Class 11 Advanced Bengali Chapter 14 খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন

Class 11 Advanced Bengali Chapter 14 খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন Question Answer | AHSEC Class 11 Advanced Bengali Question Answer to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapters Class 11 Advanced Bengali Chapter 14 খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন Notes and select needs one.

Class 11 Advanced Bengali Chapter 14 খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন

Join Telegram channel

Also, you can read the SCERT book online in these sections Class 11 Advanced Bengali Chapter 14 খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 11 Advanced Bengali Chapter 14 খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন Solutions for All Subjects, You can practice these here.

খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন

Chapter: 14

ADVANCED BENGALI

ছোটগল্প

অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ

১। রাইচরণ চরিত্রের পরিচয় দাও। 

উত্তরঃ ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের মুখ্য চরিত্র রাইচরণ বারো বৎসর বয়সে সে বাবুদের বাড়ীতে চাকুরি করতে আসে। অনুকূলবাবুকে লালন-পালন করার মধ্যদিয়েই মনিব বাড়িতে তার চাকুরী জীবনের শুরু। অনুকূলবাবু তার হাত দিয়ে বড় হয়ে ওঠে।

অনুকূলবাবুর ছেলে জন্ম হওয়ার পর রাইচরণের দায়িত্ব আবার বেড়ে যায়। অনুকূলবাবুর পুত্র নবকুমারের লালন-পালনের দায়িত্ব রাইচরণের উপরই পড়ে। রাইচরণ অতি নিপুণভাবে সংগে ছোট নবকুমারকে দুই হাত ধরে আকাশের দিকে তুলে মুখের কাছে এনে সশব্দে শিরশ্চালন করত। নবকুমারের শৈশবের চালচলন দেখে রাইচরণ মা ঠাকুরণকে বলে – ‘মা তোমার ছেলে বড়ো হলে জজ হবে,’ শিশু নবকুমারের মনের কথা আকার ইঙ্গিতে বুঝতে তাই রাইচরণ তাকে কদম ফুলের গাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। ঠেলা গাড়িতে চাপিয়ে রাইচরণ নবকুমারকে নিয়ে যায় পদ্মাপারে। গাড়িতে তাকে রেখে কদমফুল তুলতে গিয়ে এসে নবকুমারকে পায়নি। জলে ভেসে গেছে সে।তাকে হারিয়ে ‘খোকাবাবু আমার’ বলে পুরো মাঠ উন্মত্তের মত চিৎকার করেছে রাইচরণ।শেষপর্যন্ত শিশুচুরির অপবাদ নিয়ে দেশে ফিরে। তখন তার স্ত্রী অধিক বয়সে পুত্র সন্তান প্রসব করে। 

অনুকূলবাবুর পুত্রকে হারিয়ে নিজে পুত্রসুখ উপভোগ করার মতো পাপ কাজ তিনি করবেননা, তাই রাইচরণ পুত্রের প্রতি তার বিদ্বেষ জন্মায়। নিজের পুত্রকে স্নেহ ও ভালোবাসার বিপরীতে পুত্রকে ঘৃণা করতে আরম্ভ করেছেন। কিছুদিন পরে যখন তিনি বিশ্বাস করেন তার পুত্রের মধ্য দিয়ে খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন তখন ফেলনাকে যত্ন করতে আরম্ভ করেন। খোকাবাবুর মতো মতো করে মানুষ করতে থাকেন। নিজের জমিজমা বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। পরবর্তীকালে ফেলনার চাহিদা পূর্ণ করতে অসুবিধা হওয়ায় রাইচর অনুকূলবাবুদের বাসায় এসে বলে তাদের ছেলেকে সে চুরি করেছে। পরে ফেলনাকে তাদের হাতে তুলে দেয়। পুরো গল্প জুড়ে রাইচরণের মধ্যে স্নেহশীল পিতা ও সম্ভৃত্যের ছবি ফুটে ওঠেছে। রাইচরণ গল্পে সৎ, সহজ, সরল ব্যক্তিত্ব রূপেই প্রতিষ্টিত।

২। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পটি করুণরসের কাহিনি – আলোচনা করো। 

উত্তরঃ এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাইচরণ হলেও খোকাবাবুর জীবন কাহিনিই গল্পের আধেয়। আর আধার রাইচরণ ও খোকাবাবুর সম্পর্ক। গল্পে খোকাবাবু দুজন একজন অনুকূলবাবু আরেকজন অনুকূলবাবুর ছেলে নবকুমার। শিশু অনুকূলবাবুর দেখাশুনার জন্যই রাইচরণ মনিব বাড়িতে চাকরি পায়। রাইচরণের ব্যবহারের জন্য অনুকূলবাবুর ছেলে নবকুমারের দায়িত্ব তার উপর দেওয়া হলো। রাইচরণ খোকাবাবু নবকুমারের যত্ন করত, স্নেহ করত ও নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসত। খোকাবাবুর জীবনকাহিনি বর্ণনায় করুণরসেরই প্রাধান্য। খোকাবাবুর জীবনের পরিণতি পাঠে পাঠক ব্যথিত হয়।

