Class 11 Advanced Bengali Chapter 15 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)

Class 11 Advanced Bengali Chapter 15 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) Question Answer | AHSEC Class 11 Advanced Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Assam Board Class 11 Advanced Bengali Chapter 15 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) Notes and select needs one.

Class 11 Advanced Bengali Chapter 15 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 11 Advanced Bengali Chapter 15 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 11 Advanced Bengali Chapter 15 বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) Solutions for All Subjects, You can practice these here.

টীকা লেখো

(১) চর্যাপদ: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। মহামোহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে পুঁথিটি আবিষ্কার করেন ১৯০৭ সালে। পরে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় “বৌদ্ধ গান ও দোহা” এই নামে প্রকাশিত হয়। চর্যাপদের প্রকৃত নাম চর্যাগীতিকোষ। এতে পঞ্চাশটি পদের মধ্যে সাড়ে ছেচল্লিশটি পদের সন্ধান পাওয়া যায়। চর্যাপদের পদকর্তা হল চব্বিশজন। পুঁথিটি তালপাতায় লেখা ছিল। চর্যাপদের ভাষা পুরোভাবে স্পষ্ট বুঝা যায়না যেভাবে সন্ধ্যায় পুরোভাবে স্পষ্ট কিছু দেখা যায়না তাই চর্যার ভাষাকে ‘সন্ধ্যাভাষা’ বলা হয়। আবার কোনো-কোনো ভাষাতাত্ত্বিক চর্যার ভাষাকে ‘আলো আঁধারি’ ভাষা বলে অভিহিত করেছেন। চর্যাপদে বজ্রযান ও সহজযানের গূঢ় ধর্ম, সাধন প্রণালী ও দর্শন তত্ত্ব নানা ধরণের রূপক, প্রতীক ও চিত্রকল্পের দ্বারা আভাস ইঙ্গিতে ব্যঞ্জিত হয়েছে।

(২) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন: প্ৰাক চৈতন্যযুগে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাব্য বড় চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। কাব্যটি আদি রসাত্মক কাব্য । কাব্যটি বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ মহাশয় ১৯০৯ সালে বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্ৰাম থেকে আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ মধ্যযুগের বাংলা ভাষার নিদর্শন। প্রাপ্ত পুঁথির মধ্যে একখানি চিরকূট পাওয়া গেছে যাতে লেখা ছিল ‘শ্রীকৃষ্ণ সন্দর্ভ’ তা থেকেই কাব্যটির নামকরণ করা হয় শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ । এই কাব্যে মোট তেরোটি খণ্ড আছে। যেমন – জন্মখণ্ড, তাম্বুলখণ্ড, দানখণ্ড, ভারখণ্ড প্রভৃতি থেকে রাধাবিরহ পর্যন্ত এর কাহিনি বিস্তারিত। ভূভার হরণের জন্য গোলকের বিষ্ণুর কৃষ্ণরূপে এবং লক্ষ্মী রাধারূপে জন্ম গ্রহণ এবং তারপর তাঁদের লীলাকথাই এই কাব্যের প্রধান কাহিনি। কাব্যের আরেকটি চরিত্র বড়াই। বড়াইবুড়ীর মুখে রাধার পরিচয় শুনেই কৃষ্ণ লক্ষ্মীর স্বরূপ চিনতে পারেন। কংসবধের জন্য কৃষ্ণ রাধাকে ফেলে মথুরায় চলে গেলে রাধা অত্যন্ত দুঃখে বিলাপ করতে লাগলেন। সেই বিলাপের মাঝখানে কাব্যটির শেষের কয়েকটা পৃষ্টা নষ্ট হয়েছে। কাব্যটির রচয়িতা হলেন বড় চণ্ডীদাস।

(৩) গীতগোবিন্দ: সেনযুগে বিশেষতঃ লক্ষ্মণসেনের সভায় সংস্কৃত সাহিত্যের বিশেষ চর্চা হয়েছিল – জয়দেব গোষ্ঠী তার প্রমাণ। লক্ষ্মণসেনের সভাকবি জয়দেব তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের জন্য সারা ভারতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। বাধাকৃষ্ণের লীলাকথা নিয়ে আদিরসের আধারে রচিত এই ভক্তিকাব্য ভারতের ভক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রদ্ধার সংগে স্বীকৃত হয়েছে। পরবর্তীকালে বৈষ্ণবপদ সাহিত্যে জয়দেবের গীতগোবিন্দের অপরিসীম প্রভাব দেখা যায়। অপূর্ব বাণীমূর্তি, বাকরীতি, রূপকল্প, আবেগের তীব্রতা, ভক্তির সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা তার এই কাব্যে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যা বাংলা, মৈথিলী, ওড়িয়া ও অসমীয়া সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। রাধা-কৃষ্ণলীলা বিষয়ক গীতগোবিন্দ গ্রন্থটির উপাদান শুধু পুরাণ থেকে সংগৃহীত হয়নি গ্রামীন আদর্শও যথেষ্ট আছে। কাব্যের হন্দে কোথাও কোথাও প্রাকৃতের প্রভাব আছে।

(৪) চৈতন্যভাগবত: চৈতন্যজীবনী কাব্যগুলির মধ্যে বৃন্দাবনদাসের ‘চৈতন্যভাগবত’ সর্বপেক্ষা জনপ্রিয়। বাংলাদেশে চৈতন্যদেব সম্বন্ধে যে সমস্ত কাহিনি ও তথ্য প্রচারিত হয়েছে তার অধিকাংশই ‘চৈতন্যভাগবত’ থেকে গৃহীত। বৃন্দাবন দাস সর্বপ্রথম ‘চৈতন্যমঙ্গল’ নাম দিয়ে চৈতন্যজীবনী কাব্য লিখেছিলেন। কিন্তু মায়ের নির্দেশে তিনি নাম পাল্টে ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’ নাম রাখেন। চৈতন্যভাগবত তিনটি খণ্ডে বিন্যস্ত – আদিখণ্ড (পনের অধ্যায়), মধ্যখণ্ড (ছাব্বিশ অধ্যায়), অন্ত্যখণ্ড (দশ অধ্যায়)। চৈতন্যদেবের শেষ পর্যায়ের জীবনকথা অন্ত্যখণ্ডে বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হয়নি। চৈতন্যভাগবতে চৈতন্যের বাল্য ও কৈশোরলীলা বর্ণনায় যে ধরনের বাস্তবতা, সরলতা ও লোকচরিত্র জ্ঞানের পরিচয় ফুটে ওঠেছে আর কোনো চৈতন্যজীবনী কাব্যে পাওয়া যায়না। কাব্যে বৃন্দাবন দাস শ্রীচৈতন্যের মানবমূর্তি ও ভগবত মূর্তির সমান অনুপাত রক্ষা করেছেন।

(৫) শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত: কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ শুধু মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নয়, সমগ্র বাংলা সাহিত্যেরই একখানি শ্রেষ্ঠ জীবনীকাব্য। চৈতন্যের জীবনীর সঙ্গে সঙ্গে সুগভীর পাণ্ডিত্য, দার্শনিকতা, ভক্তিশাস্ত্রে অতন্দ্র নিষ্ঠার প্রতিফলন রয়েছে এই কাব্যে। গৌড়, উৎকল, বৃন্দাবন, দক্ষিণভারত এই সমস্ত অঞ্চলের ভক্তিধর্ম ও দার্শনিকতাকে কৃষ্ণদাস অত্যন্ত দক্ষতায় কাব্যে তুলে ধরেছেন। এই কাব্যটিও তিনটি খণ্ডে বিভক্ত। আদি, মধ্য ও অন্ত্যখণ্ডে মোট বাষট্টি অধ্যায় আছে। বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি অন্ত্যখণ্ডটি বিস্তারিত আকারে বর্ণনা করার ইচ্ছা থেকেই আদি ও মধ্যখণ্ডে কাহিনিকে শুধু স্পর্শ করে গেছেন। চৈতন্যজীবনের গভীর তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও পরিণাম আর তার সঙ্গে ভক্তিশাস্ত্র ও গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের তত্ত্বকথার পুস্খানুপুঙ্খ বর্ণনা রয়েছে এই কাব্যে। এছাড়াও কাব্যে রয়েছে বৈষ্ণব রস সাধনা, রাধাকৃষ্ণের যুগলতত্ত্ব, সখীসাধনা প্রভৃতি।

