Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা

Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা Notes to each chapter is provided in the list so that you can easily browse throughout different chapter Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা and select needs one.

Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা

Join Telegram channel

Also, you can read SCERT book online in these sections Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা Solutions by Expert Teachers as per SCERT (CBSE) Book guidelines. Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা These solutions are part of SCERT All Subject Solutions. Here we have given Class 10 Bengali Chapter 1 প্রার্থনা for All Subject, You can practice these here…

প্রার্থনা

               Chapter – 1

অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ

ক্রিয়াকলাপ : 

১। শূন্যস্থান পূর্ণ করো ।

(ক) তাতল __________ বারিবিন্দু সম ।

উত্তরঃ- তাতল  সৈকত বারিবিন্দু সম ।

(খ) মাধব __________ পরিনাম নিরাশা ।

উত্তরঃ- মাধব হাম পরিনাম নিরাশা ।

(গ) __________ জগতারন, দীন – দয়াময় ।

উত্তরঃ- তুহু জগতারন, দীন – দয়াময় ।

(ঘ) আধ জনম হাম নিন্দে __________।

উত্তরঃ- আধ জনম হাম নিন্দে গোঙায়ল ।

(ঙ) __________ রমণী রসরঙ্গে মাতলু ।

উত্তরঃ- নিধুবনে রমণী রসরঙ্গে মাতলু ।

(খ) পাঠ অনুসরণে শুদ্ধ করে লেখো ।

(ক) সুত – মিত – পুরুষ সমাজে ।

উত্তরঃ- সুত – মিত – রমণী সমাজে ।

(খ) তুহু জগন্নাথ, দীনদয়াময় ।

উত্তরঃ- তুহু জাগ – তারণ, দীন – দয়াময় ।

(গ) জরা শিশু এতদিন গেলা ।

উত্তরঃ- জরা শিশু কতদিন গেলা ।

(ঘ) তোহে পুঁজিব কোন বেলা ।

উত্তরঃ- তোহে ভজব কোন বেলা ।

২। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

(ক) ‘প্রার্থনা’ কবিতাটির কবি কে ?

উত্তরঃ- কবি বিদ্যাপতি ।

(খ) কবি কাকে ভুলেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন ?

উত্তরঃ- কবি মাধবকে ভুলেছিলেন বলে অনুতাপ করেছেন ।

(গ) ‘বিশোয়াসা’ কোন শব্দের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ- ‘বিশোয়াসা’ ব্রজবুলি শব্দের অন্তর্গত ।

(ঘ) ‘নিন্দে’ শব্দের অর্থ কি ? 

উত্তরঃ- নিদ্রায় ।

(ঙ) বিদ্যাপতি প্রকৃত পক্ষে কোথাকার কবি ?

উত্তরঃ- বিদ্যাপতি প্রকৃত পক্ষে মিথিলার কবি ছিলেন ।

৩। ৩/৪ টি বাক্যে উত্তর দাও ।

(ক) ‘মাধব, হাম পরিনাম নিরাশা’—– কবির এমন মনোভাবের কারণ কী ?

উত্তরঃ- স্ত্রী – পুত্র – পরিবার – সমাজ কবি বিদ্যাপতিকে এমনভাবে শুষে নিয়েছে যে তার আর আলাদা কোনো সত্তা নেই । পরিবার আর সমাজের কাজে কবিকে এমনভাবে আত্মীনিয়োগ করতে হয়েছিল যে তার নিজের দিকে তাকানোর সময় হয়নি । এই অবস্থায় কবির পক্ষে ভগবৎ চিন্তায় মনোনিবেশ করার প্রায় তখন আর কোনো সুযোগ ছিল না বলে কবি আক্ষেপ করে বলেছেন যে, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা তিনি সংসারের কাজে নিয়োগ করেছিলেন —— এখন কী উপায় হবে ?

(খ) কবি কেন আশাবাদী যে ঈশ্বর তাকে কৃপা করবেন ?

উত্তরঃ- বিদ্যাপতি, জগৎপতি মাধবের কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে উদ্ধার পেতে চেয়েছেন । জগতে তিনিই একমাত্র সৎ এবং সত্য। অতএব উদ্ধার – কর্তাও একমাত্র তিনিই ।

(গ) জীবনের অর্ধেক কাল পর্যন্ত কবি কিভাবে সময় অতিবাহিত করেছেন ?

