Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি

Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি and select needs one.

Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Bengali Chapter 10 তোতাকাহিনি for All Subject, You can practice these here…

তোতাকাহিনি

               Chapter – 10

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

ক্রিয়াকলাপ –

প্রশ্ন ১। সঠিক উত্তরটি বেছে নাও।

(ক) কোরান কোন ভাষায় রচিত?

(ক) ফরাসি। 

(খ) ফারসি।

(গ) আরবি।

(ঘ) ইংরেজি।

উত্তরঃ (গ) আরবি (সঠিক)।

(খ) তোতা কাহিনি পাঠটির লেখক কে?

(ক) সৈয়দ মুজতবা আলী। 

(খ) কাজী নজরুল ইসলাম। 

(গ) মহম্মদ শহীদুল্লাহ্।

(ঘ) জসীমউদ্দীন।

উত্তরঃ (ক) সৈয়দ মুজতবা আলী (সঠিক)।

(গ) সদাগর কোন দেশের লোক ছিলেন?

(ক) ইতালি। 

(খ) ইরাক।

(গ) ইরান।

(ঘ) ভারতবর্ষ।

উত্তরঃ (গ) ইরান (সঠিক)।

প্রশ্ন ২। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।

(ক) রুমী তাঁর আধাত্মিক অভিজ্ঞতা……………… বর্ণনা করেছেন।

উত্তরঃ রুমী তাঁর আধাত্মিক অভিজ্ঞতা মসনবিতে বর্ণনা করেছেন।

(খ) সে তোতা …………….. বৃহস্পতি ……………… কালিদাস।

উত্তরঃ সে তোতা জ্ঞানে বৃহস্পতি বসে কালিদাস।

(গ) ঘোড়া চুরির পর আর……………. তালা মেরে কি লাভ।

উত্তরঃ ঘোড়া চুরির পর আর আস্তাবলে তালা মেরে কি লাভ।

প্রশ্ন ৩। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও ।

(ক) তোতা কাহিনি পাঠটি কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তরঃ তোতা কাহিনি পাঠটি ‘মসনবি’ গ্রন্থের অন্তর্গত।

(খ) ‘গোপীজন বল্লভ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ ‘গোপীজন বল্লভ’ বলতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয়েছে।

(গ) তোতার পাণ্ডিত্যকে লেখক কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উত্তরঃ তোতার পাণ্ডিত্যকে লেখক ম্যাক্সমূলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

(ঘ) তোতাটি কোন দেশের খাঁচায় বন্দি ছিল?

উত্তরঃ তোতাটি ইরান দেশের খাঁচায় বন্দি ছিল।

(ঙ) সদাগরের দিলের দোস্ত কে?

উত্তরঃ সদাগরের দিলের দোস্ত তোতা পাখিটি।

প্রশ্ন ৪। চার/পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও।

(ক) মৌলানা রুমী সম্বন্ধে পারস্য দেশের জ্ঞানী-গুণীরা কী মনোভাব পোষণ করতেন?

উত্তরঃ মৌলানা রুমী ছিলেন আধ্যাত্মিক মানুষ, পরম ভক্ত। পারস্য দেশের জ্ঞানী-গুণীদের মতে আল্লা যদি আরবী ভাষায় কোরান প্রকাশ না করে ফারসি ভাষায় করতেন তবে মৌলানা জালালউদ্দিন রুমীর মসনবি গ্রন্থটিকে কোরান নাম দিয়ে চালিয়ে দিতেন। এ ধরনের প্রশংসা আর কোনো দেশের লোক তাদের কবির জন্য করেনি। রুমী তাঁর মসনবিতে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

(খ) সদাগর ভারতীয় তোতার বর্ণনা কীভাবে করেছেন?

উত্তরঃ ইরান দেশের সদাগরের ভারতীয় তোতা জ্ঞানে প্রখর, বৃহস্পতি সমতুল্য। রসে সংস্কৃত সাহিত্যের কবিকূল চূড়ামণি কালিদাসের মতন। সৌন্দর্যে রুডলফ ভেলেন্টিনোর মতো এবং পাণ্ডিত্যে অসাধারণ পণ্ডিত ম্যাক্সমূলারের মতন ছিল।

(গ) সদাগরের প্রশ্নে তোতা হিন্দুস্থান থেকে কোন উপহার আনার কথা জানিয়েছিলেন?

উত্তরঃ সদাগরের প্রশ্নে তোতা বলেছিল— “হুজুর, যদিও আপনার সঙ্গে আমার বেরাদরি, ইয়ারগিরি বহু বৎসরের, তবু খাঁচা থেকে মুক্তি চায় না কোন চিড়িয়া? হিন্দুস্তানে আমার জাতভাই কারোর সঙ্গে যদি দেখা হয়, তবে আমার এ অবস্থার বর্ণনা করে মুক্তির উপায় জেনে নেবেন কি? আর তার প্রতিকূল ব্যবস্থাও যখন আপনি করতে পারবেন, তখন এ সওগাতটা চাওয়া তো কিছু অন্যায়ও নয়।”

(ঘ) ‘তার মুক্তির উপায় বলে দিতে পারো ?’-কে, কোন প্রসঙ্গে, কাকে এ প্রশ্ন করেছেন?

উত্তরঃ ইরান দেশের সদাগর ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে এসে বনের ভিতর দিয়ে যাবার সময় একঝাঁক তোতা পাখি দেখে এ প্রশ্ন করেছেন।

সদাগর কার্পেট বিক্রি করতে ইরান থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ভারতে আসার আগে সদাগর তোতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন সে কী সওগত চায়। সেই সময় তোতা সদাগরকে বলেছিল তাঁর মুক্তির উপায় জেনে আসার জন্য।

(ঙ) “কিন্তু এ তো ঘুঘু”। -কার সম্বন্ধে কেন একথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ তোতার সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

তোতা সদাগরকে ভারতবর্ষ থেকে মুক্তির উপায় জেনে আসতে বলেছিল। ভারতে বনের ভিতর একঝাঁক তোতাকে দেখে প্রশ্ন করেছিল। সদাগরের প্রশ্ন শুনেই একটি পাখি মারা যায়। কিন্তু সদাগর দেশে ফিরে এই কথাটি কিছুতেই তোতাকে বলতে পারছিল না। কিন্তু বেখেয়ালে একদিন তোতার ঘরে ঢোকা মাত্রই তোতা নিজের সওগাত সম্পর্কে জানতে চায়।

(চ) কীভাবে তোতা খাঁচা থেকে মুক্তি পেল?

উত্তরঃ ভারতবর্ষ থেকে ফেরার সময় একঝাঁক তোতা দেখে সদাগর জিজ্ঞেস করেন তোমাদের এক জাতভাই ইরান দেশের খাঁচায় বন্দি হয়ে রয়েছে। তার মুক্তির উপায় কী? দুঃসংবাদটি শোনা মাত্র একটি পাখি ধপ করে মাটিতে পড়ে মারা যায়। সদাগর দেশে ফিরে তোতাকে ঘটনাটি বলা মাত্রই সেও মাটিতে পড়ে মারা যায়।

(ছ) “একই ভুল, দুবার করলুম”-কে, কেন একথা বলেছেন? এখানে ভুলটা কী?