(৬) শ্রীকৃষ্ণবিজয়: মধ্যযুগে মালাধর বসু শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের অনুবাদ করেন। মালাধর বসু ভাগবতের দশম, একাদশ স্কন্দের অনুবাদ করে এর নাম দেন ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’। ১৪৭৩-১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তিনি এই কাব্যটি রচনা করেন। এই গ্রন্থটি গোবিন্দবিজয় ও ‘গোবিন্দমঙ্গল’ নামেও পরিচিত ছিল। কৃষ্ণের জন্ম থেকে দ্বারকালীলা পর্যন্ত এবং কৃষ্ণের তনুত্যাগ ও যদুবংশ ধ্বংস – এই ছিল গ্রন্থের মূল ঘটনা। কৃষ্ণের আলোচনায় বর্ণিত হয়েছে নানা তত্ত্বকথা ও ধর্মতত্ত্ব। শ্রীকৃষ্ণ বিজয়ে কৃষ্ণকথা বাঙালী জীবন ও সংস্কৃতির অনুকূলে বর্ণিত হয়েছে। মালাধর কৃষ্ণচরিত্র রচনায় ভাগবতের হুবহু আদর্শ গ্রহণ করায় তাঁর গ্রন্থে তথাকথিত ইতিহাস ও সমাজের মানসিকতা পাওয়া যায়না।

(৭) রামায়ণ: বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণের অনুবাদ করেছিলেন অনেক কবি। বাল্মীকির রামায়ণ এক বিশাল গ্রন্থ। সপ্তখণ্ডে বিভক্ত এই গ্রন্থ (বালকাণ্ড, অযোধ্যাখণ্ড, অরণ্যখণ্ড, কিস্কিন্ধ্যাকাও, সুন্দরকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড)। ২৪০০০ শ্লোকে রচিত এই মহাকাব্য হয়ে ওঠেছে ভারতাত্মার প্রতীক। রামায়ণের শ্রেষ্ঠ বাংলা অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা। তাঁর অনূদিত গ্রন্থ ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ নামে খ্যাত। রামায়ণের রাম, সীতা, লক্ষ্মণ বাঙালী ঘরের প্রতিনিধিরূপে ফুটে উঠেছে তার কাব্যে।বাল্মীকি রামায়ণে রামচন্দ্র ক্ষত্রিয়বীর ও দ্রাবিড়রাজ রাক্ষস রাবণের বিরোধ অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।

(৮) মহাভারত: মহাভারতে একটি বিশালযুগের সমাজ ও জীবনাদর্শ অতি উজ্জলবর্ণে চিত্রিত করেছেন বেদব্যাস। পঞ্চপাণ্ডবের কীর্তিকথা, কৃষ্ণের মহিমা, কুরুক্ষেত্রে ধর্মযুদ্ধে দুর্যোধনাদি শতভ্রাতার বিনাশ, পরিশেষে পাণ্ডবদের স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা এই মহাকাব্যের মূল বিষয়। কাহিনি ও তত্ত্বকথার যোগসূত্র লক্ষ্য করার মতো। মহাভারতের প্রথম অনুবাদক কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী। কাশীরাম দাসও মহাকাব্যের বাংলা অনুবাদ করেন, তাঁকেই মহাভারতের শ্রেষ্ঠ বাংলা অনুবাদক বলা হয়। আদি, সভা, বন ও বিরাটের কিছু অংশ অনুবাদ করেন তিনি। কাশীরাম দাসের মহাভারত মূল মহাকাব্যের আক্ষরিক অনুবাদ নয়, ভাবানুবাদ।

(৯) বড়ু চণ্ডীদাস: বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্ববল্লভ বাঁকুড়া জেলার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাব্যটি আবিষ্কার করেন। কাব্যটির রচয়িতার নাম বড় চণ্ডীদাস। বড়ু চণ্ডীদাস শাক্তদেবী বাশুলীর সেবক ছিলেন। জয়দেবের গীতগোবিন্দকে শিরোধার্য করে রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক গ্রাম্যগাল গল্পের ওপর ভিত্তি করে বড়ু চণ্ডীদাস কাব্যটি রচনা করেন। বড়ু চণ্ডীদাসের এই কাব্যটি আদিরসাত্মক কাব্য। তেরোটি খণ্ডেই তিনি দক্ষতা দেখিয়েছেন।

(১০) বিদ্যাপতি: বিদ্যাপতি মিথিলারাজ শিবসিংহের সুহৃদ ছিলেন। দ্বার ভাঙ্গার মধুবণী মহকুমার অন্তর্গত বিসফী গ্ৰামে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষভাগে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণবংশে বিদ্যাপতির জন্ম হয় এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর তিরোধান ঘটে। বিদ্যাপতি শুধু কবিমাত্র ছিলেন না পাণ্ডিত্যে তিনি সারা মিথিলায় শ্রদ্ধান্বিত স্থান লাভ করেছিলেন। তিনি একচ্ছত্র বাংলা পংক্তি রচনা করেননি কিন্তু বাঙালীর হৃদয় মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত আছেন। তিনি লিখেছিলেন মাতৃভাষা মৈথিলিতে। ‘গঙ্গাবাক্যাবলী’, কীর্তিলতা, ‘দানবাক্যাবলী’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। কবি জয়দেবের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হওয়ায় তাঁকে ‘অবিনব জয়দেব’ বলা হয়।

(১১) কবি জয়দেব: লক্ষ্মণসেনের সভা কবি জয়দেব তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের জন্য সারা ভারতে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তাঁর রচনা বাংলা, মৈথিলী, অসমীয়া, ওড়িয়া ভাষাকে প্রভাবিত করেছে। শ্রীচৈতন্যের পূর্বে বাংলাদেশে যে ধরনের বৈষ্ণবভাব প্রচলিত ছিল জয়দেব তারই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। জয়দেবের কয়েকজন কবিবন্ধু ছিলেন। এঁরা হলেন- শরন, উমাপতি, ধোয়ী, গোবর্ধন আচার্য। এঁরা জয়দেবের সঙ্গে লক্ষ্মণসেনের সভা অলঙ্কৃত করেছিলেন। রাধা-কৃষ্ণের লীলাকথা তিনি আদিরসের আধারে বর্ণনা করেছেন। লক্ষ্মণসেন তাঁকে ‘কবি রত্নাকর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

(১২) রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র: রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। ১৭০৫-১১ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তাঁর জন্ম হয় এবং ৪৮ বৎসর বয়সে ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধের ঠিক তিন বৎসর পরে বহুমূত্র রোগে তাঁর মৃত্যু হয়। কিশোর বয়সে তিনি সত্যপীরের মাহাত্ম্য বিষয়ক দুটি অতিক্ষুদ্র পাঁচালী রচনা করেন। তিনি হাওড়া-হুগলী জেলার অন্তর্গত ভুরশুট পরগণার অন্তর্গত পেড়ো গ্রামে জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জমিদার নরেন্দ্র রায়।

(১৩) বিজয়গুপ্ত: বিজয়গুপ্ত মনসামঙ্গল ধারার পূর্ববঙ্গের কবি। বরিশাল জেলার আধুনিক গৈলা গ্রামে বিজয়গুপ্তের জন্ম হয়। পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সনাতন, জননী রুক্মিণী। তিনি নিজের গ্রামে মনসার মন্দির ও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বরিশাল থেকে বাংলা ১৩০৩ সালে সর্বপ্রথম বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মপুরাণ’ প্রকাশিত হয়।

(১৪) নারায়ণ দেব: মনসামঙ্গল কাব্যধারার পূর্ববঙ্গের কবি নারায়ণ দেব। তাঁর কাব্যের নাম ‘পদ্মপুরাণ’। একমাত্র তাঁর কাব্যই বাংলা ও অসমে প্রচার লাভ করে। তাঁর পূর্বপুরুষের আদি নিবাস রাঢ়ভূমি। কবি একদা শ্রীহট্টে ছিলেন। কবি পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্তমান ছিলেন। তিনি একটু পুরাণ ঘেষা কবি ছিলেন। তাই তিনি লৌকিক মনসাকাহিনির চেয়ে পৌরাণিক দেব-দেবীর লীলার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। চরিত্রসৃষ্টি, রসবৈচিত্র্য ও কাহিনিগ্রন্থনে নারায়ণদেব, বিজয়গুপ্ত ও বিপ্রদাসের চেয়ে অনেক বেশি উঁচুতে। নারায়ণদেব ‘সুকবি বল্লভ’ নামে খ্যাত।