উত্তরঃ- তপ্ত বালুকাবেলায় একবিন্দু জল যেমন কোনো চিহ্নরেখে যায় না তেমনি জীবনের অর্ধেক কাল পর্যন্ত সুত – মিত – রমনী নিয়ে কবি এতই ব্যাতিবেস্ত ছিলেন যে তার মাঝখানে মাধবের প্রতি ভক্তি নিবেদন সম্ভব হয়নি । কবি বলেছেন অর্ধেক জন্ম তিনি নিদ্রায় কাটালেন, শৈশব আর পরিণত বার্ধক্যের সময়ও তার দিন অচেতনভাবে কাটল , যৌবনে তিনি মেতে উঠলেন রমণীর প্রেমে । 

(ঘ) ‘তাতল সৈকত বারিবিন্দু সম’ বলতে কবি কী বুঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ- এই পদটি প্রার্থনা পর্যায়ের পদ । তপ্ত বালুকা রাশিতে জলবিন্দু পড়লেই বালি তাকে শুয়ে নেয় , তার আর কোনো স্বতন্ত্র সত্তা থাকে না। তেমনি স্ত্রী – পুত্ৰ – মিত্র আদি নিয়ে যে পরিবার ও সমাজ , সেও কবিকে এমনভাবেই শুষে  নিয়েছে, তার আর কোনো সত্তা নেই ।

৪। রচনাধর্মী উত্তর লেখো ।

(ক) ‘প্রার্থনা’কবিতাটি অবলম্বনে কবির বক্তব্য বিষয় পরিস্ফুট কারো ।

উত্তরঃ- বারিবিন্দুর মতোই উতপ্ত সৈকত স্ত্রী – পুত্ৰ আদি দ্বারা গঠিত সমাজ আমাকে শোষণ করে নিয়েছে , তোমাকে বিস্মৃত হয়ে তাদের কাছেই নিজেকে সমর্পণ করে  দিয়েছিলাম । এখন আমি আর কোন কাজে লাগবো অর্থাৎ এখন আমার উপায় কি হবে ? মাধব, আমার পরিনাম নৈরাশ্যময়। তুমি জাগত্তারণ দীন দয়াময়। অতএব তোমার ওপরই বিশ্বাস স্থাপন করছি । অর্ধেক জীবন আমি অতিবাহিত করেছি নিদ্রায় । কতদিন গেল শৈশবে আর বার্ধক্যে, নিধুবনে রমনীসঙ্গে রসরঙ্গে কতকাল কাটালাম । তোমাকে আর কখন আমি ভজনা করবো ? কত ব্ৰহ্মার উৎপত্তি ও বিনাশ ঘটছে, কিন্তু তোমার আদি কিংবা অন্ত নেই । সাগরের বুকে যেমন লহরী ওঠে এবং সাগরের বুকেই মিলিয়ে যায় ;  তেমনি ব্ৰহ্মাদি তোমা থেকেই সৃষ্ট হয়ে আবার তোমাতেই বিলীন হয়ে যায় । বিদ্যাপতি বলেন, শেষ শমন ভয়কালে তুমি বিনা আর কোনো গতি নেই।তোমাকে বলা হয় আদি ও অনাদির নাথ । এখন তোমারই ওপর ত্রাণের ভার ।

