-একটি শহরের জন্ম হয় এবং গ্রাম্য লোকেরা কাজের খোঁজে শহরে আসতে বাধ্য হন। মানুষ শহরমুখী হওয়ায় শহরের লোকসংখ্যাও বাড়তে থাকে। এর ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান প্রভৃতির জন্য নতুন সমস্যা দেখা দেয়। শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়ে; তাঁদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এবং ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক হয়ে পড়ে।

13. শিল্প বিপ্লবের ফলে কি কি রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল?

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছিল। এর ফলে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন হয়। মালিকরা তাঁদের নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য ব্যক্তিবাদী ভাবধারা সমর্থন করলেন। অপরদিকে শ্রমিকরা চাইলেন অর্থনৈতিক সমতা অর্থাৎ সমাজবাদ। অর্থাৎ এই বিপ্লবের ফলে ব্যক্তিবাদের নীতিতে প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদ এবং সমাজবাদের মধ্যে সংঘর্ষের উপক্রম হয়। কার্ল মার্ক্স-এর রচনা দ্বারা তখন শ্রমিকরা প্রভাবান্বিত হন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা দেখা দেয়। যাতায়াতের সুবিধার ফলে একটি দেশের শ্রমিকের সঙ্গে অন্যান্য দেশের শ্রমিকের সম্পর্ক সহজে গড়ে ওঠে। সারা পৃথিবীর শ্রমিক এক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ফলে পৃথিবীতে সাম্যবাদের প্রচার ও প্রতিপত্তি বাড়ার উপক্রম হয়। একদিকে সাম্যবাদ, অপরদিকে পুঁজিবাদ—এ । দুটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আদর্শের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হল। এর ফলে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী শীতল যুদ্ধ বা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট মার্ক্সীয় সমাজবাদী ভাবধারার আদর্শের ভিত্তিতে পৃথিবীটাকে দুভাগে ভাগ করে দিল।

শিল্প বিপ্লবের ফলে সাম্রাজ্যবাদেরও সৃষ্টি হয়। শিল্প-বাণিজ্যে অগ্রসর দেশগুলোকে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির জন্য বিদেশের বাজারের সন্ধান করতে হয়। কালক্রমে এই বিদেশি বাজারগুলোতে তাঁরা উপনিবেশ স্থাপন করেন। এভাবে নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপন করায় তাঁদের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে। আর তখনই ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত হয়। না’ অবস্থা এসে পড়ে। এদিকে সাম্রাজ্যের বিস্তারে জার্মানরাও চেষ্টা শুরু করেন। তাঁদের ধারণা হল— উপনিবেশের সংখ্যার উপরই একটি দেশের মান-মর্যাদা নির্ভর করে। এজন্য তাঁরা উপনিবেশ স্থাপন করতে উঠে-পড়ে লাগলেন। শান্তিপূর্ণভাবে এ কাজটি সম্ভব না হওয়ায় যুদ্ধের আশ্রয় নিতে হয়। ফলে পৃথিবীব্যাপী মহাযুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলোর মধ্যে জার্মানদের উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টাও একটি অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে এভাবে পৃথিবীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

14. অষ্টাদশ শতকে সংঘটিত বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের নাম লেখ।

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে বহু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সংঘটিত হয়েছিল। নিম্নে কতকগুলি উল্লেখ করা হলঃ

15. পরিবহণের ক্ষেত্রে কি কি নুতন আবিষ্কার হয়েছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ পরিবহণের ক্ষেত্রে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। আবিষ্কার ও আবিষ্কারকের দৌলতেই তা সম্ভব হয়েছিল।

এইসকল আবিষ্কারের প্রধান কয়েকটি নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

(ক) রাস্তাঃ মেক এডাম নামে একজন স্কটিশ অভিযন্ত্রা শক্ত রাস্তা তৈরির জন্য পাথরের টুকরো ব্যবহার করেছিলেন। ইংল্যান্ডে এইরূপ অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছিল।

(খ) খালঃ জেমস ব্রিভলি বেশ কয়েকটি খাল খনন করেছিলেন। এর ফলে লন্ডন, বার্মিংহাম, লিভারপুল এবং ম্যাঞ্চেস্টার প্রভৃতি শহর খালপথে সংযুক্ত হয়েছিল।

(গ) রেল ইঞ্জিনঃ ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে ট্রেভিথিক প্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিভেনশন ব্লাটচার নামে একপ্রকার বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলগাড়ি চলাচল শুরু করে।

(ঘ) বাষ্পচালিত জাহাজঃ আমেরিকার বিজ্ঞানী রবার্ট ফুল্টন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে বাষ্পচালিত নৌকার নমুনা তৈরি করেন। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে গ্লাসগো ও লিভারপুলের মধ্যে সর্বপ্রথম বাষ্পচালিত জাহাজ যাতায়াত শুরু করে।

16. বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের আবিষ্কার উদ্যোগ এবং পরিবহণ ব্যবস্থায় কীভাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল?