(১৫) কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ: মনসামঙ্গল কাব্যধারার রাঢ় অঞ্চলের কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ। ছাপাখানার যুগে তাঁর কাব্যই প্রথম মুদ্রণের সৌভাগ্য লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কাব্য ‘ক্ষেমানন্দী’ নামে একদা প্রচলিত ছিল। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর কাব্য প্রথম মুদ্রিত হয়। কাব্যের আত্মপরিচয় পর্বে তিনি বলেছেন মনসাদেবী মুচিনীর বেশে তাঁকে মনসামঙ্গল কাব্যরচনার আদেশ দেন। চাঁদ সদাগরের বাণিজ্যপথ বর্ণনায় তিনি যে ভৌগোলিক অঞ্চলের পরিচয় দিয়েছেন তাতে বাস্তবতার ছাপ স্পষ্ট। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য ছাড়াও মানভূম থেকে দেবনগরী হরফে লেখা ক্ষেমানন্দের ভনিতায় আঞ্চলিক শব্দে পূর্ণ একটি অতিক্ষুদ্র মনসামঙ্গল কাব্য পাওয়া যায়। মূলকাব্যের মনসার রুষ্ট, ক্ষুব্ধ, বিষাক্ত চরিত্রটিও আমাদের নজর কাড়ে।

(১৬) মালাধর বসু: মধ্যযুগে মালাধর বসু ‘শ্রীমদ্ভাগবত’’ পুরাণের অনুবাদ করেন। তিনি এই পুরাণের দশম-একাদশ স্কন্দের কাহিনি বর্ণিত করেছেন। বর্ধমানের প্রসিদ্ধ কুলীনগ্রামের বিখ্যাত কায়স্থ বংশে মালাধর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভাগবতের অনুবাদ করে যে গ্রন্থ রচনা করেন তা ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ বলে পরিচিত। মালাধরের পিতার নাম ভগীরথ, মাতার নাম ইন্দুমতী। গৌড়েশ্বর তাঁকে ‘গুণরাজ খাঁ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর ছেলের নাম সত্যরাজ খাঁ। তাঁর পৌত্র রামানন্দ বসু চৈতন্যের ভক্ত ছিলেন। তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটি ১৩৯৫- ১৪০২ শকাব্দের মধ্যে রচিত হয়। তাঁর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটির প্রশংসা চৈতন্যদেব‌ও করেছেন। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য মালাধর বৈষ্ণব সমাজেও পূজিত হন।

(১৭) কৃত্তিবাস ওঝা: বাল্মীকি রামায়ণের বাংলাতে অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘রামায়ণ পাঁচালী’। তাঁর এই অসাধারণ কবিকৃতিত্বের জন্য মাইকেল মধুসূদন বলেছেন, “ এ বঙ্গের অলঙ্কার”। কবির পূর্বপুরুষ নরসিংহ ওঝা (উপাধ্যায়) পূর্ববঙ্গ নিবাসী ছিলেন। কিন্তু সে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তিনি পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাতীরে ফুলিয়া গ্রামে বসবাস করেন। এর বংশধর মুরারি ওঝা, তাঁর পুত্র বনমালী; আর বনমালীর পুত্র হলেন কৃত্তিবাস ওঝা। কৃত্তিবাসের ছয় ভাই, একবোন। মাঘমাসের শেষদিকে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে রবিবারে কৃত্তিবাসের জন্ম হয়। বারো বছর বয়সে পদ্মাপারে বিদ্যার্জনের জন্য যান। তারপর সেখানে পাণ্ডিত্যগ্রহণের পর গৌড়েশ্বর সভায় উপস্থিত হন। রাজপ্রদ‌ও গৌরব নিয়ে ফুলিয়া গ্রামে ফিরে আসেন। সেখানে বাল্মীকি রামায়ণ অবলম্বনে ‘শ্রীরাম পাঁচালী’ রচনা করেন।

(১৮) বৃন্দাবন দাস: চৈতন্যজীবনীকারদের মধ্যে বৃন্দাবন দাস সবচেয়ে জনপ্রিয়। বৃন্দাবন দাস চৈতন্যভক্ত শ্রীবাসের ভ্রাতুস্কন্যা নারায়ণীর পুত্র। শ্রীচৈতন্যের আশীর্বাদে তার জন্ম হয়েছিল – এই ধরনের কাহিনি প্রচলিত আছে। প্রায় ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে নারায়ণীর গর্ভে বৃন্দাবন দাসের জন্ম হয়। কবি অল্পবয়সে নিত্যানন্দের শিষ্য হন। বৃন্দাবন দাস ‘চৈতন্যমঙ্গল’ নামে প্রথম চৈতন্যজীবনী কাব্য লিখেছেন। কিন্তু মায়ের আদেশে কাব্যের নাম পাল্টে ‘চৈতন্যভাগবত’ রাখেন। বৃন্দাবন দাস তিনখণ্ডে এই কাব্যটির রচনা করেন। এই জীবনীকাব্য রচনার জন্য বৃন্দাবন দাস বৈষ্ণবসমাজে ‘চৈতন্যলীলার ব্যাস’ বলে সম্মানিত হয়েছেন।

(১৯) ধর্মমঙ্গল কাব্য: ধর্মঠাকুরকে কেন্দ্র করে ধর্মমঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ বাংলার বাইরে ধর্মমঙ্গল কাব্যের সন্ধান পাওয়া যায়না। সমস্ত ধর্মমঙ্গল কাব্যে দুটি কাহিনি দেখা যায়। 

(১) রাজা হরিশচন্দ্রের গল্প। 

(২) লাউসেনের গল্প। 

ধর্মমঙ্গল কাব্যে লাউসেনের বীরত্বের কাহিনিই অধিকতর প্রাধান্য লাভ করেছে। লাউসেনের গল্পে পালযুগের কিছু-কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার প্রভাব বয়েছে । ময়ূরভট্ট সমস্ত ধর্মমঙ্গল কাব্যের সবচেয়ে আদিকবি। এছাড়া রূপরাম চক্রবর্তী, রামদাস সীতারাম দাস, যদনাথ, শ্যাম পণ্ডিত প্রমখ কবিরা ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা করেন । রূপরাম চক্রবর্তীই প্রথম লাউসেনের কাহিনিকে ছড়া, পাঁচালী, ও ব্রতকথার সংকীর্ণ সীমা উদ্ধার করে মঙ্গলকাব্যের আকার দিয়েছেন।

(২০) মনসামঙ্গল: ‘মনসামঙ্গল’ বা ‘পদ্মপুরাণ’ কাব্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম মনসা, কেতকা, পদ্মাবতী। বাংলায় মনসামঙ্গল কাব্যের তিনটি ধারা দেখা যায়-

(১) রাঢ়ের ধারা (বিপ্রদাস, কেতকাদাস, সীতারাম দাস, রসিক মিশ্র)

(২) পূর্ববঙ্গের ধারা (নারায়ণদেব, বিজয়গুপ্ত)

(৩) উত্তরবঙ্গ ও কামরূপের ধারা (তন্ত্রবিভূত, জগজ্জীবন ঘোষাল)

প্রতিটি ধারা মনসামঙ্গলেই বর্ণিত হয়েছে মর্ত্যধামে মনসার পূজা প্রচারের জন্য মনসার নানারূপ অভিসন্ধি বর্ণিত হয়েছে। মনসাও চাঁদসদাগরের বিরোধ সবকবিরাই অত্যন্ত দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। স্বর্গের দেব-দেবী ঊষা-অনিরুদ্ধ দেবীর অভিশাপে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করে মনসার পূজা প্রচারে সাহায্য করল। তারপর শাপের অবসানে স্বর্গের দেব-দেবী স্বর্গে ফিরে গেলেন। এই হল মনসামঙ্গলের কাহিনি।

