Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন

Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Assam Board Bengali Medium Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন and select needs one.

Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Assam Board Class 11 History Chapter 2 লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন Bengali Medium Solutions for All Subject, You can practice these here.

লিখন পদ্ধতি ও নগর জীবন

পাঠ:

ক-বিভাগ–(আদিম সমাজ)

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. ‘মেসোপোটামিয়া’ শব্দের অর্থ কি?

উত্তরঃ দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল।

2. ‘মেসোপোটামিয়া” শব্দটি কোন্ শব্দ হতে উদ্ভূত হয়েছে? 

উত্তরঃ দুইটি গ্রিক শব্দ ‘মেসোস’ এবং ‘পোটামাস’ হতে।

3. ‘মেসোপোটামিয়া’ কোন দুটি নদীর মধ্যে অবস্থিত ছিল? 

উত্তরঃ টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী।

4. মেসোপোটামিয়ার বর্তমান নাম কি?

উত্তরঃ ইরাক।

5. মেসোপোটামিয়া সভ্যতাকে কি নামে অভিহিত করা হয়? 

উত্তরঃ সুমেরীয় সভ্যতা।

6. ‘মেসোপোটামিয়া’ বা সুমেরীয় সভ্যতা কি প্রকার সভ্যতা ছিল? 

উত্তরঃ নগর সভ্যতা।

7. ‘মেসোপোটামিয়া’ সভ্যতা কিসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল? 

উত্তরঃ সময় গণনা।

8. মেসোপোটামিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার কখন শুরু হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৮৪০-এর দশকে।

9. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রাচীনতম নগরীগুলো কোন্ যুগের?

উত্তরঃ ব্রোঞ্জ যুগের।

10. কখন ও কোথায় মেসোপোটামিয়া সভ্যতার তথ্যসূত্র আবিষ্কারের জন্য প্রথম খননকার্য শুরু হয়?

উত্তরঃ ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে মেসোপোটামিয়ার উরুক ও মারি অঞ্চলে।

11. বর্তমান বিশ্বের কোন্ দেশে মেসোপোটামিয়া সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ইরাক।

12. মেসোপোটামিয়ায় পরিবারের প্রকৃতি কিরূপ ছিল? 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায় একক পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

13. মেসোপোটামিয়ার প্রাচীনতম ভাষা কোনটি?

উত্তরঃ সুমেরীয় ভাষা।

14. মেসোপোটামিয়ার কোথায় প্রথম লিখিত ফলক আবিষ্কৃত হয়েছে?

উত্তরঃ উরুক অঞ্চলে (৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে)।

15. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার সবথেকে বড় অবদান কি?

উত্তরঃ সম্ভবত সময় গণনার হিসাব এবং অঙ্কশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান বিশ্বে মেসোপোটামিয়া সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান। 

16. মেসোপোটামিয়ার কোন্ জলপথ বিশ্ববাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করা হত?

উত্তরঃ ইউফ্রেটিস নদীপথ।

17. মেসোপোটামিয়ার সংস্কৃতি কি প্রকার ছিল?

উত্তরঃ মিশ্র সংস্কৃতি। 

18. মেসোপোটামিয়ায় কাকে কৃষিক্ষেত, মৎস্যচাষ এবং পশুপালনের তাত্ত্বিক মালিক বলা হত? 

উত্তরঃ ঈশ্বরকে।

19. মেসোপোটামিয়ার প্রথা অনুযায়ী কে প্রথম বাণিজ্য ও হস্তলিপি আরম্ভ করেন?

উত্তরঃ এনমার্কার।

20. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় প্রথম কোথায় কৃষিকাজ শুরু হয়?

উত্তরঃ ৭০০০ থেকে ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বে মেসোপোটামিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে।

21. মেসোপোটামিয়ার মানুষ কাগজ হিসাবে কি জিনিস ব্যবহার করত?

উত্তরঃ মাটির ফলক।

22. মেসোপোটামিয়ার মানুষ কি প্রকার হরফ ব্যবহার করত?

উত্তরঃ কিউনিফর্ম হরফ।

23. নগর জীবনের যে-কোন একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর?

উত্তরঃ শ্রমবিভাজন।

24. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় অভিজাত শাসক শ্রেণীর কোন অস্তিত্ব ছিল কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উর নগরীতে আবিষ্কৃত বিভিন্ন রাজা-রানীর সমাধিক্ষেত্রে প্রাপ্ত সম্পদ এর প্রমাণ দেয়। এই শ্রেণীর অধিকারে ছিল সমাজের অধিকাংশ সম্পদ।

25. বাইবেলে বর্ণিত বন্যার মুখ্য চরিত্র হচ্ছে ‘নওয়া’। সমানভাবে মেসোপোটামিয়া সভ্যতায়ও এই ধরনের এক মহাপ্লাবণের উল্লেখ আছে। এই বর্ণনায় মুখ্য চরিত্রর নাম কি?

উত্তরঃ জিউসুদ্রা (Ziusudra) অথবা উতনাফিস্টিম (Utnapishtim)

26. সুমেরীয় সভ্যতা কোন্ কোন্ নদী উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল?

উত্তরঃ টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী।

27. মেসোপোটামিয়ার দুটি নগরের নাম লেখ যেখানে কয়েক দশক ব্যাপী খনন কার্য চলেছিল?

উত্তরঃ উরুক ও মারি।

28. কে এবং কখন বাইবেলে বর্ণিত মহাপ্লাবনের বর্ণনা থাকা মাটির ফলক উদ্ধারের জন্য মেসোপোটামিয়ায় অভিযান শুরু করেন?

উত্তরঃ ১৮৭৩ সালে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্র এই অভিযান শুরু করে। যার অর্থ যুগিয়েছিল ব্রিটিশ জাদুঘর।

29. মহাপ্লাবনের কাহিনি কোন গ্রন্থে পাওয়া যায়?

উত্তরঃ বাইবেলে।

30. নগর জীবন প্রথম কোথায় শুরু হয়?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায়।

31. মারীর শাসকরা কোন সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীর ছিলেন?

উত্তরঃ ‘এমোরাইট।

32. ইরাকের প্রাচীন নাম কি ছিল?

উত্তরঃ মাসোপোটামিয়া

33. ইরাকের কোন অঞ্চলে নগর ও হস্তলিপির প্রথম আবির্ভাব ঘটেছিল?

উত্তরঃ দক্ষিণাঞ্চলের মরু অঞ্চলে।

34. উর নগর কোথায় অবস্থিত ছিল?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায়।

35. কারা সর্বপ্রথম সময় বিভাগ করেছিল?

উত্তরঃ মেসোপোটামিগণ।

36. স্বাধীন ব্যাবিলনের সর্বশেষ রাজা কে ছিলেন?

উত্তরঃ নাবনিডাস।

37. ‘জিগুরাটস’ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার পবিত্র মন্দিরগুলিকে জিগুরাটস্’ বলা হত।

38. জিমরিলিম কে ছিলেন?

উত্তরঃ মারিনগরের রাজা।

39. আসুরবানীপাল কে ছিলেন?

উত্তরঃ আসিরিয়ার সর্বশেষ রাজা। 

40. নবনিডাস কে ছিলেন?

উত্তরঃ নবনিডাস ছিলেন স্বাধীন ব্যাবিলনের সর্বশেষ শাসক। 

41. ব্রোঞ্জ তৈরির জন্য কোন দুইটি ধাতুর প্রয়োজন?

উত্তরঃ তামা ও টিন।

42. মিশরের শাসকদের পদবি কি?

উত্তরঃ ফারাও (The Pharaoh )

43.ব্যাবিলন নগরের আয়তন কত ছিল?

উত্তরঃ ৮৫০ হেক্টর।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. মেসোপোটামিয়ার সভ্যতা যে জায়গায় শুরু হয়েছিল তার আদি নাম কি ছিল? 

উত্তরঃ সভ্যতা শুরু হওয়ার আগে এই অঞ্চলটিকে, সুমের বা আক্কাদ বলা হত।

2. মেসোপোটামিয়ার নগর পরিকল্পনার দুটি একক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার নগর পরিকল্পনার দুটি একক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ

(ক) অপরিকল্পিত শহর। 

(খ) সরু রাস্তা ও এলোমেলো আকৃতির বাসগৃহ।

3. ‘মেসোপোটামিয়া’ নামের উৎস ও অর্থ লেখ।

উত্তরঃ ‘মেসোপোটামিয়া’ নামটি গ্রীক শব্দ ‘মেসোস’ (Mesos) যার অর্থ মধ্যভাগ এবং ‘পোটামাস’ (Potamus) যার অর্থ নদী, এই দুয়ের সমন্বয়ে প্রাপ্ত। ‘মেসোপোটামিয়া’ নামের অর্থ হল দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল।

4. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে মুখ্য তথ্যসূত্রগুলি কি কি? 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে মুখ্য তথ্যসূত্রগুলি হচ্ছে-

(ক) অট্টালিকা ও স্থাপত্য। 

(খ) প্রতিমূর্তি ও ভাস্কর্য। 

(গ) অলঙ্কারাদি। 

(ঘ) সীলমোহর।এবং 

(ঙ) মাটির ফলক।

5. মেসোপোটামিয়া সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা দুইটি নদীর নাম কর।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করা দুইটি নদী হল ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস। 

6. কখন ও কোথায় মেসোপোটামিয়ার প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ৫০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে। এ সমস্ত বসতি থেকেই কিছু প্রাচীন নগরের পত্তন হয়েছিল।

7. মেসোপোটামিয়ায় কি কি ফসল উৎপাদিত হত?