বৈষ্ণব সাহিত্যের রস পর্যায়ে কোনো উল্লেখ নেই  “প্রার্থনা”র। বিশেষত প্রার্থনার পদে বিদ্যাপতি যেভাবে মুক্তি কামনা করেছেন, তাও গৌড়ীর বৈষ্ণব ধর্মসম্মত নয় । অধিকন্তু প্রত্যেকটি বৈষ্ণব পদই রাধাকৃষ্ণ কিংবা তাদের সখা-সখিদের জবানিতে এবং তাঁদের সম্বন্দে রচনা করা হয় । কিন্তু আলোচ্য পদ্যটি রাধাকৃষ্ণ সম্বন্ধীয় নয় । এটা একান্তভাবেই বিদ্যাপতির নিজস্ব বক্তব্য । নিজের মুক্তি কামনার জন্যই ভগবানের চরণে শরণ নিচ্ছেন । কাজেই প্রকৃত বিচারে এটাকে “বৈষ্ণব পদ” রূপে গ্রহণ করা সঙ্গত কিনা , তাও বিচার্য বিষয় । যাই হোক পাদটাতে ভক্ত কবি বিদ্যাপতির আকৃতি ও বৈষ্ণবোচিত আত্মনিবেদন অতি উত্তমরূপে প্রকাশিত হয়েছে। “বিদ্যাপতি ভোগী কবি কিন্তু ভোগবদ্ধ কবি নহেন । মানস ভোগের অতৃপ্তি এবং সম্ভবত বস্তুভোগের নৈরাশ্য তাঁহাকে উধর্বতর অ অনুভূতির জগতে তুলে দিয়েছে। নচেৎ তিনি স্বভাবত সাত্ত্বিক ভক্ত নন , রাজসিক । বিদ্যাপতির মধ্যে প্রথম থেকে আত্মদানের ব্যাকুলতা নেই ; তা চণ্ডীদাসে ছিল । বিদ্যাপতি সে হিসাবে প্রথম জীবনে অগভীর । কিন্তু ভোকজনিত জীবন রস উপলব্ধির একটা বিস্তৃতি রয়েছে। তার দ্বারাই পরবর্তী আত্মসমর্পণের কাছে সমুদ্রের সুর লেগেছে।” 

তপ্ত বালুকারাশিতে জলবিন্দু পড়লেই বালি তাকে শুষে নেয় , তার আর কোনো  স্বতন্ত্র সত্তা থাকে না । তেমনি স্ত্রী – পুত্র – মিত্র – আদি নিয়ে যে পরিবার ও সমাজ , সেও কবিকে এমনভাবেই শুষে নিয়েছে । তার আর আলাদা সত্তা নেই । পরিবার আর সমাজের কাজে কবিকে এমনভাবে আত্মনিয়োগ করতে হয়েছিল যে , তাঁর নিজের দিকে তাকানোর বা নিজের জন্য কিছু করার সময় পাননি । এই অবস্থায় কবির পক্ষে ভগবৎ চিন্তায় মনোনিবেশ করার প্রায় তখন সুযোগ ছিল না বলে কবি এখন আক্ষেপ করে বলেছেন – এখন তাঁর কি উপায় হবে ? 

বিদ্যাপতি , জগৎপতি মাধবের নিকট সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে উদ্ধার পেতে চাইছেন । জগতে তিনিই একমাত্র সৎ এবং সত্য । অতএব উদ্ধারকর্তাও একমাত্র তিনিই । এই পসঙ্গে বিদ্যাপতি মাধবের প্রকৃত স্বরূপটি নিম্নোক্তক্রমে বর্ণনা করেছেন ।

ব্রহ্মা জগতের সৃষ্টিকর্তা । কিন্তু তারও আদি আছে , অন্ত আছে । অনাদি অনন্ত পরমেশ্বর কতবার বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন , ধ্বংস করেছেন এবং তার সঙ্গে ব্রহ্মারও জন্ম হয়েছে , মৃত্যু হয়েছে । একমাত্র পরমপুরুষ ভগবানেরই আদি নেই , অন্ত নেই । সমুদ্রের বুকে অসংখ তরঙ্গ উঠে , আবার সমুদ্রের বুকেই তা মিশে যায় । তরঙ্গের নেই নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব – সমুদ্রই সত্য , সমুদ্রে রূপান্তর তরঙ্গ । ভগবান যেন এই সমুদ্র, ব্রহ্মা – আদি তার বুকে তরঙ্গ নিক্ষেপমাত্র । পরমেশ্বর থেকেই তাঁদের উৎপত্তি ও তাতেই তাঁদের বিলয় ঘটে । ভগবান শ্রীকৃষ্ণেই সাগর সদৃশ সেই পরমপুরুষ । তা থেকেই সৃষ্টি ও বিলয় সাধিত হয় ।

(খ) ‘মাধব হাম পরিণাম নিরাশা’ – কার , কোন রচনা থেকে পংক্তিটি উদ্ধৃত করা হয়েছে ? মাধব বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কবির এই মন্তব্যের যথার্থতা আলোচনা করো ।

উত্তরঃ- বিদ্যাপতির প্রার্থনা পর্যায়ের পদ থেকে পঙক্তিটি উদ্বৃত করা হয়েছে । মাধব বলতে শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয়েছে।