(২১) অন্নদামঙ্গল: ভারতচন্দ্রের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য ‘অন্নদামঙ্গল’। অন্নদামঙ্গল পুরোপুরি পৌরাণিক ছাঁদের মঙ্গলকাব্য হলেও এতে বাস্তব বাংলাদেশের সমাজ ও মানুষের ছবি চমৎকার ফুটেছে। কাব্যের প্রারম্ভে ও পরিশেষে বাংলার ঐতিহাসিক পরিবেশের চিত্র আছে। কাব্যের শুরুতে আলিবর্দি কর্তৃক ভারতচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষক কৃষ্ণচন্দ্রকে কারাকক্ষে নিক্ষেপ এবং কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণাপূজা করে বিপদ থেকে উদ্ধারের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। শঙ্কর উমার বিবাহ প্রসঙ্গ, ব্যাস প্রসঙ্গ, প্রভৃতি বর্ণনায় দেবতাকে অনেকটাই মানব করে তুলেছে। অন্নপূর্ণার কাশীর মহিমা ক্ষুন্ন করে ব্যাসদেব কর্তৃক নতুন কাশী নির্মাণ করার প্রসঙ্গে কবি চমৎকার রসিকতার সঙ্গে বিবরণ দিয়েছেন। কাব্যের কাহিনি মোট তিনটি অংশে বিভক্ত, শেষ অংশে ভবানন্দের সহায়তায় মানসিংহ যুদ্ধে প্রতাপাদিত্যকে পরাভূত করে খাঁচায় ভরে নিয়ে চলা প্রভৃতির মধ্যে কবির কবিগুণের পরিচয় ফুটে ওঠেছে।

(২২) শিবায়ন: শিব-পার্বতীর গ্রাম্য কাহিনির বিচিত্র মিশ্রণ ঘটেছে ‘শিবায়ন’ কাব্যে। ভোলার নেশাখুরি বর্ণনা, মুখরা স্ত্রীর সংগে হাড়াই ডোমাই’র কলহ, রাগ করে শিবের চাষে মন দেওয়া, বিরহিনী দুর্গার বাগ্‌দিনীর বেশ প্রভৃতি চিত্র ‘শিবায়ন’- কে স্বতন্ত্র করে তুলেছে । ‘শিবায়ন’ কাব্য শাখার সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য। এই কাব্যের প্রথম দুটি পালায় মোটামুটি পৌরাণিক শিবকাহিনি অনুসৃত হলেও চতুর্থ পালার কিছু অংশ শিবের লৌকিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত। রচিত। শাঁখা পাবার জন্য দেবার আভলাষ, মহাদেবের অসামর্থ্যের কথাবলা, ক্রুদ্ধদেবীর পিত্রালয়ে প্রস্থান – এই লৌকিক উল্লেখযোগ্য বিষয়। কাব্যে আরেকটি দিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শিব আদিযুগের কৃষিনির্ভর সমাজের উপাস্য দেবতা। এই কাব্যে দরিদ্রজীবনের বর্ণনায় কবি দক্ষতা দেখিয়েছেন।

(২৩) মীনচেতন: ‘গোরক্ষবিজয়’ ও ‘মীনচেতন’ কাব্যদুটির প্রতিপাদ্য বিষয় এক। যোগী সম্প্রদায়ের আদিপুরুষ নিরঞ্জনের নাভি থেকে মীননাথের জন্ম হয়। কাব্য থেকে জানা যায় মীননাথ ও গোরক্ষনাথ মহাদেবের শিষ্য হন। গোরক্ষনাথ মীননাথকে গুরু বলে বরণ করে নেয়। মীননাথের সাংসারিক মায়ামুগ্ধকর বিড়ম্বিত জীবন থেকে গোরক্ষনাথ দ্বারা উদ্ধারের কথাই বর্ণিত হয়েছে কাব্যে। নানাঘটনা ও কাহিনির মধ্য দিয়ে গোরক্ষনাথের দ্বারা মীননাথের চেতনা ফিরিয়ে আনার কাহিনিই ‘মীনচেতনা’।দেহের উপর আত্মার জয় ঘোষণা করার কথাই মীনচেতন কাব্যের উদ্দেশ্য।

(২৪) গোরক্ষবিজয়: ‘গোরক্ষবিজয়’ নাথ সাহিত্যের একটি রচনা। গোরক্ষনাথ কর্তৃক পথভ্রষ্ট গুরু মীননাথকে উদ্ধার করার কাহিনিকে নিয়ে ‘গোরক্ষবিজয়’, বা ‘গোৰ্খবিজয়’, লেখা হয়েছিল। মুন্সি আবদুল করিমের সম্পাদিত বই হল ‘গোরক্ষবিজয়’। শেখ ফয়জুল্লা গোরক্ষবিজয় কাব্যের প্রকৃত রচনাকার করিম সাহেবের মতে। আবার দীনেশচন্দ্র সেন মনে করতেন, শেখ ফয়জুল্লা মূল রচনাকার নন। এই নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় ভীমসেন, শ্যামদাস এবং ফয়জুল্লা – এই তিনজনই গোরক্ষবিজয় কাব্যে হস্তক্ষেপ করেছেন বলা হয়।

(২৫) গোবিন্দদাস: চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতিতে ছেড়ে দিলে গোবিন্দদাস কবিরাজকে বৈষ্ণব কবির গৌরবজনক আসন দিতে হবে। গোবিন্দদাস বিদ্যাপতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে পদ রচনা করেন। গোবিন্দদাসের শ্রেষ্ঠ পদগুলি ব্রজবুলিতে রচিত। তাঁর পিতা প্রসিদ্ধ চৈতন্যভক্ত চিরঞ্জীব সেন, মাতামহ বিখ্যাত পণ্ডিত ও শাক্ত দামোদর সেন। জীবগোস্বামী তাঁকে অধিক স্নেহ করতেন। গোবিন্দদাসের ঝঙ্কার মুখর ব্রজবুলি, ছন্দের বিস্ময়কর কারুকার্য অন্যান্য পদকারদের থেকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। কোন কোন ভক্ত তাঁকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। গোবিন্দদাস একাধারে কবি ও সাধক। গোবিন্দদাস বৈষ্ণবপদাবলী সাহিত্যের অভিসার ও গৌরচন্দ্রিকা বিষয়ক পদের শ্রেষ্ঠ পদকর্তা।

(২৬) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর কাব্যটি ‘অভয়ামঙ্গল’ নামেও খ্যাত। তাঁর পিতার নাম হৃদয় মিশ্র। বর্ধমানের দামিন্যাগ্রামে তাঁদের অনেককালের বাস। কৃষির দ্বারা তাঁদের সংসার চলত। মুঘল-পাঠানের বিরোধের সময় পরিণত বয়সে তিনি ঘর ছাড়েন। তিনি যখন কাব্য রচনায় হাত দেন তখন মানসিংহ গৌড়বঙ্গের সুবেদার। মুকুন্দরাম তাঁর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যটিকে দুই খণ্ডে রচনা করেন। কালকেতু ও ধনপতির আখ্যান । তিনি বাংলার সমাজ জীবন সম্বন্ধে বহু নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়েছেন এই কাব্যে। ‘চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের’ রচনা করে তিনি ‘কবিকঙ্কণ’ উপাধি লাভ করেন। তিনি স্বপ্নে দেবী চণ্ডীর আদেশ পেয়ে এই কাব্যটি রচনা করেছিলেন।

(২৭) রামপ্রসাদ সেন: রামপ্রসাদ শাক্ত পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের কৃত্রিমকক্ষে মুক্তবায়ু প্রবাহিত করেন। বৈদ্যবংশোদ্ভূত রামপ্রসাদের পূর্বপুরুষ খুব প্রতি ছিলেন। আনুমানিক ১৭২০-২১ খ্রিষ্টাব্দে রামপ্রসাদ হালি শহরে জন্ম গ্রহণ করেন । এবং ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে দেহরক্ষা করেন। রামপ্রসাদের  পিতার দ্বিতীয়পক্ষের সন্তান। রামপ্রসাদের দুই পুত্র ও দুই কন্যা – রামদুলাল, রামমোহন, পরমেশ্বরী, ও জগদীশ্বরী। কবি কলকাতার এক ধনাঢ্য জমিদারের বাড়িতে মুহুরিগিরি করতেন। তিনি অসাধারণ দক্ষতায় বৈষ্ণবপদাবলীর ছাদে উমার বাল্য ও গোষ্ঠ বর্ণনা করেছেন। প্রথমে মুদ্রিত রামপ্রসাদের পদাবলীর সংখ্যা ছিল প্রায় একশো। এখন তা বেড়ে প্রায় তিনশো এ দাঁড়িয়েছে।

