Class 11 Environmental Studies Chapter 5 পরিবেশ প্রদুষণ

Class 11 Environmental Studies Chapter 5 পরিবেশ প্রদুষণ Question Answer | AHSEC Class 11 Environmental Studies Question Answer in Bengali to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 11 Environmental Studies Chapter 5 পরিবেশ প্রদুষণ Notes and select needs one.

Class 11 Environmental Studies Chapter 5 পরিবেশ প্রদুষণ

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 11 Environmental Studies Chapter 5 পরিবেশ প্রদুষণ Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 11 Environmental Studies Chapter 5 পরিবেশ প্রদুষণ Solutions for All Subjects, You can practice these here.

পরিবেশ প্রদুষণ

Chapter: 5

পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। পরিবেশ প্রদুষণ বলতে কি বুঝ? বিভিন্ন প্রকারের প্রদুষণের বিষয়ে লিখ। (What do you mean by environmental pollution? Name different types of Pollution)

উত্তরঃ মানুষের কার্যকলাপের ফলে পরিবেশের বাতাস, জল এবং মাটির  ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক গুণাগুণের অবাঞ্ছিত পরিবর্তন, যা মানুষের, জীব জন্তুর, অন্যান্য জীব এবং সম্পত্তির ক্ষতিশাধন করে তাকেই পরিবেশ প্রদুষণ বলে। সাধারণত প্রদুষণ তিন প্রকারের হয়। যেমন – 

১। বায়ু প্রদুষণ (Air pollution)।

২। জল প্রদুষণ (Water pollution)।

৩। ভূমি প্রদুষণ (Soil pollution)।

আবার প্রদুষকের উপর নির্ভর করে প্রদুষণ নিন্ম রূপের হতে পারে।

১। তাপ প্রদুষণ (Thermal pollution)।

২। শব্দ প্রদুষণ (Noise pollution)।

৩। তেজষ্ক্রিয়তা প্রদুষণ (Radioactive pollution)।

৪। গোটা আবর্জনা প্রদুষণ (Solid waste pollution)। 

৫। তৈল প্রদুষণ (Oil pollution)। 

৬। ঔদ্যোগিক প্রদুষণ (Industrial pollution)।

৭। সাগারীয় প্রদুষণ (Marine pollution)।

প্রশ্ন ২। বায়ু প্রদুষণ কি? বায়ু প্রদুষনের উৎস সমুহ চিহ্নিত কর। (What is air pollution? Identify the sources of air pollution)

উত্তরঃ বায়ুতে ধুলো, ধোয়া, কুয়াশা, দুর্গন্ধ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা মিশে থাকার ফলে বায়ুত স্বাভাবিক অনাস্থার পরিবর্তন হয়ে বায়ুতে ক্ষতি কারক পদার্থের সৃষ্টি এবং মিশ্রণ হওয়াকে বায়ু প্রদুষন বলে। বায়ু প্রদুষনের ফলে বায়ুতে ধোয়া, বিষাক্ত গ্যাস, বায়ুতে মিশে থাকা কণিকা (SPM) ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।

বায়ু প্রদুষণের প্রধান উৎসসমুহ প্রধানত দুই ধরনের হয় – 

১। প্রাকৃতিক উৎস।

২। মানুষের দ্বারা সৃষ্ট উৎস।

১। প্রাকৃতিক উৎস: এই উৎসসমুহ প্রকৃতিতেই উৎপন্ন হয়। এই উৎসগুলি আবার নিন্মরূপ হতে পারে।

(ক) আগ্নেয়গিরির উদগীরণ: সালফার – ডাই – অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন – ডাই – অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন হয়।

(খ) দাবানল: বনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে বায়ুতে ধোয়া এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বায়ুতে মিশে যায়।

(গ) জৈবিক এবং অজৈবিক দ্রব্যের স্বাভাবিক পচন: এর ফলে বায়ুতে মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস বাতাসে মিশে যায়।

(ঘ) ধুলো: বায়ুতে ধুলির পরিমাণ বেশি হলে বায়ু প্রদুষিত হয়।

(ঙ) ফুলের রেণু : ফুল, অপতৃণ, ঘাস বন এবং গাছ বৃক্ষের রেণু বাতাসে মিশে বাতাসকে প্রদুষিত করে।

(চ) তেজস্ক্রিয় পদার্থ: পৃথিবীর অভ্যন্তীণ তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ তথা মহাজাগতিক রশ্মি বায়ুকে প্রদুষিত করে।

২। মানবসৃষ্ট উৎস: এইসমুহ উৎস মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়। এইগুলি নিন্মরূপ হতে পারে।

(ক) বনাঞ্চল ধ্বংস। 

(খ) যানবাহন থেকে নির্গত ধোয়া। 

(গ) জীবাশ্ম ইন্ধনের দহন।

(ঘ) দ্রুত শিল্পায়ন।

(ঙ) আধুনিক কৃষি কার্য।

প্রশ্ন ৩। মানব শরীরের বায়ু প্রদুষনের প্রভাব বিষয়ে উল্লেখ কর। (Mention few effects of air pollution on human health)

উত্তরঃ বায়ু প্রদুষণের ফলে মানুষের বিভিন্ন প্রকারের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন প্রকারের বায়ু প্রদূষক বিভিন্ন প্রকারের স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা সৃষ্টি। এইগুলির মধ্যে কয়েকটি প্রদুষক দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা নিন্মরূপ।

১। সালফার ডাই অক্সাইডের প্রভাবে বুক জ্বালা, মাথা ব্যাথা, বমি এবং শ্বাস কষ্ট জনিত কারনে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

২। নাইট্রোজেন অক্সাইডের প্রভাবে মাথা ব্যাথা, ফুস ফুসের রোগ, শিশুদের কাশি ইত্যাদি হতে পারে।

৩। কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাব বমির ভাব, রক্তে অক্সিজেনের সঞ্চারণ হ্রাস, মাথা ব্যাথা এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন সৃষ্টি হতে পারে।

৪। SPM, ছাই, কালো ধোঁয়া প্রভৃতি চোখ জ্বালা করা, একজিমা, কর্কট রোগ প্রভৃতি সৃষ্টি করতে পারে। 

৫। হাইড্রোজেন সালফাইডের প্রভাবে বমি, চোখ জ্বালা করা গলা চুলকানো ইত্যাদি হতে পারে। 

৬। এমনিয়ার প্রভাবে শ্বাসযন্ত্রের উপরি ভাগ আক্রান্ত হয়।

৭। এসবেষ্টস মানুষের ফুস ফুসে কর্কট রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

৮। এছাড়াও এলডিহাইড শ্বাসনালীতে জ্বলন, এবং ফসজিন হৃদরোগের সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন ৪। জল প্রদুষন কি? মানব শরীরের জল প্রদুষনের প্রভাব সমুহ কি কি? (What is water pollution? What are the effects of water pollution on human health)

উত্তরঃ জলে অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত দ্রব্য মিশে গিয়ে মানুষ, জীব জন্তু এবং জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকারক হয়ে পড়া অথবা সেই জলভাগ এবং তার চারপাশে থাকা বিভিন্ন জীবিত পদার্থের স্বাভাবিক কার্য কলাপ বাধা গ্রন্থ হওয়াকে জল প্রদুষণ বলে। অর্থাৎ জলে অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতি কারক পদার্থের মিশ্রণকে জল প্রদুষণ বলে। 

দুষিত জল মানবদেহে নানান রকমের রোগের সৃষ্টি করে। দুষিত জলের উৎস এবং শোচনীয় পুর জল সরবরাহ ব্যবস্থা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগ ছড়ায়। জল প্রদুষনের ফলে জলের মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থের ক্ষতিসাধন হয় এবং এইগুলির উপকারী গুন নষ্ট হয়। জল প্রদুষনের ফলে জলে বিভিন্ন ধরনের বীজানু মিশে যায় যেগুলি মানুষের শরীরে নানান ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। এই ধরনের কিছু রোগের উদাহরণ হল টাইফয়েড, কলেরা, ডিসেন্ট্রি, ডায়েরিয়া, জিয়ার ডিয়াডিসস, গ্যাস্টোএন্টাইটিস, পোলিও ইত্যাদি। জীবাণু বাহিত রোগ ছাড়াও জলে বিভিন্ন প্রকারের ধাতব ও অধাতব অশুদ্ধি মিশে যাওয়ার ফলে তা মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগ সৃষ্টি করে। যেমন পানীয় জলে অত্যাধিক লোহার উপস্থিতি শরীরে থোলা সমিয়া এবং কোষ্ট কাঠিন্য সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ফ্লোরাইডের উপস্থিতিতে শরীরে ফ্লোরোসিস, আর্সেনিকের উপস্থিতিতে ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি হয়। পানীয় জলে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি জাপানের ইতাই ইতাই রোগের কারণ ছিল। কাজেই দেখা যায় জল প্রদুষনের ফলে মানুষের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ৫। ভূমি প্রদুষন কি? তাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? (What is soil pollution? How can it be controlled?) 