উত্তরঃ একথা সদাগর বলেছে।

সদাগর বাড়ি ফিরে তোতার সঙ্গে দেখা করেনি। কিন্তু হঠাৎই একদিন ভুলবশত তোতার ঘরে ঢুকে পড়ে। তোতা মুক্তির উপায় জানতে চাইলে সদাগরের নির্লিপ্ততা তাকে আঘাত করে। বাধ্য হয়ে সদাগর ভারতের ঘটনাটি বলে ফেলে। শোনা মাত্রই সদাগরের তোতাটি ধপ করে পড়ে মারা যায়। তখন সদাগর মন্তব্যটি করেছে।

৫। রচনাধর্মী প্রশ্ন।

(ক) তোতাকাহিনি নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

উত্তরঃ তোতা কাহিনি গল্পটি মৌলানা রুমীর লেখা মসনবি গ্রন্থের অন্তর্গত। ইরান দেশের সদাগরের ছিল একটি ভারতীয় তোতা। সে তোতা জ্ঞানে পাণ্ডিত্যে, রূপে রসে ছিল অসামান্য। সদাগর সময় পেলেই তার সঙ্গে রসালাপ করতেন। নানা তাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। একদিন সদাগর ভারতে এসে কার্পেট বিক্রি করবে ঠিক করে। সকলের সাথে তোতাকেও জিজ্ঞেস করে ভারতবর্ষ থেকে তাঁর জন্য কি আনবে। তোতা বলে—সদাগরের সঙ্গে তাঁর দোস্তী বহু বছরের তা সত্ত্বেও সে মুক্তি চায়। কারণ মুক্তি কে না চায়। হিন্দুস্তানে যদি তাব জাত ভাই কাউকে পাওয়া যায় তবে তার কাছ থেকে মুক্তির উপায় যেন জেনে আসে।

সদাগর ভারতে এসে তোতার কথা ভুলে গেলেও। হঠাৎ একদিন বনের ভিতর একঝাঁক তোতা পাখি দেখে মনে পড়ে। তখনই তাঁদের দিকে চেঁচিয়ে বলেন—“তোমাদের এক বেরাদর ইরান দেশের খাঁচায় বন্ধ হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার মুক্তির উপায় বলে দিতে পারো? কোনো পাখিই সদাগরের কথায় কান দিল না। শুধু দুঃসংবাদটি একটি পাখিকে এমন আঘাত করল যে সে তৎক্ষণাৎ মাটিতে পড়ে মারা গেল। একটি নিরীহ পাখিকে মেরে ফেলার জন্য সদাগর প্রচুর আফসোস করলেন। মনে মনে নিজের গালে চড়ও মারলেন।”

বাড়ি ফিরে সদাগর তোতার সাথে দেখা না করলেও একদিন অন্য-মনস্কবশত তোতার ঘরে ঢুকে পড়েন। তিনি অস্বস্তিতে পড়ে যান। তোতার মুখোমুখি হওয়ার পর ভারত থেকে আনা খবর বলেই ফেলেন। শোনা মাত্রই সদাগরের তোতাটিও মাটিতে পড়ে মারা যায়। সদাগর হায় হায় করে ওঠেন। বোকার মতন কাজ করেছেন ভেবে আফসোস করতে লাগেন। পাগলের মত আচরণ শুরু করেন। সদাগর চোখের জল মুছতে খাঁচা খুলে তোতাকে বের করে আঙ্গিনায় ছুঁড়ে ফেলেন। মাটিতে পড়েই তোতা ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে বাড়ির ছাদে বসে। সদাগর তাজ্জব হয়ে তোতার দিকে তাঁকিয়ে থাকেন। তিনি এর অর্থ বুঝতে পারলেন না। তখন তোতা গম্ভীর হয়ে বলে হিন্দুস্তানে যে তোতা তাঁর দুর্ভাগ্যের খবর পেয়ে মারা যায় সে আসলে মরেনি। মরার অভিনয় করে তাঁকে খবর পাঠালো সেও যদি মরার ভান করে তবে খাঁচা থেকে মুক্তি পাবে। আলোচ্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে “তোতা কাহিনি” নামকরণ সার্থক ও যথাযথ হয়েছে।

(খ) প্রবাসের বন্দি জীবন থেকে তোতা কীভাবে মুক্তি পেল পাঠ অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তরঃ মৌলানা রুমী তাঁর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা মসনবিতে বর্ণনা করেছেন। তোতা কাহিনি গল্পটি তারই একটি।

ইরান দেশের সদাগরের ছিল একটি ভারতীয় তোতা। তোতা ছিল ভীষণ জ্ঞানী, পণ্ডিত, সৌন্দর্যপ্রিয় এবং রসিক। সদাগর সময় পেলেই তোতার সঙ্গে নানা তাত্ত্বিক আলোচনা, রসালাপ করতেন। সদাগর খবর পেলেন ভারতবর্ষে কার্পেট বিক্রি হচ্ছে আক্রা দরে, তখনই ভারতে কার্পেট বিক্রি করবেন মনস্থির করলেন। সকলের কাছ থেকে জানতে চান ভারত থেকে কি নিয়ে আসবেন। তোতার কাছেও জানতে চান। তোতা বলে যদিও সদাগরের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব বহুদিনের তবুও খাঁচা থেকে মুক্তি কোন পাখি না চায়। সেজন্য হিন্দুস্তানে যদি তোতার কোনো জাত ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় তবে তোতার অবস্থার বর্ণনা দিয়ে মুক্তির উপায় জেনে নেবেন। আর সদাগর যদি প্রতিকূল ব্যবস্থাও কিছু করে তাহলেও এ সওগাতটা চাওয়াও অন্যায়ের নয়। সদাগর ভারতবর্ষে এসে বহু টাকা উপার্জন করেন। অনেক উপহারও কেনেন। কিন্তু তোতার কথা বেমালুম ভুলে যান। হঠাৎ একদিন বনের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় একঝাঁক তোতা দেখে তাঁর দেশের তোতার কথা মনে পড়া মাত্র তাঁদের দিকে চেঁচিয়ে বলেন যে তাঁদেরই এক বেরাদর ইরান দেশের খাঁচায় বন্দী হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার মুক্তির উপায় বলে দিতে হবে। কোনো পাখিই সদাগরের কথার দিকে খেয়াল করল না। শুধু দুঃসংবাদ একটি পাখিকে এমন আঘাত করল যে সে তৎক্ষণাৎ মাটিতে পড়ে গিয়ে মারা গেল। একটি নিরীহ পাখিকে মেরে ফেলার জন্য সদাগর প্রচুর আফসোস করেন। স্থির করেন এধরনের মূর্খামি আর করবেন না। মনে মনে নিজের গালে নিজেই চড় মারলেন।