উত্তরঃ গম, মটর, যব, মসুর ডাল।

8. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় রপ্তানি ও আমদানিকৃত দ্রব্যের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ খাদ্যশস্যে ভরপুর মেসোপোটামিয়া কৃষিজাত পণ্য ও কাপড় রপ্তানি করত। কাঠ, তামা, টিন, সোনা এবং বিভিন্ন ধরনের পাথর তুরস্ক, ইরান ও উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আমদানি করত।

9. মেসোপোটামিয়ার কয়েকটি নগরের নাম লেখ।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার কয়েকটি নগরের নাম হল উরুক, উর, মারী, ব্যাবিলন ইত্যাদি। 

10. মেসোপোটামিয়ার জনগণ সময়কে কিভাবে বিভক্ত করেছিল?

উত্তরঃ মেসোপোটামীয়গণের সময় বিভাগ পৃথিবীর চতুর্দিকে চন্দ্রের আবর্তনের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই অনুযায়ী সমগ্র বছরকে ১২ মাসে, প্রতি মাসকে ৪ সপ্তাহে প্রতি সপ্তাহকে ৭ দিনে, প্রতিদিনকে ২৪ ঘণ্টায়, প্রতি ঘণ্টাকে ৬০ মিনিটে বিভক্ত করেছিল।

11. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার দুইজন উপাস্য দেবতার নাম লেখ। 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার দুইজন উপাস্য দেব-দেবী হলেন উরের চন্দ্র দেবতা এবং ভালোবাসা ও যুদ্ধের দেবী ইনান্না (Inanna)। 

12. মেসোপোটামিয়ায় বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তার করা বা শাসন করা বিভিন্ন গোষ্ঠীর নাম লেখ।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায় বিভিন্ন সময়ে আধিপত্য বিস্তার করা বা শাসন করা গোষ্ঠীগুলি। হল-

(ক) আক্কাডিয়ো। 

(খ) এমোরাইট। 

(গ) আসিরিয়া। এবং 

(ঘ) এরামিয়ান।

13. মেসোপোটামিয়াতে কি কি ধরনের নগরীর পত্তন হয়? 

উত্তরঃ  মেসোপোটামিয়াতে মূলত নিম্নোক্ত তিন ধরনের নগরের পত্তন হয়ঃ

(ক) মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নগরী; যেমন—উরুক।

(খ) বাণিজ্যকেন্দ্রীক নগরী; যেমন—মারী।

(গ) কিছু নগরী ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র রূপে।

14. বাড়ির ব্যাপারে মেসোপোটামিয়ার লোকদের কি কি অন্ধবিশ্বাস ছিল? 

উত্তরঃ উরে প্রাপ্ত ফলক থেকে জানা যায় যে মেসোপোটামিয়ার লোকদের বাড়ির ব্যাপারে নিম্নোক্ত কিছু অন্ধবিশ্বাস ছিলঃ

(ক) উঁচু প্রবেশপথ পরিবারের সম্পদ বৃদ্ধি করে।

(খ) অন্য বাড়ির দিকে মুখ করে সদর দরজা না খোলা শুভ লক্ষণ। 

(গ) বাড়ির সদর দরজা যদি ভিতরের দিকে না খুলে বাইরের দিকে খোলে, তবে স্বামী-স্ত্রীর সুন্দর সম্পর্ক হবে না। 

15. মেসোপোটানীয় সভ্যতার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য কিরূপ?

উত্তরঃ উত্তর-পূর্বে সবুজ সমতলভূমি, ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে গাছ-গাছড়ায় আবৃত পর্বতমালার উত্তরে সবুজ তৃণভূমি এবং দক্ষিণে মরুভূমি। সেই সাথে রয়েছে উর্বর সমতলভূমি। 

16. বাইবেলের ‘ওল্ড টেস্টামেন্টে’ মেসোপোটামিয়া সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে?

উত্তরঃ ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এর বুক অফ জেনেসিস-এ ‘Shimar’ শব্দটি সুমের শব্দেরই প্রতিরূপ; অর্থাৎ মেসোপোটার্মীয় সভ্যতার জমি বা ভূমি। এতে ইট-নির্মিত নগর এলাকার বিবরণ আছে।

17. আসুরবানীপাল কে ছিলেন? তার অবদান লেখ। 

উত্তরঃ আসুরবানীপাল ছিলেন (ব্যাবিলনের) আসিরিয়ার সর্বশেষ আসিরিয়ো শাসক (৬৬৮-৬২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। আসুরবানী পাল তার রাজধানী নিনেভ-এ একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করেন। এই গ্রন্থাগারে তিনি ইতিহাস, কবিতা বিভিন্ন বিষয়ের ফলক সংগ্রহ কা ছিলেন। এবং দক্ষিণাঞ্চলে অনেককে প্রাচীন ফলক সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সংগৃহীত ফলকগুলিকে তিনি শ্রেণীবদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং এইভাবে একটি উন্নত গ্রন্থাগার স্থাপন করেছিলেন।

18. উর নগরীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ঊর নগরীর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) নগরীর রাস্তাসমূহ সংকীর্ণ ছিল।

(খ) উর নগরীর গৃহের উঠানে নীচে নালা ও মাটির পাইপ ছিল।

(গ) জনগণ তাদের গৃহের আবর্জনা রাস্তার মধ্যে ফেলত।

19. মেসোপোটামিয়া সম্পর্কে ইউরোপীয়দের আগ্রহের কারণ কি?

উত্তরঃ বাইবেলের প্রথম অংশ ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এ মেসোপোটামিয়া সম্পর্কে উল্লেখ থাকায় ইউরোপীয়দের কাছে মেসোপোটামিয়া নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল। ইষ্টক নগরী ‘সীমার’ বা ‘সুমের’-এর উল্লেখ আছে ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এ। এটাই যে তাদের আদি বাসস্থান ছিল তার অস্তিত্ব প্রমাণ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।

20. এনমার্কার (Enmarker) কে ছিলেন?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার উরুক অঞ্চলের একজন প্রাচীনতম শাসক ছিলেন এনমার্কার। তার রাজত্বকালেই প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার ও ব্যবহার শুরু হ বলে অনুমান।

21. গিলগামেস কে ছিলেন?

উত্তরঃ গিলগামেস ছিলেন এনমার্কারের পরবর্তী সময় উরুক-এর শাসক। প্রাচীন মেসোপোটামিয়া সাহিত্যে গিলগামেসের গুণগাথা বর্ণিত একটি মহাকাব্য আছে। তার নাম ‘গিলগামেস মহাকাব্য’, যা মোট ১২টি ফলকে লিখিত। 

22. নগরায়ণ বলতে কি বোঝ?

উত্তরঃ কৃষি, পশুপালন, মৎসশিকার প্রভৃতি মুখ্য জীবিকা থেকে উৎপাদন, ব্যবসা, শিল্পদ্রব্য তৈরি এবং আরো অন্যান্য গৌণ জীবিকাতে অর্থনীতির পরিবর্তন বা স্থানান্তরকে নগরায়ণ বা urbanization বলে।

23. ওয়ার্কা মস্তক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টিকা লেখ। 

উত্তরঃ ওয়ার্কা মস্তক হচ্ছে ৪০০০ খৃস্টপূর্বাব্দে উরুকে খোদাই করা একটি স্ত্রীলোকের মস্তক ভাস্কর্য। এটা সাদা মার্বেল পাথরের উপর খোদাই করা। যার ভ্রু এবং চোখগুলো গাঢ় নীল (লাপিস লাজুলি), যা সাদা (শেষ) এবং কালো মূল্যবান পাথরে খচিত। মস্তকের উপরিভাগ সম্ভবত খোদাই করা হয়েছিল কোন অলংকার ব্যবহারের জন্য, যা পূর্ণ নয়। এই ভাস্কর্যটি স্ত্রীলোকের মুখমণ্ডল, থুতনি ও গালের অনিন্দ্যসুন্দর সামঞ্জস্যের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত।

24. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার লিখন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার লিখন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- 

(ক) অক্ষরগুলি ছিল গোজাকৃতির। এবং 

(খ) অক্ষরগুলির মাধ্যমে শুধু স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহৃত না হয়ে বাক্যের যে অংশ বা স্তর একসাথে উচ্চারিত হত তাই ব্যবহৃত হত। এই বৈশিষ্ট্যগুলির জন্যই এই সভ্যতায় খুব কম লোকই লিখতে ও পড়তে জানত।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. নগরীয় জীবনের বিশেষত্বসমূহ কি কি? 