উত্তরঃ বাষ্পচালিত ইঞ্জিন উদ্যোগ এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে এক বিরাট পদক্ষেপ। বাষ্পচালিত শক্তি মূলত প্রচুর পরিমাণ শক্তির উৎস ছিল যা কলকারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে শক্তির যোগান দিত। বাষ্পচালিত শক্তির তৈরি করা উচ্চচাপ প্রক্রিয়া বড় বড় মেশিনকে চালানোর শক্তি যোগান দিত এবং এই বাষ্পচালিত শক্তির সাহায্যেই বড় বড় কলকারখানার যন্ত্রগুলি অতিদ্রুত কম খরচে সহজে চালানো সম্ভব হয়েছিল। স্টিম শক্তি প্রথম ব্যবহার করা হয় খান থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাষ্পচালিত শক্তির ব্যবহার পাত বাম্পচালিত আবিষ্কারের প্রাক্ অবধি বাষ্পচালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য। কিন্তু ১৭৬৯ সালে উন্নত মানের বাষ্পচালিত ইঞ্জিন, যাকে জেমস ওয়াট নামক ব্যক্তির আবিষ্কার বলা হত, তা এই সমস্যা সমাধানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছিল। ধনী শিল্পপতি ম্যাথু বলটন-এর সাহায্যে ওয়াট তৈরি করেন “Soho Foundry”। যার ফলে ওয়াট-এর বাষ্পচালিত ইঞ্জিন প্রচুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমর্থ হয়েছিল।

স্টীম ইঞ্জিনের সাহায্যে রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার পরিবহণ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিশাল অশ্বশক্তি বিশিষ্ট রেলইঞ্জিন ব্রিটেন তথা সমগ্র ইউরোপে রেল পরিষেবায় এক দিগন্ত উন্মোচন করে। জল পরিবহণের ক্ষেত্রেও বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের আবিষ্কার নবদিগন্তের সূচনা করে। পালচালিত জাহাজের পরিবর্তে স্টীম ইঞ্জিনচালিত জাহাজ জল পরিবহণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 

17. লন্ডন কেন বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল? সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

লন্ডনের গুরুত্ব উল্লেখ কর।

উত্তরঃ লন্ডন বিশ্ববাণিজ্যের কেন্দ্রভূমি হিসাবে গড়ে ওঠার পিছনে মুখ্য কারকগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) ইংল্যান্ডের সমস্ত বাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্য লন্ডনকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হত। লন্ডন সমগ্র দেশের সাথে সংযুক্ত ছিল। 

(খ) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের পর বৈশ্বিক বাণিজ্য ইতালি ও ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর থেকে হল্যান্ড ও ব্রিটেনের আটলান্টিক বন্দরকেন্দ্রিক হয়। 

(গ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ঋণের কেন্দ্র হিসাবে লন্ডন আমস্টারডামকে প্রতিস্থাপন করে।

(ঘ) লন্ডনকে কেন্দ্র করে ত্রিদেশীয় বাণিজ্য শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ড, আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে।

(ঙ) এশিয়া ও আমেরিকায় বাণিজ্য করা কোম্পানিগুলির মুখ্য কার্যালয় লন্ডনে ছিল।

18. Smelting কি? এর সমস্যাগুলি কি কি লেখ। 

উত্তরঃ Smelting হচ্ছে এই পদ্ধতি যার মাধ্যমে খনি থেকে আহরণ করা আকরিক লোহাকে গলিয়ে তরল বিশুদ্ধ লোহা সংগ্রহ করা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কাঠকয়লাকে ব্যবহার করা হত। Smelting পদ্ধতিতে অপ উৎপাদনে।

কিন্তু এর নিম্নোক্ত সমস্যা ছিলঃ

(ক) দূর যাত্রায় ভঙ্গুর কাঠকয়লা পরিবহণ ছিল খুব কষ্টকর। 

(খ) কাঠকয়লার অশুদ্ধতা খুব নিম্নমানের লোহা উৎপাদন করত।

(গ) কাঠকয়লার যোগান কম ছিল। 

(ঘ) কাঠকয়লা পর্যাপ্ত তাপ বা উষ্ণতা দিতে পারত না।

19. আব্রাহম ডার্বিরা কারা? ধাতুবিদ্যার জগতে তাদের অবদান লেখ।

উত্তরঃ শ্রোপশিয়ারের ডার্বিরা হচ্ছেন আয়রন মাস্টার পরিবার অর্থাৎ লোহা উৎপাদনে জড়িত পরিবার। এই পরিবারের তিন পুরুষ দাদু, বাবা ও ছেলে যাদের সবাই আব্রাহাম ডার্বি নামে পরিচিত। ১৮ শতাব্দীতে প্রায় অর্ধ শতাব্দী সময় ধরে পর্যায়ক্রমে ধাতুবিদ্যার জগতে তারা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।

ধাতুবিদ্যার জগতে তাদের অবদান নিম্নরূপঃ 

(ক) প্রথম আব্রাহাম ডার্বি ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে মারুতও চুল্লি আবিষ্কার করেন। এই চুল্লির ব্যবহারে অতি উন্নত লোহা উৎপাদন সম্ভব হয়। 

(খ) দ্বিতীয় আব্রাহাম ডার্বি কাঁচা লোহা থেকে পেটা লোহা তৈরি করেন যা ছিল কম ভঙ্গুর।

(গ) ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় আব্রাহাম ডার্বি সিভারন নদীর উপর পৃথিবীর প্রথম লোহার সেতু তৈরি করেন কোলব্রুক ডেইলে নামক স্থানে। এভাবেই আব্রাহাম ডার্বিদের অধীনে লোহার ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে। 

20. ব্রিটেনে লৌহশিল্পের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ ব্রিটেনে লৌহশিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল তার লৌহ ও কয়লা খনির পাশাপাশি অবস্থান। এগুলি ছিল আবার বন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলে। এর ফলে উপযুক্ত কয়লার ব্যবহার উন্নত গুণগত মানবিশিষ্ট লোহা উৎপাদন সম্ভব ছিল।