বাড়ি ফিরে সদাগর সবাইকে সওগাত বিলোলেন। শুধু তোতাকে সওগাত দেওয়ার জন্য তোতার ঘরে গেলেন না। তিনি মনে ভাবেন হিন্দুস্থানের খবর গোপন রাখবেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন অন্যমনস্কবশত তোতার ঘরে ঢুকে পড়েন। অমনি তোতা সদাগরকে-“অস্-সালাম আলাই কুম্, ও রহমত উল্লাহি ও বরকত ওহ, আসুন আসুন, আসতে আজ্ঞা হোক বলে, সম্ভাষণ জানাল। সদাগর মনে মনে বললেন–” খেয়েছে, তোতা ও ঘুঘু একধরনের পাখি না হলেও তোতা অত্যন্ত প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন। তার সামনে সদাগর বোকা বনে যান। তোতা এমনভাবে সদাগরের দিকে তাকিয়ে থাকল যে সদাগর খবর গোপনও রাখতে পারেন না। আবার বলতেও পারেন না। অগত্যা কিংকর্তব্য বিমূঢ় সদাগর গোপন কথাটা বলেই ফেলেন। শোনা মাত্রই তোতা ধপ করে মাটিতে পড়ে মারা যায়। তার একটা জাত ভাই সেই দূর হিন্দুস্থানে তার দুরবস্থার খবর পেয়ে হার্ট ফেল করে মারা গেল এরকম একটা প্রাণঘাতী দুঃসংবাদ শুনে তারও বুক ফেটে যায়। দিলের দোস্ত তোতাটি মারা যাওয়ায় সদাগর হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। নিজেকে বেকুব ভাবেন। একই ভুল দুবার করেন। পাগলের মত মাথা নাড়তে থাকেন সদাগর। আফসোস করতে লাগেন। সদাগর চোখের জল মুছতে মুছতে খাঁচা খুলে তোতাকে বের করে আঙ্গিনায় ছুঁড়ে ফেললেন। হঠাৎই তোতা উড়ে গিয়ে বাড়ির ছাদে বসে। সদাগর তাজব বনে হাঁ করে তোতার দিকে তাকিয়ে থাকেন। অনেকক্ষণ পর তাঁর সম্বিত ফেরে। তোতা এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে যে হিন্দুস্থানে যে তোতা তাঁর বদনসিবের খবর পেয়ে মারা যায়, সে আসলে মরেনি। মরার অভিনয় করে তোতাকে খবর পাঠালো যে সেও যদি মরার ভান করে তবে খাঁচা থেকে মুক্তি পাবে। এভাবে তোতা খাঁচার বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।

(গ) সদাগরের চরিত্র বর্ণনা করো।

উত্তরঃ তোতা কাহিনি গল্পের সদাগর ছিলেন ইরান দেশের। সদাগরের ভারতীয় তোতাটি জ্ঞানে বৃহস্পতি, সৌন্দর্যে রুডলক ভেলেন্টিনো পাণ্ডিত্যে ম্যাক্সমূলার। সদাগরও রসিক ছিলেন ও তত্ত্ব আলোচনায় আগ্রহী। সময় পেলেই তিনি বিদগ্ধ গুণী তোতার সঙ্গে নানা তাত্ত্বিক আলোচনা করতেন।

সদাগর তুখোড় ব্যবসায়ী ছিলেন। ভারতবর্ষে আক্রা দরে কার্পেট বিক্রির সংবাদ পেয়েই ভারতে আসার তোড়জোড় শুরু করেছেন। মনস্থির করে ফেলেন ভারতে কার্পেট বিক্রি করতে আসবেন।

আত্মীয় পরিজন সকলের প্রতি ছিলেন দায়িত্বশীল। ভারতে আসার আগে সকলের কাছে জানতে চেয়েছেন তাঁদের জন্য কী উপহার আনতে হবে। তোতাও তার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। তিনি তোতার কাছেও জানতে চেয়েছেন। তোতা বলেছে—হুজুর, যদিও আপনার সঙ্গে আমার বেরাদরি, ইয়ারগিরি বহু বৎসরের, তবু খাঁচা থেকে মুক্তি চায় না কোন চিড়িয়া? হিন্দুস্থানে আমার জাতভাই কারোর সঙ্গে যদি দেখা হয়, তবে আমার এ অবস্থার বর্ণনা করে মুক্তির উপায়টা জেনে নেবেন কি?

সদাগর অনুভূতিশীল ছিলেন। ভারতের বনের ভিতরের একঝাঁক তোতার একটি তোতা সদাগরের কথা শুনে মারা গেলে সদাগর আফসোস করেছে। তাঁর কথায় একটি নিরীহ পাখির প্রাণ যাওয়ায় তিনি দুঃখবোধ করেছেন। স্থির করেছেন এধরনের মূর্খামি দুবার করবেন না। নিজেই নিজের গালে চড় কষিয়ে দেন। বাড়ি ফিরে সদাগর সকলের জন্য সওগাত বিলোলেন। কিন্তু তোতার মুখোমুখি হতে চাইলেন না। কেননা তিনি তোতাকে তার জাত ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ দিতে চাননি। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তিনি তোতার ঘরে ঢোকা থেকে বিরত হতে পারলেন না।

অনেক চেষ্টা করেও তোতার সামনে খবর গোপন করতে পারেননি। সদাগর পড়েছিলেন “ফাটা বাঁশের মধ্যিখানে।” জাত ভাইয়ের মৃত্যুর খবর তোতাকে বলতেও পারছেন না আবার গোপন করতেও পারছেন না। তোতা তাঁর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে নিজেকে তিনি বেইমান ভাবতে শুরু করেছেন। 

সদাগর তোতাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। প্রাণের বন্ধু তোতার মৃত্যুতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন। পাগলের মত ঘন ঘন মাথা চাপড়িয়েছেন। বারংবার চোখের জল মুছতে মুছতে তোতাকে আঙিনায ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।

(ঘ) তোতাকে বন্দি করে রাখার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ পারস্য দেশের জ্ঞানী গুণীদের মতে আল্লা যদি আরবী ভাষায় কোরান না প্রকাশ করে ফারসী ভাষায় করতেন তবে মৌলানা জালালউদ্দিন রুমীর “মসনবি” গ্রন্থটিকে কোরান নাম দেওয়া যেত। এ ধরনের প্রশংসা কোন দেশের মানুষ তাদের কবির জন্য করেননি।

মৌলানা রুমী ছিলেন ভক্ত। তিনি ভগবানকে প্রেমের মাধ্যমে লাভ করেছিলেন।

তোতা কাহিনি গল্পটির সদাগর ছিলেন ইরান দেশের। তিনি একটি ভারতীয় তোতা পুষতেন। ভারতবর্ষসহ অনেক দেশেই পাখি পোষার চল রয়েছে। পাখি পোষা সদাগরেরও সেরকম একটি শখ ছিল। তবে তার তোতাটির কিছু বিশেষত্ব ছিল। লেখক সৈয়দ মুজতবা আলি তোতাটির বর্ণনা দিয়েছেন অসাধারণ গুণ সম্পন্ন রূপে। তাকে তুলনা করেছেন, বলেছেন— জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস, সৌন্দর্যে রুডলফ ভেলেন্টিনো এবং পাণ্ডিত্যে ম্যাক্সমূলার। জার্মানির পণ্ডিত ম্যাক্সমূলার সংস্কৃত ভাষার অসাধারণ পণ্ডিত ছিলেন। রুডলফ ভেলেন্টিনো ছিলেন বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা। কালিদাস সংস্কৃত ভাষায় প্রথিতযশা লেখক ছিলেন। সেজন্য সদাগর অবসর পেলেই তোতার সঙ্গে দার্শনিক আলোচনা ও তাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। তোতাটি এত গুণ সম্পন্ন হলেও সদাগর তাকে খাঁচায় বন্দি করে রেখেছিলেন। খাঁচায় তোতার বন্দি জীবন কাটত।