প্রথমদিকে আমরা দেখি, রাইচরণ খোকাবাবুকে আকাশের দিকে তুলে নিজের মুখের কাছে এনে শিরশ্চালন করত। খোকাবাবুকে লালনপালন করার ক্ষেত্রে কোনোরকম ত্রুটি রাখেননি। খোকাবাবুর চাওয়া-পাওয়ার মর্যাদা রাখত রাইচরণ। একদিন বিকালে রাইচরণ নবকুমারকে ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে পদ্মার ধারে মাঠে নিয়ে যায়। পদ্মার ধারে কদম্বফুল গাছ দেখে খোকাবাবু আকৃষ্ট হয়। খোকাবাবুর কথায় ঠেলাগাড়িতে রেখে ফুল তুলতে চলে যায়। এদিকে সে গাড়ি থেকে নেমে পদ্মার জলে ঘাস দিয়ে ছিপ কল্পনা করে মাছ ধরতে গিয়ে জলে পড়ে ডুবে যায়। রাইচরণ ফুল নিয়ে এসে তাকে দেখতে না পেরে চিৎকার করে পুরো মাঠে খুঁজতে লাগে, কিন্তু তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। রাইচরণের বিশ্বাস ছিল যে খোকাবাবু ভবিষ্যতে জজ হবে, মাসে পাঁচ হাজার টাকা কামাবে, আজ তার মৃত্যু হয়েছে  রাইচরণের কারণেই নবকুমারকে নিয়ে তার মা বাবার স্বপ্ন ছিল আজ তার পরিণতি পুরোপুরি করুণ রসের সৃষ্টি করে। ছেলেকে হারিয়ে মা ঠাকুরণের চিৎকার পুরো কাহিনিকেই নিয়ন্ত্রণ করেছে। মা ঠাকুরণ পাঠকের সহানুভূতি আদায় করে নেয়।

৩। রাইচরণ কিভাবে এবং কেন নিজের সন্তানকে তার প্রভুগৃহে ফিরিয়ে দিয়েছিল বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের মুখ্য চরিত্র রাইচরণ বারো বৎসর বয়সে সে বাবুদের বাড়ীতে চাকুরি করতে আসে। অনুকূলবাবুকে লালন-পালন করার মধ্যদিয়েই মনিব বাড়িতে তার চাকুরী জীবনের শুরু। অনুকূলবাবু তার হাত দিয়ে বড় হয়ে ওঠে।

অনুকূলবাবুর ছেলে জন্ম হওয়ার পর রাইচরণের দায়িত্ব আবার বেড়ে যায়। অনুকূলবাবুর পুত্র নবকুমারের লালন-পালনের দায়িত্ব রাইচরণের উপরই পড়ে। রাইচরণ অতি নিপুণভাবে সংগে ছোট নবকুমারকে দুই হাত ধরে আকাশের দিকে তুলে মুখের কাছে এনে সশব্দে শিরশ্চালন করত। নবকুমারের শৈশবের চালচলন দেখে রাইচরণ মা ঠাকুরণকে বলে – ‘মা তোমার ছেলে বড়ো হলে জজ হবে,’ শিশু নবকুমারের মনের কথা আকার ইঙ্গিতে বুঝতে তাই রাইচরণ তাকে কদম ফুলের গাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। 

ঠেলা গাড়িতে চাপিয়ে রাইচরণ নবকুমারকে নিয়ে যায় পদ্মাপারে। গাড়িতে তাকে রেখে কদমফুল তুলতে গিয়ে এসে নবকুমারকে পায়নি। জলে ভেসে গেছে সে।তাকে হারিয়ে ‘খোকাবাবু আমার’ বলে পুরো মাঠ উন্মত্তের মত চিৎকার করেছে রাইচরণ।শেষপর্যন্ত শিশুচুরির অপবাদ নিয়ে দেশে ফিরে। তখন তার স্ত্রী অধিক বয়সে পুত্র সন্তান প্রসব করে। অনুকূলবাবুর পুত্রকে হারিয়ে নিজে পুত্রসুখ উপভোগ করার মতো পাপ কাজ তিনি করবেননা, তাই রাইচরণ পুত্রের প্রতি তার বিদ্বেষ জন্মায়। নিজের পুত্রকে স্নেহ ও ভালোবাসার বিপরীতে পুত্রকে ঘৃণা করতে আরম্ভ করেছেন। কিছুদিন পরে যখন তিনি বিশ্বাস করেন তার পুত্রের মধ্য দিয়ে খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন তখন ফেলনাকে যত্ন করতে আরম্ভ করেন। খোকাবাবুর মতো মতো করে মানুষ করতে থাকেন। নিজের জমিজমা বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। পরবর্তীকালে ফেলনার চাহিদা পূর্ণ করতে অসুবিধা হওয়ায় রাইচর অনুকূলবাবুদের বাসায় এসে বলে তাদের ছেলেকে সে চুরি করেছে। পরে ফেলনাকে তাদের হাতে তুলে দেয়। পুরো গল্প জুড়ে রাইচরণের মধ্যে স্নেহশীল পিতা ও সম্ভৃত্যের ছবি ফুটে ওঠেছে। রাইচরণ গল্পে সৎ, সহজ, সরল ব্যক্তিত্ব রূপেই প্রতিষ্টিত।