উত্তরঃ নগরীয় জীবনের বিশেষত্বসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) শ্রম বিভাজনঃ নগরীয় জীবনে উৎপাদন এবং জীবনধারণের জন্য একে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে।

(খ) সামাজিক সংগঠনঃ নগরীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল সামাজিক সংগঠন অপরিহার্য নগরীয় জীবনে।

(গ) বাণিজিক সংগঠনঃ খাদ্য আমদানি এবং যোগানের জন্য বাণিজ্যিক সংগঠন অপরিহার্য নগরীয় জীবনে।

(ঘ) বিলাস ও আমোদ-প্রমোদঃ নগরীয় জীবনে বিলাসিতা এবং আমোদ-প্রমোদের এক বিশেষ স্থান থাকত।

2. শহরগুলি গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ শহর গড়ে ওঠার কারণগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) আতিরিক্ত উৎপাদনঃ খাদ্যদ্রব্য অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে এগুলির বাজারীকরণ এবং আদান-প্রদানের জায়গার প্রয়োজনে হয়।

(খ) প্ৰশাসনীয় কেন্দ্রঃ শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রশাসনীয় কেন্দ্র শহরে রূপান্তরিত হয়।

(গ) বাণিজ্য কেন্দ্রঃ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য আবশ্যক বস্তুগুলির আদান-প্রদানের জন্য নির্ধারিত স্থান শহর হিসেবে গড়ে ওঠে।

(ঘ) ধর্মস্থলঃ বিভিন্ন রকম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান; যেমন—মন্দির, মঠ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জনসমাগম বৃদ্ধি পায় এবং তার পাশে বসতি স্থাপিত হওয়ার সাথে সাথে কোন জায়গা শহরে বিকশিত হয়।

3. বাইবেলে উল্লিখিত প্লাবনের কাহিনি কি বলে? 

উত্তরঃ বাইবেলের মতে প্রাচীনকালে প্লাবন বা ভূ-পৃষ্ঠে আঘাত করে; যার লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে জীবন ধ্বংস করা। একে মহাপ্লাবন বলা হয়। কিন্তু ঈশ্বর পৃথিবীতে জীবন রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্লাবনের পর পৃথিবীতে জীবন সুনিশ্চিত করতে এবং জীবনধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে ‘নোয়া’ নামে একজন মানুষকে মনোনীত করেন। ‘নোয়া’ জাহাজের মতো এক বিশাল নৌকা তৈরি করেন। তিনি এর মধ্যে এক জোড়া করে পরিচিত সকল প্রজাতির জীবজন্তু ও পাখি রাখলেন। এরা সকলেই প্লাবন হতে রক্ষা পায়। অবশিষ্ট সকলেরই প্রাণহানি হয়।

4. মানব সভ্যতার বিকাশে মেসোপোটামিয়া সভ্যতা কিসের জন্য বিখ্যাত?

অথবা,

মেসোপোটামিয়া সভ্যতার অবদানগুলি লেখ।

উত্তরঃ মানব ইতিহাসের প্রারম্ভিক সভ্যতাগুলির একটি হচ্ছে মেসোপোটামিয়ার সভ্যতা। ফলে স্বাভাবিকভাবে সভ্যতার বিকাশে এর অবদানও অপরিসীম; যেমন—

(ক) মেসোপোটামিয়া সভ্যতাতেই প্রথম সমৃদ্ধশালী নগরজীবনের পত্তন ঘটে।

(খ) সময় গণনার হিসাব এবং অঙ্কশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান এই সভ্যতা থেকে মানবসমাজের সবথেকে বড় প্রাপ্তি।

(গ) জ্যোতিষশাস্ত্র অধ্যয়ন-চর্চা, বিভিন্ন বিষয়পূর্ণ সাহিত্য ভাণ্ডার মানবসমাজের সবথেকে বড় প্রাপ্তি। অগ্রগতির বা চিন্তনের অবকাশ করে দেয়। 

(ঘ) লিখন পদ্ধতির ব্যবহার, সঠিক মাপঝোক, আনুষ্ঠানিক শিক্ষাচর্চা, লিখিত তথ্য ও ঐতিহ্য রক্ষা করা ইত্যাদি মেসোপোটামিয়া সভ্যতা থেকে মানব সভ্যতার প্রাপ্তি। এই সকল অবদানের জন্যই মেসোপোটামিয়া সভ্যতা বিখ্যাত।

5. মেসোপোটামিয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন ছিল? এই সভ্যতার বিকাশে নৌ-পরিবহণের গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ সভ্যতার বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। মেসোপোটামিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। পরিবহণের ক্ষেত্রে এখানে প্রচলন ছিল। গোরুর গাড়ি বা অন্য জন্তুটানা গাড়ির, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ এবং নৌকার মাধ্যমে, নদী-খাল / জলপথে যোগাযোগ।

প্রাচীনকালে নৌ-পরিবহণ ছিল সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়বহুল ও নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা। মেসোপোটামিয়ার ছোটো-বড়ো বিভিন্ন অঞ্চল নদী, উপনদী, খাল-বিলের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নৌ পরিবহণ ব্যবস্থা এই সভ্যতার সমৃদ্ধি ও বিকাশে বিশাল ভূমিকা নিয়েছিল।

6. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় লিখতে কিসের ব্যবহার হত? এইগুলি কিভাবে তৈরি হত? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় লিখতে মাটির ফলকের ব্যবহার হত।

মাটির ফলক তৈরি করবার জন্য লিপিকাররা ভেজা মাটিকে হাতে নিয়ে সুবিধাজনকভাবে আকার দিতেন। তারপর ফলকের উপরিভাগ মসৃণ করে নেওয়া হত। তারপর ধারালো করে কাটা নলখাগড়ার ডগা দিয়ে এই ভেজা ফলকের উপর গোজের আকারে খোদাই করে লেখা হত। তারপর রোদে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেলে ফলকের উপর আর নতুন করে খোদাই করা সম্ভব হত না। এইভাবেই ফলকের মাধ্যমে বিভিন্ন আদান-প্রদান ও তথ্য সংরক্ষণ মেসোপোটামিয়াতে সম্ভব হয়েছিল।

7. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার নগর অর্থনীতিকে সামাজিক সংঘটন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করত বা কি ভূমিকায় ছিল তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তরঃ সামাজিক সংগঠন ছিল মেসোপোটামিয়া সভ্যতার নগর জীবনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শহরে উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি, ধাতব পদার্থ, বিভিন্ন ধরনের পাথর, কাঠ ইত্যাদি যোগানের ব্যবস্থা, গ্রামাঞ্চল থেকে যে সকল খাদ্যসামগ্রী। শহরাঞ্চলে যোগান দেওয়া হত সেগুলো গুদামজাত এবং বণ্টন করা ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করত এই সংগঠনগুলি। এছাড়া ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন ইত্যাদির সমন্বয় সাধন ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক আদান-প্রদান ও কর্মকাণ্ডের লিখিত নথি ব্যবহার ও সংরক্ষণ করত এই সামাজিক সংগঠনগুলি। এদের পরিচালনায়ই মেসোপোটামিয়া সভ্যতার সমৃদ্ধি সূচিত হয়। 

8. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় কি কি ভাষার প্রচলন ছিল? সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর আধিপত্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় নিম্নোক্ত বিভিন্ন প্রকার ভাষার প্রচলন ছিলঃ

(ক) যতদূর জানা যায়, এই সভ্যতার প্রথম ভাষা ছিল সুমেরীয় ভাষা।

(খ) প্রায় ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে যখন আক্কাডিয়োরা এই অঞ্চলে আসে তখন সুমেরীয় ভাষার পরিবর্তে আক্কাডিয়ো ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। চতুর্থ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এর প্রচলন ছিল। 

(গ) বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব হয়, যদিও তা ছিল ব্যবহারিক এবং এইগুলির আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা ছিল।

(ঘ) ১৪০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে অ্যারামাইক (Aramaic) ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে এর বহুল ব্যবহার শুরু হয়। ইরাকের কিছু অংশে এই ভাষা আজও প্রচলিত।

9. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রাকৃতিক সম্পদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। শিল্প ও উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ধাতু ও অন্যান্য সম্পদের যোগান কিভাবে পূর্ণ হত তার বিবরণ দাও।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া খাদ্যশস্যে ভরপুর ছিল, আবার খনিজ সম্পদের ছিল অভাব। হাতিয়ার, সীলমোহর তৈরির পাথরের অভাব ছিল। খেজুর গাছের কাঠ গাড়ির ঢাকা বা নৌকা তৈরির উপযোগী ছিল না। অলঙ্কারাদি, যন্ত্রাদি ও পানপাত্র তৈরির খনিজ ধাতুও এখানে পাওয়া যেত না। এই ছিল প্রাকৃতিক সম্পদের উপস্থিতি।