প্রশ্ন ৬। ব্যাখ্যা করো।

(ক) জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস, সৌন্দর্যে রুডলফ ভেলেন্টিনো, পাণ্ডিত্যে ম্যাক্সমূলার।

উত্তরঃ জীবনে সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে সত্য। কিন্তু সম্পদকে কোনো অবস্থাতেই মনের ওপর স্থান দেওয়া চলে না। মন উদার প্রসন্নভাবে যখন মনুষ্যত্বকে একমাত্র মূলধন রূপে দেখে, তখন বিলাস দ্রব্যের পরিমাণে সে আটকে পড়ে না। আবার হেঁশেলের হলুদ মাখানো বিষয়বোধের জন্য যে ক্ষুদ্রতা ও স্বার্থপরতা জাগে, তাতে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব বাড়ে। কিন্তু চিত্তের ঐশ্বর্যকে বড়ো মনে করলে এরকম সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়।

আমাদের পুরাণে এই মহান বাণীরই প্রতিফলন দেখি। দেবাদিদেব মহেশ্বর বাইরের ঐশ্বর্য শূন্য হওয়ায় হিমালয় রাজকন্যা উমা তাকে পাবার জন্য দুশ্চর তপস্যা করেন। শুধু দেবতা কল্পনায় কেন, ইতিহাসের পাতাতেও দেখি বুদ্ধদেব প্রথম যৌবনেই বিলাসী জীবনের রাজসুখ ছেড়ে পথের মানুষের জন্য ভিক্ষাব্রত নিয়েছেন। চৈতন্যদেব সন্ন্যাস নিয়েছেন জাগতিক প্রতিষ্ঠাবাসনা ছেড়ে, রূপ সনাতন রাজদরবারের লোভনীয় পদ ছেড়ে বৃন্দাবনের তীর্থধূলিতে বৈষ্ণব দর্শনের অনুপম ভাষ্য লিখেছেন। বিত্তের হাতছানি তুচ্ছ করে যাঁরা চিত্তমুক্তির পথে পা বাড়িয়েছেন তাঁরাই হয়েছেন শ্রেষ্ঠ। কে কত ঐশ্বর্যের পাহাড় জড়ো করল তা নিয়ে তাই জীবনকে মাপা হয় না। অন্তরের মহত্বের নিরিখে জীবনকে মাপা হয়।

প্রকৃথপক্ষে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অন্তহীন। সে চির অতৃপ্ত। মরীচিকার মতন সে আশা-আকাঙ্ক্ষার ছলনায় আজীবন ছুটে মরে। তার স্বপ্ন বহু বিস্তৃত, সাধ্য সীমিত। মানুষের আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি নেই। চাহিদার সঙ্গে প্রাপ্তির সামঞ্জস্য ঘটে না। কবির ভাষায় ‘এ কেবল ফুটা পাত্রে জল ঢেলে দিন রাত্রে বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে।’ তাই সে যা পায়, চায় তার চেয়ে বেশি। লোভ ছুটিয়ে বেড়ায় মানুষকে। যা চায় তা পেলেও সে তাই বলতে পারে ‘যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না।’ জাগতিক ঐশ্বর্য থরে থরে আমাদের উপকরণ সাজিয়েও মানুষের মনের তৃপ্তি আনে না। জড়বাদী সভ্যতায় মানুষের বাসনা সরে সরে যায়। পায় না শান্তি। সুখ ও শান্তি যে নিজের মনের ওপর নির্ভর করে একথা মানুষ ভুলে যায়। নদীর এপার-ওপার বাস্তব সংসারের দুই মানুষ যেন। এরা কেউই নিজ নিজ অবস্থায় তৃপ্ত নয়। সুখ শান্তি, সম্পদ রিক্ততা দুই-ই যে সমপারে সমভাবে বিরাজমান এই বোধ যতক্ষণ না জাগে ততদিন মানুষ এই মানসিক যন্ত্রণায় ভুগবে।

(খ) গোঁফ কামানোর পরও হাত ওঠে অজানতে চাড়া দেবার জন্য।

উত্তরঃ সূর্যাস্তের পর অন্ধকারে ঢাকা পৃথিবীতে থই থই জ্যোৎস্নার মহিমায় চন্দ্রিমা ছড়িয়ে চাঁদ পৃথিবীকে আলোকিত করে। চাঁদ সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু সে তার দেহে উষর ধূসর গহ্বর বহন করে। তার বুকের গহ্বরগুলো সত্যি, যা পৃথিবী থেকে কলঙ্কের মতো মনে হয়। কিন্তু এ কারণে তার অকৃপণ জ্যোৎস্নাধারা পৃথিবীতে বিতরণে কোনো অসুবিধা হয় না। সেই কলঙ্কের ছায়া সে পৃথিবীতে পড়তে দেয় না। যুগ যুগ ধরে সবাই সেজন্য চাঁদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে। চাঁদকে ঘিরে রচিত হয়েছে কবির কবিতা, শিল্পীর গান।

এ পৃথিবীতে মহৎ ব্যক্তিরা চাঁদের মতো শোভা পান। তাঁরা আপন কীর্তিতে ভাস্বর। জ্যোৎস্নার মতো তাঁদের যশধারা চারদিকে আপন মাধুর্যে স্বতই ছড়িয়ে যায়। জীবনমন্থন করে অমৃত ও হলাহল দুটিই একসঙ্গে ওঠে। মহৎ ব্যক্তিরা নীলকণ্ঠ মহাদেবের মতো আপন জীবনের হলাহল পান করে জগৎবাসীকে অমৃতভাণ্ডার দিয়ে যান। তারই সৌন্দর্যে সাহিত্য, সংগীত মাধুর্য পায়, সমৃদ্ধ হয় দর্শন, বিজ্ঞান ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানান শাখা। ব্যক্তিজীবনে সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী বা জ্ঞানীরা সর্বক্ষেত্রে সবাই যে সদ্গুণের অধিকারী হবেন এমন কোনো কথা নেই, হনও না। তাঁদের কর্মই তাদের মহান করে তোলে। কাজেই ব্যক্তিজীবনের ছিদ্র দিয়ে তাদের দেখে ছোটো বলে হেয় করলে আমরা তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারব না। রবীন্দ্রনাথ একারণেই লিখেছেন ‘কবিরে পাবে না তার জীবনচরিতে?’ শুধু কবিই নন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানান শাখা উজ্জ্বল করে রেখেছেন এমন জ্ঞানীগুণীদের ক্ষেত্রেও কথাটি সমান প্রযোজ্য। মনে রাখতে হবে মহৎ ব্যক্তিদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্যই হল, বিদ্যা-শক্তি অর্থ সব কিছু সম্পদই তারা সকলের জন্য উজাড় করে দান করেন। তাঁরা কোনো নিজেদের ভোগের জন্য কিছু কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করেন না। তাঁদের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি তা কিন্তু তাঁরা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন। ছিদ্রান্বেষী ব্যক্তিরা তাঁদের মহত্ব খাটো করতেই এইসব ছিদ্র খুঁজে বেড়ায় এবং সেই দুর্বলতাগুলিকে বড়ো করে দেখে। যেমন পদ্মফুলের কাছে এসেও ব্যাং তার সৌন্দর্য অনুভব করতে পারে না, অথচ ভ্রমর দূর থেকে উড়ে এসে তার মধু পান করে তৃপ্ত হয়। শুধু খাঁটি সোনায় অলংকার হতে পারে না, প্রত্যেক মানুষই ব্যক্তিজীবনে ভালো-মন্দয় মেশানো, কিছু খাদ প্রায় সব মানুষের থাকেই। আমরা সেই দুর্বলতাকে উপেক্ষা করে বরণীয় গ্রহণীয় জিনিসটি খুঁজে নিতে চেষ্টা করলে আমাদের জীবন সুখের হবে।