৪। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। 

উত্তরঃ মনিব বাড়িতে শিশু লালনপালনের দায়িত্বে চাকরি পায় বারো বৎসর বয়সের রাইচরণ। পিতা অনুকূলবাবুকে যেমন মন দিয়ে দেখাশুনা করেছেন ঠিক তেমনি অনুকূলবাবুর পুত্র নবকুমারকেও লালন-পালনের কোন ত্রুটি রাখেননি। নিজের পুত্রের ন্যায় সেবা যত্ন করেছেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে রাইচরণের হাতেই নবকুমার হারিয়ে যায়। নবকুমারের জন্য কদম্বফুল তুলে এসে দেখে সে নেই, পদ্মার জলে ভেসে গেছে নবকুমার। প্রভুর বাড়ি থেকে শিশুচুরির অপবাদ নিয়ে দেশে ফিরে। এই হল গল্পের প্রাথমিক কাহিনি। এই কাহিনি তিনটি পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত। রাইচরণ দেশে ফেরার কিছুদিন পর অধিক বয়সে তার স্ত্রী-পুত্র সন্তান প্রসব করে তখন নিজের ছেলেকে ভালোবাসার বদলে বিদ্বেষ করতে আরম্ভ করলেন। তার পুত্র ফেলনার গতিপ্রকৃতি ও আচরণে যখন তার বিশ্বাস হলো যে তার বিশ্বাস হলো যে তার খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ঘটেছে তার ঘরে, তখনই গল্পের মোঢ় পাল্টিয়ে যায়। অন্য একটা উদ্দেশ্য গল্পের মধ্যদিয়ে প্রতিবিম্বিত হতে থাকে। তার এই বিশ্বাসের ফলেই ফেলনাকে খোকাবাবুর মত লালন-পালন করার জন্য তৎপর হয়। 

নিজের ছেলেকে খোকাবাবু বলে মনে করতে থাকে। তাই সাটিনের জামা ও জরির টুপি ফেলনাকে কিনে দেয়। অনুকূল বাবুর তার ছেলেকে নিয়ে যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্য থেকেই রাইচরণ ফেলনাকে লালনপালন করতে থাকেন। কিন্তু যখন সে বুড়ো হয়ে যায়, ফেলনার চাহিদা পূরণ করতে অসমর্থ হয়ে ওঠে তখন তাকে নিয়ে যায় প্রভু অনুকূলবাবুর বাড়িতে। সে বলে, তাদের খোকাবাবুকে সে চুরি করে নিয়ে গেছে তা ফিরিয়ে দিতে এসেছে। নিজের পুত্র ফেলনাকে তাদের খোকাবাবু পরিচয়ে তাদের হস্তগত করে দেয়। একদিকে যেমন রাইচরণের বিশ্বাসনুযায়ী খোকাবাবু যেমন তার ঘরেই প্রত্যাবর্তন ঘটেছে তেমনি রাইচরণ তার ফেলনাকে খোকাবাবু বিশ্বাসে অনুকূলবাবুর হাতে তোলে দেয়। অনুকূলবাবু ও মা ঠাকুরণের ঘরে হারিয়ে যাওয়া খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। সুতরাং গল্পটির নামকরণ সার্থক।

সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা

১। “কিন্তু কর্ত্রী যেমন রাইচরণের পূর্বাধিকার কতটা হ্রাস করিয়া লইয়াছে তেমনি একটি নূতন অধিকার দিয়া অনেকটা পূরণ করিয়া দিয়াছেন।”

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক ছোট গল্প থেকে গৃহীত। অনুকূলবাবুর বিয়ের পর স্ত্রী তার সমস্ত কাজকর্মের দায়িত্ব নেয় এর ফলে রাইচরণের অনুকূলকে দেখাশুনা আগের মতো করতে হতনা, তখন অনুকূলের পুত্রের দেখাশোনার নূতন দায়িত্ব পড়ে, এখানে এই কথাই বলা হয়েছে। কর্ত্রী হল অনুকূলের স্ত্রী।

অনুকূলবাবুকে শিশুকাল থেকেই রাইচরণ রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। অনুকূলবাবুর বিয়ে হওয়ার পর স্ত্রী ঘরে আসে। স্ত্রী আসার পর স্বামীর অনেক দায়িত্বই তার উপর ন্যস্ত হওয়ায় অনুকূলের উপর রাইচরণের পূর্বাধিকার অনেকটাই হ্রাস হয়ে গেছে। তবে মা ঠাকুরাণী রাইচরণকে নতুন অধিকার দেন অনুকূলবাবুর পুত্র নবকুমারকে রক্ষণ ও পালন করার দায়িত্ব।

২। “রাইচরণ স্নেহে বাপ এবং সেবায় ভৃত্য’।

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে গৃহীত। এখানে পিতা রাইচরণের পুত্রের প্রতি অপরিসীম স্নেহ-ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। শিশুচুরি অপবাদ নিয়ে প্রভুর বাড়ি থেকে রাইচরণ যখন দেশের বাড়িতে ফিরে আসে। তখন ঐ বৎসরই অধিক বয়সে তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। প্রথমাবস্থায় সে প্রভুর ছেলেকে হারিয়ে নিজে সন্তান সুখ ভোগ করবে এটা তার কাছে মহাপাপ ছিল তাই সে নিজ সন্তান ফেলনার প্রতি তার বিদ্বেষ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ফেলনার গতি প্রকৃতি খোকাবাবুর মতো মনে হওয়ায় তার মনে বিশ্বাস জন্মে যে খোকাবাবু তার মায়া ছাড়তে না পেরে ফেলনা রূপে জন্ম নিয়েছে। যখন ফেলনার বিদ্যাভাসের বয়স হল তাকে জমিজমা বিক্রি করে কলকাতায় নিয়ে আসে সেখানে ভালো খাওয়াতে, ভালো পড়াতে রাইচরণ ত্রুটি করেনি। সে ফেলনার সুখী ও শখের খেয়াল রাখত। ফেলনার যা প্রয়োজন তা এনে দিত। রাইচরণ স্নেহে ফেলনার বাবা ও সেবায় ভৃত্য ছিল।

৩। ঘোড়া হইতে সে একেবারেই সাহসের পদে উন্নাত হইয়াছিল ?