উত্তরঃ মাটিতে ঘরোয়া এবং ঔদ্যোগিক বর্জ্য পদার্থ এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ মিশে গিয়ে মাটির গুণাবলী নষ্ট হওয়াকে মাটি দূষণ বা ভূমি প্রদুষন বলে। ভূমি প্রদুষনের নিয়ন্ত্রণে নিন্মলিখিত উপায়গুলি গ্রহন করা উচিত।

১। বিভিন্ন উদ্যোগের বর্জ্য পদার্থ সমূহকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার আগে সেগুলোকে ভাল করে পরিশোধন করা প্রয়োজন।

২। গোটা আবর্জনা সমূহকে উৎসেই জৈব বিয়োজনীয় এবং জৈব অবিয়োজনীয় হিসাবে ভাগ করে ফল প্রসু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেগুলোর বিয়োজন ঘটাতে হবে।

৩। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের প্রয়োগে উৎসাহ যোগানো উচিত।

৪। রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

৫। মাটিতে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সমুহ দুর করার জন্য জৈব পরিচর্যা পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।

৬। বিভিন্ন বস্তু যেমন প্লাষ্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদিকে পুণরাবর্তন করা উচিত।

৭। ভূমি প্রদুষনের বিরুদ্ধে কোঠর আইন বলবৎ করা উচিত।

৮। মানুষের মধ্যে ভূমি প্রদুষনের কুফল সমন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত।

প্রশ্ন ৬। গোটা আবর্জনা কি? সেগুলোকে কিভাবে ভাগ করা হয়? (What are solid waste? How are they classified?)

উত্তরঃ ঘরোয়া, ব্যবসায়ীক, প্রতিষ্ঠানিক, কৃষি, খনন এবং উদ্যোগিক কাজ কর্মের ফলে যে সমস্ত আবর্জনা সৃষ্টি হয় সেইগুলোকে গোটা আবর্জনা বলে। গোটা আবর্জনার একটি সংজ্ঞা হল – ” ভুল স্থানে ফেলা সামগ্রী”, দ্রুত নগরায়ন, ঔদ্যোগিক, জনসংখ্যা বিষ্ফোরণ এবং অর্থনৈতিক মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বৎসরগুলিতে এই ধরনের আবর্জনা প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গোটা আবর্জনাকে প্রধানত তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন – 

১। ঘরোয়া বর্জ্য পদার্থ।

২। শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পদার্থ। এবং

৩। কৃষি কার্যের বর্জ্য পদার্থ।

১। ঘরোয়া বর্জ্য পদার্থ: ঘরোয়া আবর্জনা, কাগজ, বস্ত্র, বর্জ্য খাবার, সব্জির আবর্জনা ইত্যাদি।

২। শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পদার্থ: বিভিন্ন কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ সমুহ যেমন – লবণ, এসিড, গ্রিজ, তেল ইত্যাদি।

৩। কৃষি কার্যের বর্জ্য পদার্থ: গড়, তুষ, পশু পাখির মলমুত্র, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদির পদার্থ।

প্রশ্ন ৭। গোটা আবর্জনার পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর। (Discuss about environmental effects of solid wastes)

উত্তরঃ গোটা আবর্জনা সমুহ সঠিকভাবে বিনষ্ট না করলে বিভিন্ন প্রকারের পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন – 

১। আবর্জনা ফেলা স্থান দূষিত হয়ে পড়ে এবং সেখানে রোগ বীজানুর বাহক ইদুর, মাছি, মশা ইত্যাদির বংশবৃদ্ধি করে।

২। অণুজীবের মাধ্যেমে গোটা আবর্জনার পচনের ফলে চারপাশের এলাকায় মিথেন গ্যাস নির্গত হয়।

৩। গোটা আবর্জনার থেকে নির্গত বা তার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া জল মাটি, ঘোলা জলের উৎস এবং ভূ – গর্ভের জলে মিশ্রিত হয়।

৪। গোটা আবর্জনায় থাকা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ভূ – গর্ভের জল প্রদুষিত করে।

৫। আবর্জনা ফেলার স্থান পাকা না হওয়ার কারণে অপরিচ্ছন্ন জল চুয়িয়ে মাটিতে প্রবেশ করে মাটি দূষিত করে।

৬। আবর্জনা জমা স্থানের পাশে বসবাস করা মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়াটা আবাধারি, একে এড়ান অসম্ভব। এবং

৭। গোটা আবর্জনা থাকা বিভিন্ন প্রকারের জৈব বস্তুর পচনের ফলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং বায়ু দূষিত হয়। 

প্রশ্ন ৮। প্রধান সবুজ গৃহ গ্যাসসমুহ কি কি? সবুজগৃহ প্রভাব কি? (What are the major greenhouse gases? What is greenhouse effect?) 

উত্তরঃ প্রধান সবুজগৃহ গ্যাস সমুহ হল কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন(CFC), নাইট্রাস অক্সাইড এবং ওজন।

সূর্য থেকে আসা শক্তির ৩০ শতাংশ আবার মহাকাশে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় এবং বাকি ৭০ শতাংশ পৃথিবীতে প্রবেশ করে এবং এই শক্তিই পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে জীবের বাসযোগ্য করে রাখে। পৃথিবীকে উত্তপ্ত রাখার মুলে হচ্ছে বায়ুমণ্ডল। বায়ুতে থাকা কিছু গ্যাস যেমন – কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ওজন এবং জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ইত্যাদি পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত হওয়া তাপকে শোষন করে এবং বায়ুমণ্ডলেই ধরে রাখে। এই গ্যাসগুলি কিছু পরিমাণে তাপ ফের ভূপৃষ্টে নিক্ষেপ করে।

কিন্তু বায়ু প্রদূষনের ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসের অনুপাত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই গ্যাসগুলি প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাপ পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিচ্ছে যার ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড মিথেন ওজন, নাইট্রাস অক্সাইড  ইত্যাদি গ্যাসের অনুপাত বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে সবুজ গৃহ প্রভাব বলে। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি উদ্যান শস্যের জন্য কাছের নির্মিত গ্রিনহাউসের (সবুজ গৃহ) ভেতরের উষ্ণতার পর্যবেক্ষণ করার প্রক্রিয়াটির সঙ্গে একই তাই তাকে সবুজ গৃহ প্রভাব বলে।

প্রশ্ন ৯। গোলকীয় উষ্ণায়ন (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) বলতে কি বুঝ? গোলকীয় উষ্ণায়নের কয়েকটি পরিণতির বিষয়ে উল্লেখ কর। (What you mean by global warming? Mention few consequences of global warming) 

উত্তরঃ পৃথিবীর গড় উষ্ণতা প্রায় ১৫°সেন্টিগ্রেড। এই উষ্ণতা পৃথিবীতে বসবাসকারী জীবকুলের জন্য অনুকূল। কিন্তু বায়ু মণ্ডলে সবুজ গৃহ গ্যাসের বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর তাপ মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানিদের মতে গত শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ০.৩ – ০.৬২ সেন্টি গ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত শতাব্দীগুলিতে পরিবেশ প্রদুষনের ফলে বায়ুতে সবুজ গৃহ গ্যাসগুলির পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সবুজ গৃহ গ্যাস সমুহ একটি আবরণ সৃষ্টি করে উষ্ণতা বৃদ্ধি করার এই ঘটনাকেই গোলকীয় উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গোলকীয় উষ্ণায়নের ফলে নিন্মলিখিত প্রভাবগুলি ঘটতে পারে।

১। গোলকীয় উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চল তথা গ্রীনল্যাণ্ডের বিশাল বরফের ভাণ্ডার এবং হিমবাহগুলি গলিতে শুরু করেছে যার ফলে সমুদ্রের জল স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে এবং উপকূলবর্তী এলাকা প্লাবিত হবে যার ফলে মানুষ এবং জীব জন্তুর প্রচণ্ড ক্ষতি হবে।

২। গোলকীয় উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর বহু এলাকা মেরুভূমিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩। গোলকীয় উষ্ণায়নের ফলে দাবানলের তীব্রতা এবং সময় বৃদ্ধি পাবে যা পরিবেশের ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে।

৪। গোলকীয় উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী এবং উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন ১০। অ্যাসিড বর্ষণ কি? (What is acid rain)

উত্তরঃ ঔদ্যোগিক কাজ কর্ম এবং জীবাশ্ম ইন্ধনের দহনের ফলে বায়ুতে সালফার এবং নাইট্রোজনে জাতীয় অক্সাইড সমূহের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন দিকে বইতে থাকা বাতাস যখন সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমূহকে স্পর্শ করে তখন সেই জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এসে সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফেট এবং নাইট্রেটের ক্ষুদ্র ক্ষনা সৃষ্টি হয়। এই রাসায়নিক পদর্থসমুহ তরল এবং শুকনো আম্লিক পদার্থ রূপে ভূ পৃষ্টে নেমে আসে। এই সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে অম্লবর্ষণ বা অ্যাসিড বর্ষণ বলে।

প্রশ্ন ১১। প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট প্রদুষণ বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ পরিবেশের যে সমস্ত প্রদুষণ প্রাকৃতিক কারকের দ্বারা হয়ে থাকে সে সমস্ত প্রদুষণকে প্রাকৃতিক প্রদুষণ বলে। যেমন – আগ্নেয়গিরি উদ্গীরণের ফলে বায়ু প্রদুষণ, দাবানলের ফলে বায়ু প্রদুষণ ইত্যাদি। অন্যদিকে মানুষের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের ফলে যে সমস্ত প্রদুষণ হয় সে ধরনের প্রদুষণকে প্রাকৃতিক প্রদুষণ বলে। যেমন – কল কারখানা, মটর গাড়ীর ধোয়ার ফলে বায়ু প্রদূষণ।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

(ক) অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও:

প্রশ্ন ১। Pollution শব্দটি কোন শব্দ থেকে উৎপন্ন হয়েছে?

