Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই

Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই and select needs one.

Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Bengali Chapter 8 বলাই for All Subject, You can practice these here…

বলাই

               Chapter – 8

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

( ক ) অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘ বলাই ‘ পাঠটির লেখক কে ? 

উত্তরঃ ‘ বলাই ’ পাঠটির লেখক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

প্রশ্ন ২। বলাইয়ের সঙ্গে লেখকের কী সম্পর্ক ছিল ? 

উত্তরঃ বলাই সম্পর্কে লেখকের ভাইপো ছিল । 

প্রশ্ন ৩। অতি পুরানো বটের কোটরে কারা বাসা বেঁধে আছে ? 

উত্তরঃ অতি পুরানো বটের কোটরে ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী বাসা বেঁধে আছে।

প্রশ্ন ৪। বলাইয়ের মা কোথায় গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের মা বলাইয়ের জন্মের পর মারা গিয়েছিল । 

প্রশ্ন ৫। একদিন সকালে বলাই ওর কাকাকে কী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ একদিন সকালে বলাই ওর কাকাকে বাগানের খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা একটি শিমূল চারা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন ৬। বলাইয়ের সবচেয়ে বেশি স্নেহ কীসের উপর ছিল ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সবচেয়ে বেশি স্নেহ বাগানের ছোট ছোট চারাগাছগুলির উপর ছিল । 

প্রশ্ন ৭। সিমলে থেকে বলাই ওর কাকিকে কী পাঠিয়ে দেবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল ? 

উত্তরঃ সিমলে থেকে বলাই ওর কাকিকে শিমূল গাছের ফটোগ্রাফ পাঠিয়ে দেবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল । 

প্রশ্ন ৮। বলাইয়ের বাবা বলাইকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের বাবা বলাইকে প্রথমে সিমলায় পরে বিলেত নিয়ে গিয়েছিলেন । 

প্রশ্ন ৯। বিলাত যাবার পূর্বে বলাই তার কোন বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বিলাত যাবার পূর্বে বলাই তার বন্ধু শিমুলগাছটার ছবি নিয়ে যেতে চেয়েছিল । 

প্রশ্ন ১০। মা মারা যাবার পর বলাইকে কে কোলে পিঠে মানুষ করেছে ? 

উত্তরঃ মা মারা যাবার পর বলাইকে তার কাকিমা অর্থাৎ লেখকের স্ত্রী কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে । 

( খ ) শুদ্ধ – অশুদ্ধ নির্ণয় করো :

১। বলাই একটি মেয়ের নাম । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ ।

২। বেশি কথা কইতে পারে না বলে বলাইকে অনেক বেশি ভাবতে হয় । 

উত্তরঃ শুদ্ধ । 

৩। লেখকের ছোট ভাইয়ের নাম ছিল বলাই । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ । 

৪। শিমূল গাছটি ছিল বলাইয়ের প্রাণের দোসর । 

উত্তরঃ শুদ্ধ । 

৫। ‘ বলাই ’ পাঠটির লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ ।

( ঘ ) শূন্যস্থান পূরণ করোঃ 

১। মাঘের শেষে আমের ________ ধরে । 

উত্তরঃ বোল ।

২। ফাল্গুনে _______ শালবনের মতোই ওর _______ প্রকৃতি চারিদিকে বিস্তৃত হযে ওঠে । 

উত্তরঃ পুষ্পিত,অন্তর ।

৩। ও কাউকে না বলে _______ গিয়ে সেই দেবদারু বনের _______ একলা অবাক হয়ে বসে থাকে । 

উত্তরঃ আস্তে আস্তে,নিস্তব্ধ ছায়াতলে ।

৪। শিমূল গাছ বাড়েও দ্রুত , কিন্তু বলাইয়ের ________ পাল্লা দিতে পারে না । 

উত্তরঃ আগ্রহের ।

৫। আমার সঙ্গে যখন পারলে না , এই ________ শিশুটি গেল কাকির কাছে । 

উত্তরঃ মাতৃহীন ।

৬। ওই গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের _______ তারই প্রাণের _______ ।

উত্তরঃ প্রতিরূপ,দোসব ।

২। ( ক ) বাক্য রচনা করোঃ 

ফপিয়ে ফুঁপিয়ে , আঁকু পাঁকু , গড়াতে গড়াতে , সুড়সুড়ি , খিলখিল , ছমছম , স্তরে স্তরে , দেখে দেখে , ব’সে ব’সে , ড্যাবা – ড্যাবা , ছোটো ছোটো , অহি – নকুল , জোড়াতাড়া , ঝম্ ঝম্। 

উত্তরঃ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে — বলাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরেছিল । 

আঁকুপাঁকু — বিপিন দেবদারু বনে যাবার জন্য আঁকুপাঁকু করছিল । 

গড়াতে গড়াতে — পাহাড় বেয়ে ঝরণার জল গড়াতে গড়াতে নামছে। 

সুড়সুড়ি — ঘাসের আগায় বলাইয়ের ঘাড়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগত । 

খিলখিল — ঘাসের সুড়সুড়িতে বলাই খিলখিল করে হেসে উঠল । 

ছমছম — অন্ধকার রাস্তায় যেতে রহিমের গা ছমছম করতে লাগত । 

স্তরে স্তরে ― মানুষের মনের স্তরে স্তরে কতই না গোপন ইচ্ছা জেগে থাকে । 

দেখে দেখে — বাগানের নতুন চারাগাছগুলি দেখে দেখে বলাইয়ের আশ মেটে না ।

বসে বসে ― নৃপেনবাবু বসে বসে বাগানের দেখভাল করেন । 

ড্যাবা-ড্যাবা — বলাই ড্যাবা ড্যাবা চোখ মেলে অবাক হয়ে সব দেখত । 

ছোটো ছোটো — বাগানের ছোটো ছোটো চারাগাছগুলি সদ্যোজাত শিশুর মতো । 

অহি-নকুল — রামবাবুর সঙ্গে পাড়ার ক্লাবের অহি – নকুল সম্পর্ক । 

জোড়াতাড়া — বিপদের সময় সে জোড়াতাড়া দিয়ে কাজ চালিয়ে নিল । 

ঝম্-ঝম্ — জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ঝঝম্ বৃষ্টি দেখতে ভালো লাগে । 

( খ ) টীকা লেখঃ 

বলাই , শিমল গাছ , ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী , খোঁয়াড় । 

উত্তরঃ ১। বলাই — নিঃসন্তান কাকা কাকিমার কাছে মাতৃহীন বলাই থাকে । সংসারে কাকিমা তার সঙ্গী এবং অপর এক সঙ্গী হল বিশ্বপ্রকৃতি। পূর্ব আকাশে পুঞ্জীভূত কালোমেঘ ভিজে হাওয়ার শ্রাবণ – অরণ্যের গন্ধ ওর মনে বয়ে নিয়ে আসে । সে তার শরীরে বৃষ্টি পড়ার শব্দ অনুভব করে । বসন্তের পুষ্পিল শালের সুবাসে সে সুবাসিত হয়ে ওঠে। 