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটুকু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে গৃহীত। এখানে রাইচরণ কিভাবে সহিসের পদে পৌঁছে তা বর্ণনা হয়েছে। অনুকূলবাবুকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাইচরণ মনিব বাড়িতে চাকুরি পায় । স্নেহ, ভালোবাসার মধ্যদিয়ে শিশুপালনের কোন খামতি রাখেনি। ইতিমধ্যে অনুকূলবাবু বড় হয়, বিয়ে করে। তার একটি ছেলে জন্ম হয়। ছেলের নাম নবকুমার। নবকুমারেরও রক্ষণাবেক্ষণ ও লালনপালনের দায়িত্বও তার উপর ন্যস্ত হয়। অনুকূলকে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে লালনপালন করেছিলেন। নবকুমারের রক্ষণাবেক্ষণেও রাইচরণ স্নেহের ফারাক রাখেননি। একেবারে চোখে-চোখে রাখতেন। রাইচরণ তাকে দুই হাতে ধরে আকাশের দিকে তুলতেন, তারপর মুখের কাছে এনে শিরশ্চালন করতেন। কিছুদিন পর রাইচরণকে ঘোড়া সাজতে হলো, নবকুমার তার পিঠে বসত।সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে রাইচরণ ও ছোট শিশু নবকুমারের খেলার ধরনও পাল্টেছে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। “একবার ঝপ করিয়া একটা শব্দ হইল, কিন্তু বর্ষার পদ্মাতীরে এমন শব্দ কত শোনা যায়” – কিসের শব্দ ? প্রসঙ্গটি লেখো।

উত্তরঃ খোকাবাবু নবকুমারের পদ্মার জলে পড়ে যাওয়ার শব্দ। রাইচরণ প্রতিদিনের মতো বিকেলবেলা নবকুমারকে ঠেলার গাড়িতে চাপিয়ে পদ্মারতীরে বেড়াতে নিয়ে আসে ।সেখানে কদমগাছে ফুলদেখে নবকুমার এনে দিতে বলে রাইচরণকে। রাইচরণ তাকে গাড়ি

থেকে না নামার কথা বলে যখন গাছে উঠল। এদিকে নবকুমার গাড়ি থেকে নেমে জলে টুবুটুবু পদ্মার ঘাসকে ছিপ কল্পনা করে মাছ ধরতে লাগে। তখন সে পদ্মার জলে পড়ে যায়। তখন জলে ঝপ্ করে একটা শব্দ হয়। রাইচরণ শব্দ শুনতে পেয়েও গুরুত্ব দেয়নি কারণ এমন শব্দ বর্ষার পদ্মারতীরে অহরহ শোনা যায়।

২। রাইচরণ কে ছিল ? সে কলকাতায় মনিবের বাড়িতে কেন এসেছিল ? তার প্রধান কাজ কি ছিল ?

উত্তরঃ রাইচরণ অনুকূলবাবুর বাড়ির ভৃত্য ছিল। সে বারো বছর বয়সে কলকাতায় এক বৎসরের একটি শিশু ‘যার নাম অনুকূল তাঁকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কলকাতায় আসে। এটাই তার প্রধান কাজ।

৩। “সেই শিশুটি কালক্রমে রাইচরণের কক্ষ ছাড়িয়া স্কুলে, স্কুল ছাড়িয়া কলেজে, অবশেষে কলেজ ছাড়িয়া মুন্সেফিতে প্রবেশ করিয়াছে।” – সেই শিশুটি কে ? সে কালক্রমে কি হয়েছিল ?

উত্তরঃ সেই শিশুটি হল অনুকূল। সে কালক্রমে স্কুল ছেড়ে কলেজ এবং কলেজ ছেড়ে মুন্সেফিতে গিয়েছে। অনুকূল মুন্সেফ হন বারাসতে।

8। “তাহার আর একটি মনিব বাড়িয়াছে; মা ঠাকুরাণী ঘরে আসিয়াছেন।”- কার আর একটি মনিব বেড়েছে ? মনিবটি কে ? মা ঠাকুরাণী কে ?

উত্তরঃ অনুকূলের ভৃত্য রাইচরণের আর একটি মনিব বেড়েছে। মনিবটি হল অনুকূলের নবপরিণীতা স্ত্রী। মা ঠাকুরাণী হল অনুকূলের স্ত্রী।

৫। “কিন্তু কর্ত্রী যেমন রাইচরণের পূর্বাধিকার কতকটা হ্রাস করিয়া লইয়াছেন তেমনি একটি নূতন অধিকার দিয়া অনেকটা পূরণ করিয়া দিয়াছেন।” কর্ত্রী কে ? তিনি রাইচরণের পূর্বাধিকার কীভাবে হ্রাস করে নিয়েছেন, আর নূতন অধিকারটি কী ?