উত্তরঃ ল্যাটিন শব্দ Pollutionem (পলিউশনেম) থেকে pollution (প্রদূষণ) শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন ২। ল্যাটিন শব্দ Pollutionem এর অর্থ কি?

উত্তরঃ ল্যাটিন শব্দ Pollution এর অর্থ অপরিষ্কার।

প্রশ্ন ৩। PAN শব্দটি সম্পূর্ন নাম লিখ।

উত্তরঃ পেরোক্সি এসিটাইল নাইট্রেট।

প্রশ্ন ৪। মুখ্য প্রদুষকের একটি উদাহরন দাও।

উত্তরঃ সালফার – ডাই – অক্সাইড।

প্রশ্ন ৫। গৌণ প্রদুষকের একটি উদাহরন দাও।

উত্তরঃ পেরোক্সি এসিটাইল নাইট্রেট (PAN)।

প্রশ্ন ৬। পরিবেশ প্রদুষনের একটি প্রাকৃতিক কারণ লিখ। 

উত্তরঃ আগ্নেয়গিরির উদগীরণ।

প্রশ্ন ৭। একটি মানব সৃষ্টি প্রদুষণ কারকের নাম লিখ।

উত্তরঃ জীবাশ্ম ইন্ধনের দহন।

প্রশ্ন ৮। একটি ক্ষতিকারক দ্রব্যের উদাহরণ দাও যা পরিবেশের অনিষ্ট করে।

উত্তরঃ ক্লোরোফোরোকার্বন।

প্রশ্ন ৯। যানবাহন থেকে নির্গত একটি প্রধান প্রদুষকের নাম লিখ।

উত্তরঃ কার্বন মনোক্সাইড (Co)।

প্রশ্ন ১০। পেট্রোলে কোন যৌগ থাকার ফলে যান বা ধোয়া থেকে সিসার যৌগ নির্গত হয়।

উত্তরঃ টেটোইথাইল লেড।

প্রশ্ন ১১। বায়ু প্রদূষনের সবচেয়ে বড় কারণটি কি?

উত্তরঃ যান বহনের ধোয়া।

প্রশ্ন ১২। শিল্পজাত উদ্যোগ থেকে কত শতাংশ বায়ু দূষণ হয়?

উত্তরঃ ২০ শতাংশ।

প্রশ্ন ১৩। কল কারখানাতে কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে দেখা যায় এমন একটি স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ সিলিকসিস।

প্রশ্ন ১৪। ঘরের ভিতরের একটি প্রদুষকের নাম লিখ।

উত্তরঃ স্টোভের ধোয়া।

প্রশ্ন ১৫। সালফার – ডাই – অক্সাইড দ্বারা মানবদেহে সৃষ্ট একটি উপসর্গের উল্লেখ কর।

উত্তরঃ মাথা ধরা।

প্রশ্ন ১৬। বায়ু মণ্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কত?

উত্তরঃ ৭৮%।

প্রশ্ন ১৭। এলডিহাইড আমাদের শরীরে কি অসুবিধার সৃষ্টি করে?

উত্তরঃ নাসিকা এবং শ্বাসনালীতে জ্বালা –  পোড়া অনুভব হয়।

প্রশ্ন ১৮। টাইফায়েড রোগের জীবাণুর নাম কি?

উত্তরঃ সেলমনেলা টাইফি।

প্রশ্ন ১৯। কত সনে ক্লোরোফোরোকার্বন (CFC) আবিষ্কৃত হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৯৩০ সনে।

প্রশ্ন ২০। ওজন স্তরের রক্ষনা বেক্ষনের উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালে কোন প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

উত্তরঃ মন্ট্রিয়েল প্রটোকল।

প্রশ্ন ২১। এক প্রকার ক্ষতিকারক দ্রব্য প্রদুষকের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ DDT.

প্রশ্ন ২২। বিশ্ব উষ্ণায়ন কী?

উত্তরঃ (ক) বায়ু মণ্ডলে সবুজ গৃহ জাতীয় গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।

(খ) সত্য অথবা মিথ্যা লিখ।

প্রশ্ন ১। দাবানল একটি মানব সৃষ্ট প্রদুষক।

উত্তরঃ মিথ্যা।

প্রশ্ন ২। নাইট্রোজন অক্সাইড একটি গৌণ প্রদুষক।

উত্তরঃ মিথ্যা।

প্রশ্ন ৩। কল কারখানা হল বায়ু দূষণের  সবচেয়ে বড় কারণ।

উত্তরঃ মিথ্যা।

প্রশ্ন ৪। চুনা পাথর বায়ু মণ্ডলীয় অম্লসমূহের আঁধারপাত্র হিসাবে কাজ করে।

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ৫। জিয়ারডিয়াসিস হল একটি জল বাহিত রোগ।

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ৬। জলে ফ্লোরাইডের পরিমাণ ১.৫ মি: গ্রা/লি: থেকে বেশি হলে দাতের ফ্লোরোসিস রোগ হয়।

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ৭। একটি সমস্ত বৎসরের গড় আবহাওয়াকে কোন স্থানের জলবায়ু বলে।

উত্তরঃ মিথ্যা।

প্রশ্ন ৮। গোটা আবর্জনার একটি সংজ্ঞা হল – ‘ভুল স্থানে ফলে দেওয়া সামগ্রী ‘।

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ৯। বৃষ্টির জলের সঙ্গে সালফিউরিক এসিড থাকাকে অম্লবর্ষণ বলে।

উত্তরঃ সত্য।

প্রশ্ন ১০। হাইড্রোজেন একটি সবুজ গৃহ গ্যাস।

উত্তরঃ মিথ্যা।

(গ) শূন্যস্থান পূর্ণ কর – 

প্রশ্ন ১। চিহ্নিত করতে পারা উৎস থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্গত হওয়া প্রদুষককে __________ প্রদুষক বলে।

উত্তরঃ মুখ্য।

প্রশ্ন ২। PAN এক ধরনের __________ প্রদুষক।

উত্তরঃ গৌণ।

প্রশ্ন ৩। আগ্নেয়গিরির উদগীরণ এক প্রকারের ________ বায়ু প্রদূষক।

উত্তরঃ প্রাকৃতিক।

প্রশ্ন ৪। সিলিকার ধূলিকণা শ্বাসের সঙ্গে নেওয়ার ফলে কল কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে _________ রোগ দেখা যায়।

উত্তরঃ সিলিকসিস।

প্রশ্ন ৫। বায়ুতে __________ শতাংশ অক্সিজেন থাকে।

উত্তরঃ ২১%

প্রশ্ন ৬। এসবেস্টস ফুসফুসে __________ রোগের সৃষ্টি করে।

উত্তরঃ কর্কট।

 প্রশ্ন ৭। পলিও একটি ____________ জনিত রোগ।

উত্তরঃ ভাইরাস।

প্রশ্ন ৮। মানব শরীরের মধ্যে ___________ দিনের মধ্যে পলিও ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে।

উত্তরঃ ৭.১৪ দিনের মধ্যে।

প্রশ্ন ৯। লোহার অভাবে শরীরে ___________ রোগ হয়।

উত্তরঃ থেলাসমিয়া।

প্রশ্ন ১০। জলে __________ এর উপস্থিতি মানুষের দেহে ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি করে।

উত্তরঃ আর্সেনিক।

প্রশ্ন ১১। কম পক্ষেও ৩০ – ৪০ বৎসরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে কোন স্থানের __________ বলে।

উত্তরঃ জলবায়ু।

প্রশ্ন ১২। পৃথিবীর উপরিভাগের গড় তাপমাত্রা ____________।

উত্তরঃ ১৫° সেন্টিগ্রড।

প্রশ্ন ১৩। সূর্য থেকে আসা শক্তির ___________ শতাংশ আবার মহাকাশে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়।

উত্তরঃ ৩০%।

প্রশ্ন ১৪। ___________ হল প্রধান সবুজ গৃহ গ্যাস।

উত্তরঃ কার্বন ডাই অক্সাইড।

প্রশ্ন ১৫ । কলেরা হল একটি ____________ রোগ।

উত্তরঃ জলবাহিত।

প্রশ্ন ১৬ । জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বুঝ?