বলাই ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল মানসিকতার অধিকারী । কেউ গাছের ফুল তুললে , গাছে আঘাত করলে বা শাখা ভাঙলে ওর মনে বড়ো কষ্ট হত । ঘাসিয়াড়ার যন্ত্রে যেদিন ঘাস , ছোটো বেগুনি হলুদ ফুল , ছোটো কালমেঘ লতা , অতি ছোটো নিমের চারা কাটা পড়ে সেদিনটা ওর বড়ো দুঃখের দিন । বাগানের রাস্তার মাঝখানে একটি শিমূল চারার জন্ম হতে দেখে বলাইয়ের আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায় । সে দুবেলা চারাটিতে জল দেয় , কতটা বেড়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে । প্রকৃতিপ্রীতির কারণে সে গাছগাছালির সঙ্গে যে নিবিড় আত্মীয়তা অনুভব করে— সেই উপলব্ধি সংসারে অপর কারোও ছিল না । 

২। শিমূল গাছ – বলাইয়ের কাকার বাগানে যাবার পথে খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই গজিয়ে উঠেছিল একটি শিমূল গাছ । বলাইয়ের নিত্য পরিচর্যায় সে গাছ দিনে দিনে বাড়েও দ্রুত , কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না । শিমূল গাছের বাড়ন্ত পাতা দেখে বলাই চমৎকৃত হয় । নিজের আনন্দ প্রকাশের জন্য কাকাকে দেখাতে ছুটে যায় । কিন্তু কাকা গাছটির বৃদ্ধিতে অখুশি ছিলেন । তাই বলাইয়ের বাবা বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে প্রথমে বলাইকে সিমলেয় নিয়ে গেলে বলাইয়ের অনুপস্থিতিতে শিমূল গাছটি কেটে ফেলেন । বলাই বাবার কাছে চলে গেলেও শিমূল গাছটির জন্য তার চিন্তা থাকত । তাই সিমলে থেকে বিলেত যাবার পূর্বে তার বন্ধু শিমুল গাছটির ফটোগ্রাফ চেয়ে পাঠায় । 

৩। ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী — ছোটোরা রূপকথার গল্প শুনতে খুব পছন্দ করে । ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী রূপকথার গল্পের এক আশ্চর্য পাখি এবং পাখিনী , যারা অতীত ও ভবিষ্যত দেখতে পায় । রাজকুমার বিদেশ বিভুঁয়ে যখন পথ খুঁজে পায় না , কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারে না তখন এই ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী তাকে সঠিক পথের নির্দেশ দেয় । মাতৃহীন বলাই কাকিমার কাছে ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমীর গল্প শুনত । 

৪। খোঁয়াড় — অপরাধী গোরু , ছাগল ইত্যাদি পশুকে আটকে রাখার জায়গা বিশেষ । খোঁয়াড়ে গোরু , ছাগল জমা পড়লে পশুর মালিককে সেখান থেকে জরিমানা দিয়ে ছাড়াতে হয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলাই গল্পে এই শব্দটিতে জীবজন্তুকে এক সঙ্গে মিলিয়ে রাখার কথায় এটি বলেছেন । তাঁর মতে মানুষের মধ্যে বাঘ গোরুকে এক খোঁয়াড়ে পুরে দেওয়া হয়েছে । মানুষ এখানে খোঁয়াড়ের প্রতীক ।

৩। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) ছেলেবেলা থেকে বলাইয়ের কী অভ্যাস ছিল ? 

উত্তরঃ ছেলেবেলা থেকে বলাইয়ের অভ্যাস ছিল চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখার । 

( খ ) কখন , কেমন করে বলাইয়ের অন্তর – প্রকৃতিতে ঘন রং লাগে ? 

উত্তরঃ ছাদের উপর বিকেলবেলায় রোদ্দুর যখন পড়ে আসে , মাঘের শেষে আমের বোল ধরে তখন বলাইয়ের মনের অন্তরে ঘন রঙ লাগে । 

( গ ) বস্তুত আমরা কোন পদার্থকে মানুষ বলে থাকি ?

উত্তরঃ বস্তুত আমরা মানুষ বলে থাকি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে দেয় । 

( ঘ ) ‘ কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে— এখানে ‘ ওর ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কেউ গাছের ফুল তুললে ওর বাজে কেন ? ওর প্রকৃতি কেমন ? 

উত্তরঃ এখানে ‘ ওর ’ বলতে বলাইকে বোঝানো হয়েছে । বলাই খুব সংবেদনশীল মানসিকতার অধিকারী । কেউ গাছের ফুল তুললে ওর মনে ব্যথা লাগে । 

( ঙ ) বলাইয়ের সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্য কী কী করতো ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দু’পাশের গাছগুলিকে মারতে মারতে চলে , কেউ বা বকুল গাছের ডাল ভেঙে দেয় । 

( চ ) একদিন বলাই ওর কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে কী বলেছিল ? 

উত্তরঃ একদিন বলাই ওর কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল , ঘাসিয়াড়া যেন বাগানের সদ্য বেরুনো গাছগুলো ছেঁটে না ফেলে । 

( ছ ) বলাই তার রক্তের মধ্যে বিশ্বপ্রাণের কী কী বাণী শুনতে পেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলাই তার রক্তের মধ্যে বিশ্বপ্রাণের ‘ আমি থাকব ’ বাণীটি শুনতে পেয়েছিল । 

( জ ) বলাই কখন চমকে উঠে কাকিমাকে কী অনুরোধ করেছিল ? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে জন্মানো প্রিয় শিমূল গাছটিকে কাকা কেটে ফেলবেন শুনে চমকে উঠে বলাই কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করেছিল কাকা যেন গাছটিকে কেটে না ফেলে ।

( ঝ ) লেখক তাঁর ভাইপোকে কী বলে শিমূলগাছটা কেটে ফেলার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা শিমল গাছটির পরিবর্তে খুব ভালো কতগুলি গোলাপ চারা এনে দেবেন অথবা বেড়ার ধারে অন্য শিমল চারা পুঁতে দেবেন তা সুন্দর লাগবে । 

( ঞ ) সিমলা থেকে বলাইয়ের চিঠি এলে কাকিমা কী করেছিলেন ? 

উত্তরঃ সিমলা থেকে বলাইয়ের চিঠি এলে কাকিমা বলাইয়ের কাকাকে শিমূল গাছের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবার কথা বলেছিলেন । 

৪। চার / পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও : 

( ক ) বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি কেন ? 