(২৮) দৌলত কাজী: সপ্তদশ শতাব্দীতে মুসলমান কবি দৌলতকাজী আবির্ভূত হয়ে ‘লোরচন্দ্রানী’ বা ‘সতীময়না’ রোমান্টিক আখ্যান কাব্য রচনা করেন। চট্টগ্রামের রাউজান থানার অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। অল্প বয়সেই তিনি নানা বিষয়ে বিদ্যা অর্জন করেন। আরাকান রাজ থিরি থু-ধম্মার (শ্রী সুধর্মা) রাজসভায় তিনি পরম সমাদরে গৃহীত হন। আরাকানের সমরসচিব আশরফ খানের পৃষ্ঠপোষকতায় ও উপদেশে ১৬২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে একটি হিন্দি কাব্যের অবলম্বনে ‘লোরচন্দ্রাণী’ বা ‘সতীময়না’ রচনা করেন। কাব্যটির দুই তৃতীয়াংশ রচনার পর তিনি মারা যান। দৌলতকাজী নর-নারীর বিরহ-মিলনের কাহিনি অবলম্বনে, রোমান্টিক আখ্যান লিখেছিলেন। দৌলতকাজী সতীময়নার যেটুকু লিখেছেন তাঁর কাহিনি খুব সংযত এবং পরিচ্ছন্ন।

(২৯) সৈয়দ আলাওল: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন মুসলমান কবিদের মধ্যে সৈয়দ আলাওল সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি ছিলেন। ফতেয়াবাদের শাসনকর্তা মজলিস কুতুবের অমাত্য পুত্র আলাওল চট্টগ্রামে (মতান্তরে ফরিদপুরে) ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে জন্মগ্রহণ করেন। ভাগ্যের বিপর্যয়ে পিতৃহীন কবি মগরাজের সেনাবাহিনীতে জীবিকার জন্য চাকরী নিতে বাধ্য হন। অল্পদিনের মধ্যে আলাওলের আরকানের অভিজাত মুসলমান সমাজে কবিত্ব ও সংগীত পারদর্শিতার প্রচার হয়ে পড়ে। তিনি দৌলত কাজীর ‘লৌরচন্দ্রাণীর’ শেষাংশ রচনা করেন। তিনি ইসলামী কাহিনি ও ধর্মতত্ত্বের নানা গ্রন্থ আরবি ও ফারসি থেকে অনুবাদ করেন। যেমন –

(১) সয়ফুলমুলুক – বদিউজ্জমাল।

(২) সপ্ত (হপ্ত) পয়কর।

(৩) তোহ্ফা

(৪) সেকান্দারনামা।

সৈয়দ আলাওল ‘পদ্মাবতী’ নামক কাব্যের জন্য বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। তিনি সুফী কবি জায়সীর ‘পদুমাবৎ’ অবলম্বনেই ‘পদ্মাবতী’ রচনা করেন।

(৩০) জয়ানন্দ: জয়ানন্দ একজন চৈতন্যজীবনীকার।

আধুনিককালেই তাঁর পুঁথি আবিষ্কৃত হয়। তাঁর কাব্য চৈতন্যের জীবনকথা ও সমসাময়িক বাংলাদেশের কিছু-কিছু উপাদান রয়েছে। বর্ধমানের কাছে আমাইপুরা গ্রামে ব্রাহ্মণবংশে জয়ানন্দের জন্ম হয়। কেউ-কেউ জয়ানন্দকে বৈদ্যবংশোদ্ভূত বলেছেন। কিন্তু একথা ঠিক নয়, কারণ তাঁদের কৌলিক উপাধি ছিল মিশ্র ।সুতরাং ব্রাহ্মণ বংশেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর  পিতার নাম সুবুদ্ধি মিশ্র। শৈশবকালে চৈতন্যের সান্নিধ্যলাভ তাঁর ভাগ্যে জুটেছিল। বাল্যকালে জয়ানন্দের নামে ছিল গুইয়া। চৈতন্যদেবই তার নামকরণ জয়ানন্দ করেন। বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবতের রচনার বেশ কিছুকাল পর জয়ানন্দই এই কাব্য সমাপ্ত করেন। ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি জয়ানন্দের কাব্য রচিত হয়। কাব্যটির নাম ‘চৈতন্যমঙ্গল’।

(৩১) জ্ঞানদাস: বৈষ্ণব পদাবলী সাহত্যের একজন পদকর্তা জ্ঞান দাস। নিত্যানন্দের ভক্তের তালিকায় তাঁর নাম আছে। তিনি নিত্যানন্দের কনিষ্ঠা পত্নী ও বৈষ্ণব সমাজের নেত্রীস্থানীয়া জাহ্নবাদেবীর মন্ত্র শিষ্য ছিলেন। বর্ধমান জেলার কাঁদড়া গ্রামে ব্রাহ্মণবংশে তাঁর জন্ম হয়। খেতুরীতে অনুষ্টিত বৈষ্ণব সম্মেলনে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। কেউ-কেউ মনে করেন তিনি ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে বর্তমান ছিলেন। জ্ঞানদাস ভনিতাযুক্ত প্রায় চারশো পদ প্রচলিত। ব্রজবুলি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই জ্ঞান দাস পদ লিখেছিলেন। ব্রজবুলিতে তিনি বিদ্যাপতিকে এবং বাংলা পদে চণ্ডীদাসকে অনুসরণ করেছিলেন। জ্ঞানদাসের দুটি একটি বাৎসল্যরসের পদ ভারি চমৎকার। তাঁর ‘দানখণ্ড’, ‘নৌকাখণ্ড’ ‘রসোদগার’ প্রভৃতি পর্যায়ের কয়েকটি পদ বৈষ্ণবসাহিত্যে অতুলনীয়।

(৩২) বিপ্রদাস পিপলাই: বিপ্রদাস পিপলাই মনসামঙ্গলধারার রাঢ়বঙ্গের কবি। তাঁর কাব্যের নাম ‘মনসাবিজয়’। তাঁর প্রায় চারটি পুঁথি পাওয়া গেছে ‘মনসাবিজয়’ ছাড়া অন্য কোন কাব্যের সদর্থক পরিচিতি উদ্ধার করতে পারেননি কেউ। বিপ্রদাস বসির হাটের কাছে (চব্বিশ পরগণা) বাদুড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুঁথিগুলি কলকাতার কাছের অঞ্চল থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর পিতার নাম মুকুন্দপণ্ডিত। কবি কাব্যটির রচনা সমাপ্ত করেন ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। কাব্যভাষা প্রাচীন নয়। কোনে-কোনো স্থানে উৎকট আধুনিক বাক্যবিন্যাসও আছে। কাব্যে যেভাবে আধুনিকস্থানের উল্লেখ আছে তাতে এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে সংশয় জাগে। কাব্যে উল্লেখিত কলকাতা ও খড়দেহের উপর নির্ভর করে বলা যায় বিপ্রদাস পিপলাই উত্তর চৈতন্যযুগের কবি। তিনি হাসান-হুসেন পালায় যেভাবে মুসলমান সমাজের বর্ণনা দিয়েছেন তা প্রশংসাযোগ্য। তার হাতে মনসার চরিত্রের রুক্ষ নির্মমতা অন্তর্নিহিত হয়েছে।

(৩৩) বলরাম দাস: বলরাম দাস বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের একজন পদকর্তা। তিনি ব্রজবুলিতে ও বাংলায় পদ রচনা করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল কৃষ্ণনগরের কাছে দোগাছিয়া গ্রামে। তিনি নিত্যানন্দের দ্বারা দীক্ষিত হয়েছিলেন। দুজন বলরাম দাস অর্ধশত বৎসরের ব্যবধানে যে পদ রচনা করেছিলেন তা অস্বীকার করা যায়না। একজন ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে বর্তমান ছিলেন, তাঁর বাৎসল্যলীলার পদ বৈষ্ণব সাহিত্যে অতুলনীয়। সপ্তম শতাব্দীতে আরম্ভ এক বলরাম দাসের আবির্ভাব হয়েছিল। তিনিও কিছু-কিছু পদ লিখেছিলেন। তবে ষোড়শ শতাব্দীর বলরাম‌ই প্রতিভায় শ্রেষ্ঠ। রাধার আক্ষেপানুরাগের বেদনাদীর্ণ পদগুলিকে তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে গৃহীত হতে পারে। এছাড়াও তিনি নীতিমার্গের দিক থেকে যে সমস্ত উপদেশমূলক বৈরাগের পদ লিখেছিলেন সেগুলি নিষ্প্রাণ ও নিরস।