উত্তরঃ জলবায়ু পরিবর্তন বলতে আমরা জলবায়ুর অবস্থার পরিসংখ্যানগত ভিন্নতা বা এক দীর্ঘ সময়ের জন্য দেখা দেওয়া অবস্থার ভিন্নতা বুঝি।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ 

প্রশ্ন ১। প্রদুষক বলতে কি বুঝ?

উত্তরঃ মানুষের কার্য কলাপের ফলে প্রকৃতিতে যে সকল পদার্থের উপস্থিতি স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাদেরকে প্রদুষক বলে।

প্রশ্ন ২। প্রদুষক কয় প্রকার এবং কি কি?

উত্তরঃ প্রদুষক সাধারণত: দুই ধরনের।

১। মুখ্য প্রদুষক। এবং

২। গৌণ প্রদুষক।

প্রশ্ন ৩। মুখ্য প্রদুষক বলতে কি বুঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে সমস্ত প্রদুষক সরাসরি তাদের উৎস থেকে নির্গত হয়ে পরিবেশে বিচরণ করে তাদের মুখ্য প্রদুষক বলে । যেমন – সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪ । গৌণ প্রদুষক বলতে কি বুঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে সমস্ত প্রদুষক প্রাথমিক প্রদুষকগুলির মধ্যে প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় তাদের গৌণ প্রদুষক বলে। যেমন – ফোটোক্যামিকেল ধোঁয়াশা, গ্রাউন্ড লেভেল ওজন।

প্রশ্ন ৫। প্রদুষকের উপর নির্ভর করে প্রদুষনকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে? ওদের নাম লিখ।

উত্তরঃ প্রদুষকের উপর নির্ভর করে প্রদুষনকে  নিন্মলিখিত প্রকারে ভাগ করা হয়েছে।

১। তাপ প্রদুষন।

২। শব্দ প্রদুষন।

৩। তেজস্ক্রিয়তা প্রদুষন।

৪। গোটা আবর্জনার প্রদুষন।

৫। তৈল প্রদুষন।

৬। উদ্যোগিক প্রদুষন। এবং

৭। সাগরীয়া প্রদুষন।

প্রশ্ন ৬। পরিবেশ প্রদুষনের প্রাকৃতিক কারকের উদারণ দাও।

উত্তরঃ পরিবেশ প্রদুষনের প্রাকৃতিক কারকের উদাহরণ হল ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির উদগীরণ, অত্যাধিক বৃষ্টিপাত ভূমিস্খলন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৭। বায়ু প্রদুষনের প্রাকৃতিক উৎসগুলির নাম লিখ।

উত্তরঃ বায়ু প্রদুষনের প্রাকৃতিক উৎসগুলি হল – 

১। আগ্নেয়গিরি উদ্গিকা।

২। দাবানল।

৩। জৈবিক এবং অজৈবিক দ্রব্যের পচন ধরা।

৪। ধূলিকণা।

৫। বিভিন্ন ধরনের অণুজীব। এবং

৬। তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৮। বায়ু প্রদূষনের মানবসৃষ্ট উৎস সমূহের নাম লিখবায়ু।

উত্তরঃ বায়ু প্রদূষনের মানবসৃষ্ট উৎস সমূহ হল – 

১। বনাঞ্চল ধ্বংস।

২। যান – বাহন থেকে নির্গত ধোয়া।

৩। জীবাশ্ম ইন্ধনের দহন।

৪। দ্রুত শিল্পায়ন। এবং

৫। আধুনিক কৃষিকার্য।

প্রশ্ন ৯। যানবাহন থেকে নির্গত তিনটি প্রধান প্রদুষকের নাম লিখ।

উত্তরঃ যানবাহন থেকে নির্গত তিনটি প্রধান প্রদুষকের নাম হল – 

১। কার্বন মনোক্সাইড।

২। হাইড্রো কার্বন। এবং

৩। নাইট্রাস অক্সাইড।

প্রশ্ন ১০। ঘরের ভিতরের দুটি প্রদুষকের নাম লিখ।

উত্তরঃ ঘরের ভিতরের দুটি প্রদুষকের নাম হল –

 ১। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। এবং

২। গ্যাস স্টোভের ধোয়া।

প্রশ্ন ১১। জলে প্রদুষন বলতে কি বুঝ? 

উত্তরঃ জলে অবাঞ্চিত অতিরিক্ত দ্রব্য মিশে গিয়ে মানুষ, জীব জন্তু এবং জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকারক হয়ে পড়া অথবা সেই জলভাগ বা তার চারপাশে থাকা বিভিন্ন জীবিত পদার্থের স্বাভাবিক কার্য কলাপ বাধাগ্রন্থ হওয়াকে জল প্রদুষন বলে।

প্রশ্ন ১২। জল প্রদুষনের দুটি প্রধান উৎস উল্লেখ কর।

উত্তরঃ জল প্রদুষনের দুটি প্রধান উৎস হল – 

১। ঘরোয়া আবর্জনা। এবং

২। উদ্যোগিক বর্জিত পদার্থ।

প্রশ্ন ১৩। জলে অপদ্রব্যের সংযোজন কিভাবে ঘটে? 

উত্তরঃ অপরিশোধিত বর্জ্য পদার্থ এবং কৃষি আবর্জনা, উদ্যোগিক বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনার স্তূপ, টেঙ্কার থেকে তেল গড়িয়ে পড়া, খনন কার্য ইত্যাদির মাধ্যমে পানীয় জলের উৎসে অপদ্রব্যের মিশ্রণ ঘটে।

প্রশ্ন ১৪। জলের আসের্ণিক মিশ্রিত হলে মানুষের শরীরে তার কি প্রভাব দেখা যায়।

উত্তরঃ পানীয় জল অত্যাধিক পরিমাণে থাকা আসের্ণিক নিয়মিতভাবে শরীরে প্রবেশ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকারক হয়। দীর্ঘদিন ধরে আসের্ণিক মিশ্রিত জল ব্যবহার করলে মানুষের শরীরে খুজলি এবং চামড়ার কর্কট রোগ হয়। তাছাড়া আসের্ণিক মিশ্রিত জল ব্যবহার করলে হৃদরোগ, বহুমুত্র এবং অন্যান্য নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন ১৫। মানবদেহে ফ্লোরাইডের প্রভাব কি হয়? 

উত্তরঃ যখন ব্যবহার করা জলে ফ্লোরাইডের পরিমাণ ০.৮ থেকে ১ মি: গ্রা:/ লি: পর্যন্ত থাকে তখন ক্যালসিয়ামের যোগানের মাধ্যেমে আট বছরের কম বয়সি শিশুদের দাতেঁর এনামেল গঠনে সাহায্য করে। কিন্তু ১০ – ১৫ বছর ধরে খেয়ে যাওয়া জলে ফ্লোরাইডের পরিমাণ ১.৫ মি: গ্রা:/ লি: থেকে হলে হাড়ের ফ্লোরোসিস রোগ হয়।

প্রশ্ন ১৬। পরিবেশ দূষণকারী দুইটি ধাতুর নাম লিখ।

উত্তরঃ পরিবেশ দূষণকারী দুইটি ধাতুর নাম হল – 

১। সিসা। এবং

২। আর্সেনিক।

প্রশ্ন ১৭। ডেন্টাল ফ্লোরোসিস কি? 

উত্তরঃ যখন জলে ফ্লোরাইডের পরিমাণ ১.৫ মি: গ্রা:/ লি: থেকে বেশি হয় তখন দাতে এক ধরনের ক্ষয়ে যাওয়া রোগের সৃষ্টি হয়। একে ডেন্টাল ফ্লোরোসিস বলে। এই রোগের ফলে দাতের রং হলুদ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাতে ক্ষয় হয় এবং গর্ত হয়।

প্রশ্ন ১৮। হাড়ের ফ্লোরোসিস কি?

উত্তরঃ ক্যালসিয়াম ফসফেট গ্রহন করার তীব্র আসক্তি থাকার ফলে হাড়ের ফ্লোরাইডের উপস্থিতি মাত্রাধিক হলে হাড় বিকৃতরূপ গ্রহন করে। একে স্কেলটেল ফ্লোরোসিস বলে ফ্লোরাইডের উপস্থিতি হাড়কে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলে।

প্রশ্ন ১৯। তিনটি জল বাহিত রোগের নাম লিখ।

উত্তরঃ তিনটি জল বাহিত রোগের নাম হল – 

১। টাইফয়েড।

২। কলেরা। এবং

৩। ডায়েরিয়া।

প্রশ্ন ২০। কলেরা রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার লিখ।

উত্তরঃ কলেরা রোগের পাতলা পায়াখানার সঙ্গে বামিও হয় এবং শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে প্রচণ্ড জল তেষ্টা পায়। কয়েক  ঘণ্টা থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত এই লক্ষণ সমুহ দেখা দিতে পারে।

নির্দিষ্ট ঔষধ এবং শরীরে জলের যোগানের মাধ্যেমে এই রোগ নিরাময় সম্ভব।

প্রশ্ন ২১। জলথেকে কিভাবে রোগের সৃষ্টি হয়?