তবে শিল্প ও উৎপাদনের প্রয়োজনে ধাতু, পাথর ও অন্যান্য সম্পদ পার্শ্ববর্তী তুরস্ক, ইরান ও উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আমদানি করা হত। এটা সম্ভব হত, কারণ উক্ত অঞ্চলগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও এদের কৃষি উৎপাদন সম্ভব ছিল না। 

10. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণ ফলক উদ্ধারের কারণ কি? মেসোপোটামিয়ার ইতিহাসচর্চায় এগুলির গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় মাটির ফলকের বহুল প্রচলন ছিল। যে-কোন ছোট-বড় আদান-প্রদান ও তথ্য সংরক্ষণ-এর ক্ষেত্রে মাটির ফলকের ব্যবহার হত এবং এইগুলির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেলে ফেলে দেওয়া হত। ফলে মেসোপোটামিয়া অঞ্চলে অজস্র মাটির ফলক পাওয়া যায়।

মেসোপোটামিয়ার ইতিহাসচর্চায় আবিষ্কৃত মাটির ফলকের গুরুত্ব অপরিসীম। এইগুলির উপর ভিত্তি করে আমরা মেসোপোটামিয়া সম্বন্ধে বহু তথ্য সংগ্রহ করতে পারি; যেমন- 

(ক) মানুষের চাহিদা।

(খ) রুচি। 

(গ) অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

(ঘ) ব্যবসা-বাণিজ্য।

(ঙ) সামাজিক প্রথা। 

(চ) শিক্ষা/জ্ঞানের বিকাশ। 

(ছ) ধর্মীয় বিশ্বাস। 

(জ) প্রশাসনিক/ সামাজিক পরিকাঠামো ইত্যাদি। 

এই তথ্যগুলি নির্ভর করেই মেসোপোটামিয়া সভ্যতার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করা সম্ভব।

11. “জমির স্বাভাবিক উর্বরতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি ছিল সংকটাপন্ন।” কারণগুলি সংক্ষেপে লেখ।

অথবা,

মেসোপোটামিয়ার গ্রামাঞ্চলে জমি ও জল নিয়ে বিবাদের কারণ কি? 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় জমির স্বাভাবিক উর্বরতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি ছিল সংকটাপন্ন। এর মুখ্য কারণগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) ইউফ্রেটিস নদীর শাখানদীগুলিতে বন্যা প্রায়শই উভয় তীর প্লাবিত করে শস্য নষ্ট করতে।

(খ) অনেক সময় নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় উর্বর কৃষিভূমি পরিত্যাগ করে অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

(গ) মানুষেরা নিজেরাও সমস্যার সৃষ্টি করত। যারা স্রোতের প্রতিকূলে বাস করত তারা নিজেদের প্রয়োজনে নালা কেটে অধিক জল নিয়ে যেত। ফলে যারা নিম্নাঞ্চলে বসবাস করত তাদের জলসংকট হত এবং কৃষি ব্যাহত হত।

(ঘ) অনেক সময় পলি ও অন্যান্য আবর্জনা জমে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের জলের প্রবাহ কমিয়ে দিত। এইসব কারণেই কৃষিকাজ ব্যাহত হত এবং এর ফলে গ্রামাঞ্চলের লোকের মধ্যে জল ও জমি নিয়ে প্রায়ই বিবাদ হত।

12. মেসোপোটামিয়ায় কিভাবে রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে? আধিপত্য/ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে তারা (শাসকরা) কি ব্যবস্থা নিতেন? 

উত্তরঃ প্রারম্ভিক পর্যায়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত মেসোপোটামীয়রা তাদের দলপতির অধীনে/নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ ছিল। দলপতি উৎপাদিত বা লুণ্ঠিত সম্পদ দলের সবাইকে ভাগ করে দিতেন। পরাজিত জনসমষ্টিকে ভৃত্য বা রক্ষী হিসাবে নিয়োগ করতেন এবং এভাবেই নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতেন। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। যখন এই দলপতিরাই সাধারণ লোকের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেন ও নতুন পদ/প্রতিষ্ঠান ও প্রথা প্রবর্তন করলেন তখনই তাদের সত্তা স্বীকৃতি লাভ করল। এইভাবেই দলপতিরা রাজা বা মুখ্য প্রশাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং বলতে হয় এভাবেই রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে।

শাসকরা উৎপাদিত বা লুণ্ঠিত দ্রব্যের মূল্যবান অংশ দেবতার উদ্দেশ্যে দান করতেন ও মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতেন। দক্ষতার সঙ্গে মন্দিরের সম্পদ বণ্টনের ও আয়-ব্যয়-এর হিসাব রক্ষা করতেন। এর ফলে তাদের সম্মান ও প্রভাব বৃদ্ধি পেত এবং কর্তৃত্ব বজায় থাকত তাদের রাজ্য ও দলের উপর।

13. মেসোপোটামিয়ার পরিবার ব্যবস্থা কেমন ছিল? সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ বিভিন্ন আবিষ্কৃত নথি থেকে জানা যায় যে মেসোপোটামিয়া সমাজে অণু পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। একজন বিবাহিত পুত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে পিতামাতার সাথে খুব কমই থাকত, যদিও ব্যতিক্রমও ছিল। পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধান।

বৈবাহিক সম্বন্ধের ক্ষেত্রে কন্যার পিতামাতা সম্মতি প্রকাশ করলেই বিবাহের কথা ঘোষণা করা হত। বরপক্ষ তখন কন্যাপক্ষকে একটি উপহার প্রদান করত। বিবাহের অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষ উপহার আদান-প্রদান করত। একসাথে খাওয়া-দাওয়াও মন্দিরে পূজার আয়োজন করত। শাশুড়ি বন্ধুকে আনতে গেলে পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যে সম্পত্তি, তার অংশ কন্যাকে দেওয়া হত। পিতার বাড়ি, কৃষিক্ষেত্র, পালিত পশু ইত্যাদি লাভ করত পুত্ররা। পরিবার ব্যবস্থা ছিল পিতৃতান্ত্রিক, তবে মহিলাদেরও অধিকার সুনিশ্চিত ছিল। 

14. বিশ্বের প্রতি মেসোপোটামিয়ার অবদান কি?

উত্তরঃ বিজ্ঞসুলভ ঐতিহ্য এবং গণিতশাস্ত্র হল বিশ্বে মেসোপোটামীয়দের সর্ববৃহৎ অবদানঃ

(ক) মেসোপোটামিয়ায় কতিপয় ফলক পাওয়া গিয়েছিল যা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ শতকের। এই ফলকগুলি গুণ ও ভাগ অঙ্কের টেবিল, বর্গ ও বর্গমূলের টেবিল, সুদের টেবিল প্রভৃতি।

(খ) মেসোপোটামীয়গণ পৃথিবীর চতুর্দিকে চন্দ্রের আবর্তন অনুযায়ী একটি বছরকে ১২ মাসে ভাগ করেছিল। তারা মাসকে চার সপ্তাহে, দিনকে ২৪ ঘণ্টায় এবং ঘণ্টাকে ৬০ মিনিটে ভাগ করেছিল। নিঃসন্দেহে এটা একটি বিরাট অবদান।

(গ) মেসোপোটামিয়ার মানুষ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের তারিখ লিখে রাখত।

(ঘ) তারা আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করত এবং এর তথ্যাদি সুরক্ষিত করত।

15. মেসোপোটামিয়ায় হস্তলিপি কলা কিভাবে বিকাশ লাভ করেছিল?