(গ) সদাগর ফাঁটা বাঁশের মধ্যিখানে।

উত্তরঃ সম-অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হলে মানুষ কখনোই অন্যের কষ্ট, পীড়া বুঝতে পারে না। অন্যের বেদনা, অন্যের কষ্ট একমাত্র তিনিই বুঝতে পারেন যিনি ওই বেদনার, কষ্টের শিকার হয়েছেন।

ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। মানুষের সমাজও ভালো-মন্দের মিশ্রণে গড়া। আমাদের চারদিকে সেই দেখি একদল মানুষ মানুষের বিপদে এগিয়ে আসছে। আর অপরদল আন্তরিক সহানুভূতি সম্বল করে দীন-দরিদ্র নিরন্ন, আশ্রয়হীন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এরাই প্রকৃত মনুষ্যত্বের অধিকারী কারণ এরা ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় অপরের অবস্থা অনুধাবনের সামর্থ্য রাখে। যারা অসুখী, ব্যথিত মানুষদের ওপর থেকে দেখে পরোপকার করে প্রশংসা কুড়োনোর মোহে, তাদের নিপীড়িত মানুষের দল ধিক্কার জানায়। অন্যের কষ্ট লাঞ্ছনায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যেমন অমানবিকতা ওপর ওপর সহানুভূতির জল ছেটানোও তেমনি ধিক্কারযোগ্য।

যাকে কোনোদিন বিষধর সাপ কামড়ায়নি, সে সাপের বিষের তীব্র জ্বালা বুঝতে পারে না। যে চিরসুখী সে দুঃখী মানুষের পেটের জ্বলুনি অনুভব করতে পারে না। এটা অবশ্য কোনো আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। ধনীরা যদি বুঝতে পারত গরিবের দুঃখ কষ্ট তবে তারা নিজেদের সুখভোগের জন্য সমস্ত সম্পদকে কুক্ষিগত করতে চেষ্টা করত না। এত বেশি মানুষকে অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটাতে হত না। যাদের জীবনে ওঠে না সূর্য, আসে না সকাল, তারাই একমাত্র দুঃখীর দুঃখ কষ্ট অন্তর দিয়ে অনুভব করতে সমর্থ। সাপে কাটা মানুষই যেমন বুঝতে পারে অন্যকে সাপে কাটার সময়কালিন যন্ত্রণা।

(ঘ) ঘোড়া চুরির পর আস্তাবলে তালা মেরে কি লভ্য।

উত্তরঃ অপরকে অনুকরণ করা সহজ। বড়ো কঠিন নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তোলা। আর কঠিন বলেই অনুকরণকারী কখনোই চূড়ান্ত সফল হতে পারে না। সে সব সময় হীনমন্যতায় ভোগে। তার কেবলই মনে হয় সে অপরের আদলে গড়া এবং তার নিজের কোনো শক্তি নেই। তখন সে আত্মজাহির করতে ব্যস্ত হয়। এমনকি যাকে অনুকরণ করে তার এই অবস্থাপ্রাপ্তি তাকেও শ্লেষে, বিদ্রূপে খাটো করতে তার রুচিতে বাধে না। প্রচার সর্বস্ব যুগে লোকে প্রথমে আত্মপ্রচারের জয়ঢাকে আপাত বিস্মিত হলেও পরে সহজেই চিনে নেয় প্রকৃতকে। তখন নকলের অন্তঃসারশূন্য রূপটি কেবলমাত্র উপহাসের উদ্রেক করে। কাচ ফেলে হিরেকেই সাদরে বরণ করে নেয়।

আমাদের সমাজে নকল হিরের মতো মানুষের অভাব নেই। তারা নিজের ঢাক অবিরত নিজেই পেটাতে থাকে। আর অবিরাম প্রয়াস চালায় অপরকে খাটো করে দেখাতে। তারা একবারও ভেবে দেখে না শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি নিজের কাছ থেকে নয়, তা আসে অন্যের স্বীকৃতি দানে। অনেক ধৈর্য, সাহস ও আত্মবলিদানের পথ বেয়েই তা আসে। সত্যমার্গ ধরে নিষ্কাম কর্ম করে গেলেই তা সম্ভব। প্রকৃত মহৎ ব্যক্তি গীতার সেই ‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’ আপ্ত বাক্যে বিশ্বাসী হয়ে নীরবে কাজ করে যান। আত্মজাহির তার কাছে অকাম্য। তিনি জানেন মানুষের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় তার কাজের মধ্য দিয়ে। বাহ্যাড়ম্বর ও অহমিকা কেবল হীনের পক্ষে শোভা পায়। আর তাদের অপচেষ্টার অতি চালাকি পরিণামে পণ্ডশ্রম ও পুরো ব্যাপারটি হাস্যকর করে তোলে।

(ঙ) মরার আগেই যদি মরতে পারো, তবেই মোক্ষ লাভ।

উত্তরঃ মানুষের জয়লাভের পথে সবচেয়ে বড়ো বাধাগুলো রয়েছে তার নিজের মধ্যেই। লজ্জা, শঙ্কা ও সংকোচ তার অগ্রগতির পথ আটকে দাঁড়ায়। কিছু মানুষ আবার হতাশার শিকার হন। তারা এ কারণে দু’পা এগিয়ে পাঁচ পা পিছিয়ে পড়েন। শেকসপিয়র এ কারণেই বলেছিলেন, কাপুরুষেরা মৃত্যুর আগেই বহুবার মারা যায় (‘cowards died many times before their death’)। মানুষের জীবনে আসে নানা বাধা-বিঘ্ন, ঝড়-ঝাপটা। মানুষের উচিত ওই সব বাধাবিঘ্নকে ভয় না পেয়ে জয় করা। কবি বলেছেন-

আগে চল, আগে চল ভাই!