উত্তরঃ জল থেকে দুপ্রকার রোগের সৃষ্টি হয়।

১। রাসায়নিক থেকে: জলে অত্যাধিক পরিমাণে থাকা লৌহ, আর্সেনিক, সিসা, কেডমিয়াম ইত্যাদির শরীরে প্রবেশ করে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি করে। জলে থাকা। অন্যান্য পদার্থ যেমন – ফ্লোরাইড, বিভিন্ন নাইট্রেট রাসায়নিক কীটনাশক ইত্যাদি মানুষের দেহে নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করে।

২। পরজীবী দ্বারা: বিভিন্ন ধরনের রোগের জীবাণু জল দ্বারা বাহিত হয় এবং জলের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ২২। ভূমি প্রদূষণ বলতে কি বুঝ? 

উত্তরঃ মাটিতে বিভিন্ন ধরনের অবাঞ্ছিত পদার্থ, রাসায়নিক, উদ্যোগীক বর্জ্য ইত্যাদি মিশে গিয়ে মাটির উর্বরা শক্তি নষ্ট হওয়া এবং মাটি বিষাক্ত হওয়াকে ভূমি প্রদূষণ বলে।

প্রশ্ন ২৩। ভূমি প্রদূষনের দুটি উৎসের নাম লিখ।

উত্তরঃ ভূমি প্রদূষনের দুটি উৎসের নাম হল – 

১। উদ্যোগীক বর্জ্য পদার্থ। এবং

২। পুর আবর্জনা।

প্রশ্ন ২৪। শব্দ প্রদূষনের শ্রবণ প্রভাব কি হতে পারে?

উত্তরঃ শব্দ প্রদূষনের সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং  তাৎক্ষাণিক প্রভাব হল শ্রবন শক্তির হ্রাস। শব্দ প্রদূষন শ্রবন শক্তি ক্রমশ হ্রাস করে আনে এবং এরফলে মানুষ বধির হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন ২৫। শব্দ প্রদূষনের অশ্রবন প্রভাবসমুহ কি কি হতে পারে।

উত্তরঃ শব্দ প্রদূষনের অশ্রবন প্রভাবসমুহ হল বর্তালাপে অসুবিধা, বিরক্তিভাব, মানসিক উদ্বেগ, মানসিক চাপ, উগ্র আচরণ ইত্যাদি। এই প্রভাবের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। শান্তি বিঘ্নিত হয় এবং কর্মদক্ষতা কমে। অতি মাত্রায় শব্দ প্রদূষনের জন্য মানসিক অসংগতিও দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন ২৬। মানুষ কিভাবে শব্দ প্রদুষণ সৃষ্টি করে?

উত্তরঃ মানুষের বিভিন্ন ধরনের কার্য কলাপ মূলত শব্দ প্রদুষনের সৃষ্টি করে। ট্রাক, বাস, স্কুটার, অগ্নি নির্বাপক গাড়ি, পুলিচ ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি বাহন, উদ্যোগ, কলকারখানা , লাউস্পিকার, বাদ্য যন্ত্র, সাইবেন, আতসবাজি ইত্যাদি শব্দ প্রদুষনের সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ২৭। বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে ওজন স্তরটি আছে? কোন প্রদুষক গ্যাস ওজন স্তরের ক্ষতি করছে? 

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের স্ট্রেটোস্ফিয়ার স্তরে ওজন স্তরটি আছে। ক্লোরোফ্লোরোকার্বন নামক গ্যাসটি বায়ুমণ্ডলের ওজন ক্ষতি করছে।

প্রশ্ন ২৮। ওজন স্তর আমাদের কি উপকার করে?

উত্তরঃ ওজন স্তর সূর্যের মারাত্মক ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্মিকে শোষন করে এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে পৃথিবীর সমস্ত প্রনিকুলকে রক্ষা করে।

প্রশ্ন ২৯। বায়ু মণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের বৃদ্ধির দুটি কারণ লিখ।

উত্তরঃ বায়ু মণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের বৃদ্ধির দুটি কারণ হল- 

১। জীবাশ্ম ইন্ধনের দহন। এবং 

২। বনধবংস।

প্রশ্ন ৩০। শব্দ প্রদুষণ বলতে কি বুঝ? শব্দ প্রদুষনের দুটি উৎস উল্লেখ কর।

উত্তরঃ অবাঞ্ছিত এবং কোলাহল পূর্ণ শব্দ যখন একটি সীমা অতিক্রম করে তখন সেই স্থানের পরিবেশ মানুষের মস্তিষ্ক তথা মানসিক অবস্থার ক্ষতিসাধন করে। এই অবস্থানকে শব্দ প্রদুষণ বলে। শব্দ প্রদুষনের দুটি উৎস হল ১। কলকারখানা ২। মটর গাড়ীর শব্দ।

প্রশ্ন ৩১। কি উদ্দেশ্যে মনট্রিয়েল প্রটোকল সাক্ষরিত হয়েছিল।

উত্তরঃ ওজন স্তরের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে শতাধিক দেশ ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিয়েল প্রটোকলে সাক্ষর করেছিল। তাই ১৬ সেপ্টেম্বর দিনটিকে আন্তর্জাতিক ওজন দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

প্রশ্ন ৩২। সংজ্ঞা এবং পার্থক্য লেখো: প্রদুষক এবং প্রদুষণ।

উত্তরঃ ১। প্রদুষক: মানুষের কার্য কলাপের ফলে প্রকৃতিতে যে সকল পদার্থের উপস্থিতি স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাদেরকে প্রদুষক বলে।

২। প্রদুষণ: মানুষের কার্যকলাপের ফলে পরিবেশের বাতাস, জল এবং মাটির  ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক গুণাগুণের অবাঞ্ছিত পরিবর্তন, যা মানুষের, জীব জন্তুর, অন্যান্য জীব এবং সম্পত্তির ক্ষতিশাধন করে তাকেই পরিবেশ প্রদুষণ বলে। 

পার্থক্য: প্রদুষণ হলো বাতাস, জল, ভূমির ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক গুণাগুণের অবাঞ্চিত পরিবর্তন যা ক্ষতিসাধন করে। প্রদুষনের কারকসমূহের উপাদান প্রদুষক।

প্রশ্ন ৩৩। সংজ্ঞা এবং পার্থক্য লেখো: জৈব বিয়োজনীয় এবং জৈব – অবিয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ।

উত্তরঃ যে সকল জৈব বর্জ্য পদার্থের বিয়োজন (Decomposition) ঘটে সেইসব বর্জ্য পদার্থকে জৈব বিয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ বলে। যেমন – শাকসবজি, মাছ, ফলমূল ইত্যাদির বর্জ্য অংশ।

যে সকল বর্জ্য পদার্থ প্রকৃতিতে বি হয় না সেইসব পদার্থকে জৈব অবিয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ বলে। যেমন – প্লাষ্টিক, পলিথিন, ইত্যাদির  বর্জ্য অংশ।

পার্থক্য: জৈব বিয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ প্রকৃতিতে বিয়োজিত হয় না।

প্রশ্ন ৩৪। সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও: শব্দ প্রদুষনের উৎসসমুহ।

উত্তরঃ শব্দ প্রদুষনের মূল উৎস – প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট।

প্রাকৃতিক – মেঘের গর্জন হচ্ছে শব্দ দূষণের প্রাকৃতিক উৎস।

মানবসৃষ্ট – মানুষের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ শব্দ প্রদুষনের সৃষ্টি করে। ট্রাক, বাস, স্কুটার,অগ্নি নির্বাপক গাড়ি, পুলিশ ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদি বাহন,বিভিন্ন ধরনের বিমান, রেলগাড়ি, উদ্যোগ, কল – কারখানা, লাউস্পিকার, বাদ্য যন্ত্র, সাইরেন, বিস্ফোরণ ইত্যাদি থেকে সৃষ্ট অবাঞ্ছিত শব্দ প্রদুষনের সৃষ্টি করে। দীপাবলী উৎসরের সময় আতসবাজির শব্দ অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করলে শব্দ প্রদুষণ সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। আজকের যুগে পরিবেশ প্রদুষণের কারণ সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ পরিবেশ অবক্ষয় এবং প্রদুষণের মত বৃহৎ সমস্যার সঙ্গে আজকের বর্তমান পৃথিবীর সংঘাত চলছে। মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ প্রদুষন সমস্যাটি শুরু হয়েছিল।জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শুরু হাওয়া ঔদ্যোগীকরণ, নগরায়ন, পরিবহন ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ইত্যাদি আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রদুষনের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্ধিত জনসংখ্যা, খাদ্য শস্য এবং অন্যান্য উপভোগ্য সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির ফলেই ব্যাপক হারে পরিবেশ ধবংস শুরু হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব জল ব্যবস্থা, ভূমি বাতাস ইত্যাদির সহন ক্ষমতার আঘাত হানে। প্রযুক্তি বিদ্যার উন্নয়ন এবং অতভূতপূর্ব জনসখ্যা  বৃদ্ধি পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের গুণাগুণ এবং পরিমাণ দুটোর – ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানুষের প্রবণতার ফলে মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর যে লুন্টন চালাচ্ছে সেটাই পরিবেশ অবক্ষয় এবং পরিবেশ দূষণের মূল কারণ। তাছাড়া মানবজাতির লোভ এবং অতিবিলাসী জীবন যাত্রাও পরিবেশের উপর প্রচণ্ড ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলছে।