উত্তরঃ মুখের সম্পুট ধ্বনি লিখবার জন্য নির্দিষ্ট চিহ্নকে বর্ণ বলে মেসোপোটামীয়দেরও নির্দিষ্ট বর্ণমালা ছিল। সমাজ যখন হিসাবনিকাশের প্রমাণাদি রাখবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তখন মানুষ লিখতে আরম্ভ করে। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩,২০০ বৎসর পূর্বে প্রথম মেসোপোটামীয় ফলক লিখিত হয়। এই সকল ফলকে ছবি, চিহ্ন, চিত্র, সংখ্যা খোদাই করা থাকত। ষাঁড়, ভেড়া, মাছ প্রভৃতি প্রায় ৫,০০০ ছবির একটি তালিকা মেসোপোটামিয়ায় পাওয়া গিয়েছে। এই তালিকাসমূহ সম্ভবত দক্ষিণাঞ্চলের উরুক নগরীর মন্দিরের পণ্যসামগ্রীরূপে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

16. মেসোপোটামিয়ায় সীলমোহর তৈরি এবং তার গুরুত্বের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ শেষ না হওয়া পর্যন্ত গোল পাথরের সীলমোহর তৈরি শুরু হয়ে যায়। এই সকল সীলমোহরের মধ্যভাগে ছিদ্র থাকত। এর মধ্যভাগে একটি লাঠি লাগানো থাকত এবং ভেজা মাটির চাতুর্দিকে ঘোরানো হত। এই ভাবে অনবরত ছবি তৈরি করা হত। সীলমোহরগুলিকে অত্যন্ত দক্ষ কারিগর দ্বারা কেটে বে করা হত। কখনও কখনও এই সকল সীলমোহরগুলিতে মালিকের নাম, তার দেবতার নাম, নিজের সরকারি পদবি ইত্যাদি খোদিত থাকত।

17. “মেসোপোটামিয়ায় সমাজ এবং সংস্কৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির মানুষের একটি সংমিশ্রণ।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমির যাযাবর জাতি মেসোপোটামিয়ার সমৃদ্ধশালী কৃষিভূমিতে অনুপ্রবেশ করে। তারা তাদের পশুদেরও সেই অঞ্চলে নিয়ে যায়। এই সকল মানুষ ফসল সংগ্রহকারী শ্রমিক হিসাবে আসে। তারা কালক্রমে ঐশ্বর্যশালী হয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ক্ষমতা লাভ করে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। এই সকল মানুষদের মধ্যে আর্কাডিয়ান, আসিরিয়ান ও আর্মেনিয়ান উল্লেখযোগ্য। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ঐ এলাকার মূল বাসিন্দাদের থেকে পৃথক ছিল। তারা মেসোপোটামিয়ার দেবতাদেরই কেবল মানা করত তা নয় তারা অন্যান্য দেবদেবীকে। মান্য করত। সুতরাং মেসোপোটামীয় সংস্কৃতি ও সমাজ বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির জন্য মুক্ত ছিল।

18. মেসোপোটামিয়ার আমদানি ও রপ্তানি বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া খাদ্য সম্পদে ভরপুর ছিল। কিন্তু সেখানে খনিজ সম্পদের অভাব ছিল। মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে হাতিয়ার, সীলমোহর, অলঙ্কার প্রভৃতির জন্য কোনো প্রকার পাথর পাওয়া যেত না। ঝাউ গাছ ও খেজুর গাছের কাঠ নৌকা, টানা গাড়ি ও গাড়ির চাকা তৈরির উপযুক্ত ছিল না। বাসন, হাতিয়ার অথবা অলঙ্কার তৈরির কোনো প্রকার ধাতু ছিল না। ওই কারণেই প্রাচীন মেসোপোটামিয়ার মানুষ কৃষিজ পণ্যসামগ্রী ও প্রচুর পরিমাণ কাপড় রপ্তানি করত এবং তামা, কাঠ, রূপা সোনা, টিন ও নানা প্রকার পাথর আমদানি করত। বাণিজ্য সাধারণত তুর্কী, ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশসমূহের মধ্যে চলত। এইসব এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিল, কিন্তু কৃষিকার্যে, অনুন্নত ছিল। সুতরাং মেসোপোটামিয়ার মানুষ এই সকল অঞ্চলে কাপড়, কৃষিজ পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করত। সব্যসামগ্রী বিনিময়ের মাধ্যমে মেসোপোটামিয়ায় আমদানি-রপ্তানি চলত।

19. নগর অর্থনীতিতে দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থা কি ভূমিকা পালন করে?মেসোপোটামিয়ার উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ নগর উন্নয়নে দক্ষ পরিবহণ ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্মচালিত গাড়ি অথবা জন্তুর পিঠে করে পণ্যসামগ্রী বহন করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য, কারণ তা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। নগর অর্থনীতি এই সকল আর্থিক বোঝা বহন করতে সক্ষম নন। নগর অর্থনীতির জন্য জল পরিবহণ একটি সুলভ পদ্ধতি। নদী-নৌকা অথবা শস্যবহনকারী যান নদীর জলস্রোতে বহন করা অত্যন্ত সহজ ও স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ। স্বাভাবিক খাল ও কৃত্রিম খাল মেসোপোটামিয়ার পরিবহণের উত্তম ব্যবস্থা। এককালে ইউফ্রেটিস নদী বিশ্ব বাণিজ্যে একটি প্রধান পথ বলে পরিচিত ছিল। এই পরিবহণ ব্যবস্থা মেসোপোটামিয়ার নগরায়ণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

20. মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্ব কি ছিল?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার দক্ষিণাঞ্চল মরুময়। এই অঞ্চলে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী প্রবাহমান। উভয় নদীই উত্তরাঞ্চলের পর্বতমালা হতে বালুকামাটি ও কাদামাটি বহন করে। আনে। এই নদী দুটিতে বন্যা দেখা দিলে উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উর্বর মাটি ও বালুকা ছড়িয়ে দিয়ে এই অঞ্চলটিকে সুজলা সুফলা ও শস্যশ্যামলা করে তোলে।

ইউফ্রেটিস নদী মরু এলাকায় প্রবেশ করে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। এই সকল ছোট ছোট শাখানদীসমূহে কখনও কখনও প্লাবন দেখা দেয়। অতীতে এই সকল খাল বা শাখানদীসমূহ জলসেচের কাজে ব্যবহৃত হত। বার্লি, গম, মটর প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো জলসেচ করা হত। যার ফলে কম বৃষ্টি এমনকি খরার সময়ে এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়। সুতরাং মেসোপোটামিয়ার এই অঞ্চলটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

21. “ইরাক একটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ।” উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ বাস্তবিকই ইরাক একটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যময় দেশ, কারণ-

(ক) দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবুজ সমভূমি পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। এই সমভূমি ধীরে ধীরে সবুজ বৃক্ষবেষ্টিত পর্বতমালায় উদিত হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার জলে ঝরনাধারা এবং বন্যফুল পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে শস্য জন্মায়।

(খ) উত্তরাঞ্চলে ঊর্ধ্বগামী ভূমি দেখতে পাওয়া যায়। পশুপালন এই অঞ্চলের মানুষদের প্রধান জীবিকা। শীতকালীন বৃষ্টিপাতের পর ছাগল, ভেড়া প্রভৃতির খাওয়ার ঘাস জন্মে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মে।

(গ) পূর্বদিকে টাইগ্রিস নদীর শাখানদীসমূহ ইরাকের পাহাড়ি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রদান করে।

(ঘ) দেশের দক্ষিণাঞ্চল মরুভূমিময়।

22. মেসোপোটামিয়ো নগর জীবনে শ্রম বিভাজনের গুরুত্ব কি?

উত্তরঃ শ্রম বিভাজনের অর্থ হল প্রত্যেকের পৃথক পৃথক উৎপাদন ও সেবার দ্বারা আমাদের চাহিদা পরিপূর্ণ করা। এর কারণ হল খাদ্যোৎপাদন ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত ও নির্মাণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার সেবা নগর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু শহরের মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাদের উৎপাদিত সামগ্রী ও সেবার জন্য অন্যান্য নগর বা গ্রামের উপর নির্ভর করিতে হয়। এর ফলে গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে সংযোগ ও সহযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ পাথর খোদাইকারীর ব্রোঞ্জের হাতিয়ারের প্রয়োজন হয়, যা সে নিজে তৈরি করতে পারে না। এমনকি সে এটা জানেও না সীলমোহরের জন্য রঙিন পাথর কোথায় পাওয়া যায়। যে পাথর খোদাই-এ বিশেষজ্ঞ, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিশেষজ্ঞ নয়। কিন্তু ব্রোঞ্জ-এর হাতিয়ার প্রস্তুতকারী নিশ্চয়ই বাইরে গিয়ে টিন, তামা প্রভৃতি ধাতু আনবে। সুতরাং এই সকল কার্য পরস্পর সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

23. ব্যাবিলন নগরীর প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ। 

উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে আলেকজান্ডারের আক্রমণ পর্যন্ত ব্যাবিলন নগরী বিশ্বের একটি প্রধান নগরী ছিল। 

ব্যাবিলন নগরীর প্রধান সমস্যাসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) ব্যাবিলন নগরীর আয়তন ৮৫০ হেক্টর অপেক্ষা অধিক ছিল।

(খ) এর চতুর্দিকে বিস্তারী দেওয়ান ছিল।

(গ) নগরীতে বিশাল অট্রালিকা ও মন্দির ছিল।

(ঘ) নগরীতে একটি সুউচ্চ স্তম্ভ ছিল।

(ঙ) ব্যাবিলন নগরীর প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্রে শোভাযাত্রার রাস্তা ছিল।

(চ) এর বাণিজ্য ঘরগুলি বিস্তৃত ছিল।

(ছ) ব্যাবিলনের গণিতজ্ঞা ও জ্যোতির্বিদগণ কতিপয় নুতন আবিষ্কার সম্পাদন করেন।

24. উর নগরীতে কখন খনন কার্য শুরু হয়? এই নগরীর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উত্তৰঃ মেসোপোটামিয়ায় প্রারম্ভিক খনন করা কেন্দ্রগুলির একটি হচ্ছে উর নগরী। ১৯৩০-এর দশকে এখানে খননকার্য শুরু হয়। 