প্রাচীন শাস্ত্রে কথিত আছে যে, ধর্ম , অর্থ, কাম ও মোক্ষ _ জীবের সামনে এই চার  ধরনের উপায় বা মার্গ রয়েছে। তার মধ্যে মোক্ষই ইচ্ছে জীবের চরম ও পরম সাধ্যবস্তু অর্থাৎ ঈন্সিত বস্তু । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ প্রান্তরে দাড়িয়ে হতাশাগ্রস্ত অর্জুনকে উপদেশ দিতে গিয়ে স্বয়ং শ্রীভগবান বলেছিলেন _

সার্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ ।

অহং ত্বং সর্বপাপেভ্যে মোক্ষয়িয্যামি মা শুচঃ ৷৷

সর্বধর্ম ত্যাগ করে আমারই শরণ নাও । শোক কোরো না । আমিই তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করব ।

জীবের চরমতম কাম্যবস্তু হল ভবযন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভ করা। স্বয়ং ভগবানও একে সর্বগুহ্যতম বচন বলেছেন। কিন্তু এই মোক্ষ কামানকে মহাপ্রভু অসার বস্তু আখ্যা দিয়ে ভক্তিই জীবের চরম কাব্যবস্তু বলে ঘোষণা করলেন। সেজন্য প্রাকচৈতন্য যুগে ও পরচৈতন্য যুগে জীবের চরম কাম্যবস্তু দু ধরনের ।প্রাকচৈতন্য যুগে ছিল মুক্তির আকাঙক্ষা, পরচৈতন্য যুগে তার স্থান ছিল ভক্তিবাদ । এই ভক্তি হল প্ৰমভক্তি। ভক্ত সখী ভাবে রাধাকৃষ্ণের সেবায় মাধ্যমে তাদের  লীলারস মাধুর্য অস্বাদন করবেন, এই বাসনা প্রকাশ হল । প্রাকচৈতন্য ও পরচৈতন্য যুগের রচিত বৈষ্ণব পদের বক্তব্য এই পার্থক্যই পরিলক্ষিত হয়।

বিদ্যাপতি প্রাকচৈতন্য যুগের কবি । সেজন্য এই পদে কবিমানসের মুক্তিবাঞ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। কবি সারাজীবন ভোগলিন্সায় ব্যাপৃত থেকেছেন ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়ে । কবি জীবনসায়াহ্নে পৌঁছে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন । এতদিন তার কাছে মূখ্য ছিল পার্থিব ভোগসুখ। তিনি পরকালের চিন্তা করেননি। জীবনের উপান্তে এসে কবি উপলব্ধি করছেন যে, তার পরিনাম নিশ্চিতভাবে নৈৰাশ্যপূৰ্ণ । শৈশব ও বাৰ্ধক্য —- এ দুই কালে জীবনর অনেক অংশ ব্যয়িত হয়েছে। মানবের পূর্ন কর্মশক্তির কাল যৌবনকাল । সেই সময়টাতেই জিবনের কর্মের  ফসল ফলাতে হয় । কিন্তু কবি সেই সময়ে শুধু রমনীসুখেই মত্ত থেকেছেন । তখন তার অবকাশ হয়নি ঈশ্বরকে ভজনা করার । কবি বিদ্যাপতি জানেন , কত ব্ৰহ্মার উৎপত্তি তার থেকেই, আবার তাতেই লয় হয়। যেমন সাগরের ঢেউ সাগর থেকেই উৎপন্ন হয়ে আবার সাগরেই লীন হয় । যেমন অনাদি, অনন্ত । কবি সারাজীবন সেই ব্ৰহ্মের চিন্তা করেননি । এখন বার্থেক্যে উপনীত হয়ে তিনি উপলব্ধি করছেন যে, ঈশ্বর ব্যতীত জীবের অন্য গতি নেই । তিনি আদি , অনাদি __ যাই বলা হোক না কেন , তিনি তো জগন্নাথ, জগতের তিনি ছাড়া জীবের আর কোনো গতি নেই । কবি জীবনের অপরাহূবেলায় পরলোক ভাবনায় অস্থির হয়ে অপরিণামদর্শীতার জন্য যে মূল্যবান সময় অপচয় করেছেন, তার জন্য মানসিক যন্ত্রণা ও সুতীব্র অনুশোচনা উপলব্ধি করছেন। আবার সেই সঙ্গে আধ্যাত্মিক পিপাসায় আকুল  হয়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে ব্রহ্মপদে শরণ নিয়েছেন পরলোকে পরিত্রান পাবার আশায়। এইবভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে পদটিতে আধ্যাত্মিক ভাবনা সমাচ্ছন্ন হৃদয়ের সুতীব্র ব্যাকুলতা অতি স্বচ্ছন্দ ভাবে ও ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে।