(৩৪) ঘনরাম চক্রবর্তী: অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি হলেন ঘনরাম চক্রবর্তী। তিনি ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি।ঘনরামের নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার কইয়ড় পরগণার কৃষ্ণপুর গ্রামে। ঘনরাম চক্রবর্তীর পিতার নাম গৌরীকান্ত ও মাতা ছিলেন সীতা। ঘনরাম বর্ধমানাধিপতি মহারাজ কীর্তিচন্দ্ররায়ের আদেশে ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর কাব্যের নাম ‘অনাদিমঙ্গল’। কাব্যটি ২৪টি পালায় বিভক্ত এবং কাব্যের শ্লোক সংখ্যা ৯১৪৭। তিনি সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন। শাস্ত্র, পুরাণ ও পৌরাণিক কাব্যে তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল।

(৩৫) ময়ূর ভট: ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যের আদি কবি হলেন ময়ূর ভট্ট। ময়ূর ভট্টের রচিত কাব্যটির নাম হল ‘শ্রীধর্মপুরাণ’। এই কাব্যটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে অধ্যাপক বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। আবার কেউ-কেউ বলেছেন কাব্যাটি আসলে অষ্টাদশ শতকের রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।

(৩৬) কাশীরাম দাস: বাংলা ‘মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস। তিনি বর্ধমানের ইন্দ্রানী পরগণার অন্তর্গত সিঙ্গি গ্রামে, কায়স্থ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কমলাকান্ত। কাশীরামের পদবী ছিল ‘দেব’। কাশীরাম ছিলেন বৈষ্ণবভাবাপন্ন। তাই বৈষ্ণবোচিত বিনয়ে ‘দেবের’ বদলে দাস লিখেছেন। কাশীরাম গুরু অভিরাম মুখুটির আশীর্বাদ ও নির্দেশে ‘মহাভারত’ এর অনুবাদ করেন। তাঁর এই কাব্যের নাম ‘ভারত পাঁচালী’।

(৩৭) রূপরাম চক্রবর্তী: ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবি রূপরাম চক্রবর্তী। তিনি সপ্তদশ শতকে আবির্ভূত হন। তাঁর কাব্যের নাম ‘অনাদিমঙ্গল’। তিনি বর্ধমান জেলার রায়না থানার অন্তর্গত কাইতি শ্রীরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শ্রীরাম চক্রবর্তী। কৈশোরে পিতার মৃত্যুর পর দাদা রামেশ্বরের রুক্ষ মেজাজে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি গৃহত্যাগ করে পাষণ্ডা গ্রামে আশ্রয় নেন।

সেখানে গুরুর সংগে বিবাদ বাধায় গুরুগৃহ হতে বহিস্কৃত হয়ে নবদ্বীপে পলাশবনে উপস্থিত হন। সেখানে ব্যাঘ্ররূপী ধর্মঠাকুর কবিকে দেখা দিয়ে কাব্যরচনার আদেশ দেন। সে সময় এরা লবাহাদুরপুর গ্রামে এসে গণেশরায়ের বাড়িতে থেকে কাব্যটি রচনা করেন।

(৩৮) গোবিন্দ দাসের কড়চা: ‘গোবিন্দ দাসের কড়চা’ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী সংক্রান্ত একটি কাব্যগ্রন্থ। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিপুর নিবাসী জয়গোপাল গোস্বামী এটি প্রকাশ করেন। ‘কড়চা’ শব্দের অর্থ Diary বা দিনলিপি। গোবিন্দদাস চৈতন্য মহাপ্রভুর অনুগামী ছিলেন। দাক্ষিণাত্য ভ্রমণের সময় তিনি মহাপ্রভুর ভ্রমণ সঙ্গী ছিলেন। তিনি তাঁর কাব্যের মধ্যে স্বচক্ষে দেখা শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনের নানা ঘটনা বর্ণনা করিয়েছেন। গ্রন্থ পাঠে জানা যায় যে, গোবিন্দ দাস পত্নীর হাতে লাঞ্ছিত হয়ে গৃহত্যাগ করেন এবং কাটোয়ায় এসে শ্রীচৈতন্যের ভৃত্যপদ গ্রহণ করেন। মহাপ্রভুর দাক্ষিণাত্য ভ্রমণের যে দিনলিপি লিখিয়েছিলেন তা পরবর্তীকালে ‘কড়চা’ নামে অভিহিত হয়। মহাপ্রভু নীলাচল প্রত্যাবর্তন করে গোবিন্দদাসকে শান্তিপুরে অদ্বৈত প্রভুর নিকট প্রেরণ করেন। কড়চার বিবরণের এখানেই সমাপ্তি।

(৩৯) লাউসেনের গল্প: ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনির মধ্যে একটি হল লাউসেনের গল্প। ধর্মের সেবক লাউসেনের অদ্ভুত বীরত্বের কাহিনিকে কেন্দ্র করে ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্য রচিত হয়েছে। লাউসেন রাজা কর্ণসেন ও রাণী রঞ্জাবতীর একমাত্র পুত্র। সে সময়ে ইছাই ঘোষ নামক এক দুর্দান্ত প্রতাপশালী সামন্তের চক্রান্তে কর্ণসেনের ছয়পুত্র নিহত হলে, ধর্মঠাকুরের আশীর্বাদে জন্ম হয় এই লাউসেনের। ছোটবেলায় শত্রুরা বারবার তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলেও প্রতিবারই তিনি ধর্মঠাকুরের কৃপায় রক্ষা পান। দুর্দান্ত সাহস এবং নৈতিক চরিত্র বলে লাউসেন গৌরেশ্বরের সব কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এমনকী তিনি পশ্চিমদিকে সূর্যোদয়ও দেখালেন, চারদিকে তাঁ জয় ঘোষিত হলো। লাউসেন তাঁর দুষ্ট চক্রান্তকারী মামার কুন্ঠ ব্যাধি ধর্মঠাকুরের প্রার্থনা করে মুক্ত করলেন। এরপর পুত্র চিত্রসেনের হাতে রাজ্য দিয়ে তিনি স্বর্গে যাত্রা করেন।

(৪০) রামেশ্বর: বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ‘শিবায়ন’ কাব্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য। মেদিনীপুর জেলার বরদা পরগণার অন্তর্ভুক্ত যদুপুর গ্রামে আনুমানিক ১৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে রামেশ্বরের জন্ম হয়। কিন্তু কোন কারণবশতঃ তিনি নিজ গ্রাম ত্যাগ করে কর্ণগড় গ্রামে যান এবং সেখানে কার জমিদারের পৃষ্ঠপোষকতায় বসবাস করেছিলেন। কবির পৃষ্ঠপোষক ও অনুরাগী রাজা যশোমন্ত সিংহের সময়ে শিবায়ন কাব্য রচিত হয়। গবেষকগণের মতে ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কবির দেহান্ত হয়।

রামেশ্বরের ভনিতায় মোট চারখানি কাব্যের সন্ধান পাওয়া গেছে- 

(১) শিব সংকীর্তন বা শিবায়ন। 

(২) সত্যপীরের ব্রতকথা। 

(৩) শীতলামঙ্গল। এবং 

(৪) সত্যনারায়ণের ব্রতকথা বা আখেটিপালা। 

এর মধ্যে শেষোক্ত দুখানি কবির রচিত নয় বলে অনেকের ধারণা। শিবকীর্তন এবং সত্যপীরের ব্রতকথাই উনার রচনা। ‘সত্যপীরের ব্রতকথা’র দেবতা হিন্দু সমাজের সত্যনারায়ণ পূজা লাভ করে আসছেন। কবি শিবকীর্তন, সত্যনারায়ণে পাঁচালি – যাই লিখুন না কেন বৈষ্ণবধর্মের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুগত্য ছিল।

(৪১) ব্রজবুলি: ব্রজবুলি একটি ভাষার নাম। পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে বাংলা ভাষার কবিতা লেখায় এই ভাষার রূপ বা আদলটি ছিল। বিদ্যাপতি সে সময়ে এক নতুন ধরনের কাব্যভাষা নির্মাণ করেন। প্রাচীন মৈথিলি ভাষার সঙ্গে বাংলার তৎকালীন দেশ ভাষা অবহটয়ের সংমিশ্রণে এই ভাষার জন্ম হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তা ‘ব্রজবুলি ভাষা’ নামে খ্যাত। এটা মোটেও ব্রজের বা বৃন্দাবনের ভাষা নয়, এমন কী মিথিলার ভাষাও নয়। যদিও অনেকে এটাকে ব্রজের বা মিথিলার ভাষ বলে থাকেন। বিদ্যাপতি মিথিলার অধিবাসী বলে তিনি মৈথিলী কবি নামে পরিচিত। যে ভাষায় বিদ্যাপতি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদ গুলো লিখেছিলেন তার নাম ব্রজবুলি।