পাঁচটি সমুদ্রতীরবর্তী কয়লা সংরক্ষণ স্থান যা সরাসরি তৈরি জিনিস জাহাজে পৌঁছাতে সম্ভব ছিল। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল সংলগ্ন কয়লাখনি থাকার জন্য জাহাজ তৈরির কারখানা বাড়াতে শুরু করে এবং এর ফলে জাহাজের ব্যবসা ক্রমান্বয়ে বাড়তে আরম্ভ করে। এইভাবেই ব্রিটেনের লৌহশিল্প তিনগুণ পরিমাণে বাড়তে শুরু করে। 

21. ইংল্যান্ডের শ্রমিকদের উপর শিল্প বিপ্লবের প্রভাব কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের শ্রমিকগণ সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলঃ

(ক) শ্রমিকগণকে দিনে ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হত। পরিশ্রান্ত হলেও তাদের বিশ্রাম করতে দেওয়া হত না।

(খ) তাদের কর্মস্থল ছিল অত্যন্ত নোংরা এবং তাদের নিরাপত্তার কোনরূপ ব্যবস্থা। ছিল না।

(গ) তাদের বসবাসের স্থান ছিল খুবই খারাপ। দুর্ঘটনা, নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল।

(ঘ) মহিলা ও শিশুদের ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থান দেওয়া হত, কিন্তু তাদের স্বল্প মজুরি দেওয়া হত। 

22. শিল্প বিপ্লব’-কালীন ইংল্যান্ডে শিশু ও মহিলাদের কারখানাতে নিয়োগ করতে কেন বেশি আগ্রহ ছিল?

উত্তরঃ শিশু ও মহিলাদের কারখানাতে নিয়োগ করা হত, কারণ—

(ক) এদের কম পারিশ্রমিকে অধিক সময় কাজ করান সম্ভব। 

(খ) এদের মধ্য থেকে কোন প্রতিরোধ গড়ে উঠত না, তারা সঠিকভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করত।

(গ) যন্ত্রাংশ পরিষ্কার করতে শিশুরা খুব উপযোগী ছিল।

(ঘ) কয়লাখনিতে শিশুদের নিয়োগ করা হত, কারণ তারা সহজে চলতে পারত ও কয়লা আনয়নে সহায়তা করত। 

(ঙ) বয়নশিল্পে শিশুরা খুব উপযোগী ছিল, কারণ তাদের ছোটো হাত-পা তাদের কাজ করার সুবিধা দিত।

(চ) শিশুরা খুব সহজে যন্ত্রাংশের মধ্য দিয়া চলাফেরা করতে পারত।

23. শিল্পবিপ্লবকালীন সময় মহিলাদের অবস্থান কেমন ছিল সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবের অগ্রগতিতে মহিলাদের বিশেষ অবদান ছিল। মহিলারা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। যার ফলে তাদের সাংসারিক উপার্জন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় শিল্প কারখানায় নিয়োজিত থাকায় জীবনের আনন্দ দূর হয়ে যায়। শিল্প কারখানায় নির্দিষ্ট সময়ের অধিক এবং অত্যধিক কঠোর পরিশ্রম সহকারে ও সতর্কতা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে তাঁদের সর্বদাই কাজ করতে হত। তাছাড়াও পুরো সাংসারিক দায়িত্বও তারা পালন করত। যদিও মহিলারা শিল্প কারখানায় চাকরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছিল এবং তাদের আত্মসম্মান বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু তাদের যে শর্তসাপেক্ষ কাজ করতে হত বা গর্ভাবস্থায় সন্তান হারানো বা শৈশবে সন্তান হারানো এবং নোংরা শহরাঞ্চলীয় বস্তিতে বাস করতে বাধ্য হত তা তাদের করুণ জীবনের প্রমাণ দেয়, যা শিল্প বিপ্লবেরই অবদান।

24. শিশু শ্রমিকের উন্নতির জন্য চারটি পরামর্শ দাও। 

উত্তরঃ শিশু শ্রমিকের উন্নতির জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি দেওয়া হলঃ

(ক) শিশু শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা পাঁচ ঘণ্টা থেকে কম নির্ধারিত করা উচিত।

(খ) চৌদ্দ বছরের নীচে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা উচিত। 

(গ) শিশু শ্রমিকদের প্রাণসংহারী ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিষিদ্ধ করা উচিত।

(ঘ) শিশু শ্রমিকদের প্রাপ্তবয়স্কদের সমান পারিশ্রমিক দেওয়া উচিত।

(ঙ) শিশু শ্রমিকদের পড়াশুনার এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা উচিত। 

25. ‘লুডিজম’ কি? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ লুডিজম হচ্ছে প্রতিবাদ-এর একটি নতুন ধারা, যা শুরু করেছিলেন লেড লুড নামের এক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সেনা আধিকারিক। লুড মতবাদে বা লুডিজমে শুধু যন্ত্রপ্রযুক্তির বিরোধিতা করেই আন্দোলন শেষ ছিল না, বরং বিভিন্ন দাবিদাওয়া ছিল সরকারের প্রতি।

এদের দাবির মধ্যে মুখ্য ছিল-

(ক) কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও প্রদান।

(খ) শিশু ও মহিলাদের নাম নিয়ন্ত্রণ। 

(গ) কল/কারখানা স্থাপনের ফলে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া। 

(ঘ) শ্রমিক সংগঠন গড়ার অধিকার, যাতে এগুলির মাধ্যমে আইনসঙ্গতভাবে সরকারের নিকট দাবি তুলে ধরা যায়।