(গ) প্রার্থনা কবিতায় কবি বিদ্যাপতি যেভাবে আত্মবিশ্লেষণ করেছেন তা বর্ণনা করো ।

উত্তরঃ- বিদ্যাপতি প্রার্থনা পদ বৈষ্ণব পদসম্ভারের রস বৈচিত্রীর সঞ্চার করেছে, মূল পদাবলীর বাইরে থেকেও এই পদগুলি যেন একেবারে ভিতরের জিনিস হয়ে গেছে। রাধাকৃষ্ণপ্রমগায়ক কবি বিদ্যাপতি তার দীর্ঘ ঐশ্বর্যময় জীবনের প্রান্তে এসে এখানে শ্রীকৃষ্ণকে যে আত্মনিবেদন করেছেন  তা এক জীবন সফল কবি শ্রেষ্ঠর মৃত্যুচেতনা ও পরাভব চেতনাকে বেদনা ও বৈরাগ্যের আবরণ আভরণ মণ্ডিত করে কবিতাপ্রিয়ের উপভোগ্য করে তুলেছে ।কবি এখানে তার নিজস্ব আত্মের — কবিতা ব্যক্তিওকে উন্মোচিত করেছেন। এইসব পদের স্থায়ী সম্পদ  হল আত্মজীবনীর মেধাবী বিচ্ছুরণ। বুদ্ধিদীপ্ত বচন বিন্যাস, ছন্দে-অলংকারে , চিত্রকল্পে সংগীতে আকারে কয়েকটি অনানুকরনীয় প্রবাদতুল্য  পদ কবি উপহার দিয়েছেন তার গুণগ্রাহী পাঠকজনকে।কেবলমাত্র কলস্রুতকে লিপিবদ্ধ করেনি এই  পদ , সময়ের অপসরণকে অশ্রুসজল কারুণ্যে প্রকাশিত করেননি , তারা স্বয়ং কালজয়ী , কালোত্তীর্ণ হয়েছে।

প্রথম পদের  পঙক্তি একটি সার্থক জীবন উপন্যাসের যেন প্রথম পাতা _ ‘তাতল সৈকতে  বারিবিন্দুসম সুত-মিত-রমনী সমাজে’  ইত্যাদি।

উওপ্ত সমুদ্রতটের বালুরাশি যেমন সব বৃষ্টিবিন্দু নিঃশেষে শুষে নেয়, সংসারও তার পুত্র-মিত্র-রমনী সমাজ নিয়ে রাধাকে তেমন করেছে । কৃষ্ণকে ভুলে রাধা তাতে মন দিয়েছেল , আজ তার উপায় কী হবে, হে মাধব , পরিনাম সমন্ধে আমি  নিরাশ হয়েছি ; তুমি জগৎকে উদ্ধার করো , জীবনের প্রতি দয়াম, অতএব তোমারই  প্রতি বিশ্বাস ভরসা রাখি। আমি অর্ধেক ঘুমিয়ে কাটালাম । জরা ও শৈশব অনেকদিন নষ্ট করল আমার । নিধুবনে রমণীর সঙ্গে  মিলনের রঙ্গ রসে  মেতে উঠে কালক্ষেপ করলাম । তোমাকে কখন পূজা করব । কত চতুর্মুখ ব্ৰহ্মা মরে মরে যাচ্ছে কিন্তু হে কৃষ্ণ তোমার আদিও নেই অন্তও নেই ; সব কিছু সৃষ্টি ও সৃজনকর্তা তোমার থেকে জন্ম নেয় আবার তোমাতেই বিলীন হয় যেমন সমুদ্রের ঢেউ  সমুদ্র থেকে জাত হয়ে আবার  সেখানেই মিলিয়ে যায় ।বিদ্যাপতি বলছেন, শেষ সময়ে মৃত্যুভয় হচ্ছে, তুমি ছাড়া আর কোনো গতি নেই । লোকে বলে তুমি আদি ও অনাদি  অধীশ্বর ; সমস্ত সংসারকে পার করানোর ভার তোমরই।