(৪২) ফুল্লরার বারমাস্যা: ‘চণ্ডীমণ্ডল’ কাব্যের অন্যতম নারী চরিত্র ফুল্লরা। ফুল্লরা কালকেতুর স্ত্রী। ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বর ব্যাধের ঘরে কালকেতু রূমে এবং তার স্ত্রী ছায়া ফুল্লরা নামে মর্তে জন্মগ্রহণ করে। বারমাস্যা বলতে বারমাসের কাহিনি। ফুল্লরা স্বামী কালকেতুর

যথার্থ সহধর্মিনী হয়ে কাব্যে ধরা দিয়েছে। এক বাঙালি সংস্কারাপন্ন নারী হিসেবেই কবি ফুল্লরাকে গড়ে তুলেছেন। দেবী চণ্ডী যখন গোধিকার ছদ্মবেশে কালকেতুর সঙ্গে এসে তাঁর গৃহে প্রবেশ করেন এবং এক সুন্দরী রমণীর বেশ ধারণ করেন, তখন ফুল্লরা তাঁর বারমাসের দুঃখ যন্ত্রণার কথা তুলে ধরে দেবীর কাছে –

“দারুণ দৈবের গতি             কপালে দরিদ্র পতি

                  স্বামী বণিতার সে বিধাতা

স্বামী যে পরমধন                স্বামী বিনে অন্যজন            

                  কেহ নহে সুখ মোক্ষদাতা।”

সুখে-দুঃখে ফুল্লরা স্বামীর সঙ্গে সমান অংশীদার। শত অভাব সত্ত্বেও তার নৈতিক মূল্যবোধ বিন্দু মাত্র নষ্ট হয়নি।

(৪৩) ফকির লালনশাহ্: লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালী; যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ্, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তার জন্মস্থান যশোহর জেলা, বাংলাদেশ, সন ১৭৭২। মৃত্যু ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০, কুষ্টিয়া জেলা, বাংলাদেশ।

তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। তাঁকে ‘বাউল সম্রাট’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

(৪৪) চণ্ডীদাস: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য নানা দিক দিয়ে সমৃদ্ধ। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্য এই যুগের বিশিষ্ট সম্পদ। বৈষ্ণব সাহিত্য অর্থাৎ রাধাকৃষ্ণের প্রেম কাহিনি নিয়ে রচিত এই কাব্যে চণ্ডীদাস নামের তিনজন পদকর্তার পরিচয় আমরা পাই। যথা বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বীন চণ্ডীদাস এবং দ্বিজ চণ্ডীদাস। তবে মনে হয়। একজন কবি যিনি ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য রচনা করেছেন তিনি চৈতন্য পূর্ববর্তী কবি যার কাব্যখানি তেরটি খণ্ডে বিভক্ত। বাকী দুজন চৈতন্য পরবর্তী যুগের কবি। যারা বিভিন্ন পর্যায়ের বৈষ্ণব পদ রচনা করেছেন। যা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

(৪৫) ভারতচন্দ্র: অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি রায় গুণাকর ভারতচন্দ্র। তিনি সমগ্র বাংলা সাহিত্যেরই একজন প্রথম শ্রেণির মার্জিত কবি। তাঁর রচনার কোনো কোনো অংশ আধুনিক রুচির নিকট কিছুটা আপত্তিকর হলেও কবি অসাধারণ শব্দ মন্ত্রে তির্যক বাক ভঙ্গিমায়, উজ্জ্বল অলংকারে ও সরল হাস্য পরিহাসে যে বিচিত্র নাগরিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অসাধারণ ব্যাপার। ভারতচন্দ্র হাওড়া জেলার অন্তর্গত পেড়ো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নরেন্দ্র নারায়ণ রায় ও মাতা ভবানী দেবী। তাঁর জীবনে অনেক উত্থান পতন আছে। নানা ভাগ্য বিপর্যয়ের পর তিনি কৃষ্ণনগরের রাজা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সুনজরে পড়েন এবং মহারাজের সভাকবি হন। কিশোর বয়সে ভারতচন্দ্র সত্যপীরের মহাত্ম বিষয়ক দুখানি ক্ষুদ্র পাঁচালি রচনা করেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘অন্নদামঙ্গল’। কাব্যখানি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যধারার দুজন কবির নাম লেখ।

উত্তরঃ নারায়ণদেব, বিজয়গুপ্ত ও বিপ্রদাস পিপলাই।

২। ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যধারার দুজন কবির নাম লেখ।

উত্তরঃ রূপরাম চক্রবর্তী ও ময়ূর ভট্ট।

৩। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ কোনটি ? এই গ্রন্থের ভাষা কি নামে পরিচিত ? এই গ্রন্থের একজন পদকারের নাম লেখ।

উত্তরঃ চর্যাপদ, সন্ধ্যাভাষা, লুইপাদ।

৪। শাক্তপদাবলীর দুজন কবির নাম বল।

উত্তরঃ রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্য।

৫। মধ্যযুগের দুজন মুসলিম কবিদের নাম বল।

উত্তরঃ দৌলতকাজী ও সৈয়দ আলাওল।

৬। চণ্ডীমঙ্গলের দুইজন কবির নাম বল।

উত্তরঃ মানিক দত্ত ও মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।

৭। দুটি চৈতন্যজীবনী কাব্যের নাম বল।

উত্তরঃ বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্যভাগবত’ ও জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’।

৮। অনুবাদ করা হয়েছে এমন দুটি কাব্যের নাম লিখ।

উত্তরঃ ‘রামায়ণ’ ও ‘মহাভারত’।

৯। ভাগবতের দুজন অনুবাদকের নাম বল।

উত্তরঃ মালাধর বসু ও রঘুনাথ।

১০। শিবায়ণ কাব্যের দুজন কবির নাম বল।

উত্তরঃ রামেশ্বর ভট্টাচার্য ও শঙ্কর কবিচন্দ্ৰ।

১১। চর্যাপদের দুজন পদকর্তার নাম বল।

উত্তরঃ লুইপাদ ও ভুসুকপাদ।

১২। মহাভারতের দুজন অনুবাদকের নাম কর।

উত্তরঃ কাশীরাম দাস ও শ্রীকর নন্দী।

১৩। রামায়ণের দুজন অনুবাদকের নাম কর।

উত্তরঃ কৃত্তিবাস ওঝা ও চন্দ্রাবতী।

১৪। বাংলা ভাষার সর্ব প্রাচীন নিদর্শন যে দুটি পুঁথির মধ্যে পাওয়া যায় সেই পুঁথি দুটির নাম লেখো। 

উত্তরঃ চর্যাপদ ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।

১৫। কাশীদাস কাকে বলা হয় ? তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের নাম লেখো। 

উত্তরঃ কাশীরাম দাসকে কাশীদাস বলা হয়। তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের নাম ‘ভারত পাঁচালী।’

১৬। ছাপাখানার যুগে মনসামঙ্গল কাব্যধারার কোন কবি প্রথম মুদ্রণ সৌভাগ্য লাভ করেন ? কত খ্রিষ্টাব্দে তার গ্রন্থটি প্রথম মুদ্রিত হয় ?

উত্তরঃ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের। ১৮৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তার গ্রন্থটি প্রথম মুদ্রিত হয়।

১৭। হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় ‘বৌদ্ধ গান ও দোহা’ গ্রন্থটি কার সম্পাদনায় করে প্রকাশিত হয় ?

উত্তরঃ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

১৮। ‘মঙ্গলকাব্য’ এর ‘মঙ্গল’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তরঃ ‘মঙ্গল’ শব্দের অর্থ কল্যাণ। মানুষের মঙ্গল অর্থাৎ কল্যাণ কামনায় এই কাব্যগুলি রচিত হয়েছিল। কারো কারো মতে এক মঙ্গলবার থেকে আরেক মঙ্গলবার পর্যন্ত এই কাব্যগুলি পড়া হতো। তাই তার নাম মঙ্গলকাব্য। মনসা, চণ্ডী, ধর্ম প্রভৃতি লৌকিক দেবদেবী বাঙালির আর্যতের সংস্করণ বহন করে চলছে মঙ্গলকাব্যে।

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ কোনটি ?