পড়ে থাকা পিছে, মরে থাকা মিছে,

বেঁচে মরে কিবা ফল ভাই।

উপনিষদেও বলেছে চরৈবেতি, চরৈবেতি-চলো চলো, এগিয়ে চলো। এই চলাই জীবনের ধর্ম। তবেই কোনো লক্ষ্যে পৌঁছোনো সম্ভবপর। নদীতে নৌকা চালাতে গিয়ে মাঝিরা অনেক সময় জল ঝড়ের মুখোমুখি হয়। কিন্তু দুর্দান্ত কালবৈশাখীর ঝড় বা বর্ষার অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সত্ত্বেও মাঝি যদি ভয়ে হাল ছেড়ে তীরে বসে থাকে তবে তার অন্নসংস্থান কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মানুষের জীবনেও সুখ-দুঃখ পরপর ঘুরে ফিরে আসে। কিন্তু দুঃখে যদি সে ভেঙে পড়ে, উদ্যমের অভাবে হতাশা যদি তাকে গ্রাস করে তাহলে সে কখনই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে না। সেজন্য আদর্শ পুরুষ তিনিই, যিনি গভীরতম নির্জনতা ও নিস্তব্ধতার মধ্যে তীব্র কর্মী এবং প্রবল কর্মশীলতার মধ্যে মরুভূমির নিস্তব্ধতা ও নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামই বড়ো কথা। সংগ্রামের অভাবে পৃথিবীর বুক থেকে বহু প্রাণী যেমন লুপ্ত হয়ে গেছে, তেমনই বহু মানুষ হয়েছে সর্বহারা। সেজন্য বিপদের সম্ভাবনা সত্ত্বেও জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত।

৭। টীকা লেখো : 

কালিদাস।

উত্তরঃ কালিদাস :- মহাকবি কালিদাস তার অমর সৃষ্টির দ্বারা সংস্কৃত সাহিত্যকে এক সম্মানজনক প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন। ভারতীয় পণ্ডিতমণ্ডলী প্রবাদ পরম্পরায় বিক্রমাদিত্যের নবরত্নের এক রত্ন বলে কালিদাসকে স্বীকার করে নিয়েছেন। কালিদাসের কাল নিয়ে নিশ্চিতভাবে যেটা বলা যায় সেটা হল এই যে কালিদাস ৬৩৬ খ্রিঃ বেশ পূর্ববর্তী ছিলেন। কেননা চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্বকালের জৈন কবি রবিকীর্তি রচিত আইহোল শিলালেখে কালিদাসের নাম উল্লিখিত রয়েছে। তাছাড়া কান্যকুজের রাজা হর্ষবর্ধনের সময়কার কবি বাণভট্ট তাঁর “হর্ষচরিত” গ্রন্থে কালিদাসের প্রশংসা করেছেন।

‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’, ‘বিক্রমোর্কশীয়ম্’ এবং ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’- এই তিনখানি নাটক, ‘রঘুবংশম্’ এবং কুমারসম্ভবম— এই দুখানি মহাকাব্য এবং ‘মেঘদূতম্’ নামে একটি খণ্ডকাব্য, সব মিলিয়ে ছয়টি কালিদাসের লেখা বলে সর্বজন স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়াও ‘ঋতুসংহার’ নামে একটি কাব্য কালিদাসেরই লেখা বলে প্রায় সমস্ত পণ্ডিতই সহমত।

এইসকল কাব্য নাটক ছাড়াও ‘অম্বাস্তব’, কালীস্তোত্র, কাব্য-নাটকালংকার, ঘটকর্পর, নলোদয়, নবরত্নমালা, চণ্ডিকাদন্ডস্তোত্র, দুর্ঘটকাব্য, নানার্থকোষ, পুষ্পবাণ বিলাস, লঘুস্তব, বিদ্বদ্বিনোদকাব্য, প্রশ্নোত্তরমালা, রাক্ষসকাব্য, বৃন্দাবনকাব্য, বৃত্তরত্নাবলী, দ্বাত্রিংশৎপুত্তলিকা প্রভৃতি বহু গ্রন্থ কালিদাসের নামে চলে আসছে। ‘জ্যোতির্বিদাভরণ’ নামে একটি জ্যোতিষগ্রন্থও কালিদাসের লেখা বলে চলে আসছিল। এই গ্রন্থেই নবরত্ন সভার কবি এবং পণ্ডিতদের নাম উল্লিখিত রয়েছে।

কালিদাসের সাংসারিক অনুভূতি, লোক ব্যবহার, সামাজিকতা বিষয়ে গভীর প্রবীণতার পরিচয় নাটকে মেলে। তিনি যে তিনটি নাটক রচনা করেছেন তাতে মানবহৃদয়ে উদ্ভুত বিভিন্ন উচ্চাবচ প্রবৃত্তির সুন্দর চিত্র মেলে। কিন্তু কোথাও তা সামাজিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে না। এই সকল নাটকে কবি প্রেমমূলক ঐতিহাসিক আখ্যানকেও কথাবস্তুরূপে গ্রহণ করেছেন। প্রেমের বিভিন্ন বৈচিত্র্য বর্ণনায় তিনি মনস্তাত্ত্বিকতার নিপুণ পরিচয় দিয়েছেন।

দৃশ্যকাব্য নির্বাচনে মহাকবি কালিদাস তাঁর কোন মৌলিকতার সাক্ষর রাখতে পারেননি। কাহিনিবৃত্ত নির্বাচনে গতানুগতিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এসব কথা অত্যন্ত সত্য, কিন্তু রক্তমাংস মেদ মজ্জা এবং সর্বোপরি প্রাণসংযোগে তিনি এমন সার্থক নাটকের নির্মাণ করেছেন যা সমগ্র বিশ্বের বিদ্বৎজনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় পরিপূর্ণ।

ম্যাক্সমুলার :- ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন লেখক ও অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবন কেটেছে ব্রিটেনে। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে বৃত হন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অনুরাগী ছিলেন। সংস্কৃত ভাষা ও ঋকবেদ সম্বন্ধে চর্চা করেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ২৮ অক্টোবর তিনি পরলোক গমন করেন।

রুডলফ ভেলেন্টিনো (১৮৯৫-১৯২৬) :-

বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা। জন্ম ইতালিতে। তাঁর মা ম্যারি বার্টা গেব্রিয়েল জাতিতে ফরাসি ছিলেন। বাবা ইতালিয়ান এবং পেশায় ছিলেন পশু ডাক্তার (Veterinarian) ভেলেন্টিনোর এগার বছর বয়সে বাবা মারা যান। প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে ভেলেন্টিনো কৃষিবিদ্যা শিক্ষা করেন জিওনাতে। তাঁর বিখ্যাত অভিনীত ছবি The Four Horsemen of the Apocalypse, The Sheik, Blood and Sand, the Eagle ইত্যাদি প্রধান।

পাঠভিত্তিক ব্যাকরণ

(ক) বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে দুই ধরনের শব্দ পাওয়া যায়। মৌলিক ও আগন্তুক। মৌলিক শব্দের মধ্যে-

(i) তৎসম। 

(ii) অর্ধ-তৎসম। 

(iii) তদ্ভব শব্দগুলি রয়েছে। 

আর আগন্তুক শব্দের মধ্যে আছে- 

(i) দেশী। 

(ii) বিদেশী শব্দ।

উদাহরণ— কৃষ্ণ (তৎসম)। কেষ্ট (অর্ধ-তৎসম) কানু (তদ্ভব)