প্রশ্ন ২। প্রদুষণ কি? বিভিন্ন প্রকারের প্রদুষক এবং ক্ষতিকারক দ্রব্য সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মানুষের বিভিন্ন কার্য কলাপের ফলে উৎপন্ন হওয়া যে সকল পদার্থ পরিবেশের ক্ষতি করে এবং পরিবেশকে দূষিত করে সেইগুলিকে প্রদুষক বলে। 

প্রদুষক সাধারণত দুই ধরনের- 

 ১। মুখ্য প্রদুষক। এবং 

২। গৌণ প্রদুষক।

১। মুখ্য প্রদুষক: যে সমস্ত প্রদুষক কোন উৎস থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্গত হয় এবং পরিবেশে উপস্থিত থাকে তাদের মুখ্য প্রদুষক বলে। যেমন – সালফার অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি।

২। গৌণ প্রদুষক: যে সমস্ত প্রদুষক কোন উৎস থেকে সৃষ্টি  হওয়া প্রাথমিক প্রদুষকগুলির মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে উৎপন্ন হয় তাদের গৌণ প্রদুষক বলে। যেমন – পেরোক্সি এসিটাইল নাইট্রেট (PAN), গ্রাউণ্ড লেভেল ওজন ইত্যাদি।

তাছাড়া আরও কিছু দ্রব্য যেগুলি মানুষের কার্য – কালাপের জন্য পরিবেশে মিশে থাকে এবং পরিবেশের ক্ষতি করে এবং যেগুলি সাধারণত পরিবেশে থাকে না তাদের ক্ষতিকারক দ্রব্য বলে । যেমন – খাদ্য সংরক্ষণের জন্য মেশানো পদার্থ, রং, সাবানের জল ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৩। বনাঞ্চল ধবংস এর কুফল সমন্ধে আলোচনা কর।

উত্তরঃ বনাঞ্চল হল পৃথিবীর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বনাঞ্চল আমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী যোগান দেওয়া ছাড়াও বায়ুতে কার্বন – ডাই – অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে এবং অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে পৃথিবীর বায়ুকে শুদ্ধ রাখে। বনাঞ্চলকে আমরা পৃথিবীর ফুসফুস বলতেও পারি। কিন্তু বর্তমানকালে উদ্যোগীকরণ এবং উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হারে বনধবংস চলছে যা পৃথিবীর পরিবেশের জন্য এক অশনি সংকেত। জনসংখ্যা বৃদ্ধিই হচ্ছে বনধবংসের একটি প্রধান কারণ। ক্রমবর্দ্ধমান জনসংখ্যার ফলে প্রয়োজনীয় বাসস্থানের জন্য বনধবংস করা হচ্ছে। তাছাড়া এই বিশাল জনসংখ্যার ভরনপোষনের জন্যেও বনধবংস করে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ইন্ধনের প্রয়োজনীয়তা, শিল্পের জন্য কাচা সামগ্রী, উন্নয়ন মূলক প্রকল্প,খাদ্যের বর্দ্ধিত চাহিদা, গরু – মোসের বিচরণ ইত্যাদির ফলে বনাঞ্চল ধবংসের ক্রিয়া কলাপ তীব্র গতিতে চলছে। ব্যাপক হারে বনধবংসের ফলে নানান ধরনের পরিবেশ জনিত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ার ফলে বায়ুতে কার্বন – ডাই – অক্সাইডের অনুপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এরফলে গোলকীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি, মাটির উর্বরতা হ্রাস, মাটি দূষণ ভূমিক্ষয় ইত্যাদির মত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কাজেই বনাঞ্চল ধবংস পৃথিবীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক সমস্যা যা নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন ৪। যান – বাহন দ্বারা হওয়া প্রদুষণ কি কি কারকের উপর নির্ভরশীল। যান বাহনর দ্বারা হওয়া প্রদুষণ নিয়ন্ত্রনের উপায়গুলি কি কি?

উত্তরঃ যান বহনের দ্বারা হওয়া প্রদুষনের করাকগুলি নিন্মরূপ-

১। ইন্ধনের গুণাগুণ।

২। ব্যবহৃত ইঞ্জিনের প্রকার।

৩। দহনের দক্ষতা।

৪। বাহনটির বয়স।

৫। যান বাহনের জট।

৬। রাস্তার শোচনীয় অবস্থা। এবং

৭। ব্যবহৃত বাহনের প্রযুক্তি।

যান বাহনের দ্বারা হওয়া প্রদুষণ সাধারণত: নিন্মলিখিত উপায়গুলি অবলম্নন প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১। ইন্ধনের গুণগত মান উন্নত করা এবং পরিষ্কার ইন্ধনের ব্যবহার।

২। সিসা বিহীন ইন্ধন ব্যবহার করা।

৩। উন্নত প্রযুক্তির ইঞ্জিন ব্যবহার করা।

৪। যান – বাহনের ধোয়া নির্গতকরণ মাত্রা হ্রাসের জন্য নীতি – নিয়ম বলবৎ করা।

৫। উন্নত মানের সড়ক তৈরি করা। এবং

৬। অন্তর্দহন ইঞ্জিনের উন্নটিকরন।

প্রশ্ন ৫। শিল্প প্রদুষণ এবং এর প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা কর।

উত্তরঃ মানব সভ্যতার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশও তার নির্মলতা হারাচ্ছে। মানব সভ্যতার উন্নয়নই হল পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ। মটর গাড়ী থেকে হওয়া বায়ু প্রদূষণ যদিও বায়ু প্রদুষনের সবথেকে বড় কারণ তথাপিও শিল্প উদ্যোগ থেকে হওয়া বায়ু প্রদুষণও পরিবেশের প্রচণ্ড ক্ষতি করছে। সাধারণ হিসাব মতে শিল্প উদ্যোগ থেকে ২০ শতাংশ বায়ু প্রদুষণ হয়। তাছাড়াও শিপ্ল উদ্যোগের ফলে জল প্রদুষণ এবং মাটি প্রদুষণও মারাত্বক ভাবে হয়ে থাকে। বিভিন্ন রাসায়নিক প্রকল্প, ধাতব পদার্থ নির্মাণকারী প্রকল্প, স্মেন্টার, কাগজকল, সুতা এবং কাপড়ের মিল, পেট্রোলিয়াম শোধনাগার, সংশ্লেষিত রাবার উৎপাদন প্রকল্প ইত্যাদির মতো উদ্যোগ থেকে বায়ু প্র্দুষণ হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারখানা এবং খনিসমুহে সমগ্র পৃথিবীতে দৈনিক হাজার হাজার কর্মী বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি কারক এবং বিষাক্ত পদার্থের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সিলিকসিক, ভ্রূণের বিকৃত, পক্ষাঘাত, চামড়ার এলার্জি, নিউমক নিওসিস ইত্যাদি রোগে ভোগে। বস্ত্র উদ্যোগের শ্রমিকরা নিশ্বাসের সঙ্গে তুলার কণা গ্রহন করে ফলে এরা ফুসফুস এবং শ্বাসনালীর সমস্যায় ভুগে থাকে। এসবেস্টস কারখানার শ্রমিকরা এসবেস্টসিস নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই রকমভাবে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরাও বিভিন্ন স্বাস্থ্য জনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। এছাড়াও শিল্প উদ্যোগের ফলে জল দূষিত হয় এবং এর ফলে মাটিও প্রদুষিত হয় দূষিত জল এবং মাটি, মানুষের স্বাস্থ্যের প্রচণ্ড ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ৬। বায়ু প্রদূষণের প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন  উপায় সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ বায়ু প্রদুষণ আজকের যুগে সমস্ত মানব সভ্যতার জন্য বিরাট এক হুমকি স্বরূপ। মটর গাড়ীর ব্যবহার এবং শিল্প উদ্যোগেই বায়ু দূষনের প্রধান কারণ। কিন্তু মানুষের পক্ষে এইগুলির ব্যবহার পরিত্যাগ করা অসম্ভব। তথাপিও নিন্মোক্ত ব্যবস্থাগুলির দ্বারা বায়ু  প্রদুষণকে প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রন করা যায়।