উত্তরঃ নিঃসন্তান কাকিমার কাছে মাতৃহীন বলাই মানুষ হচ্ছিল । দশ বছর তাদের ঘর ভরে ছিল সে । হঠাৎ বলাইয়ের বাবা বিলেত থেকে ফিরে এসে তাকে বিলেতি কায়দায় শিক্ষা দেবার জন্য প্রথমে সিমলেয় পরে বিলেতে নিয়ে যান । বিলেত যাবার পূর্বে সে শিমূলগাছের একটি ফটোগ্রাফ চেয়ে পাঠায় । কাকিমা হঠাৎ জানতে পারেন বলাইয়ের কাকা শিমূল গাছটি কেটে ফেলেছেন । সেই কারণে দুঃখে অভিমানে তিনি দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি । 

( খ ) বিলেত যাওয়ার পূর্বে বলাই সিমলে থেকে কাকিকে চিঠিতে কী লিখে পাঠিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বিলেত যাওয়ার পূর্বে বলাই সিমলে থেকে কাকিমাকে তার কাঁচা হাতের লেখা চিঠিতে একটি আবেদন রেখেছিল , সে তার বন্ধুর একটি ফটোগ্রাফ চায় । এই বন্ধু হল বাগানে যাবার খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝে গজিয়ে ওঠা এবং বলাইয়ের পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা শিমূল গাছটি । প্রবাসে বন্ধু শিমূল গাছের প্রতিকৃতি তাকে আনন্দ দেবে , দূরে থেকেও ফটোগ্রাফের মধ্যে তার সান্নিধ্যের উত্তাপ অনুভব করবে । 

( গ ) বলাই কেন ছোটবেলা থেকেই কাকিমার কাছেই লালিত পালিত হয়েছে ? 

উত্তরঃ বলাই তার মায়ের কোলে থাকতেই বলাইয়ের মার মৃত্যু হলে বলাই মাতৃহীন হয়ে পড়ে । বলাইয়ের বাবা শোকে বিলেতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিখতে চলে গিয়েছিলেন । লেখক এবং তার স্ত্রী ছিলেন নিঃসন্তান , সেইজন্য লেখকের স্ত্রী অর্থাৎ বলাইয়ের কাকিমার কাছে বলাই লালিত – পালিত হয়েছে । 

( ঘ ) বলাই কখন চমকে উঠেছিল এবং কেন ? 

উত্তরঃ বাগানে যাবার খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা শিমুল গাছটি বলাইয়ের আবিষ্কার । কাকাকে একদিন খুব উৎসাহভরে গাছটি দেখিয়েও ছিল । কিন্তু গাছটির বাড়বাড়ন্ত দেখে লেখক অর্থাৎ বলাইয়ের কাকা সিদ্ধান্ত নেন মালীকে বলবেন গাছটি উপড়ে ফেলে দিতে।এইকথায় বলাই চমকে উঠেছিল । 

( ঙ ) একদিন লেখককে তাঁর ভাইপোটি কোথায় , কখন , কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ একদিন সকালে লেখক একমনে খবরের কাগজ পড়ছিলেন । এমন সময় তাঁর ভাইপো বলাই তাকে তাড়াহুড়ো করে ধরে নিয়ে বাগানে যায় । বাগানে যাওয়ার খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা চারাগাছের ছোট চারা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে গাছটির নাম । শিশু শিমূল গাছটি দেখে আর এক শিশু বলাইয়ের অন্তরে মমত্ববোধ জেগে ওঠে । 

৫। তাৎপর্য বিশ্লেষণ করোঃ 

( ক ) “ এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার । ” 

উত্তরঃ ‘ বলাই ’ গল্পের নায়ক হল ছোট্ট বালক বলাই । বলাই মাতৃহীন ছেলেমানুষ । মায়ের মৃত্যুর পর থেকে নিঃসন্তান কাকির কোলে বলাই মানুষ । কাকির কোলে বসে এখনও গলা জড়িয়ে ধরে যে কোন ব্যাপারে অসংকোচে আবদার করে । জন্মসূত্রে সে মানব সন্তান হলেও তার মধ্যে উদ্ভিদস্বভাব এক ব্যতিক্রমী ব্যাপার । মানুষ ক্রমবিবর্তনের ধারায় নানা জীবের উদ্ভব ইতিহাসের শেষ অধ্যায়ে এসেছে পৃথিবীতে । তাই মানুষের মধ্যে গা ঢেকে আছে উদ্ভিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জীবের প্রকৃতিগত কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য । কোটি বৎসর আগে পৃথিবীতে ভূস্তর সৃষ্টির পরে প্রাণের প্রথম বিকাশস্বরূপ উদ্ভিদের জন্ম । উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যসমূহ বলাইয়ের মধ্যে প্রবলভাবে আছে । 

বলাইয়ের প্রকৃত বয়স — গাছেদের প্রথম জন্মের বয়স ধরা হলে অঙ্কটা দাঁড়ায় কোটি বছর আগেকার । সেই সময়কার মানবসন্তান হয়ে জন্মানোর বয়স যাই হোক না কেন বলাইয়ের স্বভাব ও প্রকৃতির মধ্যে গা ঢেকে থাকা উদ্ভিদ স্বভাবের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ ক্রিয়াশীল । 

( খ ) “ এতদিনে এইসব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে । ” 

উত্তরঃ বলাইয়ের দশ বছর বয়সকালে নিঃসন্তান কাকিমার কোল খালি করে তার বাবা বিদেশী কায়দায় শিক্ষা দেবেন বলে বলাইকে নিয়ে চলে যান । তারপরে দুবছর চলে গেলেও মাতৃসমা বলাইয়ের কাকিমা গোপনে অশ্রু বিসর্জন করেন । বলাইয়ের শূন্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেঁড়া একপাটি জুতো , রবারের ফাটা বল , জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বইগুলো নড়াচড়া করে স্মৃতিভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন । 

বলাইয়ের কাকিমা কোমল প্রাণের স্নেহবৎসলা নিঃসন্তান নারী । তাঁর নিঃসন্তান মাতৃহৃদয়ের সমস্তটুকু স্নেহবাৎসল্য মা – মরা দুধের শিশু বলাইকে ঘিরেই উৎসারিত । বলাই – শূন্য কাকিমার মাতৃহৃদয়ের কাতর চিত্র বড়ই বেদনাদায়ক হলেও বারো বছর পর বলাই আর আগের ছোট্ট শিশুটি নেই , তার শরীরে ও মনে বহু পরিবর্তন ঘটে গেছে । 

( গ ) “ বছর খানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল । ” 

উত্তরঃ বলাইয়ের যত্নে শিমূল গাছটা বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে “ নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠেছে ” । লেখক অর্থাৎ বলাইয়ের কাকা বাগানের রাস্তার অজায়গায় শিমূল গাছটাকে রেখে দিতে বাধ্য হয়েছেন মাতৃহীন বলাইয়ের আবদার ও তাঁর স্ত্রী অনুরোধে । রাস্তার মাঝখানেই কাউকে রেয়াত না করে ঐ গাছটির নির্লজ্জভাবে লম্বা বেড়ে ওঠা দেখে লেখকের মনে হয়েছে যে গাছটি নিতান্তই নির্বোধ , সেজন্য চলাচলের রাস্তার মাঝখানে নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠছে । 

( ঘ ) “ তারা ওর চির – অসমাপ্ত গল্প । ” 