বিদ্যাপতির প্রার্থনা পদে দুটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত , তিনি এখানে ভারতবর্ষীয় ঐতিহ্য শ্রীমদ্ভাগবতপ্রুক্ত চিরন্তন কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নিজের আকৃতি ও প্রার্থনা জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত , এই সব পদে তার  নিজস্ব মনস্তত্ত্ব কাজ করছে । আগে প্রথম প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করা যাক । ভাগবতে বলা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান ঈশ্বররূপী হরি। ব্রহ্ম সংহিতাই বলা হয়েছে-

ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ  সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ ।

অনাদিরাদি গোবিন্দ সর্বকারণকারণম ।।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে কবিবর কৃষ্ণদাস  কবিরাজ এর কাব্যানুবাদ করেছেন __

পরম ঈশ্বর কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান ।

সর্ব-অবতার, সার্বকারণপ্রধান ।।

অনন্ত বৈকুন্ঠ আর  অনন্ত-অবতার ।

অনন্ত ব্ৰহ্মাণ্ড ইহা _ সবার আধার ।।

সচ্চিদানন্দ-তনু, ব্রজেন্দ্রনন্দন ।

সর্বৈশ্বর্য সর্বশক্তি সর্বরসপূর্ন ।। ( মধ্যলীলা : ৮ম পরিচ্ছেদ ) 

শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন বৃদ্ধাবনে ‘অপ্রাকৃত নবীন মদন’, রাধা প্রভৃতি গোপীগণ তার উপাসনা করে কমগায়ত্রী কামবীজে । নারী-পুরুষ, স্থাবর-জঙ্গম তিনি সকলের চিত্তাকর্ষক , সাক্ষাৎ মন্মথমদন । এইসব কথা বলা হয়েছে শ্রীমদ্ভাগবতে । তিনি আখিলরসামৃতসিন্ধু ,শ্রীরাধার অতিপ্রিয় কৃষ্ণরূপ চন্দ্র । তিনি শৃঙ্গার রসরাজময় মূর্তিধর , সর্বচিত্তরণকারী । তাঁর চরণধূলা লাভ করার বাসনায় সমস্ত কাম পরিত্যাগ করে নিখিল ধৃতব্রত তপস্যারত । কৃষ্ণপ্রীতি সবকিছুকে তাৎপর্য হীন করে তোলে । কৃষ্ণকথা ও অভিপ্রায় থেকেই কৃষ্ণবিষয়িনী প্রীতির আবির্ভাব ও বৃদ্ধি হয়ে থাকে । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিই হচ্ছে ভগবতী প্রীতির গতি ।  ইহকালের সুখলাভের বাসনা ও মোক্ষলাভ ইত্যাদির বাসনা এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারে । শ্রীমদ্ভাগবতের একটি শ্লোকে  দেখা যায় যাঁরা ভক্ত তাঁরা পরম ভক্তিসকারে  তাঁর চরণকমলকে সর্বপুরুষার্থসার বলে গ্রহণ করেন এবং এইরকমভাবেই তাঁর আপনজন হন । 

( প্রীতিসন্দর্ভ ; ষড়সন্দর্ভ ; শ্ৰীজীব গোস্বামী )

রাধাকৃষ্ণ – বিলাসলীলার পরম ঐশ্বর্যময় রূপকার বিদ্যাপতি তাঁর অনুপম পুন্যফলকে কালজয়ী শ্রেষ্ঠ কবির প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । প্রার্থনাপদে চিরসুন্দর মাধবের পদে আত্মসমর্পণের আকুলি তাঁকে যেন ঈশ্বরের আরও কাছে নিয়ে গেল , যৌবনের বুদ্ধিবাদী কামতৃষ্ণিতকে প্রেমস্বরূপের ভক্তিবাদী আপনজন করে দিল । অবশ্য এটাই ছিল তাঁর পরিণামরমণীর অর্জিত অধিকার – রাধাকৃষ্ণ বিষয়ে নিরন্তর গীতিরচনাই তাঁকে কৃষ্ণভক্তের কৃষ্ণশরণাগতের অন্য এক উদাসীন পৃথিবীতে উত্তীর্ণ করে দিল ।