১। ব্যক্তিগতভাবে গাড়ীর ব্যবহার কমিয়ে কারপুলের ব্যবহার করা।

২। মটর গাড়ীর ইঞ্জিনের যত্ন নেওয়া এবং সময় মত পরীক্ষা করানো।

৩। যতদূর সম্ভব জীবাশ্ম ইন্ধনের ব্যবহার কমানো এবং বিকল্প ইন্ধনের ব্যবহার বাড়ানো।

৪। ক্ষতিকারক পদার্থ না জমিয়ে সেইগুলিকে জ্বালিয়ে ফেলা বা মাটিতে গভীর গর্ত খুঁড়ে পুতে ফেলা। 

৫। পুরনো ইঞ্জিন, চুলা প্রভৃতি ব্যবহার না করা।

৬। কল কারখানার চিমনী গুলি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি করা এবং এইগুলিকে প্রচুর উচু করা।

৭। বার্নিশের পরিবর্তে জলভিত্তিক রং ব্যবহার করা।

৮। উৎপাদিত দ্রব্যের জন্য ব্যবহৃত কাচামাল ক্ষয় হতে দেওয়ার চাইতে পুনার্ব্যবহারযোগ্য বা নবীকরনীয় হওয়া।

৯। সিসাযুক্ত পেট্রোল ব্যবহার না করা।

১০। কল কারখানায় বৈদ্যুতিক অধক্ষেপক ব্যবহার করা। যাতে প্রদুষক পদার্থের কণা বায়ুতে মিশতে না পারে।

১১। কল কারখানা এবং তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চিমনীতে ছাকনী ব্যবহার করা। এবং

১২। বেশী পরিমাণে গাছ লাগানো।

প্রশ্ন ৭। জল প্রদুষণের প্রধান উৎসসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ জল প্রদুষণের প্রধান উৎসসমূহ হল – 

১। ঘরোয়া আবর্জনা।

২। উদ্যোগীক আবর্জনা এবং বর্জ্য পদার্থ।

৩। কৃষি কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক।

৪। শহরাঞ্চল থেকে বয়ে যাওয়া আবর্জনা।

৫। দ্রবণীয় বর্জিত পদার্থ।

৬। তেল গড়িয়ে পড়া।

৭। আবর্জনার স্তূপ।

৮। গোটা আবর্জনা।

৯। তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প।

১০। তেজস্ক্রিয় পদার্থ।

১১। ক্ষুদ্র অপদ্রব্য এবং বায়ু মণ্ডলীয় গ্যাস। এবং

১২। সংক্রামক দ্রব্য ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৮। কোন ধরনের জল খাওয়ার অনুপযুক্ত? পানীয় জলের মান উন্নয়নের তুমি কি কি ব্যবস্থা গ্রহন করবে? 

উত্তরঃ পরিশোধন না জল খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়। পাকা কুয়া এবং টেপের জল আপত্তিজনক স্বাদের হলে তা পান করা অনুচিত। তাছাড়া বেশি পরিমাণে গাছ বা অতিরিক্ত লোহার উপস্থিতিতে জল রঙিন হলে তা খাওয়ার জন্য অনুপযুক্ত। তাছাড়া জালের গুণের নির্ধারিত মাত্রা অনুমোদিত মাত্রার তুলনায় বেশি হয় তাহলে সে ধরনের জলও খাওয়ার উপযুক্ত নয়।

পানীয় জলের মান উন্নয়নে নিন্মলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে।

১। বালি, পাথর এবং কয়লা ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে পরিচিত পরিশোধন ব্যবস্থার মাধ্যমে জল পরিশোধন করা উচিত।

২। বেশী ঘোলা এবং বেশি লোহা থাকা জলে ফি ব্যবহার করতে হবে এবং বর্ষাকালে পরিশোধন ব্যবস্থা অধিক উন্নত করতে হবে।

৩। ফুটিয়ে কঠিন জলকে কোমল করা যায়। এর ফলে ব্যাক্টেরিয়ার মৃত্যু ঘটে।

৪। ব্যাক্টেরিয়াজনিত প্রদুষণ হ্রাস করতে ক্লোরিন ব্যবহার করা উচিত।

৫। জৈবিক শোধন দ্রব্য ব্যবহার করে জলকে ফ্লোরাইডমুক্ত করার পদ্ধতিতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

৬। জল ফুটিয়ে পান করা উচিত।

প্রশ্ন ৯। পানীয় জলের নিরাপত্তার জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত? 

উত্তরঃ পানীয় জলের উৎস পরিষ্কার এবং নিরাপদ রাখতে নিন্মলিখিত ব্যবস্থা সমূহ  গ্রহন করা উচিত। 

১। স্থান: শৌচাগার, ব্রজ্য পদার্থের নলা আবর্জনা ইত্যাদি থেকে জলের উৎস নূন্যতম দশ মিটার থেকে পনেরো মিটার দূরে উচু স্থানে থাকা দরকার।

২। মঞ্চ: টিউবওয়েল এবং পাকা কুয়ার চারদিকে প্রায় এক মিটার উচু মঞ্চ বা আঁধার তৈরি করতে হবে এবং এই স্থানে জল যাতে জমা না হয় তার জন্য নালা তৈরি করতে হবে। পাকা মঞ্চটি বিকৃত বা অগ্ন হওয়া উচিত নয়।

৩। নালা: অপরিষ্কার  জল যাতে জমা না হয় জন্য জলের উৎসের আশেপাশে নালার ব্যবস্থা সুন্দর হওয়া উচিত। এই স্থানে অতিরিক্ত জল  ফেলা উচিত নয়। 

৪। আবরণ: কোন বাইরের বস্তু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কুয়ার মুখ ঢাকনি দিয়ে বন্ধ করা উচিত।

৫। লাইনিং: বাইরের অপরিষ্কার জল যাতে পাকা কুয়ার প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য কুয়ার চারদিকে ছয় মিটার সিমেন্ট এবং পাথর দিয়ে পাকা করতে হবে।

প্রশ্ন ১০। ভূমি প্রদুষনের প্রধান উৎস সমূহ কি কি? 

উত্তরঃ ভূমি প্রদুষনের প্রধান উৎস সমূহ হল – 

১। উদ্যোগীক বর্জ্য পদার্থ।

২। নগরের গোটা আবর্জনা।

৩। কৃষি কার্য বা কৃষি – আবর্জনা।

৪। তেজস্ক্রিয় প্রদুষক।

৫। খনি অঞ্চলের নিকটবর্তী অঞ্চলে জমা হওয়া খনিজ আবর্জনা।

৬। বায়ু প্রদুষানের ফলে  হওয়া এসিড বৃষ্টি।

৭। শৌচাগারের আবর্জনা।

৮। প্রদুষিত জল মাটিতে পড়ার পর মাটি দ্বারা শোষিত হওয়া।

৯। গাড়ী এবং বিভিন্ন যান বাহন থেকে চুইয়ে পড়া তেল। এবং

১০। অতিরিক্ত বনধবংস এবং ভূমিস্খলন।

প্রশ্ন ১১। ভূমি প্রদূষণের প্রভাব সমূহ উল্লেখ কর।

উত্তরঃ ভূমি প্র প্রভাব সমূহ হল – 

১। ভূমি প্রদূষণের ফলে ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং এর ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রচণ্ড ভাবে ব্যহত হয়। ফলস্বরূপ ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

২। ভূমি প্রদূষণের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফলস্বরূপ উদ্ভিদের ফলন হ্রাস পায়।

৩। প্রদুষিত এবং বিষাক্ত মাটিতে উৎপন্ন গাছের ফল খেয়ে মানুষের স্বাস্থের মারাত্মক ক্ষতি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়।

৪। মাটি প্রদুষনের পরে সেই মাটি থেকে ধূলিকণা বায়ুতে মিশে বায়ুতে মিশে বায়ু প্রদুষণ ঘটায়।

৫। মাটি প্রদুষনের ফলে ভু – গর্ভের জল দূষিত হয়।

৬। মাটি প্রদুষনের ফলে মাটিতে থাকা উপকারী অণুজীব সমূহের মৃত্যু ঘটে এবং এর ফলে মাটির নাইট্রোজেন স্থবির করণ হ্রাস পায় যার ফলে পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতন্ত্রে ও মারাত্মক ক্ষতি হয়। এবং

৭। মাটিতে জমে থাকা ময়লার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে যারা বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। জিয়ারডিয়াসিস, ধনুষ্টংকার ইত্যাদির মতো রোগ সংক্রামিত হয় ভূমি প্রদুষনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন ১২। ভূমি প্রদুষণ নিয়ন্ত্রনের উপায়গুলি বর্ণনা কর।

উত্তরঃ নিন্মলিখিত উপায়সমূহ অবলম্বন করে ভূমি প্রদুষণ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১। বিভিন্ন উদ্যোগের বর্জ্য পদার্থ সমূহকে মাটিতে ফেলে দেওয়ার আগে সেগুলোকে ভাল করে পরিশোধন করা।