উত্তরঃ বাগানের মাটির দিকে তাকিয়ে বলাই সীমাহীন কৌতূহল নিয়ে অঙ্কুরিত বীজের ক্রমবিকাশ লক্ষ্য করত । বীজ কীভাবে অঙ্কুরিত হচ্ছে , অঙ্কুরিত বীজ থেকে কীভাবে গজিয়ে উঠছে কচি পাতা এবং তারপরে কী হবে । এসমস্ত নিয়েই তার ছিল অসীম কৌতূহল , সীমাহীন ঔৎসুক্য আর অনন্ত জিজ্ঞাসা । এ যেন শিশু – শ্রোতার গল্প শোনার অদম্য আকাঙ্ক্ষার মতো । তাই ঐ শিশু চারাগাছগুলির কাছে ছিল চির – অসমাপ্ত গল্প ।

( ঙ ) “ আমি চিরপথিক , মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব , রৌদ্রে বাদলে , দিনে – রাত্রে ।” 

উত্তরঃ পৃথিবীর বুকে জীবনের ক্রমবিবর্তনের ধারায় উদ্ভিদ সকলেরই পূর্বে জন্মেছিল । উদ্ভিদ হল সৃষ্টির আদিমতম প্রাণ । তাই প্রাণের বিকাশের জয়যাত্রায় উদ্ভিদকে সকল জীবের অগ্রগামী বলা হয়েছে । 

সূর্যের কিরণই হল জীবনের মূল উৎস তথা সমস্ত জীবজগতের প্রধান উপাদান । সূর্যকিরণের জন্যই জলে এবং স্থলে উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে । তাই গাছ তার প্রাণধারণ ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সূর্যের করুণা ও কৃপাপ্রার্থী । লেখক কল্পনা করেছেন যে , প্রাণদাতা সূর্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁর কৃপাভিক্ষা করার জন্যই গাছেরা নমস্কারের ভঙ্গিতে হাতজোড় করে সূর্যের সঙ্গে কথা বলে। 

৬। রচনামূলক প্রশ্নোত্তরঃ

( ক ) বলাইয়ের চরিত্র আলোচনা করো । 

উত্তরঃ উদ্ভিদপ্রেমিক বলাইয়ের আত্মীয় পরিজন বন্ধুবান্ধবগণ গাছপালার ব্যাপারে তার সমব্যথী বা সহমর্মী নয় । ঘাসিয়াড়া গাছ কাটার সময় ছোট চারাগাছ , লতাগুল্ম নির্বিচারেও নির্মমভাবে হত্যা করতে থাকে , তা দেখে বলাই যে ব্যথা – বেদনা – দুঃখ – যন্ত্রণা পায় তা বোঝবার মতো সমব্যথী কেউ নেই । তার সঙ্গী – সাথীগণ তাকে রাগানোর । জন্য গাছের ফুল ছেঁড়ে , ডাল ভাঙে , তাতে তার যে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা হতে থাকে , তা অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করার মতো কেউ নেই । সেজন্য তার মনে হয় তার ব্যথাগুলো তার একেবারে নিজস্ব , একার । 

লেখকের ভাইপো বলাই ধীর স্থির ও চুপচাপ স্বভাবের । এ সম্পর্কে লেখক বলেছেন , “ ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ , চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস , নড়েচড়ে বেড়ানো নয় । ” বলাই স্বল্পভাষী , কিন্তু চিন্তাশীল । গাছের অঙ্কুরোদগম থেকে ক্রমবৃদ্ধি নিয়ে বলাইয়ের অশেষ কৌতূহল ও ঔৎসুক্য সীমাহীন । জানার কৌতূহলে জিজাসা অন্তহীন । তা নিয়ে বলা হয়েছে , “ নতুন অঙ্কুরগুলো ফুটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসুক্যের সীমা নেই । ” …. তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে , তারপরে ? 

গাছের প্রতি সমব্যথী , সহমর্মী ও সহানুভূতিশীল বলাই । গাছের ফুল তুললে , আঘাত করলে , ডাল ভাঙলে বলাইয়ের বুকে ব্যথা জাগে , উথলে ওঠে কান্না । সে জানে , “ কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই । ” সকলের ওপর বলাইয়ের উদ্ভিদস্বভাব ও প্রকৃতিপ্রীতি । উদ্ভিদস্বভাবের বড়ো পরিচয় “ তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল । ” প্রসঙ্গত তার সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে “ এই ছেলের প্রকৃত বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে যেদিন – ভাবী – অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে । ” আর তাই গাছেদের উদ্‌গত বিশ্বপ্রাণের বাণী তার রক্তে সতত প্রতিধ্বনিত । গল্পটির মধ্যে বলাইয়ের উদ্ভিদপ্রীতির অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে— “ গাছেরা এর পরম আত্মীয় । সে গাছপালার সুখ – দুঃখের সঙ্গে একাত্ম । তাদের প্রতি তার সহমর্মিতা ও সমবেদনার অবধি নেই । ” 

( খ ) ‘ বলাই ’ পাঠটি একটি প্রকৃতি – বিষয়ক গল্প — এই আলোকে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ গল্পকার রবীন্দ্রনাথের বহু সফল ও সার্থক ছোটগল্পের মধ্যে ‘ বলাই ’ হল অন্যতম । বলাই স্বতন্ত্র ধরনের এক ভাবকেন্দ্রিক গল্প । এ ধরনের গল্প কেবল বাংলা সাহিত্যে নয় , বিশ্ব সাহিত্যেও দুর্লভ । ‘ 

বলাই ’ উদ্ভিদপ্রেমিক । গাছের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন সখ্য , পরম আত্মীয়তা । চেয়ে চেয়ে দেখা , মনে মনে ভাবা আর চুপচাপ থাকা স্বভাবের ছেলে বলাই । তার অভিন্ন একাত্মতা গাছের সঙ্গে । তার বয়স যেন কোটি বছর আগেকার , ভূস্তরে যখন গাছের জন্মলগ্ন শুরু হয়েছে সেই আদ্যিকালের বয়স যেন । সে শুনতে পায় তার রক্তে বিশ্বপ্রাণের ধাত্রী যে গাছ তার বাণী । দীর্ঘাকৃতি দেবদারুর ছায়ায় গিয়ে কখনও একা দাঁড়ায় , আর তখনই গা ছমছম করা শিহরণের মাঝে যেন দেখতে পায় প্রকাণ্ড গাছের ভেতরকার মানুষকে । সে মানুষ এত পুরনো যে হয় আদ্যিকালের দাদামশাই , নয়তো একদিন রূপকথার কালের । বীজের অঙ্কুরোদগম থেকে প্রতিদিনকার বৃদ্ধি অসীম কৌতূহল নিয়ে সে দেখে। 