উত্তরঃ কর্ত্রী হল অনুকূলের স্ত্রী।

অনুকূলবাবুকে শিশুকাল থেকেই রাইচরণ রক্ষণাবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। অনুকূলবাবুর বিয়ে হওয়ার পর স্ত্রী ঘরে আসে। স্ত্রী আসার পর স্বামীর অনেক দায়িত্বই তার উপর ন্যস্ত হওয়ায় অনুকূলের উপর রাইচরণের পূর্বাধিকার অনেকটাই হ্রাস হয়ে গেছে। তবে মা ঠাকুরাণী রাইচরণকে নতুন অধিকার দেন অনুকূলবাবুর পুত্র নবকুমারকে রক্ষণ ও পালন করার দায়িত্ব।

৬। রাইচরণ অনুকূলবাবুর শিশুপুত্রকে কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করত ?

উত্তরঃ শিশুপুত্রটিকে লালন পালন করতে গিয়ে রাইচরণকে কখনো-কখনো মুখে দড়ি দিয়ে ঘোড়া সাজতে হয়েছে। শিশুর সংগে কুস্তি করতে হয়। শিশুকে গাড়ির মধ্যে বসিয়ে রাইচরণ ঠেলে একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে নিয়ে যায়। কদমফুলকে কাঠি দিয়ে বিদ্ধ করে গাড়ি বানিয়ে দেয় রাইচরণ তা প্রভু শিশু নবকুমারকে। নবকুমারকে প্রতিদিন অতি উৎসাহে দোলাত। নিপুণতার সংগে শিশুকে দুইহাতে ধরে আকাশের দিকে তুলে মুখের কাছে 

এনে সশব্দে শিরশ্চালন করতে থাকে। শিশু হামাগুড়ি দিয়ে লুকানোর চেষ্টা করলে রাইচরণ তা দেখে চমৎকৃত হয়। অর্থাৎ অনুকূলবাবুর শিশু পূত্রটিকে লালন-পালন করার ক্ষেত্রে বাৎসল্যতা ছিল অত্যাধিক।

৭। “বাস্তবিক শিশুর মাথায় এ বুদ্ধি কী করিয়া জোগাইল বলা শক্ত।” – শিশুটি কে ? তাহার মাথায় কোন্ বুদ্ধি জোগাইল সংক্ষেপে লেখো।

উত্তরঃ শিশুটি হল অনুকূলবাবুর ছেলে নবকুমার। সে মাকে মা, পিসিকে পিসি এবং রাইচরণ কে চন্ন বলে। নবকুমারের এই আশ্চর্যজনক ডাকাডাকির জন্য বলা হয়েছে নবকুমারের মাথায় বুদ্ধি জুগিয়েছে।

৮। রাইচরণ খোকাবাবুকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিল ? সেখানে খোকাবাবু কি দেখেছিল ?

উত্তরঃ রাইচরণ খোকাবাবুকে নিয়ে পদ্মার তীরে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে খোকাবাবু পদ্মার তীরে কদম গাছের ফুল দেখেছিল।

৯। “ঘোড়া হইতে সে একেবারেই সহিসের পদে উন্নীত হইয়াছিল।” – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ অনুকূলবাবুকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাইচরণ মনিব বাড়িতে চাকুরি পায়। স্নেহ, ভালোবাসার মধ্যদিয়ে শিশুপালনের কোন খামতি রাখেনি। ইতিমধ্যে অনুকূলবাবু বড় হয়, বিয়ে করে। তার একটি ছেলে জন্ম হয়। ছেলের নাম নবকুমার। নবকুমারেরও রক্ষণাবেক্ষণ ও লালনপালনের দায়িত্বও তার উপর ন্যস্ত হয়। অনুকূলকে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে লালনপালন করেছিলেন। নবকুমারের রক্ষণাবেক্ষণেও রাইচরণ স্নেহের ফারাক রাখেননি। একেবারে চোখে-চোখে রাখতেন। রাইচরণ তাকে দুই হাতে ধরে আকাশের দিকে তুলতেন, তারপর মুখের কাছে এনে শিরশ্চালন করতেন। কিছুদিন পর রাইচরণকে ঘোড়া সাজতে হলো, নবকুমার তার পিঠে বসত।সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে রাইচরণ ও ছোট শিশু নবকুমারের খেলার ধরনও পাল্টেছে।

১০। রাইচরণের ছেলের নাম কী ? তার প্রতি রাইচরণের বিদ্বেষ জন্মাল কেন ?

উত্তরঃ রাইচরণের ছেলের নাম ফেলনা।

খোকাবাবুকে হারিয়ে রাইচরণ দুঃখে-বেদনায় হতাশায় দেশে ফিরে এল। যে খোকাবাবুকে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসতো, যার সুখের ও আনন্দের চেষ্টা করত। সেই নবকুমারের চুরির অপবাদ নিয়ে দেশে ফিরে। এতকাল তার সন্তানাদি হয়নি কিন্তু দৈবক্রমে বৎসর যেতে না যেতেই তার স্ত্রী অধিক বয়সে পুত্র সন্তান প্রসব করে। তার নবজাত শিশুটির প্রতি রাইচরণের স্নেহের চেয়ে বিদ্বেষই ছিল। তার মনে হল ছল করে শিশুটি রাইচরণের  ঘরে এসে খোকাবাবু নমকুমারের জায়গা অধিকার করতে এসেছে। রাইচরণ মনে করল প্রভুর একমাত্র ছেলেটিকে হারিয়ে নিজে পুত্রের সুখ উপভোগ করতে তা মহাপাপ। তাই তার পুত্রের প্রতি শুরু থেকেই বিদ্বেষ জন্মাল।

১১। ফেলার নাম কে রেখেছিল ? ফেলনার স্বভাব কিরূপ ছিল ?