26. পিটারলু কি? এর ফলাফল লেখ।

উত্তরঃ শিল্পবিপ্লবের প্রারম্ভিক পর্যায়ে শ্রমিকদের কোন আইনসঙ্গত অধিকার ছিল না বা তাদের দাবি বা ক্ষোভ প্রকাশের অধিকারও ছিল না। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ম্যাঞ্চেস্টার শহরের সেন্ট পিটার্স চার্চের মাঠে প্রায় ৮০,০০০ লোকের এক বিরাট জনসভা হয়, যেখানে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার-রাজনৈতিক সংগঠন, জনসভা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবি জানায়। সরকার আগ্রাসী ও নির্মমভাবে এই প্রতিবাদ দমন করে যা পিটা নামে পরিচিত হয়।

ফলাফলসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) প্রতিবাদকারীরা যে অধিকারের দাবি জানিয়েছিল এইগুলি এই বছরই ৬টি আইনের মাধ্যমে অস্বীকার করে সরকার। বরং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর বাধা আরোপ করা হয়

(খ) House of Commons-কে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক করার প্রস্তাব আসে। 

(গ) ১৮২৪-১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে Combination Act-গুলি বাতিল করা হয় ইত্যাদি।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. ‘শিল্প বিপ্লব’ বলতে কি বোঝ? আলোচনা কর।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের তৃতীয় জর্জের সময়ে দেশে নানা প্রকার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আবহ হয় এবং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর ফল সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পূর্বে ইংল্যান্ডের অধিকাংশ লোকই গ্রামে থেকে কৃষিকার্য ও পশুপালন করে জীবন ধারণ করত। মেয়েরা বাড়িতে কাপড় তৈয়ার করত। কিন্তু বৈজ্ঞানিক প্রগতির যুগে গ্রামীণ লোকেরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বাস করতে আরম্ভ করেন। ফলে গ্রাম্য কুটির শিল্প ও প্রাচীন পদ্ধতিতে কৃষিকার্য ব্যাহত হতে লাগল।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্যঃ আমাদের দেশের মতো ইংল্যান্ডেও টুকরো টুকরো জমিতে কৃষকরা পুরানো পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করত। কিন্তু উনিশ শতকে ইংল্যান্ডে বৈজ্ঞানিক ক্ষতিতে কৃষিকার্য আরম্ভ হওয়ায় ধনীক শ্রেণী কৃষকদের টুকরো টুকরো জমিগুলি ক্রয় করে বৃহৎ কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃষিকার্য আরম্ভ করেন। ফলে একদিকে শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেল, কিন্তু অপরদিকে দরিদ্র কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা বেড়ে গেল। তারা নিমজুরে পরিণত হল।

বয়ন শিল্পের উন্নতিঃ এতদিন পর্যন্ত গ্রাম্য মেয়েরা ঘরে সুতা কেটে কাপড় প্রস্তুত করত। ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে John Cay উড়ন্ত মাকু এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে হার গ্রীভস এক প্রকার চরকা প্রস্তুত করেন যার দ্বারা একসঙ্গে আটগাছা সুতা কাটা যায়। এর পর আর্করাইট এবং স্যামুয়েল ক্রম্পটন কর্তৃক কলের তাঁত আবিষ্কৃত হওয়ায় বস্ত্রোৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

কলকারখানা স্থাপনঃ জেমস ওয়ার্ট স্টীম ইঞ্জিন আবিষ্কার করে বাষ্পীয় শক্তিতে নব আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলি চালাইবার ব্যবস্থা করায় মানুষ কর্তৃক যন্ত্র চালাবার কাজ কমে গেল এবং দেশে বৃহৎ বৃহৎ কলকারখানা স্থাপিত হওয়ায় গ্রাম্য কুটির শিল্পীর প্রয়োজন হ্রাস পেতে লাগল।

যাতায়াতের সুবিধাঃ ইংল্যান্ডে পূর্বে যাতায়াতের বিশেষ সুবিধা ছিল না। টেন ফোর্ড এবং ম্যাক অ্যাভাস কর্তৃক রাস্তা নির্মাণ এবং ব্রিন্ডলী কর্তৃক উন্নত ধরনের খাল খনন উদ্ভাবনের ফলে স্থলপথে ও জলপথে পরিবহণের যথেষ্ট উন্নতি হয়। তদুপরি জন উইলকিনসন এবং স্টিভেনশন কর্তৃক যথাক্রমে যান্ত্রিক জাহাজ অয়েল ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে যাতায়াত ও মাল বহনের যথেষ্ট সুবিধা হয় এবং দরিদ্র শ্রমিকদের বেকারত্ব বৃদ্ধি পর। সেই সঙ্গে হামফ্রে ডেভী কয়লাখনির জন্য Safety Lamp আবিষ্কার করেন। পূর্বে খনি হতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক প্রাণ হারাত। Safety Lamp আবিষ্কৃত হওয়ায় শ্রমিক দুর্ঘটনা হ্রাস পেল।

উপরিউক্ত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ডের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। ঐতিহাসিকেরা এর নাম দিয়েছেন “শিল্প বিপ্লব’।