গাছেদের প্রতি ছিল তার গভীর সমবেদনা ও মমত্ব । ঢিল ছুঁড়ে কেউ ফল পাড়তে চাইলে , গাছকে লাঠি দিয়ে কেউ প্রহার করলে , গাছের পাতা কেউ ভাঙলে তার বুকে ব্যথা বাজে । সে উদ্‌গত কান্না লুকোয় , পাছে পাগলামি ভেবে তাকে কেউ উপহাস করে । ঘাসিয়াড়া ঘাসের বুকে লুকানো আগাছা গুল্ম নির্বিচারে সাফ করলে সে বেদনায় অধীর হয় । অনুভব করতে পারে এ ব্যথা সম্পূর্ণ তার একার , দ্বিতীয় সহমর্মী তার কেউ নেই , গাছ যেন তার প্রাণের দোসর প্রতিরূপ । 

বলাই একটি ভাবসমৃদ্ধ গল্প হলেও লেখক প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে বলাই চরিত্রকে উপস্থাপিত করেছেন । সৃষ্টির আদি প্রাণের ধারক যে গাছ তার প্রতিরূপ , প্রাণের দোসর । গল্পের ভাববস্তুর সঙ্গে বলাই একাত্ম হলেও চরিত্রে সম্পদে সে অনন্য অদ্বিতীয় , সেইজন্য বলাই গল্পটিকে প্রকৃতি – বিষয়ক গল্প বলা যায় । 

( গ ) “ তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে । ” — এখানে ‘ তাদের ’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? ‘ ওর ’ – ই বা কে ? ‘ তাদের ’ এবং ‘ ওর ’ চিরকালের সম্পর্কটা কী তা আলোচনা করো । 

উত্তরঃ এখানে ‘ তাদের ’ বলতে সদ্য গজিয়ে ওঠা কচি কচি পাতাকে বোঝানো হয়েছে । ‘ ওর ’ বলতে বলাইকে বোঝানো হয়েছে । 

বলাই চরিত্রটি গাছের ‘ প্রতিরূপ ’ এক চরিত্র । তার অভ্যাস ছিল কেবল চেয়ে চেয়ে চুপচাপ দেখা । গাছপালা যেমন নড়াচড়া করে না , তেমনি বলাইও নড়াচড়া করত না । গাছপালার মূল সুরগুলো ছিল তার প্রকৃতিতে প্রবলভাবে প্রকট । পুব আকাশে কালো মেঘ জমলে সে পুলক বোধ করত । ওর মনটাতে ভিজে হাওয়া এনে দিত শ্রাবণ – অরণ্যের গন্ধ । 

বলাইয়ের ভাবে ভোলা চোখদুটি যে বড়ো বড়ো গাছ বা আকাশকে খুঁজে বেড়ায় , কেবল তাই নয় , মাটির দিকে তাকিয়ে অঙ্কুরিত গাছের রহস্যও সে খুঁজে পায় । বীজ থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা অঙ্কুরের কোঁকড়ানো মাথাটুকু দেখে তার ঔৎসুক্যের সীমা থাকে না । গাছের ওপর কোনরকম অত্যাচার সে সহ্য করতে পারে না । বাড়ির বাগানে ‘ ঘাসিয়াড়া ’ এসে যেভাবে নিষ্ঠুর নিড়ানি দিয়ে ঘাস এবং ছোটো চারাগাছ কেটে নিয়ে যায় , তা দেখে তার হৃদয় ব্যথিত হয় । গাছের জন্য এই মর্মপীড়া এবং ব্যথাবোধ হল বলাইয়ের একান্ত নিজের ব্যথা যার কথা সে কাউকে বলতে পারে না ।

মাঘের শেষে আমের বোল ধরলে বলাইয়ের রক্তের ভিতরে এনে দিত নিবিড় আনন্দ । তার মনে জাগ্রত করত কিসের যেন এক অব্যক্ত স্মৃতি। ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবন প্রকৃতিকে যেমন চারিদিক থেকে আনন্দে মাতোয়ারা করে তোলে , প্রকৃতির গায়ে লাগিয়ে দেয় ঘন রঙ , বলাইকেও তেমনি এই আনন্দ মাতোয়ারা করে তুলত । সে খুব স্বচ্ছন্দ অনুভব করত প্রকৃতির এই আনন্দে । 

বলাইয়ের ভেতর প্রচ্ছন্ন আছে অনন্তকালের আদিম পৃথিবীর স্মৃতি । বৃষ্টি ধোয়া সকালে সামনের পাহাড়ের শিখরের ফাঁক দিয়ে দেবদারু বনের ওপর যখন কাঁচা সোনার মতো রোদ্দুর এসে পড়ে , সেইসময় দেবদারু গাছের নীচে দাঁড়ালে বলাই ওই সব গাছের ভেতরকার মানুষকে দেখতে পায় । কোটি কোটি বছর আগেকার বিশ্বপ্রাণের মুকধাত্রী যে গাছ তাদের বিশ্বপ্রাণের বাণী বলাই কেমন করে যেন নিজের রক্তে শুনতে পেয়েছিল । বাগানে সদ্যোজাত শিমূল গাছটি দেখে তার উৎসাহ সীমাহীন । বেয়াড়া চেহারায় বেড়ে ওঠা শিমুল গাছটিকে কাকা কেটে ফেলবেন শুনে সে চমকে ওঠে । ছুটে গিয়ে কাকিকে অনুরোধ জানায় কাকাকে বারণ করার জন্য । সেইজন্য সিমলাতে চলে গিয়েও বলাই গাছটার কথা ভুলতে পারে না । গাছটা কেটে ফেলার ব্যথা কাকিমার বুকে যেন ক্ষত সৃষ্টি করেছিল কেননা কাকিমা জানতেন উদ্ভিদপ্রেমিক বলাইয়ের প্রাণের দোসর ছিল শিমূল গাছটি । 

( ঘ ) ‘ বলাই ‘ গল্পের ধ্যমে ওর প্রকৃতিপ্রীতির পরিচয় দাও । 

উত্তরঃ ‘ বলাই ’ গল্পের প্রধান চরিত্র বালক বলাই । খুব শিশু অবস্থা থেকে বলাই মাতৃহারা এবং নিঃসন্তান কাকা – কাকিমার কাছে পরম স্নেহে যত্নে মানুষ । বলাই কথা বলার চেয়ে চুপচাপ দেখতে ভালোবাসে । শ্রাবণ – অরণ্যের ভিজে হাওয়ার গন্ধে তার ভিতরটা পরিপূর্ণ হয় । সে উপলব্ধি করে সমস্ত শরীর দিয়ে ঝমঝম বৃষ্টির আওয়াজ , বিকালের রোদপড়া আকাশ থেকে তার আদুল গা কী যেন সংগ্রহ করে , শেষ মাঘের আমের বোল ধরা নিবিড় আনন্দ সে উপলব্ধি করে । একলা বসে আপন মনে গল্প করতে তার ইচ্ছা হয় । ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকা বলাই কম কথা বলে , মনে মনে অনেক বেশি ভাবে । 

চারপাশের মানুষজনের চেয়ে বলাইয়ের অনেক বেশি যোগ তৃণলতা গাছপালার সঙ্গে । তার উদ্ভিদপ্রীতি ও উদ্ভিদস্বভাব তার স্বভাব – প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য । কাকার সঙ্গে সে একবার পাহাড়ে গেলে , সেখানে ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের ঢালকে তার মনে হয়েছিল । চলমান , ফলে সে তাতে গড়াত , ঘাসের ডগায় যত সুড়সুড়ি লাগত তত হাসত । রাতে বৃষ্টি হওয়ার পর সকালে দেবদারু গাছের ছায়ায় তাকিয়ে থাকত অবাক চোখে । 