উত্তরঃ ফেলার নাম রাইচরণের বিধবা  বোন রেখেছিল। কিছুদিনের মধ্যে ফেলনা চৌকাঠ পার হতে আরম্ভ করল এবং যাবতীয় বাধা উপেক্ষা করে সকৌতুক চতুরতা প্রকাশ করতে লাগল। ফেলনাকে রাইচরণ সাটিনের জামা, জরির টুপি এনে দিল। ফেলনা হামাগুড়ি দেয় টলমল করে চলে, পিসিকে পিসি বলে। ফেলনার বিদ্যাভাসের সময় রাইচরণ সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে তাকে কলকাতায় পাঠায়। নিজে যেমন তেমন থেকে ছেলেকে ভালো খাওয়া, ভালো পরা ও ভালো শিক্ষা দিতে ত্রুটি রাখেননি। ছেলে পড়াশুনাতে ভাল এবং দেখতে শুনতে পুষ্ট হয়ে ওঠে। পড়াশুনা শিখে ও শহরের পরিবেশে ফেলনার স্বভাবের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা দেয়। ফেলনা রাইচরণকে যতটুকু ভালোবাসত তা অনুগ্রহের। বৃদ্ধ রাইচরণ ফেলনার ভরণপোষণের টাকা জোগান দিতে কষ্ট হলে ফেলনা সর্বদাই খুঁতখুঁতে করতে আরম্ভ করে। পরে রাইচরণ নিজের ছেলেকে অনুকূলবাবুর ছেলে বলে তাদের হাতে তুলে দেন। ফেলনা যখন দেখল সে মুন্সেফের সন্তান। যখন সে তার মার কাছে জানল রাইচরণ তাকে এতদিন চুরি করে নিজের ছেলে বলে অপমাণিত করেছে তখন তার মনে কিছু রাগ হল। কিন্তু তবু উদারভাবে পিতা অনুকূলবাবুকে বলল, “বাবা উহাকে মাপ করো।” বাড়িতে থাকিতে না দাও, উহার মাসিক কিছু টাকা বরাদ্দ করিয়া দাও।”

১২। রাইচরণ স্নেহে বাপ এবং সেবায় ভৃত্য ছিল, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ শিশুচুরি অপবাদ নিয়ে প্রভুর বাড়ি থেকে রাইচরণ যখন দেশের বাড়িতে ফিরে আসে। তখন ঐ বৎসরই অধিক বয়সে তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। প্রথমাবস্থায় সে প্রভুর ছেলেকে হারিয়ে নিজে সন্তান সুখ ভোগ করবে এটা তার কাছে মহাপাপ ছিল তাই সে নিজ সন্তান ফেলনার প্রতি তার বিদ্বেষ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ফেলনার গতি প্রকৃতি খোকাবাবুর মতো মনে হওয়ায় তার মনে বিশ্বাস জন্মে যে খোকাবাবু তার মায়া ছাড়তে না পেরে ফেলনা রূপে জন্ম নিয়েছে। যখন ফেলনার বিদ্যাভাসের বয়স হল তাকে জমিজমা বিক্রি করে কলকাতায় নিয়ে আসে সেখানে ভালো খাওয়াতে, ভালো পড়াতে রাইচরণ ত্রুটি করেনি। সে ফেলনার সুখী ও শখের খেয়াল রাখত। ফেলনার যা প্রয়োজন তা এনে দিত। রাইচরণ স্নেহে ফেলনার বাবা ও সেবায় ভৃত্য ছিল।

১৩। “প্রভুর একমাত্র ছেলেটি জলে ভাসাইয়া নিজে পুত্রসুখ উপভোগ করা যেন একটি মহাপাতক।” – প্রসঙ্গটি বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ রাইচরণের ছেলের নাম ফেলনা।

খোকাবাবুকে হারিয়ে রাইচরণ দুঃখে-বেদনায় হতাশায় দেশে ফিরে এল। যে খোকাবাবুকে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসতো, যার সুখের ও আনন্দের চেষ্টা করত। সেই নবকুমারের চুরির অপবাদ নিয়ে দেশে ফিরে। এতকাল তার সন্তানাদি হয়নি কিন্তু দৈবক্রমে বৎসর যেতে না যেতেই তার স্ত্রী অধিক বয়সে পুত্র সন্তান প্রসব করে। তার নবজাত শিশুটির প্রতি রাইচরণের স্নেহের চেয়ে বিদ্বেষই ছিল। তার মনে হল ছল করে শিশুটি রাইচরণের  ঘরে এসে খোকাবাবু নমকুমারের জায়গা অধিকার করতে এসেছে। রাইচরণ মনে করল প্রভুর একমাত্র ছেলেটিকে হারিয়ে নিজে পুত্রের সুখ উপভোগ করতে তা মহাপাপ। তাই তার পুত্রের প্রতি শুরু থেকেই বিদ্বেষ জন্মাল।

১৪। “প্রভু, মা আমিই তোমাদের ছেলেকে চুরি করিয়া লইয়াছিলাম। – বক্তা কে ? কাদের বলছে ?