দেশী শব্দ—ঝোল, ডিঙি

বিদেশী শব্দ অনেক আছে। যেমন— ফারসি, আরবি, ইংরাজি, পর্তুগিজ ইত্যাদি।

বিদেশী শব্দের উদাহরণ—

তারিফ—আরবি শব্দ।

অফিস—ইংরাজি শব্দ।

কেরানি—পর্তুগিজ শব্দ।

আলমারি—পর্তুগিজ শব্দ।

হুজুর—আরবি শব্দ।

দিল—ফারসি শব্দ।

কোন শব্দের অন্তর্গত লেখো।

ফুরসৎ ; খবর ; সওদা; বেয়াদবি ; ইয়ারগিরি ; চিড়িয়া ; সওগাত, বেবাক ; আপসোস; বেমক্কা ; বেইমান; দোস্ত ; আক্কেল ; কেরামতি ; তাজ্জ; বদনসিব ; দরাজ ৷

উত্তরঃ ফুরসৎ — আরবি ৷

সওগাত — তুর্কি ৷

ইয়ারগিরি — তুর্কি ৷

আপশোস — হিন্দি ৷

বেইমান — তুর্কি ৷

আক্কেল — আরবি ৷

তাজ্জর — হিন্দি ৷

দরাজ — আরবি ৷

খবর — দেশি ৷

বেয়াদবি — আরবি ৷

চিড়িয়া — আরবি ৷

বেবাক — ফারসি ৷

বেমক্কা — আরবি ৷

দোস্ত — ফারসি ৷

কেরামতি — হিন্দি ৷

বদনসিব — ফারসি ৷

(খ) পদ পরিবর্তন করো।

দেশ ; জ্ঞান ; সৌন্দর্য ; পাণ্ডিত্য ; মুক্তি ; প্রতিকুল ; পাগল ; জল; বন্ধু; তত্ত্ব; স্থির ; ক্ষুধা; মান।

উত্তরঃ দেশ — দেশীয় ৷ 

জ্ঞান — জ্ঞানী ৷

সৌন্দর্য — সুন্দর ৷ 

মুক্তি — মুক্ত ৷

প্রতিকূল — প্রতিকূলতা ৷ 

পাগল — পাগলামী ৷

জল — জলীয় ৷

বন্ধু — বন্ধুত্ব ৷ 

তত্ত্ব — তাত্ত্বিক ৷

স্থির — স্থিরতা ৷

ক্ষুধা — ক্ষুধিত ৷ 

মান — মানী।

(গ) বাক্য পরিবর্তন করো।

(i) সদাগর ভারতবর্ষে এসে মেলা পয়সা কামালেন। (যৌগিক বাক্য)

(ii) যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যাও। (জটিল বাক্য)

উত্তরঃ (i) সদাগর ভারতবর্ষে এসে, মেলা পয়সা কামালেন।

(ii) যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্বটি বলে দিয়ে যাও।

অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ

২। (সঠিক উত্তবে √ চিহ্ন দান)

(ক) সদাগর কোন্ দেশের লোক? – ইরানের✔ / ভারতের

(খ) তোতা কিরকম জ্ঞানী? – বৃহস্পতির মতো✔/ কালিদাসের মতো

(গ) তোতার জাতভাইরা কোথায় থাকত? – হিন্দুস্তানে✔/ ইরানে

(ঘ) মরার ভান করেছিল কে?– তোতা✔/ সদাগর

(ঙ) সদাগব হিন্দুস্তানে গিয়েছিল কেন?— কার্পেট কিনতে/কার্পেট বেচতে✔

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন (ক) সদাগরের তোতাটি কার মতো রসিক ছিল?

উত্তরঃ সদাগরের তোতাটি ছিল মহাকবি কালিদাসের মতো রসিক।

প্রশ্ন (খ) তোতার সঙ্গে সদাগরের কিরকম সম্পর্ক ছিল?

উত্তরঃ তোতার সঙ্গে সদাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।

প্রশ্ন (গ) হার্টফেল করে কে মারা গেল?

উত্তরঃ বন্দী তোতার কথা শুনে ভারতবর্ষের এক তোতা হার্টফেল করে মারা গেল।

প্রশ্ন (ঘ) তোতা সদাগরকে কী শেষ তত্ত্ব বলেছিল?

উত্তরঃ তোতা সদাগরকে যে শেষ তত্ত্ব বলেছিল তা হল—মরার আগে মরতে পারলেই মোক্ষ লাভ হবে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘ভারতে যাবেন কার্পেট বেচতে।’—ভারতে কার্পেট বেচতে যাওয়ার কথা কে ভাবলেন? সেখানে কার্পেট বেচতে যাওয়ার কথা ভাবলেন কেন?

উত্তরঃ ইরান দেশের এক সওদাগর ভারতে কার্পেট বেচতে যাওয়ার কথা ভাবলেন। সেই সময় ভারতে চড়া দামে কার্পেট বিক্রী হচ্ছিল। তাই কার্পেট বেচে প্রচুর লাভ হবে বলে সওদাগর ভারতে কার্পেট বেচতে যাওয়ার কথা ভাবলেন।

প্রশ্ন ২। ‘সে কি সওগাত চায়।’ —কে, কাকে একথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন? যাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সে কী দত্তওগাত আনতে বলেছিল?

উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘তোতা কাহিনী’ গল্পে ইরানী সওদাগর তাঁর পোষা হিন্দুস্তানী তোতাপাখিকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

খাঁচায় বন্দী তোতাটি তার মনিবকে বলেছিল তিনি যেন হিন্দুস্তানে তার জাতভাই অন্য কোনো তোতার থেকে তার মুক্তির উপায়টা জেনে আসেন।

প্রশ্ন ৩। ‘বিস্তর আপসোস করলেন’— কে, কী কারণে বিস্তর আপসোস করলেন?

উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘তোতা কাহিনী’ গল্পে এক ইরানী সওদাগর, তাঁর পোষা হিন্দুস্তানী তোতাপাখীর মুক্তির উপায় জানার জন্য, হিন্দুস্তানী তোতার ঝাঁক দেখে তাদের কাছে বন্দী তোতার কথা বললেন। সেই কথা শুনে ঝাঁকের একটি তোতা ঝপ করে মাটিতে পড়ে গেল। একটি দুঃসংবাদ শুনিয়ে পাখিটির মৃত্যুর কারণ ঘটাবার জন্য সওদাগর বিস্তর আপসোস করলেন।

প্রশ্ন ৪। ‘মরার ভান করে আমাকে খবর পাঠালো’— মরার ভান করে কে, কাকে, কী খবর পাঠিয়েছিল?