বলাইয়ের নিত্যদিনের প্রতি মুহূর্তকে ঘিরে থাকত তার চারপাশের গাছপালা ও তৃণলতা । বাগানে মাটির দিকে চোখ রেখে খুঁজে বেড়াত কোথায় কখন কোঁকড়ানো মাথা নিয়ে আলোতে জেগে উঠেছে বীজের খোলার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা অঙ্কুর , কেমন করে সবুজ পাতা মেলে অঙ্কুরিত বীজ ধীরে ধীরে নিজের প্রাণসত্তাকে মাটির বুকে ক্রমশ প্রতিষ্ঠা করছে । গাছের ক্রমবৃদ্ধি সম্পর্কে তার ছিল সীমাহীন জিজ্ঞাসা । বলাইয়ের আত্মীয়তা যে উদ্ভিদ সমাজের সঙ্গে , তাদের আঘাত বেদনার সমব্যথী ও সহমর্মী ছিল বলাই । গাছেদের ব্যথা বেদনায় সে যে ব্যথিত হত তা প্রকাশে ছিল তার সংকোচ , কিছু ব্যথা ছিল যা তার সম্পূর্ণ একলার। 

দিনে পৃথিবী যখন তার বুকে ভাবী অরণ্যের জন্মের ক্রন্দন শুনতে পেয়েছিল বলাই যেন সেইরূপে আদিম অরণ্যের ভাষা নিজের মধ্যে শুনতে পায় । শুনতে পায় বিশ্বপ্রাণের প্রাণী । 

আসল কথা বলাই হল প্রকৃতির প্রতিরূপ , গাছপালার সঙ্গেই তার নিবিড় ভালোবাসা । এদের সবারই স্বাচ্ছন্দ্যেই তার সুখ । 

৭। পাঠনির্ভর ব্যাকরণ : 

( ক ) নিচের শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ লেখো : 

বিস্তৃত , প্রচ্ছন্ন , অব্যক্ত , অন্তর , প্রকাণ্ড , অসমাপ্ত , নিষ্ঠুর , অমৃত , নির্লজ্জ , নির্বোধ , বন্ধুর , ক্ষত , প্রতিরূপ , নিবিড় । 

উত্তরঃ বিস্তৃত — সংকীর্ণ ।

প্রচ্ছন্ন — উন্মুক্ত ।

অন্তর — বাহির ।

প্ৰকাণ্ড — ক্ষুদ্র ।

অসমাপ্ত — সমাপ্ত ।

নিষ্ঠুর — দয়ালু ।

অমৃত — গরল ।

নির্লজ্জ — লজ্জাশীল ।

নির্বোধ — বুদ্ধিমান ।

ক্ষত ― অক্ষত ।

বন্ধুর — মসৃণ ।

প্রতিরূপ — রূপ ।

নিবিড় — নিঃসঙ্গ ।

( খ ) রেখাঙ্কিত পদগুলির কারক – বিভক্তি নির্ণয় করো :

১। একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি । 

উত্তরঃ অপাদান কারকে ‘ এ ’ বিভক্তি , কর্মকারকে ‘ শূন্য ’ বিভক্তি । 

২। বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে পড়তে দিলেন । 

উত্তরঃ করণ কারকে ‘ এর ’ বিভক্তি । 

৩। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে । 

উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘ এর ’ বিভক্তি । 

৪। বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না । 

উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘ এর ’ বিভক্তি , কর্মকারকে ‘ শূন্য ’ বিভক্তি । 

৫। বলাই সেই দেবদারু বনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । 

উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘ এ ’ বিভক্তি । 

( গ ) পদ পরিবর্তন করো : 

সুন্দর , বিলেত , চিন্তা , গোপন , লোভ , তমৎকৃত , প্রত্যহ , বিস্তৃত , অন্তর , পুষ্প , উৎসুক , প্রস্তাব গ্রহণ , গম্ভীর , বন্ধুর , অসংগত । 

উত্তরঃ সুন্দর — সৌন্দর্য ।

চিন্তা — চিন্তনীয় ।

লোভ — লোভনীয় ।

বিলেত — বিলেতি ।

গোপন — গোপনীয় ।

চমৎকৃত ― চমৎকার ।

প্রত্যহ — প্রাত্যহিক ।

বিস্তৃত — বিস্তার ।

অন্তর — আন্তরিক ।

পুষ্প — পুষ্পিত ।

উৎসুক — ঔৎসুক্য ।

গ্রহণ — গ্রহণীয় ।

প্রস্তাব ― প্রস্তাবিত ।

গম্ভীর — গাম্ভীর্য ।

বন্ধুর — বন্ধুরতা ।

অসংগত ― সংগীত ।

৮। যোগ্যতা বিচার : 

( ক ) প্রকৃতি – প্রীতির প্রয়োজনীয়তা কী ? 

উত্তরঃ চেতন ও অচেতন উভয়কে নিয়েই আমাদের পরিবেশ । উভয়কে নিয়েই অখণ্ড পৃথিবী । একই সঙ্গে প্রকৃতির দুটি রূপ মেলে , একটি প্রয়োজনের অপরটি আনন্দের । এই বৈষম্যের সামঞ্জস্য বিধানেই মানব জীবন ও সভ্যতা সুন্দর হতে পারে । অরণ্য থেকে অরণি সংগ্রহ করে আমরা নানারকমের প্রয়োজন মেটাই । কিন্তু সংগ্রহ সীমাহীন হলে বৃক্ষশূন্য মরুভূমি তৈরি হয় । আগ্রাসী যন্ত্রসভ্যতার প্রসারে বায়ু ও জল দূষিত হয়ে থাকে । জলাভূমি ভরাট করে অথবা চাষের জমিতে বসতি গড়ে তুলে আমরা পরিবেশকে ধ্বংস করে থাকি । সবুজ বিপ্লবের প্রয়োজনে বনভূমি হ্রাস পায় , রাসায়নিক সারের ব্যবহারে বিভিন্ন প্রজাতির জীব ধ্বংস হয় , শেষপর্যন্ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই । 

কিন্তু প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করলে সমস্ত দেশ সমেত পৃথিবীকে বাঁচানোর সমস্যা হবে । সেইজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা ও কর্মপন্থা মাথায় রেখে পরিকল্পনা আবশ্যক । আগামীদিনে মানুষের কাছে কোনো বড়ো রকমের ধ্বংসের পরিবেশ যাতে গড়ে না ওঠে , সেইজন্য প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন । 

( খ ) মানুষ-জীবজন্তুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক আলোচনা করো । 