2. শিল্প বিপ্লব কি ছিল?’ শিল্প বিপ্লবের কারণসমূহ আলোচনা কর।

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ভারতবর্ষের সঙ্গে ইংল্যান্ডের একচেটিয়া বাণিজ্য উপনিবেশ স্থাপিত হওয়ায় ঐ সকল দেশ হতে শিল্পোপযোগী প্রচুর কাঁচামাল আমদানি জাকায় ইংল্যান্ডে প্রচুর অর্থাগম হয়। ভারতবর্ষ, আমেরিকা ও অন্যান্য স্থানে ইংরেজ সহজ হয়ে পড়ে। তাছাড়া এই সময় ইংল্যান্ডে ভূমি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। ফলে উৎপাদন প্রণালীর এক যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা দেয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্য আরম্ভ হয়। নানা বৈজ্ঞানিক দ্রব্য ও যন্ত্রের আবিষ্কার হয়। যান্ত্রিক শক্তির সাহায্যে অল্প সময়ে অধিক সামগ্রী উৎপন্ন হয়। যানবাহন ব্যবস্থার বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়। ফলে শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা দেয়। ইহাই শিল্প বিপ্লব। যদিও প্রথমত, ইংল্যান্ডে এই বিপ্লব আরম্ভ হয় তথাপি তা ক্রমে ক্রমে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করে।

কারণঃ শিল্প বিপ্লবের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপঃ 

(ক) আমাদের দেশের কৃষিক্ষেত্রের মতো ইংল্যান্ডে জমি ছিল অসংখ্য টুকরোয় বিভক্ত। সেই জন্য ধনী কৃষকগণ আইনের সাহায্যে টুকরো জমিগুলি দখল করে। বড় বড় কৃষি ফার্ম গঠন করে নেয় এবং বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে কৃষিকার্য আরম্ভ করে। এর ফলে পূর্বের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি ফসল উৎপন্ন হল। তাছাড়া কলের লাঙল তৈরি ও জমিতে সার দেওয়ার নুতন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হল।

(খ) বয়ন শিল্পের উপরই এই বিপ্লবের প্রভাব সর্বপ্রথম লক্ষ্য করা যায়। ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে জন কে নামক একজন ইংরেজ ‘ফ্লাইং সাটল’ আবিষ্কার করে বস্ত্র বয়নের কাজ অতি দ্রুত করে দেন। তাঁতীদের বেশি সুতা যোগানের জন্য। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে হারগ্রীভস নামক একজন তাঁতী স্পিনিং জেনি’ নামক এক যন্ত্র আবিষ্কার করেন যার সাহায্যে পূর্বের চেয়ে ষোলগুণ বেশি সুতা কাটা সম্ভব হল। ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে আর্করাইট ‘ওয়াটার ফ্রেম’ নামক সুতাকাটার আর এক যন্ত্র আবিষ্কার করলেন। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্যামুয়েল ক্রম্পটন নামক এক ব্যক্তি মিউল নামক আর এক যন্ত্র আবিষ্কার করে মিহি সুতা কাটার ব্যাপারে খুব সুবিধা করে দিলেন। ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে কার্টরাইট পাওয়ার লুম আবিষ্কার করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত করে দিলেন। এই সমস্ত আবিষ্কারের ফলে একাধারে যেমন অধিক সুতাকাটা সম্ভব হল, অন্যদিকে অধিক উৎপাদনও সম্ভব হল।

(গ) ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে জেমস ওয়াট বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। এই ইঞ্জিনগুলি কয়লা দ্বারা চালিত হত। তাই কয়লার চাহিদা বেড়ে গেল। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিভেনসন এই ইঞ্জিনকে আরো উন্নত করলেন। কয়লার খনিতে যে সমস্ত দুর্ঘটনা ঘটত তা নিবারণের জন্য হামফ্রি ডেভী ‘সেফটি ল্যাম্প আবিষ্কার করলেন। কয়লার প্রাচুর্যের সঙ্গে সঙ্গে লৌহ শিল্পেরও উন্নতি হল। আবিষ্কৃত হল ব্লাস্ট ফারনেস।

(ঘ) এর পরেই ডল্টা, ফ্যারাডে কর্তৃক আবিষ্কৃত হল বৈদ্যুতিক শক্তি এবং তার ফলে টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের আবিষ্কার হয়।

(ঙ) আগে ইংল্যান্ডে ভালো রাস্তা ছিল না। এই সময়ে টেলফোর্ড ও ম্যাকাডম পাকা রাস্তা তৈরি করবার উপায় বের করলেন। ইঞ্জিনিয়ার জেমস ব্রিন্ডলি চমৎকার মাল খনন করবার উপায় বের করলেন।

(চ) তাছাড়াও মৃৎশিল্পের ব্যাপারে নূতন নূতন প্রণালী উদ্ভাবন হল। এইভাবেই নানা যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হওয়ায় এবং যাতায়াতের সুবিধা হওয়ায় শিল্প ও বাণিজ্য জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখা দিল।

3. শিল্প বিপ্লবের ফলাফলসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ কৃষি, বয়ন শিল্প, কয়লা শিল্প, যানবাহন, লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের ফলে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। পাওয়ার লুম, বাষ্পীয় পোত, নিরাপদ হাতি, রেলওয়ে, উড়োজাহাজ প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করল। 

রাজনৈতিক ফলঃ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে যন্ত্রচালিত কারখানাগুলিতে অল্প সময়ে অধিক বস্তু সস্তায় উৎপাদিত হতে লাগল। এক শ্রেণীর ইংরেজ বণিক বহির্দেশে সেই সকল পণ্য বিক্রয় করে লর্ড শ্রেণীভূত করে লর্ড সভায় নির্বাচিত হলেন। ফলে লর্ড সভায় অভিজাত সম্প্রদায় ছাড়াও নুতন ধনী এক অভিজাত শ্রেণীর প্রভাব বিস্তৃত হল।

নূতন নূতন শিল্প নগরী গড়ে ওঠায় সাধারণ আইন সভায় প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন উঠল। ফলে হাউস অব কমন্সের নির্বাচন পদ্ধতিরও পরিবর্তন হল।