উত্তরঃ বক্তা হল রাইচরণ। সে অনুকূল ও তার স্ত্রীকে বলেছে।

১৫। “কাল্পনিক পাখি লইয়া অধিকক্ষণ কাজ চলে না।” – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ রাইচরণ নদীরতীরে নবকুমারকে টেলাগাড়িতে বসিয়ে পদ্মার তীরে বেড়াতে যায়। সেখানে নবকুমার পদ্মার তীরে কদমগাছে ফুল দেখে রাইচরণকে পেড়ে দিতে বলে। রাইচরণকে পেড়ে দিতে বলে। রাইচরণ সেখানে যেতে চাচ্ছিল না কারণ গাছটি কাদার মধ্যে। সে নবকুমারের মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর জন্য আকাশের দিকে পাখি যাচ্ছে বলে নবকুমারকে দেখায়। কিন্তু কাল্পনিক পাখিতে অনেকখণ কাজ চলেনা, সে রাইচরণকে ফুল পেড়ে দেওয়ার বায়না করতে থাকে।

১৬। “তবে তুমি গাড়িতে বসে থাকো, আমি চট্ করে ফুল তুলে আনছি। – উক্তিটি কার ? সে কী ফুল তুলতে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ উক্তিটি রাইচরণের। সে কদম্বফুল তুলতে গিয়েছিল।

প্রশ্ন ১৭। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের ফেনা চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ ফেল্লা ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের মুখ্য চরিত্র রাইচরণের পুত্র। যে থোকাবাবুকে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসতো, তাকে হারিয়ে রাইচরণ দুঃখ বেদনা ও হতাশায় নিজের দেশে ফিরে এল। এতকাল তার সন্তানাদি হয়নি কিন্তু দৈবক্রমে বছর যেতে না যেতেই তার স্ত্রী অধিক বয়সে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যায়। এই শিশুটির প্রতি রাইচরণের স্নেহের চেয়ে বিদ্বেষই ছিল। তার মনে হল এই শিশুটি ছল করে রাইচরণের ঘরে এসে খোকাবাবুর জায়গা দখল করেছে। ফেলনার বিদ্যাভ্যাসের সময়ে রাইচরণ সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে তাকে নিয়ে কলকাতায় যায়। নিজে কোনো প্রকারে থেকে ছেলেকে ভালো খাওয়া, ভালো পরা ও ভালো শিক্ষা দিতে কমতি করেনি। ছেলে পড়াশুনায় ভালো এবং দেখতে শুনতে উত্তম হয়ে উঠে। পড়াশুনা শিখেও শহরের পরিবেশে ফেলনার স্বভাবের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা দেয় ।ফেলনা পিতা রাইচরণকে যতটুক ভালোবাসাত তা অনুগ্রহ করে।

বৃদ্ধ রাইচরণের ফেলনার ভরণপোষণের অর্থ যোগান দিতে কষ্ট হলে রাইচরণ নিজের ছেলেকে অনুকূল বাবুর ছেলে বলে তাদের হাতে তুলে দেয়। ফেলনা যখন দেখল সে মুন্সেফের সন্তান। যখন সে অনুকূল বাবুর স্ত্রীর নিকট হতে জানল রাইচরণ তাকে চুরি করে নিয়ে গেছিল তখন তার মনে কিছু রাগ হল। কিন্তু তবু উদারভাবে অনুকূল বাবুকে বলল, ‘বাবা উহাকে মাপ করো।’ বাড়িতে থাকতে দাও কিংবা মাসিক কিছু পারিতোষিক বরাদ্দ করে দাও।

১৮। “সকলেই মনে মনে বুঝিল পদ্মারই এই কাজ।” – পদ্মা কে ? কাজই বা কী ?

উত্তরঃ পদ্মা হল বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত নদী। কাজটি অনুকূলবাবুর শিশু পুত্র নবকুমার (খোকাবাবুর) পদ্মার বুকে ডুবে যাওয়া।

সংক্ষিপ্ত টীকা লিখন

১। পদ্মা: ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পে পদ্মা বলতে পদ্মানদাকে বোঝানো হয়েছে । এই গল্পে পদ্মানদীর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় প্রথম পরিচ্ছেদে। অনুকূলবাৰু পদ্মাতীরবর্তী এক জেলায় বদলি হন। এই পদ্মার জলে অনুকূলের ছেলে নবকুমার ডুবে যায়। গল্পে দেখা যায় বর্ষাকালের পদ্মার বর্ণনা। বর্ষাকাল আসলে ক্ষুধিত পদ্মা গ্রাম, শস্যক্ষেত্র এক-এক করে গ্রাস করতে থাকে। বালুকাচর, কাশবন এবং বনঝাউ জলে ডুবে যায়। পার-ভাঙ্গার অবিশ্রাম ঝুপঝাপ শব্দ এবং জলের গর্জনে দশদিক মুখরিত হয়ে ওঠে।

২। অনুকূলবাবু: এক বৎসরের শিশু অনুকূলের লালন-পালনের জন্য রাইচরণের চাকরি হয় মনিবের বাড়িতে। অনুকূল ধীরে-ধীরে বড় হয়। সে রাইচরণের কক্ষ ছেড়ে স্কুলে, স্কুল ছেড়ে কলেজে এবং শেষে কলেজ ছেড়ে মুন্সেফিতে যায়। সে ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিমান ও মেরাবী ছিল যার পরিচয় রয়েছে গল্পে। অনুকূল মানুষ হিসেবে সহজ, সরল, নিরীহ ব্যক্তি। তাই দেখা যায় রাইচরণকে তার স্ত্রী, সন্তান চুরির অপবাদ দিলেও অনুকূল কিছুতেই মানতে পারেনি রাইচরণ তার সন্তানকে চুরি করেছে।