উত্তরঃ জীবজগতের বিবর্তনের মধ্যে অরণ্যের বুকেই মানুষের জন্ম । মানুষের জীবন ধারণের জন্য আহার দরকার । অরণ্যের ফলমূল মানুষের প্রথম আহার জুগিয়েছে । কেবল মানুষ নয় , অন্যান্য প্রাণীরও আহার জুগিয়েছে অরণ্য । অরণ্যের ডাল দিয়েই মানুষ হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করেছে । বাতাসের দূষণে জীবকুল বিপন্ন হয়। সেজন্য কার্বন ডাই – অক্সাইডের মতো গরল গ্রহণ করে শ্বাস – প্রশ্বাসের জন্য আবশ্যকীয় অক্সিজেন উৎপন্ন করেছে । মানবকুলের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত অরণ্য বন্যা ও ভূমিক্ষয় থেকে আমাদের রক্ষা করেছে । জৈব সারের সহযোগিতায় ভূমিকে উর্বর করেছে । সভ্য মানুষের কাগজ, কাঠ , ভেষজ ও অন্যান্য বহু শিল্পের সম্ভার অরণ্যেরই উপহার । অরণ্যের শান্ত স্নিগ্ধ মাধুর্যময় পরিবেশে প্রাচীন ভারতীয় ও অন্যান্য সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । অরণ্যই প্রাণের সুতিকাগার । অরণ্য পশুপাখি সকলের অভয় আশ্রয় । অরণ্যের কাছেই মানুষের জন্ম জন্মান্তরের অপরিশোধনীয় ঋণ ।

( গ ) বলাইয়ের সঙ্গীরা কী কী উপায়ে বলাইকে খ্যাপাবার চেষ্টা করত ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সঙ্গীরা ওকে খ্যাপারার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দুপাশের গাছগুলিতে আঘাত করতে করতে চলত , হঠাৎ বকুল গাছের ডাল ভেঙে ফেলত এবং গাছের ফুল তুলত ইত্যাদি । ওর বয়সের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে আমলকী পাড়ে , বলাই কিছু বলতে পারে না , সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায় । 

জ্ঞাতব্য বিষয় : প্রকৃতি – বিষয়ক রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার বই আছে । তার নাম হল ‘ বনবাণী ’ । রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিকে বড়ো ভালোবাসতেন । তিনি শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন । সেই উৎসব আজও প্রচলিত আছে । ৮ ই জুন তারিখ হল আমাদের বিশ্ব পরিবেশ দিবস । 

৯। ব্যাকরণঃ 

( ক ) পদ পরিবর্তন করো । 

নিক্ষেপ – নিক্ষিপ্ত ।

আঘাত — আঘাতপ্রাপ্ত ।

খণ্ড — খণ্ডিত ।

ফল ― ফলন্ত ।

কল্পনা — কল্পিত ।

উজ্জ্বল ― ঔজ্জ্বল্য ।

আতঙ্ক ― আতঙ্কিত ।

শ্রান্ত ― শ্রান্তি ।

আনন্দ — আনন্দিত ।

উদ্ধার — উদ্ধৃত । 

ロ নিজে করো । 

স্ত্রী , চুরি , দুর্বল , পাথর , আহার , সংকীর্ণ , শৃঙ্খল , অবরোধ , গোপন, আবিষ্কার , নিদ্রা , আশ্রয় , ভুল , নিরুদ্দেশ , অংশ , কুলীন , আশ্বাস , তন্ত্র , চমক । 

উত্তরঃ স্ত্রী — স্ত্রৈণ ।

চুরি ― চৌর্য ।

দুর্বল — দুর্বলতা ।

পাথর ― পাথুরে ।

আহার — আহার্য ।

সংকীর্ণ — সংকীর্ণতা ।

শৃঙ্খল ― শৃঙ্খলতা ।

অবরোধ — অবরুদ্ধ ।

গোপন — গোপনীয়তা ।

আবিষ্কার — আবিষ্কৃত ।

নিদ্রা — নিদ্রালু ।

আশ্রয় — আশ্রিত ।

ভুল ― ভুলো ।

নিরুদ্দেশ ― নিরুদ্দিষ্ট ।

অংশ — আংশিক ।

কুলীন — কৌলিন্য ।

আশ্বাস — আশ্বসিত ।

তন্ত্র — তান্ত্রিক ।

চমক — চমকিত ।

( খ ) প্রত্যয় কাকে বলে ? প্রত্যয় কত প্রকারের ? প্রত্যেক প্রকার প্রত্যয়ের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে লেখো । 

উত্তরঃ ধাতু বা শব্দ প্রকৃতির সাথে যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যোগ করে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে প্রত্যয় বলে । প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার । কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয় । 

কৃৎপ্রত্যয — ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা হয তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে । যেমন— 

বাংলা কৃৎ প্রত্যয় – চল্ + অন্ত = চলন্ত ।

কাঁদ্ + উনি = কাঁদুনি ।

সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় – দৃশ্ + অনট্ = দর্শন ।

কৃ + তব্য = কর্তব্য । 

তদ্ধিত প্রত্যয়— শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে । যেমন— 

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় — বাবুগিরি — বাবু + গিরি = বাবুগিরি ।

পাটনাই — পাটনা + আই — পাটনাই । 

সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় : 

অপত্য অর্থে = রাধেয় — রাধা + ষ্ণেয় — রাধেয় । 

বিবিধ অর্থে = পার্থিব — পৃথিবী + ষ্ণ = পার্থিব । 

অন্যান্য অর্থে = ভারত + ষ্ণীয় = ভারতীয় । 

প্রত্যয় নির্ণয় করো । 

যেমন — নাচন , রান্না , চড়াই , ডুবারী , পাণ্ডব , গাঙ্গেয় , দৈত্য , দ্বৈপায়ন । 

উত্তরঃ নাচন = নাচ্‌ + অন ( কৃৎপ্রত্যয় ) 

চড়াহ = চড় + আই ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

রান্না = রাঁধ + অনা ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

ডুবাবি = ডুব + আরি ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

পাণ্ডব = পাণ্ডু + ষ্ণ ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

গাঙ্গেয = গঙ্গা + ষ্ণেয় ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

দৈত্য = দিতি + ষ্ণ্য ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

দ্বৈপায়ন = দ্বীপ + ষ্ণয়ন ( তদ্ধিত প্রত্যয় )

( গ ) অশুদ্ধি সংশোধন করো । 

● শব্দ সংশোধন :

আবিস্কার — আবিষ্কার ।

গননা — গণনা ।

নিরব — নীরব ।

নিরোগী ― নিরোগ ।

উচিৎ — উচিত । 

নমষ্কার ― নমস্কার ।

উজ্জ্বল ― উজ্জ্বল ।

জেষ্ঠ্য — জ্যেষ্ঠ ।

অনটন — অনটন ।

স্বরস্বতী — সরস্বতী ।

রামায়ণ — রামায়ণ ।

সন্ধা — সন্ধ্যা ।

ব্যায — ব্যয় ।

বাল্মিকী — বাল্মীকি । 

● নিজে করোঃ 

পৌরহিত্য , ব্যবস্তা , সান্তনা , রসায়ণ , সন্মান , পূর্বাহ্ন , বৈশিষ্ট, বিদ্যান , সাধণা , সদ্যজাত , সন্যাস , নিশিথ , অভ্যস্থ ।