প্রথমদিকে সরকার কারখানার শ্রমিকদের সুখ-সুবিধার প্রতি নজর দিতেন না। শ্রমিকরা কম মজুরি পেয়ে অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে বাস করত। শ্রমিক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করায় ১৮৩২, ১৮৬৭ এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার তিনটি আইন পাস করে শ্রমিকদের ভোটাধিকার দিতে বাধ্য হন। এরই ফলস্বরূপ সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদের সৃষ্টি হয়। 

ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব ক্রমশ সমগ্র ইউরোপে বিস্তৃত হয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, আজ পর্যন্তও তা বন্ধ হয়নি।

সামাজিক ফলঃ সামাজিক ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের ফলে ধনীরা অধিকতর ধনী হতে আরম্ভ করেন। পক্ষান্তরে কলকারখানা স্থাপনের জন্য দেশের কুটির শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং এই সকল শিল্পীরা দিনমজুরে পরিণত হয়। বৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষিকার্য করার ফলে দুঃস্থ কৃষক শ্রেণীর বিলুপ্তি ঘটে এবং তারাও দিনমজুরি করে কোনমতে জীবনধারণে বাধ্য হয়। খনি মালিক, মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা বিনা পরিশ্রমে অধিক উপার্জন করতে লাগলেন, কিন্তু দিনমজুরদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়ে।

অর্থনৈতিক ফলঃ কুটির শিল্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গ্রাম্য স্বাধীন শিল্প এবং দুঃস্থ চাষিরা গ্রাম ছেড়ে কলকারখানায় শ্রমিকের চাকুরি গ্রহণ করায় গ্রামগুলি জনশূন্য হয়ে নূতন নূতন শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠা হয়। ধনী শ্রেণীর লোকেরা বড় বড় কৃষি ফার্ম খুলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকার্য আরম্ভ করায় অল্প খরচে অধিক শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেল। কলকারখানায়ও সস্তায় জিনিস উৎপাদিত হওয়ায় ইংরেজরা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ পেল। ফলে বহির্বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং ইংল্যান্ডের আরও বৃদ্ধি পায়।

উপসংহারঃ উপসংহারে একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, হস্তচালিত কুটির শিল্পের পরিবর্তে যন্ত্র শিল্পের প্রবর্তন শিল্প বিপ্লবের অন্যতম অবদান। পৃথিবীর বর্তমান শ্রমিক আন্দোলনের সূচনাও এই যুগের আর এক বৈশিষ্ট্য।

4. ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। সেজন্য ইংল্যান্ডকে শিল্প বিপ্লবের জন্মস্থান বলা হয়। শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রসারের জন্য কিছু সুবিধা থাকা দরকার। ইংল্যান্ডে সে সুবিধা থাকায় সেখানেই প্রথম সে বিপ্লব শুরু হয়।

(ক) অর্থনৈতিক দিক থেকে যেসব দেশ অগ্রসর নয় অর্থাৎ যেসব দেশের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভালো নয় সেসব দেশে বড় বড় কারখানা গড়ে উঠতে পারে না। এরূপ কারখানার জন্য যথেষ্ট ধন বিনিয়োগ করতে হয়। সেজন্য ধনী দেশগুলোতেই সহজে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ইংল্যান্ড একটি ধনী দেশ। সেখানে অনেক পুঁজিপতিও রয়েছেন। এই পুঁজিপতিরা শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ধন বিনিয়োগ করতে পারতেন। ধনের অভাবে সেজন্য সেখানে এগুলো বন্ধ করতে হয়নি।

(খ) শিল্পের প্রসারের ক্ষেত্রে খনিজ পদার্থের অবদান যথেষ্ট। অর্থাৎ যেসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণে খনিজ পদার্থ, যেমন-লোহা, কয়লা প্রভৃতি পাওয়া যায় সেখানে কল-কারখানা স্থাপন করা সহজসাধ্য হয়। এগুলোর জন্য যাবতীয় খনিজ পদার্থের অভাব ইংল্যান্ডে নেই। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে লোহা, কয়লা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এজন্য ইংল্যান্ডে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান সহজে গড়ে উঠতে পেরেছে।

(গ) ইংল্যান্ডের অর্থনীতি ব্যক্তিগত ভাবধারার উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে, উৎপাদন বাড়ানোর নীতিকে ইংল্যান্ডে উৎসাহ দেওয়া হয়। এর ফলে পুঁজিপতিরা অধিক লাভের আশায় বড় বড় শিল্পানুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্যবস্থার ফলে সেখানে শিল্প-বাণিজ্যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল।

(ঘ) বড় বড় কল-কারখানাকে টিকে থাকতে হলে উপযুক্ত বাজারের দরকার। অর্থাৎ এইগুলো যেসব সামগ্রী তৈরি করবে সেগুলো বিক্রির জন্য বাজারের দরকার হয়। বিক্রির জন্যই কেবল উৎপাদন বাড়ানো হয়। নিজ দেশে গ্রাহকের অভাব হলে বিদেশের বাজারে এগুলো বিক্রি করতে হয়। ইংল্যান্ডের এই সুবিধা আছে। এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে ইংরাজদের উপনিবেশ ছিল। এর ফলে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন সামগ্রী এই উপনিবেশগুলিতে বিক্রি করা গিয়েছিল। এছাড়া উপনিবেশগুলোতে শিল্পানুষ্ঠান। গড়ে না ওঠায় সেখান থেকে কাঁচামাল এনে ইংল্যান্ডের কারখানাগুলো চালানো সম্ভব হয়েছিল।