৩। রাইচরণ: রাইচরণ ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। যশোহর জেলায় তার বাড়ি। বারো বছর বয়সে এক বৎসরের শিশু অনুকূলকে দেখাশোনা করার জন্য কলকাতায় মনিবের বাড়িতে আসেন। রাইচরণ লালন-পালনে অনুকূল বড় হয়ে ওঠে। পরে অনুকূলের ছেলে নবকুমারেরও লালন-পালনের ভার তার উপর ন্যস্ত হয়। রাইচরণ গল্পে সৎ, সহজ, সরল ব্যক্তিত্বরূপেই প্রতিষ্ঠিত।

৪। ফেলনা: ফেলনা রাইচরণের ছেলে। প্রভু অনুকূলবাবুর বাড়ি থেকে শিশুচুরির অপবাদে দেশে ফিরে আসার পর রাইচরণের স্ত্রী অধিক বয়সে ফেলনার জন্ম দিয়ে মারা যান। ফেলনার নাম রেখেছে রাইচরনের বিধবা বোন। প্রথম প্রথম ফেলনা তার পিতা রাইচরণের স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পরবর্তী সময় ফেলনা রাইচরণের কাছ থেকে স্নেহ, ভালোবাসা, সেবা সমস্ত কিছুই পেয়েছে। রাইচরণ যখন বিশ্বাস করেন যে ফেলনা ‘খোকাবাবুর প্রতিরূপ, তখন থেকেই ফেলনার প্রতি তিনি গভীর যত্নশীল হয়ে ওঠেন।

৫। খোকাবাবু: ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের খোকাবাবু হল নবকুমার। অনুকূলবাবুর একমাত্র পুত্র। খোকাবাবুর দেখাশোনা ও লালন-পালনের দায়িত্ব রাইচরণের উপর ন্যস্ত ছিল। খোকাবাবু শিশু বয়সেই তার চাতুর্য ও বিচারশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তার এই জ্ঞানের জন্য রাইচরণ মা ঠাকুরণকে বলেছে তোমার ছেলে একদিন জজ হবে। খোকাবাবু রাইচরণকে ঘোড়া করে তার পিঠে ওঠে চলত, কুস্তি খেলত। খোকাবাবু রাইচরণকে ‘চন্ন’ বলে ডাকত।

৬। মা ঠাকুরাণা: মা ঠাকুরাণী হলেন অনুকূলবাবুর স্ত্রী। রাইচরণ অনুকূলবাবুর স্ত্রীকে ডাকতেন মা ঠাকুরাণী। মা ঠাকুরাণী মনিব বাড়িতে এসে রাইচরণের দায়িত্ব যেমন হ্রাস করেছে তেমনি মা ঠাকুরাণী পুত্র নবকুমারকে জন্ম দিয়ে রাইচরণকে নতুন অধিকার দিয়ে অনেকটা পূরণ করেও দিয়েছে। মা ঠাকুরাণী তার একমাত্র পুত্র নবকুমারের লালন-পালনের দায়িত্ব দিয়ে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। তাই নবকুমারকে নিয়ে রাইচরণের গতি প্রকৃতির উপর মা ঠাকুরাণী কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। মা ঠাকুরাণীর চরিত্রে রূপান্তর লক্ষ্য করা যায় যখন রাইচরণ নবকুমারকে পদ্মার ঘাটে হারিয়ে ফেলে।

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ কার লেখা ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।

২। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ কোন গ্রন্থের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ গল্পগুচ্ছ।

৩। রাইচরণের বাড়ি কোথায় ?

উত্তরঃ যশোহর জেলায়।

৪। রাইচরণ কত বৎসর বয়সে অনুকূলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এসেছিল।

উত্তরঃ বারো বছর বয়সে।

৫। অনুকূলের ছেলের নাম কী ?

উত্তরঃ নবকুমার।

৬। ‘মাকে মা বলে’ পিসিকে পিসি বলে,’ – কে মাকে মা আর পিসিকে পিসি বলে ?

উত্তরঃ অনুকূলের ছেলে নবকুমার।

৭। রাইচরণের ছেলের নাম কী ?

উত্তরঃ ফেলনা।

৮। ফেলনার নাম কে রেখেছিল ?

উত্তরঃ রাইচরণের বোন।

৯। “বাবু – খোকাবাবু- লক্ষী দাদাবাবু আমার!” – উক্তিটি কার ?

উত্তরঃ রাইচরণের উক্তি।

১০। নবকুমার ছোটবেলায় রাইচরণকে কী ডাকত ?

উত্তরঃ চন্ন।

১১। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পের প্রধান বা কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনটি ?

উত্তরঃ রাইচরণ।

১২। রাইচরণ কে ছিলেন ?

উত্তরঃ অনুকূল বাবুর ভৃত্যের নাম রাইচরণ ছিল।

১৩। ‘তাহাকে এমনি উৎসাহের সহিত দোলাইতে আরম্ভ করিয়াছে, এমনি ‌নিপুণতার সহিত তাহাকে দুই হাতে ধরিয়া আকাশে উৎক্ষিপ্ত করে ……।’ কে কাকে এভাবে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দেয় ?

উত্তরঃ রাইচরণ, অনুকূল বাবুর শিশু সন্তান খোকাবাবুকে আকাশের ।

১৪। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পে মোট কয়টি পরিচ্ছেদ আছে ?

উত্তরঃ তিনটি।

১৫। ফেলনা কার পুত্র ছিল ?

উত্তরঃ ফেলনা রাইচরণের পুত্র ছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top