২। গোটা আবর্জনাসমূহকে উৎসেই জৈব – বিয়োজনীয় ( biodegradable) – এবং জৈব – অবিয়োজনীয় (non biodegradable) হিসাবে ভাগ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেগুলির বিয়োজন ঘটানো।

৩। রাসায়নিক সার এবং রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈবিক সার এবং জৈবিক কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।

৪। মাটিতে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সমূহ দুর করার জন্য জৈব পরিচর্যা পদ্ধতি অবলম্বন করা ।

৫। বিভিন্ন গোটা আবর্জনাজাত বস্তুসমূহ যেমন প্লাষ্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদিকে পুনরাবর্তন করা।

৬। আম্লিক এবং ক্ষারীয় বর্জ্যকে মাটিতে পুতার পূর্বে এইগুলিকে প্রশমিত করা।

৭। ভূমি প্রদুষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা।

৮। মানুষের মধ্যে ভূমি প্রদুষণ সমন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এবং

৯। বেশী করে গাছ লাগানো।

প্রশ্ন ১৩। জলে থাকা আর্সেনিক মানব দেহে কি প্রভাব ফেলে ব্যাখ্যা করে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ আর্সেনিক মানব দেহের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকারক পদার্থ হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে ক্রমাগত আর্সেনিকের সংস্পর্শে থাকলে চামড়ার কর্কট রোগ হয় এবং শ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করলে ফুসফুসের ক্যানসার হয়। পানীয় জলে অত্যাধিক পরিমাণে থাকা আর্সেনিক নিয়মিতভাবে শরীরে প্রবেশ করলে স্বাস্থের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিক যুক্ত জল ব্যবহারের ফলে মানুষের চামড়ার খুজলি এবং চামড়ার ক্যানসার সৃষ্টি হয়। আর্সেনিক প্রভাবে দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ – প্রত্যঙ্গও ক্যানসার হতে পারে। তাছাড়া আর্সেনিক মিশ্রিত জল ব্যবহার করলে রক্ত সঞ্চালন জনিত বিভিন্ন রোগ, হৃদরোগ এবং বহুমুত্র রোগের সৃষ্টি হয়। আর্সেনিকের উপস্থিতি বিভিন্ন জলের উৎসে ভিন্ন ভিন্ন হয়। ভু – গর্ভের জলে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক থাকে ফলে এই জলকে আর্সেনিক মুক্ত করে পান করা উচিত নতুবা এই জল পান মানুষের স্বাস্থের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

প্রশ্ন ১৪। বায়ু প্রদুষনের মানবসৃষ্ট যে কোন দুটি উৎস ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বায়ু প্রদুষণের বিভিন্ন উৎসের মধ্যে প্রধান দুটো উৎস হল – 

১। যান বাহন থেকে নির্গত ধোয়া। এবং

২। বনাঞ্চল ধবংস।

১। যান বাহন থেকে নির্গত ধোয়া: যানবাহন সৃষ্টি প্রদুষণ হচ্ছে সবচেয়ে বিপদজ্জনক বায়ু প্রদুষণ। কঠোর আইন প্রবর্তন, নতুন মান নির্ণয় ইন্ধনের গুণাগুণ পরিবর্তন করা, যান বাহনের উন্নত মডেল ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্বেও যানবাহনের প্রদুষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানবাহন থেকে নির্গত প্রধান প্রদুষক সমূহ হচ্ছে – কার্বন – মনোক্সাইড (CO), হাইড্রোকার্বন (HC) নাইট্রোজেনর বিভিন্ন অক্সাইড (NOₓ) এবং বায়ুতে ভেসে থাকা কানিকাসমুহ। যান বাহন থেকে নির্গত ধোয়ার দ্বারা প্রদুষণ হ্রাস করতে হলে ইন্ধনের গুণগত মান উন্নত করা এবং মোটর গাড়ীর ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা আবশ্যক।

২। বনাঞ্চল ধবংস: বনাঞ্চল সমূহ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সম্পদ। একটি সবুজ আবরণে পৃথিবীকে ঢেকে থাকা এই অরণ্য সমূহ শুধু অসংখ্য সামগ্রী উৎপাদন করে না, জীবনের জন্য অতি গুরু্বপূর্ণ কিছু কাজেও করে থাকে । জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বর্ধিত হারে খাদ্য এবং বাসস্থানের প্রয়োজনে প্রচুর হারে বনাঞ্চল ধবংস করা হচ্ছে যার ফলে বায়ুতে কার্বন – ডাই – অক্সাইড এবং অন্যান্য সবুজ গৃহ গ্যাসের বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পৃথিবীর উষ্ণতা দিনে দিনে বৃদ্ধি করাচ্ছে।

প্রশ্ন ১৫। ওজোন স্তরের ক্ষয় এর প্রতিরোধী ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি টিকা লেখো।

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের স্ট্রেটোস্ফিয়ারে ওজন গ্যাসের স্তরকে ওজন স্তর বলা হয়। এই ওজন স্তর সূর্যের রশ্মিতে থাকা অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে আমাদের এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে। বায়ুতে ক্ষতিকারক গ্যাসীয় পদার্থের উৎপন্ন হওয়ার ফলে এই ওজন স্তর ক্রমান্বয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে । আশির দশকের প্রথম ভাগে বিজ্ঞানীরা এন্টার্কটিকায় ওজোন স্তরে একটি বড় ফুটো দেখা গেছে বলে জানান। এন্টার্কটিকায় ওজোন গ্যাস ত্রিশ শতাংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। এই ধরনের ফুটো উওর গোলার্ধেও আবিষ্কৃত হয়েছে। নাসার প্রাক সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে উওর গোলার্ধে ওজনের ত্রিশ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রতি শতাংশ ওজনের হ্রাস পাওয়ার জন্য অতি বেগুনি রশ্মি শরীরে পড়ার জন্য মানুষের কর্কট রোগের পরিমাণ  ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।ওজন স্তর ক্ষয়ের প্রধান কারণ হল ১৯৩০ সনে আবিষ্কৃত ক্লরোফ্লোরো কার্বনের ব্যবহার। এই ক্লরোফ্লোরো কার্বনের (CFC) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১৯৮৭ সনে মন্ট্রিয়েলে অনুষ্ঠিত একটি সম্মিলনে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যা মন্ট্রিয়েল প্রটোকল নামে খ্যাত তাতে ৩৪টি দেশ স্বাক্ষর করে এবং ২০০০ সালে CFC এর ব্যবহার ৫০ শতাংশ হ্রাস সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।

আজ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় কাজ হল ওজোন স্তর ধবংসকারী সি এফ সি গ্যাসের উৎপাদন এবং ব্যবহার যথেষ্ট কমিয়ে আনা। বিজ্ঞানীদের এই গ্যাসের বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে। বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ভয়াবহ প্রভাব সমূহের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দিনটি আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

প্রশ্ন ১৬ । বিভিন্ন প্রকারের বায়ু প্রদুষকগুলি বর্ণনা করো।

উত্তরঃ বিভিন্ন প্রকারের বায়ু প্রদুষক এবং তাদের উৎস নিন্মে আলোচনা করা হল – 

১। কয়লা এবং তেল দহনের ফলে বায়ু প্রদুষক সালফার – ডাই – অক্সাইড উৎপন্ন হয়।

২। কয়লার দহন, যান বাহনের ধোয়া, নিন্ম মানের গ্যাস স্টোভ, কেরোসিনের হিটার, লাকড়ির চুলো ইত্যাদি থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ু প্রদুষক সৃষ্টি হয়।

৩। জ্বালানো কয়লা, গ্যাসোলিন, মোটরের ধুলি – ধোয়া, নিন্মমানের চুল্লী,গ্যাস স্টোভ, কেরোসিনের হিটার, জ্বালানো কাঠ ইত্যাদির ব্যবহারের সময় করবেন – মনোক্সাইড নামক বায়ু প্রদূষকটির সৃষ্টি হয়।

৪। ইন্সিনিরেটর এবং প্রত্যেক কারখানার উৎপাদক প্রক্রিয়ার এস পি এম ছাই কালো ধোঁয়া ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।

৫। তেল শোধনাগার, রাসায়নিক উদ্যোগ এবং বিটুমিনাস ইন্ধন জ্বালালে হাইড্রোজেন সালফাইড উৎপন্ন হয়।

৬। বিস্ফোরণ পদার্থ বিস্ফোরণে, রং করার কার্যে এবং সার কারখানায় এমনিয়া প্রদুষকটির  সৃষ্টি হয়।

৭। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের কালে, রং করার কার্যে ফসজিন বা কার্বনিল ক্লোরাইড নামক প্রদুষকের সৃষ্টি হয়। এবং

৮। তেল, চর্বি বা গ্লাইকোলের তাপ বিয়োজনের ফলে এলদিহাইড সৃষ্টি হয়। এই বায়ু প্রদুষকের জন্য শ্বাসনলীতে জ্বালাপোড়া অনুভব হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top