উত্তরঃ চর্যাপদ (চর্যাচর্য বিনিশ্চয়)।

২। ‘চর্যাপদ’ কে আবিষ্কার করেছিলেন ?

উত্তরঃ ডঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

৩। চর্যার ভাষার নাম কি ?

উত্তরঃ সন্ধ্যা।

৪। ‘চর্যাপদ’ কোথায় থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করেন ?

উত্তরঃ নেপালের রাজদরবার থেকে।

৫। ‘চর্যাপদ’ কতসালে আবিষ্কার হয় ?

উত্তরঃ ১৯০৭ সালে।

৬। ‘চর্যাপদের’ সংস্কৃত টীকা কে লিখেছেন ?

উত্তরঃ মুনিদত্ত।

৭। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ বড়ু চণ্ডীদাস।

৮। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এ কয়টি খণ্ড আছে ?

উত্তরঃ তেরোটি।

৯। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের’ কোন অংশকে খণ্ড বলা হয়না ?

উত্তরঃ রাধাবিরহ।

১০। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কত সালে আবিষ্কার হয় ?

উত্তরঃ ১৯০৯ সালে।

১১। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি আবিষ্কার করেন ?

উত্তরঃ বসন্তরঞ্জন রায়।

১২। মনসামঙ্গলের জনপ্রিয় কবি কে?

উত্তরঃ বিজয় গুপ্ত।

১৩। কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী রচিত গ্রন্থটির নাম কী ?

উত্তরঃ চৈতন্যচরিতামৃত।

১৪। বাংলা মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে?

উত্তরঃ কাশীরাম দাস।

১৫। বাংলা রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে ?

উত্তরঃ কৃত্তিবাস ওঝা।

১৬। ‘চৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থের রচয়িতা কে?

উত্তরঃ বৃন্দাবন দাস।

১৭। বাংলাভাষার সর্বাধিক জনপ্রিয় রামায়ণ কোনটি ?

উত্তরঃ কৃত্তিবাস রামায়ণ।

১৮। বিপ্রদাস পিপাই কে ?

উত্তরঃ ‘মনসাবিজয়’ কাব্যের রচয়িতা।

১৯। শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি কে ?

উত্তরঃ রামপ্রসাদ সেন।

২০। বৈষ্ণব পদাবলীর একজন পদকর্তার নাম লেখো।

উত্তরঃ গোবিন্দদাস।

২১। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কোন্ কাব্যের রচয়িতা ? 

উত্তরঃ চণ্ডীমঙ্গল কাব্য।

২২। বিদ্যাপতির জন্মস্থান কোথায় ? 

উত্তরঃ মিথিলায়।

২৩। বৈষ্ণব পদাবলী কী ভাষায় রচিত ?

উত্তরঃ ব্রজবুলি।

২৪। কাকে ‘মৈথিলীর কোকিল’ বলা হয় ?

উত্তরঃ বিদ্যাপতিকে।

২৫। চৈতন্য পূর্ববর্তী মঙ্গলকাব্যধারার নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল।

২৬। ভাগবতের একজন অনুবাদকের নাম লেখো।

উত্তরঃ মালাধর বসু।

২৭। ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতার নাম কি ?

উত্তরঃ ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর।

২৮। ধর্মমঙ্গল কাব্যের যে-কোন একজন কবির নাম কর।

উত্তরঃ ময়ূর ভট্ট।

২৯। কাশীরাম দাস ……………… অনুবাদ করেছিলেন।

উত্তরঃ মহাভারত।

৩০। ভাগবতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে ?

উত্তরঃ মালাধর বসু।

৩১। ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ কাব্যের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ মালাধর বসু।

৩২। কার উপাধি ছিল ‘রায়গুণাকর’ ?

উত্তরঃ ভারতচন্দ্রের।

৩৩। ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে ?

উত্তরঃ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।

৩৪। ‘ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে ?

উত্তরঃ ঘনরাম চক্রবর্তী।

৩৫। কোন মঙ্গলকাব্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ?

উত্তরঃ মনসামঙ্গল।

৩৬। ‘মনসামঙ্গল’ – এর আদিকবি কে ছিলেন ?

উত্তরঃ কাণাহরি দত্ত।

৩৭। কবি দৌলতকাজির বিশিষ্ট আখ্যান কাব্যটির নাম কি ?

উত্তরঃ লোরচন্দ্রানী’ বা ‘সতীময়না’।

৩৮। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর কোন রাজসভার কবি ছিলেন ?

উত্তরঃ মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের।

৩৯। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের একমাত্র মহিলা কবির নাম কি ?

উত্তরঃ চন্দ্রাবতী।

৪০। ‘শিবায়ন’ কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে ?

উত্তরঃ রামেশ্বর ভট্টাচার্য।

৪১। কোন কবি ‘কবিকঙ্কণ’ উপাধি লাভ করেন ?

উত্তরঃ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।

৪২। ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ কবি জয়দেব।

৪৩। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ কে লিখেছিলেন ? 

উত্তরঃ কৃষ্ণদাস কবিরাজ।

৪৪। বৈষ্ণব পদসাহিত্য রচনাকারদের মধ্যে কাকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ বলা হয় ?

উত্তরঃ গোবিন্দদাসকে।

৪৫। ‘চৈতন্যমঙ্গল’ কাব্যের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ লোচন দাস।

৪৬। চৈতন্যদেবের জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত একটি কাব্যের নাম লেখো।

উত্তরঃ চৈতন্যভাগবত।

৪৭। শ্রীচৈতন্যদেব কত সালে মর্ত্যলোক ত্যাগ করেন ?

উত্তরঃ ১৫৩৩ খ্রীঃ।

৪৮। মধ্যযুগের একজন মুসলমান কবির নাম লেখো।

উত্তরঃ দৌলত কাজী।

৪৯। ‘শূণ্যপুরাণ’ কাব্যের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ রামাই পণ্ডিত।

৫০। শাক্তপদাবলীর দুজন পদকর্তার নাম বল।

উত্তরঃ রামপ্রসাদ সেন ও কমলাকান্ত ভট্টাচার্য।

৫১। ‘পদ্মপুরাণ’ কাব্যের রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ বিজয় গুপ্ত।

৫২। ‘কালীকীৰ্তন’ কে রচনা করেন ?

উত্তরঃ রামপ্রসাদ সেন।

৫৩। মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে ?

উত্তরঃ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ।

৫৪। কৃত্তিবাসের জন্মস্থান কোথায় অবস্থিত ?

উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের ফুলিয়ায়।

৫৫। জয়ানন্দের পিতার নাম কী ?

উত্তরঃ জয়ানন্দের পিতার নাম সুবুদ্ধি মিশ্র।

৫৬। বৈষ্ণবপদ সাহিত্য রচনাকারদের মধ্যে কাকে ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি’ বলা হয় ?

উত্তরঃ গোবিন্দদাসকে।

৫৭। বাংলা সাহিত্যকে প্রধানত কয়টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে ? 

উত্তরঃ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে।

৫৮। ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর কার রাজসভার সভাকবি ছিলেন ? 

উত্তরঃ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার সভাকবি ছিলেন।

৫৯। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটির রচয়িতা কে? এটি কোন্ সময়ে রচিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতা পণ্ডিত বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্ববল্লভ। ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।

৬০। ‘মৈথিল কোকিল’ কে ? তিনি কোন্ রাজসভার সভাকবি ছিলেন ?

উত্তরঃ মৈথিল কোকিল হলেন বিদ্যাপতি। তিনি মিথিলার রাজা শিবসিংহের রাজসভার কবি ছিলেন।

৬১। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যধারার যে কোনো দুজন কবির নাম লেখো।

উত্তরঃ বিজয়গুপ্ত ও নারায়ণদেব।

৬২। আরাকান রাজসভার দুজন কবির নামোল্লেখ করো।

উত্তরঃ সৈয়দ আলাওল ও দৌলত কাজী।

৬৩। কাশীরাম দাসের জন্মস্থান কোথায় ? 

উত্তরঃ সিঙ্গিগ্রামে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top