(ঙ) ইংল্যান্ডের মানুষ উদ্যমী, বেপরোয়া ও সাহসী। তাঁরা ব্যবসা- বাণিজ্যের জন্য পৃথিবীর যে-কোন স্থানে গিয়ে সেসব অঞ্চলের অভাব- অভিযোগের সুযোগ নিয়ে ইংল্যান্ডে উৎপন্ন সামগ্রী বিক্রি করে কাঁচামাল সংগ্রহ করতেন। ইংল্যান্ডে নানা রকমের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও হয়েছিল। এই আবিষ্কারও শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতিতেই যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল।

(চ) ইংল্যান্ডের জলবায়ু শিল্পের পক্ষে অনুকূল। এর জলবায়ু অতি উষ্ণও নয়, অতি শীতলও নয়। এরূপ জলবায়ুতে সহজে শিল্পোদ্যোগ গড়ে উঠতে পারে। এজন্য ইংল্যান্ডেই প্রথম শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। উপরোক্ত কারণ ও অন্যান্য নানা কারণের জন্যই ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম শিল্প বিপ্লব আরম্ভ হয়েছিল।

5. ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলাফল কি ছিল আলোচনা কর।

উত্তরঃ ইংল্যান্ডের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের সূদুরপ্রসারী ফলাফল পরিলক্ষিত হয়ঃ

(ক) শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে প্রাচীন কুটির শিল্পের পরিবর্তে আধুনিক বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। কম সময়ে ও কম খরচে অনেক জিনিস তৈরি করা সম্ভব হয়। অতিরিক্ত জিনিসগুলো বিক্রি করার জন্য বিদেশের বাজারের দরকার হয়। ফলে ইংল্যান্ডই বৈদেশিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়। আর উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফলেই ইংল্যান্ডের পক্ষে নেপোলিয়নের মতো যোদ্ধাকে পরাজিত করা সম্ভবপর হয়। অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবই নেপোলিয়নের পরাজয়ের একটি অন্যতম কারণ বলা হয়ে থাকে।

(খ) শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে বেকার সমস্যা দেখা দেয়। ইতিপুর্বে যেসব কাজ কায়িক শ্রমের দ্বারা করানো হত এখন সেগুলো যন্ত্রের সাহায্যে করা হচ্ছে। যন্ত্রপাতির অধিক ব্যবহারের ফলেও সমাজে বেকার সমস্যা বেড়ে যায়। 

(গ) নতুন নতুন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এগুলোকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন শহরের জন্ম হয়। গ্রামাঞ্চলের লোক কাজের খোঁজে শহরে আসতে বাধ্য হন। ফলে মানুষ শহরমুখী হয়ে পড়েন। এর ফলে শহরে লোকসংখ্যা বেড়ে যায়। 

(ঘ) নানা রকমের কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এগুলোর মালিক দিন দিন ধনী হতে থাকে; অর্থাৎ শিল্প বিপ্লবের ফলে এক শ্রেণীর লোক ধনাঢ্য হয়। কিন্তু শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি হয় না। ফলে সমাজে শ্রেণীবিভাজনের সৃষ্টি হয়। এই শ্রেণীবিভাজনের ফলেই ভিন্নমুখী রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হয়। ধনীরা চায় পুঁজিবাদ এবং শ্রমিকরা চায় অর্থনৈতিক সমতা ও সমাজবাদ।

(ঙ) শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিকল্পে তখন সৃষ্টি হয় শ্রমিক সংগঠন-এর। এরূপ সংগঠন বা সঙ্ঘ শ্রমিকদের উন্নতির জন্য সরকারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এঁদের স্বার্থরক্ষার জন্যই ইংল্যান্ডে শ্রমিক দল (Labour Party)-এর সৃষ্টি হয়। ফলে সরকারকে সংস্কারমূলক বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য করা হয়।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যুদ্ধে ব্রিটেনের জড়িত থাকা ব্রিটিশ শিল্পের উপর কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল? 

উত্তরঃ ফরাসী বিপ্লবের প্রভাব ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের উপরও পড়েছিল এবং শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিবাদ। কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার প্রতিবাদ দমনের আইন প্রণয়ন করে। এদিকে আবার ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের মূল কারণ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং এর ফলে—

(ক) ইংল্যান্ডের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়।

(খ) কল-কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে। 

(গ) বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়। 

(ঘ) শ্রমিকরা কাজ অর্থাৎ উপার্জনের পথ হারায়। এবং 

(ঙ) নিত্যনৈমিত্তিক জিনিসের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় ইত্যাদি।

এইভাবে ১৭৯৩–১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইঙ্গ-ফ্রান্স যুদ্ধের ফলে ইংল্যান্ডের উদ্যোগ ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছিল। 

2. রেল ও খাল পরিবহণের আপেক্ষিক সুবিধাসমূহ কি কি ছিল? 