৫। নিহিতার্থ লেখো –

(ক) তাতল সৈকত বারি বিন্দু সম 

           সুত – মিত – রমণী সমাজে ।

উত্তরঃ- আলোচ্য পদ্যাংশটি বিদ্যাপতি রচিত “প্রার্থনা” শীর্ষক পর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে । তপ্ত বালুকারাশিতে জলবিন্দু পড়লেই বালি তাকে শুষে নেয় , তার আর কোনো স্বতন্ত্র সত্তা থাকে না । তেমনি স্ত্রী পুত্র আদি নিয়ে যে পরিবার ও সমাজ , সেও কবিকে এমনভাবে শুষে নিয়েছে যে তাঁর নিজের দিকে তাকানোর বা নিজের জন্য কিছু করার সময় ছিল না । পদ্যটিতে বিদ্যাপতির অনুতাপ , আত্মনিবেদনের একান্ত আকুতি পরিলক্ষিত হয় । 

(খ) তোহে বিসরি মন তাহে সমর্পিলু ।

উত্তরঃ- যৌবনের আনন্দোচ্ছল প্রহরে সুত – মিত রমণী নিয়ে কবি এতই ব্যস্ত ছিলেন তার মাঝখানে মাধবের প্রতি ভক্তি নিবেদন তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি । সেজন্য কবির মনে হচ্ছে , তাঁর পরিণামে আকুল নৈরাশ্য ছাড়া আর কিছুই নেই । মাধব জগতের ত্রাণকর্তা । দীনের প্রতি দয়াময় , সেজন্য অন্তকালে কবি তাঁরই উপর বিশ্বাস রেখেছেন । এখানেও কবির ঐশ্বর্যভাবযুক্ত শান্তসের কৃষ্ণ আরাধনা তাঁকে নিশ্চিতভাবে চৈতন্যপূর্ব যুগের কবিরূপে আমাদের সামনে তুলে ধরে । 

(গ) অতয়ে তোহারী বিশোয়াসা ।

উত্তরঃ- কবি বিদ্যাপতি জীবনের অর্ধেক সময় ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন , শৈশবে বার্ধক্যে কত দিন গেল , বিধুবনে রমণী সঙ্গে রসরঙ্গে মেতেছিলেন , অতএব কৃষ্ণ ভজনার সময় পাননি । কৃষ্ণ তো আদি অনাদির নাথ । কত চতুরানন মরে গেলেন , কিন্তু আদিও নেই , অবসানও নেই , কৃষ্ণের দেওয়া জন্ম তিনি কৃষ্ণকেই অর্পণ করতে চান । যেমন সাগরলহরী সাগরেই সমর্পিত হয় , তেমনি কৃষ্ণের দেওয়া জন্ম কৃষ্ণকেই ফিরিয়ে দিতে চান । শেষে শমন ভয় তাঁকে দেখা দিয়েছে । বিদ্যাপতি আদি – অনাদির নাথ কৃষ্ণকেই ভবসাগর তারণের ভার দিলেন । 

(ঘ) “নিধুবনে রমনী – রসরঙ্গে মাতলু ।” 

উত্তরঃ- যৌবনকালে প্রমোদকাননে যুবতী নিয়ে রসরঙ্গে  মত্ত ছিলেন কবি । ঈশ্বর ভজনা কখন করবেন ? এখানে কবির বক্তব্য যে , সারাজীবন তিনি ঈশ্বরবিমুখতার মধ্যেই কাটিয়েছেন । জীবনের উপান্তে এসে যখন পরকালের গতির কথা চিন্তা করছেন , তখনই তিনি অনেকটা কৈফিয়তের সুরে মাধবের উদ্দেশ্যে তাঁর নৈরাশ্যপীড়িত মানসিকতার বেদনা প্রকাশ করেছেন । শৈশব ও বার্ধক্যকাল সতেজ দেহমন নিয়ে ঈশ্বরচিন্তার উপযুক্ত সময় নয় । অথচ জীবনের উপযুক্ত সময় অর্থাৎ যৌবনবেলায় তিনি রমণীসঙ্গে রসরঙ্গে সেই মহামূল্যবান মুহূর্তগুলি নষ্ট করেছেন , ঈশ্বরচিন্তা করেননি । 