উত্তরঃ ইরান দেশে খাঁচায় বন্দী এক ভারতীয় তোতার দুঃখের কথা শুনে ভারতবর্ষের একটি তোতা দুম করে মরে গিয়েছিল। কিন্তু আসলে সে মারা যায়নি, মরার ভান করে বন্দী তোতাটিকে খবর পাঠিয়েছিল।

সে জানতে চেয়েছিল খাঁচায় বন্দী তোতাপাখিটিও যদি মরবার ভান করে তবেই সে মুক্তি লাভ করতে পারবে।

প্রশ্ন ৫। ‘এ মূর্খামি দু-বার করবেন না।’— এ কথা কে বলেছেন? তিনি কোথায়, কী মূর্খামি করেছিলেন? ঐ ব্যক্তি একই মূর্খামি দ্বিতীয়বার করায় কী ঘটেছিল, লেখ।

উত্তরঃ ইরান দেশের এক সওদাগর একই মূর্খামি দু-বার না করার কথা ভেবেছিলেন।

সওদাগর হিন্দুস্তানে ব্যবসা করতে যাবেন শুনে তাঁর পোষা হিন্দুস্তানী তোতাটি তাঁকে অনুরোধ করেছিল সেখানকার তোতাদের থেকে তার মুক্তির উপায়টা জেনে আসতে। হিন্দুস্তানে বনের মধ্যে তোতার ঝাঁক দেখে সওদাগর তাদের বলেছিলেন দূর ইরান দেশে তাদের এক জাতভাই বন্দী হয়ে অত্যন্ত দুঃখকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তার মুক্তির উপায় জানা থাকলে বনের মুক্ত তোতারা যেন তা বলে দেয়— সওদাগর এই অনুরোধ করলেন। এই কথা শুনে ঝাঁকের একটি তোতা ঝপ করে মাটিতে পড়ে মরে গেল। সওদাগর ভাবলেন তাঁর দেওয়া বন্দী পাখির খবর শুনেই দুঃখে পাখিটি মরে গেল। একটি প্রাণঘাতী দুঃসংবাদ দেওয়ার কাজটিকেই সওদাগর মূর্খামি বলে মনে করেছিলেন।

দেশে ফিরে সওদাগর যখন তোতাপাখির সামনে গিয়ে পড়লেন, তোতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল তার মুক্তির বিষয়ে। তখন বাধ্য হয়ে সওদাগর তাকে হিন্দুস্তানে যা ঘটেছিল তা বলে ফেললেন। দূর হিন্দুস্তানে তার দুঃখের খবর শুনে এক তোতা আচমকা মারা গেছে ; তার দুঃখে বন্দী তোতাটি শোগ্রস্ত হয়ে মারা গেল। সওদাগর একই ভুল দ্বিতীয়বার করায় তাঁর প্রিয়, পোষা তোতাটিকে হারালেন।

প্রশ্ন ৬। ‘যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যাও।’ –কে, কার কাছে এই অনুরোধ করেছেন? কোন্ ঘটনার পর তিনি এই অনুরোধ করেছেন? বক্তা যে ‘শেষ তত্ত্ব’ শুনেছিলেন তার কী অর্থ?

উত্তরঃ এক ইরানী সওদাগর তাঁর বহুদিনের পোষা ভারতীয় তোতাকে এই অনুরোধ করেছেন। তোতাটি অত্যন্ত জ্ঞানী ছিল বলে প্রায়ই সওদাগরকে অনেক তত্ত্বকথা শোনাত।

সওদাগর একবার ভারতবর্ষে যাবেন শুনে তোতাটি তাঁকে তার মুক্তির উপায় জেনে আসতে বলে। ভারতবর্ষে সওদাগর বনের তোতাদের কাছে বন্দী তোতার কথা বললে একটি পাখি মরে মাটিতে পড়ে যায়। এই ঘটনা যখন পোষা পাখিটি শুনল সে-ও আচমকা খাঁচার মধ্যে মরে গেল। সওদাগর বিলাপ করতে করতে যেই তাকে খাঁচা থেকে বের করে বাইরে ছুঁড়ে ফেলেছেন অমনি সে উড়ে গিয়ে বাড়ির ছাদে বসল। এরপর সে সওদাগরকে জানাল ভারতবর্ষের পাখিটি আলে মরে যায়নি, মরার ভান করলে খাঁচা থেকে মুক্তি পাবে। এই কথা শুনে সওদাগর তাকে ‘শেষ তত্ত্ব’ বলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

জ্ঞানী তোতাটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছিল। মৃত্যুর আগেই মরার চেষ্টা করতে হবে- তবেই মুক্তি। জীবিত মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, মান-অপমান, আরও অনেক বাসনা-কামনার বন্ধন থাকে। কিন্তু মৃত মানুষের এসব কিছুই থাকে না। তাই জীবিতাবস্থাতেই মৃতের মতো উদাসীন ও নিরাসক্ত হতে পারলে প্রকৃত মুক্তি সম্ভব হবে।

ব্যাকরণ

১। বাক্যে প্রয়োগ :-

বৃহস্পতি — আজকালকার ছাত্ররা কিছু না শিখেই নিজেদেরকে বৃহস্পতি ভাবতে শুরু করে।

আক্রা — বাজারে সব জিনিসেরই যেন আক্রা চলছে, কম টাকায় কিছুই পাবার উপায় নেই।

আপসোস — পরীক্ষায় ফল খারাপ হয়েছে বলে শুধু আপসোস করে কোনো লাভ নেই, পরেরবার ভালো করবার চেষ্টা কর।

বে-আক্কেল — গাড়ির সামনে লোকটি বাচ্চাটির হাত ছেড়ে দিল, এমন বে-আক্কেল লোক দেখা যায় না।

মোক্ষ — বার্ধক্যে পৌঁছে সকলেই মোক্ষ লাভের আশায় কিছু পুণ্যকর্ম করেন।

পদ পরিচয় :-

হঠাৎ — ক্রিয়াবিশেষণ।

বেরাদরি — বিশেষ্য। 

দরাজ — বিশেষণ।

মূর্খামি — বিশেষ্য।

কেরামতি — বিশেষ্য।

কারক ও বিভক্তি :-

(ক) ভারত —কর্মকারকে (বিকল্পে অধিকরণ কারকে) শূন্য বিভক্তি।

কান কার্পেট — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

(খ) হিন্দুস্তান থেকে — অপাদান কারকে ‘থেকে’ অনুসর্গ।

সওদা — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

(গ) চড় — করণ কারকে শূন্য বিভক্তি।

(ঘ) মাথা — কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

সওদাগর — কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

সন্ধিবিচ্ছেদ :-

রসালাপ — রস + আলাপ।

তত্ত্বালোচনা — তত্ত্ব + আলোচনা।

তদ্দণ্ডে — তৎ + দণ্ডে।

বেবাক — বে + বাক।

মূর্খামি — মূর্খ + আমি।

সম্বিত — সম্ + বিত।

তত্ত্ব — তৎ + ত্ব।

ইত্যাদি — ইতি + আদি—

পদান্তর :-

ভারতীয় (বিণ.) — ভারত (বি.)।

রসালাপ (বি.) — রসালাপী (বিণ.)। 

বেরাদরি (বি.) — বেরাদর (বিণ.)। 

ইয়ারগিরি (বি.) — ইয়ার (বিন.)।

খেয়াল (বি.) — খেয়ালী (বিণ.)।

নিরীহ (বিণ.) — নিরীহতা (বি.)। 

গম্ভীর (বিণ.) — গাম্ভীর্য (বি.)। 

তত্ত্ব (বি.) — তাত্ত্বিক (বিণ.)।

বিপরীত শব্দ:–

আক্রা — সস্তা। 

শুধালেন — উত্তর দিলেন। 

মুক্তি — বন্ধন।

মেলা — অল্প। 

দুঃসংবাদ — সুসংবাদ। 

আগমন — গমন। 

ফায়দা — লোকসান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top