ঊর নগরীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ

(ক) যাতায়াতের পথ ছিল অতি সরু।

(খ) বাড়িগুলো ছিল এলোমেলো আকৃতির। 

(গ) যাতায়াতের ক্ষেত্রে চাকা লাগানো গাড়ির ব্যবহার ছিল।

(ঘ) বাড়ির জল নিষ্কাশণের জন্য নালা ও মাটির নলের ব্যবহার ছিল।

(ঙ) বসতবাড়িতে জানালার পরিবর্তে দরজা দিয়ে আলো আসত এবং দরজাগুলো ভিতরের উঠানের দিকে খোলার ব্যবস্থা ছিল। এই ব্যবস্থা ছিল গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য।

25. ‘মারী নগরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে কেন প্রায়ই সংঘর্ষ হত, সংক্ষেপে লেখ।

উত্তরঃ “মারী” নগরের অবস্থান ছিল ইউফ্রেটিস নদীর উপরিভাগের অববাহিকায়। ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর মারী নগরের উন্নতি ঘটে। এই অঞ্চলে একসাথে কৃষি ও পশুপালন প্রচলিত ছিল। তবে বেশিরভাগ ভূ-খণ্ডই মেষ ও ছাগল পালনে ব্যবহৃত হত। পশুপালক ও কৃষকরা উভয়েই নিজেদের মধ্যে উৎপাদনের দ্বারা তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটাত। আবার মারী নগরী তার অবস্থানের জন্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি লাভ করে। মারী অঞ্চলে পশুপালক ও কৃষকরা উভয়েই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল ছিল তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হত। এর কারণ হচ্ছে—

(ক) যাযাবর পশুপালকরা গ্রাম লুণ্ঠন করে খাদ্যশস্য নিয়ে যেত। এবং 

(খ) কৃষকরা পশুপালকদের তাদের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে বারণ করত বা বাধা দিত।

26. মারী নগরীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণ বর্ণনা কর। 

উত্তরঃ মারী নগরীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) ইউফ্রেটিস নদীর তীরে অবস্থিত মারী ছিল বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র।

(খ) মারীকে কেন্দ্র করেই কৃষিপ্রধান দক্ষিণাঞ্চল এবং তুরস্ক, সিরিয়া ও লেবানন-এর মধ্যে ইউফ্রেটিস নদী হয়ে কাঠ, তামা, টিন, তেল ও অন্যান্য সামগ্রীর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলত।

(গ) দক্ষিণাঞ্চলের পথে যেতে থাকা নৌকাগুলি মারীর শাসককে কর প্রদান করে। অগ্রসর হত।

(ঘ) বার্লি পরিবহণের জন্য বিশেষ নৌকার ব্যবহার হত।

(ঙ) তামা আসত আলাসিয়া নামের একটি দ্বীপ থেকে।

(চ) তাছাড়া টিন এবং অস্ত্রশস্ত্র তৈরির জন্য ব্রোঞ্জ-এরও বিশাল বাণিজ্যিক  চাহিদা ছিল।

এভাবে মারী তার অবস্থানের জন্য ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল, যা মারীকে অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী করে তুলেছিল।

27. প্রাচীন মন্দিরগুলি দেখতে প্রায় ঘরের মতো কেন?

উত্তরঃ নিম্নোক্ত কারণে প্রাচীন মন্দিরগুলি দেখতে ঘরের মতো মনে হতোঃ 

(ক) ঘরগুলি যেভাবে মানুষের বাসস্থান ঠিক সেভাবে মন্দিরগুলিও বিভিন্ন দেবদেবী; যেমন—চন্দ্র দেবা “ভর’ অথবা প্রলয় এবং যুদ্ধ দেবতা ‘ইনান্না’-এর বাসস্থান।

(খ) মন্দিরের আঙিনা কেবলমাত্র পূজার্চ্চনার স্থান হিসাবে নয়, গুদামঘর এবং কারিগরদের বাসস্থান হিসাবেও ব্যবহৃত হত।

(গ) মানুষ দেবতাদের শস্য, দই এবং মাছ সমর্পণ করত। দেবতাগণও তাত্ত্বিকদের কৃষিক্ষেত্র, মৎসচাষ ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রধান ছিলেন।

(ঘ) গৃহস্থবাড়ির মতো মন্দিরগুলিতেও বিভিন্ন প্রকার উৎপাদন; যেমন— খাদ্যশস্য ভাঙানো, সুতা কাটা, কাপড় বোনা প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করা হত।

 28. মারীর রাজা জিমরিলিমের প্রাসাদের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ মারীর রাজা জিমরিলিমের প্রাসাদ একটি বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল। প্রাসাদে প্রায় ২৬০টি ঘর ছিল। রাজ পরিবার এখানে বাস করত এবং রাজকার্য এখান থেকেই পরিচালিত হত। দামী ধাতুর গহনা প্রাসাদের আশেপাশেই তৈরি হত। এই প্রাসাদের খ্যাতি সর্বজনবিদিত ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এই প্রাসাদের সৌন্দর্য দেখতে আসতেন। প্রতিদিন খাবার টেবিলে অনেক প্রকার পদ পরিবেশিত হত। প্রাসাদের উত্তরদিকে একমাত্র প্রবেশ পথটি ছিল। প্রাসাদের সম্মুখে বিশাল উন্মুক্ত পরিসর সুন্দরভাবে বাঁধানো ও সজ্জিত ছিল। রাজা জিমরিলিম একটি প্রশস্ত কক্ষে দরবার বসাতেন এবং এখানে তিনি বিদেশী অভ্যাগতদেরও স্বাগত জানাতেন। দরবার কক্ষ নানাপ্রকার চিত্রকলা দিয়ে সজ্জিত ছিল।

দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

1. মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর  মধ্যবর্তী স্কুলে সুমেরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চল সুমার বা সুমের নামে পরিচিত ছিল। গ্রিকগণ এই অঞ্চলের নাম। নিয়েছিল মেসোপোটামিয়া অর্থাৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থল। যে কারণে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীল নদের অববাহিকা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। ঠিক অনুরূপ কারণেই এই নদীর মধ্যবর্তী হলে সুমেরীয় সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। সুমেরীয় ছিল শক্তিশালী যোদ্ধা জাতি। মিশরীয়দের নাচ তারাও প্রাচীনকালে এক উ ধরনের সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। একে মেসোপোটামিয়া সভ্যতা বলে।

কৃষিকার্য, ভাস্কর্য, স্থাপতা, মৃৎশিল্প প্রভৃতিতে তারা পারদর্শী ছিল। তাদের নানাপ্রকার দেবদেবীও ছিল। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে ‘সেমিটিক জাতির লোকদের হাতে সুমেরীয়রা তাদের স্বাধীনতা হারায়। এই নূতন জাতির লোকেরা ব্যাবিলন নামক এক শক্তিশালী নগর রাষ্ট্রের অধিবাসী ছিল। ব্যাবিলন রুমে এত বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, সমগ্র মেসোপোটামিয়া অর্থাৎ সুমের অঞ্চল তার অধীন হয়ে পড়ে। ব্যাবিলনীয় সভ্যতা সুমেরীয় সভ্যতা হতে উন্নততর ছিল না। এই কারণে ব্যাবিলনীয়রা সুমেরীয় সভ্যতার অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিল।

ব্যাবিলনের উত্তরে সেমিটিক জাতির অপর এক শাখা আসিরীয় সভ্যতা নামে এর সত্যতা গড়ে তুলেছিল। তাদের দেবতা ‘অসুর’-এর নাম হতেই আসিরীয় সভ্যতার নামকরণ করা হয়েছিল। এই সভাবার প্রসিদ্ধ নারী ছিল নিনেভে। আসিরীয়রা ক্রমে ব্যাবিলন, মিশর প্রভৃতি স্থানেও নিজ প্রভুত্ব স্থাপনে সমর্থ হয়। আসিরীয়দের পোশাক কাধ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা ছিল। পুরুষদের মধ্যে লম্বা চুল ও দাড়ি রাখবার রীতি চালু ছিল | 

আসিরীয় সৈন্যদল প্রাচীনকালের পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা নির্মম ছিল।

আমিনীর রাজাগণের মধ্যে অসুরবাণীপালের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন যেমন বীর যোদ্ধা, তেমনি বিধবী। তাঁর আমলেনিনেতে শহরে একটি বিশ স্থাপিত হয়েছিল। প্রায় বিশ হাজার লিপি খোদাই করা মাটির ফলক এই গ্রন্থাগারে পাওয় গিয়েছে |

2. মেসোপোটানিয়া সভ্যতার নগরজীবনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর নগরজীবন কতটুকু স্বনির্ভর ছিল, সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার উন্নত নগরজীবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। 