পাঠনির্ভর ব্যাকরণ :

১। ক) প্রার্থনা কবিতা থেকে কয়েকটি ব্রজবুলি শব্দের উল্লেখ করো ।

উত্তরঃ- কয়েকটি ব্রজবুলি শব্দ হল ― তাতল , বিসরি , বিশোয়াসা , তোহ , অব , মঝু , মাতলু , তুয়া , অবসানা সমাওত , আরা ।

(খ) প্রার্থনা কবিতায় উল্লিখিত সর্বনাম পদগুলি লেখো । 

উত্তরঃ- সর্বনাম পদগুলি হল ― তোহে , তুহু , জগৎতারণ , মাধব , তুয়া । 

(গ) নিচের শব্দগুলোর গদ্যরূপ লেখো ।

সমর্পিলু ; অব ; জনম ; নিন্দে ; মাতলু ; ভজব ।

উত্তরঃ- সমর্পিলু – সমর্পণ করলাম । 

অব – এখন ।

জনম – জন্ম । 

নিন্দে – নিদ্রায় ।

মাতলু – মাতলাম ।

ভজব – ভজনা করব ।

(ঘ) পদ পরিবর্তন করো ।

সমাজ ; শিশু ; জন্ম ; মন ; বিধি ।

উত্তরঃ- সমাজ – সামাজিক ।

শিশু – শৈশব ।

জন্ম – জনম ।

মন – মানসিক ।

বিধি – বিধান ।

(ঙ) বিশিষ্টার্থক শব্দ প্রয়োগে অর্থপূর্ণ বাক্য রচনা করো ।

গোবরে পদ্মফুল ; খয়ের খাঁ ; চোখের বালি ; টনক নড়া ; ঠোট কাটা ।

উত্তরঃ- গোবরে পদ্মফুল ― এরকম একটি পরিবেশের মধ্যে বাস করেও নির্মল ভালো ফলাফল করেছে এ যেন গোবরে পদ্মফুল ।

খয়ের খাঁ ― শ্যামলবাবু স্বভাবে খয়ের খাঁ , সবসময় বড়বাবুর পাশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

চোখের বালি ― আনন্দিতা জন্ম থেকে তাঁর বাবার চোখের বালি হয়ে আছে । 

টনক নড়া ― পরীক্ষায় ফেল করার পর টুকাইয়ের হুশ ফিরেছে , একেই বলে টনক নড়া ।

ঠোট কাটা ― তোমাকে অনেকে পছন্দ করে না কেননা তুমি ঠোট কাটা ধরনের মানুষ ।

যোগত্যা বিচার :

১। বিদ্যাপতির পিতার নাম কি ?

উত্তরঃ- বিদ্যাপতির পিতার নাম গণপতি ঠাকুর । 

২। ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যের নাম লেখো ।

উত্তরঃ- ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কাব্যের নাম ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী ।

৩। ব্রজবুলি ভাষা সম্বন্ধে যা জান লেখো ।

উত্তরঃ- পদাবলীর ভাষা বাংলা ও ব্রজবুলি । এই ব্রজবুলি ব্রজ বা বৃন্দাবনের ভাষা নয় । এটি একটি সম্পূর্ন কৃত্রিম ভাষা । এই কৃত্রিম ভাষা অনেক হিন্দু , ওড়িয়া , মৈথিলী , বাংলা ও অসমীয়া শব্দের মিশ্রণ। বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতির মৈথিলী ভাষায় রচিত পদাবলীর প্রভাবে এই ভাষার সৃষ্টি হয় । বিদ্যাপতির পদে অনেক বাংলা শব্দ প্রবেশ করেছে । তাই বিদ্যাপতির পদগুলোকে নিছক মৈথিলী ভাষায় রচিত বলা যায় না । এক সময় বিদ্যাপতির পদের অনুকরণে বাংলা , উড়িষ্যা ও অসমে পদাবলী রচনার উৎসাহ দেখা গিয়েছিল এবং তারই ফলে ব্রজবুলি ভাষায় সৃষ্টি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ব্রজবুলি ভাষায় ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ রচনা করেছেন ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top