উত্তরঃ                 

● বাক্যাংশের অশুদ্ধি সংশোধনঃ 

আবশ্যক নেই ― আবশ্যকতা নেই । 

নামজাদা লেখক — নামকরা লেখক । 

মুদি দোকান — মুদির দোকান ।

ছোটবেলাকার কথা — ছোটবেলার কথা । 

গোপন কথা — গোপনীয় কথা । 

আমি সম্পূর্ণ নির্দোষী — আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ । 

ছেলেটি অশুদ্ধ সংশোধন করতে পারে না — ছেলেটি বাক্যাংশের অশুদ্ধি সংশোধন করতে পারে না । 

● নিজে করোঃ 

মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর , দেবী দূর্গা দর্শভূজা , আমি সাক্ষী দিতে আদালতে যাব , জ্ঞানমান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন , তিনি আরোগ্য হলেন, অপমান হবার ভয় নেই । 

উত্তরঃ মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর — মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করো। 

দেবী দূর্গা দর্শভূজা — দেবী দুর্গা দশভুজা । 

আমি সাক্ষী দিতে আদালতে যাব — আমি সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাব । 

জ্ঞানমান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন — জ্ঞানবান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন । 

তিনি আরোগ্য হলেন — তিনি আরোগ্য লাভ করলেন । 

অপমান হবার ভয় নেই — অপমানিত হবার ভয় নেই । 

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

১। সমাস নির্ণয়ঃ 

জীবজন্তু = জীব ও জন্তু ( দ্বন্দ্ব সমাস ) 

লোকালয = লোক পূর্ণ আলয় ( মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ) 

ঘাসিয়াড়া = ঘাস কাটে যে ( উপপদ তৎপুরুষ ) 

নিঃসন্তান = নাই সন্তান যার ( নঞ বহুব্রীহি ) 

প্রতিরূপ = রূপের সদৃশ ( অব্যয়ীভাব ) 

২। প্রকৃতি প্রত্যয় : 

বল্ + আই = বলাই ।

প্র – কৃ + তি = প্রকৃতি ।

বি – পদ্ + অ = বিপদ ।

মনু + ষ্ম্য = মানুষ ।

পুষ্প + ইত = পুষ্পিত ।

৩। বাক্য পরিবর্তন করোঃ 

( ক ) গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে । ( প্রশ্নসূচক বাক্যে ) 

উত্তরঃ গাছের সেই রব আজও উঠছে না বনে বনে ? 

( খ ) কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল , আমাদের ঘর হল শূন্য । ( সরল বাক্যে ) 

উত্তরঃ কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে যাওয়ায় আমাদের ঘর শূন্য হল । 

● অতিরিক্ত জ্ঞাতব্য বিষয় : 

লণ্ডনে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিতে দেখা গেল একটি গাছের ডাল নিয়মিত ঘর্ষণে দেওয়াল ফাটিয়ে ফেলেছে । গৃহস্বামিনী বৃদ্ধাকে বলা হয় , ডালটা কেটে ফেলে তো দেওয়ালটা বাঁচানো যায় । বৃদ্ধা আঁৎকে উঠলেন । গাছের সামান্য একটা ডাল ছাঁটতে হলেও খোদ ব্রিটিশ রানীর অনুমতি দরকার । রানীর দপ্তরে প্রতিটি গাছের পূর্বাপর পরিচয়, কে লাগিয়েছে , কেন লাগিয়েছে , কবে লাগিয়েছে সব কিছুর নথি আছে। গাছ কাটার আবেদনপত্র পেলে তাঁর লোক আসবে , দেখবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাকচ করে দেবে । গাছ যেমন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে আশ্রয়চ্যুত করছে তেমনই বহু পাখিকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়েছে । সেজন্য গাছটা কাটা চলবে না । এখানেই প্রকৃতিপ্রীতির যথার্থ পরিচয় ।

● পরিবেশ নিয়ে আর একটি গল্প :

জাপানের ছোট শহর ফুকুওকা । সময় ১৯৯০ সাল । জাপানিদের পুষ্পপ্রেম ও প্রকৃতির প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া গেল একটি ঘটনায় । ঘটনাটি হল— ফুকুওকা শহরে একটি বড়ো রাস্তা কিছুদূর গিয়ে খুব সরু হয়ে গিয়েছে । চওড়া না করলেই হয় না । শেষ প্রান্তে রাস্তাটি মাত্র চার মিটার । কোনো গাড়িতে পারে না । এই অঞ্চলটায় আছে একটি দিঘী এবং চারটি চেরিফুলের গাছ — যা সৌন্দর্য বিতরণ করে পাড়াটির আনন্দ বাড়িয়েছে । মিউনিসিপ্যাল কর্তাদের অত সৌন্দর্য দর্শন করলে চলে না । যানবাহন চলাচলের কথাটাও তাদের ভাবতে হয় । তারা গাছের ডালে নোটিশ টাঙিয়ে দিল । প্রথমে যে চেরি গাছটি কাটা হল সেটির বয়স পঞ্চাশ বছর । 

গাছটিতে কড়ি এসেছিল । ফুল তখনও ফুটতে শুরু করেনি । পরদিন সকালে দেখা গেল কে বা কারা একটি বড় কাগজে একটি কবিতা লিখে সেঁটে দিয়েছে । মিউনিসিপ্যালিটির মেয়রকে উদ্দেশ্য করে লেখা কবিতটিতে চেরিফুলের অপার সৌন্দর্য ও জাপানি জীবনে চেরিফুলের ভূমিকা উল্লেখ করে বলা হল – মেয়র মহাশয় , যে গাছটি আপনি কাটলেন এবং কাল অন্য যে গাছগুলো আপনি কাটবেন , তাদের পনেরো দিন প্রাণভিক্ষা দিন । তাদের ফুল এখনও ফোটেনি । সবে কড়ি দেখা দিয়েছে বসন্তকালটা তারা উপভোগ করুক । দেখতে দেখতে এই কবিতার কথা সারা জাপানে ছড়িয়ে পড়ল । একদিন পরে দেখা গেল পাশের চেরিগাছটায় আর একটি কবিতা — ‘ যে হৃদয় চেরিফুলের জন্য কাঁদে , সে হৃদয় ইয়ামাতোর পবিত্র হৃদয় । ওই গাছ কাটা হবে না । ওখানেই সে থাকবে । ‘ কবিতাটির ইংরেজি দুটো লাইন এরকম— 

” To the keeper of cherry trees 

the Hon’ble mayor sindo , 

Take pity on the cherry buds 

Please grant them a fortnight’s reprieve ” 

মেয়র নগরবাসীর পুষ্পপ্রেম দেখে মুগ্ধ । তিনি নিজে এবার কবিতা লিখে গাছে , সেঁটে দিলেন— ” 

” The heart that grieves for the flowers 

is the true heart of Yamato ….. “

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top