এর মুখ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপঃ 

(ক) নগরজীবন স্বনির্ভর ছিল না, বরং পণ্য ও পরিষেবার জন্য অন্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল ছিল।

(খ) শ্রমবিভাজন ছিল নবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

(গ) ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সামাজিক সংগঠনের।

(ঘ) নগর অর্থনীতিতে লিখিত নথিপত্রের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। নগরজীবন তখনই সমৃদ্ধ হয় যখন খাদ্য উৎপাদনের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও শহরের অর্থনীতির উপাদান হল ব্যবসাবাণিজ্য, বিভিন্ন পরিষেবা ও শিল্প উৎপাদন ইত্যাদি। মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় দেখা যায় যে শহরাঞ্চলের/ নগরাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবার জন্য অন্যান্য শহর বা গ্রামাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল ছিল এবং পারস্পরিক আদান-প্রদানের ফলেই গ্রাম্যজীবন ও নগরজীবন অগ্রসর হয়েছিল সমৃদ্ধির দিকে। তাই বলা যায় যে মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় নগরজীবন স্বনির্ভর ছিল না, বরং পারস্পরিক বিনিময় বা আদান-প্রদানের ফলে সমৃদ্ধ হয়েছিল।

3. মেসোপোটামিয়া সভ্যতায় মন্দিরের স্থাপত্য কেমন ছিল? এই সভ্যতায় মন্দিরের প্রভাব ও গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রারম্ভিক বসতকারীরা তাদের গ্রামের নির্দিষ্ট স্থানে মন্দির নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ করত। প্রারম্ভিক মন্দিরগুলি ছিল কাঁচা ইটের তৈরি। এইগুলিতে বিভিন্ন দেবদেবীর অধিষ্ঠান ছিল। সময়ের সাথে সাথে মন্দিরের খোলা উদ্যানে কক্ষ সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মন্দিরের কলেবর বৃদ্ধি পায়। মন্দিরগুলো সাধারণত বসতবাড়ি থেকে পৃথক ছিল এবং এর চতুর্দিকে গড়ে দেওয়া হত।

মেসোপোটামিয়া সভ্যতার মানুষের উপর মন্দির ও উপাস্য দেবতার বিশাল প্রভাৱ ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল ঈশ্বর মন্দিরের দেবতাই স্থানীয় মানুষের কৃষিজমি, মাছের ভেড়ি ও পালিত পশুর স্বত্বাধিকারী। তাই দেবতাকে প্রদান করার উদ্দেশ্যে উৎপাদিত শস্য, দই, মাছ ইত্যাদি মন্দিরে নিয়ে আসত। সেই সময় তেল তৈরি, শস্য পেষণ, সুতাকাটা ও কাপড় বোনা প্রভৃতি সকল কাজই মন্দিরে হত। উৎপাদিত দ্রব্য বণ্টন ও তার হিসাব রক্ষণ ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করার জন্য মন্দিরগুলো নিজস্ব সাংগঠনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিল এবং পর্যায়ক্রমে মন্দিরই প্রধান শহরাঞ্চলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, যা নগরজীবনকে পরিচালিত করত।

4. মেসোপোটামিয়া সভ্যতার ভৌগোলিক বৈচিত্রতার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সমৃদ্ধির বর্ণনা দাও। 

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়া সভ্যতার প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল নিম্নলিখিত বৈচিত্র্যতায় পূর্ণঃ

(ক) উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছিল সবুজ বিস্তীর্ণ তৃণভূমি অঞ্চল যা ঊর্ধ্বমুখী ছিল জঙ্গলাবৃত পর্বতমালার দিকে।

(খ) উত্তরদিক ছিল বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল, যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হত।

(গ) পূর্বাঞ্চল ছিল শুষ্ক অঞ্চল। টাইগ্রীস নদীর শাখানদী দিয়ে মানুষ ইরানের পর্বতমালা পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করত।

(ঘ) দক্ষিণ ছিল মরুভূমি, তবে মেসোপোটামিয়া সভ্যতার সর্বাপেক্ষা উর্বর ও সমৃদ্ধ অঞ্চল। 

মেসোপোটামিয়া সভ্যতার পূর্বাঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হত ও প্রচুর নদী-নালা থাকায় এ অঞ্চল কৃষিকাজের সহায়ক ছিল। উত্তরাঞ্চল আবার পশুপালনের উপযোগী ছিল। পূর্বাঞ্চল বহির্বাণিজ্যের পথ প্রসারিত করেছিল। কিন্তু সভ্যতার সমৃদ্ধির মূল ভিত ছিল দক্ষিণাঞ্চল। যদিও দক্ষিণাঞ্চল ছিল মরুভূমি। পার্বত্য অঞ্চল থেকে বাহিত ইউফ্রেটিস নদী মরু অঞ্চলে প্রবেশ করার পর ছোট ছোট ধারায় তার জল ছড়িয়ে পড়ত। ফলে এই নদীর বন্যায় সমস্ত অঞ্চল প্লাবিত হত এবং বন্যায় পলি মাটি জমে জমি উর্বর হত। তাছাড়া জলাধারগুলো সেচের কাজেও ব্যবহৃত হত। ফলে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত। যা প্রাচীন সমস্ত সাম্রাজ্যের তুলনায় সবচাইতে বেশি। এই কৃষিজাত উৎপাদনের ফলে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ছিল সর্বাধিক এবং এখানেই প্রথম নগরী ও লিখন পদ্ধতির গোড়াপত্তন হয়।

5. মেসোপোটামিয়ায় নিম্নোক্তগুলি সম্পর্কে তুমি কি জানো?

(ক) উচ্চশ্রেণীর পদমর্যাদা।

(খ) পরিবারের প্রকৃতি।

(গ) বিবাহ প্রথা।

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ায় উচ্চশ্রেণীর মর্যাদা, পরিবারের প্রকৃতি ও বিবাহ প্রথা সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ 

(ক) উচ্চশ্রেণীর পদমর্যাদাঃ মেসোপোটামিয়ায় এক সম্ভ্রান্তশালী শাসক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। তারা সমাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ ছিল, কিন্তু সম্পদ ও ধনদৌলতে একটি বিরাট অংশ ছিল। এই সম্প্রদায়ের লোককে মৃত্যুর পর নানা প্রকার মূল্যবান সম্পদসহ সমাধিস্থ করা হত। এই দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে অলঙ্কার, সোনার পাত্র, কাঠের নির্মিত সংগীত যন্ত্র প্রভৃতি প্রধান।

(খ) পরিবারের প্রকৃতিঃ নানা প্রকার দলিলপত্র হতে উপলব্ধি করা যায় যে মেসোপোটামিয়ায় একক পরিবার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। কিন্তু বিবাহিত পুত্র এবং তার পরিবার সাধারণত পিতামাতার সঙ্গে থাকত। পিতা ছিলেন পরিবারের প্রধান।

(গ) বিবাহ প্রথাঃ মেসোপোটামিয়া সমাজে বিবাহ-সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেওয়া হত। এর পর কন্যার পিতামাতা বিবাহে তাদের সম্মতি দিতেন। তার পরিবারের লোকজন কন্যার মানুষজনকে উপহার দান করত। বিবাহের পর উভয়পক্ষ উপহার বিনিময় করত। উভয়পক্ষই একত্রে ভোজন করত এবং একত্রে মন্দিরে প্রার্থনা করত। পিতা কন্যাকে সম্পত্তির অংশ দান করতেন যখন শাশুড়ি কন্যাকে নিতে আসেন। পুত্র সাধারণত ঘরবাড়ি, পশুপাল, ক্ষেতের জমি প্রভৃতি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করত।

6. উরুক নগরীর বিস্তৃতি কতটুকু ছিল। এই অঞ্চলে শিল্প ও স্থাপত্যে অগ্রগতি কিভাবে শাসকদের দ্বারা সম্ভব হয়েছিল? 

অথবা,

উরুক অঞ্চলের শাসকরা কিভাবে প্রজাদের সহযোগিতায় এই অঞ্চলের উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছিলেন?