উত্তরঃ খালপথে প্রশস্ত ও ভারী দ্রব্যসামগ্রী পরিবহণ করা সুবিধাজনক। কিন্তু খালপথে পরিবহণ সময়সাপেক্ষ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে যেতে পারা যায় না।

অন্যদিকে রেল পরিবহণে স্বল্প সময়ে ভারী এবং প্রশস্ত দ্রব্যসামগ্রী বহন করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রব্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। 

3. কাঁচামালের যোগান কিভাবে ব্রিটিশ শিল্পায়নের প্রকৃতি প্রভাবিত করেছিল নির্দেশ কর।

উত্তরঃ প্রথমাবস্থায় ব্রিটিশরা উল বা পশম দ্বারা কাপড় তৈরি করত। সপ্তদশ শতক হতে ব্রিটেন ভারত হতে কার্পাস আমদানি আরম্ভ করে। পরবর্তীকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেই সময় হতে ব্রিটেন ভারত হতে কাঁচা কার্পাস তুলা ও কাপড় আমদানি করতে থাকে। এই কাঁচা কার্পাস হতে সূতা তৈরি ও কাপড় বোনা আরম্ভ হয়। 

অষ্টাদশ শতকের প্রথম বছরগুলিতে কাপড় বোনার প্রক্রিয়া মন্থরগতিতে চলতে থাকে। যার জন্য সুতা কাটায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকত কিন্তু কাপড় তৈরিতে নিযুক্ত ব্যক্তিরা সূতা পেতে দীর্ঘসময় অলসভাবে অতিবাহিত করত। কিন্তু এইক্ষেত্রে নানাপ্রকার যান্ত্রিক আবিষ্কারের ফলে দ্রুতগতিতে তুলা হতে সুতা কাটা এবং কাপড় বোনা আরম্ভ হয়।। এই প্রক্রিয়া অধিকতর সুদক্ষ করে তুলবার জন্য কাপড় উৎপাদন প্রক্রিয়া গৃহ হতে ফ্যাক্টরিতে চলে যায়।

4. শিল্পায়নের যুগে বিভিন্ন আবিষ্কারসমূহের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ছিল?

উত্তরঃ এই যুগের অধিকাংশ আবিষ্কারের আবিষ্কারক হলেন বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞানহীন কিছু লোক। তারা তাদের সংকল্প, কৌতূহল, স্বার্থ এমনকী ভাগ্যের উপর ভিত্তি করে এই সকল আবিষ্কার করেছিলেন।

(ক) উড়ন্ত মাকুর আবিষ্কারক জন কেই এবং স্পিনিং জেনির প্রস্তুতকর্তা জেমস্ হারপ্রীভস-এর কাপড় বোনা ও কাঠমিস্ত্রির অভিজ্ঞতা ছিল। 

(খ) ওয়াটার ফ্রেম-এর আবিষ্কারক রিচার্ড আর্করাইট একজন নাপিত ও পরচুল প্রস্তুতকারক ছিলেন।

(গ) সুতা কাটার যন্ত্রের আবিষ্কারক স্যামুয়েল ক্রম্পটন প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ছিলেন না। 

(ঘ) যন্ত্রচালিত তাঁতের আবিষ্কারক এডমন্ড কার্টরাইট-এর যান্ত্রিক অভিজ্ঞতা খুবই কম ছিল।

(ঙ) স্টীম ইঞ্জিনের নমুনা তৈরির কর্তা টমাস সেভারি একজন সামরিক বিষয়া লোক ছিলেন। 

(চ) টমাস নিউকোমেন যিনি স্টীম ইঞ্জিনের অন্য একটি নমুনা তৈরি করেছিলেন তিনি একজন কামার ছিলেন।

(ছ) রাস্তা নির্মাতা জন মেটকাফ একজন অন্ধ ব্যক্তি ছিলেন।

(জ) খাল নির্মাতা জেমস ব্রিন্ডলে ছিলেন প্রায় অশিক্ষিত। কিন্তু তাঁর স্মরণশক্তি ছিল প্রচণ্ড।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. শিল্প বিপ্লবের দরুন বিভিন্ন শ্রেণীর ব্রিটিশ মহিলাগণের জীবনযাত্রা কিভাবে প্রভাবিত হয়েছিলঃ

উত্তরঃ বিভিন্ন শ্রেণীর ব্রিটিশ মহিলাদের জীবনযাত্রা শিল্প বিপ্লব দ্বারা নিম্নলিখিতভাবে প্রভাবিত হয়েছিলঃ

(ক) দরিদ্রশ্রেণীর মহিলাগণ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে আরম্ভ করে। তাদের স্বল্প মজুরিতে দিনে ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়। ফ্যাক্টরিগুলির পরিবেশ দূষিত ও বিপজ্জনক ছিল। তা মহিলাদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। অধিকাংশ শিশুই রোগগ্রস্ত অবস্থায় জন্মে এবং জন্মের সঙ্গে সঙ্গে অথবা পাঁচ বছরের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে।

(খ) শিল্প বিপ্লব মধ্যবিত্ত মহিলা এবং ধনীক শ্রেণীর মহিলার প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা প্রমাণিত করে। সর্বাধুনিক পণ্যসামগ্রী ও খাদ্যবস্তু তাদের হস্তগত হয়। পরিবহণ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার আবিষ্কারের ফলে তাদের  জীবনযাত্রা প্রণালী পরিবর্তিত হতে থাকে। তাদের জীবনযাত্রার মানদণ্ড দিন দিন। বৃদ্ধি পেতে থাকে।

6. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেল পরিবহণ প্রবর্তনের ফলাফলসমূহ তুলনা কর।

উত্তরঃ রেল প্রবর্তনের ফলাফল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার পরিলক্ষিত হয়। সাম্রাজ্যবাদী ও শিল্পোন্নত দেশগুলি রেল প্রবর্তনে নানাভাবে উপকৃত হয়েছিল। তারা তাদের উপনিবেশিক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ সহজতর হয়। ফলে তাদের শিল্পোদ্যোগ প্রসার লাভ করে। অন্যদিকে উপনিবেশিক দেশে শিল্পোদ্যোগ ধ্বংস হয়ে যায় এবং তারা তীব্র দরিদ্রের সম্মুখীন হয়। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ দাস ব্যবস্থার শিকার হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top