উত্তরঃ মেসোপোটামিয়ার মন্দির শহরগুলির মধ্যে উরুক প্রাচীনতম। প্রথম থেকেই উরুক একটি প্রাচীরবেষ্টিত নগরী। ৪২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে থাকা উরুক নগরী ২৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রায় ৪০০ হেক্টর এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। উরুক অঞ্চলের শিল্প ও স্থাপত্যের অগ্রগতিতে শাসকরা প্রজাদের সহযোগিতায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিয়েছিলেনঃ

(ক) স্থানীয় লোকদের উপর কৃষিকর আরোপ করা হত সম্পদ সংগ্রহ করার জন্য। 

(খ) স্থানীয়দের ও যুদ্ধবন্দীদের রাজার কাজে নিয়োগ করা হত, যার প্রতিদানে তাদের খাদ্যদ্রব্য ও কাপড় দেওয়া হত।

(গ) শাসকেরা জনগণকে মন্দির নির্মাণ করার জন্য পাথর ও ধাতু যোগাড় করবার, দূরবর্তী স্থানে গিয়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করে আনবার, কখনো-বা ইট তৈরি করবার বা ইট বিছিয়ে দেবার আদেশ দিতেন।

নিম্নোক্ত ধরনের কাজের মাধ্যমে উরুক প্রযুক্তিগতভাবে অনেক অগ্রসর হয় এবং শিল্প ও স্থাপত্যের প্রভূত উন্নতি ঘটেঃ

(ক) বিভিন্ন শিল্পকর্মের জন্য ব্রোঞ্জের হাতিয়ার ব্যবহার শুরু হয়।

(খ) কাঠের স্তম্ভগুলো ছাদের ভার বহনের উপযুক্ত না হওয়ায় স্থপতিরা ইটের স্তম্ভ তৈরি করার কৌশল আয়ত্ত করেন।

(গ) বিভিন্ন মাটির ঘট তৈরি করে বিচিত্র রঙ-এ সাজিয়ে মন্দিরের দেওয়ালে লাগিয়ে মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হত।

(ঘ) মূর্তি তৈরি করার ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আনা পাথর ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট শিল্প সৃষ্টি হয়।

(ঙ) ঢাকার ব্যবহার মৃৎশিল্পের প্রভূত উন্নতি নিশ্চিত করে। এই শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নতি উরুকের অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

1. আমরা কেন বলি যে স্বাভাবিক উর্বরতা এবং অধিক পরিমাণ উৎপাদন প্রাচীনকালে নগরায়ণের প্রধান কারণ নয়?

উত্তরঃ মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা ও অধিক পরিমাণে উৎপাদন প্রাচীনকালে নগরায়ণের কারণ নয়। 

এর কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(ক) প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক উর্বরতা উন্নত কৃষির ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।

(খ) প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক উর্বরতার জন্য তৃণভূমি জন্মলাভ করে, যা পশুপালনে উৎসাহ দান করে।

(গ) কৃষি ও পশুপালন মানবজীবন স্থায়ী করে তোলে, কারণ কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষ খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয়। সুতরাং খাদ্যের অন্বেষণে তাকে আর স্থান হতে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াতে হত না।

(ঘ) মানবজীবন যখন স্থায়ী হল তখন কৃষিজীবী মানুষের আবির্ভাব ঘটে এবং মানুষ একত্রে কুঁড়েঘরে বাস করতে আরম্ভ করে। এইভাবে গ্রামের আবির্ভাব ঘটে।

(ঙ) অধিক খাদ্যোৎপাদনের ফলে বিনিময় প্রথা আরম্ভ হয়। ফলে গ্রামের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে।

2. নিম্নোক্ত কোনগুলি নগর বিকাশের প্রাথমিক শর্ত এবং কোনগুলি নগর বিকাশের পরিণাম?

(ক) উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষি। 

(খ) জল পরিবহণ।

(গ) ধাতু ও পাথরের অভাব। 

(ঘ) শ্রম বিভাজন।

(ঙ) সীলমোহরের ব্যবহার। 

(চ) রাজার সামরিক ক্ষমতা যা শ্রমদান বাধ্যতামূলক করেছে?

উত্তরঃ নিম্নলিখিতগুলি নগর বিকাশের প্রাথমিক শর্তঃ

(ক) উচ্চ উৎপাদনশীল কৃষিকার্য।

(খ) জল পরিবহণ।

(গ) শ্রম বিভাজন।

নিম্নলিখিতগুলি নগর বিকাশের পরিণামঃ

(ক) ধাতু ও পাথরের অভাব।

(খ) সীলমোহর ব্যবহার।

(গ) রাজার সামরিক শক্তি যা শ্রমদান বাধ্যতামুলক করে।

3. ভ্রাম্যমাণ পশুপালকগণ কেন শহর জীবনের ভয়ের কারণ হয়নি?

উত্তরঃ ভ্রাম্যমাণ পশুপালকগণ তাদের পশুর পালকে চাষযুক্ত জমিতে জল দিতে নিয়েছিলেন যার ফলে শস্যহানি ঘটেছিল। তারা মজুতকৃত দ্রব্যসামগ্রী ধরবার জন্য কৃষিপ্রধান। গ্রামে হানা দিত। অনেক সময় স্থায়ী বসবাসকারী লোক পশুপালকদের একটি নির্দিষ্ট পথে নদী বা খালে যেতে দিত না। ফলে প্রায়ই সংঘাত বাধত। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ পশুপালক নগরজীবনের ভয়ের কারণ ছিল না। তারা তাদের ছোট পশুদের চামড়া, দুগ্ধ এবং মাংস, ধাতুর হাতিয়ার, খাদ্যশস্য, সার প্রভৃতির পরিবর্তে বিনিময় করত | মেসোপোটামিয়ান ইতিহাসের মাধ্যমে পশ্চিম মরুভূমিকে পশুপালকগণ সমৃদ্ধশালী কৃষিভূমিতে পরিণত করেছিল। এই সকল পশুপালক প্ৰকৃত পশুপালকে পরিণত হয় এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আরম্ভ করে। তাদের মধ্যে কোনো কোনো গোষ্ঠী, যেমন—এমোরাইট, আর্কাডিয়ান, আসিরিয়ান এবং আর্মেনিয়ান ক্ষমতা অর্জন করে এবং তাদের নিজস্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

4. প্রাচীনকালের মন্দিরকে বহুলাংশে ঘরের মতো মনে হয় কেন? 

উত্তরঃ মন্দির সাধারণত কোনো দেবতার ঘর। এই কারণে প্রাচীনকালের মন্দিরকে বহুলাংশে ঘরের মতো দেখায়।

নাতিদীর্ঘ প্রশ্নোত্তরঃ

5. নগর জীবন আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে সকল প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেছিল তাদের মধ্যে কোনগুলি রাজার উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল ছিল? 

উত্তরঃ নগর জীবন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রকার নূতন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম হল-মন্দির, বিদ্যালয়, বাণিজ্যকেন্দ্র, স্থায়ী সেনাবাহিনী, হস্তশিল্পী, নির্মাতা, ভাস্কর প্রভৃতি। এইসব নূতন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মন্দির, বাণিজ্যকেন্দ্র এবং হস্তলিপি রাজার উদ্যোগের উপর নির্ভরশীল। 

6. মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পর্কে প্রাচীন কাহিনিসমূহ কি বলে?

উত্তরঃ প্রাচীন কাহিনি মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পর্কে নানা তথ্য প্রদান করে। মেসোপোটামিয়া টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যে অবস্থিত ছিল। বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত। মেসোপোটামিয়া সভ্যতা সম্পদে, নগর জীবনে, সাহিত্যে, গণিতে এবং জ্যোতির্বিদ্যায় অতি সমৃদ্ধ ছিল। সেখানে একে একে তিনটি সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। এইগুলি হল সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা এবং আসিরীয় সভ্যতা। এই সভ্যতাসমূহকে একত্রে মেসোপোটামিয়া সভ্যতা বলে। 

এই সভ্যতার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলঃ

(ক) সমাজ জীবনঃ মেসোপোটামিয়া সমাজ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। প্রথম দুই শ্রেণী উঁচু শ্রেণীর জনগণ নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এই শ্রেণীর লোকেরা সুন্দর ঘরে বাস করত, সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করত এবং নানা প্রকার অলঙ্কার পরিধান করত।

(খ) অর্থনৈতিক জীবনঃ মেসোপোটামীয় জনগণের অর্থনৈতিক জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল। তারা মূলত কৃষিজীবী ছিল। কৃষিকার্য গ্রহণ করা হয়েছিল।

জলসেচের জন্য তারা নদীর তীর বরাবর বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তারা টিন, তামা, ব্রোঞ্জ প্রভৃতি ধাতুর ব্যবহার জানত। তারা কাপড় বোনা, অট্টালিকা নির্মাণ, অলঙ্কার তৈরি এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করতে জানত। তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করত।

(গ) ধর্মীয় জীবনঃ মেসোপোটামীয়গণ নানা প্রকার দেব-দেবীর পূজার্চনা করত। তারা তাদের বিগ্রহ তৈরি করে মন্দির স্থাপন করত। প্রত্যেক শহরের নিজস্ব দেব-দেবী ছিল। সুমেরীয়গণ তাদের মন্দিরকে ‘জিগুরাট’ বলত। তাদের প্রধান দেবতা ছিল শামাস (সূর্য), সিন্ (চন্দ্র), অণু (আকাশ) এবং এনিনেল (বায়ু) প্রভৃতি। ব্যাবিলনীয়দের প্রধান দেবতা হল ‘মার্দুক’ এবং দেবী হল ‘ইস্তার’। আসিরীয়দের প্রধান দেবতা হল অসুর। পুরোহিতগণ সমাজে একটি সম্মানজনক স্থানে ছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top